অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান (কবিতা) জয় গোস্বামী – মাধ্যমিক দশম শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | West Bengal Madhyamik Class 10th Bengali Astrer Biruddhe Gaan Question and Answer
MCQ | অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান (কবিতা) জয় গোস্বামী – মাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Bengali Astrer Biruddhe Gaan Question and Answer :
- ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতাটির কবি হলেন—
(A) শঙ্খ ঘোষ
(B) জীবনানন্দ দাশ
(C) বিষ্ণু দে
(D) জয় গোস্বামী
Ans: (D) জয় গোস্বামী
- ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতাটির উৎস হল –
(A) পাখি , হুস
(B) ভালোটি বাসিব
(C) পাতার পোষাক
(D) ভুতুমভগবান
Ans: (C) পাতার পোষাক
- জয় গোস্বামীর একটি বিখ্যাত কাব্য হল –
(A) মরুমায়া
(B) বনলতা সেন
(C) সর্বহারা
(D) ঘুমিয়েছ , ঝাউপাতা
Ans: (D) ঘুমিয়েছ , ঝাউপাতা
- ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতাটির মূলগ্রন্থ ‘ পাতার পোষাক ‘ – এর রচনাকাল –
(A) ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দ
(B) ২০০০ খ্রিস্টাব্দ
(C) ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দ
(D) ২০০১ খ্রিস্টাব্দ
Ans: (A) ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দ
- ‘ পাতার পোষাক ‘ কাব্যগ্রন্থটির জন্য কবি জয় গোস্বামী পান –
(A) আনন্দ পুরস্কার
(B) সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার
(C) বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় স্মৃতি পুরস্কার
(D) কিছূল সাহিত্য পুরস্কার
Ans: (B) সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার
- ‘ অস্ত্র ‘ শব্দের আক্ষরিক অর্থ –
(A) হাতিয়ার
(B) কণ্ঠসংগীত
(C) গুঞ্জন
(D) বাদ্যযন্ত্র
Ans: (A) হাতিয়ার
- ‘ বিরুদ্ধে ‘ শব্দের আক্ষরিক অর্থ –
(A) বিপরীতে
(B) অমিল
(C) সহজে
(D) সামনে
Ans: (A) বিপরীতে
- ‘ গান ‘ শব্দের আক্ষরিক অর্থ –
(A) নৃত্য
(B) রঙ্গরস
(C) গীতি
(D) সস্ত্র
Ans: (C) গীতি
- ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতার প্রথম পঙ্ক্তিটি হল—
(A) অস্ত্র ফ্যালো , অস্ত্র রাখো পায়ে
(B) ‘ গান বাঁধিবে সহস্ৰ উপায়ে
(C) অস্ত্র রাখো , অস্ত্র ফ্যালো পায়ে ‘
(D) অস্ত্র ফ্যালো , অস্ত্র রাখো গানের দুটি পায়ে
Ans: (A) অস্ত্র ফ্যালো , অস্ত্র রাখো পায়ে
- আমি এখন হাতে পায়ে ।
(A) লক্ষ
(B) হাজার
(C) শত
(D) একক
Ans: (B) হাজার
[ আরোও দেখুন:- Madhyamik Bengali Suggestion 2023 Click here ]
- কবিতায় বর্ণিত ‘ আমি ’ হল –
(A) জনৈক আত্মীয়
(B) রাজা
(C) কবি স্বয়ং
(D) সৈনিক
Ans: (C) কবি স্বয়ং
- আসি , উঠে দাঁড়াই । ‘
(A) সামনে
(B) দূরে
(C) এগিয়ে
(D) পিছনে
Ans: C) এগিয়ে
- ‘ বুলেট ‘ – এর অর্থ হল –
(A) কাচের গুলি
(B) বন্দুকের গুলি
(C) প্লাস্টিকের খেলনা
(D) মানুষের শরীর
Ans: (B) বন্দুকের গুলি
- কবি কীভাবে বুলেট তাড়ান ?
(A) শরীর দুলিয়ে
(B) মাথা নাড়িয়ে
(C) পা দুলিয়ে
(D) হাত নাড়িয়ে
Ans: (D) হাত নাড়িয়ে
- কী প্রতিরোধ করতে কবি গানের বর্ম পরেছেন ?
(A) কথা
(B) শব্দ
(C) ধ্বনি
(D) অস্ত্র
Ans: (D) অস্ত্র
- গানের বর্ম আজ পরেছি ।
(A) পায়ে
(B) হাতে
(C) পাখায়
(D) গায়ে
Ans:
- ‘ কর্ম ‘ শব্দের অর্থ –
(A) কবচ
(B) হার
(C) পুঁতি
(D) চামর
Ans: (A) কবচ
- ‘ গান তো জানি –
(A) একটা / তিনটা
(B) একটা / চারটা
(C) একটা / দুটো
(D) একটা / পাঁচটা
Ans: (C) একটা / দুটো
- গান তো জানি একটা দুটো ‘ বলতে বলা হয়েছে –
(A) সামান্য
(B) মাঝারি
(C) অনেক
(D) অপ্রতুল
Ans: (A) সামান্য
- ‘ আঁকড়ে ‘ শব্দটির অর্থ—
(A) জড়িয়ে
(B) পরিয়ে
(C) মাড়িয়ে
(D) ছড়িয়ে
Ans: (A) জড়িয়ে
- ‘ আঁকড়ে ধরে সে – খড়কুটো ‘ — ‘ সে – খড়কুটো ‘ বলতে বোঝাচ্ছে –
(A) সামান্য সম্বল
(B) গুরুত্বহীন
(C) বহু মূল্যবান
(D) খাদ্য – জাতীয়
Ans: (A) সামান্য সম্বল
- গানের গায়ে মোছা হয়—
(A) অস্ত্র
(B) চোখের জল
(C) ময়লা
(D) রক্ত
Ans: (D) রক্ত
- মাথায় আছে শকুন অথবা –
(A) কাক
(B) চিল
(C) বক
(D) চড়াই
Ans: (B) চিল
- সহস্র উপায়ে গান বাঁধত—
(A) চিল – শকুন
(B) শ্যামা
(C) কোকিল
(D) দোয়েল
Ans: (C) কোকিল
- কোকিল হল—
(A) শরৎদূত
(B) বর্ষাদূত
(C) বসন্তদূত
(D) হেমন্তদূত
Ans: (C) বসন্তদূত
- শকুন বা চিল বলতে বোঝানো হয়েছে –
(A) উদার মানুষকে
(B) সুযোগসন্ধানী মানুষকে
(C) ভালো মানুষকে
(D) সংখ্যালঘু মানুষকে
Ans: (B) সুযোগসন্ধানী মানুষকে
- ‘ সহস্র উপায়ে ‘ শব্দের অর্থ বলতে কবিতায় বলা হয়েছে –
(A) অনেক উপায়ে
(B) অল্প উপায়ে
(C) মধ্যম উপায়ে
(D) শাব্দিক উপায়ে
Ans: (A) অনেক উপায়ে
- বর্ম খুলে দ্যাখো –
(A) জামা
(B) আদুড়
(C) নোংরা
(D) সুগন্ধ
Ans: (B) আদুড়
- কবিতায় ঋষিবালকের প্রসঙ্গ রয়েছে –
(A) পরিত্রাতা হিসেবে
(B) কবিতাকথক হিসেবে
(C) স্বার্থান্বেষী হিসেবে
(D) কবি হিসেবে
Ans: (A) পরিত্রাতা হিসেবে
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান (কবিতা) জয় গোস্বামী – মাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Bengali Astrer Biruddhe Gaan Question and Answer :
- ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতায় কী ফেলার কথা বলা হয়েছে ?
Ans: ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ’ কবিতায় অস্ত্র ফেলার কথা বলা হয়েছে ।
- ‘ অস্ত্র ফ্যালো , অস্ত্র রাখো’- কোথায় অস্ত্র ফেলার কথা বলা হয়েছে ?
Ans: ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতায় কবি জয় গোস্বামী অস্ত্রকে হাত থেকে নামিয়ে পায়ে রাখার কথা বলা হয়েছে ।
- ‘ অস্ত্র ফ্যালো , অস্ত্র রাখো পায়ে বলতে কী বলা হয়েছে ? অথবা , ‘ অস্ত্র ফ্যালো’— কবি অস্ত্র ফেলার কথা বলেছেন কেন ?
Ans: কবির মতে , অস্ত্রের ব্যবহারে হিংসা , বিদ্বেষ বা মৃত্যুর মতো মানবতা – বিরোধী শক্তির বিকাশ ঘটে । এই অশুভ শক্তির বিনাশার্থে কবি ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতায় অস্ত্রকে পায়ে রাখতে বা পরিহার করতে বলেছেন ।
- অস্ত্রের বিরুদ্ধে কবির হাজার হাতে – পায়ে এগিয়ে আসার অর্থ কী ?
Ans: ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতা অনুসারে অস্ত্র যেহেতু মানুষের দানববৃত্তির প্রকাশ , তাই তাকে সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিরোধ করতেই কবি হাজার হাতে – পায়ে এগিয়ে আসার কথা বলেছেন ।
- ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতায় হাত নাড়িয়ে কী তাড়ান ?
Ans: অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতায় কবি হাত নাড়িয়ে বন্দুকের গুলি বা বুলেট তাড়ান । অর্থাৎ মানুষের পাশবিক প্রবৃত্তিকে অবজ্ঞা করে এগিয়ে চলেন ।
- কবি ছুটে আসা বুলেটের প্রতিরোধ করতে কী ব্যবস্থা নেন ?
Ans: ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতা অনুসারে কবি বন্দুক থেকে ছুটে আসা বুলেটের প্রতিরোধ গড়তে গানের বর্ম ধারণ করেন ।
- ‘ গানের বর্ম আজ পরেছি গায়ে বলার কারণ কী ?
Ans: কবির মতে , অশুভ শক্তির সঙ্গে অসহায় মানুষের ও মানবতার যে – সংগ্রাম , সেই সংগ্রামে অসহায় মানুষের অঙ্গাবরণ হল গান । গানই পারে অমঙ্গলের হাত থেকে মানবতাকে বাঁচাতে ।
- ‘ গানের বর্ম আজ পরেছি গায়ে ‘ — গানের কর্ম পরিধান করে কবি কোন কাজ করতে পারেন ?
Ans: জয় গোস্বামী তাঁর ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতায় আত্মবিশ্বাসী এই ভেবে যে , বিশ্বব্যাপী অস্ত্রের ঝনঝন শব্দকে তিনি গান দিয়ে জয় করবেন । তাই তিনি গানের বর্ম পরেছেন ।
- ‘ গান তো জানি একটা দুটো – ‘ একটা দুটো ’ মানে কী ?
Ans: জয় গোস্বামীর ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতায় তিনি ‘ একটা দুটো ’ বলতে সামান্য কিছুকে ইঙ্গিত করেছেন । কবিতায় শব্দবন্ধটিকে কবি তাৎপর্যপূর্ণভাবে ব্যবহার করে সাধারণের স্বল্প সাধ্যের কথা তুলে ধরেছেন ।
- ‘ গান তো জানি … খড়কুটো— বলার কারণ কী ?
Ans: উদ্ধৃত অস্ত্রের কাছে মানবতা আজ অসহায় । কবির বিশ্বাস সামান্য গানকে সম্বল করেই মানবতা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে জয়ী হওয়া সম্ভব । গানের সীমিত শক্তিকে বোঝাতে ‘ খড়কুটো ’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ।
- ‘ খড়কুটো ’ শব্দের অর্থ কী ?
Ans: ‘ খড়কুটো ‘ শব্দটির প্রকৃত অর্থ বিচালি বা শুকনো ঘাস । দিশেহারা মানুষের সামনে মুক্তি পাওয়ার সামান্যতম অবলম্বন বোঝাতে শব্দটি ব্যবহৃত হয় ।
- ‘ রক্ত মুছি গানের গায়ে — কথাটির অর্থ কী ?
Ans: অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতার কথক গানের গায়ে রক্ত মোছেন । এখানে ‘ রক্ত ‘ হয়ে ওঠে মনুষ্যত্বের অপচয়ের প্রতীক । আর এই অপচয়কে রুখতে পারে একমাত্র মানুষের সৃষ্টিশীলতা ।
- কবির গানের গায়ে রক্ত মোছার কারণটি কী ?
Ans: বিশ্বব্যাপী যে – হানাহানি শুরু হয়েছে তা আসলে মনুষ্যত্বের অবক্ষয় । মানুষের সৃজনশীলতাই একমাত্র এই অবক্ষয় বুখতে পারে । তাই কবি রক্তকে গানের গায়ে মুছতে চান ।
- ‘ মাথায় কত শকুন বা চিল’— ‘ শকুন বা চিল শব্দটি কবিতায় কী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে ?
Ans: অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতানুসারে ‘ শকুন বা চিল ‘ এই দুটি মাংসাশী পাখিকে যুদ্ধবাজ , ক্ষমতালিপু ও সুযোগসন্ধানী মানুষের প্রতীকরূপে ব্যবহার করা হয়েছে । সংখ্যায় এরা অল্প হলেও , মানবেতিহাসে এদের উপস্থিতি চিরকালীন ।
- কবি কাকে সম্বল করে গান বাঁধতে চান ?
Ans: ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতানুসারে কবি শুধু তাঁর বুকের ভেতরের কোকিলটিকে নিয়ে নানান উপায়ে গান বাঁধবার কৌশল আয়ত্ত করে অস্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চান ।
- অন্য কোনো গান গাওয়া পাখির উপস্থিতি না- ঘটিয়ে কবিতায় কেন কোকিলের অবতারণা করা হয়েছে ?
Ans: হিংসাকে জয় করতে পারে হৃদয়ের মাধুর্য , তারুণ্য ও যৌবন । কোকিল হল বসন্তের অগ্রদূত , তারুণ্য ও মাধুর্যের প্রতীক । তাই ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতায় কোকিলের অবতারণা করা হয়েছে ।
- কবি কেন কোকিলকে সহস্র উপায়ে গান বাঁধতে বলেছেন ?
Ans: কোকিলের সহস্র উপায়ে গান বাঁধা বলতে ঔদ্ধত্যের সঙ্গে লড়াইতেও কৌশলী হওয়া কাম্য , তা বোঝাতেই কবি এমন উক্তি করেছেন ।
- কবিতায় ‘ অস্ত্র রাখো , অস্ত্র ফ্যালো পায়ে ‘ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?
Ans: অস্ত্রের অবস্থান কখনও উচ্চ আসনে হতে পারে না । তার অবস্থান সবসময় পায়ে অর্থাৎ নীচে হওয়াই বাঞ্ছনীয় বলে উক্ত পঙ্ক্তিতে বলা হয়েছে ।
- ‘ বর্ম খুলে দ্যাখো আদুড় গায়ে বলতে কবি কী বলেছেন ?
Ans: ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতা থেকে গৃহীত আলোচ্য উদ্ধৃতাংশে কবি , ‘ বর্ম ’ বলতে ক্ষমতা , বিদ্বেষ , অহংকার , লোভ , মোহ প্রভৃতির ‘ ধর্ম ‘ খুলে দেখার কথা বলেছেন ।
- ‘ আদুড় ‘ শব্দটি কবিতায় কোন্ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে ?
Ans; ‘ আদুড় ‘ শব্দের অর্থ খোলা বা অনাবৃত । কবিতায় এই শব্দটি ব্যবহারের মাধ্যমে কবি হিংসা বা বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাবের আবরণ খুলে উদার হওয়ার কথা বলেছেন ।
- গানকে প্রচারের মুখ্য সহায়ক হিসেবে রেখে কবিতায় আর কার আবির্ভাব ঘটেছে ?
Ans: অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতায় গানকে প্রচারের মুখ্য সহায়ক হিসেবে রেখে মাথায় ময়ূরপালক গোঁজা এক ঋষিবালকের আবির্ভাব হয়েছে ।
- কবিতায় ব্যবহৃত ঋষিবালকের মধ্যে কার ছায়াপাত ঘটেছে বলে তোমার ধারণা ।
অথবা , ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতার ঋষিবালক কীসের প্রতীক ।
Ans: ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতায় ঋষিবালকের মধ্যে যেন রাখাল বালক শ্রীকৃষ্ণের ছায়াপাত ঘটিয়েছেন কবি । এই ঋষিবালকের মতো , তাঁরও মাথায় ময়ূরপালক গোঁজা থাকত বলে কল্পনা করা হয় । কবিকল্পিত ঋষিবালক যেন সুরপ্নাবী এক শান্তিময় পৃথিবীর দ্রুত বা প্রতীক ।
- গান মানুষের সঙ্গী হয়ে কোথায় কোথায় বেড়াবে বলে কবিতায় উল্লেখ আছে ?
অথবা , ‘ তোমায় নিয়ে বেড়াবে গান গান তোমায় নিয়ে কোথায় বেড়াবে ?
Ans: ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ’ কবিতা অনুসারে গান মানুষকে সঙ্গী করে ঘুরে বেড়াবে নদীতে , দেশে ও গাঁয়ে অর্থাৎ গানের মধ্যে দিয়ে শান্তি ও মুক্তিকামী মানুষের জীবনগাথা দূরদূরান্তে ছড়িয়ে পড়বে এমনটাই কবির বিশ্বাস ।
- কবির শেষ পঙ্ক্তিতে ‘ গানের দুটি পায়ে বলার কারণ কী ?
Ans: মানুষ তার ঔদ্ধত্যকে যেভাবে দেবতার চরণে নিবেদন করে তেমনই কবি অস্ত্রের বলে বলীয়ান অহংকারীদের মানবতার প্রতীক গানের পায়ে তাদের ঔদ্ধত্যের অস্ত্রকে সমর্পণ করতে বলেছেন ।
- অস্ত্র ধরার পরিবর্তে কবি জয় গোস্বামী কী নিতে বলেছেন ?
Ans: ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতায় কবি জয় গোস্বামী অস্ত্র ধরার পরিবর্তে গানের সম্মোহনী শক্তিকে সম্বল করে পথ চলার কথা বলেছেন ।
- ঋষিবালকের মাথায় কী গোঁজা রয়েছে ?
Ans: জয় গোস্বামীর ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতা অনুসারে ঋষিবালকের মাথায় ময়ূরের পালক গোঁজা রয়েছে ।
- ‘ গান দাঁড়াল ঋষিবালক ‘ – এ কথা বলার অর্থ কী ?
Ans: গান কেবল প্রতিবাদের বাহন নয় , যুদ্ধকে প্রতিহত করতে পারলে এই গানের মধ্যেই খুঁজে পাওয়া যায় শান্তি ও স্নিগ্ধতার মধুর সুর । এই কারণেই গান হয়ে যায় ‘ ঋষিবালক ‘ – এর ন্যায় শান্ত , স্নিগ্ধ ।
- ‘ আঁকড়ে ধরে সে – খড়কুটো ‘ — ‘ সে – খড়কুটো ‘ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?
Ans: ‘ ‘ খড়কুটো ’ শব্দটির অর্থ শুকনো ঘাস বা বিচালি । ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতায় কবি যুদ্ধ কিংবা মারণাস্ত্রের প্রয়োগে বিপর্যস্ত পৃথিবীর বুকে দিশাহীন মানুষকে খড়কুটোর মতো সামান্য কিংবা তুচ্ছ অবলম্বনকে আঁকড়ে ধরেই এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে বলেছেন ।
- ‘ আমি এখন হাজার হাতে পায়ে / এগিয়ে আসি , উঠে দাঁড়াই ’ — কাদের এগিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে ?
Ans: অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতা থেকে গৃহীত প্রদত্ত অংশটিতে যুদ্ধবিরোধী সাধারণ মানুষের এগিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে ।
- ‘ গানের বর্ম আজ পরেছি গায়ে গানের বর্ম পরে কী করছেন ?
Ans: ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতায় কবি বন্দুক থেকে ছুটে আসা বুলেট প্রতিরোধের জন্য গানের বর্ম ধারণ করেছেন । অর্থাৎ তিনি মানুষের পৈশাচিক সত্তাকে প্রতিহত করতে গানের মূর্ছনাকে রক্ষাকবচ হিসেবে তুলে ধরেছেন ।
- ‘ অস্ত্র ফ্যালো’— এই শব্দবন্ধটি বারবার উচ্চারণের কারণ কী ?
Ans: মানবতা – বিরোধী সমস্ত রকম শক্তিকে প্রতিহত করতে উন্মুখ কবি ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতায় ‘ অস্ত্র ফ্যালো ‘ শব্দবন্ধনটিকে ধ্রুবপদের মতো বারবার উচ্চারণ করেন ।
- ‘ হাত নাড়িয়ে বুলেট তাড়াই’— কবি কেন এ কথা বলেছেন ?
Ans: প্রশ্নোদৃত উক্তিটির মাধ্যমে ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতায় কবি মানুষের দানবীয় ও পৈশাচিক হিংস্রতাকে অবজ্ঞা করে , সৎসাহস আর মানবিকতায় ভর করে এগিয়ে চলার কথা বলেছেন ।
- বর্ম খুলে দ্যাখো’- ‘ বর্ম ‘ খুললে কী দেখা যায় ?
Ans: ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতা থেকে গৃহীত উদ্ধৃতিতে কবি ‘ বর্ম ’ বলতে এখানে , হিংসা , লোভ – বিদ্বেষ – ক্ষমতা ও অহংকারের অমানুষী বর্ম খুলে দেখার কথা বলেছেন ।
- ‘ উন্মাদের পাঠক্রম ‘ কাব্যগ্রন্থটির রচয়িতার নাম কী ?
Ans: ‘ উন্মাদের পাঠক্রম ’ কাব্যগ্রন্থটির রচয়িতার নাম জয় গোস্বামী ।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর | অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান (কবিতা) জয় গোস্বামী – মাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Bengali Astrer Biruddhe Gaan Question and Answer :
1. ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতায় কবি অস্ত্র ফেলতে বলেছেন কেন ? অস্ত্র পায়ে রাখার মর্মার্থ কী ?
Ans: বর্তমান বিশ্বের প্রেক্ষাপটে জয় গোস্বামীর ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতাটি সময়ের এক আশ্চর্য দলিল । হিংস্রতায় পরিপূর্ণ এই পৃথিবীতে অস্ত্রের পিছনে দেদার অর্থ খরচ হচ্ছে , কিন্তু অন্যদিকে নিরন্ন ও কর্মহীন মানুষের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই অঙ্গ ফেলতে বলার কারণ চলেছে । সামাজিক বৈষম্য বাড়ছে ক্রমাগত । সমরাক্সে সজ্জিত দেশগুলি নিজেদের প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য একতা , সৌভ্রাতৃত্ব ও মানবিকতার মতো চিরস্তন মূল্যবোধগুলিকে ধ্বংস করতে উদ্যত । অস্ত্রের ব্যবহারে মানুষের মনুষ্যত্ব – বিরোধী মঙ্গল কামনায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার নেতিবাচক দিকের চরমতম প্রকাশ ঘটে । তাই তাকে বিসর্জন দেওয়াই উচিত । এজন্যেই বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ কবি অস্ত্র ত্যাগ করে মানবজাতির মঙ্গল কামনায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ।
→ অস্ত্র কোনোদিন সভ্যতার নিয়ামক হতে পারে না । সে মানুষের হিংস্রতা , প্রভুত্ব ও ভীতি প্রদর্শনের হাতিয়ার রূপে প্রতিপন্ন হয় । তাই কবির কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলা যায় যে , অস্ত্র নয় , শস্ত্র নয় , রক্ত নয় , জয়ী হোক গান , জয়ী হোক সম্মিলিত মানব , জয়ী হোক মানবতা । ‘ আর এই মানবতার উন্মেষ ঘটাতে , শুভ বুদ্ধির উদয় ঘটাতে , কবি মনে করেন , সর্বপ্রথম অস্ত্রকে ত্যাগ করতে হবে । নিজের বিবেকবোধের চরণে উদ্ধৃত অস্ত্রকে সমর্পণ করতে হবে । এই অস্ত্র পায়ে রাখার অর্থ অস্ত্র ত্যাগ ও বিসর্জন । কবির মতে , এই ত্যাগের মধ্য দিয়েই মানুষ তার নেতিবাচক প্রবৃত্তিকে অবদমন করতে পারবে ।
2. পাঠ্য কবিতা অবলম্বনে অস্ত্র ও গানের ভূমিকা আলোচনা করো ।
অথবা , অস্ত্র ও গানের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কে , কেন জয়ী হয় কবিতা অবলম্বনে বুঝিয়ে বলো ।
Ans: আশাবাদী কবি জয় গোস্বামী তাঁর ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ’ কবিতার মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছেন যে অস্ত্র কখনোই মানবসভ্যতার নিয়ন্ত্রক ও নিয়ামক শক্তি হয়ে উঠতে পারে না । কিন্তু গান পারে এই অস্ত্রের শক্তিতে বলীয়ান সভ্যতার অবসান ঘটিয়ে মানবতাকে প্রতিষ্ঠা করতে । কারণ গান মানুষের হৃদয়াবেগের স্বাভাবিক প্রকাশ । ক্ষমা , মায়া , প্রেম ও স্বাধীনতার মতো চিরকালীন মানবিক আবেদনগুলি গানের মধ্য দিয়েই প্রকাশিত হয় । এখানে কবিতায় কবির বক্তব্যের সঙ্গে বিষয়ভাবনা একত্রিত হয়ে যায় । ‘ অস্ত্র ‘ মানে হাতিয়ার যা আত্মরক্ষার্থে বা অপরের ওপর প্রভুত্ব কায়েম করতে ব্যবহৃত হয় । তাই কবিতায় অস্ত্রকে নেতিবাচক শক্তির প্রকাশ ঘটাতে সক্ষম এক শক্তিশালী যন্ত্র হিসেবে দেখানো Lin হয়েছে । আর অন্যদিকে গান , তার সুরময়তার সাহায্যে মানুষের অন্তঃসত্তার বিকাশ ঘটায় ; যার সাহায্যে মানুষ তার হৃদয়বৃত্তির সুক্ষ্ম – সুন্দর প্রবাহে নিজে যেমন অবগাহন করে , তেমনি অন্যকেও উদ্বুদ্ধ ও আকৃষ্ট করে । এককথায় অস্ত্রের দানবিক শক্তিকে গানের মানবীয় শক্তির সাহায্যে পরাভূত করা সম্ভব । অস্ত্র প্রগতির লক্ষণ নয় , অস্ত্র মানবসভ্যতাকে দিশাহীন পথে চালিত করে , তার পতন ত্বরান্বিত করে । আর গান , সে তো অন্তরের ভালোবাসা , শান্তি আর মানবতার সাহায্যে মানুষের অন্তরের বিদ্বেষ দূর করে । কবি তাই এই কবিতায় মানবতার বিজয়কামনায় , অবিনাশী অবয়বহীন গানেরই জয় কামনা করেছেন ।
3. ‘ আমি এখন হাজার হাতে পায়ে কোন কবির কোন কবিতা থেকে নেওয়া ? ‘ আমি ‘ কে ? ‘ হাজার হাতে পায়ে বলতে তিনি কী বুঝিয়েছেন ব্যাখ্যা করো ।
Ans: কবি জয় গোস্বামী রচিত ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ’ কবিতা থেকে প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশটি গৃহীত হয়েছে ।
→ উদ্ধৃত রচনাংশে ‘ আমি ’ বলতে কবিতার কথককে বোঝানো হয়েছে । তবে এখানে কথক অস্ত্র প্রতিরোধ প্রত্যাশী সম্মিলিত মানবতায় বিশ্বাসী , শতসহস্র মানুষের প্রতিভূ হয়ে ‘ আমি ’ – এর পরিচয় ওঠেন ।
→ কবি একজন সাধারণ ও সামান্য মানুষ । অন্যদিকে অস্ত্রের ক্ষমতা প্রভূত । তাই অস্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে হলে যে বিপুল মানসিক শক্তির প্রয়োজন , তার জন্য প্রয়োজন সংঘবদ্ধ বিরুদ্ধতার । আর তা – ই প্রতীকায়িত হয়েছে সহস্র মানুষের প্রতিভূ – স্বরূপ ‘ হাজার হাতে পায়ে ’ শব্দবন্ধের মাধ্যমে । এই দৃঢ় প্রত্যয় শুধু ব্যক্তি মানুষের নয় , সম্মিলিত মানবতার । এজন্য কবি হাজার হাতে – পায়ে শুধু এগিয়েই আসেন না , উঠেও দাঁড়ান এবং হাত নাড়িয়ে তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বন্দুকের গুলিকে প্রতিহতও করেন । এ কারণেই তিনি বলেছেন ‘ এগিয়ে আসি , উঠে দাঁড়াই / হাত নাড়িয়ে বুলেট তাড়াই । ‘ অর্থাৎ অন্তরমনের অবজ্ঞাকে সম্বল করে চরম প্রতিকূলতাতেও লক্ষ্যে অবিচল থাকেন ।
4. ‘ গানের বর্ম আজ পরেছি গায়ে- কার কোন্ রচনাংশ ? মূল গ্রন্থ কী ? কে ‘ গানের বর্ম ’ পরেছে ? ‘ গানের বর্ম ’ বলার তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো ।
Ans: প্রশ্নোদ্ধৃত অংশটি কবি জয় গোস্বামী রচিত ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতার অংশ ।
→ কবিতাটির মূল গ্রন্থটি হল ‘ পাতার পোষাক ‘ । প্রকাশকাল ১৯৯৭ সাল । কবিতার কথক এই গানের বর্ম ধারণ করেছেন । কারণ অস্ত্র থেকে গানের কর্ম নির্গত গুলি বা বুলেটকে প্রতিরোধ করতে হলে গানই একমাত্র রক্ষাকবচ হয়ে ওঠে । ‘ গানের বর্ম ’ বলতে এখানে কবি মানবিকতা ও মঙ্গলময়তার সুরময় প্রকাশকেই বুঝিয়েছেন । কবি জানেন অস্ত্রের ক্ষমতা বিপুল , কিন্তু অস্ত্র হিংস্রতা ও দানববৃত্তি ছাড়া আর কিছুই নয় । আর অস্ত্র থেকে নির্গত তাৎপর্য বিশ্লেষণ দানবীয়তাকে প্রতিহত করতে , গানের মতো নরম ও পেলব হৃদয়বৃত্তির সুরমূর্ছনাই প্রয়োজন । তবেই গানের সাহায্যে , অস্ত্রের মতো পাশব শক্তিকে পরাহত করা যাবে । কেন – ন অস্ত্র যা পারে না , গান তা অনায়াসে করতে পারে । গান মানুষকে দানবত্ব পরিহার করে প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠতে শেখায় । উদ্ধৃতাংশে মানবাত্মার সেই জীবনজয়ী সুরের কথাই বলা হয়েছে ।
5. ‘ রক্ত মুছি শুধু গানের গায়ে রক্তপাত হওয়ার কারণ কী ? গানের গায়ে রক্ত মোছার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো ।
Ans: জয় গোস্বামীর ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতা থেকে উদ্ধৃতাংশটি গৃহীত হয়েছে । অস্ত্র মানুষের হিংসা , অসুয়া , বিদ্বেষ , যুদ্ধবৃত্তি ও ভীতি প্রদর্শনের সহায়ক । অস্ত্র মানুষের জীবন পর্যন্ত নাশ করে । তাই অস্ত্র কখনোই কোনো সভ্যতার প্রগতির সূচক হতে পারে না । মানবতাকে ধ্বংস করে পাশববৃত্তিকে রক্তপাত হওয়ার কারণ জয়যুক্ত করাই তার একমাত্র কাজ । যখনই কেউ অস্ত্রের বিরুদ্ধে লড়তে যায় , তখনই ঘটে রক্তপাত , তখনই ঘটে প্রাণহানি । দানববৃত্তির সহায়ক অস্ত্রের শক্তি তো পৈশাচিক হবেই । মানবতার পতন ঘটাতে পারলেই তাই অস্ত্রের জয় । কিন্তু কবির মতে মানুষকে অন্তর থেকে রূপান্তরিত করতে সক্ষম গানই শুধু এই দানবিক শক্তিকে পরাহত করতে পারে ।
কবি অস্ত্র দিয়ে অস্ত্রের বিরুদ্ধে না – লড়ে , গান দিয়ে অস্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চান । কিন্তু সে পথ কঠিন । অস্ত্রের আঘাতে ঘটে চলা ক্ষয় – অপচয় – হানাহানি ও রক্তপাতকে কবি গানের সজীবতা দিয়ে শোধন করতে চান । কারণ গান হল মানুষের যৌথতার সহায়ক , গানের মাধ্যমে মানুষে মানুষে মৈত্রীর বন্ধন ও ভালোবাসার বন্ধন সুদৃঢ় হয় । তাই কবি গানকে অবলম্বন করেই অস্ত্রের শক্তিকে প্রতিহত করতে উদ্যত । কবি গানের অন্তরশক্তির জোরে মানুষের হিংস্রতা থেকে । নির্গত বুলেটের আঘাতে জেগে থাকা রক্তের দাগকে চিরতরে মুছে ফেলায় বিশ্বাসী । অন্তর থেকে বিদ্বেষের বিষরক্ত গানের সুরলালিত্যেই চিরতরে ধুয়ে ফেলা যায় ।
6. ‘ আমার শুধু একটা কোকিল / গান বাঁধবে সহস্র উপায়ে –কোন্ প্রসঙ্গে এমন মন্তব্য ? মন্তব্যটির যথার্থতা বোঝাও ।
Ans: কবি জয় গোস্বামীর ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতা থেকে উক্ত অংশটি গৃহীত । মানবতার মূল মন্ত্র হিংসা কোরো না । কিন্তু যে – কোনো অস্ত্র , মানুষের মধ্যে এই হিংসাবৃত্তির জন্মদাতা । কবি উদ্ধৃতাংশের প্রসঙ্গ তাই অস্ত্রের বিরুদ্ধ – শক্তি হিসেবে গানকে বেছে নিলেন । গান মানুষের হৃদয়বৃত্তির বিশুদ্ধ প্রকাশ । মানুষের অন্তরের সুরময় মানবতা গানের ভাষায় প্রকাশিত হয় । কিন্তু কবি জানেন , গান দিয়ে অস্ত্রের বিরুদ্ধতা করা খুব সহজ নয় । কারণ শকুন বা চিলরূপী সুযোগসন্ধানী মানুষের হানাদারি দৃষ্টি চতুর্দিকে প্রহরারত , তাই কোকিলের মতো বসন্তদূতকে তিনি সঙ্গী করে নেন ।
কবি আজ এক মহান কর্মে ব্রতী হয়েছেন । তাঁর সাধ্য সামান্য হলেও স্বপ্নের পথটি দৃঢ় । বসন্তদূত কোকিল শুষ্ক , রুক্ষ ও নিষ্প্রাণ পৃথিবীতে নবজীবনের বার্তা বয়ে আনে । কবির বিশ্বাস , এই রক্তাক্ত বিশ্বে ‘ কোকিল হয়ে উঠবে মানবমনের মানবিক সজীবতার প্রতীক । সে সুরের সহস্র কৌশলে , মৈত্রী ও সহৃদয়তায় জীবনের উজ্জীবনী গানে সকলকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হবে বলে কবির দৃঢ় ধারণা ।
7. ‘ অস্ত্র রাখো , অস্ত্র ফ্যালো পায়ে- কার উদ্দেশ্যে । এমন আবেদন ? এমন আবেদন করার কারণ কী ? এ আবেদনের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো ।
Ans: আবেদনের কারণ উত্তর কবি জয় গোস্বামী তাঁর ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতায় পৃথিবীর সমস্ত শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের উদ্দেশ্যে এ আবেদন করেছেন । [ ] অস্ত্রকে সঙ্গী করার কারণে মানবসভ্যতা ক্রমশ ধ্বংস – পথগামী । কবি জানেন , অস্ত্র কখনও কোনো শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের চিন্তা চেতনা ও শান্তিলাভের সহায়ক হতে পারে না । আসলে অস্ত্র মানুষকে বিদ্বেষ , হিংসা , ক্ষমতা ও দত্তের উপর নির্ভরশীল ও যুদ্ধবাজ করে তোলে , জন্ম দেয় পাপের । সংবেদনশীল কবি জানেন , প্রবলের অত্যাচার দমন করতে হলে , মানুষের যৌথতার প্রয়োজন । আর একমাত্র গানই পারে মানুষকে একত্রিত করতে । অস্ত্রের দ্বারা নীতিচ্যুত মানুষ শুধু অন্য মানুষের মনে ভয় প্রদর্শন করে ।
এই বিধ্বংসী কালো দিনের হাত থেকে একমাত্র বাঁচাতে পারে গান । তাই কবি অস্ত্র বিসর্জনের আহ্বান জানান । মানুষ স্বশক্তিতে উজ্জীবিত হয়ে অস্ত্র পায়ে ফেলে , মানবতার উজ্জীবনকে সার্থক করতে পারে । সে দানববৃত্তি আবেদনের তাৎপর্য পরিহার করে মানবিকতার চিরস্থায়ী মহিমাকে অর্জন করতে পারে । এ আবেদনের সাফল্য আসবে একমাত্র সৃজনশীলতার মাধ্যমে , মানুষের অন্তরস্থিত সুরময় সত্তার বিকাশ ঘটিয়ে । গান মানুষের মানবিক সত্তার স্ফুরণ ঘটায় । মানুষের মধ্যে যৌথতা , মূল্যবোধের জাগরণ ঘটিয়ে মানবসভ্যতার প্রকৃত বিকাশে সাহায্য করে ।
8. ‘ গান দাঁড়াল ঋষিবালক / মাথায় গোঁজা ময়ূরপালক —কোন কবিতার অংশ ? প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বক্তব্যটির তাৎপর্য বুঝিয়ে লেখো ।
Ans: উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি কবি জয় গোস্বামী রচিত ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতার অংশ । কবি মনে করেন অস্ত্র , মানবমনের হিংসা , অসূয়া , বিদ্বেষ ও যুদ্ধবৃত্তির দ্বারা মানুষের নেতিবাচক দিকের বিকাশ ঘটায় । অন্যদিকে , গান হল মানুষের অন্তরের সুরময় প্রকাশ , জীবনের যৌথতার প্রকাশ । অস্ত্রের দানবিক শক্তিকে গানের দৈব শক্তি দ্বারা জয় করা সম্ভব বলে কবি মনে করেন । তাই কবি এত দিনের ক্ষমতা , অহং – এর বর্ম খুলে সংস্কারমুক্ত , ভয়হীন মনে দেখতে বললেন যে ‘ গান দাঁড়াল ঋষিবালক / মাথায় গোঁজা ময়ূরপালক / তোমায় নিয়ে বেড়াবে গান / নদীতে , দেশগাঁয়ে
কবির মনে হয়েছে , অন্তরকে গানের ঝরনাধারায় পরিশুদ্ধ করতে হবে । কবি জানেন , গান মানুষের অন্তরের চিরবালকটিকে প্রকাশ করবে ; আর শৈশবের পবিত্রতায় মানুষ হয়ে উঠবে প্রকৃতিকোলের নিষ্পাপ রাখাল বালক , যার মাথায় বালক কৃয়ের মতোই ময়ূরপালক গোঁজা আছে । এভাবেই গান ক্লান্ত – অবসন্ন মানবপ্রাণের আরাম ঘটাবে । গান মানুষকে নিয়ে যাবে নদীতে , দেশে – গাঁয়ে । গানের তরঙ্গে মানুষের মনের ‘ অহং ‘ – এ আবদ্ধ মানবসত্তা প্রাণময়তার মুক্ত জোয়ারে ভেসে যাবে । এই পথেই পৃথিবীর ক্রমমুক্তি ঘটবে সমস্ত ভেদাভেদহীন মানবিকতার অবয়বহীন সুরের মূর্ছনায় , উদবোধন ঘটবে মানবতার ।
9. ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতাটির নামকরণ কতদূর সার্থক আলোচনা করো ।
Ans: ‘ নামকরণের সার্থকতা ‘ অংশটি দ্যাখো ।
10. তোমায় নিয়ে বেড়াবে গান / নদীতে , দেশগাঁয়ে —কার , কোন্ রচনার অংশ ? প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বক্তব্যটির তাৎপর্য বুঝিয়ে লেখো ।
Ans: আলোচ্য উদ্ধৃতাংশটি কবি জয় গোস্বামীর ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতার অংশ ।
→ পাঠ্য কবিতায় কবি অস্ত্রের বিরুদ্ধে গানকেই প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের মানবীয় ভাষা বলে মনে করেছেন । অস্ত্র মানুষের হিংসা , বিদ্বেষ , ক্ষমতা ও যুদ্ধবৃত্তির বাহক । তাই অস্ত্র কখনোই মানবসভ্যতার প্রগতির সূচক হতে পারে না । এমনকি অস্ত্র যেন সভ্যতার নিয়ামকও না – হয়ে ওঠে । কারণ অস্ত্র শুধু মানুষের মনে ভয়কে জাগ্রত রাখে । মানুষের শুভবুদ্ধির মৃত্যু ঘটায় , দানববৃত্তিকে চরমতা দান করে । তাই কবি অস্ত্রের বিরুদ্ধে গানকে নিয়ে এসেছেন কবিতায় শুধু নয় , সমাজভাবনায় ও মানবসভ্যতার উন্নতিকল্পে । গান মানুষের হৃদয়বৃত্তির প্রকাশ , গান মানুষের যৌথতার ধারক । শুদ্ধ – শুচি ঋষিবালকের মতো নিষ্কলুষ , সৃজনশীল গানের জাগরণের মধ্য দিয়েই কলুষময় অস্ত্রের ঔদ্ধত্যের চিরতরে বিনাশ ঘটানো সম্ভব হবে । গানের হাত ধরেই এক সজীবতার সুরময় প্রকাশ মানবসভ্যতার নতুন পথের দিশা খুঁজতে খুঁজতে দেশ , গাঁয়ে ও নদীতে পাড়ি জমাবে । আসলে দেশ , গাঁ বা নদী কোনো নির্দিষ্ট জায়গা নয় , যেখানেই অস্ত্রে রাঙানো ক্ষমতার দত্ত , সেখানেই গানের স্নিগ্ধতা ও শান্তি নিয়ে হাজির হবে মানুষের হৃদয়ে ঘুমিয়ে থাকা বিবেক ।
11. পাঠ্য কবিতায় প্রাপ্ত সমাজচিত্রটি নিজের ভাষায় লেখো ।
Ans: কবি জয় গোস্বামী একসময় তার ‘ গোঁসাই বাগান ‘ ( প্রথম খণ্ড ) -এ লিখেছিলেন , ‘ একজন কবি কবিতা লেখেন প্রধানত তার জীবনযাপন থেকে । এই জীবনকে ধরতে পারি ২৪ ঘণ্টার যাপিত সময়টি দিয়ে ভাগ করে । আসলে কবি জয় গোস্বামীর সংবেদনশীল সমাজমনস্ক ব্যক্তিসত্তাটি নানাভাবে তাঁর লেখায় বা কবিতায় প্রকাশ পায় । মানবতার শ্বাসত সত্য কবির অন্বিষ্ট তাই তাঁর কবিতায় বার বার সাধারণ মানুষের কথা উঠে আসে । তিনি একজন সমাজ – রূপকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে আপামর জনসাধারণের শুভবুদ্ধির উন্মেষ ঘটাতে চান , মানুষের কোমল পেলব মনটিকে অবলম্বন করে । তাই মানবতার শাশ্বত সত্যকে জাগ্রত করতেই তিনি অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ধরেন । কবিতায় প্রাপ্ত সমাজচিত্র কবির চোখে ধরা পড়েছে সমাজের অবক্ষয় , অরাজকতা ও শূন্যতা । আর এর পেছনে রয়েছে অস্ত্রের দত্ত ও ক্ষমতা । আসলে অস্ত্র মানে হিংসা , বিদ্বেষ , ভয় ও যুদ্ধবৃত্তির প্রকাশ । সে মানুষের দানবিক সত্তার প্রকাশ ঘটায় । আর কবির কথায় গান হল মানুষের সৃজনী সার প্রকাশক , মানুষের সুনিবিড় হৃদয়বৃত্তির বহিঃপ্রকাশ । তাই কবির অবলম্বন আজ গান । কবি বিশ্বাস করেন , গানের কোনো সীমাবন্ধতা নেই । তাই তিনি ঋবিবালকের মতো নিষ্পাপ গানকে সঙ্গী করে পৌঁছে যেতে যান পৃথিবীর আনাচেকানাচে । এ যেন কবির দায়ভার , এ যেন মানুষের বেঁচে থাকাকে শোভন , সুন্দর ও তাৎপর্যময় করে তোলার তাগিদ ।
12. ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতায় ভাষা , উপমা ও চিত্রকল্প ব্যবহারে যে অভিনবত্ব প্রকাশ পেয়েছে , তা নিজের ভাষায় লেখো ।
Ans: জয় গোস্বামী তাঁর ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ’ কবিতায় ভাষা , উপমা ও চিত্রকল্প ব্যবহারে অনবদ্য দক্ষতার ছাপ রেখেছেন । আধুনিক কালে কবিদের মধ্যে ভাষার ব্যবহারে তাঁর জুড়ি মেলা ভার । সাধারণ প্রচলিত শব্দকেও প্রয়োগ ও ব্যবহারের মাধ্যমে কাব্যগুলে গুণান্বিত করতে তিনি সিদ্ধহস্ত । পাঠ্য কবিতাটিতে তিনি ‘ অস্ত্র ’ , ‘ সহস্ৰ ’ প্রভৃতি তৎসম শব্দ ব্যবহারের পাশাপাশি ‘ আদুড় ‘ , ‘ দেশগাঁয়ের ’ মতো দেশি শব্দ অবলীলায় ব্যবহার করেছেন । দলবৃত্ত ছন্দে লেখা কবিতাটিকে অন্ত্যানুপ্রাস অলংকারের ব্যবহার করে কবি গতিময় করে তুলেছেন । আঠারো পক্তির এই কবিতায় কোনো পূর্ণযতি নেই ; অর্ধযতি হিসেবে চারবার কমা ও দু – জায়গায় হাইফেনের ব্যবহার লক্ষ করা যায় ।
জয় গোস্বামীর কবিপ্রতিভার অনন্যতা ধরা পড়েছে পাঠ্য কবিতার উপমা ও চিত্রকল্প ব্যবহারেও । কবি অস্ত্রের প্রতিরোধকল্পে যে – উপমা ( আমি উপমা – চিত্রকল্পের এখন হাজার হাতে পায়ে এগিয়ে আসি , ) ব্যবহার করেছেন কিংবা সেই প্রতিরোধের উপায় যে গান , ব্যবহার তার সম্বল কম বোঝাতে ( ‘ গান তো জানি একটা দুটো / আঁকড়ে ধরে সে – খড়কুটো ’ ) যে – উপমা ব্যবহার করেছেন তা অনবদ্য । চিত্রকল্পের ক্ষেত্রেও কবিকল্পনায় আশ্চর্য দৃষ্টান্ত দেখা যায় , যেমন— ‘ গানের বর্ম আজ পরেছি গায় ’ , ‘ আমার শুধু একটা কোকিল ‘ ইত্যাদি ।
13. কবি জয় গোস্বামীর ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতায় । যুদ্ধবিরোধী মনোভাবের যে প্রকাশ ঘটেছে , তা নিজের ভাষায় বিবৃত করো ।
Ans: জয় গোস্বামী একজন সমাজমনস্ক , সংবেদনশীল কবি । তাই তাঁর প্রতিবাদ সামাজিক অসংগতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে । কবিতার আঙ্গিক ও ভাষায় তিনি অন্তত ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ -কবির যুদ্ধবিরোধী মনোভাবের প্রকাশ তেমন দৃষ্টান্তই তুলে ধরেন । তাঁর কাব্য ও কবিতার ছত্রে ছত্রে প্রতিবাদী মুখগুলোর সমোচ্চারিত স্বর যেন অনুরণিত হয় । তবে তাঁর প্রতিবাদ যতটা না উচ্চকিত , তার চেয়েও বেশি মানবিক বিবেচনা – বিশ্লেষণে তৎপর । আমাদের পাঠ্য ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে । গান ‘ কবিতাটির মধ্য দিয়ে তাঁর যুদ্ধবিরোধী মনোভাবের এক আশ্চর্য প্রকাশ লক্ষ করা যায় । তবে এ প্রতিবাদ অস্ত্রের ঝনঝনানিতে নয় , বরং মানবিকতা , সৌহার্দ্য ও সুরপ্লাবী অন্তরের গানের সম্বলকে অবলম্বন করে । তাইতো কবি বলতে পেরেছেন , ‘ অস্ত্র ত্যাগ করে তাকে চরণতলে নামিয়ে রেখে একাকিত্বের বাঁধন কেটে অসংখ্য মানুষের পদচারণায় এগিয়ে যাচ্ছি । শুধুমাত্র ‘ গানের বর্ম ‘ অর্থাৎ আত্মশক্তি ও মানবিকতার বলে বলীয়ান হয়েই , হাত দিয়ে তিনি বুলেট তাড়াতে অর্থাৎ যুদ্ধের ভয়াবহতাকে থামিয়ে দিতে পারেন । কবি সীমিত শক্তি নিয়ে মানবিকতাকে খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরেন । নিজের বিবেকের বিশ্বাসের ওপর ভর করে প্রতিহিংসার রক্ত গানের অর্থাৎ মানবিকতার গায়ে মুছে চিল – শকুনকে ( অর্থাৎ সুযোগ ও সন্ধানী শক্তিকে ) উপেক্ষা করে তিনি এগিয়ে চলেন । কবি জানেন কোকিল বসন্তের দূত । আর বসন্ত যৌবনের প্রতীক । সেই যৌবনের ধর্মই তো নিজের বিশ্বাসের ওপর অহংকার । সেই মানবিক বিশ্বাসেই তিনি শত রক্তক্ষয়ী প্রতিকূলতাতেও পথ হাঁটেন । মানববিনাশী যুদ্ধ আর নয় । তিনি চান অস্ত্র ত্যাগ করে , হিংসার আবরণ খুলে , ঋষিবালকের বেশে গানের তথা মানবিকতার আবির্ভাব ঘটুক । এভাবেই পথেপ্রান্তরে গানের তথা মানবিকতার পুনর্জাগরণ ঘটবে , যুদ্ধকামী শত্রুদল পরাজিত হবে ও তাদের অস্ত্র অবনত হবে ।
—————
অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান (কবিতা) জয় গোস্বামী
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান (কবিতা) জয় গোস্বামী – মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন | Madhyamik Bengali Suggestion :
- কবিতায় ‘ অস্ত্র রাখো , অস্ত্র ফ্যালো পায়ে ‘ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?
Answer: অস্ত্রের অবস্থান কখনও উচ্চ আসনে হতে পারে না । তার অবস্থান সবসময় পায়ে অর্থাৎ নীচে হওয়াই বাঞ্ছনীয় বলে উক্ত পঙ্ক্তিতে বলা হয়েছে ।
- ‘ বর্ম খুলে দ্যাখো আদুড় গায়ে বলতে কবি কী বলেছেন ?
Answer: ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতা থেকে গৃহীত আলোচ্য উদ্ধৃতাংশে কবি , ‘ বর্ম ’ বলতে ক্ষমতা , বিদ্বেষ , অহংকার , লোভ , মোহ প্রভৃতির ‘ ধর্ম ‘ খুলে দেখার কথা বলেছেন ।
- ‘ আদুড় ‘ শব্দটি কবিতায় কোন্ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে ?
Ans; ‘ আদুড় ‘ শব্দের অর্থ খোলা বা অনাবৃত । কবিতায় এই শব্দটি ব্যবহারের মাধ্যমে কবি হিংসা বা বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাবের আবরণ খুলে উদার হওয়ার কথা বলেছেন ।
- গানকে প্রচারের মুখ্য সহায়ক হিসেবে রেখে কবিতায় আর কার আবির্ভাব ঘটেছে ?
Answer: অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতায় গানকে প্রচারের মুখ্য সহায়ক হিসেবে রেখে মাথায় ময়ূরপালক গোঁজা এক ঋষিবালকের আবির্ভাব হয়েছে ।
- কবিতায় ব্যবহৃত ঋষিবালকের মধ্যে কার ছায়াপাত ঘটেছে বলে তোমার ধারণা ।
অথবা , ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতার ঋষিবালক কীসের প্রতীক ।
Answer: ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতায় ঋষিবালকের মধ্যে যেন রাখাল বালক শ্রীকৃষ্ণের ছায়াপাত ঘটিয়েছেন কবি । এই ঋষিবালকের মতো , তাঁরও মাথায় ময়ূরপালক গোঁজা থাকত বলে কল্পনা করা হয় । কবিকল্পিত ঋষিবালক যেন সুরপ্নাবী এক শান্তিময় পৃথিবীর দ্রুত বা প্রতীক ।
- গান মানুষের সঙ্গী হয়ে কোথায় কোথায় বেড়াবে বলে কবিতায় উল্লেখ আছে ?
অথবা , ‘ তোমায় নিয়ে বেড়াবে গান গান তোমায় নিয়ে কোথায় বেড়াবে ?
Answer: ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ’ কবিতা অনুসারে গান মানুষকে সঙ্গী করে ঘুরে বেড়াবে নদীতে , দেশে ও গাঁয়ে অর্থাৎ গানের মধ্যে দিয়ে শান্তি ও মুক্তিকামী মানুষের জীবনগাথা দূরদূরান্তে ছড়িয়ে পড়বে এমনটাই কবির বিশ্বাস ।
- কবির শেষ পঙ্ক্তিতে ‘ গানের দুটি পায়ে বলার কারণ কী ?
Answer: মানুষ তার ঔদ্ধত্যকে যেভাবে দেবতার চরণে নিবেদন করে তেমনই কবি অস্ত্রের বলে বলীয়ান অহংকারীদের মানবতার প্রতীক গানের পায়ে তাদের ঔদ্ধত্যের অস্ত্রকে সমর্পণ করতে বলেছেন ।
- অস্ত্র ধরার পরিবর্তে কবি জয় গোস্বামী কী নিতে বলেছেন ?
Answer: ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতায় কবি জয় গোস্বামী অস্ত্র ধরার পরিবর্তে গানের সম্মোহনী শক্তিকে সম্বল করে পথ চলার কথা বলেছেন ।
- ঋষিবালকের মাথায় কী গোঁজা রয়েছে ?
Answer: জয় গোস্বামীর ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতা অনুসারে ঋষিবালকের মাথায় ময়ূরের পালক গোঁজা রয়েছে ।
- ‘ গান দাঁড়াল ঋষিবালক ‘ – এ কথা বলার অর্থ কী ?
Answer: গান কেবল প্রতিবাদের বাহন নয় , যুদ্ধকে প্রতিহত করতে পারলে এই গানের মধ্যেই খুঁজে পাওয়া যায় শান্তি ও স্নিগ্ধতার মধুর সুর । এই কারণেই গান হয়ে যায় ‘ ঋষিবালক ‘ – এর ন্যায় শান্ত , স্নিগ্ধ ।
- ‘ আঁকড়ে ধরে সে – খড়কুটো ‘ — ‘ সে – খড়কুটো ‘ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?
Answer: ‘ ‘ খড়কুটো ’ শব্দটির অর্থ শুকনো ঘাস বা বিচালি । ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতায় কবি যুদ্ধ কিংবা মারণাস্ত্রের প্রয়োগে বিপর্যস্ত পৃথিবীর বুকে দিশাহীন মানুষকে খড়কুটোর মতো সামান্য কিংবা তুচ্ছ অবলম্বনকে আঁকড়ে ধরেই এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে বলেছেন ।
- ‘ আমি এখন হাজার হাতে পায়ে / এগিয়ে আসি , উঠে দাঁড়াই ’ — কাদের এগিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে ?
Answer: অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতা থেকে গৃহীত প্রদত্ত অংশটিতে যুদ্ধবিরোধী সাধারণ মানুষের এগিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে ।
- ‘ গানের বর্ম আজ পরেছি গায়ে গানের বর্ম পরে কী করছেন ?
Answer: ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতায় কবি বন্দুক থেকে ছুটে আসা বুলেট প্রতিরোধের জন্য গানের বর্ম ধারণ করেছেন । অর্থাৎ তিনি মানুষের পৈশাচিক সত্তাকে প্রতিহত করতে গানের মূর্ছনাকে রক্ষাকবচ হিসেবে তুলে ধরেছেন ।
- ‘ অস্ত্র ফ্যালো’— এই শব্দবন্ধটি বারবার উচ্চারণের কারণ কী ?
Answer: মানবতা – বিরোধী সমস্ত রকম শক্তিকে প্রতিহত করতে উন্মুখ কবি ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতায় ‘ অস্ত্র ফ্যালো ‘ শব্দবন্ধনটিকে ধ্রুবপদের মতো বারবার উচ্চারণ করেন ।
- ‘ হাত নাড়িয়ে বুলেট তাড়াই’— কবি কেন এ কথা বলেছেন ?
Answer: প্রশ্নোদৃত উক্তিটির মাধ্যমে ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতায় কবি মানুষের দানবীয় ও পৈশাচিক হিংস্রতাকে অবজ্ঞা করে , সৎসাহস আর মানবিকতায় ভর করে এগিয়ে চলার কথা বলেছেন ।
- বর্ম খুলে দ্যাখো’- ‘ বর্ম ‘ খুললে কী দেখা যায় ?
Answer: ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতা থেকে গৃহীত উদ্ধৃতিতে কবি ‘ বর্ম ’ বলতে এখানে , হিংসা , লোভ – বিদ্বেষ – ক্ষমতা ও অহংকারের অমানুষী বর্ম খুলে দেখার কথা বলেছেন ।
- ‘ উন্মাদের পাঠক্রম ‘ কাব্যগ্রন্থটির রচয়িতার নাম কী ?
Answer: ‘ উন্মাদের পাঠক্রম ’ কাব্যগ্রন্থটির রচয়িতার নাম জয় গোস্বামী ।
- ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতায় কী ফেলার কথা বলা হয়েছে ?
Answer: ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ’ কবিতায় অস্ত্র ফেলার কথা বলা হয়েছে ।
- ‘ অস্ত্র ফ্যালো , অস্ত্র রাখো’- কোথায় অস্ত্র ফেলার কথা বলা হয়েছে ?
Answer: ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতায় কবি জয় গোস্বামী অস্ত্রকে হাত থেকে নামিয়ে পায়ে রাখার কথা বলা হয়েছে ।
- ‘ অস্ত্র ফ্যালো , অস্ত্র রাখো পায়ে বলতে কী বলা হয়েছে ? অথবা , ‘ অস্ত্র ফ্যালো’— কবি অস্ত্র ফেলার কথা বলেছেন কেন ?
Answer: কবির মতে , অস্ত্রের ব্যবহারে হিংসা , বিদ্বেষ বা মৃত্যুর মতো মানবতা – বিরোধী শক্তির বিকাশ ঘটে । এই অশুভ শক্তির বিনাশার্থে কবি ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতায় অস্ত্রকে পায়ে রাখতে বা পরিহার করতে বলেছেন ।
- অস্ত্রের বিরুদ্ধে কবির হাজার হাতে – পায়ে এগিয়ে আসার অর্থ কী ?
Answer: ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতা অনুসারে অস্ত্র যেহেতু মানুষের দানববৃত্তির প্রকাশ , তাই তাকে সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিরোধ করতেই কবি হাজার হাতে – পায়ে এগিয়ে আসার কথা বলেছেন ।
- ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতায় হাত নাড়িয়ে কী তাড়ান ?
Answer: অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতায় কবি হাত নাড়িয়ে বন্দুকের গুলি বা বুলেট তাড়ান । অর্থাৎ মানুষের পাশবিক প্রবৃত্তিকে অবজ্ঞা করে এগিয়ে চলেন ।
- কবি ছুটে আসা বুলেটের প্রতিরোধ করতে কী ব্যবস্থা নেন ?
Answer: ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতা অনুসারে কবি বন্দুক থেকে ছুটে আসা বুলেটের প্রতিরোধ গড়তে গানের বর্ম ধারণ করেন ।
- ‘ গানের বর্ম আজ পরেছি গায়ে বলার কারণ কী ?
Answer: কবির মতে , অশুভ শক্তির সঙ্গে অসহায় মানুষের ও মানবতার যে – সংগ্রাম , সেই সংগ্রামে অসহায় মানুষের অঙ্গাবরণ হল গান । গানই পারে অমঙ্গলের হাত থেকে মানবতাকে বাঁচাতে ।
- ‘ গানের বর্ম আজ পরেছি গায়ে ‘ — গানের কর্ম পরিধান করে কবি কোন কাজ করতে পারেন ?
Answer: জয় গোস্বামী তাঁর ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতায় আত্মবিশ্বাসী এই ভেবে যে , বিশ্বব্যাপী অস্ত্রের ঝনঝন শব্দকে তিনি গান দিয়ে জয় করবেন । তাই তিনি গানের বর্ম পরেছেন ।
- ‘ গান তো জানি একটা দুটো – ‘ একটা দুটো ’ মানে কী ?
Answer: জয় গোস্বামীর ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতায় তিনি ‘ একটা দুটো ’ বলতে সামান্য কিছুকে ইঙ্গিত করেছেন । কবিতায় শব্দবন্ধটিকে কবি তাৎপর্যপূর্ণভাবে ব্যবহার করে সাধারণের স্বল্প সাধ্যের কথা তুলে ধরেছেন ।
- ‘ গান তো জানি … খড়কুটো— বলার কারণ কী ?
Answer: উদ্ধৃত অস্ত্রের কাছে মানবতা আজ অসহায় । কবির বিশ্বাস সামান্য গানকে সম্বল করেই মানবতা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে জয়ী হওয়া সম্ভব । গানের সীমিত শক্তিকে বোঝাতে ‘ খড়কুটো ’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ।
- ‘ খড়কুটো ’ শব্দের অর্থ কী ?
Answer: ‘ খড়কুটো ‘ শব্দটির প্রকৃত অর্থ বিচালি বা শুকনো ঘাস । দিশেহারা মানুষের সামনে মুক্তি পাওয়ার সামান্যতম অবলম্বন বোঝাতে শব্দটি ব্যবহৃত হয় ।
- ‘ রক্ত মুছি গানের গায়ে — কথাটির অর্থ কী ?
Answer: অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতার কথক গানের গায়ে রক্ত মোছেন । এখানে ‘ রক্ত ‘ হয়ে ওঠে মনুষ্যত্বের অপচয়ের প্রতীক । আর এই অপচয়কে রুখতে পারে একমাত্র মানুষের সৃষ্টিশীলতা ।
- কবির গানের গায়ে রক্ত মোছার কারণটি কী ?
Answer: বিশ্বব্যাপী যে – হানাহানি শুরু হয়েছে তা আসলে মনুষ্যত্বের অবক্ষয় । মানুষের সৃজনশীলতাই একমাত্র এই অবক্ষয় বুখতে পারে । তাই কবি রক্তকে গানের গায়ে মুছতে চান ।
- ‘ মাথায় কত শকুন বা চিল’— ‘ শকুন বা চিল শব্দটি কবিতায় কী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে ?
Answer: অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতানুসারে ‘ শকুন বা চিল ‘ এই দুটি মাংসাশী পাখিকে যুদ্ধবাজ , ক্ষমতালিপু ও সুযোগসন্ধানী মানুষের প্রতীকরূপে ব্যবহার করা হয়েছে । সংখ্যায় এরা অল্প হলেও , মানবেতিহাসে এদের উপস্থিতি চিরকালীন ।
- কবি কাকে সম্বল করে গান বাঁধতে চান ?
Answer: ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতানুসারে কবি শুধু তাঁর বুকের ভেতরের কোকিলটিকে নিয়ে নানান উপায়ে গান বাঁধবার কৌশল আয়ত্ত করে অস্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চান ।
- অন্য কোনো গান গাওয়া পাখির উপস্থিতি না- ঘটিয়ে কবিতায় কেন কোকিলের অবতারণা করা হয়েছে ?
Answer: হিংসাকে জয় করতে পারে হৃদয়ের মাধুর্য , তারুণ্য ও যৌবন । কোকিল হল বসন্তের অগ্রদূত , তারুণ্য ও মাধুর্যের প্রতীক । তাই ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতায় কোকিলের অবতারণা করা হয়েছে ।
- কবি কেন কোকিলকে সহস্র উপায়ে গান বাঁধতে বলেছেন ?
Answer: কোকিলের সহস্র উপায়ে গান বাঁধা বলতে ঔদ্ধত্যের সঙ্গে লড়াইতেও কৌশলী হওয়া কাম্য , তা বোঝাতেই কবি এমন উক্তি করেছেন ।
MCQ | অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান (কবিতা) জয় গোস্বামী – মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন | Madhyamik Bengali Suggestion :
- গানের বর্ম আজ পরেছি । (A) পায়ে (B) হাতে (C) পাখায় (D) গায়ে
Answer:
- ‘ কর্ম ‘ শব্দের অর্থ -(A) কবচ (B) হার (C) পুঁতি(D) চামর
Answer: (A) কবচ
- ‘ গান তো জানি – (A) একটা / তিনটা (B) একটা / চারটা (C) একটা / দুটো(D) একটা / পাঁচটা
Answer: (C) একটা / দুটো
- গান তো জানি একটা দুটো ‘ বলতে বলা হয়েছে -(A) সামান্য (B) মাঝারি (C) অনেক(D) অপ্রতুল
Answer: (A) সামান্য
- ‘ আঁকড়ে ‘ শব্দটির অর্থ— (A) জড়িয়ে (B) পরিয়ে(C) মাড়িয়ে (D) ছড়িয়ে
Answer: (A) জড়িয়ে
- ‘ আঁকড়ে ধরে সে – খড়কুটো ‘ — ‘ সে – খড়কুটো ‘ বলতে বোঝাচ্ছে -(A) সামান্য সম্বল (B) গুরুত্বহীন (C) বহু মূল্যবান (D) খাদ্য – জাতীয়
Answer: (A) সামান্য সম্বল
- গানের গায়ে মোছা হয়— (A) অস্ত্র (B) চোখের জল (C) ময়লা (D) রক্ত
Answer: (D) রক্ত
- মাথায় আছে শকুন অথবা -(A) কাক (B) চিল (C) বক (D) চড়াই
Answer: (B) চিল
- সহস্র উপায়ে গান বাঁধত— (A) চিল – শকুন (B) শ্যামা (C) কোকিল(D) দোয়েল
Answer: (C) কোকিল
- কোকিল হল— (A) শরৎদূত (B) বর্ষাদূত(C) বসন্তদূত(D) হেমন্তদূত
Answer: (C) বসন্তদূত
- শকুন বা চিল বলতে বোঝানো হয়েছে -(A) উদার মানুষকে (B) সুযোগসন্ধানী মানুষকে(C) ভালো মানুষকে (D) সংখ্যালঘু মানুষকে
Answer: (B) সুযোগসন্ধানী মানুষকে
- ‘ সহস্র উপায়ে ‘ শব্দের অর্থ বলতে কবিতায় বলা হয়েছে -(A) অনেক উপায়ে (B) অল্প উপায়ে (C) মধ্যম উপায়ে(D) শাব্দিক উপায়ে
Answer: (A) অনেক উপায়ে
- বর্ম খুলে দ্যাখো -(A) জামা (B) আদুড় (C) নোংরা (D) সুগন্ধ
Answer: (B) আদুড়
- কবিতায় ঋষিবালকের প্রসঙ্গ রয়েছে -(A) পরিত্রাতা হিসেবে (B) কবিতাকথক হিসেবে(C) স্বার্থান্বেষী হিসেবে (D) কবি হিসেবে
Answer: (A) পরিত্রাতা হিসেবে
- ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতাটির কবি হলেন— (A) শঙ্খ ঘোষ (B) জীবনানন্দ দাশ(C) বিষ্ণু দে (D) জয় গোস্বামী
Answer: (D) জয় গোস্বামী
- ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতাটির উৎস হল – (A) পাখি , হুস (B) ভালোটি বাসিব(C) পাতার পোষাক(D) ভুতুমভগবান
Answer: (C) পাতার পোষাক
- জয় গোস্বামীর একটি বিখ্যাত কাব্য হল – (A) মরুমায়া(B) বনলতা সেন (C) সর্বহারা (D) ঘুমিয়েছ , ঝাউপাতা
Answer: (D) ঘুমিয়েছ , ঝাউপাতা
- ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতাটির মূলগ্রন্থ ‘ পাতার পোষাক ‘ – এর রচনাকাল -(A) ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দ (B) ২০০০ খ্রিস্টাব্দ (C) ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দ(D) ২০০১ খ্রিস্টাব্দ
Answer: (A) ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দ
- ‘ পাতার পোষাক ‘ কাব্যগ্রন্থটির জন্য কবি জয় গোস্বামী পান -(A) আনন্দ পুরস্কার(B) সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার(C) বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় স্মৃতি পুরস্কার(D) কিছূল সাহিত্য পুরস্কার
Answer: (B) সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার
- ‘ অস্ত্র ‘ শব্দের আক্ষরিক অর্থ -(A) হাতিয়ার(B) কণ্ঠসংগীত(C) গুঞ্জন (D) বাদ্যযন্ত্র
Answer: (A) হাতিয়ার
- ‘ বিরুদ্ধে ‘ শব্দের আক্ষরিক অর্থ -(A) বিপরীতে (B) অমিল (C) সহজে(D) সামনে
Answer: (A) বিপরীতে
- ‘ গান ‘ শব্দের আক্ষরিক অর্থ -(A) নৃত্য (B) রঙ্গরস (C) গীতি(D) সস্ত্র
Answer: (C) গীতি
- ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতার প্রথম পঙ্ক্তিটি হল— (A) অস্ত্র ফ্যালো , অস্ত্র রাখো পায়ে (B) ‘ গান বাঁধিবে সহস্ৰ উপায়ে (C) অস্ত্র রাখো , অস্ত্র ফ্যালো পায়ে ‘ (D) অস্ত্র ফ্যালো , অস্ত্র রাখো গানের দুটি পায়ে
Answer: (A) অস্ত্র ফ্যালো , অস্ত্র রাখো পায়ে
- আমি এখন হাতে পায়ে ।(A) লক্ষ (B) হাজার (C) শত(D) একক
Answer: (B) হাজার
- কবিতায় বর্ণিত ‘ আমি ’ হল -(A) জনৈক আত্মীয়(B) রাজা(C) কবি স্বয়ং(D) সৈনিক
Answer: (C) কবি স্বয়ং
- আসি , উঠে দাঁড়াই । ‘ (A) সামনে (B) দূরে(C) এগিয়ে (D) পিছনে
Answer: C) এগিয়ে
- ‘ বুলেট ‘ – এর অর্থ হল – (A) কাচের গুলি(B) বন্দুকের গুলি (C) প্লাস্টিকের খেলনা (D) মানুষের শরীর
Answer: (B) বন্দুকের গুলি
- কবি কীভাবে বুলেট তাড়ান ?(A) শরীর দুলিয়ে (B) মাথা নাড়িয়ে(C) পা দুলিয়ে(D) হাত নাড়িয়ে
Answer: (D) হাত নাড়িয়ে
- কী প্রতিরোধ করতে কবি গানের বর্ম পরেছেন ?(A) কথা (B) শব্দ(C) ধ্বনি (D) অস্ত্র
Answer: (D) অস্ত্র
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর | অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান (কবিতা) জয় গোস্বামী – মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন | Madhyamik Bengali Suggestion :
1. ‘ অস্ত্র রাখো , অস্ত্র ফ্যালো পায়ে- কার উদ্দেশ্যে । এমন আবেদন ? এমন আবেদন করার কারণ কী ? এ আবেদনের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো ।
Answer: আবেদনের কারণ উত্তর কবি জয় গোস্বামী তাঁর ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতায় পৃথিবীর সমস্ত শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের উদ্দেশ্যে এ আবেদন করেছেন । [ ] অস্ত্রকে সঙ্গী করার কারণে মানবসভ্যতা ক্রমশ ধ্বংস – পথগামী । কবি জানেন , অস্ত্র কখনও কোনো শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের চিন্তা চেতনা ও শান্তিলাভের সহায়ক হতে পারে না । আসলে অস্ত্র মানুষকে বিদ্বেষ , হিংসা , ক্ষমতা ও দত্তের উপর নির্ভরশীল ও যুদ্ধবাজ করে তোলে , জন্ম দেয় পাপের । সংবেদনশীল কবি জানেন , প্রবলের অত্যাচার দমন করতে হলে , মানুষের যৌথতার প্রয়োজন । আর একমাত্র গানই পারে মানুষকে একত্রিত করতে । অস্ত্রের দ্বারা নীতিচ্যুত মানুষ শুধু অন্য মানুষের মনে ভয় প্রদর্শন করে ।
এই বিধ্বংসী কালো দিনের হাত থেকে একমাত্র বাঁচাতে পারে গান । তাই কবি অস্ত্র বিসর্জনের আহ্বান জানান । মানুষ স্বশক্তিতে উজ্জীবিত হয়ে অস্ত্র পায়ে ফেলে , মানবতার উজ্জীবনকে সার্থক করতে পারে । সে দানববৃত্তি আবেদনের তাৎপর্য পরিহার করে মানবিকতার চিরস্থায়ী মহিমাকে অর্জন করতে পারে । এ আবেদনের সাফল্য আসবে একমাত্র সৃজনশীলতার মাধ্যমে , মানুষের অন্তরস্থিত সুরময় সত্তার বিকাশ ঘটিয়ে । গান মানুষের মানবিক সত্তার স্ফুরণ ঘটায় । মানুষের মধ্যে যৌথতা , মূল্যবোধের জাগরণ ঘটিয়ে মানবসভ্যতার প্রকৃত বিকাশে সাহায্য করে ।
2. ‘ গান দাঁড়াল ঋষিবালক / মাথায় গোঁজা ময়ূরপালক —কোন কবিতার অংশ ? প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বক্তব্যটির তাৎপর্য বুঝিয়ে লেখো ।
Answer: উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি কবি জয় গোস্বামী রচিত ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতার অংশ । কবি মনে করেন অস্ত্র , মানবমনের হিংসা , অসূয়া , বিদ্বেষ ও যুদ্ধবৃত্তির দ্বারা মানুষের নেতিবাচক দিকের বিকাশ ঘটায় । অন্যদিকে , গান হল মানুষের অন্তরের সুরময় প্রকাশ , জীবনের যৌথতার প্রকাশ । অস্ত্রের দানবিক শক্তিকে গানের দৈব শক্তি দ্বারা জয় করা সম্ভব বলে কবি মনে করেন । তাই কবি এত দিনের ক্ষমতা , অহং – এর বর্ম খুলে সংস্কারমুক্ত , ভয়হীন মনে দেখতে বললেন যে ‘ গান দাঁড়াল ঋষিবালক / মাথায় গোঁজা ময়ূরপালক / তোমায় নিয়ে বেড়াবে গান / নদীতে , দেশগাঁয়ে
কবির মনে হয়েছে , অন্তরকে গানের ঝরনাধারায় পরিশুদ্ধ করতে হবে । কবি জানেন , গান মানুষের অন্তরের চিরবালকটিকে প্রকাশ করবে ; আর শৈশবের পবিত্রতায় মানুষ হয়ে উঠবে প্রকৃতিকোলের নিষ্পাপ রাখাল বালক , যার মাথায় বালক কৃয়ের মতোই ময়ূরপালক গোঁজা আছে । এভাবেই গান ক্লান্ত – অবসন্ন মানবপ্রাণের আরাম ঘটাবে । গান মানুষকে নিয়ে যাবে নদীতে , দেশে – গাঁয়ে । গানের তরঙ্গে মানুষের মনের ‘ অহং ‘ – এ আবদ্ধ মানবসত্তা প্রাণময়তার মুক্ত জোয়ারে ভেসে যাবে । এই পথেই পৃথিবীর ক্রমমুক্তি ঘটবে সমস্ত ভেদাভেদহীন মানবিকতার অবয়বহীন সুরের মূর্ছনায় , উদবোধন ঘটবে মানবতার ।
3. তোমায় নিয়ে বেড়াবে গান / নদীতে , দেশগাঁয়ে —কার , কোন্ রচনার অংশ ? প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বক্তব্যটির তাৎপর্য বুঝিয়ে লেখো ।
Answer: আলোচ্য উদ্ধৃতাংশটি কবি জয় গোস্বামীর ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতার অংশ ।
→ পাঠ্য কবিতায় কবি অস্ত্রের বিরুদ্ধে গানকেই প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের মানবীয় ভাষা বলে মনে করেছেন । অস্ত্র মানুষের হিংসা , বিদ্বেষ , ক্ষমতা ও যুদ্ধবৃত্তির বাহক । তাই অস্ত্র কখনোই মানবসভ্যতার প্রগতির সূচক হতে পারে না । এমনকি অস্ত্র যেন সভ্যতার নিয়ামকও না – হয়ে ওঠে । কারণ অস্ত্র শুধু মানুষের মনে ভয়কে জাগ্রত রাখে । মানুষের শুভবুদ্ধির মৃত্যু ঘটায় , দানববৃত্তিকে চরমতা দান করে । তাই কবি অস্ত্রের বিরুদ্ধে গানকে নিয়ে এসেছেন কবিতায় শুধু নয় , সমাজভাবনায় ও মানবসভ্যতার উন্নতিকল্পে । গান মানুষের হৃদয়বৃত্তির প্রকাশ , গান মানুষের যৌথতার ধারক । শুদ্ধ – শুচি ঋষিবালকের মতো নিষ্কলুষ , সৃজনশীল গানের জাগরণের মধ্য দিয়েই কলুষময় অস্ত্রের ঔদ্ধত্যের চিরতরে বিনাশ ঘটানো সম্ভব হবে । গানের হাত ধরেই এক সজীবতার সুরময় প্রকাশ মানবসভ্যতার নতুন পথের দিশা খুঁজতে খুঁজতে দেশ , গাঁয়ে ও নদীতে পাড়ি জমাবে । আসলে দেশ , গাঁ বা নদী কোনো নির্দিষ্ট জায়গা নয় , যেখানেই অস্ত্রে রাঙানো ক্ষমতার দত্ত , সেখানেই গানের স্নিগ্ধতা ও শান্তি নিয়ে হাজির হবে মানুষের হৃদয়ে ঘুমিয়ে থাকা বিবেক ।
4. পাঠ্য কবিতায় প্রাপ্ত সমাজচিত্রটি নিজের ভাষায় লেখো ।
Answer: কবি জয় গোস্বামী একসময় তার ‘ গোঁসাই বাগান ‘ ( প্রথম খণ্ড ) -এ লিখেছিলেন , ‘ একজন কবি কবিতা লেখেন প্রধানত তার জীবনযাপন থেকে । এই জীবনকে ধরতে পারি ২৪ ঘণ্টার যাপিত সময়টি দিয়ে ভাগ করে । আসলে কবি জয় গোস্বামীর সংবেদনশীল সমাজমনস্ক ব্যক্তিসত্তাটি নানাভাবে তাঁর লেখায় বা কবিতায় প্রকাশ পায় । মানবতার শ্বাসত সত্য কবির অন্বিষ্ট তাই তাঁর কবিতায় বার বার সাধারণ মানুষের কথা উঠে আসে । তিনি একজন সমাজ – রূপকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে আপামর জনসাধারণের শুভবুদ্ধির উন্মেষ ঘটাতে চান , মানুষের কোমল পেলব মনটিকে অবলম্বন করে । তাই মানবতার শাশ্বত সত্যকে জাগ্রত করতেই তিনি অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ধরেন । কবিতায় প্রাপ্ত সমাজচিত্র কবির চোখে ধরা পড়েছে সমাজের অবক্ষয় , অরাজকতা ও শূন্যতা । আর এর পেছনে রয়েছে অস্ত্রের দত্ত ও ক্ষমতা । আসলে অস্ত্র মানে হিংসা , বিদ্বেষ , ভয় ও যুদ্ধবৃত্তির প্রকাশ । সে মানুষের দানবিক সত্তার প্রকাশ ঘটায় । আর কবির কথায় গান হল মানুষের সৃজনী সার প্রকাশক , মানুষের সুনিবিড় হৃদয়বৃত্তির বহিঃপ্রকাশ । তাই কবির অবলম্বন আজ গান । কবি বিশ্বাস করেন , গানের কোনো সীমাবন্ধতা নেই । তাই তিনি ঋবিবালকের মতো নিষ্পাপ গানকে সঙ্গী করে পৌঁছে যেতে যান পৃথিবীর আনাচেকানাচে । এ যেন কবির দায়ভার , এ যেন মানুষের বেঁচে থাকাকে শোভন , সুন্দর ও তাৎপর্যময় করে তোলার তাগিদ ।
5. ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতায় ভাষা , উপমা ও চিত্রকল্প ব্যবহারে যে অভিনবত্ব প্রকাশ পেয়েছে , তা নিজের ভাষায় লেখো ।
Answer: জয় গোস্বামী তাঁর ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ’ কবিতায় ভাষা , উপমা ও চিত্রকল্প ব্যবহারে অনবদ্য দক্ষতার ছাপ রেখেছেন । আধুনিক কালে কবিদের মধ্যে ভাষার ব্যবহারে তাঁর জুড়ি মেলা ভার । সাধারণ প্রচলিত শব্দকেও প্রয়োগ ও ব্যবহারের মাধ্যমে কাব্যগুলে গুণান্বিত করতে তিনি সিদ্ধহস্ত । পাঠ্য কবিতাটিতে তিনি ‘ অস্ত্র ’ , ‘ সহস্ৰ ’ প্রভৃতি তৎসম শব্দ ব্যবহারের পাশাপাশি ‘ আদুড় ‘ , ‘ দেশগাঁয়ের ’ মতো দেশি শব্দ অবলীলায় ব্যবহার করেছেন । দলবৃত্ত ছন্দে লেখা কবিতাটিকে অন্ত্যানুপ্রাস অলংকারের ব্যবহার করে কবি গতিময় করে তুলেছেন । আঠারো পক্তির এই কবিতায় কোনো পূর্ণযতি নেই ; অর্ধযতি হিসেবে চারবার কমা ও দু – জায়গায় হাইফেনের ব্যবহার লক্ষ করা যায় ।
জয় গোস্বামীর কবিপ্রতিভার অনন্যতা ধরা পড়েছে পাঠ্য কবিতার উপমা ও চিত্রকল্প ব্যবহারেও । কবি অস্ত্রের প্রতিরোধকল্পে যে – উপমা ( আমি উপমা – চিত্রকল্পের এখন হাজার হাতে পায়ে এগিয়ে আসি , ) ব্যবহার করেছেন কিংবা সেই প্রতিরোধের উপায় যে গান , ব্যবহার তার সম্বল কম বোঝাতে ( ‘ গান তো জানি একটা দুটো / আঁকড়ে ধরে সে – খড়কুটো ’ ) যে – উপমা ব্যবহার করেছেন তা অনবদ্য । চিত্রকল্পের ক্ষেত্রেও কবিকল্পনায় আশ্চর্য দৃষ্টান্ত দেখা যায় , যেমন— ‘ গানের বর্ম আজ পরেছি গায় ’ , ‘ আমার শুধু একটা কোকিল ‘ ইত্যাদি ।
6. কবি জয় গোস্বামীর ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতায় । যুদ্ধবিরোধী মনোভাবের যে প্রকাশ ঘটেছে , তা নিজের ভাষায় বিবৃত করো ।
Answer: জয় গোস্বামী একজন সমাজমনস্ক , সংবেদনশীল কবি । তাই তাঁর প্রতিবাদ সামাজিক অসংগতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে । কবিতার আঙ্গিক ও ভাষায় তিনি অন্তত ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ -কবির যুদ্ধবিরোধী মনোভাবের প্রকাশ তেমন দৃষ্টান্তই তুলে ধরেন । তাঁর কাব্য ও কবিতার ছত্রে ছত্রে প্রতিবাদী মুখগুলোর সমোচ্চারিত স্বর যেন অনুরণিত হয় । তবে তাঁর প্রতিবাদ যতটা না উচ্চকিত , তার চেয়েও বেশি মানবিক বিবেচনা – বিশ্লেষণে তৎপর । আমাদের পাঠ্য ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে । গান ‘ কবিতাটির মধ্য দিয়ে তাঁর যুদ্ধবিরোধী মনোভাবের এক আশ্চর্য প্রকাশ লক্ষ করা যায় । তবে এ প্রতিবাদ অস্ত্রের ঝনঝনানিতে নয় , বরং মানবিকতা , সৌহার্দ্য ও সুরপ্লাবী অন্তরের গানের সম্বলকে অবলম্বন করে । তাইতো কবি বলতে পেরেছেন , ‘ অস্ত্র ত্যাগ করে তাকে চরণতলে নামিয়ে রেখে একাকিত্বের বাঁধন কেটে অসংখ্য মানুষের পদচারণায় এগিয়ে যাচ্ছি । শুধুমাত্র ‘ গানের বর্ম ‘ অর্থাৎ আত্মশক্তি ও মানবিকতার বলে বলীয়ান হয়েই , হাত দিয়ে তিনি বুলেট তাড়াতে অর্থাৎ যুদ্ধের ভয়াবহতাকে থামিয়ে দিতে পারেন । কবি সীমিত শক্তি নিয়ে মানবিকতাকে খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরেন । নিজের বিবেকের বিশ্বাসের ওপর ভর করে প্রতিহিংসার রক্ত গানের অর্থাৎ মানবিকতার গায়ে মুছে চিল – শকুনকে ( অর্থাৎ সুযোগ ও সন্ধানী শক্তিকে ) উপেক্ষা করে তিনি এগিয়ে চলেন । কবি জানেন কোকিল বসন্তের দূত । আর বসন্ত যৌবনের প্রতীক । সেই যৌবনের ধর্মই তো নিজের বিশ্বাসের ওপর অহংকার । সেই মানবিক বিশ্বাসেই তিনি শত রক্তক্ষয়ী প্রতিকূলতাতেও পথ হাঁটেন । মানববিনাশী যুদ্ধ আর নয় । তিনি চান অস্ত্র ত্যাগ করে , হিংসার আবরণ খুলে , ঋষিবালকের বেশে গানের তথা মানবিকতার আবির্ভাব ঘটুক । এভাবেই পথেপ্রান্তরে গানের তথা মানবিকতার পুনর্জাগরণ ঘটবে , যুদ্ধকামী শত্রুদল পরাজিত হবে ও তাদের অস্ত্র অবনত হবে ।
7. ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতায় কবি অস্ত্র ফেলতে বলেছেন কেন ? অস্ত্র পায়ে রাখার মর্মার্থ কী ?
Answer: বর্তমান বিশ্বের প্রেক্ষাপটে জয় গোস্বামীর ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতাটি সময়ের এক আশ্চর্য দলিল । হিংস্রতায় পরিপূর্ণ এই পৃথিবীতে অস্ত্রের পিছনে দেদার অর্থ খরচ হচ্ছে , কিন্তু অন্যদিকে নিরন্ন ও কর্মহীন মানুষের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই অঙ্গ ফেলতে বলার কারণ চলেছে । সামাজিক বৈষম্য বাড়ছে ক্রমাগত । সমরাক্সে সজ্জিত দেশগুলি নিজেদের প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য একতা , সৌভ্রাতৃত্ব ও মানবিকতার মতো চিরস্তন মূল্যবোধগুলিকে ধ্বংস করতে উদ্যত । অস্ত্রের ব্যবহারে মানুষের মনুষ্যত্ব – বিরোধী মঙ্গল কামনায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার নেতিবাচক দিকের চরমতম প্রকাশ ঘটে । তাই তাকে বিসর্জন দেওয়াই উচিত । এজন্যেই বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ কবি অস্ত্র ত্যাগ করে মানবজাতির মঙ্গল কামনায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ।
→ অস্ত্র কোনোদিন সভ্যতার নিয়ামক হতে পারে না । সে মানুষের হিংস্রতা , প্রভুত্ব ও ভীতি প্রদর্শনের হাতিয়ার রূপে প্রতিপন্ন হয় । তাই কবির কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলা যায় যে , অস্ত্র নয় , শস্ত্র নয় , রক্ত নয় , জয়ী হোক গান , জয়ী হোক সম্মিলিত মানব , জয়ী হোক মানবতা । ‘ আর এই মানবতার উন্মেষ ঘটাতে , শুভ বুদ্ধির উদয় ঘটাতে , কবি মনে করেন , সর্বপ্রথম অস্ত্রকে ত্যাগ করতে হবে । নিজের বিবেকবোধের চরণে উদ্ধৃত অস্ত্রকে সমর্পণ করতে হবে । এই অস্ত্র পায়ে রাখার অর্থ অস্ত্র ত্যাগ ও বিসর্জন । কবির মতে , এই ত্যাগের মধ্য দিয়েই মানুষ তার নেতিবাচক প্রবৃত্তিকে অবদমন করতে পারবে ।
8. পাঠ্য কবিতা অবলম্বনে অস্ত্র ও গানের ভূমিকা আলোচনা করো ।
অথবা , অস্ত্র ও গানের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কে , কেন জয়ী হয় কবিতা অবলম্বনে বুঝিয়ে বলো ।
Answer: আশাবাদী কবি জয় গোস্বামী তাঁর ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ’ কবিতার মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছেন যে অস্ত্র কখনোই মানবসভ্যতার নিয়ন্ত্রক ও নিয়ামক শক্তি হয়ে উঠতে পারে না । কিন্তু গান পারে এই অস্ত্রের শক্তিতে বলীয়ান সভ্যতার অবসান ঘটিয়ে মানবতাকে প্রতিষ্ঠা করতে । কারণ গান মানুষের হৃদয়াবেগের স্বাভাবিক প্রকাশ । ক্ষমা , মায়া , প্রেম ও স্বাধীনতার মতো চিরকালীন মানবিক আবেদনগুলি গানের মধ্য দিয়েই প্রকাশিত হয় । এখানে কবিতায় কবির বক্তব্যের সঙ্গে বিষয়ভাবনা একত্রিত হয়ে যায় । ‘ অস্ত্র ‘ মানে হাতিয়ার যা আত্মরক্ষার্থে বা অপরের ওপর প্রভুত্ব কায়েম করতে ব্যবহৃত হয় । তাই কবিতায় অস্ত্রকে নেতিবাচক শক্তির প্রকাশ ঘটাতে সক্ষম এক শক্তিশালী যন্ত্র হিসেবে দেখানো Lin হয়েছে । আর অন্যদিকে গান , তার সুরময়তার সাহায্যে মানুষের অন্তঃসত্তার বিকাশ ঘটায় ; যার সাহায্যে মানুষ তার হৃদয়বৃত্তির সুক্ষ্ম – সুন্দর প্রবাহে নিজে যেমন অবগাহন করে , তেমনি অন্যকেও উদ্বুদ্ধ ও আকৃষ্ট করে । এককথায় অস্ত্রের দানবিক শক্তিকে গানের মানবীয় শক্তির সাহায্যে পরাভূত করা সম্ভব । অস্ত্র প্রগতির লক্ষণ নয় , অস্ত্র মানবসভ্যতাকে দিশাহীন পথে চালিত করে , তার পতন ত্বরান্বিত করে । আর গান , সে তো অন্তরের ভালোবাসা , শান্তি আর মানবতার সাহায্যে মানুষের অন্তরের বিদ্বেষ দূর করে । কবি তাই এই কবিতায় মানবতার বিজয়কামনায় , অবিনাশী অবয়বহীন গানেরই জয় কামনা করেছেন ।
9. ‘ আমি এখন হাজার হাতে পায়ে কোন কবির কোন কবিতা থেকে নেওয়া ? ‘ আমি ‘ কে ? ‘ হাজার হাতে পায়ে বলতে তিনি কী বুঝিয়েছেন ব্যাখ্যা করো ।
Answer: কবি জয় গোস্বামী রচিত ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ’ কবিতা থেকে প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশটি গৃহীত হয়েছে ।
→ উদ্ধৃত রচনাংশে ‘ আমি ’ বলতে কবিতার কথককে বোঝানো হয়েছে । তবে এখানে কথক অস্ত্র প্রতিরোধ প্রত্যাশী সম্মিলিত মানবতায় বিশ্বাসী , শতসহস্র মানুষের প্রতিভূ হয়ে ‘ আমি ’ – এর পরিচয় ওঠেন ।
→ কবি একজন সাধারণ ও সামান্য মানুষ । অন্যদিকে অস্ত্রের ক্ষমতা প্রভূত । তাই অস্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে হলে যে বিপুল মানসিক শক্তির প্রয়োজন , তার জন্য প্রয়োজন সংঘবদ্ধ বিরুদ্ধতার । আর তা – ই প্রতীকায়িত হয়েছে সহস্র মানুষের প্রতিভূ – স্বরূপ ‘ হাজার হাতে পায়ে ’ শব্দবন্ধের মাধ্যমে । এই দৃঢ় প্রত্যয় শুধু ব্যক্তি মানুষের নয় , সম্মিলিত মানবতার । এজন্য কবি হাজার হাতে – পায়ে শুধু এগিয়েই আসেন না , উঠেও দাঁড়ান এবং হাত নাড়িয়ে তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বন্দুকের গুলিকে প্রতিহতও করেন । এ কারণেই তিনি বলেছেন ‘ এগিয়ে আসি , উঠে দাঁড়াই / হাত নাড়িয়ে বুলেট তাড়াই । ‘ অর্থাৎ অন্তরমনের অবজ্ঞাকে সম্বল করে চরম প্রতিকূলতাতেও লক্ষ্যে অবিচল থাকেন ।
10. ‘ গানের বর্ম আজ পরেছি গায়ে- কার কোন্ রচনাংশ ? মূল গ্রন্থ কী ? কে ‘ গানের বর্ম ’ পরেছে ? ‘ গানের বর্ম ’ বলার তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো ।
Answer: প্রশ্নোদ্ধৃত অংশটি কবি জয় গোস্বামী রচিত ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতার অংশ ।
→ কবিতাটির মূল গ্রন্থটি হল ‘ পাতার পোষাক ‘ । প্রকাশকাল ১৯৯৭ সাল । কবিতার কথক এই গানের বর্ম ধারণ করেছেন । কারণ অস্ত্র থেকে গানের কর্ম নির্গত গুলি বা বুলেটকে প্রতিরোধ করতে হলে গানই একমাত্র রক্ষাকবচ হয়ে ওঠে । ‘ গানের বর্ম ’ বলতে এখানে কবি মানবিকতা ও মঙ্গলময়তার সুরময় প্রকাশকেই বুঝিয়েছেন । কবি জানেন অস্ত্রের ক্ষমতা বিপুল , কিন্তু অস্ত্র হিংস্রতা ও দানববৃত্তি ছাড়া আর কিছুই নয় । আর অস্ত্র থেকে নির্গত তাৎপর্য বিশ্লেষণ দানবীয়তাকে প্রতিহত করতে , গানের মতো নরম ও পেলব হৃদয়বৃত্তির সুরমূর্ছনাই প্রয়োজন । তবেই গানের সাহায্যে , অস্ত্রের মতো পাশব শক্তিকে পরাহত করা যাবে । কেন – ন অস্ত্র যা পারে না , গান তা অনায়াসে করতে পারে । গান মানুষকে দানবত্ব পরিহার করে প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠতে শেখায় । উদ্ধৃতাংশে মানবাত্মার সেই জীবনজয়ী সুরের কথাই বলা হয়েছে ।
11. ‘ রক্ত মুছি শুধু গানের গায়ে রক্তপাত হওয়ার কারণ কী ? গানের গায়ে রক্ত মোছার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো ।
Answer: জয় গোস্বামীর ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতা থেকে উদ্ধৃতাংশটি গৃহীত হয়েছে । অস্ত্র মানুষের হিংসা , অসুয়া , বিদ্বেষ , যুদ্ধবৃত্তি ও ভীতি প্রদর্শনের সহায়ক । অস্ত্র মানুষের জীবন পর্যন্ত নাশ করে । তাই অস্ত্র কখনোই কোনো সভ্যতার প্রগতির সূচক হতে পারে না । মানবতাকে ধ্বংস করে পাশববৃত্তিকে রক্তপাত হওয়ার কারণ জয়যুক্ত করাই তার একমাত্র কাজ । যখনই কেউ অস্ত্রের বিরুদ্ধে লড়তে যায় , তখনই ঘটে রক্তপাত , তখনই ঘটে প্রাণহানি । দানববৃত্তির সহায়ক অস্ত্রের শক্তি তো পৈশাচিক হবেই । মানবতার পতন ঘটাতে পারলেই তাই অস্ত্রের জয় । কিন্তু কবির মতে মানুষকে অন্তর থেকে রূপান্তরিত করতে সক্ষম গানই শুধু এই দানবিক শক্তিকে পরাহত করতে পারে ।
কবি অস্ত্র দিয়ে অস্ত্রের বিরুদ্ধে না – লড়ে , গান দিয়ে অস্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চান । কিন্তু সে পথ কঠিন । অস্ত্রের আঘাতে ঘটে চলা ক্ষয় – অপচয় – হানাহানি ও রক্তপাতকে কবি গানের সজীবতা দিয়ে শোধন করতে চান । কারণ গান হল মানুষের যৌথতার সহায়ক , গানের মাধ্যমে মানুষে মানুষে মৈত্রীর বন্ধন ও ভালোবাসার বন্ধন সুদৃঢ় হয় । তাই কবি গানকে অবলম্বন করেই অস্ত্রের শক্তিকে প্রতিহত করতে উদ্যত । কবি গানের অন্তরশক্তির জোরে মানুষের হিংস্রতা থেকে । নির্গত বুলেটের আঘাতে জেগে থাকা রক্তের দাগকে চিরতরে মুছে ফেলায় বিশ্বাসী । অন্তর থেকে বিদ্বেষের বিষরক্ত গানের সুরলালিত্যেই চিরতরে ধুয়ে ফেলা যায় ।
12. ‘ আমার শুধু একটা কোকিল / গান বাঁধবে সহস্র উপায়ে –কোন্ প্রসঙ্গে এমন মন্তব্য ? মন্তব্যটির যথার্থতা বোঝাও ।
Answer: কবি জয় গোস্বামীর ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ‘ কবিতা থেকে উক্ত অংশটি গৃহীত । মানবতার মূল মন্ত্র হিংসা কোরো না । কিন্তু যে – কোনো অস্ত্র , মানুষের মধ্যে এই হিংসাবৃত্তির জন্মদাতা । কবি উদ্ধৃতাংশের প্রসঙ্গ তাই অস্ত্রের বিরুদ্ধ – শক্তি হিসেবে গানকে বেছে নিলেন । গান মানুষের হৃদয়বৃত্তির বিশুদ্ধ প্রকাশ । মানুষের অন্তরের সুরময় মানবতা গানের ভাষায় প্রকাশিত হয় । কিন্তু কবি জানেন , গান দিয়ে অস্ত্রের বিরুদ্ধতা করা খুব সহজ নয় । কারণ শকুন বা চিলরূপী সুযোগসন্ধানী মানুষের হানাদারি দৃষ্টি চতুর্দিকে প্রহরারত , তাই কোকিলের মতো বসন্তদূতকে তিনি সঙ্গী করে নেন ।
কবি আজ এক মহান কর্মে ব্রতী হয়েছেন । তাঁর সাধ্য সামান্য হলেও স্বপ্নের পথটি দৃঢ় । বসন্তদূত কোকিল শুষ্ক , রুক্ষ ও নিষ্প্রাণ পৃথিবীতে নবজীবনের বার্তা বয়ে আনে । কবির বিশ্বাস , এই রক্তাক্ত বিশ্বে ‘ কোকিল হয়ে উঠবে মানবমনের মানবিক সজীবতার প্রতীক । সে সুরের সহস্র কৌশলে , মৈত্রী ও সহৃদয়তায় জীবনের উজ্জীবনী গানে সকলকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হবে বলে কবির দৃঢ় ধারণা ।
————-
(১) নিচের বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :
১.১ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান হল একটি –
(ক) ভক্তি মূলক কবিতা
(খ) স্বদেশী কবিতা
(গ) প্রেমের কবিতা
(ঘ) যুদ্ধ বিরোধী কবিতা
উত্তর : (ঘ) যুদ্ধ বিরোধী কবিতা
১.২ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত –
(ক) ভুতুম ভগবান
(খ) ঘুমিয়েছো, ঝাউপাতা
(গ) পাতার পোশাক
(ঘ) পাগলী, তোমার সঙ্গে
উত্তর : (গ) পাতার পোশাক
১.৩ “আমি এখন হাজার হাতে পায়ে এগিয়ে আসি” – উদ্দীপ্ত লাইনটি নিচের কোন প্রসঙ্গটি উল্লেখ করেছে –
(ক) সভ্যতার বিবর্তন
(খ) মানুষের সংবদ্ধ প্রতিরোধ
(গ) সভ্যতার বিনাশ
(ঘ) মানুষের নব প্রজন্ম
উত্তর : (খ) মানুষের সংবদ্ধ প্রতিরোধ
১.৪ কবি জয় গোস্বামী অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতায় গানকে তুলনা করেছেন –
(ক) যন্ত্রের সঙ্গে
(খ) পোশাকের সঙ্গে
(গ) অস্ত্রের সঙ্গে
(ঘ) বর্মের সঙ্গে
উত্তর : (ঘ) বর্মের সঙ্গে
১.৫ “মাথায় কত শকুন বা চিল” – মাথায় চিল বা শকুন ওড়ার অর্থ কি? –
(ক) সমাজে মোড়ক লেগেছে
(খ) আদর্শহীন সমাজ যেন ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে
(গ) পাখিরা ভয় পেয়েছে
(ঘ) চিল শকুনিরা খাদ্যের সন্ধানে ঘুড়ছে
উত্তর : (খ) আদর্শ সমাজ যেন ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে
১.৬ “গান-বাঁধবে সহস্র উপায়ে” – কে গান বাঁধবে?
(ক) গায়ক
(খ) টিয়া
(গ) কোকিল
(ঘ) গীতিকার
উত্তর : (গ) কোকিল
১.৭ “আদর গায়ে” কথাটির অর্থ হলো –
(ক) অনাবৃত শরীরে
(খ) অস্ত্র মোড়া শরীরে
(গ) গানের বর্ম পরিহিত শরীরে
(ঘ) মাথায় ময়ূর পালক গোজা শরীরে
উত্তর : (ক) অনাবৃত শরীরে
১.৮ ঋষি বালক এর মাথায় কি গোঁজা আছে –
(ক) পাতা
(খ) রঙিন কাপড়
(গ) ময়ূর পালক
(ঘ) পালক
উত্তর : (গ) ময়ূর পালক
১.৯ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতায় শেষ লাইনে কবি কোথায় অস্ত্র রাখার কথা বলেছেন –
(ক) ঋষি বালক এর পায়ে
(খ) নদীর জলে
(গ) কথকের দুই পায়ে
(ঘ) গানের দুটি পায়ে
উত্তর : (ঘ) গানের দুটি পায়ে
১.১০ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতাটির কবি হলেন –
(ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(খ) জয় গোস্বামী
(গ) মধুসূদন দত্ত
(ঘ) কাজী নজরুল ইসলাম
উত্তর : (খ) জয় গোস্বামী
(২) নিচের অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :
২.১ “আমি এখন হাজার হাতে পায়ে / এগিয়ে আসি,” -হাজার হাতে পায়ে কথার অন্তর্নিহিত অর্থ টি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : মানুষ সংঘবদ্ধভাবে যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এগিয়ে আসছে।
২.২ “গানের বর্ম আজ পড়েছি গায়ে” – গানের বর্ম পরিধান করে কবি কোন কাজ করতে পারেন?
উত্তর : গানে শক্তি দিয়ে তিনি হিংসাকে পরাজিত করতে চেয়েছেন।
২.৩ “আঁকড়ে ধরে সে খরকুটো” – কবি খড়কুটো আঁকড়ে ধরে কি করেন?
উত্তর : অন্তিম অবলম্বন হিসেবে গ্রহণ করে তার রক্তাক্ত হৃদয়কে শুশ্রূষা দান করেন।
২.৪ “মাথায় কত শকুন বা চিল” – শকুন বা চিল কি?
উত্তর : সমাজ ও রাষ্ট্রের স্বার্থপর, অর্থলোভী অমানবিক মানুষ এবং তাদের হিংসাত্মক আত্মকেন্দ্রিক মানসিকতা বা চিন্তাভাবনার প্রতীক।
২.৫ “গান বাধবে সহস্র উপায়” – কে সহস্র উপায়ে গান বাঁধবে?
উত্তর : প্রেম গানের প্রতীক ও ভালবাসার প্রতীক কোকিলটি সহস্র উপায় গান বাঁধবে।
২.৬ “আমার শুধু একটা কোকিল” – একটা কোকিল কি করবে বলে কবির বিশ্বাস?
উত্তর : কবির বিশ্বাস একটা কোকিল হাজারো উপায় গান বাঁধবে এবং সমস্ত কলুষতা ধুয়ে দেবে।
২.৭ “বর্ম খুলে দেখো আদর গায়ে” – বর্ম বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর : ক্ষমতার দম্ভ, অহংকার, মোহ প্রভৃতিকে; যা মানুষের মনকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকে।
২.৮ “গান দাঁড়ালো ঋষি বালক” – ঋষি বালক এর তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : বাঁশির সুরের মূর্ছনায় জগৎবাসী কে অসুর দমন করে সুর প্রতিষ্ঠার আখিলায় শ্রীকৃষ্ণের মাথায় ময়ূরের পালক প্রসঙ্গেই এই উক্তিটি করা হয়েছে।
২.৯ “মাথায় গোজা ময়ূর পালক” – কার মাথায় ময়ূর পালক গজায় দেখা যায়?
উত্তর : শ্রীকৃষ্ণের মাথায়
২.১০ “অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান” কবিতায় অস্ত্রধারণ বিষয়ে কবি কি নির্দেশ দিয়েছেন?
উত্তর : যুদ্ধবাজ মানুষদের সুপথে ফিরে আসার অনুরোধ জানিয়ে তাদের অস্ত্রধারণ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
(৩) নিচের ব্যাখ্যামূলক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :
প্রশ্নঃ ‘আমি এখন হাজার হাতে পায়ে’ – কোন কবির কোন কবিতা থেকে নেওয়া? ‘আমি’ কে? ‘হাজার হাতে পায়ে’ বলতে তিনি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তরঃ কবি জয় গোস্বামী রচিত ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতা থেকে প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশটি গৃহীত হয়েছে।
কবি একজন সাধারণ ও সামান্য মানুষ। অন্যদিকে অস্ত্রের ক্ষমতা প্রভূত। তাই অস্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে হলে যে বিপুল মানসিক শক্তির প্রয়োজন, তার জন্য প্রয়োজন সংঘবদ্ধ বিরুদ্ধতার। আর তাই প্রতীকায়িত হয়েছে সহস্র মানুষের প্রতিভূ–স্বরূপ ‘হাজার হাতে পায়ে’ শব্দবন্ধের মাধ্যমে। এই দৃঢ় প্রত্যয় শুধু ব্যক্তি মানুষের নয়, সম্মিলিত মানবতার। এজন্য কবি হাজার হাতে পায়ে শুধু এগিয়েই আসেন না, উঠেও দাঁড়ান এবং হাত নাড়িয়ে তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বন্দুকের গুলিকে প্রতিহতও করেন। এ কারণেই তিনি বলেছেন ‘এগিয়ে আসি, উঠে দাঁড়াই/হাত নাড়িয়ে বুলেট তাড়াই। অর্থাৎ অন্তরমনের অবজ্ঞাকে সম্বল করে চরম প্রতিকূলতাতেও লক্ষ্যে অবিচল থাকেন।
প্রশ্নঃ ‘অস্ত্র ফ্যালো, অস্ত্র রাখো পায়ে’ – অস্ত্র সরিয়ে রাখার প্রভাব উল্লেখ করো।
উত্তরঃ জয় গোস্বামীর লেখা ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতাটির উদ্ধৃত পঙক্তিতে কবি অস্ত্র সংবরণের কথা বলেছেন। কবি মনে করেন, মানুষে-মানুষে মেলবন্ধন রচনা করাই সকলের ধর্ম। অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে কপিপয় মানুষ নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করে চলে। কিন্তু শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করার জন্যই তো সুন্দর পৃথিবীতে আসা। তাই মানুষের মনুষ্যত্ববোধের জাগরণ ঘটিয়ে একাত্মা হওয়া, ও প্রেমের গানে জগৎসংসারকে ভরিয়ে তোলাই সকলের সাধনা; আর এটিই অস্ত্র সরিয়ে রাখার প্রভাব বলে কবি মনে করেন।
প্রশ্নঃ ‘গানের বর্ম আজ পরেছি গায়ে’ – কার কোন্ রচনাংশ? কে ‘গানের বর্ম’ পরেছে? ‘গানের বর্ম’ বলার তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ প্রশ্নোদ্ধৃত অংশটি কবি জয় গোস্বামী রচিত ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতার অংশ।
কবিতার কথক এই গানের বর্ম ধারণ করেছেন। কারণ অস্ত্র থেকে গানের কর্ম নির্গত গুলি বা বুলেটকে প্রতিরোধ করতে হলে গানই একমাত্র রক্ষাকবচ হয়ে ওঠে। ‘গানের বর্ম’ বলতে এখানে কবি মানবিকতা ও মঙ্গলময়তার সুরময় প্রকাশকেই বুঝিয়েছেন। কবি জানেন অস্ত্রের ক্ষমতা বিপুল, কিন্তু অস্ত্র হিংস্রতা ও দানববৃত্তি ছাড়া আর কিছুই নয়। আর অস্ত্র থেকে নির্গত তাৎপর্য বিশ্লেষণ দানবীয়তাকে প্রতিহত করতে, গানের মতো নরম ও পেলব হৃদয়বৃত্তির সুরমূর্ছনাই প্রয়োজন। তবেই গানের সাহায্যে, অস্ত্রের মতো পাশব শক্তিকে পরাহত করা যাবে। কেননা অস্ত্র যা পারে না, গান তা অনায়াসে করতে পারে। গান মানুষকে দানবত্ব পরিহার করে প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠতে শেখায়। উদ্ধৃতাংশে মানবাত্মার সেই জীবনজয়ী সুরের কথাই বলা হয়েছে।
প্রশ্নঃ ‘বর্ম খুলে দ্যাখো আদুড় গায়ে’ – কবি কেন একথা বলেছেন?
উত্তরঃ সৃষ্টিশীল মানুষ মাত্রই আশাবাদী। কবি-সাহিত্যিকরাও তার ব্যতিক্রম নন। যুদ্ধলাঞ্ছিত, অবক্ষয়িত সমাজের মধ্যে বাস করেও, তাঁরা আগামী দিনের সুস্থ পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু, যে সমস্ত মানুষ স্বার্থান্ধতা, লোভ, হিংসা এবং দান্তিকতার বর্ম ধারণ করে থাকে, তারা এই সুন্দর পৃথিবীর আস্বাদ থেকে বঞ্চিত হয়। তাই কবি তাদের এইসমস্ত বর্ম খুলে আদুড় গায়ে অর্থাৎ অনাবৃত, পবিত্র মনে খোলা আকাশের নীচে এসে দাঁড়াতে বলেছেন। আত্মকেন্দ্রিক সাম্রাজ্যবাদী মানসিকতাকে সরিয়ে সকলকে শঙ্কাহীন মানসিকতায় উন্নীত হতে বলেছেন।
প্রশ্নঃ ‘রক্ত মুছি শুধু গানের গায়ে’ – রক্তপাত হওয়ার কারণ কী?
উত্তরঃ জয় গোস্বামীর ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতা থেকে উদ্ধৃতাংশটি গৃহীত হয়েছে। অস্ত্র মানুষের হিংসা, অসুয়া, বিদ্বেষ, যুদ্ধবৃত্তি ও ভীতি প্রদর্শনের সহায়ক। অস্ত্র মানুষের জীবন পর্যন্ত নাশ করে। তাই অস্ত্র কখনোই কোনো সভ্যতার প্রগতির সূচক হতে পারে না। মানবতাকে ধ্বংস করে পাশববৃত্তিকে রক্তপাত হওয়ার কারণ জয়যুক্ত করাই তার একমাত্র কাজ। যখনই কেউ অস্ত্রের বিরুদ্ধে লড়তে যায়, তখনই ঘটে রক্তপাত, তখনই ঘটে প্রাণহানি। দানববৃত্তির সহায়ক অস্ত্রের শক্তি তো পৈশাচিক হবেই। মানবতার পতন ঘটাতে পারলেই তাই অস্ত্রের জয়। কিন্তু কবির মতে মানুষকে অন্তর থেকে রূপান্তরিত করতে সক্ষম গানই শুধু এই দানবিক শক্তিকে পরাহত করতে পারে।
প্রশ্নঃ ‘আমার শুধু একটা কোকিল/গান বাঁধবে সহস্র উপায়ে’ – কোন্ প্রসঙ্গে এমন মন্তব্য?
উত্তরঃ কবি জয় গোস্বামীর ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতা থেকে উক্ত অংশটি গৃহীত। মানবতার মূল মন্ত্র হিংসা কোরো না। কিন্তু যে কোনো অস্ত্র, মানুষের মধ্যে এই হিংসাবৃত্তির জন্মদাতা। কবি উদ্ধৃতাংশের প্রসঙ্গ তাই অস্ত্রের বিরুদ্ধ শক্তি হিসেবে গানকে বেছে নিলেন। গান মানুষের হৃদয়বৃত্তির বিশুদ্ধ প্রকাশ। মানুষের অন্তরের সুরময় মানবতা গানের ভাষায় প্রকাশিত হয়। কিন্তু কবি জানেন, গান দিয়ে অস্ত্রের বিরুদ্ধতা করা খুব সহজ নয়। কারণ শকুন বা চিলরূপী সুযোগসন্ধানী মানুষের হানাদারি দৃষ্টি চতুর্দিকে প্রহরারত, তাই কোকিলের মতো বসন্তদূতকে তিনি সঙ্গী করে নেন।
প্রশ্নঃ ‘গান দাঁড়াল ঋষিবালক/মাথায় গোঁজা ময়ূরপালক’ – প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বক্তব্যটির তাৎপর্য বুঝিয়ে লেখো।
উত্তরঃ কবির মনে হয়েছে, অন্তরকে গানের ঝরনাধারায় পরিশুদ্ধ করতে হবে। কবি জানেন, গান মানুষের অন্তরের চিরবালকটিকে প্রকাশ করবে; আর শৈশবের পবিত্রতায় মানুষ হয়ে উঠবে প্রকৃতিকোলের নিষ্পাপ রাখাল বালক, যার মাথায় বালক কৃয়ের মতোই ময়ূরপালক গোঁজা আছে। এভাবেই গান ক্লান্ত অবসন্ন মানবপ্রাণের আরাম ঘটাবে। গান মানুষকে নিয়ে যাবে নদীতে, দেশে গাঁয়ে। গানের তরঙ্গে মানুষের মনের ‘অহং’–এ আবদ্ধ মানবসত্তা প্রাণময়তার মুক্ত জোয়ারে ভেসে যাবে। এই পথেই পৃথিবীর ক্রমমুক্তি ঘটবে সমস্ত ভেদাভেদহীন মানবিকতার অবয়বহীন সুরের মূর্ছনায়, উদবোধন ঘটবে মানবতার।
(৪) নীচের রচনাধর্মী প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :
প্রশ্নঃ কবি জয় গোস্বামীর ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায়। যুদ্ধবিরোধী মনোভাবের যে প্রকাশ ঘটেছে, তা নিজের ভাষায় বিবৃত করো।
উত্তরঃ জয় গোস্বামী একজন সমাজমনস্ক, সংবেদনশীল কবি। তাই তাঁর প্রতিবাদ সামাজিক অসংগতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে। কবিতার আঙ্গিক ও ভাষায় তিনি অন্তত ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান-কবির যুদ্ধবিরোধী মনোভাবের প্রকাশ তেমন দৃষ্টান্তই তুলে ধরেন। তাঁর কাব্য ও কবিতার ছত্রে ছত্রে প্রতিবাদী মুখগুলোর সমোচ্চারিত স্বর যেন অনুরণিত হয়। তবে তাঁর প্রতিবাদ যতটা না উচ্চকিত, তার চেয়েও বেশি মানবিক বিবেচনা–বিশ্লেষণে তৎপর। আমাদের পাঠ্য ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতাটির মধ্য দিয়ে তাঁর যুদ্ধবিরোধী মনোভাবের এক আশ্চর্য প্রকাশ লক্ষ করা যায়। তবে এ প্রতিবাদ অস্ত্রের ঝনঝনানিতে নয়, বরং মানবিকতা, সৌহার্দ্য ও সুরপ্লাবী অন্তরের গানের সম্বলকে অবলম্বন করে। তাইতো কবি বলতে পেরেছেন, ‘অস্ত্র ত্যাগ’ করে তাকে চরণতলে নামিয়ে রেখে একাকিত্বের বাঁধন কেটে অসংখ্য মানুষের পদচারণায় এগিয়ে যাচ্ছি। শুধুমাত্র ‘গানের বর্ম’ অর্থাৎ আত্মশক্তি ও মানবিকতার বলে বলীয়ান হয়েই, হাত দিয়ে তিনি বুলেট তাড়াতে অর্থাৎ যুদ্ধের ভয়াবহতাকে থামিয়ে দিতে পারেন। কবি সীমিত শক্তি নিয়ে মানবিকতাকে খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরেন। নিজের বিবেকের বিশ্বাসের ওপর ভর করে প্রতিহিংসার রক্ত গানের অর্থাৎ মানবিকতার গায়ে মুছে চিল–শকুনকে উপেক্ষা করে তিনি এগিয়ে চলেন। কবি জানেন কোকিল বসন্তের দূত। আর বসন্ত যৌবনের প্রতীক। সেই যৌবনের ধর্মই তো নিজের বিশ্বাসের ওপর অহংকার। সেই মানবিক বিশ্বাসেই তিনি শত রক্তক্ষয়ী প্রতিকূলতাতেও পথ হাঁটেন। মানববিনাশী যুদ্ধ আর নয়। তিনি চান অস্ত্র ত্যাগ করে, হিংসার আবরণ খুলে, ঋষিবালকের বেশে গানের তথা মানবিকতার আবির্ভাব ঘটুক। এভাবেই পথেপ্রান্তরে গানের তথা মানবিকতার পুনর্জাগরণ ঘটবে, যুদ্ধকামী শত্রুদল পরাজিত হবে ও তাদের অস্ত্র অবনত হবে।
প্রশ্নঃ ‘তোমায় নিয়ে বেড়াবে গান/নদীতে, দেশগাঁয়ে’ – কার, কোন্ রচনার অংশ? প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বক্তব্যটির তাৎপর্য বুঝিয়ে লেখো।
উত্তরঃ আলোচ্য উদ্ধৃতাংশটি কবি জয় গোস্বামীর ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতার অংশ।
পাঠ্য কবিতায় কবি অস্ত্রের বিরুদ্ধে গানকেই প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের মানবীয় ভাষা বলে মনে করেছেন। অস্ত্র মানুষের হিংসা, বিদ্বেষ, ক্ষমতা ও যুদ্ধবৃত্তির বাহক। তাই অস্ত্র কখনোই মানবসভ্যতার প্রগতির সূচক হতে পারে না। এমনকি অস্ত্র যেন সভ্যতার নিয়ামকও না হয়ে ওঠে। কারণ অস্ত্র শুধু মানুষের মনে ভয়কে জাগ্রত রাখে। মানুষের শুভবুদ্ধির মৃত্যু ঘটায়, দানববৃত্তিকে চরমতা দান করে। তাই কবি অস্ত্রের বিরুদ্ধে গানকে নিয়ে এসেছেন কবিতায় শুধু নয়, সমাজভাবনায় ও মানবসভ্যতার উন্নতিকল্পে। গান মানুষের হৃদয়বৃত্তির প্রকাশ, গান মানুষের যৌথতার ধারক। শুদ্ধ–শুচি ঋষিবালকের মতো নিষ্কলুষ, সৃজনশীল গানের জাগরণের মধ্য দিয়েই কলুষময় অস্ত্রের ঔদ্ধত্যের চিরতরে বিনাশ ঘটানো সম্ভব হবে। গানের হাত ধরেই এক সজীবতার সুরময় প্রকাশ মানবসভ্যতার নতুন পথের দিশা খুঁজতে খুঁজতে দেশ, গাঁয়ে ও নদীতে পাড়ি জমাবে। আসলে দেশ, গাঁ বা নদী কোনো নির্দিষ্ট জায়গা নয়, যেখানেই অস্ত্রে রাঙানো ক্ষমতার দত্ত, সেখানেই গানের স্নিগ্ধতা ও শান্তি নিয়ে হাজির হবে মানুষের হৃদয়ে ঘুমিয়ে থাকা বিবেক।
প্রশ্নঃ ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় কবি অস্ত্র ফেলতে বলেছেন কেন? অস্ত্র পায়ে রাখার মর্মার্থ কী?
উত্তরঃ বর্তমান বিশ্বের প্রেক্ষাপটে জয় গোস্বামীর ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতাটি সময়ের এক আশ্চর্য দলিল। হিংস্রতায় পরিপূর্ণ এই পৃথিবীতে অস্ত্রের পিছনে দেদার অর্থ খরচ হচ্ছে, কিন্তু অন্যদিকে নিরন্ন ও কর্মহীন মানুষের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই অঙ্গ ফেলতে বলার কারণ চলেছে। সামাজিক বৈষম্য বাড়ছে ক্রমাগত। সমরাক্সে সজ্জিত দেশগুলি নিজেদের প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য একতা, সৌভ্রাতৃত্ব ও মানবিকতার মতো চিরস্তন মূল্যবোধগুলিকে ধ্বংস করতে উদ্যত। অস্ত্রের ব্যবহারে মানুষের মনুষ্যত্ব–বিরোধী মঙ্গল কামনায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার নেতিবাচক দিকের চরমতম প্রকাশ ঘটে। তাই তাকে বিসর্জন দেওয়াই উচিত। এজন্যেই বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ কবি অস্ত্র ত্যাগ করে মানবজাতির মঙ্গল কামনায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
অস্ত্র কোনোদিন সভ্যতার নিয়ামক হতে পারে না। সে মানুষের হিংস্রতা, প্রভুত্ব ও ভীতি প্রদর্শনের হাতিয়ার রূপে প্রতিপন্ন হয়। তাই কবির কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলা যায় যে অস্ত্র নয়, শস্ত্র নয়, রক্ত নয়, জয়ী হোক গান, জয়ী হোক সম্মিলিত মানব, জয়ী হোক মানবতা। আর এই মানবতার উন্মেষ ঘটাতে, শুভ বুদ্ধির উদয় ঘটাতে, কবি মনে করেন, সর্বপ্রথম অস্ত্রকে ত্যাগ করতে হবে। নিজের বিবেকবোধের চরণে উদ্ধৃত অস্ত্রকে সমর্পণ করতে হবে। এই অস্ত্র পায়ে রাখার অর্থ অস্ত্র ত্যাগ ও বিসর্জন। কবির মতে, এই ত্যাগের মধ্য দিয়েই মানুষ তার নেতিবাচক প্রবৃত্তিকে অবদমন করতে পারবে।
©kamaleshforeducation.in(2023)