আঞ্চলিক শক্তির উন্থান | দ্বিতীয় অধ্যায় | অষ্টম শ্রেণীর ইতিহাস |-PART-6

 

আঞ্চলিক শক্তির উন্থান | দ্বিতীয় অধ্যায় | অষ্টম শ্রেণীর ইতিহাস | WB Class 8 History

 

 

(১) নীচের বহুবিকল্পভিত্তিক প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ

প্রশ্নঃ ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের সময় বাংলার গর্ভনর ছিলেন – ওয়ারেন হেস্টিংস
প্রশ্নঃ ঔরঙ্গজেবের শাসনকালে মুরশিদকুলি খান ছিলেন বাংলার – দেওয়ান
প্রশ্নঃ পেশোয়া পদ বিলুপ্ত করা হয় _______ ইঙ্গ মারাঠা যুদ্ধের পর – তৃতীয়
প্রশ্নঃ লর্ড ক্লাইভ দ্বিতীয়বার বাংলার গভর্নর হওয়ার সময় বাংলার নবাব ছিলেন – নজম-উদদৌলা
প্রশ্নঃ মুরশিদাবাদের কাটরা মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন – মুরশিদকুলি খান
প্রশ্নঃ সফদর জং মারা যাওয়ার পর অযোধ্যার শাসক হন – সুজা-উদদৌলা
প্রশ্নঃ নিজাম-উল-মুলক হায়দরাবাদ রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন – ১৭২৪ খ্রিস্টাব্দে
প্রশ্নঃ ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের সময় বাংলার গর্ভনর ছিলেন – ওয়ারেন হেস্টিংস
প্রশ্নঃ আঞ্চলিক শক্তির মধ্যে তিনটি প্রধান শক্তি ছিল-বাংলা, হায়দরাবাদ এবং – অযোধ্যা
প্রশ্নঃ মুরশিদাবাদের কাটরা মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন – মুরশিদকুলি খান
প্রশ্নঃ _______ ইঙ্গ মহীশূর যুদ্ধে টিপু সুলতান মারা যান – চতুর্থ
প্রশ্নঃ পেশোয়া পদ বিলুপ্ত করা হয় _______ ইঙ্গ মারাঠা যুদ্ধের পর – তৃতীয়
প্রশ্নঃ কোন চুক্তির ফলে সুজা-উদদৌলা অযোধ্যার শাসনভার ফিরে পান? – এলাহাবাদ
প্রশ্নঃ অধীনতামূলক মিত্ৰতা নীতি প্রবর্তন করেন – লর্ড ওয়েলেসলি
প্রশ্নঃ আলিবর্দি খানের সেনাপতি ছিলেন – মিরজাফর
প্রশ্নঃ ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে কার নেতৃত্বে ব্রিটিশ বাহিনী আবার কলকাতা দখল করে নেয়? – লর্ড ক্লাইভের
প্রশ্নঃ স্বত্ববিলোপ নীতির প্রবর্তক ছিলেন – বেন্টিঙ্ক
প্রশ্নঃ মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব মারা যান – ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে
প্রশ্নঃ ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে কার নেতৃত্বে ব্রিটিশ বাহিনী আবার কলকাতা দখল করে নেয়? – লর্ড ক্লাইভের
প্রশ্নঃ সুবা বাংলায় অষ্টাদশ শতকে সেনাপতিকে আর কী নামে জানা যেত? – বক্সি
প্রশ্নঃ অন্ধকূপ হত্যার প্রচারক ছিলেন – হলওয়েল
প্রশ্নঃ আসফ ঝা উপাধি পেয়েছিলেন – নিজাম-উল-মুলক
প্রশ্নঃ ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশরা বাংলার দেওয়ানি লাভ করে – দ্বিতীয় শাহ আলমের নিকট থেকে
প্রশ্নঃ কোন চুক্তির ফলে সুজা-উদদৌলা অযোধ্যার শাসনভার ফিরে পান? – এলাহাবাদ
প্রশ্নঃ আলিবর্দি খানের সেনাপতি ছিলেন – মিরজাফর
প্রশ্নঃ কত সালে নাদির শাহের নেতৃত্বে পারসিকরা দিল্লি শহর আক্রমণ করে? – ১৭৩৮-৩৯ খ্রিস্টাব্দে

(২) নীচের অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ

প্রশ্নঃ কোন্ সময় কারা বাংলা ও উড়িষ্যার বিভিন্ন অঞ্চলে লুঠতরাজ ও আক্রমণ চালিয়ে ছিল? 
উত্তরঃ ১৭৪২ থেকে ১৭৫১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মারাঠারা এই লুঠতরাজ ও আক্রমণ চালিয়ে ছিল।
প্রশ্নঃ কত খ্রিস্টাব্দে সফদর জং মারা যান। তারপর কে অযোধ্যার শাসক হন? 
উত্তরঃ ১৭৫৪ খ্রিস্টাব্দে সফদর জং মারা যান। তার পর তাঁর পুত্র সুজা – উদ – দৌলা অযোধ্যার শাসক হন। 
প্রশ্নঃ কত খ্রিস্টাব্দে ঔরঙ্গজেবের মৃত্যু হয়? 
উত্তরঃ ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে ঔরঙ্গজেবের মৃত্যু হয়।
প্রশ্নঃ সিরাজ – উদ – দৌলা কত খ্রিস্টাব্দে কলকাতা আক্রমণ করেন? তিনি কলকাতার কী নাম রাখেন?
উত্তরঃ ১৭৬৬ খ্রিস্টাকে সিরাজ – উদ – দৌলা কলকাতা আক্রমণ করেন। তিনি কলকাতার নাম রাখে আলিনগর। 
প্রশ্নঃ কত খ্রিস্টাব্দে বাংলার নবাব ও মারাঠাদের মধ্যে সন্ধি হয়? 
উত্তরঃ ১৭৫১ খ্রিস্টাব্দে।
প্রশ্নঃ আলিনগরের সন্ধি করে স্বাক্ষর হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে আলিনগরের সন্ধি আমার আখেছিল।
প্রশ্নঃ পলাশির যুদ্ধ কৰে ঘটেছিল? 
উত্তরঃ ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশির যুদ্ধ হয়।
প্রশ্নঃ মিরকাশিম কবে নবাব পদ লাভ করেন? 
উত্তরঃ মিরকাশিম ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে ওই পদ লাভ করেন।
প্রশ্নঃ কত খ্রিস্টাব্দে বক্সারের যুদ্ধ ঘটে? 
উত্তরঃ ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে।
প্রশ্নঃ ছিয়াত্তরের মন্বন্তর করে হয়েছিল? 
উত্তরঃ ইংরাজির ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে এবং বাংলার ১১৭৬ বঙ্গাব্দে।
প্রশ্নঃ কত সালে কার নেতৃত্বে পারসিক আক্রমণ হয়? 
উত্তরঃ নাদির শাহের নেতৃত্বে ১৭৩৮-৩৯ খ্রিস্টাব্দে পারসিক আক্রমণ হয়।
প্রশ্নঃ অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির প্রবর্তক কে? 
উত্তরঃ লর্ড ওয়েলেসলি অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির প্রবর্তক।
প্রশ্নঃ কার শাসনকালে রেসিডেন্টরা সাবধানতার বদলে আগ্রাসী নীতি নিয়েছিলেন? 
উত্তরঃ লর্ড ওয়েলেসলির শাসনকালে।
প্রশ্নঃ স্বত্ববিলোপ নীতির প্রবর্তক কে? 
উত্তরঃ লর্ড ডালহৌসি স্বত্ববিলোপ নীতির প্রবর্তক। 
প্রশ্নঃ কবে মুর্শিদকুলি খাঁ বাংলার নাজিম পদ লাভ করেন? 
উত্তরঃ ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দের মুর্শিদকুলি খা বাংলার নাজিম পদ লাভ করেন।
প্রশ্নঃ বন্দিবাসের যুদ্ধ করে হয়েছিল? 
উত্তরঃ ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে বন্দিবাসের যুদ্ধ হয়েছিল। 
প্রশ্নঃ কে ভারতে আসার পর সাময়িকভাবে রেসিডেন্সি ব্যবস্থার আগ্রাসন থমকে যায়?
উত্তরঃ লর্ড কর্ণওয়ালিশ।
প্রশ্নঃ ভারতে ফরাসিদের উপনিবেশ কোথায় ছিল? 
উত্তরঃ ভারতে চন্দননগর ও পণ্ডিচেরি ছিল ফরাসি উপনিবেশ। 
প্রশ্নঃ কত সালে কার নেতৃত্বে দিল্লিতে আফগান আক্রমণ ঘটে? 
উত্তরঃ ১৭৫৬-৫৭ খ্রিস্টাব্দে আহমদ শাহ আবদালির নেতৃত্বে দিল্লিতে আফগান আক্রমণ ঘটে।
প্রশ্নঃ পণ্ডিচেরির ফরাসি গভর্নর কে ছিলেন? 
উত্তরঃ পণ্ডিচেরির ফরাসি গভর্নর ছিলেন জোসেফ দুপ্নে।
প্রশ্নঃ টিপু সুলতান কোথাকার শাসক ছিলেন। তাঁর রাজধানীর নাম কী ছিল? 
উত্তরঃ টিপু সুলতান মহীশূরের শাসক ছিলেন । তাঁর রাজধানীর নাম ছিল শ্রীরঙ্গপত্তনম।
প্রশ্নঃ লাহোরের চুক্তি করে স্বাক্ষর হয়েছিল? 
উত্তরঃ ১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দে লাহোরের চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল।
প্রশ্নঃ কবে আলিবর্দি খাঁ মারা যান? 
উত্তরঃ ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে আলিবর্দি মারা যান।
প্রশ্নঃ সলবাইয়ের সন্ধি করে স্বাক্ষর হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে সলবাইয়ের সন্ধি স্বাক্ষর হয়েছিল।
প্রশ্নঃ কোম্পানির দেওয়ানি লাভের সময় মুঘল সম্রাট কে ছিলেন?
উত্তরঃ মুঘল সম্রাট ছিলেন দ্বিতীয় শাহ আলম।
প্রশ্নঃ বেসিনের সন্ধি করে স্বাক্ষর হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে বেসিনের স্বাক্ষর হয়েছিল।
প্রশ্নঃ হায়দরাবাদ রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা কে? 
উত্তরঃ মির ঝামার উদ – দিন খান ছিলেন হায়দরাবাদ রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা।
প্রশ্নঃ ‘অন্ধকূপ হত্যা’ ঘটনাটি কে অতিরঞ্জন বলে প্রমাণ করেছিলেন?
উত্তরঃ ঐতিহাসিক অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়।
প্রশ্নঃ কোন্ শতকে হায়দার আলি ও টিপু সুলতানের নেতৃত্বে মহীশূর রাজ্য দক্ষিণ ভারতের অন্যতম প্রধান শক্তি হয়ে উঠেছিল?
উত্তরঃ অষ্টাদশ শতকে হায়দার আলি ও টিপু সুলতানের নেতৃত্বে মহীশূর রাজ্য দক্ষিণ ভারতের অন্যতম প্রধান শক্তি হয়ে উঠেছিল।
প্রশ্নঃ কত খ্রিস্টাব্দে রাজস্থান থেকে হিরাপদ শাহ পাটনায় চলে যান? 
উত্তরঃ ১৬৫২ খ্রিস্টাব্দে।
প্রশ্নঃ কে কোথায় কাটরা মসজিদে প্রতিষ্ঠা করেন? 
উত্তরঃ মুর্শিদকুলি খান মুর্শিদাবাদে কাটরা মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রশ্নঃ হায়দরাবাদ করে থেকে নিজামের শাসনে আসে? 
উত্তরঃ ১৭৪০ খ্রিস্টাব্দ থেকে হায়দরাবাদ নিজামের শাসনে আসে।
প্রশ্নঃ হিরাপদ শাহের বড়ো ছেলের নাম কী? 
উত্তরঃ মানিকচাঁদ।
প্রশ্নঃ কত খ্রিস্টাব্দে চতুর্থ ইঙ্গ মহীশূর যুদ্ধ হয়? 
উত্তরঃ ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে চতুর্থ ইঙ্গ মহীশূর যুদ্ধ হয়।
প্রশ্নঃ মানিকটাঁদ কোথায় মহাজনি কারবার শুরু করেন? মানিকচাদের পর কে তাঁর ব্যবসার হাল ধরেন? 
উত্তরঃ মানিকচাঁদ ঢাকায় মহাজনি কারবার শুরু করেন। পরে তাঁর ভাগ্নে ফতেহচাঁদ তাঁর ব্যবসার হাল ধরেন।
প্রশ্নঃ অযোধ্যা কার নেতৃত্বে আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে স্থান পায়?
উত্তরঃ সাদাব খানের নেতৃত্বে অযোধ্যা আশ্তলিক শক্তি হিসেবে স্থান পায়।
প্রশ্নঃ ফতেহচাদ কী উপাধি পান? 
উত্তরঃ তিনি জগৎ শেঠ উপাধি পান।
প্রশ্নঃ পেশোয়া নারায়ণ রাওকে কে হত্যা করেন? 
উত্তরঃ রঘুনাথ রাও।
প্রশ্নঃ কত খ্রিস্টাব্দে মুর্শিদকুলি মারা যান? 
উত্তরঃ ১৭২৭ খ্রিস্টাব্দে মুর্শিদকুলি মারা যান।
প্রশ্নঃ কবে অযোধ্যা রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হয়? 
উত্তরঃ ১৭২২ খ্রিস্টাব্দে অযোধ্যা রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হয়।
প্রশ্নঃ কার শাসনকালে মুঘলদের হাত থেকে সুবা বাংলার অধিকার বেরিয়ে যায়? 
উত্তরঃ আলিবর্দি খানের শাসনকালে মুঘলদের হাত থেকে সুবা বাংলার অধিকার বেরিয়ে যায়।
প্রশ্নঃ মিরজাফরের মৃত্যুর পর কে বাংলার নবাব হয়েছিলেন? 
উত্তরঃ মিরজাফরের মৃত্যুর পর বাংলার নবাব হন তাঁর পুত্র নজম-উদ-দৌলা।
প্রশ্নঃ তৃতীয় ইঙ্গ মারাঠা যুদ্ধে কে বিভিন্ন মারাঠা গোষ্ঠীকে একজোট করেছিলেন? 
উত্তরঃ পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও।
প্রশ্নঃ সাদাৎ খানের উপাধি কী ছিল ? সাদাৎ খানের জামাতা কে ছিলেন? 
উত্তরঃ সাদাৎ খানের উপাধি ছিল বুরহান – উল – মূলক। সদর জং ছিলেন তাঁর জামাতা।

(৩) নীচের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ

প্রশ্নঃ অন্ধকূপ হত্যার বিবরণ দাও।
উত্তরঃ ব্রিটিশ কোম্পানির কর্তাব্যক্তি হওলয়ে প্রচার করেছিলেন যে সিরাজ-উদ-দৌলা কলকাতা দখল করে ১৮ ফিট দীর্ঘ এবং ১৮ ফিট প্রসস্থ এইরূপ একটি ছোটো ঘরে ১৪৬ জন ব্রিটিশ নরনারীকে বন্দি করে রাখেন। এর ফলে অনেক বন্দি মারা যান। এই ঘটনাকে অন্ধকূপ হত্যা বলা হয়। যদিও এই ঘটনা আদৌ ঘটেছিল কিনা তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ঐতিহাসিক অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় অন্ধকূপ হত্যাকে অতিরঞ্জিত বলে প্রমাণ করেছিলেন।
প্রশ্নঃ জগৎ শেঠ সম্পর্কে কী জানা যায়? 
উঃ । মুর্শিদাবাদের অর্থনীতিতে জগৎশেঠের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। মুর্শিদাবাদে সিরাজ বিরোধী শক্তি হিসেবে জগৎ শেঠ ছিলেন অন্যতম। ১৬৫২ খ্রিস্টাব্দে রাজস্থান থেকে হিরাপদ শাহ পাটনায় যান। তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র মানিকচাঁদ ঢাকায় মহাজনি কারবার শুরু করেন। মানিকচাঁদের সঙ্গে মুর্শিদকুলি খাঁর সম্পর্ক ভালো হবার দরুন মানিকচাঁদ ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে এসে ব্যবসা শুরু করেন। মানিকচাঁদের ভাগ্নে ফতেহচাঁদ ব্যবসার হাল ধরেন। এই ফতেহচাদই হলেন জগৎ শেঠ। জগৎ শেঠ আসলে একটি বণিক পরিবারের উপাধি যা বংশানুক্রমিকভাবে চলতে থাকে এবং জগৎ শেঠদের বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষমতা ছিল। তাঁদের হাত ধরে এক ধরনের ব্যাঙ্ক ব্যবস্থা বাংলায় গড়ে উঠেছিল। বাংলার নবাব দরবারেও তাঁদের প্রভাব যথেষ্ট ছিল। জগৎ শেঠদের পছন্দের ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন মিরাজফর। সিরাজ – উদ্ – দৌলার পর ব্রিটিশ সরকার জগৎ শেঠদের সম্মতিতেই মিরজাফরকেই নবাবরূপে নির্বাচিত করেন।
প্রশ্নঃ অযোধ্যা ও পাঞ্জাব কীভাবে ব্রিটিশ কোম্পানির অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়? 
উত্তরঃ উত্তর ভারতে অযোধ্যা কোম্পানির আগ্রাসনের মুখোমুখি হয়। ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে অযোধ্যায় কোম্পানির প্রতিনিধি নিয়োগ করা হয় এবং স্থায়ী সেনাবাহিনী অযোধ্যায় মোতায়েন করা হয়। এর পাশাপাশি অযোধ্যার উত্তরাধিকারী নিয়ে গোলযোগ তৈরি হওয়ায় সেই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে অযোধ্যার প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করে ব্রিটিশ কোম্পানি বিভিন্ন অঞ্চল দখল করে নেয়। পাঞ্জাবে শিখদের মধ্যেও উত্তরাধিকার নিয়ে গোলযোগ বাধে। এর ফলে উত্তর ভারতের বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে অশান্ত পরিস্থিতিকে শান্ত করার দোহাই দিয়ে ব্রিটিশ কোম্পানি পাঞ্জাবে হস্তক্ষেপ করতে থাকে। ১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ইঙ্গ শিখ যুদ্ধে শিখ বাহিনী হেরে যায়। ফলস্বরূপ ১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দে লাহোরের চুক্তি হয় এবং সেই অনুযায়ী জলন্ধর দোয়াবে ব্রিটিশ কতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় এবং শিখ দরবারে ব্রিটিশ রেসিডেন্ট নিযুক্ত করা হয়।
প্রশ্নঃ স্বত্ববিলোপ নীতি প্রয়োগের মাধ্যমে কোম্পানি কীভাবে শাসন ক্ষমতা বিস্তার করে?
উত্তরঃ স্বত্ববিলোপ নীতির প্রয়োগকর্তা ছিলেন লর্ড ডালহৌসি। এই নীতি অনুযায়ী যেসব ভারতীয় শাসকদের কোনো পুরুষ উত্তরাধিকারী থাকত না তাদের শাসন এলাকা কোম্পানির হস্তগত হয়ে যেত। এই নীতির প্রয়োগ দ্বারা ইংরেজ কোম্পানির আগ্রাসী রূপ প্রকট হয়েছিল। এই নীতির দ্বারা লর্ড ডালহৌসি সাতারা, সম্বলপুর, ঝাঁসি প্রভৃতি অঞ্চল দখল করে নেন। কোম্পানির সেনাবাহিনির খরচ মেটানোর জন্য ডালহৌসি হায়দরাবাদের বেরার প্রদেশ দখল করেন । অপশাসনের অভিযোগে অযোধ্যার বাকি অংশ তিনি কোম্পানির দখলে আনেন। এইভাবে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে লর্ড ডালহৌসির নেতৃত্বে ভারতীয় উপমহাদেশের প্রায় ষাট ভাগেরও বেশি অঞ্চল ব্রিটিশ কোম্পানির অধিকারভুক্ত হয়।
প্রশ্নঃ মুর্শিদকুলি খানের নেতৃত্বে কীভাবে আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে বাংলার উত্থান ঘটে? 
উত্তরঃ সুবা বাংলার রাজস্ব ঠিকভাবে আদায় করার জন্য ঔরঙ্গজেব মুর্শিদকুলি খানকে বাংলার দেওয়ান নিযুক্ত করেন। ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট ফাররুখশিয়ার মুর্শিদকুলিকে বাংলার নাজিম পদ দেন। এর ফলে দেওয়ান ও নাজিম হিসেবে যৌথ দায়িত্ব পাওয়ায় সুবা বাংলায় মুর্শিদকুলির ক্ষমতা চূড়ান্ত হয়ে ওঠে। তাঁর নেতৃত্বে আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে বাংলার উত্থান ঘটে।
প্রশ্নঃ বক্সারের যুদ্ধ ও দেওয়ানি লাভ সম্বন্ধে যা জানো লেখো।
উত্তরঃ ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানির সঙ্গে মিরকাশিমের সংঘর্ষ শুরু হয়। কিন্তু কাটোয়া, গিরিয়া, মুর্শিদাবাদ, উদয়নালা ও মুঙ্গেরের যুদ্ধে ব্রিটিশ কোম্পানির কাছে মিরকাশিম হেরে যান এবং অযোধ্যায় পালিয়ে যান। সেখানে তাঁর সঙ্গে আযোধ্যার নবাব সুজা-উদ-দৌলা ও দিল্লির মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের কোম্পানি বিরোধী শক্তি জোট গঠিত হয়। ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে ওই যৌথ বাহিনীর সঙ্গে কোম্পানির যে যুদ্ধ হয় তা বক্সারের যুদ্ধ নামে পরিচিত। যুদ্ধে যৌথ বাহিনী হেরে যায় এবং মিরকাশিম ও সুজা-উদ-দৌলা পালিয়ে যান। ফলে কোম্পানির ক্ষমতা উত্তর ভারত পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। দ্বিতীয় শাহ আলম কোম্পানির সঙ্গে রক্ষা করে ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার দেওয়ানির অধিকার দিতে বাধ্য হন।
প্রশ্নঃ ফরাসি দ্বন্দ্ব সম্পর্কে কী জানা যায়? 
উত্তরঃ ভারতে উপনিবেশ গড়ে তোলা আর বাণিজ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা নিয়ে ২০ বছর ধরে ব্রিটিশদের সঙ্গে ফরাসিদের স্বার্থের সংঘাত চলেছিল। ১৭৪৪ থেকে ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে দক্ষিণ ভারতে কর্ণাটক অঞ্চলে তিনটি ইঙ্গ ফরাসি যুদ্ধ ঘটে। ভারতে ফরাসিদের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল চন্দননগর ও পন্ডিচেরি। এই সময় পণ্ডিচেরির ফরাসি গভর্নর ছিলেন জেনারেল সুপ্নে। ১৭৩০ খ্রিস্টাব্দে বন্দিবাসের যুদ্ধে ফরাসিদের চূড়ান্ত পরাজয় ঘটে। এই পরাজয়ের ফলে ভারতে ব্রিটিশদের ক্ষমতা বিস্তারের পথে আর কোনো ইউরোপীয় প্রতিদ্বন্দীর বাধা রইল না।
প্রশ্নঃ সাদাৎ খানের নেতৃত্বে কীভাবে অযোধ্যা একটি আঞ্চলিক শক্তিতে পরিণত হয়? 
উত্তরঃ ১৭২২ খ্রিস্টাব্দে সাদাৎ খানের নেতৃত্বে অযোধ্যা একটি স্বশাসিত আঞ্চলিক শক্তিরূপে গড়ে ওঠে। মুঘল প্রশাসক হিসেবে সাদাৎ খান অযোধ্যার স্থানীয় রাজা ও গোষ্ঠীর নেতাদের বিদ্রোহের মোকাবিলা করেন। সাদাৎ খান মুঘল সম্রাটকে দিয়ে নিজের জামাই সফদর জংকে অযোধ্যার প্রশাসক নিযুক্ত করান। পাশাপাশি অযোধ্যার দেওয়ানের দফতরকে তিনি দিল্লির নিয়ন্ত্রণ থেকে সরিয়ে ফেলেন। অযোধ্যার রাজস্ব বিষয়ক কোনো খবরই মুঘল কোশাগারে আর পাঠানো হতো না। জায়গির ব্যবস্থাতেও সাদাৎ খান আঞ্চলিক অনভিজ্ঞ লোকেদের ও অর্ন্তভুক্ত করেন। ফলে সাদাৎ খানের সমর্থক এক নতুন শাসকগোষ্ঠী তৈরি হয় অযোধ্যায়। এভাবেই তাঁর নেতৃত্বে অযোধ্যা একটি আঞ্চলিক শক্তিতে পরিণত হয়।
প্রশ্নঃ ছিয়াত্তরের মন্বন্তর কী?
উত্তরঃ ১৭৬৫ থেকে ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলায় দ্বৈতশাসন চলেছিল। এই সময় ব্রিটিশ কোম্পানির একমাত্র লক্ষ্য ছিল যত বেশি সম্ভব রাজস্ব আদায় করা। ফলে ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় এক ভয়ানক দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। বঙ্গাব্দের হিসেবে ওই বছরটি ছিল ১১৭৬ বঙ্গাব্দ। তাই একে ‘৭৬ -এর মন্বন্তর বলে।
প্রশ্নঃ ব্রিটিশ কোম্পানি কীভাবে দেওয়ানির অধিকার লাভ করে? 
উত্তরঃ বক্সারের যুদ্ধে ব্রিটিশ কোম্পানি জিতে যাওয়ার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল ছিল কোম্পানির দেওয়ানি লাভ। ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে ক্লাইভ বাংলায় পুনরায় ফিরে আসেন এবং বক্সারের জয়ের সুবিধাকে ধীরে ধীরে বিস্তৃত করতে উদ্যোগী হন। ফলে বাংলা থেকে দিল্লি পর্যন্ত ক্ষমতা দখল না করে মুঘল সম্রাটের প্রতি কোম্পানি মৌখিক আনুগত্য জানায়। সেই অনুযায়ী ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে এলাহাবাদে ব্রিটিশ কোম্পানি মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম ও সুজা-উদ-দৌলার সঙ্গে এক চুক্তি করে। ঐ চুক্তি অনুসারে কোম্পানিকে ৫০ লক্ষ টাকা দিয়ে সুজা-উদ-দৌলা অযোধ্যার শাসনভার ফেরত পান। বাদশাহ শাহ আলম দিল্লির অধিকার ফিরে পাওয়ার বদলে একটি ফরমান জারি করেন। সেই ফরমান অনুযায়ী বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানির অধিকার ব্রিটিশ কোম্পানিকে দেওয়া হয় এবং এর বদলে কোম্পানি শাহ আলমকে বার্ষিক ২৬ লক্ষ টাকা দেওয়ার অঙ্গীকার করে।
প্রশ্নঃ দ্বৈত শাসনব্যবস্থা কী? 
উত্তরঃ দেওয়ানির অধিকার ভারতবর্ষে কোম্পানির আর্থিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতাকে বিস্তৃত করেছিল। কোম্পানির দেওয়ানি লাভ বাংলায় নতুন রাজতন্ত্র কায়েম করেছিল। বাস্তবে বাংলায় দুজন শাসক তৈরি হয়। শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে একদিকে ছিলেন নবাব অন্যদিকে অর্থনৈতিক কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা ছিল কোম্পানির। ফলে নবাবের ছিল অর্থনৈতিক ক্ষমতাহীন রাজনৈতিক দায়িত্ব এবং কোম্পানি পেয়েছিল দায়িত্বহীন অর্থনৈতিক ক্ষমতা। বাংলার এই শাসন ব্যবস্থাকেই দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা বলা হয়। 
প্রশ্নঃ আলিবর্দি খান বাংলায় কীভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করতেন? 
উত্তরঃ ১৭২৭ খ্রিস্টাব্দে মুর্শিদকুলির মৃত্যুর পর তাঁর উত্তরাধিকার নিয়ে গোলযোগ বাঁধলে, সেই পরিস্থিতিতে জগৎ শেঠ ও কয়েকজন ক্ষমতাবান জমিদারের সহায়তায় সেনাপতি আলিবর্দি খান বাংলার শাসন ক্ষমতা দখল করেন। আলিবর্দির শাসনকালেই মুঘলদের হাত থেকে সুবা বাংলার অধিকার চলে যায়। তাঁর আমলে শাসনতান্ত্রিক কোনো খবরাখবর ও রাজস্ব দিল্লির মুঘল সম্রাটকে দেওয়া হতো না। মুঘল কর্তৃত্বকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করলেও আলিবর্দি বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যায় একটি স্বশাসিত শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করতেন।
প্রশ্নঃ মিরজাফর ও পলাশির লুণ্ঠন সম্পর্কে যা জানো লেখো। 
উত্তরঃ রবার্ট ক্লাইভ পলাশির যুদ্ধের পর মিরজাফরকে বাংলার নবাবরূপে নির্বাচিত করেন। মিরজাফরের সঙ্গে ওইসময় নবাবের একটা চুক্তি হয়। চুক্তি মোতাবেক, বাংলায় ব্রিটিশ কোম্পানির অবাধ বাণিজ্য চালু হয়, পাশাপাশি টাকা তৈরির অধিকারও তাদের দেওয়া হয়। পলাশির যুদ্ধের পর সিরাজের কলকাতা আক্রমণের অজুহাতে কোম্পানি ১ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ নেয়। পরে পলাশির যুদ্ধের পর ব্রিটিশ কোম্পানি সব মিলিয়ে নিরজাফরের থেকে ৩ কোটি টাকা আদায় করে। কোম্পানির তরফে এই অর্থ আত্মসাৎকে ‘পলাশির লুন্ঠন’ বলা হয়। এর ফলে নবাবের কোশাগার নিঃস্ব হয়ে যায়
প্রশ্নঃ অধীনতামূলক মিত্ৰতা নীতি কী? ব্রিটিশ সরকার কীভাবে এর প্রয়োগ ঘটাতেন?
উত্তরঃ লর্ড ওয়েলেসলি অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির প্রবর্তক ছিলেন। এই নীতি ছিল ব্রিটিশ কোম্পানীর আগ্রাসী নীতির অন্যতম রূপ। অধীনতামূলক মিত্ৰতা নীতি প্রয়োগ করে লর্ড ওয়েলেসলি দেশীয় বিভিন্ন রাজ্যের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। বিভিন্ন আঞ্চলিক শক্তি স্বেচ্ছায় বা কখনও যুদ্ধে হেরে যাওয়ার ঐ নীতির আগ্রাসনের শিকার হন। ভারতের ওই আঞ্চলিক শক্তিগুলির বিবাদকের লর্ড ওয়েলেসলি ব্রিটিশ শাসনের পক্ষে বিপদ হিসেবে তুলে ধরতেন। তারপর সরাসরি অথবা যুদ্ধের মাধ্যমে দেশীয় শক্তিগুলিকে অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি মেনে নিতে বাধ্য করতেন।
     একদিকে হায়দরাবাদের নিজাম স্বেচ্ছায় অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি মেনে নিয়েছিলেন, অপরদিকে মহীশূরের শাসক টিপু সুলতান এর বিরোধিতা করে কোম্পানির সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। এছাড়া মারাঠা, শিখ প্রভৃতি অন্যান্য রাজশক্তি নানাভাবে ঐ আগ্রাসী নীতির মুখে পড়েছিল।
প্রশ্নঃ ফাররুখশিয়রের ফরমান কী ছিল?
উত্তরঃ দিল্লির মুঘল সম্রাট ফাররুখশিয়র ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে একটি ফরমান জারি করেন। ওই ফরমান মতো ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে তিনি বাণিজ্যিক অধিকার দিয়েছিলেন। ব্রিটিশ কোম্পানি মাত্র ৩ হাজার টাকার বিনিময়ে বাংলায় বাণিজ্য করতে পারবে। কিন্তু এর জন্য কোম্পানিকে কোনো শুল্ক দিতে হবে না। কলকাতার কাছাকাছি প্রায় ৩৮টি গ্রামের জমিদারি কেনার অধিকার ব্রিটিশ কোম্পানিকে দেওয়া হয়। কেউ কোম্পানির পথ্য চুরি করলে তাকে বাংলার নবাব শাস্তি দেবেন ও কোম্পানিকে ক্ষতিপুরণ দেবেন। একইসলো কোম্পানির জাহাজের সঙ্গে অনুমতিপত্র থাকলে তারা অনায়াসে বাণি করতে পারবে। এমনকি নবাবের টাকশালও প্রয়োজন মতো ব্যবহারের অধিকার কোম্পানিকে দেওয়া হয়।
প্রশ্নঃ মুর্শিদকুলির আমলে বাংলার ব্যবসাবাণিজ্যের পরিবেশ কীরূপ ছিল? 
উত্তরঃ মুর্শিদকুলির আমলে বাংলার রাজনৈতিক পরিবেশ ব্যবসাবাণিজ্যের পক্ষে অনুকূল ছিল। স্থলপথ ও সমুদ্রপথে নানান দ্রব্য সুবা বাংলা থেকে রফতানি করা হতো। হিন্দু, মুসলমান ও আর্মেনীয় বণিকরা এই ব্যবসায় প্রভাবশালী ছিলেন। এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন হিন্দু ব্যবসায়ী উমিচাঁদ ও আর্মেনীয় ব্যবসায়ী খোজা ওয়াজিদ। এইসব ধনী ব্যবসায়ী ও মহাজনদের হাতে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা ছিল। মুর্শিদাবাদের বিখ্যাত ব্যবসায়ী ছিলেন জগৎ শেঠ। সুবা বাংলার কোশাগার ও টাকশাল তাঁর পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণেই চলত। শাসকেরা এদের সহায়তার ওপরই নির্ভর করতেন মুর্শিদকুলির খান।
প্রশ্নঃ বাংলায় বর্গিহানা সম্বন্ধে কী জানা যায়? 
উত্তরঃ বাংলায় মারাঠা বা বর্গি আক্রমণ ছিল নবাব আলিবর্দির সময়ের এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ১৭৪২ থেকে ১৭৫১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মারাঠারা বাংলা ও উড়িষ্যার নানা অঞ্চলে লুঠতরাজ ও আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণ ‘বর্গিহানা’ নামে পরিচিত। বর্গিরা বাংলার নানা অঞ্চলে লুঠতরাজ ও আক্রমণ চালায়। নবাবের রাজধানী মুরশিদাবাদেও তারা আক্রমণ চালায়। ১৭৫১ খ্রিস্টাব্দে বাংলার নবাব ও বর্গিরা একটি সন্ধি করে। ওই সন্ধি অনুযায়ী বাংলার সীমানা ধরা হয় উড়িষ্যার জলেশ্বরের কাছে সুবর্ণরেখা নদীকে এবং সন্ধি অনুযায়ী ঠিক হয় যে ওই নদী মারাঠারা ভবিষ্যতে অতিক্রম করবে না। বর্গি হানার ফলে বাংলার পশ্চিমপ্রান্ত ছেড়ে অসংখ্য মানুষ পূর্ব, উত্তর ভারত ও কলকাতায় চলে যায়। বর্গিহানা আটকাতে কলকাতায় একটি খাল খোঁড়া হয়েছিল, তার নাম ছিল মারাঠা খাল বা মারাঠা ডিচ।

(৪) নীচের রচনাধর্মী প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ

প্রশ্নঃ সিরাজ-উদ-দৌলা ও ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরোধ বাঁধে কেন? 
উত্তরঃ ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে আলিবর্দির মৃত্যুর পর তাঁর দৌহিত্র সিরাজ-উদ-দৌলা বাংলার নবাব হন। কিন্তু দ্রুতই দরবারের বিভিন্ন গোষ্ঠী ও ব্রিটিশ কোম্পানির সঙ্গে সিরাজের সংঘাত বাধে। সিরাজের ক্ষমতালাভ অনেককেই অসন্তুষ্ট করেছিল। সিরাজের আত্মীয়দের অনেকেই এবং আলিবর্দির সেনাপতি মিরজাফরও সিরাজের বিপক্ষে ছিলেন। পাশাপাশি ব্রিটিশ ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে সিরাজের সম্পর্ক গোড়া থেকে ভালো ছিলনা। 
(১) সিরাজ সিংহাসনে বসার পর ইংরেজ কোম্পানি নবাবকে নজরানা বা উপঢৌকন দেওয়ার প্রথা ভঙ্গ করায় নবাব ক্ষুদ্ধ হন। 
(২) সপ্তবর্ষের যুদ্ধের সূত্র ধরে বাংলায় ইংরেজ ও ফরাসি কোম্পানি কলকাতা ও চন্দননগরে দুর্গনির্মাণে সচেষ্ট হলে সিরাজ তা করতে নিষেধ করেন। ফরাসিরা তা শুনলেও ইংরেজরা কলকাতায় তাদের দুর্গনির্মাণ চালিয়ে যায়। এতে নবাব ও কোম্পানির মধ্যে তিক্ততার সম্পর্ক তৈরি হয়।
(৩) ফরমান প্রাপ্ত ইংরেজ কোম্পানি নিঃশুল্ক বাণিজ্যের পাশপাশি দস্তকের অপব্যবহার করায় নবাব ক্ষুদ্ধ হন এবং তাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। 
(৪) দুর্নীতিগ্রস্ত ঢাকার দেওয়ান রাজবল্লভকে নবাব মুর্শিদাবাদে হিসেব প্রদানের জন্য ডেকে পাঠালে, ভীত রাজবল্লভ প্রচুর অর্থ সহ পুত্র কৃষ্ণদাসকে কলকাতায় কোম্পানির আশ্রয়ে পাঠিয়ে দেন।
      ক্ষুদ্ধ নবাব কৃষ্ণদাসকে ফেরত চাইলে ইংরেজ আধিকারিক রজার ড্রেক তা অস্বীকার করেন। শেষ পর্যন্ত নবাব ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় ইংরেজদের কাশিমবাজার কুঠি আক্রমণ করেন এবং কলকাতা দখল করে তার নাম রাখেন আলিনগর। রজার ড্রেক ও তার সহযোগীরা ফলতায় পালিয়ে যান। কিন্তু দ্রুতই রবার্ট ক্লাইভের নেতৃত্বে ব্রিটিশ বাহিনী ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা দখল করেন। ফলে নবাব ও ব্রিটিশ আম্পানি আলিনগরের সন্ধি করেন। কোম্পানি তার বাণিজ্যিক অধিকার ফেরত পায় নবাব ব্রিটিশ কোম্পানিকে ক্ষতিপূরণ নেন। ব্রিটিশ দূর্গ নির্মাণ শুরু করে এমনকি নিজেদের সিক্কা তৈরির ক্ষমতা পায়। বাস্তবে এই সন্ধি ব্রিটিশ কোম্পানির পক্ষে সুবিধাজনক হয়ে ওঠে। ক্রমেই ব্রিটিশ কোম্পানির সিরাজ বিরোধী অবস্থান স্পষ্ট হয়ে ওঠে। অবশেষে ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশির যুদ্ধে ব্রিটিশ বাহিনী নবাব বাহিনীকে পরাজিত করে।
প্রশ্নঃ বাংলায় ইউরোপীয় বণিকদের সঙ্গে আলিবর্দি খানের সম্পর্ক কীরূপ ছিল?
উত্তরঃ আলিবর্দি খান বাংলায় ইউরোপীয় বণিকদের বাণিজ্য বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছিলেন। তিনি মনে করতেন এর ফলে বাংলার অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। তবে আলিবর্দি খেয়াল রাখতেন যে ঐ বণিকরা যাতে বাংলায় কেবল ব্যবসায়ী হিসেবেই থাকে, তাই তাদের রাজনৈতিক ও সামরিক ক্ষমতা কোনোভাবেই যাতে না বাড়ে সেদিকে তাঁর দৃষ্টি ছিল। তিনি সজাগ থাকতেন যাতে কোনো বণিক কোম্পানি নবাবের সার্বভৌম ক্ষমতার বিরোধী না হয়ে ওঠে। পাশাপাশি বাংলার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির স্বার্থে ব্রিটিশ বণিকদের যাতে কোনো জুলুমের শিকার না হতে হয় তার খেয়ালও নবাব রাখতেন। তিনি চাইতেন না বিদেশি বণিকেরা বাংলা থেকে চলে যাক।
     আলিবর্দি খান অপরদিকে বণিক কোম্পানিগুলি যাতে নিজেদের মধ্যে বিবাদ না করে সেদিকে আলিবর্দির কড়া নজর ছিল। তাই ব্রিটিশ ও ফরাসি দুই বণিক কোম্পানিকেই বাংলায় দুর্গ তৈরি করতে তিনি বাধা দিয়েছিলেন। ১৭৪৪ খ্রিস্টাব্দে মারাঠা আক্রমণের সময় আলিবর্দি ব্রিটিশ কোম্পানির থেকে ৩০ লক্ষ টাকা চান এবং তা দিতে কোম্পানি অস্বীকার করায় নবাবের সঙ্গে কোম্পানির সম্পর্ক খারাপ হয়। পরে ১৭৪৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ কোম্পানি আর্মেনিয় বণিকদের জাহাজ আটকে রাখায় কোম্পানির সঙ্গে আলিবর্দির সংঘাত বাধে।
প্রশ্নঃ দক্ষিণ ভারতে ব্রিটিশ শক্তি কীভাবে ক্ষমতা বিস্তার করে? 
উত্তরঃ অষ্টাদশ শতকে হায়দর আলি ও টিপু সুলতানের নেতৃত্বে মহীশূর রাজ্য দক্ষিণ ভারতের অন্যতম প্রধান শক্তি হয়ে উঠেছিল। মহীশূরের আঞ্চলিক বিস্তার ও অর্থনৈতিক স্বার্থপূরণ করতে গিয়ে বিভিন্ন শক্তির সঙ্গে হায়দর ও টিপুর সংঘাত বাধে। সুচতুর ব্রিটিশ কোম্পানি নিজেদের বাণিজ্যিক স্বার্থরক্ষা ও ক্ষমতা বিস্তার করতে মহীশুরের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াইয়ে উদ্যোগী হয়। ব্রিটিশ কোম্পানি ও মহীশুরের মধ্যে ১৭৬৭ থেকে ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে চারটি ইঙ্গ মহীশূর যুদ্ধ হয়।
     ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে চতুর্থ ইঙ্গ মহীশূর যুদ্ধের মাধ্যমে লর্ড ওয়েলেসলি মহীশূর রাজ্যের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত আঘাত হানেন। নিজের রাজধানী শ্রীরঙ্গপত্তনম রক্ষা করতে গিয়ে বীরের মতো যুদ্ধ করে টিপু সুলতান প্রাণ দেন। এর পরই অধীনতামূলক মিত্ৰতা নীতি প্রয়োগ করে ব্রিটিশ কোম্পানি মহীশূরের সমস্ত রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নেন। কোম্পানীর সেনাবাহিনী মহীশূরে মোতায়েন করা হয়। মহীশূর রাজ্যের বেশ কিছু অঞ্চলে সরাসরি কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
 ©kamaleshforeducation.in(2023)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!