পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনী

 

 

 

 

Table of Contents

পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনী 

 Ishwar Chandra Vidyasagar Biography in Bengali

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জীবনী – Ishwar Chandra Vidyasagar Biography in Bengali : মহান মহান জ্ঞানী মানুষরা সমাজের উপর প্রভাব রেখে গেছেন। এইরকমই এক ব্যক্তিত্বের মানুষ ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (Ishwar Chandra Vidyasagar)। যিনি খুব বিনয়ী ছিলেন এবং নিজের জীবন দৃঢ়সংকল্প এবং উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষ্যে কাটিয়ে ছিলেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (Ishwar Chandra Vidyasagar) মহান সমাজ সংস্কারক, লেখক, শিক্ষক ও উদ্যোক্তা ছিলেন এবং সমাজ পরিবর্তনের জন্য কাজ করে গেছেন অবিরাম। ভারতে শিক্ষার প্রতি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের (Ishwar Chandra Vidyasagar) অবদান এবং নারীর অবস্থার পরিবর্তন জন্য তিনি চিরস্বরণীয়।

 করুণার সাগর পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী । ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জীবনী – Ishwar Chandra Vidyasagar Biography in Bengali বা আত্মজীবনী বা জীবন রচনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কে ছিলেন ? Who is Ishwar Chandra Vidyasagar ? 

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (Ishwar Chandra Vidyasagar) উনবিংশ শতকের একজন বিশিষ্ট বাঙালি শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক ও গদ্যকার। ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়; ঈশ্বরচন্দ্র শর্মা নামেও স্বাক্ষর করতেন। সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য সংস্কৃত কলেজ থেকে ১৮৩৯ সালে তিনি বিদ্যাসাগর উপাধি লাভ করেন। সংস্কৃত ছাড়াও বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় বিশেষ ব্যুৎপত্তি ছিল তার। তিনিই প্রথম বাংলা লিপি সংস্কার করে তাকে যুক্তিবহ ও সহজপাঠ্য করে তোলেন। বাংলা গদ্যের প্রথম সার্থক রূপকার হলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (Ishwar Chandra Vidyasagar)।

করুণার সাগর পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনী –                                          Ishwar Chandra Vidyasagar Biography in Bengali :

নাম (Name) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বা ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় শর্মা (Ishwar Chandra Vidyasagar or Ishwar Chandra Bandyopadhyay or Sharma)
জন্ম (Birthday) ২৬ সেপ্টেম্বর ১৮২০ (26 September 1820)
জন্মস্থান (Birthplace) পশ্চিমবাংলার মেদিনীপুর জেলায় বীরসিংহ গ্রাম
অভিভাবক (Parents)/ পিতা ও মাতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় (বাবা)ভগবতী দেবী (মা)
পেশা (Occupation) লেখক, দার্শনিক, পণ্ডিত, শিক্ষাবিদ, অনুবাদক, প্রকাশক, সংস্কারক, মানবহিতৈষী
দাম্পত্যসঙ্গী (Spouse) দিনময়ী দেবী 
সন্তান  নারায়ণ চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়
সাহিত্য আন্দোলন বাংলার নজাগরণ
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংস্কৃত কলেজ (১৮২৮-১৮৩৯)
জাতীয়তা ভারতীয় 
উল্লেখযোগ্য রচনাবলী বর্ণপরিচয় , কথামালা, বোধোদয়, আখ্যানমঞ্জরী ব্যাকরণ কৌমুদী, বেতাল পঞ্চবিংশতি, শকুন্তলা 
মৃত্যু (Death) ২৯ জুলাই ১৮৯১ (29th July 1891)

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্ম – Ishwar Chandra Vidyasagar’s Birthday :

 পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮২০ সালের ২৬ শে সেপ্টেম্বর । পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । 

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পিতামাতা – Ishwar Chandra Vidyasagar’s Parents :

 পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মাতা ভগবতী দেবী। দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও তারা নিজেদের শিক্ষা, সংস্কার, আন্তরিকতা, কঠোরতা, দয়ালুতা ও নিষ্ঠার জন্য প্রচুর খ্যাতি অর্জন করেছিলেন, যার কারণে তিনি অমর।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের শৈশবকাল – Ishwar Chandra Vidyasagar’s Childhood :

 ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রথমে গ্রাম্য পাঠশালায় এবং পরে কলকাতা সংস্কৃত কলেজে পড়াশুনা করেন । তার পিতা তখন ৮ টাকা বেতন পেতেন । এই আট টাকা বেতন থেকে তার জন্য ব্যয় হতাে ৪ টাকা । ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১২ বছর কাব্য , ব্যাকরণ , অলঙ্কার শাস্ত্র , বেদান্ত , স্মৃতি ন্যায় – জ্যোতিষ প্রভৃতি পাঠ করে অসাধারণ পান্ডিত্য অর্জন করেন ।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের শিক্ষাজীবন – Ishwar Chandra Vidyasagar’s Education Life :

  ১৮৩৯ সালে ল পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হওয়ার পর তিনি বিদ্যাসাগর ’ উপাধি লাভ করেন । সাগর উপাধি তার জন্য যথার্থই ছিলাে । বিদ্যার সাগর , জ্ঞানের সাগর , দয়ার সাগর , করুণার সাগর , মানবতার সাগর , প্রগতিশীলতার সাগর , বিবেকের সাগর সব বিশেষণই তার ক্ষেত্রে যথাযথ ও সুপ্রযােজ্য । যদি বলা হতাে ব্যক্তিত্বের সাগর , বােধ করি তা – ও অপ্রযুক্ত হতাে না ।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পণ্ডিত উপাধি – Ishwar Chandra Vidyasagar’s ‘PANDIT’ Title :

 ১৮৪১ সালে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে প্রধান পন্ডিতের পদ লাভ করেন । তাকে বাংলা গদ্যের জনক বলা হয় । 

 

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের গ্রন্থ সমূহ – Ishwar Chandra Vidyasagar’s Books :

বিদ্যাসাগর স্কুল বিভাগের শিক্ষার জন্য বহুবিধ গ্রন্থ রচনা করেন । যেমন বােধােদয় , বর্ণপরিচয় , কথামালা , চরিতাবলী , ঋজুপাঠ প্রভৃতি । বাংলাভাষায় বলসঞ্চার , সংস্কৃত বাহুল্য মুক্তির জন্য বেতাল পঞ্চবিংশতি , শকুন্তলা , সীতার বনবাস প্রভৃতি রচনা করেন । এছাড়াও রঘুবংশ , সর্বদর্শ সংগ্রহ , কুমারসম্ভব , কাদম্বরী , মেঘদূত , উত্তররামচরিত , অভিজ্ঞান শকুন্তলম প্রভৃতি গ্রন্থ সম্পাদনা করেন ।

সমাজ সংস্কারে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা :

 সমাজ সংস্কারেও তার অনন্যসাধারণ ভূমিকা বাঙালী জীবনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে । তার একাগ্র ও অনলস প্রচেষ্টায় বিধবাবিবাহ আইন প্রণীত ও প্রচলিত হয় । হিন্দু বিধবা নারীদের কাছে তিনি এক মহামানব স্বরূপ । তিনি নিজ পুত্রকে দিয়ে প্রথম বিধবা বিবাহ করান । দুস্থ মহিলাদের সেবা – সহায়তা দিয়ে বাঁচানাের জন্য । তিনি হিন্দু ফ্যামিলি এ্যানুয়িটি ফান্ড ’ গঠন করেন স্ত্রীশিক্ষা প্রচলনের ব্যবস্থাও করেন ।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সংগ্রাম : 

 তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন । মাতৃভক্তির জন্যও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কিংবদন্তী হয়ে আছেন । তিনি চিরদিন কুসংস্কার , গোঁড়ামি আর ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে আপােসহীনভাবে লড়াই করে গেছেন । বাঙালী জাতি সর্বপ্রথম বড় হবার , যােগ্য হবার , মানবিক হবার , আধুনিক হবার , প্রগতিশীল হবার ও বিশ্বজনীন হবার সর্বপ্রথম দৃষ্টান্ত খুঁজে পেয়েছিল বিদ্যাসাগরের মধ্যে । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার সম্বন্ধে বলেছেন— “ তিনি  হিন্দু ছিলেন না , বাঙালী বা ব্রাহ্মণ ছিলেন না , ছিলেন ‘ মানুষ । এই মন্তব্যের তাৎপর্য অতলস্পশী । কারণ কারাে যথার্থ মানুষ হওয়া অতাে সহজ নয় । রবীন্দ্রনাথ আরাে বলেছেন — তাহার মহৎ চরিত্রের যে অক্ষয় বট তিনি বঙ্গভূমিতে রােপণ করিয়া গিয়াছেন , তাহার তলদেশ জাতির তীর্থস্থান হইয়াছে । 

 ডঃ সুকুমার সেন বলেছেন— “ বিদ্যাসাগরের আগে বাংলা গদ্যের চল ছিল , কিন্তু চাল ছিল না । 

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মৃত্যু – Ishwar Chandra Vidyasagar’s Death :

 ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সম্বন্ধে মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন— “ আমি যে দরিদ্র বাঙালী বাহ্মণকে শ্রদ্ধা করি তিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর । এই মহামতি বিদ্যাসাগর ১৮৯১ সালের ২৯ শে জুলাই পরলােকগমন করেন । তখন তার বয়স হয়েছিলাে ৭১ বছর । 

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনী (প্রশ্ন ও উত্তর) – Ishwar Chandra Vidyasagar’s Biography in Bengali (FAQ) :

  1. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্ম কবে হয়?

উ:- ২৬ সেপ্টেম্বর ১৮২০ সালে । 

  1. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পিতা ও মাতার নাম কী?

উ:- ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, ভগবতী দেবী ছিলেন তার পিতা ও মাতা ।

  1. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের নাম কী?

উ:- বর্ণপরিচয় , কথামালা , চরিতাবলী , ঋজুপাঠ প্রভৃতি ।

  1. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ‘পণ্ডিত’ উপাধি কত সালে পান?

উ:- ১৮৪১ সালে ।

  1. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের স্ত্রীর নাম কী?

উ:- দিনময়ী দেবী ।

  1. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?

উ:- পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ।

  1. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম কী?

উ:- সংস্কৃত কলেজ ।

  1. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কবে জন্মগ্রহণ করেন?

উ:- ২৬ সেপ্টম্বর ১৮২০ সালে ।

  1. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কোন নামে সাক্ষর করতেন?

উ:- ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় বা ঈশ্বরচন্দ্র শর্মা।

  1. সংস্কৃত কলেজ কবে প্রতিষ্ঠিত হয়?

উ:- ১৮২৮ সালে ।

  1. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পুত্রের নাম কী?

উ:- নারায়ণ চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়।

  1. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কবে মারা যান?

উ:- ২৯ জুলাই ১৮৯১ সালে ।

 

©kamaleshforeducation.in(2023)

 

 

 

 

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!