বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (চতুর্থ অধ্যায়) 

 

 

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (চতুর্থ অধ্যায়)   

MCQ | বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (চতুর্থ অধ্যায়)

মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Geography   Question and Answer :

  1. কঠিন বর্জ্য থেকে যে গ্যাস পাওয়া যায় , তা হল –

(A) কার্বন ডাইঅক্সাইড

(B) জৈব গ্যাস

(C) মিথেন

(D) অ্যামোনিয়া

Ans: (C) মিথেন

  1. একটি পরিবেশ মিত্র বর্জ্য হল –

(A) চট

(B) প্লাস্টিক

(C) কাচ

(D) সিসা

Ans: (A) চট

  1. একটি কঠিন বর্জ্যের উদাহরণ হল –

(A) হাসপাতালে ব্যবহৃত সিরিঞ্জ

(B) পয়ঃপ্রণালীর বর্জ্য

(C) বাতানুকূল যন্ত্র থেকে নির্গত ক্লোরোফ্লুরোকার্বন

(D) কোনোটিই নয়

Ans: A) হাসপাতালে ব্যবহৃত সিরিঞ্জ

  1. একটি তরল বর্জ্যের উদাহরণ হল –

(A) খবরের কাগজ

(B) ছেঁড়া জুতো

(C) কীটনাশক মিশ্রিত জল

(D) শিল্পকারখানার বিষাক্ত কণা

Ans: (C) কীটনাশক মিশ্রিত জল

  1. একটি গ্যাসীয় বর্জ্যের উদাহরণ হল –

(A) ক্র্যাপ

(B) ডিটারজেন্ট

(C) জীবাশ্ম জ্বালানি

(D) ক্রুড অয়েল

Ans: (C) জীবাশ্ম জ্বালানি

  1. হিরোসিমা – নাগাসাকিতে নিক্ষিপ্ত বোমা –

(A) গ্যাসীয় বর্জ্যের উদাহরণ

(B) বিষাক্ত বর্জ্যের উদাহরণ

(C) বিষহীন বর্জ্যের উদাহরণ

(D) তেজস্ক্রিয় বর্জ্যের উদাহরণ

Ans: (C) বিষহীন বর্জ্যের উদাহরণ

  1. ভাঙা মগ কী প্রকার ?

(A) জৈব ভঙ্গুর

(B) জৈব অভঙ্গুর

(C) বিষহীন

(D) বিষাক্ত

Ans: (A) জৈব ভঙ্গুর

  1. তেজস্ক্রিয় বর্জ্যের প্রধান উৎসস্থল –

(A) শিল্প কারখানা

(B) জলবিদ্যুৎ কেন্দ্ৰ

(C) জলশোধন কেন্দ্র

(D) পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র

Ans: (D) পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র

  1. Hazardous waste ‘ বলা হয় –

(A) বিষহীন বর্জ্য পদার্থকে

(B) বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থকে

(C) জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য পদার্থকে

(D) জৈব অভঙ্গুর বর্জ্য পদার্থকে

Ans: B) বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থকে

  1. খবরের কাগজ একপ্রকার –

(A) জৈব অভঙ্গুর পচনশীল তরল

(B) জৈব ভঙ্গুর

(C) গ্যাসীয় বর্জ্য

(D) জৈব অভঙ্গুর পদার্থকে

Ans: (B) জৈব ভঙ্গুর

[ আরোও দেখুন: Madhyamik Geography Suggestion 2023 Click here ]

  1. চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল –

(A) পলিথিন ব্যাগ

(B) স্যালাইন বোতল

(C) মিথেন

(D) পয়ঃপ্রণালীর বর্জ্য

Ans: (B) স্যালাইন বোতল

  1. বর্জ্য জল শোধনের প্রক্রিয়াকে ভাগ করা যায়—

(A) ২ টি স্তরে

(B) ১ টি স্তরে

(C) ৩ টি স্তরে

(D) ৪ টি স্তরে

Ans: (C) ৩ টি স্তরে

  1. বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ায় ক – টি স্তর দেখা যায় ?

(A) ১ টি

(B) ২ টি

(C) ৩ টি

(D) ৪ টি

Ans: (C) ৩ টি

  1. বায়ুতে উপস্থিত জীবাণু বর্জ্যে জৈব পদার্থের বিশ্লেষণ ঘটালে তাকে বলে

(A) কম্পোস্টিং

(B) ওভার ফিলিং

(C) ল্যান্ডফিলিং

(D) কম্পাউন্ডিং

Ans: (A) কম্পোস্টিং

  1. পৌর বর্জ্য শহর থেকে দূরে সরিয়ে মাটিতে পুঁতে দেওয়ার পদ্ধতিকে বলে—

(A) বর্জ্য পৃথকীকরণ

(B) কম্পোস্টিং

(C) জমি ভরাটকরণ

(D) নিষ্কাশন

Ans: (C) জমি ভরাটকরণ

  1. বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কোনো ব্যবহৃত দ্রব্যকে পুনরায় পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনার পদ্ধতিকে বলে—

(A) বর্জ্যের পরিমাণগত হ্রাস

(B) পুনর্ব্যবহার

(C) পুনর্নবীকরণ

(D) নিষ্কাশন

Ans: (B) পুনর্ব্যবহার

  1. ফ্লাই অ্যাশ কী প্রকার বর্জ্যের উদাহরণ ?

(A) গৃহস্থালি

(B) শিল্প

(C) কৃষিজ

(D) পৌর

Ans: C) কৃষিজ

  1. DDT কী প্রকার বর্জ্যের উদাহরণ ?

(A) কৃষিজ

(B) চিকিৎসা

(C) গৃহস্থালি

(D) পৌর

Ans: (A) কৃষিজ

  1. বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স বস্তুজাত বর্জ্যকে বলে—

(A) Toxic waste

(B) E – waste

(C) Radioactive waste

(D) Hazardous waste

Ans: (B) E – waste

  1. ল্যান্ডফিল থেকে উৎপন্ন গ্যাস হল –

(A) মিথেন

(B) অ্যামোনিয়া

(C) নাইট্রোজেন

(D) কোনোটিই নয়

Ans: B) অ্যামোনিয়া

অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (চতুর্থ অধ্যায়) মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Geography Bajro Bebosthapona Question and Answer :

  1. জৈব বর্জ্য পদার্থের পচনের ফলে উৎপন্ন সারকে কী বলে ?

Ans: জৈবসার বা বায়োফার্টিলাইজার ।

  1. দুটি তেজস্ক্রিয় বর্জ্যের উদাহরণ দাও ।

Ans: রেডিয়াম -২২৬ এবং কার্বন -১৪ ।

  1. দুটি লৌহ – ইস্পাত শিল্পের এর নাম লেখো যেখান থেকে দূষিত গরম জল নির্গত হয় । 

Ans: ব্লাস্ট ফার্নেসে ও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ।

  1. জৈব ভঙ্গুর দুটি বর্জ্যের উদাহরণ দাও ।

Ans: শাকসবজি , খাবারের অবশিষ্টাংশ ।

  1. জৈব অভঙ্গুর দুটি বর্জ্যের উদাহরণ দাও ।

Ans: প্লাস্টিক , কাচ ।

  1. কাগজ শিল্প থেকে কী বর্জ্য নির্গত হয় ?

Ans: সেলুলোজ ।

  1. দুটি বিষাক্ত জৈব বর্জ্যের নাম লেখো ।

Ans: সিসা , পারদ ।

  1. দুটি চিকিৎসা বর্জ্যের উদাহরণ দাও ।

Ans: ক্যাথিটার , সিরিঞ্জ ।

  1. শিল্পের বায়ুকে শোধনের জন্য প্রচলিত পদ্ধতিকে কী বলে ?

Ans: স্ক্রাবার ।

  1. জীবাণু দ্বারা বর্জ্যের বিয়োজন পদ্ধতিকে কী বলে ?

Ans: কম্পোস্টিং ।

  1. বর্জ্য জল শোধনের পদ্ধতিকে কী বলে ?

Ans: নিষ্কাশন ।

  1. মাটিতে পুঁতে বর্জ্য অপসারণ পদ্ধতিকে কী বলে ?

Ans: জমি ভরাটকরণ ( Land Filling ) |

  1. দুটি কৃষিবর্জ্যের উদাহরণ দাও ।

Ans: পেস্টিসাইড ; কীটনাশক দ্রব্য ।

  1. গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত দুটি কঠিন বর্জ্যের উদাহরণ দাও ।

Ans: কোল্ড ড্রিংকসের বোতল ; দুধের প্লাস্টিক প্যাকেট ।

  1. গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত দুটি তরল বর্জ্যের উদাহরণ দাও ।

Ans: সাবান কাচা জল , তরকারির জলীয় অবশিষ্টাংশ বা উচ্ছৃষ্ট , অংশ ।

  1. বর্জ্য ‘ পুনর্নবীকরণ ’ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হচ্ছে , উদাহরণ দাও ।

Ans: আখের ছিবড়া থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ।

  1. বর্জ্যের পরিমাণ কমানোর পদ্ধতিকে কী বলে ?

Ans: Reduce .

  1. বর্জ্যের আবার ব্যবহারযোগ্য হওয়ার পদ্ধতিকে কী বলে ?

Ans: Reuse .

  1. বর্জ্যের মধ্যে যেগুলি জীবাণু দ্বারা বিয়োজিত হয় তাকে কোন ধরনের বর্জ্য বলে ?

Ans: Biodigradable বা জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য ।

  1. তেজস্ক্রিয় বর্জ্য কোন্ শিল্প থেকে মূলত নির্গত হয় ?

Ans: পারমাণবিক শিল্প ।

  1. রাসায়নিক শিল্প থেকে নির্গত বর্জ্যের উল্লেখ করো ।

Ans: রং , অ্যাসিড , তেল ।

  1. ভারতে শহরে প্রতিদিন কত পরিমাণ বর্জ্য সৃষ্টি হয় ?

Ans: ৫০০ গ্রাম / জন ।

  1. ভারতে গ্রামে প্রতিদিন কত পরিমাণ বর্জ্য সৃষ্টি হয় ?

Ans: ৩০০ গ্রাম / জন ।

  1. তৈলশোধনাগার থেকে অসম্পূর্ণ দহনের ফলে উদ্ভূত কণাকে কী বলে ?

Ans: পেট্রোকোক ।

  1. কয়লা দহনে সৃষ্ট সূক্ষ্ম আণুবীক্ষণিক ভস্মকে কী বলে ?

Ans: ফ্লাই অ্যাশ ।

সংক্ষিপ্তউত্তর ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর | বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (চতুর্থ অধ্যায়) মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Geography Bajro Bebosthapona Question and Answer :

  1. বর্জ্য ( Waste ) কাকে বলে ?

Ans: ব্যবহারের অযোগ্য , পরিত্যক্ত , কঠিন – তরল – গ্যাসীয় অবস্থায় প্রকৃতিতে পড়ে থাকা বস্তু যা পরিবেশদূষণের অন্যতম কারণ তাকে বলে বর্জ্য । যেমন — ভাঙা প্লাস্টিক , ছেঁড়া কাগজ , নোংরা জল ইত্যাদি ।

  1. পদার্থের বস্তুগত অবস্থা অনুসারে বর্জ্য ক – প্রকার প্রশ্ন । কী কী ?

Ans: পদার্থের বস্তুগত অবস্থার ভিত্তিতে বর্জ্য তিন প্রকার যথা— কঠিন , তরল ও গ্যাসীয় বর্জ্য ।

  1. কঠিন বর্জ্য ( Solid waste ) কাকে বলে ?

Ans: যে কঠিন বস্তু অব্যবহৃত অবস্থায় পরিবেশের অবনমন বা দূষণ ঘটাতে সাহায্য করে , তাকে বলে কঠিন বর্জ্য্য । যেমন — খাবারের অবশিষ্ট অংশ , গৃহস্থালির জঞ্ঝাল , প্লাস্টিক , পেপার , ভাঙা কাচের বোতল , চট , সিরিঞ্জ , ইলেকট্রনিকস দ্রব্য ইত্যাদি ।

  1. কঠিন বর্জ্য পোড়ানো উচিত নয় কেন ?

Ans: কঠিন বর্জ্য পোড়ালে তা থেকে যে গ্যাসগুলি ( যেমন — সালফার ডাইঅক্সাইড , হাইড্রোজেন ফ্লুরাইড , কার্বন মনোক্সাইড ) নির্গত হয় , তা পরিবেশদূষণ ঘটায় । তাই কঠিন বর্জ্যকে অবৈজ্ঞানিকভাবে পোড়ানো উচিত নয় । জেনে রাখো ভস্মীভূতকরণ ( Incineration ) : কঠিন বর্জ্য পদার্থকে আবর্জনা পোড়ানোর চুল্লিতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অতি উচ্চচাপে পোড়াবার পদ্ধতিকে ভস্মীভূতকরণ বলা হয় । পুড়ে যাবার পরে যে ছাই , কাচ ও অন্যান্য ধাতু অদাহ্যবস্তুরুপে পড়ে থাকে তা সংগ্রহ করে পুনর্ব্যবহার করা হয় ।

  1. তরল বর্জ্য ( Liquid Waste ) কাকে বলে ?

Ans: প্রকৃতিতে দূষণ সৃষ্টিকারী তরল অব্যবহৃত যৌগ যখন অপরিশোধিত অবস্থায় পরিবেশের ক্ষতি করে , তখন তাকে তরল বর্জ্য বলে । যেমন — গৃহস্থালি , কলকারখানার ব্যবহৃত দুষিত জল , কাপড় কাচা , বাসন মাজার দূষিত জল ইত্যাদি ।

  1. গৃহস্থালির কঠিন বর্জ্যের কয়েকটি উদাহরণ দাও ।

Ans: গৃহস্থালির কঠিন বর্জ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল আনাজের খোসা , ভাঙা খেলনা , প্লাস্টিক মগ , ধাতুর ভাঙা অংশ ছেঁড়া কাপড় , পুরোনো কাগজ , প্লাস্টিক প্যাকেট ইত্যাদি ।

  1. গৃহস্থালির তরল বর্জ্যের উদাহরণ দাও ।

Ans: বাথরুমে ব্যবহৃত ডিটারজেন্ট , শ্যাম্পু , রিচিং পাউডার , অ্যাসিড , মিউরিটিক অ্যাসিড , ফিনাইল মিশ্রিত জল , রান্নাঘরের মশলা , তেল মিশ্রিত তরল , রান্নার উচ্ছিষ্টাংশ ইত্যাদি ।

  1. বর্জা জলকে কীভাবে জীবাণুমুক্ত করা হয় ?

Ans: বিভিন্ন প্রকার জীবাণুনাশক পদ্ধতির মাধ্যমে বর্জ্য জলকে জীবাণুমুক্ত করা হয় । যেমন— অতিবেগুনি রশ্মির ব্যবহার , জলে ক্লোরিনের ব্যবহার , জল ফুটিয়ে খাওয়া ইত্যাদির মাধ্যমে জল শুদ্ধ করা হয় ।

  1. গ্যাসীয় বর্জ্য ( Gaseous Waste ) কাকে বলে ?

Ans: বাতাসে ভাসমান লবণকণা , বায়ুকণা , ধুলোকণা , যখন পরিবেশের ক্ষতিসাধন করে , তাকে বলে গ্যাসীয় বর্জ্য । যেমন —– কলকারখানা এবং ইটভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়া , যানবাহনের ধোঁয়া , গৃহস্থালি থেকে নির্গত কার্বন মনোক্সাইড ও কার্বন ডাইঅক্সাইড , মিথেন , অ্যামোনিয়া ইত্যাদি ।

  1. বিষাক্ত বর্জ্য ( Toxic Waste ) বলতে কী বোঝ ?

Ans: নানা ধরনের বর্জ্য পদার্থ , যা থেকে বিভিন্ন ধরনের বিষক্রিয়তার উদ্ভব হয় এবং যেগুলি একেবারেই পরিবেশবান্ধব নয় , সেগুলিকে বলা হয় বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ । যেমন — শিল্পজাত নানান প্রকার তেজস্ক্রিয় পদার্থ ( ইউরেনিয়াম , থোরিয়াম প্রভৃতি ) এবং কিছু রাসায়নিক তরল পদার্থ , যা বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে ।

  1. বিষহীন বর্জ্য ( Non – toxic Waste ) বলতে কী বোঝ ?

Ans: যেসব বর্জ্য পদার্থগুলির বিষক্রিয়তা নেই , যেগুলি পরিবেশের কোনো প্রকার ক্ষতিসাধন করে না , তাদের বিষহীন বর্জ্যা পদার্থ বলে । এই বিষহীন বর্জ্য পদার্থগুলি সাধারণত Biodegradable | বা জৈবিকভাবে বিয়োজিত হয় । যেমন- বাজারের বর্জ্য পদার্থ , কলকারখানার বর্জ্য প্রভৃতি ।

  1. ‘ E- বর্জ্য ‘ বা বৈদ্যুতিন বর্জ্য ( Electronic waste ) কাকে বলে ?

Ans: বর্তমানে বিশ্বে নানান ইলেকট্রনিকস দ্রব্য ব্যবহৃত হয় । এই দ্রব্যগুলির অব্যবহৃত বাতিল অংশের মধ্যে পরিবেশ দূষণকারী পদার্থ থাকে । এই জাতীয় বর্জ্যকে B waste বলে । যেমন — সার্কিট বোর্ড , টিভি বা কম্পিউটার মনিটর , কম্পিউটারের ব্যাটারি ইত্যাদি ।

  1. জীব বিশ্লেষ্য বর্জ্যা ( Biodegradable Waste ) কী ?

Ans: যে বর্জ্য পদার্থ পরিবেশের কোনো ক্ষতি করে না , ব্যবহারের পরবর্তী বাতিল অংশ , পরিবেশে উপস্থিত বিভিন্ন জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা বিয়োজিত হয়ে পুনরায় পরিবেশে মিশে যায় , তাকে জীব বিশ্লেষ্য বর্জ্য বা Biodegradable waste বলে । যেমন — সবজি , পাতা , ফল , ফুল ইত্যাদি জৈব বর্জ্যা হল এর উদাহরণ ।

  1. জীব অবিশ্লেষ্য বর্জ্যা ( Non – biodegradable Waste ) কী ?

Ans: যেসব বর্জ্যা পরিবেশে পুনরায় মিশে যেতে পারে না , পরিবেশের ওপর একই অবস্থায় পড়ে থেকে দূষণ সৃষ্টি করে , তাকে বলে Non – biodegradable বা জীব – অবিশ্লেষ্য বর্জ্য । যেমন — প্লাস্টিক , পলিথিন , বিভিন্ন শিল্পজাত বর্জ্য ইত্যাদি ।

  1. জৈব বর্জ্য ( Biological Waste ) কাকে বলে ?

Ans: উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহের অংশবিশেষ বা দেহাবশেষকে মূলত জৈব বর্জ্য বলা হয় । যেমন — মৃত পশু – পাখির দেহ , ফুল – ফল – শাকসবজি ইত্যাদি হল জৈব বর্জ্য । এইগুলি পচনশীল বলে সহজেই পরিবেশে মিশে যায় ।

  1. Hazardous Waste কাকে বলে ?

Ans: বিষাক্ত ধাতুজ বর্জ্য , যেমন— সিসা , পারদ , ক্যাডমিয়াম , আর্সেনিক , অ্যাসবেস্টস , ডায়ক্সিন জাতীয় দ্রব্য পরিবেশে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে মানবদেহে রোগ সৃষ্টি করে , একে বলে Hazardous Waste | বলে ?

  1. বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ( Waste Management ) কাকে বলে ?

Ans: বর্জ্য পদার্থগুলিকে সম্পূর্ণরূপে নিঃশেষ করে দেওয়া বা পুনর্ব্যবহারের যোগ্য করে তোলার ব্যবস্থাকেই বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ।

  1. BOD কী ?

Ans: BOD- র পুরো কথা হল Biological Oxygen Demand । নদী বা জলাশয়ের জলে নির্দিষ্ট পরিমাণে অক্সিজেন উপস্থিত থাকে যা জীবের বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য আবশ্যক । প্রতি একক আয়তনের জৈব জারণের ফলে অণুজীবদের যে পরিমাণ অক্সিজেন দরকার হয় , তাকে বলে BOD .

  1. ইউটিফিকেশন কী ?

Ans: জলাশয়ের পুষ্টি মৌল বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে বলে ইউট্রিফিকেশন । জলাশয়ে জলদূষণের ( কাপড় কাচা , ডিটারজেন্ট , রাসায়নিক সার ) ফলে জলের নাইট্রেট ও ফসফেটের পরিমাণ বাড়ে । পুষ্টি মৌলের প্রাচুর্যে জলে ভাসমান কচুরিপানা , শৈবাল , অ্যালগি জাতীয় প্রাণীর পরিমাণ বাড়ে । ফলে জলের নীচে প্রাণীদের বৃদ্ধি ও বিকাশ ব্যাহত হয় , একে বলে ইউট্রিফিকেশন ।

  1. Take back policy কাকে বলে ? 

Ans: যেসব ব্যবহার্য দ্রব্যের পুনর্বিয়োজন সম্ভব নয় অর্থাৎ যেগুলি প্রকৃতিতে মিশে যায় না , সেগুলি যথাসম্ভব ব্যবহার না – করা উচিত অথবা ব্যবহার কমানোর প্রবণতা তৈরি করা আবশ্যক । তা সত্ত্বেও যেগুলি একান্তই ব্যবহার করতে হচ্ছে যেমন ইলেকট্রনিকস দ্রব্য , কম্পিউটার , সেলফোন প্রভৃতি ; সেগুলি ব্যবহারের পর অকেজো হলে পুনরায় প্রস্তুতকারক কোম্পানিকে তা ফিরিয়ে নিতে হবে । এই পদ্ধতির নাম Take Back Policy .

  1. নিষ্কাশন ( Drainage ) কাকে বলে ?

Ans: পয়ঃপ্রণালী , নর্দমা , শহরের আবর্জনা পাইপলাইন পথে দূরবর্তী স্থানে নিয়ে যাওয়ার পর তার থেকে বিষাক্ত রাসায়নিক মুক্ত করে বিশুদ্ধ করার পদ্ধতিকে বলে নিষ্কাশন । এই পদ্ধতিতে ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে তরল বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে ।

  1. উন্মুক্ত বর্জ্য ( Open Dumping ) বলতে কী বোঝ ?

Ans: সাধারণত শহরে নীচু খোলা জমিতে বর্জ্য উন্মুক্তভাবে ফেলে রাখা থাকলে , তাকে উন্মুক্ত বর্জ্যা বলে ।

  1. লিচেট ( Leachate ) বলতে কী বোঝ ?

Ans: বৃষ্টির যে জল ল্যান্ডফিলের বর্জ্য পদার্থ ধুয়ে নিয়ে জলাশয়ে বা ভৌমজলে মেশে , সেই বর্জ্য পদার্থ ধোয়া জলকে লিচেট বলে ।

  1. আখের ছিবড়ে বা ব্যাগাসে ( Bagasse ) কী ?

Ans: চিনি শিল্পে ব্যবহৃত অবশিষ্ট আখের ছিবড়ে ও অন্যান্য = বর্জ্যকে ব্যাগাসে বলে ।

  1. Waste Exchange বলতে কী বোঝ ?

Ans: অনেক সময় পদার্থ বা বস্তু ব্যবহার করে পুনরায় অবিকল অবিকৃত অবস্থায় পরিবেশে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব । পদার্থ সহায়িকা , বা বস্তুর পুনর্ব্যবহারের এই পদ্ধতিকে বলে Waste Exchange জেনে রাখো যেমন— পুরোনো কাগজ থেকে নতুন কাগজ প্রস্তুত করা ।

আবর্জনা ( Garbage ) : আমাদের প্রত্যেক দিন বাতিল করে দেওয়া গৃহস্থালির ব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত শাকসবজি ফল ইত্যাদির খোসা , উচ্ছিষ্ট অংশকেই আবর্জনা বলে ।

জন্মাল ( Rubbish ) : সকল প্রকার দাহ্য কঠিন পদার্থ , যেমন – কাঠ , কাগজ , কাচ , চামড়া , প্লাস্টিক ও বিভিন্ন প্রকার ধাতুকে জন্মাল বলে ।

  1. NPK কী ?

Ans: NPK- র পুরো নাম নাইট্রোজেন , ফসফেট , পটাশিয়াম । এগুলি উদ্ভিদের পুষ্টিমৌল , উদ্ভিদ বৃদ্ধির সহায়ক উপাদান । এই উপাদানগুলি না – থাকলে উদ্ভিদের পাতায় ক্লোরোসিস রোগ হয় । অর্থাৎ গাছের পাতা হলুদ হয়ে যায় ।

  1. তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ( Nuclear waste ) বলতে কী বোঝ ?

Ans: পারমাণবিক চুল্লি , পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র , পারমাণবিক গবেষণাগার থেকে নির্গত বর্জ্য পদার্থকে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য বলে । যেমন — ইউরেনিয়াম -235 , 238 , থোরিয়াম -230 , কার্বন -14 ইত্যাদি ।

  1. ভার্মি – কম্পোস্টিং ( Vermi – composting ) বলতে কী বোঝ ?

Ans: স্বাভাবিক জীবনযাত্রার মাধ্যমে জৈব বর্জ্যের বিয়োজন ঘটে হিউমাসে পরিণত হওয়ার পদ্ধতিকে ভার্মি – কম্পোস্টিং বলে ।

  1. বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ভরাটকরণ বলতে কী বোঝ ?

Ans: ফাঁকা জমি বা জমিতে গর্ত খুঁড়ে বর্জ্য পদার্থ ভরাট করাকে বর্জ্য ভরাটকরণ বলে । এতে বর্জ্য পদার্থ ধীরে ধীরে বিশ্লেষিত হয়ে মাটির সঙ্গে মিশে যায় ।

  1. বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার কাকে বলে ?

Ans: কিছু কিছু বর্জ্য পদার্থ আছে যেগুলি পুনরায় ব্যবহার করা যায় , তাকে বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার বলে । যেমন — খবরের কাগজ , পুরোনো শিশি , বোতল ইত্যাদি । এতে অর্থের সাশ্রয় হয় এবং সম্পদ বাঁচে ।

সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাধর্মী প্রশ্নোত্তর | বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (চতুর্থ অধ্যায়) মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Geography Bajro Bebosthapona Question and Answer :

  1. বর্জ্য পদার্থের শ্রেণিবিভাগ করো ।

Ans: বর্জ্যের প্রকারভেদ ( Classification of waste ) : পরিবেশের বর্জ্য পদার্থগুলিকে বিভিন্ন ভিত্তির ওপর সাধারণত বিশেষ কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করা যায় ।

( a ) পার্থিব বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী প্রকারভেদ :

( i ) কঠিন ( Solid ) : পদার্থের বিভিন্ন প্রকার ভৌত অবস্থাগুলির মধ্যে কঠিন বর্জ্যের উপস্থিতি পরিবেশে সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা হয় । যেমন : গৃহস্থালির জঞ্জাল , প্লাস্টিক , পেপার , পুরোনো অব্যবহার্য আসবাবপত্র , ভাঙা বোতল ও কাচের টুকরো , চট , খবরের কাগজ । এ ছাড়া বাজারের আনাজপাতি ও হাসপাতালের নানা অব্যবহার্য দ্রব্যাদি , যেমন সিরিজ , গজ কাপড় তুলো , রোগীর জামাকাপড় ইত্যাদি । এ ছাড়াও রয়েছে নানান শিল্পজাত বর্জ্য পদার্থ , যা সাধারণত কলকারখ নাগুলি থেকে উৎপন্ন হয় ।

( ii ) তরল ( Liquid ) তরল বর্জ্য পদার্থগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল নর্দমা ও নালাবাহিত গৃহস্থালির পয়ঃপ্রণালীজাত নানান তরল পদার্থ , কৃষিজমিতে কীটনাশক প্রয়োগের পরে জলসেচ দ্বারা বাহিত জল যা পার্শ্ববর্তী নদী ও জলাশয়ে মেশে । এ ছাড়াও রয়েছে নানান শিল্পজাত তরল বর্জ্য , নানান রাসায়নিক পদার্থ প্রভৃতি ।

( iii ) গ্যাসীয় ( Gaseous ) : কলকারখানা থেকে নির্গত নানান SPM ( সাসপেনডেড পারটিকুলেট ম্যাটার ) বিষাক্ত ধোঁয়া , ধুলোকণা , বিষাক্ত কণা , কার্বন মনোক্সাইড , বাতানুকূল যন্ত্র থেকে নির্গত CFC প্রভৃতি বিষাক্ত গ্যাস সমূহ এই প্রকার গ্যাসীয় বর্জ্য পদার্থের উদাহরণ ।

( b ) বিষক্রিয়তা অনুযায়ী প্রকারভেদ : বিষক্রিয়তার তারতম্য অনুযায়ী বর্জ্য পদার্থকে দু – ভাগে বিভক্ত করা যায়—

( i ) বিষাক্ত ( Toxic ) : নানান ধরনের বর্জ্য পদার্থ , যা থেকে । বিভিন্ন ধরনের বিষক্রিয়তার উদ্ভব হয় এবং যেগুলি একেবারেই পরিবেশবান্ধব নয় , সেগুলিকে বলা হয় বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ । যেমন — শিল্পজাত নানান প্রকার তেজস্ক্রিয় পদার্থ ( ইউরেনিয়াম , থোরিয়াম প্রভৃতি ) এবং কিছু রাসায়নিক তরল পদার্থ , যা বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে ।

( ii ) বিষহীন ( Non – toxic ) : যেসব বর্জ্য পদার্থগুলির বিষক্রিয়তা নেই , যেগুলি পরিবেশের কোনো প্রকার ক্ষতিসাধন করে না তাদের বিষহীন বর্জ্য পদার্থ বলে । এই বিষহীন বর্জ্য পদার্থগুলি সাধারণত Biodegradable বা জৈবিকভাবে বিয়োজিত হয় ।

যেমন — বাজারের বর্জ্য পদার্থ , কলকারখানার বর্জ্য প্রভৃতি ।

  1. বর্জ্য পদার্থের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো ।

Ans: বর্জ্য পদার্থের বৈশিষ্ট্যগুলি হল—

1 ) উপাদান : বর্জ্য পদার্থ কঠিন , তরল , গ্যাসীয় তিন প্রকারেরই হতে পারে ।

ii ) প্রকৃতি : বর্জ্য পদার্থের কিছু অংশ জীবাণু দ্বারা বিয়োজিত হয় , কিছু অংশ অবিয়োজিত থাকে ।

( iii ) দূষণ বর্জ্য উপাদানে পরিবেশের দূষণ সৃষ্টি হয় । ভারসাম্য নষ্ট হয় ।

( iv ) পরিমাণ গ্রামের তুলনায় শহরে বর্জ্যের পরিমাণ বেশি থাকে ।

( v ) বর্জ্য উৎসস্থল গৃহস্থালি , শিল্পাঞ্চল , কৃষিক্ষেত্র , চিকিৎসাকেন্দ্র , খনিজ আহরণ ও প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল , নির্মাণ ও উৎপাদক স্থান , ব্যাবসাকেন্দ্র , উৎপাদক স্থান ইত্যাদি হল বর্জ্যের উৎসস্থল ।

  1. কৃষিজ বর্জ্য কীভাবে সৃষ্টি হয় ?

Ans: চাষবাসের সময় যে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক জমিতে বা শস্যখেতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে , সেগুলির অবশিষ্টাংশ সাধারণত মাটিতে মিশে বৃষ্টির জলের সঙ্গে বা জলসেচের সঙ্গে ধুয়ে পার্শ্ববর্তী কোনো জলাশয় , পুকুর বা নদীতে গিয়ে মেশে । এগুলিই কৃষিজ তরল বর্জ্য । এ ছাড়াও যখন শস্যখেতে পোকা লেগে যায় বা খেতে ফসল নষ্ট হয়ে যায় তখন তা বিক্রির বা আহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে এবং কৃষিজ বর্জ্য হিসেবে পরিগণিত SAPP হয় । কৃষির ফলন বাড়াতে রাসায়নিক সার , কীটনাশক , আগাছানাশক ওষুধ ব্যবহার করা হয় ।

এগুলিতে নাইট্রেট , ফসফেট , পটাশ , অ্যামোনিয়া , ক্লোরাইড প্রভৃতি রাসায়নিক মৌল থাকে । এ ছাড়াও জৈব সার হিসেবে গবাদি পশুর বিষ্ঠা , গাছের পাতা , ডাল , কেঁচোর | কম্পোস্ট প্রভৃতি ব্যবহৃত হয় । যদিও এগুলি জৈব ভঙ্গুর অর্থাৎ নিজস্ব প্রক্রিয়ায় পুনরায় মাটিতে মিশে যায় তবুও সাময়িক সময়ের জন্য এগুলি পরিবেশের আবর্জনা । এ ছাড়া কৃষিফসল কেটে নেওয়ার পর পড়ে থাকা গাছের গোড়ার অংশে আগাছা বা ধান , গম – এর তুষ বা খোলস , পাট , তুলোর আঁশের বাতিল অংশ পরিবেশে বর্জ্য সৃষ্টি করে ।

  1. কঠিন বর্জ্যের সৃষ্টির উৎসগুলি চিহ্নিত করো ।

Ans: কঠিন বর্জ্যের সৃষ্টির উৎসগুলি হল

( i ) গৃহে ব্যবহৃত উপকরণ যেমন — পুরোনো কাগজ , বাতিল কাপড় , ভাঙা প্লাস্টিক ও কাচের অংশ ।

( ii ) শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ , টায়ার , টিউবের বাতিল অংশ , সিমেন্ট , তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের আবর্জনার অংশবিশেষ ।

( iii ) কৃষিখেতে : জমিতে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশের অকেজো অংশ , ফসল তোলার পর পড়ে থাকা অবশিষ্টাংশ বা ধানের তুষ , আখের ছিবড়া , পাটের আঁশ বের করার পর পড়ে থাকা অংশবিশেষ ।

( iv ) খনি ও নির্মাণকার্যে খনিজ আহরণের পর খনিজের অবশিষ্টাংশ ; গৃহ বা অন্যান্য নির্মাণের পর পড়ে থাকা চুনসুরকি , লোহার ছাঁট , ইটের কুচি , বালির আবর্জনা , পাথরের টুকরো , কয়লা ব পোড়ানোর পর পড়ে থাকা ছাই ইত্যাদি ।

  1. শিল্প বর্জ্যের নানা উৎস সমূহের উল্লেখ করো ।

Ans: শিল্পাঞ্চল তথা নগরাঞ্চলগুলিতে অবস্থিত কলকারখানাগুলি থেকে যে বিষাক্ত কালো ধোঁয়া , বিভিন্ন বিষাক্ত ধাতুকণা ও তরল পদার্থ নির্গত হয় , তাকেই শিল্প বর্জ্যা বলে ।

খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প এই শিল্পে ফল , ফুল থেকে নির্যাস বের করার পর পড়ে থাকা অবশিষ্টাংশ ।

শর্করা শিল্প : আখ থেকে চিনির রস নিঃসরণের পর পড়ে থাকা আখের ছিবড়া ।

পাটশিল্প : পাটের আঁশ বের করার পর পড়ে থাকা অবশিষ্টাংশ ।

কাগজ শিল্প কাষ্ঠমণ্ড , সেলুলোজ , কাগজের অবশিষ্টাংশ , শিল্পে ব্যবহৃত রাসায়নিক উপাদানের অব্যবহৃত অংশ প্রভৃতি ।

বয়ন শিল্প : ব্লিচিং পাউডার , রঙের অবশিষ্টাংশ , তুলো , সুতো , কাপড়ের ছাঁট অংশ । ধাতব শিল্প : অ্যালুমিনিয়াম , ইস্পাত শিল্পের ছাঁট , খনিজ , রাসায়নিক শিল্পের ক্ষতিকারক রাসায়নিক দ্রব্য , অ্যাসিড , রং , তেল ইত্যাদি ।

ইলেকট্রনিক শিল্প : যন্ত্রাংশের অংশ , তামার তার , সিসা , অ্যালুমিনিয়ামের অংশবিশেষ ।

সিমেন্ট শিল্প : চুনাপাথরের অবশিষ্টাংশ , বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লা , খনিজ তেল , পারমাণবিক উপাদানের অংশ ।

  1. তরল বর্জ্য কীভাবে সৃষ্টি হয় ? 

Ans: যেসব বর্জ্য তরল আকারে থাকে , তাকে তরল বর্জ্য বলে । তরল বর্জ্য সৃষ্টির বিভিন্ন প্রক্রিয়া হল—

( i ) গৃহস্থালির তরল বর্জ্য বাথরুমে ব্যবহৃত ডিটারজেন্ট , শ্যাম্পু , ব্লিচিং পাউডার , অক্সালিক অ্যাসিড , মিউরিটিক অ্যাসিড , ফিনাইল মিশ্রিত জল , রান্নাঘরে মশলা , তেল মিশ্রিত তরল , রান্নার উচ্ছিষ্টাংশ ইত্যাদি ।

( ii ) কলকারখানার তরল বর্জ্যা : কলকারখানা থেকে নির্গত গরম জল , তৈলাক্ত জল , কারখানা ধোয়ার জল ইত্যাদি ।

( iii ) কৃষিক্ষেত্রের তরল বর্জ্যা : কৃষিতে ব্যবহৃত সার , কীটনাশক ওষুধ জলের সাথে ধুয়ে এসে নদীতে মেশে । এগুলি কৃষিজ তরল বর্জ্যের উদাহরণ ।

  1. চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্য কীভাবে সৃষ্টি হয় ?

Ans: হাসপাতাল , নার্সিংহোম বা বিভিন্ন প্যাথোলজিক্যাল য ল্যাবরেটরি থেকে যে বর্জ্য নির্গত হয় , তাকে চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্য বলে । চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যবহৃত ছুঁচ , সিরিঞ্জ , ছুরি , কাঁচি , ব্লেড , স্যালাই , গজ , বোতল , তুলো , ব্যান্ডেজ , মানব অঙ্গের ব্যবচ্ছিন্ন অংশ , চিকিৎসায় ব্যবহৃত বিভিন্ন ওষুধ , ওষুধের প্যাকেট , প্যাথোলজির রক্ত , মল , মুত্র ইত্যাদি হল চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্যের উদাহরণ । প্রশ্ন ৮ গ্যাসীয় বর্জ্যের উৎসগুলি কী কী ? উত্তর বাতাসে ভাসমান লবণকণা , বায়ুকণা , ধূলোবা যখন পরিবেশে ক্ষতিসাধন করে , তাকে বলে গ্যাসীয় বন্ধ কলকারখানা , যানবাহন থেকে নির্গত কার্বন ডাইঅক্সাইড , মিথে ক্লোরোফ্লুরোকার্বন , নাইট্রোজেন অক্সাইড , সালফার অক্সাইড , কার্বন মনোক্সাইড ইত্যাদি হল গ্যাসীয় বর্জ্যের উদাহরণ ।

  1. পরিবেশের ওপর বর্জ্যের প্রভাব আলোচনা করো ।

Ans: ( ক ) বায়ুদূষণ ( Air pollution ) : বর্জ্য পদার্থগুলিতে পরিবেশের বিভিন্ন স্থানে জমিয়ে রাখার ফলে তা থেকে যে পা দুর্গন্ধ নির্গত হয় তা পারিপার্শ্বিক পরিবেশ তথা সমগ্র বায়ুমণ্ডলে বায়ুদূষণ ঘটায় এবং এটি মানুষ তথা যে – কোনো প্রাণীর ক্ষেত্রে ফুসফুস ও অন্যান্য অঙ্গে পৌঁছে শ্বাসরোধ , বমি ইত্যাদি নানা সমস্যা সৃষ্টি করে ।

( খ ) জল ও মৃত্তিকা দূষণ ( Water & soil pollution ) কৃষিজ জমিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার অথবা কীটনাশক তথ্য পয়ঃপ্রণালী নির্গত তরল বর্জ্যগুলি বৃষ্টি বা জলসেচের জল দ্বারা বুদ্ধে গিয়ে পার্শ্ববর্তী কোনো নদীতে মিশে সেখানকার স্বাভাবিক জলছ বাস্তুতন্ত্রকে ব্যাহত করে । এ ছাড়া মাটির উর্বরাশক্তির পক্ষেও এটি যথেষ্ট ক্ষতিকারক । অতিরিক্ত সার ও কীটনাশকের ব্যবহার মাটিকে আম্লিক করে দেয় ।

( গ ) রাসায়নিক বিক্রিয়া ( Chemical reaction ) : বিভিন্ন তেজস্ক্রিয় পদার্থ , যেগুলি কোনোভাবেই মাটির সাথে মেশে না , সেইসব অজৈব পদার্থগুলি ক্রমাগত যেখানে সেখানে সজ্জিত হয়ে জল নিষ্কাশন ব্যবস্থাকে ব্যাহত করছে । এগুলি মাটির সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটিয়ে এমন কিছু ক্ষতিকর যৌগের সৃষ্টি করে , যা মানবসভ্যতার সমূহ ক্ষতি করতে পারে ।

( ঘ ) বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্যহীনতা ( Imbalanced ecosystem ) এই বর্জ্য পদার্থের সঞ্চয় এবং তার পরিমাণ পরিবেশে বেড়েই চলেছে । ফলে পুকুর , বনভূমি , তৃণভূমি প্রভৃতি বিভিন্ন স্থানের বাস্তুতন্ত্রগুলি দিনের পর দিন তাদের ভারসাম্য হারাচ্ছে এবং বিঘ্নিত হচ্ছে ।

( ঙ ) জীববৈচিত্র্য হ্রাস ( Decrease in biodiversity ) : পৃথিবীর বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্রগুলি উক্ত নানান পরিবেশদূষণের কবলে পড়ে তাদে ভারসাম্য হারাচ্ছে । ফলে পরিবেশের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জীবগুলি লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এবং পরিবেশের জীববৈচিত্র্য হ্রাস পাচ্ছে ।

( চ ) দৃশ্যদূষণ : যেখানে সেখানে জমা ময়লা আবর্জনায় প্রকৃতির সৌন্দর্য হারিয়ে যায় ।

( ছ ) জমি ও জলাভূমি ধ্বংস : বিভিন্ন প্রকার বর্জ্য কখনও জমিতে এবং কখনও জলাভূমিতে ফেলা হয় । ফলে জমি ও জলাভূমির ক্ষতি হয় ।

( জ ) গন্ধদূষণ : বর্জ্যের পচন শুরু হলে চারপাশ দুর্গন্ধে ভরে যায় ও পরিবেশের ক্ষতি হয় ।

  1. তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ( Radioactive waste ) বলতে কী বোঝ ?

Ans: তেজস্ক্রিয় বর্জ্য হল উচ্চ তেজস্ক্রিয় ক্ষমতাসম্পন্ন পদার্থগুলির অবশিষ্টাংশ বিশেষ । PROINDE তেজস্ক্রিয় পদার্থ ইউরেনিয়াম , থোরিয়াম , রেডিয়াম প্রভৃতি উপাদান শিলাস্তরে থাকে ; খনিগর্ভ থেকে ওই পদার্থ আহরণের সময় এই বর্জ্য সৃষ্টি হয় । এ ছাড়া মহাজাগতিক বিকিরণ থেকেও তেজস্ক্রিয় পদার্থ উৎপন্ন হয় , এগুলিও এই বর্জ্যের অন্যতম উৎস । এ ছাড়া পারমাণবিক বোমা তৈরি ; ও নিক্ষেপের সময়ও তেজস্ক্রিয় বর্জ্য উৎপন্ন হয়ে থাকে । বিভিন্ন শিল্পে যেমন বিদ্যুৎ শিল্পে পারমাণবিক জ্বালানি ব্যবহৃত হয় ; এটিও বর্জ্যের অন্যতম উৎস । ঘড়ি বা যন্ত্র শিল্পের নানা কাজে রেডিয়াম ব্যবহৃত হয় । চিকিৎসাশাস্ত্রে ক্যানসার প্রতিরোধে কেমোথেরাপি দেওয়ার সময়ও তেজস্ক্রিয় বর্জ্য সৃষ্টি হয় ।

  1. বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণে 3R- এর ভূমিকা উল্লেখ করো ।

Ans: বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের পদ্ধতি হল 3R অর্থাৎ Reduce , Reuse & Recycle- কে একত্রে বলে 3R .

  1. বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ( Waste Management ) কী ?

 অথবা , বর্জ্যের পুনর্নবীকরণ বলতে কী বোঝ ?

Ans: বর্জ্য পদার্থগুলিকে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সম্পূর্ণ | নিঃশেষ করা অথবা পুনরায় ব্যবহারযোগ্য উপাদানে পরিণত করার নি ব্যবস্থা বা পদ্ধতিকে বলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ।

গুরুত্ব : বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিবেশকে দূষণমুক্ত করে , জনস্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখে । জৈব বৈচিত্র্য রক্ষা করে পরিবেশের বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য সুরক্ষিত রাখে । কর্মসূচী : বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তিনটি কর্মসূচির মাধ্যমে বাস্তবায়িত করা হয় ।

যেমন— ( ১ ) বর্জ্যের পরিমাণগত হ্রাস ( ২ ) পুনর্ব্যবহার ( ৩ ) পুনর্নবীকরণ ; এই ত্রিমূখী কর্মসূচিকে সংক্ষেপে বলে 3R – Reduce ; Reuse , Recycling .

পদ্ধতি : কঠিন , তরল , গ্যাসীয় বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে করা হয় । কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ধাপগুলি হল ( ক ) বর্জ্য পৃথকরণ ( খ ) বর্জ্য ভরাটকরণ ( গ ) কম্পোস্টিং । তরল ।

( a ) Reduce বা বর্জ্যের পরিমাণ হ্রাস : আমাদের দৈনন্দিন ও জীবনের অদরকারি পদার্থ যত কমানো সম্ভব হবে , বর্জ্যের পরিমাণও তত কমবে । অর্থাৎ দ্রব্য ব্যবহারে আমাদের মিতব্যয়ী হতে হবে ; অপ্রয়োজনীয় জিনিসই পরিবেশে বর্জ্যের পরিমাণ বাড়ায় ।

( b ) Reuse বা পুনর্ব্যবহার : পরিবেশের কিছু কিছু উপাদান = পুনর্ব্যবহারযোগ্য । যেমন— ধাতব বস্তু , কাগজ , যন্ত্রাংশ প্রভৃতি । এগুলি একবার ব্যবহারের পর পুনরায় ব্যবহার করা যায় । দ্রব্যের পুনর্ব্যবহার সম্পদের সঞ্চয় বাড়ায় , তাই অপুনর্ভব সম্পদগুলিকে সাশ্রয় করা ও পুনর্ব্যবহার খুব জরুরি ।

( c ) Recycle পুনর্নবীকরণ : পুনর্নবীকরণ বোঝায় বিশেষ বা Reuse বলতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কোনো ব্যবহৃত দ্রব্যকে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য সম্পদে পরিণত করে পরিবেশে ফিরিয়ে দেওয়া । যেমন — কাচ , ধাতু , প্লাস্টিক , কাগজ , ছেঁড়া কাপড় থেকে পুনরায় অনুরূপ দ্রব্য উৎপাদন সম্ভব । বর্জ্য সাধারণত নিষ্কাশন পদ্ধতিতে ও গ্যাসীয় বর্জ্য স্ক্রাবার পদ্ধতিতে ব্যবস্থাপনা করা হয় ।

  1. বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করো ।

Ans: বর্জ্য পরিবেশকে দূষিত করে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বিঘ্নিত করে ; বৃহত্তর অর্থে দেশের , সমাজের , জৈব বৈচিত্র্যের ক্ষতিসাধন করে । তাই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একান্ত প্রয়োজন । যে যে কারণে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা দরকার সেগুলি হল ( a ) পরিবেশকে রক্ষা করা পরিবেশের অজৈব উপাদান জল , মাটি , বায়ু বর্জ্যের কারণে দূষিত হয় ; তাই পরিবেশকে দূষণমুক্ত করতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অত্যাবশ্যক । ( b ) বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষায় পরিবেশের জীবজ উপাদানগুলি বর্জ্যের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় । রাসায়নিক বিষাক্ত বর্জ্য দেহে রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটায় , ক্ষতিকারক প্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধি করে , বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয় । তাই বাস্তুতন্ত্রকে বাঁচাতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আবশ্যক । ( c ) জৈব বৈচিত্র্য রক্ষা পৃথিবীতে বসবাসকারী উদ্ভিদ ও প্রাণীকুল নিয়ে যে জৈব বৈচিত্র্য গড়ে ওঠে তা বর্জ্যের কারণে বিনষ্ট হয় । জৈব বৈচিত্র্য বাঁচাতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন । ( d ) খাদ্যজালক ও খাদ্যশৃঙ্খলার ভারসাম্য বজায় রাখতে । পরিবেশের বিভিন্ন জীবজ ও অজীবজ উপাদনের পারস্পরিক মিথোস্ক্রিয়ায় সুনির্দিষ্ট খাদ্যজালক ও খাদ্যশৃঙ্খল গড়ে ওঠে । পরিবেশ জীবনের সুস্থতা বজায় রাখতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা জরুরি পদক্ষেপ ।

  1. ম্পোস্টিং ( Composting ) বলতে কী বোঝ ? 

Ans: জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য পদার্থগুলি জীবাণুর দ্বারা বিয়োজিত হয়ে হিউমাসে পরিণত হলে , তাকে বলে কম্পোস্টিং । পদ্ধতি । বর্জ্য জীবাণুর দ্বারা বিয়োজিত হয়ে এই প্রক্রিয়ায় হিউমাসে পরিণত হয় । কম্পোস্টিং মূলত দু – প্রকার —

( ক ) সবাত কম্পোস্টিং : বায়ুর উপস্থিতিতে জীবাণুর জৈব বিশ্লেষণ ঘটানোর পদ্ধতিকে বলে সবাত কম্পোস্টিং ।

( খ ) অরাত কম্পোস্টিং : বায়ুর প অনুপস্থিতিতে জীবাণুর জৈব বিশ্লেষণ ঘটানোর পদ্ধতির নাম অবাত কম্পোস্টিং । এর অপর নাম ব্যাঙ্গালোর পদ্ধতি । সাধারণত বাড়ি , শহর , দোকান ঘরের অব্যবহার্য আনাজ , ডিমের খোসা , অবশিষ্ট খাবারের অংশ প্রভৃতি এই পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াকরণ করে জৈব সারে পরিণত করা হয় । এই পদ্ধতি ল্যান্ডফিলিং পদ্ধতিরই একটি বিশেষ রূপ । অল্প স্থানে গভীর গর্ত খুঁড়ে প্রথমে শাকসবজির অংশবিশেষ বা রেচনজাত বর্জ্য ফেলা হয় । পরে তা ভরাট হয়ে গেলে মাটি চাপা দেওয়া হয় ; তা পচে জৈব পদার্থ মাটিতে মিশে মাটির পুষ্টিমৌল বৃদ্ধি করে । আবার অন্যত্র একই পদ্ধতিতে মাটি খুঁড়ে বর্জ্য ভরাট করে মাটির মুখ বন্ধ করে বিয়োজিত করা হয় ।

সুবিধা : ( ক ) মৃত্তিকায় জৈব উপাদানের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় । ( খ ) কৃষিক্ষেত্রে এই দ্রব্য সহজেই ব্যবহৃত হয় । ( গ ) কঠিন বজা খুব বেশি পরিমাণে হ্রাস পায় । অসুবিধা : জনবসতি অঞ্চলের নিকটবর্তী স্থানে এই পদ্ধতি অবলম্বন করায় গন্ধদূষণের ও রোগজীবাণু আক্রমণের সম্ভাবনা প্রবল । তাই বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন আবশ্যিক ।

  1. বার ( Scrubber ) সম্পর্কে লেখো । 

অথবা , গ্যাসীয় বর্জ্য নিয়ন্ত্রণের উপায়গুলি কী কী ?

Ans: বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি বিশেষ বিজ্ঞাননির্ভর প্রক্রিয়ার নাম স্কাবার । এই পদ্ধতিতে শিল্প থেকে নির্গত দূষিত বায়বীয় পদার্থ ও গ্যাসীয় উপাদানের অপসারণ ঘটিয়ে বায়ুকে বিশুদ্ধ করা হয় ।

পদ্ধতি : স্ক্রাবিং পদ্ধতি দু – প্রকার । ( ক ) শুষ্ক স্ক্রাবার ( Dry scrubbers ] : এই পদ্ধতির মাধ্যমে দুষিত নির্গত ধোঁয়াকে অম্লমুক্ত করা হয় । ( খ ) আর্দ্র স্ক্রাবার [ Wet Scrubber ] : এই পদ্ধতি প্রয়োগে দূষণকারী গ্যাস , দূষণকণা অপসারণ করা হয় । সাধারণত ক্ষেত্রে দ্রবণের মাধ্যমে গ্যাসীয় দূষিত পদার্থকে স্কাবার দ্বারা অপসারণ হয় । দ্রবণে গ্যাসের দ্রাব্যতার ওপর এই পদ্ধতির কার্যকারিতা করে ।

উদাহরণ : দহনের সময় সালফার জারিত হয়ে সালফার ডাইঅক্সাইডে পরিণত হয় । পরে ধৌতাগারে স্কাবার পদ্ধতিতে অপসৃত হয় । ( ii ) অ্যামোনিয়া বা হাইড্রোজেন সালফাইড মিশ্রিত জলীয় দ্রবণ থেকে দুর্বি স্ক্যাবার পদ্ধতিতে দুষণমুক্ত করা হয় । ( im ) চুনাপাথরের গুঁড়ে জলের সঙ্গে মিশে থাকা গ্যাসও এই পদ্ধতিতে পরিকৃত ভরাটকরণ বলে ।

  1. ( Land filling ) পদ্ধতি কী ?

Ans: কোনো নীচু স্থানে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ও বিশেষ পদ্ধতি হল বর্জ্য ভরাটকরণ ।

পদ্ধতি : জনবসতি , শিল্পাঞ্চল বা বাণিজ্যকেন্দ্র থেকে দূরে কোনে উন্মুক্ত খোলা জায়গাকে , খুব গভীরভাবে খনন করে মাটির নীচে বর্জ্য চাপা দেওয়া হয় । সাধারণত বর্জ্য ২ মিটার উঁচু স্তরে বিছিয়ে দেওয়া হয় ও তার ওপর ২০-২৫ সেমি মাটির স্তর চাপা জো হয় । মাটির মধ্যে থাকা জীবাণু বর্জ্যের ভৌত রাসায়নিক পরিবর্তন । ঘটায় । দীর্ঘদিন চাপা পড়া অবস্থায় থেকে ওই জৈব ভঙ্গুর বর্জ মাটিতে মিশে যায় ।

সতর্কীকরণ : তবে এক্ষেত্রে কতকগুলি সতর্কীকরণ নেওয়া আবশ্যিক ।

যথা— ( i ) ল্যান্ডফিলিং – এর নির্বাচিত স্থান শহরাঞ্চল থেকে দূরে হতে হবে । ( ii ) জায়গাটির আয়তন বেশি হতে হবে । ( iii ) স্থানটিতে জনবসতি থাকবে না ; কারণ বর্জ্যের দূষণ মানবশরীরের পক্ষে ক্ষতিকর । ( iv ) ময়লা জল বা বর্জ্যের বিয়োজিত অংশ যাতে কোনোভাবেই ভৌম জলস্তরকে দূষিত ন করে সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে । ( v ) ময়লার গাড়ি যাতে সুনির্দিষ্ট খোলা স্থানে সহজে পৌঁছোতে পারে অর্থাৎ অঞ্চলটি পরিবহণযোগ্য হয় তা দেখা । ( vi ) অনেক দেশে সমুদ্রতীরে বর্জ্য নিক্ষেপ করা হয় । এক্ষেত্রে দেখতে হবে স্থানটি যেন সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যকে বিনষ্ট না করে । ( vii ) ময়লা জমা করার স্থানগুলিকে উন্মুক্ত না – রেখে কংক্রিটের দেয়াল দিয়ে বাঁধিয়ে দিতে হবে । জমি ভরাটকরণের সুবিধা : ( i ) বায়ুদূষণ তথা পরিবেশ দূষণের পরিমাণ কমে যায় । ( ii ) ল্যান্ডফিলিং – এর ফলে যে গ্যাস নির্গত হয় , তা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয় । ( iii ) বর্জ্য পদার্থ আবৃত অবস্থায় থাকে বলে মাছি , মশা , ইঁদুর , কীটপতঙ্গ বাসা বাঁধতে পারে না । জমি ভরাটকরণের অসুবিধা : জমে থাকা বর্জ্য পদার্থ থেকে নির্গত জল চুঁইয়ে ভৌম জলস্তরে মিশে যায় ।

  1. নিষ্কাশন পদ্ধতির বিভিন্ন ধাপগুলি উল্লেখ করো ।

Ans: মূলত তরল বর্জ্য নিষ্কাশন পদ্ধতিতে বিশুদ্ধ করা হয় । শহরে শিল্পকারখানা বা গৃহস্থালি থেকে যে বিষাক্ত তরল জল নিষ্কাশিত হয় তা পর্যায়ক্রমে তিনটি ধাপে জীবাণুমুক্ত বা দূষণমুক্ত করা হয় ।

( a ) প্রাথমিক ধাপ : প্রথমে পাইপলাইন পথে নোংরা জল একটি বড়ো জলাধারে ফেলা হয় । সেখানে ভারী বর্জ্যগুলি থিতিয়ে জলাধারের নীচে । পড়ে থাকে ।

( b ) দ্বিতীয় ধাপ : জলে ভাসমান কঠিন জৈব ও অজৈব পদার্থ এই পর্যায়ে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ।

( c ) তৃতীয় ধাপ : এই পর্যায়ে রাসায়নিক ও বিষাক্ত অভঙ্গুর পদার্থগুলিকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় শোধন করা হয় ও অন্যত্র নিষ্ক্রমণ করা হয় । বিশেষ বিশেষ তথ্য Electronic Waste : বাইয়োসাইড : কৃষিক্ষেত্রে অবাঞ্ছিত উদ্ভিদ বিনাশ করতে সাহায্য করে এমন জৈব উপাদান । পেস্টিসাইড : কৃষিকাজে প্রতিকূল প্রভাব সৃষ্টিকারী ছত্রাক , কৃমি , ব্যাকটেরিয়া , ধ্বংস করে এমন রাসায়নিক উপাদান । ইনসেক্টিসাইডস্ : কৃষিজফসলের ক্ষতি করে এমন কীটপতঙ্গকে বিনাশ করতে যেসব রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহৃত হয় । হাৰ্বিসাইডস : আগাছা দমন করার জন্য কৃষিক্ষেত্রে যেসব রাসায়নিক ব্যবহৃত হয় ।

  1. কঠিন , তরল ও গ্যাসীয় বর্জ্যের ব্যবস্থাপনার পদ্ধতিগুলি আলোচনা করো । 

অথবা , বর্জ্য পৃথকরণ কীভাবে করা হয় ?

Ans: ( ক ) বর্জ্য পৃথক্করণ ( Segregation of waste ) : কোনো স্থানে যখন বর্জ্য পদার্থ জমা হয় , তখন সেখানে নানান ধরনের বর্জ্য পদার্থ ( শুষ্ক বর্জ্য ও আর্দ্র বর্জ্য ) একত্রিত হয়ে থাকে । সেগুলিকে আলাদা না – করলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব হয় না । এই পদ্ধতিটিকেই বলা হয় বর্জ্য পৃথক্করণ । এই পদ্ধতিটি পৃথিবীর উন্নত দেশ , যেমন — মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র , জাপান প্রভৃতি স্থানে যন্ত্রের মাধ্যমে করা হলেও ভারতবর্ষে মূলত মানুষের দ্বারাই করা হয়ে থাকে ।

( খ ) জমি ভরাটকরণ ( Land filling ) : এই পদ্ধতিতে বৃহদায়তন ফাঁকা জমিকে খুব গভীর ভাবে খনন করা হয় । কঠিন জৈব বর্জ্যা পদার্থগুলিকে এর মধ্যে ফেলে ভরাট করা হয় এবং সবশেষে , পুনরায় মাটি চাপা দিয়ে দেওয়া হয় । সেগুলি মাটির তলায় চাপা পড়ে থাকাকালীন চাপে ও তাপে খুব সহজেই মাটি হয়ে যায় ।

( গ ) কম্পোস্টিং ( Composting ) গ্রামাঞ্চলে বাড়ির মধ্যেই খালি জায়গায় কিছুটা জমি খনন করে তাতে গৃহস্থালির দৈনিক উৎপন্ন বর্জ্য ফেলা হয় । কিছুদিন পর বর্জ্যা দ্বারা ওই জায়গা ভরতি হয়ে গেলে মাটি চাপা দিয়ে অপর কোনো স্থান পুনরায় খনন করে । বর্জ্যা নিক্ষেপ করা হয় । কম্পোস্টিং পদ্ধতিটি খানিকটা ভরাটকরণ পদ্ধতির মতো । এই পদ্ধতিতেও একটি গর্তকে কিছু পরিমাণ জৈব বর্জ্য , যেমন— পশুপাখির মৃতদেহ , গৃহস্থালি ও বাজারের নানান আনাজের খোসা ও পচা । শাকসবজি , মলমূত্র প্রভৃতি দ্বারা ভরাট করা হয় ও মাটি দিয়ে এই গর্তের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয় । কিছুদিন পরে দেখা যায় । যে ওই জৈবাংশগুলি বিয়োজিত হয়ে জৈব সার গঠন করেছে , যার পুষ্টিমাত্রা খুব বেশি ।

( ঘ ) নিষ্কাশন / নিকাশি ( Drainage ) : মূলত তরল বর্জ্য নিকাশি বা নিষ্কাশন ব্যবস্থার মাধ্যমে নিষ্কাশিত করে একটি বিশেষ আধারে সঞ্চয় করলে পরে ওই জল বিশুদ্ধিকরণের মাধ্যমে পুনরায় ব্যবহার করা হয় । এই পদ্ধতিতে ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে তরল বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে ।

(ঙ) স্ক্রাবার ( Scrubber ) : ধ্রুাবার হল এমন একটি যন্ত্র যা বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের কাজে ব্যবহৃত হয় । এটি দুষিত পদার্থগুলিকে আলাদা করে দেয় । বিভিন্ন কঠিন , তরল এবং গ্যাসীয় শিল্প বর্জ্য , পৌরসভার বর্জ্য এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্যকে পরিশোধিত করে সেখান থেকে দূষিত পদার্থকে আলাদা করা হয় । স্ক্রাবার দুই ধরনের হয় । যথা – ( i ) শুষ্ক স্ক্রাবার , ( ii ) আর্দ্র স্ক্রাবার ।

  1. ফ্লাই অ্যাশ কী ?

Ans: ফ্লাই অ্যাশ : এর বাংলা প্রতিশব্দ ‘ ভাসমান বা উড়ন্ত বস্তুকণা ‘ বা ‘ ছাই ‘ । ব্যাস ০.০২ মাইক্রোমিটার থেকে ১০ মাইক্রোমিটার । ( ১um = ১ মিটারের ১০ লক্ষ ভাগের ১ ভাগ ) ★ উৎস : তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা পোড়ানোর ছাই , তামাকের গুঁড়ো , কারখানার দূষিত গ্যাস ও ধুলোকণা , সিমেন্টের ধুলো , চাষের জমির পেস্টিসাইডের অংশবিশেষ , বাড়ির বর্জ্য বা ঘরবাড়ির ডাস্টিং – এর সময় ওড়া ধুলোকণা , ইটভাটার ধুলো বা গুঁড়ো উপাদান , উড়ন্ত ছাই – এ যে – উপাদানগুলি বিদ্যমান থাকে সেগুলি হল কার্বন , ফসফরাস , ক্যালশিয়াম , পটাশিয়াম , নাইট্রোজেন , সালফার । * মানব স্বাস্থ্যে প্রভাব : মানবশরীরে ফুসফুসজনিত রোগ হাঁপানি , ব্রংকাইটিস , শ্বাসকষ্ট , চোখজ্বালা , মাথাব্যথা প্রভৃতির উপসর্গ দেখা যায় । অন্যান্য প্রভাব : পাতলা আস্তরণে বাতাস ঢেকে যাওয়ায় ধোঁয়াশা সৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয় , ফলে বায়ু দূষিত হয় । কোলডাস্ট : ভাসমান কয়লার গুঁড়োকে বলে কোলডাস্ট । পেট্রোকোক : তৈল শোধনাগারে ক্রুড অয়েল শোধনের সময় অসম্পূর্ণ দহনের মাধ্যমে যে কণা উৎপন্ন হয় , তাকে বলে পেট্রোকোক । পেট্রোকোকে ৯ % কার্বনকণার উপস্থিতি থাকে ।

  1. সদ প্রক্রিয়াকরণে শিক্ষার্থীর ভূমিকা উল্লেখ করো ।

Ans: পরিবেশকে বর্জ্য মুক্ত করতে শিক্ষার্থীকেই প্রাথমিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে । শিশুমনে পরিবেশ সচেতনতা যত বাড়বে , পৃথিবী ও পরিবেশ ততই বাসযোগ্য ভূমিতে পরিণত হবে । বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীরা যেসব উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে সেগুলি হল –

( a ) জৈব ভঙ্গুর , জৈব অভঙ্গুর , বিষাক্ত , বিষহীন বর্জ্য সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে জ্ঞান অর্জন করতে হবে । চেষ্টা করতে হবে জৈব অভঙ্গুর ও বিষাক্ত বর্জ্যগুলির ব্যবহার হ্রাস করা । যেমন – Use & Throw পেনের পরিবর্তে কালির পেন ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তোলা ।

( b ) পরিবেশ পরিচ্ছন্নতায় রোগমুক্তি ঘটে । এই বিষয়ে বিদ্যালয় সচেতনতার দৃষ্টি দেখালে , বাড়ির চারপাশে বর্জ্য নিক্ষেপে নির্দিষ্ট ডাস্টবিন ব্যবহার করার গুরুত্ব বাড়বে ।

( c ) অপ্রয়োজনীয় উদ্বৃত্ত জিনিসই বর্জ্যের পরিমাণ বাড়ায় । তাই পরিমিত ও প্রয়োজনীয় জিনিসই কেনার নিয়ম শিক্ষার্থীকে গড়ে তুলতে হবে ।

( d ) শৌচাগার ব্যবহারে সচেতনতা বৃদ্ধি করা আবশ্যক । এ ছাড়াও বিতর্ক বা সাংস্কৃতিক নাটক , অ্যাওয়ার্নিং ক্যাম্প করে পরিবার ও সমাজের মানুষকে এ বিষয়ে জানাতে পারে ।

  1. নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধি হল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রাথমিক ধাপ – কেন ব্যাখ্যা করো ।

Ans: জনসচেতনতা বৃদ্ধি পেলে তবেই পরিবেশকে জঞ্জালমুক্ত করে বিশুদ্ধ রাখা যাবে । প্রকৃতি বর্জ্যমুক্ত হলে জীববৈচিত্র্য সুরক্ষিত হবে ; বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় থাকবে । গৃহস্থালি , শিল্পক্ষেত্র , কৃষিক্ষেত্র , চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে প্রতিদিন যেসব বর্জ্য উৎপন্ন হয় তার মধ্যে কোন্‌গুলি কীভাবে মানবশরীরে কুপ্রভাব ফেলে সে বিষয়ে সরকারি , বেসরকারি , স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করতে হবে । বিভিন্ন পত্রপত্রিকা , মিডিয়াকে এ বিষয়ে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে হবে । মানুষ নিজেও স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হবেন । সুনির্দিষ্ট জায়গায় ময়লা আবর্জনা ফেলার সু – অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে । নিয়মিত ময়লা ফেলার গাড়ি পাড়ায় পাড়ায় ময়লা সংগ্রহ করে যাতে সুনির্দিষ্ট স্থানে নিক্ষেপ না করে তার নজরদারি মানুষকে রাখতে হবে । খোলা ভ্যাটগুলিতে নিয়মিত | ব্লিচিং ছড়াতে হবে যাতে রোগজীবাণুর সংক্রমণ কমে । চাপা দেওয় যায় এমন স্থানে ময়লা ফেলা হলে গন্ধদূষণের পরিমাণ কমবে । | প্রত্যেকে নিজেকে সচেতন রাখবে ; তাহলেই সমাজ সচেতন হবে । প্রকৃতি বাঁচলে আমরাও বাঁচব এই অঙ্গীকারে সবাইকে দীক্ষিত হতে হবে ।

  1. বর্জ্য ভরাটকরণ প্রক্রিয়া মানবজীবনে অনেকসময় বিপর্যয় ঘটায় কী করে ?

Ans: জনবসতি থেকে দূরবর্তী স্থানে খোলা উন্মুক্ত প্রান্তরে প্রথমে কিছুটা মাটি গভীরভাবে খনন করে বর্জ্য ফেলা হয় , পরে আবার মাটি চাপা দেওয়া হয় । পরবর্তী সময় মাটির তাপে , চাপে খুব সহজেই তা মাটিতে পরিণত হয় । এই পদ্ধতিতে কয়েকটি বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন না – করলে তা মানবজীবনে নানা সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে ।

যেমন : – ( i ) উন্মুক্ত স্থানটি আয়তনে বড়ো হওয়া প্রয়োজন ; নির্বাচিত খোলা স্থানটি অবশ্যই লোকালয় থেকে দূরে হওয়া বাঞ্ছনীয় , তা না হলে দুর্গন্ধ ছড়ায় ও স্বাস্থ্যহানির কারণ ঘটে । জৈব প্রক্রিয়াকরণের সময় রোগাক্রান্ত পোকা , ভাইরাস , ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মানবশরীরে ডেঙ্গু , ম্যালেরিয়া , টাইফয়েড প্রভৃতির সংক্রমণ ঘটাতে পারে ।

( ii ) ময়লা ফেলার গাড়ি ঢাকা হওয়া প্রয়োজন যাতে যাওয়ার পথে আবর্জনা রাস্তায় পড়ে না যায় ; ময়লার গাড়ি যাতে শব্দদূষণ না – ঘটায় সেদিকে বিশেষ সতর্ক হওয়া উচিত ।

( iii ) ময়লা ফেলা গর্ত ততটাই খনন করা দরকার যা মাটির নিজস্ব পুষ্টি মৌল নষ্ট না করে অথবা ওই বর্জ্য দূষণ ভৌম জলস্তর পর্যন্ত না পৌঁছোয় ; সেক্ষেত্রে পানীয় জলে নানা রোগজীবাণু সংক্রমণের সম্ভাবনা তৈরি হয় ।

( iv ) অনেকসময় সমুদ্রেও বর্জ্য ফেলা হয় । এক্ষেত্রে নজর দেওয়া প্রয়োজন সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য যাতে বিনষ্ট না হয় , তাহলে মানবজীবনে নানা অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে ।

INTERESTING FACTS : সচ্ছ ভারত অভিযান : ২০১১ খ্রিস্টাব্দের ২ অক্টোবর নয়াদিল্লিতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বচ্ছ ভারত অভিযানের সূচনা করেন । ভারতবর্ষের ৪০৪১ টি নগর ও গ্রামে স্বচ্ছতার সচেতনতা বৃদ্ধিতে এই প্রকল্পের সূচনা হয় । স্বচ্ছতার | জন্য গৃহীত এটি ভারতের বৃহত্তম প্রয়াস । এই অভিযানের সময়সীমা |

বছর ( ২০১৪–২০১৯ ) । এর প্রধান উদ্দেশ্যগুলি হল- ( ১ ) স্বাস্থ্যক | শৌচালয় নির্মাণ , ( ২ ) প্রকাশ্যে মলমূত্র ত্যাগ বন্ধ করা , ( ৩ ) পৌরসভার বর্জ্যের ১০০ % ব্যবস্থাপনা করা ইত্যাদি । এই অভিযান সফল করার জন্য ২০১৯ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসের মধ্যে গ্রামে ১২ কোটি শৌচাগার নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় ।

পার্থক্য নিরূপণ করো | বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (চতুর্থ অধ্যায়) মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Geography Bajro Bebosthapona Question and Answer : 

  1. জৈব ভঙ্গুর ও জৈব অভঙ্গুর – এর মধ্যে পার্থক্য ।
বিষয় জৈব ভঙ্গুর জৈব অভঙ্গুর 
সংজ্ঞা যেসব বর্জ্য পচে, ভেঙে আবার মাটিতে মিশে যায় । যে বর্জ্য পদার্থ প্রকৃতিতে পড়ে থাকে, মাটিতে মিশে না ।
প্রকৃতি এরা জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা দ্রুত বিয়োজিত হয় । এরা সাধারণত বিয়োজিত হয় না, হলেও সুদীর্ঘ সময় লাগে ।
উৎস মূলত গৃহস্থালি ও কৃষিক্ষেত্র এদের উৎপত্তিস্থল । বেশিরভাগই উৎপাদিত ধাতব ও অধাতব শিল্প বর্জ্য থাকে ।
প্রভাব পরিবেশকে দূষণমুক্ত করে । পরিবেশ দূষিত করে ।
উদাহরণ আনাজের খোসা, মাটির টব, কাগজের ব্যাগ, কাপড়ের অংশ । প্লাস্টিক ক্যারি ব্যাগ, মিনারেল ওয়াটার বোতল, ব্যাগ শিল্পের ধাতব, আধাতব আবর্জনা ।

 

====================================================

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (চতুর্থ অধ্যায়) 

অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (চতুর্থ অধ্যায়) – মাধ্যমিক ভূগোল সাজেশন | Madhyamik Geography Suggestion :

  1. দুটি কৃষিবর্জ্যের উদাহরণ দাও ।

Answer : পেস্টিসাইড ; কীটনাশক দ্রব্য ।

  1. গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত দুটি কঠিন বর্জ্যের উদাহরণ দাও ।

Answer : কোল্ড ড্রিংকসের বোতল ; দুধের প্লাস্টিক প্যাকেট ।

  1. গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত দুটি তরল বর্জ্যের উদাহরণ দাও ।

Answer : সাবান কাচা জল , তরকারির জলীয় অবশিষ্টাংশ বা উচ্ছৃষ্ট , অংশ ।

  1. বর্জ্য ‘ পুনর্নবীকরণ ’ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হচ্ছে , উদাহরণ দাও ।

Answer : আখের ছিবড়া থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ।

  1. বর্জ্যের পরিমাণ কমানোর পদ্ধতিকে কী বলে ?

Answer : Reduce .

  1. বর্জ্যের আবার ব্যবহারযোগ্য হওয়ার পদ্ধতিকে কী বলে ?

Answer : Reuse .

  1. বর্জ্যের মধ্যে যেগুলি জীবাণু দ্বারা বিয়োজিত হয় তাকে কোন ধরনের বর্জ্য বলে ?

Answer : Biodigradable বা জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য ।

  1. তেজস্ক্রিয় বর্জ্য কোন্ শিল্প থেকে মূলত নির্গত হয় ?

Answer : পারমাণবিক শিল্প ।

  1. রাসায়নিক শিল্প থেকে নির্গত বর্জ্যের উল্লেখ করো ।

Answer : রং , অ্যাসিড , তেল ।

  1. ভারতে শহরে প্রতিদিন কত পরিমাণ বর্জ্য সৃষ্টি হয় ?

Answer : ৫০০ গ্রাম / জন ।

  1. ভারতে গ্রামে প্রতিদিন কত পরিমাণ বর্জ্য সৃষ্টি হয় ?

Answer : ৩০০ গ্রাম / জন ।

  1. তৈলশোধনাগার থেকে অসম্পূর্ণ দহনের ফলে উদ্ভূত কণাকে কী বলে ?

Answer : পেট্রোকোক ।

  1. কয়লা দহনে সৃষ্ট সূক্ষ্ম আণুবীক্ষণিক ভস্মকে কী বলে ?

Answer : ফ্লাই অ্যাশ ।

  1. জৈব বর্জ্য পদার্থের পচনের ফলে উৎপন্ন সারকে কী বলে ?

Answer : জৈবসার বা বায়োফার্টিলাইজার ।

  1. দুটি তেজস্ক্রিয় বর্জ্যের উদাহরণ দাও ।

Answer : রেডিয়াম -২২৬ এবং কার্বন -১৪ ।

  1. দুটি লৌহ – ইস্পাত শিল্পের এর নাম লেখো যেখান থেকে দূষিত গরম জল নির্গত হয় । 

Answer : ব্লাস্ট ফার্নেসে ও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ।

  1. জৈব ভঙ্গুর দুটি বর্জ্যের উদাহরণ দাও ।

Answer : শাকসবজি , খাবারের অবশিষ্টাংশ ।

  1. জৈব অভঙ্গুর দুটি বর্জ্যের উদাহরণ দাও ।

Answer : প্লাস্টিক , কাচ ।

  1. কাগজ শিল্প থেকে কী বর্জ্য নির্গত হয় ?

Answer : সেলুলোজ ।

  1. দুটি বিষাক্ত জৈব বর্জ্যের নাম লেখো ।

Answer : সিসা , পারদ ।

  1. দুটি চিকিৎসা বর্জ্যের উদাহরণ দাও ।

Answer : ক্যাথিটার , সিরিঞ্জ ।

  1. শিল্পের বায়ুকে শোধনের জন্য প্রচলিত পদ্ধতিকে কী বলে ?

Answer : স্ক্রাবার ।

  1. জীবাণু দ্বারা বর্জ্যের বিয়োজন পদ্ধতিকে কী বলে ?

Answer : কম্পোস্টিং ।

  1. বর্জ্য জল শোধনের পদ্ধতিকে কী বলে ?

Answer : নিষ্কাশন ।

  1. মাটিতে পুঁতে বর্জ্য অপসারণ পদ্ধতিকে কী বলে ?

Answer : জমি ভরাটকরণ ( Land Filling ) |

MCQ | বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (চতুর্থ অধ্যায়) – মাধ্যমিক ভূগোল সাজেশন | Madhyamik Geography Suggestion :

  1. Hazardous waste ‘ বলা হয় -(A) বিষহীন বর্জ্য পদার্থকে(B) বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থকে(C) জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য পদার্থকে(D) জৈব অভঙ্গুর বর্জ্য পদার্থকে

Answer : B) বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থকে

  1. খবরের কাগজ একপ্রকার -(A) জৈব অভঙ্গুর পচনশীল তরল(B) জৈব ভঙ্গুর(C) গ্যাসীয় বর্জ্য(D) জৈব অভঙ্গুর পদার্থকে

Answer : (B) জৈব ভঙ্গুর

  1. চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল -(A) পলিথিন ব্যাগ(B) স্যালাইন বোতল(C) মিথেন(D) পয়ঃপ্রণালীর বর্জ্য

Answer : (B) স্যালাইন বোতল

  1. বর্জ্য জল শোধনের প্রক্রিয়াকে ভাগ করা যায়—(A) ২ টি স্তরে(B) ১ টি স্তরে(C) ৩ টি স্তরে(D) ৪ টি স্তরে

Answer : (C) ৩ টি স্তরে

  1. বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ায় ক – টি স্তর দেখা যায় ? (A) ১ টি(B) ২ টি (C) ৩ টি(D) ৪ টি

Answer : (C) ৩ টি

  1. বায়ুতে উপস্থিত জীবাণু বর্জ্যে জৈব পদার্থের বিশ্লেষণ ঘটালে তাকে বলে(A) কম্পোস্টিং(B) ওভার ফিলিং(C) ল্যান্ডফিলিং(D) কম্পাউন্ডিং

Answer : (A) কম্পোস্টিং

  1. পৌর বর্জ্য শহর থেকে দূরে সরিয়ে মাটিতে পুঁতে দেওয়ার পদ্ধতিকে বলে—(A) বর্জ্য পৃথকীকরণ(B) কম্পোস্টিং(C) জমি ভরাটকরণ(D) নিষ্কাশন

Answer : (C) জমি ভরাটকরণ

  1. বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কোনো ব্যবহৃত দ্রব্যকে পুনরায় পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনার পদ্ধতিকে বলে—(A) বর্জ্যের পরিমাণগত হ্রাস(B) পুনর্ব্যবহার(C) পুনর্নবীকরণ(D) নিষ্কাশন

Answer : (B) পুনর্ব্যবহার

  1. ফ্লাই অ্যাশ কী প্রকার বর্জ্যের উদাহরণ ?(A) গৃহস্থালি(B) শিল্প (C) কৃষিজ(D) পৌর

Answer : C) কৃষিজ

  1. DDT কী প্রকার বর্জ্যের উদাহরণ ?(A) কৃষিজ(B) চিকিৎসা(C) গৃহস্থালি(D) পৌর

Answer : (A) কৃষিজ

  1. বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স বস্তুজাত বর্জ্যকে বলে—(A) Toxic waste(B) E – waste(C) Radioactive waste(D) Hazardous waste

Answer : (B) E – waste

  1. ল্যান্ডফিল থেকে উৎপন্ন গ্যাস হল -(A) মিথেন(B) অ্যামোনিয়া(C) নাইট্রোজেন(D) কোনোটিই নয়

Answer : B) অ্যামোনিয়া

  1. কঠিন বর্জ্য থেকে যে গ্যাস পাওয়া যায় , তা হল -(A) কার্বন ডাইঅক্সাইড(B) জৈব গ্যাস(C) মিথেন (D) অ্যামোনিয়া

Answer : (C) মিথেন

  1. একটি পরিবেশ মিত্র বর্জ্য হল -(A) চট(B) প্লাস্টিক(C) কাচ(D) সিসা

Answer : (A) চট

  1. একটি কঠিন বর্জ্যের উদাহরণ হল -(A) হাসপাতালে ব্যবহৃত সিরিঞ্জ(B) পয়ঃপ্রণালীর বর্জ্য(C) বাতানুকূল যন্ত্র থেকে নির্গত ক্লোরোফ্লুরোকার্বন(D) কোনোটিই নয়

Answer : A) হাসপাতালে ব্যবহৃত সিরিঞ্জ

  1. একটি তরল বর্জ্যের উদাহরণ হল -(A) খবরের কাগজ(B) ছেঁড়া জুতো(C) কীটনাশক মিশ্রিত জল(D) শিল্পকারখানার বিষাক্ত কণা

Answer : (C) কীটনাশক মিশ্রিত জল

  1. একটি গ্যাসীয় বর্জ্যের উদাহরণ হল -(A) ক্র্যাপ(B) ডিটারজেন্ট(C) জীবাশ্ম জ্বালানি(D) ক্রুড অয়েল

Answer : (C) জীবাশ্ম জ্বালানি

  1. হিরোসিমা – নাগাসাকিতে নিক্ষিপ্ত বোমা – (A) গ্যাসীয় বর্জ্যের উদাহরণ(B) বিষাক্ত বর্জ্যের উদাহরণ(C) বিষহীন বর্জ্যের উদাহরণ(D) তেজস্ক্রিয় বর্জ্যের উদাহরণ

Answer : (C) বিষহীন বর্জ্যের উদাহরণ

  1. ভাঙা মগ কী প্রকার ?(A) জৈব ভঙ্গুর(B) জৈব অভঙ্গুর(C) বিষহীন(D) বিষাক্ত

Answer : (A) জৈব ভঙ্গুর

  1. তেজস্ক্রিয় বর্জ্যের প্রধান উৎসস্থল -(A) শিল্প কারখানা(B) জলবিদ্যুৎ কেন্দ্ৰ (C) জলশোধন কেন্দ্র(D) পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র

Answer : (D) পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র

সংক্ষিপ্তউত্তর ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর | বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (চতুর্থ অধ্যায়) – মাধ্যমিক ভূগোল সাজেশন | Madhyamik Geography Suggestion :

  1. জৈব বর্জ্য ( Biological Waste ) কাকে বলে ?

Answer : উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহের অংশবিশেষ বা দেহাবশেষকে মূলত জৈব বর্জ্য বলা হয় । যেমন — মৃত পশু – পাখির দেহ , ফুল – ফল – শাকসবজি ইত্যাদি হল জৈব বর্জ্য । এইগুলি পচনশীল বলে সহজেই পরিবেশে মিশে যায় ।

  1. Hazardous Waste কাকে বলে ?

Answer : বিষাক্ত ধাতুজ বর্জ্য , যেমন— সিসা , পারদ , ক্যাডমিয়াম , আর্সেনিক , অ্যাসবেস্টস , ডায়ক্সিন জাতীয় দ্রব্য পরিবেশে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে মানবদেহে রোগ সৃষ্টি করে , একে বলে Hazardous Waste | বলে ?

  1. বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ( Waste Management ) কাকে বলে ?

Answer : বর্জ্য পদার্থগুলিকে সম্পূর্ণরূপে নিঃশেষ করে দেওয়া বা পুনর্ব্যবহারের যোগ্য করে তোলার ব্যবস্থাকেই বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ।

  1. BOD কী ?

Answer : BOD- র পুরো কথা হল Biological Oxygen Demand । নদী বা জলাশয়ের জলে নির্দিষ্ট পরিমাণে অক্সিজেন উপস্থিত থাকে যা জীবের বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য আবশ্যক । প্রতি একক আয়তনের জৈব জারণের ফলে অণুজীবদের যে পরিমাণ অক্সিজেন দরকার হয় , তাকে বলে BOD .

  1. ইউটিফিকেশন কী ?

Answer : জলাশয়ের পুষ্টি মৌল বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে বলে ইউট্রিফিকেশন । জলাশয়ে জলদূষণের ( কাপড় কাচা , ডিটারজেন্ট , রাসায়নিক সার ) ফলে জলের নাইট্রেট ও ফসফেটের পরিমাণ বাড়ে । পুষ্টি মৌলের প্রাচুর্যে জলে ভাসমান কচুরিপানা , শৈবাল , অ্যালগি জাতীয় প্রাণীর পরিমাণ বাড়ে । ফলে জলের নীচে প্রাণীদের বৃদ্ধি ও বিকাশ ব্যাহত হয় , একে বলে ইউট্রিফিকেশন ।

  1. Take back policy কাকে বলে ? 

Answer : যেসব ব্যবহার্য দ্রব্যের পুনর্বিয়োজন সম্ভব নয় অর্থাৎ যেগুলি প্রকৃতিতে মিশে যায় না , সেগুলি যথাসম্ভব ব্যবহার না – করা উচিত অথবা ব্যবহার কমানোর প্রবণতা তৈরি করা আবশ্যক । তা সত্ত্বেও যেগুলি একান্তই ব্যবহার করতে হচ্ছে যেমন ইলেকট্রনিকস দ্রব্য , কম্পিউটার , সেলফোন প্রভৃতি ; সেগুলি ব্যবহারের পর অকেজো হলে পুনরায় প্রস্তুতকারক কোম্পানিকে তা ফিরিয়ে নিতে হবে । এই পদ্ধতির নাম Take Back Policy .

  1. নিষ্কাশন ( Drainage ) কাকে বলে ?

Answer : পয়ঃপ্রণালী , নর্দমা , শহরের আবর্জনা পাইপলাইন পথে দূরবর্তী স্থানে নিয়ে যাওয়ার পর তার থেকে বিষাক্ত রাসায়নিক মুক্ত করে বিশুদ্ধ করার পদ্ধতিকে বলে নিষ্কাশন । এই পদ্ধতিতে ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে তরল বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে ।

  1. উন্মুক্ত বর্জ্য ( Open Dumping ) বলতে কী বোঝ ?

Answer : সাধারণত শহরে নীচু খোলা জমিতে বর্জ্য উন্মুক্তভাবে ফেলে রাখা থাকলে , তাকে উন্মুক্ত বর্জ্যা বলে ।

  1. লিচেট ( Leachate ) বলতে কী বোঝ ?

Answer : বৃষ্টির যে জল ল্যান্ডফিলের বর্জ্য পদার্থ ধুয়ে নিয়ে জলাশয়ে বা ভৌমজলে মেশে , সেই বর্জ্য পদার্থ ধোয়া জলকে লিচেট বলে ।

  1. আখের ছিবড়ে বা ব্যাগাসে ( Bagasse ) কী ?

Answer : চিনি শিল্পে ব্যবহৃত অবশিষ্ট আখের ছিবড়ে ও অন্যান্য = বর্জ্যকে ব্যাগাসে বলে ।

  1. Waste Exchange বলতে কী বোঝ ?

Answer : অনেক সময় পদার্থ বা বস্তু ব্যবহার করে পুনরায় অবিকল অবিকৃত অবস্থায় পরিবেশে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব । পদার্থ সহায়িকা , বা বস্তুর পুনর্ব্যবহারের এই পদ্ধতিকে বলে Waste Exchange জেনে রাখো যেমন— পুরোনো কাগজ থেকে নতুন কাগজ প্রস্তুত করা ।

আবর্জনা ( Garbage ) : আমাদের প্রত্যেক দিন বাতিল করে দেওয়া গৃহস্থালির ব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত শাকসবজি ফল ইত্যাদির খোসা , উচ্ছিষ্ট অংশকেই আবর্জনা বলে ।

জন্মাল ( Rubbish ) : সকল প্রকার দাহ্য কঠিন পদার্থ , যেমন – কাঠ , কাগজ , কাচ , চামড়া , প্লাস্টিক ও বিভিন্ন প্রকার ধাতুকে জন্মাল বলে ।

  1. NPK কী ?

Answer : NPK- র পুরো নাম নাইট্রোজেন , ফসফেট , পটাশিয়াম । এগুলি উদ্ভিদের পুষ্টিমৌল , উদ্ভিদ বৃদ্ধির সহায়ক উপাদান । এই উপাদানগুলি না – থাকলে উদ্ভিদের পাতায় ক্লোরোসিস রোগ হয় । অর্থাৎ গাছের পাতা হলুদ হয়ে যায় ।

  1. তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ( Nuclear waste ) বলতে কী বোঝ ?

Answer : পারমাণবিক চুল্লি , পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র , পারমাণবিক গবেষণাগার থেকে নির্গত বর্জ্য পদার্থকে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য বলে । যেমন — ইউরেনিয়াম -235 , 238 , থোরিয়াম -230 , কার্বন -14 ইত্যাদি ।

  1. ভার্মি – কম্পোস্টিং ( Vermi – composting ) বলতে কী বোঝ ?

Answer : স্বাভাবিক জীবনযাত্রার মাধ্যমে জৈব বর্জ্যের বিয়োজন ঘটে হিউমাসে পরিণত হওয়ার পদ্ধতিকে ভার্মি – কম্পোস্টিং বলে ।

  1. বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ভরাটকরণ বলতে কী বোঝ ?

Answer : ফাঁকা জমি বা জমিতে গর্ত খুঁড়ে বর্জ্য পদার্থ ভরাট করাকে বর্জ্য ভরাটকরণ বলে । এতে বর্জ্য পদার্থ ধীরে ধীরে বিশ্লেষিত হয়ে মাটির সঙ্গে মিশে যায় ।

  1. বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার কাকে বলে ?

Answer : কিছু কিছু বর্জ্য পদার্থ আছে যেগুলি পুনরায় ব্যবহার করা যায় , তাকে বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার বলে । যেমন — খবরের কাগজ , পুরোনো শিশি , বোতল ইত্যাদি । এতে অর্থের সাশ্রয় হয় এবং সম্পদ বাঁচে ।

  1. বর্জ্য ( Waste ) কাকে বলে ?

Answer : ব্যবহারের অযোগ্য , পরিত্যক্ত , কঠিন – তরল – গ্যাসীয় অবস্থায় প্রকৃতিতে পড়ে থাকা বস্তু যা পরিবেশদূষণের অন্যতম কারণ তাকে বলে বর্জ্য । যেমন — ভাঙা প্লাস্টিক , ছেঁড়া কাগজ , নোংরা জল ইত্যাদি ।

  1. পদার্থের বস্তুগত অবস্থা অনুসারে বর্জ্য ক – প্রকার প্রশ্ন । কী কী ?

Answer : পদার্থের বস্তুগত অবস্থার ভিত্তিতে বর্জ্য তিন প্রকার যথা— কঠিন , তরল ও গ্যাসীয় বর্জ্য ।

  1. কঠিন বর্জ্য ( Solid waste ) কাকে বলে ?

Answer : যে কঠিন বস্তু অব্যবহৃত অবস্থায় পরিবেশের অবনমন বা দূষণ ঘটাতে সাহায্য করে , তাকে বলে কঠিন বর্জ্য্য । যেমন — খাবারের অবশিষ্ট অংশ , গৃহস্থালির জঞ্ঝাল , প্লাস্টিক , পেপার , ভাঙা কাচের বোতল , চট , সিরিঞ্জ , ইলেকট্রনিকস দ্রব্য ইত্যাদি ।

  1. কঠিন বর্জ্য পোড়ানো উচিত নয় কেন ?

Answer : কঠিন বর্জ্য পোড়ালে তা থেকে যে গ্যাসগুলি ( যেমন — সালফার ডাইঅক্সাইড , হাইড্রোজেন ফ্লুরাইড , কার্বন মনোক্সাইড ) নির্গত হয় , তা পরিবেশদূষণ ঘটায় । তাই কঠিন বর্জ্যকে অবৈজ্ঞানিকভাবে পোড়ানো উচিত নয় । জেনে রাখো ভস্মীভূতকরণ ( Incineration ) : কঠিন বর্জ্য পদার্থকে আবর্জনা পোড়ানোর চুল্লিতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অতি উচ্চচাপে পোড়াবার পদ্ধতিকে ভস্মীভূতকরণ বলা হয় । পুড়ে যাবার পরে যে ছাই , কাচ ও অন্যান্য ধাতু অদাহ্যবস্তুরুপে পড়ে থাকে তা সংগ্রহ করে পুনর্ব্যবহার করা হয় ।

  1. তরল বর্জ্য ( Liquid Waste ) কাকে বলে ?

Answer : প্রকৃতিতে দূষণ সৃষ্টিকারী তরল অব্যবহৃত যৌগ যখন অপরিশোধিত অবস্থায় পরিবেশের ক্ষতি করে , তখন তাকে তরল বর্জ্য বলে । যেমন — গৃহস্থালি , কলকারখানার ব্যবহৃত দুষিত জল , কাপড় কাচা , বাসন মাজার দূষিত জল ইত্যাদি ।

  1. গৃহস্থালির কঠিন বর্জ্যের কয়েকটি উদাহরণ দাও ।

Answer : গৃহস্থালির কঠিন বর্জ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল আনাজের খোসা , ভাঙা খেলনা , প্লাস্টিক মগ , ধাতুর ভাঙা অংশ ছেঁড়া কাপড় , পুরোনো কাগজ , প্লাস্টিক প্যাকেট ইত্যাদি ।

  1. গৃহস্থালির তরল বর্জ্যের উদাহরণ দাও ।

Answer : বাথরুমে ব্যবহৃত ডিটারজেন্ট , শ্যাম্পু , রিচিং পাউডার , অ্যাসিড , মিউরিটিক অ্যাসিড , ফিনাইল মিশ্রিত জল , রান্নাঘরের মশলা , তেল মিশ্রিত তরল , রান্নার উচ্ছিষ্টাংশ ইত্যাদি ।

  1. বর্জা জলকে কীভাবে জীবাণুমুক্ত করা হয় ?

Answer : বিভিন্ন প্রকার জীবাণুনাশক পদ্ধতির মাধ্যমে বর্জ্য জলকে জীবাণুমুক্ত করা হয় । যেমন— অতিবেগুনি রশ্মির ব্যবহার , জলে ক্লোরিনের ব্যবহার , জল ফুটিয়ে খাওয়া ইত্যাদির মাধ্যমে জল শুদ্ধ করা হয় ।

  1. গ্যাসীয় বর্জ্য ( Gaseous Waste ) কাকে বলে ?

Answer : বাতাসে ভাসমান লবণকণা , বায়ুকণা , ধুলোকণা , যখন পরিবেশের ক্ষতিসাধন করে , তাকে বলে গ্যাসীয় বর্জ্য । যেমন —– কলকারখানা এবং ইটভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়া , যানবাহনের ধোঁয়া , গৃহস্থালি থেকে নির্গত কার্বন মনোক্সাইড ও কার্বন ডাইঅক্সাইড , মিথেন , অ্যামোনিয়া ইত্যাদি ।

  1. বিষাক্ত বর্জ্য ( Toxic Waste ) বলতে কী বোঝ ?

Answer : নানা ধরনের বর্জ্য পদার্থ , যা থেকে বিভিন্ন ধরনের বিষক্রিয়তার উদ্ভব হয় এবং যেগুলি একেবারেই পরিবেশবান্ধব নয় , সেগুলিকে বলা হয় বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ । যেমন — শিল্পজাত নানান প্রকার তেজস্ক্রিয় পদার্থ ( ইউরেনিয়াম , থোরিয়াম প্রভৃতি ) এবং কিছু রাসায়নিক তরল পদার্থ , যা বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে ।

  1. বিষহীন বর্জ্য ( Non – toxic Waste ) বলতে কী বোঝ ?

Answer : যেসব বর্জ্য পদার্থগুলির বিষক্রিয়তা নেই , যেগুলি পরিবেশের কোনো প্রকার ক্ষতিসাধন করে না , তাদের বিষহীন বর্জ্যা পদার্থ বলে । এই বিষহীন বর্জ্য পদার্থগুলি সাধারণত Biodegradable | বা জৈবিকভাবে বিয়োজিত হয় । যেমন- বাজারের বর্জ্য পদার্থ , কলকারখানার বর্জ্য প্রভৃতি ।

  1. ‘ E- বর্জ্য ‘ বা বৈদ্যুতিন বর্জ্য ( Electronic waste ) কাকে বলে ?

Answer : বর্তমানে বিশ্বে নানান ইলেকট্রনিকস দ্রব্য ব্যবহৃত হয় । এই দ্রব্যগুলির অব্যবহৃত বাতিল অংশের মধ্যে পরিবেশ দূষণকারী পদার্থ থাকে । এই জাতীয় বর্জ্যকে B waste বলে । যেমন — সার্কিট বোর্ড , টিভি বা কম্পিউটার মনিটর , কম্পিউটারের ব্যাটারি ইত্যাদি ।

  1. জীব বিশ্লেষ্য বর্জ্যা ( Biodegradable Waste ) কী ?

Answer : যে বর্জ্য পদার্থ পরিবেশের কোনো ক্ষতি করে না , ব্যবহারের পরবর্তী বাতিল অংশ , পরিবেশে উপস্থিত বিভিন্ন জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা বিয়োজিত হয়ে পুনরায় পরিবেশে মিশে যায় , তাকে জীব বিশ্লেষ্য বর্জ্য বা Biodegradable waste বলে । যেমন — সবজি , পাতা , ফল , ফুল ইত্যাদি জৈব বর্জ্যা হল এর উদাহরণ ।

  1. জীব অবিশ্লেষ্য বর্জ্যা ( Non – biodegradable Waste ) কী ?

Answer : যেসব বর্জ্যা পরিবেশে পুনরায় মিশে যেতে পারে না , পরিবেশের ওপর একই অবস্থায় পড়ে থেকে দূষণ সৃষ্টি করে , তাকে বলে Non – biodegradable বা জীব – অবিশ্লেষ্য বর্জ্য । যেমন — প্লাস্টিক , পলিথিন , বিভিন্ন শিল্পজাত বর্জ্য ইত্যাদি ।

সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাধর্মী প্রশ্নোত্তর | বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (চতুর্থ অধ্যায়) – মাধ্যমিক ভূগোল সাজেশন | Madhyamik Geography Suggestion :

  1. তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ( Radioactive waste ) বলতে কী বোঝ ?

Answer : তেজস্ক্রিয় বর্জ্য হল উচ্চ তেজস্ক্রিয় ক্ষমতাসম্পন্ন পদার্থগুলির অবশিষ্টাংশ বিশেষ । PROINDE তেজস্ক্রিয় পদার্থ ইউরেনিয়াম , থোরিয়াম , রেডিয়াম প্রভৃতি উপাদান শিলাস্তরে থাকে ; খনিগর্ভ থেকে ওই পদার্থ আহরণের সময় এই বর্জ্য সৃষ্টি হয় । এ ছাড়া মহাজাগতিক বিকিরণ থেকেও তেজস্ক্রিয় পদার্থ উৎপন্ন হয় , এগুলিও এই বর্জ্যের অন্যতম উৎস । এ ছাড়া পারমাণবিক বোমা তৈরি ; ও নিক্ষেপের সময়ও তেজস্ক্রিয় বর্জ্য উৎপন্ন হয়ে থাকে । বিভিন্ন শিল্পে যেমন বিদ্যুৎ শিল্পে পারমাণবিক জ্বালানি ব্যবহৃত হয় ; এটিও বর্জ্যের অন্যতম উৎস । ঘড়ি বা যন্ত্র শিল্পের নানা কাজে রেডিয়াম ব্যবহৃত হয় । চিকিৎসাশাস্ত্রে ক্যানসার প্রতিরোধে কেমোথেরাপি দেওয়ার সময়ও তেজস্ক্রিয় বর্জ্য সৃষ্টি হয় ।

  1. বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণে 3R- এর ভূমিকা উল্লেখ করো ।

Answer : বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের পদ্ধতি হল 3R অর্থাৎ Reduce , Reuse & Recycle- কে একত্রে বলে 3R .

  1. বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ( Waste Management ) কী ?

 অথবা , বর্জ্যের পুনর্নবীকরণ বলতে কী বোঝ ?

Answer : বর্জ্য পদার্থগুলিকে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সম্পূর্ণ | নিঃশেষ করা অথবা পুনরায় ব্যবহারযোগ্য উপাদানে পরিণত করার নি ব্যবস্থা বা পদ্ধতিকে বলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ।

গুরুত্ব : বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিবেশকে দূষণমুক্ত করে , জনস্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখে । জৈব বৈচিত্র্য রক্ষা করে পরিবেশের বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য সুরক্ষিত রাখে । কর্মসূচী : বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তিনটি কর্মসূচির মাধ্যমে বাস্তবায়িত করা হয় ।

যেমন— ( ১ ) বর্জ্যের পরিমাণগত হ্রাস ( ২ ) পুনর্ব্যবহার ( ৩ ) পুনর্নবীকরণ ; এই ত্রিমূখী কর্মসূচিকে সংক্ষেপে বলে 3R – Reduce ; Reuse , Recycling .

পদ্ধতি : কঠিন , তরল , গ্যাসীয় বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে করা হয় । কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ধাপগুলি হল ( ক ) বর্জ্য পৃথকরণ ( খ ) বর্জ্য ভরাটকরণ ( গ ) কম্পোস্টিং । তরল ।

( a ) Reduce বা বর্জ্যের পরিমাণ হ্রাস : আমাদের দৈনন্দিন ও জীবনের অদরকারি পদার্থ যত কমানো সম্ভব হবে , বর্জ্যের পরিমাণও তত কমবে । অর্থাৎ দ্রব্য ব্যবহারে আমাদের মিতব্যয়ী হতে হবে ; অপ্রয়োজনীয় জিনিসই পরিবেশে বর্জ্যের পরিমাণ বাড়ায় ।

( b ) Reuse বা পুনর্ব্যবহার : পরিবেশের কিছু কিছু উপাদান = পুনর্ব্যবহারযোগ্য । যেমন— ধাতব বস্তু , কাগজ , যন্ত্রাংশ প্রভৃতি । এগুলি একবার ব্যবহারের পর পুনরায় ব্যবহার করা যায় । দ্রব্যের পুনর্ব্যবহার সম্পদের সঞ্চয় বাড়ায় , তাই অপুনর্ভব সম্পদগুলিকে সাশ্রয় করা ও পুনর্ব্যবহার খুব জরুরি ।

( c ) Recycle পুনর্নবীকরণ : পুনর্নবীকরণ বোঝায় বিশেষ বা Reuse বলতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কোনো ব্যবহৃত দ্রব্যকে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য সম্পদে পরিণত করে পরিবেশে ফিরিয়ে দেওয়া । যেমন — কাচ , ধাতু , প্লাস্টিক , কাগজ , ছেঁড়া কাপড় থেকে পুনরায় অনুরূপ দ্রব্য উৎপাদন সম্ভব । বর্জ্য সাধারণত নিষ্কাশন পদ্ধতিতে ও গ্যাসীয় বর্জ্য স্ক্রাবার পদ্ধতিতে ব্যবস্থাপনা করা হয় ।

  1. বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করো ।

Answer : বর্জ্য পরিবেশকে দূষিত করে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বিঘ্নিত করে ; বৃহত্তর অর্থে দেশের , সমাজের , জৈব বৈচিত্র্যের ক্ষতিসাধন করে । তাই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একান্ত প্রয়োজন । যে যে কারণে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা দরকার সেগুলি হল ( a ) পরিবেশকে রক্ষা করা পরিবেশের অজৈব উপাদান জল , মাটি , বায়ু বর্জ্যের কারণে দূষিত হয় ; তাই পরিবেশকে দূষণমুক্ত করতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অত্যাবশ্যক । ( b ) বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষায় পরিবেশের জীবজ উপাদানগুলি বর্জ্যের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় । রাসায়নিক বিষাক্ত বর্জ্য দেহে রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটায় , ক্ষতিকারক প্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধি করে , বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয় । তাই বাস্তুতন্ত্রকে বাঁচাতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আবশ্যক । ( c ) জৈব বৈচিত্র্য রক্ষা পৃথিবীতে বসবাসকারী উদ্ভিদ ও প্রাণীকুল নিয়ে যে জৈব বৈচিত্র্য গড়ে ওঠে তা বর্জ্যের কারণে বিনষ্ট হয় । জৈব বৈচিত্র্য বাঁচাতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন । ( d ) খাদ্যজালক ও খাদ্যশৃঙ্খলার ভারসাম্য বজায় রাখতে । পরিবেশের বিভিন্ন জীবজ ও অজীবজ উপাদনের পারস্পরিক মিথোস্ক্রিয়ায় সুনির্দিষ্ট খাদ্যজালক ও খাদ্যশৃঙ্খল গড়ে ওঠে । পরিবেশ জীবনের সুস্থতা বজায় রাখতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা জরুরি পদক্ষেপ ।

  1. ম্পোস্টিং ( Composting ) বলতে কী বোঝ ? 

Answer : জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য পদার্থগুলি জীবাণুর দ্বারা বিয়োজিত হয়ে হিউমাসে পরিণত হলে , তাকে বলে কম্পোস্টিং । পদ্ধতি । বর্জ্য জীবাণুর দ্বারা বিয়োজিত হয়ে এই প্রক্রিয়ায় হিউমাসে পরিণত হয় । কম্পোস্টিং মূলত দু – প্রকার —

( ক ) সবাত কম্পোস্টিং : বায়ুর উপস্থিতিতে জীবাণুর জৈব বিশ্লেষণ ঘটানোর পদ্ধতিকে বলে সবাত কম্পোস্টিং ।

( খ ) অরাত কম্পোস্টিং : বায়ুর প অনুপস্থিতিতে জীবাণুর জৈব বিশ্লেষণ ঘটানোর পদ্ধতির নাম অবাত কম্পোস্টিং । এর অপর নাম ব্যাঙ্গালোর পদ্ধতি । সাধারণত বাড়ি , শহর , দোকান ঘরের অব্যবহার্য আনাজ , ডিমের খোসা , অবশিষ্ট খাবারের অংশ প্রভৃতি এই পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াকরণ করে জৈব সারে পরিণত করা হয় । এই পদ্ধতি ল্যান্ডফিলিং পদ্ধতিরই একটি বিশেষ রূপ । অল্প স্থানে গভীর গর্ত খুঁড়ে প্রথমে শাকসবজির অংশবিশেষ বা রেচনজাত বর্জ্য ফেলা হয় । পরে তা ভরাট হয়ে গেলে মাটি চাপা দেওয়া হয় ; তা পচে জৈব পদার্থ মাটিতে মিশে মাটির পুষ্টিমৌল বৃদ্ধি করে । আবার অন্যত্র একই পদ্ধতিতে মাটি খুঁড়ে বর্জ্য ভরাট করে মাটির মুখ বন্ধ করে বিয়োজিত করা হয় ।

সুবিধা : ( ক ) মৃত্তিকায় জৈব উপাদানের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় । ( খ ) কৃষিক্ষেত্রে এই দ্রব্য সহজেই ব্যবহৃত হয় । ( গ ) কঠিন বজা খুব বেশি পরিমাণে হ্রাস পায় । অসুবিধা : জনবসতি অঞ্চলের নিকটবর্তী স্থানে এই পদ্ধতি অবলম্বন করায় গন্ধদূষণের ও রোগজীবাণু আক্রমণের সম্ভাবনা প্রবল । তাই বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন আবশ্যিক ।

  1. বার ( Scrubber ) সম্পর্কে লেখো । 

অথবা , গ্যাসীয় বর্জ্য নিয়ন্ত্রণের উপায়গুলি কী কী ?

Answer : বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি বিশেষ বিজ্ঞাননির্ভর প্রক্রিয়ার নাম স্কাবার । এই পদ্ধতিতে শিল্প থেকে নির্গত দূষিত বায়বীয় পদার্থ ও গ্যাসীয় উপাদানের অপসারণ ঘটিয়ে বায়ুকে বিশুদ্ধ করা হয় ।

পদ্ধতি : স্ক্রাবিং পদ্ধতি দু – প্রকার । ( ক ) শুষ্ক স্ক্রাবার ( Dry scrubbers ] : এই পদ্ধতির মাধ্যমে দুষিত নির্গত ধোঁয়াকে অম্লমুক্ত করা হয় । ( খ ) আর্দ্র স্ক্রাবার [ Wet Scrubber ] : এই পদ্ধতি প্রয়োগে দূষণকারী গ্যাস , দূষণকণা অপসারণ করা হয় । সাধারণত ক্ষেত্রে দ্রবণের মাধ্যমে গ্যাসীয় দূষিত পদার্থকে স্কাবার দ্বারা অপসারণ হয় । দ্রবণে গ্যাসের দ্রাব্যতার ওপর এই পদ্ধতির কার্যকারিতা করে ।

উদাহরণ : দহনের সময় সালফার জারিত হয়ে সালফার ডাইঅক্সাইডে পরিণত হয় । পরে ধৌতাগারে স্কাবার পদ্ধতিতে অপসৃত হয় । ( ii ) অ্যামোনিয়া বা হাইড্রোজেন সালফাইড মিশ্রিত জলীয় দ্রবণ থেকে দুর্বি স্ক্যাবার পদ্ধতিতে দুষণমুক্ত করা হয় । ( im ) চুনাপাথরের গুঁড়ে জলের সঙ্গে মিশে থাকা গ্যাসও এই পদ্ধতিতে পরিকৃত ভরাটকরণ বলে ।

  1. ( Land filling ) পদ্ধতি কী ?

Answer : কোনো নীচু স্থানে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ও বিশেষ পদ্ধতি হল বর্জ্য ভরাটকরণ ।

পদ্ধতি : জনবসতি , শিল্পাঞ্চল বা বাণিজ্যকেন্দ্র থেকে দূরে কোনে উন্মুক্ত খোলা জায়গাকে , খুব গভীরভাবে খনন করে মাটির নীচে বর্জ্য চাপা দেওয়া হয় । সাধারণত বর্জ্য ২ মিটার উঁচু স্তরে বিছিয়ে দেওয়া হয় ও তার ওপর ২০-২৫ সেমি মাটির স্তর চাপা জো হয় । মাটির মধ্যে থাকা জীবাণু বর্জ্যের ভৌত রাসায়নিক পরিবর্তন । ঘটায় । দীর্ঘদিন চাপা পড়া অবস্থায় থেকে ওই জৈব ভঙ্গুর বর্জ মাটিতে মিশে যায় ।

সতর্কীকরণ : তবে এক্ষেত্রে কতকগুলি সতর্কীকরণ নেওয়া আবশ্যিক ।

যথা— ( i ) ল্যান্ডফিলিং – এর নির্বাচিত স্থান শহরাঞ্চল থেকে দূরে হতে হবে । ( ii ) জায়গাটির আয়তন বেশি হতে হবে । ( iii ) স্থানটিতে জনবসতি থাকবে না ; কারণ বর্জ্যের দূষণ মানবশরীরের পক্ষে ক্ষতিকর । ( iv ) ময়লা জল বা বর্জ্যের বিয়োজিত অংশ যাতে কোনোভাবেই ভৌম জলস্তরকে দূষিত ন করে সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে । ( v ) ময়লার গাড়ি যাতে সুনির্দিষ্ট খোলা স্থানে সহজে পৌঁছোতে পারে অর্থাৎ অঞ্চলটি পরিবহণযোগ্য হয় তা দেখা । ( vi ) অনেক দেশে সমুদ্রতীরে বর্জ্য নিক্ষেপ করা হয় । এক্ষেত্রে দেখতে হবে স্থানটি যেন সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যকে বিনষ্ট না করে । ( vii ) ময়লা জমা করার স্থানগুলিকে উন্মুক্ত না – রেখে কংক্রিটের দেয়াল দিয়ে বাঁধিয়ে দিতে হবে । জমি ভরাটকরণের সুবিধা : ( i ) বায়ুদূষণ তথা পরিবেশ দূষণের পরিমাণ কমে যায় । ( ii ) ল্যান্ডফিলিং – এর ফলে যে গ্যাস নির্গত হয় , তা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয় । ( iii ) বর্জ্য পদার্থ আবৃত অবস্থায় থাকে বলে মাছি , মশা , ইঁদুর , কীটপতঙ্গ বাসা বাঁধতে পারে না । জমি ভরাটকরণের অসুবিধা : জমে থাকা বর্জ্য পদার্থ থেকে নির্গত জল চুঁইয়ে ভৌম জলস্তরে মিশে যায় ।

  1. নিষ্কাশন পদ্ধতির বিভিন্ন ধাপগুলি উল্লেখ করো ।

Answer : মূলত তরল বর্জ্য নিষ্কাশন পদ্ধতিতে বিশুদ্ধ করা হয় । শহরে শিল্পকারখানা বা গৃহস্থালি থেকে যে বিষাক্ত তরল জল নিষ্কাশিত হয় তা পর্যায়ক্রমে তিনটি ধাপে জীবাণুমুক্ত বা দূষণমুক্ত করা হয় ।

( a ) প্রাথমিক ধাপ : প্রথমে পাইপলাইন পথে নোংরা জল একটি বড়ো জলাধারে ফেলা হয় । সেখানে ভারী বর্জ্যগুলি থিতিয়ে জলাধারের নীচে । পড়ে থাকে ।

( b ) দ্বিতীয় ধাপ : জলে ভাসমান কঠিন জৈব ও অজৈব পদার্থ এই পর্যায়ে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ।

( c ) তৃতীয় ধাপ : এই পর্যায়ে রাসায়নিক ও বিষাক্ত অভঙ্গুর পদার্থগুলিকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় শোধন করা হয় ও অন্যত্র নিষ্ক্রমণ করা হয় । বিশেষ বিশেষ তথ্য Electronic Waste : বাইয়োসাইড : কৃষিক্ষেত্রে অবাঞ্ছিত উদ্ভিদ বিনাশ করতে সাহায্য করে এমন জৈব উপাদান । পেস্টিসাইড : কৃষিকাজে প্রতিকূল প্রভাব সৃষ্টিকারী ছত্রাক , কৃমি , ব্যাকটেরিয়া , ধ্বংস করে এমন রাসায়নিক উপাদান । ইনসেক্টিসাইডস্ : কৃষিজফসলের ক্ষতি করে এমন কীটপতঙ্গকে বিনাশ করতে যেসব রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহৃত হয় । হাৰ্বিসাইডস : আগাছা দমন করার জন্য কৃষিক্ষেত্রে যেসব রাসায়নিক ব্যবহৃত হয় ।

  1. কঠিন , তরল ও গ্যাসীয় বর্জ্যের ব্যবস্থাপনার পদ্ধতিগুলি আলোচনা করো । 

অথবা , বর্জ্য পৃথকরণ কীভাবে করা হয় ?

Answer : ( ক ) বর্জ্য পৃথক্করণ ( Segregation of waste ) : কোনো স্থানে যখন বর্জ্য পদার্থ জমা হয় , তখন সেখানে নানান ধরনের বর্জ্য পদার্থ ( শুষ্ক বর্জ্য ও আর্দ্র বর্জ্য ) একত্রিত হয়ে থাকে । সেগুলিকে আলাদা না – করলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব হয় না । এই পদ্ধতিটিকেই বলা হয় বর্জ্য পৃথক্করণ । এই পদ্ধতিটি পৃথিবীর উন্নত দেশ , যেমন — মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র , জাপান প্রভৃতি স্থানে যন্ত্রের মাধ্যমে করা হলেও ভারতবর্ষে মূলত মানুষের দ্বারাই করা হয়ে থাকে ।

( খ ) জমি ভরাটকরণ ( Land filling ) : এই পদ্ধতিতে বৃহদায়তন ফাঁকা জমিকে খুব গভীর ভাবে খনন করা হয় । কঠিন জৈব বর্জ্যা পদার্থগুলিকে এর মধ্যে ফেলে ভরাট করা হয় এবং সবশেষে , পুনরায় মাটি চাপা দিয়ে দেওয়া হয় । সেগুলি মাটির তলায় চাপা পড়ে থাকাকালীন চাপে ও তাপে খুব সহজেই মাটি হয়ে যায় ।

( গ ) কম্পোস্টিং ( Composting ) গ্রামাঞ্চলে বাড়ির মধ্যেই খালি জায়গায় কিছুটা জমি খনন করে তাতে গৃহস্থালির দৈনিক উৎপন্ন বর্জ্য ফেলা হয় । কিছুদিন পর বর্জ্যা দ্বারা ওই জায়গা ভরতি হয়ে গেলে মাটি চাপা দিয়ে অপর কোনো স্থান পুনরায় খনন করে । বর্জ্যা নিক্ষেপ করা হয় । কম্পোস্টিং পদ্ধতিটি খানিকটা ভরাটকরণ পদ্ধতির মতো । এই পদ্ধতিতেও একটি গর্তকে কিছু পরিমাণ জৈব বর্জ্য , যেমন— পশুপাখির মৃতদেহ , গৃহস্থালি ও বাজারের নানান আনাজের খোসা ও পচা । শাকসবজি , মলমূত্র প্রভৃতি দ্বারা ভরাট করা হয় ও মাটি দিয়ে এই গর্তের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয় । কিছুদিন পরে দেখা যায় । যে ওই জৈবাংশগুলি বিয়োজিত হয়ে জৈব সার গঠন করেছে , যার পুষ্টিমাত্রা খুব বেশি ।

( ঘ ) নিষ্কাশন / নিকাশি ( Drainage ) : মূলত তরল বর্জ্য নিকাশি বা নিষ্কাশন ব্যবস্থার মাধ্যমে নিষ্কাশিত করে একটি বিশেষ আধারে সঞ্চয় করলে পরে ওই জল বিশুদ্ধিকরণের মাধ্যমে পুনরায় ব্যবহার করা হয় । এই পদ্ধতিতে ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে তরল বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে ।

(ঙ) স্ক্রাবার ( Scrubber ) : ধ্রুাবার হল এমন একটি যন্ত্র যা বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের কাজে ব্যবহৃত হয় । এটি দুষিত পদার্থগুলিকে আলাদা করে দেয় । বিভিন্ন কঠিন , তরল এবং গ্যাসীয় শিল্প বর্জ্য , পৌরসভার বর্জ্য এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্যকে পরিশোধিত করে সেখান থেকে দূষিত পদার্থকে আলাদা করা হয় । স্ক্রাবার দুই ধরনের হয় । যথা – ( i ) শুষ্ক স্ক্রাবার , ( ii ) আর্দ্র স্ক্রাবার ।

  1. ফ্লাই অ্যাশ কী ?

Answer : ফ্লাই অ্যাশ : এর বাংলা প্রতিশব্দ ‘ ভাসমান বা উড়ন্ত বস্তুকণা ‘ বা ‘ ছাই ‘ । ব্যাস ০.০২ মাইক্রোমিটার থেকে ১০ মাইক্রোমিটার । ( ১um = ১ মিটারের ১০ লক্ষ ভাগের ১ ভাগ ) ★ উৎস : তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা পোড়ানোর ছাই , তামাকের গুঁড়ো , কারখানার দূষিত গ্যাস ও ধুলোকণা , সিমেন্টের ধুলো , চাষের জমির পেস্টিসাইডের অংশবিশেষ , বাড়ির বর্জ্য বা ঘরবাড়ির ডাস্টিং – এর সময় ওড়া ধুলোকণা , ইটভাটার ধুলো বা গুঁড়ো উপাদান , উড়ন্ত ছাই – এ যে – উপাদানগুলি বিদ্যমান থাকে সেগুলি হল কার্বন , ফসফরাস , ক্যালশিয়াম , পটাশিয়াম , নাইট্রোজেন , সালফার । * মানব স্বাস্থ্যে প্রভাব : মানবশরীরে ফুসফুসজনিত রোগ হাঁপানি , ব্রংকাইটিস , শ্বাসকষ্ট , চোখজ্বালা , মাথাব্যথা প্রভৃতির উপসর্গ দেখা যায় । অন্যান্য প্রভাব : পাতলা আস্তরণে বাতাস ঢেকে যাওয়ায় ধোঁয়াশা সৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয় , ফলে বায়ু দূষিত হয় । কোলডাস্ট : ভাসমান কয়লার গুঁড়োকে বলে কোলডাস্ট । পেট্রোকোক : তৈল শোধনাগারে ক্রুড অয়েল শোধনের সময় অসম্পূর্ণ দহনের মাধ্যমে যে কণা উৎপন্ন হয় , তাকে বলে পেট্রোকোক । পেট্রোকোকে ৯ % কার্বনকণার উপস্থিতি থাকে ।

  1. সদ প্রক্রিয়াকরণে শিক্ষার্থীর ভূমিকা উল্লেখ করো ।

Answer : পরিবেশকে বর্জ্য মুক্ত করতে শিক্ষার্থীকেই প্রাথমিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে । শিশুমনে পরিবেশ সচেতনতা যত বাড়বে , পৃথিবী ও পরিবেশ ততই বাসযোগ্য ভূমিতে পরিণত হবে । বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীরা যেসব উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে সেগুলি হল –

( a ) জৈব ভঙ্গুর , জৈব অভঙ্গুর , বিষাক্ত , বিষহীন বর্জ্য সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে জ্ঞান অর্জন করতে হবে । চেষ্টা করতে হবে জৈব অভঙ্গুর ও বিষাক্ত বর্জ্যগুলির ব্যবহার হ্রাস করা । যেমন – Use & Throw পেনের পরিবর্তে কালির পেন ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তোলা ।

( b ) পরিবেশ পরিচ্ছন্নতায় রোগমুক্তি ঘটে । এই বিষয়ে বিদ্যালয় সচেতনতার দৃষ্টি দেখালে , বাড়ির চারপাশে বর্জ্য নিক্ষেপে নির্দিষ্ট ডাস্টবিন ব্যবহার করার গুরুত্ব বাড়বে ।

( c ) অপ্রয়োজনীয় উদ্বৃত্ত জিনিসই বর্জ্যের পরিমাণ বাড়ায় । তাই পরিমিত ও প্রয়োজনীয় জিনিসই কেনার নিয়ম শিক্ষার্থীকে গড়ে তুলতে হবে ।

( d ) শৌচাগার ব্যবহারে সচেতনতা বৃদ্ধি করা আবশ্যক । এ ছাড়াও বিতর্ক বা সাংস্কৃতিক নাটক , অ্যাওয়ার্নিং ক্যাম্প করে পরিবার ও সমাজের মানুষকে এ বিষয়ে জানাতে পারে ।

  1. নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধি হল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রাথমিক ধাপ – কেন ব্যাখ্যা করো ।

Answer : জনসচেতনতা বৃদ্ধি পেলে তবেই পরিবেশকে জঞ্জালমুক্ত করে বিশুদ্ধ রাখা যাবে । প্রকৃতি বর্জ্যমুক্ত হলে জীববৈচিত্র্য সুরক্ষিত হবে ; বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় থাকবে । গৃহস্থালি , শিল্পক্ষেত্র , কৃষিক্ষেত্র , চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে প্রতিদিন যেসব বর্জ্য উৎপন্ন হয় তার মধ্যে কোন্‌গুলি কীভাবে মানবশরীরে কুপ্রভাব ফেলে সে বিষয়ে সরকারি , বেসরকারি , স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করতে হবে । বিভিন্ন পত্রপত্রিকা , মিডিয়াকে এ বিষয়ে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে হবে । মানুষ নিজেও স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হবেন । সুনির্দিষ্ট জায়গায় ময়লা আবর্জনা ফেলার সু – অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে । নিয়মিত ময়লা ফেলার গাড়ি পাড়ায় পাড়ায় ময়লা সংগ্রহ করে যাতে সুনির্দিষ্ট স্থানে নিক্ষেপ না করে তার নজরদারি মানুষকে রাখতে হবে । খোলা ভ্যাটগুলিতে নিয়মিত | ব্লিচিং ছড়াতে হবে যাতে রোগজীবাণুর সংক্রমণ কমে । চাপা দেওয় যায় এমন স্থানে ময়লা ফেলা হলে গন্ধদূষণের পরিমাণ কমবে । | প্রত্যেকে নিজেকে সচেতন রাখবে ; তাহলেই সমাজ সচেতন হবে । প্রকৃতি বাঁচলে আমরাও বাঁচব এই অঙ্গীকারে সবাইকে দীক্ষিত হতে হবে ।

  1. বর্জ্য ভরাটকরণ প্রক্রিয়া মানবজীবনে অনেকসময় বিপর্যয় ঘটায় কী করে ?

Answer : জনবসতি থেকে দূরবর্তী স্থানে খোলা উন্মুক্ত প্রান্তরে প্রথমে কিছুটা মাটি গভীরভাবে খনন করে বর্জ্য ফেলা হয় , পরে আবার মাটি চাপা দেওয়া হয় । পরবর্তী সময় মাটির তাপে , চাপে খুব সহজেই তা মাটিতে পরিণত হয় । এই পদ্ধতিতে কয়েকটি বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন না – করলে তা মানবজীবনে নানা সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে ।

যেমন : – ( i ) উন্মুক্ত স্থানটি আয়তনে বড়ো হওয়া প্রয়োজন ; নির্বাচিত খোলা স্থানটি অবশ্যই লোকালয় থেকে দূরে হওয়া বাঞ্ছনীয় , তা না হলে দুর্গন্ধ ছড়ায় ও স্বাস্থ্যহানির কারণ ঘটে । জৈব প্রক্রিয়াকরণের সময় রোগাক্রান্ত পোকা , ভাইরাস , ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মানবশরীরে ডেঙ্গু , ম্যালেরিয়া , টাইফয়েড প্রভৃতির সংক্রমণ ঘটাতে পারে ।

( ii ) ময়লা ফেলার গাড়ি ঢাকা হওয়া প্রয়োজন যাতে যাওয়ার পথে আবর্জনা রাস্তায় পড়ে না যায় ; ময়লার গাড়ি যাতে শব্দদূষণ না – ঘটায় সেদিকে বিশেষ সতর্ক হওয়া উচিত ।

( iii ) ময়লা ফেলা গর্ত ততটাই খনন করা দরকার যা মাটির নিজস্ব পুষ্টি মৌল নষ্ট না করে অথবা ওই বর্জ্য দূষণ ভৌম জলস্তর পর্যন্ত না পৌঁছোয় ; সেক্ষেত্রে পানীয় জলে নানা রোগজীবাণু সংক্রমণের সম্ভাবনা তৈরি হয় ।

( iv ) অনেকসময় সমুদ্রেও বর্জ্য ফেলা হয় । এক্ষেত্রে নজর দেওয়া প্রয়োজন সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য যাতে বিনষ্ট না হয় , তাহলে মানবজীবনে নানা অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে ।

INTERESTING FACTS : সচ্ছ ভারত অভিযান : ২০১১ খ্রিস্টাব্দের ২ অক্টোবর নয়াদিল্লিতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বচ্ছ ভারত অভিযানের সূচনা করেন । ভারতবর্ষের ৪০৪১ টি নগর ও গ্রামে স্বচ্ছতার সচেতনতা বৃদ্ধিতে এই প্রকল্পের সূচনা হয় । স্বচ্ছতার | জন্য গৃহীত এটি ভারতের বৃহত্তম প্রয়াস । এই অভিযানের সময়সীমা |

বছর ( ২০১৪–২০১৯ ) । এর প্রধান উদ্দেশ্যগুলি হল- ( ১ ) স্বাস্থ্যক | শৌচালয় নির্মাণ , ( ২ ) প্রকাশ্যে মলমূত্র ত্যাগ বন্ধ করা , ( ৩ ) পৌরসভার বর্জ্যের ১০০ % ব্যবস্থাপনা করা ইত্যাদি । এই অভিযান সফল করার জন্য ২০১৯ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসের মধ্যে গ্রামে ১২ কোটি শৌচাগার নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় ।

  1. বর্জ্য পদার্থের শ্রেণিবিভাগ করো ।

Answer : বর্জ্যের প্রকারভেদ ( Classification of waste ) : পরিবেশের বর্জ্য পদার্থগুলিকে বিভিন্ন ভিত্তির ওপর সাধারণত বিশেষ কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করা যায় ।

( a ) পার্থিব বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী প্রকারভেদ :

( i ) কঠিন ( Solid ) : পদার্থের বিভিন্ন প্রকার ভৌত অবস্থাগুলির মধ্যে কঠিন বর্জ্যের উপস্থিতি পরিবেশে সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা হয় । যেমন : গৃহস্থালির জঞ্জাল , প্লাস্টিক , পেপার , পুরোনো অব্যবহার্য আসবাবপত্র , ভাঙা বোতল ও কাচের টুকরো , চট , খবরের কাগজ । এ ছাড়া বাজারের আনাজপাতি ও হাসপাতালের নানা অব্যবহার্য দ্রব্যাদি , যেমন সিরিজ , গজ কাপড় তুলো , রোগীর জামাকাপড় ইত্যাদি । এ ছাড়াও রয়েছে নানান শিল্পজাত বর্জ্য পদার্থ , যা সাধারণত কলকারখ নাগুলি থেকে উৎপন্ন হয় ।

( ii ) তরল ( Liquid ) তরল বর্জ্য পদার্থগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল নর্দমা ও নালাবাহিত গৃহস্থালির পয়ঃপ্রণালীজাত নানান তরল পদার্থ , কৃষিজমিতে কীটনাশক প্রয়োগের পরে জলসেচ দ্বারা বাহিত জল যা পার্শ্ববর্তী নদী ও জলাশয়ে মেশে । এ ছাড়াও রয়েছে নানান শিল্পজাত তরল বর্জ্য , নানান রাসায়নিক পদার্থ প্রভৃতি ।

( iii ) গ্যাসীয় ( Gaseous ) : কলকারখানা থেকে নির্গত নানান SPM ( সাসপেনডেড পারটিকুলেট ম্যাটার ) বিষাক্ত ধোঁয়া , ধুলোকণা , বিষাক্ত কণা , কার্বন মনোক্সাইড , বাতানুকূল যন্ত্র থেকে নির্গত CFC প্রভৃতি বিষাক্ত গ্যাস সমূহ এই প্রকার গ্যাসীয় বর্জ্য পদার্থের উদাহরণ ।

( b ) বিষক্রিয়তা অনুযায়ী প্রকারভেদ : বিষক্রিয়তার তারতম্য অনুযায়ী বর্জ্য পদার্থকে দু – ভাগে বিভক্ত করা যায়—

( i ) বিষাক্ত ( Toxic ) : নানান ধরনের বর্জ্য পদার্থ , যা থেকে । বিভিন্ন ধরনের বিষক্রিয়তার উদ্ভব হয় এবং যেগুলি একেবারেই পরিবেশবান্ধব নয় , সেগুলিকে বলা হয় বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ । যেমন — শিল্পজাত নানান প্রকার তেজস্ক্রিয় পদার্থ ( ইউরেনিয়াম , থোরিয়াম প্রভৃতি ) এবং কিছু রাসায়নিক তরল পদার্থ , যা বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে ।

( ii ) বিষহীন ( Non – toxic ) : যেসব বর্জ্য পদার্থগুলির বিষক্রিয়তা নেই , যেগুলি পরিবেশের কোনো প্রকার ক্ষতিসাধন করে না তাদের বিষহীন বর্জ্য পদার্থ বলে । এই বিষহীন বর্জ্য পদার্থগুলি সাধারণত Biodegradable বা জৈবিকভাবে বিয়োজিত হয় ।

যেমন — বাজারের বর্জ্য পদার্থ , কলকারখানার বর্জ্য প্রভৃতি ।

  1. বর্জ্য পদার্থের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো ।

Answer : বর্জ্য পদার্থের বৈশিষ্ট্যগুলি হল—

1 ) উপাদান : বর্জ্য পদার্থ কঠিন , তরল , গ্যাসীয় তিন প্রকারেরই হতে পারে ।

ii ) প্রকৃতি : বর্জ্য পদার্থের কিছু অংশ জীবাণু দ্বারা বিয়োজিত হয় , কিছু অংশ অবিয়োজিত থাকে ।

( iii ) দূষণ বর্জ্য উপাদানে পরিবেশের দূষণ সৃষ্টি হয় । ভারসাম্য নষ্ট হয় ।

( iv ) পরিমাণ গ্রামের তুলনায় শহরে বর্জ্যের পরিমাণ বেশি থাকে ।

( v ) বর্জ্য উৎসস্থল গৃহস্থালি , শিল্পাঞ্চল , কৃষিক্ষেত্র , চিকিৎসাকেন্দ্র , খনিজ আহরণ ও প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল , নির্মাণ ও উৎপাদক স্থান , ব্যাবসাকেন্দ্র , উৎপাদক স্থান ইত্যাদি হল বর্জ্যের উৎসস্থল ।

  1. কৃষিজ বর্জ্য কীভাবে সৃষ্টি হয় ?

Answer : চাষবাসের সময় যে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক জমিতে বা শস্যখেতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে , সেগুলির অবশিষ্টাংশ সাধারণত মাটিতে মিশে বৃষ্টির জলের সঙ্গে বা জলসেচের সঙ্গে ধুয়ে পার্শ্ববর্তী কোনো জলাশয় , পুকুর বা নদীতে গিয়ে মেশে । এগুলিই কৃষিজ তরল বর্জ্য । এ ছাড়াও যখন শস্যখেতে পোকা লেগে যায় বা খেতে ফসল নষ্ট হয়ে যায় তখন তা বিক্রির বা আহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে এবং কৃষিজ বর্জ্য হিসেবে পরিগণিত SAPP হয় । কৃষির ফলন বাড়াতে রাসায়নিক সার , কীটনাশক , আগাছানাশক ওষুধ ব্যবহার করা হয় ।

এগুলিতে নাইট্রেট , ফসফেট , পটাশ , অ্যামোনিয়া , ক্লোরাইড প্রভৃতি রাসায়নিক মৌল থাকে । এ ছাড়াও জৈব সার হিসেবে গবাদি পশুর বিষ্ঠা , গাছের পাতা , ডাল , কেঁচোর | কম্পোস্ট প্রভৃতি ব্যবহৃত হয় । যদিও এগুলি জৈব ভঙ্গুর অর্থাৎ নিজস্ব প্রক্রিয়ায় পুনরায় মাটিতে মিশে যায় তবুও সাময়িক সময়ের জন্য এগুলি পরিবেশের আবর্জনা । এ ছাড়া কৃষিফসল কেটে নেওয়ার পর পড়ে থাকা গাছের গোড়ার অংশে আগাছা বা ধান , গম – এর তুষ বা খোলস , পাট , তুলোর আঁশের বাতিল অংশ পরিবেশে বর্জ্য সৃষ্টি করে ।

  1. কঠিন বর্জ্যের সৃষ্টির উৎসগুলি চিহ্নিত করো ।

Answer : কঠিন বর্জ্যের সৃষ্টির উৎসগুলি হল

( i ) গৃহে ব্যবহৃত উপকরণ যেমন — পুরোনো কাগজ , বাতিল কাপড় , ভাঙা প্লাস্টিক ও কাচের অংশ ।

( ii ) শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ , টায়ার , টিউবের বাতিল অংশ , সিমেন্ট , তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের আবর্জনার অংশবিশেষ ।

( iii ) কৃষিখেতে : জমিতে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশের অকেজো অংশ , ফসল তোলার পর পড়ে থাকা অবশিষ্টাংশ বা ধানের তুষ , আখের ছিবড়া , পাটের আঁশ বের করার পর পড়ে থাকা অংশবিশেষ ।

( iv ) খনি ও নির্মাণকার্যে খনিজ আহরণের পর খনিজের অবশিষ্টাংশ ; গৃহ বা অন্যান্য নির্মাণের পর পড়ে থাকা চুনসুরকি , লোহার ছাঁট , ইটের কুচি , বালির আবর্জনা , পাথরের টুকরো , কয়লা ব পোড়ানোর পর পড়ে থাকা ছাই ইত্যাদি ।

  1. শিল্প বর্জ্যের নানা উৎস সমূহের উল্লেখ করো ।

Answer : শিল্পাঞ্চল তথা নগরাঞ্চলগুলিতে অবস্থিত কলকারখানাগুলি থেকে যে বিষাক্ত কালো ধোঁয়া , বিভিন্ন বিষাক্ত ধাতুকণা ও তরল পদার্থ নির্গত হয় , তাকেই শিল্প বর্জ্যা বলে ।

খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প এই শিল্পে ফল , ফুল থেকে নির্যাস বের করার পর পড়ে থাকা অবশিষ্টাংশ ।

শর্করা শিল্প : আখ থেকে চিনির রস নিঃসরণের পর পড়ে থাকা আখের ছিবড়া ।

পাটশিল্প : পাটের আঁশ বের করার পর পড়ে থাকা অবশিষ্টাংশ ।

কাগজ শিল্প কাষ্ঠমণ্ড , সেলুলোজ , কাগজের অবশিষ্টাংশ , শিল্পে ব্যবহৃত রাসায়নিক উপাদানের অব্যবহৃত অংশ প্রভৃতি ।

বয়ন শিল্প : ব্লিচিং পাউডার , রঙের অবশিষ্টাংশ , তুলো , সুতো , কাপড়ের ছাঁট অংশ । ধাতব শিল্প : অ্যালুমিনিয়াম , ইস্পাত শিল্পের ছাঁট , খনিজ , রাসায়নিক শিল্পের ক্ষতিকারক রাসায়নিক দ্রব্য , অ্যাসিড , রং , তেল ইত্যাদি ।

ইলেকট্রনিক শিল্প : যন্ত্রাংশের অংশ , তামার তার , সিসা , অ্যালুমিনিয়ামের অংশবিশেষ ।

সিমেন্ট শিল্প : চুনাপাথরের অবশিষ্টাংশ , বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লা , খনিজ তেল , পারমাণবিক উপাদানের অংশ ।

  1. তরল বর্জ্য কীভাবে সৃষ্টি হয় ? 

Answer : যেসব বর্জ্য তরল আকারে থাকে , তাকে তরল বর্জ্য বলে । তরল বর্জ্য সৃষ্টির বিভিন্ন প্রক্রিয়া হল—

( i ) গৃহস্থালির তরল বর্জ্য বাথরুমে ব্যবহৃত ডিটারজেন্ট , শ্যাম্পু , ব্লিচিং পাউডার , অক্সালিক অ্যাসিড , মিউরিটিক অ্যাসিড , ফিনাইল মিশ্রিত জল , রান্নাঘরে মশলা , তেল মিশ্রিত তরল , রান্নার উচ্ছিষ্টাংশ ইত্যাদি ।

( ii ) কলকারখানার তরল বর্জ্যা : কলকারখানা থেকে নির্গত গরম জল , তৈলাক্ত জল , কারখানা ধোয়ার জল ইত্যাদি ।

( iii ) কৃষিক্ষেত্রের তরল বর্জ্যা : কৃষিতে ব্যবহৃত সার , কীটনাশক ওষুধ জলের সাথে ধুয়ে এসে নদীতে মেশে । এগুলি কৃষিজ তরল বর্জ্যের উদাহরণ ।

  1. চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্য কীভাবে সৃষ্টি হয় ?

Answer : হাসপাতাল , নার্সিংহোম বা বিভিন্ন প্যাথোলজিক্যাল য ল্যাবরেটরি থেকে যে বর্জ্য নির্গত হয় , তাকে চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্য বলে । চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যবহৃত ছুঁচ , সিরিঞ্জ , ছুরি , কাঁচি , ব্লেড , স্যালাই , গজ , বোতল , তুলো , ব্যান্ডেজ , মানব অঙ্গের ব্যবচ্ছিন্ন অংশ , চিকিৎসায় ব্যবহৃত বিভিন্ন ওষুধ , ওষুধের প্যাকেট , প্যাথোলজির রক্ত , মল , মুত্র ইত্যাদি হল চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্যের উদাহরণ । প্রশ্ন ৮ গ্যাসীয় বর্জ্যের উৎসগুলি কী কী ? উত্তর বাতাসে ভাসমান লবণকণা , বায়ুকণা , ধূলোবা যখন পরিবেশে ক্ষতিসাধন করে , তাকে বলে গ্যাসীয় বন্ধ কলকারখানা , যানবাহন থেকে নির্গত কার্বন ডাইঅক্সাইড , মিথে ক্লোরোফ্লুরোকার্বন , নাইট্রোজেন অক্সাইড , সালফার অক্সাইড , কার্বন মনোক্সাইড ইত্যাদি হল গ্যাসীয় বর্জ্যের উদাহরণ ।

  1. পরিবেশের ওপর বর্জ্যের প্রভাব আলোচনা করো ।

Answer : ( ক ) বায়ুদূষণ ( Air pollution ) : বর্জ্য পদার্থগুলিতে পরিবেশের বিভিন্ন স্থানে জমিয়ে রাখার ফলে তা থেকে যে পা দুর্গন্ধ নির্গত হয় তা পারিপার্শ্বিক পরিবেশ তথা সমগ্র বায়ুমণ্ডলে বায়ুদূষণ ঘটায় এবং এটি মানুষ তথা যে – কোনো প্রাণীর ক্ষেত্রে ফুসফুস ও অন্যান্য অঙ্গে পৌঁছে শ্বাসরোধ , বমি ইত্যাদি নানা সমস্যা সৃষ্টি করে ।

( খ ) জল ও মৃত্তিকা দূষণ ( Water & soil pollution ) কৃষিজ জমিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার অথবা কীটনাশক তথ্য পয়ঃপ্রণালী নির্গত তরল বর্জ্যগুলি বৃষ্টি বা জলসেচের জল দ্বারা বুদ্ধে গিয়ে পার্শ্ববর্তী কোনো নদীতে মিশে সেখানকার স্বাভাবিক জলছ বাস্তুতন্ত্রকে ব্যাহত করে । এ ছাড়া মাটির উর্বরাশক্তির পক্ষেও এটি যথেষ্ট ক্ষতিকারক । অতিরিক্ত সার ও কীটনাশকের ব্যবহার মাটিকে আম্লিক করে দেয় ।

( গ ) রাসায়নিক বিক্রিয়া ( Chemical reaction ) : বিভিন্ন তেজস্ক্রিয় পদার্থ , যেগুলি কোনোভাবেই মাটির সাথে মেশে না , সেইসব অজৈব পদার্থগুলি ক্রমাগত যেখানে সেখানে সজ্জিত হয়ে জল নিষ্কাশন ব্যবস্থাকে ব্যাহত করছে । এগুলি মাটির সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটিয়ে এমন কিছু ক্ষতিকর যৌগের সৃষ্টি করে , যা মানবসভ্যতার সমূহ ক্ষতি করতে পারে ।

( ঘ ) বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্যহীনতা ( Imbalanced ecosystem ) এই বর্জ্য পদার্থের সঞ্চয় এবং তার পরিমাণ পরিবেশে বেড়েই চলেছে । ফলে পুকুর , বনভূমি , তৃণভূমি প্রভৃতি বিভিন্ন স্থানের বাস্তুতন্ত্রগুলি দিনের পর দিন তাদের ভারসাম্য হারাচ্ছে এবং বিঘ্নিত হচ্ছে ।

( ঙ ) জীববৈচিত্র্য হ্রাস ( Decrease in biodiversity ) : পৃথিবীর বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্রগুলি উক্ত নানান পরিবেশদূষণের কবলে পড়ে তাদে ভারসাম্য হারাচ্ছে । ফলে পরিবেশের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জীবগুলি লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এবং পরিবেশের জীববৈচিত্র্য হ্রাস পাচ্ছে ।

( চ ) দৃশ্যদূষণ : যেখানে সেখানে জমা ময়লা আবর্জনায় প্রকৃতির সৌন্দর্য হারিয়ে যায় ।

( ছ ) জমি ও জলাভূমি ধ্বংস : বিভিন্ন প্রকার বর্জ্য কখনও জমিতে এবং কখনও জলাভূমিতে ফেলা হয় । ফলে জমি ও জলাভূমির ক্ষতি হয় ।

( জ ) গন্ধদূষণ : বর্জ্যের পচন শুরু হলে চারপাশ দুর্গন্ধে ভরে যায় ও পরিবেশের ক্ষতি হয় ।

========================================================

বিভাগ ‘ক’

১) বিকল্প গুলির থেকে সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করে লেখঃ-

১.১) জলকে জীবানুমুক্ত করার জন্য ব্যবহার করা হয় –

(ক) চুন

(খ) অক্সিজেন

(গ) কার্বন ডাই অক্সাইড

(ঘ) ওজোন

উত্তরঃ (ঘ) ওজোন

১.২) সর্বাধিক বিষাক্ত বর্জ্য উৎপন্ন হয় –

(ক) তেজস্ক্রিয় বর্জ্য থেকে

(খ) জৈব বর্জ্য থেকে

(গ) ফ্লাই অ্যাশ থেকে

(ঘ) জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে

উত্তরঃ (ক) তেজস্ক্রিয় বর্জ্য থেকে

১.৩) একটি চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্য হল –

(ক) সবজির খোসা

(খ) injection syringe

(গ) খাবারের প্যাকেট

(ঘ) সাবান ধোয়া জল

উত্তরঃ (খ) injection syringe

১.৪) বর্জ্যের চাপ সবচেয়ে বেশি –

(ক) কলকাতায়

(খ) মুম্বাইয়ে

(গ) দিল্লিতে

(ঘ) চেন্নাইতে

উত্তরঃ (ক) কলকাতায়

১.৫) কাগজ তৈরি করতে কাঠের ব্যবহারের ভালো বিকল্প –

(ক) পুরনো কাপড়

(খ) গাছের পাতা

(গ) আখের ছিবড়ে

(ঘ) নতুন গাছ

উত্তরঃ (গ) আখের ছিবড়ে

বিভাগ ‘খ’

২) ২.১) নিম্নলিখিত বাক্যগুলি শুদ্ধ হলে পাশে ‘শু’ এবং অশুদ্ধ হলে পাশে ‘অ’ লেখঃ-

২.১.১) বর্জ্য বস্তুর ঠিকমতো ব্যবস্থাপনা করতে না পারলে এটি পরিবেশের খুব ক্ষতি করে।

উত্তরঃ শু

২.১.২) বর্জ্য পদার্থ থেকে বর্তমানে শক্তি উৎপন্ন করা হয়।

উত্তরঃ শু

২.১.৩) গঙ্গা নদী পৃথিবীর পাঁচটি দূষিত নদীর মধ্যে একটি।

উত্তরঃ শু

২.২) উপযুক্ত শব্দ বসিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করঃ-

২.২.১) পারমানবিক শক্তি কেন্দ্র থেকে__________ বর্জ্য পদার্থ পাওয়া যায়।

উত্তরঃ radio active

২.২.২) বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে___________ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।

উত্তরঃ স্ক্রাবার

২.২.৩) ঘড়ি শিল্প থেকে_______ বর্জ্য  নির্গত হয়।

উত্তরঃ তেজস্ক্রিয়

২.৩) একটি বা দুটি শব্দে উত্তর দাওঃ-

২.৩.১) একটি জৈব ভঙ্গুর বর্জ্যের নাম লেখ।

উত্তরঃ ডাবের খোলা

২.৩.২) কয়লা থেকে নির্গত হয় এমন একটি তেজস্ক্রিয় বর্জ্যের নাম লেখ।

উত্তরঃ ইউরেনিয়াম

২.৩.৩) গ্যাসীয়  বর্জ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি তে জলবায়ু কি পরিবর্তন ঘটেছে।

উত্তরঃ বিশ্ব উষ্ণায়ন

২.৪) বাম দিকের সাথে ডানদিকের গুলি মিলিয়ে লেখঃ-

বাম দিক                        ডান দিক

২.৪.১) জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য          (ক) ঘড়ি শিল্প

২.৪.২) তেজস্ক্রিয় বর্জ্য           (খ) টেস্টটিউব

২.৪.৩) চিকিৎসাসংক্রান্ত বর্জ্য   (গ) সেপটিক ট্যাঙ্কের জল

২.৪.৪) তরল বর্জ্য               (ঘ) পুরোনো খবরের কাগজ

উত্তরঃ ২.৪.১) জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য – (ঘ) পুরোনো খবরের কাগজ ২.৪.২) তেজস্ক্রিয় বর্জ্য – (ক) ঘড়ি শিল্প ২.৪.৩) চিকিৎসাসংক্রান্ত বর্জ্য – (খ) টেস্টটিউব ২.৪.৪) তরল বর্জ্য – (গ) সেপটিক ট্যাঙ্কের জল

বিভাগ ‘গ’

৩) নিচের প্রশ্নগুলির সংক্ষিপ্ত উত্তর দাওঃ-

প্রশ্নঃ বর্জ্য কাকে বলে?

উত্তরঃ ব্যবহারের অযোগ্য, পরিত্যক্ত, কঠিন–তরল–গ্যাসীয় অবস্থায় প্রকৃতিতে পড়ে থাকা বস্তু যা পরিবেশদূষণের অন্যতম কারণ তাকে বলে বর্জ্য। যেমন – ভাঙা প্লাস্টিক, ছেঁড়া কাগজ, নোংরা জল ইত্যাদি।

প্রশ্নঃ তরল বর্জ্য কাকে বলে?

উত্তরঃ প্রকৃতিতে দূষণ সৃষ্টিকারী তরল অব্যবহৃত যৌগ যখন অপরিশোধিত অবস্থায় পরিবেশের ক্ষতি করে, তখন তাকে তরল বর্জ্য বলে। যেমন – গৃহস্থালি, কলকারখানার ব্যবহৃত দুষিত জল, কাপড় কাচা, বাসন মাজার দূষিত জল ইত্যাদি।

প্রশ্নঃ E- বর্জ্য বা বৈদ্যুতিন বর্জ্য কাকে বলে?

উত্তরঃ বর্তমানে বিশ্বে নানান ইলেকট্রনিকস দ্রব্য ব্যবহৃত হয়। এই দ্রব্যগুলির অব্যবহৃত বাতিল অংশের মধ্যে পরিবেশ দূষণকারী পদার্থ থাকে। এই জাতীয় বর্জ্যকে E waste বলে। যেমন – সার্কিট বোর্ড, টিভি বা কম্পিউটার মনিটর, কম্পিউটারের ব্যাটারি ইত্যাদি।

প্রশ্নঃ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কাকে বলে?

উত্তরঃ বর্জ্য পদার্থগুলিকে সম্পূর্ণরূপে নিঃশেষ করে দেওয়া বা পুনর্ব্যবহারের যোগ্য করে তোলার ব্যবস্থাকেই বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা।

প্রশ্নঃ ইউট্রিফিকেশন কী?

উত্তরঃ জলাশয়ের পুষ্টি মৌল বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে বলে ইউট্রিফিকেশন। জলাশয়ে জলদূষণের ফলে জলের নাইট্রেট ও ফসফেটের পরিমাণ বাড়ে। পুষ্টি মৌলের প্রাচুর্যে জলে ভাসমান কচুরিপানা, শৈবাল, অ্যালগি জাতীয় প্রাণীর পরিমাণ বাড়ে। ফলে জলের নীচে প্রাণীদের বৃদ্ধি ও বিকাশ ব্যাহত হয়, একে বলে ইউট্রিফিকেশন।

প্রশ্নঃ বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ভরাটকরণ বলতে কী বোঝ?

উত্তরঃ ফাঁকা জমি বা জমিতে গর্ত খুঁড়ে বর্জ্য পদার্থ ভরাট করাকে বর্জ্য ভরাটকরণ বলে। এতে বর্জ্য পদার্থ ধীরে ধীরে বিশ্লেষিত হয়ে মাটির সঙ্গে মিশে যায়।

প্রশ্নঃ বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার কাকে বলে?

উত্তরঃ কিছু কিছু বর্জ্য পদার্থ আছে যেগুলি পুনরায় ব্যবহার করা যায়, তাকে বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার বলে। যেমন – খবরের কাগজ, পুরোনো শিশি, বোতল ইত্যাদি। এতে অর্থের সাশ্রয় হয় এবং সম্পদ বাঁচে।

বিভাগ ‘ঘ’

৪) সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক উত্তর দাওঃ-

প্রশ্নঃ চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্য কীভাবে সৃষ্টি হয়?

উত্তরঃ হাসপাতাল, নার্সিংহোম বা বিভিন্ন প্যাথোলজিক্যাল ল্যাবরেটরি থেকে যে বর্জ্য নির্গত হয়, তাকে চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্য বলে। চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যবহৃত ছুঁচ, সিরিঞ্জ, ছুরি, কাঁচি, ব্লেড, স্যালাই, গজ, বোতল, তুলো, ব্যান্ডেজ, মানব অঙ্গের ব্যবচ্ছিন্ন অংশ, চিকিৎসায় ব্যবহৃত বিভিন্ন ওষুধ, ওষুধের প্যাকেট, প্যাথোলজির রক্ত, মল, মুত্র ইত্যাদি হল চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্যের উদাহরণ।

প্রশ্নঃ বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণে 3R- এর ভূমিকা উল্লেখ করো।

উত্তরঃ বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের পদ্ধতি হল 3R অর্থাৎ Reduce, Reuse & Recycle-কে একত্রে বলে 3R।

(ক) Reduce বা বর্জ্যের পরিমাণ হ্রাসঃ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অদরকারি পদার্থ যত কমানো সম্ভব হবে, বর্জ্যের পরিমাণও তত কমবে। অর্থাৎ দ্রব্য ব্যবহারে আমাদের মিতব্যয়ী হাত হবে, অপ্রয়োজনীয় জিনিসই পরিবেশ বর্জ্যের পরিমাণ বাড়ায়।

(খ) Reuse বা পুনর্ব্যবহারঃ পরিবেশের কিছু কিছু উপাদান পুনর্ব্যবহারযোগ্য। যেমন – ধাতব বস্তু, কাগজ, যন্ত্রাংশ প্রভৃতি। এগুলি একবার ব্যবহারের পর পুনরায় ব্যবহার করা হয়। দ্রব্যের পুনর্ব্যবহার সম্পদের সঞ্চয় বাড়ায়, তাই অপুনর্ভব সম্পদগুলিকে সাশ্রয় করা ও পুনর্ব্যবহার খুব জরুরি।

(গ) Recycle বা পুনর্নবীকরণঃ পুনর্নবীকরণ বলতে বোঝায় বিশেষ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কোনো ব্যবহৃত দ্রব্যের পুনরায় ব্যবহারপযোগ্য সম্পদে পরিণত করে পরিবেশে ফিরিয়ে দেওয়া। যেমন – কাচ, ধাতু, প্লাস্টিক, কাগজ, ছেড়াঁ কাপড় থেকে পুনরায় অনুরূপ দ্রব্য উৎপাদন সম্ভব।

প্রশ্নঃ বর্জ্যের পুনর্নবীকরণ বলতে কী বোঝ?

উত্তরঃ বর্জ্য পদার্থগুলিকে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সম্পূর্ণ নিঃশেষ করা অথবা পুনরায় ব্যবহারযোগ্য উপাদানে পরিণত করার ব্যবস্থা বা পদ্ধতিকে বলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা।

যেমন – (১) বর্জ্যের পরিমাণগত হ্রাস (২) পুনর্ব্যবহার (৩) পুনর্নবীকরণ; এই ত্রিমূখী কর্মসূচিকে সংক্ষেপে বলে 3R – Reduce, Reuse, Recycling।

প্রশ্নঃ কম্পোস্টিং ( Composting ) বলতে কী বোঝ? 

উত্তরঃ জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য পদার্থগুলি জীবাণুর দ্বারা বিয়োজিত হয়ে হিউমাসে পরিণত হলে, তাকে বলে কম্পোস্টিং পদ্ধতি। বর্জ্য জীবাণুর দ্বারা বিয়োজিত হয়ে এই প্রক্রিয়ায় হিউমাসে পরিণত হয়। কম্পোস্টিং মূলত দুই প্রকার –

(ক) সবাত কম্পোস্টিংঃ বায়ুর উপস্থিতিতে জীবাণুর জৈব বিশ্লেষণ ঘটানোর পদ্ধতিকে বলে সবাত কম্পোস্টিং।

(খ) অবাত কম্পোস্টিংঃ বায়ুর অনুপস্থিতিতে জীবাণুর জৈব বিশ্লেষণ ঘটানোর পদ্ধতির নাম অবাত কম্পোস্টিং।

প্রশ্নঃ গ্যাসীয় বর্জ্য নিয়ন্ত্রণের উপায়গুলি কী কী?

উত্তরঃ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি বিশেষ বিজ্ঞাননির্ভর প্রক্রিয়ার নাম স্কাবার। এই পদ্ধতিতে শিল্প থেকে নির্গত দূষিত বায়বীয় পদার্থ ও গ্যাসীয় উপাদানের অপসারণ ঘটিয়ে বায়ুকে বিশুদ্ধ করা হয়।

পদ্ধতিঃ স্ক্রাবিং পদ্ধতি দুই প্রকার। যথা –

(ক) শুষ্ক স্ক্রাবারঃ এই পদ্ধতির মাধ্যমে দুষিত নির্গত ধোঁয়াকে অম্লমুক্ত করা হয় ।

(খ) আর্দ্র স্ক্রাবারঃ এই পদ্ধতি প্রয়োগে দূষণকারী গ্যাস, দূষণকণা অপসারণ করা হয়। সাধারণত ক্ষেত্রে দ্রবণের মাধ্যমে গ্যাসীয় দূষিত পদার্থকে স্কাবার দ্বারা অপসারণ হয়। দ্রবণে গ্যাসের দ্রাব্যতার ওপর এই পদ্ধতির কার্যকারিতা করে।

প্রশ্নঃ বর্জ্য ভরাটকরণ পদ্ধতি কী?

উত্তরঃ কোনো নীচু স্থানে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ও বিশেষ পদ্ধতি হল বর্জ্য ভরাটকরণ।

পদ্ধতিঃ জনবসতি, শিল্পাঞ্চল বা বাণিজ্যকেন্দ্র থেকে দূরে কোনে উন্মুক্ত খোলা জায়গাকে, খুব গভীরভাবে খনন করে মাটির নীচে বর্জ্য চাপা দেওয়া হয়। সাধারণত বর্জ্য ২ মিটার উঁচু স্তরে বিছিয়ে দেওয়া হয় ও তার ওপর ২০-২৫ সেমি মাটির স্তর চাপা দেওয়া হয়। মাটির মধ্যে থাকা জীবাণু বর্জ্যের ভৌত রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটায়। দীর্ঘদিন চাপা পড়া অবস্থায় থেকে ওই জৈব ভঙ্গুর বর্জ মাটিতে মিশে যায়।

সতর্কীকরণঃ তবে এক্ষেত্রে কতকগুলি সতর্কীকরণ নেওয়া আবশ্যিক। যথা –

(১) ল্যান্ডফিলিং–এর নির্বাচিত স্থান শহরাঞ্চল থেকে দূরে হতে হবে।

(২) জায়গাটির আয়তন বেশি হতে হবে।

(৩) স্থানটিতে জনবসতি থাকবে না; কারণ বর্জ্যের দূষণ মানবশরীরের পক্ষে ক্ষতিকর ।

জমি ভরাটকরণের সুবিধাঃ জমি ভরাটকরণের প্রধান প্রধান সুবিধাগুলি হল –

(১) বায়ুদূষণ তথা পরিবেশ দূষণের পরিমাণ কমে যায়।

(২) ল্যান্ডফিলিং–এর ফলে যে গ্যাস নির্গত হয়, তা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়।

(৩) বর্জ্য পদার্থ আবৃত অবস্থায় থাকে বলে মাছি, মশা, ইঁদুর, কীটপতঙ্গ বাসা বাঁধতে পারে না।

জমি ভরাটকরণের অসুবিধাঃ জমে থাকা বর্জ্য পদার্থ থেকে নির্গত জল চুঁইয়ে ভৌম জলস্তরে মিশে যায়।

প্রশ্নঃ কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় বর্জ্যের ব্যবস্থাপনার পদ্ধতিগুলি আলোচনা করো। 

উত্তরঃ (১) বর্জ্য পৃথক্করণঃ কোনো স্থানে যখন বর্জ্য পদার্থ জমা হয়, তখন সেখানে নানান ধরনের বর্জ্য পদার্থ একত্রিত হয়ে থাকে। সেগুলিকে আলাদা না করলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব হয় না। এই পদ্ধতিটিকেই বলা হয় বর্জ্য পৃথক্করণ। এই পদ্ধতিটি পৃথিবীর উন্নত দেশ, যেমন – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান প্রভৃতি স্থানে যন্ত্রের মাধ্যমে করা হলেও ভারতবর্ষে মূলত মানুষের দ্বারাই করা হয়ে থাকে।

(২) জমি ভরাটকরণঃ এই পদ্ধতিতে বৃহদায়তন ফাঁকা জমিকে খুব গভীর ভাবে খনন করা হয়। কঠিন জৈব বর্জ্যা পদার্থগুলিকে এর মধ্যে ফেলে ভরাট করা হয় এবং সবশেষে, পুনরায় মাটি চাপা দিয়ে দেওয়া হয়। সেগুলি মাটির তলায় চাপা পড়ে থাকাকালীন চাপে ও তাপে খুব সহজেই মাটি হয়ে যায়।

(৩) কম্পোস্টিংঃ গ্রামাঞ্চলে বাড়ির মধ্যেই খালি জায়গায় কিছুটা জমি খনন করে তাতে গৃহস্থালির দৈনিক উৎপন্ন বর্জ্য ফেলা হয়। কিছুদিন পর বর্জ্যা দ্বারা ওই জায়গা ভরতি হয়ে গেলে মাটি চাপা দিয়ে অপর কোনো স্থান পুনরায় খনন করে। বর্জ্যা নিক্ষেপ করা হয়। কম্পোস্টিং পদ্ধতিটি খানিকটা ভরাটকরণ পদ্ধতির মতো। এই পদ্ধতিতেও একটি গর্তকে কিছু পরিমাণ জৈব বর্জ্য, যেমন – পশুপাখির মৃতদেহ, গৃহস্থালি ও বাজারের নানান আনাজের খোসা ও পচা। শাকসবজি, মলমূত্র প্রভৃতি দ্বারা ভরাট করা হয় ও মাটি দিয়ে এই গর্তের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিছুদিন পরে দেখা যায় যে ওই জৈবাংশগুলি বিয়োজিত হয়ে জৈব সার গঠন করেছে, যার পুষ্টিমাত্রা খুব বেশি।

প্রশ্নঃ বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণে শিক্ষার্থীর ভূমিকা উল্লেখ করো।

উত্তরঃ পরিবেশকে বর্জ্য মুক্ত করতে শিক্ষার্থীকেই প্রাথমিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। শিশুমনে পরিবেশ সচেতনতা যত বাড়বে, পৃথিবী ও পরিবেশ ততই বাসযোগ্য ভূমিতে পরিণত হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীরা যেসব উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে সেগুলি হল –

(১) জৈব ভঙ্গুর, জৈব অভঙ্গুর, বিষাক্ত, বিষহীন বর্জ্য সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। চেষ্টা করতে হবে জৈব অভঙ্গুর ও বিষাক্ত বর্জ্যগুলির ব্যবহার হ্রাস করা। যেমন – Use & Throw পেনের পরিবর্তে কালির পেন ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তোলা।

(২) পরিবেশ পরিচ্ছন্নতায় রোগমুক্তি ঘটে। এই বিষয়ে বিদ্যালয় সচেতনতার দৃষ্টি দেখালে, বাড়ির চারপাশে বর্জ্য নিক্ষেপে নির্দিষ্ট ডাস্টবিন ব্যবহার করার গুরুত্ব বাড়বে।

(৩) অপ্রয়োজনীয় উদ্বৃত্ত জিনিসই বর্জ্যের পরিমাণ বাড়ায়। তাই পরিমিত ও প্রয়োজনীয় জিনিসই কেনার নিয়ম শিক্ষার্থীকে গড়ে তুলতে হবে।

======================================================

 ©kamaleshforeducation.in(2023)

 

 

 

 

 

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!