বায়ু (বায়ুমণ্ডল – দ্বিতীয় অধ্যায়) মাধ্যমিক দশম শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর |
Madhyamik Geography Bayu Question and Answer :
MCQ | বায়ু (বায়ুমণ্ডল – দ্বিতীয় অধ্যায়)
- পৃথিবীর বৃহত্তম মরুভূমির নাম –
(A) সাহারা
(B) কালাহারি
(C) থর
(D) আটাকামা
Ans: (A) সাহারা
- এশিয়ার বৃহত্তম মরুভূমির নাম –
(A) আরব
(B) গোবি
(C) থর
(D) তুর্কিস্তান
Ans: (B) গোবি
- পৃথিবীর শুষ্কতম মরুভূমির নাম –
(A) গোবি
(B) আটাকামা
(C) তুর্কিস্তান
(D) লাডাক
Ans: (B) আটাকামা
- ভারতের কোন্ রাজ্যে বায়ুকার্যের মাধ্যমে ভূমিরূপের পরিবর্তন ঘটে ?
(A) রাজস্থান
(B) উত্তরপ্রদেশ
(C) মধ্যপ্রদেশ
(D) বিহার
Ans: (A) রাজস্থান
- আফ্রিকার মরু অঞ্চলে প্লায়া হ্রদকে বলে—
(A) ধান্দ
(B) শস
(C) স্যালিনা
(D) বোলসন
Ans: (A) ধান্দ
- রাজস্থানে মরু অঞ্চলে প্লায়া হ্রদকে বলে—
(A) ধান্দ
(B) ধ্রিয়ান
(C) বোলসন
(D) শটস
Ans: (A) ধান্দ
- লোয়েস সমভূমি দেখা যায়—
(A) হোয়াংহো
(B) ইংয়াংসিকিয়াং
(C) আমুর অববাহিকা
(D) নীলনদের অববাহিকা
Ans: (A) হোয়াংহো
- ‘ Defiation ‘ বলতে বোঝায় বায়ুর
(A) অপসারণ প্রক্রিয়া
(B) অবঘর্ষ প্রক্রিয়া
(C) ঘর্ষণ প্রক্রিয়া
(D) লম্ফদান প্রক্রিয়া
Ans: (A) অপসারণ প্রক্রিয়া
- বায়ুপ্রবাহে বাহিত ছোটো শিলাখণ্ডের পারস্পরিক ঠোকাঠুকিকে বলে –
(A) অপসারণ
(B) ঘর্ষণ
(C) অবঘর্ষ
(D) উপলেপন
Ans: (B) ঘর্ষণ
- কোন্ প্রক্রিয়ায় বায়ুপ্রবাহের দ্বারা শিলাস্তরে আঁচড়কাটার মতো দাগ পড়ে –
(A) অবঘর্ষ প্রক্রিয়া
(B) ঘর্ষণ প্রক্রিয়া
(C) অপসারণ প্রক্রিয়া
(D) অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায়
Ans: (A) অবঘর্ষ প্রক্রিয়া
- মরুভূমির শুষ্ক নদীখাতকে কী বলে ?
(A) বোলসন
(B) ওয়াদি
(C) বাজাদা
(D) ধান্দ
Ans: (B) ওয়াদি
- বালির মধ্যে কোন্ খনিজ বেশি পরিমাণে থাকে ?
(A) সিলিকন
(B) কোয়ার্টজ
(C) ফেল্ডস্পার
(D) মাইকা
Ans: (B) কোয়ার্টজ
- বালুকাপূর্ণ মরুভূমিকে সাহারায় বলে –
(A) কুম
(B) হামাদা
(C) রেগ
(D) আর্গ
Ans: (D) আর্গ
- এশিয়ায় ‘ Koum desert ‘ বলতে বোঝায় –
(A) বালিময়
(B) কোণাকার শিলাময়
(C) প্রস্তরখণ্ডময়
(D) কাদাময় মরুভূমি
Ans: (A) বালিময়
- পৃথিবীর বৃহত্তম অপসারণ সৃষ্ট গর্ত হল –
(A) সম্বর
(B) কাতারা
(C) পুষ্কর
(D) কোনোটাই নয়
Ans: (B) কাতারা
- বায়ু দ্বারা সুক্ষ্ম পীত বালিকণা বহুদুর বাহিত হয়ে সঞ্চিত হলে তাকে বলে –
(A) সিফ
(B) বার্থান
(C) লোয়েস
(D) পেডিমেন্ট
Ans: (C) লোয়েস
- বায়ুর গতিপথে উল্লম্বভাবে অবস্থিত অর্ধচন্দ্রাকার বালিয়াড়িকে কী বলে ?
(A) বার্খান
(B) সিফ্
(C) অধিবৃত্তীয়
(D) পেডিমেন্ট
Ans: (A) বার্খান
- প্রায় সমতল মরু অঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে দাঁড়িয়ে থাকা কঠিন শিলা গঠিত টিলাকে বলে –
(A) ইনসেলবার্জ
(B) পেডিমেন্ট
(C) বাজাদা
(D) গৌর
Ans: (A) ইনসেলবার্জ
- ইয়ারদাং গড়ে ওঠে কোন্ জলবায়ু অঞ্চলে ?
(A) আর্দ্র
(B) শীতল
(C) উষ্ণ – আর্দ্র
(D) শুষ্ক
Ans: (D) শুষ্ক
- বায়ুর কাজ সবচেয়ে বেশি দেখা যায় –
(A) উষ্ণ মরুভূমিতে
(B) শীতল মরুভূমিতে
(C) উচ্চ পার্বত্য অঞ্চল
(D) নাতিউচ্চ মালভূমিতে
- কোন্টি উত্তর গোলার্ধের মরুভূমি ?
(A) আটাকামা
(B) কালাহারি
(C) সোনেরান
(D) প্যাটাগোনিয়া
Ans: (C) সোনেরান
- কোন্টি নাতিশীতোয় মরুভূমির অন্তর্গত ।
(A) সাহারা
(B) কালাহারি
(C) গোবি
(D) থর
Ans: (C) গোবি
- মরুভূমিতে বৃষ্টির পরিমাণ –
(A) < ২৫ সেমি
(B) ৫০-৭৫ সেমি
(C) ৭৫-১০০ সেমি
(D) > ১০০ সেমি
Ans: (A) < ২৫ সেমি
- প্যাটাগোনিয়া মরুভূমিটি কোন্ মহাদেশে রয়েছে ?
(A) এশিয়া
(B) আফ্রিকা
(C) অস্ট্রেলিয়া
(D) দক্ষিণ আমেরিকা
Ans: (D) দক্ষিণ আমেরিকা
- কোন্ প্রক্রিয়ায় মরুভূমির বালি উড়ে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয় ?
(A) অবঘর্ষ দিয়ে
(B) ঘর্ষণ ক্ষয়
(C) দ্রবণ
(D) অপবাহন
Ans: (D) অপবাহন
- কোন্ ভূমিরূপকে ‘ Mushroom rocks ‘ বলা হয় ?
(A) ইয়ারদাংকের
(B) গৌর
(C) জুগ্যান
(D) ইনসেলবার্জ
Ans: (B) গৌর
- ইনসেলবার্জ – এর নামকরণ করেন –
(A) L. C. King
(B) R. A. Bagnold
(C) W. M. Davis
(D) J. W. Powell
Ans: (A) L. C. King
- কোন্ মরুভূমির বালি উড়ে গিয়ে হোয়াংহো অববাহিকার লোয়েস ভূমি গঠিত হয়েছে ?
(A) তাকলামাকান
(B) থর
(C) সাহারা
(D) গোবি
Ans: (A) তাকলামাকান
- কোনটি দক্ষিণ গোলার্ধের মরুভূমি –
(A) আটাকামা
(B) সাহারা
(C) গোবি
(D) সোনেরান
Ans: (A) আটাকামা
- কোন্টি নাতিশীতোয় মরুভূমি –
(A) সাহারা
(B) কালাহারি
(C) তাকলামাকান
(D) অস্ট্রেলিয়
Ans: (C) তাকলামাকান
- শিলাময় মরুভূমি কী নামে পরিচিত—
(A) আগ
(B) রেগ
(C) গৌর
(D) হামাদা
Ans: (D) হামাদা
- Mushroom rock কোন্ ভূমিরূপকে বলা হয় –
(A) জুগ্যান
(B) ইনসেলবার্জ
(C) প্লায়া
(D) গৌর
Ans: (D) গৌর
- বালিয়াড়ি শব্দটির সঙ্গে কোন্ নামটি সম্পর্কিত ?
(A) ডেভিস
(B) বিউফোর্ট
(C) ব্যাগনল্ড
(D) গিলবার্ট
Ans: (C) ব্যাগনল্ড
- প্যানফ্যান কোন্ ভূমিরূপটিকে বলা হয় ?
(A) পেডিমেন্ট
(B) ইনসেলবার্জ
(C) বার্খান
(D) ইয়ার্দাং
Ans: (A) পেডিমেন্ট
- মরুভূমি অবনমিত অংশে সৃষ্ট হ্রদ হল—
(A) অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ
(B) প্যাটার্নওস্টার হ্রদ
(C) কেটেল হ্রদ
(D) প্লায়া হ্রদ
Ans: (D) প্লায়া হ্রদ
- বায়ুকার্যে কোন্ ভূমিরূপে দুটি শিং – এর মতো শিরা থাকে –
(A) ইনসেলবার্জ
(B) বার্খান
(C) পেডিমেন্ট
(D) ওয়াদি
Ans: (B) বার্খান
- কোন্ মহাদেশে ‘ গ্রেট গ্রিন ওয়াল ‘ নির্মাণ করা হয়েছে –
(A) এশিয়া
(B) উত্তর আমেরিকা
(C) আফ্রিকা
(D) অস্ট্রেলিয়া
Ans: (C) আফ্রিকা
- কোন্ ভূমিরূপটি বায়ু ও জলধারার মিলিত কার্যে গঠিত –
(A) গৌর
(B) ইয়ার্দাং
(C) ওয়াদি
(D) বার্খান
Ans: (C) ওয়াদি
- ভারতের মরুভূমি গবেষণাকেন্দ্র কোন শহরে রয়েছে –
(A) যোধপুর
(B) জয়সালমির
(C) দেরাদুন
(D) জয়পুর
Ans: (A) যোধপুর
- কালাহারি কোন্ মহাদেশের মরুভূমি ?
(A) উত্তর আমেরিকা
(B) আফ্রিকা
(C) দক্ষিণ আমেরিকা
(D) এশিয়া
Ans: (B) আফ্রিকা
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | বায়ু (বায়ুমণ্ডল – দ্বিতীয় অধ্যায়) মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Geography Bayu Question and Answer :
- কোন্ জলবায়ুতে বায়ুর কার্য বেশিমাত্রায় ক্রিয়াশীল ?
Ans: উষ্ণমরু জলবায়ুতে ।
- বায়ু কী কী প্রক্রিয়ায় ক্ষয়সাধন করে ?
Ans: অপবাহন , অবঘর্ষ ও ঘর্ষণ প্রক্রিয়ায় ।
- বায়ু কী কী প্রক্রিয়ায় বহনকার্য চালায় ?
Ans: লম্ফদান , ভাসমান ও গড়ানো প্রক্রিয়ায় ।
- বায়ু কী কী প্রক্রিয়ায় সঞ্চয়কার্য করে ?
Ans: অধঃক্ষেপণ , উপলেপন ও অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় ।
- ‘ সিফ্ ‘ শব্দের অর্থ কী ?
Ans: সোজা তরবারি ।
- কোন কোন অঞ্চলে বায়ুর কাজ দেখা যায় ?
Ans: শুষ্ক মরু অঞ্চল ও সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে ।
- ভেন্টিফ্যাক্ট শব্দের অর্থ কী ?
Ans: লাতিন Ventus শব্দের অর্থ বাতাস , Fact = সৃষ্ট অর্থাৎ Ventifact = বায়ুপ্রবাহের ফলে সৃষ্ট ।
- ড্রেইকান্টার শব্দের অর্থ কী ?
Ans: জার্মান শব্দ ‘ Dreikanter’- এর অর্থ Three sided অর্থাৎ ত্রিপার্শ্ব অর্থাৎ তিন দিক থেকে সৃষ্ট ।
- বায়ুর ক্ষয়জাত কোন্ ভূমিরূপ দেখতে ব্রাজিল নাটের মতো ?
Ans: ভেন্টিফ্যাক্ট ।
- পৃথিবীর বৃহত্তম বালুকাময় মরু অঞ্চলের উদাহরণ দাও ।
Ans: সৌদি আরবের রুব – আল – খালি ।
- রেগ কী ?
Ans: কোণাকার শিলাখণ্ডপূর্ণ মরুভূমি ।
- রেগ মরুভূমি কোন্ দেশে দেখা যায় ?
Ans: আলজিরিয়ায় ।
- ‘ Deflation ‘ শব্দের অর্থ কী ?
Ans: গ্রিক শব্দ Deflare = to blow away অর্থাৎ অন্যত্র বয়ে নিয়ে যাওয়া , বাংলায় অপবাহন ।
- ‘ বার্থান ‘ শব্দের অর্থ কী ?
Ans: তুর্কি শব্দ ‘ Barchan’- এর অর্থ কিরঘিজ , স্টেপ অঞ্চলের বালিয়াড়ি ।
- মরু অঞ্চলের শুষ্ক নদীখাতকে কী বলে ?
Ans: ওয়াদি ।
- মেক্সিকোর মরুভূমিতে প্লায়া হ্রদকে কী বলে ?
Ans: বোলসন ( Bolson ) ।
- অতিরিক্ত লবণাক্ত প্লায়াকে কী বলে ?
Ans: স্যালিনা ।
- কেরলের মালাবার উপকূলের বালিয়াড়িকে স্থানীয় ভাষায় কী বলে ?
Ans: টেরিস ।
- সিফ বালিয়াড়ি নামকরণ কে করেন ?
Ans: ব্যাগনল্ড ।
- ইনসেলবার্জ ক্ষয় পেয়ে বোল্ডাররূপী ভূমিরূপ গঠন করে , তাকে কী বলে ?
Ans: ক্যাসেল কপিজ ।
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর | বায়ু (বায়ুমণ্ডল – দ্বিতীয় অধ্যায়) মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Geography Bayu Question and Answer :
- পৃথিবীর কোন্ অঞ্চলে বায়ু ভূমিরূপ পরিবর্তনে অংশগ্রহণ করে ?
Ans: বায়ু ( i ) মরুভূমি ( ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় উভয় থরনের মরুভূমিতে ) , ( ii ) মরুভূমিসংলগ্ন মরুপ্রায় ও ( iii ) উপকূল অঞ্চলে তার কার্যের মাধ্যমে ভূমিরূপের পরিবর্তন ঘটায় ।
- মরুভূমি ( Desert ) কাকে বলে ?
Ans: ভূপৃষ্ঠের যেসব স্থানে দীর্ঘকাল থরে গড় বৃষ্টি ২৫ সেমির কম , গাছপালা প্রায় নেই এবং অঞ্চলটি মানুষ বসবাসের অনুপযোগী , সেই স্থানকে মরুভূমি বলে । যেমন — সাহারা , থর , গোবি ইত্যাদি হল পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য মরুভূমি ।
- উত্তর গোলার্ধের দুটি ক্রান্তীয় মরুভূমির নাম লেখো ।
Ans: উত্তর গোলার্ধের দুটি ক্রান্তীয় মরুভূমির নাম হল ( i ) আফ্রিকার সাহারা এবং ( ii ) উত্তর আমেরিকার সোনেরান মরুভূমি ।
- দক্ষিণ গোলার্ধের দুটি ক্রান্তীয় মরুভূমির নাম লেখো ।
Ans: দক্ষিণ গোলার্ধের দুটি ক্রান্তীয় মরুভূমির নাম হল— ( i ) চিলির আটাকামা মরুভূমি ও ( ii ) অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট অস্ট্রেলিয়া মরুভূমি ।
- দুটি নাতিশীতোয় মরুভূমির নাম লেখো ।
Ans: দুটি নাতিশীতোয় মরুভূমির নাম হল – ( i ) চিনের তাকলামাকান এবং ( ii ) মঙ্গোলিয়ার গোবি মরুভূমি ।
- মরূদ্যান ( Oasis ) কাকে বলে ?
Ans: মরুভূমির ভিতরের কোনো কোনো জায়গায় জলের উৎস ( আর্টেজীয় কুপ বা হ্রদ ) থাকলে সেখানে গাছপালা , কৃষিকাজ গড়ে ওঠে । এই জায়গাগুলিকেই বলে মরুদ্যান । মরুদ্যান , মরুভূমি অতিক্রমকারী মানুষের কাছে স্বর্গের সমান ।
- মরূদ্যানে জনবসতি গড়ে ওঠে কেন ?
Ans: মরূদ্যানে ভৌমজল পাওয়া যায় , ফলে সেখানে গাছপালা গড়ে ওঠে এবং কৃষিকাজ ও পশুপালনের পরিবেশ সৃষ্টি হয় । তাই মরুদ্যান জনবসতি গড়ে ওঠার সহায়ক ।
- হামাদা কাকে বলে ?
Ans: মরু অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহ দ্বারা বালুকারাশি অপসারিত হওয়ার ফলে , নিম্নস্থ শিলাময় স্তর বেরিয়ে পড়ে । আবরণহীন কেবলমাত্র শিলা দ্বারা গঠিত এই মরুভূমিকে হামাদা বলে ।
- আর্গ কী ?
Ans: বিশালাকার অঞ্চলজুড়ে কেবলমাত্র বালি দ্বারা গঠিত মরুভূমিকে সাহারা আর্গ বলে । তুর্কিস্তানে একেই কুম বলে । উদাহরণ — সৌদি আরবের বুব – আল – খালি হল পৃথিবীর বৃহত্তম আর্গ ।
- রেগ কাকে বলে ?
Ans: বিভিন্ন আকৃতির প্রস্তরখণ্ড দিয়ে ঢাকা মরুভূমিকে আলজিরিয়ার রেগ বলে । মিশর ও লিবিয়ায় এটিই সেরীর নামে পরিচিত ।
- বায়ুর মাধ্যমে অবঘর্ষ প্রক্রিয়া ভূপৃষ্ঠের সামান্য ওপরে কার্যকর কেন ?
Ans: ভূপৃষ্ঠসংলগ্ন অঞ্চল বায়ুর প্রকৃতি হওয়ায় এবং ভূমিতে ঝোপঝাড় থাকায় বায়ুর গতিবেগ কম হয় এবং বায়ুবাহিত পদার্থসমূহ বাধাপ্রাপ্ত হয় । আবার ঊর্ধ্ব অংশে বায়ুর গতিবেগ বেশি থাকলেও বায়ুবাহিত পদার্থের পরিমাণ কম থাকে । তাই অবঘর্ষ প্রক্রিয়া ভূপৃষ্ঠসংলগ্ন অঞ্চল বা ঊর্ধ্বে তত কার্যকর হয় না । ভূপৃষ্ঠ থেকে সামান্য ওপরে ( ২–১ মিটার ) এই প্রক্রিয়া সবচেয়ে বেশি কার্যকর হয়ে থাকে ।
- ব্লো আউট বা অপবাহনসৃষ্ট গর্ত কাকে বলে ? বা , অপসারণসৃষ্ট গর্ত কীভাবে সৃষ্টি হয় ?
Ans: প্রবল বায়ুপ্রবাহে বালিস্তর অপসারিত হয়ে কোনো কোনো স্থানে গর্ত বা অবনমিত অঞ্চল সৃষ্টি করে । একেই অপবাহনসৃষ্ট গর্ত বা ব্লো আউট বলে ।
- গৌর ( Gour ) কী ?
Ans: বায়ুর গতিপথে কঠিন ও কোমল শিলায় গড়া কোনো বৃহৎ শিলাখণ্ড অনুভূমিকভাবে অবস্থান করলে নীচের কোমল অংশ বিভিন্ন ঋতুতে বায়ুর ঘর্ষণের ফলে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে সরু স্তম্ভের মতো হয় এবং উপরের কম ক্ষয়প্রাপ্ত কঠিন অংশটি বিরাট আয়তন নিয়ে ব্যাঙের ছাতার মতো দাঁড়িয়ে থাকে । স্তম্ভাকৃতি এই কঠিন শিলাখণ্ডকে গৌর বলে ।
- জিউগেন ( Zeugen ) কাকে বলে ?
Ans: মরুভূমি বা মরুপ্রায় অঞ্চলে উপরের স্তরে কঠিন । শিলা ও নীচের স্তরে কোমল শিলা পর্যায়ক্রমে অনুভূমিকভাবে অবস্থান করলে অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় বায়ুর ক্ষয়কাজের ফলে কঠিন শিলাগঠিত অংশ অতি অল্প ক্ষয় পেয়ে চ্যাপটা ও প্রায় সমতল চূড়াবিশিষ্ট টিলার মতো দাঁড়িয়ে থাকে এবং কোমল শিলাস্তরগুলি বেশি ক্ষয় পেয়ে ফাটল বরাবর লম্বা খাত বা গহ্বরের সৃষ্টি হয় । এই রকম দুটি গহ্বর বা খাতের মধ্যে চ্যাপটা মাথা টিলার মতো যে ভূমিরূপ গঠিত হয় তাকে জিউগেন বলে ।
- ইয়ারদাং ( Yardang ) কী ?
Ans: মরুভূমি বা মরুপ্রায় অঞ্চলে কঠিন ও কোমল শিলাস্তরগুলি পাশাপাশি লম্বভাবে অবস্থান করলে দীর্ঘকাল থরে অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় বায়ুর ক্ষয়কাজের ফলে কোমল শিলাস্তরগুলি দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে গহ্বর বা সুড়ঙ্গের আকার ধারণ করে এবং কঠিন শিলাস্তরগুলি পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বিভিন্ন মূর্তি আকৃতির শৈলশিরার মতো দাঁড়িয়ে থাকে । এই থরনের ভূমিরূপ ইয়ারদাং নামে পরিচিত ।
- ভেন্টিফ্যাক্ট ( Ventifact ) কী ?
Ans: বায়ুর প্রবাহপথে কোনো বৃহৎ প্রস্তরখণ্ড অবস্থান করলে এর প্রতিবাত পার্শ্ব দীর্ঘকাল থরে অবঘর্ষ পদ্ধতিতে ক্ষয় হয়ে মসৃণ ও ছুঁচোলো হয় এবং শিলাস্তরটি ব্রাজিল দেশীয় বাদামের ন্যায় আকৃতি ধারণ করে । একে ভেন্টিফ্যাক্ট বলে ।
- ড্রেইকান্টার ( Dreikanter ) কাকে বলে ?
Ans: মরুভূমির কোনো প্রস্তরখণ্ড যদি বিভিন্ন ঋতুতে প্রবাহিত ভিন্নমুখী বায়ুপ্রবাহে অবঘর্ষ পদ্ধতিতে দীর্ঘকাল ক্ষয় হয়ে ত্রিকোণাকার বা ক্ষুদ্র পিরামিড আকৃতি ধারণ করে , তাকেই ড্রেইকান্টার বলে ।
- ধান্দ কী ?
Ans: ভারতের থর মরুভূমি অঞ্চলে অপসারণের ফলে ছোটো ছোটো গর্তের সৃষ্টি হয় । এই গর্তগুলিতে জল জমে সাময়িক হ্রদের সৃষ্টি হয় । এগুলি ‘ ধান্দ ‘ নামে পরিচিত ।
- ইনসেলবার্জ ( Inselberg ) কাকে বলে ?
Ans: মরুভূমি বা মরুপ্রায় শুষ্ক অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহ ও অস্থায়ী জলধারা বা ওয়াদির মিলিত ক্ষয়কাজের ফলে অনেক সময় এইসব অঞ্চলে স্থানে স্থানে কঠিন শিলায় গঠিত অনুচ্চ ক্ষয়ীভূত পাহাড় টিলার আকারে বিক্ষিপ্তভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় । এইসব অনুচ্চ টিলাকে ইনসেলবার্জ বলে ।
- মেসা ও বিউট ( Mesa and Butte ) কী ?
Ans: বায়ু ও জলধারার মিলিত কার্যে মরুভূমি অঞ্চলের উচ্চ মালভূমি ক্ষয় হয়ে বিচ্ছিন্নভাবে টেবিলের আকারে অবস্থান করলে তাকে মেসা বলে । মেসা ক্ষুদ্রাকৃতির হলে তা বিউট নামে পরিচিত ।
- পেডিমেন্ট ( Pediment ) কাকে বলে ?
Ans: মরুভূমিতে উচ্চভূমি থেকে পাদদেশের দিকে মৃদু ঢালু ( ঢাল ১.৫ ° – ৭ ° ) ভূমিকে বলা হয় পেডিমেন্ট ।
- বালিয়াড়ি ( Sand dunes ) কী ?
Ans: বায়ুপ্রবাহের দ্বারা বালুকারাশি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বাহিত হয়ে সঞ্চিত হওয়ার পর দীর্ঘ ও উচ্চ বালির স্তূপ গঠন করে । একেই বালিয়াড়ি বলা হয় ।
- কোথায় কোথায় বালিয়াড়ি দেখা যায় ?
Ans: বালিয়াড়ি সাধারণত মরুভূমি ( ক্রান্তীয় ও নাতিশীতোর ) মরুপ্রায় ও উপকূল অঞ্চলে গড়ে ওঠে ।
- বাৰ্খান ( Barchan ) কাকে বলে ?
Ans: বায়ুর প্রবাহপথের সঙ্গে আড়াআড়িভাবে গড়ে ওঠা অর্ধচন্দ্রাকার বালিয়াড়িকে বাৰ্খান বলে ।
- সিক্ বালিয়াড়ি ( Seif dune ) কী ?
Ans: বায়ুপ্রবাহের সমান্তরালে দীর্ঘ ও সংকীর্ণ শৈলশিরার মতো বালির পাহাড়গুলিকে সিক্ বালিয়াড়ি বলে । এই বালিয়াড়ি দেখতে খানিকটা তলোয়ারের মতো হয় ।
- টেরিস কী ?
Ans: কেরলের মালাবার উপকূলের গঠিত বালিয়াড়িকে স্থানীয় ভাষায় টেরিস বলে ।
- ধ্রিয়ান কাকে বলে ?
Ans: আসলে বায়ুপ্রবাহের গতি ; উত্তর : মরু অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহের গতি পরিবর্তনের ফলে বালি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরে যায় । এই থরনের বালিয়াড়িকে বলে অস্থায়ী বা চলমান বালিয়াড়ি । রাজস্থানের মরু অঞ্চলের এই থরনের বালিয়াড়িকে থ্রিয়ান বলে ।
- লোয়েস ( Loess ) কী ?
Ans: মরুভূমি ও মরুপ্রায় অঞ্চলে হলুদ ও ধূসর বর্ণের কোয়ার্টজ , ফেল্ডস্পার , ডলোমাইট ও অন্যান্য খনিজ সমৃদ্ধ শিথিল সূক্ষ্ম পলিকণার সঞ্চয়কে লোয়েস বলে ।
- প্লায়া ( Playa ) কাকে বলে ?
Ans: মরুভূমি অঞ্চলে উচ্চভূমি বেষ্টিত অবনমিত অঞ্চলে জল জমে যে সাময়িক হ্রদের সৃষ্টি হয় , তাকে প্লায়া বলে । এই প্লায়াই আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে বোলসন নামে পরিচিত ।
- ডেজার্ট পেভমেন্ট ( Desert pavement ) কাকে বলে ?
Ans: কেবলমাত্র নুড়ি ও পাথর দ্বারা গঠিত একটি এবড়োখেবড়ো অবশিষ্ট মরুভূমি অঞ্চলকে ডেজার্ট পেভমেন্ট বলে ।
- বাজাদা ( Bajada ) কী ?
Ans: প্লায়া ও পার্শ্ববর্তী অংশে স্বল্পমেয়াদি প্রবল বর্ষায় উৎপন্ন পলি জমে সৃষ্ট সমভূমি হল বাজাদা বা বাহাদা ।
- ওয়াদি ( Wadi ) কাকে বলে ?
Ans: মরুভূমিতে বৃষ্টির জলধারার ক্ষয়কাজের ফলে যে সমস্ত ছোটো ছোটো অনিত্যবহ ক্ষণস্থায়ী প্রকৃতির নদী বা শুষ্ক নদীখাতের সৃষ্টি হয় , তাদের ওয়াদি বলে ।
- মরু সম্প্রসারণ ( Expansion of Desert ) বলতে কী বোঝ ?
Ans: যে প্রক্রিয়ার দ্বারা উৎপাদনশীল ভূমি ক্রমশ সম্পূর্ণভাবে উৎপাদনে অক্ষম অনুর্বর মরুভূমিতে পরিণত হয় , তাকে মরুকরণ বা মরু অঞ্চলের সম্প্রসারণ বলে ।
- CAZRI- এর গুরুত্ব লেখো ।
Ans: CAZRI- এর পুরো নাম হল Central Arid Zone Research Institute । এটি হল ভারতের একটি সংস্থা , যার সদর দপ্তর যোধপুরে অবস্থিত । এই সংস্থা দেশের মরুকরণ বা মরুভূমির সম্প্রসারণ বোধ করার সম্পর্কে গবেষণা চালায় ও গাছ লাগিয়ে নানা প্রকল্প রূপায়ণ করে ।
- উপকূল ও নদীর মোহানায় বালির সঞ্চয় দেখা যায় কেন ?
Ans: উপকূল ও নদীর মোহানায় বালি তৈরি হয়েছে সিলিকেট সমৃদ্ধ শিলা যান্ত্রিক ও রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে । কোয়ার্টজ খনিজ রাসায়নিকভাবে পরিবর্তিত হয় না বলেই তা মোটা দানা বালিতে পরিণত হয় । কোনো কোনো উপকূলে চুনাপাথর ( সাদাবালি ) ও প্রবালের খোলক থেকেও বালির উৎপত্তি হয়েছে । এই কারণেই উপকূল ও নদীর মোহানায় বালির সঞ্চয় দেখা যায় ।
- উপকূলে কীভাবে বায়ু ভূমির পরিবর্তন ঘটায় ?
Ans: উপকূল অঞ্চলে সমুদ্রের দিক থেকে জোরে বাতাস বয় । এই বাতাস উপকূলের বালিকে উড়িয়ে নিয়ে অন্য স্থানে সঞ্চয় করে বালিয়াড়ি তৈরি করে । তাই উপকূলে বায়ু সঞ্চয়কার্যের মাধ্যমে ভূমি গড়ে ওঠে — ক্ষয়কার্যের ফলে অতটা নয় । এইভাবেই উপকূলে বায়ু ভূমির পরিবর্তন ঘটায় ।
ব্যাখাথর্মী প্রশ্নোত্তর | বায়ু (বায়ুমণ্ডল – দ্বিতীয় অধ্যায়) মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Geography Bayu Question and Answer :
- মরুভূমিতে বায়ু প্রধান শক্তিরূপে কাজ করে কেন ? অথবা , মরু অঞ্চলে বায়ুর কাজের প্রাধান্য দেখা যায় কেন ?
Ans: মরুভূমিতে বায়ু প্রধান শক্তিরূপে কাজ করে কেন : ( ১ ) যান্ত্রিক আবহবিকারের প্রাবল্য : যান্ত্রিক আবহবিকারে শিলা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে অবশেষে বালিকণায় পরিণত হয় । বালি বায়ু ক্ষয়কার্যের প্রধান উপাদান । ( ২ ) বৃষ্টির অভাব : বৃষ্টি এখানে হয় না । বালিস্তর সর্বদা আলগা ও শিথিল থাকে , যা বায়ু সহজেই উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারে । ( ৩ ) গাছপালার অভাব : বৃষ্টির অভাবে গাছপালা নেই বলেই বায়ু বাধাহীনভাবে প্রবাহিত হতে পারে ।
- মরুভূমিতে বালির উৎপত্তি কীভাবে ঘটেছে ?
Ans: বালি হল শিলাজাত অজৈব পদার্থ যার ব্যাস ০.০২-২.০ মিমি । মরুভূমি গঠনের প্রধান উপাদান হল বালি । এই বালি গঠনের প্রধান উপাদান হল কোয়ার্টজ খনিজ । এ ছাড়া বালির মধ্যে থাকে ফেল্ডস্পার , অভ্র , জিপসাম প্রভৃতি খনিজ । মরুভূমি অঞ্চলের সিলিকেট সমৃদ্ধ শিলা ( গ্রানাইট , ডায়োরাইট , গ্যাব্রো , বেলেপাথর ইত্যাদি ) যান্ত্রিক অববাহিকা – এর প্রভাবে প্রথমে চূর্ণবিচূর্ণ এবং পরে অবঘর্ষ ও ঘর্ষণক্ষয় প্রক্রিয়ায় ছোটো হতে হতে শেষে বালিকণায় পরিণত হয় । এইভাবেই মরুভূমিতে বালির উৎপত্তি হয় ।
- বায়ু কোন্ কোন্ পদ্ধতিতে ক্ষয়কাজ করে ?
Ans: বায়ু তিনটি পদ্ধতিতে ক্ষয়কাজ করে— ( 1 ) অবঘর্ষ : মরু অঞ্চলে বায়ুর সাথে বাহিত বালি , অতিক্ষুদ্র প্রস্তরখণ্ড শিলাস্তরের ওপরে আছড়ে পড়ে এবং শিলার ওপর আঁচড় কাটা দাগ , গভীর ক্ষত , মৌচাকের মতো দাগ , অসংখ্য গর্ত সৃষ্টি করে , একে বলে অবঘর্ষ । অবঘর্ষ প্রক্রিয়া ভূমির সামান্য উপরে শিলাস্তরের ওপর সর্বাধিক ক্রিয়াশীল । ( 2 ) ঘর্ষণ ক্ষয় : ভূপৃষ্ঠের উপর দিয়ে বায়ুর প্রভাবে বাহিত বিভিন্ন আকৃতির নুড়ি , প্রস্তরখণ্ড একে অপরের সাথে ঠোকাঠুকিতে ভেঙে অবশেষে বালিকণায় পরিণত হয় , এটি হল ঘর্ষণ ক্ষয় প্রক্রিয়া । ( 3 ) অপবাহন : জলের অভাবে মরুভূমির বালি , পলি আলগা শিথিল অবস্থায় থাকে । তাই প্রবল বায়ুপ্রবাহে এই বালি ও পলিকণা অপসারিত হয় । এটি হল অপবাহন প্রক্রিয়া বা deflation । এর প্রভাবে মরুভূমিতে অবনত স্থান , ছোটো – বড়ো গর্তের সৃষ্টি হয় ।
- বায়ুর ক্ষয়কাজ কোন কোন বিষয়ের ওপর নির্ভর করে ।
Ans: যে যে বিষয়গুলি বায়ুর ক্ষয়কার্যকে প্রভাবিত করে , সেগুলি হল –
( ক ) শুষ্ক জলবায়ু ( Dry climate )
( খ ) স্বল্প বৃষ্টিপাত ( Scanty rainfall )
( গ ) উদ্ভিদের আবরণের স্বল্পতা ( Low vegetation )
( ঘ ) আল্গা ভূপৃষ্ঠ ( Lonse earth cover )
( ঙ ) যান্ত্রিক আবহবিকারের প্রাবল্য ( Importance of mechanical weathering )
- উপকূলে বালিয়াড়ি কীভাবে গঠিত হয় ?
Ans: সমুদ্র উপকূলের ঠিক পিছনের দিকে , প্রধানত বায়ু ও সমুদ্রতরঙ্গের কার্যের ফলে বালিয়াড়ি গড়ে ওঠে । উন্মুক্ত উপকূলের বালি উড়ে গিয়ে বেশ কিছুটা দূরে স্তূপাকারে সঞ্চিত হয় । বেলাভূমিতে এই বালি সঞ্চিত হয়ে ঢিবির মতো দেখতে বালিয়াড়ি গঠিত হয় । পূর্ব মেদিনীপুরের কাথিতে এইরূপ বালিয়াড়ি দেখা যায় ।
- বায়ু কোন্ কোন্ প্রক্রিয়ায় বহনকাজ সম্পন্ন করে ?
Ans: বায়ু ক্ষয় করে যেসকল পদার্থ সৃষ্টি করে তা তিনটি পদ্ধতির মাধ্যমে বাহিত হয় – ( i ) ভাসমান প্রক্রিয়া : অপেক্ষাকৃত সূক্ষ্ম ধূলিকণা বায়ুপ্রবাহের ফলে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হয় । ( ii ) লম্ফদান : অপেক্ষাকৃত মাঝারি আকারের নুড়ি , শিলাখণ্ড ভূমির সাথে ধাক্কা খেয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে এগিয়ে চলে । ( iii ) গড়ানো প্রক্রিয়া : বড়ো আকারের নুড়ি ও প্রস্তরখণ্ড বায়ুপ্রবাহের ফলে ভূমির সাথে গড়িয়ে গড়িয়ে এগিয়ে যায় ।
- লোয়েস ভূমি কীভাবে গঠিত হয় , তা উদাহরণসহ লেখো ।
Ans: মরুভূমি ও মরুপ্রায় অঞ্চলে হলুদ ও ধূসর বর্ণের কোয়ার্টজ , ফেল্ডস্পার , ডলোমাইট ও অন্যান্য খনিজ সমৃদ্ধ শিথিল সুক্ষ্ম পলিকণার সঞ্চয়কে লোয়েস বলে । বায়ুপ্রবাহের মাধ্যমে এই সূক্ষ্ম পলিকণা বহুদুরে পরিবাহিত ও সঞ্চিত হয়ে যে ভূমি গঠন করে তাকে লোয়েস ভূমি বলে । মধ্য এশিয়ার গোবি মরুভূমি থেকে হাজার হাজার বছর থরে লোয়েস মৃত্তিকা বহন করে চিনের হোয়াংহো অববাহিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সমভূমি গঠন করেছে ।
- কী কী কারণে মরুভূমি সম্প্রসারণ ঘটে ?
Ans: মরুভূমি সম্প্রসারণের কারণগুলি হল—
( ১ ) বিশ্ব উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং মরু সম্প্রসারণের প্রধান কারণ ।
( ২ ) মরুপ্রান্ত ও মরুপ্রায় অঞ্চলে দীর্ঘদিন থরা হলে তা মরুগ্রাসে পড়ে ।
( ৩ ) মরুপ্রায় অঞ্চলে অত্যধিক পশুচারণে মাটি আলগা হয়ে অঞ্চলটি মরুগ্রাসের কবলে পড়ে । পশ্চিম সাহারায় এই কারণে মরুভূমি বেড়েছে ।
( ৪ ) গাছপালা কেটে ফেলা মরু সম্প্রসারণের অন্যতম কারণ । মিশরে ফ্যারাওদের অবিবেচনাপ্রসূতভাবে গাছ কাটার কারণে মরুভূমি প্রাচীনকাল থেকেই বেড়ে চলেছে ।
( ৫ ) মরুপ্রায় অঞ্চলে অবৈজ্ঞানিক প্রথায় চাষ , অধিক জলসেচে মাটির লবণতা বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে মরু সম্প্রসারণ ঘটছে । ভারতে থর মরুভূমি এই কারণেই একটু একটু করে বাড়ছে ।
- মরুভূমি সম্প্রসারণের কারণে কী কী সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে ? অথবা , মরুসম্প্রসারণের ফলাফলগুলি কী কী ?
Ans: মরুভূমি সম্প্রসারণের ফলে সৃষ্ট সমস্যাগুলি হল –
( ১ ) বিশাল কৃষিজমি ধ্বংস হয় , সিন্ধু সভ্যতাও মরুকরণের কারণেই ধ্বংস হয়েছিল বলে মনে করা হয় ।
( ২ ) জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয় এবং উদ্ভিদ ও প্রাণীর উৎপাদন Unge IMPLE BI ক্ষমতা কমে ।
( ৩ ) মাটির জৈব পদার্থের পরিমাণ কমে জমি উর্বরতা শক্তি হারায় ।
( ৪ ) ভৌমজলের ভাণ্ডার কমে ।
( ৫ ) মরুকরণ কবলিত এলাকা থেকে মানুষকে সরতে হয় ফলে সামাজিক সমস্যা বাড়ে এবং environmental refugee এর সৃষ্টি হয় ।
( ৬ ) মরুকরণ অঞ্চলগুলিতে অর্থনৈতিক চাপ বাড়ে ।
- মরুভূমি সম্প্রসারণ রোধ কী কী উপায়ে করা যায় ?
Ans: মরুভূমি সম্প্রসারণ রোধ করার উপায়গুলি হল—
( ১ ) মরুভূমিতে যে সামান্য বৃষ্টি হয় তা থরে রাখার জন্য গর্ত , চেক ড্যাম তৈরি দরকার ।
( ২ ) জমির লবণতা যাতে কমে তার জন্য বিভিন্ন ফসলের চাষ দরকার । শুঁটি জাতীয় উদ্ভিদ চাষে জমির উর্বরতা বাড়ে ।
( ৩ ) বালিয়াড়ি সম্প্রসারণ রোধের জন্য বেড়া দেওয়ার মতো করে গাছ লাগানো দরকার । ভারতের Central Arid Zone Research . Institute ( CAZRI – সদর দপ্তর যোধপুর ) এই ব্যাপারে বেশ সাফল্য পেয়েছে ।
( ৪ ) অগভীর বালিস্তরে মুনা জাতীয় ঘাস লাগালে তা দ্রুত বেড়ে অঞ্চলকে ঢেকে দেয় । ফলে বালি উড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে ।
( ৫ ) খরা প্রতিরোধকারী বিভিন্ন গাছ লাগিয়ে সবুজ অরণ্যে ভরিয়ে দেওয়া দরকার ।
( ৬ ) পশুচারণ নিয়ন্ত্রণ দরকার ।
পার্থক্য নিরূপণ করো | বায়ু (বায়ুমণ্ডল – দ্বিতীয় অধ্যায়) মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Geography Bayu Question and Answer :
- পেডিমেন্ট ও ইনসেলবার্জ এর মধ্যে পার্থক্য করো ।
বিষয় | পেডিমেন্ট | ইনসেলবার্জ |
সংজ্ঞা | পর্বত পাদদেশের ঢালু সমতল উচ্চভূমিকে বলে পেডিমেন্ট । | পেডিমেন্ট বা পদদেশীয় সমভূমির মাঝে অবস্থিত অনুচ্চ টিলাগুলিকে বলে ইনসেলবার্জ । |
ক্ষয়ের মাধ্যম | বায়ু ও সাময়িক জলধারার মিলিত কর্যের ফলে পেডিমেন্ট গঠিত হয় । | প্রধানত বায়ুর কার্যের ফলেই এই ভূমিরূপ গঠিত হয় । |
আকৃতি | এটি হল প্রস্তরময় এক সমতলভূমি । | এগুলি গোলাকৃতি শিখরদেশযুক্ত এবং খাড়া পার্শ্বদেশ বিশিষ্ট হয় । |
- মোনাডনক ও ইনসেলবার্জের মধ্যে পার্থক্য করো ।
বিষয় | মোনাডনক | ইনসেলবার্জের |
বিষয় | সমপ্রায়ভূমির মধ্যে কঠিন শিলা দ্বারা গঠিত অনুচ্চ টিলা বা পাহারগুলিকে মোনাডনক বলে । | পেডিপ্লেনের মধ্যে কঠিন শিলা দ্বারা গঠিত অনুচ্চ টিলাগুলিকে ইনসেলবার্জ বলে । |
উৎপত্তি | এটি নদী বা জলধারার কার্যে গঠিত ভূমিকার । | এটি বায়ু ও জলধারার কার্যে গঠিত হয় । |
আকৃতি | এটি প্রায় গোলাকার এবং আকৃতি কিছুটা ওল্টানো গামলার মতো । | এটি মোনাডনক অপেক্ষা তীক্ষ্ণ আকৃতি বিশিষ্ট । |
অঞ্চল | এটি আদ্র অঞ্চলে গঠিত ভূমিরূপ । | এটি শুষ্ক মরুভূমি ও মরুপ্রায় অঞ্চলে গঠিত ভূমিরূপ । |
বিষয় | বার্খান | সিফ্ বালিয়াড়ি |
সংজ্ঞা | বায়ুর গতিপথে উল্লম্বভাবে গঠিত অর্ধ চন্দ্রকার বালিয়াড়ি । | বায়ুর গতিপথে আড়াআড়িভাবে গঠিত দীর্ঘ তরবারির মতো বালিয়াড়ি । |
উচ্চতা | এর উচ্চতা ৩২ মিটার বা ১০০ ফুট । | এর উচ্চতা ১০০ মিটার । |
ঢাল | এর প্রতিবাদ অংশ মৃদু ঢাল এবং অনুবাত অংশ খাড়া । | এর ঢালের তেমন কোনো পার্থক্য নেই, উভয় দিকই প্রায় সমান ঢালবিশিষ্ট । |
অবস্থান | এগুলি ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে অবস্থান করে । | এগুলি একে অপরের সামন্তরালে অবস্থান করে । |
বৈশিষ্ট্য | এর দু – প্রান্তে দুটো শিং থাকে । | দুটি সিফের মাঝে করিডোর দেখা যায় । |
রচনাথর্মী প্রশ্নোত্তর | বায়ু (বায়ুমণ্ডল – দ্বিতীয় অধ্যায়) মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Geography Bayu Question and Answer :
1. মরুভূমি অঞ্চলে বায়ু কীভাবে কাজ করে ?
Ans: মরুভূমি অঞ্চলে বায়ু প্রধানত ক্ষয়সাধন , বহন ( 3 অবক্ষেপণ — এই তিন থরনের কাজের মাধ্যমে ভূত্বকের পরিবর্তন ঘটিয়ে নানারকম ভূমিরূপ গঠন করে ।
( ক ) মরুভূমি অঞ্চলে বায়ুর ক্ষয়কাজ : মরু অঞ্চলে বায়ুর প্রধান কাজ ক্ষয়সাধন করা । বায়ুতে ভাসমান বালির পরিমাণ এবং বায়ুর গতিপথের ওপর বায়ুর ক্ষয়সাধনের ক্ষমতা নির্ভর করে । ভূপৃষ্ঠের সঙ্গে ঘর্ষণের ফলে বায়ুর শক্তি কিছুটা কমে যাওয়ায় ভূপৃষ্ঠের একেবারে কাছাকাছি বায়ুর গতিবেগ অনেকটা কম হয় । আবার ভূপৃষ্ঠ থেকে যতই উপরে ওঠা যায় — বায়ুর সঙ্গে উদ্বৃত্ত বালির পরিমাণ ততই কমে যেতে থাকে , ফলে ভূমির বেশি উপরেও বায়ুর ক্ষয়কাজের শক্তি হ্রাস পায় । সাধারণত মাটি থেকে ১ মিটার পর্যন্ত উচ্চতায় বায়ুর ক্ষয়কাজ সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে । বায়ুর ক্ষয়কাজের প্রকারভেদ : বায়ু প্রধানত তিনভাবে ক্ষয়কাজ করে , যথা— ( 1 ) অবঘর্ষ , ( 2 ) অপসারণ এবং ( 3 ) ঘর্ষণ ।
(1) অবঘর্ষ ( Abrasion ) । বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে ভাসমান বালি , ছোটো ছোটো পাথরখণ্ড , শক্ত কোয়ার্টজ কশা প্রভৃতির সঙ্গে ঘর্ষণে শিলাস্তর ক্ষয় পায় , একে অবঘর্ষ বলে । এই রকমের ঘর্ষণে শিলাস্তরে গভীর দাগ বা আঁচড়ানোর দাগ বা মৌচাকের মতো অসংখ্য ছোটো ছোটো ছিদ্রের সৃষ্টি হয় । অপবাহন না অপসারণ ( Deflation ) প্রবল বায়ুপ্রবাহের ফলে মরুভূমির শিথিল বালুকারাশি এক স্থান থেকে অপর স্থানে স্থানান্তরিত হলে তাকে অপসারণ বলা হয় । অপসারণের কাজের ফলে ধান্দ ও মরুদ্যানের সৃষ্টি হয় ।
(2) ঘর্ষণ ( Attrition ) : মরুভূমিতে প্রবলবেগে বায়ুপ্রবাহের ফলে বড়ো বড়ো পাথরগুলি পরস্পরের সঙ্গে ঠোকাঠুকি লেগে ঘষা খেয়ে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গিয়ে অবশেষে ছোটো ছোটো গোলাকৃতি বালুকণায় । পরিণত হলে তাকে ঘর্ষণ প্রক্রিয়া বলে । এই প্রক্রিয়া মরুভূমি অঞ্চলে বড়ো বড়ো পাথরের খণ্ডকে ক্ষয়প্রাপ্ত করে বালিতে পরিণত করতে সাহায্য করে । অর্থাৎ পাথরখণ্ড থেকে বায়ুর ক্ষয়কাজের শেষ পর্যায় হল বালি ।
( খ ) মরুভূমি অঞ্চলে বায়ুর বহন কাজ ক্ষয়কাজের ওপর বায়ুর দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ হল বহন প্রক্রিয়া । এই প্রক্রিয়ায় বায়ু ক্ষয়িত শিলাচূর্ণ এবং বালিকে প্রধানত তিনভাবে বহন করে , যথা 1. ভাসমান প্রক্রিয়া , 2. লঘদান প্রক্রিয়া এবং 3. গড়ানো প্রক্রিয়া ।
- ভাসমান প্রক্রিয়া : ( Suspension ) ধূলিকণা প্রভৃতি অতি সূক্ষ্ম কণা বায়ুতে ভাসমান অবস্থায় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বাহিত হয় ।
- লম্ফদান প্রক্রিয়া ( Saltation ) বায়ুকণা ভারী হওয়ায় বেশিক্ষণ বাতাসে ভেসে থাকতে পারে না । এগুলি উপর থেকে পড়ামাত্র অন্য বালুকণার সঙ্গে সংঘর্ষে প্রতিক্ষিপ্ত ( Rebound ) হয়ে আবার উপরে উঠে যায় । এইভাবে বারবার উত্থিত ও প্রতিক্ষিপ্ত হতে হতে এগুলি এক স্থান থেকে বহুদুরে বাহিত হয় ।
- গড়ালো প্রক্রিয়া ( Surface creep ) বড়ো বড়ো বালুকণা ও প্রস্তরখণ্ড ভারী হওয়ায় বাতাসে ভেসে থাকতে পারে না , মাঝে মাঝে এগুলি বায়ুতাড়িত হয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে এক স্থান থেকে অন্যত্র বাহিত হয় ।
বায়ুবাহিত বালিকণার লম্ফদান প্রক্রিয়ায় সর্বাপেক্ষা বেশি পরিমাণে বালি মরুভূমিতে এক স্থান থেকে অন্যত্র বাহিত হয় । সাহারা মরুভূমিতে এক – একটি ধূলিঝড় ( Dust – storm ) একেবারে প্রায় ২০ লক্ষ টন ধূলিকণা এক স্থান থেকে অন্যত্র বহন করতে পারে ।
( গ ) মরুভূমি অঞ্চলে বায়ুর সঞ্জয়কাজ : মরু অঞ্চলে কোনো বড়ো শিলাখণ্ডে বা ক্যাকটাস জাতীয় গাছে বায়ুবাহিত বালি বাধা পেয়ে সঞ্চিত হয় । একে বায়ুর সঞ্চয়কাজ বলে । সঞ্চয়কাজ তিনটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পাদিত হয় , যথা— 1. থিতানো প্রক্রিয়া , 2. উপলেপন প্রক্রিয়া এবং 3. অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া ।
- থিভালো ক্রিয়া ( Sedimentation ) : বায়ুবাহিত বালি দীর্ঘদিন থরে ধীরে ধীরে সঞ্চিত হলে তাকে থিতানো প্রক্রিয়া বলে ।
- উপালপন প্রক্রিয়া ( Accretion ) : বালিকণা গড়াতে গড়াতে বা লাফাতে লাফাতে দূরে গিয়ে সঞ্চিত হলে তাকে উপলেপন প্রক্রিয়া বলে ।
- অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া ( Enchor achment ) : সমতল ভূপৃষ্ঠে বালি আটকে গিয়ে সজ্জিত হলে তাকে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া বলে ।
3. বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপের বিবরণ দাও ।
Ans: শুদ্ধ গাছপালাহীন মরু বা মরুপ্রায় প্রান্তের ও উপকূলের বালিয়াড়ি অঞ্চলের সর্বাধিক ক্ষয়কারী প্রাকৃতিক শক্তি বায়ুপ্রবাহ বায়ুর ক্ষয়জাত ভূমিরূপগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল –
( ক ) সার সৃষ্ট গর্ভ ( Defiation hollow ) : মরু অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহের তীর আঘাতে স্থানে স্থানে হাজার হাজার টন বালি অপসারণ প্রক্রিয়ার ফলে স্থানান্তরে পরিবাহিত হয় । ফলে বিশাল অঞ্চলজুড়ে ছোটো – বড়ো গর্ভ সৃষ্টি হয় । একে বলে অপসারণ সৃষ্ট গর্ত ।
- বৈশিষ্ট্য অনেকদিন থরে অপসারণ কার্য চলায় ভূমিভাগে গভীর গর্ত সৃষ্টি হয় । ফলে কখনো কখনো ভূমিভাগের ভৌমজলস্তর উন্মুক্ত হয়ে জলাশয় গড়ে উঠতে পারে । ওই মরূদ্যানের সিপ্ত অঞ্চলে গাছপালা জন্মায় ।
- উদাহরণ মিশরে কাতার ( প্রায় ৪৪০ ফুট গভীর ) পৃথিবীর বৃহত্তম অপসারণ সৃষ্ট গর্ত ।
( খ ) গৌর ( Gour ) : গৌর হল বায়ুর ক্ষয়কাজের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপের এক অন্যতম নিদর্শন । বায়ুর গতিপথে কঠিন ও কোমল শিলায় গড়া কোনো বৃহৎ শিলাখণ্ড অনুভূমিকভাবে অবস্থান করলে নীচের কোমল অংশে বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন দিক থেকে প্রবাহিত বায়ুর অবঘর্ষজনিত ক্ষয়কাজের তীব্রতা বেশি হওয়ার জন্য শিলাস্তূপটির নীচের অংশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে সরু স্তম্ভের মতো হয় এবং উপরের কম ক্ষয়প্রাপ্ত কঠিন অংশটি বিরাট আয়তন নিয়ে ব্যাঙের ছাতা বা স্তম্ভের মতো দাঁড়িয়ে থাকে । স্তম্ভাকৃতি এইরকম শিলাখণ্ডকে গৌর বলে ।
উদাহরণ : আফ্রিকার সাহারা মরুভূমি এবং এশিয়ার ইরান মরুভূমিতে অনেক গৌর আকৃতির ভূমিরূপ দেখা যায় । বৈশিষ্ট্য : ( i ) জার্মান ভাষায় গৌরকে ফিটজফেলসেন ( pitzfelsen ) বলে । ( ii ) অনেক সময় গৌরের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে এক থরনের রঙের প্রলেপ সৃষ্টি হয় । এই থরনের গৌরকে ডেজার্টভার্নিস বলে ।
উদাহরণ আফ্রিকার সাহারা ও এশিয়ার ইরানের মরুভূমিতে দেখা যায় । ( গ ) ইয়ারদাং ( Yardang ) : মরুভূমি অঞ্চলে কঠিন ও কোমল শিলাস্তর পাশাপাশি লম্বভাবে অবস্থান করলে দীর্ঘকাল থরে অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় বায়ু কোমল শিলা দ্রুত ক্ষয় করে গহ্বর বা সুড়ঙ্গের মতো ভূমিরূপ গঠন করে । কঠিন শিলাস্তরগুলি পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বিভিন্ন মূর্তি গঠন করে । এই বিশেষ ভূমিরূপকে বলে ইয়ারদাং ।
বৈশিষ্ট্য : ( ক ) ইয়ারদাং দেখতে অনেকটা পাঁজরের মতো । ( খ ) এর গড় উচ্চতা প্রায় ৭ মিটার । ( গ ) কোমল শিলায় গঠিত গর্তের দু – পাশ নালিকার মতো হয় ।
উদাহরণ : দক্ষিণ আমেরিকার চিলির আটাকামা মরুভূমি , মধ্যএশিয়ার তুর্কিস্তান মরুভূমিতে ইয়ারদাং দেখা যায় ।
( ঘ ) জিউগেন ( Zeugen ) : মরুভূমি অঞ্চলে উপরের স্তরে কঠিন শিলা ও নীচে কোমল শিলাগঠিত অংশে পর্যায়ক্রমে –অনুভূমিকভাবে থাকা পাঠন ও কোমল অনুভূমিকভাবে অবস্থান করলে অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় বায়ুর ক্ষয়কাজে কঠিন শিলাগঠিত অংশে অতি অল্প ক্ষয় পেয়ে চ্যাপটা প্রায় সমতল চুড়াবিশিষ্ট টিলার মতো দাঁড়িয়ে থাকে এবং কোমল শিলাস্তর বেশি ক্ষয় পেয়ে ফাটল বরাবর লম্বা খাত বা গহ্বর সৃষ্টি হয় । এই বিশেষ ভূমিরূপের নাম জিউগেন ।
বৈশিষ্ট্য : জিউগেনের গড় উচ্চতা ৩ – ৩০ মিটার পর্যন্ত হয় । জিউগেন দেখতে সারিবদ্ধ চ্যাপটা মাথাযুক্ত ভূমিরূপ ।
উদাহরণ : উত্তর আমেরিকার সোনেরান মরুভূমিতে দেখা যায় ।
( ঙ ) ইনসেলবার্জ ( Inselberg ) : জার্মান শব্দ ইনসেলবার্জ – এর অর্থ দ্বীপময় পাহাড় । প্রায় সমতল মরুভূমির মাঝে বিক্ষিপ্তভাবে জেগে থাকা সমান উচ্চতাবিশিষ্ট কঠিন শিলা গঠিত অবশিষ্ট মসৃণ টিলাকে বলে ইনসেলবার্জ । • নামকরণ : ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে ভূবিজ্ঞানী পাসার্জ ( S. Passarge ) সমগ্ৰায়ভূমির অবশিষ্ট টিলাকে ইনসেলবার্জ নামকরণ করেন । ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে ভূবিজ্ঞানী বর্নহার্ডট ( W.A. Bornhardt ) পূর্ব আফ্রিকার অবশিষ্ট পাহাড়কে প্রথম নামকরণ করেন ।
বৈশিষ্ট্য : ( i ) দীর্ঘদিন থরে ক্ষয়ে যাওয়ার ফলে মসৃণ , গোলাকার হয় ; ( ii ) ইনসেলবার্জ গ্রানাইট , নিস্ জাতীয় আগ্নেয় ও রূপান্তরিত শিলা দ্বারা গঠিত ; ( iii ) এদের উচ্চতা ৩০–৩০০ মিটার ; ভূমির ঢাল তীক্ষ্ণ , ( iv ) ক্ষয়ে গেলে বোর্নহার্ড , ক্যাসেলকপিজ ও টরস্ ( Tors ) গঠিত হয় ।
জেনে রাখো : দীর্ঘদিন থরে ক্ষয়কার্য চলার ফলে ইনসেলবার্জগুলি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যে ছোটো ছোটো টিলায় পরিণত হয় , তাকে বলে টরস্ ( Tors ) । আবার প্রচুর পরিমাণে শিলাখণ্ড কোনো স্থানে একসাথে যে ভূমিরূপ গড়ে ওঠে , তাকে বলে কোপিস | ( Koppise ) । ভারতের দাক্ষিণাত্য মালভূমির বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে এইসব দেখতে পাওয়া যায় ।
3. বায়ুর সঞ্জয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপের বিবরণ দাও ।
Ans: কোনো বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বায়ুবাহিত বালি বাধা পেয়ে জমা হয় । বায়ুর সঞ্চয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল –
( ক ) বালিয়াড়ি ( Dune ) : কোনো বিস্তীর্ণ স্থানজুড়ে থাকা উঁচু ও দীর্ঘ বালির স্তূপকে বলে বালিয়াড়ি । মরুভূমি ও সমুদ্রোপকূলে বালিয়াড়ি দেখা যায় । TOMARTISORY বিজ্ঞানী ব্যাগনল্ডের মতে আকৃতি অনুসারে বালিয়াড়ি দু – রকম— ( ১ ) তির্যক বালিয়াড়ি ( ২ ) অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি ।
( ১ ) তির্যক বালিয়াড়ি ( Transverse dune ) : মরুভূমি অঞ্চলে যেখানে সারাবছর থরে একই দিকে বায়ু প্রবাহিত হতে থাকে সেখানে বায়ুর গতির সঙ্গে তির্যক বা আড়াআড়ি ভাবে যেসব বালিয়াড়ি গড়ে ওঠে তাকে বলে তির্যক বালিয়াড়ি । তির্যক বালিয়াড়িগুলির মধ্যে বার্খান পাঠ্যক্রমের অন্তর্গত ।
( ২ ) বাৰ্খান বালিয়াড়ি ( Barkhan ) : বাৰ্খান একটি তুর্কি শব্দ ; এর অর্থ হল কিরঘিজ , স্টেপ অঞ্চলের বালিয়াড়ি । যে সমস্ত বালিয়াড়ির গঠন অর্ধচন্দ্রাকার বা আধখানা চাঁদের মতো দেখতে হয় তাদের বাৰ্খান বলে ।
বৈশিষ্ট্য : ( ক ) বার্খানের দুটি প্রান্তে দুটি শিরার মতো শিং ( Horn ) দেখা যায় । ( খ ) এরা বায়ুর গতির দিকে ক্রমশ ঢালু এবং বিপরীত দিকে খাড়া হয়ে থাকে । ( গ ) বার্থানের উচ্চতা ১৫–৩৫ মিটার , প্রস্থ ৪০–৭০ মিটার , আয়তন ৫ বর্গকিমি থেকে ২০০ বর্গমিটার পর্যন্ত হয় ।
উদাহরণ : সাহারা মরুভূমিতে অনেক বৃহদায়তন বাৰ্খান দেখা যায় ।
( ২ ) অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি বা সিক্ বালিয়াড়ি ( Scif dune ) স্থায়ী বালিয়াড়ির মধ্যভাগ বায়ুতাড়িত হয়ে ভেঙে গিয়ে বায়ুর গতিপ্রবাহের সঙ্গে সমান্তরালে অনুদীর্ঘ বালিয়াড়ি গঠন করে । বায়ুর গতির সঙ্গে সমান্তরালভাবে গড়ে ওঠা বালিয়াড়িকে অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি বলা হয় । অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ির একটি বিশেষ রূপ হল সিফ দয়াড়ি ।
সিদ্ধ বালিয়াতি : সিফ্ট একটি আরবি শব্দ , যার অর্থ সোজা তলোয়ার । অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ির মধ্যে যেসব বালিয়াড়ি আকারে বেশ সরু কিন্তু খুব লম্বা তাদের বলে সিফ্ বালিয়াড়ি ।
বৈশিষ্ট্য : ( ক ) এই বালিয়াড়ির অনুবাত প্রান্তটি তলোয়ারের মতো সরু এবং প্রতিবাত প্রান্তটি চওড়া ও গোল হয় ।
( খ ) দুটো সিফ্ বালিয়াড়ির মধ্যবর্তী অঞ্চলকে করিডোর বলে ; এর মধ্য দিয়ে বায়ু প্রবলবেগে সোজা প্রবাহিত হয় ।
( গ ) সি বালিয়াড়ি দৈর্ঘ্যে খুব বড়ো হয় ; প্রস্থে ছোটো হয় ।
( ঘ ) সি বালিয়াড়ির উচ্চতা ১০০ মিটার হয় ।
( ঙ ) পরস্পর সমান্তরালে একাধিক সিফ্ বালিয়াড়ি গঠিত হয় । উদাহরণ : দক্ষিণ ইরানের মরুভূমিতে সিফ্ বালিয়াড়ি দেখা যায় ।
[ খ ] লোয়েস ( Loess ) বায়ুর পরিবহণ ও অবক্ষেপণের মাধ্যমে গঠিত সমভূমি হল লোয়েস । লোয়েস শব্দের অর্থ ‘ স্থানচ্যূত বস্তু ’ । মরুভূমির হলুদ ও ধূসের বর্ণের কোয়ার্টজ , ফেল্ডস্পার , ডলোমাইট ও অন্যান্য খনিজ সমৃন্য ০.০৫ মিমি ব্যাসযুক্ত সূক্ষ্ম বালিকণা , মাটিকণা বায়ুর সঙ্গে দূরে উড়ে গিয়ে দূরবর্তী নীচু ভূমি ভরাট করে লোয়েস গঠন করে । বৈশিষ্ট্য কখনো কখনো মরুভূমির বালি বায়ু দ্বারা অপসারিত হয়ে পার্শ্ববর্তী কোনো উর্বর কৃষি ভূমিকে ক্রমশ ঢেকে ফেলে জমির উর্বরতা নষ্ট করে দেয় । ধীরে ধীরে কৃষি ভূমিটিকে মরুভূমি গ্রাস করে ফেলে ।
উদাহরণ মধ্য এশিয়ার গোবি মরুভূমি থেকে শীতকালীন উত্তর – পূর্ব মৌসুমি বায়ু বাহিত হয়ে বিপুল পরিমাণে বালি ও মাটি কণা উত্তর চিনের হোয়াংহো নদী অববাহিকায় দীর্ঘদিন থরে সঞ্ছিত হয়ে সেখানে লোয়েস সমভূমি সৃষ্টি করেছে ।
4. আকৃতি অনুসারে বালিয়াড়ির শ্রেণিবিভাগ করো ।
Ans: বিজ্ঞানী ব্যাগনন্ডের মতে , আকৃতি অনুসারে বালিয়াড়ি প্রধানত দু – রকমের হয় , যেমন- তির্যক বালিয়াড়ি এবং ও অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি ।
(1) তির্যক বালিয়াড়ি ( Transverse Dunes ) : মরুভূমি অঞ্চলে যেখানে সারাবছর থরে একই দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হতে থাকে । সেখানে বায়ুর গতির সঙ্গে তির্যক বা আড়াআড়ি ভাবে যেসব বালিয়াড়ি গঠিত হয় তাদের তির্যক য়াড়ি বলা হয় । তির্যক বালিয়াড়ির মধ্যে বাৰ্খান উল্লেখযোগ্য ।
‘ বাৰ্খান ’ একটি তুর্কি শব্দ , এর অর্থ হল ‘ কিরঘিজ স্টেপস অঞ্চলের বালিয়াড়ি ‘ । তির্যক বালিয়াড়ির মধ্যে যে সমস্ত বালিয়াড়ির গঠন অর্ধচন্দ্রাকৃতি , অর্থাৎ যেসব বালিয়াড়িকে আধখানা চাঁদের মতো দেখতে হয় তাদের বার্খান বলে ।
বৈশিষ্ট্য : ( i ) বার্খানের দুই প্রান্তে দুটি শিং ( Horn ) – এর মতো শিরা দেখা যায় । ( ii ) এরা বায়ুর গতির দিকে ক্রমশ ঢালু এবং বিপরীত দিকে খাড়া হয়ে থাকে । ( iii ) সাধারণত মরুভূমিতে সমতল অংশে বার্থান গড়ে ওঠে । পৃথিবীর বিভিন্ন মরুভূমিতে ছোটো – বড়ো নানান আকৃতির বাখনি দেখা যায় । ( iv ) সাধারণত বার্খানের উচ্চতা ১৫-৩৫ মিটার , প্রস্থ ৪০-৭০ মিটার এবং আয়তন ৫ বর্গমিটার থেকে ২০০ বর্গমিটার পর্যন্ত হয় । সাহারা মরুভূমি অঞ্চলে অনেক বৃহদায়তন বার্খান দেখা যায় ।
(2) অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি : বায়ুর গতির সঙ্গে সমান্তরালভাবে গড়ে ওঠা বালিয়াড়িকে অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি বলা হয় । একেই সিফ বালিয়াড়ি বলা হয় । সিফ একটি আরবি শব্দ , যার অর্থ হল ‘ সোজা তলোয়ার । অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ির মধ্যে যেসব বালিয়াড়ি আকারে বেশ সরু, কিন্তু খুব লম্বা তাদের সিফ্ বালিয়াড়ি বলা হয় । এই বালিয়াড়ির অনুবাত প্রাপ্তটি তলোয়ারের মতো সরু এবং প্রতিবাত প্রান্তটিচওড়া ও গোল হয় । দুটি সি বালিয়াড়ির মধ্যবর্তী অঞ্চলকে ‘ করিডোর ’ বলে , এর মধ্য দিয়ে বায়ু প্রবল বেগে সোজা প্রবাহিত হয় । অনুদৈর্ঘ্য তথা সিহ বালিয়াড়ির কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হল :
- i) বার্থানের মধ্যভাগ বায়ুপ্রবাহের ফলে ভেঙে গিয়ে সিঙ্গ বালিয়াড়ি গঠন করে । Ii) সিফ্ট বালিয়াড়িগুলির দৈর্ঘ্য খুব বেশি কিন্তু প্রস্থ খুব কম । iii) সিক্ বালিয়াড়িগুলি কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে । iv) সময় সময় সিক্ বালিয়াড়িগুলির উচ্চতা ১০০ মিটারেরও অনেক বেশি হতে পারে । দক্ষিণ ইরানের মরুভূমিতে অবস্থিত । সিফ্ বালিয়াড়িগুলির উচ্চতা অনেক সময় ২০০ মিটার পর্যন্ত হয় । v) পরস্পর সমান্তরালভাবে একাধিক সিফ বালিয়াড়ি গড়ে ওঠে ।
5. বায়ু ও জলধারার মিলিত কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ গড়ে ওঠার কার্যকারণ সম্পর্কে আলোচনা করো ।
Ans: মর্ মরুপ্রায় অঞ্চলে হঠাৎ অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে সাময়িক সময়ের জন্য অস্থায়ী নালা সৃষ্টি হয়ে যায় । বায়ু ও জলধারার মিলিত কার্যে ভূমিরূপে নানা পরিবর্তন হয় । ( ক ) পেডিমেন্ট ( Pediment ) : পেডিমেন্ট শব্দের অর্থ ‘ পাহাড়ের দেশ ‘ ( Pedi = পাদদেশ ; Mont = পর্বত ) ।
উৎপত্তি : বায়ু ও জলধারার মিলিত কার্যের ফলে মরুভূমির পর্বতের পাদদেশে এই পেডিমেন্টের উৎপত্তি হয় । মরুমধ্যস্থিত পর্বত পাদদেশে বায়ুবাহিত ও জলধারার মিলিত ক্ষয় ও সঞ্চয় ক্রিয়ায় গড়ে ওঠা ঊর্ধ্বাংশ ঢালু ও নিম্নাংশ প্রায় সমতল আকৃতির বিশিষ্ট ভূমিরূপকে পেডিমেন্ট বলে ।
বৈশিষ্ট্য : পেডিমেন্ট শব্দটি ব্যবহার করেন জে . কে . গিলবার্ট । এর ঢাল ৬০-৭ ° মতো হয় । এর আকৃতি অবতল প্রকৃতির । পাদদেশে নুড়ি বালি জমে সাময়িক জলধারার সৃষ্টি হয় । শ্রেণিবিভাগ : পেডিমেন্ট তিন থরনের— ( i ) আবৃত পেডিমেন্ট পাতলা নুড়ির আবরণে ঢাকা পেডিমেন্ট । ( ii ) সম্মিলিত বা একত্রীভূত পেডিমেন্ট : একাধিক পেডিমেন্ট পরস্পর মিশে সৃষ্ট পেডিমেন্ট । ( iii ) ব্যবচ্ছিন্ন পেডিমেন্ট : ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলস্রোত দ্বারা বিচ্ছিন্ন পেডিমেন্ট । উদাহরণ : আফ্রিকার সাহারা মরুভূমির উত্তর – পশ্চিম প্রান্তে আটলাস পর্বতের পাদদেশে পেডিমেন্ট দেখা যায় । ( খ ) বাজাদা ( Bajada ) : মরুভূমি ও মরুপ্রায় অঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি প্রবল বর্ষণের প্রভাবে সৃষ্ট হওয়া অস্থায়ী জলধারা ও বায়ুপ্রবাহের মিলিত সঞ্চয়কাজের ফলে যে প্রায় সমতল ভূমির সৃষ্টি করে তাকে বলে বাজাদা । উৎপত্তি : কখনো কখনো মরু ও মরুপ্রায় অঞ্চলের পর্বতের পাদদেশে অস্থায়ী জলধারা বা ওয়াদি গঠিত একাধিক পলল ব্যঞ্ছনী একসঙ্গে অবস্থান করলে বাজাদা গড়ে ওঠে ।
বৈশিষ্ট্য : ( i ) সুক্ষ্ম পলি ও বালি দ্বারা গঠিত এই বাজাদা কয়েক কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত হয় । ( ii ) এর গড় ঢাল হয় ৩ ° —৪ °
উদাহরণ : সাহারা মরুভূমির আটলাস পর্বতের পাদদেশবর্তী অঞ্চলে বাজাদা ভূমিরূপ দেখা যায় । এ ছাড়া কালাহারি , আরব ও অস্ট্রেলীয় মরুভূমিতেও বাজাদা দেখা যায় । ( গ ) ওয়াদি ( Wadi ) : আরবি শব্দ ‘ ওয়াদি ’ – এর অর্থ ‘ শুষ্ক উপত্যকা ’ । মরু অঞ্চলে সৃষ্ট শুষ্ক নদীখাতগুলিকে ওয়াদি বলে । ↑ উৎপত্তি : মরু অঞ্চলে হঠাৎ প্রবল বৃষ্টি হলে , বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বেগবতী ক্ষণস্থায়ী জলধারা ঢালু পর্বতগাত্রে নদীখাতের সৃষ্টি করে । শুষ্ক অঞ্চলে জলের অধিগ্রহণ ( Infiltration ) এবং অধিক পরিমাণে বাষ্পীভবন ( Evaporation ) ফলে নদীখাত দ্রুত শুকিয়ে যায় এবং ওয়াদি সৃষ্টি হয় । মরুভূমি অঞ্চলে যেখানে ২৫-৫০ সেমি বাৎসরিক বৃষ্টি ঘটে , তখন সেখানে ওয়াদি গড়ে ওঠে ।
বৈশিষ্ট্য : ( i ) এটি স্বল্প দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট নদীখাত । ( ii ) বছরের অধিকাংশ সময়ই নদীখাত শুষ্ক থাকে । • উদাহরণ : আরব মরুভূমিতে বহু ওয়াদি দেখা যায় । ( ঘ ) প্লয়া ( Playa ) : মরু অঞ্চলে অপসারণ সৃষ্ট গর্ভে লবণাক্ত জল জমে যে হ্রদ সৃষ্টি হয় তাকে বলে পায়া । লবণাক্ত জল জমা হয় বলে ওই হ্রদকে বলে প্রায়া ; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমে W মেক্সিকোর মরু অঞ্চলে পর্বতবেষ্টিত লবণাক্ত হ্রদকে বলে বোলসন । আফ্রিকায় প্রায়াকে শট্স ( Shotts ) বলে ।
উৎপত্তি : প্রবল বায়ুপ্রবাহের ফলে মরুভূমির বালি অপসারিত হয়ে ছোটো – বড়ো অনেক গর্তের সৃষ্টি হয় । এই গর্তগুলি যদি খুব গভীর হয়ে ভূগর্ভের জলস্তরকে স্পর্শ করে , তাহলে ভূগর্ভস্থ জল ও বৃষ্টির জল জমা হয়ে সেখানে প্লায়া হ্রদের সৃষ্টি হয় ।
6. মরু অঞ্চলের সম্প্রসারণের কারণগুলি উল্লেখ করো । কোন্ কোন্ পদ্ধতিতে এই মরুপ্রসারণ প্রতিরোধ করা যায় উল্লেখ করো ।
Ans: মরুকরণ বা ‘ Desertification ‘ শব্দটি বর্তমানে বহুল প্রচলিত । জলবায়ুর পরিবর্তন , মানুষের অবিবেচক ক্রিয়াকলাপ , প্রভৃতির কারণে পৃথিবীতে মরুভূমির আয়তন ক্রমশ বেড়েই চলেছে ।
মরুভূমি সম্প্রসারণের কারণ : অরণ্যনিধন : বর্ধিত জনসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নগরায়ণ । বন কেটে বসতি গড়ে উঠছে । অরণ্য বিনাশের ফলে মাটি আলগা হয়ে পড়ায় ভূমিক্ষয় বাড়ছে । ভারতে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১৫ লক্ষ হেক্টর অরণ্য বিনষ্ট হয় । ফলে মোট ভূমিভাগের ১ % ভূমি পরিণত হয় বন্ধ্যাভূমিতে ।
ভূমি ব্যবহার : ভূমি ব্যবহার বলতে মূলত নানা উদ্দেশ্য । পুরণের জন্য কখনও অর্থনৈতিকভাবে , কখনও বা সামাজিক ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ভূমির কার্যকারিতাকে বোঝায় । ভারতের মরু অঞ্চল পৃথিবীর সব মরুভূমির মধ্যে সর্বাধিক জনবহুল । কৃষিকার্যেই যেখানে লাভজনক অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ , সেখানে অতিরিক্ত কৃষিকার্যে মাটির কণাগুলি শিথিল হয়ে ভূমিক্ষয় বাড়ায় ।
অনিয়ন্ত্রিত পশুচারণ : শুষ্ক পরিবেশে অল্প জলের মাধ্যমে যদি তৃণভূমি সৃষ্টি করা যায় তাহলে সেখানে পশুচারণভূমি গড়ে ওঠে যা জীবিকার অন্যতম মাধ্যম । কিন্তু অতিরিক্ত পশুচারণ ভূমিক্ষয় বাড়ায় । পশুর খুরের আঘাতে মাটি আলগা হয় , গাছপালার আচ্ছাদন বিনষ্ট হয় ।
ভৌমজলের অভিব্যবহার : জলসেচের মাধ্যমে শুষ্ক ভূমিকে । কৃষিযোগ্য করার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ভৌমজল তুলে নেওয়া হয় , ফলে জলের সাথে কৌশিক প্রক্রিয়ায় লবণও উঠে আসে যা কৃষি প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে । তার সাথে জলের স্তর বেশি নেমে যাওয়ায় মরুভূমির মাটি আর্দ্রতা হারিয়ে মরুকরণ পদ্ধতিকে ত্বরান্বিত করে ।
খনিজ উত্তোলন : খনিজসম্পদের দুর্লভ ভাঙার থাকায় ভূগর্ভ থেকে তা উত্তোলন করা হয় । খননকার্যের মাধ্যমে ভূমিতে ধস নামার সম্ভাবনা থাকে , মাটির স্বাভাবিক প্রথন বা বুনন নষ্ট হয় । এটিও পরোক্ষভাবে মরুপ্রসারণে সাহায্য করে ।
মরুভূমি সম্প্রসারণ রোধের উপায় : মরুভূমি সম্প্রসারণের জন্য দায়ী কারণগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা যদি সম্ভব হয় তাহলে মরুপ্রসারণ রোধ করা যাবে । মরু আগ্রাসন থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করার জন্য নিম্নলিখিত উপায়গুলি অবলম্বন করা একান্ত আবশ্যক ।
( 1 ) বৃক্ষরোপণ : গাছপালা ধুলোর ঝড়কে আটকায় , ভূমিক্ষয় রোধ করে । মরুভূমিতে গাছ লাগালে প্রাকৃতিক সুরক্ষাপ্রাচীর গড়ে তোলা যায় । বালিয়াড়ির প্রসারণের দিকে আড়াআড়িভাবে গাছ লাগাতে হবে যাতে বায়ুর ক্ষয় রোধ করা যায় । এক্ষেত্রে যে গাছগুলিকে নির্বাচন করা হয় সেগুলি হল- Senna , Gum , Acacia , Prospis , Julflora , Lebber প্রভৃতি । Wind Break দিয়ে দেয়াল তৈরি করতে হবে যাতে ঝড়ের প্রবাহ আটকানো যায় ।
( ২ ) তৃণভূমি সৃষ্টি : মরুভূমিতে মাটির আর্দ্রতা সংরক্ষণে খুঁড়ে নীচু জমিতে জল থরে রেখে মুথাজাতীয় ঘাস লাগাতে হবে । এই প্রক্রিয়ায় পশুচারণ ভূমি যেমন গড়ে তোলা যাবে , সেইসঙ্গে মাটির সিক্ততা রক্ষা করা যাবে ।
( ৩ ) জলসেচ প্রকল্প : মরুভূমির মাটিতে খনিজ মৌল উপস্থিত থাকে , জলসেচের ব্যবস্থা করা গেলে মাটির উর্বরতা বাড়ে , কৃষিকাজ করা যায় । ফলে মরুভূমি শস্যশ্যামলা হবে ও মরুকরণ বাধা পাবে ।
( ৪ ) জলসংরক্ষণ পদ্ধতি : ( i ) বেড়া দিয়ে গাছগুলিকে সংরক্ষণ করতে হবে , ( ii ) গাছের গুঁড়ির আশেপাশে নুড়ি – পাথর জড়ো করে রাখতে হবে , রাতে যে অল্প শিশির জমে সেই জল যাতে অপচয় না হয় , ( iii ) বালিয়াড়ির গায়ে দাবার ছকের মতো ছোটো ছোটো ঘর কেটে কাদাপাথর দিয়ে পাঁচিল গাঁথতে হবে । বৃষ্টির জল সাময়িক ভাবে ওই দেয়ালে বাধা পাবে যা ঘাস গজাতে সাহায্য করবে , ( iv ) মরুভূমি অঞ্চলে ঝোপ গাছ জ্বালানি রুপে ব্যবহার না করে সৌর উনুন ব্যবহারে গুরুত্ব দেওয়া , ( v ) বাঁধ বা জলাধার তৈরি করে জল থরে রাখার ব্যবস্থা করা , ( vi ) মরুভূমিতে উদ্যান তৈরি করা ও মরূদ্যানকে সংরক্ষণ করা । ( vii ) গাছের গুঁড়ির আশেপাশে নুড়িপাথর বেষ্টিত করে রাখা যাতে মরুভূমিতে রাতে ঠান্ডায় শিশির জমে ।
বায়ু (বায়ুমণ্ডল – দ্বিতীয় অধ্যায়)
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | বায়ু (বায়ুমণ্ডল – দ্বিতীয় অধ্যায়) – মাধ্যমিক ভূগোল সাজেশন | Madhyamik Geography Suggestion :
- রেগ মরুভূমি কোন্ দেশে দেখা যায় ?
Answer : আলজিরিয়ায় ।
- ‘ Deflation ‘ শব্দের অর্থ কী ?
Answer : গ্রিক শব্দ Deflare = to blow away অর্থাৎ অন্যত্র বয়ে নিয়ে যাওয়া , বাংলায় অপবাহন ।
- ‘ বার্থান ‘ শব্দের অর্থ কী ?
Answer : তুর্কি শব্দ ‘ Barchan’- এর অর্থ কিরঘিজ , স্টেপ অঞ্চলের বালিয়াড়ি ।
- মরু অঞ্চলের শুষ্ক নদীখাতকে কী বলে ?
Answer : ওয়াদি ।
- মেক্সিকোর মরুভূমিতে প্লায়া হ্রদকে কী বলে ?
Answer : বোলসন ( Bolson ) ।
- অতিরিক্ত লবণাক্ত প্লায়াকে কী বলে ?
Answer : স্যালিনা ।
- কেরলের মালাবার উপকূলের বালিয়াড়িকে স্থানীয় ভাষায় কী বলে ?
Answer : টেরিস ।
- সিফ বালিয়াড়ি নামকরণ কে করেন ?
Answer : ব্যাগনল্ড ।
- ইনসেলবার্জ ক্ষয় পেয়ে বোল্ডাররূপী ভূমিরূপ গঠন করে , তাকে কী বলে ?
Answer : ক্যাসেল কপিজ ।
- কোন্ জলবায়ুতে বায়ুর কার্য বেশিমাত্রায় ক্রিয়াশীল ?
Answer : উষ্ণমরু জলবায়ুতে ।
- বায়ু কী কী প্রক্রিয়ায় ক্ষয়সাধন করে ?
Answer : অপবাহন , অবঘর্ষ ও ঘর্ষণ প্রক্রিয়ায় ।
- বায়ু কী কী প্রক্রিয়ায় বহনকার্য চালায় ?
Answer : লম্ফদান , ভাসমান ও গড়ানো প্রক্রিয়ায় ।
- বায়ু কী কী প্রক্রিয়ায় সঞ্চয়কার্য করে ?
Answer : অধঃক্ষেপণ , উপলেপন ও অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় ।
- ‘ সিফ্ ‘ শব্দের অর্থ কী ?
Answer : সোজা তরবারি ।
- কোন কোন অঞ্চলে বায়ুর কাজ দেখা যায় ?
Answer : শুষ্ক মরু অঞ্চল ও সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে ।
- ভেন্টিফ্যাক্ট শব্দের অর্থ কী ?
Answer : লাতিন Ventus শব্দের অর্থ বাতাস , Fact = সৃষ্ট অর্থাৎ Ventifact = বায়ুপ্রবাহের ফলে সৃষ্ট ।
- ড্রেইকান্টার শব্দের অর্থ কী ?
Answer : জার্মান শব্দ ‘ Dreikanter’- এর অর্থ Three sided অর্থাৎ ত্রিপার্শ্ব অর্থাৎ তিন দিক থেকে সৃষ্ট ।
- বায়ুর ক্ষয়জাত কোন্ ভূমিরূপ দেখতে ব্রাজিল নাটের মতো ?
Answer : ভেন্টিফ্যাক্ট ।
- পৃথিবীর বৃহত্তম বালুকাময় মরু অঞ্চলের উদাহরণ দাও ।
Answer : সৌদি আরবের রুব – আল – খালি ।
- রেগ কী ?
Answer : কোণাকার শিলাখণ্ডপূর্ণ মরুভূমি ।
MCQ | বায়ু (বায়ুমণ্ডল – দ্বিতীয় অধ্যায়) – মাধ্যমিক ভূগোল সাজেশন | Madhyamik Geography Suggestion :
- কোন্টি নাতিশীতোয় মরুভূমির অন্তর্গত ।(A) সাহারা (B) কালাহারি(C) গোবি(D) থর
Answer : (C) গোবি
- মরুভূমিতে বৃষ্টির পরিমাণ -(A) < ২৫ সেমি(B) ৫০-৭৫ সেমি(C) ৭৫-১০০ সেমি(D) > ১০০ সেমি
Answer : (A) < ২৫ সেমি
- প্যাটাগোনিয়া মরুভূমিটি কোন্ মহাদেশে রয়েছে ? (A) এশিয়া(B) আফ্রিকা(C) অস্ট্রেলিয়া(D) দক্ষিণ আমেরিকা
Answer : (D) দক্ষিণ আমেরিকা
- কোন্ প্রক্রিয়ায় মরুভূমির বালি উড়ে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয় ?(A) অবঘর্ষ দিয়ে(B) ঘর্ষণ ক্ষয়(C) দ্রবণ(D) অপবাহন
Answer : (D) অপবাহন
- কোন্ ভূমিরূপকে ‘ Mushroom rocks ‘ বলা হয় ?(A) ইয়ারদাংকের(B) গৌর(C) জুগ্যান(D) ইনসেলবার্জ
Answer : (B) গৌর
- ইনসেলবার্জ – এর নামকরণ করেন – (A) L. C. King (B) R. A. Bagnold(C) W. M. Davis(D) J. W. Powell
Answer : (A) L. C. King
- কোন্ মরুভূমির বালি উড়ে গিয়ে হোয়াংহো অববাহিকার লোয়েস ভূমি গঠিত হয়েছে ?(A) তাকলামাকান(B) থর(C) সাহারা(D) গোবি
Answer : (A) তাকলামাকান
- কোনটি দক্ষিণ গোলার্ধের মরুভূমি -(A) আটাকামা(B) সাহারা(C) গোবি(D) সোনেরান
Answer : (A) আটাকামা
- কোন্টি নাতিশীতোয় মরুভূমি -(A) সাহারা(B) কালাহারি(C) তাকলামাকান(D) অস্ট্রেলিয়
Answer : (C) তাকলামাকান
- শিলাময় মরুভূমি কী নামে পরিচিত— (A) আগ(B) রেগ(C) গৌর(D) হামাদা
Answer : (D) হামাদা
- Mushroom rock কোন্ ভূমিরূপকে বলা হয় -(A) জুগ্যান(B) ইনসেলবার্জ(C) প্লায়া(D) গৌর
Answer : (D) গৌর
- বালিয়াড়ি শব্দটির সঙ্গে কোন্ নামটি সম্পর্কিত ? (A) ডেভিস(B) বিউফোর্ট(C) ব্যাগনল্ড(D) গিলবার্ট
Answer : (C) ব্যাগনল্ড
- প্যানফ্যান কোন্ ভূমিরূপটিকে বলা হয় ?(A) পেডিমেন্ট(B) ইনসেলবার্জ(C) বার্খান (D) ইয়ার্দাং
Answer : (A) পেডিমেন্ট
- মরুভূমি অবনমিত অংশে সৃষ্ট হ্রদ হল— (A) অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ(B) প্যাটার্নওস্টার হ্রদ(C) কেটেল হ্রদ (D) প্লায়া হ্রদ
Answer : (D) প্লায়া হ্রদ
- কোন্ মহাদেশে ‘ গ্রেট গ্রিন ওয়াল ‘ নির্মাণ করা হয়েছে – (A) এশিয়া(B) উত্তর আমেরিকা(C) আফ্রিকা(D) অস্ট্রেলিয়া
Answer : (C) আফ্রিকা
- কোন্ ভূমিরূপটি বায়ু ও জলধারার মিলিত কার্যে গঠিত -(A) গৌর(B) ইয়ার্দাং(C) ওয়াদি(D) বার্খান
Answer : (C) ওয়াদি
- ভারতের মরুভূমি গবেষণাকেন্দ্র কোন শহরে রয়েছে – (A) যোধপুর(B) জয়সালমির(C) দেরাদুন (D) জয়পুর
Answer : (A) যোধপুর
- কালাহারি কোন্ মহাদেশের মরুভূমি ?(A) উত্তর আমেরিকা(B) আফ্রিকা(C) দক্ষিণ আমেরিকা(D) এশিয়া
Answer : (B) আফ্রিকা
- পৃথিবীর বৃহত্তম মরুভূমির নাম -(A) সাহারা(B) কালাহারি(C) থর(D) আটাকামা
Answer : (A) সাহারা
- এশিয়ার বৃহত্তম মরুভূমির নাম -(A) আরব(B) গোবি(C) থর(D) তুর্কিস্তান
Answer : (B) গোবি
- পৃথিবীর শুষ্কতম মরুভূমির নাম -(A) গোবি(B) আটাকামা(C) তুর্কিস্তান(D) লাডাক
Answer : (B) আটাকামা
- ভারতের কোন্ রাজ্যে বায়ুকার্যের মাধ্যমে ভূমিরূপের পরিবর্তন ঘটে ?(A) রাজস্থান(B) উত্তরপ্রদেশ(C) মধ্যপ্রদেশ(D) বিহার
Answer : (A) রাজস্থান
- আফ্রিকার মরু অঞ্চলে প্লায়া হ্রদকে বলে— (A) ধান্দ (B) শস (C) স্যালিনা(D) বোলসন
Answer : (A) ধান্দ
- রাজস্থানে মরু অঞ্চলে প্লায়া হ্রদকে বলে— (A) ধান্দ(B) ধ্রিয়ান(C) বোলসন(D) শটস
Answer : (A) ধান্দ
- লোয়েস সমভূমি দেখা যায়—(A) হোয়াংহো(B) ইংয়াংসিকিয়াং(C) আমুর অববাহিকা(D) নীলনদের অববাহিকা
Answer : (A) হোয়াংহো
- ‘ Defiation ‘ বলতে বোঝায় বায়ুর (A) অপসারণ প্রক্রিয়া(B) অবঘর্ষ প্রক্রিয়া(C) ঘর্ষণ প্রক্রিয়া(D) লম্ফদান প্রক্রিয়া
Answer : (A) অপসারণ প্রক্রিয়া
- বায়ুপ্রবাহে বাহিত ছোটো শিলাখণ্ডের পারস্পরিক ঠোকাঠুকিকে বলে -(A) অপসারণ (B) ঘর্ষণ(C) অবঘর্ষ(D) উপলেপন
Answer : (B) ঘর্ষণ
- কোন্ প্রক্রিয়ায় বায়ুপ্রবাহের দ্বারা শিলাস্তরে আঁচড়কাটার মতো দাগ পড়ে -(A) অবঘর্ষ প্রক্রিয়া(B) ঘর্ষণ প্রক্রিয়া (C) অপসারণ প্রক্রিয়া(D) অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায়
Answer : (A) অবঘর্ষ প্রক্রিয়া
- মরুভূমির শুষ্ক নদীখাতকে কী বলে ?(A) বোলসন(B) ওয়াদি(C) বাজাদা(D) ধান্দ
Answer : (B) ওয়াদি
- বালির মধ্যে কোন্ খনিজ বেশি পরিমাণে থাকে ?(A) সিলিকন(B) কোয়ার্টজ(C) ফেল্ডস্পার(D) মাইকা
Answer : (B) কোয়ার্টজ
- বালুকাপূর্ণ মরুভূমিকে সাহারায় বলে -(A) কুম (B) হামাদা(C) রেগ(D) আর্গ
Answer : (D) আর্গ
- এশিয়ায় ‘ Koum desert ‘ বলতে বোঝায় -(A) বালিময় (B) কোণাকার শিলাময় (C) প্রস্তরখণ্ডময়(D) কাদাময় মরুভূমি
Answer : (A) বালিময়
- পৃথিবীর বৃহত্তম অপসারণ সৃষ্ট গর্ত হল -(A) সম্বর (B) কাতারা (C) পুষ্কর(D) কোনোটাই নয়
Answer : (B) কাতারা
- বায়ু দ্বারা সুক্ষ্ম পীত বালিকণা বহুদুর বাহিত হয়ে সঞ্চিত হলে তাকে বলে -(A) সিফ(B) বার্থান(C) লোয়েস(D) পেডিমেন্ট
Answer : (C) লোয়েস
- বায়ুর গতিপথে উল্লম্বভাবে অবস্থিত অর্ধচন্দ্রাকার বালিয়াড়িকে কী বলে ?(A) বার্খান (B) সিফ্(C) অধিবৃত্তীয়(D) পেডিমেন্ট
Answer : (A) বার্খান
- প্রায় সমতল মরু অঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে দাঁড়িয়ে থাকা কঠিন শিলা গঠিত টিলাকে বলে -(A) ইনসেলবার্জ(B) পেডিমেন্ট (C) বাজাদা(D) গৌর
Answer : (A) ইনসেলবার্জ
- ইয়ারদাং গড়ে ওঠে কোন্ জলবায়ু অঞ্চলে ? (A) আর্দ্র (B) শীতল (C) উষ্ণ – আর্দ্র(D) শুষ্ক
Answer : (D) শুষ্ক
- বায়ুর কাজ সবচেয়ে বেশি দেখা যায় -(A) উষ্ণ মরুভূমিতে(B) শীতল মরুভূমিতে(C) উচ্চ পার্বত্য অঞ্চল(D) নাতিউচ্চ মালভূমিতে
- কোন্টি উত্তর গোলার্ধের মরুভূমি ?(A) আটাকামা(B) কালাহারি(C) সোনেরান(D) প্যাটাগোনিয়া
Answer : (C) সোনেরান
- বায়ুকার্যে কোন্ ভূমিরূপে দুটি শিং – এর মতো শিরা থাকে -(A) ইনসেলবার্জ (B) বার্খান(C) পেডিমেন্ট(D) ওয়াদি
Answer : (B) বার্খান
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর | বায়ু (বায়ুমণ্ডল – দ্বিতীয় অধ্যায়) – মাধ্যমিক ভূগোল সাজেশন | Madhyamik Geography Suggestion :
- ইনসেলবার্জ ( Inselberg ) কাকে বলে ?
Answer : মরুভূমি বা মরুপ্রায় শুষ্ক অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহ ও অস্থায়ী জলধারা বা ওয়াদির মিলিত ক্ষয়কাজের ফলে অনেক সময় এইসব অঞ্চলে স্থানে স্থানে কঠিন শিলায় গঠিত অনুচ্চ ক্ষয়ীভূত পাহাড় টিলার আকারে বিক্ষিপ্তভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় । এইসব অনুচ্চ টিলাকে ইনসেলবার্জ বলে ।
- মেসা ও বিউট ( Mesa and Butte ) কী ?
Answer : বায়ু ও জলধারার মিলিত কার্যে মরুভূমি অঞ্চলের উচ্চ মালভূমি ক্ষয় হয়ে বিচ্ছিন্নভাবে টেবিলের আকারে অবস্থান করলে তাকে মেসা বলে । মেসা ক্ষুদ্রাকৃতির হলে তা বিউট নামে পরিচিত ।
- পেডিমেন্ট ( Pediment ) কাকে বলে ?
Answer : মরুভূমিতে উচ্চভূমি থেকে পাদদেশের দিকে মৃদু ঢালু ( ঢাল ১.৫ ° – ৭ ° ) ভূমিকে বলা হয় পেডিমেন্ট ।
- বালিয়াড়ি ( Sand dunes ) কী ?
Answer : বায়ুপ্রবাহের দ্বারা বালুকারাশি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বাহিত হয়ে সঞ্চিত হওয়ার পর দীর্ঘ ও উচ্চ বালির স্তূপ গঠন করে । একেই বালিয়াড়ি বলা হয় ।
- কোথায় কোথায় বালিয়াড়ি দেখা যায় ?
Answer : বালিয়াড়ি সাধারণত মরুভূমি ( ক্রান্তীয় ও নাতিশীতোর ) মরুপ্রায় ও উপকূল অঞ্চলে গড়ে ওঠে ।
- বাৰ্খান ( Barchan ) কাকে বলে ?
Answer : বায়ুর প্রবাহপথের সঙ্গে আড়াআড়িভাবে গড়ে ওঠা অর্ধচন্দ্রাকার বালিয়াড়িকে বাৰ্খান বলে ।
- সিক্ বালিয়াড়ি ( Seif dune ) কী ?
Answer : বায়ুপ্রবাহের সমান্তরালে দীর্ঘ ও সংকীর্ণ শৈলশিরার মতো বালির পাহাড়গুলিকে সিক্ বালিয়াড়ি বলে । এই বালিয়াড়ি দেখতে খানিকটা তলোয়ারের মতো হয় ।
- টেরিস কী ?
Answer : কেরলের মালাবার উপকূলের গঠিত বালিয়াড়িকে স্থানীয় ভাষায় টেরিস বলে ।
- ধ্রিয়ান কাকে বলে ?
Answer : আসলে বায়ুপ্রবাহের গতি ; উত্তর : মরু অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহের গতি পরিবর্তনের ফলে বালি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরে যায় । এই থরনের বালিয়াড়িকে বলে অস্থায়ী বা চলমান বালিয়াড়ি । রাজস্থানের মরু অঞ্চলের এই থরনের বালিয়াড়িকে থ্রিয়ান বলে ।
- লোয়েস ( Loess ) কী ?
Answer : মরুভূমি ও মরুপ্রায় অঞ্চলে হলুদ ও ধূসর বর্ণের কোয়ার্টজ , ফেল্ডস্পার , ডলোমাইট ও অন্যান্য খনিজ সমৃদ্ধ শিথিল সূক্ষ্ম পলিকণার সঞ্চয়কে লোয়েস বলে ।
- প্লায়া ( Playa ) কাকে বলে ?
Answer : মরুভূমি অঞ্চলে উচ্চভূমি বেষ্টিত অবনমিত অঞ্চলে জল জমে যে সাময়িক হ্রদের সৃষ্টি হয় , তাকে প্লায়া বলে । এই প্লায়াই আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে বোলসন নামে পরিচিত ।
- ডেজার্ট পেভমেন্ট ( Desert pavement ) কাকে বলে ?
Answer : কেবলমাত্র নুড়ি ও পাথর দ্বারা গঠিত একটি এবড়োখেবড়ো অবশিষ্ট মরুভূমি অঞ্চলকে ডেজার্ট পেভমেন্ট বলে ।
- বাজাদা ( Bajada ) কী ?
Answer : প্লায়া ও পার্শ্ববর্তী অংশে স্বল্পমেয়াদি প্রবল বর্ষায় উৎপন্ন পলি জমে সৃষ্ট সমভূমি হল বাজাদা বা বাহাদা ।
- ওয়াদি ( Wadi ) কাকে বলে ?
Answer : মরুভূমিতে বৃষ্টির জলধারার ক্ষয়কাজের ফলে যে সমস্ত ছোটো ছোটো অনিত্যবহ ক্ষণস্থায়ী প্রকৃতির নদী বা শুষ্ক নদীখাতের সৃষ্টি হয় , তাদের ওয়াদি বলে ।
- মরু সম্প্রসারণ ( Expansion of Desert ) বলতে কী বোঝ ?
Answer : যে প্রক্রিয়ার দ্বারা উৎপাদনশীল ভূমি ক্রমশ সম্পূর্ণভাবে উৎপাদনে অক্ষম অনুর্বর মরুভূমিতে পরিণত হয় , তাকে মরুকরণ বা মরু অঞ্চলের সম্প্রসারণ বলে ।
- CAZRI- এর গুরুত্ব লেখো ।
Answer : CAZRI- এর পুরো নাম হল Central Arid Zone Research Institute । এটি হল ভারতের একটি সংস্থা , যার সদর দপ্তর যোধপুরে অবস্থিত । এই সংস্থা দেশের মরুকরণ বা মরুভূমির সম্প্রসারণ বোধ করার সম্পর্কে গবেষণা চালায় ও গাছ লাগিয়ে নানা প্রকল্প রূপায়ণ করে ।
- উপকূল ও নদীর মোহানায় বালির সঞ্চয় দেখা যায় কেন ?
Answer : উপকূল ও নদীর মোহানায় বালি তৈরি হয়েছে সিলিকেট সমৃদ্ধ শিলা যান্ত্রিক ও রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে । কোয়ার্টজ খনিজ রাসায়নিকভাবে পরিবর্তিত হয় না বলেই তা মোটা দানা বালিতে পরিণত হয় । কোনো কোনো উপকূলে চুনাপাথর ( সাদাবালি ) ও প্রবালের খোলক থেকেও বালির উৎপত্তি হয়েছে । এই কারণেই উপকূল ও নদীর মোহানায় বালির সঞ্চয় দেখা যায় ।
- উপকূলে কীভাবে বায়ু ভূমির পরিবর্তন ঘটায় ?
Answer : উপকূল অঞ্চলে সমুদ্রের দিক থেকে জোরে বাতাস বয় । এই বাতাস উপকূলের বালিকে উড়িয়ে নিয়ে অন্য স্থানে সঞ্চয় করে বালিয়াড়ি তৈরি করে । তাই উপকূলে বায়ু সঞ্চয়কার্যের মাধ্যমে ভূমি গড়ে ওঠে — ক্ষয়কার্যের ফলে অতটা নয় । এইভাবেই উপকূলে বায়ু ভূমির পরিবর্তন ঘটায় ।
- পৃথিবীর কোন্ অঞ্চলে বায়ু ভূমিরূপ পরিবর্তনে অংশগ্রহণ করে ?
Answer : বায়ু ( i ) মরুভূমি ( ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় উভয় থরনের মরুভূমিতে ) , ( ii ) মরুভূমিসংলগ্ন মরুপ্রায় ও ( iii ) উপকূল অঞ্চলে তার কার্যের মাধ্যমে ভূমিরূপের পরিবর্তন ঘটায় ।
- মরুভূমি ( Desert ) কাকে বলে ?
Answer : ভূপৃষ্ঠের যেসব স্থানে দীর্ঘকাল থরে গড় বৃষ্টি ২৫ সেমির কম , গাছপালা প্রায় নেই এবং অঞ্চলটি মানুষ বসবাসের অনুপযোগী , সেই স্থানকে মরুভূমি বলে । যেমন — সাহারা , থর , গোবি ইত্যাদি হল পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য মরুভূমি ।
- উত্তর গোলার্ধের দুটি ক্রান্তীয় মরুভূমির নাম লেখো ।
Answer : উত্তর গোলার্ধের দুটি ক্রান্তীয় মরুভূমির নাম হল ( i ) আফ্রিকার সাহারা এবং ( ii ) উত্তর আমেরিকার সোনেরান মরুভূমি ।
- দক্ষিণ গোলার্ধের দুটি ক্রান্তীয় মরুভূমির নাম লেখো ।
Answer : দক্ষিণ গোলার্ধের দুটি ক্রান্তীয় মরুভূমির নাম হল— ( i ) চিলির আটাকামা মরুভূমি ও ( ii ) অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট অস্ট্রেলিয়া মরুভূমি ।
- দুটি নাতিশীতোয় মরুভূমির নাম লেখো ।
Answer : দুটি নাতিশীতোয় মরুভূমির নাম হল – ( i ) চিনের তাকলামাকান এবং ( ii ) মঙ্গোলিয়ার গোবি মরুভূমি ।
- মরূদ্যান ( Oasis ) কাকে বলে ?
Answer : মরুভূমির ভিতরের কোনো কোনো জায়গায় জলের উৎস ( আর্টেজীয় কুপ বা হ্রদ ) থাকলে সেখানে গাছপালা , কৃষিকাজ গড়ে ওঠে । এই জায়গাগুলিকেই বলে মরুদ্যান । মরুদ্যান , মরুভূমি অতিক্রমকারী মানুষের কাছে স্বর্গের সমান ।
- মরূদ্যানে জনবসতি গড়ে ওঠে কেন ?
Answer : মরূদ্যানে ভৌমজল পাওয়া যায় , ফলে সেখানে গাছপালা গড়ে ওঠে এবং কৃষিকাজ ও পশুপালনের পরিবেশ সৃষ্টি হয় । তাই মরুদ্যান জনবসতি গড়ে ওঠার সহায়ক ।
- হামাদা কাকে বলে ?
Answer : মরু অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহ দ্বারা বালুকারাশি অপসারিত হওয়ার ফলে , নিম্নস্থ শিলাময় স্তর বেরিয়ে পড়ে । আবরণহীন কেবলমাত্র শিলা দ্বারা গঠিত এই মরুভূমিকে হামাদা বলে ।
- আর্গ কী ?
Answer : বিশালাকার অঞ্চলজুড়ে কেবলমাত্র বালি দ্বারা গঠিত মরুভূমিকে সাহারা আর্গ বলে । তুর্কিস্তানে একেই কুম বলে । উদাহরণ — সৌদি আরবের বুব – আল – খালি হল পৃথিবীর বৃহত্তম আর্গ ।
- রেগ কাকে বলে ?
Answer : বিভিন্ন আকৃতির প্রস্তরখণ্ড দিয়ে ঢাকা মরুভূমিকে আলজিরিয়ার রেগ বলে । মিশর ও লিবিয়ায় এটিই সেরীর নামে পরিচিত ।
- বায়ুর মাধ্যমে অবঘর্ষ প্রক্রিয়া ভূপৃষ্ঠের সামান্য ওপরে কার্যকর কেন ?
Answer : ভূপৃষ্ঠসংলগ্ন অঞ্চল বায়ুর প্রকৃতি হওয়ায় এবং ভূমিতে ঝোপঝাড় থাকায় বায়ুর গতিবেগ কম হয় এবং বায়ুবাহিত পদার্থসমূহ বাধাপ্রাপ্ত হয় । আবার ঊর্ধ্ব অংশে বায়ুর গতিবেগ বেশি থাকলেও বায়ুবাহিত পদার্থের পরিমাণ কম থাকে । তাই অবঘর্ষ প্রক্রিয়া ভূপৃষ্ঠসংলগ্ন অঞ্চল বা ঊর্ধ্বে তত কার্যকর হয় না । ভূপৃষ্ঠ থেকে সামান্য ওপরে ( ২–১ মিটার ) এই প্রক্রিয়া সবচেয়ে বেশি কার্যকর হয়ে থাকে ।
- ব্লো আউট বা অপবাহনসৃষ্ট গর্ত কাকে বলে ? বা , অপসারণসৃষ্ট গর্ত কীভাবে সৃষ্টি হয় ?
Answer : প্রবল বায়ুপ্রবাহে বালিস্তর অপসারিত হয়ে কোনো কোনো স্থানে গর্ত বা অবনমিত অঞ্চল সৃষ্টি করে । একেই অপবাহনসৃষ্ট গর্ত বা ব্লো আউট বলে ।
- গৌর ( Gour ) কী ?
Answer : বায়ুর গতিপথে কঠিন ও কোমল শিলায় গড়া কোনো বৃহৎ শিলাখণ্ড অনুভূমিকভাবে অবস্থান করলে নীচের কোমল অংশ বিভিন্ন ঋতুতে বায়ুর ঘর্ষণের ফলে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে সরু স্তম্ভের মতো হয় এবং উপরের কম ক্ষয়প্রাপ্ত কঠিন অংশটি বিরাট আয়তন নিয়ে ব্যাঙের ছাতার মতো দাঁড়িয়ে থাকে । স্তম্ভাকৃতি এই কঠিন শিলাখণ্ডকে গৌর বলে ।
- জিউগেন ( Zeugen ) কাকে বলে ?
Answer : মরুভূমি বা মরুপ্রায় অঞ্চলে উপরের স্তরে কঠিন । শিলা ও নীচের স্তরে কোমল শিলা পর্যায়ক্রমে অনুভূমিকভাবে অবস্থান করলে অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় বায়ুর ক্ষয়কাজের ফলে কঠিন শিলাগঠিত অংশ অতি অল্প ক্ষয় পেয়ে চ্যাপটা ও প্রায় সমতল চূড়াবিশিষ্ট টিলার মতো দাঁড়িয়ে থাকে এবং কোমল শিলাস্তরগুলি বেশি ক্ষয় পেয়ে ফাটল বরাবর লম্বা খাত বা গহ্বরের সৃষ্টি হয় । এই রকম দুটি গহ্বর বা খাতের মধ্যে চ্যাপটা মাথা টিলার মতো যে ভূমিরূপ গঠিত হয় তাকে জিউগেন বলে ।
- ইয়ারদাং ( Yardang ) কী ?
Answer : মরুভূমি বা মরুপ্রায় অঞ্চলে কঠিন ও কোমল শিলাস্তরগুলি পাশাপাশি লম্বভাবে অবস্থান করলে দীর্ঘকাল থরে অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় বায়ুর ক্ষয়কাজের ফলে কোমল শিলাস্তরগুলি দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে গহ্বর বা সুড়ঙ্গের আকার ধারণ করে এবং কঠিন শিলাস্তরগুলি পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বিভিন্ন মূর্তি আকৃতির শৈলশিরার মতো দাঁড়িয়ে থাকে । এই থরনের ভূমিরূপ ইয়ারদাং নামে পরিচিত ।
- ভেন্টিফ্যাক্ট ( Ventifact ) কী ?
Answer : বায়ুর প্রবাহপথে কোনো বৃহৎ প্রস্তরখণ্ড অবস্থান করলে এর প্রতিবাত পার্শ্ব দীর্ঘকাল থরে অবঘর্ষ পদ্ধতিতে ক্ষয় হয়ে মসৃণ ও ছুঁচোলো হয় এবং শিলাস্তরটি ব্রাজিল দেশীয় বাদামের ন্যায় আকৃতি ধারণ করে । একে ভেন্টিফ্যাক্ট বলে ।
- ড্রেইকান্টার ( Dreikanter ) কাকে বলে ?
Answer : মরুভূমির কোনো প্রস্তরখণ্ড যদি বিভিন্ন ঋতুতে প্রবাহিত ভিন্নমুখী বায়ুপ্রবাহে অবঘর্ষ পদ্ধতিতে দীর্ঘকাল ক্ষয় হয়ে ত্রিকোণাকার বা ক্ষুদ্র পিরামিড আকৃতি ধারণ করে , তাকেই ড্রেইকান্টার বলে ।
- ধান্দ কী ?
Answer : ভারতের থর মরুভূমি অঞ্চলে অপসারণের ফলে ছোটো ছোটো গর্তের সৃষ্টি হয় । এই গর্তগুলিতে জল জমে সাময়িক হ্রদের সৃষ্টি হয় । এগুলি ‘ ধান্দ ‘ নামে পরিচিত ।
ব্যাখাথর্মী প্রশ্নোত্তর | বায়ু (বায়ুমণ্ডল – দ্বিতীয় অধ্যায়) – মাধ্যমিক ভূগোল সাজেশন | Madhyamik Geography Suggestion :
- বায়ু কোন্ কোন্ প্রক্রিয়ায় বহনকাজ সম্পন্ন করে ?
Answer : বায়ু ক্ষয় করে যেসকল পদার্থ সৃষ্টি করে তা তিনটি পদ্ধতির মাধ্যমে বাহিত হয় – ( i ) ভাসমান প্রক্রিয়া : অপেক্ষাকৃত সূক্ষ্ম ধূলিকণা বায়ুপ্রবাহের ফলে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হয় । ( ii ) লম্ফদান : অপেক্ষাকৃত মাঝারি আকারের নুড়ি , শিলাখণ্ড ভূমির সাথে ধাক্কা খেয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে এগিয়ে চলে । ( iii ) গড়ানো প্রক্রিয়া : বড়ো আকারের নুড়ি ও প্রস্তরখণ্ড বায়ুপ্রবাহের ফলে ভূমির সাথে গড়িয়ে গড়িয়ে এগিয়ে যায় ।
- লোয়েস ভূমি কীভাবে গঠিত হয় , তা উদাহরণসহ লেখো ।
Answer : মরুভূমি ও মরুপ্রায় অঞ্চলে হলুদ ও ধূসর বর্ণের কোয়ার্টজ , ফেল্ডস্পার , ডলোমাইট ও অন্যান্য খনিজ সমৃদ্ধ শিথিল সুক্ষ্ম পলিকণার সঞ্চয়কে লোয়েস বলে । বায়ুপ্রবাহের মাধ্যমে এই সূক্ষ্ম পলিকণা বহুদুরে পরিবাহিত ও সঞ্চিত হয়ে যে ভূমি গঠন করে তাকে লোয়েস ভূমি বলে । মধ্য এশিয়ার গোবি মরুভূমি থেকে হাজার হাজার বছর থরে লোয়েস মৃত্তিকা বহন করে চিনের হোয়াংহো অববাহিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সমভূমি গঠন করেছে ।
- কী কী কারণে মরুভূমি সম্প্রসারণ ঘটে ?
Answer : মরুভূমি সম্প্রসারণের কারণগুলি হল—
( ১ ) বিশ্ব উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং মরু সম্প্রসারণের প্রধান কারণ ।
( ২ ) মরুপ্রান্ত ও মরুপ্রায় অঞ্চলে দীর্ঘদিন থরা হলে তা মরুগ্রাসে পড়ে ।
( ৩ ) মরুপ্রায় অঞ্চলে অত্যধিক পশুচারণে মাটি আলগা হয়ে অঞ্চলটি মরুগ্রাসের কবলে পড়ে । পশ্চিম সাহারায় এই কারণে মরুভূমি বেড়েছে ।
( ৪ ) গাছপালা কেটে ফেলা মরু সম্প্রসারণের অন্যতম কারণ । মিশরে ফ্যারাওদের অবিবেচনাপ্রসূতভাবে গাছ কাটার কারণে মরুভূমি প্রাচীনকাল থেকেই বেড়ে চলেছে ।
( ৫ ) মরুপ্রায় অঞ্চলে অবৈজ্ঞানিক প্রথায় চাষ , অধিক জলসেচে মাটির লবণতা বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে মরু সম্প্রসারণ ঘটছে । ভারতে থর মরুভূমি এই কারণেই একটু একটু করে বাড়ছে ।
- মরুভূমি সম্প্রসারণের কারণে কী কী সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে ? অথবা , মরুসম্প্রসারণের ফলাফলগুলি কী কী ?
Answer : মরুভূমি সম্প্রসারণের ফলে সৃষ্ট সমস্যাগুলি হল –
( ১ ) বিশাল কৃষিজমি ধ্বংস হয় , সিন্ধু সভ্যতাও মরুকরণের কারণেই ধ্বংস হয়েছিল বলে মনে করা হয় ।
( ২ ) জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয় এবং উদ্ভিদ ও প্রাণীর উৎপাদন Unge IMPLE BI ক্ষমতা কমে ।
( ৩ ) মাটির জৈব পদার্থের পরিমাণ কমে জমি উর্বরতা শক্তি হারায় ।
( ৪ ) ভৌমজলের ভাণ্ডার কমে ।
( ৫ ) মরুকরণ কবলিত এলাকা থেকে মানুষকে সরতে হয় ফলে সামাজিক সমস্যা বাড়ে এবং environmental refugee এর সৃষ্টি হয় ।
( ৬ ) মরুকরণ অঞ্চলগুলিতে অর্থনৈতিক চাপ বাড়ে ।
- মরুভূমি সম্প্রসারণ রোধ কী কী উপায়ে করা যায় ?
Answer : মরুভূমি সম্প্রসারণ রোধ করার উপায়গুলি হল—
( ১ ) মরুভূমিতে যে সামান্য বৃষ্টি হয় তা থরে রাখার জন্য গর্ত , চেক ড্যাম তৈরি দরকার ।
( ২ ) জমির লবণতা যাতে কমে তার জন্য বিভিন্ন ফসলের চাষ দরকার । শুঁটি জাতীয় উদ্ভিদ চাষে জমির উর্বরতা বাড়ে ।
( ৩ ) বালিয়াড়ি সম্প্রসারণ রোধের জন্য বেড়া দেওয়ার মতো করে গাছ লাগানো দরকার । ভারতের Central Arid Zone Research . Institute ( CAZRI – সদর দপ্তর যোধপুর ) এই ব্যাপারে বেশ সাফল্য পেয়েছে ।
( ৪ ) অগভীর বালিস্তরে মুনা জাতীয় ঘাস লাগালে তা দ্রুত বেড়ে অঞ্চলকে ঢেকে দেয় । ফলে বালি উড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে ।
( ৫ ) খরা প্রতিরোধকারী বিভিন্ন গাছ লাগিয়ে সবুজ অরণ্যে ভরিয়ে দেওয়া দরকার ।
( ৬ ) পশুচারণ নিয়ন্ত্রণ দরকার ।
- মরুভূমিতে বায়ু প্রধান শক্তিরূপে কাজ করে কেন ? অথবা , মরু অঞ্চলে বায়ুর কাজের প্রাধান্য দেখা যায় কেন ?
Answer : মরুভূমিতে বায়ু প্রধান শক্তিরূপে কাজ করে কেন : ( ১ ) যান্ত্রিক আবহবিকারের প্রাবল্য : যান্ত্রিক আবহবিকারে শিলা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে অবশেষে বালিকণায় পরিণত হয় । বালি বায়ু ক্ষয়কার্যের প্রধান উপাদান । ( ২ ) বৃষ্টির অভাব : বৃষ্টি এখানে হয় না । বালিস্তর সর্বদা আলগা ও শিথিল থাকে , যা বায়ু সহজেই উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারে । ( ৩ ) গাছপালার অভাব : বৃষ্টির অভাবে গাছপালা নেই বলেই বায়ু বাধাহীনভাবে প্রবাহিত হতে পারে ।
- মরুভূমিতে বালির উৎপত্তি কীভাবে ঘটেছে ?
Answer : বালি হল শিলাজাত অজৈব পদার্থ যার ব্যাস ০.০২-২.০ মিমি । মরুভূমি গঠনের প্রধান উপাদান হল বালি । এই বালি গঠনের প্রধান উপাদান হল কোয়ার্টজ খনিজ । এ ছাড়া বালির মধ্যে থাকে ফেল্ডস্পার , অভ্র , জিপসাম প্রভৃতি খনিজ । মরুভূমি অঞ্চলের সিলিকেট সমৃদ্ধ শিলা ( গ্রানাইট , ডায়োরাইট , গ্যাব্রো , বেলেপাথর ইত্যাদি ) যান্ত্রিক অববাহিকা – এর প্রভাবে প্রথমে চূর্ণবিচূর্ণ এবং পরে অবঘর্ষ ও ঘর্ষণক্ষয় প্রক্রিয়ায় ছোটো হতে হতে শেষে বালিকণায় পরিণত হয় । এইভাবেই মরুভূমিতে বালির উৎপত্তি হয় ।
- বায়ু কোন্ কোন্ পদ্ধতিতে ক্ষয়কাজ করে ?
Answer : বায়ু তিনটি পদ্ধতিতে ক্ষয়কাজ করে— ( 1 ) অবঘর্ষ : মরু অঞ্চলে বায়ুর সাথে বাহিত বালি , অতিক্ষুদ্র প্রস্তরখণ্ড শিলাস্তরের ওপরে আছড়ে পড়ে এবং শিলার ওপর আঁচড় কাটা দাগ , গভীর ক্ষত , মৌচাকের মতো দাগ , অসংখ্য গর্ত সৃষ্টি করে , একে বলে অবঘর্ষ । অবঘর্ষ প্রক্রিয়া ভূমির সামান্য উপরে শিলাস্তরের ওপর সর্বাধিক ক্রিয়াশীল । ( 2 ) ঘর্ষণ ক্ষয় : ভূপৃষ্ঠের উপর দিয়ে বায়ুর প্রভাবে বাহিত বিভিন্ন আকৃতির নুড়ি , প্রস্তরখণ্ড একে অপরের সাথে ঠোকাঠুকিতে ভেঙে অবশেষে বালিকণায় পরিণত হয় , এটি হল ঘর্ষণ ক্ষয় প্রক্রিয়া । ( 3 ) অপবাহন : জলের অভাবে মরুভূমির বালি , পলি আলগা শিথিল অবস্থায় থাকে । তাই প্রবল বায়ুপ্রবাহে এই বালি ও পলিকণা অপসারিত হয় । এটি হল অপবাহন প্রক্রিয়া বা deflation । এর প্রভাবে মরুভূমিতে অবনত স্থান , ছোটো – বড়ো গর্তের সৃষ্টি হয় ।
- বায়ুর ক্ষয়কাজ কোন কোন বিষয়ের ওপর নির্ভর করে ।
Answer : যে যে বিষয়গুলি বায়ুর ক্ষয়কার্যকে প্রভাবিত করে , সেগুলি হল –
( ক ) শুষ্ক জলবায়ু ( Dry climate )
( খ ) স্বল্প বৃষ্টিপাত ( Scanty rainfall )
( গ ) উদ্ভিদের আবরণের স্বল্পতা ( Low vegetation )
( ঘ ) আল্গা ভূপৃষ্ঠ ( Lonse earth cover )
( ঙ ) যান্ত্রিক আবহবিকারের প্রাবল্য ( Importance of mechanical weathering )
- উপকূলে বালিয়াড়ি কীভাবে গঠিত হয় ?
Answer : সমুদ্র উপকূলের ঠিক পিছনের দিকে , প্রধানত বায়ু ও সমুদ্রতরঙ্গের কার্যের ফলে বালিয়াড়ি গড়ে ওঠে । উন্মুক্ত উপকূলের বালি উড়ে গিয়ে বেশ কিছুটা দূরে স্তূপাকারে সঞ্চিত হয় । বেলাভূমিতে এই বালি সঞ্চিত হয়ে ঢিবির মতো দেখতে বালিয়াড়ি গঠিত হয় । পূর্ব মেদিনীপুরের কাথিতে এইরূপ বালিয়াড়ি দেখা যায় ।
পার্থক্য নিরূপণ করো | বায়ু (বায়ুমণ্ডল – দ্বিতীয় অধ্যায়) – মাধ্যমিক ভূগোল সাজেশন | Madhyamik Geography Suggestion :
- বার্খান ও সিফ্ বালিয়াড়ির মধ্যে পার্থক্য করো ।
Answer :
বিষয় | বার্খান | সিফ্ বালিয়াড়ি |
সংজ্ঞা | বায়ুর গতিপথে উল্লম্বভাবে গঠিত অর্ধ চন্দ্রকার বালিয়াড়ি । | বায়ুর গতিপথে আড়াআড়িভাবে গঠিত দীর্ঘ তরবারির মতো বালিয়াড়ি । |
উচ্চতা | এর উচ্চতা ৩২ মিটার বা ১০০ ফুট । | এর উচ্চতা ১০০ মিটার । |
ঢাল | এর প্রতিবাদ অংশ মৃদু ঢাল এবং অনুবাত অংশ খাড়া । | এর ঢালের তেমন কোনো পার্থক্য নেই, উভয় দিকই প্রায় সমান ঢালবিশিষ্ট । |
অবস্থান | এগুলি ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে অবস্থান করে । | এগুলি একে অপরের সামন্তরালে অবস্থান করে । |
বৈশিষ্ট্য | এর দু – প্রান্তে দুটো শিং থাকে । | দুটি সিফের মাঝে করিডোর দেখা যায় । |
- পেডিমেন্ট ও ইনসেলবার্জ এর মধ্যে পার্থক্য করো ।
Answer :
বিষয় | পেডিমেন্ট | ইনসেলবার্জ |
সংজ্ঞা | পর্বত পাদদেশের ঢালু সমতল উচ্চভূমিকে বলে পেডিমেন্ট । | পেডিমেন্ট বা পদদেশীয় সমভূমির মাঝে অবস্থিত অনুচ্চ টিলাগুলিকে বলে ইনসেলবার্জ । |
ক্ষয়ের মাধ্যম | বায়ু ও সাময়িক জলধারার মিলিত কর্যের ফলে পেডিমেন্ট গঠিত হয় । | প্রধানত বায়ুর কার্যের ফলেই এই ভূমিরূপ গঠিত হয় । |
আকৃতি | এটি হল প্রস্তরময় এক সমতলভূমি । | এগুলি গোলাকৃতি শিখরদেশযুক্ত এবং খাড়া পার্শ্বদেশ বিশিষ্ট হয় । |
- মোনাডনক ও ইনসেলবার্জের মধ্যে পার্থক্য করো ।
Answer :
বিষয় | মোনাডনক | ইনসেলবার্জের |
বিষয় | সমপ্রায়ভূমির মধ্যে কঠিন শিলা দ্বারা গঠিত অনুচ্চ টিলা বা পাহারগুলিকে মোনাডনক বলে । | পেডিপ্লেনের মধ্যে কঠিন শিলা দ্বারা গঠিত অনুচ্চ টিলাগুলিকে ইনসেলবার্জ বলে । |
উৎপত্তি | এটি নদী বা জলধারার কার্যে গঠিত ভূমিকার । | এটি বায়ু ও জলধারার কার্যে গঠিত হয় । |
আকৃতি | এটি প্রায় গোলাকার এবং আকৃতি কিছুটা ওল্টানো গামলার মতো । | এটি মোনাডনক অপেক্ষা তীক্ষ্ণ আকৃতি বিশিষ্ট । |
অঞ্চল | এটি আদ্র অঞ্চলে গঠিত ভূমিরূপ । | এটি শুষ্ক মরুভূমি ও মরুপ্রায় অঞ্চলে গঠিত ভূমিরূপ । |
রচনাথর্মী প্রশ্নোত্তর | বায়ু (বায়ুমণ্ডল – দ্বিতীয় অধ্যায়) – মাধ্যমিক ভূগোল সাজেশন | Madhyamik Geography Suggestion :
1. আকৃতি অনুসারে বালিয়াড়ির শ্রেণিবিভাগ করো ।
Answer : বিজ্ঞানী ব্যাগনন্ডের মতে , আকৃতি অনুসারে বালিয়াড়ি প্রধানত দু – রকমের হয় , যেমন- তির্যক বালিয়াড়ি এবং ও অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি ।
(1) তির্যক বালিয়াড়ি ( Transverse Dunes ) : মরুভূমি অঞ্চলে যেখানে সারাবছর থরে একই দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হতে থাকে । সেখানে বায়ুর গতির সঙ্গে তির্যক বা আড়াআড়ি ভাবে যেসব বালিয়াড়ি গঠিত হয় তাদের তির্যক য়াড়ি বলা হয় । তির্যক বালিয়াড়ির মধ্যে বাৰ্খান উল্লেখযোগ্য ।
‘ বাৰ্খান ’ একটি তুর্কি শব্দ , এর অর্থ হল ‘ কিরঘিজ স্টেপস অঞ্চলের বালিয়াড়ি ‘ । তির্যক বালিয়াড়ির মধ্যে যে সমস্ত বালিয়াড়ির গঠন অর্ধচন্দ্রাকৃতি , অর্থাৎ যেসব বালিয়াড়িকে আধখানা চাঁদের মতো দেখতে হয় তাদের বার্খান বলে ।
বৈশিষ্ট্য : ( i ) বার্খানের দুই প্রান্তে দুটি শিং ( Horn ) – এর মতো শিরা দেখা যায় । ( ii ) এরা বায়ুর গতির দিকে ক্রমশ ঢালু এবং বিপরীত দিকে খাড়া হয়ে থাকে । ( iii ) সাধারণত মরুভূমিতে সমতল অংশে বার্থান গড়ে ওঠে । পৃথিবীর বিভিন্ন মরুভূমিতে ছোটো – বড়ো নানান আকৃতির বাখনি দেখা যায় । ( iv ) সাধারণত বার্খানের উচ্চতা ১৫-৩৫ মিটার , প্রস্থ ৪০-৭০ মিটার এবং আয়তন ৫ বর্গমিটার থেকে ২০০ বর্গমিটার পর্যন্ত হয় । সাহারা মরুভূমি অঞ্চলে অনেক বৃহদায়তন বার্খান দেখা যায় ।
(2) অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি : বায়ুর গতির সঙ্গে সমান্তরালভাবে গড়ে ওঠা বালিয়াড়িকে অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি বলা হয় । একেই সিফ বালিয়াড়ি বলা হয় । সিফ একটি আরবি শব্দ , যার অর্থ হল ‘ সোজা তলোয়ার । অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ির মধ্যে যেসব বালিয়াড়ি আকারে বেশ সরু, কিন্তু খুব লম্বা তাদের সিফ্ বালিয়াড়ি বলা হয় । এই বালিয়াড়ির অনুবাত প্রাপ্তটি তলোয়ারের মতো সরু এবং প্রতিবাত প্রান্তটিচওড়া ও গোল হয় । দুটি সি বালিয়াড়ির মধ্যবর্তী অঞ্চলকে ‘ করিডোর ’ বলে , এর মধ্য দিয়ে বায়ু প্রবল বেগে সোজা প্রবাহিত হয় । অনুদৈর্ঘ্য তথা সিহ বালিয়াড়ির কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হল :
- i) বার্থানের মধ্যভাগ বায়ুপ্রবাহের ফলে ভেঙে গিয়ে সিঙ্গ বালিয়াড়ি গঠন করে । Ii) সিফ্ট বালিয়াড়িগুলির দৈর্ঘ্য খুব বেশি কিন্তু প্রস্থ খুব কম । iii) সিক্ বালিয়াড়িগুলি কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে । iv) সময় সময় সিক্ বালিয়াড়িগুলির উচ্চতা ১০০ মিটারেরও অনেক বেশি হতে পারে । দক্ষিণ ইরানের মরুভূমিতে অবস্থিত । সিফ্ বালিয়াড়িগুলির উচ্চতা অনেক সময় ২০০ মিটার পর্যন্ত হয় । v) পরস্পর সমান্তরালভাবে একাধিক সিফ বালিয়াড়ি গড়ে ওঠে ।
2. বায়ু ও জলধারার মিলিত কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ গড়ে ওঠার কার্যকারণ সম্পর্কে আলোচনা করো ।
Answer : মর্ মরুপ্রায় অঞ্চলে হঠাৎ অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে সাময়িক সময়ের জন্য অস্থায়ী নালা সৃষ্টি হয়ে যায় । বায়ু ও জলধারার মিলিত কার্যে ভূমিরূপে নানা পরিবর্তন হয় । ( ক ) পেডিমেন্ট ( Pediment ) : পেডিমেন্ট শব্দের অর্থ ‘ পাহাড়ের দেশ ‘ ( Pedi = পাদদেশ ; Mont = পর্বত ) ।
উৎপত্তি : বায়ু ও জলধারার মিলিত কার্যের ফলে মরুভূমির পর্বতের পাদদেশে এই পেডিমেন্টের উৎপত্তি হয় । মরুমধ্যস্থিত পর্বত পাদদেশে বায়ুবাহিত ও জলধারার মিলিত ক্ষয় ও সঞ্চয় ক্রিয়ায় গড়ে ওঠা ঊর্ধ্বাংশ ঢালু ও নিম্নাংশ প্রায় সমতল আকৃতির বিশিষ্ট ভূমিরূপকে পেডিমেন্ট বলে ।
বৈশিষ্ট্য : পেডিমেন্ট শব্দটি ব্যবহার করেন জে . কে . গিলবার্ট । এর ঢাল ৬০-৭ ° মতো হয় । এর আকৃতি অবতল প্রকৃতির । পাদদেশে নুড়ি বালি জমে সাময়িক জলধারার সৃষ্টি হয় । শ্রেণিবিভাগ : পেডিমেন্ট তিন থরনের— ( i ) আবৃত পেডিমেন্ট পাতলা নুড়ির আবরণে ঢাকা পেডিমেন্ট । ( ii ) সম্মিলিত বা একত্রীভূত পেডিমেন্ট : একাধিক পেডিমেন্ট পরস্পর মিশে সৃষ্ট পেডিমেন্ট । ( iii ) ব্যবচ্ছিন্ন পেডিমেন্ট : ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলস্রোত দ্বারা বিচ্ছিন্ন পেডিমেন্ট । উদাহরণ : আফ্রিকার সাহারা মরুভূমির উত্তর – পশ্চিম প্রান্তে আটলাস পর্বতের পাদদেশে পেডিমেন্ট দেখা যায় । ( খ ) বাজাদা ( Bajada ) : মরুভূমি ও মরুপ্রায় অঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি প্রবল বর্ষণের প্রভাবে সৃষ্ট হওয়া অস্থায়ী জলধারা ও বায়ুপ্রবাহের মিলিত সঞ্চয়কাজের ফলে যে প্রায় সমতল ভূমির সৃষ্টি করে তাকে বলে বাজাদা । উৎপত্তি : কখনো কখনো মরু ও মরুপ্রায় অঞ্চলের পর্বতের পাদদেশে অস্থায়ী জলধারা বা ওয়াদি গঠিত একাধিক পলল ব্যঞ্ছনী একসঙ্গে অবস্থান করলে বাজাদা গড়ে ওঠে ।
বৈশিষ্ট্য : ( i ) সুক্ষ্ম পলি ও বালি দ্বারা গঠিত এই বাজাদা কয়েক কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত হয় । ( ii ) এর গড় ঢাল হয় ৩ ° —৪ °
উদাহরণ : সাহারা মরুভূমির আটলাস পর্বতের পাদদেশবর্তী অঞ্চলে বাজাদা ভূমিরূপ দেখা যায় । এ ছাড়া কালাহারি , আরব ও অস্ট্রেলীয় মরুভূমিতেও বাজাদা দেখা যায় । ( গ ) ওয়াদি ( Wadi ) : আরবি শব্দ ‘ ওয়াদি ’ – এর অর্থ ‘ শুষ্ক উপত্যকা ’ । মরু অঞ্চলে সৃষ্ট শুষ্ক নদীখাতগুলিকে ওয়াদি বলে । ↑ উৎপত্তি : মরু অঞ্চলে হঠাৎ প্রবল বৃষ্টি হলে , বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বেগবতী ক্ষণস্থায়ী জলধারা ঢালু পর্বতগাত্রে নদীখাতের সৃষ্টি করে । শুষ্ক অঞ্চলে জলের অধিগ্রহণ ( Infiltration ) এবং অধিক পরিমাণে বাষ্পীভবন ( Evaporation ) ফলে নদীখাত দ্রুত শুকিয়ে যায় এবং ওয়াদি সৃষ্টি হয় । মরুভূমি অঞ্চলে যেখানে ২৫-৫০ সেমি বাৎসরিক বৃষ্টি ঘটে , তখন সেখানে ওয়াদি গড়ে ওঠে ।
বৈশিষ্ট্য : ( i ) এটি স্বল্প দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট নদীখাত । ( ii ) বছরের অধিকাংশ সময়ই নদীখাত শুষ্ক থাকে । • উদাহরণ : আরব মরুভূমিতে বহু ওয়াদি দেখা যায় । ( ঘ ) প্লয়া ( Playa ) : মরু অঞ্চলে অপসারণ সৃষ্ট গর্ভে লবণাক্ত জল জমে যে হ্রদ সৃষ্টি হয় তাকে বলে পায়া । লবণাক্ত জল জমা হয় বলে ওই হ্রদকে বলে প্রায়া ; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমে W মেক্সিকোর মরু অঞ্চলে পর্বতবেষ্টিত লবণাক্ত হ্রদকে বলে বোলসন । আফ্রিকায় প্রায়াকে শট্স ( Shotts ) বলে ।
উৎপত্তি : প্রবল বায়ুপ্রবাহের ফলে মরুভূমির বালি অপসারিত হয়ে ছোটো – বড়ো অনেক গর্তের সৃষ্টি হয় । এই গর্তগুলি যদি খুব গভীর হয়ে ভূগর্ভের জলস্তরকে স্পর্শ করে , তাহলে ভূগর্ভস্থ জল ও বৃষ্টির জল জমা হয়ে সেখানে প্লায়া হ্রদের সৃষ্টি হয় ।
3. মরু অঞ্চলের সম্প্রসারণের কারণগুলি উল্লেখ করো । কোন্ কোন্ পদ্ধতিতে এই মরুপ্রসারণ প্রতিরোধ করা যায় উল্লেখ করো ।
Answer : মরুকরণ বা ‘ Desertification ‘ শব্দটি বর্তমানে বহুল প্রচলিত । জলবায়ুর পরিবর্তন , মানুষের অবিবেচক ক্রিয়াকলাপ , প্রভৃতির কারণে পৃথিবীতে মরুভূমির আয়তন ক্রমশ বেড়েই চলেছে ।
মরুভূমি সম্প্রসারণের কারণ : অরণ্যনিধন : বর্ধিত জনসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নগরায়ণ । বন কেটে বসতি গড়ে উঠছে । অরণ্য বিনাশের ফলে মাটি আলগা হয়ে পড়ায় ভূমিক্ষয় বাড়ছে । ভারতে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১৫ লক্ষ হেক্টর অরণ্য বিনষ্ট হয় । ফলে মোট ভূমিভাগের ১ % ভূমি পরিণত হয় বন্ধ্যাভূমিতে ।
ভূমি ব্যবহার : ভূমি ব্যবহার বলতে মূলত নানা উদ্দেশ্য । পুরণের জন্য কখনও অর্থনৈতিকভাবে , কখনও বা সামাজিক ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ভূমির কার্যকারিতাকে বোঝায় । ভারতের মরু অঞ্চল পৃথিবীর সব মরুভূমির মধ্যে সর্বাধিক জনবহুল । কৃষিকার্যেই যেখানে লাভজনক অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ , সেখানে অতিরিক্ত কৃষিকার্যে মাটির কণাগুলি শিথিল হয়ে ভূমিক্ষয় বাড়ায় ।
অনিয়ন্ত্রিত পশুচারণ : শুষ্ক পরিবেশে অল্প জলের মাধ্যমে যদি তৃণভূমি সৃষ্টি করা যায় তাহলে সেখানে পশুচারণভূমি গড়ে ওঠে যা জীবিকার অন্যতম মাধ্যম । কিন্তু অতিরিক্ত পশুচারণ ভূমিক্ষয় বাড়ায় । পশুর খুরের আঘাতে মাটি আলগা হয় , গাছপালার আচ্ছাদন বিনষ্ট হয় ।
ভৌমজলের অভিব্যবহার : জলসেচের মাধ্যমে শুষ্ক ভূমিকে । কৃষিযোগ্য করার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ভৌমজল তুলে নেওয়া হয় , ফলে জলের সাথে কৌশিক প্রক্রিয়ায় লবণও উঠে আসে যা কৃষি প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে । তার সাথে জলের স্তর বেশি নেমে যাওয়ায় মরুভূমির মাটি আর্দ্রতা হারিয়ে মরুকরণ পদ্ধতিকে ত্বরান্বিত করে ।
খনিজ উত্তোলন : খনিজসম্পদের দুর্লভ ভাঙার থাকায় ভূগর্ভ থেকে তা উত্তোলন করা হয় । খননকার্যের মাধ্যমে ভূমিতে ধস নামার সম্ভাবনা থাকে , মাটির স্বাভাবিক প্রথন বা বুনন নষ্ট হয় । এটিও পরোক্ষভাবে মরুপ্রসারণে সাহায্য করে ।
মরুভূমি সম্প্রসারণ রোধের উপায় : মরুভূমি সম্প্রসারণের জন্য দায়ী কারণগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা যদি সম্ভব হয় তাহলে মরুপ্রসারণ রোধ করা যাবে । মরু আগ্রাসন থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করার জন্য নিম্নলিখিত উপায়গুলি অবলম্বন করা একান্ত আবশ্যক ।
( 1 ) বৃক্ষরোপণ : গাছপালা ধুলোর ঝড়কে আটকায় , ভূমিক্ষয় রোধ করে । মরুভূমিতে গাছ লাগালে প্রাকৃতিক সুরক্ষাপ্রাচীর গড়ে তোলা যায় । বালিয়াড়ির প্রসারণের দিকে আড়াআড়িভাবে গাছ লাগাতে হবে যাতে বায়ুর ক্ষয় রোধ করা যায় । এক্ষেত্রে যে গাছগুলিকে নির্বাচন করা হয় সেগুলি হল- Senna , Gum , Acacia , Prospis , Julflora , Lebber প্রভৃতি । Wind Break দিয়ে দেয়াল তৈরি করতে হবে যাতে ঝড়ের প্রবাহ আটকানো যায় ।
( ২ ) তৃণভূমি সৃষ্টি : মরুভূমিতে মাটির আর্দ্রতা সংরক্ষণে খুঁড়ে নীচু জমিতে জল থরে রেখে মুথাজাতীয় ঘাস লাগাতে হবে । এই প্রক্রিয়ায় পশুচারণ ভূমি যেমন গড়ে তোলা যাবে , সেইসঙ্গে মাটির সিক্ততা রক্ষা করা যাবে ।
( ৩ ) জলসেচ প্রকল্প : মরুভূমির মাটিতে খনিজ মৌল উপস্থিত থাকে , জলসেচের ব্যবস্থা করা গেলে মাটির উর্বরতা বাড়ে , কৃষিকাজ করা যায় । ফলে মরুভূমি শস্যশ্যামলা হবে ও মরুকরণ বাধা পাবে ।
( ৪ ) জলসংরক্ষণ পদ্ধতি : ( i ) বেড়া দিয়ে গাছগুলিকে সংরক্ষণ করতে হবে , ( ii ) গাছের গুঁড়ির আশেপাশে নুড়ি – পাথর জড়ো করে রাখতে হবে , রাতে যে অল্প শিশির জমে সেই জল যাতে অপচয় না হয় , ( iii ) বালিয়াড়ির গায়ে দাবার ছকের মতো ছোটো ছোটো ঘর কেটে কাদাপাথর দিয়ে পাঁচিল গাঁথতে হবে । বৃষ্টির জল সাময়িক ভাবে ওই দেয়ালে বাধা পাবে যা ঘাস গজাতে সাহায্য করবে , ( iv ) মরুভূমি অঞ্চলে ঝোপ গাছ জ্বালানি রুপে ব্যবহার না করে সৌর উনুন ব্যবহারে গুরুত্ব দেওয়া , ( v ) বাঁধ বা জলাধার তৈরি করে জল থরে রাখার ব্যবস্থা করা , ( vi ) মরুভূমিতে উদ্যান তৈরি করা ও মরূদ্যানকে সংরক্ষণ করা । ( vii ) গাছের গুঁড়ির আশেপাশে নুড়িপাথর বেষ্টিত করে রাখা যাতে মরুভূমিতে রাতে ঠান্ডায় শিশির জমে ।
4. মরুভূমি অঞ্চলে বায়ু কীভাবে কাজ করে ?
Answer : মরুভূমি অঞ্চলে বায়ু প্রধানত ক্ষয়সাধন , বহন ( 3 অবক্ষেপণ — এই তিন থরনের কাজের মাধ্যমে ভূত্বকের পরিবর্তন ঘটিয়ে নানারকম ভূমিরূপ গঠন করে ।
( ক ) মরুভূমি অঞ্চলে বায়ুর ক্ষয়কাজ : মরু অঞ্চলে বায়ুর প্রধান কাজ ক্ষয়সাধন করা । বায়ুতে ভাসমান বালির পরিমাণ এবং বায়ুর গতিপথের ওপর বায়ুর ক্ষয়সাধনের ক্ষমতা নির্ভর করে । ভূপৃষ্ঠের সঙ্গে ঘর্ষণের ফলে বায়ুর শক্তি কিছুটা কমে যাওয়ায় ভূপৃষ্ঠের একেবারে কাছাকাছি বায়ুর গতিবেগ অনেকটা কম হয় । আবার ভূপৃষ্ঠ থেকে যতই উপরে ওঠা যায় — বায়ুর সঙ্গে উদ্বৃত্ত বালির পরিমাণ ততই কমে যেতে থাকে , ফলে ভূমির বেশি উপরেও বায়ুর ক্ষয়কাজের শক্তি হ্রাস পায় । সাধারণত মাটি থেকে ১ মিটার পর্যন্ত উচ্চতায় বায়ুর ক্ষয়কাজ সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে । বায়ুর ক্ষয়কাজের প্রকারভেদ : বায়ু প্রধানত তিনভাবে ক্ষয়কাজ করে , যথা— ( 1 ) অবঘর্ষ , ( 2 ) অপসারণ এবং ( 3 ) ঘর্ষণ ।
(1) অবঘর্ষ ( Abrasion ) । বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে ভাসমান বালি , ছোটো ছোটো পাথরখণ্ড , শক্ত কোয়ার্টজ কশা প্রভৃতির সঙ্গে ঘর্ষণে শিলাস্তর ক্ষয় পায় , একে অবঘর্ষ বলে । এই রকমের ঘর্ষণে শিলাস্তরে গভীর দাগ বা আঁচড়ানোর দাগ বা মৌচাকের মতো অসংখ্য ছোটো ছোটো ছিদ্রের সৃষ্টি হয় । অপবাহন না অপসারণ ( Deflation ) প্রবল বায়ুপ্রবাহের ফলে মরুভূমির শিথিল বালুকারাশি এক স্থান থেকে অপর স্থানে স্থানান্তরিত হলে তাকে অপসারণ বলা হয় । অপসারণের কাজের ফলে ধান্দ ও মরুদ্যানের সৃষ্টি হয় ।
(2) ঘর্ষণ ( Attrition ) : মরুভূমিতে প্রবলবেগে বায়ুপ্রবাহের ফলে বড়ো বড়ো পাথরগুলি পরস্পরের সঙ্গে ঠোকাঠুকি লেগে ঘষা খেয়ে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গিয়ে অবশেষে ছোটো ছোটো গোলাকৃতি বালুকণায় । পরিণত হলে তাকে ঘর্ষণ প্রক্রিয়া বলে । এই প্রক্রিয়া মরুভূমি অঞ্চলে বড়ো বড়ো পাথরের খণ্ডকে ক্ষয়প্রাপ্ত করে বালিতে পরিণত করতে সাহায্য করে । অর্থাৎ পাথরখণ্ড থেকে বায়ুর ক্ষয়কাজের শেষ পর্যায় হল বালি ।
( খ ) মরুভূমি অঞ্চলে বায়ুর বহন কাজ ক্ষয়কাজের ওপর বায়ুর দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ হল বহন প্রক্রিয়া । এই প্রক্রিয়ায় বায়ু ক্ষয়িত শিলাচূর্ণ এবং বালিকে প্রধানত তিনভাবে বহন করে , যথা 1. ভাসমান প্রক্রিয়া , 2. লঘদান প্রক্রিয়া এবং 3. গড়ানো প্রক্রিয়া ।
- ভাসমান প্রক্রিয়া : ( Suspension ) ধূলিকণা প্রভৃতি অতি সূক্ষ্ম কণা বায়ুতে ভাসমান অবস্থায় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বাহিত হয় ।
- লম্ফদান প্রক্রিয়া ( Saltation ) বায়ুকণা ভারী হওয়ায় বেশিক্ষণ বাতাসে ভেসে থাকতে পারে না । এগুলি উপর থেকে পড়ামাত্র অন্য বালুকণার সঙ্গে সংঘর্ষে প্রতিক্ষিপ্ত ( Rebound ) হয়ে আবার উপরে উঠে যায় । এইভাবে বারবার উত্থিত ও প্রতিক্ষিপ্ত হতে হতে এগুলি এক স্থান থেকে বহুদুরে বাহিত হয় ।
- গড়ালো প্রক্রিয়া ( Surface creep ) বড়ো বড়ো বালুকণা ও প্রস্তরখণ্ড ভারী হওয়ায় বাতাসে ভেসে থাকতে পারে না , মাঝে মাঝে এগুলি বায়ুতাড়িত হয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে এক স্থান থেকে অন্যত্র বাহিত হয় ।
বায়ুবাহিত বালিকণার লম্ফদান প্রক্রিয়ায় সর্বাপেক্ষা বেশি পরিমাণে বালি মরুভূমিতে এক স্থান থেকে অন্যত্র বাহিত হয় । সাহারা মরুভূমিতে এক – একটি ধূলিঝড় ( Dust – storm ) একেবারে প্রায় ২০ লক্ষ টন ধূলিকণা এক স্থান থেকে অন্যত্র বহন করতে পারে ।
( গ ) মরুভূমি অঞ্চলে বায়ুর সঞ্জয়কাজ : মরু অঞ্চলে কোনো বড়ো শিলাখণ্ডে বা ক্যাকটাস জাতীয় গাছে বায়ুবাহিত বালি বাধা পেয়ে সঞ্চিত হয় । একে বায়ুর সঞ্চয়কাজ বলে । সঞ্চয়কাজ তিনটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পাদিত হয় , যথা— 1. থিতানো প্রক্রিয়া , 2. উপলেপন প্রক্রিয়া এবং 3. অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া ।
- থিভালো ক্রিয়া ( Sedimentation ) : বায়ুবাহিত বালি দীর্ঘদিন থরে ধীরে ধীরে সঞ্চিত হলে তাকে থিতানো প্রক্রিয়া বলে ।
- উপালপন প্রক্রিয়া ( Accretion ) : বালিকণা গড়াতে গড়াতে বা লাফাতে লাফাতে দূরে গিয়ে সঞ্চিত হলে তাকে উপলেপন প্রক্রিয়া বলে ।
- অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া ( Enchor achment ) : সমতল ভূপৃষ্ঠে বালি আটকে গিয়ে সজ্জিত হলে তাকে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া বলে ।
5. বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপের বিবরণ দাও ।
Answer : শুদ্ধ গাছপালাহীন মরু বা মরুপ্রায় প্রান্তের ও উপকূলের বালিয়াড়ি অঞ্চলের সর্বাধিক ক্ষয়কারী প্রাকৃতিক শক্তি বায়ুপ্রবাহ বায়ুর ক্ষয়জাত ভূমিরূপগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল –
( ক ) সার সৃষ্ট গর্ভ ( Defiation hollow ) : মরু অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহের তীর আঘাতে স্থানে স্থানে হাজার হাজার টন বালি অপসারণ প্রক্রিয়ার ফলে স্থানান্তরে পরিবাহিত হয় । ফলে বিশাল অঞ্চলজুড়ে ছোটো – বড়ো গর্ভ সৃষ্টি হয় । একে বলে অপসারণ সৃষ্ট গর্ত ।
- বৈশিষ্ট্য অনেকদিন থরে অপসারণ কার্য চলায় ভূমিভাগে গভীর গর্ত সৃষ্টি হয় । ফলে কখনো কখনো ভূমিভাগের ভৌমজলস্তর উন্মুক্ত হয়ে জলাশয় গড়ে উঠতে পারে । ওই মরূদ্যানের সিপ্ত অঞ্চলে গাছপালা জন্মায় ।
- উদাহরণ মিশরে কাতার ( প্রায় ৪৪০ ফুট গভীর ) পৃথিবীর বৃহত্তম অপসারণ সৃষ্ট গর্ত ।
( খ ) গৌর ( Gour ) : গৌর হল বায়ুর ক্ষয়কাজের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপের এক অন্যতম নিদর্শন । বায়ুর গতিপথে কঠিন ও কোমল শিলায় গড়া কোনো বৃহৎ শিলাখণ্ড অনুভূমিকভাবে অবস্থান করলে নীচের কোমল অংশে বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন দিক থেকে প্রবাহিত বায়ুর অবঘর্ষজনিত ক্ষয়কাজের তীব্রতা বেশি হওয়ার জন্য শিলাস্তূপটির নীচের অংশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে সরু স্তম্ভের মতো হয় এবং উপরের কম ক্ষয়প্রাপ্ত কঠিন অংশটি বিরাট আয়তন নিয়ে ব্যাঙের ছাতা বা স্তম্ভের মতো দাঁড়িয়ে থাকে । স্তম্ভাকৃতি এইরকম শিলাখণ্ডকে গৌর বলে ।
উদাহরণ : আফ্রিকার সাহারা মরুভূমি এবং এশিয়ার ইরান মরুভূমিতে অনেক গৌর আকৃতির ভূমিরূপ দেখা যায় । বৈশিষ্ট্য : ( i ) জার্মান ভাষায় গৌরকে ফিটজফেলসেন ( pitzfelsen ) বলে । ( ii ) অনেক সময় গৌরের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে এক থরনের রঙের প্রলেপ সৃষ্টি হয় । এই থরনের গৌরকে ডেজার্টভার্নিস বলে ।
উদাহরণ আফ্রিকার সাহারা ও এশিয়ার ইরানের মরুভূমিতে দেখা যায় । ( গ ) ইয়ারদাং ( Yardang ) : মরুভূমি অঞ্চলে কঠিন ও কোমল শিলাস্তর পাশাপাশি লম্বভাবে অবস্থান করলে দীর্ঘকাল থরে অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় বায়ু কোমল শিলা দ্রুত ক্ষয় করে গহ্বর বা সুড়ঙ্গের মতো ভূমিরূপ গঠন করে । কঠিন শিলাস্তরগুলি পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বিভিন্ন মূর্তি গঠন করে । এই বিশেষ ভূমিরূপকে বলে ইয়ারদাং ।
বৈশিষ্ট্য : ( ক ) ইয়ারদাং দেখতে অনেকটা পাঁজরের মতো । ( খ ) এর গড় উচ্চতা প্রায় ৭ মিটার । ( গ ) কোমল শিলায় গঠিত গর্তের দু – পাশ নালিকার মতো হয় ।
উদাহরণ : দক্ষিণ আমেরিকার চিলির আটাকামা মরুভূমি , মধ্যএশিয়ার তুর্কিস্তান মরুভূমিতে ইয়ারদাং দেখা যায় ।
( ঘ ) জিউগেন ( Zeugen ) : মরুভূমি অঞ্চলে উপরের স্তরে কঠিন শিলা ও নীচে কোমল শিলাগঠিত অংশে পর্যায়ক্রমে –অনুভূমিকভাবে থাকা পাঠন ও কোমল অনুভূমিকভাবে অবস্থান করলে অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় বায়ুর ক্ষয়কাজে কঠিন শিলাগঠিত অংশে অতি অল্প ক্ষয় পেয়ে চ্যাপটা প্রায় সমতল চুড়াবিশিষ্ট টিলার মতো দাঁড়িয়ে থাকে এবং কোমল শিলাস্তর বেশি ক্ষয় পেয়ে ফাটল বরাবর লম্বা খাত বা গহ্বর সৃষ্টি হয় । এই বিশেষ ভূমিরূপের নাম জিউগেন ।
বৈশিষ্ট্য : জিউগেনের গড় উচ্চতা ৩ – ৩০ মিটার পর্যন্ত হয় । জিউগেন দেখতে সারিবদ্ধ চ্যাপটা মাথাযুক্ত ভূমিরূপ ।
উদাহরণ : উত্তর আমেরিকার সোনেরান মরুভূমিতে দেখা যায় ।
( ঙ ) ইনসেলবার্জ ( Inselberg ) : জার্মান শব্দ ইনসেলবার্জ – এর অর্থ দ্বীপময় পাহাড় । প্রায় সমতল মরুভূমির মাঝে বিক্ষিপ্তভাবে জেগে থাকা সমান উচ্চতাবিশিষ্ট কঠিন শিলা গঠিত অবশিষ্ট মসৃণ টিলাকে বলে ইনসেলবার্জ । • নামকরণ : ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে ভূবিজ্ঞানী পাসার্জ ( S. Passarge ) সমগ্ৰায়ভূমির অবশিষ্ট টিলাকে ইনসেলবার্জ নামকরণ করেন । ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে ভূবিজ্ঞানী বর্নহার্ডট ( W.A. Bornhardt ) পূর্ব আফ্রিকার অবশিষ্ট পাহাড়কে প্রথম নামকরণ করেন ।
বৈশিষ্ট্য : ( i ) দীর্ঘদিন থরে ক্ষয়ে যাওয়ার ফলে মসৃণ , গোলাকার হয় ; ( ii ) ইনসেলবার্জ গ্রানাইট , নিস্ জাতীয় আগ্নেয় ও রূপান্তরিত শিলা দ্বারা গঠিত ; ( iii ) এদের উচ্চতা ৩০–৩০০ মিটার ; ভূমির ঢাল তীক্ষ্ণ , ( iv ) ক্ষয়ে গেলে বোর্নহার্ড , ক্যাসেলকপিজ ও টরস্ ( Tors ) গঠিত হয় ।
জেনে রাখো : দীর্ঘদিন থরে ক্ষয়কার্য চলার ফলে ইনসেলবার্জগুলি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যে ছোটো ছোটো টিলায় পরিণত হয় , তাকে বলে টরস্ ( Tors ) । আবার প্রচুর পরিমাণে শিলাখণ্ড কোনো স্থানে একসাথে যে ভূমিরূপ গড়ে ওঠে , তাকে বলে কোপিস | ( Koppise ) । ভারতের দাক্ষিণাত্য মালভূমির বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে এইসব দেখতে পাওয়া যায় ।
6. বায়ুর সঞ্জয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপের বিবরণ দাও ।
Answer : কোনো বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বায়ুবাহিত বালি বাধা পেয়ে জমা হয় । বায়ুর সঞ্চয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল –
( ক ) বালিয়াড়ি ( Dune ) : কোনো বিস্তীর্ণ স্থানজুড়ে থাকা উঁচু ও দীর্ঘ বালির স্তূপকে বলে বালিয়াড়ি । মরুভূমি ও সমুদ্রোপকূলে বালিয়াড়ি দেখা যায় । TOMARTISORY বিজ্ঞানী ব্যাগনল্ডের মতে আকৃতি অনুসারে বালিয়াড়ি দু – রকম— ( ১ ) তির্যক বালিয়াড়ি ( ২ ) অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি ।
( ১ ) তির্যক বালিয়াড়ি ( Transverse dune ) : মরুভূমি অঞ্চলে যেখানে সারাবছর থরে একই দিকে বায়ু প্রবাহিত হতে থাকে সেখানে বায়ুর গতির সঙ্গে তির্যক বা আড়াআড়ি ভাবে যেসব বালিয়াড়ি গড়ে ওঠে তাকে বলে তির্যক বালিয়াড়ি । তির্যক বালিয়াড়িগুলির মধ্যে বার্খান পাঠ্যক্রমের অন্তর্গত ।
( ২ ) বাৰ্খান বালিয়াড়ি ( Barkhan ) : বাৰ্খান একটি তুর্কি শব্দ ; এর অর্থ হল কিরঘিজ , স্টেপ অঞ্চলের বালিয়াড়ি । যে সমস্ত বালিয়াড়ির গঠন অর্ধচন্দ্রাকার বা আধখানা চাঁদের মতো দেখতে হয় তাদের বাৰ্খান বলে ।
বৈশিষ্ট্য : ( ক ) বার্খানের দুটি প্রান্তে দুটি শিরার মতো শিং ( Horn ) দেখা যায় । ( খ ) এরা বায়ুর গতির দিকে ক্রমশ ঢালু এবং বিপরীত দিকে খাড়া হয়ে থাকে । ( গ ) বার্থানের উচ্চতা ১৫–৩৫ মিটার , প্রস্থ ৪০–৭০ মিটার , আয়তন ৫ বর্গকিমি থেকে ২০০ বর্গমিটার পর্যন্ত হয় ।
উদাহরণ : সাহারা মরুভূমিতে অনেক বৃহদায়তন বাৰ্খান দেখা যায় ।
( ২ ) অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি বা সিক্ বালিয়াড়ি ( Scif dune ) স্থায়ী বালিয়াড়ির মধ্যভাগ বায়ুতাড়িত হয়ে ভেঙে গিয়ে বায়ুর গতিপ্রবাহের সঙ্গে সমান্তরালে অনুদীর্ঘ বালিয়াড়ি গঠন করে । বায়ুর গতির সঙ্গে সমান্তরালভাবে গড়ে ওঠা বালিয়াড়িকে অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি বলা হয় । অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ির একটি বিশেষ রূপ হল সিফ দয়াড়ি ।
সিদ্ধ বালিয়াতি : সিফ্ট একটি আরবি শব্দ , যার অর্থ সোজা তলোয়ার । অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ির মধ্যে যেসব বালিয়াড়ি আকারে বেশ সরু কিন্তু খুব লম্বা তাদের বলে সিফ্ বালিয়াড়ি ।
বৈশিষ্ট্য : ( ক ) এই বালিয়াড়ির অনুবাত প্রান্তটি তলোয়ারের মতো সরু এবং প্রতিবাত প্রান্তটি চওড়া ও গোল হয় ।
( খ ) দুটো সিফ্ বালিয়াড়ির মধ্যবর্তী অঞ্চলকে করিডোর বলে ; এর মধ্য দিয়ে বায়ু প্রবলবেগে সোজা প্রবাহিত হয় ।
( গ ) সি বালিয়াড়ি দৈর্ঘ্যে খুব বড়ো হয় ; প্রস্থে ছোটো হয় ।
( ঘ ) সি বালিয়াড়ির উচ্চতা ১০০ মিটার হয় ।
( ঙ ) পরস্পর সমান্তরালে একাধিক সিফ্ বালিয়াড়ি গঠিত হয় । উদাহরণ : দক্ষিণ ইরানের মরুভূমিতে সিফ্ বালিয়াড়ি দেখা যায় ।
[ খ ] লোয়েস ( Loess ) বায়ুর পরিবহণ ও অবক্ষেপণের মাধ্যমে গঠিত সমভূমি হল লোয়েস । লোয়েস শব্দের অর্থ ‘ স্থানচ্যূত বস্তু ’ । মরুভূমির হলুদ ও ধূসের বর্ণের কোয়ার্টজ , ফেল্ডস্পার , ডলোমাইট ও অন্যান্য খনিজ সমৃন্য ০.০৫ মিমি ব্যাসযুক্ত সূক্ষ্ম বালিকণা , মাটিকণা বায়ুর সঙ্গে দূরে উড়ে গিয়ে দূরবর্তী নীচু ভূমি ভরাট করে লোয়েস গঠন করে । বৈশিষ্ট্য কখনো কখনো মরুভূমির বালি বায়ু দ্বারা অপসারিত হয়ে পার্শ্ববর্তী কোনো উর্বর কৃষি ভূমিকে ক্রমশ ঢেকে ফেলে জমির উর্বরতা নষ্ট করে দেয় । ধীরে ধীরে কৃষি ভূমিটিকে মরুভূমি গ্রাস করে ফেলে ।
উদাহরণ মধ্য এশিয়ার গোবি মরুভূমি থেকে শীতকালীন উত্তর – পূর্ব মৌসুমি বায়ু বাহিত হয়ে বিপুল পরিমাণে বালি ও মাটি কণা উত্তর চিনের হোয়াংহো নদী অববাহিকায় দীর্ঘদিন থরে সঞ্ছিত হয়ে সেখানে লোয়েস সমভূমি সৃষ্টি করেছে ।
=========================
বিভাগ ‘ক’
১) বিকল্পগুলির থেকে সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করে লেখঃ-
১.১) ক্ষুদ্র মন্ডল বলা হয় –
(ক) মেসোস্ফিয়ারকে
(খ) ট্রপোস্ফিয়ারকে
(গ) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারকে
(ঘ) ম্যাগনেটোস্ফিয়ারকে
উত্তরঃ (খ) ট্রপোস্ফিয়ারকে
১.২) বায়ুমণ্ডলের ওজোন গ্যাস_________ স্তরে ঘণ অবস্থান থাকে। –
(ক) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার
(খ) মেসোস্ফিয়ার
(গ) ট্রপোস্ফিয়ার
(ঘ) আয়নোস্ফিয়ার
উত্তরঃ (ক) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার
১.৩) অতিবেগুনি রশ্মি শোষিত হয় –
(ক) মেসোস্ফিয়ারে
(খ) ট্রপোস্ফিয়ারে
(গ) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে
(ঘ) আয়নোস্ফিয়ারে
উত্তরঃ (ঘ) আয়নোস্ফিয়ারে
১.৪) ওজন গহ্বর তৈরি হয়েছে –
(ক) নিরক্ষীয় অঞ্চলে
(খ) সুমেরু অঞ্চলে
(গ) কুমেরু অঞ্চলে
(ঘ) ক্রান্তীয় অঞ্চলে
উত্তরঃ (গ) কুমেরু অঞ্চলে
১.৫) বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ –
(ক) ০.০৪%
(খ) 0.01%
(গ) 0.02%
(ঘ) 0.33%
উত্তরঃ (ক) ০.০৪%
১.৬) পৃথিবীর গড় অ্যালবেডো –
(ক) 34 শতাংশ
(খ) 40 শতাংশ
(গ) 50 শতাংশ
(ঘ) 66 শতাংশ
উত্তরঃ (ক) 34 শতাংশ
১.৭) সূর্য থেকে পৃথিবীর দিকে আসা রশ্মির যে অংশ পুনরায় মহাশূন্যে ফেরত যায় তাকে বলে –
(ক) অ্যালবেডো
(খ) বিউফোর্ট
(গ) বিকিরণ
(ঘ) পরিচলন
উত্তরঃ (ক) অ্যালবেডো
১.৮) বায়ুর উষ্ণতা কোন যন্ত্রের সাহায্যে মাপা হয় –
(ক) ব্যারোমিটার
(খ) অ্যানিমোমিটার
(গ) থার্মোমিটার
(ঘ) ক্যালরীমিটার
উত্তরঃ (গ) থার্মোমিটার
১.৯) অ্যালবেডোর পরিমাণ সবচেয়ে বেশি হয় –
(ক) বালির ওপর
(খ) তুষার ক্ষেত্রে
(গ) বনভূমিতে
(ঘ) জল ভাগের ওপর
উত্তরঃ (খ) তুষার ক্ষেত্রে
১.১০) El Nino দেখা যায় –
(ক) বঙ্গোপসাগরে
(খ) ভারত মহাসাগরে
(গ) প্রশান্ত মহাসাগরে
(ঘ) আটলান্টিক মহাসাগরে
উত্তরঃ (গ) প্রশান্ত মহাসাগরে
১.১১) doldrum সৃষ্টি হয় –
(ক) নিরক্ষীয় অঞ্চলে
(খ) কর্কটীয় ও মকরীয় অঞ্চলে
(গ) মেরু অঞ্চলে
(ঘ) উপ-ক্রান্তীয় অঞ্চলের
উত্তরঃ (ক) নিরক্ষীয় অঞ্চলে
১.১২) আয়ন বায়ু কে যে নামে ডাকা হয় –
(ক) সাময়িক বায়ু
(খ) পশ্চিমা বায়ু
(গ) মেরু বায়ু
(ঘ) বাণিজ্য বায়ু
উত্তরঃ (ঘ) বাণিজ্য বায়ু
১.১৩) গর্জনশীল চল্লিশা বলা হয় –
(ক) 40 ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ
(খ) 40 ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশ
(গ) 40 ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমা
(ঘ) 40 ডিগ্রি পশ্চিম দ্রাঘিমা
উত্তরঃ (খ) 40 ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশ
১.১৪) Coriolis শক্তির প্রভাবে বায়ুর –
(ক) চাপের পরিবর্তন হয়
(খ) গতিবেগের পরিবর্তন হয়
(গ) দিক বিক্ষেপ হয়
(ঘ) উষ্ণতার পরিবর্তন হয়
উত্তরঃ (গ) দিক বিক্ষেপ হয়
১.১৫) ক্যারিবিয়ান সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের নাম –
(ক) হ্যারিকেন
(খ) সাইক্লোন
(গ) টাইফুন
(ঘ) খামসিন
উত্তরঃ (ক) হ্যারিকেন
১.১৬) ভারতের একটি বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল হলো –
(ক) পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢাল
(খ) পূর্বঘাট পর্বতের পূর্বঢাল
(গ) হিমালয়ের দক্ষিণ ঢাল
(ঘ) শিলং
উত্তরঃ (ঘ) শিলং
১.১৭) পরিপৃক্ত বায়ুর উষ্ণতা শিশিরাঙ্কের নিচে নেমে গেলে কি হয়? –
(ক) বাষ্পীভবন
(খ) অধঃক্ষেপণ
(গ) ঘনীভবন
(ঘ) তুষারপাত
উত্তরঃ (গ) ঘনীভবন
১.১৮) সম্পৃক্ত বায়ুর আপেক্ষিক আদ্রতা হল –
(ক) 70 percent
(খ) 80 percent
(গ) 90 percent
(ঘ) 100 percent
উত্তরঃ (ঘ) 100 percent
১.১৯) উষ্ণতার সঙ্গে আপেক্ষিক আর্দ্রতার সম্পর্ক –
(ক) ব্যস্তানুপাতিক
(খ) সমানুপাতিক
(গ) ধনাত্মক
(ঘ) সম্পর্কযুক্ত নয়
উত্তরঃ (ক) ব্যস্তানুপাতিক
১.২০) আপেক্ষিক আর্দ্রতা মাপা হয় যে যন্ত্রের সাহায্যে তা হলো –
(ক) হাইগ্রোমিটার
(খ) ব্যারোমিটার
(গ) থার্মোমিটার
(ঘ) অলটিমিটার
উত্তরঃ (ক) হাইগ্রোমিটার
বিভাগ ‘খ’
২) ২.১) নিম্নলিখিত বাক্যগুলি শুদ্ধ হলে পাশে ‘শু’ এবং অশুদ্ধ হলে পাশে ‘অ’ লেখ:-
২.১.১) ধূলিকণার জন্য আকাশে বর্ণবৈচিত্র্য দেখা যায়।
উত্তরঃ শু
২.১.২) ট্রপোস্ফিয়ারে ধূলিকণার উপস্থিতি সর্বাধিক।
উত্তরঃ শু
২.১.৩) Troposphere ও Stratosphere এই দুই স্তরের সীমা নির্দেশক সংযোগস্থলকে ট্রপোপজ বলে।
উত্তরঃ শু
২.১.১) পৃথিবীর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সবচেয়ে বেশি গ্রিনহাউস গ্যাস উৎপাদিত হয়।
উত্তরঃ শু
২.১.২) নিরক্ষীয় অঞ্চলে সারাবছর গ্রীষ্ম ঋতু দেখা যায়।
উত্তরঃ শু
২.১.৩) উদ্ভিদ হীন অঞ্চলে বায়ুর উষ্ণতা চরম প্রকৃতির হয়।
উত্তরঃ শু
২.১.৪) বায়ুর উষ্ণতা এবং চাপের সম্পর্ক বিপরীতমুখী।
উত্তরঃ শু
২.১.৫) পশ্চিমা বায়ুর অন্য নাম প্রত্যয়ন বায়ু।
উত্তরঃ শু
২.১.৬) জেট বায়ু একধরনের Geostrophic বায়ু।
উত্তরঃ শু
২.১.৭) তুন্দ্রা অঞ্চলে বছরে 8 থেকে 9 মাস তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে থাকে।
উত্তরঃ শু
২.১.৮) ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে উষ্ণতা বেশি এবং মে-জুন মাসে উষ্ণতা কম হলে স্থানটি দক্ষিণ গোলার্ধে হবে।
উত্তরঃ শু
২.১.৯) নিরক্ষীয় অঞ্চলে বৃষ্টিপাত মূলত বিকেল চারটে নাগাদ হয়ে থাকে।
উত্তরঃ শু
২.২) উপযুক্ত শব্দ বসিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করঃ-
২.২.১) বায়ুর উপাদান গুলির মধ্যে প্রধান হল_______ও _____।
উত্তরঃ নাইট্রোজেন, অক্সিজেন
২.২.২) জলীয়বাষ্প বায়ুমন্ডলের ভাসমান _______ কে আশ্রয় করে মেঘ ও কুয়াশা সৃষ্টি করে।
উত্তরঃ ধূলিকণা
২.২.৩) _______স্তরকে প্রাকৃতিক সৌর পর্দা’ বলে।
উত্তরঃ ওজোন
২.২.৪) আলো ও উত্তাপে মাধ্যমে সূর্য থেকে যে রশ্মি ভূপৃষ্ঠে পরে তাকে ______বলে।
উত্তরঃ Insulation
২.২.৫) সমুদ্র থেকে যত দূরে যাওয়া যায় ততোই জলবায়ু _____ প্রকৃতির হয়।
উত্তরঃ চরমভাবাপন্ন
২.২.৬) উষ্ণমণ্ডলীয় গড় তাপমাত্রা ______।
উত্তরঃ 27 ডিগ্রি সেলসিয়াস
২.২.৭) বায়ু প্রবাহের দিক নির্ণয় করা হয় ________ এর সাহায্যে।
উত্তরঃ বাত পতাকা
২.২.৮) ঘূর্ণবাত যাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় তাকে ____বলে।
উত্তরঃ ঘূর্ণবাতের চক্ষু
২.২.৯) সমচাপ রেখাগুলি চক্রাকারে খুব কাছাকাছি অবস্থান করলে ________এর সম্ভাবনা থাকে।
উত্তরঃ ঝড়
২.২.১০) বৃষ্টির সাথে সাথে বিভিন্ন আয়তনের বরফ টুকরো পড়াকে _______ বলে।
উত্তরঃ শিলা বৃষ্টি
২.২.১১) গ্রীষ্মে বৃষ্টিপাত কিন্তু শীতে শুষ্ক জলবায়ু হল _____ জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য।
উত্তরঃ মৌসুমী
২.২.১২) ধোঁয়া এবং কুয়াশা মিলে তৈরি হয়_______ ।
উত্তরঃ ধোঁয়াশা
২.৩) একটি বা দুটি শব্দ উত্তর দাওঃ-
২.৩.১) কোন্ স্তর থাকার জন্য আমরা রেডিওতে গান শুনতে পায়?
উত্তরঃ আয়োনোস্ফিয়ার
২.৩.২) বায়ুমন্ডলের দুটি নিষ্ক্রিয় গ্যাসের নাম লেখ।
উত্তরঃ আর্গন ও নিয়ম
২.৩.৩) কোন্ স্তরকে ‘পৃথিবীর ছাতা’ বলা হয়?
উত্তরঃ ওজোন স্তর কে
২.৩.৪) বায়ুর উষ্ণতা স্বাভাবিক হ্রাসের হার কত?
উত্তরঃ প্রতি 1000 মিটার উষ্ণতাই 6.5 ডিগ্রি সেলসিয়াস
২.৩.৫) এসি মেশিন, ফ্রিজ থেকে কোন ধরনের গ্রীন হাউজ গ্যাস নির্গত হয়?
উত্তরঃ ক্লোরো ফ্লোরো কার্বন
২.৩.৬) পেরু ইকুয়েডরে প্রবল বৃষ্টির কারণ কি?
উত্তরঃ El Nino
২.৩.৭) বায়ু চাপ মাপার একক কি?
উত্তরঃ Millibar
২.৩.৮) বায়ুর চাপ নির্দেশক রেখা গুলিকে কি বলে?
উত্তরঃ সমপ্রেষরেখা
২.৩.৯) পৃথিবীর আবর্তনের জন্য কোন্ বলেন সৃষ্টি হয়?
উত্তরঃ কোরিওলিস বলের
২.৩.১০) বায়ুর ঘনীভবনের যেকোনো একটি উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ শিশির
২.৩.১১) ঘনীভবন এবং অধঃক্ষেপণ এর উৎস কি?
উত্তরঃ জলীয় বাষ্প
২.৩.১২) বায়ুমণ্ডল থেকে জল কনা কঠিন অবস্থা অথবা তরল রূপে ভূপৃষ্ঠে পড়াকে কি বলে?
উত্তরঃ অধঃক্ষেপণ
২.৪.১) বাম দিকের সাথে ডানদিকের গুলি মিলিয়ে লেখ :
বাম দিক ডান দিক
২.৪.১) Troposphere (ক) বেতার তরঙ্গের প্রতিফলন
২.৪.২) Stratosphere (খ) মেঘ সৃস্টির সংঘটন
২.৪.৩) Mesosphere (গ) উল্কা পুড়ে যায়
২.৪.৪) Ionosphere (ঘ) অতিবেগুনি রশ্মির শোষণ
উত্তরঃ ২.৪.১) Troposphere – (খ) মেঘ সৃস্টির সংঘটন ২.৪.২) Stratosphere – (ঘ) অতিবেগুনি রশ্মির শোষণ ২.৪.৩) Mesosphere – (গ) উল্কা পুড়ে যায় ২.৪.৪) Ionosphere – (ক) বেতার তরঙ্গের প্রতিফলন
২.৪.২) বাম দিকের সাথে ডানদিকের গুলি মিলিয়ে লেখঃ-
বাম দিক ডান দিক
২.৪.১) El Nino (ক) সমুদ্র জলের উচ্চতা বৃদ্ধি
২.৪.২) মেরু বরফের গলন (খ) উষ্ণতা কম
২.৪.৩) মেঘাচ্ছন্নতা (গ) ভূমির সমান্তরালে তাপপ্রবাহ
২.৪.৪) অ্যাডভেকশন (ঘ) ভারতে খরা
উত্তরঃ ২.৪.১) el nino – (ঘ) ভারতে খরা ২.৪.২) মেরু বরফের গলন – (ক) সমুদ্র জলের উচ্চতা বৃদ্ধি ২.৪.৩) মেঘাচ্ছন্নতা (খ) উষ্ণতা কম ২.৪.৪) অ্যাডভেকশন – (গ) ভূমির সমান্তরালে তাপপ্রবাহ
২.৪.৩) বাম দিকের সাথে ডানদিকের গুলি মিলিয়ে লেখঃ-
বাম দিক ডান দিক
২.৪.১) সিরোক্কো (ক) রাইন নদীর উপত্যকা
২.৪.২) ফন (খ) সিসিলি দ্বীপ
২.৪.৩) চিনুক (গ) রোন নদীর উপত্যকা
২.৪.৪) মিস্ট্রাল (ঘ) প্রেইরি অঞ্চল
উত্তরঃ ২.৪.১) সিরোক্কো – (খ) সিসিলি দ্বীপ ২.৪.২) ফন – (ক) রাইন নদীর উপত্যকা ২.৪.৩) চিনুক – (ঘ) প্রেইরি অঞ্চল – (গ) রোন নদীর উপত্যকা
২.৪.৪) বাম দিকের সাথে ডানদিকের গুলি মিলিয়ে লেখঃ-
বাম দিক ডান দিক
২.৪.১) শিশির (ক) অধঃক্ষেপণ
২.৪.২) কুয়াশা (খ) ধোঁয়া ও কুয়াশার মিশ্রণ
২.৪.৩) ধোঁয়াশা (গ) ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন ঘনীভবন
২.৪.৪) গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি (ঘ) জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে জলবিন্দুর আকারে ঘাসের উপর জমে
উত্তরঃ ২.৪.১) শিশির – (ঘ) জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে জলবিন্দুর আকারে ঘাসের উপর জমে ২.৪.২) কুয়াশা – (গ) ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন ঘনীভবন ২.৪.৩) ধোঁয়াশা – (খ) ধোঁয়া ও কুয়াশার মিশ্রণ ২.৪.৪) গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি – (ক) অধঃক্ষেপণ
বিভাগ ‘গ’
৩) নিচের প্রশ্নগুলো সংক্ষিপ্ত উত্তর দাওঃ-
৩.১) ওজোনস্তর ধ্বংস কারী গ্যাসগুলির নাম লেখ।
উত্তরঃ ওজোনস্তর ধ্বংস কারী গ্যাসগুলির নাম হল – (১) ক্লোরোফ্লুরোকার্বন, (২) মিথেন, (৩) নাইট্রাস অক্সাইড, (৪) হ্যালন।
৩.২) বায়ুমন্ডলের উপাদান সমূহ কি কি?
উত্তরঃ বায়ুমন্ডলের উপাদান সমূহ হল – (১) অক্সিজেন (২) নাইট্রোজেন (৩) কার্বন-ডাই-অক্সাইড, (৪) মিথেন
৩.৩) অ্যারোসেল কি?
উত্তরঃ বায়ুমন্ডলে ভাসমান সূক্ষ্ম ধূলিকণাকে অ্যারোসেল বলে। অ্যারোসেলকে আশ্রয় করেই জলীয় বাষ্প বাতাসে ভেসে বেড়ায়।
৩.৪) বায়ুমণ্ডলের ওজোন গ্যাসের প্রয়োজনীয়তা কি?
উত্তরঃ যেখানে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ওজোনের ঘনত্ব ২০০ ডবসন ইউনিট-এর কম এবং সেখান দিয়ে অতিবেগুনি রশ্মি প্রবেশ করে তা হল ওজোন হোল বা ওজোন গহ্বর। অ্যান্টার্কটিকা অঞ্চলে ওজোন গহ্বর তৈরি হয়েছে।
৩.৫) ট্রপোপজ কাকে বলে?
উত্তরঃ ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বে ৩ কিমি পর্যন্ত অংশে উষ্ণতা একই থাকে – হ্রাস বা বৃদ্ধি কিছুই ঘতে না। একে ট্রপোপজ বলে। ট্রপোপজ হল ট্রপোস্ফিয়ার ও স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের সীমারেখা।
৩.৬) সমোষ্ণ রেখা কাকে বলে?
উত্তরঃ ভূপৃষ্ঠের সম উষ্ণতা বিশিষ্ট বিভিন্ন স্থানগুলিকে মানচিত্রে যে রেখা দিয়ে যুক্ত করা হয়, তাকে সমোষ্ণ রেখা বলা হয়।
৩.৭) অ্যালবেডো কি?
উত্তরঃ আগত সৌররশ্মির প্রায় ৩৪% মেঘপুঞ্জ, ধূলিকণা, দ্বারা প্রতিফলিত হয়ে মহাশূন্যে ফিরে যায়। এই রশ্মি পৃথিবী ও বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে না, একে অ্যালবেডো বলে।
৩.৮) গ্রীন হাউজ প্রভাব কি?
উত্তরঃ যে পদ্ধতিতে ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সূর্যালোক পৃথিবীপৃষ্ঠে প্রতিফলিত হওয়ার ফলে সৃষ্ট দীর্ঘ তরঙ্গ রশ্মি বায়ুমন্ডলের কিছু গ্যাস দ্বারা শোষিত হয় এবং পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি করে তা হল গ্রিনহাউস প্রভাব।
৩.৯) বিশ্ব উষ্ণায়ন কি?
উত্তরঃ গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রভাবে পৃথিবীর উষ্ণতা ক্রমবর্ধমান হারে বেড়েই চলেছে। ফলে জলবায়ুরও পরিবর্তন হচ্ছে। এই বিশেষ উষ্ণকরণের প্রক্রিয়াকে বলে বিশ্ব উষ্ণায়ন।
৩.১০) অ্যাডভেকশন কি?
উত্তরঃ ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে অনুভূমিকভাবে বায়ুপ্রবাহের মাধ্যমে তাপের সঞ্চালন ঘটলে তাকে অ্যাডভেকশন বলে। এই পদ্ধতির মাধ্যমেই নিম্ন অক্ষাংশের উষ্ণতা উচ্চ অক্ষাংশের দিকে সঞ্চালিত হয়। ভারতের উত্তর-পশ্চিমে প্রবাহিত লু অ্যাডভেকশন পদ্ধতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
৩.১১) আশ্বিনের ঝড় কাকে বলে?
উত্তরঃ অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে মকরক্রান্তীয় অঞ্চলে সূর্য লম্বভাবে কিরণ দেওয়ায় ভারত মহাসাগরের জলভাগ ভারতের স্থলভাগ অপেক্ষা অধিক উত্তপ্ত হয়। ফলে ভারতের স্থলভাগ থেকে উচ্চচাপের বায়ু ভারতমহাসাগরের নিম্নচাপের দিকে ধাবিত হয়। এই বায়ুর সঙ্গে অপেক্ষাকৃত আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর সংঘর্ষে পশ্চিমবঙ্গে যে ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয় তাকে আশ্বিনের ঝড় বলে।
৩.১২) ঘূর্ণবাতের চক্ষু কাকে বলে?
উত্তরঃ ক্রান্তীয় অঞ্চলে অতি বিধ্বংসী ঝড়ের কেন্দ্রে উষ্ণতা বেশি হয়, মেঘ প্রায় থাকে না বললেই চলে এবং বায়ুর গতিবেগও খুব কম। ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের এই কেন্দ্রকে ঘূর্ণবাতের চক্ষু বলে। ঘূর্ণবাতের চক্ষুর পরিধি সর্বাধিক ৮০ কিমি পর্যন্ত গতে পারে।
৩.১৩) গর্জনশীল চল্লিশা কাকে বলে?
উত্তরঃ দক্ষিণ গোলার্ধে স্থলভাগ অপেক্ষা সমুদ্রের বিস্তার বেশি হওয়ার পশ্চিমা বায়ু বাধাহীনভাবে প্রবলবেগে গর্জন করে প্রবাহিত হয়। প্রবল বায়ুপ্রবাহের কারণেই ৪০⁰ দক্ষিণ অক্ষরেখা গর্জনশীল চল্লিশা নামে পরিচিত।
৩.১৪) বাণিজ্য বায়ু বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ আয়ন বায়ু একটি নির্দিষ্ট পথ বরাবর প্রবাহিত হয়। পালতোলা জাহাজের যুগ এই বায়ুর পথ ধিরে বাণিজ্য হত বলে ের ওপর নাম বাণিজ্য বায়ু।
৩.১৫) অশ্ব অক্ষাংশ কি?
উত্তরঃ কর্কটক্রান্তি রেখা ও মকরক্রান্তি রেখার দু’পাশে ৩০°- ৩৮° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে সারাবছর ধরে বায়ুর উচ্চচাপ দেখা যায়। ক্রান্তীয় অঞ্চলের শীতল ও ভারী বায়ু নিম্নমুখী হওয়ায় বায়ুর কোনো পার্শ্বপ্রবাহ থাকে না, এই অঞ্চলকে অশ্ব অক্ষাংশ বলা হয়।
৩.১৬) অধঃক্ষেপণ কাকে বলে?
উত্তরঃ মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে বায়ুমন্ডল থেকে জলীয় বাষ্প ঘনীভবনের মাধ্যমে কঠিন ও তরল অবস্থায় ভূপৃষ্ঠে নেমে আসাকে বলে অধঃক্ষেপণ বলে।
৩.১৭) শিশিরাংক কি?
উত্তরঃ যে বিশেষ তাপমাত্রায় বায়ু সম্পৃক্ত অবস্থায় পৌঁছায়, বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতা বেড়ে হয় ১০০% সেই তাপমাত্রা হল শিরিরাঙ্ক। বায়ুর তাপমাত্রা শিশিরাঙ্কের নীচে নামলে ওই তাপমাত্রায় বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণ করার ক্ষমতার অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়। শিশিরাঙ্কের উশণতা হিমাঙ্কের উপরে থাকে। যদি শিশিরাঙ্কের উষ্ণতা হিমাঙ্কের নীচে নামে তাহলে জলীয় বাষ্প ঊর্ধ্বপাতন প্রক্রিয়ায় বরফকণায় পরিণত হয়।
৩.১৮) বৃষ্টিপাত কয় প্রকার ও কি কি?
উত্তরঃ বৃষ্টিপাত সাধারণ তিন প্রকার। যথা – (১) পরিচলন বৃষ্টিপাত (২) শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টি (৩) ঘূর্ণবাত বৃষ্টি।
৩.১৯) সমবর্ষণ রেখা কি?
উত্তরঃ পৃথিবীর একই বৃষ্টিপাতযুক্ত স্থানগুলিকে মানচিত্রে যে রেখা দ্বারা যুক্ত করা হয়, তাকে সমবর্ষণ রেখা বলে।
৩.২০) শহরাঞ্চলে বা শিল্পাঞ্চলে প্রায় কুয়াশা দেখা যায় কেন?
উত্তরঃ দীর্ঘ শীতের রাত্রে ভূপৃষ্ঠ তাপ বিকিরণ করে দ্রুত শীতল হয়ে পড়ে। বাতাসে ভাসমান জলীয় বাষ্প তখন ধূলিকণাকে আশ্রয় করে ঘনীভূত হয় ও ভূমিসংলগ্ন ঠাণ্ডা বাতাসে ভাসতে থাকে। শীতল, শান্ত বায়ুস্তরে কুয়াশা দ্রুত সৃষ্টি হয়। সাধারণত কলকারখানাসংলগ্ন শিল্পশহরে ধুলোকণা, কার্বনকণার প্রাচুর্যে শীতের রাতে ঘন কুয়াশার সৃষ্টি হয়।
বিভাগ ‘ঘ’
৪) সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক উত্তর দাওঃ-
প্রশ্নঃ বায়ুমণ্ডলের গুরুত্ব কী?
উত্তরঃ বায়ুমণ্ডলের গুরুত্ব হল –
(১) বায়ুমণ্ডলের বায়বীয় উপাদান C জীবমণ্ডলকে বাঁচিয়ে রেখেছে।
(২) এই অংশ সৌরশক্তির কুপরিবাহী বলে পৃথিবীর গড় উন্নতা ১৫° সেলসিয়াস যা জীবকুল গড়ে ওঠার সহায়ক।
(৩) সূর্যের ক্ষতিকারক বস্তু এখানেই শোষিত হয়।
প্রশ্নঃ বৈপরীত্য উয়তা কাকে বলে?
উত্তরঃ সাধারণ অবস্থায় বায়ুমণ্ডলের ট্রপোস্ফিয়ার স্তরে প্রতি ১০০০ মিটার উচ্চতা বৃদ্ধিতে ৪৫° সেলসিয়াস হারে উয়তা হ্রাস পায়। কিন্তু বিশেষ পরিস্থিতিতে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে উয়তা হ্রাস না পেয়ে বরং বাড়তে থাকে। এরূপ অবস্থাকে বৈপরীত্য উয়তা বা উয়তার উক্ৰম বলে। উয়তার উক্ৰম ভূ-পৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুস্তরে কিংবা ট্রপােস্ফিয়ারে উর্ধ্ববায়ুস্তরে পরিলক্ষিত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বৈপরীত্য উয়তা হলো বায়ু তাপের অস্থায়ী অবস্থা।
প্রশ্নঃ কী কী কারণে বায়ুমণ্ডলে উষ্ণতার বৈপরীত্য ঘটে?
উত্তরঃ বায়ুমণ্ডলে উষ্ণতার বৈপরীত্যর কারণ হল –
(১) নাতিশীতোয় অঞ্চলের পার্বত্য উপত্যকায় উচ্চ অংশের শীতল ও ভারী বায়ু ঢাল বেয়ে নেমে আসে এবং উপত্যকার নিম্নাংশের অপেক্ষাকৃত উষ্ণ বায়ু উপরে ওঠে। এই অবস্থায় উপত্যকার নিম্নাংশে উষ্ণতা কমে যায় এবং উপরের দিকে উষ্ণতা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।
(২) অধিক উচ্চতায় ঘন ও শুষ্ক বায়ুর অবনমন ঘটলে উষ্ণতা বেড়ে গিয়ে উষ্ণতার বৈপরীত্য ঘটায়।
(৩) শীতকালে মহাদেশের কোনো কোনো স্থান অতিদ্রুত হারে তাপ বিকিরণে শীতল হয়। ফলে ওই অঞ্চলের ভূপৃষ্ঠসংলগ্ন অঞ্চলও শীতল হয়। কিন্তু উপরের বায়ু অত দ্রুত শীতল হয় না বলে উপরে উষ্ণতা কিছুটা বেশি থাকে। এই প্রক্রিয়া রাতের বেলা হয় কিন্তু সাময়িক।
প্রশ্নঃ ওজোনস্তর বিনাশের কারণগুলি লেখো।
উত্তরঃ ওজোনস্তর বিনাশের কারণগুলি হলো –
(১) ক্লোরোফ্লুরোকার্বন হল ওজোন স্তর বিনাশের অন্যতম কারণ।
(২) নগরায়ন ও শিল্পায়নের প্রসারের সঙ্গে নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড, নাইট্রিক অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড প্রভৃতি বিষাক্ত গ্যাস ওজোনস্তর বিনাশ ত্বরান্বিত করছে। (৩) ট্রাইরাো ব্রোমো কার্বন, মিথাইল ব্রোমাইড প্রভৃতি ওজোনস্তর বিনাশ করে।
প্রশ্নঃ ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত কর্কটক্রান্তি ও মকরকান্তি রেখার মধ্যবর্তী অঞ্চল বরাবর সৃষ্ট ঘূর্ণবাতকে ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত বা উপমণ্ডলীয় ঘূর্ণবাত বলে। বিশেষত ৬° উত্তর অক্ষাংশ থেকে ২০° দক্ষিণ অক্ষাংশে এই ধরনের ঘূর্ণবাত দেখা যায়। সাধারণত অতিরিক্ত উষ্ণতার জন্য সমুদ্রের উপরের বায়ু শুষ্ক, আর্দ্র ও ঊর্ধ্বমুখী হয়, ফলে সেখানে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয় এবং চারদিক থেকে প্রবল বেগে বায়ু ঘুরতে ঘুরতে নিম্নচাপের কেন্দ্রের দিকে ছুটে আসে। এই প্রবল গতিবেগসম্পন্ন কেন্দ্রমুখী ঘূর্ণায়মান ঊর্ধ্বমুখী বায়ুপ্রবাহকে ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত বলে।
প্রশ্নঃ শিলিগুড়ি অপেক্ষা দার্জিলিং বা দিল্লি অপেক্ষা সিমলা শীতল হয় কেন?
উত্তরঃ আমরা জানি উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে উষ্ণতা ৬.৪° সেলসিয়াস/কিমি হারে হ্রাস পায়। শিলিগুড়ি প্রায় সমুদ্রপৃষ্ঠে অবস্থিত হলেও দার্জিলিং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক উঁচুতে অবস্থিত। আবার দিল্লি সমুদ্রপৃষ্ঠের নিকটে অবস্থিত হলেও সিমলা অনেক উঁচুতে অবস্থিত। অধিক উচ্চতায় অবস্থানের কারণে শিলিগুড়ি অপেক্ষা দার্জিলিং এবং দিল্লি অপেক্ষা সিমলায় সারাবছর উষ্ণতা কম থাকে।
প্রশ্নঃ ক্যাটাবেটিক ও অ্যানাবেটিক বায়ু কাকে বলে?
উত্তরঃ রাত্রিবেলা পর্বতের উপরি অংশের বায়ু দ্রুত তাপ বিকিরণে শীতল ও ভারী হয়ে পড়ে বলে পর্বতের ঢাল বরাবর ভারী বায়ু নীচে নেমে উপত্যকায় অবস্থান করে। এটি হল পার্বত্য বায়ু। পার্বত্য বায়ু বিস্তৃর্ণ অঞ্চল ও দীর্ঘ সময় ধরে প্রবাহিত হলে তখন। তা ক্যাটাবেটিক বায়ু। বোরা, মিস্টাল প্রভৃতি হল ক্যাটাবেটিক বায়ুর উদাহরণ। দিনের বেলা সূর্যতাপে উপত্যকার নিম্নাংশ অপেক্ষা ঢালু অংশ বেশি গরম হয়। ফলে উপত্যকায় নিম্নাংশের বায়ু পর্বতের ঢাল বরাবর উপরের দিকে ওঠে। এটি হল উপত্যকা বায়ু। একে অ্যানাৰেটিক বায়ুও বলা হয়। এই দুই বায়ু প্রবাহের কারণেই পার্বত্য অংশে উষ্ণতা র বৈপরীত্য দেখা যায়।
প্রশ্নঃ শীতকালে মেঘাচ্ছন্ন অপেক্ষা মেঘমুক্ত রাত্রি অধিক শীতল হয় কেন?
উত্তরঃ মেঘের আবরণ দিনের বেলা সূর্যরশ্মিকে ভূপৃষ্ঠে পৌঁছোতে বাধা দেয় এবং রাত্রিবেলা ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত তাপকে পৃথিবীর আবহমণ্ডলের বাইরে পৌঁছোতে দেয় না। এজন্য মেঘাচ্ছন্ন রাত্রিতে ভূপৃষ্ঠ যে তাপ বিকিরণ করে তা মেঘের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং খুব বেশি উপরে না উঠতে পেরে গ্রিনহাউস এফেক্ট প্রক্রিয়ায় তা বায়ুমণ্ডলের নীচের স্তরকে উত্তপ্ত করে। এর ফলে মেঘাচ্ছন্ন রাত্রি উষ্ণ হয়। অন্যদিকে, মেঘমুক্ত রাত্রিতে ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকীর্ণ তাপ পৃথিবীর আবহমণ্ডলের বাইরে চলে যেতে পারে, তাই মেঘমুক্ত রাত্রি মেঘাচ্ছন্ন রাতের তুলনায় শীতল হয়।
প্রশ্নঃ সমুদ্র বায়ু বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ উপকূল অঞ্চলে দিনের বেলা সমুদ্র থেকে স্থলভাগের যে মৃদুমন্দ বাতাস বয় তা হল সমুদ্র বায়ু।
বৈশিষ্ট্যঃ (১) মোটামুটি সকাল ১০টার পর থেকে বিকাল পর্যন্ত এই বায়ু বয়।
(২) দুপুরে বায়ুচাপের ঢাল সর্বাধিক হয় বলে সমুদ্র বায়ুর বেগ দুপুরে সবচেয়ে বেশি।
প্রশ্নঃ স্থলবায়ু বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ উপকূল অঞ্চলে রাতের বেলা স্থলভাগ থেকে সমুদ্রের দিকে যে মৃদুমন্দ বাতাস বয় তা হল স্থলবায়ু।
বৈশিষ্ট্যঃ (১) সন্ধ্যার কিছু পর থেকে পরদিন সূর্যোদয়ের আগে পর্যন্ত রাত্রে এই বায়ু প্রবাহিত হয়।
(২) ভোরবেলা সমুদ্র ও স্থলভাগের মধ্যে বায়ুচাপ ঢালের পার্থক্য সর্বাধিক বলে স্থলবায়ুর বেগ ভোরবেলা সবচেয়ে বেশি।
প্রশ্নঃ স্টেপ জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
উত্তরঃ (১) মহাদেশের অভ্যন্তরে অবস্থানের কারণে জলবায়ু চরম প্রকৃতির।
(২) শীতকালে উষ্ণতা খুব কম হয়। কখনও–কখনও হিমাঙ্কের অনেকটা নীচে নামে। (৩) গ্রীষ্মকালে গড় উষ্ণতা থাকে ২০-২৫° সেলসিয়াস এবং বার্ষিক উষ্ণতার প্রসর ২৫°-৩০° সেলসিয়াস।
প্রশ্নঃ উষ্ণ মরু জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
উত্তরঃ উষ্ণ মরু জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল –
(১) জলবায়ু উষ্ণ ও শুষ্ক এবং চরমভাবাপন্ন প্রকৃতির।
(২) গ্রীষ্মকালের গড় উষ্ণতা ৩০°-৩৫° সেলসিয়াস এবং শীতকালে ২০° সেলসিয়াস। বার্ষিক উষ্ণতার প্রসার বেশ বেশি, প্রায় ১৫° সেলসিয়াস উষ্ণতায় চরমতা খুব বেশি।
প্রশ্নঃ শিশিরাঙ্ক বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ যে বিশেষ তাপমাত্রায় বায়ু সম্পৃক্ত অবস্থায় পৌঁছায়, বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতা বেড়ে হয় একশো শতাংশ সেই তাপমাত্রা হল শিশিরাঙ্ক। বায়ুর তাপমাত্রা শিশিরাঙ্কের নীচে নামলে ওই তাপমাত্রায় বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণ করার ক্ষমতার অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়। শিশিরাঙ্কের উষ্ণতা হিমাঙ্কের উপরে থাকে। যদি শিশিরাঙ্কের উষ্ণতা হিমাঙ্কের নীচে নামে তাহলে জলীয় বাষ্প ঊর্ধ্বপাতন প্রক্রিয়ায় বরফকণায় পরিণত হয়।
প্রশ্নঃ অধঃক্ষেপণ কাকে বলে?
উত্তরঃ মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে বায়ুমন্ডল থেকে জলীয় বাষ্প ঘণীভবনের মাধ্যমে কঠিন ও তরল অবস্থায় ভূপৃষ্ঠে নেমে আসাকে বলে অধঃক্ষেপণ।
প্রশ্নঃ বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল কাকে বলে?
উত্তরঃ জলীয় বাষ্পপূর্ণ আর্দ্রবায়ু কোনো উঁচু মালভূমি বা পর্বতে বাধা পেয়ে প্রতিবাত ঢালে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ঘটানোর পর তাতে জলীয় বাষ্প থাকে না বললেই চলে। এই পাহাড়ের বায়ুমুখী ঢালের বিপরীত দিকের প্রায় বৃষ্টিহীন অনুবাদ ঢালের বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল বলা হয়।
প্রশ্নঃ নিরক্ষীয় অঞ্চলে প্রতিদিন পরিচলন বৃষ্টিপাত হয় কেন?
উত্তরঃ নিরক্ষীয় অঞ্চলে প্রতিদিন পরিচলন বৃষ্টিপাত হয়, কারণ –
(১) নিরক্ষীয় অঞ্চলে সারাবছর সূর্যকিরণ লম্বভাবে পড়ার দরুণ প্রচুর উত্তাপের সৃষ্টি হয়।
(২) এই অঞ্চলে জলভাগ বেশি।
(৩) জলভাগ বেশি তাই প্রচুর জলীয়বাষ্প উৎপন্ন হয়।
বিভাগ ‘ঙ’
৫) ৫.১) যেকোনো দুটি প্রশ্নের উত্তর দাওঃ-
প্রশ্নঃ বায়ুর উষ্ণতার তারতম্যের কারণসমূহ আলোচনা করো।
উত্তরঃ বায়ুর তাপের তারতম্যের কারণ সমূহ হল –
অক্ষাংশঃ পৃথিবীর কক্ষতলের সঙ্গে সর্বদা ৬৬° কোণে হেলে সূর্যের চারিদিকে পরিক্রমণ করে। এর ফলে নিরক্ষীয় অঞ্চলে সূর্য সারাবছর লম্বভাবে কিরণ দেয় এবং তাপীয় ফল বেশি থাকে। আবার মেরুর দিকে সূর্য ক্রমশ তির্যকভাবে পতিত হয়। ফলে সূর্যের তাপীয় ফল কম হয়। তাই উচ্চ অক্ষাংশ অপেক্ষা নিম্ন অক্ষাংশের গড় উয়তা অধিক হয়।
ভূমির উচ্চতাঃ ট্রপোস্ফিয়ারে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রতি কিমিতে গড়ে প্রায় ৬.৪° সেলসিয়াস প্রতি ১০০০ মিটার হারে উষ্মতা হ্রাস পায়। বায়ুমণ্ডলের উম্লতা তত কম হয়।
মেঘাচ্ছন্নতা ও অধঃক্ষেপনঃ দিনের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে সৌররশ্মির তাপীয় ফল হ্রাস পায় কিন্তু রাতের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হলে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত তাপ মেঘদ্বারা বাধা প্রাপ্ত হয়ে পুনরায় পৃথিবীতে ফিরে আসে, ফলে উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। উষ্ণতার ওপর বৃষ্টিপাতের প্রভাব কম হলেও বৃষ্টিপাত হওয়ার ফলে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা সামান্য হ্রাস পায়।
স্থলভাগ ও জলভাগের বণ্টনঃ জলভাগের তুলনায় স্থলভাগ দ্রুত উষ্ণ বা শীতল হয়। এই কারণে সমুদ্র থেকে কম দূরবর্তী স্থান গ্রীষ্মকালে অধিক। উম্ন ও শীতকালে অধিক শীতল হয়।
সমুদ্রস্রোতঃ সমুদ্রের যে উপকূলীয় অঞ্চল বরাবর উষ্ণ সমুদ্রস্রোত প্রবাহিত হয় সেই অঞ্চলের বায়ুমণ্ডল উষ্ণ এবং যে অঞ্চলে শীতল সমুদ্রস্রোত প্রবাহিত হয় সেখানকার বায়ুমণ্ডল শীতল প্রকৃতির হয়।
ভূমির ঢালঃ ভূমির ঢালের দিক অনুযায়ী সৌরশক্তি প্রাপ্তির তারতম্য ঘটে। উত্তর গোলার্ধে উত্তরমুখী ভূমির ঢাল অপেক্ষা দক্ষিণমুখী ভূমির ঢালে অধিক লম্বভাবে সৌরকিরণ পড়ে, ফলে বায়ুমণ্ডলের উচ্চতা অধিক হয়।
প্রশ্নঃ চিত্রসহ বিভিন্ন তাপমণ্ডলের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দাও।
উত্তরঃ অক্ষরেখার নিরিখে যেসকল অঞ্চলে উষ্ণতা মোটামুটি সমান সেগুলিকেই বলে তাপমণ্ডল। তাপমণ্ডল তিনটি –
উষ্ণমণ্ডলঃ নিরক্ষরেখাকে মাঝখানে রেখে উত্তরে কর্কটক্রান্তি এবং দক্ষিণে মকরক্রান্তির মধ্যবর্তী অঞ্চল।
বৈশিষ্ট্যঃ (১) গড় উষ্ণতা বেশি, গড়ে ২৭ ° সেলসিয়াস
(২) এখানে শীত ঋতু অতটা পরিলক্ষিত হয় না। হলেও খুব শীতল নয়।
(৩) বাৎসরিক উষ্ণতার প্রসার কম।
নাতিশীতোর মণ্ডলঃ উত্তর গোলার্ধে কর্কটক্রান্তি রেখা থেকে সুমেরুবৃত্ত এবং দক্ষিণ গোলার্ধে মকরক্রান্তি থেকে কুমেরুবৃত্ত পর্যন্ত অঞ্চল।
বৈশিষ্ট্যঃ (১) গড় উদ্বৃতা ০°-২৭° সেলসিয়াস
(২) নিম্ন অক্ষাংশ থেকে উচ্চ অক্ষাংশের দিকে তাপমাত্রা দ্রুতহারে কমে।
(৩) বার্ষিক উষ্ণতার প্রসর বেশি।
হিমমণ্ডলঃ উত্তর গোলার্ধে সুমেরুবৃত্ত থেকে সুমেরুবিন্দু এবং দক্ষিণ গোলার্ধে কুমেরুবৃত্ত থেকে কুমেরুবিন্দু হল হিমমণ্ডল।
বৈশিষ্ট্যঃ (১) গড় উষ্ণতা সারাবছরই ০° সেলসিয়াসের কম।
(২) দুই–একটি স্থানে কদাচিৎ উষ্ণতা হিমাঙ্কের উপরে ওঠে।
(৩) বাৎসরিক উষ্ণতার প্রসর খুব বেশি।
প্রশ্নঃ বায়ুচাপের তারতম্যের কারণগুলি আলোচনা করো।
উত্তরঃ বায়ুচাপের তারতম্যের প্রধান কারণ হলো –
উচ্চতাঃ ভূমিভাগের উচ্চতা, বায়ুচাপের তারতম্যের ক্ষেত্রে অন্যতম নিয়ন্ত্রক। ওপরের বায়ুস্তরের প্রবল চাপে বায়ুর অণুগুলি ও ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি অঞ্চলে বেশি পরিমাণে থাকে। একারণেই সমুদ্রতল সংলগ্ন বায়ুস্তরে বায়ুচাপ বেশি হয়। আবার ভূমির উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বায়ুর ঘনত্ব ও ওজন কমতে থাকে বলে বায়ুর চাপও কমে যায়। দেখা গেছে, সমুদ্রতল থেকে প্রতি ১১০ মিটার উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ১ সেন্টিমিটার পারদস্তম্ভের সমান বায়ুচাপ কমতে থাকে।
স্থলভাগ ও জলভাগের বণ্টনঃ পৃথিবীপৃষ্ঠে জলভাগ ও স্থলভাগের বিন্যাস বা বণ্টন তথা উভয়ের মধ্যেকার তাপগ্রাহীতা শক্তির পার্থক্যের জন্যও বায়ুর চাপের তারতম্য ঘটে। জলভাগের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ু জলীয়বাষ্প গ্রহণ করে বলে তা আর্দ্রও হালকা হয় এবং চাপও কম হয়। কিন্তু স্থলভাগের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ু জলীয়বাষ্প সংগ্রহ করতে পারে না। তাই তা শুষ্ক, ভারি হয় এবং চাপও অধিক হয়।
জলীয়বাষ্পঃ বায়ুতে উপস্থিত অন্যান্য উপাদানের মধ্যে জলীয়বাষ্প হল অধিক হালকা উপাদান। বেশি জলীয় বাষ্পযুক্ত বায়ু নিম্নচাপবিশিষ্ট হয় এবং কম জলীয়বাষ্পযুক্ত বায়ু উচ্চচাপবিশিষ্ট হয়।
পৃথিবীর আবর্তনঃ পৃথিবীর আবর্তনগতির ফলে সৃষ্ট কেন্দ্ৰবহির্মুখী বলের প্রভাবে বায়ুর গতিবিক্ষেপ ঘটে। ফলে বায়ুর চাপ ও ঘনত্ব উভয়ই হ্রাস পায়। নিরীক্ষয় অঞলে আবর্তনের বেগ বেশি থাকায় বায়ুর বেশি গতিবিক্ষেপ ঘটে বলে স্থায়ী নিম্নচাপ বলয় সৃষ্টি হয়েছে।
উষ্ণতাঃ বায়ুর উয়তার পরিবর্তন হলে বায়ুর আয়তন ও ঘনত্বের পরিবর্তন হয়। ফলস্বরূপ চাপেরও পরিবর্তন হয়। অর্থাৎ বায়ু উত্তপ্ত হলে বায়ুর অনুগুলি গতিশীল হয়ে পরস্পর থেকে দুরে সরে যায়। ওই উয় বায়ু হালকা ও প্রসারিত হয়ে ওপরে উঠে যায় এবং এর চাপও কমে যায়। আবার উত্মতা কম হলে বা বায়ু শীতল হলে সংকুচিত হয় বলে বায়ুর ঘনত্ব বেড়ে যায় এবং চাপও বেশি হয়।
প্রশ্নঃ বিভিন্ন প্রকার নিয়ত বায়ুর গতিপ্রকৃতির ব্যাখ্যা দাও।
উত্তরঃ পৃথিবীতে ৭টি স্থায়ী বায়ুচাপ বলয়ের ওপর ভিত্তি করে তিনপ্রকার নিয়ত বায়ু প্রবাহিত হয় –
(ক) আয়ন বায়ু
(খ) পশ্চিমা বায়ু
(গ) মেরু বায়ু
(ক) আয়ন বায়ুঃ কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয়দ্বয় থেকে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে উভয় গোলার্ধে যে বায়ু প্রবাহিত হয় তা হল আয়ন বায়ু। ফেরেলের সূত্রানুসারে উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে যথাক্রমে উত্তর–পূর্ব আয়ন বায়ু ও দক্ষিণ–পূর্ব আয়ন বায়ু রূপে বয়ে যায়।
জলবায়ুর ওপর প্রভাবঃ (১) এই বায়ুর প্রভাবে ক্রান্তীয় মণ্ডলে মহাদেশের পূর্বে প্রবল বৃষ্টি হয় এবং পশ্চিম অংশ বৃষ্টিহীন থাকে বলে মরুভূমির সৃষ্টি হয়েছে। (২) নিরক্ষীয় অঞ্চলে এই বায়ুদ্বয় মিলিত ও ঊর্ধ্বমুখী হয়ে প্রবল বৃষ্টি ঘটায়।
(খ) পশ্চিমা বায়ুঃ কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয়দ্বয় থেকে মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় উচ্চচাপ বলয়দ্বয়ের দিকে উভয় গোলার্ধে যে বায়ু বয়ে যায় তা হল পশ্চিমা বায়ু। ফেরেলের সূত্রানুসারে এই বায়ু বেঁকে উত্তর গোলার্ধে দক্ষিণ–পশ্চিম। পশ্চিমা বায়ু এবং দক্ষিণ গোলার্ধে উত্তর–পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু রূপে প্রবাহিত হয়।
জলবায়ুর ওপর প্রভাবঃ (১) এই বায়ুপ্রবাহে উপক্রান্তীয় মণ্ডল মহাদেশের পশ্চিমে বৃষ্টি ও তুষারপাত ঘটে। (২) ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে শীতকালে এই বায়ু প্রবেশ করে বৃষ্টিপাত ঘটায়।
(গ) মেরু বায়ুঃ দুই মেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ঙ্গয় থেকে মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়দ্বয়ের দিকে প্রবাহিত বায়ু হল মের বায়ু। এই বায়ু ফেরেলের সূত্রানুসারে উত্তর গোলার্ধে উত্তর পূর্ব এবং দক্ষিণ গোলার্ধে দক্ষিণ–পূর্ব মেরু বায়ুরূপে প্রবাহিত হয়।
জলবায়ুর ওপর প্রভাবঃ (১) মেরু থেকে আগত অত্যন্ত শীত এই বায়ুর প্রভাবে শীতকালে কানাডা, সাইবেরিয়ায় শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়ে।
(২) দক্ষিণ গোলার্ধে এই বায়ুর সাথে উন্ন–আর্দ্র সমুদ্র বায়ুর সংঘর্ষে ঘূর্ণবাতের উৎপত্তি ঘটে।
প্রশ্নঃ বিভিন্ন বৃষ্টির প্রক্রিয়া সংক্ষেপে লেখো।
উত্তরঃ ভূ-পৃষ্ঠীয় জলভাগ থেকে সৃষ্ট জলীয় বাষ্প বায়ুর সংস্পর্শে এসে হালকা হয়ে উপরে উঠে ক্রমশ সম্পৃক্ত হয়ে অতিরিক্ত শীতলতার সংস্পর্শে এসে ঘনীভূত হয়ে জলকনায় পরিনত হলে তা ফোঁটা ফোঁটা আকারে পৃথিবীর বুকে নেমে আসে, তখন তাকে বৃষ্টিপাত বলে।
(১) বৃষ্টিপাতের শ্রেণি বিভাগঃ বৃষ্টিপাতকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়, যথা –
পরিচলন বৃষ্টিপাতঃ পৃথিবীর যে সব অঞ্চলে জলভাগের পরিমান বেশি, সেই সব অঞ্চলে দিনের বেলায় প্রখর সূর্যতাপে জলীয় বাষ্প পূর্ন বায়ু পরিচলন পদ্ধতিতে হালকা হয়ে ওপরে উঠে প্রসারিত ও শীতল প্রথমে মেঘ এবং পরে বৃষ্টিরূপে নিচে নেমে আসে। এই ধরণের বৃষ্টিপাত কে পরিচলন বৃষ্টিপাত বলা হয়।
নিরক্ষীয় অঞ্চলে জলভাগের পরিমান বেশি থাকায় এবং এখানে সূর্য সারা বছর লম্ব ভাবে কিরন দেয় বলে, নিরক্ষীয় অঞ্চলে প্রতিদিন বিকেলের দিকে পরিচলন প্রক্রিয়ায় বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।
(২) শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাতঃ জলীয় বাষ্প পূর্ন আর্দ্র বায়ু কোন উঁচু পর্বতে বাঁধা পেয়ে পর্বতের গাঁ বেয়ে ওপরে উঠে ওপরের শীতল বায়ুর সংস্পর্শে এসে ঘনীভূত পর্বতের প্রতিবাত ঢালে যে বৃষ্টিপাত ঘটায় তাকে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত বলে। এই ধরণের বৃষ্টিপাত সৃষ্টিতে শৈল অর্থাৎ পর্বত গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে বলে। একে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত বলা হয়ে থাকে।
(৩) ঘূর্নবাত জনিত বৃষ্টিপাতঃ ক্রান্তীয় অঞ্চলে সৃষ্ট ঘূর্নিঝরের সময় যে বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে তাকে ঘূর্নবাত জনিত বৃষ্টিপাত বলে। সাধারনত ক্রান্তীয় অঞ্চলে সূর্য তাপ জনিত কারণে কোন স্থানে নিম্নচাপের সৃষ্টি হলে ওই নিম্নচাপ স্থানের বায়ু হালকা হয়ে ওপরে উঠে গেলে যে শূন্য স্থানের সৃষ্টি হয় তা পূরন করার জন্য পার্শ্ববর্তী উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে শীতল বায়ু সেই নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে কুণ্ডলীর আকারে ঘুরতে ঘুরতে প্রবল বেগে ওপরে উঠে শীতল ও ঘনিভূত হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়। এই ধরণের বৃষ্টিপাত কে ঘূর্নবাত জনিত বৃষ্টিপাত বলে। এই ধরণের বৃষ্টিপাতের ক্ষেত্রে কিউমুলোনিম্বাস মেঘের সৃষ্টি হয় এবং প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।
===============================================
সঠিক উত্তর নির্বাচন কর (MCQ)
[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান ১]
1। বায়ুমণ্ডলের যে গ্যাসটির পরিমাণ সর্বাধিক, তা হল –
ক) অক্সিজেন খ) নাইট্রোজেন গ) কার্বন ডাই অক্সাইড ঘ) আর্গন
উত্তর- বায়ুমণ্ডলের যে গ্যাসটির পরিমাণ সর্বাধিক, তা হল খ) নাইট্রোজেন।
2। বায়ুমণ্ডলে ওজোন গ্যাস —-– স্তরে ঘনীভূত অবস্থায় থাকে –
ক) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার খ) মেসোস্ফিয়ার গ) ট্রপোস্ফিয়ার ঘ) আয়নোস্ফিয়ার
উত্তর- বায়ুমণ্ডলে ওজোন গ্যাস – স্তরে ঘনীভূত অবস্থায় থাকে ক) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার।
3। ভূপৃষ্ঠ থেকে ওপরের দিকে বায়ুমণ্ডল প্রায় কত কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত? –
ক) 1000 কিমি খ) 5000 কিমি গ) 10000 কিমি ঘ) 100000 কিমি
উত্তর- ভূপৃষ্ঠ থেকে ওপরের দিকে বায়ুমণ্ডল প্রায় ঘ) 100000 কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত।
4। সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে –
ক) ওজোন খ) আর্গন গ) জেনন ঘ) ক্রিপ্টন
উত্তর- সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে ক) ওজোন।
5। একটি গ্রিনহাউস গ্যাসের উদাহরণ হল –
ক) অক্সিজেন খ) নাইট্রোজেন গ) কার্বন ডাইঅক্সাইড ঘ) হাইড্রোজেন
উত্তর- একটি গ্রিনহাউস গ্যাসের উদাহরণ হল গ) কার্বন ডাইঅক্সাইড।
6। বায়ুচাপের একক হল –
ক) মিলিবার খ) মিলিমিটার গ) মিলিগ্রাম ঘ) মিটার
উত্তর- বায়ুচাপের একক হল ক) মিলিবার।
7। গর্জনশীলচল্লিশা হল –
ক) 40° উত্তর অক্ষাংশ খ) 40° দক্ষিণ অক্ষাংশ গ) 40° পূর্ব দ্রাঘিমা ঘ) 40° পশ্চিম দ্রাঘিমা
উত্তর- গর্জনশীলচল্লিশা হল খ) 40° দক্ষিণ অক্ষাংশ।
8। চেরাপুঞ্জিতে কোন্ ধরনের বৃষ্টিপাত হয়? –
ক) পরিচলন বৃষ্টিপাত খ) শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত গ) ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত ঘ) শিলাবৃষ্টি
উত্তর- চেরাপুঞ্জিতে খ) শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত হয়।
9। যে যন্ত্রের সাহায্যে বায়ুর আর্দ্রতা পরিমাপ করা হয় –
ক) হাইগ্রোমিটার খ) ব্যারোমিটার গ) থার্মোমিটার ঘ) অ্যানিমোমিটার
উত্তর- যে যন্ত্রের সাহায্যে বায়ুর আর্দ্রতা পরিমাপ করা হয় ক) হাইগ্রোমিটার।
10। ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে যে সময় বৃষ্টিপাত হয়, সেটি হল –
ক) গ্রীষ্মকাল খ) বর্ষাকালে গ) শীতকালে ঘ) বসন্তকালে
উত্তর- ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে যে সময় বৃষ্টিপাত হয়, সেটি হল গ) শীতকালে।
11। ভারতের একটি বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল –
ক) দেরাদুন খ) গোয়া গ) মৌসিনরাম ঘ) শিলং
উত্তর- ভারতের একটি বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল ঘ) শিলং।
12। বায়ুদূষণের ফলে সৃষ্টি হয় –
ক) মেঘ খ) কুয়াশা গ) ধোঁয়াশা ঘ) শিশির
উত্তর- বায়ুদূষণের ফলে সৃষ্টি হয় গ) ধোঁয়াশা।
13। দিল্লির তুলনায় দার্জিলিঙের তাপমাত্রা –
ক) যথেষ্ট বেশি খ) বেশ কম গ) একই থাকে ঘ) এগুলির কোনোটিই নয়
উত্তর- দিল্লির তুলনায় দার্জিলিঙের তাপমাত্রা খ) বেশ কম।
14। একটি সাময়িক বায়ু হল –
ক) মৌসুমি বায়ু খ) লু বায়ু গ) আয়ন বায়ু ঘ) পশ্চিমা বায়ু
উত্তর- একটি সাময়িক বায়ু হল খ) লু বায়ু।
15। প্রদত্ত কোন্টি বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হওয়ার পদ্ধতি নয়?
ক) পরিবহণ খ) অধঃক্ষেপণ গ) বিকিরণ ঘ) পরিচলন
উত্তর- প্রদত্ত খ) অধঃক্ষেপণ বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হওয়ার পদ্ধতি নয়।
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন (SAQ)
[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান ২]
1। হাইড্রোজেন স্তর বলতে কি বোঝ?
উত্তর- রাসায়নিক গঠনের ভিত্তিতে বিষমমণ্ডলের একদম উপরের স্তরে রয়েছে আনবিক হাইড্রোজেন স্তর। এটির বিস্তার ভূপৃষ্ঠ থেকে 3500 কিমি উপরে এবং 10000 কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত।
2। বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের গুরুত্ব লেখো।
উত্তর- বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের গুরুত্ব অসীম।
• জলীয় বাষ্পের কারণেই মেঘ, বৃষ্টিপাত, তুষারপাত, তুহিন সৃষ্টি হয়।
• জলীয় বাষ্প সূর্যের তাপ শোষণ করে বায়ুমণ্ডলের তীব্রতা কমায়।
• জলীয় বাষ্পের ঘনীভবনের ফলে বর্জিত লীনতাপ ঘূর্ণিঝড়কে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে।
• জলীয় বাষ্প পরিমণ্ডলের উষ্ণতাকে নিয়ন্ত্রণ করে।
3। বৈপরীত্য উষ্ণতা কাকে বলে?
উত্তর- বায়ুমণ্ডলে যখন উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উষ্ণতা না কমে বাড়তে থাকে তখন তাকে বৈপরীত্য উষ্ণতা বলে। সাধারণত পার্বত্য উপত্যকায় রাত্রিবেলায় উপত্যকার নিচু অংশে তাপমাত্রা অপরের অংশের তুলনায় কম হয়, এখানে উষ্ণতার বৈপরীত্য লক্ষ্য করা যায়।
4। মেঘাছন্নতা বলতে কি বোঝ?
উত্তর- আকাশে মেঘাবৃত অবস্থাই হল মেঘাচ্ছন্নতা। মেঘাছন্নতার পরিমাপ অক্টাসে অর্থাৎ আকাশের আট ভাগে করা হয়ে থাকে। 0% মেঘ থাকলে তা পরিষ্কার আকাশ, 25% হলে আংশিক মেঘলা আকাশ, 75% হলে প্রায় মেঘলা আকাশ এবং 100% মেঘাচ্ছন্নতা হলে সম্পূর্ণ মেঘলা আকাশ নির্দেশ করে।
5। এলনিনো কি?
উত্তর- দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিমে পেরু ও চিলি উপকূল বরাবর প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণ থেকে উত্তরদিক বরাবর বায়ুমণ্ডলের স্বাভাবিক অবস্থায় শীতল হামবোল্ড স্রোত প্রবাহিত হয়। কিন্তু 4-7 বছর অন্তর এই অংশে শীতল স্রোতের বদলে গভীর উষ্ণ জলরাশি উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়, ফলে বায়ুমণ্ডলে এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। যার প্রভাব সমগ্র পৃথিবীতে পরে। সমুদ্রস্রোতের এই অস্বাভাবিক পরিবর্তনের ঘটনাকে এলনিনো নামে অভিহিত করা হয়।
6। ‘চিনুক’ কি?
উত্তর- চিনুক একটি স্থানীয় বায়ু। রকি পর্বতের উত্তর-পূর্ব ঢালে অ্যাডিয়াবেটিক প্রক্রিয়ায় এই বায়ু উষ্ণ ও শুষ্ক হয়ে থাকে। রকি পর্বতের ঢালে জমে থাকা বরফ এই বায়ুর প্রভাবে গলে যায় বলে, এই বায়ুকে ‘তুষার ভক্ষক’ও বলা হয়।
7। ‘লু’ বলতে কি বোঝ?
উত্তর-পশ্চিম ভারতে থর মরুভূমি অঞ্চলে, উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশ বেশ কিছু ভূপৃষ্ঠীয় অংশে উত্তাপের ফলে সৃষ্ট অতি উষ্ণ ও শুষ্ক বায়ুকে লু বলা হয়।
8। হারিকেন বলতে কি বোঝ?
উত্তর- ক্রান্তীয় মণ্ডলে (5° থেকে 30° অক্ষরেখার মধ্যে) সমুদ্রের উপর সৃষ্ট নিম্নচাপকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট ঘূর্ণবাতকে ক্রান্তীয় বা উষ্ণমণ্ডলীয় ঘূর্ণবাত বলে। এইধরনের ঘূর্ণবাতে বজ্রবিদ্যুৎসহ প্রবল ঝড়ের সঙ্গে মুশলধারে বৃষ্টিপাত হয়। এই ঘূর্ণবাত ক্যারিবিয়ান সাগরে হারিকেন নামে পরিচিত।
9। ‘বোরাবাউই’ বলতে কি বোঝ?
উত্তর- শীতকালে আল্পস পর্বত থেকে দক্ষিণ ইতালির অ্যাড্রিয়াটিক উপকূলের দিকে একরকমের শীতল ও শুষ্ক বায়ু পর্বতের ঢাল থেকে নেমে আসে। এটি একটি শীতল স্থানীয় বায়ু, যা অ্যাড্রিয়াটিক সাগরের উপকূলবর্তী বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ‘বোরাবাউই’ নামে পরিচিত।
10। আপেক্ষিক আর্দ্রতার গুরুত্ব কি?
উত্তর- আপেক্ষিক আর্দ্রতা আবহাওয়ার পূর্বাভাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আপেক্ষিক আর্দ্রতার হ্রাস বৃদ্ধির জন্য গ্রীষ্মকালে বাইরে গেলে আমরা বেশি গরম অনুভব করি আবার শীতকালে শুষ্ক আবহাওয়া অনুভব করি। আপেক্ষিক আর্দ্রতার সাহায্যে বাতাসে উপস্থিত জলীয় বাষ্পের পরিমাণ পরিমাপ করা যায়।
বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্ন উত্তর
[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান ৩]
1। ট্রপোস্ফিয়ারে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে উষ্ণতা হ্রাস পায় কেন?
উত্তর- ট্রপোস্ফিয়ার বায়ুমণ্ডলের সর্বনিম্ন স্তর। এই স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে উষ্ণতা হ্রাস পায়, প্রতি 1000 মিটার উচ্চতায় 6.4° C করে, একে ‘উষ্ণতা হ্রাসের স্বাভাবিক বিধি’ বলা হয়।
ভূপৃষ্ঠ থেকে যত উপরের দিকে ওঠা যায় বায়ুর ঘনত্ব তত কমে যায়, ফলে বায়ুর তাপ ধারণ ক্ষমতাও কমে যায়, ফলে ক্রমশ উচ্চতা বৃদ্ধিতে উষ্ণতা হ্রাস পায়।
উপরের দিকে বায়ুস্তর ক্রমশ পাতলা হয়ে যায়। এরফলে বায়ু দ্রুত প্রসারিত হয় এবং তাপ বিকিরণ করে শীতল হয়।
সূর্যতাপে প্রথমে ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হয় এবং পরে উষ্ণ ভূপৃষ্ঠ থেকে তাপ বিকিরণের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডল উষ্ণ হয়। এজন্য ভূপৃষ্ঠ থেকে ওপরের দিকে উষ্ণতা কমে যায়।
ওপরের স্তরের বায়ুতে ধূলিকণা ও জলীয়বাষ্প কম থাকে বলে ওই বায়ুর তাপ শোষণ ও সংরক্ষণ ক্ষমতা কম, ফলে উচ্চতা বৃদ্ধিতে উষ্ণতা হ্রাস পায়।
2। বায়ুমণ্ডলে নাইট্রোজেন গ্যাসের গুরুত্ব সংক্ষেপে লেখো।
উত্তর- বায়ুমণ্ডলে বিভিন্ন গ্যাসীয় পদার্থের মধ্যে নাইট্রোজেনের পরিমাণ সর্বাধিক 78.08%। এই গ্যাস সরাসরি অন্য গ্যাসের সাথে যুক্ত হতে পারেনা।
লেগুমিনাস জাতীয় উদ্ভিদ বায়ুমণ্ডল থেকে সরাসরি নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে।
প্রাণীজগত সরাসরি এই গ্যাস ব্যবহার করে থাকে দেহে প্রোটিন গঠনের জন্য।
বায়ুমণ্ডল থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে সার উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা হয়।
3। সব মেঘ থেকে বৃষ্টিপাত হয় না কেন?
উত্তর- সব মেঘ থেকে বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণগুলি হল –
• মেঘে অবস্থিত জলকণার ব্যাস 0.2 থেকে 0.5 মিলিমিটারের কম হলে, সেই মেঘ থেকে অধঃক্ষেপণ বা বৃষ্টিপাত হয়না।
• মেঘের মধ্যে ভাসমান জলকণাগুলি যতক্ষণ না পর্যন্ত একে অপরের সাথে সংযুক্ত হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়না।
• বায়ুমণ্ডলের আপেক্ষিক আর্দ্রতা 100% না হলে জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হবে না, ফলে বৃষ্টিপাতও হবে না।
4। ব্যারোমিটারের সাহায্যে কীভাবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া যায়?
উত্তর- বায়ুমণ্ডলে বায়ুর ওজন মাপার পরিমাপের জন্য ব্যারোমিটার ব্যপকভাবে ব্যবহৃত হওয়া একটি যন্ত্র। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কম বা বেশি হলে বাতাসের চাপ বেড়ে যায় বা কমে যায়, এবং এই ঘটনা ব্যারোমিটারে ধরা পরে। বাতাসের চাপ কমে গেলে তা ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনাকে নির্দেশ করে। অপরদিকে বাতাসের চাপ বেড়ে গেলে আবহাওয়া পরিষ্কার হবে।
5। আয়ন বায়ুর গতিপথে মহাদেশ সমূহের পশ্চিমভাগে পৃথিবীর অধিকাংশ মরুভূমির সৃষ্টি হয়েছে কেন?
উত্তর- কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে আয়ন বায়ু প্রবাহিত হয়। এই বায়ুক্রম উষ্ণ প্রকৃতির হয়, এর কারণ হল উষ্ণ নিরক্ষীয় অঞ্চলের উপর দিয়ে এই বায়ুপ্রবাহ। তাছাড়াও স্থলভাগের উপর দিয়ে প্রবাহের ফলে এই বায়ুতে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ খুবই কম থাকে। সমুদের উপর দিয়ে প্রবাহকালে আয়ন বায়ু যে পরিমাণ জলীয়বাষ্প সংগ্রহ করে তার সবটাই প্রায় স্থল্ভাগে প্রবেশ করে মহাদেশের পুর্বভাগে বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে পশ্চিম দিকে যত অগ্রসর হয়, ততই তাতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমতে থাকে, এইভাবে ক্রমশ এই বায়ু মহাদেশের পশ্চিমভাগে এসে পৌঁছায়, তখন তাতে আর পর্যাপ্ত জলীয় বাষ্প থাকেনা, ফলে মহাদেশের পশ্চিমাংশ শুষ্ক, বৃষ্টিপাতহীন ও উষ্ণ হয়ে পরে। এই কারণে আয়ন বায়ুর গতিপথে মহাদেশ সমূহের পশ্চিমভাগে পৃথিবীর অধিকাংশ মরুভূমি সৃষ্টি হয়েছে।
6। উষ্ণ মরু জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য লেখ।
উত্তর- উষ্ণ মরু জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যগুলি হল,
• অক্ষাংশগত অবস্থান: 15° থেকে 35° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে মহাদেশগুলির পশ্চিমে এই জলবায়ু দেখা যায়।
• উষ্ণতা: গ্রীষ্মকালে 28°- 35° সেঃ এবং শীতকালে উষ্ণতা 15°- 20° সেঃ থাকে। বার্ষিক গড় উষ্ণতার প্রসার 8°-25° সেঃ।
• বৃষ্টিপাত: বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মাত্র 25-30 সেমি।
• বৈশিষ্ট্য: শীত ও গ্রীষ্ম ঋতু খুবই স্পষ্ট। শীত ও গ্রীষ্মের উষ্ণতার ব্যবধান খুব বেশি। বৃষ্টিপাত খুবই কম ও অনিয়মিত।
আরো পড়ো → সিরাজদ্দৌল্লা নাটকের প্রশ্ন উত্তর
দীর্ঘ উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন (LA)
[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান ৫]
1। বায়ুমণ্ডলের ক্ষুব্ধমণ্ডল ও শান্তমণ্ডল স্তরের বৈশিষ্ট্যগুলি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর-
ক্ষুব্ধমণ্ডল
• এই স্তরটি বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে নীচের স্তর, যেটি ভূপৃষ্ঠ থেকে গড় 12 কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত।
• এই স্তরের উচ্চতা মেরু অঞ্চলের 8 কিমি এবং নিরক্ষীয় অঞ্চলে 18 কিমি।
• এই স্তরে বায়ুমণ্ডলের মোট গ্যাসীয় ভরের প্রায় 80 ভাগ উপস্থিত আছে।
• এই স্তরে উচ্চতা বাড়ার সাথে সাথে প্রতি 1 কিমিতে 6.4° সেঃ হারে উষ্ণতা কমতে থাকে। একে ‘স্বাভাবিক উষ্ণতা হ্রাসের বিধি’ বলে।
• এই স্তরে বায়ুমণ্ডলের যাবতীয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংঘটিত হয় বলে একে ক্ষুব্ধমণ্ডল বলে।
• এই স্তরে মূলত নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন উপস্থিত থাকায় এর ঘনত্ব খুব বেশি।
শান্তমণ্ডল
• ক্ষুব্ধমণ্ডলের ওপরে ভূপৃষ্ঠ থেকে 50 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত স্তরকে শান্তমণ্ডল বা স্ট্রাটোস্ফিয়ার বলে।
• এই স্তরে জলীয়বাষ্পের অভাবে কোনো ঝড় বা বৃষ্টিপাত হয় না বলে একে শান্তমণ্ডল বলে।
• এই স্তরে উচ্চতা বাড়ার সাথে সাথে উষ্ণতা বাড়তে থাকে।
• ঊর্ধ্ব বায়ুমণ্ডলে বায়ুস্তর ক্রমশ হালকা থাকে।
• বায়ুর ঘনত্ব কম বলে খুব অল্প তাপ শোষণেই এই স্তর উত্তপ্ত হয়।
2। ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অংশে বায়ুর উষ্ণতার তারতম্য কারণগুলি সংক্ষেপে লেখো।
উত্তর- বায়ুর উষ্ণতার তাপের তারতম্যের কারণগুলি হল–
অক্ষাংশ- অক্ষাংশের পার্থক্য তাপমাত্রার পার্থক্য দেখা যায়। নিরক্ষীয় অঞ্চল বরাবর সূর্যরশ্মি প্রায় লম্বভাবে পরে এবং নিরক্ষরেখা থেকে উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর দিকে সূর্যরশ্মি কম জায়গায় পরে ফলে নিরক্ষীয় অঞ্চল বেশি উষ্ণ হয়। তির্যকভাবে পতিত রশ্মির ক্ষেত্রে অনেক বেশি পরিমাণ অঞ্চল কম উষ্ণতা পায়।
দিনরাত্রির হ্রাসবৃদ্ধি- দিন ও রাত্রির দৈর্ঘ্যের ওপর উষ্ণতার হ্রাসবৃদ্ধি নির্ভর করে। নিরক্ষীয় অঞ্চলে সারাবছর 12 ঘণ্টা দিন ও 12 ঘণ্টা রাত থাকে এবং সৌরবিকিরণের তীব্রতা সর্বাধিক হওয়ায় এই অঞ্চলের উষ্ণতা বেশি হয়। উচ্চঅক্ষাংশে ঋতুভেদে দিন ও রাতের দৈর্ঘ্য অনেক বেশি হওয়ায় উষ্ণতা কম হয়।
উচ্চতা- বায়ুমণ্ডলের নীচের স্তরে উচ্চতা বাড়ার সাথে সাথে উষ্ণতা কমতে থাকে। একে ‘স্বাভাবিক উষ্ণতা হ্রাসের বিধি’ বলে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক উঁচু স্থানের উষ্ণতা কম হয়। যেমন – নিরক্ষরেখার অবস্থিত হওয়া সত্ত্বেও কিলিমাঞ্জারো পর্বতশৃঙ্গ সারাবছর বরফ জমে থাকে।
স্থলভাগ ও জলভাগের বণ্টন- স্থল ও জলের ভৌত বৈশিষ্ট্যের পার্থক্যের জন্য উষ্ণতার তারতম্য হয়। স্থলভাগ দ্রুত উত্তপ্ত হয় ও দ্রুত তাপ বিকিরণ করে শীতল হয়। জল্ভাগে এই প্রক্রিয়া খুব ধীরে হয়।
বায়ুপ্রবাহ- পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে উষ্ণ ও শীতল বায়ুপ্রবাহ উষ্ণতার পরিবর্তন ঘটায়। গরমকালে ‘লু’ বায়ু উত্তর-পশ্চিম ভারতে উষ্ণতা বাড়িয়ে দেয়। আবার মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বর্ষাকালে তাপমাত্রা প্রায় 10° সেঃ কম থাকে।
ভূমির ঢাল- ভূমির যে ঢালের অপর সূর্যালোক বেশি পরে সেই ঢাল অপেক্ষাকৃত বেশি হয়। এর বিপরীত ঢালে সূর্যালোক তির্যকভাবে পরে ও উষ্ণতা তুলনামূলকভাবে কম হয়।
3। বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবগুলি সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তর- পৃথিবীতে বিশ্ব উষ্ণায়নের বিরূপ প্রভাবগুলি হল –
হিমবাহের গলন: গ্রিনল্যান্ডের বরফের চাদর, দক্ষিণমেরুর হিমবাহ ও সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গের বরফ গলে যাবে।
সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধি: হিমবাহের গলনের ফলে সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে ও সমুদ্র উপকূলের বিভিন্ন বন্দর ও শহর ও দ্বীপপুঞ্জ সমুদ্রের জলে ডুবে যাবে।
অধঃক্ষেপনের প্রকৃতি পরিবর্তন: বায়ুমণ্ডলের তাপমত্রা বৃদ্ধির ফলে বাষ্পীভবন বেশি হবে ও বাতাসের জলীয়বাষ্প ধারণ ক্ষমতা বেড়ে যাবে। অধঃক্ষেপনের অসম বণ্টনে বৃষ্টি হবে। অর্থাৎ কোথাও বন্যা বা কোথাও খরা দেখা যাবে।
শস্য উৎপাদনের হ্রাসবৃদ্ধি: বৃষ্টিপাতের পরিমাণে ও বণ্টনের যথেষ্ট তারতম্য ও উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য শস্যের উৎপাদনের হ্রাসবৃদ্ধি ঘটবে।
কৃষিপদ্ধতির পরিবর্তন: অসময়ে বৃষ্টিপাত হলে শস্য চাষের সময়ের পরিবর্তন হবে।
এল নিনো, লা নিনা ও পৃথিবীব্যাপী তার প্রভাব: দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে 4-7 বছর অন্তর অন্তর শীতল হামবোল্ড স্রোতের পরিবর্তে গভীর উষ্ণ জলক্ষেত্র অবস্থান করে, এবং নিস্তেজ স্রোত উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়, ফলে বায়ুমণ্ডলে এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়, যার প্রভাবে গোটা পৃথিবীতে পরে। সমুদ্রস্রোতের এই অস্বাভাবিক পরিবর্তনের ঘটনা বা পর্যায়কে এল-নিনো বলে।
4। ভূপৃষ্ঠে কয়টি চাপ বলয় আছে? এগুলির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
উত্তর- ভূপৃষ্ঠে স্থায়ীভাবে কতকগুলি বায়ুচাপ অঞ্চল বলয় আকারে পৃথিবীকে ঘিরে আছে। এগুলিকে চাপ বলয় বলে। পৃথিবীতে তিনটি নিম্নচাপ ও চারটি উচ্চচাপ বলয় আছে। এগুলি হল–
ক) নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় – নিরক্ষরেখার দুপাশে 5° উঃ ও 5° দ: অক্ষরেখার মধ্যে এই চাপে বলয়টি অবস্থান করে।
উৎপত্তি: নিরক্ষীয় অঞ্চল সূর্য সারাবছর প্রায় লম্বভাবে কিরণ দেয়। ফলে এই অঞ্চলের বায়ু ও ঊর্ধ্বগামী হয়। পৃথিবীর আবর্তন গতির বেগ সবচেয়ে বেশি হওয়ায় এবং ঊর্ধ্বগামী বায়ুস্রোত বজায় রাখতে ওপরের স্তরের বায়ু উত্তর ও দক্ষিণে দুই ক্রান্তীয় অঞ্চলের দিকে বিক্ষিপ্ত হয় এখানে নিরক্ষীয় শান্তবলয় সৃষ্টি হয়েছে।
খ) কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় – উভয় গোলার্ধের দুই ক্রান্তীয় অঞ্চলের 25° থেকে 35° অক্ষরেখার মধ্যে চাপ বলয় দুটি অনিয়মিতভাবে বিস্তৃত।
উৎপত্তি: নিরক্ষীয় অঞ্চলে ঊর্ধ্বগামী উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু পৃথিবীর আবর্তন গতির প্রভাবে দুই মেরু অঞ্চলের দিকে যাওয়ার সময় শীতল ও ভারী হয়ে দুই ক্রান্তীয় অঞ্চলের মধ্যে নেমে আসে।
গ) মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় – দুই গোলার্ধের 60° থেকে 70° অক্ষরেখার মধ্যে সুমেরুবৃত্ত ও কুমেরুবৃত্ত বরাবর অঞ্চলে এই চাপ বলয়টি অবস্থিত।
উৎপত্তি: মেরু থেকে আগত শীতল মেরু বায়ু ও উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে আগত অপেক্ষাকৃত উষ্ণ পশ্চিমা বায়ু এখানে পরস্পরের মুখোমুখি হল আবর্তন গতির প্রভাবে বায়ু ওপরে উঠে যায় ও নিম্নচাপ সৃষ্টি করে। এই অংশ পৃথিবীর আবর্তন গতির বেগ মেরু অপেক্ষা বেশি এবং উষ্ণতাও বেশি হওয়ার কারণে নিম্নচাপ ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে।
ঘ) মেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয় – উভয় গোলার্ধে মোটামুটি 60° থেকে 70° পর্যন্ত এই উচ্চচাপ বলয়টি বিস্তৃত। উৎপত্তি: দুই মেরুতে উষ্ণতা সারাবছর হিমাঙ্কের নীচে থাকে, তাই এই অঞ্চলের বায়ু অত্যন্ত শীতল, ভারী ও ঘন। এজন্য এখানে সবসময় উচ্চচাপ অবস্থান করে।
©kamaleshforeducation.in(2023)