বারিমন্ডল (তৃতীয় অধ্যায়)
মাধ্যমিক দশম শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর
West Bengal Madhyamik Class 10th Geography
MCQ | বারিমন্ডল (তৃতীয় অধ্যায়)
- সমুদ্রস্রোত উৎপত্তির প্রধান কারণ কী ?
(A) সমুদ্রজলের উষ্ণতা
(B) বায়ুপ্রবাহ
(C) এল নিনোর প্রভাব
(D) পৃথিবীর আবর্তন
Ans: (B) বায়ুপ্রবাহ
- সমুদ্রে বিচ্ছিন্নভাবে ভাসমান বিশাল বরফের স্তূপকে বলে—
(A) শৈবাল সাগর
(B) মগ্নচড়া
(C) হিমপ্রাচীর
(D) হিমশৈল
Ans: (D) হিমশৈল
- সুস্পষ্ট হিমপ্রাচীর দেখা যায়—
(A) আটলান্টিক মহাসাগর
(B) প্রশান্ত মহাসাগর
(C) সুমেরু মহাসাগরে
(D) ভারত মহাসাগর
Ans: (A) আটলান্টিক মহাসাগর
- অধিক লবণাক্ত জল প্রবাহিত হয় –
(A) পৃষ্ঠস্রোত ৰূপে
(B) অন্তঃস্রোত রূপে
(C) বহিঃস্রোত রূপে
(D) উল্লম্ব স্রোত রূপে
Ans: (B) অন্তঃস্রোত রূপে
- শৈবাল সাগর কোন মহাসাগরে দেখা যায় ?
(A) ভারত মহাসাগরে
(B) দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে
(C) আরব সাগরে
(D) উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে
Ans: (D) উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে
- আটলান্টিক মহাসাগরে দক্ষিণ আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল দিয়ে প্রবাহিত স্রোত হল –
(A) ক্যানারি স্রোত
(B) সোমালি স্রোত
(C) বেঙ্গুয়েলা স্রোত
(D) উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত
Ans: (C) বেঙ্গুয়েলা স্রোত
- উস্ন স্রোত সাধারণত সৃষ্টি হয় –
(A) নিরক্ষীয় অঞ্চলে
(B) ক্রান্তীয় অঞ্চলে
(C) উপক্রান্তীয় অঞ্চলে
(D) মেরুপ্রদেশীয় অঞ্চলে
Ans: (B) ক্রান্তীয় অঞ্চলে
- হিমপ্রাচীর কোন্ দুই স্রোতের সীমারেখা বরাবর সৃষ্টি হয় ?
(A) ল্যাব্রাডর ও উপসাগরীয় স্রোত
(B) কুরোশিয়ো ও ওয়াশিয়ো স্রোত
(C) ক্যানারি ও ইরমিঙ্গার স্রোত
Ans: (A) ল্যাব্রাডর ও উপসাগরীয় স্রোত
- পৃথিবীর বৃহত্তম মগ্নচড়া হল –
(A) রফল ব্যাংক
(B) গ্র্যান্ড ব্যাংক
(C) ডগার ব্যাংক
(D) জর্জেস ব্যাংক
Ans: (B) গ্র্যান্ড ব্যাংক
- কোন্ স্রোতের প্রভাবে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ ও নরওয়ে উপকূল সারাবছর বরফমুক্ত থাকে ?
(A) উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত
(B) কুরোশিয়ো স্রোত
(C) উত্তর আটলান্টিক স্রোত
(D) উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত
Ans: (A) উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত
[ আরোও দেখুন: Madhyamik Geography Suggestion 2023 Click here ]
- ভারতমহাসাগরের সমুদ্রস্রোত নিয়ন্ত্রিত হয়—
(A) মৌসুমি বায়ুর দ্বারা
(B) পশ্চিমা বায়ুর দ্বারা
(C) লা নিনা – এর দ্বারা
(D) আয়ন বায়ু – র দ্বারা
Ans: (A) মৌসুমি বায়ুর দ্বারা
- মাদাগাস্কার ও মোজাম্বিক স্রোতের মিলিত শাখা হল –
(A) কাম্চাট্কা
(B) কুরোশিয়ো
(C) পেরু স্রোত
(D) আগুলহাস
Ans: (D) আগুলহাস
- উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের একটি শীতল স্রোেত হল –
(A) ক্যানারি স্রোত
(B) কুরোশিয়ো স্রোত
(C) বেঙ্গুয়েলা স্রোত
(D) কামচটকা স্রোত
Ans: (A) ক্যানারি স্রোত
- শীতল স্রোতের স্বাভাবিক উৎসস্থল হল –
(A) উষ্ণমণ্ডল
(B) নিরক্ষীয় অঞ্চল
(C) মেরুপ্রদেশীয় অঞ্চল
(D) নাতিশীতোয় অঞ্চল
Ans: (C) মেরুপ্রদেশীয় অঞ্চল
- বেঙ্গুয়েলা স্রোত কোন্ মহাসাগরে বয়ে যায়—
(A) ভারত মহাসাগর
(B) প্রশান্ত মহাসাগর
(C) আটলান্টিক মহাসাগর
(D) কুমেরু মহাসাগর
Ans: (C) আটলান্টিক মহাসাগর
- কোন্ মহাসাগরে ঋতুপরিবর্তনের সাথে সাথে সমুদ্রস্রোতের ১৮০ ° দিক পরিবর্তন ঘটে—
(A) ভারত
(B) প্রশান্ত
(C) আটলান্টিক
(D) কুমেরু
Ans: (A) ভারত
- বৃহত্তম মগ্নচড়া কোথায় অবস্থিত –
(A) প্রশান্ত মহাসাগর
(B) দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর
(C) দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগর
(D) উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর
Ans: (D) উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর
- কোন্ সমুদ্রস্রোতটি তিনটি মহাসাগরে বয়ে যায় –
(A) নিরক্ষীয় স্রোত
(B) উপসাগরীয় স্রোত
(C) হামবোল্ড স্রোত
(D) মৌসুমি স্রোত
Ans: (A) নিরক্ষীয় স্রোত
- সমুদ্রস্রোতের দিক বিক্ষেপের কারণ –
(A) বায়ুপ্রবাহ
(B) কোরিওলিস বল
(C) সমুদ্রজলের লবণতা
(D) পৃথিবীর পরিক্রমণ
Ans: (B) কোরিওলিস বল
- মহাসমুদ্রের কোন্ স্থানটি মৎস্য আহরণে বিখ্যাত—
(A) উষ্ণস্রোত অঞ্চল
(B) শীতল স্রোত অঞ্চল
(C) উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলন অঞ্চল
(D) নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত অঞ্চল
Ans: (C) উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলন অঞ্চল
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | বারিমন্ডল (তৃতীয় অধ্যায়) মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Geography Barimandal Question and Answer :
- উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের একটি উষ্ণ স্রোতের নাম উল্লেখ করো ।
Ans: আলাস্কা স্রোত ।
- উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের একটি শীতল স্রোতের নাম উল্লেখ করো ।
Ans: বেরিং স্রোত ।
- উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের একটি শীতল স্রোতের নাম উল্লেখ করো ।
Ans: ল্যাব্রাডর স্রোত ।
- উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের একটি উষ্ণ স্রোতের নাম উল্লেখ করো ।
Ans: উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত ।
- দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের একটি উষ্ণ স্রোতের নাম উল্লেখ করো ।
Ans: পূর্ব অস্ট্রেলীয় বা নিউ সাউথ ওয়েলস্ স্রোত ।
- দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের একটি উষ্ণ স্রোতের নাম । করো ।
Ans: ব্রাজিল স্রোত ।
- দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের একটি শীতল স্রোতের নাম বলো ।
Ans: বেঙ্গুয়েলা স্রোত ।
- দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের একটি শীতল স্রোতের নাম উল্লেখ করো ।
Ans: পেরু বা হামবোল্ড স্রোত ।
- মোট সমুদ্রস্রোতের প্রায় কত শতাংশ বহিঃস্রোত ?
Ans: মোট সমুদ্রস্রোতের 10%
- পৃথিবীর বৃহত্তম মগ্নচড়া কোন্ মহাসাগরে অবস্থিত ?
Ans: পৃথিবীর বৃহত্তম মগ্নচড়া গ্র্যান্ড ব্যাংক [ ক্ষেত্রফল ৯৬,০০০ বর্গকিমি , গভীরতা ৯০ মিটার ] আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত ।
- মগ্নচড়ায় কোন্ মৎস্যখাদ্য সর্বাধিক পরিমাণে পাওয়া যায় ?
Ans: প্ল্যাংকটন ।
- কোন্ এককের সাহায্যে সমুদ্রস্রোতের মাধ্যমে জলপ্রবাহের পরিমাণ মাপা হয় ?
Ans: সেভেয়ার ড্রপ বা ভাদ্রুপ ।
- ঋতুপরিবর্তনে কোন্ মহাসাগরের সমুদ্রস্রোতের দিক পরিবর্তন ঘটে ?
Ans: ভারত মহাসাগর ।
- সমুদ্রজলে উষ্ণতার তারতম্যের প্রধান কারণ কী ?
Ans: সূর্যরশ্মির পতনকোণের তারতম্য ।
- হিমপ্রাচীর কোন্ মহাসাগরে দেখা যায় ?
Ans: আটলান্টিক মহাসাগরে ।
- সমুদ্রজলের একই স্থানে ওঠানামা করাকে কী বলে ?
Ans: সমুদ্রতরঙ্গ ।
- নিউফাউন্ডল্যান্ডের কাছে ঘন কুয়াশা ও ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির কারণ কী ?
Ans: উপসাগরীয় স্রোত ও ল্যাব্রাডর স্রোতের মিলন ।
- সমুদ্রস্রোত উৎপত্তির মূল কারণ কোনটি ?
Ans: বায়ুপ্রবাহ ।
- কোন্ দুটি স্রোতের মিলনে জাপান উপকূলে কুয়াশা হয় ?
Ans: উষ্ণ কুরোশিয়ো ও শীতল ওয়াশিয়ো ।
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর | বারিমন্ডল (তৃতীয় অধ্যায়) মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Geography Barimandal Question and Answer :
- বারিমণ্ডল ( Hydrosphere ) কাকে বলে বা বারিমণ্ডল বলতে কী বোঝ ?
Ans: ভূপৃষ্ঠ এবং ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি অবস্থিত জলের সমস্ত উৎস ও ভাণ্ডারকে একত্রে বারিমণ্ডল বা Hydrosphere বলে ( ‘ বারি ‘ শব্দের অর্থ হল ‘ জল ‘ ) । বারিমণ্ডলের মোট জলের প্রায় ৯৭ % রয়েছে সাগর ও মহাসাগরে । অবশিষ্ট ৩ ভাগ জলের প্রায় ৭৫ % সজ্জিত রয়েছে বরফ রূপে । বাকি ২৫ % নদী , হ্রদ , পুকুর , খাল , বিল ও অন্যান্য জলাভূমিতে অবস্থান করছে ।
- সমুদ্রস্রোত ( Ocean currents ) কী ?
Ans: বায়ুপ্রবাহ , পৃথিবীর আবর্তন , সমুদ্রজলের উষ্ণতা , ঘনত্ব , লবণতা ইত্যাদির তারতম্যে সমুদ্রের বিশাল অঞ্চলজুড়ে নিয়মিতভাবে ও নির্দিষ্ট পথে সমুদ্রজলের একমুখী প্রবাহ হল সমুদ্রস্রোত ।
- সমুদ্রতরঙ্গ কী ?
Ans: সমুদ্রের ওপর বায়ুপ্রবাহে জলের ওপর যে পীড়নের সৃষ্টি হয় তার প্রভাবে জল অগভীর উপকূলের তটভূমিতে ঢেউ আকারে আছড়ে পড়ে । একেই বলে সমুদ্রতরঙ্গ ।
- কোরিওলিস বল কী ?
Ans: পৃথিবীর আবর্তনের প্রভাবে প্রবাহিত বায়ু , সমুদ্রস্রোতের ওপর যে বল কাজ করে তা হল কোরিওলিস বল । কোরিওলিস বল বায়ু ও সমুদ্রস্রোতের দিকের সাথে সমকোণে কাজ করে বলে বায়ু ও সমুদ্রস্রোত উত্তর গোলার্ধে ডান এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে যায় ।
- ফেরেল সূত্র কী ?
Ans: পৃথিবীর আবর্তনে সৃষ্ট কোরিওলিস বলের প্রভাবে বায়ুর মতো সমুদ্রস্রোতও উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে বেঁকে প্রবাহিত হয় । এটি হল ফেরেল সূত্র ।
- গায়র বা কুণ্ডলী কাকে বলে ?
Ans: সকল মহাসাগরের মাঝবরাবর কোরিওলিস বলের প্রভাবে সমুদ্রস্রোত বেঁকে গিয়ে ও মিলিত হয়ে জলাবর্ত বা চক্র সৃষ্টি করে । একেই গায়র বা কুণ্ডলী বলে ।
- শৈবাল সাগর ( Saragasso Sea ) কাকে বলে ?
Ans: উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে উষ্ণ উপসাগরীয় , শীতল ক্যানারি ও উষ্ণ উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের মিলনে যে জলাবর্ত সৃষ্টি হয় তার মধ্যবর্তী স্রোতহীন শৈবাল আগাছাপূর্ণ স্থানকে বলে । শৈবাল সাগর ।
- উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলন অঞ্চলে কী কী আবহগত ঘটনা ঘটে ?
Ans: উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলন অঞ্চলে ঘন কুয়াশা সৃষ্টি হয় এবং মাঝে মাঝে ঝড়বৃষ্টিসহ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া সৃষ্টি করে ।
- মগ্নচড়া বা ব্যাংক কী ?
Ans: জলের সংস্পর্শে গলে যাওয়ায় নুড়ি , বালি , পলি সমুদ্রতলদেশে অধঃক্ষিপ্ত হয়ে যে গভীর অঞ্চল সৃষ্টি করে তাকে মাচড়া বলে । যেমন – উত্তর – পশ্চিম আটলান্টিকের গ্র্যান্ড ব্যাংক ।
- পৃথিবী বিখ্যাত কয়েকটি মগ্নচড়ার গুরুত্ব লেখো ।
Ans: পৃথিবী বিখ্যাত কয়েকটি মগ্নচড়া হল গ্র্যান্ড ব্যাংক ডগার্স ব্যাংক , রকফল ব্যাংক যেগুলি হল পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাণিজ্যিক মৎস্য আহরণ অঞ্চল ।
- প্ল্যাংকটন ( Plankton ) কী ?
Ans: সমুদ্রজলে ভাসমান অতিক্ষুদ্র আণুবীক্ষণিক জীবনে বলে প্ল্যাংকটন । প্ল্যাংকটন ২ প্রকারের হয়— ( 6 ) উদ্ভিদ প্ল্যাংকটন বা Phyto – plankton এবং ( ii ) প্রাণী প্ল্যাংকটন বা Zoo – plankion ) | সামুদ্রিক মাছেদের প্রধান খাদ্য হল এই প্ল্যাংকটন ।
- প্রশান্ত মহাসাগরের দুটি উষ্ণ ও দুটি শীতল স্রোতের নাম লেখো ।
Ans: প্রশান্ত মহাসাগরের দুটি উষু স্রোত হল— ( 1 ) কুরোশিরো বা জাপান স্রোত এবং ( ii ) উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোত । প্রশান্ত মহাসাগরের দুটি শীতল স্রোত হল – ( i ) ক্যালিফোর্নিয়া স্রোত ও ( ii ) পেরু স্রোত বা হামবোল্ড স্রোত ।
- ভারত মহাসাগরের দুটি উষ্ণ ও দুটি শীতল স্রোতের নাম লেখো ।
Ans: ভারত মহাসাগরের দুটি উষু স্রোত হল – ( i ) মোজাম্বিক স্রোত ও ( ii ) মাদাগাস্কার স্রোত । ভারত মহাসাগরের দুটি শীতল স্রোত হল- ( i ) কুমেরু স্রোত ও ( ii ) পশ্চিম অস্ট্রেলীয় স্রোত ।
- আটলান্টিক মহাসাগরের দুটি উষ্ণ ও দুটি শীতল স্রোতের নাম লেখো ।
Ans: আটলান্টিক মহাসাগরের দুটি উর স্রোত হল ( i ) ক্যানারি স্রোত ও ( ii ) ব্রাজিল স্রোত । আটলান্টিক মহাসাগরের দুটি শীতল স্রোত হল – ( i ) ল্যাব্রাডর স্রোত ও ( ii ) বেঙ্গুয়েলা স্রোত ।
জেনে রাখো ● জিওস্ট্রপিক স্রোত ( Geostrophic current ) উঘ্ন শীতল স্রোতের চক্রাকার জলাবর্ত অঞ্চলে জলতলের উচ্চতা পার্শ্ববর্তী অঞ্চল অপেক্ষা বেশি হয় , ফলে জলসমতা ফেরাতে হলে মৃত স্রোত পাশের অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয় , একেই বলে জিওস্টুপিক স্রোত ।
- উপসাগরীয় স্রোত কাকে বলে ?
Ans: পশ্চিমমুখী উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতটি মেক্সিকো উপসাগরের মধ্য দিয়ে উত্তর আমেরিকা মহাদেশের পূর্ব উপকূল দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে উত্তর – পশ্চিম ইউরোপের দিকে প্রবাহিত হয় । এই স্রোতের দক্ষিণ – পশ্চিম অংশকে উপসাগরীয় স্রোত বলে ।
- নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত কী ?
Ans: উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মধ্যভাগ দিয়ে একটি ক্ষীণ স্রোত পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত হয় । এই স্রোতকে নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত বলা হয় ।
- ভারত মহাসাগরে সমুদ্রস্রোত ঋতুপরিবর্তনে বিপরীতমুখী কেন ?
Ans: ভারত মহাসাগরের সমুদ্রস্রোতের ওপর মৌসুমি বায়ুর ও প্রভাব সর্বাধিক । ঋতুপরিবর্তনের সাথে সাথে মৌসুমি বায়ুর দিক ও গতি পরিবর্তন হয় বলে সমুদ্রস্রোতেরও দিক ও গতির পরিবর্তন ঘটে । গ্রীষ্ম ও শীত ঋতুতে এখানে পরস্পর বিপরীতমুখী স্রোত প্রবাহিত হয় ।
- হিমপ্রাচীর ( Cold wall ) কাকে বলে ?
Ans: দুটি ভিন্ন ঘনত্বের ভিন্ন ভৌতগুণবিশিষ্ট শীতল ও উষ্ণ স্রোত বিপরীত দিক থেকে চালিত হলে তাদের মধ্যবর্তী যে বিভাজনতল সৃষ্টি হয় , তাকে বলে হিমপ্রাচীর ।
- হিমশৈল ( Ice berg ) বলতে কী বোঝ ?
Ans: বিশালাকৃতি বরফের স্তূপ যখন সমুদ্রের জলে ভাসতে থাকে তখন তাকে হিমশৈল বলে ।
- হিমশৈলের বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব লেখো ।
Ans: হিমশৈলের বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব হল – ( i ) মিষ্টি জল দিয়ে তৈরি বিশালাকার বরফ স্তূপ । ( ii ) মাত্র ১/৯ ভাগ জলের উপরে থাকে । ( iii ) উচ্চ অক্ষাংশের সমুদ্রে ( গ্রিনল্যান্ড , অ্যান্টার্কটিকা ) এটিকে দেখা যায় । ( iv ) জাহাজ চলাচলে ভীষণ বিপদ ঘটায় ।
ব্যাখ্যামূলক উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর | বারিমন্ডল (তৃতীয় অধ্যায়) মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Geography Barimandal Question and Answer :
- উষ্ণ স্রোত ও শীতল স্রোত বলতে কী বোঝ ?
Ans: ( 1 ) উষ্ণ স্রোত ( Warm Current ) সমুদ্রস্রোত যখন উষ্ণুমণ্ডল থেকে প্রবাহিত হয় তখন সেই স্রোতকে উষ্ণ স্রোত বলে । সাধারণত এই ধরনের স্রোত সমুদ্রজলের অপেক্ষাকৃত ওপরের অংশ দিয়ে বহিঃস্রোতরূপে প্রবাহিত হয় । যেমন — উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত , উষ্ণ নিরক্ষীয় স্রোত ইত্যাদি । ( ii ) শীতল ( Cold Current ) সমুদ্রস্রোত যখন শীতল মেরুপ্রদেশ থেকে প্রবাহিত হয় তখন সেই স্রোতকে শীতল স্রোত বলে । এ ছাড়া উষ্ণুমণ্ডল থেকে প্রবাহিত উর স্রোত যখন মেরুদ্বয়ের দিকে প্রবাহিত হয়ে আবার ঘুরে আসে তখন সেই সমুদ্রস্রোতকে শীতল স্রোতের আকারেই দেখতে পাওয়া যায় । শীতল সমুদ্রস্রোত সমুদ্রজলের অপেক্ষাকৃত নীচের অংশ দিয়ে অন্তঃস্রোত হিসেবে প্রবাহিত হয় । যেমন — শীতল বেরিং স্রোত , ল্যাব্রাডর স্রোত ইত্যাদি ।
- ‘ বায়ুপ্রবাহ সমুদ্রস্রোতের মূল কারণ , অথচ বায়ুর গতিবেগের তুলনায় সমুদ্রস্রোতের গতিবেগ অনেক কম ।’— কারণ ব্যাখ্যা করো ।
Ans: বায়ুপ্রবাহ সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির মূল কারণ । সমুদ্রের উপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ু জলকণার সঙ্গে সংঘর্ষে জলকে তাড়িয়ে নিয়ে সমুদ্রস্রোতের উৎপত্তি ঘটায় । তবে সমুদ্রের উপর দিয়ে যে বায়ু বয়ে যায় তার মাত্র ২ % -৪ % শক্তি সমুদ্রস্রোতের উৎপত্তিতে সাহায্য করে । তাই দেখা যায় যেখানে বায়ুর গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিমি সেখানে সমুদ্রস্রোতের বেগ ১-২ কিমি / ঘণ্টা । সমুদ্রের উপর প্রবাহিত নিয়ত বায়ু সমুদ্রস্রোত উৎপত্তিতে সর্বাধিক সাহায্য করে । প্রধান তিনটি মহাসাগরেই আয়ন বায়ু , পশ্চিমা বায়ু ও মেরু বায়ু সমুদ্রস্রোতের উৎপত্তি ঘটায় । ভারতমহাসাগরে সমুদ্রস্রোতের ওপর ত মৌসুমি বায়ুর প্রভাব সর্বাধিক ।
- পৃষ্ঠস্রোত ও গভীর সমুদ্রস্রোত বলতে কী বোঝ ?
Ans: পৃষ্ঠস্রোত সমুদ্রতলের উপর দিয়ে প্রবাহিত স্রোত হল পৃষ্ঠস্রোত । বায়ুপ্রবাহের মাধ্যমে এই স্রোতের উৎপত্তি ঘটে । গভীর সমুদ্রস্রোত গভীর স্তর ( ২০০-১০০০ মিটার ) দিয়ে প্রবাহিত স্রোত হল গভীর সমুদ্রস্রোত । সমুদ্রজলের ঘনত্বের তারতম্য এই স্রোত সৃষ্টির মূল কারণ । প্রশ্ন ৪ উদাহরণসহ সমুদ্রস্রোতের ওপর কোরিওলিস বলের প্রভাব ব্যাখ্যা করো । উত্তর : পৃথিবী তার নিজের অক্ষের ওপর পশ্চিম থেকে পূর্বে আবর্তন করার ফলে যে কোরিওলিস বলের ( Coriolis Force ) উৎপত্তি হয় এবং তার প্রভাবে সমুদ্রস্রোত সোজাপথে প্রবাহিত হতে পারে না । উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে প্রবাহিত হয় — এটি ফেরেল সূত্র নামে পরিচিত ।
- শৈবাল সাগরের উৎপত্তি কেন ঘটেছে ?
Ans: আটলান্টিক মহাসাগরের দক্ষিণ – পশ্চিম , ( i ) উপসাগরীয় স্রোত , ( ii ) উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত এবং ( iii ) ক্যানারি স্রোত পর্যায়ক্রমে CRATE MASS আবর্তিত হয়ে কয়েক হাজার বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত একটি বিশাল আয়তাকার অঞ্চলজুড়ে একটি ঘূর্ণস্রোত বা জলাবর্তের সৃষ্টি হয় । এই বিশাল জলাবর্তের মাঝখানে কোনোরকম জলপ্রবাহ থাকে না বলে স্রোতবিহীন এই অঞ্চলে নানারকম শৈবাল , আগাছা ও জলজ উদ্ভিদ জন্মায় । এইভাবেই শৈবাল সাগরের উৎপত্তি হয় ।
- উপকূলের আকৃতি সমুদ্রস্রোতকে কীরুপে প্রভাবিত করে উদাহরণসহ লেখো ।
Ans: উপকূলের আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য সমুদ্রস্রোতের দিক পরিবর্তন ঘটায় , সমুদ্রস্রোতকে বিভিন্ন শাখায় ভাগ করে । আটলান্টিকে বেঙ্গুয়েলা স্রোত গিনি উপকূলে বাধা পেয়ে পশ্চিমে বাঁকে । দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত ব্রাজিল অন্তরীপে বাধা পেয়ে দুটি শাখায় ভাগ হয় ।
- ঋতু পরিবর্তন ভারত মহাসাগরের সমুদ্রস্রোতকে কীভাবে প্রভাবিত করে ?
Ans: ঋতুপরিবর্তনের সাথে সাথে মৌসুমি বায়ুর দিক ও গতি পরিবর্তন হয় । এর ফলে সমুদ্রস্রোতেরও দিক ও গতি পরিবর্তন । ঘটে । তাই বলা যায় যে , ঋতুপরিবর্তন তথা মৌসুমি বায়ু ভারত মহাসাগরের সমুদ্রস্রোতকে প্রভাবিত করে ।
- উচ্চ অক্ষাংশে অবস্থান সত্তেও নরওয়ের হ্যামারফেস্ট বন্দর সারাবছর বরফমুক্ত কেন ?
Ans: নরওয়ে উচ্চ অক্ষাংশে অবস্থিত হওয়ার জন্য এই অঞ্চলটি অত্যন্ত শীতল হয় । তবে উষ্ণ উত্তর আটলান্টিক স্রোতের প্রভাবে জলবায়ু কিছুটা উষ্ণ থাকে । এই কারণেই উচ্চ অক্ষাংশে অবস্থান সত্ত্বেও নরওয়ের হ্যামারফেস্ট বন্দর সারাবছর বরফমুক্ত থাকে ।
- প্রশ্ন মগ্নচড়া সৃষ্টির কারণ কী ?
Ans: শীতল স্রোত যেখানে উষ্ণ স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয় , সেখানে শীতল স্রোতের সঙ্গে ভেসে আসা হিমশৈলগুলি উদ্বু স্রোতের সংস্পর্শে গলে যায় এবং হিমশৈল বাহিত নুড়ি , কাঁকর , পলি সমুদ্রে অধঃক্ষিপ্ত হয় । বহুকাল ধরে এই অবক্ষেপণের ফলে অগভীর চড়া সৃষ্টি হয় ।
- মরুভূমি সৃষ্টিতে সমুদ্রস্রোতের প্রভাব উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো ।
Ans: ক্রান্তীয় মণ্ডলে মহাদেশের পশ্চিম দিক দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে যায় । এই শীতল স্রোতের প্রভাবে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের জলবায়ু হয়েছে শুষ্ক প্রকৃতির বায়ু জলীয় বাষ্প অধীক সংগ্রহের কারণে সংশ্লিষ্ট মহাদেশের পশ্চিম অঞ্চলগুলিতে বৃষ্টি প্রায় হয় । না বললেই চলে । অনন্তকাল ধরে অনাবৃষ্টির কারণে অঞ্চলগুলি মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে । সাহারা মরুভূমির পাশ দিয়ে প্রবাহিত শীতল ক্যানারি স্রোত এই বিশাল জলাবর্তের মাঝখানে কোনোরকম জলপ্রবাহ থাকে না বলে স্রোতবিহীন এই অঞ্চলে নানারকম শৈবাল , আগাছা ও জলজ উদ্ভিদ জন্মায় । এইভাবেই শৈবাল সাগরের উৎপত্তি হয় ।
- উপকূলের আকৃতি সমুদ্রস্রোতকে কীরুপে প্রভাবিত করে উদাহরণসহ লেখো ।
Ans: উপকূলের আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য সমুদ্রস্রোতের দিক পরিবর্তন ঘটায় , সমুদ্রস্রোতকে বিভিন্ন শাখায় ভাগ করে । আটলান্টিকে বেঙ্গুয়েলা স্রোত গিনি উপকূলে বাধা পেয়ে পশ্চিমে বাঁকে । দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত ব্রাজিল অন্তরীপে বাধা পেয়ে দুটি শাখায় ভাগ হয় ।
- ঋতুপরিবর্তন ভারত মহাসাগরের সমুদ্রস্রোতকে কীভাবে প্রভাবিত করে ?
Ans: ঋতুপরিবর্তনের সাথে সাথে মৌসুমি বায়ুর দিক ও গতি পরিবর্তন হয় । এর ফলে সমুদ্রস্রোতেরও দিক ও গতি পরিবর্তন ঘটে । তাই বলা যায় যে , ঋতুপরিবর্তন তথা মৌসুমি বায়ু ভারত মহাসাগরের সমুদ্রস্রোতকে প্রভাবিত করে ।
- উচ্চ অক্ষাংশে অবস্থান সত্তেও নরওয়ের হ্যামারফেস্ট বন্দর সারাবছর বরফমুক্ত কেন ?
Ans: নরওয়ে উচ্চ অক্ষাংশে অবস্থিত হওয়ার জন্য এই অঞ্চলটি অত্যন্ত শীতল হয় । তবে উষ্ণ উত্তর আটলান্টিক স্রোতের প্রভাবে জলবায়ু কিছুটা উষ্ণ থাকে । এই কারণেই উচ্চ অক্ষাংশে অবস্থান সত্ত্বেও নরওয়ের হ্যামারফেস্ট বন্দর সারাবছর বরফমুক্ত থাকে ।
- মগ্নচড়া সৃষ্টির কারণ কী ?
Ans: শীতল স্রোত যেখানে উষ্ণ স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয় , সেখানে শীতল স্রোতের সঙ্গে ভেসে আসা হিমশৈলগুলি উষ্ণ স্রোতের সংস্পর্শে গলে যায় এবং হিমশৈল বাহিত নুড়ি , কাঁকর , পলি সমুদ্রে অধঃক্ষিপ্ত হয় । বহুকাল ধরে এই অবক্ষেপণের ফলে অগভীর চড়া সৃষ্টি হয় ।
- মরুভূমি সৃষ্টিতে সমুদ্রস্রোতের প্রভাব উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো ।
Ans: ক্রান্তীয় মণ্ডলে মহাদেশের পশ্চিম দিক দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে যায় । এই শীতল স্রোতের প্রভাবে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের জলবায়ু হয়েছে শুষ্ক প্রকৃতির বায়ু জলীয় বাষ্প অধীক সংগ্রহের কারণে সংশ্লিষ্ট মহাদেশের পশ্চিম অঞ্চলগুলিতে বৃষ্টি প্রায় হয় । না বললেই চলে । অনন্তকাল ধরে অনাবৃষ্টির কারণে অঞ্চলগুলি মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে । সাহারা মরুভূমির পাশ দিয়ে প্রবাহিত শীতল ক্যানারি স্রোত সোনেরান মরুভূমির পাশ দিয়ে প্রবাহিত ক্যালিফোর্নিয়া স্রোত অস্ট্রেলিয়া মরুভূমির পাশ দিয়ে প্রবাহিত পশ্চিম অস্ট্রেলীয় স্রোত সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে মরুভূমি সৃষ্টিতে সাহায্য করেছে ।
- উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলন অঞ্চলে ঘন কুয়াশা ও ঝড় ঝঞ্ঝার সৃষ্টি হয় । কারণ ব্যাখ্যা করো ।
Ans: মহাসাগরে উষ্ণ সমুদ্রস্রোতের উপর দিয়ে উদ্বু – আম বায়ু এবং শীতল স্রোতের উপর দিয়ে শীতল – শুদ্ধ বায়ু প্রবাহিত হয় । শীতল শুষ্ক বায়ুর ঢাল বরাবর উষ্ণ – আদ্র বায়ু ধীরে ধীরে উঠে গেলে উষ্ণ আদ্র বায়ু ঘনীভূত হয়ে কুয়াশার সৃষ্টি হয় । এই ধরনের কুয়াশাকে পরিবাহিত কুয়াশা ( Advection fog ) বলা হয় । যদি ওই অবস্থায় শুষ্ক শীতল বায়ুর উপর উষ্ণ – আর্দ্র বায়ু চক্রাকারে বু উপরে উঠে নাতিশীতোয় ঘূর্ণবাত সৃষ্টি করে তাহলে ঝড় , বৃষ্টি , তুষারঝড় ঘটে । তাই উষ্ণ ও শীতল স্রোত মিলন অঞ্চলে প্রায়শই ঘন কুয়াশ ও ঝড় – বাজার সৃষ্টি হয় ।
- নিউফাউন্ডল্যান্ড অঞ্চলে ঘন কুয়াশা সৃষ্টি হয় কেন ?
Ans: নিউফাউন্ডল্যান্ড অঞ্চলে উত্তর দিক থেকে শীতল ল্যাব্রাডর এবং দক্ষিণ দিক থেকে উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত আসে এবং পাশাপাশি বয়ে যায় । দক্ষিণ দিক থেকে উপসাগরীয় স্রোতের প্রভাবে বায়ুমণ্ডলে প্রবাহিত উষ্ণ – আর্দ্র বায়ুপুঞ্জ উত্তর দিকে থেকে শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের প্রভাবে প্রবাহিত শীতল বায়ুপুঞ্জের উপরে ধীরে ধীরে উঠে ঘনীভূত হয় এবং কুয়াশা সৃষ্টি করে । তাই নিউফাউন্ডল্যান্ড অঞ্চলে ঘন কুয়াশার সৃষ্টি হয় ।
- এল নিনো ও লা নিনার ওপর সমুদ্রস্রোতের প্রভাব লেখো ।
Ans: জলবায়ু পরিবর্তনে সমুদ্রস্রোতের প্রভাব স্পষ্ট বোঝা যায় । প্রশান্ত মহাসাগরে এল নিনো ও লা নিনা আবির্ভাবের মধ্য দিয়ে । এল নিনো বছরে পেরু , ইকুয়েডর উপকূলে উত্তরদিক থেকে গরম জলের স্রোত ( লা নিনা স্রোত ) এসে ঢোকে । ফলে পেরু , ইকুয়েডরে প্রবল বৃষ্টি , পশ্চিমে অস্ট্রেলিয়ায় অনাবৃষ্টি দেখা দেয় । লা নিনা বছরে অস্ট্রেলিয়ায় প্রবল বৃষ্টিতে বন্যা এবং পেরু , ইকুয়েডরে অনাবৃষ্টিতে খরা দেখা দেয় । প্রশান্ত মহাসাগরে গড়ে ২-৭ বছর অন্তর জলবায়ুর এই পরিবর্তনে সমুদ্রস্রোত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় ।
- গ্রিনল্যান্ড ও নরওয়ে একই অক্ষাংশে অবস্থিত হওয়া সত্ত্বেও নরওয়ে অপেক্ষা গ্রিনল্যান্ড উপকূল শীতল কেন ?
Ans: গ্রিনল্যান্ড ও নরওয়ে একই অক্ষাংশে অবস্থিত । গ্রিনল্যান্ডের দুই উপকূল দিয়ে সারাবছরই উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে উত্তর মেরু থেকে আগত শীতল ল্যাব্রাডর স্রোত প্রবাহিত হয় । অপরদিকে নরওয়ের দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত বাহিত হয় । শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের প্রভাবে গ্রিনল্যান্ড উপকূল সারাবছর শীতল থাকে এবং উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোতের প্রভাবে নরওয়ে উপকূল সারাবছর তুলনামূলক উষ্ণ থাকে ।
- মগ্নচড়ার গুরুত্ব কী ? অথবা , মগ্নচড়া অঞ্চল মৎস্য আহরণে উষ্ণত কেন ?
Ans: বাণিজ্যিক দিক থেকে মগ্নচড়াগুলির গুরুত্ব অপরিসীম যেমন— ( 1 ) অগভীর মগ্নচড়াতে সূর্যালোক তলদেশ পর্যন্ত পৌঁছোতে পারে বলে প্ল্যাংকটন জন্মায় । ( ii ) হিমশৈলে অবস্থিত কিছু সূক্ষ্ম খনিজ প্ল্যাংকটনের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে বলে , মগ্নচড়াগুলি মাছেদের প্রধান খাদ্য প্ল্যাংকটনে সমৃদ্ধ । ( iii ) নাতিশীতোয় জলবায়ু অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় মৎস্য আহরণ ও সংরক্ষণের সুবিধা হয় ।
- গ্র্যান্ড ব্যাংক অঞ্চলে প্রচুর মাছ ধরা পড়ে কেন ?
Ans: গ্র্যান্ড ব্যাংক অঞ্চল উত্তর দিক থেকে আগত শীতল এবং দক্ষিণ দিক থেকে আগত উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোতের মিলন অঞ্চল । উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলন অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে মাছের প্রয়োজনীয় খাদ্য প্ল্যাংকটন জন্মায় । তা ছাড়া ল্যাব্রাডর স্রোতের সাথে আগত হিমশৈল গলে গিয়ে এবং সমুদ্রজলের ঊর্ধ্বমুখী আবর্তে মাছের প্রয়োজনীয় খাদ্যেরও জোগান বাড়ে । তাই এই অঞ্চলে প্রচুর মাঝের সমাবেশ ঘটে । এই অঞ্চল পৃথিবীর অন্যতম বিখ্যাত বাণিজ্যিক মৎস্য আহরণ ক্ষেত্র ।
- উদাহরণসহ জলবায়ুর ওপর উষ্ণ স্রোতের প্রভাব লেখো ।
Ans: কোনো অঞ্চলের উপকূলের জলবায়ুর ওপর উষ্ণ স্রোত ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করে । যেমন ( i ) উচ্চ অক্ষাংশীয় অঞ্চলে উষ্ণ সমুদ্রস্রোত প্রবাহিত হওয়ার ফলে শীতল অঞ্চলের উষ্ণতা বেড়ে যায় । উদাহরণ – নরওয়ে উপকূল অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত উষ্ণ উত্তর আটলান্টিক স্রোতের প্রভাবে নরওয়ের উষ্ণতা বেড়ে যায় । ( ii ) উষ্ণ সমুদ্রস্রোতের ফলে উষ্ণমণ্ডল ও হিমমণ্ডলের সমুদ্র জলরাশির মধ্যে উষ্ণতার সমতা বজায় থাকে । ( iii ) উষু স্রোতের সাথে বয়ে আসা জলীয় বাষ্পপূর্ণ আর্দ্র বায়ুর প্রভাবে জলভাগে বৃষ্টিপাত হয় ।
উদাহরণ — ইংল্যান্ডের পশ্চিম উপকূলে বৃষ্টিপাত হয় । ( iv ) কোনো কোনো স্থানে উয় স্রোত ও শীতল স্রোতের মিলনে কুয়াশা ও ঝড় – এর সৃষ্টি হয় । উদাহরণ – জাপান উপকূলে হয় । উদাহরণসহ জলবায়ুর ওপর শীতল স্রোতের প্রভাব লেখো । উত্তর : জলবায়ুর ওপর শীতল স্রোতের প্রভাবগুলি হল ( i ) শীতল স্রোত – এর ফলে উষ্ণুমণ্ডলে বায়ুর উষ্ণতা হ্রাস পায় । উদাহরণ — কানাডার পূর্ব উপকূলের ওপর দিয়ে ল্যাব্রাডর স্রোত প্রবাহিত হওয়ার ফলে ওই অঞ্চলের উষ্ণতা হ্রাস পায় । ( ii ) উষ্ম নিরক্ষীয় ও শীতল মেরু বা মেরুপ্রদেশীয় অঞ্চলে উষ্ণ ও শীতল বায়ু মিলিত হলে উষ্ণতার সমতা রক্ষা করে । ( iii ) শীতল স্রোতের ওপর দিয়ে শুষ্ক বায়ু প্রবাহিত হলে উপকূল অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের বদলে তুষারপাত হয় । ( iv ) উয় স্রোত ও শীতল স্রোেত মিলিত হয়ে উপকূল অঞ্চলে প্রবল ঝড় – ঝঞ্ঝা ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সৃষ্টি হয় । উদাহরণ নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূলে এই রকম দুর্যোগের সৃষ্টি হয় ।
- জলবায়ুর ওপর পেরুস্রোত ও বেঙ্গুয়েলা স্রোতের প্রভাব লেখো ।
Ans: জলবায়ুর ওপর পেরুস্রোতের প্রভাব শীতল কুমেরু স্রোেত দক্ষিণ আমেরিকার হর্ণ অন্তরীপে বাধা পেয়ে দুটি শাখায় ভাগ হয় । এরই একটি শাখা চিলি ও পেরুর ওপর দিয়ে প্রথমে পেরু স্রোত নামে প্রবাহিত হয় । এই স্রোতের প্রভাবে চিলি ও পেরু উপকূলের জলবায়ু নাতিশীতোয় থাকে । জলবায়ুর ওপর শীতল বেঙ্গুয়েলা স্রোতের প্রভাব : শীতল কুমেরু স্রোতের দ্বিতীয় শাখা আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল দিয়ে বেঙ্গুয়েলা স্রোত নামে উত্তরে বাহিত হয়ে দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের সাথে মিলিত হয় । এই স্রোতের প্রভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলে জলবায়ু নাতিশীতোয় থাকে ।
জেনে রাখো ● সমুদ্রের জলের গভীরে যে স্তরের নীচে সমুদ্রের লবণতা ও ঘনত্ব বৃদ্ধি পায় , তাকে বলে পিকনোক্লাইনস্তর । ১৫১৩ খ্রিস্টাব্দে স্পেনীয় জুয়ান পনসে ডি লিওন Juan Ponce | de Leon প্রথম উপসাগরীয় স্রোত আবিষ্কার করেন । গভীর সমুদ্রে বেশি ঘনত্বের স্থান থেকে কম ঘনত্বের স্থানে সমুদ্রস্রোতের প্রবাহকে বলে ডাউনওলেলিং স্রোত । o উষ্ণতা , লবণতা অনুসারে সমুদ্রজলের ঘনত্ব বাড়ে – কমে । ঘনত্বের তারতম্যে যে স্রোত সৃষ্টি হয় , তাকে বলে থার্মোহ্যালাইন স্রোত ।
- কী কী কারণে সমুদ্রস্রোতের দিক পরিবর্তন ঘটে ?
Ans: সমুদ্রস্রোতের দিক পরিবর্তনের কারণগুলি হল : ( i ) উপকূলের আকৃতি : উপকূলের আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য সমুদ্রস্রোতের দিক পরিবর্তন ঘটায় , সমুদ্রস্রোতকে বিভিন্ন শাখায় ভাগ করে । আটলান্টিকে বেঙ্গুয়েলা স্রোত গিনি উপকূলে বাধা পেয়ে পশ্চিমে বাঁকে , দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত ব্রাজিল অন্তরীপে বাধা পেয়ে দুটি শাখায় ভাগ হয় । ( ii ) ঋতুপরিবর্তন : ঋতুপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রস্রোতের দিক ও গতি উভয়েরই পরিবর্তন ঘটে । ভারতমহাসাগরে গ্রীষ্মকালে মৌসুমি বায়ুর আগমনের সময় সমুদ্রস্রোত দক্ষিণ থেকে উত্তরে প্রবাহিত হয় । শীতকালে মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাগমনে সমুদ্রস্রোত উত্তর থেকে দক্ষিণে বয়ে যায় । এখানে ঋতুপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রস্রোতের ১৮০ ° পরিবর্তন ঘটে ।
- আটলান্টিক মহাসাগর সংলগ্ন মহাদেশগুলির জলবায়ুর ওপর সমুদ্রস্রোতের প্রভাব লেখো ।
Ans: আটলান্টিক মহাসাগরের বিভিন্ন প্রকার সমুদ্রস্রোত জলবায়ুকে বিভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রণ করে । ( i ) নিউফাউন্ডল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের নিকট উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত ও শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের মিলনে সৃষ্ট ঘূর্ণবাতের প্রভাবে প্রায়শই ঘন কুয়াশা ও ঝড় ঝঞ্ঝার সৃষ্টি হয় । ( ii ) উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোতের প্রভাবে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ ও নরওয়ে । উপকূল সারাবছর বরফমুক্ত থাকে । ফলে এই অঞ্চলের বন্দরগুলি শীতকালেও সক্রিয় । ( iii ) শীতল বেঙ্গুয়েলা স্রোতের প্রভাবে দক্ষিণ আফ্রিকা ও নামিবিয়া উপকূলের জলবায়ু সারাবছর নাতিশীতোয় হয়েছে । ( iv ) শীতল ক্যানারি স্রোতের প্রভাবে পোের্তুগাল ও মরক্কো উপকূলের উষ্ণতা সারাবছর কম থাকে ।
জেনে রাখো ● পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা দ্রুতগামী সমুদ্রস্রোত হল । উপসাগরীয় স্রোত । ● পৃথিবীর বৃহত্তম স্রোতের নাম হল আন্টার্কটিক উপমেরু স্রোত ।
- ওয়াশিয়ো ও কুরোশিয়ো স্রোত কী ?
Ans: ওয়াশিও স্রোত : শীতল সুমেরু সাগর থেকে একটি শীতল স্রোত বেরিং প্রণালী দিয়ে বেরিং সাগরে প্রবেশ করে । এই বেরিং স্রোত যখন আরও দক্ষিণে জাপান উপকূল দিয়ে প্রবাহিত হয় । তখন তাকে ওয়াশিয়ো স্রোত বলে । এটি উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের একটি শীতল স্রোত । • কুরোশিয়ো স্রোত : উত্তর ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মিলিত প্রবাহ তাইওয়ান ও জাপান উপকূল দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় । এর নাম হয় কুরোশিয়ো স্রোত বা জাপান স্রোত । এটি উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরে প্রবাহিত এক উয় সমুদ্রস্রোত । এই কুরোশিয়ো ও ওয়াশিয়ো স্রোতের মিলনেই জাপান উপকূলে ঘনকুয়াশা ও ঝড় – ঝঞ্ঝার সৃষ্টি হয় ।
- সমুদ্রে পরিচলন স্রোত কাকে বলে ?
Ans: নিরক্ষীয় অঞ্চলে সারাবছর সূর্যের লম্বকিরণের কারণে জল বেশি উষ্ণ হয় । বাষ্পীভবনে জল হালকা হয়ে বাষ্পীভূত হয় । ফলে উষু বায়ুপ্রবাহের মতো সমুদ্রের পৃষ্ঠদেশে উষ্ণ স্রোত প্রবাহিত হয় । আবার মেরু অঞ্চলের ঠান্ডা জল ভারী বলে নীচের দিকে নেমে নিরক্ষীয় অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয় । এইভাবে জলের ঊর্ধ্ব ও নিম্নমুখী প্রবাহ সৃষ্টি হয় , একে বলে পরিচলন স্রোত ।
- নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত কী ?
Ans: পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রতিনিয়ত আবর্তন করে । | এর ফলে পৃথিবীর মাঝবরাবর পশ্চিম থেকে পূর্বাভিমুখী একটি স্রোত । সৃষ্টি হয় । সাধারণত নিয়তবায়ুর গতি অনুসরণ করে নিরক্ষরেখার উত্তর নিরক্ষীয় ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত সৃষ্টি হয় । এদের গতিপদ পূর্ব থেকে পশ্চিমে । এই দুই স্রোতের বিপরীত গতিপথ অনুসর করায় নাম হয়েছে নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত । জুলাই মাসে এর প্রভাব বেশি হয় , ডিসেম্বর মাসে প্রভাব কমে যায় ।
- সমুদ্রস্রোতের নামকরণ কীভাবে করা হয় ?
Ans: সমুদ্রস্রোত স্থলভাগের যে অংশের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয় সাধারণত তার নাম অনুসারে স্রোতের নামকরণ হয় , যেমন : ব্রাজিল স্রোত , সোমালি স্রোত । নিরক্ষরেখার উত্তর – দক্ষিণে প্রবাহিত স্রোত নিরক্ষীয় স্রোত নামে পরিচিত । ভারতমহাসাগরে গ্রীষ্মে ও শীতে প্রবাহিত বিপরীত মৌসুমি বায়ুর গতি অনুসরণ করে স্রোতের নামকরণ করা হয় । উৎসস্থল অনুসারেও সমুদ্রস্রোতের নামকরণ হয় , যেমন— কুমেরু স্রোত , সুমেরু স্রোত ।
- বায়ুপ্রবাহ সমুদ্রস্রোতকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করে ?
Ans: বায়ুপ্রবাহ সমুদ্রস্রোতের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রক । বায়ুপ্রবাহের প্রভাবেই সমুদ্রের উপরের অংশের জল একস্থান থেকে অন্যস্থানে বাহিত হয় । এইভাবেই সমুদ্রস্রোত সৃষ্টি হয় । তাই বলা যায় , বিভিন্ন প্রকার নিয়ত বায়ু ( আয়ন বায়ু , পশ্চিমা বায়ু , মেরু বায়ু ) প্রভাবে সকল মহাসমুদ্রে সমুদ্রস্রোতের উৎপত্তি ঘটে ।
- সমুদ্রস্রোতের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো ।
Ans: সমুদ্রস্রোতের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলি হল ( i ) সমুদ্রস্রোত একটি নির্দিষ্ট দিকে সারাবছরব্যাপী প্রবাহিত হয় । ( iii ) সমুদ্রস্রোত ফেরেলের সূত্র অনুসারে উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে ও দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে বেঁকে প্রবাহিত হয় । ( iii ) সমুদ্রস্রোতের গতিবেগ সমুদ্রের গভীরতার ওপর নির্ভরশীল । ( iv ) সমুদ্রস্রোতের গতিবেগ ঘণ্টায় ৫—১০ কিমি । ( v ) গভীর সমুদ্রে সমুদ্রস্রোতের বেগ হয় ঘণ্টায় ৩-৫ কিমি এবং অগভীর সমুদ্রে এর বেগ হয় ঘণ্টায় । ৭–৯ কিমি । ( vi ) সমুদ্রস্রোত যে দিকে বয়ে যায় , সেই দিকের প্রবাহপথ অনুযায়ী নাম রাখা হয় । ( vii ) উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলনস্থলে ঘন কুয়াশা ও ঝড় – ঝঞ্ঝার সৃষ্টি হয় ।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর | বারিমন্ডল (তৃতীয় অধ্যায়) মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Geography Barimandal Question and Answer :
1. সমুদ্রস্রোত উৎপত্তির কারণ লেখো ।
Ans: সমুদ্রস্রোত সৃষ্টি , প্রবাহ ও গতিপ্রকৃতি নানা কারণে নিয়ন্ত্রিত হয় । সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির প্রধান প্রধান কারণগুলি হল
( i ) পৃথিবীর আবর্তন ( Earth’s Rotation ) : পৃথিবী তার নিজের অক্ষের ওপর পশ্চিম থেকে পূর্বে আবর্তন করার ফলে যে কোরিওলিস বলের ( Coriolis Force ) উৎপত্তি হয় , তার প্রভাবে সমুদ্রস্রোত সোজাপথে প্রবাহিত হতে পারে না । ফেরেলের সূত্র অনুসরণ করে সমুদ্রস্রোত উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে ও দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে বেঁকে প্রবাহিত হয় । LAVALAVA
( ii ) বায়ুপ্রবাহ ( Winds ) : আধুনিক বৈজ্ঞানিকদের মতে , বায়ুপ্রবাহ সমুদ্রস্রোতের প্রধান কারণ । নিয়ত বায়ুপ্রবাহ এবং সমুদ্রস্রোতের গতি লক্ষ করলে দেখা যায় যে , প্রবল নিয়ত বায়ুপ্রবাহ নির্দিষ্ট পথে প্রবাহিত হওয়ার সময় সমুদ্রস্রোতকেও নিজের প্রবাহপথের দিকে টেনে নিয়ে যায় । যেমন- ( ক ) যেসব স্থানে আয়ন বায়ু প্রবাহিত হয় সেইসব স্থানে পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিকে সমুদ্রস্রোত আসে । ( খ ) যেসব স্থানে পশ্চিমা বায়ু প্রবাহিত হয় সেইসব স্থানে পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে সমুদ্রস্রোত আসে । ( গ ) মেরু অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহ এবং সমুদ্রস্রোত একই দিকে প্রবাহিত হয় ।
( iii ) সমুদ্রজলের উদ্ধৃতা , লবণতা ও ঘনত্ব ( Ocean Temper ature and Salinity ) : সূর্যরশ্মি ভূপৃষ্ঠের সর্বত্র সমানভাবে পড়ে না । নিরক্ষীয় অঞ্চলে লম্ব সূর্যকিরণে সমুদ্রের জল অধিক উষ্ণ ও কম ঘনত্বের জল প্রসারিত ও হালকা হয়ে নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে বহিঃস্রোতরূপে ( Surface current ) শীতল মেরু অঞ্চলের দিকে এবং মেরু অঞ্চলে তির্যক সূর্যকিরণে সমুদ্রের জল শীতল , ঘন ও ভারী হয়ে অন্তঃস্রোতরূপে ( under current ) নিরক্ষীয় অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয় । আবার , সমুদ্রে অধিক লবণাক্ত জলের ঘনত্ব বেশি হওয়ায় তা কম লবণাক্ত জলের দিকে অন্তঃস্রোতরূপে এবং কম লবণাক্ত জল হালকা হওয়ায় বহিঃস্রোতরূপে বেশি লবণাক্ত জলের দিকে প্রবাহিত হয় ।
( iv ) বরফের গলন ( Melting of ice ) : দুই মেরুসংলগ্ন সমুদ্রজলে বিপুল পরিমাণে বরফ গলে মেশে । ফলে সমুদ্রে মিষ্টি জলের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ও লবণতা হ্রাস পায় । ফলে জল সমুদ্রস্রোত রূপে নিম্নঅক্ষাংশে বয়ে যায় ।
( v ) উপকূলের আকৃতি ( Shape of Coast line ) : সমুদ্রস্রোতের প্রবাহপথে মহাদেশীয় উপকূল ভাগ বা দ্বীপসমূহের অবস্থানের ফলে সমুদ্রস্রোতের দিক পরিবর্তিত হয় । যেমন দক্ষিণে নিরক্ষীয় স্রোত ব্রাজিলিয়ান উপকূলে বাধা পেয়ে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে যায় ।
( vi ) ঋতুভেদ ( Seasonal Variations ) : ঋতুভেদে মহাসমুদ্রের জলে উষ্ণতা ও লবণতার তারতম্য ঘটে বলে সমুদ্রস্রোতের পরিবর্তন ঘটে । শীত ও গ্রীষ্মে সম্পূর্ণ আলাদা দিক থেকে প্রবাহিত মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারত মহাসাগরে স্রোতের দিক পরিবর্তন ঘটে ।
2. উদাহরণসহ সমুদ্রস্রোতের প্রভাব ব্যাখ্যা করো ।
Ans: পৃথিবীব্যাপী সমুদ্রস্রোতের প্রভাব : সমুদ্রস্রোত জলবায়ু , মাছ আহরণ , জাহাজ চলাচল প্রভৃতির ওপর প্রভাব ফেলে ।
১. জলবায়ুর ওপর প্রভাব : ( i ) উষ্ণতায় প্রভাব : শীতল অঞ্চলের ওপর দিয়ে উষু স্রোত বয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে উষ্ণতা বাড়ে । উত্তর আটলান্টিক ড্রিফটের কারণেই উত্তর – পশ্চিম ইউরোপের উষ্ণতা শীতকালে বেশ বেশি হ হয় বলেই নরওয়ের হ্যামারফেস্ট বন্দর দিয়ে সারাবছর জাহাজ চলাচল করে । অপরদিকে উষু অঞ্চলের ওপর দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেলে উষ্ণতা কমে । বেঙ্গুয়েলা স্রোতের প্রভাবে দক্ষিণ আফ্রিকা ও নামিবিয়া উপকূলের উষ্ণতা সারাবছর কম ।
( ii ) বৃষ্টিপাত , তুষারপাত : উয় স্রোতের উপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ু বেশি জলীয় বাষ্প গ্রহণ করে বলে বৃষ্টির সম্ভাবনা বাড়ে । ই উত্তর আটলান্টিক ড্রিফট – এর প্রভাবে উত্তর – পশ্চিম ইউরোপে এই কারণে বেশি বৃষ্টি হয় । শীতল স্রোত প্রবাহিত অঞ্চলে উষ্ণতা অনেকটা কমে গেলে তুষারপাত হয় । ল্যাব্রাডর স্রোতের প্রভাবে সহায়িকা , নিউফাউন্ডল্যান্ড অঞ্চলে তুষারপাত ঘটে । অনেকক্ষেত্রে শীতল স্রোত প্রবাহিত অঞ্চলে বৃষ্টি কম হয় ।
( iii ) মরুভূমি সৃষ্টি : ক্রান্তীয় মণ্ডলে উপকূলের পাশ দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেলে বৃষ্টির সম্ভাবনা প্রায় থাকে না । দীর্ঘকাল ধরে বৃষ্টি না হওয়ার কারণে সংশ্লিষ্ট অঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হয় । সাহারার পশ্চিমপ্রান্ত দিয়ে প্রবাহিত শীতল ক্যানারি । স্রোত মরুভূমি সৃষ্টিতে সাহায্য করেছে ।
( iv ) কুয়াশা , ঝড় – ঝঞ্ঝা : যেখানে উষ্ণ ও শীতল স্রোত মিলিত হয় সেখানে বৈপরীত্য উষ্ণতার প্রভাবে পরিচলনজনিত কুয়াশা , ঝড় , ঝঞ্ঝার উৎপত্তি ঘটে । নিউফাউন্ডল্যান্ড অঞ্চলে শীতল ল্যাব্রাডর ও উষু উপসাগরীয় স্রোতের মিলনে প্রায়শই ঘন কুয়াশা ও ঝড়ের সৃষ্টি হয় ।
২. জলবায়ুর পরিবর্তনে প্রভাব : জলবায়ু পরিবর্তনে সমুদ্রস্রোতের প্রভাব স্পষ্ট বোঝা যায় প্রশান্ত মহাসাগরে এল নিনো ও লা নিনা আবির্ভাবের মধ্য দিয়ে । এল নিনো বছরে পেরু , ইকুয়েডর উপকূলে উত্তরদিক থেকে গরম জলের স্রোত ( লা নিনা স্রোত ) এসে ঢোকে । ফলে পেরু , ইকুয়েডরে প্রবল বৃষ্টি , পশ্চিমে অস্ট্রেলিয়ায় অনাবৃষ্টি দেখা দেয় । লা নিনা বছরে অস্ট্রেলিয়ায় প্রবল বৃষ্টিতে বন্যা এবং পেরু , ইকুয়েডরে অনাবৃষ্টিতে খরা দেখা দেয় । প্রশান্ত মহাসাগরে গড়ে ২–৭ বছর অন্তর জলবায়ুর এই পরিবর্তনে সমুদ্রস্রোত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় ।
৩. মগ্নচড়ার সৃষ্টি ও বাণিজ্যিক গুরুত্ব : যেখানে উষ্ণ ও শীতল সমুদ্রস্রোত মেশে সেখানে শীতল স্রোতে বয়ে আসা হিমশৈল গলে যায় । হিমশৈলের সঙ্গে থাকা পদার্থ ( বালি , পলি ) ক্রমাগত অধঃক্ষিপ্ত হয়ে অগভীর অঞ্চল তৈরি করে । এটি হল মগ্নচড়া বা ব্যাংক । গ্র্যান্ড ব্যাংক , ডগার্স ব্যাংক , রকফল ব্যাংক হল পৃথিবী বিখ্যাত মগ্নচড়া । মগ্নচড়ার বাণিজ্যিক গুরুত্ব : মগ্নচড়াগুলি পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাণিজ্যিক মৎস্য আহরণ অঞ্চল ।
4. মানুষের অর্থনৈতিক পরিবেশের ওপর সমুদ্রস্রোতের প্রভাব বা গুরুত্ব আলোচনা করো ।
Ans: মানুষের অর্থনৈতিক পরিবেশের ওপর সমুদ্রস্রোতের প্রভাব হল
( i ) মগ্নচড়ার সৃষ্টি ও মৎস্য আহরণ : বিভিন্ন মহাসাগরের শীতল স্রোতের সঙ্গে বড়ো বড়ো হিমশৈল ভেসে আসে । উষ্ণ স্রোতের সংস্পর্শে আসায় হিমশৈলগুলি গলতে শুরু করে , ফলে হিমশৈলের সাথে বয়ে আনা নুড়ি , পাথর , কাঁকর , বালি ইত্যাদি পদার্থ থিতিয়ে পড়ে সমুদ্রের অগভীর মহিসোপান অঞ্চলে জমা হয়ে মগ্নচড়ার সৃষ্টি করে । যেমন — গ্র্যান্ড ব্যাংক , ডগার্স ব্যাংক ইত্যাদি ।
মগ্নচড়াগুলিতে প্ল্যাংকটন নামে একপ্রকার আণুবীক্ষণিক জীব জন্মায় যা মাছের প্রধান খাদ্য । মগ্নচড়াগুলিতে অনুকূল তাপমাত্রা এবং খাদ্যের অফুরন্ত জোগান থাকায় মৎস্য আহরণের পক্ষে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে ।
( ii ) জাহাজ চলাচল ও বরফমুক্ত বন্দর : উষ্ণ স্রোতের প্রভাবে উচ্চ অক্ষাংশের সমুদ্র শীতকালেও বরফমুক্ত থাকে । উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোতের প্রভাবে উত্তর সাগর ও সংলগ্ন হ্যামারফেস্ট বন্দর বরফমুক্ত থাকে বলে জাহাজ চলাচলের সুবিধা হয় ।
( iii ) হিমশৈলের সমস্যা : শীতল সমুদ্রস্রোতে ভেসে আসা হিমশৈল জাহাজ চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি করে ।
======================================================================
বারিমন্ডল (তৃতীয় অধ্যায়)
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | বারিমন্ডল (তৃতীয় অধ্যায়) – মাধ্যমিক ভূগোল সাজেশন | Madhyamik Geography Suggestion :
- মোট সমুদ্রস্রোতের প্রায় কত শতাংশ বহিঃস্রোত ?
Answer : মোট সমুদ্রস্রোতের 10%
- পৃথিবীর বৃহত্তম মগ্নচড়া কোন্ মহাসাগরে অবস্থিত ?
Answer : পৃথিবীর বৃহত্তম মগ্নচড়া গ্র্যান্ড ব্যাংক [ ক্ষেত্রফল ৯৬,০০০ বর্গকিমি , গভীরতা ৯০ মিটার ] আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত ।
- মগ্নচড়ায় কোন্ মৎস্যখাদ্য সর্বাধিক পরিমাণে পাওয়া যায় ?
Answer : প্ল্যাংকটন ।
- কোন্ এককের সাহায্যে সমুদ্রস্রোতের মাধ্যমে জলপ্রবাহের পরিমাণ মাপা হয় ?
Answer : সেভেয়ার ড্রপ বা ভাদ্রুপ ।
- ঋতুপরিবর্তনে কোন্ মহাসাগরের সমুদ্রস্রোতের দিক পরিবর্তন ঘটে ?
Answer : ভারত মহাসাগর ।
- সমুদ্রজলে উষ্ণতার তারতম্যের প্রধান কারণ কী ?
Answer : সূর্যরশ্মির পতনকোণের তারতম্য ।
- হিমপ্রাচীর কোন্ মহাসাগরে দেখা যায় ?
Answer : আটলান্টিক মহাসাগরে ।
- সমুদ্রজলের একই স্থানে ওঠানামা করাকে কী বলে ?
Answer : সমুদ্রতরঙ্গ ।
- নিউফাউন্ডল্যান্ডের কাছে ঘন কুয়াশা ও ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির কারণ কী ?
Answer : উপসাগরীয় স্রোত ও ল্যাব্রাডর স্রোতের মিলন ।
- সমুদ্রস্রোত উৎপত্তির মূল কারণ কোনটি ?
Answer : বায়ুপ্রবাহ ।
- কোন্ দুটি স্রোতের মিলনে জাপান উপকূলে কুয়াশা হয় ?
Answer : উষ্ণ কুরোশিয়ো ও শীতল ওয়াশিয়ো ।
- উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের একটি উষ্ণ স্রোতের নাম উল্লেখ করো ।
Answer : আলাস্কা স্রোত ।
- উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের একটি শীতল স্রোতের নাম উল্লেখ করো ।
Answer : বেরিং স্রোত ।
- উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের একটি শীতল স্রোতের নাম উল্লেখ করো ।
Answer : ল্যাব্রাডর স্রোত ।
- উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের একটি উষ্ণ স্রোতের নাম উল্লেখ করো ।
Answer : উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত ।
- দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের একটি উষ্ণ স্রোতের নাম উল্লেখ করো ।
Answer : পূর্ব অস্ট্রেলীয় বা নিউ সাউথ ওয়েলস্ স্রোত ।
- দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের একটি উষ্ণ স্রোতের নাম । করো ।
Answer : ব্রাজিল স্রোত ।
- দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের একটি শীতল স্রোতের নাম বলো ।
Answer : বেঙ্গুয়েলা স্রোত ।
- দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের একটি শীতল স্রোতের নাম উল্লেখ করো ।
Answer : পেরু বা হামবোল্ড স্রোত ।
MCQ | বারিমন্ডল (তৃতীয় অধ্যায়) – মাধ্যমিক ভূগোল সাজেশন | Madhyamik Geography Suggestion :
- পৃথিবীর বৃহত্তম মগ্নচড়া হল -(A) রফল ব্যাংক(B) গ্র্যান্ড ব্যাংক (C) ডগার ব্যাংক(D) জর্জেস ব্যাংক
Answer : (B) গ্র্যান্ড ব্যাংক
- কোন্ স্রোতের প্রভাবে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ ও নরওয়ে উপকূল সারাবছর বরফমুক্ত থাকে ?(A) উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত (B) কুরোশিয়ো স্রোত(C) উত্তর আটলান্টিক স্রোত(D) উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত
Answer : (A) উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত
- ভারতমহাসাগরের সমুদ্রস্রোত নিয়ন্ত্রিত হয়—(A) মৌসুমি বায়ুর দ্বারা(B) পশ্চিমা বায়ুর দ্বারা (C) লা নিনা – এর দ্বারা (D) আয়ন বায়ু – র দ্বারা
Answer : (A) মৌসুমি বায়ুর দ্বারা
- মাদাগাস্কার ও মোজাম্বিক স্রোতের মিলিত শাখা হল – (A) কাম্চাট্কা(B) কুরোশিয়ো (C) পেরু স্রোত(D) আগুলহাস
Answer : (D) আগুলহাস
- উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের একটি শীতল স্রোেত হল -(A) ক্যানারি স্রোত(B) কুরোশিয়ো স্রোত(C) বেঙ্গুয়েলা স্রোত(D) কামচটকা স্রোত
Answer : (A) ক্যানারি স্রোত
- শীতল স্রোতের স্বাভাবিক উৎসস্থল হল -(A) উষ্ণমণ্ডল(B) নিরক্ষীয় অঞ্চল (C) মেরুপ্রদেশীয় অঞ্চল(D) নাতিশীতোয় অঞ্চল
Answer : (C) মেরুপ্রদেশীয় অঞ্চল
- বেঙ্গুয়েলা স্রোত কোন্ মহাসাগরে বয়ে যায়— (A) ভারত মহাসাগর(B) প্রশান্ত মহাসাগর(C) আটলান্টিক মহাসাগর(D) কুমেরু মহাসাগর
Answer : (C) আটলান্টিক মহাসাগর
- কোন্ মহাসাগরে ঋতুপরিবর্তনের সাথে সাথে সমুদ্রস্রোতের ১৮০ ° দিক পরিবর্তন ঘটে— (A) ভারত(B) প্রশান্ত(C) আটলান্টিক(D) কুমেরু
Answer : (A) ভারত
- বৃহত্তম মগ্নচড়া কোথায় অবস্থিত -(A) প্রশান্ত মহাসাগর(B) দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর(C) দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগর (D) উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর
Answer : (D) উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর
- কোন্ সমুদ্রস্রোতটি তিনটি মহাসাগরে বয়ে যায় -(A) নিরক্ষীয় স্রোত(B) উপসাগরীয় স্রোত(C) হামবোল্ড স্রোত(D) মৌসুমি স্রোত
Answer : (A) নিরক্ষীয় স্রোত
- সমুদ্রস্রোতের দিক বিক্ষেপের কারণ -(A) বায়ুপ্রবাহ(B) কোরিওলিস বল(C) সমুদ্রজলের লবণতা(D) পৃথিবীর পরিক্রমণ
Answer : (B) কোরিওলিস বল
- মহাসমুদ্রের কোন্ স্থানটি মৎস্য আহরণে বিখ্যাত—(A) উষ্ণস্রোত অঞ্চল(B) শীতল স্রোত অঞ্চল(C) উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলন অঞ্চল(D) নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত অঞ্চল
Answer : (C) উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলন অঞ্চল
- সমুদ্রস্রোত উৎপত্তির প্রধান কারণ কী ? (A) সমুদ্রজলের উষ্ণতা(B) বায়ুপ্রবাহ(C) এল নিনোর প্রভাব(D) পৃথিবীর আবর্তন
Answer : (B) বায়ুপ্রবাহ
- সমুদ্রে বিচ্ছিন্নভাবে ভাসমান বিশাল বরফের স্তূপকে বলে—(A) শৈবাল সাগর(B) মগ্নচড়া(C) হিমপ্রাচীর(D) হিমশৈল
Answer : (D) হিমশৈল
- সুস্পষ্ট হিমপ্রাচীর দেখা যায়— (A) আটলান্টিক মহাসাগর(B) প্রশান্ত মহাসাগর(C) সুমেরু মহাসাগরে(D) ভারত মহাসাগর
Answer : (A) আটলান্টিক মহাসাগর
- অধিক লবণাক্ত জল প্রবাহিত হয় -(A) পৃষ্ঠস্রোত ৰূপে(B) অন্তঃস্রোত রূপে (C) বহিঃস্রোত রূপে (D) উল্লম্ব স্রোত রূপে
Answer : (B) অন্তঃস্রোত রূপে
- শৈবাল সাগর কোন মহাসাগরে দেখা যায় ?(A) ভারত মহাসাগরে(B) দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে(C) আরব সাগরে(D) উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে
Answer : (D) উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে
- আটলান্টিক মহাসাগরে দক্ষিণ আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল দিয়ে প্রবাহিত স্রোত হল – (A) ক্যানারি স্রোত(B) সোমালি স্রোত(C) বেঙ্গুয়েলা স্রোত (D) উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত
Answer : (C) বেঙ্গুয়েলা স্রোত
- হিমপ্রাচীর কোন্ দুই স্রোতের সীমারেখা বরাবর সৃষ্টি হয় ? (A) ল্যাব্রাডর ও উপসাগরীয় স্রোত(B) কুরোশিয়ো ও ওয়াশিয়ো স্রোত (C) ক্যানারি ও ইরমিঙ্গার স্রোত
Answer : (A) ল্যাব্রাডর ও উপসাগরীয় স্রোত
- উস্ন স্রোত সাধারণত সৃষ্টি হয় -(A) নিরক্ষীয় অঞ্চলে (B) ক্রান্তীয় অঞ্চলে(C) উপক্রান্তীয় অঞ্চলে(D) মেরুপ্রদেশীয় অঞ্চলে
Answer : (B) ক্রান্তীয় অঞ্চলে
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর | বারিমন্ডল (তৃতীয় অধ্যায়) – মাধ্যমিক ভূগোল সাজেশন | Madhyamik Geography Suggestion :
- মগ্নচড়া বা ব্যাংক কী ?
Answer : জলের সংস্পর্শে গলে যাওয়ায় নুড়ি , বালি , পলি সমুদ্রতলদেশে অধঃক্ষিপ্ত হয়ে যে গভীর অঞ্চল সৃষ্টি করে তাকে মাচড়া বলে । যেমন – উত্তর – পশ্চিম আটলান্টিকের গ্র্যান্ড ব্যাংক ।
- পৃথিবী বিখ্যাত কয়েকটি মগ্নচড়ার গুরুত্ব লেখো ।
Answer : পৃথিবী বিখ্যাত কয়েকটি মগ্নচড়া হল গ্র্যান্ড ব্যাংক ডগার্স ব্যাংক , রকফল ব্যাংক যেগুলি হল পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাণিজ্যিক মৎস্য আহরণ অঞ্চল ।
- প্ল্যাংকটন ( Plankton ) কী ?
Answer : সমুদ্রজলে ভাসমান অতিক্ষুদ্র আণুবীক্ষণিক জীবনে বলে প্ল্যাংকটন । প্ল্যাংকটন ২ প্রকারের হয়— ( 6 ) উদ্ভিদ প্ল্যাংকটন বা Phyto – plankton এবং ( ii ) প্রাণী প্ল্যাংকটন বা Zoo – plankion ) | সামুদ্রিক মাছেদের প্রধান খাদ্য হল এই প্ল্যাংকটন ।
- প্রশান্ত মহাসাগরের দুটি উষ্ণ ও দুটি শীতল স্রোতের নাম লেখো ।
Answer : প্রশান্ত মহাসাগরের দুটি উষু স্রোত হল— ( 1 ) কুরোশিরো বা জাপান স্রোত এবং ( ii ) উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোত । প্রশান্ত মহাসাগরের দুটি শীতল স্রোত হল – ( i ) ক্যালিফোর্নিয়া স্রোত ও ( ii ) পেরু স্রোত বা হামবোল্ড স্রোত ।
- ভারত মহাসাগরের দুটি উষ্ণ ও দুটি শীতল স্রোতের নাম লেখো ।
Answer : ভারত মহাসাগরের দুটি উষু স্রোত হল – ( i ) মোজাম্বিক স্রোত ও ( ii ) মাদাগাস্কার স্রোত । ভারত মহাসাগরের দুটি শীতল স্রোত হল- ( i ) কুমেরু স্রোত ও ( ii ) পশ্চিম অস্ট্রেলীয় স্রোত ।
- আটলান্টিক মহাসাগরের দুটি উষ্ণ ও দুটি শীতল স্রোতের নাম লেখো ।
Answer : আটলান্টিক মহাসাগরের দুটি উর স্রোত হল ( i ) ক্যানারি স্রোত ও ( ii ) ব্রাজিল স্রোত । আটলান্টিক মহাসাগরের দুটি শীতল স্রোত হল – ( i ) ল্যাব্রাডর স্রোত ও ( ii ) বেঙ্গুয়েলা স্রোত ।
জেনে রাখো ● জিওস্ট্রপিক স্রোত ( Geostrophic current ) উঘ্ন শীতল স্রোতের চক্রাকার জলাবর্ত অঞ্চলে জলতলের উচ্চতা পার্শ্ববর্তী অঞ্চল অপেক্ষা বেশি হয় , ফলে জলসমতা ফেরাতে হলে মৃত স্রোত পাশের অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয় , একেই বলে জিওস্টুপিক স্রোত ।
- উপসাগরীয় স্রোত কাকে বলে ?
Answer : পশ্চিমমুখী উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতটি মেক্সিকো উপসাগরের মধ্য দিয়ে উত্তর আমেরিকা মহাদেশের পূর্ব উপকূল দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে উত্তর – পশ্চিম ইউরোপের দিকে প্রবাহিত হয় । এই স্রোতের দক্ষিণ – পশ্চিম অংশকে উপসাগরীয় স্রোত বলে ।
- নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত কী ?
Answer : উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মধ্যভাগ দিয়ে একটি ক্ষীণ স্রোত পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত হয় । এই স্রোতকে নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত বলা হয় ।
- ভারত মহাসাগরে সমুদ্রস্রোত ঋতুপরিবর্তনে বিপরীতমুখী কেন ?
Answer : ভারত মহাসাগরের সমুদ্রস্রোতের ওপর মৌসুমি বায়ুর ও প্রভাব সর্বাধিক । ঋতুপরিবর্তনের সাথে সাথে মৌসুমি বায়ুর দিক ও গতি পরিবর্তন হয় বলে সমুদ্রস্রোতেরও দিক ও গতির পরিবর্তন ঘটে । গ্রীষ্ম ও শীত ঋতুতে এখানে পরস্পর বিপরীতমুখী স্রোত প্রবাহিত হয় ।
- হিমপ্রাচীর ( Cold wall ) কাকে বলে ?
Answer : দুটি ভিন্ন ঘনত্বের ভিন্ন ভৌতগুণবিশিষ্ট শীতল ও উষ্ণ স্রোত বিপরীত দিক থেকে চালিত হলে তাদের মধ্যবর্তী যে বিভাজনতল সৃষ্টি হয় , তাকে বলে হিমপ্রাচীর ।
- হিমশৈল ( Ice berg ) বলতে কী বোঝ ?
Answer : বিশালাকৃতি বরফের স্তূপ যখন সমুদ্রের জলে ভাসতে থাকে তখন তাকে হিমশৈল বলে ।
- হিমশৈলের বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব লেখো ।
Answer : হিমশৈলের বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব হল – ( i ) মিষ্টি জল দিয়ে তৈরি বিশালাকার বরফ স্তূপ । ( ii ) মাত্র ১/৯ ভাগ জলের উপরে থাকে । ( iii ) উচ্চ অক্ষাংশের সমুদ্রে ( গ্রিনল্যান্ড , অ্যান্টার্কটিকা ) এটিকে দেখা যায় । ( iv ) জাহাজ চলাচলে ভীষণ বিপদ ঘটায় ।
- বারিমণ্ডল ( Hydrosphere ) কাকে বলে বা বারিমণ্ডল বলতে কী বোঝ ?
Answer : ভূপৃষ্ঠ এবং ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি অবস্থিত জলের সমস্ত উৎস ও ভাণ্ডারকে একত্রে বারিমণ্ডল বা Hydrosphere বলে ( ‘ বারি ‘ শব্দের অর্থ হল ‘ জল ‘ ) । বারিমণ্ডলের মোট জলের প্রায় ৯৭ % রয়েছে সাগর ও মহাসাগরে । অবশিষ্ট ৩ ভাগ জলের প্রায় ৭৫ % সজ্জিত রয়েছে বরফ রূপে । বাকি ২৫ % নদী , হ্রদ , পুকুর , খাল , বিল ও অন্যান্য জলাভূমিতে অবস্থান করছে ।
- সমুদ্রস্রোত ( Ocean currents ) কী ?
Answer : বায়ুপ্রবাহ , পৃথিবীর আবর্তন , সমুদ্রজলের উষ্ণতা , ঘনত্ব , লবণতা ইত্যাদির তারতম্যে সমুদ্রের বিশাল অঞ্চলজুড়ে নিয়মিতভাবে ও নির্দিষ্ট পথে সমুদ্রজলের একমুখী প্রবাহ হল সমুদ্রস্রোত ।
- সমুদ্রতরঙ্গ কী ?
Answer : সমুদ্রের ওপর বায়ুপ্রবাহে জলের ওপর যে পীড়নের সৃষ্টি হয় তার প্রভাবে জল অগভীর উপকূলের তটভূমিতে ঢেউ আকারে আছড়ে পড়ে । একেই বলে সমুদ্রতরঙ্গ ।
- কোরিওলিস বল কী ?
Answer : পৃথিবীর আবর্তনের প্রভাবে প্রবাহিত বায়ু , সমুদ্রস্রোতের ওপর যে বল কাজ করে তা হল কোরিওলিস বল । কোরিওলিস বল বায়ু ও সমুদ্রস্রোতের দিকের সাথে সমকোণে কাজ করে বলে বায়ু ও সমুদ্রস্রোত উত্তর গোলার্ধে ডান এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে যায় ।
- ফেরেল সূত্র কী ?
Answer : পৃথিবীর আবর্তনে সৃষ্ট কোরিওলিস বলের প্রভাবে বায়ুর মতো সমুদ্রস্রোতও উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে বেঁকে প্রবাহিত হয় । এটি হল ফেরেল সূত্র ।
- গায়র বা কুণ্ডলী কাকে বলে ?
Answer : সকল মহাসাগরের মাঝবরাবর কোরিওলিস বলের প্রভাবে সমুদ্রস্রোত বেঁকে গিয়ে ও মিলিত হয়ে জলাবর্ত বা চক্র সৃষ্টি করে । একেই গায়র বা কুণ্ডলী বলে ।
- শৈবাল সাগর ( Saragasso Sea ) কাকে বলে ?
Answer : উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে উষ্ণ উপসাগরীয় , শীতল ক্যানারি ও উষ্ণ উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের মিলনে যে জলাবর্ত সৃষ্টি হয় তার মধ্যবর্তী স্রোতহীন শৈবাল আগাছাপূর্ণ স্থানকে বলে । শৈবাল সাগর ।
- উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলন অঞ্চলে কী কী আবহগত ঘটনা ঘটে ?
Answer : উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলন অঞ্চলে ঘন কুয়াশা সৃষ্টি হয় এবং মাঝে মাঝে ঝড়বৃষ্টিসহ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া সৃষ্টি করে ।
ব্যাখ্যামূলক উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর | বারিমন্ডল (তৃতীয় অধ্যায়) – মাধ্যমিক ভূগোল সাজেশন | Madhyamik Geography Suggestion :
- উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলন অঞ্চলে ঘন কুয়াশা ও ঝড় ঝঞ্ঝার সৃষ্টি হয় । কারণ ব্যাখ্যা করো ।
Answer : মহাসাগরে উষ্ণ সমুদ্রস্রোতের উপর দিয়ে উদ্বু – আম বায়ু এবং শীতল স্রোতের উপর দিয়ে শীতল – শুদ্ধ বায়ু প্রবাহিত হয় । শীতল শুষ্ক বায়ুর ঢাল বরাবর উষ্ণ – আদ্র বায়ু ধীরে ধীরে উঠে গেলে উষ্ণ আদ্র বায়ু ঘনীভূত হয়ে কুয়াশার সৃষ্টি হয় । এই ধরনের কুয়াশাকে পরিবাহিত কুয়াশা ( Advection fog ) বলা হয় । যদি ওই অবস্থায় শুষ্ক শীতল বায়ুর উপর উষ্ণ – আর্দ্র বায়ু চক্রাকারে বু উপরে উঠে নাতিশীতোয় ঘূর্ণবাত সৃষ্টি করে তাহলে ঝড় , বৃষ্টি , তুষারঝড় ঘটে । তাই উষ্ণ ও শীতল স্রোত মিলন অঞ্চলে প্রায়শই ঘন কুয়াশ ও ঝড় – বাজার সৃষ্টি হয় ।
- নিউফাউন্ডল্যান্ড অঞ্চলে ঘন কুয়াশা সৃষ্টি হয় কেন ?
Answer : নিউফাউন্ডল্যান্ড অঞ্চলে উত্তর দিক থেকে শীতল ল্যাব্রাডর এবং দক্ষিণ দিক থেকে উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত আসে এবং পাশাপাশি বয়ে যায় । দক্ষিণ দিক থেকে উপসাগরীয় স্রোতের প্রভাবে বায়ুমণ্ডলে প্রবাহিত উষ্ণ – আর্দ্র বায়ুপুঞ্জ উত্তর দিকে থেকে শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের প্রভাবে প্রবাহিত শীতল বায়ুপুঞ্জের উপরে ধীরে ধীরে উঠে ঘনীভূত হয় এবং কুয়াশা সৃষ্টি করে । তাই নিউফাউন্ডল্যান্ড অঞ্চলে ঘন কুয়াশার সৃষ্টি হয় ।
- এল নিনো ও লা নিনার ওপর সমুদ্রস্রোতের প্রভাব লেখো ।
Answer : জলবায়ু পরিবর্তনে সমুদ্রস্রোতের প্রভাব স্পষ্ট বোঝা যায় । প্রশান্ত মহাসাগরে এল নিনো ও লা নিনা আবির্ভাবের মধ্য দিয়ে । এল নিনো বছরে পেরু , ইকুয়েডর উপকূলে উত্তরদিক থেকে গরম জলের স্রোত ( লা নিনা স্রোত ) এসে ঢোকে । ফলে পেরু , ইকুয়েডরে প্রবল বৃষ্টি , পশ্চিমে অস্ট্রেলিয়ায় অনাবৃষ্টি দেখা দেয় । লা নিনা বছরে অস্ট্রেলিয়ায় প্রবল বৃষ্টিতে বন্যা এবং পেরু , ইকুয়েডরে অনাবৃষ্টিতে খরা দেখা দেয় । প্রশান্ত মহাসাগরে গড়ে ২-৭ বছর অন্তর জলবায়ুর এই পরিবর্তনে সমুদ্রস্রোত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় ।
- গ্রিনল্যান্ড ও নরওয়ে একই অক্ষাংশে অবস্থিত হওয়া সত্ত্বেও নরওয়ে অপেক্ষা গ্রিনল্যান্ড উপকূল শীতল কেন ?
Answer : গ্রিনল্যান্ড ও নরওয়ে একই অক্ষাংশে অবস্থিত । গ্রিনল্যান্ডের দুই উপকূল দিয়ে সারাবছরই উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে উত্তর মেরু থেকে আগত শীতল ল্যাব্রাডর স্রোত প্রবাহিত হয় । অপরদিকে নরওয়ের দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত বাহিত হয় । শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের প্রভাবে গ্রিনল্যান্ড উপকূল সারাবছর শীতল থাকে এবং উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোতের প্রভাবে নরওয়ে উপকূল সারাবছর তুলনামূলক উষ্ণ থাকে ।
- মগ্নচড়ার গুরুত্ব কী ? অথবা , মগ্নচড়া অঞ্চল মৎস্য আহরণে উষ্ণত কেন ?
Answer : বাণিজ্যিক দিক থেকে মগ্নচড়াগুলির গুরুত্ব অপরিসীম যেমন— ( 1 ) অগভীর মগ্নচড়াতে সূর্যালোক তলদেশ পর্যন্ত পৌঁছোতে পারে বলে প্ল্যাংকটন জন্মায় । ( ii ) হিমশৈলে অবস্থিত কিছু সূক্ষ্ম খনিজ প্ল্যাংকটনের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে বলে , মগ্নচড়াগুলি মাছেদের প্রধান খাদ্য প্ল্যাংকটনে সমৃদ্ধ । ( iii ) নাতিশীতোয় জলবায়ু অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় মৎস্য আহরণ ও সংরক্ষণের সুবিধা হয় ।
- গ্র্যান্ড ব্যাংক অঞ্চলে প্রচুর মাছ ধরা পড়ে কেন ?
Answer : গ্র্যান্ড ব্যাংক অঞ্চল উত্তর দিক থেকে আগত শীতল এবং দক্ষিণ দিক থেকে আগত উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোতের মিলন অঞ্চল । উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলন অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে মাছের প্রয়োজনীয় খাদ্য প্ল্যাংকটন জন্মায় । তা ছাড়া ল্যাব্রাডর স্রোতের সাথে আগত হিমশৈল গলে গিয়ে এবং সমুদ্রজলের ঊর্ধ্বমুখী আবর্তে মাছের প্রয়োজনীয় খাদ্যেরও জোগান বাড়ে । তাই এই অঞ্চলে প্রচুর মাঝের সমাবেশ ঘটে । এই অঞ্চল পৃথিবীর অন্যতম বিখ্যাত বাণিজ্যিক মৎস্য আহরণ ক্ষেত্র ।
- উদাহরণসহ জলবায়ুর ওপর উষ্ণ স্রোতের প্রভাব লেখো ।
Answer : কোনো অঞ্চলের উপকূলের জলবায়ুর ওপর উষ্ণ স্রোত ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করে । যেমন ( i ) উচ্চ অক্ষাংশীয় অঞ্চলে উষ্ণ সমুদ্রস্রোত প্রবাহিত হওয়ার ফলে শীতল অঞ্চলের উষ্ণতা বেড়ে যায় । উদাহরণ – নরওয়ে উপকূল অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত উষ্ণ উত্তর আটলান্টিক স্রোতের প্রভাবে নরওয়ের উষ্ণতা বেড়ে যায় । ( ii ) উষ্ণ সমুদ্রস্রোতের ফলে উষ্ণমণ্ডল ও হিমমণ্ডলের সমুদ্র জলরাশির মধ্যে উষ্ণতার সমতা বজায় থাকে । ( iii ) উষু স্রোতের সাথে বয়ে আসা জলীয় বাষ্পপূর্ণ আর্দ্র বায়ুর প্রভাবে জলভাগে বৃষ্টিপাত হয় ।
উদাহরণ — ইংল্যান্ডের পশ্চিম উপকূলে বৃষ্টিপাত হয় । ( iv ) কোনো কোনো স্থানে উয় স্রোত ও শীতল স্রোতের মিলনে কুয়াশা ও ঝড় – এর সৃষ্টি হয় । উদাহরণ – জাপান উপকূলে হয় । উদাহরণসহ জলবায়ুর ওপর শীতল স্রোতের প্রভাব লেখো । উত্তর : জলবায়ুর ওপর শীতল স্রোতের প্রভাবগুলি হল ( i ) শীতল স্রোত – এর ফলে উষ্ণুমণ্ডলে বায়ুর উষ্ণতা হ্রাস পায় । উদাহরণ — কানাডার পূর্ব উপকূলের ওপর দিয়ে ল্যাব্রাডর স্রোত প্রবাহিত হওয়ার ফলে ওই অঞ্চলের উষ্ণতা হ্রাস পায় । ( ii ) উষ্ম নিরক্ষীয় ও শীতল মেরু বা মেরুপ্রদেশীয় অঞ্চলে উষ্ণ ও শীতল বায়ু মিলিত হলে উষ্ণতার সমতা রক্ষা করে । ( iii ) শীতল স্রোতের ওপর দিয়ে শুষ্ক বায়ু প্রবাহিত হলে উপকূল অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের বদলে তুষারপাত হয় । ( iv ) উয় স্রোত ও শীতল স্রোেত মিলিত হয়ে উপকূল অঞ্চলে প্রবল ঝড় – ঝঞ্ঝা ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সৃষ্টি হয় । উদাহরণ নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূলে এই রকম দুর্যোগের সৃষ্টি হয় ।
- জলবায়ুর ওপর পেরুস্রোত ও বেঙ্গুয়েলা স্রোতের প্রভাব লেখো ।
Answer : জলবায়ুর ওপর পেরুস্রোতের প্রভাব শীতল কুমেরু স্রোেত দক্ষিণ আমেরিকার হর্ণ অন্তরীপে বাধা পেয়ে দুটি শাখায় ভাগ হয় । এরই একটি শাখা চিলি ও পেরুর ওপর দিয়ে প্রথমে পেরু স্রোত নামে প্রবাহিত হয় । এই স্রোতের প্রভাবে চিলি ও পেরু উপকূলের জলবায়ু নাতিশীতোয় থাকে । জলবায়ুর ওপর শীতল বেঙ্গুয়েলা স্রোতের প্রভাব : শীতল কুমেরু স্রোতের দ্বিতীয় শাখা আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল দিয়ে বেঙ্গুয়েলা স্রোত নামে উত্তরে বাহিত হয়ে দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের সাথে মিলিত হয় । এই স্রোতের প্রভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলে জলবায়ু নাতিশীতোয় থাকে ।
জেনে রাখো ● সমুদ্রের জলের গভীরে যে স্তরের নীচে সমুদ্রের লবণতা ও ঘনত্ব বৃদ্ধি পায় , তাকে বলে পিকনোক্লাইনস্তর । ১৫১৩ খ্রিস্টাব্দে স্পেনীয় জুয়ান পনসে ডি লিওন Juan Ponce | de Leon প্রথম উপসাগরীয় স্রোত আবিষ্কার করেন । গভীর সমুদ্রে বেশি ঘনত্বের স্থান থেকে কম ঘনত্বের স্থানে সমুদ্রস্রোতের প্রবাহকে বলে ডাউনওলেলিং স্রোত । o উষ্ণতা , লবণতা অনুসারে সমুদ্রজলের ঘনত্ব বাড়ে – কমে । ঘনত্বের তারতম্যে যে স্রোত সৃষ্টি হয় , তাকে বলে থার্মোহ্যালাইন স্রোত ।
- কী কী কারণে সমুদ্রস্রোতের দিক পরিবর্তন ঘটে ?
Answer : সমুদ্রস্রোতের দিক পরিবর্তনের কারণগুলি হল : ( i ) উপকূলের আকৃতি : উপকূলের আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য সমুদ্রস্রোতের দিক পরিবর্তন ঘটায় , সমুদ্রস্রোতকে বিভিন্ন শাখায় ভাগ করে । আটলান্টিকে বেঙ্গুয়েলা স্রোত গিনি উপকূলে বাধা পেয়ে পশ্চিমে বাঁকে , দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত ব্রাজিল অন্তরীপে বাধা পেয়ে দুটি শাখায় ভাগ হয় । ( ii ) ঋতুপরিবর্তন : ঋতুপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রস্রোতের দিক ও গতি উভয়েরই পরিবর্তন ঘটে । ভারতমহাসাগরে গ্রীষ্মকালে মৌসুমি বায়ুর আগমনের সময় সমুদ্রস্রোত দক্ষিণ থেকে উত্তরে প্রবাহিত হয় । শীতকালে মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাগমনে সমুদ্রস্রোত উত্তর থেকে দক্ষিণে বয়ে যায় । এখানে ঋতুপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রস্রোতের ১৮০ ° পরিবর্তন ঘটে ।
- আটলান্টিক মহাসাগর সংলগ্ন মহাদেশগুলির জলবায়ুর ওপর সমুদ্রস্রোতের প্রভাব লেখো ।
Answer : আটলান্টিক মহাসাগরের বিভিন্ন প্রকার সমুদ্রস্রোত জলবায়ুকে বিভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রণ করে । ( i ) নিউফাউন্ডল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের নিকট উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত ও শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের মিলনে সৃষ্ট ঘূর্ণবাতের প্রভাবে প্রায়শই ঘন কুয়াশা ও ঝড় ঝঞ্ঝার সৃষ্টি হয় । ( ii ) উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোতের প্রভাবে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ ও নরওয়ে । উপকূল সারাবছর বরফমুক্ত থাকে । ফলে এই অঞ্চলের বন্দরগুলি শীতকালেও সক্রিয় । ( iii ) শীতল বেঙ্গুয়েলা স্রোতের প্রভাবে দক্ষিণ আফ্রিকা ও নামিবিয়া উপকূলের জলবায়ু সারাবছর নাতিশীতোয় হয়েছে । ( iv ) শীতল ক্যানারি স্রোতের প্রভাবে পোের্তুগাল ও মরক্কো উপকূলের উষ্ণতা সারাবছর কম থাকে ।
জেনে রাখো ● পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা দ্রুতগামী সমুদ্রস্রোত হল । উপসাগরীয় স্রোত । ● পৃথিবীর বৃহত্তম স্রোতের নাম হল আন্টার্কটিক উপমেরু স্রোত ।
- ওয়াশিয়ো ও কুরোশিয়ো স্রোত কী ?
Answer : ওয়াশিও স্রোত : শীতল সুমেরু সাগর থেকে একটি শীতল স্রোত বেরিং প্রণালী দিয়ে বেরিং সাগরে প্রবেশ করে । এই বেরিং স্রোত যখন আরও দক্ষিণে জাপান উপকূল দিয়ে প্রবাহিত হয় । তখন তাকে ওয়াশিয়ো স্রোত বলে । এটি উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের একটি শীতল স্রোত । • কুরোশিয়ো স্রোত : উত্তর ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মিলিত প্রবাহ তাইওয়ান ও জাপান উপকূল দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় । এর নাম হয় কুরোশিয়ো স্রোত বা জাপান স্রোত । এটি উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরে প্রবাহিত এক উয় সমুদ্রস্রোত । এই কুরোশিয়ো ও ওয়াশিয়ো স্রোতের মিলনেই জাপান উপকূলে ঘনকুয়াশা ও ঝড় – ঝঞ্ঝার সৃষ্টি হয় ।
- সমুদ্রে পরিচলন স্রোত কাকে বলে ?
Answer : নিরক্ষীয় অঞ্চলে সারাবছর সূর্যের লম্বকিরণের কারণে জল বেশি উষ্ণ হয় । বাষ্পীভবনে জল হালকা হয়ে বাষ্পীভূত হয় । ফলে উষু বায়ুপ্রবাহের মতো সমুদ্রের পৃষ্ঠদেশে উষ্ণ স্রোত প্রবাহিত হয় । আবার মেরু অঞ্চলের ঠান্ডা জল ভারী বলে নীচের দিকে নেমে নিরক্ষীয় অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয় । এইভাবে জলের ঊর্ধ্ব ও নিম্নমুখী প্রবাহ সৃষ্টি হয় , একে বলে পরিচলন স্রোত ।
- নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত কী ?
Answer : পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রতিনিয়ত আবর্তন করে । | এর ফলে পৃথিবীর মাঝবরাবর পশ্চিম থেকে পূর্বাভিমুখী একটি স্রোত । সৃষ্টি হয় । সাধারণত নিয়তবায়ুর গতি অনুসরণ করে নিরক্ষরেখার উত্তর নিরক্ষীয় ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত সৃষ্টি হয় । এদের গতিপদ পূর্ব থেকে পশ্চিমে । এই দুই স্রোতের বিপরীত গতিপথ অনুসর করায় নাম হয়েছে নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত । জুলাই মাসে এর প্রভাব বেশি হয় , ডিসেম্বর মাসে প্রভাব কমে যায় ।
- সমুদ্রস্রোতের নামকরণ কীভাবে করা হয় ?
Answer : সমুদ্রস্রোত স্থলভাগের যে অংশের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয় সাধারণত তার নাম অনুসারে স্রোতের নামকরণ হয় , যেমন : ব্রাজিল স্রোত , সোমালি স্রোত । নিরক্ষরেখার উত্তর – দক্ষিণে প্রবাহিত স্রোত নিরক্ষীয় স্রোত নামে পরিচিত । ভারতমহাসাগরে গ্রীষ্মে ও শীতে প্রবাহিত বিপরীত মৌসুমি বায়ুর গতি অনুসরণ করে স্রোতের নামকরণ করা হয় । উৎসস্থল অনুসারেও সমুদ্রস্রোতের নামকরণ হয় , যেমন— কুমেরু স্রোত , সুমেরু স্রোত ।
- বায়ুপ্রবাহ সমুদ্রস্রোতকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করে ?
Answer : বায়ুপ্রবাহ সমুদ্রস্রোতের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রক । বায়ুপ্রবাহের প্রভাবেই সমুদ্রের উপরের অংশের জল একস্থান থেকে অন্যস্থানে বাহিত হয় । এইভাবেই সমুদ্রস্রোত সৃষ্টি হয় । তাই বলা যায় , বিভিন্ন প্রকার নিয়ত বায়ু ( আয়ন বায়ু , পশ্চিমা বায়ু , মেরু বায়ু ) প্রভাবে সকল মহাসমুদ্রে সমুদ্রস্রোতের উৎপত্তি ঘটে ।
- সমুদ্রস্রোতের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো ।
Answer : সমুদ্রস্রোতের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলি হল ( i ) সমুদ্রস্রোত একটি নির্দিষ্ট দিকে সারাবছরব্যাপী প্রবাহিত হয় । ( iii ) সমুদ্রস্রোত ফেরেলের সূত্র অনুসারে উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে ও দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে বেঁকে প্রবাহিত হয় । ( iii ) সমুদ্রস্রোতের গতিবেগ সমুদ্রের গভীরতার ওপর নির্ভরশীল । ( iv ) সমুদ্রস্রোতের গতিবেগ ঘণ্টায় ৫—১০ কিমি । ( v ) গভীর সমুদ্রে সমুদ্রস্রোতের বেগ হয় ঘণ্টায় ৩-৫ কিমি এবং অগভীর সমুদ্রে এর বেগ হয় ঘণ্টায় । ৭–৯ কিমি । ( vi ) সমুদ্রস্রোত যে দিকে বয়ে যায় , সেই দিকের প্রবাহপথ অনুযায়ী নাম রাখা হয় । ( vii ) উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলনস্থলে ঘন কুয়াশা ও ঝড় – ঝঞ্ঝার সৃষ্টি হয় ।
- উষ্ণ স্রোত ও শীতল স্রোত বলতে কী বোঝ ?
Answer : ( 1 ) উষ্ণ স্রোত ( Warm Current ) সমুদ্রস্রোত যখন উষ্ণুমণ্ডল থেকে প্রবাহিত হয় তখন সেই স্রোতকে উষ্ণ স্রোত বলে । সাধারণত এই ধরনের স্রোত সমুদ্রজলের অপেক্ষাকৃত ওপরের অংশ দিয়ে বহিঃস্রোতরূপে প্রবাহিত হয় । যেমন — উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত , উষ্ণ নিরক্ষীয় স্রোত ইত্যাদি । ( ii ) শীতল ( Cold Current ) সমুদ্রস্রোত যখন শীতল মেরুপ্রদেশ থেকে প্রবাহিত হয় তখন সেই স্রোতকে শীতল স্রোত বলে । এ ছাড়া উষ্ণুমণ্ডল থেকে প্রবাহিত উর স্রোত যখন মেরুদ্বয়ের দিকে প্রবাহিত হয়ে আবার ঘুরে আসে তখন সেই সমুদ্রস্রোতকে শীতল স্রোতের আকারেই দেখতে পাওয়া যায় । শীতল সমুদ্রস্রোত সমুদ্রজলের অপেক্ষাকৃত নীচের অংশ দিয়ে অন্তঃস্রোত হিসেবে প্রবাহিত হয় । যেমন — শীতল বেরিং স্রোত , ল্যাব্রাডর স্রোত ইত্যাদি ।
- ‘ বায়ুপ্রবাহ সমুদ্রস্রোতের মূল কারণ , অথচ বায়ুর গতিবেগের তুলনায় সমুদ্রস্রোতের গতিবেগ অনেক কম ।’— কারণ ব্যাখ্যা করো ।
Answer : বায়ুপ্রবাহ সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির মূল কারণ । সমুদ্রের উপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ু জলকণার সঙ্গে সংঘর্ষে জলকে তাড়িয়ে নিয়ে সমুদ্রস্রোতের উৎপত্তি ঘটায় । তবে সমুদ্রের উপর দিয়ে যে বায়ু বয়ে যায় তার মাত্র ২ % -৪ % শক্তি সমুদ্রস্রোতের উৎপত্তিতে সাহায্য করে । তাই দেখা যায় যেখানে বায়ুর গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিমি সেখানে সমুদ্রস্রোতের বেগ ১-২ কিমি / ঘণ্টা । সমুদ্রের উপর প্রবাহিত নিয়ত বায়ু সমুদ্রস্রোত উৎপত্তিতে সর্বাধিক সাহায্য করে । প্রধান তিনটি মহাসাগরেই আয়ন বায়ু , পশ্চিমা বায়ু ও মেরু বায়ু সমুদ্রস্রোতের উৎপত্তি ঘটায় । ভারতমহাসাগরে সমুদ্রস্রোতের ওপর ত মৌসুমি বায়ুর প্রভাব সর্বাধিক ।
- পৃষ্ঠস্রোত ও গভীর সমুদ্রস্রোত বলতে কী বোঝ ?
Answer : পৃষ্ঠস্রোত সমুদ্রতলের উপর দিয়ে প্রবাহিত স্রোত হল পৃষ্ঠস্রোত । বায়ুপ্রবাহের মাধ্যমে এই স্রোতের উৎপত্তি ঘটে । গভীর সমুদ্রস্রোত গভীর স্তর ( ২০০-১০০০ মিটার ) দিয়ে প্রবাহিত স্রোত হল গভীর সমুদ্রস্রোত । সমুদ্রজলের ঘনত্বের তারতম্য এই স্রোত সৃষ্টির মূল কারণ । প্রশ্ন ৪ উদাহরণসহ সমুদ্রস্রোতের ওপর কোরিওলিস বলের প্রভাব ব্যাখ্যা করো । উত্তর : পৃথিবী তার নিজের অক্ষের ওপর পশ্চিম থেকে পূর্বে আবর্তন করার ফলে যে কোরিওলিস বলের ( Coriolis Force ) উৎপত্তি হয় এবং তার প্রভাবে সমুদ্রস্রোত সোজাপথে প্রবাহিত হতে পারে না । উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে প্রবাহিত হয় — এটি ফেরেল সূত্র নামে পরিচিত ।
- শৈবাল সাগরের উৎপত্তি কেন ঘটেছে ?
Answer : আটলান্টিক মহাসাগরের দক্ষিণ – পশ্চিম , ( i ) উপসাগরীয় স্রোত , ( ii ) উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত এবং ( iii ) ক্যানারি স্রোত পর্যায়ক্রমে CRATE MASS আবর্তিত হয়ে কয়েক হাজার বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত একটি বিশাল আয়তাকার অঞ্চলজুড়ে একটি ঘূর্ণস্রোত বা জলাবর্তের সৃষ্টি হয় । এই বিশাল জলাবর্তের মাঝখানে কোনোরকম জলপ্রবাহ থাকে না বলে স্রোতবিহীন এই অঞ্চলে নানারকম শৈবাল , আগাছা ও জলজ উদ্ভিদ জন্মায় । এইভাবেই শৈবাল সাগরের উৎপত্তি হয় ।
- উপকূলের আকৃতি সমুদ্রস্রোতকে কীরুপে প্রভাবিত করে উদাহরণসহ লেখো ।
Answer : উপকূলের আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য সমুদ্রস্রোতের দিক পরিবর্তন ঘটায় , সমুদ্রস্রোতকে বিভিন্ন শাখায় ভাগ করে । আটলান্টিকে বেঙ্গুয়েলা স্রোত গিনি উপকূলে বাধা পেয়ে পশ্চিমে বাঁকে । দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত ব্রাজিল অন্তরীপে বাধা পেয়ে দুটি শাখায় ভাগ হয় ।
- ঋতু পরিবর্তন ভারত মহাসাগরের সমুদ্রস্রোতকে কীভাবে প্রভাবিত করে ?
Answer : ঋতুপরিবর্তনের সাথে সাথে মৌসুমি বায়ুর দিক ও গতি পরিবর্তন হয় । এর ফলে সমুদ্রস্রোতেরও দিক ও গতি পরিবর্তন । ঘটে । তাই বলা যায় যে , ঋতুপরিবর্তন তথা মৌসুমি বায়ু ভারত মহাসাগরের সমুদ্রস্রোতকে প্রভাবিত করে ।
- উচ্চ অক্ষাংশে অবস্থান সত্তেও নরওয়ের হ্যামারফেস্ট বন্দর সারাবছর বরফমুক্ত কেন ?
Answer : নরওয়ে উচ্চ অক্ষাংশে অবস্থিত হওয়ার জন্য এই অঞ্চলটি অত্যন্ত শীতল হয় । তবে উষ্ণ উত্তর আটলান্টিক স্রোতের প্রভাবে জলবায়ু কিছুটা উষ্ণ থাকে । এই কারণেই উচ্চ অক্ষাংশে অবস্থান সত্ত্বেও নরওয়ের হ্যামারফেস্ট বন্দর সারাবছর বরফমুক্ত থাকে ।
- প্রশ্ন মগ্নচড়া সৃষ্টির কারণ কী ?
Answer : শীতল স্রোত যেখানে উষ্ণ স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয় , সেখানে শীতল স্রোতের সঙ্গে ভেসে আসা হিমশৈলগুলি উদ্বু স্রোতের সংস্পর্শে গলে যায় এবং হিমশৈল বাহিত নুড়ি , কাঁকর , পলি সমুদ্রে অধঃক্ষিপ্ত হয় । বহুকাল ধরে এই অবক্ষেপণের ফলে অগভীর চড়া সৃষ্টি হয় ।
- মরুভূমি সৃষ্টিতে সমুদ্রস্রোতের প্রভাব উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো ।
Answer : ক্রান্তীয় মণ্ডলে মহাদেশের পশ্চিম দিক দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে যায় । এই শীতল স্রোতের প্রভাবে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের জলবায়ু হয়েছে শুষ্ক প্রকৃতির বায়ু জলীয় বাষ্প অধীক সংগ্রহের কারণে সংশ্লিষ্ট মহাদেশের পশ্চিম অঞ্চলগুলিতে বৃষ্টি প্রায় হয় । না বললেই চলে । অনন্তকাল ধরে অনাবৃষ্টির কারণে অঞ্চলগুলি মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে । সাহারা মরুভূমির পাশ দিয়ে প্রবাহিত শীতল ক্যানারি স্রোত এই বিশাল জলাবর্তের মাঝখানে কোনোরকম জলপ্রবাহ থাকে না বলে স্রোতবিহীন এই অঞ্চলে নানারকম শৈবাল , আগাছা ও জলজ উদ্ভিদ জন্মায় । এইভাবেই শৈবাল সাগরের উৎপত্তি হয় ।
- উপকূলের আকৃতি সমুদ্রস্রোতকে কীরুপে প্রভাবিত করে উদাহরণসহ লেখো ।
Answer : উপকূলের আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য সমুদ্রস্রোতের দিক পরিবর্তন ঘটায় , সমুদ্রস্রোতকে বিভিন্ন শাখায় ভাগ করে । আটলান্টিকে বেঙ্গুয়েলা স্রোত গিনি উপকূলে বাধা পেয়ে পশ্চিমে বাঁকে । দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত ব্রাজিল অন্তরীপে বাধা পেয়ে দুটি শাখায় ভাগ হয় ।
- ঋতুপরিবর্তন ভারত মহাসাগরের সমুদ্রস্রোতকে কীভাবে প্রভাবিত করে ?
Answer : ঋতুপরিবর্তনের সাথে সাথে মৌসুমি বায়ুর দিক ও গতি পরিবর্তন হয় । এর ফলে সমুদ্রস্রোতেরও দিক ও গতি পরিবর্তন ঘটে । তাই বলা যায় যে , ঋতুপরিবর্তন তথা মৌসুমি বায়ু ভারত মহাসাগরের সমুদ্রস্রোতকে প্রভাবিত করে ।
- উচ্চ অক্ষাংশে অবস্থান সত্তেও নরওয়ের হ্যামারফেস্ট বন্দর সারাবছর বরফমুক্ত কেন ?
Answer : নরওয়ে উচ্চ অক্ষাংশে অবস্থিত হওয়ার জন্য এই অঞ্চলটি অত্যন্ত শীতল হয় । তবে উষ্ণ উত্তর আটলান্টিক স্রোতের প্রভাবে জলবায়ু কিছুটা উষ্ণ থাকে । এই কারণেই উচ্চ অক্ষাংশে অবস্থান সত্ত্বেও নরওয়ের হ্যামারফেস্ট বন্দর সারাবছর বরফমুক্ত থাকে ।
- মগ্নচড়া সৃষ্টির কারণ কী ?
Answer : শীতল স্রোত যেখানে উষ্ণ স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয় , সেখানে শীতল স্রোতের সঙ্গে ভেসে আসা হিমশৈলগুলি উষ্ণ স্রোতের সংস্পর্শে গলে যায় এবং হিমশৈল বাহিত নুড়ি , কাঁকর , পলি সমুদ্রে অধঃক্ষিপ্ত হয় । বহুকাল ধরে এই অবক্ষেপণের ফলে অগভীর চড়া সৃষ্টি হয় ।
- মরুভূমি সৃষ্টিতে সমুদ্রস্রোতের প্রভাব উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো ।
Answer : ক্রান্তীয় মণ্ডলে মহাদেশের পশ্চিম দিক দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে যায় । এই শীতল স্রোতের প্রভাবে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের জলবায়ু হয়েছে শুষ্ক প্রকৃতির বায়ু জলীয় বাষ্প অধীক সংগ্রহের কারণে সংশ্লিষ্ট মহাদেশের পশ্চিম অঞ্চলগুলিতে বৃষ্টি প্রায় হয় । না বললেই চলে । অনন্তকাল ধরে অনাবৃষ্টির কারণে অঞ্চলগুলি মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে । সাহারা মরুভূমির পাশ দিয়ে প্রবাহিত শীতল ক্যানারি স্রোত সোনেরান মরুভূমির পাশ দিয়ে প্রবাহিত ক্যালিফোর্নিয়া স্রোত অস্ট্রেলিয়া মরুভূমির পাশ দিয়ে প্রবাহিত পশ্চিম অস্ট্রেলীয় স্রোত সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে মরুভূমি সৃষ্টিতে সাহায্য করেছে ।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর | বারিমন্ডল (তৃতীয় অধ্যায়) – মাধ্যমিক ভূগোল সাজেশন | Madhyamik Geography Suggestion :
1. উদাহরণসহ সমুদ্রস্রোতের প্রভাব ব্যাখ্যা করো ।
Answer : পৃথিবীব্যাপী সমুদ্রস্রোতের প্রভাব : সমুদ্রস্রোত জলবায়ু , মাছ আহরণ , জাহাজ চলাচল প্রভৃতির ওপর প্রভাব ফেলে ।
১. জলবায়ুর ওপর প্রভাব : ( i ) উষ্ণতায় প্রভাব : শীতল অঞ্চলের ওপর দিয়ে উষু স্রোত বয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে উষ্ণতা বাড়ে । উত্তর আটলান্টিক ড্রিফটের কারণেই উত্তর – পশ্চিম ইউরোপের উষ্ণতা শীতকালে বেশ বেশি হ হয় বলেই নরওয়ের হ্যামারফেস্ট বন্দর দিয়ে সারাবছর জাহাজ চলাচল করে । অপরদিকে উষু অঞ্চলের ওপর দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেলে উষ্ণতা কমে । বেঙ্গুয়েলা স্রোতের প্রভাবে দক্ষিণ আফ্রিকা ও নামিবিয়া উপকূলের উষ্ণতা সারাবছর কম ।
( ii ) বৃষ্টিপাত , তুষারপাত : উয় স্রোতের উপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ু বেশি জলীয় বাষ্প গ্রহণ করে বলে বৃষ্টির সম্ভাবনা বাড়ে । ই উত্তর আটলান্টিক ড্রিফট – এর প্রভাবে উত্তর – পশ্চিম ইউরোপে এই কারণে বেশি বৃষ্টি হয় । শীতল স্রোত প্রবাহিত অঞ্চলে উষ্ণতা অনেকটা কমে গেলে তুষারপাত হয় । ল্যাব্রাডর স্রোতের প্রভাবে সহায়িকা , নিউফাউন্ডল্যান্ড অঞ্চলে তুষারপাত ঘটে । অনেকক্ষেত্রে শীতল স্রোত প্রবাহিত অঞ্চলে বৃষ্টি কম হয় ।
( iii ) মরুভূমি সৃষ্টি : ক্রান্তীয় মণ্ডলে উপকূলের পাশ দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেলে বৃষ্টির সম্ভাবনা প্রায় থাকে না । দীর্ঘকাল ধরে বৃষ্টি না হওয়ার কারণে সংশ্লিষ্ট অঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হয় । সাহারার পশ্চিমপ্রান্ত দিয়ে প্রবাহিত শীতল ক্যানারি । স্রোত মরুভূমি সৃষ্টিতে সাহায্য করেছে ।
( iv ) কুয়াশা , ঝড় – ঝঞ্ঝা : যেখানে উষ্ণ ও শীতল স্রোত মিলিত হয় সেখানে বৈপরীত্য উষ্ণতার প্রভাবে পরিচলনজনিত কুয়াশা , ঝড় , ঝঞ্ঝার উৎপত্তি ঘটে । নিউফাউন্ডল্যান্ড অঞ্চলে শীতল ল্যাব্রাডর ও উষু উপসাগরীয় স্রোতের মিলনে প্রায়শই ঘন কুয়াশা ও ঝড়ের সৃষ্টি হয় ।
২. জলবায়ুর পরিবর্তনে প্রভাব : জলবায়ু পরিবর্তনে সমুদ্রস্রোতের প্রভাব স্পষ্ট বোঝা যায় প্রশান্ত মহাসাগরে এল নিনো ও লা নিনা আবির্ভাবের মধ্য দিয়ে । এল নিনো বছরে পেরু , ইকুয়েডর উপকূলে উত্তরদিক থেকে গরম জলের স্রোত ( লা নিনা স্রোত ) এসে ঢোকে । ফলে পেরু , ইকুয়েডরে প্রবল বৃষ্টি , পশ্চিমে অস্ট্রেলিয়ায় অনাবৃষ্টি দেখা দেয় । লা নিনা বছরে অস্ট্রেলিয়ায় প্রবল বৃষ্টিতে বন্যা এবং পেরু , ইকুয়েডরে অনাবৃষ্টিতে খরা দেখা দেয় । প্রশান্ত মহাসাগরে গড়ে ২–৭ বছর অন্তর জলবায়ুর এই পরিবর্তনে সমুদ্রস্রোত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় ।
৩. মগ্নচড়ার সৃষ্টি ও বাণিজ্যিক গুরুত্ব : যেখানে উষ্ণ ও শীতল সমুদ্রস্রোত মেশে সেখানে শীতল স্রোতে বয়ে আসা হিমশৈল গলে যায় । হিমশৈলের সঙ্গে থাকা পদার্থ ( বালি , পলি ) ক্রমাগত অধঃক্ষিপ্ত হয়ে অগভীর অঞ্চল তৈরি করে । এটি হল মগ্নচড়া বা ব্যাংক । গ্র্যান্ড ব্যাংক , ডগার্স ব্যাংক , রকফল ব্যাংক হল পৃথিবী বিখ্যাত মগ্নচড়া । মগ্নচড়ার বাণিজ্যিক গুরুত্ব : মগ্নচড়াগুলি পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাণিজ্যিক মৎস্য আহরণ অঞ্চল ।
2. মানুষের অর্থনৈতিক পরিবেশের ওপর সমুদ্রস্রোতের প্রভাব বা গুরুত্ব আলোচনা করো ।
Answer : মানুষের অর্থনৈতিক পরিবেশের ওপর সমুদ্রস্রোতের প্রভাব হল
( i ) মগ্নচড়ার সৃষ্টি ও মৎস্য আহরণ : বিভিন্ন মহাসাগরের শীতল স্রোতের সঙ্গে বড়ো বড়ো হিমশৈল ভেসে আসে । উষ্ণ স্রোতের সংস্পর্শে আসায় হিমশৈলগুলি গলতে শুরু করে , ফলে হিমশৈলের সাথে বয়ে আনা নুড়ি , পাথর , কাঁকর , বালি ইত্যাদি পদার্থ থিতিয়ে পড়ে সমুদ্রের অগভীর মহিসোপান অঞ্চলে জমা হয়ে মগ্নচড়ার সৃষ্টি করে । যেমন — গ্র্যান্ড ব্যাংক , ডগার্স ব্যাংক ইত্যাদি ।
মগ্নচড়াগুলিতে প্ল্যাংকটন নামে একপ্রকার আণুবীক্ষণিক জীব জন্মায় যা মাছের প্রধান খাদ্য । মগ্নচড়াগুলিতে অনুকূল তাপমাত্রা এবং খাদ্যের অফুরন্ত জোগান থাকায় মৎস্য আহরণের পক্ষে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে ।
( ii ) জাহাজ চলাচল ও বরফমুক্ত বন্দর : উষ্ণ স্রোতের প্রভাবে উচ্চ অক্ষাংশের সমুদ্র শীতকালেও বরফমুক্ত থাকে । উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোতের প্রভাবে উত্তর সাগর ও সংলগ্ন হ্যামারফেস্ট বন্দর বরফমুক্ত থাকে বলে জাহাজ চলাচলের সুবিধা হয় ।
( iii ) হিমশৈলের সমস্যা : শীতল সমুদ্রস্রোতে ভেসে আসা হিমশৈল জাহাজ চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি করে ।
3. সমুদ্রস্রোত উৎপত্তির কারণ লেখো ।
Answer : সমুদ্রস্রোত সৃষ্টি , প্রবাহ ও গতিপ্রকৃতি নানা কারণে নিয়ন্ত্রিত হয় । সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির প্রধান প্রধান কারণগুলি হল
( i ) পৃথিবীর আবর্তন ( Earth’s Rotation ) : পৃথিবী তার নিজের অক্ষের ওপর পশ্চিম থেকে পূর্বে আবর্তন করার ফলে যে কোরিওলিস বলের ( Coriolis Force ) উৎপত্তি হয় , তার প্রভাবে সমুদ্রস্রোত সোজাপথে প্রবাহিত হতে পারে না । ফেরেলের সূত্র অনুসরণ করে সমুদ্রস্রোত উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে ও দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে বেঁকে প্রবাহিত হয় । LAVALAVA
( ii ) বায়ুপ্রবাহ ( Winds ) : আধুনিক বৈজ্ঞানিকদের মতে , বায়ুপ্রবাহ সমুদ্রস্রোতের প্রধান কারণ । নিয়ত বায়ুপ্রবাহ এবং সমুদ্রস্রোতের গতি লক্ষ করলে দেখা যায় যে , প্রবল নিয়ত বায়ুপ্রবাহ নির্দিষ্ট পথে প্রবাহিত হওয়ার সময় সমুদ্রস্রোতকেও নিজের প্রবাহপথের দিকে টেনে নিয়ে যায় । যেমন- ( ক ) যেসব স্থানে আয়ন বায়ু প্রবাহিত হয় সেইসব স্থানে পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিকে সমুদ্রস্রোত আসে । ( খ ) যেসব স্থানে পশ্চিমা বায়ু প্রবাহিত হয় সেইসব স্থানে পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে সমুদ্রস্রোত আসে । ( গ ) মেরু অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহ এবং সমুদ্রস্রোত একই দিকে প্রবাহিত হয় ।
( iii ) সমুদ্রজলের উদ্ধৃতা , লবণতা ও ঘনত্ব ( Ocean Temper ature and Salinity ) : সূর্যরশ্মি ভূপৃষ্ঠের সর্বত্র সমানভাবে পড়ে না । নিরক্ষীয় অঞ্চলে লম্ব সূর্যকিরণে সমুদ্রের জল অধিক উষ্ণ ও কম ঘনত্বের জল প্রসারিত ও হালকা হয়ে নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে বহিঃস্রোতরূপে ( Surface current ) শীতল মেরু অঞ্চলের দিকে এবং মেরু অঞ্চলে তির্যক সূর্যকিরণে সমুদ্রের জল শীতল , ঘন ও ভারী হয়ে অন্তঃস্রোতরূপে ( under current ) নিরক্ষীয় অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয় । আবার , সমুদ্রে অধিক লবণাক্ত জলের ঘনত্ব বেশি হওয়ায় তা কম লবণাক্ত জলের দিকে অন্তঃস্রোতরূপে এবং কম লবণাক্ত জল হালকা হওয়ায় বহিঃস্রোতরূপে বেশি লবণাক্ত জলের দিকে প্রবাহিত হয় ।
( iv ) বরফের গলন ( Melting of ice ) : দুই মেরুসংলগ্ন সমুদ্রজলে বিপুল পরিমাণে বরফ গলে মেশে । ফলে সমুদ্রে মিষ্টি জলের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ও লবণতা হ্রাস পায় । ফলে জল সমুদ্রস্রোত রূপে নিম্নঅক্ষাংশে বয়ে যায় ।
( v ) উপকূলের আকৃতি ( Shape of Coast line ) : সমুদ্রস্রোতের প্রবাহপথে মহাদেশীয় উপকূল ভাগ বা দ্বীপসমূহের অবস্থানের ফলে সমুদ্রস্রোতের দিক পরিবর্তিত হয় । যেমন দক্ষিণে নিরক্ষীয় স্রোত ব্রাজিলিয়ান উপকূলে বাধা পেয়ে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে যায় ।
( vi ) ঋতুভেদ ( Seasonal Variations ) : ঋতুভেদে মহাসমুদ্রের জলে উষ্ণতা ও লবণতার তারতম্য ঘটে বলে সমুদ্রস্রোতের পরিবর্তন ঘটে । শীত ও গ্রীষ্মে সম্পূর্ণ আলাদা দিক থেকে প্রবাহিত মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারত মহাসাগরে স্রোতের দিক পরিবর্তন ঘটে ।
===============================================
বিভাগ ‘ক’
১) বিকল্পগুলি থেকে সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করে লেখঃ-
১.১) সমুদ্র স্রোত সৃষ্টির প্রধান কারণ –
(ক) উষ্ণতার পার্থক্য
(খ) লবণতার পার্থক্য
(গ) নিয়ত বায়ুপ্রবাহ
(ঘ) বরফের গলন
উত্তরঃ (গ) নিয়ত বায়ুপ্রবাহ
১.২) পৃথিবীর বৃহত্তম ও গভীরতম মহাসাগর হল –
(ক) প্রশান্ত মহাসাগর
(খ) আটলান্টিক মহাসাগর
(গ) ভারত মহাসাগর
(ঘ) বঙ্গোপসাগর
উত্তরঃ (ক) প্রশান্ত মহাসাগর
(১.৩) গ্র্যান্ড ব্যাংক একটি –
(ক) উষ্ণ স্রোত
(খ) শীতল স্রোত
(গ) মগ্নচড়া
(ঘ) দ্বীপ
উত্তরঃ (গ) মগ্নচড়া
১.৪) পৃথিবীর মধ্যে সর্বাধিক জাহাজ যাতায়াত করে –
(ক) ভারত মহাসাগরে
(খ) প্রশান্ত মহাসাগরে
(গ) আটলান্টিক মহাসাগরে
(ঘ) উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে
উত্তরঃ (ঘ) উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে
১.৫) california স্রোত প্রবাহিত হয় –
(ক) আটলান্টিক মহাসাগরে
(খ) ভারত মহাসাগরে
(গ) প্রশান্ত মহাসাগরে
(ঘ) বঙ্গোপসাগরে
উত্তরঃ (গ) প্রশান্ত মহাসাগরে
১.৬) দুটি মুখ্য জোয়ারের মধ্যে সময়ের ব্যবধান থাকে –
(ক) 6 ঘন্টা 13 মিনিট
(খ) 12 ঘন্টা 26 মিনিট
(গ) 24 ঘন্টা 52 মিনিট
(ঘ) 24 ঘন্টা 57 মিনিট
উত্তরঃ (গ) 24 ঘন্টা 52 মিনিট
১.৭) পেরিজি অবস্থানে পৃথিবী এবং চাঁদের দূরত্ব থাকে –
(ক) 3 লক্ষ 84 হাজার মাইল
(খ) 3 লক্ষ 56 হাজার কিমি
(গ) 4 লাখ 57 হাজার কিমি
(ঘ) 3 লক্ষ 56 হাজার মাইল
উত্তরঃ (খ) 3 লক্ষ 56 হাজার কিমি
১.৮) চাঁদ অপেক্ষা সুর্যের ভর –
(ক) 255 গুণ বেশি
(খ) 270 গুণ কম
(গ) 552 গুণ কম
(ঘ) 155 গুণ বেশি
উত্তরঃ (ক) 255 গুণ বেশি
১.৯) জোয়ার ও ভাটার প্রত্যেকের স্থায়িত্বকাল প্রায় –
(ক) 2 ঘন্টা
(খ) 6 ঘন্টা
(গ) 4 ঘণ্টা
(ঘ) 8 ঘন্টা
উত্তরঃ (খ) 6 ঘন্টা
১.১০) চাঁদ, সূর্য এবং পৃথিবীর একই সরলরেখায় অবস্থান কে বলে –
(ক) অ্যাপোজি
(খ) পেরিজি
(গ) সিজিগি
(ঘ) অনুসুর
উত্তরঃ (গ) সিজিগি
বিভাগ ‘খ’
২) ২.১) নিম্নলিখিত বাক্যগুলি শুদ্ধ হলে পাশে ‘শু’ এবং অসুস্থ হলে পাশে ‘অ’ লেখঃ-
২.১.১) শীতল বা উষ্ণ স্রোত এর মিলন স্থলে কুয়াশা ও ঝড় ঝঙ্কার সৃষ্টি হয়।
উত্তরঃ শু
২.১.২) গ্র্যান্ড ব্যাংক বাণিজ্যিক মাছ চাষের জন্য বিখ্যাত।
উত্তরঃ শু
২.১.৩) লা নিনার প্রভাবে প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব উপকূলে খারার সৃষ্টি হয়।
উত্তরঃ শু
২.১.৪) সাগর মহাসাগর এর মধ্যবর্তী অংশ জোয়ারের জল তিন চার ফুটের বেশী উচু হয় না।
উত্তরঃ শু
২.১.৫) চাঁদ এবং সূর্যের অবস্থানের উপর জোয়ার ভাটার তীব্রতা নির্ভর করে।
উত্তরঃ শু
২.১.৬) সূর্যের আকর্ষণে যে জোয়ার হয়ে থাকে সৌর জোয়ার বলে।
উত্তরঃ শু
২.২) উপযুক্ত শব্দ বসিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করোঃ-
২.২.১) উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত এবং শীতল ল্যাব্রাডর স্রোত এর মিলন স্থলে _______সৃষ্টি হয়।
উত্তরঃ হিমপ্রাচীর
২.২.২) উষ্ণ ________ স্রোত এর প্রভাবে শীতকালে japan উপকূল উষ্ণ থাকে।
উত্তরঃ কুরোশিয়ো
২.২.৩) দক্ষিণ আমেরিকার পূর্ব উপকূল দিয়ে উত্তর দিকে প্রবাহিত শীতল স্রোত এর নাম ________স্রোত।
উত্তরঃ ফকল্যান্ড
২.২.৪) ‘কাডাল’ শব্দের অর্থ________।
উত্তরঃ সমুদ্র
২.২.৫) জোয়ারের জল অত্যাধিক উঁচু হয়ে নদীতে প্রবেশ করলে তাকে _______ বলে।
উত্তরঃ বান
২.২.৬) যে তরঙ্গ সমুদ্র উপকূল কে ক্ষতি করে তাকে_______ তরঙ্গ বলে।
উত্তরঃ বিনাশকারী
২.৩) একটি বা দুটি শব্দ উত্তর দাওঃ-
২.৩.১) সমুদ্র স্রোতের প্রধান নিয়ন্ত্রক কে?
উত্তরঃ নিয়ত বায়ুপ্রবাহ
২.৩.২) আটলান্টিক মহাসাগরের একটি সমুদ্র স্রোতের নাম লেখ।
উত্তরঃ benguela স্রোত
২.৩.৩) ভারত মহাসাগরের উত্তর ভাগের স্রোতগুলি কোন্ কোন্ বায়ু দ্বারা প্রভাবিত হয়?
উত্তরঃ দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু ও উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ু দ্বারা
২.৩.৪) পৃথিবীতে জলভাগের পরিমান বেশি বলে পৃথিবী কে কি নামে ডাকা হয়?
উত্তরঃ নীল গ্রহ
২.৩.৫) চাঁদ একদিনে তার কক্ষপথে কত ডিগ্রি অতিক্রম করে?
উত্তরঃ প্রায় 13 degree
২.৩.৬) সাধারণত কোন্ ঋতুতে বান ডাকে?
উত্তরঃ বর্ষা ঋতুতে
২.৪.১) বাম দিকের সাথে ডানদিকের গুলি মিলিয়ে লেখঃ-
বাম দিক ডান দিক
২.৪.১) ইরমিঙ্গার স্রোত (ক) পেরু উপকূল
২.৪.২) canary স্রোত (খ) greenland উপকূল
২.৪.৩) হামবোল্ট স্রোত (গ) portugal উপকূল
২.৪.৪) কামচাটকা স্রোত (ঘ) কামচাটকা উপকূল
উত্তরঃ ২.৪.১) ইরমিঙ্গার স্রোত – (খ) greenland উপকূল ২.৪.২) canary স্রোত – (গ) portugal উপকূল ২.৪.৩) হামবোল্ট স্রোত – (ক) পেরু উপকূল ২.৪.৪) কামচাটকা স্রোত – (ঘ) কামচাটকা উপকূল
২.৪.২) বাম দিকের সাথে ডানদিকের গুলি মিলিয়ে লেখঃ-
বাম দিক ডান দিক
২.৪.১) সংযোগ (ক) অমাবস্যা
২.৪.২) পেরিজি (খ) চাঁদের অপসুর
২.৪.৩) অ্যাপোজি (গ) চাঁদ সূর্য পৃথিবী একই সরলরেখায় অবস্থান
২.৪.৪) সিজিগি (ঘ) চাঁদের অনুসূর
উত্তরঃ ২.৪.১) সংযোগ – (ক) অমাবস্যা ২.৪.২) পেরিজি – (ঘ) চাঁদের অনুসূর ২.৪.৩) অ্যাপোজি – (খ) চাঁদের অপসুর ২.৪.৪) সিজিগি – (গ) চাঁদ সূর্য পৃথিবী একই সরলরেখায় অবস্থান
বিভাগ ‘গ’
৩) নিচের প্রশ্নগুলোর সংক্ষিপ্ত উত্তর দাওঃ-
প্রশ্নঃ সমুদ্রস্রোত কী?
উত্তরঃ বায়ুপ্রবাহ, পৃথিবীর আবর্তন, সমুদ্রজলের উষ্ণতা, ঘনত্ব, লবণতা ইত্যাদির তারতম্যে সমুদ্রের বিশাল অঞ্চলজুড়ে নিয়মিতভাবে ও নির্দিষ্ট পথে সমুদ্রজলের একমুখী প্রবাহ হল সমুদ্রস্রোত।
প্রশ্নঃ ফেরেল সূত্র কী?
উত্তরঃ পৃথিবীর আবর্তনে সৃষ্ট কোরিওলিস বলের প্রভাবে বায়ুর মতো সমুদ্রস্রোতও উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে বেঁকে প্রবাহিত হয়। এটি হল ফেরেল সূত্র।
প্রশ্নঃ মগ্নচড়া বা ব্যাংক কী?
উত্তরঃ জলের সংস্পর্শে গলে যাওয়ায় নুড়ি, বালি, পলি সমুদ্রতলদেশে অধঃক্ষিপ্ত হয়ে যে গভীর অঞ্চল সৃষ্টি করে তাকে মাচড়া বলে। যেমন – উত্তর–পশ্চিম আটলান্টিকের গ্র্যান্ড ব্যাংক।
প্রশ্নঃ হিমপ্রাচীর কাকে বলে?
উত্তরঃ দুটি ভিন্ন ঘনত্বের ভিন্ন ভৌতগুণবিশিষ্ট শীতল ও উষ্ণ স্রোত বিপরীত দিক থেকে চালিত হলে তাদের মধ্যবর্তী যে বিভাজনতল সৃষ্টি হয়, তাকে বলে হিমপ্রাচীর।
প্রশ্নঃ জোয়ারভাটা কাকে বলে?
উত্তরঃ পৃথিবীর ওপর চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় অন্তর সমুদ্রজলের ছন্দময় উত্থান হল জোয়ার ও পতন হল ভাটা।
প্রশ্নঃ ভরা কোটালকে সর্বোচ্চ জোয়ার বলা হয় কেন?
উত্তরঃ ভরা কোটালে সূর্য, চাঁদ ও পৃথিবী একই সরলরেখায় অবস্থান করে। ফলে সূর্য ও চন্দ্রের অধিক আকর্ষণবলের প্রভাবে উভয় দিনে জোয়ারের মাত্রা অন্য যে কোনো দিনের তুলনায় অধিক হয়। তাই ভরা কোটালকে সর্বোচ্চ জোয়ার বলে।
প্রশ্নঃ সিজিগি কাকে বলে?
উত্তরঃ নিজেদের কক্ষপথে পরিক্রমণ করতে করতে যখন চাঁদের কেন্দ্র, পৃথিবীর কেন্দ্র এবং সূর্যের একই সরলরেখায় অবস্থান করে, তখন তাকে সিজিগি বলে।
প্রশ্নঃ বানডাকা কাকে বলে?
উত্তরঃ ভরা কোটালের সময় সমুদ্রের জল নদীর মোহানা দিয়ে প্রবল বেগে উলটো খাতে প্রবেশ করে, প্রবল জলোচ্ছ্বাস ঘটায়, একে বানডাকা বলে।
প্রশ্নঃ ষাঁড়াষাঁড়ি বান কাকে বলে?
উত্তরঃ বর্ষাঋতুতে নদীতে জলের প্রবাহ বেশি থাকে। বর্ষাঋতুর সহায়িকা, ভরা কোটালের সময় জলস্ফীতির মাত্রা এত অধিক হয় যে ওই অবস্থাকে দুটি ষাঁড়ের যুদ্ধকালীন অবস্থার সাথে তুলনা করা হয়। একেই ষাঁড়াষাঁড়ি বান বলে।
প্রশ্নঃ প্রত্যেক দিন জোয়ারভাটা সমান প্রবল হয় না কেন?
উত্তরঃ প্রত্যেক দিন জোয়ারভাটা সমান প্রবল না হওয়ার প্রধান কারণ হল চাঁদ ও সূর্যের পারস্পরিক অবস্থানগত পার্থক্য। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে চাঁদ ও সূর্যের মহাকর্ষ শক্তি ও কেন্দ্রাতিগ বলের তারতম্যে জোয়ারভাটার পরিমাণেরও তারতম্য ঘটে।
বিভাগ ‘ঘ’
৪) সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক উত্তর দাওঃ-
প্রশ্নঃ শৈবাল সাগরের উৎপত্তি কেন ঘটেছে?
উত্তরঃ আটলান্টিক মহাসাগরের দক্ষিণ – পশ্চিম, (১) উপসাগরীয় স্রোত, (২) উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত এবং (৩) ক্যানারি স্রোত পর্যায়ক্রমে আবর্তিত হয়ে কয়েক হাজার বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত একটি বিশাল আয়তাকার অঞ্চলজুড়ে একটি ঘূর্ণস্রোত বা জলাবর্তের সৃষ্টি হয়। এই বিশাল জলাবর্তের মাঝখানে কোনোরকম জলপ্রবাহ থাকে না বলে স্রোতবিহীন এই অঞ্চলে নানারকম শৈবাল, আগাছা ও জলজ উদ্ভিদ জন্মায়। এইভাবেই শৈবাল সাগরের উৎপত্তি হয়।
প্রশ্নঃ মগ্নচড়া সৃষ্টির কারণ কী?
উত্তরঃ শীতল স্রোত যেখানে উষ্ণ স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়, সেখানে শীতল স্রোতের সঙ্গে ভেসে আসা হিমশৈলগুলি উদ্বু স্রোতের সংস্পর্শে গলে যায় এবং হিমশৈল বাহিত নুড়ি, কাঁকর, পলি সমুদ্রে অধঃক্ষিপ্ত হয়। বহুকাল ধরে এই অবক্ষেপণের ফলে অগভীর চড়া সৃষ্টি হয়।
প্রশ্নঃ এল নিনো ও লা নিনার ওপর সমুদ্রস্রোতের প্রভাব লেখো।
উত্তরঃ জলবায়ু পরিবর্তনে সমুদ্রস্রোতের প্রভাব স্পষ্ট বোঝা যায়। প্রশান্ত মহাসাগরে এল নিনো ও লা নিনা আবির্ভাবের মধ্য দিয়ে। এল নিনো বছরে পেরু, ইকুয়েডর উপকূলে উত্তরদিক থেকে গরম জলের স্রোত এসে ঢোকে। ফলে পেরু, ইকুয়েডরে প্রবল বৃষ্টি, পশ্চিমে অস্ট্রেলিয়ায় অনাবৃষ্টি দেখা দেয়। লা নিনা বছরে অস্ট্রেলিয়ায় প্রবল বৃষ্টিতে বন্যা এবং পেরু, ইকুয়েডরে অনাবৃষ্টিতে খরা দেখা দেয়। প্রশান্ত মহাসাগরে গড়ে ২-৭ বছর অন্তর জলবায়ুর এই পরিবর্তনে সমুদ্রস্রোত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
প্রশ্নঃ গ্র্যান্ড ব্যাংক অঞ্চলে প্রচুর মাছ ধরা পড়ে কেন?
উত্তরঃ গ্র্যান্ড ব্যাংক অঞ্চল উত্তর দিক থেকে আগত শীতল এবং দক্ষিণ দিক থেকে আগত উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোতের মিলন অঞ্চল। উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলন অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে মাছের প্রয়োজনীয় খাদ্য প্ল্যাংকটন জন্মায়। তা ছাড়া ল্যাব্রাডর স্রোতের সাথে আগত হিমশৈল গলে গিয়ে এবং সমুদ্রজলের ঊর্ধ্বমুখী আবর্তে মাছের প্রয়োজনীয় খাদ্যেরও জোগান বাড়ে। তাই এই অঞ্চলে প্রচুর মাঝের সমাবেশ ঘটে। এই অঞ্চল পৃথিবীর অন্যতম বিখ্যাত বাণিজ্যিক মৎস্য আহরণ ক্ষেত্র।
প্রশ্নঃ মুখ্য ও গৌণ জোয়ার কী?
উত্তরঃ আবর্তনের ফলে পৃথিবীপৃষ্ঠের যে স্থান ঠিক চন্দ্রের সম্মুখে উপস্থিত হয়, সেই স্থানে চন্দ্রের আকর্ষণের ফলে চন্দ্রের সম্মুখে অবস্থিত ভূপৃষ্ঠের জল সবচেয়ে বেশি ফুলে ওঠে ও জোয়ার সৃষ্টি হয়। এইভাবে পৃথিবীর যে স্থানে চন্দ্রের আকর্ষণ সবচেয়ে বেশি হয়, সেখানে তখন মুখ্য জোয়ার বা প্রত্যক্ষ জোয়ার সৃষ্টি হয়।
মুখ্য জোয়ারের বিপরীত দিকে বা প্রতিপাদ স্থানে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব কম বলে, ওই বিপরীত দিকে অবস্থিত জলরাশি প্রধানত প্রবল বিকর্ষণ শক্তির প্রভাবে স্ফীত হয়ে গৌণ বা পরোক্ষ জোয়ার সৃষ্টি করে। এইভাবে পৃথিবীর কোনো একটি স্থানে মুখ্য জোয়ার ও তার বিপরীত স্থানে গৌণ জোয়ার হয়।
প্রশ্নঃ চাঁদের অ্যাপোজি ও পেরিজি অবস্থান কী?
উত্তরঃ
অ্যাপোজি অবস্থানঃ পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব যখন সর্বাধিক হয়, সেই অবস্থাকে অ্যাপোঞ্জি অবস্থান বলে। দূরত্ব বেশি হওয়ার কারণে চাঁদের আকর্ষণ বল যেহেতু কমে তাই জোয়ার এই সময় বেশ কম হয়, একেই অ্যাপোজি জোয়ার বলা হয়। সাধারণ থেকে অ্যাপোজি জোয়ারে ২০% জোয়ার কম হয়।
পেরিজি অবস্থানঃ পৃথিবী থেকে চাদের দূরত্ব যখন সবচেয়ে কম হয় সেই অবস্থাকে পেরিজি অবস্থান বলা হয়। পূর কম হওয়ার কারণে চাদের আকর্ষণ বল যেহেতু বাড়ে তাই লোয়াড় এসময় সাধারণ অবস্থার থেকে ২০% প্রবল হয়। একে পেরিজি জোয়ার বলা হয়।
বিভাগ ‘ঙ’
৫) ৫.১) যে কোনো দুটি প্রশ্নের উত্তর দাওঃ-
প্রশ্নঃ সমুদ্রস্রোত উৎপত্তির কারণ লেখো।
উত্তরঃ সমুদ্রস্রোত সৃষ্টি, প্রবাহ ও গতিপ্রকৃতি নানা কারণে নিয়ন্ত্রিত হয়। সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির প্রধান প্রধান কারণগুলি হল –
(১) পৃথিবীর আবর্তনঃ পৃথিবী তার নিজের অক্ষের ওপর পশ্চিম থেকে পূর্বে আবর্তন করার ফলে যে কোরিওলিস বলের উৎপত্তি হয়, তার প্রভাবে সমুদ্রস্রোত সোজাপথে প্রবাহিত হতে পারে না। ফেরেলের সূত্র অনুসরণ করে সমুদ্রস্রোত উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে ও দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে বেঁকে প্রবাহিত হয়।
(২) বায়ুপ্রবাহঃ আধুনিক বৈজ্ঞানিকদের মতে, বায়ুপ্রবাহ সমুদ্রস্রোতের প্রধান কারণ। নিয়ত বায়ুপ্রবাহ এবং সমুদ্রস্রোতের গতি লক্ষ করলে দেখা যায় যে, প্রবল নিয়ত বায়ুপ্রবাহ নির্দিষ্ট পথে প্রবাহিত হওয়ার সময় সমুদ্রস্রোতকেও নিজের প্রবাহপথের দিকে টেনে নিয়ে যায়। যেমন – (অ) যেসব স্থানে আয়ন বায়ু প্রবাহিত হয় সেইসব স্থানে পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিকে সমুদ্রস্রোত আসে। (আ) যেসব স্থানে পশ্চিমা বায়ু প্রবাহিত হয় সেইসব স্থানে পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে সমুদ্রস্রোত আসে। (ই) মেরু অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহ এবং সমুদ্রস্রোত একই দিকে প্রবাহিত হয়।
(৩) সমুদ্রজলের উষ্ণতা, লবণতা ও ঘনত্বঃ সূর্যরশ্মি ভূপৃষ্ঠের সর্বত্র সমানভাবে পড়ে না। নিরক্ষীয় অঞ্চলে লম্ব সূর্যকিরণে সমুদ্রের জল অধিক উষ্ণ ও কম ঘনত্বের জল প্রসারিত ও হালকা হয়ে নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে বহিঃস্রোতরূপে শীতল মেরু অঞ্চলের দিকে এবং মেরু অঞ্চলে তির্যক সূর্যকিরণে সমুদ্রের জল শীতল, ঘন ও ভারী হয়ে অন্তঃস্রোতরূপে নিরক্ষীয় অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়। আবার, সমুদ্রে অধিক লবণাক্ত জলের ঘনত্ব বেশি হওয়ায় তা কম লবণাক্ত জলের দিকে অন্তঃস্রোতরূপে এবং কম লবণাক্ত জল হালকা হওয়ায় বহিঃস্রোতরূপে বেশি লবণাক্ত জলের দিকে প্রবাহিত হয়।
(৪) ঋতুভেদঃ ঋতুভেদে মহাসমুদ্রের জলে উষ্ণতা ও লবণতার তারতম্য ঘটে বলে সমুদ্রস্রোতের পরিবর্তন ঘটে। শীত ও গ্রীষ্মে সম্পূর্ণ আলাদা দিক থেকে প্রবাহিত মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারত মহাসাগরে স্রোতের দিক পরিবর্তন ঘটে।
(৫) উপকূলের আকৃতিঃ সমুদ্রস্রোতের প্রবাহপথে মহাদেশীয় উপকূল ভাগ বা দ্বীপসমূহের অবস্থানের ফলে সমুদ্রস্রোতের দিক পরিবর্তিত হয়। যেমন দক্ষিণে নিরক্ষীয় স্রোত ব্রাজিলিয়ান উপকূলে বাধা পেয়ে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে যায়।
প্রশ্নঃ উদাহরণসহ সমুদ্রস্রোতের প্রভাব ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ নিচে সমুদ্রস্রোতের প্রভাবগুলি আলোচনা করা হল –
(১) জলবায়ুর ওপর প্রভাবঃ
(ক) উষ্ণতায় প্রভাবঃ শীতল অঞ্চলের ওপর দিয়ে উষু স্রোত বয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে উষ্ণতা বাড়ে। উত্তর আটলান্টিক ড্রিফটের কারণেই উত্তর–পশ্চিম ইউরোপের উষ্ণতা শীতকালে বেশ বেশি হ হয় বলেই নরওয়ের হ্যামারফেস্ট বন্দর দিয়ে সারাবছর জাহাজ চলাচল করে। অপরদিকে উষু অঞ্চলের ওপর দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেলে উষ্ণতা কমে। বেঙ্গুয়েলা স্রোতের প্রভাবে দক্ষিণ আফ্রিকা ও নামিবিয়া উপকূলের উষ্ণতা সারাবছর কম।
(খ) বৃষ্টিপাত, তুষারপাতঃ উষ্ণ স্রোতের উপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ু বেশি জলীয় বাষ্প গ্রহণ করে বলে বৃষ্টির সম্ভাবনা বাড়ে। এই উত্তর আটলান্টিক ড্রিফটের প্রভাবে উত্তর–পশ্চিম ইউরোপে এই কারণে বেশি বৃষ্টি হয়। শীতল স্রোত প্রবাহিত অঞ্চলে উষ্ণতা অনেকটা কমে গেলে তুষারপাত হয়। ল্যাব্রাডর স্রোতের প্রভাবে সহায়িকা, নিউফাউন্ডল্যান্ড অঞ্চলে তুষারপাত ঘটে। অনেকক্ষেত্রে শীতল স্রোত প্রবাহিত অঞ্চলে বৃষ্টি কম হয়।
(গ) কুয়াশা, ঝড়–ঝঞ্ঝাঃ যেখানে উষ্ণ ও শীতল স্রোত মিলিত হয় সেখানে বৈপরীত্য উষ্ণতার প্রভাবে পরিচলনজনিত কুয়াশা, ঝড়, ঝঞ্ঝার উৎপত্তি ঘটে। নিউফাউন্ডল্যান্ড অঞ্চলে শীতল ল্যাব্রাডর ও উষু উপসাগরীয় স্রোতের মিলনে প্রায়শই ঘন কুয়াশা ও ঝড়ের সৃষ্টি হয়।
(২) জলবায়ুর পরিবর্তনে প্রভাবঃ জলবায়ু পরিবর্তনে সমুদ্রস্রোতের প্রভাব স্পষ্ট বোঝা যায় প্রশান্ত মহাসাগরে এল নিনো ও লা নিনা আবির্ভাবের মধ্য দিয়ে। এল নিনো বছরে পেরু, ইকুয়েডর উপকূলে উত্তরদিক থেকে গরম জলের স্রোত এসে ঢোকে। ফলে পেরু, ইকুয়েডরে প্রবল বৃষ্টি, পশ্চিমে অস্ট্রেলিয়ায় অনাবৃষ্টি দেখা দেয়। লা নিনা বছরে অস্ট্রেলিয়ায় প্রবল বৃষ্টিতে বন্যা এবং পেরু, ইকুয়েডরে অনাবৃষ্টিতে খরা দেখা দেয়। প্রশান্ত মহাসাগরে গড়ে ২–৭ বছর অন্তর জলবায়ুর এই পরিবর্তনে সমুদ্রস্রোত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
(৩) মগ্নচড়ার সৃষ্টি ও বাণিজ্যিক গুরুত্বঃ যেখানে উষ্ণ ও শীতল সমুদ্রস্রোত মেশে সেখানে শীতল স্রোতে বয়ে আসা হিমশৈল গলে যায়। হিমশৈলের সঙ্গে থাকা পদার্থ ক্রমাগত অধঃক্ষিপ্ত হয়ে অগভীর অঞ্চল তৈরি করে। এটি হল মগ্নচড়া বা ব্যাংক। গ্র্যান্ড ব্যাংক, ডগার্স ব্যাংক, রকফল ব্যাংক হল পৃথিবী বিখ্যাত মগ্নচড়া। এই মগ্নচড়াগুলি পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাণিজ্যিক মৎস্য আহরণ অঞ্চল।
প্রশ্নঃ জোয়ারভাটার ফলাফলগুলি লেখো।
উত্তরঃ জোয়ারভাটার সুফলঃ নিচে জোয়ারভাটার সুফলগুলি হল –
(১) জোয়ারের সময় নদীর জল বাড়ে বলে জাহাজ চলাচলে সুবিধা হয়। কলকাতা, লন্ডন বন্দরের অধিকাংশ জাহাজ জোয়ারের সময় প্রবেশ করে।
(২) ভাটার টানে নদীর পলি সাগরে চলে যায় বলে নদীর গভীরতা ও নাব্যতা বজায় থাকে।
(৩) জোয়ারের সময় সমুদ্রের মাছ নদীতে প্রবেশ করে বলে জেলেদের সুবিধা হয়।
জোয়ারভাটার কুফলঃ নিচে জোয়ারভাটার সুফলগুলি হল –
(১) জোয়ারে সমুদ্রের লবণাক্ত জল প্রবেশের কারণে নদীর জল সেচ ও পানীয় কাজে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে।
(২) প্রবল জোয়ারে নদীর পাড় ভেঙে বন্যা হয়। বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়ে জমি লবণাক্ত হয়ে চাষের অযোগ্য হয়ে পড়ে। উপকূলের পাড় ভাঙে। ঘরবাড়ি নষ্ট হয়।
(৩) প্রবল জোয়ারে নৌকা ও জাহাজের ক্ষতি হয়।
===============================================
সঠিক উত্তর নির্বাচন কর (MCQ)
[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান ১]
1। শৈবাল সাগর দেখা যায় –
ক) আটলান্টিক মহাসাগরে খ) ভারত মহাসাগরে গ) কুমেরু মহাসাগরে ঘ) সুমেরু মহাসাগরে
উত্তর- শৈবাল সাগর দেখা যায় ক) আটলান্টিক মহাসাগরে।
2। সমুদ্রস্রোত সৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করে –
ক) সাময়িক বায়ু খ) নিয়ত বায়ু গ) স্থানীয় বায়ু ঘ) আকস্মিক বায়ু
উত্তর- সমুদ্রস্রোত সৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করে খ) নিয়ত বায়ু।
3। হিমপ্রাচীর দেখা যায় –
ক) আটলান্টিক মহাসাগরে খ) কুমেরু মহাসাগরে গ) ভারত মহসাগরে ঘ) বঙ্গোপসাগরে
উত্তর- হিমপ্রাচীর দেখা যায় ক) আটলান্টিক মহাসাগরে।
4। আটলান্টিক মহাসাগরে শৈবাল সাগর সৃষ্টি হওয়ার জন্য যে স্রোতের বিশেষ ভূমিকা আছে, তা হল –
ক) ল্যাব্রাডর স্রোত খ) ক্যানারি স্রোত গ) বেঙ্গুয়েলা স্রোত ঘ) পেরু স্রোত
উত্তর- আটলান্টিক মহাসাগরে শৈবাল সাগর সৃষ্টি হওয়ার জন্য যে স্রোতের বিশেষ ভূমিকা আছে, তা হল খ) ক্যানারি স্রোত।
5। উষ্ণ পেরু স্রোতের অপর নাম –
ক) হামবোল্ড স্রোত খ) এলনিনো স্রোত গ) লা নিনা স্রোত ঘ) ওয়াশিয়ো স্রোত
উত্তর- উষ্ণ পেরু স্রোতের অপর নাম ক) হামবোল্ড স্রোত।
6। এলনিনোর প্রভাব দেখা যায় –
ক) আটলান্টিক মহাসাগরে খ) প্রশান্ত মহাসাগরে গ) ভারত মহাসাগরে ঘ) সুমেরু মহাসাগরে
উত্তর- এলনিনোর প্রভাব দেখা যায় খ) প্রশান্ত মহাসাগরে।
7। পৃথিবীর মোট আয়তনের জল ভাগ দ্বারা আবৃত অংশ প্রায় –
ক) 61% খ) 81% গ) 71% ঘ) 91%
উত্তর- পৃথিবীর মোট আয়তনের জল ভাগ দ্বারা আবৃত অংশ প্রায় গ) 91%।
8। ক্যালিফোর্নিয়া স্রোত প্রবাহিত হয় কোন্ মহাসাগরে?
ক) আটলান্টিক খ) ভারত গ) প্রশান্ত ঘ) কুমেরু
উত্তর- ক্যালিফোর্নিয়া স্রোত প্রবাহিত হয় গ) প্রশান্ত মহাসাগরে।
9। ল্যাব্রাডর স্রোত একপ্রকার –
ক) উষ্ণ স্রোত খ) শীতল স্রোত গ) নাতিশীতোষ্ণ স্রোত ঘ) কোনোটিই নয়
উত্তর- ল্যাব্রাডর স্রোত একপ্রকার খ) শীতল স্রোত।
10। মৌসুমি বায়ু যে মহাসাগরের স্রোতকে নিয়ন্ত্রণ করে, তা হল –
ক) প্রশান্ত মহাসাগরের স্রোতকে খ) ভারত মহাসাগরের স্রোতকে গ) আটলান্টিক মহাসাগরের স্রোতকে ঘ) সুমেরু মহাসাগরের স্রোতকে
উত্তর- মৌসুমি বায়ু যে মহাসাগরের স্রোতকে নিয়ন্ত্রণ করে, তা হল খ) ভারত মহাসাগরের স্রোতকে।
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন (SAQ)
[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান ২]
1। মগ্নচড়া কীভাবে সৃষ্টি হয়?
উত্তর- সমুদ্রে উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলনস্থলে শীতল স্রোতের বয়ে আনা হিমশৈলগুলি উষ্ণ জলের স্পর্শে গলে যায়।মহাদেশীয় অংশ থেকে আগত হিমশৈলের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণ নুড়ি, কাঁকর, বালি, পাথর, খনিজ দ্রব্য। প্রভৃতি উষ্ণ জলের সংস্পর্শে এগুলি গলে গেলে ওইসব পদার্থ সমুদ্রের মহীসোপান অঞ্চলে সঞ্চিত হয়ে মগ্নচড়ার সৃষ্টি করে।
2। হিমপ্রাচীর কাকে বলে?
উত্তর- উত্তর আমেরিকার পূর্ব উপকূলে উত্তরমুখী উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোতের ঘন নীল জল এবং দক্ষিণমুখী শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের সবুজ জলের মধ্যে একটি স্পষ্ট বিভাজন রেখা দেখা যায়। এই বিভাজন রেখাকে হিমপ্রাচীর বলে।
3। ষাঁড়াষাঁড়ির বান কাকে বলে?
উত্তর- ভরা কোটালের দিনে সমুদ্রের জল নদীখাতে যখন প্রবল জলোচ্ছ্বাস ঘটিয়ে ঢুকে পরে তখন ভাটার স্রোতের বাধায় জোয়ার আরও বেশি ফুলে ওঠে এবং এই ফুলে ওঠা জল তরঙ্গরূপে যেন এক খাড়া দেওয়াল তৈরি করে। এরকম প্রবল জলস্ফীতিকে তেজি ষাঁড়ের যুদ্ধরত অবস্থার সঙ্গে তুলনা কর ষাঁড়াষাঁড়ির বান বলে।
বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্ন উত্তর
[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান ৩]
1। জোয়ার ভাটার প্রভাব বা ফলাফল লেখো।
উত্তর- সমুদ্র ও নদনদীর উপকুলের কাছে জোয়ার ভাটার প্রভাব খুব বেশি থাকে। সুফল ও কুফলগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল –
জোয়ার ভাটার সুফল
• জোয়ারের ফলে নদীর জল পরিষ্কার থাকে। জোয়ার ভাটার ফলে আবর্জনা নিষ্কাশিত হয়ে নদীর জল পরিষ্কার থাকে।
• বর্তমানে জোয়ারের স্রোতকে কাজে লাগিয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।
• জোয়ারের জলের টানে নদী মোহনায় সঞ্চিত পলিমাটি সমুদ্রের দিকে চলে যায়, নদী পলিমুক্ত হয় ফলে বদ্বীপ গঠনে বাধা পরে।
• জোয়ারের সময় অগভীর নদীগুলিতে জলের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে নৌ চলাচলের সুবিধা হয়।
• জোয়ারের সময় সমুদ্রের মাছ নদীতে চলে আসে, জেলেরা সেই মাছ সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।
জোয়ার ভাটার কুফল
•জোয়ারের ফলে সমুদ্রের লবণাক্ত জল নদীতে এসে পড়লে সেই জল সেচের কাজে ব্যবহার করা যায় না এবং পানীয় হিসেবে অযোগ্য হয়ে পরে।
• জোয়ারের প্রবল বেগের জন্যে নৌকা, লঞ্চ ও ছোট জাহাজের ক্ষতি হয়।
• নদীর নাব্যতা ও গভীরতা কমে যায় জোয়ারের ফলে সঞ্চিত পলির ফলে।
2। বান বা বান ডাকা বলতে কি বোঝ? কি কি অবস্থায় নদীতে বান দেখা যায়?
উত্তর- ভরা কোটালের দিনে জোয়ারের সময় সমুদ্র স্ফীত হয় বলে সমুদ্রের জল মােহনা দিয়ে দ্রুত নদীতে প্রবেশ করে, তখন ভাটার স্রোতে বাধা পেয়ে নদীর জল আরো ফুলে ওঠে, ফলে নদীর জলও তখন বেড়ে যায়। এইভাবে জোয়ারের জল নদীতে আসার সময়, মাঝে মাঝে অত্যধিক উঁচু (5-7 মিটার) হয়ে প্রবল বেগে নদীতে প্রবেশ করে, একেই বলে বান বা বানডাকা। দূর থেকে এই বান আসার গর্জন শোনা যায়, তাই একে বানডাকা বলা হয়।
যে অবস্থায় বান প্রবল হয়ঃ
কতকগুলি বিশেষ অবস্থায় নদীতে বান খুব প্রবল হয়, যেমন:
ক) জোয়ার ও ভাটার জলের মধ্যে তারতম্য কমপক্ষে 6 মিটার থাকা দরকার
খ) তেজ কোটালের সময়,
গ) নদীর মােহানায় চড়া থাকলে,
ঘ) জোয়ারের জল প্রবেশ করার সময় নদীর স্রোতে বা অন্যভাবে বাধা পেলে,
ঙ) নদীর মুখ ফানেল-আকৃতির হলে এবং
চ) নদী জলপূর্ণ থাকলে।
3। পেরিজি ও অ্যাপোজির মধ্যে পার্থক্য লেখো।
উত্তর- চাঁদ নিজ কক্ষপথে পৃথিবীকে পরিক্রমণ কালে চাঁদ ও পৃথিবীর মধ্যে দূরত্ব থাকে সবচেয়ে কম (375000 কিমি)। এই অবস্থানকে পেরিজি বলে। পেরিজি অবস্থানে চাঁদের আকর্ষণ বল বেশি হওয়ায় জোয়ার প্রবল হয়। এই জোয়ারকে অনুভূ জোয়ার বলে।
পৃথিবীকে পরিক্রমণকালে চাঁদ ও পৃথিবীর দূরত্ব সবচেয়ে বেশি থাকলে তখন তাকে অ্যাপোজি অবস্থান বলে। অ্যাপোজি অবস্থানে চাঁদ ও পৃথিবীর দুরত্ব থাকে 470000 কিমি। অ্যাপোজি অবস্থানে চাঁদের আকর্ষণ বল কম হয়, ফলে জোয়ার দুর্বল হয়। এই জোয়ারকে অপভূ জোয়ার বলে।
4। নিউফাউন্ডল্যান্ডের কাছে মগ্নচড়া সৃষ্টি হয়েছে কেন?
উত্তর- উষ্ণ স্রোত ও শীতল স্রোতের মিলনস্থলে শীতল স্রোতের বয়ে আনা হিমশৈল উষ্ণ স্রোতের প্রভাবে গলে যায়। ফলে ওতে সঞ্চিত নুড়ি, কাকর প্রভৃতি মহীসোপান অঞ্চলে জমা হয়ে মগ্নচড়ার সৃষ্টি হয়েছে।
শীতল লাব্রাডার স্রোতের সঙ্গে আসা হিমশৈলগুলি উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোতের সংস্পর্শে গলে গিয়ে সমুদ্র তলদেশে নুড়ি, কাকর, বালি, পলি, কাদা প্রভৃতি সঞ্চিত হয়ে সৃষ্টি হয়েছে। নিউফাউন্ডল্যান্ডের কাছে এই হিমশৈল সঞ্চিত হয়ে মগ্নচড়ার সৃষ্টি হয়েছে। মহীসোপানে এই মগ্নচড়াটি বাণিজ্যিকভাবে মৎস্য আহরণের জন্য বিখ্যাত।
5। হিমশৈল বলতে কী বোঝ?
উত্তর- উচ্চ অক্ষাংশ (হিম মন্ডল) এ, সমুদ্রে ভাসমান বৃহদায়তন বরফের স্তূপকে হিমশৈল বলে।
ওলন্দাজ শব্দ ‘ijsberg’-এর আক্ষরিক অর্থ হল বরফের পর্বত। হিমমণ্ডলে অবস্থিত মহাদেশীয় হিমবাহের প্রান্তভাগ বা সমুদ্র উপকুলীয় অংশ মূল হিমবাহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সমুদ্রে বিশাল বা ক্ষুদ্রাকতি বরফের চাঁই হিসেবে ভাসমান থাকে।
হিমশৈলের বৈশিষ্ট্য
ক) এই ধরনের বরফের চাই অনেকসময় বিশাল বরফের স্তুপরূপে সমুদ্রের জলে ভাসতে ভাসতে অগ্রসর হয়।
খ) হিমশৈল সমুদ্রের জলরাশির গতিকে প্রতিহত করে।
দীর্ঘ উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন (LA)
[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান ৫]
1। সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির কারণগুলি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর- সমুদ্র স্রোত সৃষ্টির প্রধান কারণগুলি হল –
• নিয়ত বায়ুপ্রবাহ:
নিয়ত বায়ুপ্রবাহ একটি নির্দিষ্ট দিকে, নির্দিষ্ট গতিতে সারাবছর প্রবাহিত হয়। সমুদ্রের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় ঘর্ষণজনিত বলের প্রভাবে জলরাশিকে নিজের দিকপথে চালিত করে ফলে সমুদ্র স্রোতের সৃষ্টি হয়।
• ঋতুভেদ:
ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে জলের লবণতা ও ঘনত্ব বাড়ে ও কমে। এছাড়াও বায়ুপ্রবাহের দিক পরিবর্তনের জন্য সমুদ্র স্রোতের গতির দিকের পরিবর্তন ঘটে।
• পৃথিবীর আবর্তন গতি:
ফেরেলের সূত্র অনুসারে, পৃথিবীর আবর্তন গতির জন্য সমুদ্র স্রোত উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে বেকে প্রবাহিত হয় ।
• সমুদ্র জলে উষ্ণতার তারতম্য:
নিরক্ষীয় অঞ্চলে উষ্ণতা প্রসারিত হওয়ায় আয়তনে বেড়ে যায় এবং এই হালকা স্রোত মেরুপ্রদেশের দিকে এবং শীতল মেরু অঞ্চল থেকে ভারী, শীতল স্রোত নিরক্ষীয় অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়।
• সমুদ্রের জলে লবনতা ও ঘনত্বের তারতম্য:
অধিক লবণাক্ত জল ঘন ও ভারী হওয়ায় কম লবণাক্ত জলের দিকে অন্তঃস্রোত হিসেবে প্রবাহিত হয়। কম লবণাক্ত জল হালকা হওয়ায় ঘন লবণাক্ত জলের দিকে বহি স্রোত হিসেবে প্রবাহিত হয়।
• বরফের গলন:
বরফ গলে গেলে ঠাণ্ডা জলের পরিমাণ বেড়ে যায়। বরফ লবণাক্ত জলকণা কে পৃথক করে জলের ঘনত্ব বাড়িয়ে দেয়। তখন সমুদ্রের জল ভারী হয়ে অন্তঃস্রোত রূপে প্রবাহিত হয়।
2। জোয়ারভাটা সৃষ্টির কারণগুলি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর- প্রধানত দুটি কারণে পৃথিবীতে জোয়ার ভাটার সৃষ্টি হয়। যথা- ক) পৃথিবীর ওপর চঁদ ও সূর্যের মিলিত মহাকর্ষ বলের প্রভাব এবং খ) পৃথিবীর আবর্তন জনিত কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাব।
• পৃথিবীর ওপর চাঁদ ও সূর্যের মিলিত মহাকর্ষ বলের প্রভাব:
নিউটনের মহাকর্ষ নিয়ম অনুযায়ী পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্য পরস্পর পরস্পরকে আকর্ষণ করে। যে বস্তুর ভর যত বেশি আকর্ষণ বল তার তত বেশি এবং যে বস্তুর দূরত্ব যত বেশি তার আকর্ষণ বল তত কম। পৃথিবী থেকে সূর্যের গড় দূরত্ব 15 কোটি কিমি এবং চাঁদ 384000 কিমি দূরে অবস্থিত। তাই পৃথিবীর ওপর চাঁদের আকর্ষণ বল 2.2 গুণ বেশি। প্রধানত চাঁদের আকর্ষণেই সমুদ্রের জল স্ফীত হয়ে জোয়ারের সৃষ্টি করে। জোয়ারের সমকোণস্থ অঞ্চলের জলতল নেমে গিয়ে ভাটার সৃষ্টি করে। সূর্যের চন্দ্রের চেয়ে প্রায় 255 লক্ষ গুণ ভারি হলেও বহু দূরে অবস্থিত হওয়ার জন্য সূর্যের আকর্ষণে জোয়ার তত প্রবল হয় না। সিজিগি অবস্থানে পৃথিবীর একই স্থানে চাঁদ ও সূর্যের মিলিত আকর্ষণ কার্যকরী হওয়ায় জোয়ার খুব প্রবল হয়।
• পৃথিবীর আবর্তনজনিত কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাব:
পৃথিবীর আবর্তনজনিত কারণে কেন্দ্রাতিগ বলের সৃষ্টি হয়, যার প্রভাবে সমুদ্রের জলরাশি বাইরের দিকে বিক্ষিপ্ত হওয়ায় প্রবণতা লাভ করে। এই বল মহাকর্ষ বলের বিপরীতে কাজ করে। অর্থাৎ চাঁদের আকর্ষণে যে স্থানে জোয়ার হয় তার বিপরীতে প্রতিপাদ স্থানে কেন্দ্রাতিগ বল অধিক কার্যকরী হওয়ায় সেখানে জোয়ার (গৌণ জোয়ার) হয়, তবে প্রাবল্য তুলনামূলক কম। জোয়ারের স্থানে বিপুল জলরাশি সরবরাহের জন্য এদের মধ্যবর্তী সমকোণস্থ স্থানগুলিতে জলতল নেমে গিয়ে ভাটার সৃষ্টি করে ।
©kamaleshforeducation.in(2023)