ভারতের জলবায়ু (ভারত – পঞ্চম অধ্যায়)

 

 

ভারতের জলবায়ু (ভারত – পঞ্চম অধ্যায়)  

মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Geography  Question and Answer :

MCQ | ভারতের জলবায়ু (ভারত – পঞ্চম অধ্যায়) মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Geography Bharater Jalabayu Question and Answer :

  1. কোন্ ঋতুতে উত্তর ভারতের তাপমাত্রা সর্বোচ্চ হয় ? 

(A) গ্রীষ্ম

(B) বর্ষা

(C) শরৎ

(D) শীত 

Ans: (A) গ্রীষ্ম

  1. ভারতের দুটি চরমভাবাপন্ন জলবায়ুযুক্ত শহর হল –

(A) চেন্নাই ও মুম্বাই

(B) কলকাতা ও কটক

(C) দিল্লি ও অমৃতসর

(D) বেঙ্গালুরু ও হায়দরাবাদ

Ans: C) দিল্লি ও অমৃতসর

  1. ভারতের জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য হল –

(A) অত্যধিক উষ্ণতা

(B) ঋতুপরিবর্তন 

(C) অত্যধিক বৃষ্টিপাত

(D) ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর প্রভাব

Ans: (B) ঋতুপরিবর্তন

  1. ভারতের জলবায়ু কোন্ বায়ুপ্রবাহের দ্বারা সর্বাধিক প্রভাবিত ?

(A) মৌসুমি বায়ু

(B) মেরু বায়ু 

(C) পশ্চিমা বায়ু

(D) আয়ন বায়ু

Ans: (A) মৌসুমি বায়ু

  1. ভারতের বৃষ্টিপাত অধিকাংশই হয়—

(A) পরিচলন পদ্ধতিতে

(B) শৈলোৎক্ষেপ পদ্ধতিতে

(C) ঘূর্ণবাত পদ্ধতিতে

(D) সংঘর্ষ পদ্ধতিতে

Ans: (B) শৈলোৎক্ষেপ পদ্ধতিতে

  1. ভারতের জলবায়ুর ওপর কোন্ পর্বতের প্রভাব বেশি ?

(A) পশ্চিমঘাট

(B) পূর্বঘাট

(C) হিমালয়

(D) আরাবল্লী

Ans: (C) হিমালয়

  1. ভারতে মৌসুমি বায়ুর আগমন হয় কোন্ মাসে ?

(A) জুলাই

(B) আগস্ট

(C) মে

(D) জুন 

Ans: (D) জুন

  1. ভারতের একটি স্থানীয় বায়ু হল— 

(A) আশ্বিনের ঝড় 

(B) মৌসুমি বায়ু

(C) পশ্চিমি ঝঞ্ঝা

(D) লু

Ans: (D) লু

  1. পশ্চিমবঙ্গে গ্রীষ্মের প্রথম ভাগে বিকেলের দিকে যে ঝড় বৃষ্টি হয় তাকে বলে –

(A) আশ্বিনের ঝড়

(B) কালবৈশাখী

(C) আম্রবৃষ্টি

(D) বরদৈছিলা

Ans: (B) কালবৈশাখী

  1. কোন্ মৌসুমি বায়ু শীতল ও শুষ্ক প্রকৃতির ?

(A) দক্ষিণ – পশ্চিম

(B) উত্তর – পূর্ব

(C) উত্তর – পশ্চিম

(D) দক্ষিণ – পূর্ব

Ans: (C) উত্তর – পশ্চিম

[ আরোও দেখুন: Madhyamik Geography Suggestion 2023 Click here ]

  1. লু বায়ু প্রবাহিত হয় ___ ভারতে ।

(A) উত্তর – পূর্ব

(B) উত্তর দক্ষিণ

(C) উত্তর – পশ্চিম

(D) দক্ষিণ

Ans: (C) উত্তর – পশ্চিম

  1. ভারতে আঁধি দেখা যায় কোন রাজ্যে ?

(A) পশ্চিমবঙ্গ ।

(B) কেরল

(C) জম্মু ও কাশ্মীর

(D) রাজস্থান

Ans: (D) রাজস্থান

  1. সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ভূমির উচ্চতা বাড়ার সাথে সাথে উষ্ণতা – 

(A) কমতে থাকে 

(B) বাড়তে থাকে

(C) অপরিবর্তিত থাকে

(D) দ্বিগুণ বাড়তে থাকে

Ans: (A) কমতে থাকে

  1. ভারতের উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলগুলির প্রধান বৈশিষ্ট্য হল । 

সারাবছর ধরে –

(A) প্রচণ্ড গরম

(B) প্রবল শুষ্কতা

(C) প্রবল বৃষ্টিপাত 

(D) প্রবল শৈত্য

Ans: (D) প্রবল শৈত্য

  1. মৌসুমি বায়ুর স্থায়িত্বকাল সবচেয়ে কম থাকে _____ ভারতে ।

(A) দক্ষিণ – পূর্ব

(B) উত্তর – পূর্ব

(C) দক্ষিণ – পশ্চিম 

(D) উত্তর – পশ্চিম

Ans: (B) উত্তর – পূর্ব

  1. সমুদ্রের কাছে জলবায়ু কী প্রকৃতির হয় ?

(A) উষ্ণ আর্দ্র

(B) সমভাবাপন্ন

(C) চরমভাবাপন্ন

(D) শীতল ও শুষ্ক

Ans: (B) সমভাবাপন্ন

  1. শীতল পার্বত্য জলবায়ুর প্রভাব দেখা যায় ভারতের কোন্ অংশে ?

(A) উত্তর

(B) দক্ষিণ

(C) পূর্ব

(D) পশ্চিম

Ans: (A) উত্তর

  1. অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস ভারতে –

(A) গ্রীষ্মকাল

(B) বর্ষাকাল

(C) শরৎকাল

(D) শীতকাল

Ans: (C) শরৎকাল

  1. আরব সাগরীয় মৌসুমি বায়ু কোন্ উপকূলে প্রবল শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ঘটায় ?

(A) মালাবার

(B) করমণ্ডল

(C) কোঙ্কন

(D) উত্তর সরকার

Ans: (A) মালাবার

  1. ভারতের উত্তর অংশ কোন্ তাপমণ্ডলের অন্তর্গত । 

(A) ক্রান্তীয়

(B) হিমমণ্ডল

(C) নাতিশীতোয়

(D) উষ্ণমণ্ডল 

Ans: (C) নাতিশীতোয়

  1. অক্টোবর – নভেম্বর মাসে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় পশ্চিমবঙ্গে কী নামে পরিচিত ?

(A) কালবৈশাখী

(B) পশ্চিমি ঝঞ্ঝা

(C) বরদৈছিলা

(D) আশ্বিনের ঝড়

Ans: (D) আশ্বিনের ঝড়

অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | ভারতের জলবায়ু (ভারত – পঞ্চম অধ্যায়) মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Geography Bharater Jalabayu Question and Answer : 

  1. কোনো স্থানের অনেক দিনের আবহাওয়ার গড়কে কী বলা হয় ?

Ans: জলবায়ু ।

  1. উত্তর – পশ্চিম ভারতের জলবায়ুর প্রকৃতি কী রকম ?

Ans: চরমভাবাপন্ন ।

  1. দক্ষিণ ভারতের উপকূলের জলবায়ুর প্রকৃতি কী রকম ? 

Ans: সমভাবাপন্ন ।

  1. উত্তর ভারতের তাপমাত্রা কোন সময়ে সর্বোচ্চ হয় ?

Ans: গ্রীষ্মকালের মে মাসে ।

  1. কোন্ বায়ুর প্রভাবে ভারতে সর্বাধিক বৃষ্টিপাত হয় ?

Ans: দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ।

  1. কোন্ বায়ুর প্রভাবে ভারতে শীতকাল শুষ্ক হয় ?

Ans: উত্তর – পূর্ব মৌসুমি বায়ু ।

  1. কী কারণে শীতকালে উত্তর – পশ্চিম ভারতে বৃষ্টিপাত হয় ?

Ans: নাতিশীতোয় , ভূমধ্যসাগরীয় ঘূর্ণবাত ।

  1. প্রধানত কী কারণে ভারতে খরা বা বন্যার প্রাদুর্ভাব দেখা যায় ?

Ans: অনিয়মিত মৌসুমি বৃষ্টিপাতের জন্য । 

  1. কোন্ পর্বতশ্রেণি ভারতের জলবায়ুকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে ?

Ans: হিমালয় পর্বতশ্রেণি ।

  1. গ্রীষ্মকালে ভারতের গড় তাপমাত্রা কত হয় ?

Ans: ৩০ ° – ৩৫ ° C।

  1. ভারতে গ্রীষ্মকালের প্রধান বৈশিষ্ট্য কী ?

Ans: অধিক উষ্ণতা এবং স্বল্প আর্দ্রতা ।

  1. আঁধি প্রধানত কোন্ রাজ্যে দেখতে পাওয়া যায় ?

Ans: রাজস্থান ।

  1. গ্রীষ্মকালীন ঝড় – বৃষ্টিপাত অসমে কী নামে পরিচিত ?  

Ans: বরদৈছিলা ।

  1. ভারতে বর্ষাকালের প্রধান বৈশিষ্ট্য কী ?

Ans: অধিক উষ্ণতা ও আর্দ্রতা এবং ক্রমাগত বৃষ্টি ।

  1. ভারতে মৌসুমি বায়ুর শাখাদুটির নাম লেখো । 

Ans: আরব সাগরীয় শাখা এবং ২. বঙ্গোপসাগরীয় শাখা । 

  1. শীতকালে তুষারপাত হয় ভারতের এমন দুটি রাজ্যের নাম লেখো ।

Ans: জম্মু ও কাশ্মীর / হিমাচল প্রদেশ / উত্তরাখণ্ড / সিনি 1 পশ্চিমবঙ্গ ( দার্জিলিং ) ।

  1. মৌসুমি বিস্ফোরণ প্রধানত কোন সময়ে দেখা যায় ? 

Ans: গ্রীষ্মকালের শেষের দিকে , বিশেষত জুন মাসে ।

  1. ভারতে প্রবাহিত একটি সাময়িক বায়ুর নাম লেখো । 

Ans: মৌসুমি বায়ু ।

  1. ভারতে প্রবাহিত একটি স্থানীয় বায়ুর নাম লেখো ।

Ans: লু / আঁধি ।

  1. কোন্ বায়ুপ্রবাহকে স্থলবায়ু ও সমুদ্র বায়ুর বৃহৎ সংস্করণ বলা হয় ?

Ans: মৌসুমি বায়ুকে ।

সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর | ভারতের জলবায়ু (ভারত – পঞ্চম অধ্যায়) মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Geography Bharater Jalabayu Question and Answer : 

  1. আবহাওয়া ( Weather ) কাকে বলে ? 

Ans: কোনো নির্দিষ্ট স্থানের ও নির্দিষ্ট সময়ের বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা , আর্দ্রতা , বায়ুচাপ , বায়ুপ্রবাহ , মেঘের অবস্থা , বৃষ্টিপাত প্রভৃতির অবস্থাকে বোঝায় । আবহাওয়া সর্বদা পরিবর্তিত হয় ।

  1. জলবায়ু ( Climate ) কাকে বলে ? 

Ans: কোনো স্থানের বা কোনো একটি বড় অঞ্চলের প্রায় ৩০ থেকে ৪০ বছরের আবহাওয়ার গড়ো অবস্থাকে জলবায়ু বলে । কোনো অঞ্চলের জলবায়ু বছরের পর বছর প্রায় একইরকম থাকে ।

  1. আম্রবৃষ্টি বা Cherry Blossom কাকে বলে ? 

Ans: গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু , অন্ধ্রপ্রদেশ ও কর্ণাটক রাজ্যে ঘূর্ণিবায়ুর প্রভাবে বজ্রবিদ্যুৎসহ যে – বৃষ্টিপাত হয় , তাকে ‘ আম্রবৃষ্টি ’ বলে । এই বৃষ্টিপাতের প্রভাবে এই অঞ্চলে আমের ফলন ভালো হয় । এ ছাড়া এই বৃষ্টিপাতের ফলে কর্ণাটক রাজ্যে কফি চাষের সুবিধা হওয়ায় , একে চেরি ব্লসম ( Cherry Blosom ) বলে । 

  1. লু ( Loo ) কী ?

Ans: গরমকালে ( জ্যৈষ্ঠ মাসে ) উত্তর ভারতের রাজস্থান , পাঞ্জাব , হরিয়ানা , দিল্লি অংশে দিনের বেলায় অত্যধিক শুষ্ক ও উষ্ণবায়ু শোঁ শোঁ করে প্রচণ্ড বেগে প্রবাহিত হয় , তাকে লু ( Loo ) বলে । এর ফলে উষ্ণতা ৫০ ° সে . ছাড়িয়ে যায় । এই বায়ুর প্রচণ্ড উত্তাপের ফলে প্রতিবছর বহু মানুষ ও গবাদিপশু মারা যায় । 

  1. আঁধি ( Andhi ) কাকে বলে ?

Ans: রাজস্থান মরুভূমি অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে যে ধূলিঝড় হয় , স্থানীয় ভাষায় তাকে আঁধি বলে । এই ঝড়ে বৃষ্টি হয় না বলে প্রচুর ধুলো – বালি ওড়ে । তবে এই ঝড়ে উষ্ণতা কিছুটা কমে । 

  1. চরমভাবাপন্ন জলবায়ু ( Extreme Climate ) বলতে কা বোঝ ?

Ans: যে – ধরনের জলবায়ুতে শীতে বেশি শীত আর গরমে প্রচণ্ড গরম পড়ে , সেই জলবায়ুকে চরমভাবাপন্ন জলবায়ু বলে । সাধারণত দেশের অভ্যন্তরভাগে অর্থাৎ সমুদ্র থেকে দূরবর্তী স্থানে এই ধরনের জলবায়ু দেখা যায় । ভারতের দিল্লি , লখনউ , আম্বালা , রায়পুর প্রভৃতি শহরের মতো মধ্য ও উত্তর ভারতের স্থানগুলিতে চরমভাবাপন্ন জলবায়ু দেখা যায় ।

  1. সমভাবাপন্ন জলবায়ু ( Moderate Climate ) বলতে কী বোঝ ?

Ans: যে – ধরনের জলবায়ুতে শীত ও গ্রীষ্মকালের তাপমাত্রার পার্থক্য কম হয় , সেই ধরনের জলবায়ুকে সমভাবাপন্ন জলবায়ু বলে । এটি প্রধানত সমুদ্রতীরবর্তী স্থানে দেখতে পাওয়া যায় । এই অঞ্চলে খুব বেশি ঠান্ডা পড়ে না বা গরমও পড়ে না । ভারতের উপকূলবর্তী অঞ্চল যেমন — মুম্বাই , চেন্নাই , পুরী , বিশাখাপত্তনম প্রভৃতি অঞ্চলে এইরূপ জলবায়ু দেখা যায় ।

  1. মৌসুমি বায়ু কাকে বলে ?

Ans: মৌসুমি বায়ু হল এক ধরনের সাময়িক বায়ু যা ঋতুপরিবর্তনের সাথে সাথে পরস্পর বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয় । গ্রীষ্মকালে এই বায়ু সমুদ্র থেকে স্থলভাগের দিকে এবং শীতকালে স্থলভাগ থেকে সমুদ্রের দিকে বয়ে যায় । পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে এই বায়ু প্রবাহিত হলেও , দক্ষিণ – পূর্ব এশিয়া হল মৌসুমি বায়ুর প্রধান বিচরণক্ষেত্র । 

  1. পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চল কোথায় অবস্থিত ?

Ans: পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলটি হল চেরাপুঞ্জির নিকটবর্তী মৌসিনরাম , যা মেঘালয় রাজ্যের দক্ষিণভাগে অবস্থিত । এখানকার বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ( ১২৫০-১৪০০ সেমি ) । একে পৃথিবীর আর্দ্রতম স্থানও ( Wettest Place of the Planet ) বলা হয় ।

  1. দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ( South – West Monsoon ) বলতে কী বোঝ ?

Ans: গ্রীষ্মকালে অধিক উষ্ণতায় ভারতের উত্তর – পশ্চিম অংশে যে গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয় তার প্রভাবে দক্ষিণের সমুদ্রের উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে জলীয় বাষ্পপূর্ণ মৌসুমি বায়ু ভারতে প্রবেশ করে । ফেলের সূত্রানুসারে এই বায়ু ডান দিকে বেঁকে ভারতে প্রবেশ করে বলে একে দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বলে । সারা ভারতের ৮৫-৯০ ভাগ বৃষ্টি এই বায়ুর প্রভাবেই ঘটে । 

  1. উত্তর – পূর্ব মৌসুমি বায়ু ( North – East Monsoon ) বলতে কী বোঝ ?

Ans: সেপ্টেম্বর মাসের শেষ বা অক্টোবর মাসের শুরুতে ভারতের স্থলভাগের তুলনায় ভারত মহাসাগরের ওপর তাপমাত্রা বেশি থাকে । ফলে স্থলভাগের ওপর উচ্চচাপ এবং জলভাগের ওপর নিম্নচাপ অবস্থান করে । এই সময় এই বায়ু স্থলভাগ থেকে জলভাগের দিকে প্রবাহিত হয় । এই বায়ুতে জলীয় বাষ্প থাকে না তাই শুষ্ক । এই বায়ু উত্তর – পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হয় । তাই একে উত্তর – পূর্ব মৌসুমি বায়ু বলে । এই বায়ুর প্রভাবে করমণ্ডল উপকূলে বৃষ্টিপাত হয় । 

  1. মৌসুমি বিস্ফোরণ ( Burst of Monsoon ) কী ?

Ans: গ্রীষ্মকালের শেষের দিকে উত্তর – পশ্চিম ভারতে গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হলে আরব সাগর থেকে আসা জলীয় বাষ্পপূর্ণ আর্দ্র দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি বায়ু আকস্মিকভাবে পশ্চিম ভারতে প্রবেশ করে । জলীয় বাষ্পপূর্ণ এই বায়ুপ্রবাহ পশ্চিমঘাট পর্বতে বাধা পেয়ে দক্ষিণ – পশ্চিম ভারতের মালাবার উপকূলে হঠাৎ প্রবল বৃষ্টিপাতের মধ্য দিয়ে ভারতে বর্ষাকালের সুচনা করে , তাই একে মৌসুমি বিস্ফোরণ ( Burst of Monsoon ) বলা হয় ।

  1. শীতকালে ভারতের কোন কোন অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হয় । 

Ans: শীতকালে ভারতে বৃষ্টিপাত তেমন না – হলেও এই সময়ে : ( ১ ) প্রত্যাবর্তনকারী মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে তামিলনাড়ুর করমণ্ডল উপকূলে এবং ( ২ ) ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকে আগত পশ্চিমি ঝঞ্ঝার প্রভাবে জম্মু – কাশ্মীর , রাজস্থান , পাঞ্জাব , হরিয়ানা , উত্তরপ্রদেশ , উত্তরাখণ্ড , বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গের কোনো কোনো অঞ্চলে সামান্য বৃষ্টিপাত হয় । প্রশ্ন ১৪ ভারতে ভিন্ন ঋতুতে হয় , এমন দুটি ঝড়ের নাম লেখো । উত্তর : ভারতে ভিন্ন ঋতুতে হয় , এমন দুটি ঝড় হল ( ১ ) শরৎকালে আশ্বিনের ঝড় এবং ( ২ ) গ্রীষ্মকালে কালবৈশাখীর ঝড় ।

  1. বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল ( Rainshadow Area ) কাকে বলে ?

Ans: ভারতের অধিকাংশ বৃষ্টিপাত পাহাড়ে বাধা পেয়ে হয় । জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু | বৃষ্টিছায় অবস যখন পাহাড়ে বাধা পায় , তা কিছুটা উপরে উঠে শীতল হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায় । কিন্তু এই বায়ু যখন পাহাড়ের উলটোদিকের ঢালে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল পৌঁছোয় তখন সেখানে বৃষ্টিপাত কম হয় । বিপরীত পাশের পাহাড়ের এই ঢাল বা অনুবাত ঢাল অঞ্চলকে বৃষ্টিচ্ছায় অংশ বলা হয় । যেমন — ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্ব ঢাল এবং মেঘালয়ের গারো , খাসি , জয়ন্তিয়া পাহাড়ের উত্তর ঢাল হয় বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল ।

ব্যাখ্যামূলক উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর | ভারতের জলবায়ু (ভারত – পঞ্চম অধ্যায়) মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Geography Bharater Jalabayu Question and Answer : 

  1. কালবৈশাখী ( Nor Wester ) কী ?

Ans: পূর্ব ভারতে পশ্চিমবঙ্গ ও তার আশপাশে গ্রীষ্মকালের বিকেলে মাঝে মাঝে বজ্রবিদ্যুৎ ও বৃষ্টিপাতের সঙ্গে এক ভীষণ ঝড়ের আগমন ঘটে — এই ঝড় কালবৈশাখী নামে পরিচিত । উত্তর পশ্চিম দিক থেকে এই ঝড়ের আগমন ঘটে বলে এর ইংরেজি নাম ‘ নর ওয়েস্টার ‘ । কালবৈশাখীর বায়ুপ্রবাহ খুবই ঠান্ডা , তাই এই বায়ুর প্রভাবে গ্রীষ্মকালীন উষ্ণতা একলাফে অনেকটা নেমে যায় । গ্রীষ্মকালের শুরুতে পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমপ্রান্তে ছোটোনাগপুর মালভূমি । অঞ্চলে স্থানীয়ভাবে নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হলে , ওই নিম্নচাপযুক্ত অঞ্চল ভরাট করার জন্য উত্তরের শীতল বায়ু এবং দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ছুটে আসে । এই দুই বিপরীতধর্মী বায়ুপ্রবাহের সংঘর্ষের ফলে কালবৈশাখীর ঝড় – বৃষ্টি সৃষ্টি হয়ে থাকে ।

  1. আশ্বিনের ঝড় ( Storm of Aswin ) কী ?

Ans: শরৎকালে প্রত্যাবর্তনকারী শুষ্ক মৌসুমি বায়ুর সঙ্গে । সমুদ্রের অপেক্ষাকৃত উষ্ণতা – আর্দ্র বায়ুর সংঘর্ষে মাঝে মাঝে 7 

ঘূর্ণবাতের উৎপত্তি ঘটে । এই ঘূর্ণবাত অত্যন্ত গভীর হলে তা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয় । একেই বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে সাইক্লোন । বলা হয় । এই ঝড় স্থলভাগে আছড়ে পড়ে প্রবল ঝড় – বৃষ্টি ঘটায় । এই ঘূর্ণিঝড়ই পশ্চিমবঙ্গে সাইক্লোন নামে পরিচিত । 

  1. মৌসুমি বায়ুর আরব সাগরীয় শাখা কী ?

Ans: ভারতে মৌসুমি বায়ুর দুটি শাখার মধ্যে একটি হল আরব সাগরীয় শাখা । • আরব সাগর থেকে প্রচুর জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আরব সাগরীয় শাখা জুন মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই দক্ষিণ – পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয়ে পশ্চিম উপকূলের পশ্চিমঘাট পর্বতমালায় বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং এই পর্বত ও আরব সাগরের উপকূলের মধ্যবর্তী গোয়া ( কোঙ্কন উপকূল ) ও কেরলে মালাবার উপকূলে প্রবল শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ঘটায় ( গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত ২৫০ সেমি – এর বেশি ) । • এরপর পশ্চিমঘাট পর্বত অতিক্রম করে । এই বায়ুপ্রবাহ মধ্যপ্রদেশ ও দাক্ষিণাত্য মালভূমিতে প্রবেশ করে । কিন্তু পশ্চিমঘাট পর্বতের অপর দিকে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল অবস্থিত হওয়ায় জলীয় বাষ্পে ঘাটতি পড়ে বলে এইসব অঞ্চলে গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৫০ সেন্টিমিটারেরও কম । এই বায়ুপ্রবাহ যতই আরও পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে থাকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণও ততই কমতে থাকে । আরব সাগরীয় মৌসুমি বায়ুর উত্তর শাখা উত্তরে রাজস্থানের দিকে অগ্রসর হয় , এবং জলীয় বাষ্প অত্যন্ত কম থাকায় বৃষ্টি অত্যন্ত কম ( ২৫ সেমির কম ) ।

  1. মৌসুমি বায়ুর বঙ্গোপসাগরীয় শাখা কী ?

Ans: ভারতে মৌসুমি বায়ুর যে শাখা বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তা বঙ্গোপসাগরীয় শাখা । 1) দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর বঙ্গোপসাগরীয় শাখার প্রভাবে গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের বদ্বীপ সমভূমি অঞ্চল ও উত্তর – পূর্ব ভারতের পাহাড়ি রাজ্যগুলিতে প্রবল বৃষ্টিপাত হয় । 

উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে , দক্ষিণ – পূর্ব মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে খাসি পাহাড়ের দক্ষিণের বায়ুমুখী ঢালে অবস্থিত চেরাপুঞ্জি – মৌসিনরাম অঞ্চলে পৃথিবীর মধ্যে সর্বাধিক বৃষ্টিপাত হয় ( ১,২৫০-১,৪০০ সেমি ) , কিন্তু বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় এই পার্বত্য অঞ্চলের উত্তর ঢালে ( অনুবাত ঢালে ) অবস্থিত শিলং শহরে বৃষ্টিপাত হয় বছরে মাত্র ২৫০ সেমি । ও দক্ষিণ – পূর্ব মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ পূর্ব হিমালয়ে পৌঁছোনোর পর পশ্চিমমুখী হয়ে গাঙ্গেয় সমভূমির মধ্য দিয়ে যতই পাঞ্জাব ও রাজস্থানের নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয় , বৃষ্টিপাত ততই কমতে থাকে । উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে , দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের প্রভাবে নিম্ন গাঙ্গেয় সমভূমির কলকাতায় বছরে ২০০ সেমি মধ্য গাঙ্গেয় সমভূমির পাটনায় বছরে ১৫০ সেমি এবং উচ্চ গাঙ্গেয় সমভূমির হরিদ্বারে বছরে প্রায় ১০০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত হয় । এই বায়ু যখন রাজস্থানে পৌঁছোয় , জলীয় বাষ্পের অভাবে সেখানে বৃষ্টি কম হয় ।

  1. মৌসুমি বায়ুর অনিশ্চয়তা বলতে কী বোঝ ?

Ans: ভারতের ৯০ % বৃষ্টিপাত দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সংঘটিত হয় , কিন্তু মৌসুমি বৃষ্টিপাত খুবই অনিশ্চিত , কারণ ১ প্রতি বছর মৌসুমি বায়ু সমপরিমাণে জলীয় বাষ্প নিয়ে আসে না । আবার ও মৌসুমি বায়ুর আগমন ও প্রত্যাগমন প্রতি বছর একই সময়ে ঘটে না । এর ফলে কোনও বছর মৌসুমি বায়ুর দ্বারা কম জলীয় বাষ্প আমদানি ও এই বায়ুপ্রবাহ দেরিতে আসার ফলে ভারতে অনাবৃষ্টি বা খরা দেখা দেয় , আবার কোনো বছর অতিরিক্ত পরিমাণ জলীয় বাষ্প আমদানি এবং দেরিতে প্রত্যাগমনের ফলে ভারতে অতিবৃষ্টি ও বন্যার প্রাদুর্ভাব লক্ষ করা যায় ।

  1. এর মরুভূমির ভৌগোলিক অবস্থান এই অঞ্চলে মরুভূমি সৃষ্টি করতে সহায়তা করেছে কেন ?

Ans: থর মরুভূমির বিশেষ ভৌগোলিক অবস্থান এই অঞ্চলে মরুভূমি সৃষ্টি করতে সাহায্য করেছে , 

কারণ : ( আরব সাগর থেকে জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে দক্ষিণ – পশ্চিম বায়ুর | আরব সাগরীয় শাখা , পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটানোর পরে সৌরাষ্ট্র ও কচ্ছের উপকূল অতিক্রম করে মরু অঞ্চলের উপর দিয়ে যখন প্রবাহিত হয় , তখন এই বায়ুতে জলীয় বাষ্প বিশেষ থাকে না , তাই দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি | বায়ুর প্রভাবে এই অঞ্চলে নামমাত্র বৃষ্টিপাত হয় । বঙ্গোপসাগরীয় শাখা উত্তর ভারত অতিক্রম করে যখন এখানে পৌঁছোয় তখন জলীয় বাষ্প খুব কম থাকায় বৃষ্টি খুবই কম । এ ছাড়া , ২) মরুভূমি অঞ্চলে মৌসুমি বায়ুপ্রবাহকে বাধা দেওয়ার জন্য কোনো । উঁচু পর্বত না – থাকায় এবং এই অঞ্চলের একমাত্র পর্বত আরাবল্লি উত্তর – দক্ষিণে প্রসারিত হওয়ায় এই অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাত হয় খুবই কম ( বছরে ১৫ সেন্টিমিটারেরও কম ) । কোনো কোনো বছর থর মরুভূমিতে বৃষ্টিপাত একেবারেই হয় না । এত কম বৃষ্টিপাতের ফলেই ভারতের পশ্চিমপ্রান্তে থর মরুভূমির সৃষ্টি হয়েছে ।

  1. মেঘালয় রাজ্যের এইরূপ নামকরণের কারণ ।

Ans: মেঘালয় কথার অর্থ ‘ মেঘের আলয় ’ বা ‘ মেঘের দেশ ‘ । মেঘালয় রাজ্যের বিশেষ ভৌগোলিক ও জলবায়ুগত অবস্থানের জন্য বঙ্গোপসাগর থেকে আগত জলীয় বাষ্পপূর্ণ আর্দ্র বায়ু বাংলাদেশের সুরমা উপত্যকা পার হয়ে মেঘালয় রাজ্যের গারো , খাসি , জয়ন্তিয়া পাহাড়ের খাড়া ঢালে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে হঠাৎ অনেক উঁচুতে উঠে যায় এবং ঘনীভূত হয়ে সেখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায় । পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিবহুল স্থান এখানেই অবস্থিত । প্রবল বৃষ্টি ও আকাশ মেঘে ঢাকা থাকে বলে এই রাজ্যের নামকরণ হয় মেঘালয় ।

  1. ভারত মৌসুমি বায়ুর প্রধান বিচরণক্ষেত্র ( Play Field ) অথবা , ভারত মৌসুমি জলবায়ুর দেশ — ব্যাখ্যা করো ।

Ans: গ্রীষ্মকালীন দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এবং শীতকালীন উত্তর – পূর্ব মৌসুমি বায়ু , — ঋতুপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই দুই বায়ুপ্রবাহের দিকও পরিবর্তন হয় । মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতে প্রায় ৯০ % বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে । ভারতের স্বাভাবিক বনভূমি , কৃষি ও কৃষিজাত ( যেমন — পাট , চিনি , চা , কফি প্রভৃতি ) শিল্পই শুধু নয় , এদেশের অধিবাসীদের খাদ্য , বাসস্থান এবং জীবিকাও মৌসুমি বায়ুর গতিপ্রকৃতির ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল । এ ছাড়া শীতকালীন মৌসুমি বায়ু উত্তর – পূর্ব দিক থেকে স্থলভাগের উপর দিয়ে বয়ে আসে বলে ওই বায়ুতে জলীয় বাষ্প থাকে । না , ফলে এই বায়ুর প্রভাবে শীতকালে ভারতে বৃষ্টি হয় না । মৌসুমি জলবায়ুর দ্বারা প্রভাবিত ভারতকে ‘ মৌসুমি জলবায়ুর দেশ ‘ বলা হয় । বা বলা যায় যে , ভারত হল মৌসুমি বায়ুর প্রধান বিচরণক্ষেত্র ।

  1. ভারত গ্রীষ্মপ্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও কাশ্মীর , দার্জিলিং প্রভৃতি স্থানের জলবায়ু শীতল ।

Ans: আমরা জানি উচ্চতা বৃদ্ধিতে উষ্ণতা হ্রাস পায় । কাশ্মীর , দার্জিলিং প্রভৃতি স্থানগুলি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেকটা উঁচুতে অবস্থিত বলেই সারাবছর উষ্ণতা এখানে কম । তাই গ্রীষ্মপ্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও কাশ্মীর , দার্জিলিং – এর জলবায়ু শীতল । 

  1. করমণ্ডল উপকূলে শীতকালে বৃষ্টিপাত হয় । অথবা , তামিলনাড়ুর দক্ষিণ – পূর্ব অঞ্চলে বছরে ২ বার বৃষ্টিপাত হয় । অথবা , তামিলনাড়ু বা করমণ্ডল উপকূলে বছরে ২ বার বৃষ্টিপাত হয় — এর কারণ ব্যাখ্যা করো ।

Ans: বর্ষাকালে দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এখানে বৃষ্টি পাত হয় । ও শরৎ ও শীতকালে উত্তরপূর্ব শুষ্ক মৌসুমি বায়ু বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে এবং ফেরেল সূত্রানুসারে ডানদিকে বেঁকে করমণ্ডল উপকূলে প্রবেশ করে — পূর্বঘাটে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায় । তাই করমণ্ডল উপকূলে দু – বার বর্ষাকাল দেখা যায় ।

  1. ভারতের দাক্ষিণাত্য মালভূমির অভ্যন্তরভাগে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল গড়ে উঠেছে — কারণ ব্যাখ্যা করো ।

Ans: গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আরব সাগরীয় শাখাটি আরব সাগরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় প্রচুর জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে নিয়ে এসে পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং এই পর্বতের পশ্চিম ঢালে প্রবল শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ঘটায় ( বছরে ৩৫০ – ৫০০ সেমি ) । 

 পশ্চিমঘাট পর্বত অতিক্রম করার পর এই বায়ুপ্রবাহ ( মৌসুমি বায়ুর আরব সাগরীয় শাখা ) যখন দাক্ষিণাত্য মালভূমিতে প্রবেশ করে তখন এতে জলীয় বাষ্প বিশেষ থাকে না বলে এই বায়ুপ্রবাহের প্রভাবে দাক্ষিণাত্য মালভূমিতে খুবই কম বৃষ্টিপাত ( বছরে ৩০–৬০ সেমি মাত্র ) হয় । এই কারণে পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্বাংশে বিশেষত দাক্ষিণাত্য মালভূমির অভ্যন্তরভাগে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল গড়ে উঠেছে ।

  1. পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিমঢালে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ঘটে — কেন ?

Ans: আরব সাগর থেকে প্রচুর জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আরব সাগরীয় শাখা জুন মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই দক্ষিণ – পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয়ে পশ্চিম উপকূলের পশ্চিমঘাট পর্বতমালায় বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং আরও উপরে উঠে যেতে থাকে । বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরের প্রবল শৈত্যের সংস্পর্শে এসে ওই জলীয় বাষ্পপূর্ণ আর্দ্র বায়ু শীতল ও ঘনীভূত হয়ে পশ্চিমঘাট পর্বতের বায়ুমুখী ঢালে অবস্থিত ভারতের কোঙ্কন উপকূল এবং মালাবার উপকূলে প্রবল শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ঘটায় ( এই অঞ্চলে গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২৫০ সেমির বেশি ) ।

  1. মরু অঞ্চলে শীত ও গ্রীষ্মের উষ্ণতার পার্থক্য বেশি কেন ?

Ans: ( মরু অঞ্চলের ভূমিতে বালুকণার পরিমাণ বেশি থাকে । এ ছাড়া এই বালুকণার মধ্যে কোয়ার্টজ নামক খনিজ থাকে । এরা তাপ ধরে রাখতে পারে না , ফলে এগুলি সবই দ্রুত উত্তপ্ত হয় এবং দ্রুত শীতল হয় , এর ফলে মরু অঞ্চলের উত্তাপের চরমভাব লক্ষ করা যায় । মরু অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই কম হওয়ার ফলে এখানে চরমভাবাপন্ন জলবায়ু দেখা যায় । মরু অঞ্চলের বালুকাময় মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতা নেই বললেই চলে , এই কারণে স্বাভাবিকভাবেই উত্তাপ যথেষ্ট বৃদ্ধি পায় , আবার যথেষ্ট হ্রাসও পায় । এই সমস্ত কারণে মরু অঞ্চলে শীত ও গ্রীষ্মের উষ্ণতার পার্থক্য বেশি ।

  1. শীতকালে ও শরৎকালে বঙ্গোপসাগরে অসংখ্য ঘূর্ণবাতের উৎপত্তি ঘটে — কেন ?

Ans: শীতকালে ও শরৎকালে ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে মৌসুমি বায়ু প্রত্যাগমন করে । এই প্রত্যাগমনকারী মৌসুমি বায়ু শুষ্ক ও আর্দ্রতাহীন হয় । তবে যেহেতু এই সময় নিকটবর্তী সমুদ্র উঘ্ন থাকে , সেহেতু উষ্ণ আর্দ্র সামুদ্রিক বায়ুর সাথে শুষ্ক বায়ুর সংঘর্ষে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে ঘূর্ণবাতের উৎপত্তি ঘটে তাই এই দুই সাগরে এই সময় গড়ে ৩ / ৪ টি ঘূর্ণবাত দেখা যায় । এই সামুদ্রিক ঘূর্ণবাতের ফলে সমুদ্র উপকূল ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে মাঝে মাঝে বজ্রবিদ্যুৎসহ প্রবল ঝড় – বৃষ্টি হয় ।

  1. থর মরুভূমির জলবায়ু চরম প্রকৃতির । অথবা , রাজস্থানের মরু অঞ্চলে তাপমাত্রার প্রসার বেশি হয় কেন ?

Ans: মরু অঞ্চলের ভূমিতে বালুকণার পরিমাণ বেশি থাকে । এ ছাড়া এই বালুকণার মধ্যে কোয়ার্টজ নামক খনিজ থাকে । এরা তাপ ধরে রাখতে পারে না । ফলে এগুলি সবই দ্রুত উত্তপ্ত হয় এবং দ্রুত শীতলও হয়ে যায় । মরু অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই কম হওয়ার ফলে এখানে চরমভাবাপন্ন জলবায়ু দেখা যায় । এ ছাড়া মরু অঞ্চলের বালুকাময় মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতা নেই বললেই চলে । তাই স্বাভাবিক কারণেই উত্তাপ যথেষ্ট বৃদ্ধি পায় , আবার যথেষ্ট হ্রাসও পায় । এই কারণে রাজস্থানের মরু অঞ্চলে তাপমাত্রার প্রসর বেশি অথবা শীত ও গ্রীষ্মের উষ্ণতার পার্থক্য বেশি ।

  1. সমুদ্রের ধারে আবহাওয়া আরামদায়ক হয় । অথবা , সমুদ্র থেকে দূরত্ব বাড়লে জলবায়ু চরমভাবে বৃদ্ধি পায় কেন ?

Ans: দক্ষিণ ভারতের তিনদিক জুড়ে রয়েছে আরব সাগর , ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগর । সমুদ্রের কাছাকাছি হওয়ায় ভারতের উপকূল অঞ্চলের জলবায়ু সমভাবাপন্ন ও বেশ আরামদায়ক হয় । জল ও স্থলভাগে দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্যের জন্য যথাক্রমে সমুদ্র বায়ু ও স্থলবায়ু প্রবাহিত হয় । ফলে জলবায়ুর চরমভাব থাকে না । কিন্তু সমুদ্র থেকে দূরত্ব বাড়লে জলবায়ুর চরমভাব বাড়তে থাকে ।

রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর | ভারতের জলবায়ু (ভারত – পঞ্চম অধ্যায়) মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Geography Bharater Jalabayu Question and Answer : 

1. ভারতের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো ।

Ans: 1. মৌসুমি বায়ুর অত্যধিক প্রভাব : ভারতের জলবায়ুতে ঋতুপরিবর্তন হয় প্রধানত দুটি বিপরীতধর্মী মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে । যথা — একটি হল গ্রীষ্মকালীন দক্ষিণ – পশ্চিম আৰ্দ্ৰ মৌসুমি বায়ু এবং অপরটি হলো উত্তর – পূর্ব শুষ্ক মৌসুমি বায়ু । তাই ভারতকে ‘ মৌসুমি জলবায়ুর দেশ বলা হয় ।

  1. ঋতুপরিবর্তন : ভারতের জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য হল ঋতুপরিবর্তন । এখানে প্রধানত শীতকাল , গ্রীষ্মকাল , বর্ষাকাল এবং শরৎকাল — এই চারটি ঋতু দেখতে পাওয়া যায় । ত তাপমাত্রার বৈচিত্র্য বছরে বিভিন্ন সময়ে ভারতে তাপমাত্রা বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে । গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকে এবং শীতকালে তাপমাত্রা অনেক কম থাকে । আবার স্থান বিশেষেও তাপমাত্রার পরিবর্তন হয় । যেমন — উত্তর ভারতের জলবায়ু দক্ষিণ ভারতের জলবায়ুর তুলনায় অনেক বেশি চরমভাবাপন্ন । অর্থাৎ উত্তর ভারতের শীত ও গ্রীষ্ম দুই – ই খুব তীব্র । বেশি উচ্চতা এবং উচ্চ অক্ষাংশের জন্যও পার্বত্য অঞ্চলে তাপমাত্রা কম থাকে । 
  2. বৃষ্টিপাতের তারতম্য : ভারতের মোট বৃষ্টিপাতের ৮৪ % গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে , ১৩ % শরৎকালে এবং ৩ % শীতকালে সংঘটিত হয় । দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতে শীতকালে প্রায় শুকনো ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে শীতকালে উত্তর – পশ্চিম ভারতের পার্বত্য অঞ্চলে তুষারপাত এবং সমভূমিতে বেশি বৃষ্টিপাত হয় । 
  3. বৃষ্টিপাতের আঞ্চলিক বণ্টন : ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের বণ্টন বিভিন্ন । ভারতের পশ্চিম উপকূলের উত্তরাংশ আন্দামান – নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ , অসম , মিজোরাম , উত্তরবঙ্গ ও পূর্ব হিমালয়ের তরাই অঞ্চলের বার্ষিক বৃষ্টিপাত ২৫০ সেমি – এর বেশি , তাই এদের অত্যধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চল বলে । আবার রাজস্থানের মরু অঞ্চল , জম্মু ও কাশ্মীরের লাডাক ও উত্তর পশ্চিমের কারাকোরাম অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২০ সেমি – এর কম বলে একে শুষ্ক অঞ্চল বলে । 
  4. অনিয়মিত মৌসুমি বৃষ্টিপাত : মৌসুমি বৃষ্টিপাত অত্যন্ত অনিয়মিত । কারণ প্রতিবছর মৌসুমি বায়ু সমপরিমাণ জলীয় বাষ্প আনে না । এর ফলে কোনো বছর কম জলীয় বাষ্পের জন্য ভারতে অনাবৃষ্টি বা খরা দেখা যায় , আবার কোনা বছর বেশি জলীয় বাষ্প আমদানির ফলে অতিবৃষ্টি বা বন্যা দেখা যায় ।
  5. স্থানীয় বায়ুপ্রবাহের সক্রিয়তা : গ্রীষ্মকালে দেশের বহু অঞ্চলে স্থানীয় বায়ুর প্রভাবে কিছু ঝড় বৃষ্টিপাত হয় ।
  6. হিমালয় পর্বতের প্রভাব : ভারতের উত্তরে বিশাল হিমালয় পর্বতের অবস্থান ভারতীয় উপমহাদেশকে মধ্য এশিয়ার হাড় কাঁপানো শীতের হাত থেকে রক্ষা করেছে । হিমালয় পর্বত না থাকলে ভারতেও রাশিয়া ও চিনের মতো তীব্র শীতের প্রাবল্য দেখা যেত । আবার সমুদ্র থেকে আগত জলীয় বাষ্পপূর্ণ দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু হিমালয় পর্বতের দক্ষিণ ঢালে বাধা পেয়ে উত্তর ও মধ্য ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায় । 

2. ভারতের জলবায়ুর নিয়ন্ত্রকসমূহের ব্যাখ্যা দাও ।

Ans: যেসব উপাদান ভারতের জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করে । সেগুলি হল অক্ষাংশগত অবস্থান ভারত এশিয়া মহাদেশে অবস্থিত এবং উত্তরে ৩৭ ° ৬ উত্তর অক্ষাংশ থেকে দক্ষিণে ৮ ° ৪ ° উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত । এ ছাড়া কর্কটক্রান্তি রেখা ( ২৩ ° ৩০ ′ উত্তর অক্ষাংশ ) ভারতের প্রায় মধ্যভাগ দিয়ে গেছে , ফলে অক্ষাংশ অনুসারে ভারতের উত্তরাংশ নাতিশীতোয় মণ্ডলে এবং ভারতের দক্ষিণাংশ উষ্ণুমণ্ডলে অবস্থিত ।

 [ ২ ] উচ্চতা : সাধারণত সমুদ্র সমতল থেকে কোনো স্থানের প্রতি কিলোমিটার উচ্চতা বৃদ্ধিতে ৬.৪ ° সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমে যায় । তাই গাঙ্গেয় সমভূমির তুলনায় সুউচ্চ হিমালয় অঞ্চলের গড় তাপমাত্রা সারাবছর অনেক কম থাকে । যেমন — উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে ( লাহুল স্পিতি উপত্যকা , কেদার – বদ্রী , রোটাং পাস ইত্যাদি ) তাপমাত্রা সারাবছরই ১০ ° C- এর নীচে থাকে । 

  1. পর্বতের ভূমিকা : হিমালয় পর্বত ভারতের উষ্ণতাকে নিয়ন্ত্রণ করে , বায়ুপ্রবাহকে বাধা দেয় এবং বৃষ্টিপাত ঘটাতে সাহায্য করে । হিমালয় পর্বতের অবস্থান ভারতীয় উপমহাদেশকে মধ্য এশিয়ার হাড়কাঁপানো শীতের হাত থেকে রক্ষা করেছে । মৌসুমি বায়ু হিমালয়ের দক্ষিণ ঢালে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটায় । আরব সাগরের উপর দিয়ে আসা মৌসুমি বায়ু পশ্চিমঘাট পর্বতে বাধা পেয়ে পশ্চিম ঢালে প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটায় , কিন্তু পূর্ব ঢাল ষ্টচ্ছায় অঞ্চল । 
  2. সমুদ্রের অবস্থান ও সমুদ্র থেকে দূরত্ব : দক্ষিণ ভারতের তিন দিক সমুদ্রবেষ্টিত হওয়ায় উপকূলের জলবায়ু হল সমভাবাপন্ন । সামুদ্রিক ঘূর্ণবাতের প্রভাবে সমুদ্র উপকূলে প্রবল বৃষ্টিপাত হয় । উত্তর ও উত্তর – পশ্চিম ভারত সমুদ্র থেকে অনেক দূরে অবস্থিত হওয়ায় সামুদ্রিক বায়ুর প্রভাব কম । এই জলবায়ু হল চরমভাবাপন্ন । এখানে শীত ও গ্রীষ্মের উষ্ণতার প্রসর খুব বেশি । 
  3. মৌসুমি বায়ুর প্রভাব মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতীয় জলবায়ু নিম্নলিখিত গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি দেখা যায় । যথা — ভারতে গ্রীষ্মকাল আর্দ্র ও শীতকাল শুকনো হয় । শীতকালে মৌসুমি বায়ু যে দিক থেকে প্রবাহিত হয় গ্রীষ্মকালে ঠিক তার বিপরীত দিক থেকে । প্রবাহিত হয় । ভারতে বৃষ্টিপাত একটানা না হয়ে মাঝে মাঝে বৃষ্টিপাত বিরতি ঘটে । মৌসুমি বৃষ্টিপাতের চরম অনিশ্চয়তার জন্য কোনো বছর অনাবৃষ্টি ও খরা এবং কোনো বছর অতিবৃষ্টি ও বন্যা দেখা যায় । 

জেট বায়ুর প্রভাব : ভারতের আবহাওয়া ও জলবায়ুর ওপর জেট বায়ুর প্রভাব তাৎপর্যপূর্ণ । দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি বায়ু যখন ভারতে প্রবেশ করে তার আগেই পশ্চিমা জেট বায়ু ( Westerly Jet ) উত্তর দিকে সরে যায় । তবে এই সময় ভারতের ওপর জেট বায়ু ( Easterly Jet ) থাকে তার অবস্থানের । কোনো কোনো স্থানে বৃষ্টিপাত – এর নিবিড়তা ও স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পায় ।

  1. ঘূর্ণবাত মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাবর্তনকাজে | বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণবাতের প্রভাবে উপকূলের রাজ্যগুলিতে প্রবল বৃষ্টি ও ঝড় – বৃষ্টি হয় । এটি সাইক্লোন নামে পরিচিত । 
  2. পশ্চিমি ঝ t ( Western Disturbances ) : শীতকা ভূমধ্যসাগর থেকে আগত দুর্বল ঘূর্ণবাতের প্রভাবে ভারতের উত্তর – পশ্চিম অঞ্চলে ( পাঞ্জাব , হরিয়ানা , রাজস্থান , জম্মু ও কাশ্মীর মাঝে মাঝে হালকা বৃষ্টিপাত এবং পার্বত্য অঞ্চলে তুষারপাত হয় । ইহাই ‘ পশ্চিমি ঝঞ্ঝা ‘ নামে পরিচিত । এই ঘূর্ণবাতের প্রভাবে মারে মাঝে পশ্চিমবঙ্গেও বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে ।
  3. এল নিনো ও লা নিনার প্রভাব প্রশান্ত মহাসাগরের উভয়পাশে জলবায়ুগত অস্থির অবস্থা হল এল নিনো ও ল নিনা । এল নিনো বছরে আমাদের দেশে মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়ায় কম বলে কম বৃষ্টিতে খরা এবং লা নিনা বছরে মৌসুমি বায়ুর অতি সক্রিয়তায় প্রবল বৃষ্টিতে বন্যা দেখা দেয় ।
  4. মৃত্তিকা : প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মৃত্তিকা ভারতের জলবায়ুকে বিভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রণ করে । শুকনো বালি ও পাথুরে জমি সূর্যকিরণে সহজেই উত্তপ্ত হয় বলে উষ্ণতা বেশি । আবার রাতে দ্রুত তাপ বিকিরণ করে সহজেই শীতল হয়ে যায় । এই কারণেই মুক্তিকার প্রভাবে উষ্ণতার পরিবর্তন হয়ে থাকে ।

3. ভারতের জলবায়ু ও জনজীবনে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব । 

Ans: ভারতের জলবায়ুতে মৌসুমি বায়ুর বিরাট প্রভাব লক্ষ করা যায় । তাই ভারতকে ‘ মৌসুমি জলবায়ুর দেশ বলা হয় । ভারতের জলবায়ু ও জনজীবনে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবগুলি হল— জলবায়ুর ওপর প্রভাব : 

( বৃষ্টিপাত : ভারতের অধিকাংশ বৃষ্টিপাত মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ঘটে থাকে । ভারতের বর্ষাকাল মৌসুমি বায়ুর আগমন , বিচরণ ও গতিপ্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল । ঋতুবৈচিত্র্য : মৌসুমি বায়ুর দিক পরিবর্তনের সাথে সাথে ভারতের ঋতুপরিবর্তন হয়ে থাকে , যথা — শীত , গ্রীষ্ম , বর্ষা ও শরৎ । বৃষ্টিপাতের অসম বণ্টন : ভারতে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের বণ্টন সর্বত্র সমান নয় । 

বৃষ্টিপাতের ছেদ ( Break of Monsoon ) : মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে একটানা বৃষ্টিপাতের মাঝে মাঝে বৃষ্টিপাতের ছেদ ঘটে । ৫ আর্দ্র গ্রীষ্মকাল ও শুষ্ক শীতকাল : জলীয় বাষ্পপূর্ণ দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে গ্রীষ্মকাল হল আর্দ্র ও জলীয় বাষ্পহীন উত্তর – পূর্ব মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে শীতকাল হল শুষ্ক । বায়ুপ্রবাহ : গ্রীষ্মকালে সমুদ্র থেকে স্থলভাগের দিকে মৌসুমি বায়ুর প্রবাহ দেখা যায় ( সমুদ্রবায়ু ) এবং শীতকালে স্থলভাগ থেকে সমুদ্রের দিকে মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ দেখা যায় ( স্থলবায়ু ) । 

উষ্ণতা : মৌসুমি বায়ুর আগমনে আকাশ মেঘে ঢেকে যায় ও বৃষ্টি হয় বলে ভারতের গড় উষ্ণতা ৫ ° -১০ ° C কমে যায় । আবার শরৎকালে মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাগমনে আকাশ মেঘমুক্ত হয় বলে গড় উষ্ণতা কিছুটা বেড়ে যায় । 

ঘূর্ণবাতের উৎপত্তি শরৎকালের প্রত্যাগমনকারী মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে যেসকল ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয় , তার প্রভাবে পূর্ব উপকূল বরাবর মাঝে মাঝে প্রবল ঝড় – বৃষ্টি হয় । জনজীবনে প্রভাব : ( কৃষিকাজের ওপর প্রভাব ভারতের কৃষিকাজ মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভরশীল ( বিশেষত খারিফ শস্য ) । 

কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপন ভারতে কৃষিভিত্তিক শিল্প ( বস্ত্র শিল্প , চিনি শিল্প , পাট শিল্প ) স্থাপনেও মৌসুমি বায়ুর পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে । 

 অরণ্যসম্পদ সৃষ্টি মৌসুমি বায়ুজনিত বৃষ্টিপাতের তারতম্য ভারতের হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল ও পশ্চিমঘাট পার্বত্য অঞ্চলে প্রচুর অরণ্যসম্পদ সৃষ্টি করেছে । 

মৃত্তিকার ওপর প্রভাব : মৃত্তিকা সৃষ্টি , মৃত্তিকার গঠন ইত্যাদি নানান বিষয় নির্ভর করে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ওপর ।

 অর্থনৈতিক বিকাশ ভারতের অর্থনৈতিক বিকাশসাধনে মৌসুমি বায়ু প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সাহায্য করে । ও জীবনযাত্রা : ভারতের বেশিরভাগ মানুষের খাদ্যাভ্যাস , জীবিকা , পোশাক , বাসস্থান মৌসুমি বায়ু দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় ।

 জীবন ও সম্পত্তিহানি : মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে মাঝে মাঝে যে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয় , তা অনেক সময় জীবন ও সম্পত্তির বিনাশ ঘটায় ।

 খরা ও বন্যার প্রভাব মৌসুমি বায়ুর খামখেয়ালিপনার কারণে এখানে মাসে মাসে স্বল্পবৃষ্টিতে খরা ও প্রবল বৃষ্টিতে বন্যা দেখা দেয় । খরা ও বন্যা উভয়ই জনজীবন ও অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলে ।

4. ভারতের মৃত্তিকা , স্বাভাবিক উদ্ভিদ ও কৃষিকাজের ওপর মৌসুমি বৃষ্টিপাতের প্রভাব উল্লেখ করো । 

Ans; গ্রীষ্মকালে উত্তর – পশ্চিম ভারতে গভীর নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ায় দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ভারতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় । এর প্রভাবে ভারতের অধিকাংশ বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয় । মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতে গ্রীষ্মকাল আর্দ্র ও শীতকাল প্রায় শুষ্ক থাকে । ভারতের প্রায় ৯০ % বৃষ্টিপাত মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে হয়ে থাকলেও মৌসুমি বৃষ্টিপাত ভারতে অত্যন্ত অনিশ্চিত । মৌসুমি বায়ুর এই খামখেয়ালিপনার জন্যই ভারতে কোনো বছর খরা ও কোনো বছর বন্যার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় । মৌসুমি বৃষ্টিপাত ভারতের মৃত্তিকা , স্বাভাবিক উদ্ভিদ ও কৃষিকাজের ওপর প্রভাব বিস্তার করে । নিম্নে এই সম্পর্কে আলোচনা করা হল –

মৃত্তিকার ওপর প্রভাব মৃত্তিকার উৎপত্তি , আর্দ্রতা , শুষ্কতা , মৃত্তিকা ক্ষয় , ভূমিধস ইত্যাদির ওপর মৌসুমি বৃষ্টির প্রভাব ফেলে । বৃষ্টির পরিমাণের তারতম্য ঘটে । যেসব অঞ্চলে বেশি বৃষ্টিপাত হয় সেখানে ধৌত প্রক্রিয়াও বেশি হয় ও মাটি বেশি উর্বর হয় । আবার যেসব অঞ্চলে স্বল্প বৃষ্টিপাত হয় সেখানে জলসেচের মাধ্যমে কৃষিকাজ করা হয় ও মাটির লবণতা বৃদ্ধি পায় । মৃত্তিকার উৎপত্তির ক্ষেত্রে দেখা যায় যে , অধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত । অঞ্চলে প্রধান শিলাস্তর থেকে এলুভিয়েশান প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি হয় । ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা আবার স্বল্প বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে লাভা শিলা থেকে রেগুর মৃত্তিকা সৃষ্টি হয় । অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে অনাবৃত ভূমিতে মৃত্তিকা ক্ষয় বাড়ে ।

 বাভাবিক উদ্ভিদের ওপর প্রভাব : ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলে স্বাভাবিক উদ্ভিদের প্রকৃতি বিশেষভাবে নির্ভর করে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও বণ্টনের ওপর । যে সব অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২০০ সেমির বেশি , সেখানে চিরহরিৎ উদ্ভিদ দেখা যায় ।

 যেমন — পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশে , পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে এই অরণ্য দেখা যায় । ভারতে শীতকাল শুষ্ক বলে এখানে পর্ণমোচী বৃক্ষের বনভূমি সবচেয়ে বেশি দেখা যায় , যেখানে বৃষ্টিপাত ৫০-১০০ সেমি সেখানে শুষ্ক পর্ণমোচী বৃক্ষের অরণ্য দেখা যায় । নদী মোহানাগুলিতে লবণাক্ত জলের সবুজ ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ জন্মায় , যেমন— সুন্দরবন । শুষ্ক জলবায়ুর সীমানার দিকে ৫০ সেমির কম বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে হালকা জঙ্গল , কাঁটা ঝোপঝাড় ও সাভানা তৃণভূমি জন্মায় । যেমন — গুজরাটের পশ্চিমাংশ , রাজস্থানের মরুভূমি ইত্যাদি । 

কৃষিকাজের ওপর প্রভাব : ভারতের কৃষিকাজ সম্পূর্ণরূপে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভরশীল । মৌসুমি বৃষ্টিপাতের পরিমাণ , বণ্টন এবং তার আগমন ও প্রত্যাগমনের ওপর ভিত্তি করে ভারতে শস্য ক্যালেন্ডার তৈরি হয় । খরিফ শস্যের চাষ হয় মৌসুমি বৃষ্টিপাত দ্বারা প্রভাবিত অধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে । আবার কম বৃষ্টিপাতযুক্ত সময়ে জলসেচের মাধ্যমে রবি শস্যের চাষ হয় । এমনকি বাগিচা ফসল , তফসল চাষও বৃষ্টিপাত ও উষ্ণতার ভূমিকা অপরিসীম ।

=========================================

ভারতের জলবায়ু (ভারত – পঞ্চম অধ্যায়)

অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | ভারতের জলবায়ু (ভারত – পঞ্চম অধ্যায়) – মাধ্যমিক ভূগোল সাজেশন | Bharater Jalabayu – Madhyamik Geography Suggestion : 

  1. গ্রীষ্মকালে ভারতের গড় তাপমাত্রা কত হয় ?

Answer: ৩০ ° – ৩৫ ° C।

  1. ভারতে গ্রীষ্মকালের প্রধান বৈশিষ্ট্য কী ?

Answer: অধিক উষ্ণতা এবং স্বল্প আর্দ্রতা ।

  1. আঁধি প্রধানত কোন্ রাজ্যে দেখতে পাওয়া যায় ?

Answer: রাজস্থান ।

  1. গ্রীষ্মকালীন ঝড় – বৃষ্টিপাত অসমে কী নামে পরিচিত ?  

Answer: বরদৈছিলা ।

  1. ভারতে বর্ষাকালের প্রধান বৈশিষ্ট্য কী ?

Answer: অধিক উষ্ণতা ও আর্দ্রতা এবং ক্রমাগত বৃষ্টি ।

  1. ভারতে মৌসুমি বায়ুর শাখাদুটির নাম লেখো । 

Answer: আরব সাগরীয় শাখা এবং ২. বঙ্গোপসাগরীয় শাখা । 

  1. শীতকালে তুষারপাত হয় ভারতের এমন দুটি রাজ্যের নাম লেখো ।

Answer: জম্মু ও কাশ্মীর / হিমাচল প্রদেশ / উত্তরাখণ্ড / সিনি 1 পশ্চিমবঙ্গ ( দার্জিলিং ) ।

  1. মৌসুমি বিস্ফোরণ প্রধানত কোন সময়ে দেখা যায় ? 

Answer: গ্রীষ্মকালের শেষের দিকে , বিশেষত জুন মাসে ।

  1. ভারতে প্রবাহিত একটি সাময়িক বায়ুর নাম লেখো । 

Answer: মৌসুমি বায়ু ।

  1. ভারতে প্রবাহিত একটি স্থানীয় বায়ুর নাম লেখো ।

Answer: লু / আঁধি ।

  1. কোন্ বায়ুপ্রবাহকে স্থলবায়ু ও সমুদ্র বায়ুর বৃহৎ সংস্করণ বলা হয় ?

Answer: মৌসুমি বায়ুকে ।

  1. কোনো স্থানের অনেক দিনের আবহাওয়ার গড়কে কী বলা হয় ?

Answer: জলবায়ু ।

  1. উত্তর – পশ্চিম ভারতের জলবায়ুর প্রকৃতি কী রকম ?

Answer: চরমভাবাপন্ন ।

  1. দক্ষিণ ভারতের উপকূলের জলবায়ুর প্রকৃতি কী রকম ? 

Answer: সমভাবাপন্ন ।

  1. উত্তর ভারতের তাপমাত্রা কোন সময়ে সর্বোচ্চ হয় ?

Answer: গ্রীষ্মকালের মে মাসে ।

  1. কোন্ বায়ুর প্রভাবে ভারতে সর্বাধিক বৃষ্টিপাত হয় ?

Answer: দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ।

  1. কোন্ বায়ুর প্রভাবে ভারতে শীতকাল শুষ্ক হয় ?

Answer: উত্তর – পূর্ব মৌসুমি বায়ু ।

  1. কী কারণে শীতকালে উত্তর – পশ্চিম ভারতে বৃষ্টিপাত হয় ?

Answer: নাতিশীতোয় , ভূমধ্যসাগরীয় ঘূর্ণবাত ।

  1. প্রধানত কী কারণে ভারতে খরা বা বন্যার প্রাদুর্ভাব দেখা যায় ?

Answer: অনিয়মিত মৌসুমি বৃষ্টিপাতের জন্য । 

  1. কোন্ পর্বতশ্রেণি ভারতের জলবায়ুকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে ?

Answer: হিমালয় পর্বতশ্রেণি ।

MCQ | ভারতের জলবায়ু (ভারত – পঞ্চম অধ্যায়) – মাধ্যমিক ভূগোল সাজেশন | Bharater Jalabayu – Madhyamik Geography Suggestion :

  1. ভারতে আঁধি দেখা যায় কোন রাজ্যে ?(A) পশ্চিমবঙ্গ ।(B) কেরল(C) জম্মু ও কাশ্মীর(D) রাজস্থান

Answer: (D) রাজস্থান

  1. সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ভূমির উচ্চতা বাড়ার সাথে সাথে উষ্ণতা – (A) কমতে থাকে (B) বাড়তে থাকে(C) অপরিবর্তিত থাকে(D) দ্বিগুণ বাড়তে থাকে

Answer: (A) কমতে থাকে

  1. ভারতের উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলগুলির প্রধান বৈশিষ্ট্য হল । 

সারাবছর ধরে -(A) প্রচণ্ড গরম(B) প্রবল শুষ্কতা(C) প্রবল বৃষ্টিপাত (D) প্রবল শৈত্য

Answer: (D) প্রবল শৈত্য

  1. মৌসুমি বায়ুর স্থায়িত্বকাল সবচেয়ে কম থাকে _____ ভারতে ।(A) দক্ষিণ – পূর্ব(B) উত্তর – পূর্ব(C) দক্ষিণ – পশ্চিম (D) উত্তর – পশ্চিম

Answer: (B) উত্তর – পূর্ব

  1. সমুদ্রের কাছে জলবায়ু কী প্রকৃতির হয় ?(A) উষ্ণ আর্দ্র(B) সমভাবাপন্ন(C) চরমভাবাপন্ন(D) শীতল ও শুষ্ক

Answer: (B) সমভাবাপন্ন

  1. শীতল পার্বত্য জলবায়ুর প্রভাব দেখা যায় ভারতের কোন্ অংশে ?(A) উত্তর(B) দক্ষিণ(C) পূর্ব(D) পশ্চিম

Answer: (A) উত্তর

  1. অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস ভারতে -(A) গ্রীষ্মকাল(B) বর্ষাকাল(C) শরৎকাল(D) শীতকাল

Answer: (C) শরৎকাল

  1. আরব সাগরীয় মৌসুমি বায়ু কোন্ উপকূলে প্রবল শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ঘটায় ?(A) মালাবার(B) করমণ্ডল(C) কোঙ্কন(D) উত্তর সরকার

Answer: (A) মালাবার

  1. লু বায়ু প্রবাহিত হয় ___ ভারতে ।(A) উত্তর – পূর্ব(B) উত্তর দক্ষিণ(C) উত্তর – পশ্চিম(D) দক্ষিণ

Answer: (C) উত্তর – পশ্চিম

  1. ভারতের উত্তর অংশ কোন্ তাপমণ্ডলের অন্তর্গত । (A) ক্রান্তীয়(B) হিমমণ্ডল(C) নাতিশীতোয়(D) উষ্ণমণ্ডল 

Answer: (C) নাতিশীতোয়

  1. অক্টোবর – নভেম্বর মাসে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় পশ্চিমবঙ্গে কী নামে পরিচিত ?(A) কালবৈশাখী(B) পশ্চিমি ঝঞ্ঝা(C) বরদৈছিলা(D) আশ্বিনের ঝড়

Answer: (D) আশ্বিনের ঝড়

  1. কোন্ ঋতুতে উত্তর ভারতের তাপমাত্রা সর্বোচ্চ হয় ? (A) গ্রীষ্ম(B) বর্ষা(C) শরৎ(D) শীত 

Answer: (A) গ্রীষ্ম

  1. ভারতের দুটি চরমভাবাপন্ন জলবায়ুযুক্ত শহর হল -(A) চেন্নাই ও মুম্বাই(B) কলকাতা ও কটক(C) দিল্লি ও অমৃতসর(D) বেঙ্গালুরু ও হায়দরাবাদ

Answer: C) দিল্লি ও অমৃতসর

  1. ভারতের জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য হল -(A) অত্যধিক উষ্ণতা(B) ঋতুপরিবর্তন (C) অত্যধিক বৃষ্টিপাত(D) ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর প্রভাব

Answer: (B) ঋতুপরিবর্তন

  1. ভারতের জলবায়ু কোন্ বায়ুপ্রবাহের দ্বারা সর্বাধিক প্রভাবিত ?(A) মৌসুমি বায়ু(B) মেরু বায়ু (C) পশ্চিমা বায়ু(D) আয়ন বায়ু

Answer: (A) মৌসুমি বায়ু

  1. ভারতের বৃষ্টিপাত অধিকাংশই হয়—(A) পরিচলন পদ্ধতিতে(B) শৈলোৎক্ষেপ পদ্ধতিতে(C) ঘূর্ণবাত পদ্ধতিতে(D) সংঘর্ষ পদ্ধতিতে

Answer: (B) শৈলোৎক্ষেপ পদ্ধতিতে

  1. ভারতের জলবায়ুর ওপর কোন্ পর্বতের প্রভাব বেশি ?(A) পশ্চিমঘাট(B) পূর্বঘাট(C) হিমালয়(D) আরাবল্লী

Answer: (C) হিমালয়

  1. ভারতে মৌসুমি বায়ুর আগমন হয় কোন্ মাসে ?(A) জুলাই(B) আগস্ট(C) মে(D) জুন 

Answer: (D) জুন

  1. ভারতের একটি স্থানীয় বায়ু হল— (A) আশ্বিনের ঝড় (B) মৌসুমি বায়ু(C) পশ্চিমি ঝঞ্ঝা(D) লু

Answer: (D) লু

  1. পশ্চিমবঙ্গে গ্রীষ্মের প্রথম ভাগে বিকেলের দিকে যে ঝড় বৃষ্টি হয় তাকে বলে -(A) আশ্বিনের ঝড়(B) কালবৈশাখী(C) আম্রবৃষ্টি(D) বরদৈছিলা

Answer: (B) কালবৈশাখী

  1. কোন্ মৌসুমি বায়ু শীতল ও শুষ্ক প্রকৃতির ?(A) দক্ষিণ – পশ্চিম(B) উত্তর – পূর্ব(C) উত্তর – পশ্চিম(D) দক্ষিণ – পূর্ব

Answer: (C) উত্তর – পশ্চিম

  1. লু বায়ু প্রবাহিত হয় ___ ভারতে ।(A) উত্তর – পূর্ব(B) উত্তর দক্ষিণ(C) উত্তর – পশ্চিম(D) দক্ষিণ

Answer: (C) উত্তর – পশ্চিম

সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর | ভারতের জলবায়ু (ভারত – পঞ্চম অধ্যায়) – মাধ্যমিক ভূগোল সাজেশন | Bharater Jalabayu – Madhyamik Geography Suggestion : 

  1. মৌসুমি বায়ু কাকে বলে ?

Answer: মৌসুমি বায়ু হল এক ধরনের সাময়িক বায়ু যা ঋতুপরিবর্তনের সাথে সাথে পরস্পর বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয় । গ্রীষ্মকালে এই বায়ু সমুদ্র থেকে স্থলভাগের দিকে এবং শীতকালে স্থলভাগ থেকে সমুদ্রের দিকে বয়ে যায় । পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে এই বায়ু প্রবাহিত হলেও , দক্ষিণ – পূর্ব এশিয়া হল মৌসুমি বায়ুর প্রধান বিচরণক্ষেত্র । 

  1. পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চল কোথায় অবস্থিত ?

Answer: পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলটি হল চেরাপুঞ্জির নিকটবর্তী মৌসিনরাম , যা মেঘালয় রাজ্যের দক্ষিণভাগে অবস্থিত । এখানকার বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ( ১২৫০-১৪০০ সেমি ) । একে পৃথিবীর আর্দ্রতম স্থানও ( Wettest Place of the Planet ) বলা হয় ।

  1. দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ( South – West Monsoon ) বলতে কী বোঝ ?

Answer: গ্রীষ্মকালে অধিক উষ্ণতায় ভারতের উত্তর – পশ্চিম অংশে যে গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয় তার প্রভাবে দক্ষিণের সমুদ্রের উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে জলীয় বাষ্পপূর্ণ মৌসুমি বায়ু ভারতে প্রবেশ করে । ফেলের সূত্রানুসারে এই বায়ু ডান দিকে বেঁকে ভারতে প্রবেশ করে বলে একে দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বলে । সারা ভারতের ৮৫-৯০ ভাগ বৃষ্টি এই বায়ুর প্রভাবেই ঘটে । 

  1. উত্তর – পূর্ব মৌসুমি বায়ু ( North – East Monsoon ) বলতে কী বোঝ ?

Answer: সেপ্টেম্বর মাসের শেষ বা অক্টোবর মাসের শুরুতে ভারতের স্থলভাগের তুলনায় ভারত মহাসাগরের ওপর তাপমাত্রা বেশি থাকে । ফলে স্থলভাগের ওপর উচ্চচাপ এবং জলভাগের ওপর নিম্নচাপ অবস্থান করে । এই সময় এই বায়ু স্থলভাগ থেকে জলভাগের দিকে প্রবাহিত হয় । এই বায়ুতে জলীয় বাষ্প থাকে না তাই শুষ্ক । এই বায়ু উত্তর – পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হয় । তাই একে উত্তর – পূর্ব মৌসুমি বায়ু বলে । এই বায়ুর প্রভাবে করমণ্ডল উপকূলে বৃষ্টিপাত হয় । 

  1. মৌসুমি বিস্ফোরণ ( Burst of Monsoon ) কী ?

Answer: গ্রীষ্মকালের শেষের দিকে উত্তর – পশ্চিম ভারতে গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হলে আরব সাগর থেকে আসা জলীয় বাষ্পপূর্ণ আর্দ্র দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি বায়ু আকস্মিকভাবে পশ্চিম ভারতে প্রবেশ করে । জলীয় বাষ্পপূর্ণ এই বায়ুপ্রবাহ পশ্চিমঘাট পর্বতে বাধা পেয়ে দক্ষিণ – পশ্চিম ভারতের মালাবার উপকূলে হঠাৎ প্রবল বৃষ্টিপাতের মধ্য দিয়ে ভারতে বর্ষাকালের সুচনা করে , তাই একে মৌসুমি বিস্ফোরণ ( Burst of Monsoon ) বলা হয় ।

  1. শীতকালে ভারতের কোন কোন অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হয় । 

Answer: শীতকালে ভারতে বৃষ্টিপাত তেমন না – হলেও এই সময়ে : ( ১ ) প্রত্যাবর্তনকারী মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে তামিলনাড়ুর করমণ্ডল উপকূলে এবং ( ২ ) ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকে আগত পশ্চিমি ঝঞ্ঝার প্রভাবে জম্মু – কাশ্মীর , রাজস্থান , পাঞ্জাব , হরিয়ানা , উত্তরপ্রদেশ , উত্তরাখণ্ড , বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গের কোনো কোনো অঞ্চলে সামান্য বৃষ্টিপাত হয় । প্রশ্ন ১৪ ভারতে ভিন্ন ঋতুতে হয় , এমন দুটি ঝড়ের নাম লেখো । উত্তর : ভারতে ভিন্ন ঋতুতে হয় , এমন দুটি ঝড় হল ( ১ ) শরৎকালে আশ্বিনের ঝড় এবং ( ২ ) গ্রীষ্মকালে কালবৈশাখীর ঝড় ।

  1. বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল ( Rainshadow Area ) কাকে বলে ?

Answer: ভারতের অধিকাংশ বৃষ্টিপাত পাহাড়ে বাধা পেয়ে হয় । জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু | বৃষ্টিছায় অবস যখন পাহাড়ে বাধা পায় , তা কিছুটা উপরে উঠে শীতল হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায় । কিন্তু এই বায়ু যখন পাহাড়ের উলটোদিকের ঢালে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল পৌঁছোয় তখন সেখানে বৃষ্টিপাত কম হয় । বিপরীত পাশের পাহাড়ের এই ঢাল বা অনুবাত ঢাল অঞ্চলকে বৃষ্টিচ্ছায় অংশ বলা হয় । যেমন — ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্ব ঢাল এবং মেঘালয়ের গারো , খাসি , জয়ন্তিয়া পাহাড়ের উত্তর ঢাল হয় বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল ।

  1. আবহাওয়া ( Weather ) কাকে বলে ? 

Answer: কোনো নির্দিষ্ট স্থানের ও নির্দিষ্ট সময়ের বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা , আর্দ্রতা , বায়ুচাপ , বায়ুপ্রবাহ , মেঘের অবস্থা , বৃষ্টিপাত প্রভৃতির অবস্থাকে বোঝায় । আবহাওয়া সর্বদা পরিবর্তিত হয় ।

  1. জলবায়ু ( Climate ) কাকে বলে ? 

Answer: কোনো স্থানের বা কোনো একটি বড় অঞ্চলের প্রায় ৩০ থেকে ৪০ বছরের আবহাওয়ার গড়ো অবস্থাকে জলবায়ু বলে । কোনো অঞ্চলের জলবায়ু বছরের পর বছর প্রায় একইরকম থাকে ।

  1. আম্রবৃষ্টি বা Cherry Blossom কাকে বলে ? 

Answer: গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু , অন্ধ্রপ্রদেশ ও কর্ণাটক রাজ্যে ঘূর্ণিবায়ুর প্রভাবে বজ্রবিদ্যুৎসহ যে – বৃষ্টিপাত হয় , তাকে ‘ আম্রবৃষ্টি ’ বলে । এই বৃষ্টিপাতের প্রভাবে এই অঞ্চলে আমের ফলন ভালো হয় । এ ছাড়া এই বৃষ্টিপাতের ফলে কর্ণাটক রাজ্যে কফি চাষের সুবিধা হওয়ায় , একে চেরি ব্লসম ( Cherry Blosom ) বলে । 

  1. লু ( Loo ) কী ?

Answer: গরমকালে ( জ্যৈষ্ঠ মাসে ) উত্তর ভারতের রাজস্থান , পাঞ্জাব , হরিয়ানা , দিল্লি অংশে দিনের বেলায় অত্যধিক শুষ্ক ও উষ্ণবায়ু শোঁ শোঁ করে প্রচণ্ড বেগে প্রবাহিত হয় , তাকে লু ( Loo ) বলে । এর ফলে উষ্ণতা ৫০ ° সে . ছাড়িয়ে যায় । এই বায়ুর প্রচণ্ড উত্তাপের ফলে প্রতিবছর বহু মানুষ ও গবাদিপশু মারা যায় । 

  1. আঁধি ( Andhi ) কাকে বলে ?

Answer: রাজস্থান মরুভূমি অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে যে ধূলিঝড় হয় , স্থানীয় ভাষায় তাকে আঁধি বলে । এই ঝড়ে বৃষ্টি হয় না বলে প্রচুর ধুলো – বালি ওড়ে । তবে এই ঝড়ে উষ্ণতা কিছুটা কমে । 

  1. চরমভাবাপন্ন জলবায়ু ( Extreme Climate ) বলতে কা বোঝ ?

Answer: যে – ধরনের জলবায়ুতে শীতে বেশি শীত আর গরমে প্রচণ্ড গরম পড়ে , সেই জলবায়ুকে চরমভাবাপন্ন জলবায়ু বলে । সাধারণত দেশের অভ্যন্তরভাগে অর্থাৎ সমুদ্র থেকে দূরবর্তী স্থানে এই ধরনের জলবায়ু দেখা যায় । ভারতের দিল্লি , লখনউ , আম্বালা , রায়পুর প্রভৃতি শহরের মতো মধ্য ও উত্তর ভারতের স্থানগুলিতে চরমভাবাপন্ন জলবায়ু দেখা যায় ।

  1. সমভাবাপন্ন জলবায়ু ( Moderate Climate ) বলতে কী বোঝ ?

Answer: যে – ধরনের জলবায়ুতে শীত ও গ্রীষ্মকালের তাপমাত্রার পার্থক্য কম হয় , সেই ধরনের জলবায়ুকে সমভাবাপন্ন জলবায়ু বলে । এটি প্রধানত সমুদ্রতীরবর্তী স্থানে দেখতে পাওয়া যায় । এই অঞ্চলে খুব বেশি ঠান্ডা পড়ে না বা গরমও পড়ে না । ভারতের উপকূলবর্তী অঞ্চল যেমন — মুম্বাই , চেন্নাই , পুরী , বিশাখাপত্তনম প্রভৃতি অঞ্চলে এইরূপ জলবায়ু দেখা যায় ।

ব্যাখ্যামূলক উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর | ভারতের জলবায়ু (ভারত – পঞ্চম অধ্যায়) – মাধ্যমিক ভূগোল সাজেশন | Bharater Jalabayu – Madhyamik Geography Suggestion : 

  1. ভারত গ্রীষ্মপ্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও কাশ্মীর , দার্জিলিং প্রভৃতি স্থানের জলবায়ু শীতল ।

Answer: আমরা জানি উচ্চতা বৃদ্ধিতে উষ্ণতা হ্রাস পায় । কাশ্মীর , দার্জিলিং প্রভৃতি স্থানগুলি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেকটা উঁচুতে অবস্থিত বলেই সারাবছর উষ্ণতা এখানে কম । তাই গ্রীষ্মপ্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও কাশ্মীর , দার্জিলিং – এর জলবায়ু শীতল । 

  1. করমণ্ডল উপকূলে শীতকালে বৃষ্টিপাত হয় । অথবা , তামিলনাড়ুর দক্ষিণ – পূর্ব অঞ্চলে বছরে ২ বার বৃষ্টিপাত হয় । অথবা , তামিলনাড়ু বা করমণ্ডল উপকূলে বছরে ২ বার বৃষ্টিপাত হয় — এর কারণ ব্যাখ্যা করো ।

Answer: বর্ষাকালে দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এখানে বৃষ্টি পাত হয় । ও শরৎ ও শীতকালে উত্তরপূর্ব শুষ্ক মৌসুমি বায়ু বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে এবং ফেরেল সূত্রানুসারে ডানদিকে বেঁকে করমণ্ডল উপকূলে প্রবেশ করে — পূর্বঘাটে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায় । তাই করমণ্ডল উপকূলে দু – বার বর্ষাকাল দেখা যায় ।

  1. ভারতের দাক্ষিণাত্য মালভূমির অভ্যন্তরভাগে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল গড়ে উঠেছে — কারণ ব্যাখ্যা করো ।

Answer: গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আরব সাগরীয় শাখাটি আরব সাগরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় প্রচুর জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে নিয়ে এসে পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং এই পর্বতের পশ্চিম ঢালে প্রবল শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ঘটায় ( বছরে ৩৫০ – ৫০০ সেমি ) । 

 পশ্চিমঘাট পর্বত অতিক্রম করার পর এই বায়ুপ্রবাহ ( মৌসুমি বায়ুর আরব সাগরীয় শাখা ) যখন দাক্ষিণাত্য মালভূমিতে প্রবেশ করে তখন এতে জলীয় বাষ্প বিশেষ থাকে না বলে এই বায়ুপ্রবাহের প্রভাবে দাক্ষিণাত্য মালভূমিতে খুবই কম বৃষ্টিপাত ( বছরে ৩০–৬০ সেমি মাত্র ) হয় । এই কারণে পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্বাংশে বিশেষত দাক্ষিণাত্য মালভূমির অভ্যন্তরভাগে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল গড়ে উঠেছে ।

  1. পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিমঢালে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ঘটে — কেন ?

Answer: আরব সাগর থেকে প্রচুর জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আরব সাগরীয় শাখা জুন মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই দক্ষিণ – পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয়ে পশ্চিম উপকূলের পশ্চিমঘাট পর্বতমালায় বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং আরও উপরে উঠে যেতে থাকে । বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরের প্রবল শৈত্যের সংস্পর্শে এসে ওই জলীয় বাষ্পপূর্ণ আর্দ্র বায়ু শীতল ও ঘনীভূত হয়ে পশ্চিমঘাট পর্বতের বায়ুমুখী ঢালে অবস্থিত ভারতের কোঙ্কন উপকূল এবং মালাবার উপকূলে প্রবল শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ঘটায় ( এই অঞ্চলে গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২৫০ সেমির বেশি ) ।

  1. মরু অঞ্চলে শীত ও গ্রীষ্মের উষ্ণতার পার্থক্য বেশি কেন ?

Answer: ( মরু অঞ্চলের ভূমিতে বালুকণার পরিমাণ বেশি থাকে । এ ছাড়া এই বালুকণার মধ্যে কোয়ার্টজ নামক খনিজ থাকে । এরা তাপ ধরে রাখতে পারে না , ফলে এগুলি সবই দ্রুত উত্তপ্ত হয় এবং দ্রুত শীতল হয় , এর ফলে মরু অঞ্চলের উত্তাপের চরমভাব লক্ষ করা যায় । মরু অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই কম হওয়ার ফলে এখানে চরমভাবাপন্ন জলবায়ু দেখা যায় । মরু অঞ্চলের বালুকাময় মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতা নেই বললেই চলে , এই কারণে স্বাভাবিকভাবেই উত্তাপ যথেষ্ট বৃদ্ধি পায় , আবার যথেষ্ট হ্রাসও পায় । এই সমস্ত কারণে মরু অঞ্চলে শীত ও গ্রীষ্মের উষ্ণতার পার্থক্য বেশি ।

  1. শীতকালে ও শরৎকালে বঙ্গোপসাগরে অসংখ্য ঘূর্ণবাতের উৎপত্তি ঘটে — কেন ?

Answer: শীতকালে ও শরৎকালে ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে মৌসুমি বায়ু প্রত্যাগমন করে । এই প্রত্যাগমনকারী মৌসুমি বায়ু শুষ্ক ও আর্দ্রতাহীন হয় । তবে যেহেতু এই সময় নিকটবর্তী সমুদ্র উঘ্ন থাকে , সেহেতু উষ্ণ আর্দ্র সামুদ্রিক বায়ুর সাথে শুষ্ক বায়ুর সংঘর্ষে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে ঘূর্ণবাতের উৎপত্তি ঘটে তাই এই দুই সাগরে এই সময় গড়ে ৩ / ৪ টি ঘূর্ণবাত দেখা যায় । এই সামুদ্রিক ঘূর্ণবাতের ফলে সমুদ্র উপকূল ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে মাঝে মাঝে বজ্রবিদ্যুৎসহ প্রবল ঝড় – বৃষ্টি হয় ।

  1. থর মরুভূমির জলবায়ু চরম প্রকৃতির । অথবা , রাজস্থানের মরু অঞ্চলে তাপমাত্রার প্রসার বেশি হয় কেন ?

Answer: মরু অঞ্চলের ভূমিতে বালুকণার পরিমাণ বেশি থাকে । এ ছাড়া এই বালুকণার মধ্যে কোয়ার্টজ নামক খনিজ থাকে । এরা তাপ ধরে রাখতে পারে না । ফলে এগুলি সবই দ্রুত উত্তপ্ত হয় এবং দ্রুত শীতলও হয়ে যায় । মরু অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই কম হওয়ার ফলে এখানে চরমভাবাপন্ন জলবায়ু দেখা যায় । এ ছাড়া মরু অঞ্চলের বালুকাময় মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতা নেই বললেই চলে । তাই স্বাভাবিক কারণেই উত্তাপ যথেষ্ট বৃদ্ধি পায় , আবার যথেষ্ট হ্রাসও পায় । এই কারণে রাজস্থানের মরু অঞ্চলে তাপমাত্রার প্রসর বেশি অথবা শীত ও গ্রীষ্মের উষ্ণতার পার্থক্য বেশি ।

  1. সমুদ্রের ধারে আবহাওয়া আরামদায়ক হয় । অথবা , সমুদ্র থেকে দূরত্ব বাড়লে জলবায়ু চরমভাবে বৃদ্ধি পায় কেন ?

Answer: দক্ষিণ ভারতের তিনদিক জুড়ে রয়েছে আরব সাগর , ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগর । সমুদ্রের কাছাকাছি হওয়ায় ভারতের উপকূল অঞ্চলের জলবায়ু সমভাবাপন্ন ও বেশ আরামদায়ক হয় । জল ও স্থলভাগে দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্যের জন্য যথাক্রমে সমুদ্র বায়ু ও স্থলবায়ু প্রবাহিত হয় । ফলে জলবায়ুর চরমভাব থাকে না । কিন্তু সমুদ্র থেকে দূরত্ব বাড়লে জলবায়ুর চরমভাব বাড়তে থাকে ।

  1. কালবৈশাখী ( Nor Wester ) কী ?

Answer: পূর্ব ভারতে পশ্চিমবঙ্গ ও তার আশপাশে গ্রীষ্মকালের বিকেলে মাঝে মাঝে বজ্রবিদ্যুৎ ও বৃষ্টিপাতের সঙ্গে এক ভীষণ ঝড়ের আগমন ঘটে — এই ঝড় কালবৈশাখী নামে পরিচিত । উত্তর পশ্চিম দিক থেকে এই ঝড়ের আগমন ঘটে বলে এর ইংরেজি নাম ‘ নর ওয়েস্টার ‘ । কালবৈশাখীর বায়ুপ্রবাহ খুবই ঠান্ডা , তাই এই বায়ুর প্রভাবে গ্রীষ্মকালীন উষ্ণতা একলাফে অনেকটা নেমে যায় । গ্রীষ্মকালের শুরুতে পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমপ্রান্তে ছোটোনাগপুর মালভূমি । অঞ্চলে স্থানীয়ভাবে নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হলে , ওই নিম্নচাপযুক্ত অঞ্চল ভরাট করার জন্য উত্তরের শীতল বায়ু এবং দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ছুটে আসে । এই দুই বিপরীতধর্মী বায়ুপ্রবাহের সংঘর্ষের ফলে কালবৈশাখীর ঝড় – বৃষ্টি সৃষ্টি হয়ে থাকে ।

  1. আশ্বিনের ঝড় ( Storm of Aswin ) কী ?

Answer: শরৎকালে প্রত্যাবর্তনকারী শুষ্ক মৌসুমি বায়ুর সঙ্গে । সমুদ্রের অপেক্ষাকৃত উষ্ণতা – আর্দ্র বায়ুর সংঘর্ষে মাঝে মাঝে 7 

ঘূর্ণবাতের উৎপত্তি ঘটে । এই ঘূর্ণবাত অত্যন্ত গভীর হলে তা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয় । একেই বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে সাইক্লোন । বলা হয় । এই ঝড় স্থলভাগে আছড়ে পড়ে প্রবল ঝড় – বৃষ্টি ঘটায় । এই ঘূর্ণিঝড়ই পশ্চিমবঙ্গে সাইক্লোন নামে পরিচিত । 

  1. মৌসুমি বায়ুর আরব সাগরীয় শাখা কী ?

Answer: ভারতে মৌসুমি বায়ুর দুটি শাখার মধ্যে একটি হল আরব সাগরীয় শাখা । • আরব সাগর থেকে প্রচুর জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আরব সাগরীয় শাখা জুন মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই দক্ষিণ – পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয়ে পশ্চিম উপকূলের পশ্চিমঘাট পর্বতমালায় বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং এই পর্বত ও আরব সাগরের উপকূলের মধ্যবর্তী গোয়া ( কোঙ্কন উপকূল ) ও কেরলে মালাবার উপকূলে প্রবল শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ঘটায় ( গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত ২৫০ সেমি – এর বেশি ) । • এরপর পশ্চিমঘাট পর্বত অতিক্রম করে । এই বায়ুপ্রবাহ মধ্যপ্রদেশ ও দাক্ষিণাত্য মালভূমিতে প্রবেশ করে । কিন্তু পশ্চিমঘাট পর্বতের অপর দিকে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল অবস্থিত হওয়ায় জলীয় বাষ্পে ঘাটতি পড়ে বলে এইসব অঞ্চলে গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৫০ সেন্টিমিটারেরও কম । এই বায়ুপ্রবাহ যতই আরও পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে থাকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণও ততই কমতে থাকে । আরব সাগরীয় মৌসুমি বায়ুর উত্তর শাখা উত্তরে রাজস্থানের দিকে অগ্রসর হয় , এবং জলীয় বাষ্প অত্যন্ত কম থাকায় বৃষ্টি অত্যন্ত কম ( ২৫ সেমির কম ) ।

  1. মৌসুমি বায়ুর বঙ্গোপসাগরীয় শাখা কী ?

Answer: ভারতে মৌসুমি বায়ুর যে শাখা বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তা বঙ্গোপসাগরীয় শাখা । 1) দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর বঙ্গোপসাগরীয় শাখার প্রভাবে গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের বদ্বীপ সমভূমি অঞ্চল ও উত্তর – পূর্ব ভারতের পাহাড়ি রাজ্যগুলিতে প্রবল বৃষ্টিপাত হয় । 

উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে , দক্ষিণ – পূর্ব মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে খাসি পাহাড়ের দক্ষিণের বায়ুমুখী ঢালে অবস্থিত চেরাপুঞ্জি – মৌসিনরাম অঞ্চলে পৃথিবীর মধ্যে সর্বাধিক বৃষ্টিপাত হয় ( ১,২৫০-১,৪০০ সেমি ) , কিন্তু বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় এই পার্বত্য অঞ্চলের উত্তর ঢালে ( অনুবাত ঢালে ) অবস্থিত শিলং শহরে বৃষ্টিপাত হয় বছরে মাত্র ২৫০ সেমি । ও দক্ষিণ – পূর্ব মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ পূর্ব হিমালয়ে পৌঁছোনোর পর পশ্চিমমুখী হয়ে গাঙ্গেয় সমভূমির মধ্য দিয়ে যতই পাঞ্জাব ও রাজস্থানের নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয় , বৃষ্টিপাত ততই কমতে থাকে । উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে , দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের প্রভাবে নিম্ন গাঙ্গেয় সমভূমির কলকাতায় বছরে ২০০ সেমি মধ্য গাঙ্গেয় সমভূমির পাটনায় বছরে ১৫০ সেমি এবং উচ্চ গাঙ্গেয় সমভূমির হরিদ্বারে বছরে প্রায় ১০০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত হয় । এই বায়ু যখন রাজস্থানে পৌঁছোয় , জলীয় বাষ্পের অভাবে সেখানে বৃষ্টি কম হয় ।

  1. মৌসুমি বায়ুর অনিশ্চয়তা বলতে কী বোঝ ?

Answer: ভারতের ৯০ % বৃষ্টিপাত দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সংঘটিত হয় , কিন্তু মৌসুমি বৃষ্টিপাত খুবই অনিশ্চিত , কারণ ১ প্রতি বছর মৌসুমি বায়ু সমপরিমাণে জলীয় বাষ্প নিয়ে আসে না । আবার ও মৌসুমি বায়ুর আগমন ও প্রত্যাগমন প্রতি বছর একই সময়ে ঘটে না । এর ফলে কোনও বছর মৌসুমি বায়ুর দ্বারা কম জলীয় বাষ্প আমদানি ও এই বায়ুপ্রবাহ দেরিতে আসার ফলে ভারতে অনাবৃষ্টি বা খরা দেখা দেয় , আবার কোনো বছর অতিরিক্ত পরিমাণ জলীয় বাষ্প আমদানি এবং দেরিতে প্রত্যাগমনের ফলে ভারতে অতিবৃষ্টি ও বন্যার প্রাদুর্ভাব লক্ষ করা যায় ।

  1. এর মরুভূমির ভৌগোলিক অবস্থান এই অঞ্চলে মরুভূমি সৃষ্টি করতে সহায়তা করেছে কেন ?

Answer: থর মরুভূমির বিশেষ ভৌগোলিক অবস্থান এই অঞ্চলে মরুভূমি সৃষ্টি করতে সাহায্য করেছে , 

কারণ : ( আরব সাগর থেকে জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে দক্ষিণ – পশ্চিম বায়ুর | আরব সাগরীয় শাখা , পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটানোর পরে সৌরাষ্ট্র ও কচ্ছের উপকূল অতিক্রম করে মরু অঞ্চলের উপর দিয়ে যখন প্রবাহিত হয় , তখন এই বায়ুতে জলীয় বাষ্প বিশেষ থাকে না , তাই দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি | বায়ুর প্রভাবে এই অঞ্চলে নামমাত্র বৃষ্টিপাত হয় । বঙ্গোপসাগরীয় শাখা উত্তর ভারত অতিক্রম করে যখন এখানে পৌঁছোয় তখন জলীয় বাষ্প খুব কম থাকায় বৃষ্টি খুবই কম । এ ছাড়া , ২) মরুভূমি অঞ্চলে মৌসুমি বায়ুপ্রবাহকে বাধা দেওয়ার জন্য কোনো । উঁচু পর্বত না – থাকায় এবং এই অঞ্চলের একমাত্র পর্বত আরাবল্লি উত্তর – দক্ষিণে প্রসারিত হওয়ায় এই অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাত হয় খুবই কম ( বছরে ১৫ সেন্টিমিটারেরও কম ) । কোনো কোনো বছর থর মরুভূমিতে বৃষ্টিপাত একেবারেই হয় না । এত কম বৃষ্টিপাতের ফলেই ভারতের পশ্চিমপ্রান্তে থর মরুভূমির সৃষ্টি হয়েছে ।

  1. মেঘালয় রাজ্যের এইরূপ নামকরণের কারণ ।

Answer: মেঘালয় কথার অর্থ ‘ মেঘের আলয় ’ বা ‘ মেঘের দেশ ‘ । মেঘালয় রাজ্যের বিশেষ ভৌগোলিক ও জলবায়ুগত অবস্থানের জন্য বঙ্গোপসাগর থেকে আগত জলীয় বাষ্পপূর্ণ আর্দ্র বায়ু বাংলাদেশের সুরমা উপত্যকা পার হয়ে মেঘালয় রাজ্যের গারো , খাসি , জয়ন্তিয়া পাহাড়ের খাড়া ঢালে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে হঠাৎ অনেক উঁচুতে উঠে যায় এবং ঘনীভূত হয়ে সেখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায় । পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিবহুল স্থান এখানেই অবস্থিত । প্রবল বৃষ্টি ও আকাশ মেঘে ঢাকা থাকে বলে এই রাজ্যের নামকরণ হয় মেঘালয় ।

  1. ভারত মৌসুমি বায়ুর প্রধান বিচরণক্ষেত্র ( Play Field ) অথবা , ভারত মৌসুমি জলবায়ুর দেশ — ব্যাখ্যা করো ।

Answer: গ্রীষ্মকালীন দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এবং শীতকালীন উত্তর – পূর্ব মৌসুমি বায়ু , — ঋতুপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই দুই বায়ুপ্রবাহের দিকও পরিবর্তন হয় । মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতে প্রায় ৯০ % বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে । ভারতের স্বাভাবিক বনভূমি , কৃষি ও কৃষিজাত ( যেমন — পাট , চিনি , চা , কফি প্রভৃতি ) শিল্পই শুধু নয় , এদেশের অধিবাসীদের খাদ্য , বাসস্থান এবং জীবিকাও মৌসুমি বায়ুর গতিপ্রকৃতির ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল । এ ছাড়া শীতকালীন মৌসুমি বায়ু উত্তর – পূর্ব দিক থেকে স্থলভাগের উপর দিয়ে বয়ে আসে বলে ওই বায়ুতে জলীয় বাষ্প থাকে । না , ফলে এই বায়ুর প্রভাবে শীতকালে ভারতে বৃষ্টি হয় না । মৌসুমি জলবায়ুর দ্বারা প্রভাবিত ভারতকে ‘ মৌসুমি জলবায়ুর দেশ ‘ বলা হয় । বা বলা যায় যে , ভারত হল মৌসুমি বায়ুর প্রধান বিচরণক্ষেত্র ।

রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর | ভারতের জলবায়ু (ভারত – পঞ্চম অধ্যায়) – মাধ্যমিক ভূগোল সাজেশন | Bharater Jalabayu – Madhyamik Geography Suggestion : 

1. ভারতের জলবায়ু ও জনজীবনে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব । 

Answer: ভারতের জলবায়ুতে মৌসুমি বায়ুর বিরাট প্রভাব লক্ষ করা যায় । তাই ভারতকে ‘ মৌসুমি জলবায়ুর দেশ বলা হয় । ভারতের জলবায়ু ও জনজীবনে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবগুলি হল— জলবায়ুর ওপর প্রভাব : 

( বৃষ্টিপাত : ভারতের অধিকাংশ বৃষ্টিপাত মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ঘটে থাকে । ভারতের বর্ষাকাল মৌসুমি বায়ুর আগমন , বিচরণ ও গতিপ্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল । ঋতুবৈচিত্র্য : মৌসুমি বায়ুর দিক পরিবর্তনের সাথে সাথে ভারতের ঋতুপরিবর্তন হয়ে থাকে , যথা — শীত , গ্রীষ্ম , বর্ষা ও শরৎ । বৃষ্টিপাতের অসম বণ্টন : ভারতে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের বণ্টন সর্বত্র সমান নয় । 

বৃষ্টিপাতের ছেদ ( Break of Monsoon ) : মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে একটানা বৃষ্টিপাতের মাঝে মাঝে বৃষ্টিপাতের ছেদ ঘটে । ৫ আর্দ্র গ্রীষ্মকাল ও শুষ্ক শীতকাল : জলীয় বাষ্পপূর্ণ দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে গ্রীষ্মকাল হল আর্দ্র ও জলীয় বাষ্পহীন উত্তর – পূর্ব মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে শীতকাল হল শুষ্ক । বায়ুপ্রবাহ : গ্রীষ্মকালে সমুদ্র থেকে স্থলভাগের দিকে মৌসুমি বায়ুর প্রবাহ দেখা যায় ( সমুদ্রবায়ু ) এবং শীতকালে স্থলভাগ থেকে সমুদ্রের দিকে মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ দেখা যায় ( স্থলবায়ু ) । 

উষ্ণতা : মৌসুমি বায়ুর আগমনে আকাশ মেঘে ঢেকে যায় ও বৃষ্টি হয় বলে ভারতের গড় উষ্ণতা ৫ ° -১০ ° C কমে যায় । আবার শরৎকালে মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাগমনে আকাশ মেঘমুক্ত হয় বলে গড় উষ্ণতা কিছুটা বেড়ে যায় । 

ঘূর্ণবাতের উৎপত্তি শরৎকালের প্রত্যাগমনকারী মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে যেসকল ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয় , তার প্রভাবে পূর্ব উপকূল বরাবর মাঝে মাঝে প্রবল ঝড় – বৃষ্টি হয় । জনজীবনে প্রভাব : ( কৃষিকাজের ওপর প্রভাব ভারতের কৃষিকাজ মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভরশীল ( বিশেষত খারিফ শস্য ) । 

কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপন ভারতে কৃষিভিত্তিক শিল্প ( বস্ত্র শিল্প , চিনি শিল্প , পাট শিল্প ) স্থাপনেও মৌসুমি বায়ুর পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে । 

 অরণ্যসম্পদ সৃষ্টি মৌসুমি বায়ুজনিত বৃষ্টিপাতের তারতম্য ভারতের হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল ও পশ্চিমঘাট পার্বত্য অঞ্চলে প্রচুর অরণ্যসম্পদ সৃষ্টি করেছে । 

মৃত্তিকার ওপর প্রভাব : মৃত্তিকা সৃষ্টি , মৃত্তিকার গঠন ইত্যাদি নানান বিষয় নির্ভর করে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ওপর ।

 অর্থনৈতিক বিকাশ ভারতের অর্থনৈতিক বিকাশসাধনে মৌসুমি বায়ু প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সাহায্য করে । ও জীবনযাত্রা : ভারতের বেশিরভাগ মানুষের খাদ্যাভ্যাস , জীবিকা , পোশাক , বাসস্থান মৌসুমি বায়ু দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় ।

 জীবন ও সম্পত্তিহানি : মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে মাঝে মাঝে যে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয় , তা অনেক সময় জীবন ও সম্পত্তির বিনাশ ঘটায় ।

 খরা ও বন্যার প্রভাব মৌসুমি বায়ুর খামখেয়ালিপনার কারণে এখানে মাসে মাসে স্বল্পবৃষ্টিতে খরা ও প্রবল বৃষ্টিতে বন্যা দেখা দেয় । খরা ও বন্যা উভয়ই জনজীবন ও অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলে ।

2. ভারতের মৃত্তিকা , স্বাভাবিক উদ্ভিদ ও কৃষিকাজের ওপর মৌসুমি বৃষ্টিপাতের প্রভাব উল্লেখ করো । 

Ans; গ্রীষ্মকালে উত্তর – পশ্চিম ভারতে গভীর নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ায় দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ভারতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় । এর প্রভাবে ভারতের অধিকাংশ বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয় । মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতে গ্রীষ্মকাল আর্দ্র ও শীতকাল প্রায় শুষ্ক থাকে । ভারতের প্রায় ৯০ % বৃষ্টিপাত মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে হয়ে থাকলেও মৌসুমি বৃষ্টিপাত ভারতে অত্যন্ত অনিশ্চিত । মৌসুমি বায়ুর এই খামখেয়ালিপনার জন্যই ভারতে কোনো বছর খরা ও কোনো বছর বন্যার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় । মৌসুমি বৃষ্টিপাত ভারতের মৃত্তিকা , স্বাভাবিক উদ্ভিদ ও কৃষিকাজের ওপর প্রভাব বিস্তার করে । নিম্নে এই সম্পর্কে আলোচনা করা হল –

মৃত্তিকার ওপর প্রভাব মৃত্তিকার উৎপত্তি , আর্দ্রতা , শুষ্কতা , মৃত্তিকা ক্ষয় , ভূমিধস ইত্যাদির ওপর মৌসুমি বৃষ্টির প্রভাব ফেলে । বৃষ্টির পরিমাণের তারতম্য ঘটে । যেসব অঞ্চলে বেশি বৃষ্টিপাত হয় সেখানে ধৌত প্রক্রিয়াও বেশি হয় ও মাটি বেশি উর্বর হয় । আবার যেসব অঞ্চলে স্বল্প বৃষ্টিপাত হয় সেখানে জলসেচের মাধ্যমে কৃষিকাজ করা হয় ও মাটির লবণতা বৃদ্ধি পায় । মৃত্তিকার উৎপত্তির ক্ষেত্রে দেখা যায় যে , অধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত । অঞ্চলে প্রধান শিলাস্তর থেকে এলুভিয়েশান প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি হয় । ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা আবার স্বল্প বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে লাভা শিলা থেকে রেগুর মৃত্তিকা সৃষ্টি হয় । অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে অনাবৃত ভূমিতে মৃত্তিকা ক্ষয় বাড়ে ।

 বাভাবিক উদ্ভিদের ওপর প্রভাব : ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলে স্বাভাবিক উদ্ভিদের প্রকৃতি বিশেষভাবে নির্ভর করে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও বণ্টনের ওপর । যে সব অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২০০ সেমির বেশি , সেখানে চিরহরিৎ উদ্ভিদ দেখা যায় ।

 যেমন — পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশে , পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে এই অরণ্য দেখা যায় । ভারতে শীতকাল শুষ্ক বলে এখানে পর্ণমোচী বৃক্ষের বনভূমি সবচেয়ে বেশি দেখা যায় , যেখানে বৃষ্টিপাত ৫০-১০০ সেমি সেখানে শুষ্ক পর্ণমোচী বৃক্ষের অরণ্য দেখা যায় । নদী মোহানাগুলিতে লবণাক্ত জলের সবুজ ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ জন্মায় , যেমন— সুন্দরবন । শুষ্ক জলবায়ুর সীমানার দিকে ৫০ সেমির কম বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে হালকা জঙ্গল , কাঁটা ঝোপঝাড় ও সাভানা তৃণভূমি জন্মায় । যেমন — গুজরাটের পশ্চিমাংশ , রাজস্থানের মরুভূমি ইত্যাদি । 

কৃষিকাজের ওপর প্রভাব : ভারতের কৃষিকাজ সম্পূর্ণরূপে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভরশীল । মৌসুমি বৃষ্টিপাতের পরিমাণ , বণ্টন এবং তার আগমন ও প্রত্যাগমনের ওপর ভিত্তি করে ভারতে শস্য ক্যালেন্ডার তৈরি হয় । খরিফ শস্যের চাষ হয় মৌসুমি বৃষ্টিপাত দ্বারা প্রভাবিত অধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে । আবার কম বৃষ্টিপাতযুক্ত সময়ে জলসেচের মাধ্যমে রবি শস্যের চাষ হয় । এমনকি বাগিচা ফসল , তফসল চাষও বৃষ্টিপাত ও উষ্ণতার ভূমিকা অপরিসীম ।

3. ভারতের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো ।

Answer: 1. মৌসুমি বায়ুর অত্যধিক প্রভাব : ভারতের জলবায়ুতে ঋতুপরিবর্তন হয় প্রধানত দুটি বিপরীতধর্মী মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে । যথা — একটি হল গ্রীষ্মকালীন দক্ষিণ – পশ্চিম আৰ্দ্ৰ মৌসুমি বায়ু এবং অপরটি হলো উত্তর – পূর্ব শুষ্ক মৌসুমি বায়ু । তাই ভারতকে ‘ মৌসুমি জলবায়ুর দেশ বলা হয় ।

  1. ঋতুপরিবর্তন : ভারতের জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য হল ঋতুপরিবর্তন । এখানে প্রধানত শীতকাল , গ্রীষ্মকাল , বর্ষাকাল এবং শরৎকাল — এই চারটি ঋতু দেখতে পাওয়া যায় । ত তাপমাত্রার বৈচিত্র্য বছরে বিভিন্ন সময়ে ভারতে তাপমাত্রা বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে । গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকে এবং শীতকালে তাপমাত্রা অনেক কম থাকে । আবার স্থান বিশেষেও তাপমাত্রার পরিবর্তন হয় । যেমন — উত্তর ভারতের জলবায়ু দক্ষিণ ভারতের জলবায়ুর তুলনায় অনেক বেশি চরমভাবাপন্ন । অর্থাৎ উত্তর ভারতের শীত ও গ্রীষ্ম দুই – ই খুব তীব্র । বেশি উচ্চতা এবং উচ্চ অক্ষাংশের জন্যও পার্বত্য অঞ্চলে তাপমাত্রা কম থাকে । 
  2. বৃষ্টিপাতের তারতম্য : ভারতের মোট বৃষ্টিপাতের ৮৪ % গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে , ১৩ % শরৎকালে এবং ৩ % শীতকালে সংঘটিত হয় । দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতে শীতকালে প্রায় শুকনো ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে শীতকালে উত্তর – পশ্চিম ভারতের পার্বত্য অঞ্চলে তুষারপাত এবং সমভূমিতে বেশি বৃষ্টিপাত হয় । 
  3. বৃষ্টিপাতের আঞ্চলিক বণ্টন : ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের বণ্টন বিভিন্ন । ভারতের পশ্চিম উপকূলের উত্তরাংশ আন্দামান – নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ , অসম , মিজোরাম , উত্তরবঙ্গ ও পূর্ব হিমালয়ের তরাই অঞ্চলের বার্ষিক বৃষ্টিপাত ২৫০ সেমি – এর বেশি , তাই এদের অত্যধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চল বলে । আবার রাজস্থানের মরু অঞ্চল , জম্মু ও কাশ্মীরের লাডাক ও উত্তর পশ্চিমের কারাকোরাম অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২০ সেমি – এর কম বলে একে শুষ্ক অঞ্চল বলে । 
  4. অনিয়মিত মৌসুমি বৃষ্টিপাত : মৌসুমি বৃষ্টিপাত অত্যন্ত অনিয়মিত । কারণ প্রতিবছর মৌসুমি বায়ু সমপরিমাণ জলীয় বাষ্প আনে না । এর ফলে কোনো বছর কম জলীয় বাষ্পের জন্য ভারতে অনাবৃষ্টি বা খরা দেখা যায় , আবার কোনা বছর বেশি জলীয় বাষ্প আমদানির ফলে অতিবৃষ্টি বা বন্যা দেখা যায় ।
  5. স্থানীয় বায়ুপ্রবাহের সক্রিয়তা : গ্রীষ্মকালে দেশের বহু অঞ্চলে স্থানীয় বায়ুর প্রভাবে কিছু ঝড় বৃষ্টিপাত হয় ।
  6. হিমালয় পর্বতের প্রভাব : ভারতের উত্তরে বিশাল হিমালয় পর্বতের অবস্থান ভারতীয় উপমহাদেশকে মধ্য এশিয়ার হাড় কাঁপানো শীতের হাত থেকে রক্ষা করেছে । হিমালয় পর্বত না থাকলে ভারতেও রাশিয়া ও চিনের মতো তীব্র শীতের প্রাবল্য দেখা যেত । আবার সমুদ্র থেকে আগত জলীয় বাষ্পপূর্ণ দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু হিমালয় পর্বতের দক্ষিণ ঢালে বাধা পেয়ে উত্তর ও মধ্য ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায় । 

4. ভারতের জলবায়ুর নিয়ন্ত্রকসমূহের ব্যাখ্যা দাও ।

Answer: যেসব উপাদান ভারতের জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করে । সেগুলি হল অক্ষাংশগত অবস্থান ভারত এশিয়া মহাদেশে অবস্থিত এবং উত্তরে ৩৭ ° ৬ উত্তর অক্ষাংশ থেকে দক্ষিণে ৮ ° ৪ ° উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত । এ ছাড়া কর্কটক্রান্তি রেখা ( ২৩ ° ৩০ ′ উত্তর অক্ষাংশ ) ভারতের প্রায় মধ্যভাগ দিয়ে গেছে , ফলে অক্ষাংশ অনুসারে ভারতের উত্তরাংশ নাতিশীতোয় মণ্ডলে এবং ভারতের দক্ষিণাংশ উষ্ণুমণ্ডলে অবস্থিত ।

 [ ২ ] উচ্চতা : সাধারণত সমুদ্র সমতল থেকে কোনো স্থানের প্রতি কিলোমিটার উচ্চতা বৃদ্ধিতে ৬.৪ ° সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমে যায় । তাই গাঙ্গেয় সমভূমির তুলনায় সুউচ্চ হিমালয় অঞ্চলের গড় তাপমাত্রা সারাবছর অনেক কম থাকে । যেমন — উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে ( লাহুল স্পিতি উপত্যকা , কেদার – বদ্রী , রোটাং পাস ইত্যাদি ) তাপমাত্রা সারাবছরই ১০ ° C- এর নীচে থাকে । 

  1. পর্বতের ভূমিকা : হিমালয় পর্বত ভারতের উষ্ণতাকে নিয়ন্ত্রণ করে , বায়ুপ্রবাহকে বাধা দেয় এবং বৃষ্টিপাত ঘটাতে সাহায্য করে । হিমালয় পর্বতের অবস্থান ভারতীয় উপমহাদেশকে মধ্য এশিয়ার হাড়কাঁপানো শীতের হাত থেকে রক্ষা করেছে । মৌসুমি বায়ু হিমালয়ের দক্ষিণ ঢালে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটায় । আরব সাগরের উপর দিয়ে আসা মৌসুমি বায়ু পশ্চিমঘাট পর্বতে বাধা পেয়ে পশ্চিম ঢালে প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটায় , কিন্তু পূর্ব ঢাল ষ্টচ্ছায় অঞ্চল । 
  2. সমুদ্রের অবস্থান ও সমুদ্র থেকে দূরত্ব : দক্ষিণ ভারতের তিন দিক সমুদ্রবেষ্টিত হওয়ায় উপকূলের জলবায়ু হল সমভাবাপন্ন । সামুদ্রিক ঘূর্ণবাতের প্রভাবে সমুদ্র উপকূলে প্রবল বৃষ্টিপাত হয় । উত্তর ও উত্তর – পশ্চিম ভারত সমুদ্র থেকে অনেক দূরে অবস্থিত হওয়ায় সামুদ্রিক বায়ুর প্রভাব কম । এই জলবায়ু হল চরমভাবাপন্ন । এখানে শীত ও গ্রীষ্মের উষ্ণতার প্রসর খুব বেশি । 
  3. মৌসুমি বায়ুর প্রভাব মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতীয় জলবায়ু নিম্নলিখিত গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি দেখা যায় । যথা — ভারতে গ্রীষ্মকাল আর্দ্র ও শীতকাল শুকনো হয় । শীতকালে মৌসুমি বায়ু যে দিক থেকে প্রবাহিত হয় গ্রীষ্মকালে ঠিক তার বিপরীত দিক থেকে । প্রবাহিত হয় । ভারতে বৃষ্টিপাত একটানা না হয়ে মাঝে মাঝে বৃষ্টিপাত বিরতি ঘটে । মৌসুমি বৃষ্টিপাতের চরম অনিশ্চয়তার জন্য কোনো বছর অনাবৃষ্টি ও খরা এবং কোনো বছর অতিবৃষ্টি ও বন্যা দেখা যায় । 

জেট বায়ুর প্রভাব : ভারতের আবহাওয়া ও জলবায়ুর ওপর জেট বায়ুর প্রভাব তাৎপর্যপূর্ণ । দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি বায়ু যখন ভারতে প্রবেশ করে তার আগেই পশ্চিমা জেট বায়ু ( Westerly Jet ) উত্তর দিকে সরে যায় । তবে এই সময় ভারতের ওপর জেট বায়ু ( Easterly Jet ) থাকে তার অবস্থানের । কোনো কোনো স্থানে বৃষ্টিপাত – এর নিবিড়তা ও স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পায় ।

  1. ঘূর্ণবাত মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাবর্তনকাজে | বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণবাতের প্রভাবে উপকূলের রাজ্যগুলিতে প্রবল বৃষ্টি ও ঝড় – বৃষ্টি হয় । এটি সাইক্লোন নামে পরিচিত । 
  2. পশ্চিমি ঝ t ( Western Disturbances ) : শীতকা ভূমধ্যসাগর থেকে আগত দুর্বল ঘূর্ণবাতের প্রভাবে ভারতের উত্তর – পশ্চিম অঞ্চলে ( পাঞ্জাব , হরিয়ানা , রাজস্থান , জম্মু ও কাশ্মীর মাঝে মাঝে হালকা বৃষ্টিপাত এবং পার্বত্য অঞ্চলে তুষারপাত হয় । ইহাই ‘ পশ্চিমি ঝঞ্ঝা ‘ নামে পরিচিত । এই ঘূর্ণবাতের প্রভাবে মারে মাঝে পশ্চিমবঙ্গেও বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে ।
  3. এল নিনো ও লা নিনার প্রভাব প্রশান্ত মহাসাগরের উভয়পাশে জলবায়ুগত অস্থির অবস্থা হল এল নিনো ও ল নিনা । এল নিনো বছরে আমাদের দেশে মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়ায় কম বলে কম বৃষ্টিতে খরা এবং লা নিনা বছরে মৌসুমি বায়ুর অতি সক্রিয়তায় প্রবল বৃষ্টিতে বন্যা দেখা দেয় ।
  4. মৃত্তিকা : প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মৃত্তিকা ভারতের জলবায়ুকে বিভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রণ করে । শুকনো বালি ও পাথুরে জমি সূর্যকিরণে সহজেই উত্তপ্ত হয় বলে উষ্ণতা বেশি । আবার রাতে দ্রুত তাপ বিকিরণ করে সহজেই শীতল হয়ে যায় । এই কারণেই মুক্তিকার প্রভাবে উষ্ণতার পরিবর্তন হয়ে থাকে ।

=============================================

সঠিক উত্তর নির্বাচন কর (MCQ)

[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান ১]

১। অক্টোবর – নভেম্বর মাসে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় পশ্চিমবঙ্গে যে নামে পরিচিত – (ক) কালবৈশাখী (খ) পশ্চিমিঝঞ্ঝা (গ) লু (ঘ) আশ্বিনের ঝড়
উত্তর- অক্টোবর – নভেম্বর মাসে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় পশ্চিমবঙ্গে যে নামে পরিচিত ঘ) আশ্বিনের ঝড়।

২। ভারতের একটি বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল হল –
(ক) ছোটোনাগপুর মালভূমি (খ) পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম দিক (গ) শিলং মালভূমি (ঘ) তামিলনাড়ুর দক্ষিণ – পূর্ব উপকূল

উত্তর- ভারতের একটি বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল হল (গ) শিলং মালভূমি।

৩। মৌসুমি বিস্ফোরণের ফলে যে ঋতুর সূচনা হয়, তা হল –
(ক) গ্রীষ্মকাল (খ) বর্ষাকাল (গ) শীতকাল (ঘ) শরৎকাল

উত্তর- মৌসুমি বিস্ফোরণের ফলে যে ঋতুর সূচনা হয়, তা হল (খ) বর্ষাকাল।

৪। ভারতের জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য হল –
(ক) ঋতু পরিবর্তন (খ) অধ্যতিক উষ্ণতা (গ) অত্যধিক বৃষ্টিপাত (ঘ) অত্যধিক শৈত্য

উত্তর- ভারতের জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য হল (ক) ঋতু পরিবর্তন।

৫। ভারতের বৃষ্টিপাতের অধিকাংশই হল –
(ক) পরিচলন প্রকৃতির (খ) শৈলোৎক্ষেপ প্রকৃতির (গ) ঘূর্ণবাত প্রকৃতির (ঘ) কোনোটিই নয়

উত্তর- ভারতের বৃষ্টিপাতের অধিকাংশই হল (খ) শৈলোৎক্ষেপ প্রকৃতির।

৬। মরু জলবায়ুর প্রভাব পরিলক্ষিত হয় ভারতের –
(ক) উত্তরাংশে (খ) মধ্যভাগে (গ) পশ্চিমাংশে (ঘ) পূর্বাংশে

উত্তর- মরু জলবায়ুর প্রভাব পরিলক্ষিত হয় ভারতের (গ) পশ্চিমাংশে।

৭। পশ্চিমিঝঞ্ঝা সৃষ্টি হয় –
(ক) আরব সাগরে (খ) লোহিত সাগরে (গ) ভূমধ্যসাগরে (ঘ) বঙ্গোপসাগরে

উত্তর- পশ্চিমিঝঞ্ঝা সৃষ্টি হয় (গ) ভূমধ্যসাগরে।

৮। ভারতের জলবায়ুর ওপর যে পর্বতের প্রভাব সবচেয়ে বেশি –
(ক) আরবল্লি (খ) হিমালয় (গ) পশ্চিমঘাট (ঘ) কারাকোরাম

উত্তর- ভারতের জলবায়ুর ওপর যে পর্বতের প্রভাব সবচেয়ে বেশি (খ) হিমালয়।

৯। ভারত থেকে মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাবর্তন ঘটে –
(ক) গ্রীষ্মকালে (খ) শরৎকালে (গ) শীতকালে (ঘ) বসন্তকালে

উত্তর- ভারত থেকে মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাবর্তন ঘটে (খ) শরৎকালে।

১০। কালবৈশাখীর মতো গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ ভারতে যে ঝড় – বৃষ্টি হয় তার নাম –
(ক) নরওয়েস্টার (খ) বরদৈছিলা (গ) আম্রবৃষ্টি (ঘ) চেরি ব্লসম

উত্তর- কালবৈশাখীর মতো গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ ভারতে যে ঝড় – বৃষ্টি হয় তার নাম (গ) আম্রবৃষ্টি।

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (VSAQ)

[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান ১]

১। পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাতযুক্ত জেলার নাম কি?
উত্তর- পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাতযুক্ত জেলার নাম পুরুলিয়া।

২। পশ্চিমিঝঞ্ঝা থেকে কি সুবিধা হয়?
উত্তর- পশ্চিমিঝঞ্ঝা থেকে রবিশস্য উৎপাদন হয়।

৩। ভারতের সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয় কোথায়?
উত্তর- ভারতের সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয় রাজস্থানের থর মরুভূমিতে।

৪। আশ্বিনের ঝড় কোন ঋতুতে হয়?
উত্তর- আশ্বিনের ঝড় শরৎকালে হয়।

৫। দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ভারতের মূল ভূখন্ডে কোন মাসে প্রবেশ করে?
উত্তর- দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ভারতের মূল ভূখন্ডে জুন মাসে প্রবেশ করে।

৬। ভারতের সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয় কোথায়?
উত্তর- ভারতের সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয় রাজস্থানের থর মরুভূমিতে।

সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন (SAQ)

[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান ২]

১। জলবায়ু অঞ্চল কাকে বলে?
উত্তর- জলবায়ু অঞ্চল বলতে কোন দেশ বা মহাদেশের এমন এক বা একাধিক অঞ্চলকে বোঝায়, যেখানে জলবায়ুর প্রকৃতি বিশেষত উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাত মোটামুটি একই ধরনের হয়।
উদাহরণ -ভারতের শীতল পার্বত্য অঞ্চল বলতে বোঝায় যেখানে তাপমাত্রা সারাবছর হিমাঙ্কের নীচে থাকে। যথা- পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং-এর পার্বত্য অঞ্চল, জম্মু-কাশ্মীরের পার্বত্য অঞ্চল।

২। আম্রবৃষ্টি কাকে বলে?
উত্তর- গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ ভারতের তামিলনাডু, অন্ধ্রপ্রদেশ ও কর্নাটক রাজ্যে ব্জ্রবিদ্যুত সহ ঘূর্ণীবায়ুর প্রভাবে যে বৃষ্টিপাত হয়, তাকে আম্রবৃষ্টি বলে। এই অঞ্চলে এই বৃষ্টিপাতের প্রভাবে আমের ফলন ভালো হয়, তাই একে আম্রবৃষ্টি বলে। এই বৃষ্টিপাত কর্ণাটকে চেরি ব্লসম নামে পরিচিত।

৩। মৌসুমি বায়ুর অনিশ্চয়তা বলতে কী বোঝ?
উত্তর-ভারতের ৯০% বৃষ্টিপাত দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সঙ্ঘটিত হয়, কিন্তু মৌসুমি বৃষ্টিপাত খুবই অনিশ্চিত, কারণ- ক)প্রতি বছর মৌসুমি বায়ু সমপরিমাণে জলীয় বাষ্প নিয়ে আসে না। খ)মৌসুমি বায়ুর আগমন ও প্রত্যাগমন প্রতি বছর একই সময়ে ঘটে না। এর ফলেই ভারতে খরা ও বন্যা দেখা যায়।

৪। আঁধি কাকে বলে?
উত্তর- পশ্চিম ভারতের দিল্লি, পাঞ্জাব, রাজস্থান, ও উত্তরপ্রদেশের কিছু অঞ্চল গ্রীষ্মকালের বিকেলবেলার দিকে কখনও কখনও ধুলোর ঝড় প্রবাহিত হতে থাকে, একে আঁধি বলে। আঁধির সময় বাতাস পরিচলন পদ্ধধিতে প্রচুর পরিমাণে ধুলোকণা সংগ্রহ করে প্রতি ঘণ্টায় ৭০-১০০ কিমি বেগে প্রবাহিত হতে থাকে। আঁধি প্রবাহিত হলে তাপমাত্রা কিছুটা কমে।

বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্ন উত্তর

[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান ৩]

১। ভারতের জলবায়ুকে কী কী ঋতুতে ভাগ করা যায়?
উত্তর-ভারতের বিশাল আয়তন ও বিচিত্র ভূ-প্রকৃতির জন্য জলবায়ুর আঞ্ছলিক তারতম্য থাকলেও ভারত প্রধানত ক্রান্তীয় মৌসুমি দেশ। ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ ভারতীয় জলবায়ুকে চারটি প্রধান ঋতুতে ভাগ করেছেন।
যথা- ১) গ্রীষ্মকাল( মার্চ থেকে মে), ২) বর্ষাকাল (জুন থেকে সেপ্টেম্বর) বা মৌসুমি বায়ুর আগমনকাল ,৩) শরতকাল (অক্টোবর থেকে নভেম্বর) বা ৪) শীতকাল ( ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী।

২। ভারতে মৌসুমি জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর-
১) মৌসুমি বায়ু গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ- পশ্চিম এবং শীতকালে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হয়।
২) দক্ষিণ- পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বর্ষাকালে ভারতের সর্বাধিক পরিমাণ বৃষ্টি হয়।
৩) উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতে শীতকাল শুস্ক হয়। এই সময়ে পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাবে ভারতে বৃষ্টিপাত হয়।
৪) মৌসুমি বায়ুর খামখেয়ালিপনার জন্য ভারতে প্রায়ই খরা ও বন্যার প্রাদুর্ভাব দেখা যায়।
৫) দক্ষিণ ভারতের জলবায়ুর তুলনায় উত্তর ভারতের জলবায়ু অনেক বেশী চরমভাবাপন্ন।
৬) মৌসুমি জলবায়ুর প্রভাবে ভারতে বৃষ্টিপাতের বণ্টন অসম।

৩। মৌসুমি বায়ুর ওপর জেট বায়ুর প্রভাব ব্যাখ্যা করো।
উত্তর- গ্রীষ্মকালে তিব্বত মালভূমির গরম বায়ু পুবালি জেট বায়ুকে শক্তিশালী করে তোলে। এই পুবালি জেটের প্রভাবে ভারতবর্ষের মাঝবরাবর যে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয় তার প্রভাবে প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটে। আবার, অনেক সময় উপক্রান্তীয় জেট বায়ুর উত্তরে সরে যাওয়ার ফলে মৌসুমি বিস্ফোরণ হয়। অনেকসময় আবার তিব্বত মাল্ভূমির তাপমাত্রা কম থাকায় ক্রান্তীয় জেট বায়ু শক্তিশালী হতে পারে না, ফলে অনিয়মিত বৃষ্টিপাত হতে দেখা যায়। এছাড়া পশ্চিমী জেট বায়ু শীতকালে ভূমধ্যসাগর থেকে পশ্চিমী ঝঞ্ঝাকে ভারতে নিয়ে আসে এবং উত্তর পশ্চিম ভারতে তুষারপাত ঘটায়। এই ভাবে জেট বায়ু মৌসুমি বায়ুর ওপর প্রভাব ফেলে।

৪। ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্ব দিকে বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণ লেখো।
উত্তর- গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ- পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আরব- সাগরীয় শাখাটি আরব সাগরের শাখাটি আরব সাগরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প বহন করে নিয়ে এসে পশ্চিমঘাট পর্বতে বাধা পেয়ে পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে মালাবার উপকূল ও কোঙ্কণ উপকূলে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। এই আরব সাগরীয় শাখাটি যখন পশ্চিমঘাট পর্বত অতিক্রম করে পূর্ব ঢালে পৌঁছায় তখন বায়ুতে জলীয় বাষ্প খুব কম পরিমাণে উপস্থিত থাকায় পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্ব ঢালে বৃষ্টিপাত কম হয় ।

৫। বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল বলতে কী বোঝ? উদাহরণ দাও।
উত্তর- সমুদ্রের ওপর দিয়ে বয়ে আসা জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু পর্বতের অনুবাত ঢালে বাধা পেয়ে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত ঘটায়। পর্বত পেরিয়ে ঐ বায়ু যখন পর্বতের বিপরীত ঢালে পৌঁছায় তখন ঐ বায়ুতে জলীয় বাষ্প প্রায় খুব অল্প পরিমাণে থাকে।এই কারণে পর্বতের অনুবাত ঢালের বিপরীতে তথা প্রতিবাত ঢালে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুব অল্প পরিমাণে ঘটায় এই অঞ্চলকে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল বলে।
উদাহরণ- পশ্চিমঘাট পর্বতের প্রতিবাত ঢালে থাকা দাক্ষিণাত্য মালভূমির অভ্যন্তর হল একটি বৃষ্টিচছায় অঞ্চলের উদাহরণ।

৬। করমণ্ডল উপকূল তথা তামিলনাড়ুতে বছরে দু-বার বৃষ্টিপাত হয় কেন?
উত্তর- গ্রীষ্মকাল(জুন মাসে) দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর বঙ্গোপ্সাগরীয় শাখা অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাডু রাজ্যের করমন্ডল উপকূলে বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের দিকে অগ্রসর হয়। আবার শীতকালের শুরুতে (অক্টোবর- নভেম্বর মাসে) উত্তর ভারতের উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে প্রবাহিত বায়ুর সঙ্গে দক্ষিণ- পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর সংঘর্ষের ফলে যে ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়, তা দক্ষিণ- পশ্চিম মৌসুমি বায়ুকে প্রত্যাবর্তন করতে বাধ্য করে। বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় প্রত্যাবর্তনকারী মৌসুমি বায়ু প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে এবং করমন্ডল তথা তামিলনাডু উপকূলে দুবার বৃষ্টিপাত ঘটায়।

 

দীর্ঘ উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন (LA)

[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান ৫]

১। ভারতের জলবায়ুর নিয়ন্ত্রকগুলির ভূমিকা আলোচনা করো।
উত্তর-ভারতের জলবায়ু বেশ বৈচিত্র্যময়।জলবায়ুর নিয়ন্ত্রণকারী উপাদানের উপস্থিতিতেই জলবায়ু বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। নিয়ন্ত্রকগুলি হল-

ক) অক্ষাংশগত অবস্থান
ভারতের অবস্থান প্রায় 8‌‌‌°4’ উত্তর থেকে 37°17’ উত্তর অক্ষরেখার মধ্যে এবং কর্কটক্রান্তিরেখা ভারতের মাঝখান বরাবর প্রসারিত। কর্কটক্রান্তিরেখা দক্ষিণ অংশ ক্রান্তীয়মন্ডলে এবং উত্তর অংশ নাতিশীতোষ্ন মন্ডলে অবস্থিত।

খ) সমুদ্র থেকে দূরত্ব
ভারতের উত্তর এবং উত্তর পশ্চিম অংশের অবস্থান সমুদ্র থেকে দূরবর্তী হওয়ায় এখানকার জলবায়ু চরমভাবাপন্ন। এখানে শীত ও গ্রীষ্মের প্রসার খুব বেশী। আর অন্যদিকে ভারতের দক্ষিণ অংশের তিনদিক সমুদ্র বেষ্টিত হওয়ায় এখানকার জলবায়ু নাতিশীতোষ্ন প্রকৃতির।

গ) হিমালয়ের অবস্থান
ভারতের উত্তরে হিমালয় পর্বত অবস্থান করছে যার ফলে এশিয়ার অতিশীতল বায়ু ভারতে প্রবেশ করতে পারে না যার ফলে ভারত অতি শীতের প্রকোপ হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। আবার অন্যদিকে তেমন দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ু এখানে বাধা প্রাপ্ত হয়ে উত্তর পূর্ব ভারতে প্রচুর পরিমানে বৃষ্টিপাত ঘটায়।

ঘ) ক্রান্তীয় ঘূর্নবাতের প্রভাব
আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগর ভারতের জলবায়ুর উপর প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলে। মৌসুমী বায়ু আগমনের সময় এবং প্রত্যাবর্তনের সময় সমুদ্রের উপর সৃষ্ট নিম্মচাপের কারনে ঘূর্ণবাত বা সাইক্লোন সৃষ্টি হয়। যা উপকূলভাগে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায় এবং উষ্নতা কিছুটা হ্রাস পায়।

ঙ) মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ
ভারতের জলবায়ুর প্রধান নিয়ন্ত্রক হল মৌসুমী বায়ু। মৌসুমী বায়ুর আগমণ প্রত্যাগমনের জন্যই গ্রীষ্মকাল আর্দ্র এবং শীতকাল শুষ্ক। মৌসুমী বায়ুর কারনেই প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় ভারতের গড় উষ্নতা থাকে 5°-10°C।

 ©kamaleshforeducation.in(2023)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!