মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবনের প্রবহমানতা
সম্পূরক উদ্ভিদের যৌন জনন – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
জীবনের প্রবমানতা হলো জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। জীবনের প্রবমানতার ফলে জীবের বংশগতিগত বৈশিষ্ট্যগুলি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সঞ্চারিত হয়। জীবের এই বৈশিষ্ট্যগুলির কারণে তারা পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে এবং টিকে থাকতে পারে।
T
আদর্শ ফুলের গঠনগত বিভিন্ন অংশসমূহের বর্ণনা দাও ও প্রত্যেকের কাজ লেখো।
আদর্শ ফুল একটি গুল্ম বা ছোট উদ্ভিদ। এর গঠনগত বিভিন্ন অংশ হল মধুকর্মক, ক্ষেত্রফলক, কর্ণফুল, পাতা, শাখা এবং ফুলের পালক ইত্যাদি। আদর্শ ফুলের প্রধান কাজ হল শুষ্কতা থেকে রক্ষা করা, বীজ প্রস্তুত করা, মধু উৎপাদন করা এবং পুষ্পকালে পরিচর্যা করা।
আদর্শ ফুলের গঠনগত বিভিন্ন অংশ ও তাদের কাজ
যে ফুলে পুষ্পাক্ষের ওপর চারটি স্তবক অর্থাৎ বৃতি, দলমণ্ডল, পুংস্তবক ও স্ত্রীস্তবক বর্তমান, তাকে আদর্শ ফুল বলে। যেমন — জবা ফুল। আদর্শ ফুলের এই চারটি স্তবকের মধ্যে পুংস্তবক বা পুংকেশর চক্র এবং স্ত্রীস্তবক বা গর্ভকেশর চক্র জননে সাহায্য করে বলে এদের অত্যাবশ্যকীয় স্তবক বা জনন স্তবক বলে। আবার বৃতি ও দলমণ্ডল জননে অংশ নেয় না বলে এদের সাহায্যকারী স্তবক বলে। আদর্শ ফুলের গঠনগত বিভিন্ন অংশগুলি সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হল।
- বৃতি – ফুলের একেবারে বাইরের দিকের স্তবককে বৃতি বলে। বৃত্তি সবুজ রঙের হয়।বৃতির এক-একটি ছোটো পাতার মতো অংশকে বৃত্যংশ বলে। অনেকক্ষেত্রে বৃতির নীচের দিকে সবুজ বর্ণের উপবৃতি থাকে।
- কাজ – 1. বৃতি কুঁড়ি অবস্থায় ফুলের অন্যান্য স্তবককে উষ্ণতা, ঠান্ডা, বৃষ্টি ও কীটপতঙ্গের আক্রমণ প্রভৃতি থেকে রক্ষা করে। 2. সবুজ বৃতি সালোকসংশ্লেষে অংশগ্রহণ করে।
- দলমণ্ডল – বৃতির পরবর্তী অংশ বা ফুলের দ্বিতীয় স্তবককে দলমণ্ডল বলে। দলমণ্ডলের প্রতিটি অংশকে দলাংশ বা পাপড়ি বলে। এই দলাংশ বা পাপড়ি সাদা বা বিভিন্ন বর্ণের ও গন্ধহীন বা সুগন্ধযুক্ত হয়।
- কাজ – 1. কুঁড়ি অবস্থায় দলমণ্ডল ফুলের ভিতরের দিকের অপরিহার্য দুটি স্তবককে উষ্ণতা, ঠান্ডা, বৃষ্টি ও কীটপতঙ্গের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। 2. ফুলের এই অংশ বর্ণময় ও সুগন্ধযুক্ত হওয়ায় কীটপতঙ্গকে পরাগযোগের জন্য আকৃষ্ট করে।
- পুংকেশর চক্র বা পুংস্তবক – ফুলের তৃতীয় স্তবককে পুংকেশর চক্র বা পুংস্তবক বলে। এর প্রতিটি অংশকে বলে পুংকেশর। প্রতিটি পুংকেশরের দুটি অংশ বর্তমান — পুংদণ্ড ও পরাগধানী। পুংদণ্ডের মাথায় অবস্থিত থলির মতো অংশকে পরাগধানী এবং পরাগধানীর নীচের দণ্ডাকার অংশকে পুংদণ্ড বলে। পরাগধানীর ভিতরে অসংখ্য পরাগরেণু থাকে।
- কাজ – পুংস্তবকের পরাগধানী পরাগরেণু উৎপন্ন করে যৌন জননে সাহায্য করে।
- গর্ভকেশর চক্র বা স্ত্রীস্তবক – ফুলের চতুর্থ স্তবককে গর্ভকেশর চক্র বা স্ত্রীস্তবক বলে। এটি একটি বা একাধিক গর্ভপত্র বা গর্ভকেশর নিয়ে গঠিত। প্রতিটি গর্ভপত্রের আবার তিনটি অংশ — ডিম্বাশয় বা গর্ভাশয়, গর্ভদণ্ড এবং গর্ভমুণ্ড। গর্ভদণ্ডের নীচের স্ফীত অংশকে গর্ভাশয়, গর্ভাশয়ের পরবর্তী সরু দণ্ডাকার অংশকে গর্ভদণ্ড ও গর্ভদণ্ডের মাথায় অবস্থিত গোলাকার অংশকে গর্ভমুণ্ড বলে।
- কাজ – 1. স্ত্রীস্তবক ডিম্বাণু উৎপন্ন করে নিষেকে সাহায্য করে। 2. ফল ও বীজ উৎপাদন করে।
ফুলকে পরিবর্তিত বিটপ বলা হয় কেন? সহকারী ও অত্যাবশ্যকীয় (অপরিহার্য) স্তবকের পার্থক্য লেখো।
ফুল হল একটি পরিবর্তিত বিটপ যা শাখার মাধ্যমে বীজ উৎপাদন করে এবং পুষ্পকালে আকর্ষণীয় দৃশ্য সৃষ্টি করে।
ফুল একটি পরিবর্তিত বিটপ
ফুলকে পরিবর্তিত বিটপ বলার কারণগুলি হল — 1. পত্রমুকুলের মতো পুষ্পমুকুলও পাতার কক্ষ থেকে বা কাণ্ডের শীর্ষ অঞ্চলের উৎপন্ন হয়। 2. পুষ্পাক্ষের ওপর ফুলের স্তবকগুলির সজ্জারীতি কাণ্ডের ওপরে পত্রবিন্যাসের মতো। 3. কাণ্ডের মতো পুষ্পাক্ষেও পর্ব ও পর্বমধ্য উপস্থিত। 4. বৃত্যংশ ও দলাংশ পাতার মতো শিরা উপশিরাযুক্ত হয়।
সহকারী ও অত্যাবশ্যকীয় (অপরিহার্য) স্তবকের পার্থক্য
বিষয় | সহকারী স্তবক | অত্যাবশ্যকীয় (অপরিহার্য) স্তবক |
1. জননকোশ উৎপন্ন করার ক্ষমতা | জননকোশ উৎপন্ন করে না। | পুং-জননকোশ বা পরাগরেণু এবং স্ত্রী জননকোশ বা ডিম্বাণু উৎপন্ন করে। |
2. কাজ | পুংস্তবক ও স্ত্রীস্তবককে সুরক্ষা দেয় ও পরাগমিলনে সাহায্য করে। | জননে সরাসরি অংশগ্রহণ করে। |
3. উদাহরণ | বৃতি ও দলমণ্ডল। | পুংকেশর চক্র ও গর্ভকেশর চক্র। |
স্বপরাগযোগ কাকে বলে? উদাহরণসহ লেখো। স্বপরাগযোগের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।
স্বপরাগযোগ হল মানব দেহের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ক্রিয়া, যার মাধ্যমে শ্বাসকোশে রক্তের অক্সিজেন বিনিময় হয়।
স্বপরাগযোগ
কোনো ফুলের পুংকেশরের পরাগধানী থেকে পরাগরেণু সেই ফুলের বা সেই গাছের অন্য কোনো ফুলের গর্ভমুণ্ডে স্থানান্তরিত হওয়ার পদ্ধতিকে স্বপরাগযোগ বলে। যেমন — সন্ধ্যামালতী, শিম, ধুতরো, মটর ইত্যাদি উদ্ভিদে স্বপরাগযোগ ঘটে।
স্বপরাগযোগের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য
স্বপরাগযোগের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি হল — 1. এইজাতীয় পরাগযোগ সহবাসী উদ্ভিদে সম্পন্ন হয়। 2. এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ফুলের পরাগধানী ও গর্ভদণ্ড একই সময়ে পরিণত হয়। 3. এইজাতীয় পরাগযোগ একই ফুলেও ঘটে (অটোগ্যামি), আবার একই উদ্ভিদের দুটি ফুলের মধ্যেও সম্পন্ন হতে পারে (গেইটোনোগ্যামি)। 4. সাধারণত উভলিঙ্গ ফুলের ক্ষেত্রে স্বপরাগযোগ ঘটে। 5. এক্ষেত্রে ফুলের পরাগরেণুর অপচয় অনেক কম হয়। 6. এইজাতীয় পরাগযোগের ফলে সংশ্লিষ্ট উদ্ভিদ থেকে নতুন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন উদ্ভিদ পাওয়া যায় না। 7. অপত্য উদ্ভিদের গুণগত মান একই থাকে অথবা কমতে থাকে। 8. এইপ্রকার পরাগযোগে সাধারণত কোনো বাহকের প্রয়োজন হয় না।
ইতর পরাগযোগ কাকে বলে? উদাহরণসহ লেখো। ইতর পরাগযোগের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি করো।
ইতর পরাগযোগ হল পারস্পরিক সংস্পর্শ ছাড়াও একটি জীবের সংসার পরিচালনা করা এবং জীবাশ্রয়ী সম্পর্ক তৈরি করা।
ইতর পরাগযোগ
কোনো একটি ফুলের পুংকেশরের পরাগধানী থেকে উৎপন্ন পরাগরেণু একই প্রজাতিভুক্ত বা অন্য প্রজাতিভুক্ত অপর একটি গাছে উৎপন্ন ফুলের গর্ভমুণ্ডে স্থানান্তরিত হওয়ার পদ্ধতিকে ইতর বা বিপরীত পরাগযোগ বলে। যেমন — তাল, পেঁপে, আম, পটল, কুমড়ো ইত্যাদি উদ্ভিদে ইতর পরাগযোগ ঘটে।
ইতর পরাগযোগের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য
ইতর পরাগযোগে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। যথা — 1. একলিঙ্গ ফুলের ক্ষেত্রেই কেবল ইতর পরাগযোগ হয়। 2. এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ফুলগুলির বিষম পরিণতি দেখা যায়। অর্থাৎ, পুংস্তবক ও স্ত্রীস্তবক একসাথে পরিণত না হয়ে ভিন্ন সময়ে পরিণত হয়। 3. ফুলের গঠনগত প্রতিবন্ধকতার জন্য অনেকক্ষেত্রে ইতর পরাগযোগ সম্ভব হয় না। 4. এক ফুল থেকে অন্য ফুলে পরাগরেণুর স্থানান্তরণের জন্য বিভিন্ন বাহকের (বায়ু, জল, পতঙ্গ) প্রয়োজন হয়। 5. একই প্রজাতির বা অন্য প্রজাতির দুটি ভিন্ন বৈশিষ্ট্যযুক্ত উদ্ভিদের দুটি ভিন্ন ফুলের মধ্যে পরাগযোগ সম্পন্ন হয় বলে অপত্য উদ্ভিদে প্রকরণের সৃষ্টি হয়।
চিত্রসহ একটি সপুষ্পক উদ্ভিদের নিষেক এবং নতুন উদ্ভিদ গঠন পদ্ধতি বর্ণনা করো।
সপুষ্পক উদ্ভিদের নিষেক হল একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে পুষ্পপ্রস্তর উৎপন্ন হয় এবং পুষ্পবিশিষ্ট ফল উৎপন্ন হয়।
সপুষ্পক উদ্ভিদের নিষেক
সপুষ্পক উদ্ভিদের নিষেক প্রক্রিয়া উন্নতমানের হয়। সপুষ্পক গুপ্তবীজী উদ্ভিদের নিষেক পদ্ধতির বিভিন্ন ধাপগুলি পরের পাতায় বিশদে বর্ণনা করা হল।
স্বপরাগযোগ ও ইতর পরাগযোগের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি লেখো।
স্বপরাগযোগ ও ইতর পরাগযোগের সুবিধা ও অসুবিধা
বিষয় | স্বপরাগযোগ | ইতর পরাগযোগ |
এক্ষেত্রে বাহকের প্রয়োজনীয়তা না থাকায় পরাগযোগের নিশ্চয়তা বেশি। এক্ষেত্রে পরাগরেণুর অপচয় কম হয়। | এক্ষেত্রে বৈশিষ্ট্যযুক্ত অপত্য উদ্ভিদ সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ, প্রকরণ ঘটে যা প্রতিকূল পরিবেশে অভিযোজিত হতে সাহায্য করে। | |
সুবিধা | স্বপরাগযোগে উৎপন্ন বীজ তথা অপত্য উদ্ভিদ একই বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হওয়ায় প্রজাতির বিশুদ্ধতা বজায় থাকে। | ইতর পরাগযোগে উৎপন্ন বীজ তথা অপত্য উদ্ভিদ উন্নতমানের বৈশিষ্ট্যযুক্ত হয় ও এদের বীজের অঙ্কুরণের হার বেশি হয়। |
নতুন বৈশিষ্ট্যযুক্ত অপত্য উদ্ভিদ উৎপন্ন হতে পারে না। অর্থাৎ, প্রকরণ ঘটে না ফলে অবলুপ্তির সম্ভাবনা থাকে। | ইতর পরাগযোগ বাহক-নির্ভর হওয়ায় এদের ক্ষেত্রে পরাগযোগের নিশ্চয়তা কম। | |
অসুবিধা | স্বপারাগযোগে উৎপন্ন বীজ নিম্নমানের হয় ও অঙ্কুরণের হার কম হয়। | ইতর পরাগযোগের ক্ষেত্রে পরাগরেণুর অপচয়ের মাত্রা অনেক বেশি হয়। |
বিভিন্ন প্রকার বাহকের মাধ্যমে ইতর পরাগযোগ উদাহরণ সহযোগে ব্যাখ্যা দাও।
ইতর পরাগযোগের বিভিন্ন বাহক এবং উদাহরণ
বাহক | ব্যাখ্যা | উদাহরণ |
বায়ুর মাধ্যমে | বায়ুর মাধ্যমে সংঘটিত ইতর পরাগযোগকে বায়ু দ্বারা পরাগযোগ বা অ্যানিমোফিলি বলে। যেসব ফুলের পরাগযোগ বায়ুর মাধ্যমে ঘটে, তাদের বায়ুপরাগী ফুল বা অ্যানিমোফিলাস ফুল বলে। এই ফুলগুলি বর্ণহীন, গন্ধহীন, অনুজ্জ্বল ও ক্ষুদ্র হয়। ফুলে মকরন্দ থাকে না। | ধান |
জলের মাধ্যমে | জলের মাধ্যমে সংঘটিত ইতর পরাগযোগকে জলের দ্বারা পরাগযোগ বা হাইড্রোফিলি বলে। যেসব| ফুলের পরাগযোগ জলের মাধ্যমে ঘটে, তাদের জলপরাগী ফুল বা হাইড্রোফিলাস ফুল বলে ফলুগুলি বর্ণহীন, গন্ধহীন, অনুজ্জ্বল ও ক্ষুদ্র হয়। পরাগযোগ জলের ওপরে ঘটলে (যেমন — পাতাঝাঝি) পরাগরেণু হালকা হয়, নতুবা তা ভারী হয়। | পাতাঝাঝি |
পতঙ্গের মাধ্যমে | পতঙ্গের মাধ্যমে সংঘটিত ইতর পরাগযোগকে পতঙ্গের দ্বারা পরাগযোগ বা এন্টোমোফিলি বলে। যেসব ফুলের পরাগযোগ পতঙ্গের মাধ্যমে ঘটে, তাদের পতঙ্গ পরাগী ফুল বা এন্টোমোফিলাস ফুল বলে। এই ফুলগুলি উজ্জ্বল বর্ণের, মকরন্দযুক্ত ও সুমিষ্ট গন্ধযুক্ত হয়। | আম |
পাখির মাধ্যমে | পাখির মাধ্যমে সংঘটিত ইতর পরাগযোগকে পাখির দ্বারা পরাগযোগ বা অরনিথোফিলি বলে। যেসব ফুলের পরাগযোগ পাখির মাধ্যমে ঘটে, তাদের পক্ষীপরাগী ফুল বা অরনিথোফিলাস ফুল বলে। এই ফুলগুলি আকারে বড়ো, উজ্জ্বল এবং মকরন্দযুক্ত হয়। অনেকক্ষেত্রে পরাগধানীগুলি পাখির খাদ্য হিসেবে গৃহীত হয়। তার ফলে পরাগযোগ ঘটে থাকে। | শিমুল |
ডিম্বক কী? লম্বচ্ছেদে ডিম্বকের চিহ্নিত চিত্রসহ গঠন বর্ণনা করো।
ডিম্বক হল একটি জীবাণুমুক্ত স্তনধারী প্রাণী, যার গর্তে শিশুরা প্রসব করে।
ডিম্বক
যে ত্বকবেষ্টিত গর্ভকেশরের অংশ থেকে বীজ গঠিত হয় ও যা স্ত্রীরেণুকে ধারণ করে, তাকে ডিম্বক বলে।
ডিম্বকের গঠন
ডিম্বকের বিভিন্ন অংশগুলি নীচে উল্লেখ করা হল।
- ডিম্বকবৃন্ত – পরিণত ডিম্বকের একটি ছোটো বৃন্ত থাকে, যা ডিম্বককে অমরার সাথে সংযুক্ত রাখে একে ডিম্বকবৃন্ত বলে।
- ডিম্বকমূল – ডিম্বকের যে অংশ থেকে ডিম্বকত্বক উৎপন্ন হয়, তাকে ডিম্বকমূল বলে।
- ডিম্বকনাভি – ডিম্বকবৃত্তের সঙ্গে ডিম্বকমূলের সংযোগস্থলকে ডিম্বকনাভি বলে।
- ডিম্বকত্বক – ডিম্বকের আবরণীকে ডিম্বকত্বক বলে।
- ভ্ৰূণপোষক কলা – ডিম্বকত্বকের নীচে অবস্থিত যে কলা ডিম্বকের ভূণস্থলীকে ঘিরে রাখে, সেই কলাগুচ্ছকে ভ্ৰূণপোষক কলা বলে।
- ডিম্বকরন্ধ্র – ডিম্বকত্বক ভ্রূণপোষক কলাকে সম্পূর্ণ- ভাবে আবৃত রাখে না। এই অনাবৃত অংশকে ডিম্বকরন্ধ্র বলে।
- ভূগস্থলী – ভ্রূণপোষক কলার ভিতরে একটি বৃহৎ থলির মতো কোশ বর্তমান থাকে, যাকে ভ্রূণস্থলী বা ভ্রূণাধার বলে। এটি ডিম্বকের প্রধান কোশ। প্রতিটি ভ্রূণস্থলীতে ৪টি হ্যাপ্লয়েড (n) নিউক্লিয়াস বিশেষভাবে বিন্যস্ত থাকে, যার মধ্যে 3টি ডিম্বকরন্ধ্রের দিকে অবস্থিত। এদের একত্রে গর্ভযন্ত্র বলে। এই তিনটির মধ্যে একটিকে ডিম্বাণু ও বাকি দুটিকে সহকারী কোশ বলে। ভ্রূণস্থলীর মাঝে দুটি নিউক্লিয়াস যুক্ত হয়ে ডিপ্লয়েড (2n) ক্রোমোজোম-বিশিষ্ট নির্ণীত নিউক্লিয়াস গঠন করে। ডিম্বকরন্ধ্রের বিপরীত দিকে বর্তমান 3টি নিউক্লিয়াসকে একত্রে প্রতিপাদ কোশসমষ্টি বলে।
বায়ুপরাগী ফুলের ও জলপরাগী ফুলের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
বায়ুপরাগী ফুল হল একধরনের ফুল যা হাওয়ার মাধ্যমে বীজ বিতরণ করে এবং বাতাসে সুগন্ধ ছড়ায়।
বায়ুপরাগী ফুলের বৈশিষ্ট্য
বায়ুপরাগী ফুলের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল — 1. বায়ুপরাগী ফুল সাধারণত সাদা, অনুজ্জ্বল এবং ক্ষুদ্রাকার হয়। এইজাতীয় ফুল দুটি – আকর্ষী হয় না। 2. এইজাতীয় ফুলে মকরন্দ সঞ্চিত হয় না এবং ফুল সাধারণত গন্ধহীন হয়। 3. দীর্ঘ পুংদণ্ডের উপস্থিতির জন্য দোদুল্যমান পরাগধানী দলমণ্ডলের বাইরে বেরিয়ে আসে। 4. বায়ু দ্বারা বাহিত হবার সময় পরাগরেণু অপচয় হয়, তাই অধিক পরিমাণে পরাগরেণু উৎপন্ন হয়। 5. পরাগরেণু যাতে বাতাসে সহজে উড়তে পারে, তার জন্য পরাগ খুবই হালকা হয়।
জলপরাগী ফুলের বৈশিষ্ট্য
জলপরাগী ফুলের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল — 1. জলপরাগী ফুলের আকৃতি ক্ষুদ্র হয় এবং ফুলগুলি অনুজ্জ্বল প্রকৃতির। 2. জলের তলায় যে ফুলের পরাগযোগ সম্পন্ন হয়, সেই ফুলের পরাগরেণু অপেক্ষাকৃত ভারী হয়। 3. রেণুগুলির বাইরের ত্বকে মোমজাতীয় পদার্থের আস্তরণ থাকে। 4. কিছুসংখ্যক জলপরাগী ফুলের গর্ভকেশর এবং পুংকেশর দলাংশ দিয়ে ঢাকা থাকে না। 5. পরাগরেণুগুলি ক্ষুদ্র হয় এবং সহজে জলের মাধ্যমে একস্থান থেকে অন্যস্থানে স্থানান্তরিত হতে পারে।
পতঙ্গপরাগী ফুল হল একধরনের ফুল যা রাতে উজ্জ্বল হয় এবং পতঙ্গের মাধ্যমে তাদের বীজ বিতরণ করে।
পতঙ্গপরাগী ও পাখিপরাগী ফুলের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
পতঙ্গপরাগী ফুলের বৈশিষ্ট্য
পতঙ্গপরাগী ফুলের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি হল — 1. পতঙ্গপরাগী ফুলগুলি সাধারণত বড়ো ও উজ্জ্বল বর্ণের হয়। 2. ফুলগুলি সুগন্ধযুক্ত হয় এবং ফুলে অনেক সময় মকরন্দ সঞ্চিত থাকে। 3. এইজাতীয় ফুলে পরাগরেণুর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হয়। 4. পরাগরেণু অপেক্ষাকৃত বড়ো, আঠালো এবং খসখসে হয়, যাতে সহজে পতঙ্গের গায়ে আটকে যেতে পারে। 5. এইপ্রকার ফুলের গর্ভমুণ্ড সাধারণত ক্ষুদ্রাকার, আঠালো এবং খসখসে হয়।
পাখিপরাগী ফুলের বৈশিষ্ট্য
পাখিপরাগী ফুলের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি হল — 1. এই ধরনের ফুলগুলি আকারে বেশ বড়ো হয়। 2. এই ফুলগুলির বর্ণ উজ্জ্বল প্রকৃতির হয়, এতে পাখিরা সহজে আকৃষ্ট হয়। 3. এইজাতীয় ফুলে যথেষ্ট পরিমাণে মকরন্দ সঞ্চিত থাকে। 4. অনেকক্ষেত্রে এই ফুলের পরাগধানীগুলি পাখির খাদ্য হিসেবে গৃহীত হয় ৷
উদ্ভিদের যৌন জনন একটি জটিল প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নতুন উদ্ভিদের জন্ম হয়। যৌন জননের মাধ্যমে নতুন বৈশিষ্ট্যের উদ্ভব, বৈচিত্র্য বৃদ্ধি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
============================================================================================================
সম্পূরক উদ্ভিদের যৌন জনন – অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
উদ্ভিদের যৌন জননে সাহায্যকারী বিশেষভাবে পরিবর্তিত ও সীমিত বৃদ্ধিসম্পন্ন পরিবর্তিত বিটপকে ফুল বা পুষ্প বলে।
ফুলের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি হল — 1. ফুল হল বিটপের পরিবর্তিত রূপ। 2. ফুল সাধারণত কাক্ষিক বা অগ্রমুকুল থেকে উৎপন্ন হয়। 3. ফুলের প্রধান চারটি স্তবক হল — বৃতি, দলমণ্ডল, পুংকেশর চক্র ও গর্ভকেশর চক্র।
যে ফুলের পুষ্পাক্ষের ওপরে চারটি স্তবক উপস্থিত থাকে এবং সবকটি স্বাভাবিক রীতিতে সজ্জিত থাকে, তাকে আদর্শ ফুল বলে। যেমন — জবা ফুল।
যেসব ফুলে সাহায্যকারী স্তবক অর্থাৎ বৃতি এবং দলমণ্ডল থাকে না, তাদের নগ্ন ফুল বলে।
উদাহরণ – লাল পাতা ফুল।
সমৃদ্ধক ফুল – যেসব ফুলের পুষ্পবৃন্ত বা বোঁটা থাকে, তাদের সবৃন্তক ফুল বলে। যেমন — জবা ফুল, গোলাপ ফুল ইত্যাদি।
অবৃত্তক ফুল – যেসব ফুলের পুষ্পবৃন্ত বা বোঁটা থাকে না, তাদের অবৃন্তক ফুল বলে। যেমন — রজনিগন্ধা।
যেসব ফুলে বৃতি, দলমণ্ডল, পুংস্তবক ও স্ত্রীস্তবক — এই চারটি স্তবকই বর্তমান তাদের সম্পূর্ণ ফুল বলে।
উদাহরণ – জবা, মটর, অপরাজিতা, সরষে ইত্যাদি।
যেসব ফুলে চারটি স্তবকের (বৃতি, দলমণ্ডল, পুংকেশর চক্র ও গর্ভকেশর চক্র) মধ্যে এক বা একাধিক স্তবক অনুপস্থিত, তাদের অসম্পূর্ণ ফুল বলে।
উদাহরণ – কুমড়ো, পেঁপে, বনতুলসী, মুক্তঝুরি ইত্যাদি।
যেসব ফুলে পুংস্তবক এবং স্ত্রীস্তবকের মধ্যে যে-কোনো একটি উপস্থিত থাকে, তাদের একলিঙ্গ ফুল বলে। শুধুমাত্র পুংস্তবক থাকলে তাকে পুরুষ ফুল বলে এবং শুধুমাত্র স্ত্রীস্তবক থাকলে তাকে স্ত্রী ফুল বলে।
উদাহরণ – কুমড়ো ফুল।
যেসব ফুলে পুংস্তবক এবং স্ত্রীস্তবক উভয়ই থাকে, তাদের দ্বিলিঙ্গ (বাইসেক্সুয়াল) ফুল বা উভলিঙ্গ (হারমাফ্রোডাইট) ফুল বলে।
উদাহরণ – জবা ফুল, ধুতরো ফুল।
যেসব ফুলে পুংস্তবক ও স্ত্রীস্তবকের কোনোটিই থাকে না, তাদের বন্ধ্যা ফুল বা ক্লীব ফুল বলে।
উদাহরণ – সূর্যমুখীর প্রাপ্ত পুষ্পিকা, তল।
উদ্ভিদের পুংজননকোশ বা পরাগরেণু ও স্ত্রী-জননকোশ বা ডিম্বাণুর মিলনকে নিষেক বা গর্ভাধান বা ফার্টিলাইজেশন বলে।
গুপ্তবীজী উদ্ভিদের দুটি শুক্রাণুর একটি ডিম্বাণুকে এবং অপরটি ডেফিনিটিভ (নির্ণীত) নিউক্লিয়াসকে নিষিক্ত করার পদ্ধতিকে দ্বিনিষেক বলে। পরপর দুবার নিষেক ঘটার জন্যই একে দ্বিনিষেক বলা হয়ে থাকে। প্রথম ক্ষেত্রে ভ্রুণ বা জাইগোট এবং দ্বিতীয় ক্ষেত্রে সস্য নিউক্লিয়াস গঠিত হয়। সস্য-নিউক্লিয়াস ট্রিপ্লয়েড (3n) প্রকৃতির হয়।
যখন কোনো ফুলকে তার অক্ষ বরাবর কেবলমাত্র একবার সমান দুটি অংশে ভাগ করা যায়, তখন সেই ফুলকে এক প্রতিসম ফুল বলে।
উদাহরণ – মটর ফুল।
যে ফুলকে তার অক্ষ বরাবর যে-কোনো উল্লম্বতলে কাটলে সর্বদা পরস্পর সমান দুটি অংশ পাওয়া যায়, তাকে বহুপ্রতিসম ফুল বলে।
উদাহরণ – জবা ফুল।
যেসব ফুলের প্রতিটি স্তবকের অংশগুলি আকৃতিগতভাবে প্রায় সমান এবং একইরকম দেখতে হয়, তাদের সমাঙ্গ ফুল বা সুষম ফুল বলে।
উদাহরণ – ধুতরো ফুল।
যেসব ফুলের প্রতিটি স্তবকের বা যে-কোনো একটি স্তবকের পুষ্পপত্রগুলি আকৃতিগতভাবে একে অপরের থেকে অসমান, তাদের বিষম ফুল বা অসমাঙ্গ ফুল বলে।
উদাহরণ – মটর ফুল।
পুষ্পবৃত্ত – আদর্শ পুষ্পের পুষ্পাক্ষটি যে সরু অংশ দ্বারা কাণ্ডের শাখাপ্রশাখার সঙ্গে যুক্ত থাকে, তাকে পুষ্পবৃত্ত বলে।
পুষ্পবৃত্তের কাজ – ফুলকে কান্ডের শাখাপ্রশাখার সঙ্গে যুক্ত রাখা।
পুষ্পাক্ষ – বৃন্তের ওপরের দিকে যে সংহত, স্ফীত অক্ষে পুষ্পস্তবকগুলি পরপর আর্বতাকারে বা সর্পিলাকারে বিন্যস্ত থাকে, তাকে পুষ্পাক্ষ বা থ্যালামাস বলে।
পুষ্পাক্ষের কাজ – ফুলের বিভিন্ন স্তবককে ধারণ করা।
পুষ্পাক্ষের ওপর যে চারটি স্তবক পরপর সাজানো থাকে, তাদের নাম — 1. বৃতি, 2. দলমণ্ডল, 3. পুংস্তবক, 4. স্ত্রীস্তবক।
বৃতি ও দলমণ্ডলকে ফুলের সাহায্যকারী স্তবক বলে কারণ, এরা উদ্ভিদের জননে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ না করলেও পরোক্ষভাবে সাহায্য করে, যেমন — পরাগযোগের জন্য বিভিন্ন বাহকদের আকৃষ্ট করা।
ফুলের সর্বাপেক্ষা বাইরের বা নীচের দিকে অবস্থিত স্তবক যা ফুলকে কুঁড়ি অবস্থায় ঢেকে রাখে এবং তাকে রক্ষা করে, তাকে বৃতি বা ক্যালিক্স বলে। বৃতির প্রতিটি একককে বৃত্যংশ বলা হয়। কিছুকিছু ফুলে বৃতির ঠিক নীচে উপবৃতি থাকে।
বৃতির দুটি কাজ হল — 1. কুঁড়ি অবস্থায় ফুলের অন্যান্য স্তবকগুলিকে উষ্ণতা, রোদ, বৃষ্টি, কীটপতঙ্গের আক্রমণ ও বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা করা 2. সবুজ বৃতি উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে।
সাধারণত বৃতি কতকগুলি সবুজ পাতার মতো অংশ দ্বারা গঠিত। এই সবুজ অংশ বা একককে বৃত্যংশ বা সেপাল বলে।
কোনো কোনো ফুলে বৃতির নীচে সবুজ বর্ণের পাতার মতো অংশ থাকে, তাদের উপবৃতি বা এপিক্যালিক্স বলে। যেমন — জবা ফুলে উপবৃতি দেখা যায়।
ভ্রূণের যে দণ্ডাকার অংশ থেকে ভ্রূণমূল ও ভ্রূণমুকুল গঠিত হয়, তাকে ভ্রূণাক্ষ বলে।
পাপড়ি বা দলাংশ দ্বারা গঠিত ফুলের বৃতির ভিতরের দিকে থাকা রঙিন বা সাদা দ্বিতীয় স্তবককে দলমণ্ডল বা করোলা বলে।
দলমণ্ডলের কাজ হল — 1. কুঁড়ি অবস্থায় ফুলের অপরিহার্য স্তবক, অর্থাৎ পুংকেশর চক্র এবং গর্ভকেশর চক্রকে ঢেকে রাখে ও রক্ষা করা। 2. উজ্জ্বল রং ও মিষ্টি গন্ধের দ্বারা পরাগযোগের জন্য কীটপতঙ্গকে আকৃষ্ট করা।
বৃতি ও দলমণ্ডলের দুটি পার্থক্য লেখো।
বৃতি ও দলমণ্ডলের পার্থক্যগুলি হল —
বিষয় | বৃতি | দলমণ্ডল |
বর্ণ | সাধারণত সবুজ বর্ণের হয়। | সাধারণত সাদা বা রঙিন হয়। |
কাজ | কুঁড়ি অবস্থায় অন্যান্য স্তবককে রক্ষা করা। | বাহককে আকৃষ্ট করে পরাগযোগে সাহায্য করে। |
পুংকেশর চক্র – পুংদণ্ড ও পরাগধানী সমন্বিত পুংকেশর নিয়ে গঠিত, দলমণ্ডল বা করোলার ভিতরের দিকে অবস্থিত, ফুলের তৃতীয় এবং অপরিহার্য স্তবককে পুংকেশর চক্র বা অ্যান্ড্রোসিয়াম বলে।
পুংকেশর চক্রের কাজ – পরাগরেণু উৎপন্ন করে বংশবিস্তারে সহায়তা করা।
গর্ভকেশর চক্র – গর্ভাশয়, গর্ভদণ্ড এবং গর্ভমুণ্ড নিয়ে গঠিত, সব থেকে ভিতরে অবস্থিত, ফুলের চতুর্থ এবং অপরিহার্য স্তবককে গর্ভকেশর চক্র বা গাইনিসিয়াম বলে।
গর্ভকেশর চক্রের কাজ – গর্ভকেশর চক্র বা স্ত্রীস্তবক ডিম্বাণু উৎপাদনের মাধ্যমে গাছের বংশবিস্তারে সাহায্য করে।
যখন কোনো ফুলকে তার অক্ষ বরাবর কখনোই সমান ভাগে ভাগ করা যায় না, তখন সেই ফুলকে সম্পূর্ণ অসমাঙ্গ বা অপ্রতিসম ফুল বলে।
উদাহরণ – অর্কিড ফুল।
যে পদ্ধতিতে ফুলের পরাগধানী থেকে পরাগরেণু একই ফুলের বা একই গাছের অন্য কোনো ফুলের বা একই প্রজাতির অন্য গাছের কোনো ফুলের গর্ভকেশরের গর্ভমুণ্ডে স্থানান্তরিত হয় তাকে পরাগযোগ বলে।
যে উদ্ভিদে পুরুষ ফুল এবং স্ত্রীফুল পৃথকভাবে কিন্তু একই উদ্ভিদে জন্মায়, তাকে সহবাসী উদ্ভিদ বলে। যেমন লাউ, কুমড়ো ইত্যাদি।
যে উদ্ভিদে পুরুষ অথবা স্ত্রী যে-কোনো একপ্রকারের ফুল জন্মায় তাকে ভিন্নবাসী উদ্ভিদ বলে। যেমন, পেঁপে, তাল প্রভৃতি।
স্বপরাগী উদ্ভিদের সঙ্গে ইতরপরাগী উদ্ভিদের দুটি পার্থক্য লেখো।
স্বপরাগী ও ইতরপরাগী উদ্ভিদের পার্থক্যগুলি হল —
বিষয় | স্বপরাগী উদ্ভিদ | ইতরপরাগী উদ্ভিদ |
উদ্ভিদের প্রকৃতি | অবশ্যই সহবাসী। | ভিন্নবাসী বা সহবাসী। |
পরাগধানী ও গর্ভমুণ্ড পরিণত হওয়ার সময় | ফুলের পরাগধানী ও গর্ভমুণ্ড একই সময়ে পরিণত হয়। | ফুলের পরাগধানী ও গর্তমুক্ত ভিন্ন সময়ে পরিণত হয়। |
যৌন জনন প্রক্রিয়ার একক হল গ্যামেট বা জননকোশ।
পুংগ্যামেট ও স্ত্রীগ্যামেটের মিলনের ফলে জাইগোট বা ভ্রূণাণু উৎপন্ন হয়।
গ্যামেটের ক্রোমোজোম সংখ্যা n|
যৌন জনন আর যেসব নামে পরিচিত তা হল – অ্যাম্ফিমিক্সিস, সিনজেনেসিস প্রভৃতি।
গ্যামেট গঠনের প্রক্রিয়াকে গ্যামেটোজেনেসিস বলে।
জাইগোট মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় বিভাজিত হয়ে ভ্রূণ বা এমব্রায়ো উৎপন্ন করে।
সপুষ্পক উদ্ভিদের সর্বাপেক্ষা দৃষ্টি আকর্ষক অঙ্গ হল ফুল বা পুষ্প।
পুষ্পের নির্দিষ্ট বিন্যাসরীতিকে পুষ্পবিন্যাস বলে।
ফুলে বৃত্ত থাকলে তাকে সবৃন্তক ফুল বলে।
ফুলে বৃত্ত না থাকলে তাকে অবৃন্তক ফুল বলে।
একটি সবৃন্তক ফুলের নাম হল জবা।
একটি অবৃন্তক ফুলের নাম হল রজনিগন্ধা।
সপুষ্পক উদ্ভিদে ফুল ফোটে।
ফুলের প্রধান কাজ হল বংশবিস্তার।
কচু ফুল হল একটি ক্লীবপুষ্প।
অনেকগুলি ফুল একটি অক্ষে একসাথে গুচ্ছিত হয়ে থাকলে, তাকে পুষ্পমঞ্জরি বলে।
পাপড়ি বা দলমণ্ডল না থাকলে পতঙ্গ সাধারণত আকৃষ্ট হয় না।
বিটপের অন্তর্গত পুষ্পমুকুল থেকে ফুল উৎপন্ন হয়।
ফুলের গোড়ার দিকে সরু দণ্ডের মতো যে অংশটি ফুলকে ধরে রাখে তাকে পুষ্পবৃন্ত বলে।
বৃত্তির প্রত্যেকটি অংশকে বৃত্যংশ বা সেপাল বলে।
পুংস্তবকের প্রত্যেকটি অংশকে পুংকেশর বা স্ট্যামেন বলে।
দলমণ্ডলের প্রত্যেকটি অংশকে দলাংশ বা পাপড়ি বা পেটাল বলে।
ডিম্বাশয়ের সঙ্গে যুক্ত যে সরু দণ্ডটি গর্ভমুণ্ডকে ধারণ করে, তাকে গর্ভদণ্ড বা স্টাইল বলে।
ফুলের পুংজননকোশ পরাগরেণু থেকে উৎপন্ন হয়।
একটি স্থায়ী বৃত্তির উদাহরণ হল আলু।
স্ত্রীস্তবকের প্রত্যেকটি অংশকে গর্ভপত্র বা কারপেল বলে।
পৃথকভাবে স্ত্রী ও পুরুষ ফুল একই গাছে ফুটলে সেই ধরনের উদ্ভিদকে সহবাসী উদ্ভিদ বলে।
দুটি সহবাসী উদ্ভিদের নাম কুমড়ো, লাউ।
পুরুষ ও স্ত্রীফুল দুটি ভিন্ন গাছে ফুটলে সেই ধরনের উদ্ভিদকে ভিন্নবাসী উদ্ভিদ বলে।
দুটি ভিন্নবাসী উদ্ভিদের উদাহরণ হল — পেঁপে, তাল।
ফুলের প্রতিটি গর্ভপত্রে তিনটি অংশ থাকে, যথা — গর্ভমুণ্ড, গর্ভদণ্ড ও ডিম্বাশয়।
সমাঙ্গ ফুলকে বহুপ্রতিসম ফুল বলা হয়।
ফুলের ডিম্বাশয় ও ডিম্বক অংশ দুটি রূপান্তরিত হয়ে যথাক্রমে ফল ও বীজ সৃষ্টি হয়।
বৃত্তের শীর্ষে পুষ্পস্তবকগুলি যে অংশে সাজানো থাকে তাকে পুষ্পাক্ষ বলে।
প্রতিটি ফুলে একটি পুষ্পাক্ষ থাকে।
পুং জননকোশ ও স্ত্রী-জননকোশের মিলনকে নিষেক বলে।
সম্পূর্ণ ফুলে চারটি স্তবক থাকে।
রেণু মাতৃকোশ মিয়োসিস প্রক্রিয়ায় বিভাজিত হয়ে পরাগরেণু গঠন করে।
বিজ্ঞানী থিয়োফ্রাসটাস সর্বপ্রথম খেজুর গাছের পরাগযোগের প্রসঙ্গটি উল্লেখ করেছিলেন।
বিজ্ঞানী নাওয়াসিন (1898) সর্বপ্রথম দ্বিনিষেক শব্দটি ব্যবহার করেন।
ফুলের জননকোশ সমন্বিত প্রজননিক অংশের নাম পুংকেশর এবং গর্ভপত্র।
গর্ভপত্রের মধ্যে ডিম্বকের অবস্থান ডিম্বাশয়ে।
নির্ণীত নিউক্লিয়াসের ক্রোমোজোম সংখ্যা 2n|
সস্য নিউক্লিয়াসের ক্রোমোজোম সংখ্যা 3n।
একটি বায়ুপরাগী উদ্ভিদের সাধারণ নাম হল ধান এবং বিজ্ঞানসম্মত নাম হল ওরাইজা স্যাটাইভা (Oryza sativa)।
একটি জলপরাণী উদ্ভিদের সাধারণ নাম হল পাতাঝাঁঝি এবং বিজ্ঞানসম্মত নাম হল হাইড্রিলা ভার্টিসিলাটা (Hydrilla verticillata)|
একটি পতঙ্গ পরাগী উদ্ভিদের সাধারণ নাম হল আম এবং বিজ্ঞানসম্মত নাম হল-ম্যাগ্নিফেরা ইন্ডিকা (Mangifera indica)।
একটি পক্ষীপরাগী উদ্ভিদের সাধারণ নাম হল শিমুল এবং বিজ্ঞানসম্মত নাম হল বমব্যাক্স সিবা (Bombax cleba)।
নিষেকের পরে সস্য নিউক্লিয়াস বিভাজিত হয়ে সস্যে পরিণত হয়।
পরাগধানীতে অবস্থিত পরাগরেণুর হ্যাপ্লয়েড নিউক্লিয়াসটি বিভাজিত হয়ে একটি জননকোশাধার নিউক্লিয়াস ও একটি নালিকা নিউক্লিয়াস উৎপন্ন করে।
পাতাঝাঁঝি নামক জলজ উদ্ভিদের পুংপুষ্পে 30-40টি পুংকেশর থাকে।
রাতে ফোটে এমন দুটি ফুলের নাম হল — রজনিগন্ধা, হাসনুহানা।
পুংদণ্ড ও পরাগধানী নিয়ে গঠিত পুংস্তবকের প্রতিটি অংশকে পুংকেশর বলে।
পুংলিঙ্গধরের প্রথম কোশের নাম পরাগরেণু।
পরাগরেণুর বাইরের আবরণকে রেণুবহিস্ত্বক বলে।
নিষেকের ফলে ডিম্বকনাভি বীজবৃত্তে পরিবর্তিত হয়।
নিষেকের ফলে ডিম্বকত্বক বীজত্বকে পরিবর্তিত হয়।
©kamaleshforeducation.in(2023)