সংঘব্ধতার গোড়ার কথা : বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ (চতুর্থ অধ্যায়) – মাধ্যমিক দশম শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর | West Bengal Madhyamik Class 10th History Question and Answer
MCQ প্রশ্নোত্তর | মাধ্যমিক ইতিহাস – সংঘব্ধতার গোড়ার কথা : বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ (চতুর্থ অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik History Question and Answer :
- গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর কোন শিল্পকর্মের জন্য বিখ্যাত ?
(A) ব্যঙ্গচিত্র
(B) প্রাকৃতিক চিত্র
(D) মিনিয়েচার
(C) তেল – রংয়ে চিত্র
Ans: (A) ব্যঙ্গচিত্র
- ‘ বর্তমান ভারত ’ প্রথম প্রকাশিত হয়—
(A) চন্দ্রভানু পত্রিকায়
(B) দিগদর্শনে
(C) উদ্বোধন পত্রিকায়
(D) হিকির গেজেটে
Ans: (C) উদ্বোধন পত্রিকায়
- জমিদার সভা ছিল একটি –
(A) সামাজিক সংগঠন
(B) রাজনৈতিক সংগঠন
(C) অরাজনৈতিক সংগঠন ।
(D) ভারত সচিব
Ans: (B) রাজনৈতিক সংগঠন
- মহাবিদ্রোহের পর ভারতের শাসনভার গ্রহণ করেন
(A) মহারানি ভিক্টোরিয়া
(B) ভাইসরয়
(C) লর্ড মাউন্টব্যাটেন
(D) ভারত সচিব
Ans: (A) মহারানি ভিক্টোরিয়া
- নানা সাহেবের প্রকৃত নাম কী ?
(A) গোবিন্দ সিং
(B) গোবিন্দ ধন্দু পন্থ
(C) হজরত মহল
(D) আব্দুল ওয়াহাব
(A) লর্ড মাউন্টব্যাটেন
Ans: (B) গোবিন্দ ধন্দু পন্থ
- ভারতের প্রথম ভাইসরয় ছিলেন –
(A) লর্ড মাউনটব্যাটেন
(B) লর্ড এলগিন
(C) লর্ড ক্যানিং
(D) লর্ড ক্লাইভ
Ans: (C) লর্ড ক্যানিং
- মহারানির ঘোষণাপত্র জারি হয়েছিল ১৮৫৮ সালের
(A) ১০ নভেম্বর
(B) ১ সেপ্টেম্বর
(C) ৭ সেপ্টেম্বর
(D) ১ নভেম্বর
Ans: (D) ১ নভেম্বর
- কোম্পানির আমলের শেষ গভর্নর জেনারেল ছিলেন—
(A) লর্ড ক্যানিং
(B) লর্ড ডালহৌসি
(C) লর্ড ডাফরিন
(D) লর্ড লিটন
Ans: (A) লর্ড ক্যানিং
- জমিদার সভা প্রতিষ্ঠিত হয়—
(A) ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে
(B) ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে
(C) ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে
(D) ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে
Ans: (B) ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে
- দেশীয় সংবাদপত্র আইন প্রবর্তিত হয়—
(A) ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে
(B) ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে
(C) ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে
(D) ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে
Ans: (B) ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে
- হিন্দুমেলার প্রতিষ্ঠা করেন—
(A) রামমোহন রায়
(C) নবগোপাল মিত্র
(B) দ্বারকানাথ ঠাকুর
(D) কেশবচনদ্র সেন
Ans: (C) নবগোপাল মিত্র
- ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতমাতা চিত্রটি এঁকেছেন—
(A) গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
(B) সরলাদেবী
(C) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(D) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
Ans: (C) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
- জমিদার সভার সভাপতি ছিলেন
(A) দ্বারকানাথ ঠাকুর
(B) প্রসন্নকুমার ঠাকুর
(C) রাধাকান্ত দেব
(D) আনন্দমোহন বসু
Ans: (C) রাধাকান্ত দেব
- ছিয়াত্তরের মন্বস্তরের পটভূমিকায় রচিত উপন্যাসটি হলো
(A) গোরা
(B) দুর্গেশনন্দিনী
(C) আনন্দমঠ
(D) ক্যাপটিভ লেডি
Ans: (C) আনন্দমঠ
- ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতের প্রথম জাতীয় বিদ্রোহটি হলো—
(A) নীল বিদ্রোহ
(B) সাঁওতাল বিদ্রোহ
(C) সিপাহি বিদ্রোহ
(D) মুন্ডা বিদ্ৰোহ
Ans: (C) সিপাহি বিদ্রোহ
- সিপাহি বিদ্রোহের সময়ে অযোধ্যায় বিদ্রোহীদের নেতৃত্ব দেন—
(A) বেগম হজরত মহল
(B) লক্ষ্মীবাঈ
(C) কুনওয়ার সিং
(D) নানা সাহেব
Ans: (A) বেগম হজরত মহল
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | মাধ্যমিক ইতিহাস – সংঘব্ধতার গোড়ার কথা : বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ (চতুর্থ অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik History Question and Answer :
- ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে কাকে ‘ হিন্দুস্থানের সম্রাট ‘ বলে ঘোষণা করা হয় ?
Ans: মোগল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে ।
- সাধারণ জ্ঞানোপার্জিকা সভার মুখপত্র কী ছিল ?
Ans: সাধারণ জ্ঞানোপার্জিকা সভার মুখপত্র ছিল Bengal Spectator
- ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে কাকে ‘ হিন্দুস্থানের সম্রাট ‘ বলে ঘোষণা করা হয় ?
Ans: মোগল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে ।
- জমিদার সভার প্রথম সম্পাদক কে ছিলেন ?
Ans: জমিদার সভার প্রথম সম্পাদক ছিলেন প্রসন্নকুমার ঠাকুর ।
- ১৮৫৭ – র বিদ্রোহকে কারা ‘ সিপাহি বিদ্রোহ ‘ বলেছেন ?
Ans: জন কে , রাজনারায়ণ বসু প্রমুখ ।
- ‘ হিন্দুমেলা ’ প্রথমে কী নামে পরিচিত ছিল ?
Ans: হিন্দুমেলা চৈত্রসংক্রান্তির দিনে শুরু হয় বলে প্রথমে নাম ছিল চৈত্রমেলা ।
- কাকে বলা হয় স্বাধীনতার অগ্রদূত ?
Ans: কবি ঈশ্বর গুপ্তকে স্বাধীনতার অগ্রদূত বলা হয় ।
- অমৃতবাজার পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন ?
Ans: শিশিরকুমার ঘোষ ।
- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম উপন্যাসের নাম কী ?
Ans: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম উপন্যাস হলো দুর্গেশনন্দিনী ।
- ভারতে কবে কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটে ?
Ans: ১৮৫৮ সালের ২ আগস্ট ভারতে কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটে ।
- কানপুরে সিপাহি বিদ্রোহে কে নেতৃত্ব দেন ?
Ans: কানপুরে সিপাহি বিদ্রোহে নানা সাহেব নেতৃত্ব দেন ।
- কোন আইনের বলে কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটে ?
Ans: ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ‘ ভারত শাসন ’ আইনের দ্বারা ।
- ঊনবিংশ শতাব্দীকে কে সভাসমিতির যুগ বলেছেন ?
Ans: ঐতিহাসিক অনিল শীল ।
- ইলবার্ট বিল কে রচনা করেন ?
Ans: লর্ড রিপনের আইনসচিব ইলবার্ট ।
- ‘ বন্দেমাতরম ’ সংগীতটি কোন উপন্যাস থেকে নেওয়া হয়েছিল ?
Ans: বঙ্কিমচন্দ্রের ‘ আনন্দমঠ ‘ উপন্যাস থেকে ।
- কোম্পানির শাসনের অবসান কবে হয়েছিল ?
Ans: ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে ।
- কার উদ্যোগে অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন গঠিত হয়েছিল ?
Ans: ভিভিয়ান ডিরোজিওর উদ্যোগে ।
- গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর কী ধরনের ছবি আঁকতেন ?
Ans: তিনি মূলত ব্যঙ্গচিত্র অঙ্কন করতেন ।
- জাতাসুর কীসের নাম ?
Ans: জাতাসুর হলো গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি ব্যঙ্গচিত্রের নাম ।
- হিন্দুমেলা কত খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ?
Ans: ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে ।
- মহাবিদ্রোহের দু’জন নেতার নাম লেখো ।
Ans: রানি লক্ষ্মীবাঈ , নানা সাহেব ।
- তাতিয়া তোপির প্রকৃত নাম কী ?
Ans: তাতিয়া তোপির প্রকৃত নাম রামচন্দ্র পাণ্ডুরঙ্গ তোপি ।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | মাধ্যমিক ইতিহাস – সংঘব্ধতার গোড়ার কথা : বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ (চতুর্থ অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik History Question and Answer :
- সিপাহি বিদ্রোহের প্রথম শহিদ কে ছিলেন ? তিনি কবে শহিদ হন ?
Ans: সিপাহি বিদ্রোহের প্রথম শহিদ ছিলেন মঙ্গল পাণ্ডে । ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে ৪ এপ্রিল তাঁর ফাসি হয় ।
- ঐতিহাসিক অনিল শীল ঊনবিংশ শতককে সভাসমিতির যুগ বলেছেন কেন ?
Ans: ঊনবিংশ শতাব্দীর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো জাতীয়তাবাদের জন্ম । এই জাতীয়তাবাদের বিকাশের অনিবার্য ফল হিসেবে নানা সভাসমিতির জন্ম হয় । তাই ঐতিহাসিক অনিল শীল এইসময়কে সভাসমিতির যুগ হিসেবে উল্লেখ করেছেন ।
- ভারতসভা বা ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন কাদের উদ্যোগে এবং কোথায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ?
Ans: ভারতসভা সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় , আনন্দমোহন বসু , শিবনাথ শাস্ত্রী , দ্বারকানাথ গাঙ্গুলি প্রমুখের উদ্যোগে ১৮৭৬ খ্রিঃ গড়ে ওঠে । এর প্রথম অধিবেশন হয়েছিল কলকাতার অ্যালবার্ট হলে ।
- ইলবার্ট বিল বিতর্ক কী ? / ইলবার্ট বিল কী ?
Ans: ভারতীয় কোনো বিচারকের ব্রিটিশদের শাসন করার অধিকার ছিল না । লর্ড রিপনের শাসনকালে আইনসচিব ইলবার্ট একটি বিল দ্বারা ভারতীয় বিচারকদের এই অধিকার প্রদান করেন । একে ইলবার্ট বিল বলে ।
- ব্রিটিশ ইন্ডিয়া অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম সভাপতি ও সম্পাদক কে ছিলেন ?
Ans: প্রথম সভাপতি –রাধাকান্ত দেব । সম্পাদক – দ্বারকানাথ ঠাকুর ।
- ইলবার্ট বিল কী ?
Ans: ব্রিটিশ ভারতের বিচার ব্যবস্থায় ভারতের কৃষ্ণাঙ্গ বিচারকদের দ্বারা শ্বেতাঙ্গদের বিচার করার অধিকার দিয়ে লর্ড রিপনের আইন সচিব ইলবার্ট যে আইনের খসড়া রচনা করেন তা ইলবার্ট বিল নামে পরিচিত ।
- আনন্দমঠ উপন্যাস কে , কোন পটভূমিকায় রচনা করেন ?
Ans: ১১৭৬ সনের ( ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে ) মন্বস্তরের পটভূমিকায় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় আনন্দমঠ রচনা করেন ।
বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্নোত্তর | মাধ্যমিক ইতিহাস – সংঘব্ধতার গোড়ার কথা : বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ (চতুর্থ অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik History Question and Answer :
- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ ভারতমাতা ’ ছবির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো ।
অথবা , অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ভারতমাতা চিত্রের মাধ্যমে কীভাবে জাতীয়তাবাদী ধারণার বিকাশ ঘটিয়েছেন ?
Ans: সূচনা : ব্রিটিশ ভারতে বিভিন্ন চিত্রের মাধ্যমে ব্রিটিশ বিরোধী মনোভাব তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর । ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে আঁকা তার ভারতমাতা চিত্রটি বিশ শতকে ভারতের জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রসার ঘটিয়েছিল । এই চিত্রে তিনি ভারতের প্রতীক হিসেবে ভারতমাতাকে দেখিয়েছিলেন ।
স্বদেশিকতা : ভারতমাতা চিত্রে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতমাতার হাতে থাকা বেদ , ধানের শিষ , যপের মালা ও শ্বেতবস্ত্রকে ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরেছেন । আসলে এই চিত্রের স্বদেশবোধের দ্বারা তিনি জাতীয়তাবাদী ভাবনার প্রসার করতে চেয়েছিলেন ।
জাতীয় চেতনা বৃদ্ধি : সমকালীন ভারতে বিভিন্ন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের মিছিলের সামনে ভারতমাতার চিত্র রাখা হতো , যার দ্বারা ভারতমাতাকে জাতীয়তাবাদের প্রতীক হিসেবে দেখিয়ে ভারতে জাতীয় চেতনা বৃদ্ধি করা হয়েছিল বলে মনে করা হয় ।
মূল্যায়ন : ভারতমাতার চিত্র নিয়ে বিতর্কও লক্ষণীয় । ভগিনী নিবেদিতা ভারতমাতার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছেন , “ এই চিত্রটির মাধ্যমে বিমূর্ত জাতীয়তাবাদকে মূর্ত করে তোলা হয়েছে । ” অন্যদিকে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে হিন্দু স্বাদেশিকতার উগ্র সমর্থক ছিলেন তার কোনো প্রমাণও এখান থেকে পাওয়া যায় না ।
- হিন্দুমেলার সীমাবদ্ধতাগুলি সংক্ষেপে লেখো ।
অথবা , হিন্দুমেলা কেন জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারেনি ।
Ans: নবগোপাল মিত্র প্রতিষ্ঠিত ‘ হিন্দুমেলা ’ জনপ্রিয়তা না পেলেও উনিশ শতকের বিশেষ উল্লেখযোগ্য সংগঠন ছিল । এর সীমাবদ্ধতাগুলি নিম্নরূপঃ
- ধর্মীয় প্রাধান্য : নবগোপাল মিত্র হিন্দু ভারতের পুনর্জাগরণের স্বপ্ন দেখতেন । শিক্ষিত তরুণ প্রজন্ম ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি নবগোপাল ও তার সংগঠনের ভাবধারাকে সমর্থন করতে পারেনি ।
- রাজনৈতিক কর্মসূচির অভাব : রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে গুরুত্ব না দিয়ে শুধু দেশাত্মবোধের প্রচার করায় হিন্দুমেলার উদ্যোগ বিশেষ সাফল্য পায়নি ।
- সক্রিয়তার অভাব : ব্রিটিশ – বিরোধী যুগোপযোগী সক্রিয়তা ছিল না হিন্দুমেলার কর্মকাণ্ডে । সাধারণ মানুষকে তাই কাছে টানতে পারেনি হিন্দুমেলা ।
- মহারানি ভিক্টোরিয়ার ঘোষণাপত্র আলোচনা করো ।
অথবা , মহারানির ঘোষণাপত্রে কী বলা হয়েছে ?
অথবা , ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে মহারানি ভিক্টোরিয়ার ঘোষণাপত্রের ঐতিহাসিক তাৎপর্য লেখো ।
Ans: সূচনা : ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের সিপাহি বিদ্রোহ ভারতবর্ষের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়লেও শেষ পর্যন্ত তা ব্যর্থ হয়েছিল । স্বল্পকালীন এই সর্বভারতীয় বিদ্রোহ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল । এইসময়ে কোম্পানির হাত থেকে ব্রিটিশ সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের বিষয়টি মহারানির ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে করা হয় ।
মহারানির ঘোষণাপত্রের ঐতিহাসিক তাৎপর্য / বিষয়বস্তু :
- কোম্পানির শাসনের অবসান : ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে ভারত শাসন আইনের দ্বারা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটে ও ভারতের শাসনভার মহারানি নিজের হাতে তুলে নেন ।
- ঘোষণাপত্রের বক্তব্য : মহারানির ঘোষণাপত্রের মাধমে ভারতীয় শাসন ব্যবস্থায় নতুন নীতি ও আদর্শের কথা প্রকাশ করা হয় । যেখানে বলা হয়—
প্রথমত , এই ঘোষণাপত্র দ্বারা ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে জারি করা স্বত্ববিলোপ নীতি বাতিল হয় ।
দ্বিতীয়ত , স্থির করা হয় ভবিষ্যতে যে কোনো সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে যোগ্যতাকেই সার্বিক প্রাধান্য দিতে হবে।
তৃতীয়ত , ব্রিটিশ সরকার জাতি , ধর্ম , বর্ণ নির্বিশেষে কারোর প্রচলিত সামাজিক ও ধর্মীয় রীতিনীতিতে হস্তক্ষেপ করবে না ।
চতুর্থত , এই ঘোষণাপত্র অনুসারে স্থির হয় , সরকার দেশীয় রাজ্যগুলির সাথে স্বাক্ষরিত চুক্তি ও সন্ধিগুলো মেনে চলবে ।
মূল্যায়ন : আসলে মহারানির ঘোষণাপত্র ছিল সিপাহি বিদ্রোহের সুদূরপ্রসারী ফলাফল । যদিও এই বিদ্রোহের পরবর্তীকালে সংস্কার ও পুনর্গঠনের নামে ব্রিটিশরা যা কিছু করেছিল বা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা সঠিকভাবে কার্যকরী হয়নি ।
- ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত বাঙালি সমাজের কীরূপ মনোভাব ছিল ?
Ans: সূচনা : ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ প্রথম অবস্থায় সিপাহিদের দ্বারা শুরু হলেও কৃষক , কারিগর , শ্রমিক , শিল্পী প্রভৃতি সম্প্রদায়ের মানুষ বিদ্রোহে যোগদান করেছিল । কিন্তু মধ্যবিত্ত শিক্ষিত সমাজের মানুষেরা এই বিদ্রোহকে সমর্থন করেনি বরং তারা আন্দোলনের সাথে যুক্ত নেতাদের ব্যঙ্গ করেছিল ।
মহাবিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত বাঙালি সমাজের মনোভাব :
- অধিকাংশ শিক্ষিত বাঙালির বিরূপ মনোভাব : সিপাহি বিদ্রোহের সময় শিক্ষিত বাঙালি সমাজের মানুষেরা ব্রিটিশ শাসনের দিকে ঝুঁকে পড়েছিল । কারণ তারা ব্রিটিশ সরকারের অধীনে সরকারি চাকরির প্রতি অনুরক্ত ছিল ।
- মধ্যযুগীয় শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার ভয় : শিক্ষিত সমাজের মানুষের ধারণা ছিল বিদ্রোহীরা জয়লাভ করলে মধ্যযুগীয় বর্বরতা প্রতিষ্ঠিত হবে । তাই তারা বিদ্রোহকে সমর্থন করেনি ।
- আধুনিকতা অবসানের ভয় : শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের মানুষেরা ছিল আধুনিক শিক্ষা ও সংস্কারের সমর্থক । তারা মনে করত সিপাহি বিদ্রোহীরা সাফল্য পেলে আধুনিকতার অবসান ঘটবে । তাই তারা বিদ্রোহকে সমর্থন করেনি ।
মূল্যায়ন : সিপাহি বিদ্রোহের শেষ পর্বে ব্রিটিশ সরকার যখন কঠোর দমননীতি প্রয়োগ করে তখন শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের ব্রিটিশদের প্রতি মোহভঙ্গ হয় । তারা অনুভব করে যে ব্রিটিশ শাসন কখনো ভারতবাসীর কল্যাণ করতে পারে না ।
- ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহ বা সিপাহি বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ লেখো ।
Ans: সূচনা : ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৯ মার্চ শুরু হওয়া সিপাহি বিদ্রোহ খুব অল্প সময়ে দ্রুত ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে এবং এক গণআন্দোলনে পরিণত হয় । যদিও গোর্খা বাহিনীর সাহায্যে ব্রিটিশ সরকার এই বিদ্রোহ স্তব্ধ করেছিল । এর কারণে বলা যায়
- বিদ্রোহের বিচ্ছিন্নতা : ভারতের সর্বত্র বিদ্রোহ একযোগে না হওয়ায় বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত ও বিচ্ছিন্নভাবে এই বিদ্রোহ হয় । ফলে ইংরেজদের পক্ষে বিদ্রোহ দমন খুব সহজ হয়ে ওঠে ।
- সুযোগ্য নেতৃত্বের অভাব : সিপাহি বিদ্রোহ পরিচালনার জন্য নানা সাহেব , লক্ষ্মীবাঈ , তাঁতিয়া টোপি প্রমুখ সাহসী ও সমরকুশলী হলেও ইংরেজ সেনাপতি লরেন্স , হ্যাভলক , আউটরাম প্রমুখের মতো সুযোগ্য নেতৃত্বের অভাবকে অনেকে এই বিদ্রোহের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ মনে করেছেন ।
- সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের অভাব : বিদ্রোহীরা জনগণের কাছে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য তুলে ধরতে পারেনি যা ছিল বিদ্রোহের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ ।
- সংকীর্ণতা : সিপাহি বিদ্রোহের নেতাদের মধ্যে আঞ্চলিক স্বার্থ ও সংকীর্ণতা বিদ্যমান থাকায় তারা সর্বত্র একই নীতি অনুসরণ করতে পারেনি ।
মূল্যায়ন : উপরের আলোচনায় স্পষ্ট যে সিপাহি বিদ্রোহের ব্যর্থতা ছিল একাধিক কারণের যৌগিক প্রক্রিয়ার ফলশ্রুতি ।
- জাতীয় চেতনার প্রসার ঘটানোর জন্য হিন্দুমেলা কী ভূমিকা নিয়েছিল ?
Ans: সূচনা : বিংশ শতকের ভারতবর্ষে জাতীয়তাবাদী ব্রিটিশ বিরোধী পটভূমি তৈরির ক্ষেত্রে যেসব সভা এগিয়ে এসেছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল হিন্দুমেলা ।
বার্ষিক সম্মেলন : ভারতীয় দেশপ্রেমিকদের জাগিয়ে তোলার জন্য হিন্দুমেলার প্রথম বার্ষিক সম্মেলনে ‘ মলিন মুখচন্দ্র মা ভারত তোমারি ‘ গানটি গাওয়া হয় এবং পরের সম্মেলনগুলিতে জ্ঞানেন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘ গাও ভারতের জয় ’ গানটি গাওয়া হয় ।
হিন্দুমেলার উদ্দেশ্য : হিন্দুমেলা প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল—
- হিন্দু ধর্মের ঐতিহ্য : হিন্দু ধর্মের প্রাচীন ঐতিহ্য ও গৌরবময় দিকগুলি সাধারণ মানুষের মধ্যে তুলে ধরাই ছিল হিন্দুমেলার প্রধান উদ্দেশ্য ।
- দেশাত্মবোধ জাগ্রত করা : দেশীয় ভাষাচর্চা , দেশাত্মবোধক কবিতাপাঠ , দেশীয় শিল্পীদের প্রসার , দেশীয় শরীরচর্চার মাধ্যমে দেশাত্মবোধ জাগিয়ে তোলা ছিল হিন্দুমেলার অপর উদ্দেশ্য ।
- পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অগ্রগতি রোধ : সমকালীন ভারতে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রসার রোধ করা ছিল অন্যতম উদ্দেশ্য ।
মূল্যায়ন : হিন্দুমেলার উদ্দেশ্য সম্পর্কে গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন , “ আমাদের এই মিলন সাধারণ ধর্ম – কর্মের জন্য নহে , কোনো বিশেষ সুখের জন্য নহে , কোনো আমোদপ্রমোদের জন্য নহে , ইহা স্বদেশের জন্য , ভারতভূমির জন্যে । ”
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর | মাধ্যমিক ইতিহাস – সংঘব্ধতার গোড়ার কথা : বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ (চতুর্থ অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik History Question and Answer :
- উনিশ শতকে লেখায় ও রেখায় জাতীয়তাবাদ কীভাবে ফুটে উঠেছে । এবং ঊনবিংশ শতকে রেখায় ও লেখায় জাতীয়তাবাদ কী ভাবে ফুটে উঠেছে ।
Ans: ভূমিকা : ঊনিশ শতকের শেষদিকে শিক্ষিত ভারতবাসীর চিন্তায় ও কর্মে এক ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে । ব্রিটিশ শাসকদের আচার আচরণে জাতি বৈরিতা এবং অর্থনৈতিক – রাজনৈতিক অসাম্যের প্রতিবাদে ‘ আনন্দমঠ ‘ , ‘ বর্তমান ভারত ’ , ‘ গোরা ’ গ্রন্দ্বে ভারতমাতা চিত্রে এক জাতীয়তাবাদী ধ্যানধারনার বিষয় ও প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয় ।
- জাতীয়তাবাদী বিকাশে আনন্দমঠের ভূমিকা :
পটভূমি : একদিকে ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে ( ১১৭৬ বঙ্গাব্দে ) বাংলার ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ ( ছিয়াত্তরের মন্বন্তর ) ও অন্যদিকে সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে এটি রচিত হয়েছে ।
উদ্দেশ্য : আনন্দমঠ উপন্যাসটি রচনার মূল উদ্দেশ্য ভারতীয়দের মধ্যে স্বদেশপ্রেম জাগরিত করা ও জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটানো তথা দেশবাসীকে মুক্তি আন্দোলনে আন্দোলিত করা ।
বিভিন্ন চরিত্র : এই উপন্যাসের বিভিন্ন চরিত্রের মধ্যে রয়েছে সর্বত্যাগী সন্ন্যাসীদের চরিত্র যেমন — মহেন্দ্র , ভবানন্দ , সত্যানন্দ প্রমুখ । এটি ভারতকে মাতৃরূপে কল্পনা করে তার তিনটি রূপ দেখিয়েছে । যথা — জগদ্ধাত্রী , কালী , ও দশভূজা মূর্তি ।
ব্রিটিশ শাসনের দুর্দশার চিত্র : এই উপন্যাসে সমকালীন ভারতবাসীর সামনে পরাধীন ভারতমাতার দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে বঙ্কিম স্বৈরাচারী ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ভারতবাসীকে আহ্বান জানায় ।
বন্দেমাতরম সংগীত : এখানে বন্দেমাতরম সংগীতটি তুলে ধরা হয়েছে ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে , যা ছিল পরাধীন ভারতের জাতীয় সংগীত তথা বিপ্লবীদের মন্ত্র । পরে ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে মাদাম ভিকাজি কামা রূপায়িত জাতীয় পতাকায় এই ধ্বনি স্থান পেয়েছে ।
দেশমাতার আদর্শ : আনন্দমঠে দেশমাতার আদর্শ হিসাবে বঙ্কিমচন্দ্র বলেছেন দেশমাতা হলেন মা , দেশপ্রেম হলো ধর্ম , দেশসেবা হলো পূজা ।
- জাতীয়তাবাদ বিকাশে বর্তমান ভারতের গুরুত্ব :
‘ বর্তমান ভারত ‘ গ্রন্থটি ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবাদী ভাবধারা প্রসারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ।
- i) স্বামীজি বর্তমান ভারতে বৈদিক যুগ থেকে ব্রিটিশ শাসনকাল পর্যন্ত ভারতের ইতিহাস বর্ণনা করেছেন ।
- ii) গ্রন্থটিতে স্বামীজি পরাধীনতার গ্লানির চিত্রটি তুলে ধরেছেন । ভারতবাসীকে স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষিত করেছেন ।
iii) তিনি উপলব্ধি করেছিলেন স্বাধীনতা লাভের জন্য ভারতীয়দের মধ্যে ঐক্য খুবই প্রয়োজন ।
- iv) তিনি সমাজের দলিত ও নিম্নশ্রেণির মানুষের প্রতি শোষণের তীব্র নিন্দা করেছেন । তার মতে , ভারতে প্রাচীনকাল থেকে শূদ্রদের দমিয়ে রাখা হয়েছে । এবার শূদ্রজাতির জাগরণ ঘটবে । তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হবে । তিনি দেশপ্রেমের আদর্শে ভারতবাসীকে দীক্ষিত করেছেন ।
- জাতীয়তাবাদ বিকাশে ‘ গোরা ‘ উপন্যাসের ভূমিকা : বিংশ শতকের গোড়ায় বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ । তিনি তাঁর লেখনীর মাধ্যমে ক্রমাগত জাতীয়তাবোধের আদর্শকে এক অন্য পর্যায়ে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন । তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস ‘ গোরা ‘ ১৯০৭-০৯ খ্রিস্টাব্দ অবধি ‘ প্রবাসী ’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল । গোরা উপন্যাসটিকে সমগ্র আধুনিক ভারতীয় সাহিত্যের একটি যুগান্তকারী রচনা হিসেবে গণ্য করা হয় । এখানে ‘ গোরা ‘ চরিত্রটি প্রবল ইংরেজ বিদ্বেষী । তাঁর বিদ্বেষকে আরও বাড়িয়ে তোলে ইংরেজদের ভারতীয় সভ্যতা , সমাজ ও সংস্কৃতি নিয়ে তীব্র ঘৃণা ৷ গোরা প্রথমে উগ্র হিন্দুত্ববাদের প্রতি অনুরক্ত হয় কিন্তু পরবর্তীতে তার দৃষ্টিভঙ্গি পালটে যায় । সে উগ্র হিন্দুত্ব তথা সকল প্রকার ধর্মীয় আচারবিচার বর্জন করে সংকল্প নেয় প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার উৎকর্ষ প্রচারের মাধ্যমে ভারতবাসীর মনে স্বদেশপ্রেমের জোয়ার আনবে । ধর্মীয় ও সামাজিক রীতিনীতি ও আচারবিচারের পরিবর্তে স্বদেশপ্রেমের দ্বারাই যে জাতীয়তাবোধের জাগরণ সম্ভব তা সে উপলব্ধি করে এবং সেই কর্মযজ্ঞে সে নিজেকে উৎসর্গ করে ।
- জাতীয়তাবাদ বিকাশে ‘ ভারতমাতা ’ ছবির গুরুত্ব :
সূচনা : ব্রিটিশ ভারতে বিভিন্ন চিত্রের মাধ্যমে ব্রিটিশ বিরোধী মনোভাব তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর । ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে আঁকা তার ভারতমাতা চিত্রটি বিশ শতকে ভারতের জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রসার ঘটিয়েছিল । এই চিত্রে তিনি ভারতের প্রতীক হিসেবে ভারতমাতাকে দেখিয়েছিলেন ।
স্বাদেশিকতা : ভারতমাতা চিত্রে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতমাতার হাতে থাকা বেদ , ধানের শিষ , যপের মালা ও শ্বেতবস্ত্রকে ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরেছেন । আসলে এই চিত্রের স্বদেশবোধের দ্বারা তিনি জাতীয়তাবাদী ভাবনার প্রসার করতে চেয়েছিলেন ।
জাতীয় চেতনা বৃদ্ধি : সমকালীন ভারতে বিভিন্ন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের মিছিলের সামনে ভারতমাতার চিত্র রাখা হতো , যার দ্বারা ভারতমাতাকে জাতীয়তাবাদের প্রতীক হিসেবে দেখিয়ে ভারতে জাতীয় চেতনা বৃদ্ধি করা হয়েছিল বলে মনে করা হয় ।
- ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের চরিত্র ও প্রকৃতি বিশ্লেষণ করো ।
Ans: সূচনা : ব্যারাকপুরের সেনাছাউনিতে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে সিপাহি বিদ্রোহ শুরু হলেও তা কেবলমাত্র সিপাহিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি । সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের যোগদান এই বিদ্রোহে স্পষ্ট হয়ে ওঠে । তবে ব্রিটিশ শাসনের ভিত কাঁপিয়ে দেওয়া এই বিদ্রোহের প্রকৃতি এক বিতর্কিত বিষয় ।
১৮৫৭ – র বিদ্রোহের প্রকৃতি :
- সিপাহি বিদ্রোহ : ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে ভারত সচিব আর্ল স্ট্যানলি তাঁর এক প্রতিবেদনে এই বিদ্রোহকে ‘ Sepoy Mutiny ‘ বলে উল্লেখ করেছেন । এক্ষেত্রে তাঁদের অভিমত হলো , সিপাহিরাই বিদ্রোহের সূচনা করে যেখানে দেশের সকল শ্রেণির মানুষ , বিশেষ করে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির যোগদান ঘটেনি । এছাড়া এই বিদ্রোহের মূলে কোনো রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা ছিল না।
- সামস্ত বিদ্রোহ : ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার , সুরেন্দ্রনাথ সেন , রজনীপাম দত্ত প্রমুখ ১৮৫৭ – র বিদ্রোহকে সামস্ততান্ত্রিক প্রতিক্রিয়া বা সনাতন পন্থীদের বিদ্রোহ বলেছেন । কারণ কোম্পানির বিভিন্ন নীতির দ্বারা ক্ষমতাচ্যুত শাসকেরা যেমন রানি লক্ষ্মীবাঈ , নানা সাহেব , তাঁতিয়া টোপি সহ একাধিক প্রাদেশিক শাসক এই বিদ্রোহে সামিল হয়েছিলেন ।
- গণবিদ্রোহ : ডান কে , বল , সি . এ . বেইলি প্রমুখ ১৮৫৭ – র বিদ্রোহকে গণবিদ্রোহ বলার পক্ষপাতী । কারণ সিপাহিদের সাথে সাধারণ মানুষ স্বতস্ফূর্তঃভাবে অংশগ্রহণ করে এই বিদ্রোহকে গণবিদ্রোহের রূপ দিয়েছিল । এছাড়া মুজাফফরনগর , অযোধ্যা , কানপুর , ঝাসি প্রভৃতি অঞ্চলে বিদ্রোহে গণবিস্ফোরণ ঘটে ।
- জাতীয় বিদ্রোহ : ঐতিহাসিক নর্টন , ডাফ , আউটরাম , ডিসরেলি প্রমুখ ১৮৫৭ – র বিদ্রোহকে জাতীয় বিদ্রোহ বলে অভিহিত করেছেন । তাঁদের মতে , বিহার , উত্তরপ্রদেশ , মুজফফরনগর প্রভৃতি স্থানে সিপাহি নেতৃত্ব ছাড়াও স্থানীয় রাজন্যবর্গ , জমিদাররা বিদ্রোহে যোগদান করেন এবং দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে ভারতের সম্রাট বলে ঘোষণা করে বিদেশি শাসনমুক্ত এক দেশীয় শাসন ব্যবস্থা স্থাপনে উদ্যোগী হন ।
- ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ : বিনায়ক দামোদর সাভারকর ১৮৫৭ – র বিদ্রোহকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ বলে অভিহিত করেছেন । কিন্তু অধিকাংশ ঐতিহাসিক এই মত স্বীকার করেন না । কারণ না ছিল বিদ্রোহীদের নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য , না এই বিদ্রোহ থেকে ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবাদের জন্ম হয়েছিল । এছাড়া অনেক ভারতীয় রাজা , শিখ ও গোর্খা সৈনিকরা ইংরেজদের সাহায্য করেছিল ।
- মহাবিদ্রোহ : ভারতের বেশ কিছু জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিক এই বিদ্রোহের ব্যাপকতা লক্ষ করে এই বিদ্রোহকে মহাবিদ্রোহ বলে অভিহিত করেছিলেন । এরিখ স্টেকস বলেছেন যে এই বিদ্রোহ ছিল ভারতে ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলনের শেষ অধ্যায় ।
মন্তব্য : উপরোক্ত আলোচনায় স্পষ্ট যে ১৮৫৭ – র বিদ্রোহে সিপাহিদের অসন্তোষ মূল কারণ হলেও এই বিদ্রোহের মূলে ছিল বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের গভীর অসন্তোষ ও হতাশা । অধ্যাপক রণজিৎ গুহ , গৌতম ভদ্র প্রমুখ ত্রুটিবিচ্যুতি সত্ত্বেও এই আন্দোলনে গণচরিত্রের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন ।
=======================================================================================
সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা (চতুর্থ অধ্যায়)