কাজী নজরুলের গান গল্পের প্রশ্ন ও উত্তর   

সপ্তম শ্রেণি বাংলা 

কাজী নজরুলের গান
—রামকুমার চট্টোপাধ্যায়

লেখক পরিচিতিঃ

বাংলা সংগীত জগতের প্রবাদপুরুষ রামকুমার চট্টোপাধ্যায় ১৯২১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। সংগীতই এই শিল্পীর ধ্যান-জ্ঞান। দেশ-বিদেশে বিপুল খ্যাতিসম্পন্ন এই শিল্পীর সংগীত সাধকের পীঠস্থান ছিল এই কলকাতা শহর। হারিয়ে যাওয়া পুরাতনী বাংলা গানকে তিনি নতুন প্রাণ দিয়েছেন। ২০০৯ সালে তাঁর জীবনাবসান হয়। পাঠ্যাংশটি তাঁর ‘পুরাতনী” নামক আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।

 

সারসংক্ষেপঃ

লেখক খুব ছোটোবেলায় স্কুলে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ দেখলেন হেদো পার্কের কাছে খুব ভিড়। সেখানে তিনি শুনলেন বিডন স্ট্রিটের কাছে সরকার বাগানে নেতাজি আসবেন বক্তৃতা দিতে। আর কাজী নজরুল আসবেন গান গাইতে। দুই প্রিয় মানুষকে কাছ থেকে দেখবেন বলে লেখকও স্কুলে যাওয়া ছেড়ে সেখানে দাঁড়িয়ে পড়লেন। নেতাজির বক্তৃতার আগে নজরুলের গান হতেই হবে। এই ছিল তখনকার স্বদেশি মিটিং-এর রীতি। নজরুল এলেন গান গাইলেন। সবাই নিশ্চুপ হয়ে শুনল। এই গান শুনলে বোঝা যায় কাজীর গান কী। তাঁর গান শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল লেখকের রক্তও যেন ফুটছে। উনি দৌড়ে বাড়ি ফিরে আসেন। উত্তেজনা লুকোতে তবলার বোলে ডুবে যান।

হাতে কলমে প্রশ্নোত্তর :

কাজী নজরুলের গান

সপ্তম শ্রেণি বাংলা  

১. কাজী নজরুল ইসলাম ব্যতীত কোন্ মনীষীর নাম পাঠ্যাংশে খুঁজে পেলে ?

উত্তরঃ কাজী নজরুল ইসলাম ব্যতীত নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের নাম পাঠ্যাংশে খুঁজে পেলাম ।

২. ‘এই ছিল তখনকার কোনো স্বদেশি মিটিং-এর রীতি’– কোন রীতির কথা এখানে বলা হয়েছে ?

উত্তরঃ রামকুমার চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘কাজী নজরুলের গান’ নামক পাঠ্যাংশ থেকে জানতে পারি তখনকার কোনো স্বদেশি মিটিং-এ নেতাজি সুভাষচন্দ্রের বক্তৃতার আগে নজরুলের গান গাওয়ার রীতি ছিল। এখানে এই রীতির কথাই বলা হয়েছে।

৩. পাঠ্যাংশে কার, কেমন দেহসৌষ্ঠবের পরিচয় ধরা পড়েছে ?

উত্তরঃ পাঠ্যাংশে নেতাজি সুভাষচন্দ্রের দেহসৌষ্ঠবের পরিচয় ধরা পড়েছে।
পাঠ্যাংশ থেকে জানতে পারি নেতাজি ছিলেন দেবদূতের মতো, গৌরবর্ণ, উন্নত ললাট ও অতীব সুপুরুষ।

৪. টীকা লেখো :

• কাজী নজরুল ইসলাম : ১৮৯৯ খ্রি. ২৫মে বর্ধমানের চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা ফকির আহমেদ ও মাতা জাহেদা খাতুন। শৈশবেই পিতৃবিয়োগ ঘটায় দারিদ্র্যের সঙ্গে কঠোর সংগ্রাম করতে হয় তাঁকে। তাঁর প্রথম প্রকাশিত কবিতা ‘মুক্তি’। উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল—‘ছায়ানট’, ‘অগ্নিবীণা’, বিষের বাঁশি, ‘ফণিমনসা’, ‘সর্বহারা’ প্রভৃতি। একাধারে তিনি ছিলেন গীতিকার, সুরকার ও গায়ক। সকলের কাছে তিনি “বিদ্রোহী কবি’ নামে পরিচিত। তাঁর বিদ্রোহ মানব বিদ্বেষ, অন্যায় ও অসাম্যের বিরুদ্ধে। নজরুল ছিলেন দেশকালাতীত মানবপ্রেমে আবদ্ধ। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট বর্তমান বাংলাদেশের ঢাকা শহরে তাঁর মৃত্যু হয়।

• নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু : সুভাষচন্দ্র ছিলেন ভারতের মুক্তির অগ্রদূত, ছিলেন স্বাধীনতার জ্বলন্ত মশাল। ১৮৯৭ সালের ২৩ জানুয়ারি ওড়িশার কটক শহরে তাঁর জন্ম হয়। পিতা জানকীনাথ বসু, মাতা প্রভাবতী দেবী। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের সহযোদ্ধা রূপে তিনি মুক্তি সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। এরপর দেশের জন্য নানা সময় তিনি কারাবরণ করেন। গঠন করেন আজাদ হিন্দ ফৌজ’। তাঁর বিখ্যাত উক্তি– তোমরা আমায় রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব’। তাঁর মৃত্যু আজও অজানা, স্বদেশবাসীর কাছে আজও তিনি মরণজয়ী বীর।

স্বদেশী যুগ : বিশ শতকের সূচনায় উগ্র সাম্রাজ্যবাদী বড়োলাট লর্ড কার্জন ভারতে ব্রিটিশ শাসন সুরক্ষিত করার উদ্দেশ্যে কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এগুলির মধ্যে সবচেয়ে বিতর্কিত হল বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত। ১৯০৫ সালে ২০ জুলাই লর্ড কার্জন বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। এই সময় স্বাধীনতা সংগ্রামীরা সংগ্রামের অস্ত্র হিসাবে বয়কট নীতি গ্রহণ করেন। বিদেশি দ্রব্য বর্জন করে তারা ব্রিটিশ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চান। এছাড়া স্বদেশি শিল্পের বিকাশের জন্যও বিদেশি দ্রব্য বর্জনের প্রয়োজন ছিল। বিদেশি পণ্যসম্ভার বিশেষত সুতিবস্ত্র বর্জন এই আন্দোলনের মুখ্য বিষয় ছিল। পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও  বয়কট করা হয়। এই আন্দোলন ‘স্বদেশি আন্দোলন’ নামে পরিচিত। আর এই যুগই স্বদেশি যুগ। এই সময় কবিতা, গান, নাট্যসাহিত্য স্বদেশি ভাবধারার দ্বারা উদবেলিত হয়েছিল।

 

৫. কাজী নজরুল ইসলামের গান শুনে লেখকের মনে কোন্ অনুভূতির সৃষ্টি হল ? তখন তিনি কী করলেন ?

উত্তরঃ কাজী নজরুল ইসলামের গান শুনে লেখকের অল্প বয়সের রক্ত টগবগ করে ফুটতে আরম্ভ করে। লেখক তখন স্কুলে না গিয়ে রাস্তা দিয়ে ছুটে বাড়ি চলে আসেন এবং উত্তেজনা কমানোর জন্যে নিজের প্রিয় সঙ্গী তবলাকে টেনে নেন। ডুবে যান তবলার বোলে।

 

৬. শিক্ষকের সাহায্য নিয়ে নীচের বিষয়গুলির মধ্যে কাজী নজরুলের লেখা কোন্ কোন্ গান খুঁজে পেলে লেখো।

উত্তরঃ

» স্বদেশপ্রেম বিষয়ক— কারার ঐ লৌহকপাট / নমঃ নমঃ নমো বাংলাদেশ মম।
» প্রকৃতি বিষয়ক— তৃষিত আকাশ কাঁপে রে।
» হাসির গান / ছড়ার গান—মোমের পুতুল মমির দেশে, রুমঝুম্ ঝুমঝুম্ খেজুর পাতায়।
» প্রেমের গান—বলেছিলে ভুলিবে না মোরে। ভুলে গেলে হায় কেমন করে।
» ধর্মীয় অনুষঙ্গের গান— আমার কালোমেয়ের পায়ের তলায় দেখে যা আলোর নাচন।

অতিরিক্ত প্রশ্নের উত্তর : 

কাজী নজরুলের গান

সপ্তম শ্রেণি বাংলা  

• অতি-সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর : প্রতিটা প্রশ্নের মান -১

 

১. লেখক সেইদিন কোথায় যাচ্ছিলেন‌ ?

উত্তরঃ লেখক সেইদিন ইস্কুলে যাচ্ছিলেন।

২. সভায় বক্তৃতা দিতে কে আসছিলেন ?

উত্তরঃ নেতাজি সুভাষচন্দ্রবসু সভায় বক্তৃতা দিতে আসছিলেন।

৩. সভায় গান গাইতে কে আসছিলেন ?

উত্তরঃ কাজী নজরুল ইসলাম সভায় গান গাইতে আসছিলেন।

৪. লেখকের প্রিয়সঙ্গী কী ছিল ?

উত্তরঃ লেখকের প্রিয়সঙ্গী ছিল তবলা।

৫. গান শুনতে শুনতে লেখকের কী মনে হয়েছিল ?

উত্তরঃ লেখকের মনে হয়েছিল তাঁর রক্ত যেন টগবগ করে ফুটছে।

৬. লেখক ইস্কুলে যাওয়ার সময় কোথায় ভিড় দেখেছিলেন ?

উত্তরঃ লেখক হেদো পার্কের কাছে ভিড় দেখেছিলেন।

৭. নেতাজি কোথায় বক্তৃতা দিতে আসছিলেন ?

উত্তরঃ নেতাজি বিডন স্ট্রিটের কাছে সরকার বাগান নামক একটি জায়গায় বক্তৃতা দিতে আসছিলেন

৮. কাজী নজরুলকে দেখে নেতাজি কী করলেন ?

উত্তরঃ নেতাজি স্বয়ং তাঁকে দু-হাত তুলে প্রণাম করলেন।

৯. লেখক কীভাবে নেতাজিকে মঞ্চে দেখেছিলেন ?

উত্তরঃ লেখক নেতাজিকে মঞ্চে দেখেছিলেন যেন এক দেবদূত মঞ্চ আলো করে দাঁড়িয়ে আছেন।

১০. আজও চোখ বুজলে লেখক কী শুনতে পান ?

উত্তরঃ আজও চোখ বুজলে লেখক কাজীদার সেই গান শুনতে পান।

SOURCE-HZN

 ©kamaleshforeducation.in(2023)

error: Content is protected !!