কোনও টিচার কি পারেন ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে সরকারি নির্দেশ ছাড়া কোনো প্রাইভেট প্রোগ্রামে ( যথা পদযাত্রা , বিক্ষোভ সমাবেশ ইত্যাদি ) অংশগ্রহণ করতে আদেশ দিতে ? যদি পারেন তার পদ্ধতিটি কী ? — SR
——————————————————————————————–
১) প্রশ্ন – কোনও শিক্ষক বা শিক্ষিকা যদি স্কুলের দিনে ছাত্র ছাত্রীদের কোনও প্রাইভেট প্রোগ্রামে যোগদান করাতে চান তাহলে কী করতে হবে ?
উত্তর – তাহলে HOI এর থেকে লিখিত পারমিশন নিয়ে তবেই করবেন। নাহলে সব দায় সংশ্লিষ্ট টিচারের উপর বর্তাবে।
২) প্রশ্ন – যদি ঐ প্রোগ্রামটা স্কুলের দিনে কিন্তু স্কুল এর সময়ের বাইরে এবং স্কুলের নাম ব্যবহার না করে করা হয় তাহলেও কি উপরোক্ত পারমিশন লাগবে ?
উত্তর – লাগবে। অর্ডারে বলে দেয়নি যে school hours এর বাইরে বা স্কুলের ব্যানার ব্যবহার না করলে শিক্ষক মহাশয় কোনও পারমিশন ছাড়াই এটা করতে পারবেন।
৩) প্রশ্ন – শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের তো নিজস্ব সত্ত্বা আছে। তাঁরা স্কুলের টাইমের বাইরে কী করবে সেটা কি সরকারি নির্দেশ দিয়ে নির্ধারণ করা যায় ?
উত্তর – এটা কিছুটা ঠিক। কিন্তু আপনি যে বিদ্যালয়ের শিক্ষক সেই বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরাই একটা অনুষ্ঠানে আপনার নেতৃত্বে যোগদান করছে , আপনি আপনার শিক্ষক পরিচয়কে কাজে না লাগিয়েই ওটা করেছেন যদি প্রমাণ করতে পারেন এবং কর্তৃপক্ষের কাছে সেই যুক্তি যদি গ্রহণযোগ্য হয় তাহলে অসুবিধা নেই। সেটা করতে পারেন। কিন্তু মনে রাখবেন ব্যাপারটা জটিল এবং কঠিন। মনে রাখবেন একজন সরকারি বেতনভুক কর্মী হিসাবে আপনার জন্য সরকার যে কোড অফ কন্ডাক্ট বানিয়েছে সেটা কিন্তু আপনার জন্য school hours এর বাইরেও প্রযোজ্য।
৪) প্রশ্ন – যদি ছুটির দিনে কোনও প্রাইভেট প্রোগ্রামে কোনও টিচার ছাত্র ছাত্রীদের যোগদান করান তাহলেও কি প্রধানশিক্ষক মহাশয়ের অনুমতি লাগবে ?
উত্তর – না। সেক্ষেত্রে ছাত্র বা ছাত্রীর অভিভাবকের লিখিত অনুমতি লাগবে।
৫) প্রশ্ন – কোনও ছাত্র বা ছাত্রী যদি কোনো প্রোগ্রামে যেতে অনিচ্ছুক হয় তাহলে কি কোনও টিচার তাকে সেই কাজে বাধ্য করতে পারেন ?
উত্তর – না। পারেন না।
৭) প্রশ্ন – আপনি একজন টিচার হিসাবে উপরোক্ত পারমিশন পেলেন প্রধানশিক্ষক মহাশয় বা ছাত্র ছাত্রীর অভিভাবকের কাছ থেকে। এরপর ঐ অনুষ্ঠানে যাওয়া, অংশগ্রহণ, এবং শেষে ছাত্র ছাত্রীদের বাড়ি ফেরা পর্যন্ত তাদের নিরাপত্তার দায় কে নেবে ?
উত্তর – সংশ্লিষ্ট টিচারের উপর বর্তাবে এই দায়ভার। হেডমাষ্টার মশাই বা অভিভাবকের কোনও দায়িত্ব থাকবে না।
৮) প্রশ্ন – উপরের যে সমস্ত নিয়মগুলি বলা হলো এর কি কোনও আইনগত ভিত্তি আছে ?
উত্তর – অবশ্যই আছে। WBBSE ACT 1963 ( As amended ) অনুসারে প্রথমে পাবলিক ডোমেনে ড্রাফট প্রকাশ এবং তার একবছর পর গেজেট নোটিফিকেশন ( মেমো নং 214 SE, dated– 08/03/2018 ) এর দ্বারা স্কুল এডুকেশন ডিপার্টমেন্ট Rules জারি করে যার নাম ” APPOINTMENT, CONFIRMATION, CONDUCT AND DISCIPLINE RULES , FOR TEACHERS AND NON TEACHING STAFF RULES, 2018 ” । এই Rules আইনত খুব স্ট্রং। কোর্টে গিয়ে এর বিরুদ্ধে কিছু করা সহজ নয়। এখানে টিচারদের যে কোড অফ কন্ডাক্ট দিয়েছে সেখানে উপরোক্ত কথাগুলি বলা হয়েছে। ওগুলি সবই আইনের কথা। মনগড়া কিছু নয়।
৯) প্রশ্ন – এই নিয়ম ভঙ্গ করলে কী হতে পারে ?
উত্তর – উক্ত Rules অনুসারে ডিসিপ্লিন ভঙ্গ করলে কর্তৃপক্ষ ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশান নিতে পারেন। তখন নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে তদন্ত ও শাস্তির বিধান দিতে পারে WBBSE।
১০) প্রশ্ন – এই RULES অনুযায়ী ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশান এর শেষে কী শাস্তি হতে পারে ?
উত্তর – সামান্য তিরস্কার, এক বা একাধিক ইনক্রিমেন্ট বন্ধ, 10/20/18 বছরের বেনিফিট কেড়ে নেওয়া, সাময়িক বরখাস্ত, বাধ্যতামূলক অবসর, চাকরি থেকে অপসারণ ইত্যাদি।
১১) প্রশ্ন – আচ্ছা অনেক জায়গায় শোনা যাচ্ছে ডি আই রা অর্ডার জারি করছেন স্টুডেন্টদের নিয়ে এরকম প্রোগ্রাম নেওয়া যাবে না বলে , এমনকি তাঁরা যে স্কুল এটা করেছে তাদের শো কজও করছেন। এটা কি ডি আই করতে পারেন ?
উত্তর – পারেন। এডুকেশন ডিপার্টমেন্ট বা বোর্ডের নির্দেশে ডি আই এটা করতে পারেন WBBSE ACT,1963 আর উপরে উল্লেখিত RULES অনুসারে।
১২) প্রশ্ন – আচ্ছা বিদ্যালয়ের টিফিনের সময় যদি শিক্ষিকা ও ছাত্র ছাত্রীরা প্রতিবাদ আন্দোলন এ অংশ নেন সেটা কি বেআইনি কিছু ?
উত্তর – হ্যাঁ। টিফিনের সময়টাকে শুধু টিফিন করার কাজেই লাগাতে হবে বলে ফিন্যান্স ডিপার্টমেন্ট এর অর্ডার আছে যেটাকে আবার এডুকেশন ডিপার্টমেন্ট স্কুলের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে । বোর্ডের অর্ডারটির মেমো নং DS ( Aca ) / 370/M/57, dated – 22/05/2023 আর ফিন্যান্স ডিপার্টমেন্ট এর অর্ডারটির মেমো নং – 3370- F ( P 2 ) , dated– 20/05/23
১৩) প্রশ্ন – তাহলে কি স্কুলের টিচার এবং স্টুডেন্টদের এই ঘৃণ্য অপরাধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলন করার কোনো উপায় নেই ?
উত্তর – তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে গেলে সবসময় আইন মেনে সেটা করা যায় না। আইন অমান্য করাও আন্দোলনের একটা পন্থা। ব্রিটিশ বিরোধী শান্তিপূর্ণ আন্দোলনেও মহাত্মা গান্ধী বারবার আইন অমান্য আন্দোলন করেছিলেন। এবার শিক্ষক শিক্ষিকা গণ আইন অমান্যের পথে যাবেন কি না সেটা তাঁদেরকেই ঠিক করতে হবে। এটা দেখা গেছে খুব বড় আকারের আন্দোলন যখন হয় তখন আইন অমান্য হলেও সরকার চাপে পড়ে সাধারনত ব্যবস্থা নেয় না। কারন তাতে আন্দোলন আরো বেগবান হয়। এক্ষেত্রে বিপুল সংখ্যক স্কুল যদি সরকারি নির্দেশ উড়িয়ে দিয়ে এই কর্মসূচিতে সামিল হয় কর্তৃপক্ষ তেমন কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার আগে ভাববে । কিন্তু অল্প স্বল্প কিছু জন জড়ালে তারা সমস্যায় পড়তে পারে।
১৪) প্রশ্ন – ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে এই ধরনের কর্মসূচি নিলে কোনদুটি বিষয় সর্বাগ্রে খেয়াল রাখা উচিত ?
উত্তর – ছাত্র ছাত্রীদের অভিভাবকের সম্মতি আর ছাত্র ছাত্রীদের নিরাপত্তা। এই কর্মসূচিতে গিয়ে যদি কোনো ছাত্র ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে বা দুর্ঘটনার শিকার হয় তাহলে কিন্তু মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করবে। তখন কেউ পাশে থাকবে না। ছাত্র ছাত্রীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করে তবেই এরকম কর্মসূচি নেওয়া উচিত। SR