জটিল   প্রশ্ন উত্তরের আজ দ্বিতীয় পর্ব। আপাতত আর এক ডজন। এসব প্রশ্ন নিয়ে বিতর্ক খুব। কিছুটা বিভিন্ন Govt Order এর সাপেক্ষে আর কিছুটা অর্ডার না থাকার সাপেক্ষে সেই সব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা। – 
—————————————————————————————–
১) প্রশ্ন – স্কুলে দেরি করে গেলে অর্থাৎ 10.40 এর পর থেকে 11.15 এর মধ্যে স্কুলে ঢুকলে লেট অ্যাটেনডেন্স মার্কড করা হয়। এটাও আমরা জানি একটা ক্যালেন্ডার মাসে তিন দিন এরকম লেট হলে একটা সিএল কেটে নেওয়া হতে পারে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে CL কাটা বলতে ঠিক কী বোঝাচ্ছে ? কীভাবে সেটা কাটা হবে ?

 

উত্তর — একটা CL কাটা বলতে সেই বছরে প্রাপ্য CL একটা কমে যাওয়া । অর্থাৎ সেই বছর উক্ত কর্মী 14 টির জায়গায় 13 টি CL পাবেন। দুটি CL কাটা মানে ঐ বছর ঐ কর্মী মোট 12 টির বেশি CL পাবেন না। HOI এই ব্যাপারে এটেনডেন্স রেজিষ্টারে ও লিভ রেজিষ্টারে প্রয়োজনীয় নোট দেবেন।

 

২) প্রশ্ন — বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকাদের কি নির্দিষ্ট কিছু ড্রেস কোড ঠিক করে দিতে পারে স্কুল কর্তৃপক্ষ ?

 

উত্তর — না পারে না। কোনো সরকারি অর্ডারে স্কুল শিক্ষক/ শিক্ষিকাদের জন্য কোনও ড্রেস কোড নির্দিষ্ট করা হয়নি। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ তার মেমো নং — 832 /SC /APT, তারিখ –16/08/2004 তে বলছে শিক্ষক শিক্ষিকারা ধুতি না প্যান্ট শার্ট অথবা শাড়ি না সালোয়ার কী পরে স্কুলে আসবেন সেটা ঠিক করে দেওয়া যায় না। তবে ঐ অর্ডারে এটাও বলছে যে শিক্ষক শিক্ষিকাদের পোশাক হবে মার্জিত ও রুচিশীল। এই রুচিশীল এর সংজ্ঞা কী সেটা অবশ্য বলা নেই কোনও অর্ডারে।

 

৩) প্রশ্ন — বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষ আর্থিক কারনে বা অন্য কোনো কারনে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকে কোনও প্রাইভেট স্কুল চালানো বা অন্য কোনো কাজে স্কুল বিল্ডিং ব্যবহার করতে দেন। এটা কি করা যায় ?

 

উত্তর — না করা যায় না। এটা বেআইনি। স্কুল এডুকেশন ডিরেক্টরেট তার মেমো নং — ED (88), তারিখ — 10/04/1970 দ্বারা পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছে যে কোনো পলিটিক্যাল পার্টির মিটিং মিছিলের জন্য স্কুলের গ্রাউন্ড বা বিল্ডিং ব্যবহার করা যাবে না। এছাড়া স্কুল এডুকেশন ডিরেক্টরেট আর একটি অর্ডারে যার মেমো নং — 358/HS, তারিখ — 18/12/2018 , দ্বারা Govt School এর জন্য ( এটা স্পন্সরড স্কুলের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে বলেই মনে হয়েছে ) জানিয়েছে লেখাপড়া ছাড়া অন্য কোনো কাজে স্কুল বিল্ডিং ব্যবহার করা যাবে না। এখানে লেখাপড়া বলতে স্কুলের উদ্যোগে চলা লেখাপড়াকেই বোঝানো হচ্ছে। কোনো প্রাইভেট সংস্থার ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে চালানো লেখাপড়াকে নিশ্চয়ই বোঝানো হচ্ছে না। তবে ঐ অর্ডারে বলা হয়েছে যে যদি স্কুল কর্তৃপক্ষ কোনো কারনে স্কুল এর infrastructure অন্য কাউকে ব্যবহার করতে দিতে চান তাহলে ডি আই এর মাধ্যমে ডিরেক্টরেট অফ স্কুল এডুকেশন এ পাঠাতে হবে। সেখান থেকে যাবে ডিপার্টমেন্ট অব স্কুল এডুকেশনে। তাঁদের পারমিশন নিয়ে তবেই স্কুল কর্তৃপক্ষ সেটা allow করতে পারেন।

 

৪) প্রশ্ন — বেশ কিছু ক্ষেত্রে অভিযোগ ওঠে কোনও কোনও স্কুলে দীর্ঘদিন কোনও রহস্যজনক কারনে স্থায়ী হেডমাষ্টার মশাই নিয়োগ হয় না। সম্ভবত দুষ্টুমি করে HM vacancy দেখায়ই না স্কুল কর্তৃপক্ষ। যাতে বছরের পর বছর TIC কাজ চালিয়ে যেতে পারে। এমনকি এসএসসি থেকে HM এর রেকমেন্ডেশন এলেও তাঁকে নিতে চায় না কিছু স্কুল কর্তৃপক্ষ। এই ধরনের স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কি কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে ?

 

উত্তর – অবশ্যই আছে। স্কুল এডুকেশন ডিপার্টমেন্ট তার মেমো নং – 1577 GA, তারিখ – 17/07/2006 তে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে এটা সম্পূর্ণ বেআইনি। এমন কাজ যে স্কুল কর্তৃপক্ষ করবে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই স্কুলের গ্রান্ট ইন এড বন্ধ করে দেওয়া হবে।

 

৫) প্রশ্ন – মেডিক্যাল লিভ কি একাডেমিক ইয়ার বা ক্যালেন্ডার ইয়ার অনুযায়ী হিসাব করা যায় ?

 

উত্তর – না। পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ মেমো নং 3948/ জি, তারিখ – 26/11/1999 দ্বারা জানিয়েছে যে মেডিক্যাল লিভ এর হিসাব হবে জয়েনিং ডেট থেকে এক বছর ধরে। অর্থাৎ একাডেমিক বা ক্যালেন্ডার ইয়ার অনুযায়ী নয়, হিসাব হবে সার্ভিস ইয়ার ধরে।

 

৬) প্রশ্ন — বুকলিস্ট কি স্টুডেন্টদের দিতেই হবে ? দিলে কখন দিতে হবে ? পাঠ্যবই সিলেকশন করে বুকলিস্টের অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে কি কোনও শর্ত আছে ?

 

উত্তর – মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সার্কুলার নং – S /18, তারিখ- 18/01/1993 এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে প্রতি বছর ফাইনাল পরীক্ষার রেজাল্ট আউটের দিনে ছাত্র ছাত্রীদের হাতে বুকলিস্ট তুলে দিতে হবে। স্পন্সরড স্কুলের ম্যানেজমেন্ট রুলস বলেছে যে একটা পাঠ্য বই নির্বাচিত হবে একাডেমিক কাউন্সিল এর উদ্যোগে কিন্তু অবশ্যই বিষয় শিক্ষকের সঙ্গে আলোচনা করে। বিষয় শিক্ষকের মতামত না নিয়ে টেক্সট বই সিলেকশন এর সুযোগ নেই। একটা টেক্সট বই সিলেক্টেড হয়ে বুকলিস্টে আসার পর নিতান্ত বাধ্য হয়ে পাল্টাতে না হলে অন্তত তিন বছর সেই বই রাখতেই হবে। কোন ধরনের বই বুকলিস্টে রাখা যাবে এই ব্যাপারে বলতে গিয়ে বোর্ডের সার্কুলার নং – S/43, তারিখ – 17/02/1994 বলছে যে বুকলিস্টে শুধুমাত্র বোর্ডের অনুমোদিত বই রাখা যাবে। এমন কি বোর্ডের অনুমোদন আছে অথচ কোনও বইয়ে যদি ভুল তথ্য থাকে বা এমন তথ্য থাকে যা দেশের সংহতি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে পারে সেই রকম বইও বুক লিস্টে রাখা যাবে না।

 

৭) প্রশ্ন — কোনও স্কুল কর্তৃপক্ষ কি মুসলিমদেব হজ বা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের কোনও তীর্থযাত্রা করার জন্য কোনও বিশেষ ছুটি কোনও কর্মীকে দিতে পারেন ?

 

উত্তর — না। Leave Rules এ এইরকম কোনও ছুটির উল্লেখ নেই। তবে যে কোনও ধরনের কোনো বিশেষ পরিস্থিতির ছুটির জন্য স্কুলের এমসি এর মাধ্যমে বোর্ডে আবেদন পাঠানো যেতেই পারে। বোর্ড সেটা অনুমোদিত করলে স্পেশাল লিভ পাবেন। কিন্তু এই ধরনের আবেদন সাধারনত নাকচ হয়ে যায়।

 

৮) প্রশ্ন – শুক্রবারের নামাজ বা কোনও সাপ্তাহিক পুজোর জন্য শুক্রবার বা সেই পুজোর দিনে অতিরিক্ত টিফিন টাইম মঞ্জুর করার নিয়ম কোনও সরকারি নির্দেশে দেওয়া হয়েছে কী ?

 

উত্তর – না। কোনো পরিষ্কার অর্ডার নেই। একটা অর্ডার আছে 1975 সালের। সেটা সরকারী কর্মচারীদের জন্য। তাতে এই ব্যাপারে এমন একটি অর্ডারের রেফারেন্স দেওয়া হয়েছে যেটা আক্ষরিক অর্থেই ব্রিটিশ আমলের ( মেমো নং – 8141- 8171, তারিখ – 19/10/2021) । সেটা পাওয়া যাবে না। তাই বলা যেতে পারে জুম্মা নামাজ বা কোনও পুজো করার জন্য এক্সট্রা recess time পাওয়া যাবে এমন অর্ডার নেই।

 

৯) প্রশ্ন – কোনও বর্তমান বা প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রী, শিক্ষক শিক্ষিকা,পরিচালন সমিতির সদস্যের দুঃখজনক মৃত্যু হলে স্কুলে ছুটি দিয়ে দেওয়ার কি কোনও নিয়ম আছে ?

 

উত্তর — না। কোনো Govt Order এ এরকম কোনও ছুটির কথা বলা নেই। তবে গেজেট নোটিফিকেশান মেমো নং 215 SE, তারিখ – 08/03/2018 তে বলেছে HOI হলেন স্কুলের সামগ্রিক একাডেমিক ও এডমিনিষ্ট্রেটিভ ম্যাটার্স এর দেখাশোনার দায়িত্বপ্রাপ্ত । আবার ঐ একই তারিখে প্রকাশিত গেজেট নোটিফিকেশান মেমো নং 214 SE তে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে HOI মনে করলে কোনও স্টাফকে ছুটির আগে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারেন। এই সূত্রে তিনি যদি সেরকম কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে ছুটি দেন তাহলে সেটা তাঁর ব্যাপার। কিন্তু এটার কোনও জোরালো আইনগত সাপোর্ট নেই।

 

১০) প্রশ্ন – রমজান মাসে মুসলিম কর্মীরা কি সাড়ে চারটের আগে স্কুল থেকে ছুটি পাবেন ?

 

উত্তর – হ্যাঁ। চাইলে তাঁরা সাড়ে তিনটের সময় স্কুল ত্যাগ করতে পারবেন ।এখন একটা প্রশ্ন হচ্ছে যে এটা প্রায় প্রত্যেক বছর অর্ডার হয়। এবছর এখনও হয়নি। তাহলে কি এই বছর মুসলিম কর্মীরা এই ছুটি পাবেন না ? এই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে এই বছরও পাবেন। যদি এবছর কোনও অর্ডার না হয় তাহলেও পাবেন। 2011 সালের ফিন্যান্স ডিপার্টমেন্ট এর একটি অর্ডারের রেফারেন্স দিয়ে 2023 সালে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ তার মেমো নং – DS (Aca)/260/N/11 , তারিখ — 27/03/2023 দ্বারা যে অর্ডারটা জারি করেছে সেটি একটি জেনারেল অর্ডারের মতোই । সেটি কেবল একটি নির্দিষ্ট বছরের জন্য প্রযোজ্য এমন বলা নেই। তাই সেই অর্ডারের দ্বারাই স্কুল কর্তৃপক্ষ চাইলে মুসলিম কর্মীদের এই বছরেও সাড়ে তিনটার সময় স্কুল ছেড়ে যেতে অনুমতি দিতে পারেন।

 

১১) প্রশ্ন – স্কুলের কোনও বাচ্চার অভিভাবক কে হবেন ? বাবা বা মা থাকলে অন্য কেউ কি অভিভাবক হতে পারেন ?

  
উত্তর – মধ্যশিক্ষা পর্ষদ তার মেমো নং – 05/C (OSD ) , তারিখ – 07/01/2010 এ জানিয়েছে যে বাবা এবং মা হলেন ন্যাচারাল গার্ডিয়ান। এঁদের মধ্যে যিনি বাচ্চার ভর্তির সময়ে স্কুলের এডমিশান রেজিষ্টারে সই করেছিলেন তিনিই স্কুল সংক্রান্ত ব্যাপারে বাচ্চার গার্ডিয়ান বলে বিবেচিত হবেন। তবে এই গার্ডিয়ানশিপ তাঁরা নিজেদের মধ্যে যে কোনও সময় পাল্টে নিতে পারেন। অর্থাৎ হয়ত এডমিশান রেজিষ্টারে বাবা গার্ডিয়ান আছেন , সেটা পাল্টে মা কে গার্ডিয়ান করা যেতে পারে। অথবা মা গার্ডিয়ান আছেন , সেটা পাল্টে বাবাকে গার্ডিয়ান করা যেতে পারে। এই পরিবর্তন করার এর জন্য বাবা এবং মা কে সম্মতির ভিত্তিতে যৌথভাবে আবেদন করতে হবে।

 

১২) প্রশ্ন – যদি ভর্তির সময় একজন নির্দিষ্ট শিশুর ক্ষেত্রে বাবা এবং মা দুজনেই নিজেকে সেই শিশুর গার্ডিয়ান দাবি করে এডমিশান রেজিষ্টারে সই করতে চান তাহলে কে হবেন সেই বাচ্চার গার্ডিয়ান অথবা কে সই করবেন এডমিশান রেজিষ্টারে ? 

 
উত্তর – এক্ষেত্রে ম্যানেজমেন্ট রুলস, 1969 এর RULE 5(1) , Note -(a) অনুযায়ী গার্ডিয়ান হিসাবে বাবার দাবি অগ্রাধিকার পাবে।

 SOURCE-SMR

 

 

©Kamaleshforeducation.in (2023)

error: Content is protected !!