সপ্তম শ্রেণি
দ্বিতীয় পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন- ২০২৫
বিষয় : ইতিহাস
Set-1
পূর্ণমান : ৫০ সময় : ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট
১. সঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো : (যে-কোনো পাঁচটি) : ১x১০ = ১০
(ক) সুলতান শব্দ একটি– (উপাধি / পদ / খলিফা)।
উত্তরঃ উপাধি।
(খ) কিতাব-আল-রিহলা-এর রচয়িতা হলেন– (মিনহাস-ই-সিরাজ / ইবন বতুতা / মহম্মদ-বিন-তুঘলক / বদাউনি)।
উত্তরঃ ইবন বতুতা।
(গ) মহম্মদ ঘুরি (১২০০ / ১২০৬ / ১২৫৬) খ্রিস্টাব্দে মারা যান।
উত্তরঃ ১২০৬
(ঘ) বাংলার শাসক ইলিয়াস শাহের রাজধানী ছিল (পান্ডুয়া / বিজয়নগর / সোনারগাঁ)।
উত্তরঃ পান্ডুয়া।
(ঙ) অমুসলমানদের কাছ থেকে মুসলমান শাসকরা (খরাজ / জিজিয়া / খামস) করা আদায় করতেন।
উত্তরঃ জিজিয়া।
(চ) পানিপথের প্রথম যুদ্ধ হয়েছিল— (১৪৫১ / ১৫১৬ / ১৫২৬ / ১৬২৬) খ্রিস্টাব্দে।
উত্তরঃ ১৫২৬
(ছ) শেরশাহ কৃষকদের– (পাট্টা / দাগ / কবুলিয়ত) দিতেন।
উত্তরঃ পাট্টা
(জ) রাজপুতদের গুরুত্বপূর্ণ দুর্গ ছিল (লালকেল্লা / চিতোর দুর্গ / বাঁশের কেল্লা)।
উত্তরঃ চিতোর দুর্গ।
(ঝ) মুঘল সম্রাট আকবরের তৈরি নতুন রাজধানী হল (ফতেপুর সিকরি / নতুন দিল্লি / আগ্রা।)।
উত্তরঃ ফতেপুর সিকরি
(ঞ) (বাগদাদ / কলকাতা / কিলা রাই পিথোরা) ছিল মুসলমান সভ্যতার বড় কেন্দ্র।
উত্তরঃ বাগদাদ।
২. নীচের প্রশ্নগুলির এককথায় উত্তর দাও : ১x১০=১০
(ক) ফিরোজ শাহ তুঘলক কতবার খলিফার অনুমোদন পান ?
উত্তরঃ ফিরোজ শাহ তুঘলক দু-বার খলিফার অনুমোদন পান
(খ) কোন সুলতান রেশন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন ?
উত্তরঃ আলাউদ্দিন খলজী রেশন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন।
(গ) পানিপথের প্রথম যুদ্ধ কাদের মধ্যে হয় ?
উত্তরঃ বাবর ও ইব্রাহিম লোদীর মধ্যে।
(ঘ) খিলাত বলতে কী বোঝায় ?
উত্তরঃ আনুষ্ঠানিক পোশাক।
(ঙ) ভারতের প্রথম মুঘল বাদশাহ কে ছিলেন ?
উত্তরঃ ভারতের প্রথম মুঘল বাদশাহ ছিলেন বাবর।
(চ) আকবরের রাজস্ব মন্ত্রী কে ছিলেন ?
উত্তরঃ টোডরমল ছিলেন আকবরের রাজস্ব মন্ত্রী।
(ছ) চৌসার যুদ্ধ কত খ্রিস্টাব্দে হয় ?
উত্তরঃ চৌসার যুদ্ধ ১৫৩৯ খ্রিস্টাব্দে হয়।
(জ) কৃষকরা রাজস্ব দেওয়ার কথা কবুল করে যে দলিল রাষ্ট্রকে দিত তার নাম কী ?
উত্তরঃ কবুলিয়ত।
(ঝ) কে শাহজাহানাবাদ শহর তৈরি করেন ?
উত্তরঃ সম্রাট শাহজাহান শাহজাহানাবাদ শহর তৈরি করেন।
(ঞ) ‘কোটলা’ শব্দের অর্থ কী ?
উত্তরঃ ‘কোটলা’ শব্দের অর্থ দুর্গ।
৩. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও (যে-কোনো চারটি) : ২x৪=৮
(ক) পানিপতের প্রথম যুদ্ধে বাবরের জয়লাভের কারণ কি ছিল ?
উত্তরঃ পানিপতের প্রথম যুদ্ধে বাবর তুর্কিদের থেকে শেখা রুমি কৌশল ব্যবহার করেন। এছাড়া তিনি যুদ্ধে আগ্নেয়াস্ত্র ও অশ্বারোহী বাহিনীকে ব্যবহার করে যুদ্ধে জয়লাভ করেন।
(খ) আলাউদ্দিন খলজির বাজার নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য কী ছিল ?
উত্তরঃ আলাউদ্দিন খলজির বাজার নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য ছিল— (১) প্রচলিত বেতনে যাতে সৈন্যরা প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে পারে তা সুনিশ্চিত করা। (২) মুদ্রাস্ফীতি প্রতিহত করে সাধারণ মানুষদের সুবিধা দান করা।
(গ) ‘বাদশাহ’ বা ‘পাদশাহ’ বলতে কী বোঝায় ?
উত্তরঃ ভারতে মুঘল সম্রাটদের উপাধি ছিল বাদশাহ বা পাদশাহ। পাদ অর্থাৎ প্রভু, শাহ অর্থাৎ শাসক বা রাজা। খুব শক্তিশালী শাসক বোঝাতে একই অর্থযুক্ত শব্দ দুটি ব্যবহার করা হয়। ‘বাদশাহ’ বা ‘পাদশাহ’ শব্দের অর্থ হল শক্তিশালী শাসক বা সম্রাট। এই শব্দগুলি হল ফারসি শব্দ।
(ঘ) ‘বারো ভূঁইয়া’ কাদের বলা হত ?
উত্তরঃ আকবরের পুত্র ও উত্তরসূরি জাহাঙ্গিরের সময় বাংলার বারোজন স্থানীয় হিন্দু জমিদার ও আফগানরা মুঘলদের বিরুদ্ধে বার বার বিদ্রোহ করেছে। এই বিদ্রোহীরা এক সঙ্গে ‘বারো ভূঁইয়া’ নামে পরিচিত ছিলেন। এঁদের মধ্যে প্রতাপাদিত্য, চাঁদ রায়, কেদার রায়, ইশা খান প্রমুখ ছিলেন উল্লেখযোগ্য।
(ঙ) দিল্লিকে ‘হজরত-ই-দিল্লি’ কেন বলা হত ?
উত্তরঃ মুঘল আক্রমণে বাগদাদ শহরের পতন ঘটলে এই দুরবস্থার সুযোগে দিল্লির গুরুত্ব বেড়ে যায়। মধ্য ও পশ্চিম এশিয়া থেকে অনেক লোক এসে বাস করতে শুরু করে দিল্লিতে। দিল্লি হয়ে ওঠে সুফি সাধকদের অন্যতম পীঠস্থান। এজন্য দিল্লির নামই হয়ে যায় ‘হজরত-ই-দিল্লি’।
(চ) মুঘল আমলের মুদ্রা ব্যবস্থা সম্পর্কে লেখো।
উত্তরঃ মুঘল আমলের সোনার মুদ্রা ‘মোহর’ বা ‘আশরফি’ নামে পরিচিত ছিল। এ যুগের প্রধান মুদ্রা ছিল রুপো দিয়ে তৈরি ‘রূপায়া’, ব্যাবসা-বাণিজ্যের মাধ্যম ছিল রূপায়া। প্রজারাও রূপায়ার মাধ্যমেই কর দিত। এ ছাড়া ছিল তামা দিয়ে তৈরি মুদ্রা ‘দাম’।
৪. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও (যে-কোনো চারটি) : ৩x৪=১২
(ক) সুলতান ইলতুৎমিশের সামনে প্রধান তিনটি সমস্যা কী ছিল ?
উত্তরঃ সিংহাসনে আরোহণের পর ইলতুৎমিশ প্রধান তিনটি সমস্যার সম্মুখীন হন। তাঁর তিনটি সমস্যা হল—
(১) বিদ্রোহ : তাঁর আমলে সাম্রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল। কীভাবে সেই বিদ্রোহ দমন করা যাবে।
(২) মোঙ্গল আক্রমণ : মোঙ্গলবীর চেঙ্গিজ খান তাঁর সাম্রাজ্যের সীমান্তে উপস্থিত হয়েছিলেন। কীভাবে মোঙ্গল শক্তির মোকাবিলা করা যাবে।
(৩) উত্তরাধিকার বিরোধ : কীভাবে সুলতানিতে একটি রাজবংশ তৈরি করা যাবে, যাতে তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর উত্তরাধিকারী গোলমাল ছাড়াই সিংহাসনে বসতে পারে ? ইলতুৎমিশ ক্রমাগত যুদ্ধ করে বিদ্রোহীদের দমন করেন।
(খ) ইকতা কী ? কেন সুলতানরা ইকতা ব্যবস্থা চালু করেছিলেন ?
উত্তরঃ ইকতা : দিল্লির সুলতানরা বিভিন্ন রাজ্য জয় করে সাম্রাজ্যের আয়তন বাড়িয়েছিলেন। সুলতানরা যেসব রাজ্য জয় করলেন সেই রাজ্যগুলিই হল সুলতানদের এক-একটি প্রদেশ। দিল্লি সুলতানির প্রদেশগুলিকে ইকতা বলা হত।
দিল্লির সুলতানদের ইকতা ব্যবস্থা চালু করার কারণ—
(১) রাজ্যের শাসন পরিচালনা : ইকতার শাসনকর্তাকে বলা হত ইকতাদার বা মুক্তি। ইকতাদাররা ছিলেন রাজ্য বা প্রদেশের শাসক। সুলতানরা তাদের দায়িত্ব ইকতাদারদের মধ্যে ভাগ করে দিয়ে সাম্রাজ্যের শাসন পরিচালনা করতেন।
(২) সেনাবাহিনী পালন : ইকতাদারদের অন্যতম প্রধান কাজ ছিল সামরিক দায়িত্ব পালন করা। ইকতাদার হলেন সামরিক নেতা। ছোটো ইকতাদারদের শুধুমাত্র সামরিক দায়িত্ব পালন করতে হত।
(৩) রাজস্ব আদায় ও শান্তি বজায় রাখা : ইকতাদাররা তার শাসনাধীন রাজ্যের রাজস্ব আদায় করতেন। তিনি নিজের প্রয়োজনীয় অর্থ রেখে বাড়তি রাজস্ব সুলতানকে দিতেন। তিনি রাজ্যের শান্তি-শৃঙ্খলার দায়িত্বও পালন করতেন।
(গ) ঘর্ঘরার যুদ্ধ কাদের মধ্যে হয়েছিল ? এই যুদ্ধের ফল কী হয়েছিল ?
উত্তরঃ ঘর্ঘরার যুদ্ধ : ১৫২৯ খ্রিস্টাব্দে ঘর্ঘরার যুদ্ধ হয়েছিল। এই যুদ্ধ হয়েছিল দিল্লির মুঘল বাদশাহ বাবরের সঙ্গে বিহার ও বাংলার আফগান শক্তিজোটের। আফগান শক্তিজোটে ছিলেন সুলতান ইব্রাহিম লোদির ভাই মাহমুদ লোদি, বিহারের শের খান এবং বাংলার শাসক নসরৎ শাহ।
ঘর্ঘরার যুদ্ধের ফল—
• বাবরের জয়লাভ : ঘর্ঘরার যুদ্ধে বাবর জয়লাভ করেন।
• মুঘল সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি : বাবর প্রতিষ্ঠিত মুঘল সাম্রাজ্য কাবুল থেকে ঘর্ঘরা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।
(ঘ) ‘পাট্টা’ ও ‘কবুলিয়ত’ বলতে কী বোঝায় ?
উত্তরঃ দিল্লির শাসক হওয়ার পর শের শাহ রাজস্বব্যবস্থার ক্ষেত্রে পাট্টা ও কবুলিয়ত ব্যবস্থা চালু করেছিলেন।
পাট্টা : জমিতে কৃষকের স্বত্ব স্বীকার করে শের শাহ কৃষককে যে দলিল দিতেন তাকে ‘পাট্টা’ বলা হয়। পাট্টায় কৃষকের নাম, জমিতে কৃষকের অধিকার এবং কৃষককে কত রাজস্ব দিতে হবে তার উল্লেখ করা হত।
কবুলিয়ত : কৃষক নির্দিষ্ট রাজস্ব দেওয়ার কথা কবুল করে শের শাহকে (সরকার বা রাষ্ট্রকে) যে দলিল দিত তাকে কবুলিয়ত বলা হয়।
(ঙ) মুঘল শাসকরা কীভাবে ব্যাবসাবাণিজ্যে উৎসাহ দিতেন ?
উত্তরঃ মুঘল সম্রাটগণ ব্যাবসাবাণিজ্যে উৎসাহ দিতেন।
প্রথমত : সম্রাটগণ বণিকদের ব্যাবসাবাণিজ্যের জন্য কুঠি বানানোর অনুমতি দিয়ে সহায়তা করতেন। সম্রাটগণ বণিকদের নিরাপত্তা দিতেন। এর জন্য তাঁরা রাহাদারি নামে একপ্রকার কর আদায় করতেন। তা ছাড়া তারা বণিকদের কাজে হস্তক্ষেপ করতেন না।
দ্বিতীয়ত : সম্রাটগণ বণিকদের কাছ থেকে মাত্র ২.৫-৫% হারে শুল্ক নিতেন।
তৃতীয়ত : মুঘল সম্রাটগণ প্রচুর রাস্তা নির্মাণ করেছিলেন। রাস্তার ধারে প্রচুর সরাইখানা বা বিশ্রামাগার নির্মাণ করে বণিকদের সুবিধা করেছিলেন।
(চ) কী কী ভাবে মধ্যযুগের ভারতে শহর গড়ে উঠত ?
উত্তরঃ মধ্যযুগে ভারতে অনেক শহর গড়ে উঠেছিল। ‘শহর’ শব্দটি ফারসি শব্দ। মধ্যযুগ বা সুলতানি ও মুঘল যুগে ভারতে বিভিন্নভাবে শহর গড়ে উঠেছিল।
অর্থনৈতিক কারণ : মধ্যযুগে অনেক শহর গড়ে উঠেছিল যেগুলি ছিল ব্যাবসাবাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্র।
রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কারণ : মধ্যযুগে রাজধানীকে কেন্দ্র করে শহর গড়ে উঠত। সুলতান বা বাদশাহগণ অনেক সময় নতুন নতুন রাজধানী শহর তৈরি করতেন। সুলতান মহম্মদ বিন তুঘলক দিল্লি থেকে দৌলতাবাদে রাজধানী স্থানান্তর করেছিলেন। মুঘল যুগে গড়ে উঠেছিল আগ্রা, ফতেহপুর সিকরি, শাহজাহানাবাদ প্রভৃতি শহর।
ধর্মীয় কারণ : মধ্যযুগে ধর্মীয় স্থান, মন্দির বা মসজিদকে ঘিরে প্রচুর তীর্থযাত্রী আসার ফলে শহর গড়ে উঠত। আবার অনেকগুলি কারণ একসঙ্গে যুক্ত হয়েও অনেক শহর করে উঠত।
৫. নীচের যে-কোনো দুটি প্রশ্নের উত্তর লেখো : ৫x২=১০
(ক) আলাউদ্দিনের সময় দিল্লির বাজারদর নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে তোমার মতামত লেখো।
উত্তরঃ খলজি বংশের শ্রেষ্ঠ সুলতান আলাউদ্দিন খলজিই সর্বপ্রথম সুলতানি সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক সংস্কারে মনোনিবেশ করেন। এর মধ্যে বাজারদর নিয়ন্ত্রণ বা মূল্যনিয়ন্ত্রণ ছিল সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। বাজারদর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে ইতিহাসবিদ ডা: নিজামি ‘সুলতানি যুগের শ্রেষ্ঠ প্রশাসনিক অবদান’ বলে উল্লেখ করেছেন।
কারণ :
• সুলতান আলাউদ্দিন খলজির শাসনব্যবস্থা পুরোপুরি সামরিক শক্তির ওপর নির্ভরশীল ছিল।
• তিনি এর জন্য এক বিরাট সৈন্যদল গঠন করেন এবং ওই সৈন্যদের বেতন নির্দিষ্ট করে দেন।
• নির্দিষ্ট বেতনে যাতে সৈন্যরা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারে তার জন্য বাজারে জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণ করেন।
• এ ছাড়া মুদ্রাস্ফীতিরোধ ও জনকল্যাণের উদ্দেশ্যেও তিনি বাজারদর নিয়ন্ত্রণ করেন।
বাজারের ধরন : আলাউদ্দিন খলজির আমলে দিল্লিতে চারটি বড়ো বাজার ছিল।
(১) মান্ডি (শস্যবাজার),
(২) সেরা-ই-আদল (কাপড়, চিনি, তেল প্রভৃতি),
(৩) পশুর বাজার,
(৪) নিত্য প্রয়োজনীয় সাধারণ দ্রব্যের বাজার (শাক-সবজি, মাছ)।
সব বাজারেই জিনিসপত্রের দাম নির্দিষ্ট করে দেওয়া হত।
বাজার পরিদর্শক রাজ কর্মচারী : বাজারদর তদারকির জন্য তিনি ‘শাহানা-ই-মান্ডি’ ও ‘দেওয়ান-ই-রিয়াসৎ’ নামে রাজকর্মচারী নিয়োগ করেন।
বাজারে সরকারি নিয়মাবলী : সুলতানের ঠিক করে দেওয়া দামের থেকে বেশি দাম নিলে বা ক্রেতাকে ওজনে ঠকালে কঠোর শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। ‘বারিদ’ নামক কর্মচারীরা নিয়মিত বাজারে গিয়ে বিক্রির ব্যবস্থা দেখে আসত। বাজারের খবর নেওয়ার জন্য মুনিয়া (নামে) গুপ্তচর নিয়োগ করা হয়। আলাউদ্দিন রেশন ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন। প্রয়োজনের সময়ে প্রজাদের সুলতানের পক্ষ থেকে খাদ্যশস্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পরিমাণ মতো জোগান দেওয়া হত।
মতামত : (১) আলাউদ্দিনের বাজারদর নিয়ন্ত্রণ নীতির ফলে দিল্লি এবং তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের মানুষরা উপকৃত হয়েছিল।
(২) যদিও কৃষক, শিল্পী ও কারিগর-শ্রেণি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
(৩) তবুও বাজারদর নিয়ন্ত্রণ নীতি ছিল সে-যুগের এক অনন্য বিস্ময়।
(খ) মোগল সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আকবরের কৃতিত্ব আলোচনা করো।
উত্তরঃ বাবর ভারতবর্ষে যে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তা হুমায়ুনের আমলে প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল । আকবর পুনরায় নিজ বাহুবলে ও বুদ্ধিবলে মোগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন এবং তাকে সর্বভারতীয় সাম্রাজ্যে পরিণত করেন। এই সাম্রাজ্য বহুদিন টিকে ছিল। তাই আকবরকে ভারতে মোগল সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়।
কৃতিত্ব : মুঘল সম্রাট আকবর ছিলেন ভারতের ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্রাট। তাঁর রাজ্যজয়, প্রশাসনিক দক্ষতা, বিদ্যোৎসাহিতা, ধর্মীয় উদারতা, কূটনৈতিক বিচক্ষণতা ও মানবতাবোধ তাঁকে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্রাটে পরিণত করেছে।
সাম্রাজ্য বিস্তার : পিতা সম্রাট হুমায়ুনের মৃত্যুর পর এক চরম প্রতিকুলতার মধ্যে ১৩ বছর বয়সে বালক আকবর মুঘল সাম্রাজ্যের সিংহাসনে আরোহণ করেন। সিংহাসনে আরোহণের পর তিনি সমগ্র উত্তর ভারত, মধ্য ভারত ও দক্ষিণ ভারতের এক বিস্তীর্ণ অঞ্চল জয় করেন।
সুশাসন প্রবর্তন : আকবরের শাসনব্যবস্থার আদর্শ ছিল মানবকল্যাণ। তিনি তাঁর বিশাল সাম্রাজ্যে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সুবিন্যস্ত কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।।
মনসবদারি প্রথা : আকবর ‘মনসবদারি প্রথা’ প্রবর্তন করেন। এর ফলে সেনাবাহিনীর দক্ষতা বৃদ্ধি পায় এবং মুঘল রাজতন্ত্র শক্তিশালী হয়।
ধর্মীয় উদারতা : সম্রাট আকবর ছিলেন পরধর্মসহিছু সম্রাট। জাতি-ধর্মের ভেদাভেদ মুছে তিনি ‘দীন-ই ইলাহি’ প্রবর্তন করেন এবং হিন্দুদের ‘জিজিয়া কর’ ও ‘তীর্থকর’ তুলে দেন।
বিদ্যোৎসাহিতা : সম্রাট আকবর ছিলেন বিদ্যা ও বিদ্বানের পৃষ্ঠপোষক। তাঁর রাজসভায় অনেক জ্ঞানীগুণীর সমাবেশ ঘটেছিল। এইসব জ্ঞানী ব্যক্তিরা ‘নওরতন’ বা ‘নবরত্ন’ নামে পরিচিত ছিলেন।
শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষকতা : সম্রাট আকবর শিল্পকলার ইতিহাসেও স্মরণীয় হয়ে আছেন, যেমন—
স্থাপত্যশিল্প : তাঁর আমলের উল্লেখযোগ্য স্থাপত্যশিল্প ছিল ফতেহপুর সিকরি, সেলিম চিশতির সমাধি, দেওয়ান-ই আম, দেওয়ান-ই খাস, হুমায়ুনের সমাধি, জামি মসজিদ, বুলন্দ দরওয়াজা প্রভৃতি।
চিত্রশিল্প : চিত্রশিল্পের ক্ষেত্রে সম্রাট আকবরের রাজত্বকাল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি চিত্রশিল্পী আবদুস সামাদের নেতৃত্বে চিত্রশিল্পের একটি স্বতন্ত্র বিভাগ স্থাপন করেন।
উপসংহার : সম্রাট আকবর সর্বক্ষেত্রে যে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে গেছেন তার জন্য তাঁকে ‘মহান সম্রাট’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
(গ) মধ্যযুগে ভারতে দেশের মধ্যেকার বাণিজ্যের ধরনগুলি কেমন ছিল, তা লেখো।
উত্তরঃ মধ্যযুগে ভারতে ব্যাবসাবাণিজ্যের প্রসার ঘটেছিল। এ যুগের বাণিজ্যকে দু-ভাগে ভাগ করা যায়—
(১) গ্রাম ও শহরের বাণিজ্য
(২) কাধিক শহরের মধ্যে বাণিজ্য।
গ্রাম ও শহরের বাণিজ্য : গ্রামে কৃষকরা বিভিন্ন শস্য ও সবজি চাষ করত। বিভিন্ন পেশার কারিগররা প্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিস তৈরি প্রত। শহরের অধিবাসীদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য গ্রাম থেকে খাদ্যশস্য, সবজি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস আনা হত।
গ্রাম থেকে শহরে যেসব জিনিস আসত তার মধ্যে ছিল বিভিন্ন খাদ্যশস্য, তেল, ঘি, মাছ, মাংস, লবণ, সবজি, ফল, মাটির হাঁড়ি-কলসি ভূতি। গ্রামে ব্যবসায়ীরা এইসব জিনিসপত্র এনে শহরের বাজারে বা বাড়ি বাড়ি ঘুরে বিক্রি করত। আলাউদ্দিন খলজির আমলে দিল্লিতে চারটি ড়া বড়ো বাজার ছিল। এখানে শস্য, কাপড়, ঘোড়া প্রভৃতি বিক্রি হত। সুলতানি যুগে প্রথম চরকায় সুতো কেটে কাপড় বোনার কাজ শুরু হয়।
একাধিক শহরের মধ্যে বাণিজ্য : আবার অনেক দ্রব্যসামগ্রী ছিল যেগুলি এক শহর থেকে অন্য শহরে বিক্রি হত। এইসব জিনিসপত্রের ধ্য প্রধান ছিল দামি ও শৌখিন জিনিস, যেগুলি ধনী ও অভিজাত পরিবারের লোকজন ব্যবহার করত। বিশেষত দামি মদ, সূক্ষ্ম মসলিন বস্ত্র, দামি সবাবপত্র প্রভৃতি শহরের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি হত।