মাধ্যমিক দশম শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর-জোয়ারভাটা (বারিমন্ডল – তৃতীয় অধ্যায়) -PART-2

 

 

মাধ্যমিক দশম শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর

জোয়ারভাটা (বারিমন্ডল – তৃতীয় অধ্যায়) 

 SOURCE-BHUGOLSHIKSHA.COM 

মাধ্যমিক দশম শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর

জোয়ারভাটা (বারিমন্ডল – তৃতীয় অধ্যায়) 

  1. চাঁদ অপেক্ষা সূর্যের ভর কত লক্ষগুণ বেশি ?  

(A) ১৫৫

(B) ৩৫৫

(C) ৪৫৫

(D) ২৫৫

Ans: (D) ২৫৫

  1. পৃথিবীর ওপর চাঁদের আকর্ষণ মান সূর্য অপেক্ষা কতগুণ বেশি ? 

(A) 8.8

(B) ৮.৮ 

(C) 2.2

(D) 6.6

Ans: (C) 2.2

  1. ভূপৃষ্ঠের জলভাগে প্রতিটি স্থানে ২৪ ঘণ্টায় জোয়ার হয়— 

(A) দু – বার

(B) একবার

(C) তিনবার

(D) চারবার 

Ans: (A) দু – বার

  1. মরা কোটালে চন্দ্র – সূর্যের পারস্পরিক অবস্থান তাকে— 

(A) সরলরেখায়

(B) সমকোণে

(C) সমান্তরালে

(D) কোনোটাই নয় 

Ans: (B) সমকোণে

  1. কৃষ্ণ ও শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে চাঁদ , সূর্য ও পৃথিবীর অবস্থান হয় –

(A) ৯০ ° কোণে

(B) ৪৫ ° কোণে 

(C) ৫০ ° কোণে

(D) সরলরেখায় 

Ans: (D) সরলরেখায়

  1. যেখানে মুখ্য জোয়ার হয় তার প্রতিপাদস্থানে কী হয় ? 

(A) ভরা জোয়ার

(B) গৌণ জোয়ার

(C) মুখ্য জোয়ার

(D) ভাটা

Ans: (B) গৌণ জোয়ার

  1. চাঁদ , পৃথিবী ও সূর্য যখন একই সরলরেখায় অবস্থান করে , তখন তাকে বলে –

(A) সিজিগি

(B) পেরিজি

(C) অ্যাপোজি

(D) কোনোটাই নয় 

Ans: (A) সিজিগি

  1. কোনো একদিনে কোনো স্থানে জোয়ারভাটার মধ্যে ব্যবধান –

(A) ১২ ঘণ্টা

(B) ৪৮ ঘণ্টা

(C) ২৪ ঘণ্টা

(D) ৬ ঘণ্টা

Ans: (D) ৬ ঘণ্টা

  1. অমাবস্যা তিথিতে চাঁদ অবস্থান করে –

(A) পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে

(B) পৃথিবী ও সূর্যের সমকোণে

(C) একই সরলরেখায় একপাশে পৃথিবী অন্যপাশে সূত্রে

(D) পৃথিবী সূর্যের সাথে স্থূল কোণে

Ans: (C) একই সরলরেখায় একপাশে পৃথিবী অন্যপাশে সূত্রে

  1. চন্দ্রের একবার পৃথিবী পরিক্রমণে সময় লাগে –

(A) ২৫ দিন

(B) ২৭ ¹/³ দিন

(C) ২৪ দিন

(D) ২৯ ১/২ দিন

Ans: (B) ২৭ ¹/³ দিন

 SOURCE-BHUGOLSHIKSHA.COM 

মাধ্যমিক দশম শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর

জোয়ারভাটা (বারিমন্ডল – তৃতীয় অধ্যায়) 

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর  

  1. কোন্ জোয়ারের সাথে বানডাকার সম্পর্ক আছে ?

Ans: ভরা জোয়ার ।

  1. পশ্চিমবঙ্গের কোন্ নদীতে বান ডাকে ?

Ans: হুগলি নদীতে ।

  1. পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব কত ?

Ans: ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার কিমি । 

  1. কোন্ তিথিতে ভরা কোটাল হয় ?

Ans: অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে ।

  1. মরা কোটাল কোন্ তিথিতে হয় ?

Ans: কৃষ্ণ ও শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে । 

  1. ‘ সিজিগি ’ শব্দের অর্থ কী ?

Ans: যোগবিন্দু ।

  1. সূর্যের আকর্ষণে সৃষ্ট জোয়ারকে কী বলে ? 

Ans: সৌর জোয়ার । 

  1. পূর্ণিমা তিথিতে ‘ সিজিগি ’ অবস্থাকে কী বলে ?

Ans: প্রতিযোগ । 

  1. যে – কোনো দুটি জোয়ারের সময়ের ব্যবধানকে কী বলে ?

Ans: জোয়ার অন্তর । 

 SOURCE-BHUGOLSHIKSHA.COM 

মাধ্যমিক দশম শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর

জোয়ারভাটা (বারিমন্ডল – তৃতীয় অধ্যায়) 

সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর  

  1. জোয়ারভাটা ( Tides ) কাকে বলে ? 

Ans: পৃথিবীর ওপর চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় অন্তর সমুদ্রজলের ছন্দময় উত্থান হল জোয়ার ও পতন হল ভাটা । 

  1. ভরা কোটাল ( Spring Tide ) বলতে কী বোঝ ? 

Ans: আবর্তনকালে পূর্ণিমা ও অমাবস্যা তিথিতে পৃথিবী , চাঁদ ও সূর্য একই সরলরেখায় অবস্থান করে । এই সময় সূর্য ও চন্দ্রের মিলিত মহাকর্ষ শক্তিতে আকর্ষণ বল বেশ তীব্র হয় । এরই প্রভাবে ভূপৃষ্ঠে যে প্রবল জোয়ারের সৃষ্টি হয় , তাকে বলে ভরা কোটাল ।

  1. মরা কোটাল ( Neap Tide ) বলতে কী বোঝ ?

Ans: কৃষ্ণ ও শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে পৃথিবী অবস্থান করে চাঁদ ও সূর্যের সাথে সমকোণে ( ৯০ ° ) । এই অবস্থায় পৃথিবীর যে অংশ চাঁদের সামনে আসে সেখানে হয় মুখ্য জোয়ার কিন্তু সূর্যের আকর্ষণ বল ৯০ ° কোণে কাজ করে বলে চাঁদের আকর্ষণে মুখ্য জোয়ার অতটা তেজি হয় না । একেই মরা কোটাল বা মরা জোয়ার বলে ।

  1. পূর্ণিমার ভরা কোটাল কী ?

Ans: পূর্ণিমা তিথিতে সিজিগি অবস্থানে পৃথিবী থাকে চাঁদ ও সূর্যের মাঝখানে ( প্রতিযোগ ) । এই অবস্থায় চাঁদের আকর্ষণে জোয়ার প্রবল আকার নেয় এবং বিপরীত অংশে কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাব ও সূর্যের আকর্ষণেও জোয়ার প্রবল হয় । একেই পূর্ণিমার ভরা কোটাল বা তেজ কোটাল বলে ।

  1. অমাবস্যার ভরা কোটাল কী ?

Ans: অমাবস্যা তিথিতে সিজিগি অবস্থানে চাঁদ থাকে পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে ( সংযোগ ) । এই অবস্থায় পৃথিবীর যে অংশে চাঁদের কর্ষণ বল কাজ করে সেখানেই সূর্যের আকর্ষণ বলও কাজ করে । ফলে জল প্রবলভাবে ফুলে ওঠে এবং জোয়ার অতি প্রবল আকার নেয় । একে অমাবস্যার ভরা কোটাল বা তেজ কোটাল বলে । 

  1. ভরা কোটালকে সর্বোচ্চ জোয়ার বলা হয় কেন ?

Ans: ভরা কোটালে ( অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে ) সূর্য , চাঁদ ও পৃথিবী একই সরলরেখায় অবস্থান করে । ফলে সূর্য ও চন্দ্রের অধিক আকর্ষণবলের প্রভাবে উভয় দিনে ( অমাবস্যা ও পূর্ণিমা ) জোয়ারের মাত্রা অন্য যে – কোনো দিনের তুলনায় অধিক হয় । তাই ভরা কোটালকে সর্বোচ্চ জোয়ার বলে ।

  1. সিজিগির ক – টি অবস্থা ও কী কী ?

Ans: সিজিগির ২ টি অবস্থা রয়েছে । যেমন- ( i ) সংযোগ অবস্থা এবং ( ii ) প্রতিযোগ অবস্থা ।

  1. সিজিগি ( Syzygy ) কাকে বলে ?

Ans: নিজেদের কক্ষপথে পরিক্রমণ করতে করতে যখন চাঁদের কেন্দ্র , পৃথিবীর কেন্দ্র এবং সূর্যের একই সরলরেখায়  অবস্থান করে , তখন তাকে সিজিগি বলে । 

  1. সংযোগ ও প্রতিযোগ কী ?

Ans: পূর্ণিমার দিন পৃথিবী যখন সূর্য ও চন্দ্রের মাঝখানে একই সরলরেখায় অবস্থান করে , তখন তাকে প্রতিযোগ অবস্থান বলে । অমাবস্যার দিন যখন সূর্য ও চন্দ্র পৃথিবীর একই দিকে এবং একই সরলরেখায় অবস্থান করে , তখন তাকে সংযোগ অবস্থান বলে ।

  1. বানডাকা ( Tidal bore ) কাকে বলে ?

Ans: ভরা কোটালের সময় সমুদ্রের জল নদীর মোহানা দিয়ে প্রবল বেগে উলটো খাতে প্রবেশ করে , প্রবল জলোচ্ছ্বাস ঘটায় । একে বানডাকা বলে ।

  1. ষাঁড়াষাঁড়ি বান কাকে বলে ?

Ans: বর্ষাঋতুতে নদীতে জলের প্রবাহ বেশি থাকে । বর্ষাঋতুর সহায়িকা , ভরা কোটালের সময় জলস্ফীতির মাত্রা এত অধিক হয় যে ওই অবস্থাকে দুটি ষাঁড়ের যুদ্ধকালীন অবস্থার সাথে তুলনা করা হয় । একেই ষাঁড়াষাঁড়ি বান বলে ।

  1. পশ্চিমবঙ্গের দুটি নদীর নাম লেখো , যেখানে বানডাকা দেখা যায় ।

Ans: পশ্চিমবঙ্গের হুগলি ও মাতলা নদীতে বানডাকা দেখা যায় ।

  1. জোয়ারভাটা নদীর নাব্যতাকে কীভাবে প্রভাবিত করে ?

Ans: প্রতিদিন দিনে দুবার করে জোয়ারভাটা হওয়ার ফলে জল একবার নদীর মোহানা দিয়ে প্রবেশ করে এবং আবার বেরিয়ে যায় । ফলে নদীগর্ভে সঞ্চিত পলি ভাটার টানে সাগরে পড়ে এবং নদীগর্ভ পলিমুক্ত হয় । এইভাবেই নদীর নাব্যতা বজায় থাকে ।

  1. প্রত্যেক দিন জোয়ারভাটা সমান প্রবল হয় না কেন ? 

Ans: প্রত্যেক দিন জোয়ারভাটা সমান প্রবল না হওয়ার প্রধান কারণ হল চাঁদ ও সূর্যের পারস্পরিক অবস্থানগত পার্থক্য । | পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে চাঁদ ও সূর্যের মহাকর্ষ শক্তি ও কেন্দ্রাতিগ বলের তারতম্যে জোয়ারভাটার পরিমাণেরও তারতম্য ঘটে ।

 

 SOURCE-BHUGOLSHIKSHA.COM 

মাধ্যমিক দশম শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর

জোয়ারভাটা (বারিমন্ডল – তৃতীয় অধ্যায়) 

ব্যাখ্যামূলক উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর   

  1. জোয়ারভাটার বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী ?

Ans: জোয়ারভাটার বৈশিষ্ট্যগুলি হল— ( i ) নির্দিষ্ট সময় অন্তর ছন্দ মেনে জোয়ারভাটা হয় । ( ii ) পৃথিবীর ওপর চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণ জোয়ারভাটার মূল কারণ । ( iii ) সমুদ্রের সব অংশেই জোয়ারভাটার প্রভাব পড়ে । ( iv ) উপকূল ও নদীর মোহানায় । জোয়ারভাটা সবচেয়ে ভালো বোঝা যায় ।

  1. চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণে কীভাবে জোয়ারভাটা ঘটে ? 

Ans: মহাবিশ্বে সূর্য , চাঁদ ও পৃথিবী সবাই সবাইকে আকর্ষণ করে চলেছে । চাঁদ অপেক্ষা সূর্য ২৭.৭ কোটি গুণ বড়ো এবং ভর ২৫৫ লক্ষ গুণ বেশি । পৃথিবীর ১৪ ১৪ ওপর চাঁদ অপেক্ষা সূর্যের আকর্ষণ বল বেশি ( ১৭৭ গুণ ) । কিন্তু সূর্য অপেক্ষা চাঁদ রয়েছে পৃথিবীর অনেক কাছে । তাই পৃথিবীর ওপর চাঁদের আকর্ষণ বল সূর্য অপেক্ষা ২.২ গুণ বেশি হওয়ার কারণেই মূলত চাঁদের আকর্ষণে সমুদ্রের জল ফুলে উঠে জোয়ার সৃষ্টি হয় । 

পৃথিবীর গড় ব্যাস প্রায় ১২,৭৪০ কিমি এবং ব্যাসার্ধ ৬৩৭০ কিমি । পৃথিবীর কেন্দ্র এবং চাঁদের কেন্দ্রের গড় দূরত্ব ৩,৮৪,৮০০ কিমি । অতএব পৃথিবীর যে পৃষ্ঠ চাঁদের সামনে থাকে সেই পৃষ্ঠের সঙ্গে চাঁদের পৃষ্ঠের দূরত্ব ৩,৭৮,৪০০ কিমি এবং যে পৃষ্ঠ চাঁদের বিপরীতে থাকে তার সঙ্গে চাঁদের পৃষ্ঠের দূরত্ব ৩,৯১,২০০ কিমি ( পার্থক্য ১২,৮০০ কিমি প্রায় ) । সুতরাং পৃথিবীর যে অংশ চাদের সামনে থাকে বিপরীত অংশ অপেক্ষা দূরত্ব কম বলে সেখানেই । TE চাঁদের আকর্ষণ বল সবথেকে বেশি এবং সেখানে জল ফুলে উঠে জোয়ার সৃষ্টি হয় । এটি হল মুখ্য জোয়ার বা চান্দ্র জোয়ার । এই জোয়ারে জল বেশি ফুলে ওঠে । 

  1. পৃথিবীর কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাবে জোয়ার হয় কীভাবে ?

Ans: পৃথিবীর আবর্তনের প্রভাবে যে কেন্দ্রবিমুখ বল তৈরি হয় তা হল কেন্দ্রাতিগ বল । এই বলের প্রভাবে সমুদ্রের জন বাইরের দিকে নিক্ষিপ্ত হওয়ার প্রবণতা লাভ করে এবং এটি মহাকর্ষ বলের বিপরীতে কাজ করে । অতএব চাঁদের আকর্ষণে পৃথিবীর যে অংশে জোয়ার হয় ঠিক তার প্রতিপাদ অংশে চাঁদের মহাকষশক্তি অপেক্ষা কেন্দ্রাতিগ বল অধিক হওয়ায় সেখানেও সমুদ্রের জল ফুলে ওঠে । এটি হল গৌণ বা পরোক্ষ জোয়ার । এই জোয়ারে জল কম ফুলে ওঠে ।

  1. ভাটার কারণ কী ?

Ans: একই সময় পৃথিবীর দুটি স্থানে জোয়ার হয় । একদিকে মুখ্য ও অন্যদিকে গৌণ জোয়ার । উভয় জোয়ারের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত জল আসে ঠিক তার পাশের সমুদ্র অংশ থেকে । ফলে সেখানে জল কমে যায় । জোয়ারের দুটি সমকোণ স্থান , যেখান থেকে জল সরে যায় , সেই স্থানে হয় ভাটা ।

  1. মুখ্য ও গৌণ জোয়ার কী ?

Ans: মুখ্য জোয়ার ( Primary Tide ) : আবর্তনের ফলে পৃথিবীপৃষ্ঠের যে স্থান ঠিক চন্দ্রের সম্মুখে উপস্থিত হয় , সেই স্থানে চন্দ্রের আকর্ষণের ফলে চন্দ্রের সম্মুখে অবস্থিত ভূপৃষ্ঠের জল সবচেয়ে বেশি ফুলে ওঠে ও জোয়ার সৃষ্টি হয় । এইভাবে পৃথিবীর যে স্থানে চন্দ্রের আকর্ষণ সবচেয়ে বেশি হয় , সেখানে তখন মুখ্য জোয়ার বা প্রত্যক্ষ জোয়ার সৃষ্টি হয় । 

গৌণ জোয়ার ( Secondary Tide ) : মুখ্য জোয়ারের বিপরীত দিকে বা প্রতিপাদ স্থানে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব কম বলে , ওই বিপরীত দিকে অবস্থিত জলরাশি প্রধানত প্রবল বিকর্ষণ শক্তির প্রভাবে স্ফীত হয়ে গৌণ বা পরোক্ষ জোয়ার সৃষ্টি করে । এইভাবে পৃথিবীর কোনো একটি স্থানে মুখ্য জোয়ার ও তার বিপরীত স্থানে গৌণ জোয়ার হয় ।

  1. তেজ কোটালের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো ।

Ans: তেজ কোটালের বৈশিষ্ট্যগুলি হল- 

( ১ ) অমাবস্যা তিথিতে পৃথিবীর একই পাশে একই সরলরেখায় চন্দ্র ও সূর্য অবস্থান করে । ( ২ ) পূর্ণিমা তিথিতে সূর্য ও চন্দ্রের মাঝে একই সরলরেখায় পৃথিবী অবস্থান করে । ( ৩ ) অমাবস্যা ও পূর্ণিমার তেজ কোটালের সময় জোয়ারের স্থানে অত্যধিক জলস্ফীতি ঘটে । (  ৪ ) ভাটার স্থানে জলস্তর খুব বেশিমাত্রায় নেমে যায় । ( ৫ ) ভূপৃষ্ঠের জলভাগের একই স্থানে প্রতি মাসে দু – বার করে তেজ কোটাল হয় । ( ৬ ) ভরা কোটালে জলস্ফীতি সর্বাধিক হয় , বলে একে সর্বোচ্চ জোয়ার বলা হয় ।

  1. মুখ্য জোয়ারের বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী ?

Ans: মুখ্য জোয়ারের বৈশিষ্ট্যগুলি হল- ( ১ ) চন্দ্রের আকর্ষণে এই জোয়ার হয় বলে একে চান্দ্র জোয়ারও বলে । ( ২ ) আবর্তনের ফলে ভূপৃষ্ঠের জলভাগের যে স্থান চন্দ্রের ঠিক সামনে আসে , চন্দ্রের আকর্ষণের ফলে সেখানে প্রবল টান সৃষ্টি হয় ও জলস্ফীতি ঘটে । ( ৩ ) পৃথিবীর অন্যান্য স্থানের জলভাগ থেকেও কিছু জল এই স্থানে চলে আসে , ফলে ভূপৃষ্ঠের এই অংশে মুখ্য জোয়ার সৃষ্টি হয় । ( ৪ ) অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে মুখ্য জোয়ার সৃষ্টি হয় । ( ৫ ) জোয়ার ও ভাটার মধ্যে জলতলের পার্থক্য খুব বেশি মাত্রায় হয় ।

  1. পূর্ণিমা অপেক্ষা অমাবস্যার ভরা কোটাল তেজি হয় কেন ?

Ans: পূর্ণিমা তিথিতে পৃথিবী , চাঁদ ও সূর্যের মাঝখানে একই সরলরেখায় অবস্থান ( প্রতিযোগ ) করে । এই অবস্থায় পৃথিবীর যে অংশ ঠিক চাঁদের সামনে আসে সেখানে হয় মুখ্য চান্দ্র জোয়ার এবং প্রতিপাদ অংশে কেন্দ্রাতিগ বল ও সূর্যের প্রভাবে জোয়ার ঘটে । অমাবস্যা তিথিতে চাঁদ ও সূর্য পৃথিবীর একই দিকে এবং একই সরলরেখায় অবস্থান ( সংযোগ ) করে বলে চাঁদ ও সূর্যের মিলিত আকর্ষণে পৃথিবীপৃষ্ঠের জল অতি প্রবল মাত্রায় ফুলে ওঠে । তাই পূর্ণিমা অপেক্ষা অমাবস্যার জোয়ার অতি প্রবল হয় ।

  1. কোনো কোনো স্থানে জোয়ারভাটার সময়ের ব্যবধানে ৬ ঘণ্টার বেশি কেন ?

Ans: সাধারণভাবে পৃথিবীর একপাক ঘুরতে সময় লাগে ২৪ ঘণ্টা এবং চাদের আকর্ষণে ও কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাবে যেহেতু কোনো স্থানে দু – বার জোয়ার ও দুবার ভাটা হয় তাই ধারণা হতে পারে ১ দিনে কোনো স্থানে জোয়ারভাটার ব্যবধান হবে ৬ ঘণ্টা ( ২৪ ঘণ্টা + ৪ = ৬ ঘণ্টা ) । কিন্তু পৃথিবীর প্রকৃত আবর্তনের সময় এবং চাঁদের পরিক্রমণের সময়ও পৃথিবীর জোয়ারভাটার সময়ের ওপর প্রভাব ফেলে । পৃথিবীর নিজ অক্ষের ওপর একবার আবর্তনের সময় হল ২৩ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট ০৪ সেকেন্ড । পৃথিবীর চারপাশে চাঁদের পরিক্রমণের সময় ২৭১/৩ দিন । অর্থাৎ পৃথিবী একপাক আবর্তনকালে চাঁদ তার কক্ষপথের প্রায় ১৩ ° ১০ ′ কৌণিক দূরত্ব [ ৩৬০ ° + ২৭১ / ৩ দিন = ১৩ ° ১০ ′ ( প্রায় ) ) অতিক্রম করে । ফলে পৃথিবীর একদিনে কোনো নির্দিষ্ট স্থান থেকে প্রায় ৫২ মিনিট ৪০ সেকেন্ড ( ১৩ ° × ১০ ′ × ৪ মিনিট = ৫২ মিনিট ৪০ সেকেন্ড ( প্রায় ) ] পথ অতিক্রম করে । সুতরাং পৃথিবীর কোনো স্থানে মুখ্য জোয়ার ঘটার ২৪ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৪ সেকেন্ড । পরে ( ২৩ ঘ , ৫৬ মি . ০৪ সে . + ৫২ মি . ৪০ সে . = ২৪ ঘ . ৪৮ মি . ৪৪ সে . ) আবার মুখ্য জোয়ার হয় । অতএব কোনো স্থানে মুখ্য জোয়ার ও গৌণ জোয়ারের ব্যবধান ( ২৪ ঘ . ৪৮ মি . ৪৪ সে . + ২ ) ১২ ঘণ্টা ২৪ মি . ২২ সে . ( প্রায় ) এবং জোয়ারভাটার ব্যবধান । ( ১২ ঘ . ২৪ মি . ২২ সে . + ২ ) হয় ৬ ঘ . ১২ মি . ১১ সে .। এই কারণেই কোনো স্থানে জোয়ার ও ভাটার প্রকৃত ব্যবধান ৬ ঘণ্টার সামান্য বেশি হয় ।

  1. চাঁদের অ্যাপোজি ও পেরিজি অবস্থান কী ? অথবা , অ্যাপোজি জোয়ার কাকে বলে ?

Ans: পৃথিবীর মতো চাঁদেরও কক্ষপথ উপবৃত্তাকার হওয়ায় পৃথিবী ও চাদের দূরত্ব সর্বদা সমান হয় না । এই অ্যাপোঞ্জি অবস্থান : | পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব যখন সর্বাধিক হয় ( ৪.০৭ লক্ষ বিি | সেই অবস্থাকে অ্যাপোঞ্জি অবস্থান বলে । দূরত্ব বেশি হওয়ার কারণে চাঁদের আকর্ষণ বল যেহেতু কমে তাই জোয়ার এই সফ | বেশ কম হয় । একেই অ্যাপোজি জোয়ার বলা হয় । সাধার | থেকে অ্যাপোজি জোয়ারে ২০ % জোয়ার কম হয় । পেরিি অবস্থান : পৃথিবী থেকে চাদের দূরত্ব যখন সবচেয়ে কম ( ৩৫ ) লক্ষ কিমি ) হয় সেই অবস্থাকে পেরিজি অবস্থান বলা হয় । পূর কম হওয়ার কারণে চাদের আকর্ষণ বল যেহেতু বাড়ে তাই লোয়াড় এসময় সাধারণ অবস্থার থেকে ২০ % প্রবল হয় । একে পেরিডি জোয়ার বলা হয় ।

  1. কী কী অবস্থা অনুকূল থাকলে নদীতে বান ডাকে ।

Ans: ( i ) নীচু উপকূলে নদীর মোহানা ফানেল আকৃতি ও নদীখাত সংকীর্ণ হয় । ( ii ) নদীর ঢাল যদি কম হয় । ( ii ) নদীর মোহানায় বালির চর বা চড়া থাকে ( iv ) নদীতে যদি সারাবস্থা জলের প্রবাহ প্রচুর থাকে । প্রশ্ন | ১২ | হুগলি ও সুন্দরবনের নদীগুলিতে বান ডাকে কেন ? উত্তর : হুগলি ও সুন্দরবনের নদীগুলিতে বানডাকার কারণগুলি হল ( i ) এইসব নদীর মোহানা ফানেল আকৃতির হয় এবং এইসকল নদীর খাত সংকীর্ণ হয় । ( ii ) নদীর মোহানায় বালির চর বা চড়া থাকে । ( iii ) এইসব নদীতে সারাবছর জল থাকে এবং জলের প্রবাহ অধিক থাকে এবং ( iv ) এই অঞ্চলের নদী মৃদুঢাল সম্পন্ন হয়ে সমুদ্রে মেশে । এই সকল কারণবশত এই অঞ্চলের নদীগুলিতে বর্ষাকালে আরও অতিরিক্ত জল থাকে যা গিয়ে সমুদ্রে পতিত হয় । এর ফলেই বা আসে । 

জেনে রাখো ● বেলোর্মি : পৃথিবীর পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তনের ফলে , পৃথিবীপৃষ্ঠের জোয়ারের জল পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিকে স্রোতের ন্যায় এগিয়ে যায় । জোয়ারের ফলে সৃষ্ট এই ঢেউকে বেলোমি বলে । 

  • উচ্চ জোয়ার ও নিম্ন জোয়ার : উপকূলবর্তী অঞ্চলে জলবে | উচ্চতা পর্যন্ত উত্থিত হয় , তাকে বলে উচ্চ জোয়ার এবং যে উচ্চতা পর্যন্ত জল সমুদ্রতল থেকে নেমে যায় , তাকে বলে নিম্ন জোয়ার ।
  1. জোয়ারভাটার সুফল ও কুফলগুলি লেখো । 

অথবা , জোয়ারভাটার ফলাফলগুলি লেখো ।

Ans: জোয়ারভাটার সুফল : ( i ) জোয়ারের সময় নদীর জল বাড়ে বলে জাহাজ চলাচলে সুবিধা হয় । কলকাতা , লন্ডন বন্দরের অধিকাংশ জাহাজ জোয়ারের সময় প্রবেশ করে । ( ii ) ভাটার টানে নদীর পলি সাগরে চলে যায় বলে নদীর গভীরতা ও নাব্যতা বজায় থাকে । ( iii ) জোয়ারের সময় সমুদ্রের মাছ নদীতে প্রবেশ করে বলে জেলেদের সুবিধা হয় । ( iv ) শীতপ্রধান অঞ্চলে সমুদ্রের লবণাক্ত জল প্রবেশের কারণে অনেক সময় বন্দর বরফমুক্ত থাকে , জাহাজ চলাচলে বারিমণ্ডল সুবিধা হয় । ( v ) জোয়ারভাটাকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় । গুজরাটের কচ্ছ , পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অঞ্চলে জোয়ারভাটা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজ চলছে । 

জোয়ারভাটার কুফল : ( i ) জোয়ারে সমুদ্রের লবণাক্ত জল প্রবেশের কারণে নদীর জল সেচ ও পানীয় কাজে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে । ( ii ) প্রবল জোয়ারে নদীর পাড় ভেঙে বন্যা হয় । বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়ে জমি লবণাক্ত হয়ে চাষের অযোগ্য হয়ে পড়ে । উপকূলের পাড় ভাঙে । ঘরবাড়ি নষ্ট হয় । ( iii ) প্রবল জোয়ারে নৌকা ও জাহাজের ক্ষতি হয় ।

 SOURCE-BHUGOLSHIKSHA.COM

 

©kamaleshforeducation.in(2023)

 

 

 

 

 

error: Content is protected !!