ষষ্ঠ শ্রেণী

বিষয়-বাংলা

অধ্যায় – ১

ভরদুপুরে কবিতা 

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী 

প্রশ্ন ও উত্তর    

কবি পরিচিতি  বর্তমান বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার চান্দ্রা গ্রামে ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দের ১৯ অক্টোবর (২ কার্তিক, ১৩৩১ বঙ্গাব্দ) কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা জিতেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ছিলেন ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক। গ্রামের পাঠশালায় পড়াশােনা শেষ করে কবি। চলে আসেন কলকাতায়, ভরতি হন কলকাতার স্কুলে। এরপর তিনি। বঙ্গবাসী ও সেন্ট পলস কলেজে পড়াশােনা করেন। নীরেন্দ্রনাথ ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে যােগ দেন ‘আনন্দবাজার পত্রিকায়। ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘আনন্দমেলা’র সম্পাদক হন। সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে তারাশঙ্কর পুরস্কার, ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার, ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে আনন্দ পুরস্কার, ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে উল্টোরথ পুরস্কার লাভ করেন। তাঁর উল্লেখযােগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল নীল নির্জন’ (১৯৫৪), অন্ধকার বারান্দা’ (১৯৬১), ‘প্রথম নায়ক (১৯৬১), কলকাতার যীশু’ (১৯৬৯), উলঙ্গ রাজা’ (১৯৭১), সত্য সেলুকাস’ (১৯৯৫), সন্ধ্যারাতের কবিতা (১৯৯৭) ইত্যাদি। নীরেন্দ্রনাথ বেশ কিছু গল্প এবং রহস্য উপন্যাসও লিখেছেন। ছােটোদের জন্যও বেশ কিছু ছড়া এবং কবিতা লিখেছেন তিনি। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর আত্মকথার নাম নীরবিন্দু। ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের ২৫ ডিসেম্বর নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।

সারসংক্ষেপ –  নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তার ভরদুপুরে’ কবিতায় গ্রামবাংলার এক অলস। দুপুরের চিত্র এঁকেছেন। গ্রীষ্মের দুপুরে একটি অশ্বত্থ গাছ যেন পথিকজনের ছাতা হয়ে দাড়িয়ে আছে। গাছের নীচে নরম ঘাসের গালিচা পাতা রয়েছে। দূরের মাঠে গােরুবাছুর চরছে। অশ্বত্থ গাছের নীচে শুয়ে রাখাল ছেলে আকাশে মেঘের আনাগােনা দেখছে। নদীর ধারে কাদের যেন একটা বড়াে নৌকা বাঁধা রয়েছে। তার মধ্যে শুকনাে খড়ের আঁটি বােঝাই করে রাখা রয়েছে। চারদিকে কেউ কোথাও নেই। এই নির্জন দুপুরে বাতাস উড়িয়ে চলেছে সাদা মিহি ধুলাে। ভরদুপুরে গ্রামের লােকজন যে যার ঘরে ঘুমােচ্ছে। গ্রামজুড়ে এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। তাই এই নির্জন দুপুরে শুধু মানুষই নয়, বিশ্বভুবন অর্থাৎ বিশ্বপ্রকৃতিও যেন ঘুমিয়ে রয়েছে বলে কবি মনে করেছেন। যার অনুভব করার ক্ষমতা আছে, সে-ই শুধু বিশ্বপ্রকৃতির এই ঘুমের কথা বুঝতে পারে।

নামকরণ –  নামকরণের মধ্য দিয়েই কবি বা লেখক পাঠকদের তাঁর রচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে একটা আগাম আভাস দিয়ে থাকেন। তাই যে-কোনাে সাহিত্যের ক্ষেত্রে নামকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভরদুপুরে’ কবিতায় কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী গ্রামবাংলার এক নির্জন দুপুরের অলস, শান্ত, ছায়াময় রূপটি ফুটিয়ে তুলেছেন। গ্রীষ্মের প্রখর রােদের তাপ থেকে বাঁচতে ক্লান্ত পথিকদের একটা আশ্রয় চাই। গ্রামের অশ্বত্থ গাছটি ছাতার মতাে পথিকদের ছায়া দান করে। গাছের নীচের নরম গালিচার মতাে ঘাসের ওপর পথিকরা আশ্রয় নেয়। দূরে মাঠের মাঝে গােরুবাছুরগুলােকে চরতে দিয়ে ক্লান্ত রাখাল একটা গাছের নীচে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে। শুয়ে শুয়ে সে নীল আকাশে সাদা মেঘের আনাগােনা। দেখছে। নদীর ধারে বাঁধা খড়ভরতি একটা ব্যস্ততাহীন নৌকা গ্রাম্য দুপুরের আলস্যকে যেন আরও বাড়িয়ে তুলেছে। দুপুরের এলােমেলাে হাওয়ায় উড়ছে মিহি সাদা ধুলাে। লােকজন আলস্যভরে যে যার ঘরে ঘুমােচ্ছে। কবির অনুভব, শুধু মানুষই নয়, সমগ্র বিশ্বপ্রকৃতিই যেন এই নির্জন, অলস দুপুরে তার আঁচল বিছিয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে। কবির মতে খুব কম লােকই বিশ্বপ্রকৃতির এই ঘুমের খবর রাখে। আলােচ্য কবিতায় গ্রামবাংলার এক নির্জন, উদাস দুপুরের অপূর্ব বর্ণনা ফুটে উঠেছে। তাই কবিতাটির নামকরণ ‘ভরদুপুরে’ বিষয় অনুযায়ী সার্থক হয়েছে।

 

১. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।

১.১ নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর জন্মস্থান কোথায়?

উত্তর: নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর জন্মস্থান বাংলাদেশের ফরিদপুরের চান্দ্রা গ্রাম।

১.২ তার লেখা দুটি কাব্যগ্রন্থের নাম লেখাে।

 উত্তর: কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর লেখা দুটি কাব্যগ্রন্থ হল নীল নির্জন’ ও ‘কলকাতার যীশু।

২. নীচের প্রশ্নগুলির একটি বাক্যে উত্তর দাও।

২.১ অশথ গাছ’-কে পথিকজনের ছাতা বলা হয়েছে কেন ?

উত্তর : ছাতার মতাে অশ্বত্থ গাছটিও পথিকদের রােদবৃষ্টির থেকে  আড়াল করে বলে তাকে পথিকজনের ছাতা বলা হয়েছে।

২.২ রাখালরা গাছের তলায় শুয়ে কী দেখছে?

উত্তর: রাখালরা অশ্বত্থ গাছের তলায় শুয়ে মাথার ওপরে নীল আকাশে মেঘেদের আনাগােনা দেখছে।

২.৩ নদীর ধারের কোন্ দৃশ্য কবিতায় ফুটে উঠেছে?

উত্তর: নদীর ধারে শুকনাে খড়ের আঁটি বােঝাই করা একটা বড়াে নৌকা বাঁধা থাকার দৃশ্য কবিতায় ফুটে উঠেছে

৩ . একই অর্থযুক্ত শব্দ কবিতা থেকে খুঁজে নিয়ে।

লেখাে: তৃণ, তটিনী, গােরক্ষক, পৃথিবী, জলধর।

প্রদত্ত শব্দ কবিতার শব্দ প্রদত্ত শব্দ কবিতার শব্দ
তৃণ ঘাস পৃথিবী বিশ্ব/ভুবন
তটিনী নদী জলধর মেঘ
গােরক্ষক রাখাল

৪। নীচের বিশেষ্য শব্দগুলিকে বিশেষণে ও বিশেষণ শব্দগুলিকে বিশেষ্যে পরিবর্তিত করাে: ঘাস, রাখাল, আকাশ, মাঠ, আদর, গাছ, লােক |

বিশেষ্য বিশেষণ বিশেষ্য বিশেষণ
ঘাস ঘেসাে আদর আদুরে
রাখাল রাখালিয়া গাছ গেছাে
আকাশ  আকাশি লােক লৌকিক
মাঠ মেঠো

৫। পাশে দেওয়া শব্দগুলির সঙ্গে উপসর্গ যােগ করে নতুন শব্দ তৈরি করাে: নদী, আদর, বাতাস। 

উত্তরঃ 

উপসর্গ শব্দ  নতুন শব্দ 
উপ নদী উপনদী
অনা আদর অনাদর
সু বাতাস সুবাতাস

৬। নীচের বাক্য বা বাক্যাংশগুলির থেকে উদ্দেশ্য ও বিধেয় চিহ্নিত করে উদ্দেশ্য অংশের সম্প্রসারণ করাে। 

৬.১ ওই যে অশথ গাছটি, ও তাে পথিকজনের ছাতা

উত্তর: উদ্দেশ্য — ওই যে অশথ গাছটি, ও তাে 

বিধেয় —পথিকজনের ছাতা।

উদ্দেশ্যের সম্প্রসারণ – নদীর ধারের ওই যে বহুদিনের পুরােনাে অশথ গাছটি, ও তাে।

৬.২ কেউ কোথা নেই, বাতাস ওড়ায় মিহিন সাদা ধুলাে।

উত্তর: প্রথম বাক্যাংশ — কেউ কোথা নেই 

উদ্দেশ্য — কেউ 

বিধেয় — কোথা নেই। 

উদ্দেশ্যের সম্প্রসারণ—গ্রীষ্মের দুপুরে আমাকে রাস্তাটা চিনিয়ে দেওয়ার মতাে কেউ

দ্বিতীয় বাক্যাংশ – বাতাস ওড়ায় মিহিন সাদা ধুলাে।

উদ্দেশ্য – বাতাস।

বিধেয় — ওড়ায় মিহিন সাদা ধুলাে।

উদ্দেশ্যের সম্প্রসারণ — ঝােড়াে বাতাস।

৬.৩ আঁচল পেতে বিশ্বভুবন ঘুমােচ্ছে এইখানে।

উত্তর: উদ্দেশ্য — বিশ্বভুবন।

বিধেয় — আঁচল পেতে এইখানে ঘুমােচ্ছে।

উদ্দেশ্যের সম্প্রসারণ — ভরদুপুরে বিশ্বভুবন ।

নতুন শব্দ প্রথম শব্দ দ্বিতীয় শব্দ
বলাকওয়া বলা কওয়া
দীনদরিদ্র দীন দরিদ্র
লােকজন লােক জন
হাঁটাচলা হাঁটা চলা
কাজকর্ম কাজ কর্ম

৮.১ চরছে দূরে গােরুবাছুর।

উত্তর: চরছে—কাজ চলছে (ঘটমান বর্তমান) 

৮.২ দেখছে রাখাল মেঘগুলাে যায় আকাশটাকে ছুঁয়ে। 

উত্তর: যায়—কাজ চলছে (ঘটমান বর্তমান)। 

৮.৩ নদীর ধারে বাঁধা কাদের ওই বড়াে নৌকাটি। 

উত্তর: বাঁধা—কাজ শেষ হয়ে গেছে (পুরাঘটিত বর্তমান)। 

৮.৪ বাতাস ওড়ায় মিহিন সাদা ধুলাে। 

উত্তর: ওড়ায়—কাজ চলছে (ঘটমান বর্তমান) 

৮.৫ আঁচল পেতে বিশ্বভুবন ঘুমােচ্ছে এইখানে। 

উত্তর: ঘুমােচ্ছে—কাজ চলছে (ঘটমান বর্তমান)

৯। নীচের বাক্যগুলির গঠনগত শ্রেণিবিভাগ করাে (সরল/যৌগিক/ জটিল)

৯.১ তলায় ঘাসের গালচেখানি আদর করে পাতা।

উত্তর: সরল বাক্য।

৯.২ ওই যে অশথ গাছটি, ও তাে পথিকজনের ছাতা। 

উত্তর: জটিল বাক্য। 

৯.৩ ভরদুপুরে যে যার ঘরে ঘুমােচ্ছে লােকগুলাে। 

উত্তর: সরল বাক্য।

৯.৪ । যে জানে, সেই জানে। 

উত্তর: জটিল বাক্য।

১০। “ওই যে অশথ গাছটি…” অংশে ওই একটি দূরত্ববাচক নির্দেশক সর্বনাম। এমন আরও কয়েকটি সর্বনামের উদাহরণ দাও। যেমন—ও, উহা, উনি, ওঁরা ইত্যাদি।

উত্তর: উল্লিখিত সর্বনামগুলি ছাড়া আরও কয়েকটি সর্বনাম হল ওটা, ওগুলাে, ওখানে, ওঁকে, ওঁদের ইত্যাদি।

১১। ‘পথিকজনের হাতা’ সম্বন্ধপদটি চিহ্নিত করাে, কবিতায় থাকা সম্বন্ধপদ খুঁজে লেখাে আর নতুন সম্বন্ধপদ যুক্ত শব্দ তৈরি করে। যেমন—গােঠের রাখাল, দুপুরের ঘুম।

উত্তর: ‘পথিকজনের ছাতা’ — এখানে সম্বন্ধপদটি হল ‘পথিকজনের। কবিতায় রয়েছে এমন দুটি সম্বন্ধপদ হল—[১] ঘাসের, [২] গাছের। এ ছাড়াও কয়েকটি নতুন সম্বন্ধপদ যুক্ত শব্দ হল—আকাশের, কাগজের ইত্যাদি। 

১২. ‘ওই বড়াে নৌকাটি বলতে বােঝায় একটি নৌকাকে। নৌকার সঙ্গে এখানে ‘টি নির্দেশক বসিয়ে একবচন বােঝানাে হয়েছে। এরকম একটি মাত্র একবচনের রূপ বােঝাতে কোন্ কোন্ নির্দেশক ব্যবহৃত হতে পারে, তা উদাহরণ দিয়ে লেখাে।

উত্তর: একবচন বােঝাতে ‘টি’ ছাড়া ‘টা’, ‘খানা’, ‘খনি’ ইত্যাদি। নির্দেশক ব্যবহৃত হতে পারে। নীচে কয়েকটি উদাহরণের সাহায্যে তা দেখানাে হল— 

টা—ছেলেটা, মেয়েটা, বাড়িটা, জামাটা ইত্যাদি 

খানা—একখানা, চৌকিখানা, গাড়িখানা ইত্যাদি। 

খানি—একখানি, আসনখানি, মুখখানি ইত্যাদি। 

১৩। কবিতা থেকে বহুবচনের প্রয়ােগ রয়েছে এমন শব্দ। খুঁজে নিয়ে লেখা। প্রসঙ্গত, শব্দকে আর কী কী ভাবে। আমরা বহুবচনের রূপ দিতে পারি, তা উদাহরণের সাহায্যে বুঝিয়ে দাও।

উত্তর: বহুবচনের প্রয়ােগ রয়েছে, কবিতা থেকে পাওয়া এমন। শব্দগুলি হল –“গােরুবাছুর’, ‘মেঘগুলাে’, ‘কাদের’, ‘লােকগুলাে। এ ছাড়া রা’, ‘সমূহ’, ‘শ্রেণি’, ‘রাশি’, ‘বর্গ’, ‘দল’, শত’, ‘রাজি’, ‘মালা’, ‘পুঞ্জ’, ‘বৃন্দ’, ‘মণ্ডলী’, ‘বহু’, ‘গুলি’ ইত্যাদি নির্দেশক যােগ করে। বহুবচনের রূপ দেওয়া সম্ভব। নীচে প্রতিটি নির্দেশক প্রয়ােগের মাধ্যমে শব্দ গঠন করে বহুবচনের রূপটি দেখানাে হল— 

রা–ছেলেরা।

সমূহ—গ্রন্থসমূহ 

শ্রেণি—বৃক্ষশ্রেণি।

রাশি—জলরাশি। 

বর্গ—ব্যক্তিবর্গ।

দল—গুল্মদল । 

শত—শতবর্ষ

রাজি—পুষ্পরাজি 

মালা—মেঘমালা

পুঞ্জ – নক্ষত্রপুঞ্জ 

বৃন্দ—অধিবাসীবৃন্দ 

মণ্ডলী—অতিথিমণ্ডলী। 

বহু-বহুদিন।

গুলি—গানগুলি

©kamaleshforeducation.in(2023)

 

error: Content is protected !!