একজন রাজা তার প্রজাদের পূর্ণ যত্ন নিতেন । হঠাৎ করেই রাজ্যে প্রচুর চুরির অভিযোগ আসতে শুরু করে। চেষ্টা করেও চোর ধরা পড়েনি।
পরাজিত হয়ে রাজা ঘোষণা করলেন যে কেউ চুরি করতে গেলে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। সব জায়গায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। ঘোষণার পর তিন-চার দিন চুরির কোনো অভিযোগ আসেনি
ওই রাজ্যে চুরি ছাড়া কোনো কাজে অভ্যস্ত ছিল না। সে ভাবল আমার একমাত্র কাজ চুরি করা। এভাবে ভয় পেতে থাকলে অনাহারে মরে যাবো। চুরি করে ধরা পড়লেও মরে যাবো, ক্ষুধার্ত মরার চেয়ে চুরি করা ভালো।
ওই রাতেই সে চুরি করতে একটি বাড়িতে প্রবেশ করে। বাড়ির লোকজন জেগে ওঠে। এসময় তারা শব্দ করতে শুরু করলে চোর পালিয়ে যায়। পাহারায় থাকা সৈন্যরা তাকে তাড়া করে। চোর প্রাণ বাঁচাতে শহরের বাইরে পালিয়ে গেল।
পিছন ফিরে দেখলেন অনেক সৈন্য তাকে তাড়া করছে। তাদের সবাইকে উজ্জ্বল করে পালানো সম্ভব হবে না। পালিয়ে গিয়ে আপনার জীবন বাঁচবে না, আপনাকে একটি কৌশল ভাবতে হবে।
চোর শহরের বাইরে একটা পুকুর পাড়ে পৌঁছে গেল। সে তার সব কাপড় খুলে পুকুরে ফেলে দেয় এবং অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে একটি বটগাছের নিচে পৌঁছে যায়।
হেরনরা বটগাছে বাস করত। বটগাছের শিকড়ের কাছে হেরনের ফোঁটা পড়ে ছিল। চোর বীটটি তুলে তাতে তিলক লাগাল এবং চোখ বন্ধ করে বসে ধ্যানে মগ্ন হওয়ার ভান করল।
কিছুক্ষণ পর সৈন্যরাও তল্লাশি করতে করতে সেখানে পৌঁছে কিন্তু চোরকে কোথাও দেখতে পায়নি। খুঁজতে খুঁজতে আলো পেয়ে চোখ পড়ল বাবা চোর হয়ে গেল।
সৈন্যরা জিজ্ঞেস করল- বাবা, কাউকে আসতে দেখেছেন? কিন্তু ভন্ড বাবা সমাধিতে বসেছিলেন। সে জানত যে সে কথা বললে সে ধরা পড়বে, তাই সে নীরব বাবা হয়ে সমাধির ভান করতে থাকে।
সৈন্যরা কি করবে তা নিয়ে কিছুটা সংশয় ছিল। যদি কেউ সত্যিই একজন সাধু হতে পরিণত হয়? শেষ পর্যন্ত সে গোপনে তার উপর নজর রাখতে থাকে। চোর ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে। প্রাণ বাঁচাতে তিনিও চুপচাপ বসে রইলেন।
একদিন, দুদিন, তিনদিন কেটে গেল আর বাবা বসেই রইলেন। শহরে একটা আলোচনা শুরু হল যে একজন প্রমাণিত সাধক কতদিন ধরে না খেয়েই সমাধিতে বসেছিলেন কে জানে। সৈন্যরা হঠাৎ তাকে দেখে ফেলেছে।
সেই বাবাকে দেখতে শহরের লোকজন আসতে লাগল। বিপুল ভক্তের সমাগম হতে থাকে। রাজার কাছে এ খবর পৌঁছে গেল। রাজা স্বয়ং দর্শনে আসেন। রাজা অনুরোধ করলেন আপনি শহরে এসে আমাদের সেবা করার সৌভাগ্য করুন।
চোর ভাবল এটাই তার পালানোর সুযোগ। তিনি রাষ্ট্রীয় অতিথি হতে রাজি হন। সবাই চিৎকার করে তাকে শহরে নিয়ে গিয়ে সেবা করতে লাগলো।
মানুষের ভালোবাসা ও ভক্তি দেখে ভন্ডের মন পাল্টে যায়। তিনি বুঝতে পারলেন যে, নকলের মধ্যে যদি এত সম্মান থাকে, তবে একজন প্রকৃত সাধক হলে কত সম্মান হবে। তার মন সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয় এবং তিনি চুরি ত্যাগ করে সন্ন্যাসী হন।
*শিক্ষা*
কোম্পানি, পরিবেশ এবং অনুভূতি একজন ব্যক্তির মধ্যে অভূতপূর্ব পরিবর্তন আনতে পারে। ডাকাত রত্নাকর যখন একজন গুরু পেয়েছিলেন, তখন তিনি অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন এবং প্রথম কবি হয়েছিলেন। এমনকি একজন নিঃস্ব একজন সাধুও হতে পারে, যদি সে তাকে পথ দেখানোর জন্য কাউকে পায়।
তোমার সঙ্গকে শুদ্ধ রাখো, পাপগুলো আপনা থেকেই দূর হয়ে যাবে..!!
*সদা সুখী থাকুন – আপনি যা পান তাই যথেষ্ট। *যার মন খুশি তার সবই আছে।