সুপ্রীম জাজমেন্ট এর সারকথা এবং বৈধদের করণীয়।
======================================
১) যখন চারদিকে ,” লিস্টি দাও, লিস্টি দাও” করে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে দেওয়া হয়েছিল তখনও বলেছি । বারে বারে বলেছি। এখনও বলছি যে Tainted দের লিস্ট অলরেডি দেওয়া হয়েছে। এসএসসিই দিয়েছে। তবে ওটা এসএসসির নিজের ভাণ্ডারের তথ্য দিয়ে তৈরি নয় । CBI এর তদন্তের দ্বারা তৈরি। সিবিআই যাদের tainted বলেছিল এসএসসিও সেটাকেই মান্যতা দিয়ে কোর্টকে জানিয়েছে ঐ লিস্ট ধরে Untainted দের চাকরি রাখলে তাদের আপত্তি নেই। অর্থাৎ লিস্ট দাও , লিস্ট দাও আর্তনাদের কোনো মানে হয় না।
২) যোগ্য অযোগ্যের লিস্ট নয়। রায় হয়েছে সমগ্র প্রক্রিয়াটা দূষিত হওয়ার কারনে। বিচারকরা মনে করেছেন এই দূষণ এমন সিস্টেমেটিক ভাবে ছড়ানো হয়েছে যে সেটাকে আর সংশোধন করা সম্ভব নয় ( beyond repair)।
৩) কোর্ট বলছে যদি এসএসসির থেকে আসল OMR শিট বা মিরর ইমেজ পাওয়া যেত তাহলে SEGREGATOON তারা মেনে নিতেন। কিন্তু কোর্ট এটাও স্বীকার করছে যে সিবিআই কর্তৃক উদ্ধারকৃত হার্ড ডিস্কের মধ্যে থাকা OMR এবং এসএসসির সার্ভারে সংরক্ষিত মার্কস এর গরমিল এসএসসি স্বীকার করেছে এবং এসএসসি সেটা ধরেই সেগ্রিগেশন সম্ভব বলে আদালতকে জানিয়েছে। আদালত অবশ্য এসএসসির এই স্বীকারোক্তিতে খুব একটা IMPRESSED হয়নি । অবশ্য প্রশ্ন উঠতেই পারে উপরে উল্লেখিত তথ্যের ভিত্তিতে যদি TAINTED/ UNTAINTED নির্ধারিত করা যায় তাহলে সেটা দিয়েই কাদের চাকরি থাকবে আর কাদের থাকবে না সেটা কেন নির্ধারিত করা যাবে না।
৪) বৈধদের চাকরি বাতিলের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় কারন সম্ভবত আদালতে অবৈধদের আইনজীবীদের অবস্থান। তাঁরা বৈধদের ভিড়ে মিশে গিয়ে নিজেদের বাঁচাতে চাইলেন। যে উদ্ধারকৃত হার্ড ডিস্কের তথ্য দ্বারা নির্দোষরা বৈধ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যেতে পারতেন সেই হার্ড ডিস্কের তথ্যের গ্রহণযোগ্যতাই অস্বীকার করল অবৈধ দের আইনজীবীরা। তাঁদের বক্তব্য হলো ঐ হার্ড ডিস্কের মধ্যে থাকা OMR গুলি তাঁদের নয় আর এভিডেন্স অ্যাক্ট এর 65 B অনুসারে যে সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে সেটাও ভ্যালিড নয় কারন সেটাতে যিনি সই করেছেন তাঁর সেই সার্টিফিকেট দেওয়ার এক্তিয়ার সেই মুহূর্তে ছিল না। এই খানেই বিশাল সমস্যা তৈরি হয়ে গেল বিচারকদের সামনে। অবৈধদের আইনজীবীদের কথা পুরো অস্বীকার করা যায় না। সত্যি করেই সেই হার্ড ডিস্কগুলি এসএসসির অফিস থেকে পাওয়া যায়নি। সেগুলি পাওয়া গিয়েছিল বাইরে থেকে। সেগুলির 65 B certificate যিনি দিয়েছিলেন তিনি সেই সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার কর্মী ছিলেন না। সুতরাং যদি কেউ সেই তথ্যের অথেন্টিসিটি নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেয় তাহলে সেটাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আবার দূর্নীতি যে হয়েছে সেটা দিনের আলোর মতোই পরিষ্কার। ফলে কোর্ট সমগ্র প্যানেল বাতিলের পথে যায় যাতে বৈধদের সঙ্গে মিশে গিয়ে একজন দুর্নীতিগ্রস্তও না ছাড় পেয়ে যায়। কিন্তু এখানে প্রশ্ন উঠতেই পারে সমস্ত দূর্নীতিগ্রস্তের শাস্তি নিশ্চিত করে কোর্ট ঠিকই করেছে কিন্তু সমস্ত নির্দোষ এর ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার কি এখানে সুনিশ্চিত করা হলো ?
৫) রিভিউ পিটিশনের মূল কথা হওয়া উচিত উদ্ধারকৃত হার্ড ডিস্কের OMR প্রকাশ করে তার ভিত্তিতে বৈধ / অবৈধ নির্ধারণ। যদি সমস্ত OMR প্রকাশ করে আবার প্যানেল তৈরি হয় তো হোক। বাদ যাক অবৈধরা। তাঁদের জায়গায় প্যানেলে আসুক অন্যরা। এটাতে বৈধদের চিন্তার কিছু নেই। তাঁরা এগিয়েই থাকবেন। বরং অবৈধরা বেরিয়ে গেলে তাঁদের Rank এগিয়ে যাবে। এই ভাবে প্যানেল তৈরি হওয়ার পর প্রথমেই বৈধদের অপশন দেওয়া হোক কারা পূর্বের স্কুলেই থাকতে চান আর কারা নতুন করে কাউন্সেলিং এ অংশগ্রহণ করতে চান। যাঁরা আগের স্কুলেই থাকতে চান তাঁদের এবং তাঁদের স্কুলগুলোকে বাদ দিয়ে বাকিদের স্কুলগুলোকে এবং বাদ পড়া অবৈধদের স্কুলগুলোকে ভ্যাক্যানসি দেখিয়ে নতুন করে কাউন্সেলিং করে শূন্যপদ পূরণ করা হোক।
৬) অভিযুক্তের বক্তব্য না শুনে বা কারোর অপরাধের প্রত্যক্ষ প্রমাণ না পেয়েই কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। এটাকে বলে ন্যাচারাল জাস্টিস। এখানে সুপ্রিম রায়ে এই ন্যাচারাল জাস্টিস মানা হয়নি । অর্থাৎ একদল মানুষের উপর শাস্তির খাঁড়া নেমে এসেছে তাঁদের অপরাধের প্রমাণ ছাড়াই। সুপ্রীম কোর্ট তার এই কাজের পিছনে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছে। বলেছে যে সবার মতামত জানানোর সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। তবে ব্যক্তিগত ভাবে প্রত্যেকের হিয়ারিং এর দরকার ছিল না। কারন এটা কোনো ইন্ডিভিজুয়াল কেস ছিল না। কেসটা ছিল পদ্ধতিগত দুর্নীতির বিরুদ্ধে। সেই দূর্নীতির স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। বোঝা গেছে যে গোটা প্রক্রিয়াটাই চলেছে সিস্টেমেটিক illegalities এর দ্বারা। ফলে গোটা প্রক্রিয়াটাই দূষিত হয়ে পড়েছে। এখানে ন্যাচারাল জাস্টিস এর জন্য ইন্ডিভিজুয়াল হিয়ারিং এর দরকার পড়ে না। কিন্তু যতই ব্যাখ্যা দিক সুপ্রিম কোর্ট। রায়ের এই জায়গাটাই সবচেয়ে গোলমেলে লেগেছে। দোষ করেছে, দূর্নীতি করেছে কর্তৃপক্ষ । তাঁদের দোষের দায়ে অন্য কোনো নির্দোষ এর ন্যাচারাল জাস্টিস পাওয়ার অধিকার কী ভাবে কেড়ে নেওয়া যায় ? এই প্রশ্নটা অবশ্যই তুলতে হবে রিভিউ পিটিশনে।
৭) সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন বৈধদের বাঁচার শেষ রাস্তা। কিন্তু এটা ঘটনা যে রিভিউ পিটিশনের সাকসেস রেট নগণ্য। এখানে শুধু রিভিউ করা হয় আগের বিচার পদ্ধতিটা ঠিক ছিল কি না। এখানে একটাই কথা পরিষ্কার করে তুলে ধরতে হবে যে, যে তথ্যের ভিত্তিতে Tainted / Untainted নির্ধারিত হয়েছে সেটা দিয়েই বৈধ,/ অবৈধ নির্ধারিত করতে হবে। হার্ড ডিস্কের তথ্যের শুদ্ধতা নিয়ে বেশ কিছু টেস্ট হয়েছে । তাতে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি। আর একটা টেস্টের রিপোর্ট সম্ভবত হায়দ্রাবাদ থেকে এখনও আসেনি। সেটা যাতে দ্রুত এসে যায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। এগুলি কোর্টের বিবেচনার জন্য পেশ করতে হবে। দোষীরা মিশে আছে বলে নির্দোষরাও শাস্তি পাবে এটা হতে পারে না বলে দাবি জানাতে হবে আর একবার। এর মধ্যে এসএসসি কে সমস্ত OMR এর Scanned কপি প্রকাশ করতে হবে। তার ভিত্তিতে পরিষ্কার করে বৈধ এবং অবৈধদের লিস্ট বানিয়ে জমা দিতে হবে। অবৈধদের সরিয়ে দিয়ে ভবিষ্যতে কী ভাবে দ্রুত বৈধ অপেক্ষমানদের সেই জায়গায় নেওয়া সম্ভব সেটার পরিকল্পনা এসএসসিকে আদালতে পেশ করতে হবে। সেই লিস্ট দেওয়ার পর আদালতে আমতা আমতা করে বললে হবে না যে ” এখনও কিছু গোলমাল আছে কি না সেই ব্যাপারে নিশ্চিত নই ” । এটা করেই আগের বারে ডুবিয়েছে। এফিডেভিটে পরিষ্কার করে বলতে হবে যে এই লিস্ট ফাইন্যাল। এর মধ্যে কোনও গোলমাল নেই। তাহলেই এই লিস্টের গ্রহণযোগ্যতা থাকবে। নচেৎ নয়।
৮) যদি রিভিউ পিটিশনে খারাপ কিছু হয়ে যায় তাহলে রাজ্য সরকারের কাছে বৈধদের বাঁচানোর আইনসম্মত কী রাস্তা আছে তার হদিশ এখন থেকেই সরকারের কাছ থেকে নিশ্চিত ভাবে জানতে হবে। আইনজীবীদের সঙ্গেও কথা বলে রাখতে হবে।
৯) এরপরেও অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক হলেও হয়ত বৈধদের আবার পরীক্ষায় বসতে হতেই পারে। তার প্রস্তুতিও চালাতে থাকুন বৈধরা।
১০) রাস্তার অবস্থান জোরদার করুন।সরকারের উপর আইনসম্মত চাপ বজায় রাখুন। এর কাজ আছে । সত্যিই যদি নতুন সিলেকশন প্রসেস চালানো হয় এই চাপ সেখানে কাজ দেবে। আপনাদের অবস্থান জনগণের মধ্যে সহানুভূতির হাওয়া নিয়ে আসতে পারলে তার প্রভাব রিভিউতেও পড়তে পারে। প্রশ্ন হতে পারে অবস্থান , বিক্ষোভ সিলেকশন প্রসেসে বা রিভিউতে কী কাজ দেবে ? এর উত্তর দেওয়া যাবে না।
১১) যদি এমন হয় যে নতুন করে সিলেকশন প্রসেস হলো এবং কিছু বৈধ তাতে দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাদ পড়ে গেলেন তাদের জন্য বাকিদের লড়াইটা কিন্তু যেন জারি থাকে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। বেশিরভাগ পেয়ে গেছেন। অল্প কিছু জন বাদ পড়েছেন এমন হলে খুব ঘোরতর সম্ভাবনা আছে যে বাকিরা তাঁদের ভুলে যাবেন। এখন থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখুন বৈধদের সবার সঙ্গে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত লড়াইয়ের ময়দান কেউ ছাড়বেন না।
১২) শেষ কথা। চাকরি খুব বড় একটা জিনিস। জীবন তার চেয়েও বড়। বেঁচে থাকার জন্য চাকরি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অক্সিজেনের মতো অপরিহার্য নয়। শুভেচ্ছা রইলো।
SOURCE-SMR