২০১৬ সালের সিলেকশন প্রসেস ক্যান্সেলেশন এর পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে সিলেকশন প্রসেস চালুর ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর সাংবাদিক সম্মেলনের নির্যাস।  

28TH MAY,2025
————————————————————-  
১) 30 শে মে নতুন সিলেকশন প্রসেসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হতে চলেছে।

২) নতুন সিলেকশন প্রসেসে 2016 এর Tainted পরীক্ষার্থীরা বসতে পারবেন না। Untainted রা এবং 2016 সালে যত পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছিলেন তাঁরা সবাই বসতে পারবেন। বয়সের ছাড় পাবেন চাকরিহারা বৈধরা । তাঁদের সঙ্গে একই সিলেকশন প্রসেসে ফ্রেশ ক্যান্ডিডেটরাও বসবেন কি না সেটা পরিষ্কার হলো না। বিজ্ঞপ্তি না বেরোলে এটা পরিষ্কার হবে না। হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের রায়ে শুধু ফ্রেশ সিলেকশন প্রসেস বলে ছেড়ে দিয়েছে। সেটার মানে কি 2016 এর পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে ফ্রেশরাও এই পরীক্ষায় বসার সুযোগ পাবেন ? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। নতুন ভ্যাক্যান্সি অ্যাড হয়ে ভ্যাক্যান্সি অনেকটাই বেড়ে যাচ্ছে। ফ্রেশদের একই সিলেকশন প্রসেসে আনার চেষ্টা হলে চাকরিহারা বৈধদের উচিত হবে প্রতিবাদ করা। প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায় কি না সেই ব্যাপারে আইনি পরামর্শ নেওয়া। অবশ্য ফ্রেশদের জন্য আলাদা সিলেকশন প্রসেস হতেই পারে। তাতে আপত্তির কিছু নেই।এই সিলেকশন প্রসেসে একাডেমিক মার্কস, লিখিত পরীক্ষা ও ইন্টারভিউ নিয়ে প্যানেল প্রস্তুত হবে। সব প্রক্রিয়াটাই নতুন করে হবে।

৩) চাকরিহারা Untainted ক্যান্ডিডেটরা চাকরির অভিজ্ঞতার জন্য বাড়তি মার্কস পাবেন। এটার আইনি বৈধতা নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি আছে। অনেকে বলছেন যখন পুরো সিলেকশন প্রসেসটাই বাতিল তখন সেই চাকরির অভিজ্ঞতার সুবিধা কী ভাবে পাওয়া যাবে ? পাল্টা যুক্তি হচ্ছে Untainted দের ক্ষেত্রে কোর্ট সিলেকশন প্রসেস বাতিল করেছে, অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল করেছে, সার্ভিস টার্মিনেট করতে বলেছে ঠিকই কিন্তু পূর্বের চাকরির বৈধতা বাতিল করেনি। তাহলে Tainted দের মতো তাদেরকেও বেতন ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিত। তা যখন দেয়নি তখন পূর্বের চাকরির বৈধতা আছে বলে ধরে নিতে হবে এবং সেই কারনে পূর্বের চাকরির অভিজ্ঞতার জন্য মার্কস পেতেও বাধা নেই।

৪) মুখ্যমন্ত্রী দুটো অপশন এর মাধ্যমে বৈধ টিচার এবং নন টিচিং স্টাফদের চাকরি ফেরত পাওয়ার সুযোগের কথা বলেছেন। তিনি এই দুটি সুযোগই নেওয়ার জন্য বৈধদের কাছে আবেদন করেছেন। প্রথম সুযোগ হলো সুপ্রিম কোর্টে ইতিমধ্যে ফাইল করা রিভিউ পিটিশনের সুযোগ। এই পিটিশন এখন পেন্ডিং আছে যেহেতু সুপ্রিম কোর্টে ছুটি চলছে। যদি রিভিউ পিটিশনের ফলাফল পজিটিভ আসে তাহলে বৈধরা পরীক্ষা না দিয়েই চাকরিতে পুনর্বহাল হবেন। দ্বিতীয় সুযোগ হলো যদি ফলাফল নেগেটিভ আসে তাহলে এই পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁরা আবার চাকরিতে ফিরতে পারেন। পরীক্ষা দেবো না এমন সিদ্ধান্ত যেন বৈধরা না নেন সেই আবেদন তিনি জানান। এখানে একটা আইনগত প্রশ্ন উঠছে এই দুটি অপশন কি একইভাবে চলতে পারে ? নতুন সিলেকশন প্রসেসের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করে দিলে তো রিভিউ পিটিশনটাই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায়। এখানে বিরুদ্ধ যুক্তি হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী রাজ্য বাধ্য হচ্ছে 31 শে মে এর মধ্যে বিজ্ঞপ্তি জারি করতে। তাঁরা ইতিমধ্যেই রিভিউ পিটিশন দাখিলও করেছেন। রিভিউ পিটিশন তো একটা আইনগত অধিকার। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলে সেটা কেন বাতিল হবে ? বিশেষ করে যখন এই ব্যাপারটা নিয়োগকারী সংস্থার নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

৫) এই সিলেকশন প্রসেস চলাকালীন বৈধ টিচাররা যেমন স্কুলে যাচ্ছেন যাবেন 31 ডিসেম্বর পর্যন্ত। বেতন পাবেন। নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া এই সময় সীমার মধ্যেই সম্পন্ন করে ফেলা হবে।

৬) যে সমস্ত চাকরিহারা Tainted গ্রূপ সি এবং গ্রূপ ডি ক্যান্ডিডেট এবং Tainted টিচাররা স্কুলে যেতে পারছেন না এবং বেতন পাচ্ছেন না তাঁদের জন্য সরকারের বিভিন্ন দফতরে আলাদা নিয়োগের ব্যবস্থা করবে রাজ্য সরকার। সেটা কোন পোস্টে হবে, চাকরির প্রকৃতি কেমন হবে সেটা তিনি পরিষ্কার করেননি। এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার জন্যও আলাদা করে বিজ্ঞপ্তি জারি হবে। তবে সেটা কয়েক দিন পরে। এই কাজটা বিশেষ করে Tainted দের অন্য চাকরিতে ঢুকিয়ে দেওয়ার কাজটা নিয়ে জটিলতা হতে পারে। কেস হবে। এক পক্ষ বলবে যেহেতু এর Tainted তাই এদের কোনও চাকরি পাওয়ার অধিকার নেই। সরকার পক্ষ বলবে সুপ্রিমকোর্ট শুধু আগের নিয়োগের সিলেকশন প্রসেস বাতিল করেছে। এরা আগের চাকরিতে ফিরতে পারবে না বলেছে। আগের চাকরির টাকা ফেরত দিতে বলেছে । ঠিকই। কিন্তু এরা নিজেদের যোগ্যতায় ভবিষ্যতে অন্য কোনো চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না এমন কথা কোর্ট অর্ডারে নেই। এটা নিয়ে অবশ্য শেষ পর্যন্ত কোর্টই শেষ কথা বলবে।

৭) উপরের আলোচনা থেকে একটা কথা পরিষ্কার যে সরকার Tainted/ Utainted সবার চাকরি রাখতেই মরিয়া প্রচেষ্টা চালাবে। কারোর চাকরি গেলে চাপে পড়বে সরকার। মুখ্যমন্ত্রী বলেই দিয়েছেন কেউ কর্মহীন হয়ে যান সেটা তিনি চান না। সেই কাজটিকে স্মুথলি করার জন্য আইনের ফাঁক ফোকর খোঁজার চেষ্টা চালাচ্ছেন বড় বড় আইনজীবীরা। প্রকাশ্যে / অপ্রকাশ্যে অনেক কিছুই ঘটবে।

৮) ঠিকই  সামনে অনেক কিছু ঘটবে। অবৈধদের নিয়ে আমার মাথা ব্যথা নেই। কিন্তু বৈধদের জন্য আমার পরামর্শ হবে আপনারা চেষ্টা চালান যাতে স্ক্যানড OMR থেকে তথ্য নিয়ে আবার পরীক্ষা ছাড়াই নতুন করে প্যানেল প্রস্তুত করে তা থেকে আপনাদের চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়। সেটা যদি সম্ভব না হয় এবং যদি রিভিউতে নেগেটিভ রেজাল্ট আসে তাহলে পরীক্ষার ফর্ম পূরণ অবশ্যই করে রাখবেন। পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ফাঁক রাখবেন না। আমরা বিদ্যালয় প্রধানরা এবং আপনাদের সহকর্মীরা আপনাদের প্রস্তুতির পথে স্কুল এবং স্কুলের কাজকর্ম যাতে বাধা না হয়ে দাঁড়ায় সেটা নিশ্চিত করবো। হেডমাষ্টার ম্যানুয়ালটা আপনাদের জন্য কয়েক মাস বন্ধ করে রাখবো। আপনার সঙ্গে স্টাফরুমে কবে ঝগড়া হয়েছিল সে সব এখন ভুলে যাবো। নিশ্চিত থাকুন। আপনারা পড়াশোনার সাথে সাথে আন্দোলন সংগ্রামটাও চালিয়ে যান। চাপটা বজায় রাখুন। মনে রাখবেন প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে আপনাদের পক্ষে যে বা যারা যা কিছু করবে সেটা তারা নিজেদের স্বার্থেই করবে । আপনাদের বিপক্ষে যারা যেটা করবে সেটাও তারা নিজেদের স্বার্থেই করবে। কেউ বন্ধু নয়। কেউ শত্রু নয়। এখন অনেক আঘাত পাওয়ার মতো কথা উড়ে আসবে। এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে আসবে যাতে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। ওসব ইগনোর করুন। ঘটনাক্রম দেখেই বলছি যে আমি এখনও 100 শতাংশ নিশ্চিত আপনাদের চাকরি থাকছে। হয়ত রিভিউতেই সুখবর পাবেন। না হলে কী ভাবে ? জানি না। সব কথা বলা যায়ও না। তবে থাকছে। লিখে রাখুন। এটা আমার আশা। আমার উপলব্ধি। আমার বিশ্বাস।  

বিঃ দ্রঃ – উপরের আলোচনা শুধুমাত্র মুখ্যমন্ত্রীর সাংবাদিক সম্মেলনের ভিত্তিতে। নতুন সিলেকশন প্রসেসের বিজ্ঞপ্তি না দেখে নিশ্চিতভাবে কিছুই বলা যায় না। পূর্বের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি সাংবাদিক সম্মেলনের কথা আর নোটিফিকেশান এর ভাষার মধ্যে অনেক পার্থক্য। তাই সবটা নিশ্চিত হতে হলে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

 SOURCE-SMR

©Kamaleshforeducation.in (2023)

error: Content is protected !!