2016 সালের প্যানেলের গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি স্টাফরা যাঁরা সাম্প্রতিক সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরি হারিয়েছেন এবং যাঁদের বেতনও ইতিমধ্যে এপ্রিল মাস থেকে বন্ধ হয়ে গেছে তাঁদের জীবিকা সহায়ক ভাতা ( Livelihood Support রূপে মাসে যথাক্রমে 25000 ও 20000 টাকা করে দেওয়ার নোটিফিকেশন জারি করলো রাজ্য সরকার।

আসুন দেখে নিই কী আছে এই নোটিফিকেশনে।

কারা কী ভাবে এই সুবিধা নিতে পারেন।

 

———————————————————-  

 

১) প্রশ্ন – কোন ডিপার্টমেন্ট এই নোটিফিকেশান জারি করেছে ?

উত্তর – পশ্চিমবঙ্গ সরকারের লেবার ডিপার্টমেন্ট এই গেজেট নোটিফিকেশান জারি করেছে তাদের মোমো নং – Labr-58/2025/LC -LW/MW, তারিখ – 15/05/2025 দ্বারা।

২) প্রশ্ন – কারা এই নোটিফিকেশান এর সুবিধা পাবেন ?

উত্তর – WBSSC পরিচালিত 2016 সালের রিক্রুটমেন্ট প্রসেস ( 3rd RLST NT ) থেকে যে সমস্ত গ্রূপ সি এবং গ্রূপ ডি স্টাফ নিয়োগ হয়েছিলেন এবং যাঁরা সুপ্রিম কোর্টের 03/04/2025 তারিখের ফাইনাল জাজমেন্ট ( CA NO – 4800 of 2025 ) দ্বারা চাকরিচ্যুত হয়েছেন এবং যাঁদের বেতন গত এপ্রিল মাস থেকে বন্ধ হয়ে গেছে তাঁরা এই সুবিধা পাবেন। এখানে উল্লেখ্য যে এই সমস্ত গ্রুপ সি এবং ডি স্টাফরা Tainted বা Not specifically found to be tainted যাই হোন না কেন এই সকলেই এই আর্থিক সুবিধা পাবেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে tainted AT রা এই সুবিধা পাবেন না। আর যে সমস্ত disabled গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি স্টাফ পূর্বের অর্ডার অনুযায়ী ইতিমধ্যে বেতন পেতে শুরু করেছেন তাঁরাও এই সুবিধা পাবেন না।

৩) প্রশ্ন – এই নোটিফিকেশনে এই আর্থিক সহায়তা প্রদানের গ্রাউন্ড হিসাবে কোন কোন যুক্তির কথা বলা হয়েছে ?

উত্তর – এই আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য যুক্তি হিসাবে বেশ কিছু পয়েন্ট উল্লেখ করা হয়েছে । সেগুলি হলো –

ক) এই আর্থিক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে অর্থ কষ্টে ভুগতে থাকা পরিবারগুলির মুখের দিকে তাকিয়ে।

খ) যে কারণে উক্ত চাকরিহারাদের এই দুর্দশার মধ্যে পড়তে হয়েছে সেই কারনটিকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা উক্ত চাকরিহারাদের ছিল না।

গ) বিচার প্রক্রিয়া এখনও চলমান। এটা শুধুমাত্র একটা অন্তবর্তীকালীন আর্থিক সহায়তা। রাজ্য সরকার এবং এসএসসি সুপ্রিম কোর্টের কাছে ইতিমধ্যেই রিভিউ পিটিশন দাখিল করেছে। পরবর্তীতে প্রয়োজনে আরো পিটিশন দাখিল করা হতে পারে। সুতরাং এই বিচারপ্রক্রিয়া ফাইনাল না হওয়া পর্যন্ত এটা একটা টেম্পোরারি Arrangement মাত্র।

ঘ) হঠাৎ  যে বিপুল সংখ্যক মানুষ কর্মহীন হয়ে গেলেন তাঁদের জীবন জীবিকাকে একটুখানি সুরক্ষা দেওয়া।

ঙ) ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী যে কোনও রাজ্য হচ্ছে জনগণের কল্যাণকামী রাজ্য। রাজ্যের কাজ হচ্ছে তার প্রজাদের জীবন সুরক্ষিত রাখা, বিশেষ করে সেই ক্ষেত্রে যেখানে তাদের জীবন বিপদের মধ্যে পড়ে এমন কোনো কারনে যেটার নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে ছিল না। সংবিধানের এই কথাগুলি এই চাকরি হারাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এছাড়া সংবিধানের 21 নং আর্টিকেল বলছে যে নাগরিকদের জীবনের অধিকার একটি মৌলিক অধিকার এবং রাজ্যের কর্তব্য হচ্ছে এই অধিকার সুনিশ্চিত করা, বিশেষ করে সেটা যদি সরকারি চাকরি সংক্রান্ত ব্যাপারে হয়। আর্টিকেল 41 রাজ্যকে এই দায়িত্ব দেয় যে যদি কোনো নাগরিক কর্মহীনতা, বার্ধক্য বা অসুস্থতা জনিত কারনে উপার্জন করতে অক্ষম হন তখন রাজ্য তাদের পাশে দাঁড়াবে।

চ) যাঁরা হঠাৎ করে কর্মহীন হয়েছেন তাঁদের জীবন রক্ষার তাগিদে তাঁদের বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করতে পারার জন্য ন্যূনতম সময় দেওয়ার উদ্দেশ্যে এই আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এই কাজ রাজ্য আগেও করেছে ।

ছ) এটি কেবল একটি সাময়িক ও মানবিক সাহায্য প্রদান যা দেওয়া হচ্ছে ভুক্তভোগী ফ্যামিলিগুলির মুখের দিকে তাকিয়ে। এর মধ্যে কোর্টের কোনও অর্ডার এলে অথবা মূল জাজমেন্ট এর উপর যে পিটিশন ইতিমধ্যেই দায়ের করা হয়েছে বা ভবিষ্যতে আরো যা করা হবে সেগুলির চূড়ান্তকরন হয়ে গেলে যে কোনো সময় এই অর্ডার বাতিল বা পাল্টে যেতে পারে।

জ) উপরোক্ত গ্রাউন্ডে সংবিধানের আর্টিকেল 162 এর দ্বারা প্রাপ্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করে রাজ্য সরকার এই স্কিম চালু করছে।

৪) প্রশ্ন – এই স্কিমের নাম কী ? এই স্কিমের নোডাল ডিপার্টমেন্ট হিসাবে কোন ডিপার্টমেন্ট কাজ করবে ?

উত্তর – এই স্কিমের নাম – WB Livelihood and Social Security Interim Scheme, 2025। এই স্কিমের নোডাল ডিপার্টমেন্ট হিসাবে কাজ করবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের লেবার ডিপার্টমেন্ট।

৫) প্রশ্ন – এই স্কিমের আর্থিক সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে স্ক্রিনিং কমিটি হিসাবে যে কমিটি কাজ করবে তার গঠনতন্ত্র কেমন হবে?

উত্তর – স্ক্রিনিং কমিটি তে থাকবেন —

ক) Labour Commissioner, WB– Chairman

খ) One Officer of the Education Department not below the rank of Joint Secretary – Member

গ) One Additional Labour Commissioner, WB – Member Secretary

এই স্ক্রিনিং কমিটি প্রতিটা আবেদন খুঁটিয়ে দেখে নিষ্পত্তি করবেন।

৫) প্রশ্ন – কোনও আবেদন যদি স্ক্রিনিং কমিটি দ্বারা নাকচ হয়ে যায় তাহলে ভুক্তভোগী ক্যান্ডিডেট কার কাছে সুরাহা চেয়ে আবেদন করবে ?

উত্তর – অসন্তুষ্ট আবেদনকারী তখন Appellate Authority এর কাছে অভিযোগ জানাতে পারেন। লেবার ডিপার্টমেন্টের Additional Chief Secretary বা Principal Secretary বা Secretary এই Appellate Authority হিসাবে কাজ করবেন ।

৬) প্রশ্ন – চাকরিহারা গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি স্টাফরা ঠিক কী ভাবে এবং কোথায় এই আর্থিক সহায়তা পাওয়ার জন্য আবেদন করবেন ?

উত্তর – প্রসেসটা এইরকম —

i ) এই আর্থিক সহায়তা পাওয়ার জন্য একজন চাকরিহারা গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি স্টাফ প্রথমে এই নোটিফিকেশনের সঙ্গে দেওয়া Annexure A ফর্মে সাপোর্টিং ডকুমেন্টস দিয়ে আবেদন করবেন তাঁর জেলার ডি আই এর কাছে। এই আবেদন সরাসরি ডি আই এর কাছে জমা করতে হবে না স্কুলের মাধ্যমে সেটা ডি আই এর কাছে যাবে সেটা এখনই নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। ডি আই এর থেকে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে যে মেল আসবে সেটা আসার পর ব্যাপারটা নিশ্চিত করা যাবে। সাপোর্টিং ডকুমেন্টস কী কী হবে সেটাও এখনও নিশ্চিত নয়। তবে এই ডকুমেন্টসগুলি গুছিয়ে নিজের কাছে রাখুন —

1. SSC RECOMMENDATION

2WBBSE APPOINTMENT LETTER

3. DI APPROVAL

4. JOINING LETTER

5. NON EMPLOYMENT CERTIFICATE

6. LAST PAY SLIP, SERVICE BOOK COPY

7.CONFIRMATION ORDER ( যদি থাকে ) ।

ii) ডি আই এরপর সেই অ্যাপ্লিকেশন ফরওয়ার্ড করবেন স্কুল এডুকেশন ডিপার্টমেন্টে। স্কুল এডুকেশন ডিপার্টমেন্ট সেটা পাঠাবে লেবার ডিপার্টমেন্টে ।

iii) এরপর পূর্বে উল্লেখিত স্ক্রিনিং কমিটি সেই আবেদন খতিয়ে দেখে আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে বা আবেদন বাতিল করবে। আবেদন বাতিল হলে সংশ্লিষ্ট স্টাফ সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে Appellate Authority ( পূর্বেই উল্লেখ করেছি ) এর নিকট আবেদন করতে পারবেন।

৭) প্রশ্ন – কোন কোন শর্ত পূরণ করলে তবে এই অনুদান মিলবে ?

উত্তর – নিম্নলিখিত কর্মীগণ এই অনুদান পাবেন —-

ক) 2016 প্যানেলের গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি হতে হবে সুপ্রিম কোর্টের অর্ডারে যাঁদের চাকরি গেছে এবং যাঁদের স্যালারি স্টপ রয়েছে।

খ) ডিপার্টমেন্টের পে রোলে নাম আছে।

গ) এখনও 60 বছর বয়স হয়নি।

ঘ) অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে ইতিমধ্যে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে অর্থ উপার্জন করছেন না।

ঙ) ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশান এর অঙ্গ হিসাবে সংশ্লিষ্ট কর্মীর স্যালারি বন্ধ হয়ে নেই।

৮) প্রশ্ন – এই স্কিমের আওতায় চাকরিহারা গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি স্টাফরা ঠিক কী রকম সহায়তা পাবেন ?

উত্তর – আবেদন গ্রাহ্য হলে উক্ত গ্রুপ সি কর্মীরা মাসে 25000 টাকা এবং গ্রুপ ডি কর্মীরা মাসে 20000 টাকা করে পাবেন। এই অনুদান এফেক্ট হবে 1st April , 2025 থেকে। অর্থাৎ এপ্রিল বা মে মাসের অনুদান arrear হিসাবে মিলতে পারে।

৯) কোন্ কোন্ ঘটনা ঘটলে এই অনুদান বন্ধ হয়ে যাবে ?

উত্তর – নিম্নলিখিত ঘটনাগুলি ঘটলে এই অনুদান বন্ধ হয়ে যাবে —

ক) আবেদনকারীর মৃত্যু।

খ) আবেদনকারীর 60 বছর বয়স হয়ে যাওয়া।

গ) সুপ্রিম কোর্টের দাখিল করা রিভিউ পিটিশন বা পরবর্তী পিটিশন এর সুপ্রিম কোর্টে ফাইনাল অর্ডার পাস হয়ে যাওয়া।

ঘ) রাজ্য সরকার অন্যরকম কোনও নির্দেশ জারি করলে।

ঙ) আবেদনকারী যদি অন্য কোনো জীবিকা গ্রহণ করেন।

চ) এই স্কিমের বিরূদ্ধে যদি কোর্ট অন্যরকম কোনো অর্ডার দেয়।

বিঃ দ্রঃ – উপরোক্ত ঘটনা গুলির মধ্যে যেটি প্রযোজ্য হবে বা আগে ঘটবে সেটা ধরেই কাজ হবে।

১০) প্রশ্ন – পেমেন্ট কেমন করে হবে ?

উত্তর – প্রতি মাসে লেবার কমিশনারের কাছ সরাসরি পেমেন্ট আসবে উপভোক্তার ব্যাংক একাউন্টে ।

১১) প্রশ্ন – এই স্কিমের সীমাবদ্ধতাগুলি কী কী ?

উত্তর – এই স্কিমের সীমাবদ্ধতাগুলো হলো —

ক) এই স্কিম সম্পর্কে যদি কোর্ট কোনো অর্ডার জারি করে তাহলে সেটাই মেনে চলা হবে। অর্থাৎ স্বীকার করে নেওয়া হচ্ছে এই স্কিম নিয়ে মামলা হতে পারে। তখন এই স্কিমের ভবিষ্যত নির্ভর করবে সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে জারি হওয়া কোর্ট অর্ডারের উপরে।

খ) এই স্কিমের আওতায় আসার মাধ্যমে চাকরির উপরে কোনও অধিকার জন্মাবে না বা কর্মীর নিজের এবং তার পরিবারের কারোর চাকরির ক্ষেত্রে কোনো অগ্রাধিকারের কোনও সুযোগ থাকবে না।

গ) সুপ্রিম কোর্টের রিভিউ পিটিশন বা পরবর্তী পিটিশনের অর্ডারের উপর এই স্কিমের ভবিষ্যত নির্ভর করবে।

১২) প্রশ্ন – তাহলে ব্যাপারটা ঠিক কী দাঁড়ালো ?

উত্তর – প্রায় কিছুই দাঁড়ালো না। এই অর্ডারের ছত্রে ছত্রে নানা রকম শর্ত আর বাধানিষেধের বেড়াজাল চাপানো হয়েছে। সরকার যেন বুঝতে পারছে এটা নিয়ে আইনি জটিলতা হবে এবং এই স্কিমের ভবিষ্যত অত্যন্ত অনিশ্চিত। তাই কোর্টকে খানিকটা কনভিন্স করার জন্যই এটার মানবিক গ্রাউন্ডটাকে বড় করে দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে ।চাকরিহারা কর্মীদের পরিবারের দুঃখ কষ্টের কথা তুলে ধরা হচ্ছে এবং এটাকে একেবারেই একটা সাময়িক ব্যবস্থা হিসাবে দেখানোর চেষ্টাও করা হয়েছে । কিন্তু কনফিডেন্সের অভাব স্পষ্ট। দেখা যাক কী হয়। এখানে উল্লেখ্য সাময়িক ভাবে হলেও চাকরিহারারা সবাই কিছু না কিছু পেলেন। শুধু বাদ পড়লেন Tainted AT রা। কেন? উত্তর নেই।  

বিঃ দ্রঃ — ক) উপরে উল্লেখিত মেমো নং এর মাধ্যমে জারি হওয়া নোটিফিকেশন এর ANNEXURE A তে অ্যাপ্লিকেশন ফর্মটি রয়েছে। ওটা ডাউনলোড করে ফিল আপ করে রাখুন। স্কুলে ডি আই অফিস থেকে মেল আসতে পারে। সেখানে নতুন কোনো ইন্সট্রাকশন থাকতে পারে। সেটা অনুসরণ করুন। পরে প্রয়োজন হলে ফর্মটা ফিল আপ করার একটা গাইডলাইন দিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে ।

খ) এই অ্যাপ্লিকেশন প্রসেসটাতে স্কুলের কোনও ভূমিকা থাকবে কি না সেটা জানার জন্য পরবর্তী নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। অনলাইনে রিকুইজিশন করতে হবে না সম্ভবত। তবে HOI থেকে মাসে মাসে একটা রিপোর্ট নিতেই পারে।

গ) অনুদান পেলেও এই কর্মীদের কারোর স্কুলে আসার বা ডিউটি করার কোনো সুযোগ নেই।  

 SOURCE-SMR

 

 ©kamaleshforeducation.in(2023)

error: Content is protected !!