মাধ্যমিক দশম শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর -বারিমন্ডল (তৃতীয় অধ্যায়)-PART-2

 

 

মাধ্যমিক দশম শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর 

বারিমন্ডল (তৃতীয় অধ্যায়)   

SOURCE-BHUGOLSHIKSHA.COM

মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর

MCQ | বারিমন্ডল (তৃতীয় অধ্যায়)

  1. সমুদ্রস্রোত উৎপত্তির প্রধান কারণ কী ? 

(A) সমুদ্রজলের উষ্ণতা

(B) বায়ুপ্রবাহ

(C) এল নিনোর প্রভাব

(D) পৃথিবীর আবর্তন

Ans: (B) বায়ুপ্রবাহ

  1. সমুদ্রে বিচ্ছিন্নভাবে ভাসমান বিশাল বরফের স্তূপকে বলে—

(A) শৈবাল সাগর

(B) মগ্নচড়া

(C) হিমপ্রাচীর

(D) হিমশৈল

Ans: (D) হিমশৈল

  1. সুস্পষ্ট হিমপ্রাচীর দেখা যায়— 

(A) আটলান্টিক মহাসাগর

(B) প্রশান্ত মহাসাগর

(C) সুমেরু মহাসাগরে

(D) ভারত মহাসাগর

Ans: (A) আটলান্টিক মহাসাগর

  1. অধিক লবণাক্ত জল প্রবাহিত হয় –

(A) পৃষ্ঠস্রোত ৰূপে

(B) অন্তঃস্রোত রূপে 

(C) বহিঃস্রোত রূপে 

(D) উল্লম্ব স্রোত রূপে

Ans: (B) অন্তঃস্রোত রূপে

  1. শৈবাল সাগর কোন মহাসাগরে দেখা যায় ?

(A) ভারত মহাসাগরে

(B) দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে

(C) আরব সাগরে

(D) উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে

Ans: (D) উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে

  1. আটলান্টিক মহাসাগরে দক্ষিণ আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল দিয়ে প্রবাহিত স্রোত হল – 

(A) ক্যানারি স্রোত

(B) সোমালি স্রোত

(C) বেঙ্গুয়েলা স্রোত 

(D) উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত 

Ans: (C) বেঙ্গুয়েলা স্রোত

  1. উস্ন স্রোত সাধারণত সৃষ্টি হয় –

(A) নিরক্ষীয় অঞ্চলে 

(B) ক্রান্তীয় অঞ্চলে

(C) উপক্রান্তীয় অঞ্চলে

(D) মেরুপ্রদেশীয় অঞ্চলে

Ans: (B) ক্রান্তীয় অঞ্চলে

  1. হিমপ্রাচীর কোন্ দুই স্রোতের সীমারেখা বরাবর সৃষ্টি হয় ? 

(A) ল্যাব্রাডর ও উপসাগরীয় স্রোত

(B) কুরোশিয়ো ও ওয়াশিয়ো স্রোত 

(C) ক্যানারি ও ইরমিঙ্গার স্রোত

Ans: (A) ল্যাব্রাডর ও উপসাগরীয় স্রোত

  1. পৃথিবীর বৃহত্তম মগ্নচড়া হল –

(A) রফল ব্যাংক

(B) গ্র্যান্ড ব্যাংক 

(C) ডগার ব্যাংক

(D) জর্জেস ব্যাংক

Ans: (B) গ্র্যান্ড ব্যাংক

  1. কোন্ স্রোতের প্রভাবে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ ও নরওয়ে উপকূল সারাবছর বরফমুক্ত থাকে ?

(A) উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত 

(B) কুরোশিয়ো স্রোত

(C) উত্তর আটলান্টিক স্রোত

(D) উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত

Ans: (A) উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত

  1. ভারতমহাসাগরের সমুদ্রস্রোত নিয়ন্ত্রিত হয়—

(A) মৌসুমি বায়ুর দ্বারা

(B) পশ্চিমা বায়ুর দ্বারা 

(C) লা নিনা – এর দ্বারা 

(D) আয়ন বায়ু – র দ্বারা

Ans: (A) মৌসুমি বায়ুর দ্বারা

  1. মাদাগাস্কার ও মোজাম্বিক স্রোতের মিলিত শাখা হল  – 

(A) কাম্‌চাট্‌কা

(B) কুরোশিয়ো 

(C) পেরু স্রোত

(D) আগুলহাস

Ans: (D) আগুলহাস

  1. উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের একটি শীতল স্রোেত হল –

(A) ক্যানারি স্রোত

(B) কুরোশিয়ো স্রোত

(C) বেঙ্গুয়েলা স্রোত

(D) কামচটকা স্রোত 

Ans: (A) ক্যানারি স্রোত

  1. শীতল স্রোতের স্বাভাবিক উৎসস্থল হল –

(A) উষ্ণমণ্ডল

(B) নিরক্ষীয় অঞ্চল 

(C) মেরুপ্রদেশীয় অঞ্চল

(D) নাতিশীতোয় অঞ্চল

Ans: (C) মেরুপ্রদেশীয় অঞ্চল

  1. বেঙ্গুয়েলা স্রোত কোন্ মহাসাগরে বয়ে যায়— 

(A) ভারত মহাসাগর

(B) প্রশান্ত মহাসাগর

(C) আটলান্টিক মহাসাগর

(D) কুমেরু মহাসাগর

Ans: (C) আটলান্টিক মহাসাগর

  1. কোন্ মহাসাগরে ঋতুপরিবর্তনের সাথে সাথে সমুদ্রস্রোতের ১৮০ ° দিক পরিবর্তন ঘটে— 

(A) ভারত

(B) প্রশান্ত

(C) আটলান্টিক

(D) কুমেরু

Ans: (A) ভারত

  1. বৃহত্তম মগ্নচড়া কোথায় অবস্থিত –

(A) প্রশান্ত মহাসাগর

(B) দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর

(C) দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগর 

(D) উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর

Ans: (D) উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর

  1. কোন্ সমুদ্রস্রোতটি তিনটি মহাসাগরে বয়ে যায় –

(A) নিরক্ষীয় স্রোত

(B) উপসাগরীয় স্রোত

(C) হামবোল্ড স্রোত

(D) মৌসুমি স্রোত

Ans: (A) নিরক্ষীয় স্রোত

  1. সমুদ্রস্রোতের দিক বিক্ষেপের কারণ –

(A) বায়ুপ্রবাহ

(B) কোরিওলিস বল

(C) সমুদ্রজলের লবণতা

(D) পৃথিবীর পরিক্রমণ

Ans: (B) কোরিওলিস বল

  1. মহাসমুদ্রের কোন্ স্থানটি মৎস্য আহরণে বিখ্যাত—

(A) উষ্ণস্রোত অঞ্চল

(B) শীতল স্রোত অঞ্চল

(C) উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলন অঞ্চল

(D) নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত অঞ্চল

Ans: (C) উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলন অঞ্চল

SOURCE-BHUGOLSHIKSHA.COM

মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর

MCQ | বারিমন্ডল (তৃতীয় অধ্যায়)

অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর 

  1. উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের একটি উষ্ণ স্রোতের নাম উল্লেখ করো ।

Ans: আলাস্কা স্রোত ।

  1. উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের একটি শীতল স্রোতের নাম উল্লেখ করো । 

Ans:  বেরিং স্রোত ।

  1. উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের একটি শীতল স্রোতের নাম উল্লেখ করো ।

Ans: ল্যাব্রাডর স্রোত । 

  1. উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের একটি উষ্ণ স্রোতের নাম উল্লেখ করো । 

Ans: উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত ।

  1. দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের একটি উষ্ণ স্রোতের নাম উল্লেখ করো ।

Ans: পূর্ব অস্ট্রেলীয় বা নিউ সাউথ ওয়েলস্ স্রোত ।

  1. দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের একটি উষ্ণ স্রোতের নাম । করো ।

Ans: ব্রাজিল স্রোত । 

  1. দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের একটি শীতল স্রোতের নাম বলো ।

Ans: বেঙ্গুয়েলা স্রোত ।

  1. দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের একটি শীতল স্রোতের নাম উল্লেখ করো ।

Ans: পেরু বা হামবোল্ড স্রোত ।

  1. মোট সমুদ্রস্রোতের প্রায় কত শতাংশ বহিঃস্রোত ?

Ans: মোট সমুদ্রস্রোতের 10%

  1. পৃথিবীর বৃহত্তম মগ্নচড়া কোন্ মহাসাগরে অবস্থিত ?

Ans: পৃথিবীর বৃহত্তম মগ্নচড়া গ্র্যান্ড ব্যাংক [ ক্ষেত্রফল ৯৬,০০০ বর্গকিমি , গভীরতা ৯০ মিটার ] আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত ।

  1. মগ্নচড়ায় কোন্ মৎস্যখাদ্য সর্বাধিক পরিমাণে পাওয়া যায় ?

Ans: প্ল্যাংকটন । 

  1. কোন্ এককের সাহায্যে সমুদ্রস্রোতের মাধ্যমে জলপ্রবাহের পরিমাণ মাপা হয় ?

Ans: সেভেয়ার ড্রপ বা ভাদ্রুপ ।

  1. ঋতুপরিবর্তনে কোন্ মহাসাগরের সমুদ্রস্রোতের দিক পরিবর্তন ঘটে ?

Ans: ভারত মহাসাগর ।

  1. সমুদ্রজলে উষ্ণতার তারতম্যের প্রধান কারণ কী ? 

Ans: সূর্যরশ্মির পতনকোণের তারতম্য ।

  1. হিমপ্রাচীর কোন্ মহাসাগরে দেখা যায় ?

Ans: আটলান্টিক মহাসাগরে ।

  1. সমুদ্রজলের একই স্থানে ওঠানামা করাকে কী বলে ?

Ans: সমুদ্রতরঙ্গ ।

  1. নিউফাউন্ডল্যান্ডের কাছে ঘন কুয়াশা ও ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির কারণ কী ?

Ans: উপসাগরীয় স্রোত ও ল্যাব্রাডর স্রোতের মিলন । 

  1. সমুদ্রস্রোত উৎপত্তির মূল কারণ কোনটি ?

Ans: বায়ুপ্রবাহ ।

  1. কোন্ দুটি স্রোতের মিলনে জাপান উপকূলে কুয়াশা হয় ?

Ans: উষ্ণ কুরোশিয়ো ও শীতল ওয়াশিয়ো । 

 

Ans: (C) উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলন অঞ্চল

SOURCE-BHUGOLSHIKSHA.COM

মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর

MCQ | বারিমন্ডল (তৃতীয় অধ্যায়)

সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর    

  1. বারিমণ্ডল ( Hydrosphere ) কাকে বলে বা বারিমণ্ডল বলতে কী বোঝ ?

Ans: ভূপৃষ্ঠ এবং ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি অবস্থিত জলের সমস্ত উৎস ও ভাণ্ডারকে একত্রে বারিমণ্ডল বা Hydrosphere বলে ( ‘ বারি ‘ শব্দের অর্থ হল ‘ জল ‘ ) । বারিমণ্ডলের মোট জলের প্রায় ৯৭ % রয়েছে সাগর ও মহাসাগরে । অবশিষ্ট ৩ ভাগ জলের প্রায় ৭৫ % সজ্জিত রয়েছে বরফ রূপে । বাকি ২৫ % নদী , হ্রদ , পুকুর , খাল , বিল ও অন্যান্য জলাভূমিতে অবস্থান করছে । 

  1. সমুদ্রস্রোত ( Ocean currents ) কী ?

Ans: বায়ুপ্রবাহ , পৃথিবীর আবর্তন , সমুদ্রজলের উষ্ণতা , ঘনত্ব , লবণতা ইত্যাদির তারতম্যে সমুদ্রের বিশাল অঞ্চলজুড়ে নিয়মিতভাবে ও নির্দিষ্ট পথে সমুদ্রজলের একমুখী প্রবাহ হল সমুদ্রস্রোত । 

  1. সমুদ্রতরঙ্গ কী ?

Ans: সমুদ্রের ওপর বায়ুপ্রবাহে জলের ওপর যে পীড়নের সৃষ্টি হয় তার প্রভাবে জল অগভীর উপকূলের তটভূমিতে ঢেউ আকারে আছড়ে পড়ে । একেই বলে সমুদ্রতরঙ্গ ।

  1. কোরিওলিস বল কী ?

Ans: পৃথিবীর আবর্তনের প্রভাবে প্রবাহিত বায়ু , সমুদ্রস্রোতের ওপর যে বল কাজ করে তা হল কোরিওলিস বল । কোরিওলিস বল বায়ু ও সমুদ্রস্রোতের দিকের সাথে সমকোণে কাজ করে বলে বায়ু ও সমুদ্রস্রোত উত্তর গোলার্ধে ডান এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে যায় ।

  1. ফেরেল সূত্র কী ?

Ans: পৃথিবীর আবর্তনে সৃষ্ট কোরিওলিস বলের প্রভাবে বায়ুর মতো সমুদ্রস্রোতও উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে বেঁকে প্রবাহিত হয় । এটি হল ফেরেল সূত্র । 

  1. গায়র বা কুণ্ডলী কাকে বলে ?

Ans: সকল মহাসাগরের মাঝবরাবর কোরিওলিস বলের প্রভাবে সমুদ্রস্রোত বেঁকে গিয়ে ও মিলিত হয়ে জলাবর্ত বা চক্র সৃষ্টি করে । একেই গায়র বা কুণ্ডলী বলে ।

  1. শৈবাল সাগর ( Saragasso Sea ) কাকে বলে ?

Ans: উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে উষ্ণ উপসাগরীয় , শীতল ক্যানারি ও উষ্ণ উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের মিলনে যে জলাবর্ত সৃষ্টি হয় তার মধ্যবর্তী স্রোতহীন শৈবাল আগাছাপূর্ণ স্থানকে বলে । শৈবাল সাগর ।

  1. উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলন অঞ্চলে কী কী আবহগত ঘটনা ঘটে ?

Ans: উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলন অঞ্চলে ঘন কুয়াশা সৃষ্টি হয় এবং মাঝে মাঝে ঝড়বৃষ্টিসহ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া সৃষ্টি করে ।

  1. মগ্নচড়া বা ব্যাংক কী ?

Ans: জলের সংস্পর্শে গলে যাওয়ায় নুড়ি , বালি , পলি সমুদ্রতলদেশে অধঃক্ষিপ্ত হয়ে যে গভীর অঞ্চল সৃষ্টি করে তাকে মাচড়া বলে । যেমন – উত্তর – পশ্চিম আটলান্টিকের গ্র্যান্ড ব্যাংক ।

  1. পৃথিবী বিখ্যাত কয়েকটি মগ্নচড়ার গুরুত্ব লেখো ।

Ans: পৃথিবী বিখ্যাত কয়েকটি মগ্নচড়া হল গ্র্যান্ড ব্যাংক ডগার্স ব্যাংক , রকফল ব্যাংক যেগুলি হল পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাণিজ্যিক মৎস্য আহরণ অঞ্চল ।

  1. প্ল্যাংকটন ( Plankton ) কী ?

Ans: সমুদ্রজলে ভাসমান অতিক্ষুদ্র আণুবীক্ষণিক জীবনে বলে প্ল্যাংকটন । প্ল্যাংকটন ২ প্রকারের হয়— ( 6 ) উদ্ভিদ প্ল্যাংকটন বা Phyto – plankton এবং ( ii ) প্রাণী প্ল্যাংকটন বা Zoo – plankion ) | সামুদ্রিক মাছেদের প্রধান খাদ্য হল এই প্ল্যাংকটন ।

  1. প্রশান্ত মহাসাগরের দুটি উষ্ণ ও দুটি শীতল স্রোতের নাম লেখো ।

Ans: প্রশান্ত মহাসাগরের দুটি উষু স্রোত হল— ( 1 ) কুরোশিরো বা জাপান স্রোত এবং ( ii ) উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোত । প্রশান্ত মহাসাগরের দুটি শীতল স্রোত হল – ( i ) ক্যালিফোর্নিয়া স্রোত ও ( ii ) পেরু স্রোত বা হামবোল্ড স্রোত ।

  1. ভারত মহাসাগরের দুটি উষ্ণ ও দুটি শীতল স্রোতের নাম লেখো ।

Ans: ভারত মহাসাগরের দুটি উষু স্রোত হল – ( i ) মোজাম্বিক স্রোত ও ( ii ) মাদাগাস্কার স্রোত । ভারত মহাসাগরের দুটি শীতল স্রোত হল- ( i ) কুমেরু স্রোত ও ( ii ) পশ্চিম অস্ট্রেলীয় স্রোত ।

  1. আটলান্টিক মহাসাগরের দুটি উষ্ণ ও দুটি শীতল স্রোতের নাম লেখো ।

Ans: আটলান্টিক মহাসাগরের দুটি উর স্রোত হল ( i ) ক্যানারি স্রোত ও ( ii ) ব্রাজিল স্রোত । আটলান্টিক মহাসাগরের দুটি শীতল স্রোত হল – ( i ) ল্যাব্রাডর স্রোত ও ( ii ) বেঙ্গুয়েলা স্রোত । 

জেনে রাখো ● জিওস্ট্রপিক স্রোত ( Geostrophic current ) উঘ্ন শীতল স্রোতের চক্রাকার জলাবর্ত অঞ্চলে জলতলের উচ্চতা পার্শ্ববর্তী অঞ্চল অপেক্ষা বেশি হয় , ফলে জলসমতা ফেরাতে হলে মৃত স্রোত পাশের অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয় , একেই বলে জিওস্টুপিক স্রোত ।

  1. উপসাগরীয় স্রোত কাকে বলে ?

Ans: পশ্চিমমুখী উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতটি মেক্সিকো উপসাগরের মধ্য দিয়ে উত্তর আমেরিকা মহাদেশের পূর্ব উপকূল দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে উত্তর – পশ্চিম ইউরোপের দিকে প্রবাহিত হয় । এই স্রোতের দক্ষিণ – পশ্চিম অংশকে উপসাগরীয় স্রোত বলে । 

  1. নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত কী ?

Ans: উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মধ্যভাগ দিয়ে একটি ক্ষীণ স্রোত পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত হয় । এই স্রোতকে নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত বলা হয় । 

  1. ভারত মহাসাগরে সমুদ্রস্রোত ঋতুপরিবর্তনে বিপরীতমুখী কেন ? 

Ans: ভারত মহাসাগরের সমুদ্রস্রোতের ওপর মৌসুমি বায়ুর ও প্রভাব সর্বাধিক । ঋতুপরিবর্তনের সাথে সাথে মৌসুমি বায়ুর দিক ও গতি পরিবর্তন হয় বলে সমুদ্রস্রোতেরও দিক ও গতির পরিবর্তন ঘটে । গ্রীষ্ম ও শীত ঋতুতে এখানে পরস্পর বিপরীতমুখী স্রোত প্রবাহিত হয় ।

  1. হিমপ্রাচীর ( Cold wall ) কাকে বলে ?

Ans: দুটি ভিন্ন ঘনত্বের ভিন্ন ভৌতগুণবিশিষ্ট শীতল ও উষ্ণ স্রোত বিপরীত দিক থেকে চালিত হলে তাদের মধ্যবর্তী যে বিভাজনতল সৃষ্টি হয় , তাকে বলে হিমপ্রাচীর ।

  1. হিমশৈল ( Ice berg ) বলতে কী বোঝ ?

Ans: বিশালাকৃতি বরফের স্তূপ যখন সমুদ্রের জলে ভাসতে থাকে তখন তাকে হিমশৈল বলে ।

  1. হিমশৈলের বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব লেখো ।

Ans: হিমশৈলের বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব হল – ( i ) মিষ্টি জল দিয়ে তৈরি বিশালাকার বরফ স্তূপ । ( ii ) মাত্র ১/৯ ভাগ জলের উপরে থাকে । ( iii ) উচ্চ অক্ষাংশের সমুদ্রে ( গ্রিনল্যান্ড , অ্যান্টার্কটিকা ) এটিকে দেখা যায় । ( iv ) জাহাজ চলাচলে ভীষণ বিপদ ঘটায় ।

 

SOURCE-BHUGOLSHIKSHA.COM

মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর

  বারিমন্ডল (তৃতীয় অধ্যায়)

ব্যাখ্যামূলক উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর 

  1. উষ্ণ স্রোত ও শীতল স্রোত বলতে কী বোঝ ?

Ans: ( 1 ) উষ্ণ স্রোত ( Warm Current ) সমুদ্রস্রোত যখন উষ্ণুমণ্ডল থেকে প্রবাহিত হয় তখন সেই স্রোতকে উষ্ণ স্রোত বলে । সাধারণত এই ধরনের স্রোত সমুদ্রজলের অপেক্ষাকৃত ওপরের অংশ দিয়ে বহিঃস্রোতরূপে প্রবাহিত হয় । যেমন — উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত , উষ্ণ নিরক্ষীয় স্রোত ইত্যাদি । ( ii ) শীতল ( Cold Current ) সমুদ্রস্রোত যখন শীতল মেরুপ্রদেশ থেকে প্রবাহিত হয় তখন সেই স্রোতকে শীতল স্রোত বলে । এ ছাড়া উষ্ণুমণ্ডল থেকে প্রবাহিত উর স্রোত যখন মেরুদ্বয়ের দিকে প্রবাহিত হয়ে আবার ঘুরে আসে তখন সেই সমুদ্রস্রোতকে শীতল স্রোতের আকারেই দেখতে পাওয়া যায় । শীতল সমুদ্রস্রোত সমুদ্রজলের অপেক্ষাকৃত নীচের অংশ দিয়ে অন্তঃস্রোত হিসেবে প্রবাহিত হয় । যেমন — শীতল বেরিং স্রোত , ল্যাব্রাডর স্রোত ইত্যাদি ।

  1. ‘ বায়ুপ্রবাহ সমুদ্রস্রোতের মূল কারণ , অথচ বায়ুর গতিবেগের তুলনায় সমুদ্রস্রোতের গতিবেগ অনেক কম ।’— কারণ ব্যাখ্যা করো ।

Ans: বায়ুপ্রবাহ সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির মূল কারণ । সমুদ্রের উপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ু জলকণার সঙ্গে সংঘর্ষে জলকে তাড়িয়ে নিয়ে সমুদ্রস্রোতের উৎপত্তি ঘটায় । তবে সমুদ্রের উপর দিয়ে যে বায়ু বয়ে যায় তার মাত্র ২ % -৪ % শক্তি সমুদ্রস্রোতের উৎপত্তিতে সাহায্য করে । তাই দেখা যায় যেখানে বায়ুর গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিমি সেখানে সমুদ্রস্রোতের বেগ ১-২ কিমি / ঘণ্টা । সমুদ্রের উপর প্রবাহিত নিয়ত বায়ু সমুদ্রস্রোত উৎপত্তিতে সর্বাধিক সাহায্য করে । প্রধান তিনটি মহাসাগরেই আয়ন বায়ু , পশ্চিমা বায়ু ও মেরু বায়ু সমুদ্রস্রোতের উৎপত্তি ঘটায় । ভারতমহাসাগরে সমুদ্রস্রোতের ওপর ত মৌসুমি বায়ুর প্রভাব সর্বাধিক ।

  1. পৃষ্ঠস্রোত ও গভীর সমুদ্রস্রোত বলতে কী বোঝ ?

Ans: পৃষ্ঠস্রোত সমুদ্রতলের উপর দিয়ে প্রবাহিত স্রোত হল পৃষ্ঠস্রোত । বায়ুপ্রবাহের মাধ্যমে এই স্রোতের উৎপত্তি ঘটে । গভীর সমুদ্রস্রোত গভীর স্তর ( ২০০-১০০০ মিটার ) দিয়ে প্রবাহিত স্রোত হল গভীর সমুদ্রস্রোত । সমুদ্রজলের ঘনত্বের তারতম্য এই স্রোত সৃষ্টির মূল কারণ । প্রশ্ন ৪ উদাহরণসহ সমুদ্রস্রোতের ওপর কোরিওলিস বলের প্রভাব ব্যাখ্যা করো । উত্তর : পৃথিবী তার নিজের অক্ষের ওপর পশ্চিম থেকে পূর্বে আবর্তন করার ফলে যে কোরিওলিস বলের ( Coriolis Force ) উৎপত্তি হয় এবং তার প্রভাবে সমুদ্রস্রোত সোজাপথে প্রবাহিত হতে পারে না । উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে প্রবাহিত হয় — এটি ফেরেল সূত্র নামে পরিচিত ।

  1. শৈবাল সাগরের উৎপত্তি কেন ঘটেছে ?

Ans: আটলান্টিক মহাসাগরের দক্ষিণ – পশ্চিম , ( i ) উপসাগরীয় স্রোত , ( ii ) উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত এবং ( iii ) ক্যানারি স্রোত পর্যায়ক্রমে CRATE MASS আবর্তিত হয়ে কয়েক হাজার বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত একটি বিশাল আয়তাকার অঞ্চলজুড়ে একটি ঘূর্ণস্রোত বা জলাবর্তের সৃষ্টি হয় । এই বিশাল জলাবর্তের মাঝখানে কোনোরকম জলপ্রবাহ থাকে না বলে স্রোতবিহীন এই অঞ্চলে নানারকম শৈবাল , আগাছা ও জলজ উদ্ভিদ জন্মায় । এইভাবেই শৈবাল সাগরের উৎপত্তি হয় ।

  1. উপকূলের আকৃতি সমুদ্রস্রোতকে কীরুপে প্রভাবিত করে উদাহরণসহ লেখো ।

Ans: উপকূলের আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য সমুদ্রস্রোতের দিক পরিবর্তন ঘটায় , সমুদ্রস্রোতকে বিভিন্ন শাখায় ভাগ করে । আটলান্টিকে বেঙ্গুয়েলা স্রোত গিনি উপকূলে বাধা পেয়ে পশ্চিমে বাঁকে । দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত ব্রাজিল অন্তরীপে বাধা পেয়ে দুটি শাখায় ভাগ হয় ।

  1. ঋতু পরিবর্তন ভারত মহাসাগরের সমুদ্রস্রোতকে কীভাবে প্রভাবিত করে ?

Ans: ঋতুপরিবর্তনের সাথে সাথে মৌসুমি বায়ুর দিক ও গতি পরিবর্তন হয় । এর ফলে সমুদ্রস্রোতেরও দিক ও গতি পরিবর্তন । ঘটে । তাই বলা যায় যে , ঋতুপরিবর্তন তথা মৌসুমি বায়ু ভারত মহাসাগরের সমুদ্রস্রোতকে প্রভাবিত করে ।

  1. উচ্চ অক্ষাংশে অবস্থান সত্তেও নরওয়ের হ্যামারফেস্ট বন্দর সারাবছর বরফমুক্ত কেন ?

Ans: নরওয়ে উচ্চ অক্ষাংশে অবস্থিত হওয়ার জন্য এই অঞ্চলটি অত্যন্ত শীতল হয় । তবে উষ্ণ উত্তর আটলান্টিক স্রোতের প্রভাবে জলবায়ু কিছুটা উষ্ণ থাকে । এই কারণেই উচ্চ অক্ষাংশে অবস্থান সত্ত্বেও নরওয়ের হ্যামারফেস্ট বন্দর সারাবছর বরফমুক্ত থাকে ।

  1. প্রশ্ন মগ্নচড়া সৃষ্টির কারণ কী ?

Ans: শীতল স্রোত যেখানে উষ্ণ স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয় , সেখানে শীতল স্রোতের সঙ্গে ভেসে আসা হিমশৈলগুলি উদ্বু স্রোতের সংস্পর্শে গলে যায় এবং হিমশৈল বাহিত নুড়ি , কাঁকর , পলি সমুদ্রে অধঃক্ষিপ্ত হয় । বহুকাল ধরে এই অবক্ষেপণের ফলে অগভীর চড়া সৃষ্টি হয় ।

  1. মরুভূমি সৃষ্টিতে সমুদ্রস্রোতের প্রভাব উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো ।

Ans: ক্রান্তীয় মণ্ডলে মহাদেশের পশ্চিম দিক দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে যায় । এই শীতল স্রোতের প্রভাবে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের জলবায়ু হয়েছে শুষ্ক প্রকৃতির বায়ু জলীয় বাষ্প অধীক সংগ্রহের কারণে সংশ্লিষ্ট মহাদেশের পশ্চিম অঞ্চলগুলিতে বৃষ্টি প্রায় হয় । না বললেই চলে । অনন্তকাল ধরে অনাবৃষ্টির কারণে অঞ্চলগুলি মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে । সাহারা মরুভূমির পাশ দিয়ে প্রবাহিত শীতল ক্যানারি স্রোত এই বিশাল জলাবর্তের মাঝখানে কোনোরকম জলপ্রবাহ থাকে না বলে স্রোতবিহীন এই অঞ্চলে নানারকম শৈবাল , আগাছা ও জলজ উদ্ভিদ জন্মায় । এইভাবেই শৈবাল সাগরের উৎপত্তি হয় ।

  1. উপকূলের আকৃতি সমুদ্রস্রোতকে কীরুপে প্রভাবিত করে উদাহরণসহ লেখো ।

Ans: উপকূলের আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য সমুদ্রস্রোতের দিক পরিবর্তন ঘটায় , সমুদ্রস্রোতকে বিভিন্ন শাখায় ভাগ করে । আটলান্টিকে বেঙ্গুয়েলা স্রোত গিনি উপকূলে বাধা পেয়ে পশ্চিমে বাঁকে । দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত ব্রাজিল অন্তরীপে বাধা পেয়ে দুটি শাখায় ভাগ হয় ।

  1. ঋতুপরিবর্তন ভারত মহাসাগরের সমুদ্রস্রোতকে কীভাবে প্রভাবিত করে ?

Ans: ঋতুপরিবর্তনের সাথে সাথে মৌসুমি বায়ুর দিক ও গতি পরিবর্তন হয় । এর ফলে সমুদ্রস্রোতেরও দিক ও গতি পরিবর্তন ঘটে । তাই বলা যায় যে , ঋতুপরিবর্তন তথা মৌসুমি বায়ু ভারত মহাসাগরের সমুদ্রস্রোতকে প্রভাবিত করে । 

  1. উচ্চ অক্ষাংশে অবস্থান সত্তেও নরওয়ের হ্যামারফেস্ট বন্দর সারাবছর বরফমুক্ত কেন ?

Ans: নরওয়ে উচ্চ অক্ষাংশে অবস্থিত হওয়ার জন্য এই অঞ্চলটি অত্যন্ত শীতল হয় । তবে উষ্ণ উত্তর আটলান্টিক স্রোতের প্রভাবে জলবায়ু কিছুটা উষ্ণ থাকে । এই কারণেই উচ্চ অক্ষাংশে অবস্থান সত্ত্বেও নরওয়ের হ্যামারফেস্ট বন্দর সারাবছর বরফমুক্ত থাকে ।

  1. মগ্নচড়া সৃষ্টির কারণ কী ? 

Ans: শীতল স্রোত যেখানে উষ্ণ স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয় , সেখানে শীতল স্রোতের সঙ্গে ভেসে আসা হিমশৈলগুলি উষ্ণ স্রোতের সংস্পর্শে গলে যায় এবং হিমশৈল বাহিত নুড়ি , কাঁকর , পলি সমুদ্রে অধঃক্ষিপ্ত হয় । বহুকাল ধরে এই অবক্ষেপণের ফলে অগভীর চড়া সৃষ্টি হয় ।

  1. মরুভূমি সৃষ্টিতে সমুদ্রস্রোতের প্রভাব উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো ।

Ans: ক্রান্তীয় মণ্ডলে মহাদেশের পশ্চিম দিক দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে যায় । এই শীতল স্রোতের প্রভাবে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের জলবায়ু হয়েছে শুষ্ক প্রকৃতির বায়ু জলীয় বাষ্প অধীক সংগ্রহের কারণে সংশ্লিষ্ট মহাদেশের পশ্চিম অঞ্চলগুলিতে বৃষ্টি প্রায় হয় । না বললেই চলে । অনন্তকাল ধরে অনাবৃষ্টির কারণে অঞ্চলগুলি মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে । সাহারা মরুভূমির পাশ দিয়ে প্রবাহিত শীতল ক্যানারি স্রোত সোনেরান মরুভূমির পাশ দিয়ে প্রবাহিত ক্যালিফোর্নিয়া স্রোত অস্ট্রেলিয়া মরুভূমির পাশ দিয়ে প্রবাহিত পশ্চিম অস্ট্রেলীয় স্রোত সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে মরুভূমি সৃষ্টিতে সাহায্য করেছে ।

  1. উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলন অঞ্চলে ঘন কুয়াশা ও ঝড় ঝঞ্ঝার সৃষ্টি হয় । কারণ ব্যাখ্যা করো ।

Ans: মহাসাগরে উষ্ণ সমুদ্রস্রোতের উপর দিয়ে উদ্বু – আম বায়ু এবং শীতল স্রোতের উপর দিয়ে শীতল – শুদ্ধ বায়ু প্রবাহিত হয় । শীতল শুষ্ক বায়ুর ঢাল বরাবর উষ্ণ – আদ্র বায়ু ধীরে ধীরে উঠে গেলে উষ্ণ আদ্র বায়ু ঘনীভূত হয়ে কুয়াশার সৃষ্টি হয় । এই ধরনের কুয়াশাকে পরিবাহিত কুয়াশা ( Advection fog ) বলা হয় । যদি ওই অবস্থায় শুষ্ক শীতল বায়ুর উপর উষ্ণ – আর্দ্র বায়ু চক্রাকারে বু উপরে উঠে নাতিশীতোয় ঘূর্ণবাত সৃষ্টি করে তাহলে ঝড় , বৃষ্টি , তুষারঝড় ঘটে । তাই উষ্ণ ও শীতল স্রোত মিলন অঞ্চলে প্রায়শই ঘন কুয়াশ ও ঝড় – বাজার সৃষ্টি হয় । 

  1. নিউফাউন্ডল্যান্ড অঞ্চলে ঘন কুয়াশা সৃষ্টি হয় কেন ? 

Ans: নিউফাউন্ডল্যান্ড অঞ্চলে উত্তর দিক থেকে শীতল ল্যাব্রাডর এবং দক্ষিণ দিক থেকে উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত আসে এবং পাশাপাশি বয়ে যায় । দক্ষিণ দিক থেকে উপসাগরীয় স্রোতের প্রভাবে বায়ুমণ্ডলে প্রবাহিত উষ্ণ – আর্দ্র বায়ুপুঞ্জ উত্তর দিকে থেকে শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের প্রভাবে প্রবাহিত শীতল বায়ুপুঞ্জের উপরে ধীরে ধীরে উঠে ঘনীভূত হয় এবং কুয়াশা সৃষ্টি করে । তাই নিউফাউন্ডল্যান্ড অঞ্চলে ঘন কুয়াশার সৃষ্টি হয় ।

  1. এল নিনো ও লা নিনার ওপর সমুদ্রস্রোতের প্রভাব লেখো ।

Ans: জলবায়ু পরিবর্তনে সমুদ্রস্রোতের প্রভাব স্পষ্ট বোঝা যায় । প্রশান্ত মহাসাগরে এল নিনো ও লা নিনা আবির্ভাবের মধ্য দিয়ে । এল নিনো বছরে পেরু , ইকুয়েডর উপকূলে উত্তরদিক থেকে গরম জলের স্রোত ( লা নিনা স্রোত ) এসে ঢোকে । ফলে পেরু , ইকুয়েডরে প্রবল বৃষ্টি , পশ্চিমে অস্ট্রেলিয়ায় অনাবৃষ্টি দেখা দেয় । লা নিনা বছরে অস্ট্রেলিয়ায় প্রবল বৃষ্টিতে বন্যা এবং পেরু , ইকুয়েডরে অনাবৃষ্টিতে খরা দেখা দেয় । প্রশান্ত মহাসাগরে গড়ে ২-৭ বছর অন্তর জলবায়ুর এই পরিবর্তনে সমুদ্রস্রোত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় ।

  1. গ্রিনল্যান্ড ও নরওয়ে একই অক্ষাংশে অবস্থিত হওয়া সত্ত্বেও নরওয়ে অপেক্ষা গ্রিনল্যান্ড উপকূল শীতল কেন ?

Ans: গ্রিনল্যান্ড ও নরওয়ে একই অক্ষাংশে অবস্থিত । গ্রিনল্যান্ডের দুই উপকূল দিয়ে সারাবছরই উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে উত্তর মেরু থেকে আগত শীতল ল্যাব্রাডর স্রোত প্রবাহিত হয় । অপরদিকে নরওয়ের দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত বাহিত হয় । শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের প্রভাবে গ্রিনল্যান্ড উপকূল সারাবছর শীতল থাকে এবং উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোতের প্রভাবে নরওয়ে উপকূল সারাবছর তুলনামূলক উষ্ণ থাকে ।

  1. মগ্নচড়ার গুরুত্ব কী ? অথবা , মগ্নচড়া অঞ্চল মৎস্য আহরণে উষ্ণত কেন ?

Ans: বাণিজ্যিক দিক থেকে মগ্নচড়াগুলির গুরুত্ব অপরিসীম যেমন— ( 1 ) অগভীর মগ্নচড়াতে সূর্যালোক তলদেশ পর্যন্ত পৌঁছোতে পারে বলে প্ল্যাংকটন জন্মায় । ( ii ) হিমশৈলে অবস্থিত কিছু সূক্ষ্ম খনিজ প্ল্যাংকটনের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে বলে , মগ্নচড়াগুলি মাছেদের প্রধান খাদ্য প্ল্যাংকটনে সমৃদ্ধ । ( iii ) নাতিশীতোয় জলবায়ু অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় মৎস্য আহরণ ও সংরক্ষণের সুবিধা হয় ।

  1. গ্র্যান্ড ব্যাংক অঞ্চলে প্রচুর মাছ ধরা পড়ে কেন ?

Ans: গ্র্যান্ড ব্যাংক অঞ্চল উত্তর দিক থেকে আগত শীতল এবং দক্ষিণ দিক থেকে আগত উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোতের মিলন অঞ্চল । উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলন অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে মাছের প্রয়োজনীয় খাদ্য প্ল্যাংকটন জন্মায় । তা ছাড়া ল্যাব্রাডর স্রোতের সাথে আগত হিমশৈল গলে গিয়ে এবং সমুদ্রজলের ঊর্ধ্বমুখী আবর্তে মাছের প্রয়োজনীয় খাদ্যেরও জোগান বাড়ে । তাই এই অঞ্চলে প্রচুর মাঝের সমাবেশ ঘটে । এই অঞ্চল পৃথিবীর অন্যতম বিখ্যাত বাণিজ্যিক মৎস্য আহরণ ক্ষেত্র ।

  1. উদাহরণসহ জলবায়ুর ওপর উষ্ণ স্রোতের প্রভাব লেখো ।

Ans: কোনো অঞ্চলের উপকূলের জলবায়ুর ওপর উষ্ণ স্রোত ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করে । যেমন ( i ) উচ্চ অক্ষাংশীয় অঞ্চলে উষ্ণ সমুদ্রস্রোত প্রবাহিত হওয়ার ফলে শীতল অঞ্চলের উষ্ণতা বেড়ে যায় । উদাহরণ – নরওয়ে উপকূল অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত উষ্ণ উত্তর আটলান্টিক স্রোতের প্রভাবে নরওয়ের উষ্ণতা বেড়ে যায় । ( ii ) উষ্ণ সমুদ্রস্রোতের ফলে উষ্ণমণ্ডল ও হিমমণ্ডলের সমুদ্র জলরাশির মধ্যে উষ্ণতার সমতা বজায় থাকে । ( iii ) উষু স্রোতের সাথে বয়ে আসা জলীয় বাষ্পপূর্ণ আর্দ্র বায়ুর প্রভাবে জলভাগে বৃষ্টিপাত হয় । 

উদাহরণ — ইংল্যান্ডের পশ্চিম উপকূলে বৃষ্টিপাত হয় । ( iv ) কোনো কোনো স্থানে উয় স্রোত ও শীতল স্রোতের মিলনে কুয়াশা ও ঝড় – এর সৃষ্টি হয় । উদাহরণ – জাপান উপকূলে হয় । উদাহরণসহ জলবায়ুর ওপর শীতল স্রোতের প্রভাব লেখো । উত্তর : জলবায়ুর ওপর শীতল স্রোতের প্রভাবগুলি হল ( i ) শীতল স্রোত – এর ফলে উষ্ণুমণ্ডলে বায়ুর উষ্ণতা হ্রাস পায় । উদাহরণ — কানাডার পূর্ব উপকূলের ওপর দিয়ে ল্যাব্রাডর স্রোত প্রবাহিত হওয়ার ফলে ওই অঞ্চলের উষ্ণতা হ্রাস পায় । ( ii ) উষ্ম নিরক্ষীয় ও শীতল মেরু বা মেরুপ্রদেশীয় অঞ্চলে উষ্ণ ও শীতল বায়ু মিলিত হলে উষ্ণতার সমতা রক্ষা করে । ( iii ) শীতল স্রোতের ওপর দিয়ে শুষ্ক বায়ু প্রবাহিত হলে উপকূল অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের বদলে তুষারপাত হয় । ( iv ) উয় স্রোত ও শীতল স্রোেত মিলিত হয়ে উপকূল অঞ্চলে প্রবল ঝড় – ঝঞ্ঝা ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সৃষ্টি হয় । উদাহরণ নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূলে এই রকম দুর্যোগের সৃষ্টি হয় ।

  1. জলবায়ুর ওপর পেরুস্রোত ও বেঙ্গুয়েলা স্রোতের প্রভাব লেখো ।

Ans: জলবায়ুর ওপর পেরুস্রোতের প্রভাব শীতল কুমেরু স্রোেত দক্ষিণ আমেরিকার হর্ণ অন্তরীপে বাধা পেয়ে দুটি শাখায় ভাগ হয় । এরই একটি শাখা চিলি ও পেরুর ওপর দিয়ে প্রথমে পেরু স্রোত নামে প্রবাহিত হয় । এই স্রোতের প্রভাবে চিলি ও পেরু উপকূলের জলবায়ু নাতিশীতোয় থাকে । জলবায়ুর ওপর শীতল বেঙ্গুয়েলা স্রোতের প্রভাব : শীতল কুমেরু স্রোতের দ্বিতীয় শাখা আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল দিয়ে বেঙ্গুয়েলা স্রোত নামে উত্তরে বাহিত হয়ে দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের সাথে মিলিত হয় । এই স্রোতের প্রভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলে জলবায়ু নাতিশীতোয় থাকে । 

জেনে রাখো ● সমুদ্রের জলের গভীরে যে স্তরের নীচে সমুদ্রের লবণতা ও ঘনত্ব বৃদ্ধি পায় , তাকে বলে পিকনোক্লাইনস্তর । ১৫১৩ খ্রিস্টাব্দে স্পেনীয় জুয়ান পনসে ডি লিওন Juan Ponce | de Leon প্রথম উপসাগরীয় স্রোত আবিষ্কার করেন । গভীর সমুদ্রে বেশি ঘনত্বের স্থান থেকে কম ঘনত্বের স্থানে সমুদ্রস্রোতের প্রবাহকে বলে ডাউনওলেলিং স্রোত । o উষ্ণতা , লবণতা অনুসারে সমুদ্রজলের ঘনত্ব বাড়ে – কমে । ঘনত্বের তারতম্যে যে স্রোত সৃষ্টি হয় , তাকে বলে থার্মোহ্যালাইন স্রোত ।

  1. কী কী কারণে সমুদ্রস্রোতের দিক পরিবর্তন ঘটে ?

Ans: সমুদ্রস্রোতের দিক পরিবর্তনের কারণগুলি হল : ( i ) উপকূলের আকৃতি : উপকূলের আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য সমুদ্রস্রোতের দিক পরিবর্তন ঘটায় , সমুদ্রস্রোতকে বিভিন্ন শাখায় ভাগ করে । আটলান্টিকে বেঙ্গুয়েলা স্রোত গিনি উপকূলে বাধা পেয়ে পশ্চিমে বাঁকে , দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত ব্রাজিল অন্তরীপে বাধা পেয়ে দুটি শাখায় ভাগ হয় । ( ii ) ঋতুপরিবর্তন : ঋতুপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রস্রোতের দিক ও গতি উভয়েরই পরিবর্তন ঘটে । ভারতমহাসাগরে গ্রীষ্মকালে মৌসুমি বায়ুর আগমনের সময় সমুদ্রস্রোত দক্ষিণ থেকে উত্তরে প্রবাহিত হয় । শীতকালে মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাগমনে সমুদ্রস্রোত উত্তর থেকে দক্ষিণে বয়ে যায় । এখানে ঋতুপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রস্রোতের ১৮০ ° পরিবর্তন ঘটে ।

  1. আটলান্টিক মহাসাগর সংলগ্ন মহাদেশগুলির জলবায়ুর ওপর সমুদ্রস্রোতের প্রভাব লেখো ।

Ans: আটলান্টিক মহাসাগরের বিভিন্ন প্রকার সমুদ্রস্রোত জলবায়ুকে বিভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রণ করে । ( i ) নিউফাউন্ডল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের নিকট উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত ও শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের মিলনে সৃষ্ট ঘূর্ণবাতের প্রভাবে প্রায়শই ঘন কুয়াশা ও ঝড় ঝঞ্ঝার সৃষ্টি হয় । ( ii ) উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোতের প্রভাবে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ ও নরওয়ে । উপকূল সারাবছর বরফমুক্ত থাকে । ফলে এই অঞ্চলের বন্দরগুলি শীতকালেও সক্রিয় । ( iii ) শীতল বেঙ্গুয়েলা স্রোতের প্রভাবে দক্ষিণ আফ্রিকা ও নামিবিয়া উপকূলের জলবায়ু সারাবছর নাতিশীতোয় হয়েছে । ( iv ) শীতল ক্যানারি স্রোতের প্রভাবে পোের্তুগাল ও মরক্কো উপকূলের উষ্ণতা সারাবছর কম থাকে । 

জেনে রাখো ● পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা দ্রুতগামী সমুদ্রস্রোত হল । উপসাগরীয় স্রোত । ● পৃথিবীর বৃহত্তম স্রোতের নাম হল আন্টার্কটিক উপমেরু স্রোত ।

  1. ওয়াশিয়ো ও কুরোশিয়ো স্রোত কী ?

Ans: ওয়াশিও স্রোত : শীতল সুমেরু সাগর থেকে একটি শীতল স্রোত বেরিং প্রণালী দিয়ে বেরিং সাগরে প্রবেশ করে । এই বেরিং স্রোত যখন আরও দক্ষিণে জাপান উপকূল দিয়ে প্রবাহিত হয় । তখন তাকে ওয়াশিয়ো স্রোত বলে । এটি উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের একটি শীতল স্রোত । • কুরোশিয়ো স্রোত : উত্তর ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মিলিত প্রবাহ তাইওয়ান ও জাপান উপকূল দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় । এর নাম হয় কুরোশিয়ো স্রোত বা জাপান স্রোত । এটি উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরে প্রবাহিত এক উয় সমুদ্রস্রোত । এই কুরোশিয়ো ও ওয়াশিয়ো স্রোতের মিলনেই জাপান উপকূলে ঘনকুয়াশা ও ঝড় – ঝঞ্ঝার সৃষ্টি হয় ।

  1. সমুদ্রে পরিচলন স্রোত কাকে বলে ?

Ans: নিরক্ষীয় অঞ্চলে সারাবছর সূর্যের লম্বকিরণের কারণে জল বেশি উষ্ণ হয় । বাষ্পীভবনে জল হালকা হয়ে বাষ্পীভূত হয় । ফলে উষু বায়ুপ্রবাহের মতো সমুদ্রের পৃষ্ঠদেশে উষ্ণ স্রোত প্রবাহিত হয় । আবার মেরু অঞ্চলের ঠান্ডা জল ভারী বলে নীচের দিকে নেমে নিরক্ষীয় অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয় । এইভাবে জলের ঊর্ধ্ব ও নিম্নমুখী প্রবাহ সৃষ্টি হয় , একে বলে পরিচলন স্রোত ।

  1. নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত কী ?

Ans: পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রতিনিয়ত আবর্তন করে । | এর ফলে পৃথিবীর মাঝবরাবর পশ্চিম থেকে পূর্বাভিমুখী একটি স্রোত । সৃষ্টি হয় । সাধারণত নিয়তবায়ুর গতি অনুসরণ করে নিরক্ষরেখার উত্তর নিরক্ষীয় ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত সৃষ্টি হয় । এদের গতিপদ পূর্ব থেকে পশ্চিমে । এই দুই স্রোতের বিপরীত গতিপথ অনুসর করায় নাম হয়েছে নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত । জুলাই মাসে এর প্রভাব বেশি হয় , ডিসেম্বর মাসে প্রভাব কমে যায় ।

  1. সমুদ্রস্রোতের নামকরণ কীভাবে করা হয় ?

Ans: সমুদ্রস্রোত স্থলভাগের যে অংশের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয় সাধারণত তার নাম অনুসারে স্রোতের নামকরণ হয় , যেমন : ব্রাজিল স্রোত , সোমালি স্রোত । নিরক্ষরেখার উত্তর – দক্ষিণে প্রবাহিত স্রোত নিরক্ষীয় স্রোত নামে পরিচিত । ভারতমহাসাগরে গ্রীষ্মে ও শীতে প্রবাহিত বিপরীত মৌসুমি বায়ুর গতি অনুসরণ করে স্রোতের নামকরণ করা হয় । উৎসস্থল অনুসারেও সমুদ্রস্রোতের নামকরণ হয় , যেমন— কুমেরু স্রোত , সুমেরু স্রোত ।

  1. বায়ুপ্রবাহ সমুদ্রস্রোতকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করে ?

Ans: বায়ুপ্রবাহ সমুদ্রস্রোতের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রক । বায়ুপ্রবাহের প্রভাবেই সমুদ্রের উপরের অংশের জল একস্থান থেকে অন্যস্থানে বাহিত হয় । এইভাবেই সমুদ্রস্রোত সৃষ্টি হয় । তাই বলা যায় , বিভিন্ন প্রকার নিয়ত বায়ু ( আয়ন বায়ু , পশ্চিমা বায়ু , মেরু বায়ু ) প্রভাবে সকল মহাসমুদ্রে সমুদ্রস্রোতের উৎপত্তি ঘটে ।

  1. সমুদ্রস্রোতের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো ।

Ans: সমুদ্রস্রোতের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলি হল ( i ) সমুদ্রস্রোত একটি নির্দিষ্ট দিকে সারাবছরব্যাপী প্রবাহিত হয় । ( iii ) সমুদ্রস্রোত ফেরেলের সূত্র অনুসারে উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে ও দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে বেঁকে প্রবাহিত হয় । ( iii ) সমুদ্রস্রোতের গতিবেগ সমুদ্রের গভীরতার ওপর নির্ভরশীল । ( iv ) সমুদ্রস্রোতের গতিবেগ ঘণ্টায় ৫—১০ কিমি । ( v ) গভীর সমুদ্রে সমুদ্রস্রোতের বেগ হয় ঘণ্টায় ৩-৫ কিমি এবং অগভীর সমুদ্রে এর বেগ হয় ঘণ্টায় । ৭–৯ কিমি । ( vi ) সমুদ্রস্রোত যে দিকে বয়ে যায় , সেই দিকের প্রবাহপথ অনুযায়ী নাম রাখা হয় । ( vii ) উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলনস্থলে ঘন কুয়াশা ও ঝড় – ঝঞ্ঝার সৃষ্টি হয় ।

 

SOURCE-BHUGOLSHIKSHA.COM

মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর

  বারিমন্ডল (তৃতীয় অধ্যায়)

রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর   

1. সমুদ্রস্রোত উৎপত্তির কারণ লেখো ।

Ans: সমুদ্রস্রোত সৃষ্টি , প্রবাহ ও গতিপ্রকৃতি নানা কারণে নিয়ন্ত্রিত হয় । সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির প্রধান প্রধান কারণগুলি হল 

( i ) পৃথিবীর আবর্তন ( Earth’s Rotation ) : পৃথিবী তার নিজের অক্ষের ওপর পশ্চিম থেকে পূর্বে আবর্তন করার ফলে যে কোরিওলিস বলের ( Coriolis Force ) উৎপত্তি হয় , তার প্রভাবে সমুদ্রস্রোত সোজাপথে প্রবাহিত হতে পারে না । ফেরেলের সূত্র অনুসরণ করে সমুদ্রস্রোত উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে ও দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে বেঁকে প্রবাহিত হয় । LAVALAVA

 ( ii ) বায়ুপ্রবাহ ( Winds ) : আধুনিক বৈজ্ঞানিকদের মতে , বায়ুপ্রবাহ সমুদ্রস্রোতের প্রধান কারণ । নিয়ত বায়ুপ্রবাহ এবং সমুদ্রস্রোতের গতি লক্ষ করলে দেখা যায় যে , প্রবল নিয়ত বায়ুপ্রবাহ নির্দিষ্ট পথে প্রবাহিত হওয়ার সময় সমুদ্রস্রোতকেও নিজের প্রবাহপথের দিকে টেনে নিয়ে যায় । যেমন- ( ক ) যেসব স্থানে আয়ন বায়ু প্রবাহিত হয় সেইসব স্থানে পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিকে সমুদ্রস্রোত আসে । ( খ ) যেসব স্থানে পশ্চিমা বায়ু প্রবাহিত হয় সেইসব স্থানে পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে সমুদ্রস্রোত আসে । ( গ ) মেরু অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহ এবং সমুদ্রস্রোত একই দিকে প্রবাহিত হয় ।

 ( iii ) সমুদ্রজলের উদ্ধৃতা , লবণতা ও ঘনত্ব ( Ocean Temper ature and Salinity ) : সূর্যরশ্মি ভূপৃষ্ঠের সর্বত্র সমানভাবে পড়ে না । নিরক্ষীয় অঞ্চলে লম্ব সূর্যকিরণে সমুদ্রের জল অধিক উষ্ণ ও কম ঘনত্বের জল প্রসারিত ও হালকা হয়ে নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে বহিঃস্রোতরূপে ( Surface current ) শীতল মেরু অঞ্চলের দিকে এবং মেরু অঞ্চলে তির্যক সূর্যকিরণে সমুদ্রের জল শীতল , ঘন ও ভারী হয়ে অন্তঃস্রোতরূপে ( under current ) নিরক্ষীয় অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয় । আবার , সমুদ্রে অধিক লবণাক্ত জলের ঘনত্ব বেশি হওয়ায় তা কম লবণাক্ত জলের দিকে অন্তঃস্রোতরূপে এবং কম লবণাক্ত জল হালকা হওয়ায় বহিঃস্রোতরূপে বেশি লবণাক্ত জলের দিকে প্রবাহিত হয় । 

( iv ) বরফের গলন ( Melting of ice ) : দুই মেরুসংলগ্ন সমুদ্রজলে বিপুল পরিমাণে বরফ গলে মেশে । ফলে সমুদ্রে মিষ্টি জলের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ও লবণতা হ্রাস পায় । ফলে জল সমুদ্রস্রোত রূপে নিম্নঅক্ষাংশে বয়ে যায় ।

 ( v ) উপকূলের আকৃতি ( Shape of Coast line ) : সমুদ্রস্রোতের প্রবাহপথে মহাদেশীয় উপকূল ভাগ বা দ্বীপসমূহের অবস্থানের ফলে সমুদ্রস্রোতের দিক পরিবর্তিত হয় । যেমন দক্ষিণে নিরক্ষীয় স্রোত ব্রাজিলিয়ান উপকূলে বাধা পেয়ে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে যায় । 

( vi ) ঋতুভেদ ( Seasonal Variations ) : ঋতুভেদে মহাসমুদ্রের জলে উষ্ণতা ও লবণতার তারতম্য ঘটে বলে সমুদ্রস্রোতের পরিবর্তন ঘটে । শীত ও গ্রীষ্মে সম্পূর্ণ আলাদা দিক থেকে প্রবাহিত মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারত মহাসাগরে স্রোতের দিক পরিবর্তন ঘটে ।

2. উদাহরণসহ সমুদ্রস্রোতের প্রভাব ব্যাখ্যা করো ।

Ans: পৃথিবীব্যাপী সমুদ্রস্রোতের প্রভাব : সমুদ্রস্রোত জলবায়ু , মাছ আহরণ , জাহাজ চলাচল প্রভৃতির ওপর প্রভাব ফেলে । 

১. জলবায়ুর ওপর প্রভাব : ( i ) উষ্ণতায় প্রভাব : শীতল অঞ্চলের ওপর দিয়ে উষু স্রোত বয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে উষ্ণতা বাড়ে । উত্তর আটলান্টিক ড্রিফটের কারণেই উত্তর – পশ্চিম ইউরোপের উষ্ণতা শীতকালে বেশ বেশি হ হয় বলেই নরওয়ের হ্যামারফেস্ট বন্দর দিয়ে সারাবছর জাহাজ চলাচল করে । অপরদিকে উষু অঞ্চলের ওপর দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেলে উষ্ণতা কমে । বেঙ্গুয়েলা স্রোতের প্রভাবে দক্ষিণ আফ্রিকা ও নামিবিয়া উপকূলের উষ্ণতা সারাবছর কম । 

( ii ) বৃষ্টিপাত , তুষারপাত : উয় স্রোতের উপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ু বেশি জলীয় বাষ্প গ্রহণ করে বলে বৃষ্টির সম্ভাবনা বাড়ে । ই উত্তর আটলান্টিক ড্রিফট – এর প্রভাবে উত্তর – পশ্চিম ইউরোপে এই কারণে বেশি বৃষ্টি হয় । শীতল স্রোত প্রবাহিত অঞ্চলে উষ্ণতা অনেকটা কমে গেলে তুষারপাত হয় । ল্যাব্রাডর স্রোতের প্রভাবে সহায়িকা , নিউফাউন্ডল্যান্ড অঞ্চলে তুষারপাত ঘটে । অনেকক্ষেত্রে শীতল স্রোত প্রবাহিত অঞ্চলে বৃষ্টি কম হয় ।

 ( iii ) মরুভূমি সৃষ্টি : ক্রান্তীয় মণ্ডলে উপকূলের পাশ দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেলে বৃষ্টির সম্ভাবনা প্রায় থাকে না । দীর্ঘকাল ধরে বৃষ্টি না হওয়ার কারণে সংশ্লিষ্ট অঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হয় । সাহারার পশ্চিমপ্রান্ত দিয়ে প্রবাহিত শীতল ক্যানারি । স্রোত মরুভূমি সৃষ্টিতে সাহায্য করেছে ।

 ( iv ) কুয়াশা , ঝড় – ঝঞ্ঝা : যেখানে উষ্ণ ও শীতল স্রোত মিলিত হয় সেখানে বৈপরীত্য উষ্ণতার প্রভাবে পরিচলনজনিত কুয়াশা , ঝড় , ঝঞ্ঝার উৎপত্তি ঘটে । নিউফাউন্ডল্যান্ড অঞ্চলে শীতল ল্যাব্রাডর ও উষু উপসাগরীয় স্রোতের মিলনে প্রায়শই ঘন কুয়াশা ও ঝড়ের সৃষ্টি হয় । 

২. জলবায়ুর পরিবর্তনে প্রভাব : জলবায়ু পরিবর্তনে সমুদ্রস্রোতের প্রভাব স্পষ্ট বোঝা যায় প্রশান্ত মহাসাগরে এল নিনো ও লা নিনা আবির্ভাবের মধ্য দিয়ে । এল নিনো বছরে পেরু , ইকুয়েডর উপকূলে উত্তরদিক থেকে গরম জলের স্রোত ( লা নিনা স্রোত ) এসে ঢোকে । ফলে পেরু , ইকুয়েডরে প্রবল বৃষ্টি , পশ্চিমে অস্ট্রেলিয়ায় অনাবৃষ্টি দেখা দেয় । লা নিনা বছরে অস্ট্রেলিয়ায় প্রবল বৃষ্টিতে বন্যা এবং পেরু , ইকুয়েডরে অনাবৃষ্টিতে খরা দেখা দেয় । প্রশান্ত মহাসাগরে গড়ে ২–৭ বছর অন্তর জলবায়ুর এই পরিবর্তনে সমুদ্রস্রোত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় । 

৩. মগ্নচড়ার সৃষ্টি ও বাণিজ্যিক গুরুত্ব : যেখানে উষ্ণ ও শীতল সমুদ্রস্রোত মেশে সেখানে শীতল স্রোতে বয়ে আসা হিমশৈল গলে যায় । হিমশৈলের সঙ্গে থাকা পদার্থ ( বালি , পলি ) ক্রমাগত অধঃক্ষিপ্ত হয়ে অগভীর অঞ্চল তৈরি করে । এটি হল মগ্নচড়া বা ব্যাংক । গ্র্যান্ড ব্যাংক , ডগার্স ব্যাংক , রকফল ব্যাংক হল পৃথিবী বিখ্যাত মগ্নচড়া । মগ্নচড়ার বাণিজ্যিক গুরুত্ব : মগ্নচড়াগুলি পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাণিজ্যিক মৎস্য আহরণ অঞ্চল । 

4. মানুষের অর্থনৈতিক পরিবেশের ওপর সমুদ্রস্রোতের প্রভাব বা গুরুত্ব আলোচনা করো ।

Ans: মানুষের অর্থনৈতিক পরিবেশের ওপর সমুদ্রস্রোতের প্রভাব হল 

( i ) মগ্নচড়ার সৃষ্টি ও মৎস্য আহরণ : বিভিন্ন মহাসাগরের শীতল স্রোতের সঙ্গে বড়ো বড়ো হিমশৈল ভেসে আসে । উষ্ণ স্রোতের সংস্পর্শে আসায় হিমশৈলগুলি গলতে শুরু করে , ফলে হিমশৈলের সাথে বয়ে আনা নুড়ি , পাথর , কাঁকর , বালি ইত্যাদি পদার্থ থিতিয়ে পড়ে সমুদ্রের অগভীর মহিসোপান অঞ্চলে জমা হয়ে মগ্নচড়ার সৃষ্টি করে । যেমন — গ্র্যান্ড ব্যাংক , ডগার্স ব্যাংক ইত্যাদি । 

মগ্নচড়াগুলিতে প্ল্যাংকটন নামে একপ্রকার আণুবীক্ষণিক জীব জন্মায় যা মাছের প্রধান খাদ্য । মগ্নচড়াগুলিতে অনুকূল তাপমাত্রা এবং খাদ্যের অফুরন্ত জোগান থাকায় মৎস্য আহরণের পক্ষে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে । 

( ii ) জাহাজ চলাচল ও বরফমুক্ত বন্দর : উষ্ণ স্রোতের প্রভাবে উচ্চ অক্ষাংশের সমুদ্র শীতকালেও বরফমুক্ত থাকে । উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোতের প্রভাবে উত্তর সাগর ও সংলগ্ন হ্যামারফেস্ট বন্দর বরফমুক্ত থাকে বলে জাহাজ চলাচলের সুবিধা হয় । 

( iii ) হিমশৈলের সমস্যা : শীতল সমুদ্রস্রোতে ভেসে আসা হিমশৈল জাহাজ চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি করে ।

SOURCE-BHUGOLSHIKSHA.COM

 

©kamaleshforeducation.in(2023)

 

error: Content is protected !!