বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান (প্রবন্ধ) রাজশেখর বসু – মাধ্যমিক দশম শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | West Bengal Madhyamik Class 10th Bengali Bangla Bhashay Bigyan Question and Answer
MCQ | বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান (প্রবন্ধ) রাজশেখর বসু – মাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Bengali Bangla Bhashay Bigyan Question and Answer :
- যাদের জন্য বিজ্ঞান – বিষয়ক বাংলা গ্রন্থ লেখা হয় তাদের বিভক্ত করা যায় –
(A) দুটি শ্রেণিতে
(B) চারটি শ্রেণিতে
(C) তিনটি শ্রেণিতে
(D) একটি শ্রেণিতে
Ans: (A) দুটি শ্রেণিতে
- অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়ে এবং অল্পশিক্ষিত বয়স্ক লোকেরা যে শ্রেণিতে পড়ে , সেটি হল –
(A) দ্বিতীয়
(B) তৃতীয়
(C) প্রথম
(D) চতুর্থ
Ans: (C) প্রথম
- যারা ইংরেজি জানে তারা পড়ে –
(A) প্রথম শ্রেণিতে
(B) দ্বিতীয় শ্রেণিতে
(C) তৃতীয় শ্রেণিতে
(D) চতুর্থ শ্রেণিতে
Ans: B) দ্বিতীয় শ্রেণিতে
- পিতলের চেয়ে হালকা ধাতু হল –
(A) অ্যালুমিনিয়াম
(B) স্টেইনলেস স্টিল
(C) পারদ
(D) সোনা
Ans: (A) অ্যালুমিনিয়াম
- যেসব গাছে দু – রকম ফুল হয় , সেগুলির নাম হল –
(A) পুঁই – পালং
(B) অশোক – পলাশ
(C) গোলাপ – গাঁদা
(D) লাউ – কুমড়ো
Ans: (D) লাউ – কুমড়ো
- ‘ এইরকম সামান্য জ্ঞান থাকলেও সুশৃঙ্খল আধুনিক তথ্য তারা কিছুই জানে না । ‘
(A) বৈজ্ঞানিক
(B) রাজনৈতিক
(C) সমাজবিদ্যার
(D) নাগরিক
Ans: (A) বৈজ্ঞানিক
- প্রথম শ্রেণির পাঠক ভাষার প্রভাব থেকে মুক্ত ।
(A) হিন্দি
(B) বাংলা
(C) ইংরেজি
(D) সংস্কৃত
Ans: (C) ইংরেজি
- ছেলেবেলায় লেখককে যে লেখকের বাংলা জ্যামিতি পড়তে হয়েছিল , তার নাম –
(A) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(B) ব্রহ্মমোহন মল্লিক
(C) বিজন ভট্টাচার্য
(D) অন্নদাশংকর রায়
Ans: (B) ব্রহ্মমোহন মল্লিক
- সরকার ক্রমে ক্রমে রাজকার্যে দেশি পরিভাষা চালাচ্ছেন , তাতে অনেকে মুশকিলে পড়েছেন , কারণ—
(A) তারা বাংলা জানেন না
(B) তাঁরা ইংরেজি জানেন না
(C) তাঁদের নতুন করে শিখতে হচ্ছে
(D) তাঁরা বাংলা ভুলে গেছেন
Ans: (C) তাঁদের নতুন করে শিখতে হচ্ছে
- ‘ পাশ্চাত্য পাঠকের তুলনায় তার পক্ষে একটু বেশি চেষ্টা আবশ্যক ।’— তার বলতে যার কথা বোঝানো হয়েছে –
(A) ইংরেজি না – জানা পাঠক
(B) বাংলা না – জানা পাঠক
(C) ইংরেজি জানা পাঠক
(D) বাংলা জানা পাঠক
Ans: (A) ইংরেজি না – জানা পাঠক
[ আরোও দেখুন:- Madhyamik Bengali Suggestion 2023 Click here ]
- বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার একটি প্রধান বাধা হল –
(A) বাংলা ভাষার প্রতি অনীহা
(B) ইংরেজি ভাষার প্রতি আকর্ষণ
(C) ইংরেজি পারিভাষিক শব্দের অভাব
(D) বাংলা পারিভাষিক শব্দের অভাব
Ans: (D) বাংলা পারিভাষিক শব্দের অভাব
- অনেক বছর আগে যে – সকল বিদ্যোৎসাহী নানা বিষয়ের পরিভাষা রচনা করেছিলেন , তাঁরা যে – সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন , তা হল –
(A) সাহিত্য আকাদেমি
(B) বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ
(C) সাহিত্য সংসদ
(D) বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদ
Ans: (B) বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ
- বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিদ্যোৎসাহী লেখকদের পরিভাষা রচনার উদ্যোগের যে – ত্রুটি ছিল , তা হল –
(A) তাঁরা একযোগে কাজ করেছিলেন
(B) তাঁরা কাজ সম্পূর্ণ করেননি
(C) তাঁদের কাজ ছিল নিয়মবহির্ভূত
(D) তাঁরা একযোগে কাজ না করে স্বতন্ত্রভাবে করেছিলেন ।
Ans: (D) তাঁরা একযোগে কাজ না করে স্বতন্ত্রভাবে করেছিলেন ।
- কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় পরিভাষা সমিতি নিযুক্ত করেছিল –
(A) ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে
(B) ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে
(C) ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে
(D) ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে
Ans: (A) ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে
- ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে পরিভাষা সমিতি নিয়োগ করেছিল –
(A) বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ
(B) সাহিত্য আকাদেমি
(C) কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
(D) বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়
Ans: (C) কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
- কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিভাষা সংকলন –
(A) যথেষ্ট বড়ো
(B) অত্যন্ত ছোটো
(C) মাঝারি মানের
(D) খুব বড়ো নয়
Ans: (D) খুব বড়ো নয়
- ” বিশ্ববিদ্যালয় নিযুক্ত সমিতি বিস্তর শব্দ বজায় রেখেছেন । ‘
(A) বাংলা
(B) ইংরেজি
(C) পারিভাষিক
(D) সংস্কৃত
Ans: (B) ইংরেজি
- বিশ্ববিদ্যালয় নিযুক্ত পরিভাষা সমিতি যে – বস্তুগুলির ইংরেজি নামই বাংলা বানানে চলার বিধান দিয়েছেন , সেগুলি হল –
(A) বিভিন্ন খাদ্যবস্তু
(B) নানারকম ফুলের নাম
(C) নবাগত রাসায়নিক
(D) রূপান্তরিত রাসায়নিক
Ans: (C) নবাগত রাসায়নিক
- পাশ্চাত্য দেশের তুলনায় এদেশের জনসাধারণের জ্ঞান নগণ্য ।
(A) অর্থনৈতিক
(B) বাস্তব
(C) সাংস্কৃতিক
(D) বৈজ্ঞানিক
Ans: (D) বৈজ্ঞানিক
- যার সঙ্গে পরিচয় না থাকলে কোনো বৈজ্ঞানিক সন্দর্ভ বোঝা কঠিন , তা হল –
(A) রসায়নশাস্ত্র
(B) জীববিদ্যা
(C) প্রাথমিক বিজ্ঞান
(D) ভৌতবিজ্ঞান
Ans: (C) প্রাথমিক বিজ্ঞান
- ইউরোপ – আমেরিকায় যা লেখা সুসাধ্য , তা হল –
(A) হোমসায়েন্স
(B) পলিটিকাল সায়েন্স
(C) এভরিডে সায়েন্স
(D) পপুলার সায়েন্স
Ans: (D) পপুলার সায়েন্স
- যেসকল মহাদেশে পপুলার সায়েন্স লেখা সুসাধ্য , সেগুলি হল –
(A) এশিয়া – রাশিয়া
(B) ইউরোপ – আমেরিকা
(C) অস্ট্রেলিয়া – ইউরোপ
(D) অ্যান্টার্কটিকা – আফ্রিকা
Ans: (B) ইউরোপ – আমেরিকা
- কালক্রমে এদেশে বৈজ্ঞানিক সাহিত্যরচনা সুসাধ্য হবে , যদি –
(A) বাংলায় বিজ্ঞান লেখা হয়
(B) ভাষা শিক্ষার বিস্তার হয়
(C) প্রামাণিক বাংলা শব্দ রচিত হয়
(D) বিজ্ঞানশিক্ষার বিস্তার হয়
Ans: (D) বিজ্ঞানশিক্ষার বিস্তার হয়
- ‘ Sensitized Paper ‘ -এর অনুবাদ কী লিখলে ঠিক হয় বলে । প্রাবন্ধিক মনে করেছেন –
(A) সুবেদী কাগজ
(B) স্পর্শকাতর কাগজ
(C) সুগ্রাহী কাগজ
(D) ব্যথাপ্রবণ কাগজ
Ans:
- The atomic engine has not even reached the blue print stage , ‘ -এর বাংলা অনুবাদ হওয়া উচিত –
(A) পরমাণু ইঞ্জিন নীলচিত্রের অবস্থাতেও পৌঁছোয়নি
(B) পরমাণু ইঞ্জিন নীল মঞ্চে পৌঁছোয়নি
(C) পরমাণু ইঞ্জিনের নকশা পর্যন্ত এখনও প্রস্তুত হয়নি
(D) নীলচিত্র এখনও পরমাণু ইঞ্জিনের জন্ম দেয়নি
Ans: (C) পরমাণু ইঞ্জিনের নকশা পর্যন্ত এখনও প্রস্তুত হয়নি
- অনেকে মনে করেন , শব্দ বাদ দিয়ে বক্তব্য প্রকাশ করলে রচনা সহজ হয় । ‘
(A) ইংরেজি
(B) পারিভাষিক
(C) বৈজ্ঞানিক
(D) নতুন
Ans: (B) পারিভাষিক
- পরিভাষার উদ্দেশ্য হল –
(A) ভাষার সংক্ষেপ এবং অর্থ সুনির্দিষ্ট করা
(B) কোনো বিষয়কে বর্ণনা করা
(C) অল্প পরিচিত শব্দের ব্যবহার করা
(D) শব্দের অর্থের ব্যাখ্যা দেওয়ায়
Ans: (A) ভাষার সংক্ষেপ এবং অর্থ সুনির্দিষ্ট করা
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান (প্রবন্ধ) রাজশেখর বসু
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান (প্রবন্ধ) রাজশেখর বসু – মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন | Madhyamik Bengali Suggestion :
- তখন বৈজ্ঞানিক সাহিত্য রচনা সুসাধ্য হবে । কখন সুসাধ্য হবে বলে লেখকের ধারণা ?
Answer: ভারতবর্ষের সাধারণ মানুষের প্রাথমিক বিজ্ঞান সম্বন্ধে ধারণা অত্যন্ত কম । এই দেশে বিজ্ঞানশিক্ষা বিস্তৃত হলে বৈজ্ঞানিক সাহিত্য রচনা সুসাধ্য হবে বলে লেখকের মত ।
- বিজ্ঞান আলোচনার রচনাপদ্ধতির মূল ত্রুটি কী ?
Answer: বিজ্ঞান আলোচনার রচনাপদ্ধতি এখনও বহু লেখকের আয়ত্তের বাইরে । অনেক ক্ষেত্রেই তাঁদের ভাষার আড়ষ্টতা ও ইংরেজির আক্ষরিক অনুবাদ রচনাকে দুর্বহ করে তোলে ।
- ‘ কিন্তু তাও কেউ কেউ লিখে থাকেন । —কী লেখার কথা বলা হয়েছে ?
Answer: ইংরেজি থেকে আক্ষরিক অনুবাদের ত্রুটির কথা বলতে গিয়ে লেখক ‘ Sensitized Paper’- এর বাংলা অনুবাদের কথা বলেছেন । এই শব্দটির অনুবাদ স্পর্শকাতর কাগজ ‘ করলেও , হওয়া উচিত ‘ সুগ্ৰাহী কাগজ ‘ ।
- ‘ এতে রচনা উৎকট হয় । — কী করলে রচনা উৎকট হয় ?
Answer: রাজশেখর বসুর মতানুসারে , অনেক লেখক তাঁদের বক্তবা ইংরেজিতে ভাবেন এবং যথার্থ বাংলা অনুবাদে তা প্রকাশ করার চেষ্টা করেন । এতে রচনা সাবলীলতা হারায় ।
- এতে রচনা উৎকট হয় ।— ‘ উৎকট ‘ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?
Answer: আলোচ্য উদ্ধৃতিটিতে ভাষার আড়ষ্টতা ও দুর্বোধ্যতা বোঝাতে ‘ উৎকট ’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ।
- ‘ এ রকম বর্ণনা বাংলা ভাষায় প্রকৃতিবিরুদ্ধ । -প্রকৃতিবিরুদ্ধ বলার কারণ কী ?
Answer: ইংরেজি থেকে বাংলা ভাষায় হুবহু অনুবাদ অর্থাৎ আক্ষরিক অনুবাদ সম্পর্কে বিতৃয়া প্রকাশ করতে গিয়ে লেখক বলেছেন যে , এটি বাংলা ভাষার প্রকৃতিবিরুদ্ধ ।
- The atomic engine has not even reached the blue print stage , ‘ — বাক্যটির যথার্থ বাংলা অনুবাদ কী হওয়া উচিত ।
Answer: উপরোক্ত ইংরেজি বাক্যটির যথার্থ বাংলা অনুবাদ হওয়া উচিত — ‘ পরমাণু ইঞ্জিনের নকশা পর্যন্ত এখনও প্রস্তুত হয়নি ।
- ‘ When sulphur burns in air the nitrogen does not take part in the reaction’— বাক্যটির একটি যথার্থ বাংলা অনুবাদ করো ।
Answer: উপরোক্ত ইংরেজি বাক্যটির যথার্থ বাংলা অনুবাদ হওয়া উচিত— যখন গন্ধক হাওয়ায় পোড়ে , তখন নাইট্রোজেনের কোনো পরিবর্তন হয় না ।
9.” বাংলা ভাষা বজায় থাকে । — এ কথা বলার অর্থ কী ?
Answer: আলোচ্য উদ্ধৃতির অর্থ হল ইংরেজি থেকে বাংলা আক্ষরিক অনুবাদের পরিবর্তে ভাবানুবাদ বাংলা ভাষার স্বকীয়তা ও সাবলীলতা বজায় রাখে ।
- এই ধারণা পুরোপুরি ঠিক নয় । কোন ধারণার কথা বলা হয়েছে ?
Answer: অনেকের মতে বিজ্ঞান আলোচনায় পারিভাষিক শব্দ বাদ দিয়ে সাধারণ শব্দ ব্যবহার করলে রচনা সহজ ও বোধগম্য হয় । কিন্তু এই ধারণা সম্পূর্ণ ঠিক নয় ।
- পরিভাষার উদ্দেশ্য কী ?
Answer: পরিভাষার উদ্দেশ্য হল , ভাষাকে সংক্ষিপ্ত করা এবং তার অর্থ সুনির্দিষ্ট করা । অনর্থক বর্ণনা পরিহার করে বিষয়কে সংক্ষিপ্তাকারে প্রকাশ করাই হল পরিভাষার কাজ ।
- পারিভাষিক শব্দের অর্থ পাঠককে বোঝানোর জন্য কোন্ পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত ?
Answer: সাধারণ মানুষের জন্য লেখা বৈজ্ঞানিক রচনায় অল্পপরিচিত বা নতুন পরিভাষা প্রথমবার প্রয়োগের সময় তার ব্যাখ্যা দেওয়া প্রয়োজন । পরে শুধু শব্দটি দিলেই চলে ।
- ‘ আমাদের আলংকারিকগণ শব্দের ত্রিবিধ কথা বলেছেন ‘ — কোন্ ‘ ত্রিবিধ কথা ” -র প্রসঙ্গ লেখক স্মরণ করেছেন ?
অথবা , ‘ আমাদের আলংকারিকগণ শব্দের ত্রিবিধ কথা বলেছেন— শব্দের ‘ ত্রিবিধ কথা কী ?
Answer: আমাদের আলংকারিকগণ শব্দের যে – ত্রিবিধ প্রসঙ্গের কথা উল্লেখ করেছেন , সেগুলি হল অভিধা , লক্ষণা ও ব্যঞ্ছনা ।
- অভিধা কাকে বলে ?
Answer: অভিধা হল শব্দের আভিধানিক অর্থ । যেমন , ‘ অরণ্য ‘ বলতে বোঝায় বন , জঙ্গল ইত্যাদি । এর চেয়ে বিশদ কোনো অর্থ বোঝায় না ।
- লক্ষণা বলতে কী বোঝায় ?
Answer: লক্ষণা হল শব্দের বৃত্তিবিশেষ । শব্দের মুখ্য অর্থের চেয়ে তার অন্য অর্থই যখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে , তখন তাকে বলে লক্ষণা । যেমন , ‘ অরণ্যের দিনরাত্রি ‘ – র অর্থ অরণ্যবাসীদের রোজনামচা ।
- ‘ যাদের জন্য বিজ্ঞান বিষয়ক বাংলা গ্রন্থ বা প্রবন্ধ লেখা হয় তাদের মোটমটি দুই শ্রেণিতে ভাগ করা যেতে পারে । – শ্রেণি দুটি কী কী ?
Answer: বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান ‘ প্রবন্ধের লেখক রাজশেখর বসুর মতে , বিজ্ঞান বিষয়ক বাংলা গ্রন্থের পাঠকদের দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় ( ১ ) যারা ইংরেজি জানে বা অতি অল্প জানে এবং ( ২ ) যারা ইংরেজি জানে এবং ইংরেজি ভাষায় অক্ষাধিক বিজ্ঞান পড়েছে ।
- বিজ্ঞান বিষয়ক বাংলা গ্রন্থের পাঠকদের মধ্যে যারা লেখকের মতে প্রথম শ্রেণিভুক্ত , তাদের বিবরণ দাও ।
Answer: বিজ্ঞান বিষয়ক বাংলা গ্রন্থের পাঠকদের মধ্যে প্রথম শ্রেণিভুক্তরা হয় ইংরেজি জানেন না অথবা অতিঅল্প জানেন । সাধারণত কমবয়সি ছেলেমেয়ে এবং অল্পশিক্ষিত বয়স্ক লোকেরাই এই শ্রেণিতে পড়েন ।
- পাঠক ইংরেজি ভাষার প্রভাবমুক্ত হলে কী সুবিধা হয় ?
Answer: পাঠক ইংরেজি ভাষার প্রভাবমুক্ত হলে বাংলা পরিভাষা আয়ত্ত করে বাংলায় বিজ্ঞান শেখা সহজতর হয়ে যায় । কারণ তার বাংলা ভাষার বিরোধী সংস্কার থাকে না ।
- ‘ তার মানেও স্পষ্ট হবে না । — কীসের মানে স্পষ্ট না – হওয়ার কথা বলা হয়েছে ?
Answer: ইংরেজি জানা বা ইংরেজিতে পড়াশোনা করা পাঠকদের পক্ষে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান – সংক্রান্ত প্রবন্ধ পাঠ খুব সহজ নয় । কারণ , বিষয়টি তাঁদের কাছে অর্থগত দিক থেকে স্পষ্ট হবে না ।
- ‘ আমাদের সরকার ক্রমে ক্রমে রাজকার্যে দেশি পরিভাষা চালাচ্ছেন , ‘ — তাতে অনেকে মুশকিলে পড়েছেন কেন ?
Answer: আমাদের সরকার রাজকার্যে যেভাবে দেশি পরিভাষা ক্রমশ ব্যবহার করাচ্ছেন তাতে অনেকে মুশকিলে পড়ছে , কেন – না তাদের নতুন করে সেগুলি শিখতে হচ্ছে ।
- ‘ তাঁদের নূতন করে শিখতে হচ্ছে / — কী শেখার কথা বলা হয়েছে ?
Answer: সরকারি কাজকর্মে বাংলা পারিভাষিক শব্দ ব্যবহার শুরু হওয়ায় অনেক ইংরেজি জানা ব্যক্তি মুশকিলে পড়েছেন । কারণ তাঁদের সেই পরিভাষা নতুন করে শিখতে হচ্ছে ।
- কোন ধরনের পাঠকের পাশ্চাত্য পাঠকের তুলনায় বেশি চেষ্টা প্রয়োজন বলে লেখক মনে করেছেন ?
Answer: দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠক অর্থাৎ ইংরেজি জানা ও ইংরেজি ভাষায় বিজ্ঞান পাঠের অভিজ্ঞতা আছে যাদের , তাদের পাশ্চাত্য পাঠকদের তুলনায় বেশি চেষ্টা করতে হবে ।
- ‘ পারিভাষিক শব্দ ‘ বলতে কী বোঝ ?
Answer: ‘ পারিভাষিক শব্দে ‘ – র অর্থ হল পরিভাষা – সম্বন্ধীয় । পরিভাষা এক ধরনের সংজ্ঞাবিশেষ , যার কোনোরকম অর্থান্তর ঘটে না । ইংরেজিতে একে ‘ Glossary ‘ বা Technical term ‘ বলে ।
- ‘ অনেক বৎসর পূর্বে … অনেক বছর আগের কোন্ প্রসঙ্গ এখানে উত্থাপন করা হয়েছে ?
অনেক বছর আগে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তি বিভিন্ন বিষয়ের পরিভাষা রচনা করেছিলেন । এখানে সেই প্রসঙ্গের কথা বলা হয়েছে ।
- বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের ত্রুটি কী ছিল ?
Answer: বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সঙ্গে যুক্ত বিদ্বান ব্যক্তিবর্গ পরিভাষা রচনায় উদ্যোগী হলেও তাঁরা একসঙ্গে কাজ না করে পৃথকভাবে কাজ করেছিলেন ।
- কবে , কাদের পৃষ্ঠপোষকতায় দ্বিতীয়বার পরিভাষা সমিতি নিযুক্ত হয়েছিল ?
Answer: ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন বিষয়ের দিপালদের নিয়ে যে – পরিভাষা সমিতি গঠন করা হয়েছিল , তাকেই দ্বিতীয় বারের পরিভাষা সমিতির নিযুক্তিকরণ বলা হয় ।
- কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিভাষা সমিতিতে কারা ছিলেন ?
Answer: ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে নিযুক্ত পরিভাষা সমিতিতে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বিভিন্ন বিজ্ঞানের অধ্যাপক , ভাষাতত্ত্ববিদ , সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত এবং কয়েকজন লেখককে নিযুক্ত করা হয়েছিল ।
- কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিভাষা সংকলনটি কতখানি সাফল্যমণ্ডিত হয়েছিল ?
Answer: কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিভাষা সংকলনটি লেখক রাজশেখর বসুর মতে খুব বড়ো নয় । এতে আরও শব্দের প্রয়োজন আছে এবং তার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন ।
- লেখক রাজশেখর বসু প্রয়োজন মতো বাংলা শব্দ পাওয়া না গেলে কী করা উচিত বলে জানিয়েছেন ?
Answer: রাজশেখর বসু জানিয়েছেন যে , প্রয়োজন মতো বাংলা শব্দ না – পাওয়া গেলে বৈজ্ঞানিক রচনায় ইংরেজি শব্দই বাংলা বানানে চালানো যেতে পারে ।
- ‘ কোনও বৈজ্ঞানিক সম্পর্ক বোঝা কঠিন / – এ কথা বলার কারণ কী ?
Answer: রাজশেখর বসুর মতে পাশ্চাত্য দেশের তুলনায় ভারতবর্ষের সাধারণ মানুষের প্রাথমিক বিজ্ঞানের সঙ্গে যথেষ্ট পরিচয় না থাকায় বৈজ্ঞানিক সম্পর্ক বোঝা কঠিন ।
MCQ | বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান (প্রবন্ধ) রাজশেখর বসু – মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন | Madhyamik Bengali Suggestion :
- কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় পরিভাষা সমিতি নিযুক্ত করেছিল -(A) ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে(B) ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে (C) ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে(D) ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে
Answer: (A) ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে
- ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে পরিভাষা সমিতি নিয়োগ করেছিল -(A) বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ(B) সাহিত্য আকাদেমি (C) কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় (D) বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়
Answer: (C) কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
- কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিভাষা সংকলন – (A) যথেষ্ট বড়ো(B) অত্যন্ত ছোটো(C) মাঝারি মানের(D) খুব বড়ো নয়
Answer: (D) খুব বড়ো নয়
- ” বিশ্ববিদ্যালয় নিযুক্ত সমিতি বিস্তর শব্দ বজায় রেখেছেন । ‘ (A) বাংলা (B) ইংরেজি(C) পারিভাষিক (D) সংস্কৃত
Answer: (B) ইংরেজি
- বিশ্ববিদ্যালয় নিযুক্ত পরিভাষা সমিতি যে – বস্তুগুলির ইংরেজি নামই বাংলা বানানে চলার বিধান দিয়েছেন , সেগুলি হল -(A) বিভিন্ন খাদ্যবস্তু (B) নানারকম ফুলের নাম (C) নবাগত রাসায়নিক (D) রূপান্তরিত রাসায়নিক
Answer: (C) নবাগত রাসায়নিক
- পাশ্চাত্য দেশের তুলনায় এদেশের জনসাধারণের জ্ঞান নগণ্য । (A) অর্থনৈতিক(B) বাস্তব (C) সাংস্কৃতিক (D) বৈজ্ঞানিক
Answer: (D) বৈজ্ঞানিক
- যার সঙ্গে পরিচয় না থাকলে কোনো বৈজ্ঞানিক সন্দর্ভ বোঝা কঠিন , তা হল -(A) রসায়নশাস্ত্র (B) জীববিদ্যা(C) প্রাথমিক বিজ্ঞান(D) ভৌতবিজ্ঞান
Answer: (C) প্রাথমিক বিজ্ঞান
- ইউরোপ – আমেরিকায় যা লেখা সুসাধ্য , তা হল -(A) হোমসায়েন্স(B) পলিটিকাল সায়েন্স(C) এভরিডে সায়েন্স(D) পপুলার সায়েন্স
Answer: (D) পপুলার সায়েন্স
- যেসকল মহাদেশে পপুলার সায়েন্স লেখা সুসাধ্য , সেগুলি হল -(A) এশিয়া – রাশিয়া(B) ইউরোপ – আমেরিকা(C) অস্ট্রেলিয়া – ইউরোপ(D) অ্যান্টার্কটিকা – আফ্রিকা
Answer: (B) ইউরোপ – আমেরিকা
- কালক্রমে এদেশে বৈজ্ঞানিক সাহিত্যরচনা সুসাধ্য হবে , যদি – (A) বাংলায় বিজ্ঞান লেখা হয়(B) ভাষা শিক্ষার বিস্তার হয় (C) প্রামাণিক বাংলা শব্দ রচিত হয়(D) বিজ্ঞানশিক্ষার বিস্তার হয়
Answer: (D) বিজ্ঞানশিক্ষার বিস্তার হয়
- ‘ Sensitized Paper ‘ -এর অনুবাদ কী লিখলে ঠিক হয় বলে । প্রাবন্ধিক মনে করেছেন -(A) সুবেদী কাগজ(B) স্পর্শকাতর কাগজ (C) সুগ্রাহী কাগজ (D) ব্যথাপ্রবণ কাগজ
Answer:
- The atomic engine has not even reached the blue print stage , ‘ -এর বাংলা অনুবাদ হওয়া উচিত – (A) পরমাণু ইঞ্জিন নীলচিত্রের অবস্থাতেও পৌঁছোয়নি(B) পরমাণু ইঞ্জিন নীল মঞ্চে পৌঁছোয়নি(C) পরমাণু ইঞ্জিনের নকশা পর্যন্ত এখনও প্রস্তুত হয়নি(D) নীলচিত্র এখনও পরমাণু ইঞ্জিনের জন্ম দেয়নি
Answer: (C) পরমাণু ইঞ্জিনের নকশা পর্যন্ত এখনও প্রস্তুত হয়নি
- অনেকে মনে করেন , শব্দ বাদ দিয়ে বক্তব্য প্রকাশ করলে রচনা সহজ হয় । ‘ (A) ইংরেজি (B) পারিভাষিক(C) বৈজ্ঞানিক(D) নতুন
Answer: (B) পারিভাষিক
- পরিভাষার উদ্দেশ্য হল -(A) ভাষার সংক্ষেপ এবং অর্থ সুনির্দিষ্ট করা (B) কোনো বিষয়কে বর্ণনা করা(C) অল্প পরিচিত শব্দের ব্যবহার করা(D) শব্দের অর্থের ব্যাখ্যা দেওয়ায়
Answer: (A) ভাষার সংক্ষেপ এবং অর্থ সুনির্দিষ্ট করা
- যাদের জন্য বিজ্ঞান – বিষয়ক বাংলা গ্রন্থ লেখা হয় তাদের বিভক্ত করা যায় -(A) দুটি শ্রেণিতে (B) চারটি শ্রেণিতে(C) তিনটি শ্রেণিতে(D) একটি শ্রেণিতে
Answer: (A) দুটি শ্রেণিতে
- অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়ে এবং অল্পশিক্ষিত বয়স্ক লোকেরা যে শ্রেণিতে পড়ে , সেটি হল -(A) দ্বিতীয় (B) তৃতীয় (C) প্রথম (D) চতুর্থ
Answer: (C) প্রথম
- যারা ইংরেজি জানে তারা পড়ে – (A) প্রথম শ্রেণিতে(B) দ্বিতীয় শ্রেণিতে (C) তৃতীয় শ্রেণিতে(D) চতুর্থ শ্রেণিতে
Answer: B) দ্বিতীয় শ্রেণিতে
- পিতলের চেয়ে হালকা ধাতু হল -(A) অ্যালুমিনিয়াম (B) স্টেইনলেস স্টিল(C) পারদ (D) সোনা
Answer: (A) অ্যালুমিনিয়াম
- যেসব গাছে দু – রকম ফুল হয় , সেগুলির নাম হল -(A) পুঁই – পালং(B) অশোক – পলাশ (C) গোলাপ – গাঁদা (D) লাউ – কুমড়ো
Answer: (D) লাউ – কুমড়ো
- ‘ এইরকম সামান্য জ্ঞান থাকলেও সুশৃঙ্খল আধুনিক তথ্য তারা কিছুই জানে না । ‘(A) বৈজ্ঞানিক (B) রাজনৈতিক (C) সমাজবিদ্যার (D) নাগরিক
Answer: (A) বৈজ্ঞানিক
- প্রথম শ্রেণির পাঠক ভাষার প্রভাব থেকে মুক্ত ।(A) হিন্দি (B) বাংলা(C) ইংরেজি(D) সংস্কৃত
Answer: (C) ইংরেজি
- ছেলেবেলায় লেখককে যে লেখকের বাংলা জ্যামিতি পড়তে হয়েছিল , তার নাম – (A) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর (B) ব্রহ্মমোহন মল্লিক (C) বিজন ভট্টাচার্য(D) অন্নদাশংকর রায়
Answer: (B) ব্রহ্মমোহন মল্লিক
- সরকার ক্রমে ক্রমে রাজকার্যে দেশি পরিভাষা চালাচ্ছেন , তাতে অনেকে মুশকিলে পড়েছেন , কারণ— (A) তারা বাংলা জানেন না (B) তাঁরা ইংরেজি জানেন না (C) তাঁদের নতুন করে শিখতে হচ্ছে (D) তাঁরা বাংলা ভুলে গেছেন
Answer: (C) তাঁদের নতুন করে শিখতে হচ্ছে
- ‘ পাশ্চাত্য পাঠকের তুলনায় তার পক্ষে একটু বেশি চেষ্টা আবশ্যক ।’— তার বলতে যার কথা বোঝানো হয়েছে – (A) ইংরেজি না – জানা পাঠক(B) বাংলা না – জানা পাঠক (C) ইংরেজি জানা পাঠক(D) বাংলা জানা পাঠক
Answer: (A) ইংরেজি না – জানা পাঠক
- বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার একটি প্রধান বাধা হল -(A) বাংলা ভাষার প্রতি অনীহা (B) ইংরেজি ভাষার প্রতি আকর্ষণ (C) ইংরেজি পারিভাষিক শব্দের অভাব (D) বাংলা পারিভাষিক শব্দের অভাব
Answer: (D) বাংলা পারিভাষিক শব্দের অভাব
- অনেক বছর আগে যে – সকল বিদ্যোৎসাহী নানা বিষয়ের পরিভাষা রচনা করেছিলেন , তাঁরা যে – সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন , তা হল – (A) সাহিত্য আকাদেমি (B) বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ (C) সাহিত্য সংসদ(D) বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদ
Answer: (B) বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ
- বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিদ্যোৎসাহী লেখকদের পরিভাষা রচনার উদ্যোগের যে – ত্রুটি ছিল , তা হল -(A) তাঁরা একযোগে কাজ করেছিলেন (B) তাঁরা কাজ সম্পূর্ণ করেননি (C) তাঁদের কাজ ছিল নিয়মবহির্ভূত(D) তাঁরা একযোগে কাজ না করে স্বতন্ত্রভাবে করেছিলেন ।
Answer: (D) তাঁরা একযোগে কাজ না করে স্বতন্ত্রভাবে করেছিলেন ।
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান (প্রবন্ধ) রাজশেখর বসু – মাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Bengali Bangla Bhashay Bigyan Question and Answer :
- ‘ যাদের জন্য বিজ্ঞান বিষয়ক বাংলা গ্রন্থ বা প্রবন্ধ লেখা হয় তাদের মোটমটি দুই শ্রেণিতে ভাগ করা যেতে পারে । – শ্রেণি দুটি কী কী ?
Ans: বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান ‘ প্রবন্ধের লেখক রাজশেখর বসুর মতে , বিজ্ঞান বিষয়ক বাংলা গ্রন্থের পাঠকদের দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় ( ১ ) যারা ইংরেজি জানে বা অতি অল্প জানে এবং ( ২ ) যারা ইংরেজি জানে এবং ইংরেজি ভাষায় অক্ষাধিক বিজ্ঞান পড়েছে ।
- বিজ্ঞান বিষয়ক বাংলা গ্রন্থের পাঠকদের মধ্যে যারা লেখকের মতে প্রথম শ্রেণিভুক্ত , তাদের বিবরণ দাও ।
Ans: বিজ্ঞান বিষয়ক বাংলা গ্রন্থের পাঠকদের মধ্যে প্রথম শ্রেণিভুক্তরা হয় ইংরেজি জানেন না অথবা অতিঅল্প জানেন । সাধারণত কমবয়সি ছেলেমেয়ে এবং অল্পশিক্ষিত বয়স্ক লোকেরাই এই শ্রেণিতে পড়েন ।
- পাঠক ইংরেজি ভাষার প্রভাবমুক্ত হলে কী সুবিধা হয় ?
Ans: পাঠক ইংরেজি ভাষার প্রভাবমুক্ত হলে বাংলা পরিভাষা আয়ত্ত করে বাংলায় বিজ্ঞান শেখা সহজতর হয়ে যায় । কারণ তার বাংলা ভাষার বিরোধী সংস্কার থাকে না ।
- ‘ তার মানেও স্পষ্ট হবে না । — কীসের মানে স্পষ্ট না – হওয়ার কথা বলা হয়েছে ?
Ans: ইংরেজি জানা বা ইংরেজিতে পড়াশোনা করা পাঠকদের পক্ষে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান – সংক্রান্ত প্রবন্ধ পাঠ খুব সহজ নয় । কারণ , বিষয়টি তাঁদের কাছে অর্থগত দিক থেকে স্পষ্ট হবে না ।
- ‘ আমাদের সরকার ক্রমে ক্রমে রাজকার্যে দেশি পরিভাষা চালাচ্ছেন , ‘ — তাতে অনেকে মুশকিলে পড়েছেন কেন ?
Ans: আমাদের সরকার রাজকার্যে যেভাবে দেশি পরিভাষা ক্রমশ ব্যবহার করাচ্ছেন তাতে অনেকে মুশকিলে পড়ছে , কেন – না তাদের নতুন করে সেগুলি শিখতে হচ্ছে ।
- ‘ তাঁদের নূতন করে শিখতে হচ্ছে / — কী শেখার কথা বলা হয়েছে ?
Ans: সরকারি কাজকর্মে বাংলা পারিভাষিক শব্দ ব্যবহার শুরু হওয়ায় অনেক ইংরেজি জানা ব্যক্তি মুশকিলে পড়েছেন । কারণ তাঁদের সেই পরিভাষা নতুন করে শিখতে হচ্ছে ।
- কোন ধরনের পাঠকের পাশ্চাত্য পাঠকের তুলনায় বেশি চেষ্টা প্রয়োজন বলে লেখক মনে করেছেন ?
Ans: দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠক অর্থাৎ ইংরেজি জানা ও ইংরেজি ভাষায় বিজ্ঞান পাঠের অভিজ্ঞতা আছে যাদের , তাদের পাশ্চাত্য পাঠকদের তুলনায় বেশি চেষ্টা করতে হবে ।
- ‘ পারিভাষিক শব্দ ‘ বলতে কী বোঝ ?
Ans: ‘ পারিভাষিক শব্দে ‘ – র অর্থ হল পরিভাষা – সম্বন্ধীয় । পরিভাষা এক ধরনের সংজ্ঞাবিশেষ , যার কোনোরকম অর্থান্তর ঘটে না । ইংরেজিতে একে ‘ Glossary ‘ বা Technical term ‘ বলে ।
- ‘ অনেক বৎসর পূর্বে … অনেক বছর আগের কোন্ প্রসঙ্গ এখানে উত্থাপন করা হয়েছে ?
অনেক বছর আগে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তি বিভিন্ন বিষয়ের পরিভাষা রচনা করেছিলেন । এখানে সেই প্রসঙ্গের কথা বলা হয়েছে ।
- বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের ত্রুটি কী ছিল ?
Ans: বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সঙ্গে যুক্ত বিদ্বান ব্যক্তিবর্গ পরিভাষা রচনায় উদ্যোগী হলেও তাঁরা একসঙ্গে কাজ না করে পৃথকভাবে কাজ করেছিলেন ।
- কবে , কাদের পৃষ্ঠপোষকতায় দ্বিতীয়বার পরিভাষা সমিতি নিযুক্ত হয়েছিল ?
Ans: ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন বিষয়ের দিপালদের নিয়ে যে – পরিভাষা সমিতি গঠন করা হয়েছিল , তাকেই দ্বিতীয় বারের পরিভাষা সমিতির নিযুক্তিকরণ বলা হয় ।
- কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিভাষা সমিতিতে কারা ছিলেন ?
Ans: ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে নিযুক্ত পরিভাষা সমিতিতে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বিভিন্ন বিজ্ঞানের অধ্যাপক , ভাষাতত্ত্ববিদ , সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত এবং কয়েকজন লেখককে নিযুক্ত করা হয়েছিল ।
- কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিভাষা সংকলনটি কতখানি সাফল্যমণ্ডিত হয়েছিল ?
Ans: কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিভাষা সংকলনটি লেখক রাজশেখর বসুর মতে খুব বড়ো নয় । এতে আরও শব্দের প্রয়োজন আছে এবং তার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন ।
- লেখক রাজশেখর বসু প্রয়োজন মতো বাংলা শব্দ পাওয়া না গেলে কী করা উচিত বলে জানিয়েছেন ?
Ans: রাজশেখর বসু জানিয়েছেন যে , প্রয়োজন মতো বাংলা শব্দ না – পাওয়া গেলে বৈজ্ঞানিক রচনায় ইংরেজি শব্দই বাংলা বানানে চালানো যেতে পারে ।
- ‘ কোনও বৈজ্ঞানিক সম্পর্ক বোঝা কঠিন / – এ কথা বলার কারণ কী ?
Ans: রাজশেখর বসুর মতে পাশ্চাত্য দেশের তুলনায় ভারতবর্ষের সাধারণ মানুষের প্রাথমিক বিজ্ঞানের সঙ্গে যথেষ্ট পরিচয় না থাকায় বৈজ্ঞানিক সম্পর্ক বোঝা কঠিন ।
- তখন বৈজ্ঞানিক সাহিত্য রচনা সুসাধ্য হবে । কখন সুসাধ্য হবে বলে লেখকের ধারণা ?
Ans: ভারতবর্ষের সাধারণ মানুষের প্রাথমিক বিজ্ঞান সম্বন্ধে ধারণা অত্যন্ত কম । এই দেশে বিজ্ঞানশিক্ষা বিস্তৃত হলে বৈজ্ঞানিক সাহিত্য রচনা সুসাধ্য হবে বলে লেখকের মত ।
- বিজ্ঞান আলোচনার রচনাপদ্ধতির মূল ত্রুটি কী ?
Ans: বিজ্ঞান আলোচনার রচনাপদ্ধতি এখনও বহু লেখকের আয়ত্তের বাইরে । অনেক ক্ষেত্রেই তাঁদের ভাষার আড়ষ্টতা ও ইংরেজির আক্ষরিক অনুবাদ রচনাকে দুর্বহ করে তোলে ।
- ‘ কিন্তু তাও কেউ কেউ লিখে থাকেন । —কী লেখার কথা বলা হয়েছে ?
Ans: ইংরেজি থেকে আক্ষরিক অনুবাদের ত্রুটির কথা বলতে গিয়ে লেখক ‘ Sensitized Paper’- এর বাংলা অনুবাদের কথা বলেছেন । এই শব্দটির অনুবাদ স্পর্শকাতর কাগজ ‘ করলেও , হওয়া উচিত ‘ সুগ্ৰাহী কাগজ ‘ ।
- ‘ এতে রচনা উৎকট হয় । — কী করলে রচনা উৎকট হয় ?
Ans: রাজশেখর বসুর মতানুসারে , অনেক লেখক তাঁদের বক্তবা ইংরেজিতে ভাবেন এবং যথার্থ বাংলা অনুবাদে তা প্রকাশ করার চেষ্টা করেন । এতে রচনা সাবলীলতা হারায় ।
- এতে রচনা উৎকট হয় ।— ‘ উৎকট ‘ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?
Ans: আলোচ্য উদ্ধৃতিটিতে ভাষার আড়ষ্টতা ও দুর্বোধ্যতা বোঝাতে ‘ উৎকট ’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ।
- ‘ এ রকম বর্ণনা বাংলা ভাষায় প্রকৃতিবিরুদ্ধ । -প্রকৃতিবিরুদ্ধ বলার কারণ কী ?
Ans: ইংরেজি থেকে বাংলা ভাষায় হুবহু অনুবাদ অর্থাৎ আক্ষরিক অনুবাদ সম্পর্কে বিতৃয়া প্রকাশ করতে গিয়ে লেখক বলেছেন যে , এটি বাংলা ভাষার প্রকৃতিবিরুদ্ধ ।
- The atomic engine has not even reached the blue print stage , ‘ — বাক্যটির যথার্থ বাংলা অনুবাদ কী হওয়া উচিত ।
Ans: উপরোক্ত ইংরেজি বাক্যটির যথার্থ বাংলা অনুবাদ হওয়া উচিত — ‘ পরমাণু ইঞ্জিনের নকশা পর্যন্ত এখনও প্রস্তুত হয়নি ।
- ‘ When sulphur burns in air the nitrogen does not take part in the reaction’— বাক্যটির একটি যথার্থ বাংলা অনুবাদ করো ।
Ans: উপরোক্ত ইংরেজি বাক্যটির যথার্থ বাংলা অনুবাদ হওয়া উচিত— যখন গন্ধক হাওয়ায় পোড়ে , তখন নাইট্রোজেনের কোনো পরিবর্তন হয় না ।
24.” বাংলা ভাষা বজায় থাকে । — এ কথা বলার অর্থ কী ?
Ans: আলোচ্য উদ্ধৃতির অর্থ হল ইংরেজি থেকে বাংলা আক্ষরিক অনুবাদের পরিবর্তে ভাবানুবাদ বাংলা ভাষার স্বকীয়তা ও সাবলীলতা বজায় রাখে ।
- এই ধারণা পুরোপুরি ঠিক নয় । কোন ধারণার কথা বলা হয়েছে ?
Ans: অনেকের মতে বিজ্ঞান আলোচনায় পারিভাষিক শব্দ বাদ দিয়ে সাধারণ শব্দ ব্যবহার করলে রচনা সহজ ও বোধগম্য হয় । কিন্তু এই ধারণা সম্পূর্ণ ঠিক নয় ।
- পরিভাষার উদ্দেশ্য কী ?
Ans: পরিভাষার উদ্দেশ্য হল , ভাষাকে সংক্ষিপ্ত করা এবং তার অর্থ সুনির্দিষ্ট করা । অনর্থক বর্ণনা পরিহার করে বিষয়কে সংক্ষিপ্তাকারে প্রকাশ করাই হল পরিভাষার কাজ ।
- পারিভাষিক শব্দের অর্থ পাঠককে বোঝানোর জন্য কোন্ পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত ?
Ans: সাধারণ মানুষের জন্য লেখা বৈজ্ঞানিক রচনায় অল্পপরিচিত বা নতুন পরিভাষা প্রথমবার প্রয়োগের সময় তার ব্যাখ্যা দেওয়া প্রয়োজন । পরে শুধু শব্দটি দিলেই চলে ।
- ‘ আমাদের আলংকারিকগণ শব্দের ত্রিবিধ কথা বলেছেন ‘ — কোন্ ‘ ত্রিবিধ কথা ” -র প্রসঙ্গ লেখক স্মরণ করেছেন ?
অথবা , ‘ আমাদের আলংকারিকগণ শব্দের ত্রিবিধ কথা বলেছেন— শব্দের ‘ ত্রিবিধ কথা কী ?
Ans: আমাদের আলংকারিকগণ শব্দের যে – ত্রিবিধ প্রসঙ্গের কথা উল্লেখ করেছেন , সেগুলি হল অভিধা , লক্ষণা ও ব্যঞ্ছনা ।
- অভিধা কাকে বলে ?
Ans: অভিধা হল শব্দের আভিধানিক অর্থ । যেমন , ‘ অরণ্য ‘ বলতে বোঝায় বন , জঙ্গল ইত্যাদি । এর চেয়ে বিশদ কোনো অর্থ বোঝায় না ।
- লক্ষণা বলতে কী বোঝায় ?
Ans: লক্ষণা হল শব্দের বৃত্তিবিশেষ । শব্দের মুখ্য অর্থের চেয়ে তার অন্য অর্থই যখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে , তখন তাকে বলে লক্ষণা । যেমন , ‘ অরণ্যের দিনরাত্রি ‘ – র অর্থ অরণ্যবাসীদের রোজনামচা ।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর | বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান (প্রবন্ধ) রাজশেখর বসু – মাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Bengali Bangla Bhashay Bigyan Question and Answer :
1. বিজ্ঞান – বিষয়ক বাংলা গ্রন্থের পাঠকদের যে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় , তাদের পরিচয় দাও ।
Ans: ‘ বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান ‘ প্রবন্ধের লেখক রাজশেখর বসু ইংরেজি জানেন না , অথবা অতিঅল্প জানেন বিজ্ঞান – বিষয়ক বাংলা গ্রন্থের পাঠকদের দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন । প্রথম শ্রেণিভুক্ত পাঠকেরা হয় ইংরেজি জানেন না , অথবা অতিঅল্প ইংরেজি জানেন । এই দলে পড়েন অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়েরা এবং অল্পশিক্ষিত বয়স্ক , লোকেরা । এঁদের বিজ্ঞানের সঙ্গে পূর্বপরিচয় থাকে না । কিছু ইংরেজি পারিভাষিক শব্দ তাঁরা জানেন , যেমন টাইফয়েড , মোটর , জেব্রা , আয়োডিন ইত্যাদি । অনেক স্থূল তথ্যও তাঁদের জানা থাকতে পারে । যেমন , জল আর কর্পূর উবে যায় , পিতলের চেয়ে অ্যালুমিনিয়াম হালকা ইত্যাদি । কিন্তু সুসংগঠিত বৈজ্ঞানিক জ্ঞান তাঁদের নেই । ইংরেজি ভাষার প্রভাবমুক্ত হওয়ায় এদের পক্ষে বাংলায় বিজ্ঞান পাঠ সহজতর হয় । দ্বিতীয় শ্রেণিভুক্ত পাঠক হলেন যাঁরা ইংরেজি জানেন এবং ইংরেজিতে কমবেশি বিজ্ঞানপাঠ করেছেন । এই ধরনের পাঠকের পক্ষে বাংলায় লেখা বিজ্ঞান পড়া ও আয়ত্ত করা একটু কঠিন ও সময়সাপেক্ষ । কারণ বাংলা ভাষায় লেখা বিজ্ঞান রচনা পড়ার সময় তাঁকে ইংরেজির প্রতি পক্ষপাতিত্ব বর্জন করে মাতৃভাষার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করতে হবে ।
2. এর মানে বুঝতে বাধা হয়নি / —কীসের মানে বুঝতে বাধা হয়নি । বাধা হওয়ার সম্ভাব্য কারণ কী হতে পারে ? মানে বুঝতে বাধা হয়নি ।
Ans: প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসু ছোটোবেলা থেকে বাংলায় লেখাপড়া করার কারণে ইংরেজির প্রভাবমুক্ত ছিলেন । লেখককে ছেলেবেলায় ব্রক্ষ্মমোহন মল্লিকের বাংলা জ্যামিতি পড়তে হয়েছিল । সেখানে নানান দুর্বোধ্য প্রতিজ্ঞাবাক্যের উল্লেখ ছিল , যেমন : ‘ এক নির্দিষ্ট সীমাবিশিষ্ট সরলরেখার ওপর এক সমবাহু ত্রিভুজ অঙ্কিত করিতে হইবে । ‘ এই জাতীয় দুর্বোধ্য প্রতিজ্ঞাবাক্য লেখকের বুঝতে অসুবিধা হয়নি , কারণ তাঁর মধ্যে ভাষাগত বিরোধী সংস্কার ছিল না । বাধা হওয়ার সম্ভাব্য কারণ পাঠকের কাছে পাঠ্য বিষয়বস্তুর অর্থ বুঝতে তখনই অসুবিধা হয় , যদি পাঠ্য বিষয়ের ভাষা পাঠকের স্পষ্টভাবে বোধগম্য না – হয় ।
যারা ছোটোবেলা থেকে ইংরেজি ভাষায় পঠনপাঠনে অভ্যস্ত , তাদের পক্ষে বাংলা ভাষায় রচিত বিজ্ঞান বিষয়ক সাহিত্যপাঠ একটু সমস্যাজনক হতে পারে । কারণ সেই সমস্ত পাঠকদের মস্তিষ্কের ভাষাগত বিরোধ তাদের অর্থ বোঝার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় । ভাষা একটি অভ্যাসের বিষয়বস্তু । এ বিষয়ে প্রাবন্ধিকের একটি উক্তি উদ্ধৃত করা যেতে পারে । উক্তিটি হল , ‘ যে লোক আজন্ম ইজার পরেছে তার পক্ষে হঠাৎ ধুতি পরা অভ্যাস করা একটু শক্ত ।
3. “ যে লোক আজন্ম ইজার পরেছে তার পক্ষে হঠাৎ ধুতি পরা অভ্যাস করা একটু শক্ত ।— ‘ ইজার ’ ও ‘ ধুতি ’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ? অভ্যাস করা একটু শক্ত বলার কারণ কী ?
Ans: লেখক রাজশেখর বসু তাঁর ‘ বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান ‘ প্রবন্ধে ‘ ইজার ’ ও ‘ ধুতি ’ শব্দদুটি রূপকার্থে ব্যবহার করেছেন । ‘ ইজার ‘ হল পাজামা বা প্যান্ট যা বিদেশি বিশেষ করে ইংরেজদের পোশাক । সেই অনুষঙ্গ ধরেই লেখক ইজারের রূপকে ইংরেজি ভাষাকে ইজার ও ধুতি বুঝিয়েছেন । একইভাবে বাঙালি পোশাক ধুতির অনুষঙ্গে বাংলা ভাষাকে বুঝিয়েছেন । যারা ছোটোবেলা থেকে ইংরেজি ভাষায় পঠনপাঠনে অভ্যস্ত তাদের বাংলায় বিজ্ঞান পাঠ যে কঠিন তা বোঝানোর জন্য উপমাটি ব্যবহার করা হয়েছে ।
ভাষা যদি বোধগম্য না হয় তবে বিষয়বস্তুর অর্থ স্পষ্ট হয় না । ছোট্ট থেকে ইংরেজি ভাষায় পঠনপাঠনে অভ্যস্ত এমন মানুষদের পক্ষে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানভিত্তিক সাহিত্যপাঠ একটু সমস্যাজনক হতে পারে । কেন – ন এদের মস্তিষ্কের ভাষাগত বিরোধ পারিভাষিক অর্থ কারণ বোঝার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় । কারণ তাঁরা কোনো একটি বিষয়ে ইংরেজি পরিভাষার সঙ্গে পরিচিত , বাংলা ভাষায় সেসব বিষয়ের পরিভাষার সাঙ্গে অভ্যস্ত হতে তাঁদের একটা মানসিক বিরোধ উপস্থিত হয় । এই বিরোধকে কটাক্ষ করেই প্রাবন্ধিকের উপরোক্ত উক্তিটি ।
4. ‘ বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান ‘ রচনায় প্রাবন্ধিক বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে যেসব অসুবিধার কথা বলেছেন তা আলোচনা করো ।
Ans: বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার পথে সম্ভাব্য বাধা সম্পর্কে রাজশেখর বসু তাঁর ‘ বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান ‘ প্রবন্ধে আলোচনা করেছেন । বাধাগুলি
> প্রথমত , ইংরেজি জানেন এবং ইংরেজিতে বিজ্ঞান পাঠ করেছেন এমন পাঠকের বাংলায় বিজ্ঞানচর্চা বেশ কঠিন ।
> দ্বিতীয়ত , বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ ও কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও উপযুক্ত পারিভাষিক শব্দের অভাব এ পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে ।
> তৃতীয়ত , পাশ্চাত্য দেশগুলির তুলনায় আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের বিজ্ঞানবোধ খুবই কম । সামান্য বিজ্ঞানবোধ না থাকলে বিজ্ঞানভিত্তিক রচনা বোধগম্য হয় না । তাই বাংলায় বিজ্ঞান রচনার ক্ষেত্রে সমস্যা থেকে গেছে ।
> চতুর্থত , অনেক লেখকের ভাষা আড়ষ্টতা ও ইংরেজির আক্ষরিক অনুবাদ দোষে দুষ্ট হয়ে রচনা তার সাবলীলতা হারায় ।
> পঞ্চমত , অনেকে পারিভাষিক শব্দ বাদ দিয়ে রচনাকে সহজবোধ্য করার ভাবনা ভাবলেও তা বাস্তবতা পায়নি । > ষষ্ঠত , উপমা ও রূপক ছাড়া অন্যান্য অলংকার বিজ্ঞানভিত্তিক রচনার গুরুত্বকে লঘু করে দেখায় ।
> সপ্তমত , শেষ বাধাটি হল ভুল তথ্য পরিবেশন । অনেকে না – জেনে কিংবা সামান্য জেনে বাংলায় বিজ্ঞান রচনায় ভুল তথ্য পরিবেশন করেন । প্রাবন্ধিকের মতে , আলোচিত বাধাগুলি অতিক্রম না করতে পারলে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চা ত্রুটিহীন হওয়া সম্ভব নয় ।
5. ‘ তাঁদের উদ্যোগের এই ত্রুটি ছিল যে … -কাদের , কোন উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে ? উক্ত ত্রুটির বিষয়টি পরিস্ফুট করো ।
Ans: বহু বছর আগে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন বিদ্যোৎসাহী পণ্ডিত – লেখক বিভিন্ন বিষয়ের বাংলা পরিভাষা রচনা করেছিলেন । এঁদের উদ্যোগটি প্রশংসনীয় হওয়া সত্ত্বেও কাজটি ছিল ত্রুটিপূর্ণ । প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসু ‘ বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান ‘ প্রবন্ধে সেই প্রসঙ্গে আলোচনাকালে এরূপ মন্তব্য করেছেন । জুটির বিষয় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের পণ্ডিতবর্গ নানা বিষয়ে পরিভাষা রচনা করলেও তার মধ্যে ত্রুটি ছিল । এর একটা বড়ো কারণ ছিল এই যে , তাঁরা একসঙ্গে কাজ না – করে পৃথকভাবে কাজ করেছিলেন । ফলে সংকলিত পরিভাষার মধ্যে সমতা আসেনি , একই ইংরেজি সংজ্ঞার বিভিন্ন ধরনের প্রতিশব্দ রচিত হয়েছে । এই বিষয়টি পাঠকদের মধ্যে সংশয় সৃষ্টি করতে পারে । কারণ , একই বিষয়ে একটিই সর্বসম্মত ও গ্রহণযোগ্য পরিভাষা নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি । এই পণ্ডিতবর্গ একত্রে কাজ করলে পরিভাষা রচনার কাজটি আরও সুসংহত ও সুচারু হতে পারত ।
6. কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিভাষা সমিতির সদস্য কারা ছিলেন । এঁদের প্রচেষ্টা সফল হয়েছিল কিনা , তা বুঝিয়ে দাও ।
Ans: রাজশেখর বসু রচিত ‘ বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান ‘ নামক প্রবন্ধ থেকে জানা যায় , ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে পরিভাষা রচনার উদ্দেশ্যে একটি সমিতি গঠিত হয়েছিল । এই সমিতির যাঁরা সদস্য ছিলেন , তাঁরা হলেন বিভিন্ন বিজ্ঞানের অধ্যাপক , ভাষাতত্ত্ববিদ , সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত এবং কয়েকজন লেখক । প্রচেষ্টার পরিণতি : কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে বিজ্ঞানের অধ্যাপক , ভাষাতত্ত্ববিদ , সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত ও লেখকদের নিয়ে যে পরিভাষা রচনা সমিতি গঠিত হয়েছিল , তাদের কাজ ইতিপূর্বে গঠিত বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের পরিভাষা সমিতির তুলনায় অনেক সুসংহত ও সফল হয়েছিল । কারণ , তাঁরা একযোগে কাজ করেছিলেন । পৃথকভাবে কাজ করার মধ্যে যে – বিচ্ছিন্নতা রয়েছে , তা কাজের সংহতিকে বিঘ্নিত করে । এঁদের ক্ষেত্রে সেই বিচ্ছিন্নতা অনুপস্থিত থাকায় তাঁদের সংকলনে সমতা এসেছে । তাতে পাঠকের পক্ষে অর্থ বোঝা সহজ হয়েছে । কিন্তু কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় – কৃত সংকলন খুব বড়ো নয় বলে আরও শব্দের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধ হয় । তাই প্রাবন্ধিক পারিভাষিক নির্মাণের দিকে জোর দিয়েছেন ।
7. ব্যাপকতার সঙ্গে সত্ত্বেও বৈজ্ঞানিক কিন্তু দরকার মতন বাংলা শব্দ পাওয়া না গেলেও বৈজ্ঞানিক রচনা চলতে পারে / –যুক্তিসহ আলোচনা করো ।
Ans: রাজশেখর বসু রচিত ‘ বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান ‘ নামক প্রবন্ধ থেকে জানা যায় , বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ ও কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে যে দুটি পরিভাষা সমিতি গঠিত হয়েছিল , তারা স্বয়ংসম্পূর্ণ পরিভাষা – সংকলন প্রস্তুত করতে ব্যর্থ হয়েছিল । সংকলনগুলি ছিল যথেষ্ট ত্রুটিপূর্ণ । কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় – কৃত পরিভাষা সংকলনটি তেমন বড়ো না – হওয়ায় , আরও বহু শব্দ সংযোজনের প্রয়োজন ছিল । তাই এই বিষয়টিকে অতিক্রম করতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়ে । এই সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসু জানিয়েছেন যে , যতদিন না উপযুক্ত ও প্রামাণ্য বাংলা পরিভাষা রচিত না – হয় , ততদিন বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান – সংক্রান্ত রচনার ক্ষেত্রে বাংলা বানানে ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করা চলতে পারে । বিশ্ববিদ্যালয় নিযুক্ত পরিভাষা সমিতি বহু ইংরেজি শব্দই বজায় রেখেছে এবং তাদের মতে নবাগত রাসায়নিক বস্তুর ইংরেজি নামই বাংলায় লেখা উচিত , যেমন– অক্সিজেন , প্যারা – ডাইক্লোরোবেনজিন । এ ছাড়া উদ্ভিদ ও প্রাণীর জাতিবাচক নামও ইংরেজি ভাষায় বাংলা বানানে লেখা যেতে পারে , যেমন- ম্যালভাসি , ফার্ন , আরথ্রোপোডা ইনসেক্টা ইত্যাদি ।
8 ‘ এ দেশে বিজ্ঞান শিক্ষার বিস্তার হলে এই অসুবিধা দূর হবে / —কোন্ অসুবিধার কথা বলা হয়েছে আলোচনা করে বুঝিয়ে দাও ।
Ans: প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসু তাঁর ‘ বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান ‘ নামক প্রবন্ধে স্বল্প পরিসরে পাশ্চাত্য দেশগুলির সঙ্গে ভারতবর্ষের বিজ্ঞানশিক্ষার তুলনামূলক আলোচনা করেছেন । তিনি দেখেছেন যে , পাশ্চাত্য দেশগুলির তুলনায় ভারতবর্ষের সাধারণ মানুষের বিজ্ঞান বিষয়ক জ্ঞান সীমিত । বিজ্ঞান সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান না থাকলে কোনো উচ্চমানের বৈজ্ঞানিক রচনা বোঝা এক অর্থে অসম্ভব । পাশ্চাত্য দেশগুলিতে পপুলার সায়েন্স বা সাধারণের জন্য বিজ্ঞান রচনা সহজসাধ্য , কারণ তা বোঝার মতো প্রাথমিক জ্ঞান সাধারণ মানুষের আছে । কিন্তু ভারতবর্ষের পরিস্থিতি আলাদা । বয়স্কদের জন্য রচিত বিজ্ঞানভিত্তিক সাহিত্যও গোড়া থেকে না লিখলে বোধগম্য হয় না । তাই সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে যাঁরা বিজ্ঞান লেখেন , এই বিষয়টি তাঁদেরও মনে রাখা দরকার । পরবর্তীকালে ভারতবর্ষে বিজ্ঞানশিক্ষা বিস্তারলাভ করলে এই সমস্যা দূর হবে বলে প্রাবন্ধিক মতামত প্রকাশ করেছেন ।
9. ‘ বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান ‘ প্রবন্ধের নামকরণটি কতখানি সার্থক হয়েছে , তা আলোচনা করো ।
Ans: ‘ নামকরণের সার্থকতা ‘ অংশটি দ্যাখো ।
10. ‘ এই দোষ থেকে মুক্ত না হলে বাংলা বৈজ্ঞানিক সাহিত্য সুপ্রতিষ্ঠিত হবে না ।— ‘ এই দোষ ‘ বলতে কোন দোষের কথা বলা হয়েছে ? লেখক এই দোষের যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন , তা আলোচনা করো ।
Ans: প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসুর মতে , বাংলায় বৈজ্ঞানিক সাহিত্য লেখার জন্য যে – রীতি অবলম্বন করা উচিত তা বহু লেখকই রপ্ত করতে পারেননি । তাদের ভাষা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আড়ষ্টতা ‘ এই দোষ – এর পরিচয় এবং ইংরেজির আক্ষরিক অনুবাদের দোষে দুষ্ট । প্রশ্নে সে – দোষের কথাই উল্লেখ করা হয়েছে ।
বৈজ্ঞানিক সাহিত্য লেখার ক্ষেত্রে বহু লেখক ইংরেজি শব্দের অর্থব্যাপ্তি বা ‘ Connotation ‘ বাংলা প্রতিশব্দে হুবহু আনতে চান । এমনটি করতে গিয়ে তারা অদ্ভুত কিছু শব্দের প্রয়োগ করেন । যেমন , ইংরেজি ‘ sensitive ‘ শব্দটির বহু ইংরেজি অর্থ আছে । যেমন , sensitive person , balance ইত্যাদি । আবার এগুলির বাংলা অর্থ হতে পারে ব্যথাপ্রবণ , সুগ্রাহী ইত্যাদি । কিন্তু ‘ sensitized paper’- এর বাংলা অনুবাদ কেউ যদি ‘ স্পর্শকাতর কাগজ ’ বলে তবে তা শুনতে অদ্ভুত লাগবে । বরং ‘ সুগ্রাহী কাগজ ‘ লিখলে বিষয়টি স্পষ্ট হয় । ইংরেজি বাক্যের আক্ষরিক অনুবাদও শ্রুতিকটু হয় । যেমন , The atomic engine has not even reached the blue print stage’- এর আক্ষরিক অনুবাদ ‘ পরমাণু ইঞ্জিন নীলচিত্রের অবস্থাতেও পৌঁছোয়নি ‘ । এটি একটি উৎকট অনুবাদ । তবে অংশটির ভাবানুবাদ ( ‘ পরমাণু ইঞ্জিনের নকশা পর্যন্ত এখনও প্রস্তুত হয়নি ‘ ) অনেকাংশেই শ্রুতিমধুর । এ থেকে স্পষ্ট যে , লেখক সহজ – সাবলীল অনুবাদের মাধ্যমে ভাষার আড়ষ্টতা ও আক্ষরিক অনুবাদের দোষ – ত্রুটি থেকে মুক্ত হতে চেয়েছেন ।
11. ‘ এই ধারণা পুরোপুরি ঠিক নয় । কোন ধারণা ? লেখক কীভাবে প্রমাণ করেছেন যে , এই ধারণা পুরোপুরি ঠিক নয় ?
Ans: অনেকে মনে করেন যে , বাংলা ভাষায় বৈজ্ঞানিক সাহিত্য লেখার সময় পারিভাষিক শব্দ বাদ দিয়ে বক্তব্য প্রকাশ করলে রচনা সহজ ধারণা হয় । লেখকের মতে , এই ধারণা বিভ্রান্তিকর ।
প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসু মনে করেন যে , কোথাও কোথাও পারিভাষিক শব্দ বাদ দিয়ে কাজ চললেও সর্বত্র তা সম্ভব নয় । যেমন , ‘ অমেরুদণ্ডী ‘ বোঝাতে লেখা যেতে পারে যেসব জন্তুর শিরদাঁড়া নেই । কিন্তু ‘ আলোকতরঙ্গ ’ – এর পরিবর্তে আলোর লেখকের প্রমাণ ধারণা পুরোপুরি ঠিক কাপন বা নাচন লেখা কখনোই বিজ্ঞানসম্মত নয় । এক্ষেত্রে কোনো বিষয় সম্পর্কে ভুল ধারণার সৃষ্টি হতে পারে । একইসঙ্গে বারবার কোনো বিষয়ের বর্ণনা ভাষার গতি যেমন শ্লথ করে , তেমনই তাকে স্থূল করে তোলে । তাই পরিভাষার ব্যবহার ভাষাকে সংক্ষিপ্ত ও সুনির্দিষ্ট অর্থবিশিষ্ট করে । সাধারণ মানুষের বোঝার জন্য বৈজ্ঞানিক সাহিত্যে প্রথমবার ব্যবহৃত কিংবা কম ব্যবহৃত পরিভাষার অর্থ ও প্রয়োগ দিয়ে দেওয়া উচিত । লেখার পরবর্তী অংশে কেবল পরিভাষাটি দিলেই চলে । এভাবেই প্রাবন্ধিক বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধে যথার্থ পরিভাষা ব্যবহারের পক্ষে সওয়াল করেছেন ।
12. ‘ তাতে পাঠকের অসুবিধে হয় । — কীসে পাঠকের অসুবিধা হয় ? অসুবিধা দূর করার জন্য কী কী করা প্রয়োজন ?
Ans: প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসুর মতে , বাংলায় বৈজ্ঞানিক সাহিত্য রচনায় পরিভাষার ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ । যথার্থ পরিভাষা ভাষাকে সর্বাঙ্গসুন্দর করে । পরিভাষা ছাড়া কোনো রচনায় বিষয়ের পাঠকের অসুবিধা বর্ণনায় বারবার একই কথা লিখে আলোচনা দীর্ঘায়িত করতে হয় । অবান্তর বর্ণনা পাঠকমনে অসুবিধা ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে ।
অনেক লেখকের মতে , পারিভাষিক শব্দ কম ব্যবহার করে বা সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে রচনাকে সহজতর করা যায় । কিন্তু ব্যাপারটা তা নয় , পরিভাষা বর্জন কোনো কোনো ক্ষেত্রে সম্ভব হলেও সর্বত্র তা অনুচিত । কারণ , ‘ অমেরুদণ্ডী ’ বোঝাতে ‘ যেসব জন্তুর শিরদাঁড়া নেই ‘ লেখা গেলেও ‘ আলোকতরঙ্গ ‘ বোঝাতে ‘ আলোর কাঁপন বা নাচন ‘ লিখলে ব্যাপারটা কিছুমাত্র সহজ হয় না । তাই যথার্থ পরিভাষার ব্যবহারেই পাঠকের অসুবিধা দূর করা সম্ভব । পরিভাষা লেখার ভাষাকে যেমন সংক্ষিপ্ত করে , তেমনই অর্থকে সুনির্দিষ্ট করে । সুতরাং পরিভাষা সম্পূর্ণ বর্জনের পরিবর্তে , বৈজ্ঞানিক রচনাগুলিতে স্বল্প পরিচিত বা অপরিচিত পরিভাষার সঙ্গে তার ব্যাখ্যা ও ইংরেজি নাম দেওয়া চলতে পারে । পরবর্তীকালে বিষয়টি পরিচিত হয়ে যাওয়ার পর শুধু বাংলা পরিভাষাটি দিলেই কাজ চলবে ।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর | বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান (প্রবন্ধ) রাজশেখর বসু – মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন | Madhyamik Bengali Suggestion :
1. ব্যাপকতার সঙ্গে সত্ত্বেও বৈজ্ঞানিক কিন্তু দরকার মতন বাংলা শব্দ পাওয়া না গেলেও বৈজ্ঞানিক রচনা চলতে পারে / –যুক্তিসহ আলোচনা করো ।
Answer: রাজশেখর বসু রচিত ‘ বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান ‘ নামক প্রবন্ধ থেকে জানা যায় , বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ ও কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে যে দুটি পরিভাষা সমিতি গঠিত হয়েছিল , তারা স্বয়ংসম্পূর্ণ পরিভাষা – সংকলন প্রস্তুত করতে ব্যর্থ হয়েছিল । সংকলনগুলি ছিল যথেষ্ট ত্রুটিপূর্ণ । কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় – কৃত পরিভাষা সংকলনটি তেমন বড়ো না – হওয়ায় , আরও বহু শব্দ সংযোজনের প্রয়োজন ছিল । তাই এই বিষয়টিকে অতিক্রম করতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়ে । এই সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসু জানিয়েছেন যে , যতদিন না উপযুক্ত ও প্রামাণ্য বাংলা পরিভাষা রচিত না – হয় , ততদিন বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান – সংক্রান্ত রচনার ক্ষেত্রে বাংলা বানানে ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করা চলতে পারে । বিশ্ববিদ্যালয় নিযুক্ত পরিভাষা সমিতি বহু ইংরেজি শব্দই বজায় রেখেছে এবং তাদের মতে নবাগত রাসায়নিক বস্তুর ইংরেজি নামই বাংলায় লেখা উচিত , যেমন– অক্সিজেন , প্যারা – ডাইক্লোরোবেনজিন । এ ছাড়া উদ্ভিদ ও প্রাণীর জাতিবাচক নামও ইংরেজি ভাষায় বাংলা বানানে লেখা যেতে পারে , যেমন- ম্যালভাসি , ফার্ন , আরথ্রোপোডা ইনসেক্টা ইত্যাদি ।
2. ‘ এ দেশে বিজ্ঞান শিক্ষার বিস্তার হলে এই অসুবিধা দূর হবে / —কোন্ অসুবিধার কথা বলা হয়েছে আলোচনা করে বুঝিয়ে দাও ।
Answer: প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসু তাঁর ‘ বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান ‘ নামক প্রবন্ধে স্বল্প পরিসরে পাশ্চাত্য দেশগুলির সঙ্গে ভারতবর্ষের বিজ্ঞানশিক্ষার তুলনামূলক আলোচনা করেছেন । তিনি দেখেছেন যে , পাশ্চাত্য দেশগুলির তুলনায় ভারতবর্ষের সাধারণ মানুষের বিজ্ঞান বিষয়ক জ্ঞান সীমিত । বিজ্ঞান সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান না থাকলে কোনো উচ্চমানের বৈজ্ঞানিক রচনা বোঝা এক অর্থে অসম্ভব । পাশ্চাত্য দেশগুলিতে পপুলার সায়েন্স বা সাধারণের জন্য বিজ্ঞান রচনা সহজসাধ্য , কারণ তা বোঝার মতো প্রাথমিক জ্ঞান সাধারণ মানুষের আছে । কিন্তু ভারতবর্ষের পরিস্থিতি আলাদা । বয়স্কদের জন্য রচিত বিজ্ঞানভিত্তিক সাহিত্যও গোড়া থেকে না লিখলে বোধগম্য হয় না । তাই সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে যাঁরা বিজ্ঞান লেখেন , এই বিষয়টি তাঁদেরও মনে রাখা দরকার । পরবর্তীকালে ভারতবর্ষে বিজ্ঞানশিক্ষা বিস্তারলাভ করলে এই সমস্যা দূর হবে বলে প্রাবন্ধিক মতামত প্রকাশ করেছেন ।
3. ‘ এই দোষ থেকে মুক্ত না হলে বাংলা বৈজ্ঞানিক সাহিত্য সুপ্রতিষ্ঠিত হবে না ।— ‘ এই দোষ ‘ বলতে কোন দোষের কথা বলা হয়েছে ? লেখক এই দোষের যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন , তা আলোচনা করো ।
Answer: প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসুর মতে , বাংলায় বৈজ্ঞানিক সাহিত্য লেখার জন্য যে – রীতি অবলম্বন করা উচিত তা বহু লেখকই রপ্ত করতে পারেননি । তাদের ভাষা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আড়ষ্টতা ‘ এই দোষ – এর পরিচয় এবং ইংরেজির আক্ষরিক অনুবাদের দোষে দুষ্ট । প্রশ্নে সে – দোষের কথাই উল্লেখ করা হয়েছে ।
বৈজ্ঞানিক সাহিত্য লেখার ক্ষেত্রে বহু লেখক ইংরেজি শব্দের অর্থব্যাপ্তি বা ‘ Connotation ‘ বাংলা প্রতিশব্দে হুবহু আনতে চান । এমনটি করতে গিয়ে তারা অদ্ভুত কিছু শব্দের প্রয়োগ করেন । যেমন , ইংরেজি ‘ sensitive ‘ শব্দটির বহু ইংরেজি অর্থ আছে । যেমন , sensitive person , balance ইত্যাদি । আবার এগুলির বাংলা অর্থ হতে পারে ব্যথাপ্রবণ , সুগ্রাহী ইত্যাদি । কিন্তু ‘ sensitized paper’- এর বাংলা অনুবাদ কেউ যদি ‘ স্পর্শকাতর কাগজ ’ বলে তবে তা শুনতে অদ্ভুত লাগবে । বরং ‘ সুগ্রাহী কাগজ ‘ লিখলে বিষয়টি স্পষ্ট হয় । ইংরেজি বাক্যের আক্ষরিক অনুবাদও শ্রুতিকটু হয় । যেমন , The atomic engine has not even reached the blue print stage’- এর আক্ষরিক অনুবাদ ‘ পরমাণু ইঞ্জিন নীলচিত্রের অবস্থাতেও পৌঁছোয়নি ‘ । এটি একটি উৎকট অনুবাদ । তবে অংশটির ভাবানুবাদ ( ‘ পরমাণু ইঞ্জিনের নকশা পর্যন্ত এখনও প্রস্তুত হয়নি ‘ ) অনেকাংশেই শ্রুতিমধুর । এ থেকে স্পষ্ট যে , লেখক সহজ – সাবলীল অনুবাদের মাধ্যমে ভাষার আড়ষ্টতা ও আক্ষরিক অনুবাদের দোষ – ত্রুটি থেকে মুক্ত হতে চেয়েছেন ।
4. ‘ এই ধারণা পুরোপুরি ঠিক নয় । কোন ধারণা ? লেখক কীভাবে প্রমাণ করেছেন যে , এই ধারণা পুরোপুরি ঠিক নয় ?
Answer: অনেকে মনে করেন যে , বাংলা ভাষায় বৈজ্ঞানিক সাহিত্য লেখার সময় পারিভাষিক শব্দ বাদ দিয়ে বক্তব্য প্রকাশ করলে রচনা সহজ ধারণা হয় । লেখকের মতে , এই ধারণা বিভ্রান্তিকর ।
প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসু মনে করেন যে , কোথাও কোথাও পারিভাষিক শব্দ বাদ দিয়ে কাজ চললেও সর্বত্র তা সম্ভব নয় । যেমন , ‘ অমেরুদণ্ডী ‘ বোঝাতে লেখা যেতে পারে যেসব জন্তুর শিরদাঁড়া নেই । কিন্তু ‘ আলোকতরঙ্গ ’ – এর পরিবর্তে আলোর লেখকের প্রমাণ ধারণা পুরোপুরি ঠিক কাপন বা নাচন লেখা কখনোই বিজ্ঞানসম্মত নয় । এক্ষেত্রে কোনো বিষয় সম্পর্কে ভুল ধারণার সৃষ্টি হতে পারে । একইসঙ্গে বারবার কোনো বিষয়ের বর্ণনা ভাষার গতি যেমন শ্লথ করে , তেমনই তাকে স্থূল করে তোলে । তাই পরিভাষার ব্যবহার ভাষাকে সংক্ষিপ্ত ও সুনির্দিষ্ট অর্থবিশিষ্ট করে । সাধারণ মানুষের বোঝার জন্য বৈজ্ঞানিক সাহিত্যে প্রথমবার ব্যবহৃত কিংবা কম ব্যবহৃত পরিভাষার অর্থ ও প্রয়োগ দিয়ে দেওয়া উচিত । লেখার পরবর্তী অংশে কেবল পরিভাষাটি দিলেই চলে । এভাবেই প্রাবন্ধিক বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধে যথার্থ পরিভাষা ব্যবহারের পক্ষে সওয়াল করেছেন ।
5. ‘ তাতে পাঠকের অসুবিধে হয় । — কীসে পাঠকের অসুবিধা হয় ? অসুবিধা দূর করার জন্য কী কী করা প্রয়োজন ?
Answer: প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসুর মতে , বাংলায় বৈজ্ঞানিক সাহিত্য রচনায় পরিভাষার ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ । যথার্থ পরিভাষা ভাষাকে সর্বাঙ্গসুন্দর করে । পরিভাষা ছাড়া কোনো রচনায় বিষয়ের পাঠকের অসুবিধা বর্ণনায় বারবার একই কথা লিখে আলোচনা দীর্ঘায়িত করতে হয় । অবান্তর বর্ণনা পাঠকমনে অসুবিধা ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে ।
অনেক লেখকের মতে , পারিভাষিক শব্দ কম ব্যবহার করে বা সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে রচনাকে সহজতর করা যায় । কিন্তু ব্যাপারটা তা নয় , পরিভাষা বর্জন কোনো কোনো ক্ষেত্রে সম্ভব হলেও সর্বত্র তা অনুচিত । কারণ , ‘ অমেরুদণ্ডী ’ বোঝাতে ‘ যেসব জন্তুর শিরদাঁড়া নেই ‘ লেখা গেলেও ‘ আলোকতরঙ্গ ‘ বোঝাতে ‘ আলোর কাঁপন বা নাচন ‘ লিখলে ব্যাপারটা কিছুমাত্র সহজ হয় না । তাই যথার্থ পরিভাষার ব্যবহারেই পাঠকের অসুবিধা দূর করা সম্ভব । পরিভাষা লেখার ভাষাকে যেমন সংক্ষিপ্ত করে , তেমনই অর্থকে সুনির্দিষ্ট করে । সুতরাং পরিভাষা সম্পূর্ণ বর্জনের পরিবর্তে , বৈজ্ঞানিক রচনাগুলিতে স্বল্প পরিচিত বা অপরিচিত পরিভাষার সঙ্গে তার ব্যাখ্যা ও ইংরেজি নাম দেওয়া চলতে পারে । পরবর্তীকালে বিষয়টি পরিচিত হয়ে যাওয়ার পর শুধু বাংলা পরিভাষাটি দিলেই কাজ চলবে ।
6. বিজ্ঞান – বিষয়ক বাংলা গ্রন্থের পাঠকদের যে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় , তাদের পরিচয় দাও ।
Answer: ‘ বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান ‘ প্রবন্ধের লেখক রাজশেখর বসু ইংরেজি জানেন না , অথবা অতিঅল্প জানেন বিজ্ঞান – বিষয়ক বাংলা গ্রন্থের পাঠকদের দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন । প্রথম শ্রেণিভুক্ত পাঠকেরা হয় ইংরেজি জানেন না , অথবা অতিঅল্প ইংরেজি জানেন । এই দলে পড়েন অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়েরা এবং অল্পশিক্ষিত বয়স্ক , লোকেরা । এঁদের বিজ্ঞানের সঙ্গে পূর্বপরিচয় থাকে না । কিছু ইংরেজি পারিভাষিক শব্দ তাঁরা জানেন , যেমন টাইফয়েড , মোটর , জেব্রা , আয়োডিন ইত্যাদি । অনেক স্থূল তথ্যও তাঁদের জানা থাকতে পারে । যেমন , জল আর কর্পূর উবে যায় , পিতলের চেয়ে অ্যালুমিনিয়াম হালকা ইত্যাদি । কিন্তু সুসংগঠিত বৈজ্ঞানিক জ্ঞান তাঁদের নেই । ইংরেজি ভাষার প্রভাবমুক্ত হওয়ায় এদের পক্ষে বাংলায় বিজ্ঞান পাঠ সহজতর হয় । দ্বিতীয় শ্রেণিভুক্ত পাঠক হলেন যাঁরা ইংরেজি জানেন এবং ইংরেজিতে কমবেশি বিজ্ঞানপাঠ করেছেন । এই ধরনের পাঠকের পক্ষে বাংলায় লেখা বিজ্ঞান পড়া ও আয়ত্ত করা একটু কঠিন ও সময়সাপেক্ষ । কারণ বাংলা ভাষায় লেখা বিজ্ঞান রচনা পড়ার সময় তাঁকে ইংরেজির প্রতি পক্ষপাতিত্ব বর্জন করে মাতৃভাষার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করতে হবে ।
7. এর মানে বুঝতে বাধা হয়নি / —কীসের মানে বুঝতে বাধা হয়নি । বাধা হওয়ার সম্ভাব্য কারণ কী হতে পারে ? মানে বুঝতে বাধা হয়নি ।
Answer: প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসু ছোটোবেলা থেকে বাংলায় লেখাপড়া করার কারণে ইংরেজির প্রভাবমুক্ত ছিলেন । লেখককে ছেলেবেলায় ব্রক্ষ্মমোহন মল্লিকের বাংলা জ্যামিতি পড়তে হয়েছিল । সেখানে নানান দুর্বোধ্য প্রতিজ্ঞাবাক্যের উল্লেখ ছিল , যেমন : ‘ এক নির্দিষ্ট সীমাবিশিষ্ট সরলরেখার ওপর এক সমবাহু ত্রিভুজ অঙ্কিত করিতে হইবে । ‘ এই জাতীয় দুর্বোধ্য প্রতিজ্ঞাবাক্য লেখকের বুঝতে অসুবিধা হয়নি , কারণ তাঁর মধ্যে ভাষাগত বিরোধী সংস্কার ছিল না । বাধা হওয়ার সম্ভাব্য কারণ পাঠকের কাছে পাঠ্য বিষয়বস্তুর অর্থ বুঝতে তখনই অসুবিধা হয় , যদি পাঠ্য বিষয়ের ভাষা পাঠকের স্পষ্টভাবে বোধগম্য না – হয় ।
যারা ছোটোবেলা থেকে ইংরেজি ভাষায় পঠনপাঠনে অভ্যস্ত , তাদের পক্ষে বাংলা ভাষায় রচিত বিজ্ঞান বিষয়ক সাহিত্যপাঠ একটু সমস্যাজনক হতে পারে । কারণ সেই সমস্ত পাঠকদের মস্তিষ্কের ভাষাগত বিরোধ তাদের অর্থ বোঝার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় । ভাষা একটি অভ্যাসের বিষয়বস্তু । এ বিষয়ে প্রাবন্ধিকের একটি উক্তি উদ্ধৃত করা যেতে পারে । উক্তিটি হল , ‘ যে লোক আজন্ম ইজার পরেছে তার পক্ষে হঠাৎ ধুতি পরা অভ্যাস করা একটু শক্ত ।
8. “ যে লোক আজন্ম ইজার পরেছে তার পক্ষে হঠাৎ ধুতি পরা অভ্যাস করা একটু শক্ত ।— ‘ ইজার ’ ও ‘ ধুতি ’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ? অভ্যাস করা একটু শক্ত বলার কারণ কী ?
Answer: লেখক রাজশেখর বসু তাঁর ‘ বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান ‘ প্রবন্ধে ‘ ইজার ’ ও ‘ ধুতি ’ শব্দদুটি রূপকার্থে ব্যবহার করেছেন । ‘ ইজার ‘ হল পাজামা বা প্যান্ট যা বিদেশি বিশেষ করে ইংরেজদের পোশাক । সেই অনুষঙ্গ ধরেই লেখক ইজারের রূপকে ইংরেজি ভাষাকে ইজার ও ধুতি বুঝিয়েছেন । একইভাবে বাঙালি পোশাক ধুতির অনুষঙ্গে বাংলা ভাষাকে বুঝিয়েছেন । যারা ছোটোবেলা থেকে ইংরেজি ভাষায় পঠনপাঠনে অভ্যস্ত তাদের বাংলায় বিজ্ঞান পাঠ যে কঠিন তা বোঝানোর জন্য উপমাটি ব্যবহার করা হয়েছে ।
ভাষা যদি বোধগম্য না হয় তবে বিষয়বস্তুর অর্থ স্পষ্ট হয় না । ছোট্ট থেকে ইংরেজি ভাষায় পঠনপাঠনে অভ্যস্ত এমন মানুষদের পক্ষে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানভিত্তিক সাহিত্যপাঠ একটু সমস্যাজনক হতে পারে । কেন – ন এদের মস্তিষ্কের ভাষাগত বিরোধ পারিভাষিক অর্থ কারণ বোঝার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় । কারণ তাঁরা কোনো একটি বিষয়ে ইংরেজি পরিভাষার সঙ্গে পরিচিত , বাংলা ভাষায় সেসব বিষয়ের পরিভাষার সাঙ্গে অভ্যস্ত হতে তাঁদের একটা মানসিক বিরোধ উপস্থিত হয় । এই বিরোধকে কটাক্ষ করেই প্রাবন্ধিকের উপরোক্ত উক্তিটি ।
9. ‘ বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান ‘ রচনায় প্রাবন্ধিক বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে যেসব অসুবিধার কথা বলেছেন তা আলোচনা করো ।
Answer: বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার পথে সম্ভাব্য বাধা সম্পর্কে রাজশেখর বসু তাঁর ‘ বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান ‘ প্রবন্ধে আলোচনা করেছেন । বাধাগুলি
> প্রথমত , ইংরেজি জানেন এবং ইংরেজিতে বিজ্ঞান পাঠ করেছেন এমন পাঠকের বাংলায় বিজ্ঞানচর্চা বেশ কঠিন ।
> দ্বিতীয়ত , বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ ও কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও উপযুক্ত পারিভাষিক শব্দের অভাব এ পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে ।
> তৃতীয়ত , পাশ্চাত্য দেশগুলির তুলনায় আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের বিজ্ঞানবোধ খুবই কম । সামান্য বিজ্ঞানবোধ না থাকলে বিজ্ঞানভিত্তিক রচনা বোধগম্য হয় না । তাই বাংলায় বিজ্ঞান রচনার ক্ষেত্রে সমস্যা থেকে গেছে ।
> চতুর্থত , অনেক লেখকের ভাষা আড়ষ্টতা ও ইংরেজির আক্ষরিক অনুবাদ দোষে দুষ্ট হয়ে রচনা তার সাবলীলতা হারায় ।
> পঞ্চমত , অনেকে পারিভাষিক শব্দ বাদ দিয়ে রচনাকে সহজবোধ্য করার ভাবনা ভাবলেও তা বাস্তবতা পায়নি । > ষষ্ঠত , উপমা ও রূপক ছাড়া অন্যান্য অলংকার বিজ্ঞানভিত্তিক রচনার গুরুত্বকে লঘু করে দেখায় ।
> সপ্তমত , শেষ বাধাটি হল ভুল তথ্য পরিবেশন । অনেকে না – জেনে কিংবা সামান্য জেনে বাংলায় বিজ্ঞান রচনায় ভুল তথ্য পরিবেশন করেন । প্রাবন্ধিকের মতে , আলোচিত বাধাগুলি অতিক্রম না করতে পারলে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চা ত্রুটিহীন হওয়া সম্ভব নয় ।
10. ‘ তাঁদের উদ্যোগের এই ত্রুটি ছিল যে … -কাদের , কোন উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে ? উক্ত ত্রুটির বিষয়টি পরিস্ফুট করো ।
Answer: বহু বছর আগে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন বিদ্যোৎসাহী পণ্ডিত – লেখক বিভিন্ন বিষয়ের বাংলা পরিভাষা রচনা করেছিলেন । এঁদের উদ্যোগটি প্রশংসনীয় হওয়া সত্ত্বেও কাজটি ছিল ত্রুটিপূর্ণ । প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসু ‘ বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান ‘ প্রবন্ধে সেই প্রসঙ্গে আলোচনাকালে এরূপ মন্তব্য করেছেন । জুটির বিষয় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের পণ্ডিতবর্গ নানা বিষয়ে পরিভাষা রচনা করলেও তার মধ্যে ত্রুটি ছিল । এর একটা বড়ো কারণ ছিল এই যে , তাঁরা একসঙ্গে কাজ না – করে পৃথকভাবে কাজ করেছিলেন । ফলে সংকলিত পরিভাষার মধ্যে সমতা আসেনি , একই ইংরেজি সংজ্ঞার বিভিন্ন ধরনের প্রতিশব্দ রচিত হয়েছে । এই বিষয়টি পাঠকদের মধ্যে সংশয় সৃষ্টি করতে পারে । কারণ , একই বিষয়ে একটিই সর্বসম্মত ও গ্রহণযোগ্য পরিভাষা নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি । এই পণ্ডিতবর্গ একত্রে কাজ করলে পরিভাষা রচনার কাজটি আরও সুসংহত ও সুচারু হতে পারত ।
11. কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিভাষা সমিতির সদস্য কারা ছিলেন । এঁদের প্রচেষ্টা সফল হয়েছিল কিনা , তা বুঝিয়ে দাও ।
Answer: রাজশেখর বসু রচিত ‘ বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান ‘ নামক প্রবন্ধ থেকে জানা যায় , ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে পরিভাষা রচনার উদ্দেশ্যে একটি সমিতি গঠিত হয়েছিল । এই সমিতির যাঁরা সদস্য ছিলেন , তাঁরা হলেন বিভিন্ন বিজ্ঞানের অধ্যাপক , ভাষাতত্ত্ববিদ , সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত এবং কয়েকজন লেখক । প্রচেষ্টার পরিণতি : কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে বিজ্ঞানের অধ্যাপক , ভাষাতত্ত্ববিদ , সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত ও লেখকদের নিয়ে যে পরিভাষা রচনা সমিতি গঠিত হয়েছিল , তাদের কাজ ইতিপূর্বে গঠিত বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের পরিভাষা সমিতির তুলনায় অনেক সুসংহত ও সফল হয়েছিল । কারণ , তাঁরা একযোগে কাজ করেছিলেন । পৃথকভাবে কাজ করার মধ্যে যে – বিচ্ছিন্নতা রয়েছে , তা কাজের সংহতিকে বিঘ্নিত করে । এঁদের ক্ষেত্রে সেই বিচ্ছিন্নতা অনুপস্থিত থাকায় তাঁদের সংকলনে সমতা এসেছে । তাতে পাঠকের পক্ষে অর্থ বোঝা সহজ হয়েছে । কিন্তু কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় – কৃত সংকলন খুব বড়ো নয় বলে আরও শব্দের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধ হয় । তাই প্রাবন্ধিক পারিভাষিক নির্মাণের দিকে জোর দিয়েছেন ।
©kamaleshforeducation.in(2023)