অষ্টম শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর || দ্বিতীয় অধ্যায় আঞ্চলিক শক্তির উত্থান প্রশ্ন উত্তর || Class 8th History Questions And Answers Chapter -2 - Q A School

আঞ্চলিক শক্তির উত্থান (দ্বিতীয় অধ্যায়)

অষ্টম শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর | 

MCQ | আঞ্চলিক শক্তির উত্থান (দ্বিতীয় অধ্যায়)

 

[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান 1]

  1. পলাশির যুদ্ধ হয়েছিল –

(A) 1757 খ্রিস্টাব্দের 20 জুন 

(B) 1757 খ্রিস্টাব্দের 21 জুন

(C) 1757 খ্রিস্টাব্দের 22 জুন 

(D) 1757 খ্রিস্টাব্দের 23 জুন

Ans: (D) 1757 খ্রিস্টাব্দের 23 জুন।

  1. 1765 খ্রিঃ দেওয়ানি লাভের সময় বাংলার নবাব কে ছিলেন?

(A) মিরজাফর 

(B) মিরকাশিম 

(C) নজম -উদ-দৌলা 

(D) মির-উদ্দিন 

Ans: (C) নজম -উদ-দৌলা।

  1. মোগল শাসনকে কারা বিপর্যস্ত করেছিল?

(A) অভিজাতদের দলাদলি 

(B) বহিরাক্রমন 

(C) জায়গিরদার ও মনসবদারি সংকট 

(D) কোনটিই নয়

Ans: (C) জায়গিরদার ও মনসবদারি সংকট ।

  1. অন্ধকূপ হত্যা প্রচারক ছিলেন –

(A) রজার ড্রেক 

(B) অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় 

(C) হলওয়েল 

(D) রবার্ট ক্লাইভ

Ans: (C) হলওয়েল।

  1. অধীনতামূলক মিত্রতা নীতিকে প্রবর্তন করেন-

(A) ওয়েলেসলি 

(B) কর্নওয়ালিস 

(C) ডালহৌসি 

(D) রিপন

Ans: (A) ওয়েলেসলি প্রবর্তন করেন।

  1. হায়দ্রাবাদ রাজ্যকে প্রতিষ্ঠা করেন?

(A) মহম্মদ শাহ 

(B) ফাররুখশিয়র 

(C) মির কামার উদ-দিন খান সিদ্দিকি 

(D) মুবারিজ খান 

Ans: (C) মির কামার উদ-দিন খান সিদ্দিকি প্রতিষ্ঠা করেন।

  1. দ্বৈত শাসনব্যবস্থায় বাংলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব ছিল –

(A) নায়েব নাজিমের উপর 

(B) নবাব নজম উদ- দৌলার উপর

(C) ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির উপর 

(D) রানি ভিক্টোরিয়ার উপর। 

Ans: (B) নবাব নজম উদ- দৌলার উপর।

  1. ৭৬-এর মন্বন্তর হয়েছিল –

(A) 1176 বঙ্গাব্দে 

(B) 1276 বঙ্গাব্দে 

(C) 1376 বঙ্গাব্দে 

(D) 1476 বঙ্গাব্দে 

Ans: (A) 1176 বঙ্গাব্দে ।

  1. সিরাজ 1756 খ্রিঃ কলকাতা আক্রমণ করলে ইংরেজরা কোথায় পালিয়ে যায়?

(A) পলতায় 

(B) ফলতায় 

(C) বজবজে 

(D) কোনটিই নয়

Ans: (B) ফলতায় পালিয়ে যায়।

  1. বাংলার প্রথম গভর্নর ছিলেন –

(A) ভেরেলেস্ট 

(B) রবার্ট ক্লাইভ 

(C) লর্ড ক্যানিং 

(D) লর্ড ডালহৌসি 

Ans: (B) রবার্ট ক্লাইভ।

অতি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর (VSAQ Question and Answer 🙂

আঞ্চলিক শক্তির উত্থান (দ্বিতীয় অধ্যায়)   

[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান 1]

  1. পণ্ডিচেরির ফরাসি গভর্নর কে ছিলেন ? 

Ans: পণ্ডিচেরির ফরাসি গভর্নর ছিলেন জোসেফ দুপ্নে। 

  1. লাহোরের চুক্তি করে স্বাক্ষর হয়েছিল ? 

Ans: ১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দে লাহোরের চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। 

  1. সলবাইয়ের সন্ধি করে স্বাক্ষর হয়েছিল ?

Ans: ১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে সলবাইয়ের সন্ধি স্বাক্ষর হয়েছিল । 

  1. বেসিনের সন্ধি করে স্বাক্ষর হয়েছিল ?

Ans: ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে বেসিনের স্বাক্ষর হয়েছিল । 

  1. ‘ অন্ধকূপ হত্যা ’ ঘটনাটি কে অতিরঞ্জন বলে প্রমাণ করেছিলেন ?

Ans: ঐতিহাসিক অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় ।

  1. কত খ্রিস্টাব্দে রাজস্থান থেকে হিরাপদ শাহ পাটনায় চলে যান ? 

Ans: ১৬৫২ খ্রিস্টাব্দে । 

  1. হিরাপদ শাহের বড়ো ছেলের নাম কী ? 

Ans: মানিকচাঁদ ।

  1. ফতেহচাদ কী উপাধি পান ? 

Ans: তিনি জগৎ শেঠ উপাধি পান । 

  1. কত খ্রিস্টাব্দে মুর্শিদকুলি মারা যান ? 

Ans: ১৭২৭ খ্রিস্টাব্দে মুর্শিদকুলি মারা যান । 

  1. তৃতীয় ইঙ্গ মারাঠা যুদ্ধে কে বিভিন্ন মারাঠা গোষ্ঠীকে একজোট করেছিলেন ? 

Ans: পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও । 

  1. কত খ্রিস্টাব্দে বাংলার নবাব ও মারাঠাদের মধ্যে সন্ধি হয় ? 

Ans: ১৭৫১ খ্রিস্টাব্দে । 

  1. কত খ্রিস্টাব্দে বক্সারের যুদ্ধ ঘটে ? 

Ans: ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে । 

  1. কার শাসনকালে রেসিডেন্টরা সাবধানতার বদলে আগ্রাসী নীতি নিয়েছিলেন ? 

Ans: লর্ড ওয়েলেসলির শাসনকালে । 

  1. কে ভারতে আসার পর সাময়িকভাবে রেসিডেন্সি ব্যবস্থার আগ্রাসন থমকে যায় ।

Ans: লর্ড কর্ণওয়ালিশ ।

  1. কোম্পানির দেওয়ানি লাভের সময় মুঘল সম্রাট কে ছিলেন ?

Ans: মুঘল সম্রাট ছিলেন দ্বিতীয় শাহ আলম ।

  1. কত খ্রিস্টাব্দে চতুর্থ ইঙ্গ মহীশূর যুদ্ধ হয় ? 

Ans: ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে চতুর্থ ইঙ্গ মহীশূর যুদ্ধ হয় । 

  1. পেশোয়া নারায়ণ রাওকে কে হত্যা করেন ?

Ans: রঘুনাথ রাও । 

  1. মিরজাফরের মৃত্যুর পর কে বাংলার নবাব হয়েছিলেন ?

Ans: মিরজাফরের মৃত্যুর পর বাংলার নবাব হন তাঁর পুত্র নজম – উদ – দৌলা ।

  1. মুর্শিদাবাদের বিখ্যাত মূলধন বিনিয়োগকারীর নাম কী?

Ans: মুর্শিদাবাদের বিখ্যাত মূলধন বিনিয়োগকারীর নাম হল জগৎ শেঠ।

  1. 1760 খ্রিস্টাব্দে মির জাফরের পর বাংলার নবাব কে হয়েছিলেন?

Ans: 1760 খ্রিস্টাব্দে মির জাফরের পর বাংলার নবাব হয়েছিলেন মির কাশিম।

  1. কলকাতা দখল করে সিরাজ-উদ-দৌলা কলকাতার কী নাম রাখেন?

Ans: কলকাতা দখল করে সিরাজ-উদ-দৌলা কলকাতার নাম রাখেন আলিনগর।

  1. বাংলায় দ্বৈত শাসন কে প্রবর্তন করেন? 

Ans: লর্ড ক্লাইভ বাংলায় দ্বৈত শাসন কে প্রবর্তন করেন।

  1. কত খ্রিস্টাব্দে ঔরঙ্গজেবের মৃত্যু হয় ? 

Ans: ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে ঔরঙ্গজেবের মৃত্যু হয় । 

  1. পলাশির যুদ্ধ কৰে ঘটেছিল ? 

Ans: ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশির যুদ্ধ হয় । 

  1. কত সালে কার নেতৃত্বে পারসিক আক্রমণ হয় ? 

Ans: নাদির শাহের নেতৃত্বে ১৭৩৮-৩৯ খ্রিস্টাব্দে পারসিক আক্রমণ হয় । 

  1. কবে মুর্শিদকুলি খাঁ বাংলার নাজিম পদ লাভ করেন ? 

Ans: ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দের মুর্শিদকুলি খা বাংলার নাজিম পদ লাভ করেন । 

  1. কত সালে কার নেতৃত্বে দিল্লিতে আফগান আক্রমণ ঘটে ? 

Ans: ১৭৫৬-৫৭ খ্রিস্টাব্দে আহমদ শাহ আবদালির নেতৃত্বে দিল্লিতে আফগান আক্রমণ ঘটে ।

  1. কবে আলিবর্দি খাঁ মারা যান ? 

Ans: ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে আলিবর্দি মারা যান । 

  1. হায়দরাবাদ রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা কে ? 

Ans: মির ঝামার উদ – দিন খান ছিলেন হায়দরাবাদ রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা।

  1. হায়দরাবাদ  কবে  থেকে নিজামের শাসনে আসে?

Ans: ১৭৪০ খ্রিস্টাব্দ থেকে হায়দরাবাদ নিজামের শাসনে আসে । 

31.অযোধ্যা কার নেতৃত্বে আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে স্থান পায় ?

Ans: সাদাব খানের নেতৃত্বে অযোধ্যা আশ্তলিক শক্তি হিসেবে স্থান পায় । 

32 , কবে অযোধ্যা রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হয় ? 

Ans: ১৭২২ খ্রিস্টাব্দে অযোধ্যা রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হয় । 

  1. আলিনগরের সন্ধি করে স্বাক্ষর হয়েছিল ?

Ans: ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে আলিনগরের সন্ধি স্বাক্ষর হয়েছিল  । 

  1. মিরকাশিম কবে নবাব পদ লাভ করেন ? 

Ans: মিরকাশিম ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে ওই পদ লাভ করেন। 

  1. ছিয়াত্তরের মন্বন্তর করে হয়েছিল ? 

Ans: ইংরাজির ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে এবং বাংলার ১১৭৬ বঙ্গাব্দে । 

  1. অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির প্রবর্তক কে ? 

Ans: লর্ড ওয়েলেসলি অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির প্রবর্তক । 

  1. স্বত্ববিলোপ নীতির প্রবর্তক কে ? 

Ans: লর্ড ডালহৌসি স্বত্ববিলোপ নীতির প্রবর্তক । 

  1. বন্দিবাসের যুদ্ধ করে হয়েছিল ? 

Ans: ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে বন্দিবাসের যুদ্ধ হয়েছিল । 

  1. ভারতে ফরাসিদের উপনিবেশ কোথায় ছিল ? 

Ans: ভারতে চন্দননগর ও পণ্ডিচেরি ছিল ফরাসি উপনিবেশ । 

  1. সিপাহী বিদ্রোহ কত খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত হয়?

Ans: সিপাহী বিদ্রোহ ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দে সংঘটিত হয়।

 

সংক্ষিপ্ত ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর (SAQ Short Question and Answer)

আঞ্চলিক শক্তির উত্থান (দ্বিতীয় অধ্যায়) 

[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান 2]

  1. কার শাসনকালে মুঘলদের হাত থেকে সুবা বাংলার অধিকার বেরিয়ে যায় ? 

Ans: আলিবর্দি খানের শাসনকালে মুঘলদের হাত থেকে সুবা বাংলার অধিকার বেরিয়ে যায় ।

  1. কে কোথায় কাটরা মসজিদে প্রতিষ্ঠা করেন ?

Ans: মুর্শিদকুলি খান মুর্শিদাবাদে কাটরা মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন । 

  1. আলিনগরের সন্ধি কাদের মধ্যে ঘটেছিল?

Ans: আলিনগরের সন্ধি সাক্ষরিত হয় সিরাজ ও ব্রিটিশ কোম্পানির মধ্যে।

  1. ছিয়াত্তরের মনমন্তরের সময় বাংলার নবাব কে ছিলেন?

Ans: ছিয়াত্তরের মনমন্তরের সময় বাংলার নবাব  ছিলেন নজম-উদ-দ্দৌলা।

  1. বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব কে ছিলেন?

Ans: বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব ছিলেন সিরাজউদ্দৌলা মতান্তরে মীরকাশীম।

  1. সিরাজের কোলকাতা আক্রমণের কালে ইংরেজ গভর্নর কে ছিলেন?

Ans: সিরাজের কোলকাতা আক্রমণের কালে ইংরেজ গভর্নর ছিলেন ড্রেক।

  1. দেয়ানি লাভের সময় বাংলার নবাব কে ছিলেন?

Ans: দেয়ানি লাভের সময় বাংলার নবাব ছিলেন নজম-উদ-দ্দৌলা।

  1. ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ কাকে বলে?

Ans: ১৭৬৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৭৯৯ খ্রিঃ মধ্যে চারটি যুদ্ধ হয় ব্রিটিশ কোম্পানি ও মহীশুরের মধ্যে, যেগুলিকে ইঙ্গ-মহীশুর যুদ্ধ বলা হয়।

  1. মানিকটাঁদ কোথায় মহাজনি কারবার শুরু করেন ? মানিকচাদের পর কে তাঁর ব্যবসার হাল ধরেন ? 

Ans: মানিকচাঁদ ঢাকায় মহাজনি কারবার শুরু করেন । পরে তাঁর ভাগ্নে ফতেহচাঁদ তাঁর ব্যবসার হাল ধরেন ।

  1. কোন্ সময় কারা বাংলা ও উড়িষ্যার বিভিন্ন অঞ্চলে লুঠতরাজ ও আক্রমণ চালিয়ে ছিল ? 

Ans: ১৭৪২ থেকে ১৭৫১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মারাঠারা এই লুঠতরাজ ও আক্রমণ চালিয়ে ছিল ।

  1. টিপু সুলতান কোথাকার শাসক ছিলেন । তাঁর রাজধানীর নাম কী ছিল ? 

Ans: টিপু সুলতান মহীশূরের শাসক ছিলেন । তাঁর রাজধানীর নাম ছিল শ্রীরঙ্গপত্তনম ।

  1. কোন্ শতকে হায়দার আলি ও টিপু সুলতানের নেতৃত্বে মহীশূর রাজ্য দক্ষিণ ভারতের অন্যতম প্রধান শক্তি হয়ে উঠেছিল ?

Ans: অষ্টাদশ শতকে হায়দার আলি ও টিপু সুলতানের নেতৃত্বে মহীশূর রাজ্য দক্ষিণ ভারতের অন্যতম প্রধান শক্তি হয়ে উঠেছিল ।

  1. সাদাৎ খানের উপাধি কী ছিল ? সাদাৎ খানের জামাতা কে ছিলেন ? 

Ans: সাদাৎ খানের উপাধি ছিল বুরহান – উল – মূলক । সদর জং ছিলেন তাঁর জামাতা ।

  1. কে মুঘল সম্রাটের কাছ থেকে ‘জগৎ শেঠ’ বা ‘জগতের শেঠ’ উপাধি পান? 

Ans: ফতেহচাঁদ মুঘল সম্রাটের কাছ থেকে ‘জগৎ শেঠ’ বা ‘জগতের শেঠ’ উপাধি পান।

  1. সিরাজ – উদ – দৌলা কত খ্রিস্টাব্দে কলকাতা আক্রমণ করেন ? তিনি কলকাতার কী নাম রাখেন?

Ans: ১৭৬৬ খ্রিস্টাকে সিরাজ – উদ – দৌলা কলকাতা আক্রমণ করেন । তিনি কলকাতার নাম রাখে আলিনগর ।

সংক্ষিপ্ত ব্যাখামূলক ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর

আঞ্চলিক শক্তির উত্থান (দ্বিতীয় অধ্যায়) অষ্টম শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর |  

[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান 3]

  1. ফরাসি দ্বন্দ্ব সম্পর্কে কী জানা যায় ? 

Ans: ভারতে উপনিবেশ গড়ে তোলা আর বাণিজ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা নিয়ে ২০ বছর ধরে ব্রিটিশদের সঙ্গে ফরাসিদের স্বার্থের সংঘাত চলেছিল । ১৭৪৪ থেকে ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে দক্ষিণ ভারতে কর্ণাটক অঞ্চলে তিনটি ইঙ্গ ফরাসি যুদ্ধ ঘটে । ভারতে ফরাসিদের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল চন্দননগর ও পন্ডিচেরি । এই সময় পণ্ডিচেরির ফরাসি গভর্নর ছিলেন জেনারেল সুপ্নে । ১৭৩০ খ্রিস্টাব্দে বন্দিবাসের যুদ্ধে ফরাসিদের চূড়ান্ত পরাজয় ঘটে । এই পরাজয়ের ফলে ভারতে ব্রিটিশদের ক্ষমতা বিস্তারের পথে আর কোনো ইউরোপীয় প্রতিদ্বন্দীর বাধা রইল না ।

  1. মুর্শিদকুলি খানের নেতৃত্বে কীভাবে আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে বাংলার উত্থান ঘটে ? 

Ans: সুবা বাংলার রাজস্ব ঠিকভাবে আদায় করার জন্য ঔরঙ্গজেব মুর্শিদকুলি খানকে বাংলার দেওয়ান নিযুক্ত করেন । ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট ফাররুখশিয়ার মুর্শিদকুলিকে বাংলার নাজিম পদ দেন । এর ফলে । দেওয়ান ও নাজিম হিসেবে যৌথ দায়িত্ব পাওয়ায় সুবা বাংলায় মুর্শিদকুলির ক্ষমতা চূড়ান্ত হয়ে ওঠে । তাঁর নেতৃত্বে আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে বাংলার উত্থান ঘটে ।

  1. মুর্শিদকুলির আমলে বাংলার ব্যবসাবাণিজ্যের পরিবেশ কীরূপ ছিল ?

Ans: মুর্শিদকুলির আমলে বাংলার রাজনৈতিক পরিবেশ ব্যবসাবাণিজ্যের পক্ষে অনুকূল ছিল । স্থলপথ ও সমুদ্রপথে নানান দ্রব্য সুবা বাংলা থেকে রফতানি করা হতো । হিন্দু , মুসলমান ও আর্মেনীয় বণিকরা এই ব্যবসায় প্রভাবশালী ছিলেন । এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন হিন্দু ব্যবসায়ী উমিচাঁদ ও আর্মেনীয় ব্যবসায়ী খোজা ওয়াজিদ । এইসব ধনী ব্যবসায়ী ও মহাজনদের হাতে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা ছিল । মুর্শিদাবাদের বিখ্যাত ব্যবসায়ী ছিলেন জগৎ শেঠ । সুবা বাংলার কোশাগার ও টাকশাল তাঁর পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণেই চলত । শাসকেরা এদের সহায়তার ওপরই নির্ভর করতেন  মুর্শিদকুলির খান।

  1. আলিবর্দি খান বাংলায় কীভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করতেন ? 

Ans: ১৭২৭ খ্রিস্টাব্দে মুর্শিদকুলির মৃত্যুর পর তাঁর উত্তরাধিকার নিয়ে গোলযোগ বাঁধলে , সেই পরিস্থিতিতে জগৎ শেঠ ও কয়েকজন ক্ষমতাবান জমিদারের সহায়তায় সেনাপতি আলিবর্দি খান বাংলার শাসন ক্ষমতা দখল করেন । আলিবর্দির শাসনকালেই মুঘলদের হাত থেকে সুবা বাংলার অধিকার চলে যায় । তাঁর আমলে শাসনতান্ত্রিক কোনো খবরাখবর ও রাজস্ব দিল্লির মুঘল সম্রাটকে দেওয়া হতো না । মুঘল কর্তৃত্বকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করলেও আলিবর্দি বাংলা , বিহার ও উড়িষ্যায় একটি স্বশাসিত শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করতেন । 

  1. সাদাৎ খানের নেতৃত্বে কীভাবে অযোধ্যা একটি আঞ্চলিক শক্তিতে পরিণত হয় ? 

Ans: ১৭২২ খ্রিস্টাব্দে সাদাৎ খানের নেতৃত্বে অযোধ্যা একটি স্বশাসিত আঞ্চলিক শক্তিরূপে গড়ে ওঠে । মুঘল প্রশাসক হিসেবে সাদাৎ খান অযোধ্যার স্থানীয় রাজা ও গোষ্ঠীর নেতাদের বিদ্রোহের মোকাবিলা করেন । সাদাৎ খান মুঘল সম্রাটকে দিয়ে নিজের জামাই সফদর জংকে অযোধ্যার প্রশাসক নিযুক্ত করান । পাশাপাশি অযোধ্যার দেওয়ানের দফতরকে তিনি দিল্লির নিয়ন্ত্রণ থেকে সরিয়ে ফেলেন । অযোধ্যার রাজস্ব বিষয়ক কোনো খবরই মুঘল কোশাগারে আর পাঠানো হতো না । জায়গির ব্যবস্থাতেও সাদাৎ খান আঞ্চলিক অনভিজ্ঞ লোকেদের ও অর্ন্তভুক্ত করেন । ফলে সাদাৎ খানের সমর্থক এক নতুন শাসকগোষ্ঠী তৈরি হয় অযোধ্যায় । এভাবেই তাঁর নেতৃত্বে অযোধ্যা একটি আঞ্চলিক শক্তিতে পরিণত হয় । 

  1. ব্রিটিশ কোম্পানি কীভাবে দেওয়ানির অধিকার লাভ করে ? 

Ans: বক্সারের যুদ্ধে ব্রিটিশ কোম্পানি জিতে যাওয়ার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল ছিল কোম্পানির দেওয়ানি লাভ । ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে ক্লাইভ বাংলায় পুনরায় ফিরে আসেন এবং বক্সারের জয়ের সুবিধাকে ধীরে ধীরে বিস্তৃত করতে উদ্যোগী হন । ফলে বাংলা থেকে দিল্লি পর্যন্ত ক্ষমতা দখল না করে মুঘল সম্রাটের প্রতি কোম্পানি মৌখিক আনুগত্য জানায় । সেই অনুযায়ী ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে এলাহাবাদে ব্রিটিশ কোম্পানি মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম ও সুজা – উদ – দৌলার সঙ্গে এক চুক্তি করে । ঐ চুক্তি অনুসারে কোম্পানিকে ৫০ লক্ষ টাকা দিয়ে সুজা – উদ – দৌলা অযোধ্যার শাসনভার ফেরত পান । বাদশাহ শাহ আলম দিল্লির অধিকার ফিরে পাওয়ার বদলে একটি ফরমান জারি করেন । সেই ফরমান অনুযায়ী বাংলা , বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানির অধিকার ব্রিটিশ কোম্পানিকে দেওয়া হয় এবং এর বদলে কোম্পানি শাহ আলমকে বার্ষিক ২৬ লক্ষ টাকা দেওয়ার অঙ্গীকার করে । 

  1. স্বত্ববিলোপ নীতি প্রয়োগের মাধ্যমে কোম্পানি কীভাবে শাসন ক্ষমতা বিস্তার করে ?

উ: স্বত্ববিলোপ নীতির প্রয়োগকর্তা ছিলেন লর্ড ডালহৌসি । এই নীতি অনুযায়ী যেসব ভারতীয় শাসকদের কোনো পুরুষ উত্তরাধিকারী থাকত না তাদের শাসন এলাকা কোম্পানির হস্তগত হয়ে যেত । এই নীতির প্রয়োগ দ্বারা ইংরেজ কোম্পানির আগ্রাসী রূপ প্রকট হয়েছিল । এই নীতির দ্বারা লর্ড ডালহৌসি সাতারা , সম্বলপুর , ঝাঁসি প্রভৃতি অঞ্চল দখল করে নেন । কোম্পানির সেনাবাহিনির খরচ মেটানোর জন্য ডালহৌসি হায়দরাবাদের বেরার প্রদেশ দখল করেন । অপশাসনের অভিযোগে অযোধ্যার বাকি অংশ তিনি কোম্পানির দখলে আনেন । এইভাবে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে লর্ড ডালহৌসির নেতৃত্বে ভারতীয় উপমহাদেশের প্রায় ষাট ভাগেরও বেশি অঞ্চল ব্রিটিশ কোম্পানির অধিকারভুক্ত হয় । 

  1. অধীনতামূলক মিত্ৰতা নীতি কী ? ব্রিটিশ সরকার কীভাবে এর প্রয়োগ ঘটাতেন ?

Ans: লর্ড ওয়েলেসলি অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির প্রবর্তক ছিলেন । এই নীতি ছিল ব্রিটিশ কোম্পানীর আগ্রাসী নীতির অন্যতম রূপ । অধীনতামূলক মিত্ৰতা নীতি প্রয়োগ করে লর্ড ওয়েলেসলি দেশীয় বিভিন্ন রাজ্যের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন । বিভিন্ন আঞ্চলিক শক্তি স্বেচ্ছায় বা কখনও যুদ্ধে হেরে যাওয়ার ঐ নীতির আগ্রাসনের শিকার হন । ভারতের ওই আঞ্চলিক শক্তিগুলির বিবাদকের লর্ড ওয়েলেসলি ব্রিটিশ শাসনের পক্ষে বিপদ হিসেবে তুলে ধরতেন । তারপর সরাসরি অথবা যুদ্ধের মাধ্যমে দেশীয় শক্তিগুলিকে অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি মেনে নিতে বাধ্য করতেন ।

একদিকে হায়দরাবাদের নিজাম স্বেচ্ছায় অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি মেনে নিয়েছিলেন , অপরদিকে মহীশূরের শাসক টিপু সুলতান এর বিরোধিতা করে কোম্পানির সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন । এছাড়া মারাঠা , শিখ প্রভৃতি অন্যান্য রাজশক্তি নানাভাবে ঐ আগ্রাসী নীতির মুখে পড়েছিল ।

  1. ‘পলাশীর লুন্ঠন’ কাকে বলে?

Ans: পলাশির যুদ্ধের পরে ব্রিটিশ কোম্পানি মীরজাফরকে নবাব হিসাবে নির্বাচিত করেন। কার্যত তাঁকে “পুতুল শাসক” বানিয়ে তাঁর কাছ থেকে প্রভূত সম্পদ, যুদ্ধ বাবদ ক্ষতিপূরণ ইত্যাদি নিয়ে বাংলাকে তারা নিঃস্ব করে দেয়। জানা যায়, প্রায় 3 কোটি টাকার সম্পদ তারা মীরজাফরের থেকে আদায় করেছিল। বহু ঐতিহাসিক এই ঘটনাকে ‘পলাশির লুণ্ঠন’ বলে অভিহিত করেছেন।

  1. ফারুখশিয়র ফরমানের কী কী বৈশিষ্ট্য ছিল?

Ans: ফারুখশিয়ারের ফরমানের বৈশিষ্ট্য –

  • বার্ষিক মাত্র তিন হাজার টাকার বিনিময়ে কোম্পানি বাংলায় বাণিজ্য চালাতে পারবে।
  • কলকাতার নিকটে ৩৮ টা গ্রামের জমিদারী কেনার অধিকার দেওয়া হয়।
  • মুর্শিদাবাদের ট্যাঁকশাল ও তারা প্রয়োজনমত ব্যবহার করতে পারবে।
  • বিনা শুল্কে বাণিজ্যের অনুমতি ইত্যাদি ছিল মূল বিষয়।
  1. সিরাজ উদ-দৌলার সঙ্গে ব্রিটিশ কোম্পানির বিরোধের কারণগুলি উল্লেখ করো। 

Ans: স্বাধীনচেতা তরুণ নবাব সিরাজ তাঁর দাদু আলিবর্দি খানের মত ব্রিটিশদের সাথে সহাবস্থান করতে চাননি। তিনি চেয়েছিলেন ব্রিটিশ কোম্পানির ক্ষমতা খর্ব করতে। যদিও এর যথেষ্ট কারণ ছিল, ঔদ্ধত্য পূর্ণ ইংরেজরা ক্রমাগত নবাবকে অসম্মান, অবজ্ঞা প্রদর্শন করার মাত্রা বাড়িয়ে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছিল। সব থেকে অপমানজনক ঘটনাটি ঘটে যখন সিরাজের অনুমতি ছাড়াই তারা কলকাতা দুর্গ নির্মাণ শুরু করে। এরপরে 1757 সালে ‘আলিনগরের সন্ধি’ স্বাক্ষরিত হলে ইংরেজদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, বলা চলে তাদের আধিপত্য বিস্তারের পথ আরো চওড়া করে। তারা সমস্ত বাণিজ্যিক সুবিধা পুনরায় ফিরত পায়। তারা নিজস্ব মুদ্রা বা সিক্কা তৈরির অধিকার পায়। এমনকি কোম্পানির ক্ষতিপূরণ করার দায়ও বর্তায় নবাব সিরাজের ওপর। এমন অপমানজনক সন্ধি নবাব ও কোম্পানির বিরোধ আরো বাড়িয়ে তোলে।

  1. কে, কবে হায়দ্রাবাদে আঞ্চলিক শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন? 

Ans: মুঘল শাসক ঔরঙ্গজেবের সভাকক্ষে একজন অভিজাত ছিলেন তার নাম ছিল মির কামার উদ্দিন খান সিদ্দিকি। ঔরঙ্গজেব এনাকে চিনক্লিচ খাঁ উপাধি দিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে ফারুখশিয়ার তাঁকে নিজাম উল মূলক এবং মহম্মদ শাহ তাঁকে আসফ ঝা উপাধি দেন। তিনি 1724 সালে প্রতিষ্ঠা করেন হায়দ্রাবাদ।

  1. জগৎ শেঠ সম্পর্কে কী জানা যায় ? 

Ans: মুর্শিদাবাদের অর্থনীতিতে জগৎশেঠের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য । মুর্শিদাবাদে সিরাজ বিরোধী শক্তি হিসেবে জগৎ শেঠ ছিলেন অন্যতম । ১৬৫২ খ্রিস্টাব্দে রাজস্থান থেকে হিরাপদ শাহ পাটনায় যান । তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র মানিকচাঁদ ঢাকায় মহাজনি কারবার শুরু করেন । মানিকচাঁদের সঙ্গে মুর্শিদকুলি খাঁর সম্পর্ক ভালো হবার দরুন মানিকচাঁদ ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে এসে ব্যবসা শুরু করেন । মানিকচাঁদের ভাগ্নে ফতেহচাঁদ ব্যবসার হাল ধরেন । এই ফতেহচাদই হলেন জগৎ শেঠ । জগৎ শেঠ আসলে একটি বণিক পরিবারের উপাধি যা বংশানুক্রমিকভাবে চলতে থাকে এবং জগৎ শেঠদের বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষমতা ছিল । তাঁদের হাত ধরে এক ধরনের ব্যাঙ্ক ব্যবস্থা বাংলায় গড়ে উঠেছিল । বাংলার নবাব দরবারেও তাঁদের প্রভাব যথেষ্ট ছিল । জগৎ শেঠদের পছন্দের ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন মিরাজফর । সিরাজ – উদ্ – দৌলার পর ব্রিটিশ সরকার জগৎ শেঠদের সম্মতিতেই মিরজাফরকেই নবাবরূপে নির্বাচিত করেন । 

  1. বাংলায় বর্গিহানা সম্বন্ধে কী জানা যায় ?

Ans: বাংলায় মারাঠা বা বর্গি আক্রমণ ছিল নবাব আলিবর্দির সময়ের এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা । ১৭৪২ থেকে ১৭৫১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মারাঠারা বাংলা ও উড়িষ্যার নানা অঞ্চলে লুঠতরাজ ও আক্রমণ চালায় । এই আক্রমণ ‘ বর্গিহানা ’ নামে পরিচিত । বর্গিরা বাংলার নানা অঞ্চলে লুঠতরাজ ও আক্রমণ চালায় । নবাবের রাজধানী মুরশিদাবাদেও তারা আক্রমণ চালায় । ১৭৫১ খ্রিস্টাব্দে বাংলার নবাব ও বর্গিরা একটি সন্ধি করে । ওই সন্ধি অনুযায়ী বাংলার সীমানা ধরা হয় উড়িষ্যার জলেশ্বরের কাছে সুবর্ণরেখা নদীকে এবং সন্ধি অনুযায়ী ঠিক হয় যে ওই নদী মারাঠারা ভবিষ্যতে অতিক্রম করবে না । বর্গি হানার ফলে বাংলার পশ্চিমপ্রান্ত ছেড়ে অসংখ্য মানুষ পূর্ব , উত্তর ভারত ও কলকাতায় চলে যায় । বর্গিহানা আটকাতে কলকাতায় একটি খাল খোঁড়া হয়েছিল , তার নাম ছিল মারাঠা খাল বা মারাঠা ডিচ । 

  1. ফাররুখশিয়রের ফরমান কী ছিল ?    

Ans: দিল্লির মুঘল সম্রাট ফাররুখশিয়র ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে একটি ফরমান জারি করেন । ওই ফরমান মতো ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে তিনি বাণিজ্যিক অধিকার দিয়েছিলেন । ব্রিটিশ কোম্পানি মাত্র ৩ হাজার টাকার বিনিময়ে বাংলায় বাণিজ্য করতে পারবে । কিন্তু এর জন্য কোম্পানিকে কোনো শুল্ক দিতে হবে না । কলকাতার কাছাকাছি প্রায় ৩৮ টি গ্রামের জমিদারি কেনার অধিকার ব্রিটিশ কোম্পানিকে দেওয়া হয় । কেউ কোম্পানির পথ্য চুরি করলে তাকে বাংলার নবাব শাস্তি দেবেন ও কোম্পানিকে ক্ষতিপুরণ | দেবেন । একইসলো কোম্পানির জাহাজের সঙ্গে অনুমতিপত্র থাকলে তারা অনায়াসে বাণি করতে পারবে । এমনকি নবাবের টাকশালও প্রয়োজন মতো ব্যবহারের অধিকার কোম্পানিকে দেওয়া হয় । 

  1. দুর্বার মিরজাফর ও পলাশির লুণ্ঠন সম্পর্কে যা জানো লেখো ।

Ans: রবার্ট ক্লাইভ পলাশির যুদ্ধের পর মিরজাফরকে বাংলার নবাবরূপে নির্বাচিত করেন । মিরজাফরের সঙ্গে ওইসময় নবাবের একটা চুক্তি হয় । চুক্তি মোতাবেক , বাংলায় ব্রিটিশ কোম্পানির অবাধ বাণিজ্য চালু হয় , পাশাপাশি টাকা তৈরির অধিকারও তাদের দেওয়া হয় । পলাশির যুদ্ধের পর সিরাজের কলকাতা আক্রমণের অজুহাতে কোম্পানি ১ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ নেয় । পরে পলাশির যুদ্ধের পর ব্রিটিশ কোম্পানি সব মিলিয়ে নিরজাফরের থেকে ৩ কোটি টাকা আদায় করে । কোম্পানির তরফে এই অর্থ আত্মসাৎকে ‘ পলাশির লুন্ঠন ‘ বলা হয় । এর ফলে নবাবের কোশাগার নিঃস্ব হয়ে যায় । 

  1. বক্সারের যুদ্ধ ও দেওয়ানি লাভ সম্বন্ধে যা জানো লেখো । 

Ans: ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানির সঙ্গে মিরকাশিমের সংঘর্ষ শুরু হয় । কিন্তু কাটোয়া , গিরিয়া , মুর্শিদাবাদ , উদয়নালা ও মুঙ্গেরের যুদ্ধে ব্রিটিশ কোম্পানির কাছে মিরকাশিম হেরে যান এবং অযোধ্যায় পালিয়ে যান । সেখানে তাঁর সঙ্গে আযোধ্যার নবাব সুজা – উদ – দৌলা ও দিল্লির মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের কোম্পানি বিরোধী শক্তি জোট গঠিত হয় । ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে ওই যৌথ বাহিনীর সঙ্গে কোম্পানির যে যুদ্ধ হয় তা বক্সারের যুদ্ধ নামে পরিচিত । যুদ্ধে যৌথ বাহিনী হেরে যায় এবং মিরকাশিম ও সুজা – উদ – দৌলা পালিয়ে যান । ফলে কোম্পানির ক্ষমতা উত্তর ভারত পর্যন্ত বিস্তৃত হয় । দ্বিতীয় শাহ আলম কোম্পানির সঙ্গে রক্ষা করে ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলা – বিহার – উড়িষ্যার দেওয়ানির অধিকার দিতে বাধ্য হন । 

  1. দ্বৈত শাসনব্যবস্থা কী ? 

Ans: দেওয়ানির অধিকার ভারতবর্ষে কোম্পানির আর্থিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতাকে বিস্তৃত করেছিল । কোম্পানির দেওয়ানি লাভ বাংলায় নতুন রাজতন্ত্র কায়েম করেছিল । বাস্তবে বাংলায় দুজন শাসক তৈরি হয় । শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে একদিকে ছিলেন নবাব অন্যদিকে অর্থনৈতিক কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা ছিল কোম্পানির । ফলে নবাবের ছিল অর্থনৈতিক ক্ষমতাহীন রাজনৈতিক দায়িত্ব এবং কোম্পানি পেয়েছিল দায়িত্বহীন অর্থনৈতিক ক্ষমতা । বাংলার এই শাসন ব্যবস্থাকেই দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা বলা হয় । 

  1. ছিয়াত্তরের মন্বন্তর কী ? 

Ans: ১৭৬৫ থেকে ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলায় দ্বৈতশাসন চলেছিল । এই সময় ব্রিটিশ কোম্পানির একমাত্র লক্ষ্য ছিল যত বেশি সম্ভব রাজস্ব আদায় করা । ফলে ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় এক ভয়ানক দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় । বঙ্গাব্দের হিসেবে ওই বছরটি ছিল ১১৭৬ বঙ্গাব্দ । তাই একে ‘৭৬ -এর মন্বন্তর বলে । 

রচনাধর্মী বা বিশ্লেষণধর্মী ইতিহাস বড় প্রশ্ন ও উত্তর

 | আঞ্চলিক শক্তির উত্থান (দ্বিতীয় অধ্যায়)  

[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান 5]

1. মিরকাশিম ও ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে বিবাদ শুরু হয় কেন ? 

Ans: ব্রিটিশ কোম্পানির সহায়তায় নবাবি পদ পেয়ে প্রায় ২৯ লক্ষ টাকার সম্পদ ও বর্ধমান , মেদিনীপুর এবং চট্টগ্রামের জমিদারির অধিকারও মিরকাশিম ব্রিটিশ কোম্পানিকে দিয়েছিলেন । ফলে প্রথম দিকে ব্রিটিশ কোম্পানি মিরকাশিমকে নিজেদের লোক বলেই ভেবেছিলেন । কিন্তু তাদের সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয় । নিজেকে স্বাধীনচেতা নবাব রূপে প্রমাণিত করতে মিরকাশিম মুর্শিদাবাদের বদলে মুঙ্গেরকে বাংলার রাজধানী হিসেবে বেছে নেন । পাশাপাশি নবাবের পুরোনো সৈন্যবাহিনীর বদলে তিনি আধুনিক সেনাবাহিনীর গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন । ক্ষমতাবান জগৎ শেঠদের সঙ্গেও মিরকাশিম দূরত্ব বজায় রাখেন । গোড়ায় মিরকাশিমের এই উদ্যোগগুলি নিয়ে ব্রিটিশ কোম্পানি বিশেষ ভাবিত ছিল না । ক্রমে ব্রিটিশ কোম্পানির কর্মচারীদের ব্যক্তিগত বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে কোম্পানির সঙ্গে মিরকাশিমের বিবাদ শুরু হয় । 

১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দে মিরকাশিমের সঙ্গে ব্রিটিশ কোম্পানির সরাসরি সংঘাত শুরু হয় । কাটোয়া , মুর্শিদাবাদ , গিরিয়া , উদয়নালা ও মুঙ্গেরের যুদ্ধে মিরকাশিম পরাজিত হন । পরে অযোধ্যার শাসক সুজা – উদ – দৌলা ও মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের সঙ্গে জোট রেধে ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে মিরকাশিম ব্রিটিশের সঙ্গে যুদ্ধ করেন । এই যুদ্ধ বক্সারের যুদ্ধ নামে পরিচিত । কোম্পানির বাহিনী এই যুদ্ধে জিতে যায় । মিরকাশিম পালিয়ে যান । 

2. দক্ষিণ ভারতে ব্রিটিশ শক্তি কীভাবে ক্ষমতা বিস্তার করে ? 

Ans: অষ্টাদশ শতকে হায়দর আলি ও টিপু সুলতানের নেতৃত্বে মহীশূর রাজ্য দক্ষিণ ভারতের অন্যতম প্রধান শক্তি হয়ে উঠেছিল । মহীশূরের আঞ্চলিক বিস্তার ও অর্থনৈতিক স্বার্থপূরণ করতে গিয়ে বিভিন্ন শক্তির সঙ্গে হায়দর ও টিপুর সংঘাত বাধে । সুচতুর ব্রিটিশ কোম্পানি নিজেদের বাণিজ্যিক স্বার্থরক্ষা ও ক্ষমতা বিস্তার করতে মহীশুরের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াইয়ে উদ্যোগী হয় । ব্রিটিশ কোম্পানি ও মহীশুরের মধ্যে ১৭৬৭ থেকে ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে চারটি ইঙ্গ মহীশূর যুদ্ধ হয় ।

 ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে চতুর্থ ইঙ্গ মহীশূর যুদ্ধের মাধ্যমে লর্ড ওয়েলেসলি মহীশূর রাজ্যের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত আঘাত হানেন । নিজের রাজধানী শ্রীরঙ্গপত্তনম রক্ষা করতে গিয়ে বীরের মতো যুদ্ধ করে টিপু সুলতান প্রাণ দেন । এর পরই অধীনতামূলক মিত্ৰতা নীতি প্রয়োগ করে ব্রিটিশ কোম্পানি মহীশূরের সমস্ত রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নেন । কোম্পানীর সেনাবাহিনী মহীশূরে মোতায়েন করা হয় । মহীশূর রাজ্যের বেশ কিছু অঞ্চলে সরাসরি কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় । 

3. অযোধ্যা ও পাঞ্জাব কীভাবে ব্রিটিশ কোম্পানির অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় ? 

Ans: উত্তর ভারতে অযোধ্যা কোম্পানির আগ্রাসনের মুখোমুখি হয় । ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে অযোধ্যায় কোম্পানির প্রতিনিধি নিয়োগ করা হয় এবং স্থায়ী সেনাবাহিনী অযোধ্যায় মোতায়েন করা হয় । এর পাশাপাশি অযোধ্যার উত্তরাধিকারী নিয়ে গোলযোগ তৈরি হওয়ায় সেই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে অযোধ্যার প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করে ব্রিটিশ কোম্পানি বিভিন্ন অঞ্চল দখল করে নেয় । পাঞ্জাবে শিখদের মধ্যেও উত্তরাধিকার নিয়ে গোলযোগ বাধে । এর ফলে উত্তর ভারতের বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয় । ফলে অশান্ত পরিস্থিতিকে শান্ত করার দোহাই দিয়ে ব্রিটিশ কোম্পানি পাঞ্জাবে হস্তক্ষেপ করতে থাকে । ১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ইঙ্গ শিখ যুদ্ধে শিখ বাহিনী হেরে যায় । ফলস্বরূপ ১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দে লাহোরের চুক্তি হয় এবং সেই অনুযায়ী জলন্ধর দোয়াবে ব্রিটিশ কতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় এবং শিখ দরবারে ব্রিটিশ রেসিডেন্ট নিযুক্ত করা হয় ।

3. মুঘল সাম্রাজ্যের অবনতির কারণ কী ছিল? 

Ans: ঔরঙ্গজেবের পরবর্তী সময়ে যে সমস্ত শাসকরা রাজত্ব করেছিল, তারা খুবই অদক্ষ ছিল। সামরিক শক্তি অর্থাৎ সৈন্য দলকেও তারা শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে পারেননি। দেশের মধ্যেই অদক্ষ শাসন ব্যবস্থার দরুণ বহু বিক্ষিপ্ত বিদ্রোহ শুরু হয়ে গিয়েছিল। তার সাথেই ছিল ছত্রপতি শিবাজি ও মারাঠাদের আক্রমণ। এতো গেল ঘরের কথা, এরপর শুরু হয় বৈদেশিক শক্তির আক্রমণ। একদিকে নাদির শাহ (1739 খ্রিঃ) অন্যদিকে আহম্মদ শাহ আবদালি (1756 খ্রিঃ)। এছাড়াও সেই সময় থেকেই ইউরোপীয় জাতিগুলি ভারতে আসতে শুরু করেছে। এই সব কিছুর মাঝে মুঘল সাম্রাজ্যের অদক্ষ শাসকদের করুণ অবস্থা হয়েছিল।

এরপরেই বলতে হয় অতিরিক্ত ব্যয়, তাজমহলের কথা প্রায় সকলেরই জানা, এই ধরণের ব্যয়বহুল স্থাপত্যগুলি বানাতে শাহজাহানের আমলে প্রচুর খরচ হয়েছিল। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে অবক্ষয় শুরু হয়। সেই সময় শাহজাহান বা ঔরঙ্গজেবের আমলে শাসন কাঠামো ধীরে ধীরে নষ্ট হতে শুরু করে। যা পরবর্তী শাসকরা সামাল দিতে পারেননি।

এছাড়া দুর্বল অনুন্নত কৃষি, জায়গীরদারি, মনসবদারী প্রথাগুলি শুরুর দিকে সংকটমুক্ত থাকলেও পরবর্তীকালে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়।

এইসব কারণেই প্রায় ২০০ বছরের সাম্রাজ্য ধীরে ধীরে ভেঙ্গে পড়ে। এই সাম্রাজ্যের অবক্ষয়ের মাঝেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কিছু আঞ্চলিক শক্তির উত্থান হয়।

4. বাংলায় ইউরোপীয় বণিকদের সঙ্গে আলিবর্দি খানের সম্পর্ক কীরূপ ছিল ?

Ans: আলিবর্দি খান বাংলায় ইউরোপীয় বণিকদের বাণিজ্য বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছিলেন । তিনি মনে করতেন এর ফলে বাংলার অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে । তবে আলিবর্দি খেয়াল রাখতেন যে ঐ বণিকরা যাতে বাংলায় কেবল ব্যবসায়ী হিসেবেই থাকে , তাই তাদের রাজনৈতিক ও সামরিক ক্ষমতা কোনোভাবেই যাতে না বাড়ে সেদিকে তাঁর দৃষ্টি ছিল । তিনি সজাগ থাকতেন যাতে কোনো বণিক কোম্পানি নবাবের সার্বভৌম ক্ষমতার বিরোধী না হয়ে ওঠে । পাশাপাশি বাংলার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির স্বার্থে ব্রিটিশ বণিকদের যাতে কোনো জুলুমের শিকার না হতে হয় তার খেয়ালও নবাব রাখতেন । তিনি চাইতেন না বিদেশি বণিকেরা বাংলা থেকে চলে যাক ।

 আলিবর্দি খান অপরদিকে বণিক কোম্পানিগুলি যাতে নিজেদের মধ্যে বিবাদ না করে সেদিকে আলিবর্দির কড়া নজর ছিল । তাই ব্রিটিশ ও ফরাসি দুই বণিক কোম্পানিকেই বাংলায় দুর্গ তৈরি করতে তিনি । বাধা দিয়েছিলেন । ১৭৪৪ খ্রিস্টাব্দে মারাঠা আক্রমণের সময় আলিবর্দি ব্রিটিশ কোম্পানির থেকে ৩০ লক্ষ টাকা চান এবং তা দিতে কোম্পানি অস্বীকার করায় নবাবের সঙ্গে কোম্পানির সম্পর্ক খারাপ হয় । পরে ১৭৪৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ কোম্পানি আর্মেনিয় বণিকদের জাহাজ আটকে রাখায় কোম্পানির সঙ্গে আলিবর্দির সংঘাত বাধে ।

5. সিরাজ – উদ – দৌলা ও ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরোধ বাঁধে কেন ? 

Ans: ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে আলিবর্দির মৃত্যুর পর তাঁর দৌহিত্র সিরাজ – উদ – দৌলা বাংলার নবাব হন । কিন্তু দ্রুতই দরবারের বিভিন্ন গোষ্ঠী ও ব্রিটিশ কোম্পানির সঙ্গে সিরাজের সংঘাত বাধে । সিরাজের ক্ষমতালাভ অনেককেই অসন্তুষ্ট করেছিল । সিরাজের আত্মীয়দের অনেকেই এবং আলিবর্দির সেনাপতি মিরজাফরও সিরাজের বিপক্ষে ছিলেন । পাশাপাশি ব্রিটিশ ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে সিরাজের সম্পর্ক গোড়া থেকে ভালো ছিলনা । 

( ১ ) সিরাজ সিংহাসনে বসার পর ইংরেজ কোম্পানি নবাবকে নজরানা বা উপঢৌকন দেওয়ার প্রথা ভঙ্গ করায় নবাব ক্ষুদ্ধ হন । 

( ২ ) সপ্তবর্ষের যুদ্ধের সূত্র ধরে বাংলায় ইংরেজ ও ফরাসি কোম্পানি কলকাতা ও চন্দননগরে দুর্গনির্মাণে সচেষ্ট হলে সিরাজ তা করতে নিষেধ করেন । ফরাসিরা তা শুনলেও ইংরেজরা কলকাতায় তাদের দুর্গনির্মাণ চালিয়ে যায় । এতে নবাব ও কোম্পানির মধ্যে তিক্ততার সম্পর্ক তৈরি হয় ।

 ( ৩ ) ফরমান প্রাপ্ত ইংরেজ কোম্পানি নিঃশুল্ক বাণিজ্যের পাশপাশি দস্তকের অপব্যবহার করায় নবাব ক্ষুদ্ধ হন এবং তাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে । 

( ৪ ) দুর্নীতিগ্রস্ত ঢাকার দেওয়ান রাজবল্লভকে নবাব মুর্শিদাবাদে হিসেব প্রদানের জন্য ডেকে পাঠালে , ভীত রাজবল্লভ প্রচুর অর্থ সহ পুত্র কৃষ্ণদাসকে কলকাতায় কোম্পানির আশ্রয়ে পাঠিয়ে দেন ।

 ক্ষুদ্ধ নবাব কৃষ্ণদাসকে ফেরত চাইলে ইংরেজ আধিকারিক রজার ড্রেক তা অস্বীকার করেন । শেষ পর্যন্ত নবাব ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় ইংরেজদের কাশিমবাজার কুঠি আক্রমণ করেন এবং কলকাতা দখল করে তার নাম রাখেন আলিনগর । রজার ড্রেক ও তার সহযোগীরা ফলতায় পালিয়ে যান । কিন্তু দ্রুতই রবার্ট ক্লাইভের নেতৃত্বে ব্রিটিশ বাহিনী ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা দখল করেন । ফলে নবাব ও ব্রিটিশ আম্পানি আলিনগরের সন্ধি করেন । কোম্পানি তার বাণিজ্যিক অধিকার ফেরত পায় নবাব ব্রিটিশ কোম্পানিকে ক্ষতিপূরণ নেন । ব্রিটিশ দূর্গ নির্মাণ শুরু করে এমনকি নিজেদের সিক্কা তৈরির ক্ষমতা পায় । বাস্তবে এই সন্ধি ব্রিটিশ কোম্পানির পক্ষে সুবিধাজনক হয়ে ওঠে । ক্রমেই ব্রিটিশ কোম্পানির সিরাজ বিরোধী অবস্থান স্পষ্ট হয়ে ওঠে । অবশেষে ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশির যুদ্ধে ব্রিটিশ বাহিনী নবাব বাহিনীকে পরাজিত করে ।

 

 ©kamaleshforeducation.in(2023)