Note sheet নিয়ে অনেকে জানতে চাইছেন। কয়েকটা তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করছি।
কেবলমাত্র সরকারী অফিসের কাজে note sheet এর ব্যবহার নিয়ে এই প্রতিবেদন।
প্রয়োজনীয় তথ্য এবং সেই সংক্রান্ত মন্তব্যকে লিখিত আকার দেওয়ার নাম হচ্ছে note এবং যে কাগজে ওই note লেখা হচ্ছে, সেটাই note sheet
কোনো একটা নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য এবং সেই বিষয়ে নিজের বক্তব্যকে একত্রিত করে লিখিত আকারে সংরক্ষণ করা হয়।
ধরা যাক, একজন ব্যক্তি কোনো এক সরকারী দপ্তরে কোনো একটা নির্দিষ্ট সরকারী প্রকল্পের অধীনে টাকা পাওয়ার আবেদন জমা দিয়েছেন। এবারে সেই আবেদন আপনার হাতে এল, অর্থাৎ আপনি সেই কাজের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত dealing assistant.
প্রথমে আপনি সেই আবেদন খতিয়ে দেখে note sheet এ সেই ব্যক্তির নাম, ঠিকানা, আবেদন পত্র নং, টাকার পরিমাণ ইত্যাদি উল্লেখ করে উক্ত ব্যক্তি টাকা পাওয়ার উপযুক্ত কিনা, পেলে কত টাকা পেতে পারেন, পাওয়ার উপযুক্ত না হলে তার কারণ, ওই কাজ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সরকারী আদেশনামা সহ অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য উল্লেখ করবেন। এরপর আপনার নিজস্ব কোনো মতামত থাকলে তা লিপিবদ্ধ করে প্রয়োজনীয় নির্দেশ চেয়ে আপনার পরবর্তী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সেই note sheet এর উপর আপনার দেওয়া note এর নিচে তাঁর মন্তব্য নথিভুক্ত করে তা পাঠাবেন তাঁর পরবর্তী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে। এইভাবে পর্যায়ক্রমে সেই note sheet যাবে অফিসের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের কাছে। তিনি উক্ত ব্যক্তির আবেদনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত লিখিত আকারে নথিভুক্ত করবেন এবং তা আবার অফিসে ফেরত দেবেন। এবার সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।
Notesheet কে অবহেলা করবেন না। ওটা আপনার বড় হাতিয়ার। Notesheet এ approval না নিয়ে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করলে কিছুটা দায়ভার আপনার ওপর পড়বেই, যতই higher authority এর অনুমোদন থাকুক না কেন। কিন্তু notesheet এ সব জানিয়ে approve করানো থাকলে আপনি একজন সাধারণ কর্মচারী হিসেবে নিরাপদ অবস্থানে থাকছেন। Notesheet থাকার অর্থ আপনি আপনার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কাজ করেছেন। কিন্তু notesheet না থাকলে আপনার নিজেকে স্বচ্ছ প্রমান করার একটা দায়ভার থেকেই যায়। কাজেই notrsheet কর্তৃপক্ষের ঢাল নয়, আপনার রক্ষাকবচ।
Note sheet কি ভাবে লিখতে হয়।
কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়ম না থাকলেও কতকগুলো বিষয় মেনে চলার প্রয়োজন।
1) Note সবসময় ভাববাচ্যে (impersonal voice) লেখা হয়। ‘I saw it’ লিখবেন না। লিখবেন ‘It has been seen.’
‘I think that…..’ লিখবেন না, ‘It is being thought’ লিখবেন। Note আর চিঠির মূল পার্থক্য এখানেই।
2) তথ্য যা কিছু লিখবেন তার সাপেক্ষে যেন আপনার কাছে প্রমাণ থাকে। অর্থাৎ সরকারী আদেশনামা, কাগজপত্র ইত্যাদির ভিত্তিতে লিখবেন। কোনো মনগড়া তথ্য দেবেন না।
3) আপনি Note হিসেবে কি লিখবেন, তার দায়ভার আপনার। কাজেই note লেখার স্বাধীনতাও আপনার। আপনি নিজে যেটা সত্যি এবং সঠিক বলে মনে করছেন, সেটাই লিখবেন। অন্য কেউ আপনার Note লেখার বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন না। আপনার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অধিকার আছে আপনার Note এর সাথে একমত না হওয়ার। কিন্তু তাঁকে সেই ভিন্নমত পোষণ লিখিত আকারে আপনার note এর পরবর্তী অংশে লিপিবদ্ধ করতে হবে। আপনার note এ কোনো ধরনের কাটাকাটি, over writing করার অধিকার তাঁর নেই।
4) Note এর আকার যতটা পারবেন সংক্ষিপ্ত রাখার চেষ্টা করবেন এবং সহজ ভাষায় লেখার চেষ্টা করবেন।
5) বাংলা এবং English উভয় ভাষায় Note লেখা যাবে। ভারতীয় সংবিধানের 345 নম্বর ধারায় বলা হয়েছিল যে যতদিন পর্যন্ত না কোনো রাজ্য তাদের সরকারী ভাষা ঘোষণা করছে ততদিন পর্যন্ত ইংরেজি ভাষায় সেই রাজ্যের সরকারী কাজকর্ম সম্পাদিত হবে। এর ভিত্তিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার 1961 সালে নিয়ে আসে West Bengal Government Official Language Act 1961. এই Act এর Section 2 অনুসারে সমগ্র রাজ্যে বাংলা ভাষাকে এবং দার্জিলিং, কার্শিয়াং ও কালিম্পং মহকুমায় বাংলার পাশাপাশি নেপালী ভাষাকে সরকারী কাজকর্মের ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। পরবর্তীতে amendment এর মাধ্যমে 1965 সাল থেকে বাংলার সাথে ইংরেজি ভাষাকেও সরকারী কাজকর্মের ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বর্তমানে ওই নিয়মই চালু আছে। সুতরাং বাংলা এবং ইংরেজি উভয় ভাষাতেই note দেওয়া যাবে।
6) যে বা যারা মাঝামাঝি পর্যায়ে আছেন তাদের দুই ধরনের কাজ করতে হয়। এক) অধঃস্তনের থেকে আসা note পরীক্ষা করে নিজের বক্তব্যকে লিপিবদ্ধ করে একই ভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা এবং দুই) ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশকে পুনরায় নির্দেশের আকারে লিখে অধঃস্তনের কাছে হস্তান্তর করা। আপনি সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষ না হলে Note এর মাধ্যমে কোনো সিদ্ধান্ত জানাবেন না।
7) Note sheet হবে সবসময় running note sheet. একটা বিষয় শেষ হয়ে যাওয়ার পর পৃষ্ঠার যে অংশ খালি থাকবে, সেখান থেকেই আবার পরবর্তী বিষয়ের note লেখা আরম্ভ হবে। অর্থাৎ কোনো পৃষ্ঠা না লেখা অবস্থায় থাকবে না। এক file এর notesheet অন্য file এ ব্যবহার করা যাবে না।
Note লেখার শুরুতে note number দিলে বুঝতে সুবিধা হয়।
9) Note এর শেষে নিজের সই করবেন এবং তারিখ দেবেন। Note লিখে যাকে পাঠাতে চাইছেন, note এর শেষে তার নাম ও designation উল্লেখ করবেন। যদিও এখন e filing এর ক্ষেত্রে এটার প্রয়োজন হয় না।
10) E filing হলে কোনো সমস্যা নেই। তথ্য লোপাট করা সম্ভব নয়। কিন্তু offline mode হলে notesheet সযত্নে রাখতে হবে। প্রয়োজনে ছবি তুলে বা photocopy করে রাখতে পারেন।
11) প্রত্যেক file এর আলাদা আলাদা notesheet হবে। একটা পৃষ্ঠা শেষ হয়ে গেলে পরবর্তী পৃষ্ঠায় লিখতে হবে এবং বোঝার সুবিধার্থে সমস্ত পৃষ্ঠায় ক্রমিক নম্বর দিয়ে রাখতে হবে। একটা বিষয় বুঝতে হবে। একটা file এর Notesheet সেই file এর ইতিহাস বহন করে। সুতরাং তাকে সযত্নে রাখা উচিত।