জটিল সব প্রশ্নের সমাবেশ। বিদ্যালয় পরিচালনা বা প্রশাসন সংক্রান্ত ও একাডেমিক বিভিন্ন বিষয়ে। প্রশ্নগুলোকে যতটা সম্ভব একত্রিত করে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করা হল বিভিন্ন Rules ও Govt Orders এর আলোকে।   

—————————————————————————————————–

 আজ প্রথম পর্ব। – 

—————————————————————————————————–

১) প্রশ্ন – Private aided, Non Govt aided, Govt Sponsored ও Govt School — এই বিভিন্ন ধরনের স্কুলগুলির মধ্যে মূলগত পার্থক্য কী ?

 

উত্তর — WBBSE Act, 1963 ও Management Rules অনুযায়ী ——- ক) Govt aided, Private aided , Non Govt aided স্কুল বলতে একই ধরনের স্কুল বোঝায়। এই স্কুলের মূল বৈশিষ্ট্য হলো এই স্কুলগুলো স্কুলগুলোর প্রতিষ্ঠা, পরিচালনা, ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সরকারের দায় নেই। সরকার শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কয়েকটি ক্ষেত্রে শর্ত সাপেক্ষে গ্রান্ট ইন এড হিসাবে আর্থিক অনুদান দিয়ে থাকে। এদের কর্মীরা সরকারি কর্মচারী নন।

খ) Govt Sponsored স্কুলগুলো সরকারের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয় অথবা সরকার নোটিফিকেশান জারি করে কোনো প্রাইভেট স্কুলকে এই স্পন্সরড মর্যাদা প্রদান করে। এর পরিচালনা ও ম্যানেজমেন্টও বেসরকারি। তবে ম্যানেজমেন্ট এ সরকারি প্রতিনিধিদের সংখ্যাধিক্য। এই স্কুলগুলিও সরকারের থেকে গ্র্যান্ট ইন এইড হিসাবে আর্থিক সাহায্য পেয়ে থাকে। এই স্কুলের কর্মীরাও সরকারি কর্মচারী নন।

গ) Govt School বলতে সেই সমস্ত স্কুলকে বোঝায় যে স্কুলগুলোর প্রতিষ্ঠা,পরিচালনা , ব্যবস্থাপনা এবং সমস্ত আর্থিক দায় দায়িত্ব সরকারের। এই স্কুলগুলোর কর্মীরা সরকারি কর্মচারী।

২) প্রশ্ন – বিদ্যালয় প্রধান বা Head of the Institution বলতে কী বোঝায় ?

উত্তর – WBBSE ACT বলছে Head of the Institution হলেন Head of teaching staff তাঁকে বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হতে পারে। অর্থাৎ Headmaster/ Headmistress/TIC হলেন বিদ্যালয়প্রধান বা Head of the Institution। কিন্তু এখানে মনে রাখতে হবে যে তিনি কর্মীদের প্রধান হলেও বিদ্যালয়ের পরিচালক নন। সেটা হচ্ছে বিদ্যালয়ের এমসি। অবশ্য বিদ্যালয়প্রধান হলেন এমসির সেক্রেটারি বা মুখ। তাঁর কাজ হলো এমসির সিদ্ধান্তগুলোকে রূপায়ণ করা। সেই জন্য এমসির যাবতীয় Correspondence তাঁর মাধ্যমেই হবে। আবার তাঁর কিছু স্বাধীন কাজের দায়িত্ব ও স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও আইন অনুযায়ী আছে।

৩) প্রশ্ন – এমসি কে কোনও চিঠি লিখতে হলে বা এমসি কোনও নোটিশ জারি করলে কার মাধ্যমে করতে হবে ?

উত্তর – Management Rules বলছে যে এমসির যাবতীয় correspondence হবে সেক্রেটারির মাধ্যমে। আর সেক্রেটারি হচ্ছেন HOI। তাই এমসি কে কোনও চিঠি লিখতে হলে সেটা লিখতে হবে সেক্রেটারি তথা HOI এর মাধ্যমে । আবার এমসি কোনও চিঠি দেবে বা নোটিশ জারি করবে সেই HOI তথা সেক্রেটারির মাধ্যমেই।

৪) প্রশ্ন – একাডেমিক কাউন্সিল বা স্টাফ কাউন্সিল এর ক্ষমতা কতটুকু ? এই কাউন্সিল দুটি কি কোনও স্বাধীন সিদ্ধান্ত রূপায়িত করার ক্ষমতা রাখে?

উত্তর – না। এই কাউন্সিল দুটি মূলতঃ প্রস্তাব দাতা বা পরামর্শ দাতা সংস্থা। একাডেমিক কাউন্সিল একাডেমিক বিভিন্ন বিষয়ে HOI কে প্রস্তাব দিতে পারে। HOI সাধারণত সেই প্রস্তাব মেনে চলবেন। তবে তিনি একাডেমিক কাউন্সিল এর সিদ্ধান্তকে বাতিল করার ( Overrule) ক্ষমতা রাখেন। অবশ্য সে ক্ষেত্রে ব্যাপারটা এমসিতে নিয়ে যেতে পারেন অন্য সদস্যরা। তখন এমসির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে ধরা হবে। ঠিক একইভাবে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন একাডেমিক ব্যাপারে এমসির কাছে প্রস্তাব রাখতে পারে স্টাফ কাউন্সিল। এমসি সেই প্রস্তাব মানতে পারে, নাও পারে।

৫) প্রশ্ন – অ্যাটেনডেন্স রেজিষ্টার কি হেডমাস্টারের ঘরেই থাকবে না স্টাফরুমে থাকবে ?

উত্তর – গেজেট নোটিফিকেশান মেমো নং – 215 SE, তারিখ – 08/03/2018 অনুযায়ী HOI হলেন স্কুলের সমস্ত নথির Custodian। তাই তিনি চাইলে যে কোনো নথির নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেই পারেন। তাই তিনি যদি এটা নিজের ঘরে নিতে চান তাহলে সেই সিদ্ধান্ত বেআইনি নয়।

৬) প্রশ্ন – Attendance রেজিষ্টারে প্রথম নাম হেডমাস্টারের বা সিনিয়রিটি অনুযায়ী পরপর কি থাকতেই হবে ?

উত্তর — এরকম কোনো নির্দিষ্ট নির্দেশিকা নেই। তাই স্কুল কর্তৃপক্ষ যে কোনো একটা নর্মস অনুযায়ী অ্যারেঞ্জ করতেই পারেন। সেটা সমগ্র চাকরি জীবনের ( পূর্বের স্কুলের ও বর্তমান স্কুলের চাকরিকাল টোটাল করে ) সিনিয়রিটি অনুযায়ী বা শুধুমাত্র বর্তমান স্কুলের চাকরির সিনিয়রিটি অনুযায়ী বা সংশ্লিষ্ট কর্মীর পে লেভেল অনুযায়ী বা নামের বানান ধরে alphabatically সাজানো যেতে পারে। এটা নিয়ে বিতর্ক করার অবকাশ নেই।

৭) প্রশ্ন – বিভিন্ন ক্ষেত্রে কোনো টিচারের সিনিয়রিটি নির্ধারণ করার জন্য শুধুমাত্র বর্তমান স্কুলের চাকরিকাল না পূর্বের স্কুলের ও বর্তমান স্কুলের সমগ্র চাকরিকাল বিবেচ্য হবে ?

উত্তর — এই ব্যাপারেও কোনও সরাসরি গাইডলাইন নেই। তবে আনুষঙ্গিক অর্ডারগুলি দিয়ে বিচার করা যেতে পারে। আমরা জানি যদি service continuation থাকে তাহলে DCRB Rules 1981 অনুযায়ী একজন টিচারের সমগ্র চাকরিকাল ধরে সিনিয়রিটি হিসাব করে অবসরকালীন সুযোগ সুবিধা নির্ধারণ করা হয়। আবার ROPA Rules অনুযায়ী 10/20/18 বছরের বেনিফিট হিসাব হয় বর্তমান ও পূর্বের সমস্ত চাকরির সময়কাল ধরে। এই অর্ডারগুলির সাপেক্ষে বলতেই পারা যায় যে পূর্বের ও বর্তমানের সমগ্র চাকরিকাল ধরেই একজন কর্মীর সিনিয়রিটি নির্ধারণ করা উচিত ।

৮) প্রশ্ন – স্কুল কর্তৃপক্ষ বলতে কাকে বোঝানো হয় ?

উত্তর – Management Rules অনুযায়ী স্কুল কর্তৃপক্ষ বলতে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটিকে বোঝানো হয়।

৯) প্রশ্ন – স্কুল কর্তৃপক্ষ বা HOI কি কোনও কর্মীকে শো কজ করতে পারেন ?

উত্তর — এই প্রশ্নের উত্তর একই সঙ্গে হ্যাঁ এবং না । যদি ডিসিপ্লিনারি প্রসিডিংস এর পার্ট হিসাবে শো কজের কথা বলা হয় তাহলে HOI শো কজ করতে পারেন না। কিন্তু যদি কোনো ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং এর জন্য সেই শো কজ হয় তাহলে স্কুল কর্তৃপক্ষ তথা HOI শো কজ করতে পারবেন । পারবেন না এমন অর্ডার নেই। এই ব্যাপারে ভিন্ন ভিন্ন কোর্ট কেসে ভিন্ন ভিন্ন অবজারভেশন দেখা গেছে। কোথাও মামলাকারীর আইনজীবী গেজেট নোটিফিকেশান মেমো নং 214 SE , dated– 08/03/2018 উল্লেখ করে সওয়াল করেছেন যে স্কুল কর্তৃপক্ষ কোনো কর্মীকে শো কজ করতে পারেন না, কোথাও আবার বিচারক মামলাকারীকে ধমক দিয়েছেন HOI এর শো কজ এর রিপ্লাই দেননি বলে। এছাড়া কোনও নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে স্পেসিফিক অর্ডার থাকলে HOI শো কজ করতে পারেন। যেমন বন্ধের দিনে বাধ্যতামূলক উপস্থিত থাকার ব্যাপারে যে সরকারি নির্দেশিকা দেওয়া হয় তাতে পরিষ্কার বলেছে এই ক্ষেত্রে হেড অফ অফিস শো কজ করবে। তাই এক্ষেত্রে HOI শো কজ করবেন। কোনও বাধা নেই। কিন্তু কারোর বিরুদ্ধে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশান নেওয়ার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ সেই পদ্ধতির একটা অঙ্গ হিসাবে শো কজ করতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত নয়।

১০) প্রশ্ন – অনেক সময় দেখা যায় স্কুল কর্তৃপক্ষ বা HOI অর্ডার জারি করে দেন যে স্কুলের পরীক্ষার সময় কোনও স্টাফ CL নিতে পারবেন না। যদি কেউ অনুপস্থিত হয় তবে তার উইদাউট পে লিভ বা মেডিক্যাল লিভ করে দেওয়া হবে । এটা কি আইনত করা যায় ?

উত্তর – না। এটা আইনত করা যায় না। উইদাউট পে লিভ এবং মেডিক্যাল লিভ দুটোই কর্মীদের প্রাপ্য ছুটি। কোনও কর্মীর ব্যক্তিগত প্রাপ্য ছুটি তার আবেদন ছাড়া স্কুল কর্তৃপক্ষ বা HOI অনুমোদন করতে পারেন না। স্কুলের পরীক্ষার সময় CL নেওয়া যাবে না এমন কোনো অর্ডার নেই। তবু পরীক্ষা একটি ইমারজেন্সি ব্যাপার। সেটা যদি কোনো ভাবেই চলবে না এমন অবস্থা হয় তাহলে স্কুল কর্তৃপক্ষ CL মঞ্জুর না করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তের পিছনে যথেষ্ট যুক্তি থাকতে হবে। না হলে HOI উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বা কোর্টের কাছে জবাবদিহি করতে সমস্যায় পড়তে পারেন। কোনও কর্মী ছুটির আবেদন উপযুক্ত কারনে leave sanctioning authority মঞ্জুর না করতে পারলে কর্মীকে সেটা জানিয়ে অন্য কোনো ছুটির জন্য অ্যাপ্লিকেশন করতে বলবেন বা সেটাও সম্ভব না হলে unauthorised absence হিসাবে সেই দিনটিকে ট্রিট করতে পারেন। কিন্তু কিছুতেই কর্মীর আবেদন ছাড়াই নিজের মতো করে Leave Without Pay বা মেডিক্যাল লিভ করে দিতে পারেন না।  

১১) প্রশ্ন – Late Attendance অর্থাৎ দেরি করে তিন দিন স্কুলে এলে একদিন CL কেটে নেওয়া হয়। Early departure অর্থাৎ কোনও বিশেষ কারনে ছুটির আগেই স্কুল ছেড়ে চলে যাওয়া কি আইনসিদ্ধ ? চলে যেতে হলে তার পদ্ধতিটা ঠিক কী ?

উত্তর – প্রয়োজনে HOI এর পারমিশন নিয়ে Early departure কোনও আইনবিরুদ্ধ কাজ নয়। গেজেট নোটিফিকেশন মেমো নং 214 SE, dated– 08/03/2018 টিচারদের যে কোড অফ কন্ডাক্ট দেওয়া হয়েছে এবং সাম্প্রতিক অ্যানুয়াল একাডেমিক ক্যালেন্ডার এর সঙ্গে দেওয়া বোর্ডের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে কোনও স্টাফ স্কুল ছুটির আগে স্কুল ত্যাগ করতে পারবেন না। করলে সেটা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করা হবে। তার দায়ে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশান নেওয়ার সুপারিশ করতে পারে স্কুল কর্তৃপক্ষ। অর্থাৎ HOI এর পারমিশন নিয়ে বিশেষ প্রয়োজনে স্কুল ছুটির আগেই স্কুল ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া যেতে পারে। অসুবিধা নেই। এখানে উল্লেখ্য Early departure এর সঙ্গে CL কেটে নেওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। তবে Early departure অভ্যাসে পরিণত করে ফেললে সেই কর্মী শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে পড়বেন।

১২) প্রশ্ন – টিফিনের সময়ে কি কোনও স্টাফ স্কুল ছেড়ে বাইরে যেতে পারেন ?

উত্তর — Finance department তার একটি অর্ডারে বলেছে যে কোনো কর্মী tiffin hours এ অফিস হেডের অনুমতি ছাড়া অফিস ছেড়ে বেরোতে পারবেন না এবং tiffin hours টাকে টিফিন করার কাজেই ব্যবহার করতে পারবেন। ফিন্যান্স ডিপার্টমেন্ট এর এই অর্ডারটার পরিপ্রেক্ষিতে বোর্ড একটা অর্ডার জারি করে বলেছে যে উক্ত অর্ডার স্কুলের কর্মীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ স্কুলের কর্মীরা tiffin hours এ সাধারনত বাইরে যাবেন না। তবে যদি যেতেই হয় তাহলে HOI এর পারমিশন নিয়ে তবেই যাবেন এবং tiffin hours টিকে টিফিন করার কাজেই শুধুমাত্র ব্যবহার করবেন  

১৩) প্রশ্ন — আচ্ছা অনেক সময় ছুটির আবেদন এলেই একটা কথা বলা হয় Leave Rules এ বলা হয়েছে যে – ” No leave is a matter of right ” । এই উক্তিটি ব্যবহার করে বলা হয় যে, চাইলেই নাকি যে কোনো ছুটির আবেদন কর্তৃপক্ষ বাতিল করে দিতে পারেন। কথাটা কতটা সত্যি ?

উত্তর – এটা সত্যি যে ছুটি কোনও অধিকার নয় এটা Leave Rules এ আছে। কিন্তু Leave Rules এটা নেই যে সমস্ত গ্রাহ্য গ্রাউন্ড থাকা সত্ত্বেও ছুটির আবেদন প্রত্যাখ্যান করাটা কর্তৃপক্ষের অধিকার। তাই যদি হতো তাহলে এত Leave Rules এর প্রয়োজনই হতো না। আসলে সেটা ঠিক নয়। আসল কথাটা হলো ছুটি কোনও অধিকার নয় মানে হলো ছুটি কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে পাওয়া যায়। কর্মী চাইলেই অধিকার হিসাবে ছুটি পাবে , এমন নয় ব্যাপারটা। আবার এটাও ঠিক Rules অনুযায়ী একজন কর্মী ছুটি পাওয়ার যোগ্য হলে কর্তৃপক্ষ সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করতে পারেন না। আসলে এখানে আবেদনকারীর দাবি পূরণের অধিকার আর কর্তৃপক্ষের ছুটি অনুমোদন বা বাতিল করার ক্ষমতা দুটির মধ্যে একটা ব্যালান্স করা হয়েছে। কারোরই স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠার সুযোগ নেই।

SOURCE -SMR
 

 ©kamaleshforeducation.in(2023)

error: Content is protected !!
Scroll to Top