পথের দাবী অধ্যায় থেকে আরোও প্রশ্ন ও উত্তর দেখুন :

মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন ২০২৪ – পথের দাবী (গল্প) শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

Madhyamik Bengali Suggestion 2024 WBBSE Part 3

পথের দাবী

 

(১) বহু বিকল্প উত্তর ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর :

১.১ ব্রিটিশ সরকার শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস টি বাজেয়াপ্ত করে, সেটি হল – 

(ক) শ্রীকান্ত

(খ) পথের দাবী

(গ) চরিত্রহীন

(ঘ) গৃহদাহ

উত্তর : (খ) পথের দাবী

১.২ তেলের খনির কারখানার শ্রমিকরা চাকরির উদ্দেশ্যে কোথায় গিয়েছিল?

(ক) রেঙ্গুন 

(খ) ডিগবয়

(গ) আমেদাবাদ

(ঘ) মায়ানমার

উত্তর: (ক) রেঙ্গুন

১.৩ পোলিটিক্যাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিক কে হাজির করা হয় –

(ক) পুলিশ অফিসারের সামনে

(খ) নিমাই বাবুর সামনে

(গ) অপূর্বর সামনে

(ঘ) জগদীশবাবুর সামনে

উত্তর: (খ) নিমাইবাবুর সামনে

১.৪ মুগ্ধ হয়ে গিরীশ মহাপাত্রের দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে ছিল –

(ক) অপূর্ব

(খ) পুলিশ অফিসার

(গ) নিমাইবাবু

(ঘ) জগদীশবাবু

উত্তর: (ক) অপূর্ব

১.৫ “… বাবুটির স্বাস্থ্য গেছে, কিন্তু শখ ষোল আনা বজায় আছে তা স্বীকার করতে হবে।” – কথাটি বলেছে –

(ক) নিমাই বাবু

(খ) জগদীশবাবু

(গ) অপূর্ব

(ঘ) রামদাস

উত্তর: (ক) নিমাই বাবু

১.৬ “কাকাবাবু, এই লোকটিকে আপনি কোন কথা জিজ্ঞেস না করে ছেড়ে দিন…” -অপূর্ব কাকে ‘কাকাবাবু’ বলে সম্বোধন করেছেন?

(ক) রামদাসকে

(খ) জগদীশবাবুকে

(গ) নিমাইবাবুকে

(ঘ) তেত্তয়ারিকে

উত্তর: (গ) নিমাইবাবুকে

১.৭ “আর যাই হোক, যাকে খুঁজছেন তার কালচারের কথাটা একবার ভেবে দেখুন।” – বক্তা হলেন –

(ক) অপূর্ব

(খ) পুলিশ অফিসার

(গ) নিমাইবাবু

(ঘ) জগদীশবাবু

উত্তর: (ক) অপূর্ব

১.৮ “পথে কুড়িয়ে পেলাম…” – বক্তা পথে কি কুড়িয়ে পেয়েছিলেন?

(ক) দেশলাই বাক্স

(খ) জ্যামিতি বক্স

(গ) দুইশো টাকা

(ঘ) গাঁজার কলকে

উত্তর (ঘ) গাঁজার কলকে

১.৯ “বুড়ো মানুষের কথাটা শুনো।” – ‘বুড়ো মানুষ’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে?

(ক) জগদীশবাবুকে

(খ) নিমাইবাবুকে

(গ) রামদাসকে

(ঘ) গিরিশ মহাপাত্রকে

উত্তর (খ) নিমাইবাবুকে

১.১০ “দয়ার সাগর! পরকে সেজে দি, নিজে খাইনে।” – উক্তিটির বক্তা হলেন –

(ক) গিরিশ মহাপাত্র

(খ) নিমাইবাবু

(গ) অপূর্ব

(ঘ) জগদীশবাবু

উত্তর (ঘ) জগদীশবাবু

১.১১ “আচ্ছা, তুমি এখন যেতে পারো মহাপাত্র।” – কথাটি কে বলেছেন?

(ক) জগদীশবাবু

(খ) নিমাইবাবু

(গ) পুলিশ অফিসার

(ঘ) অপূর্ব

উত্তর (খ) নিমাইবাবু

১.১২ “কিন্তু এই জানোয়ারটাকে ওয়াজ করবার দরকার নেই বড়বাবু।” – কথাটি কে বলেছেন?

(ক) গিরিশ মহাপাত্র

(খ) অপূর্ব

(গ) রামদাস

(ঘ) জগদীশবাবু

উত্তর (ঘ) জগদীশবাবু

১.১৩ “কোন এক অদৃশ্য অপরিজ্ঞতা রাজবিদ্রোহী চিন্তাতেই ধ্যানস্থ হয়ে রইল।” – এখানে রাজদ্রোহী কে?

(ক) সব্যসাচী মল্লিক

(খ) গিরিশ মল্লিক

(গ) গিরিশ মহাপাত্র

(ঘ) সব্যসাচী দেব

উত্তর (ক) সব্যসাচী মল্লিক

১.১৪ “তাহার পোশাক-পরিচ্ছদের বাহার মনে পড়িয়া হঠাৎ হাসির ছটায় যেন দম আটকাইবার উপক্রম হল।” – এখানে যার কথা বলা হয়েছে তিনি হলেন –

(ক) একজন বিপ্লবী

(খ) জেল ফেরত আসামি

(গ) গিরিশ মহাপাত্র

(ঘ) জেল পলাতক বিপ্লবী

উত্তর (গ) গিরিশ মহাপাত্র

১.১৫ “বাবাই একদিন এঁর চাকরি করে দিয়েছিলেন।” – এঁর বলতে এখানে কাকে বোঝানো হয়েছে?

(ক) রামদাসকে

(খ) নিমাইবাবুকে

(গ) জগদীশবাবুকে

(ঘ) সব্যসাচী মল্লিককে

উত্তর : (খ) নিমাইবাবুকে

১.১৬ “বলিতে বলিতে কণ্ঠস্বর তাহার তীক্ষ্ণ এবং চোখের দৃষ্টি প্রখর হইয়া উঠিল” – এখানে কার কথা বলা হয়েছে?

(ক) জৈনিক দেশ প্রেমিক

(খ) তলওয়ারকর

(গ) অপূর্ব

(ঘ) রামদাস

উত্তর : (গ) অপূর্ব

১.১৭ “কার লাঞ্ছনা এই কালো চামড়ার নিচে কম জ্বলে না” – এখানে কোন লাঞ্ছনার কথা বলা হয়েছে?

(ক) ফিরিঙ্গি ছেলেদের অপূর্বকে লাথি মেরে প্ল্যাটফর্ম থেকে বের করে দেওয়া

(খ) ট্রেনে অপূর্ব প্রতি পুলিসের অত্যাচার

(গ) বিপ্লবীদের ওপর পুলিশের অত্যাচার

(ঘ) ঘরে চুরি যাওয়ার কথা সাহেবের লাঞ্ছনা

উত্তর : (ক) ফিরিঙ্গি ছেলেদের অপূর্বকে লাথি মেরে প্ল্যাটফর্ম থেকে বের করে দেওয়া

১.১৮ “আমার অবর্তমানে সমস্ত বাড়ি তো তোমার” – কথাটি বলেছেন –

(ক) হেড কেরানি

(খ) ছোট সাহেব

(গ) মালিক

(ঘ) বড় সাহেব

উত্তর (ঘ) বড় সাহেব

১.১৯ “বামুনের ছেলে, বাংলা লেখাপড়া, শাস্তর-টাস্তর সবই কিছু কিছু শিখে ছিলাম” – উক্তিটির বক্তা হলেন – 

(ক) গিরিশ মহাপাত্র

(খ) অপূর্ব

(গ) নিমাইবাবু

(ঘ) রামদাস

উত্তর : (ক) গিরিশ মহাপাত্র

১.২০ “সে হাত বাড়াইয়া বন্ধুর করমর্দন করিলো।” – এখানে বন্ধুটি কে?

(ক) জগদীশবাবু

(খ) অপূর্ব

(গ) গিরিশ মহাপাত্র

(ঘ) নিমাইবাবু

উত্তর : (খ) অপূর্ব

১.২১ “ইচ্ছা করিলে আমি তোমাকে টানিয়া নিচে নামাইতে পারে” – কথাটি কে বলেছেন?

(ক) গিরিশ মহাপাত্র

(খ) বমা সাব-ইন্সপেক্টর

(গ) এক পুলিশ

(ঘ) অপূর্ব

উত্তর : (খ) বমা সাব-ইন্সপেক্টর

(২) অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :

.১ “পুলিশ স্টেশনে প্রবেশ করিয়া দেখা গেল” – কি দেখা গেল?

উত্তর : পুলিশ স্টেশনে প্রবেশ করে দেখা গেল সামনের হলঘরে কয়েকজন বাঙালি বসে আছে এবং পুলিশ তাদের জিনিসপত্র তল্লাশি করছে।

 

২.২ “সম্মুখে হাজির করা হইল।” – কাকে এবং কার সামনে হাজির করা হলো?
উত্তর : গিরিশ মহাপাত্র ওরফে সব্যসাচী মল্লিককে পুলিশ অফিসার নিমাইবাবু সামনে হাজির করলেন।

 

২.৩ “এইটুকু কাশির পরিশ্রমেই সে হাঁপাইতে লাগিলো।” – এখানে কার কথা বলা হয়েছে?

উত্তর : এখানে গিরিশ মহাপাত্র ওরফে সব্যসাচী মল্লিকের কথা বলা হয়েছে।

২.৪ “মৃত্যু সেখানে প্রবেশ করতে সাহস করে না।” – মৃত্যু কোথায় প্রবেশ করতে সাহস করে না?

উত্তর : সব্যসাচী মল্লিক ওরফে গিরীশ মহাপাত্রের চোখের অতল তলে।

২.৫ “নিমাইবাবু চুপ করিয়া রহিলেন,” – নিমাইবাবু চুপ থাকাই অপূর্ব কি বলেছিলেন?

উত্তর : সন্দেহভাজন গিরিশ মহাপাত্র এবং সব্যসাচী মল্লিক এর সংস্কৃতিগত বৈপরীত্যের বিষয়টি তাকে বিবেচনা করতে অনুরোধ জানায়।

 ২.৬ “তবে এ বস্তুটি পকেটে কেন?’ এখানে কোন বস্তুটি কথা বলা হয়েছে?

উত্তর : গাঁজার কলকের কথা বলা হয়েছে যেটি গিরিশ মহাপাত্র রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছিল বলে সে জানায়।

২.৭ “ক্ষণকাল মৌন থাকিয়া কহিলেন!” উদ্দিষ্ট ব্যক্তি কি বলেছিলেন?

উত্তর : ক্ষণকাল মৌন থেকে নিমাইবাবু গিরিশ মহাপাত্র কে তার গাজা খাওয়ার কথাটি স্বীকার করতে বলেছিলেন।

উত্তর : জগদীশবাবুর সম্মতিতে নিমাইবাবু করলেন এই শহরে আরো কিছুদিন নজর রাখা দরকার এবং বিশেষ করে নীল ট্রেনটার প্রতি একটু বেশি দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন।

২.১০ “বড়বাবু হাসিতে লাগিলেন।” – বড়বাবুর হাসির কারণ কি ছিল?

উত্তর : জগদীশবাবু গিরীশ মহাপাত্রের অদ্ভুত পোশাক, আচরণ এবং বোকার মত মিথ্যা কথা বলার প্রবণতা দেখে তাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বললে বড়বাবু হাসতে থাকেন।

২.১১ “আজ বাড়ি থেকে কোনো চিঠি পেয়েছেন নাকি?” – কে কখন একথা বলেছিলেন?

উত্তর : অপূর্ব এর মধ্যে অন্যমনস্কতা দেখে রামদাস চিন্তিত মুখে তাকে এ প্রশ্নটি করেছিলেন।

২.১২ “অপূর্ব রাজি হইয়াছিল।” – অপূর্ব কিসে রাজি হয়েছিল?

উত্তর : অপূর্বের বাড়ি থেকে নিজেকেও না আসা পর্যন্ত প্রত্যেকদিন রামদাসের স্ত্রীর হাতে তৈরি মিষ্টান্ন খাবার ব্যাপারে রাজি হয়েছিল।

২.১৩ “এই অন্যায়ের প্রতিবাদ যখন করতে গেলাম” – অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে কি হয়েছিল?

উত্তর : বিনা দোষে অপূর্বকে ফিরিঙ্গির ঝগড়াটা লাথি মেরে প্ল্যাটফর্ম থেকে বের করে দিয়েছিল।

২.১৪ “মনে হল দুঃখে লজ্জায় ঘৃণায় নিজেই যেন মাটির সঙ্গে মিশে যায়।” – অপূর্বের এরকম মনে হওয়ার কারণ কী ছিল?

উত্তর : বিনা দোষে ফিরিঙ্গীর ছেলেরা অপূর্বকে যখন লাথি মেরে প্ল্যাটফর্ম থেকে বের করে দিয়েছিল তখন ভারতীয়রা মুখ বুঝে সহ্য করায় তার এরকম মনে হয়েছিল।

২.১৫ “আমারও তো তাই বিশ্বাস।” – বক্তার কোন বিশ্বাসের কথা এখানে বলা হয়েছে?

উত্তর : ধর্মপ্রাণ মানুষ গিরিশ মহাপাত্র অপূর্বকে বলেছিল যে ললাটের লিখন কখনো খন্ডানো যায় না। এই প্রসঙ্গে অপূর্ব গিরীশ মহাপাত্রের সমর্থনে উক্ত কথাটি বলেছিলেন।

(৩) ব্যাখ্যা ভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :

প্রশ্নঃ ‘বাবুটির স্বাস্থ্য গেছে, কিন্তু শখ ষোলোআনাই বজায় আছে তা স্বীকার করতে হবে।’ – ‘বাবুটি’ কে? তার শখ যে বজায় আছে, তা কীভাবে বোঝা গেল? 

উত্তরঃ শরৎচন্দ্রের ‘পথের দাবী’ গল্পের আলোচ্য অংশে নিমাইবাবুর কথায় ‘বাবুটি’ হল ছদ্মবেশী গিরীশ মহাপাত্র।

      গিরীশ মহাপাত্রের মাথার বাহারি ছাঁট, চুলে সুগন্ধি তেল, পরনে রামধনু রঙের জাপানি সিল্কের পাঞ্জাবি ও বিলিতি মখমল পাড়ের সূক্ষ্ম কালো শাড়ি, পকেটে বাঘ আঁকা শখ বজায় থাকার লক্ষণ রুমাল, পায়ে হাঁটু পর্যন্ত লাল ফিতে দিয়ে বাঁধা সবুজ মোজা ও বার্নিশ করা পাম্প শু, হাতে হরিণের শিঙের হাতল দেওয়া বেতের ছড়ি তার শখ বজায়ের পরিচয় দেয়। 

প্রশ্নঃ গিরীশ মহাপাত্রের চেহারার বর্ণনা দাও।

উত্তরঃ শরৎচন্দ্রের ‘পথের দাবী’ গল্পের মূল চরিত্র বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক গিরীশ মহাপাত্রের ছদ্মবেশে বর্মা আসেন। পোলিটিক্যাল সাসপেক্ট হিসেবে গিরীশ মহাপাত্রের চেহারার বর্ণনা তাঁকে আটক করলেও বেশভূষা ও চেহারার বিভ্রান্তিতে পুলিশ তাঁকে ছেড়ে দেয়। বছর বত্রিশের সব্যসাচীর গায়ের ফরসা রং রোদে পুড়ে তামাটে হয়েছে। রোগা চেহারার মানুষটি সামান্য পরিশ্রমেই হাঁপাতে ও কাশতে থাকেন। দেখে আশঙ্কা হয় সংসারের মেয়াদ বুঝি তার ফুরিয়ে এসেছে। তাকে আলাদাভাবে চোখে পড়ে তার রোগা মুখের দুটি চোখের অদ্ভুত দৃষ্টির জন্য।

প্রশ্নঃ ‘তবে এ বস্তুটি পকেটে কেন?’ – কোন বস্তুর কথা বলা হয়েছে? তা পকেটে থাকার সপক্ষে যে যুক্তিটি দেওয়া হয়েছিল, তা কতখানি সন্তোষজনক? 

উত্তরঃ শরৎচন্দ্রের ‘পথের দাবী’ উপন্যাস থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশে যে বস্তুর কথা বলা হয়েছে তা হল একটি গাঁজার কলকে। 

     পুলিশস্টেশনে তল্লাশির সময় গিরীশ মহাপাত্রের পকেটে গাঁজার কলকেটি পাওয়া যায়। দারোগা নিমাইবাবু কলকেটির সম্পর্কে জানতে চাইলে মহাপাত্র জানায় সে গাঁজা খায় না, কিন্তু সপক্ষে যুক্তি পথে কুড়িয়ে পেয়ে সেটি বন্ধুদের প্রয়োজনার্থেই পকেটে রেখেছে। অভিজ্ঞ দারোগা নিমাইবাবুর কাছে এই বক্তব্য যুক্তিগ্রাহ্য লাগেনি। কেন না গিরীশ মহাপাত্রের চেহারার মধ্যে গাঁজা সেবনের লক্ষণ স্পষ্ট ছিল। 

প্রশ্নঃ ‘বুড়োমানুষের কথাটা শুনো।’ – ‘বুড়োমানুষ’ কে? তাঁর কোন্ কথা শুনতে বলা হচ্ছে?

উত্তরঃ ‘পথের দাবী গল্পের উদ্ধৃতাংশে ‘বুড়োমানুষ’ বলতে দারোগা নিমাইবাবু নিজেকে বুঝিয়েছেন। যে কথা শুনতে বলা হচ্ছে । গিরীশ মহাপাত্রের ছদ্মবেশে বিপ্লবী সব্যসাচী বর্মায় আসেন। সন্দেহভাজন হিসেবে পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। তল্লাশিতে তাঁর পকেটে গাঁজার কলকে পাওয়া গেলেও তিনি গাঁজা খাওয়ার কথা অস্বীকার করেন। দারোগা নিমাইবাবু তাঁর অভিজ্ঞতার জোরে মহাপাত্রের চেহারার মধ্যে গাঁজা খাওয়ার সুস্পষ্ট লক্ষণ প্রত্যক্ষ করেন। তাই ভগ্ন স্বাস্থ্যের মহাপাত্রকে নিমাইবাবু গাঁজা না খাওয়ার পরামর্শ দেন।

প্রশ্নঃ ‘অপূর্ব কিছু আশ্চর্য হইয়া কহিল’ – অপূর্ব কেন আশ্চর্য হল? তার আশ্চর্য হওয়ার প্রকৃত কারণটি কী ছিল?

উত্তরঃ ‘পথের দাবী’ গল্পে অপূর্বর সহকর্মী রামদাস তলওয়ারকর অপূর্বকে অন্যমনস্কভাবে বসে থাকতে দেখে সে বাড়ির চিঠি পেয়েছে কিনা এবং বাড়ির সবাই ভালো আছে কিনা – এমন প্রশ্ন করে বসে। হঠাৎ এমন প্রশ্ন শুনে অপূর্ব আশ্চর্য হয়।

      রাজদ্রোহী সব্যসাচীর বর্মায় আসার খবর পেয়ে পুলিশ খানাতল্লাশি বাড়িয়েও তাকে ধরতে ব্যর্থ হন। সব্যসাচীর ধরা না পড়া বা কোনো দুর্ঘটনা না ঘটার মতো সৌভাগ্যকে অপূর্বর অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিল। তাই দৈনন্দিন কাজের মাঝে অপূর্ব কোথাও যেন অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল।

প্রশ্নঃ ‘তা ছাড়া আমার বড়ো লজ্জা এই যে’ – অপূর্বের লজ্জার কারণটি কী ছিল? সেটি তার কাছে লজ্জার মনে হয়েছিল কেন?

উত্তরঃ শরৎচন্দ্রের ‘পথের দাবী’ উপন্যাসের অন্যতম মুখ্য চরিত্র লজ্জার কারণ অপূর্বর লজ্জার কারণ বাংলা দেশের অত্যাচারী পুলিশবাহিনীর একজন বড়োকর্তা নিমাইবাবু তাঁর বাবার বন্ধু, তাঁর আত্মীয়সম। লজ্জা মনে হওয়ার কারণ ব্যাপারটা অপূর্বর কাছে লজ্জার মনে হয়েছিল কারণ এই নিমাইবাবু দেশের শত্রু ইংরেজদের দ্বারা পুলিশবাহিনীতে নিয়োজিত হয়েছিলেন। তিনি ইংরেজদের নুন খেয়ে প্রতিনিয়ত ভারতীয় বিপ্লবীদের ধরপাকড় ও অত্যাচার চালাতেন। ইংরেজের দাসত্বকারী এমন একজনকে আত্মীয় অপূর্বর লজ্জা হচ্ছিল।

প্রশ্নঃ ‘অপূর্ব হঠাৎ চকিত হইয়া বলিয়া উঠিল, ওই যে!’ – ‘ওই যে’ বলে কাকে দেখানো হল ? অপূর্বের চকিত হওয়ার কারণ কী?

উত্তরঃ শরৎচন্দ্রের ‘পথের দাবী’ উপন্যাস থেকে গৃহীত অংশে ‘ওই যে’ বলে বক্তা অপূর্ব তার সহকর্মীকে যাকে দেখিয়েছিলেন তিনি হলেন ছদ্মবেশী সব্যসাচী ওরফে গিরীশ মহাপাত্র। অপূর্ব তার ঘরে চুরির অভিযোগ জানাতে থানায় গিয়ে পোলিটিক্যাল সাসপেক্ট গিরীশ মহাপাত্রকে দেখেছিলেন। গিরীশের বেশভূষা অপূর্বর মনে হাসি জাগালেও তার একটা সন্দেহের কথা তিনি চকিত হওয়ার কারণ সহকর্মী রামদাসকে বলেছিলেন। সেই গিরীশকে সহসা স্টেশনে দেখতে পেয়ে অপুর্ব চকিত হয়ে উঠেছিলেন ।

প্রশ্নঃ ‘বাবুজি, মায়নে আপকো তো জরুর কঁহা দেখা’ – কার উক্তি। উক্তিটির অন্তর্নিহিত অর্থ পরিস্ফুট করো।

উত্তরঃ উদ্ধৃত উক্তিটি ‘পথের দাবী’ উপন্যাসের অন্যতম চরিত্র অপূর্বর সহকর্মী রামদাস তলওয়ারকরের। অন্তর্নিহিত অর্থ হিন্দিভাষী রামদাস রেলস্টেশনে প্রথমবার ছদ্মবেশী গিরীশ মহাপাত্রকে দেখে উক্তিটি করেছিলেন। উক্তিটির অর্থ হল, ‘বাবুজি আমি আপনাকে অবশ্যই কোথাও দেখেছি।’ ইতিপূর্বে রামদাস হয়তো ছদ্মবেশী সব্যসাচীকে অথবা তার ছবি কোথাও দেখেছিলেন কিন্তু সঠিক ভাবে তা মনে করতে পারছিল না। তাই তিনি বার বার সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে গিরীশ মহাপাত্র বা সব্যসাচীকে দেখে, মনে করার একটা অসহায় চেষ্টা করছিল। 

প্রশ্নঃ ‘নিমাইবাবু চুপ করিয়া রহিলেন।’ – নিমাইবাবু কে? তার চুপ করে থাকার কারণ ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশে নিমাইবাবু হলেন পুলিশের বড়োকর্তা বা দারোগাবাবু।

     পুলিশের প্রধান লক্ষ্য ছিল বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিককে গ্রেপ্তার করা। তিনি ছিলেন চিকিৎসাবিদ্যায় সুপণ্ডিত, বহুভাষাবিদ ও বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিগ্রিপ্রাপ্ত এক অসামান্য ব্যক্তিত্ব। কিন্তু সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে আটক গিরীশ মহাপাত্রের বেশভূষা, আচার–আচরণ ও কালচার – এসব কোনো কিছুই সব্যসাচীর সঙ্গে মেলে না। তা দেখে থানায় উপস্থিত অপূর্ব আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলে; এই ব্যক্তি যে সব্যসাচী মল্লিক নয় তার সে জামিন হতে পারে। অপূর্বর এ কথায় খানিক দ্বিধাগ্রস্ত নিমাইবাবু চুপ করে ছিলেন।

প্রশ্নঃ ‘কিন্তু বুনো হাঁস ধরাই যে এদের কাজ’ – বক্তা কে? তার এই বক্তব্যের কারণ বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ ‘পথের দাবী’ রচনাংশ থেকে উদ্ধৃত উক্তিটির বক্তা অপূর্বর সহকর্মী রামদাস তলওয়ারকর।

     অপূর্ব সহকর্মী ও বন্ধু রামদাসের কাছে পুলিশস্টেশনে ঘটা গিরীশ মহাপাত্রের বেশভূষা, আচার–আচরণের আদ্যোপান্ত বিবরণ তুলে ধরে। এ প্রসঙ্গে তথাকথিত বুদ্ধিদীপ্ত পুলিশকে যেভাবে সে বোকা বনতে দেখেছে তাও জানায়। অথচ এরাই সরকারের বহু টাকা এভাবেই ‘বুনো হাঁস’ তথা বিপ্লবীদের ধরার পিছনে ছুটোছুটি করে অপব্যয় করছে। অপূর্বর এ কথায় রামদাস হেসে জানায়, চোর ধরার বদলে আসলে ‘বুনো হাঁস’ ধরাই এখন পুলিশের মূল কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রশ্নঃ ‘কেবল আশ্চর্য সেই রোগা মুখের অদ্ভুত দুটি চোখের দৃষ্টি।’ – কার চোখের কথা বলা হয়েছে? চোখদুটির বর্ণনা দাও। 

উত্তরঃ চোখ দুটির বর্ণনা উত্তর উদ্ধৃতাংশে শরৎচন্দ্রের ‘পথের দাবী’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র সব্যসাচী ওরফে গিরীশ মহাপাত্রের চোখের কথা বলা হয়েছে। 

     অদ্ভুত বেশভূষাধারী ও রুগ্‌ণ গিরীশ মহাপাত্রের চেহারার সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল তার চোখ দুটি। সে – চোখ ছোটো কী বড়ো, টানা কী গোল, দীপ্ত কী প্রভাহীন সে – বিচার করতে যাওয়া বৃথা। অত্যন্ত গভীর জলাশয়ের মতো চোখ দুটিতে এমন কিছু আছে যেখানে কোনো খেলা চলবে না, যেখান থেকে সাবধানে দূরে দাঁড়ানোই শ্রেয়। আসলে গিরীশ মহাপাত্রের চোখ ছদ্মবেশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা অসাধারণ সব্যসাচী মল্লিককেই প্রকাশ করে।

প্রশ্নঃ ‘দয়ার সাগর! পরকে সেজে দি, নিজে খাইনে। মিথ্যেবাদী কোথাকার!’ – কার উদ্দেশ্যে এই উক্তি? তাকে ‘দয়ার সাগর’ ও ‘মিথ্যেবাদী’ বলার কারণ কী?

উত্তরঃ আমাদের পাঠ্য শরৎচন্দ্রের ‘পথের দাবী’ উপন্যাসের অংশবিশেষে পুলিশকর্মী জগদীশবাবু থানায় আটক যার উদ্দেশ্যে উক্তি সন্দেহভাজন গিরীশ মহাপাত্রের উদ্দেশ্যে উক্তিটি করেছেন।

      থানায় গিরীশ মহাপাত্রের পকেট তল্লাশি করে গাঁজার কলকে পেয়ে নিমাইবাবু তাকে গাঁজা খাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করেন। উত্তরে সে জানায় সে খায় না তবে বন্ধুদের তৈরি করে দেয়। একথা শুনে সেখানে উপস্থিত জগদীশবাবু তাকে ‘দয়ার সাগর’ বলে বাচ্চা করেন এবং তার মধ্যে গাঁজা খাওয়ার সব লক্ষণ প্রকট থাকায় তাকে মিথ্যেবাদী বলেন।

প্রশ্নঃ ‘ইচ্ছা করিলে আমি তোমাকে টানিয়া নীচে নামাইতে পারি।’ – প্রসঙ্গ নির্দেশ করে উদ্ধৃতাংশের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ শরৎচন্দ্রের ‘পথের দাবী’ উপন্যাসে উদ্ধৃত উক্তিটি করেছে বর্মা পুলিশের সাব–ইনস্পেক্টর। বাঙালি যুবক অপূর্ব তার অফিসের বড়োসাহেবের নির্দেশে প্রথম শ্রেণির যাত্রী হিসেবে ভামো যাচ্ছিলেন। তল্লাশির নাম করে পুলিশ যখন বার বার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাচ্ছিলেন তখন প্রতিবাদ করায় পুলিশ তার প্রতি এমন উক্তি করেছিলেন। বর্মা পুলিশের এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ উক্তিটি শুধু অপূর্বর উদ্দেশ্যে নয় এ যেন সমগ্র ভারতীয়র উদ্দেশ্যে করা। এ থেকে ইংরেজ শাসনে ভারতীয়দের সামাজিক অবস্থান ও নিজের দেশে পরবাসী হয়ে থাকার ছবি স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান।

(৪) রচনাধর্মী প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :

প্রশ্নঃ ‘পথের দাবী’ উপন্যাসের যে অংশ তোমাদের পাঠ্য, তা অনুসারে অপূর্ব চরিত্রটি আলোচনা করো।

উত্তরঃ শরৎচন্দ্রের ‘পথের দাবী’ রচনাংশের মুখ্য চরিত্র অপূর্ব একজন সৎ–শিক্ষিত–আদর্শবাদী ও সংবেদনশীল যুবক। চাকরির সন্ধানে তার বর্মায় আসা। পাঠ্যাংশে অপূর্বর চরিত্রের দুটি প্রধান বৈশিষ্ট্য দেখতে পাওয়া যায় –

দেশপ্রেমিকঃ অপূর্ব পরাধীন ভারতের এক তরুণ দেশপ্রেমিক। সব্যসাচীর প্রতি সে আন্তরিকভাবে শ্রদ্ধাশীল। গিরীশ মহাপাত্রকে প্রথম দর্শনে সে হাসি সামলাতে না পারলেও বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিকের বর্মায় আগমন ও পুলিশি সতর্কতা সত্ত্বেও তার ধরা না পড়া অপূর্বকে বিচলিত করে তোলে। গিরীশ মহাপাত্রের প্রতি অপূর্বর সন্দেহ যত বেড়েছে সব্যসাচীর প্রতি শ্রদ্ধা তত প্রগাঢ় হয়েছে। সহকর্মী রামদাসের কাছে তার সরল স্বীকারোক্তি ইংরেজ ভৃত্য আত্মীয়ের চেয়ে অনাত্মীয় দেশপ্রেমিক সব্যসাচী তার বেশি আপনার। দেশের অপমান ভুক্তভোগী অপূর্বর বুকে বেঁধে। শরৎচন্দ্র সেই বাঙালি বিপ্লবী তরুণদের আদর্শে অপূর্বকে গড়ে তুলেছেন যাদের ধমনিতে পরাধীনতার ও দাসত্বের যন্ত্রণা থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা শোণিতের মতো প্রবাহিত। তাই সব্যসাচীর মতো রাজদ্রোহীরা অপূর্বদের আদর্শ নায়ক। এদের মধ্যেই তরুণ বিপ্লবীরা নিজেদের খুঁজে পেতেন। 

গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধাশীলঃ বিপ্লবী সব্যসাচীর দৃঢ়তা ব্যক্তিত্বকে অপূর্ব শ্রদ্ধা করলেও প্রকাশ্যে রাজদ্রোহিতার সাহস তার ছিল না। সেই কারণে ইংরেজ বিদ্বেষী অপূর্ব তার পিতার বন্ধু নিমাইবাবু ইংরেজ কর্মচারী জেনেও তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিল। 

      তাই এভাবেই ‘পথের দাবী’ উপন্যাসের কথক অপূর্ব পরাধীন ভারতের শিক্ষিত তরুণদের এক সার্থক টাইপ চরিত্ররূপে প্রতিভাত হয়েছে।

প্রশ্নঃ ‘এমন তো নিত্য নিয়তই ঘটছে।’ – এখানে কোন ঘটনার কথা বলা হয়েছে?

উত্তরঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনার কেন্দ্রীয় চরিত্র অপূর্ব। সে বন্ধু ও সহকর্মী রামদাস তলওয়ারকরের কাছে রেঙ্গুন পুলিশস্টেশনে ঘটা একটি ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে; দেশ ও দেশপ্রেমিক বিপ্লবীদের প্রতি নিজের অন্তরের ভালোবাসার কথা স্বীকার করে। মাতৃভূমির স্বাধীনতা কিংবা মুক্তির সংগ্রামে যাঁরা প্রাণপণ সচেষ্ট, তাদের ‘আপনার নয়’ বলবার সাধ্য অপূর্বর নেই। কারণ অন্যায় অবিচারের শাস্তিভোগ করার যন্ত্রণা তাকেও সহ্য করতে হয়েছে। এ প্রসঙ্গে একটি বেদনাদায়ক ঘটনার কথা সে বলে। একদিন কয়েকজন ফিরিঙ্গি ছোঁড়ার হাতে অপূর্বকে বিনা কারণে মানসিক ও শারীরিকভাবে নিগৃহীত হতে হয়। এর প্রতিবাদে সাহেব স্টেশনমাস্টারের কাছে গেলে, সেখানেও তার কপালে জোটে অপমান এবং লাঞ্ছনা। তবে অপূর্বর কাছে এর চেয়েও বেদনাবহ ছিল ঘটনাস্থলে উপস্থিত ভারতীয়দের নীরবতার অভ্যেস। এমন পরিস্থিতিতে অভ্যস্ত এক অসহায় দুর্বল ও ক্লীব জাতির দাসত্বের ছবি, তাকে দুঃখে – লজ্জায় এবং ঘৃণায় হতবাক করে দিয়েছিল। এক শিক্ষিত দেশপ্রেমিক তরুণের কাছে ব্যক্তিগত নয় যেখানে সমগ্র জাতির অপমান জড়িত; তাকে ভাষায় প্রকাশ করা অনেক বেশি লজ্জা ও অসম্মানের। অথচ এমন অন্যায় লাঞ্ছনার ঘটনা প্রতিনিয়তই প্রতিকারহীনভাবে ঘটে চলেছে। এ কথাই অপূর্বর কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে।

প্রশ্নঃ ‘পথের দাবী’ – তে নিমাইবাবুর চরিত্রটি আলোচনা করো।

উত্তরঃ অপরাজেয় কথাশিল্পী শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা কালজয়ী রাজনৈতিক উপন্যাস ‘পথের দাবী’ থেকে গৃহীত দশম শ্রেণির পাঠ্য অংশে নিমাইবাবু সম্পর্কে যা জানা যায়, তা হল – নিমাইবাবু হলেন কাহিনির কেন্দ্রীয় চরিত্র অপূর্বর পিতৃবন্ধু, সেই সূত্রে আত্মীয়। অপূর্বর পিতা কোনো একসময়ে তাঁকে চাকরিতে ঢুকিয়েছিলেন। এই সূত্রে যে সম্বন্ধ স্থাপিত হয়েছে, তা দুই পক্ষই বহন করে নিয়ে চলেছে । রেঙ্গুনের পুলিশস্টেশনে বাংলা পুলিশের দারোগা নিমাইবাবুকে ছদ্মবেশী বিপ্লবী সব্যসাচী ওরফে গিরীশ মহাপাত্রকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা যায়। তবে অভিজ্ঞ ও বর্ষীয়ান নিমাইবাবুও সব্যসাচীকে চিনতে ভুল করে ফেলেন। তাকে সাধারণ গঞ্জিকাসেবক বলে ছেড়েও দেন। তবে তাঁর স্নেহপ্রবণ মন বোঝা যায়, যখন গিরীশ মহাপাত্ররুপী সব্যসাচীর রুগ্‌ণ দেহ দেখে তিনি কোমল স্বরে তাকে গাঁজা না খাওয়ার পরামর্শ দেন এবং বলেন ‘বুড়োমানুষের কথাটা শুনো’। এক্ষেত্রে এক প্রৌঢ় স্নেহশীল পিতার প্রতিচ্ছবি নিমাইবাবুর মধ্যে ফুটে ওঠে।

প্রশ্নঃ ‘কিন্তু এই জানোয়ারটাকে ওয়াচ করবার দরকার নেই বড়োবাবু। – ‘জানোয়ারটা’ বলতে কাকে ইঙ্গিত করা হয়েছে? তাকে ওয়াচ করার দরকার নেই কেন? 

উত্তরঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশ থেকে উদ্ধৃত উক্তিটিতে ‘জানোয়ারটা’ বলতে পুলিশস্টেশনে আটক গিরীশ মহাপাত্রকে বলা হয়েছে। বক্তা পুলিশের কর্মচারী জগদীশবাবু। 

     বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে পুলিশ গিরীশ মহাপাত্রকে আটক করে। কিন্তু তার রোদে পড়া তামাটে রং, হাঁফ ধরা কাশির দমক ও অকাল বার্ধক্যের ভগ্ন–স্বাস্থ্য দেখে পুলিশের সন্দেহ হয়। বিশেষত তার বেশভূষার বাহার আর পরিপাট্য দেখে পুলিশ নিশ্চিত হয় এই ব্যক্তিটি সব্যসাচী নয়। কারণ বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিপ্রাপ্ত চিকিৎসকের সঙ্গে সন্দেহভাজন; কারখানার মিস্ত্রি গিরীশের কোনো মিল থাকাই সম্ভব নয়। খানাতল্লাশির সময় তার ট্যাঁক ও পকেট থেকে বিভিন্ন মামুলি সামগ্রীর সঙ্গে একটি গাঁজার কলকেও পাওয়া যায়। গিরীশ গাঁজা খাওয়ার কথা বারবার অস্বীকার করলেও, গাঁজা খাওয়ার সমস্ত লক্ষণই তার বিদ্যমান দেখে পুলিশ নিঃসংশয় হয়। নিমাইবাবু মহাপাত্রকে ছেড়ে দিলেও, এ শহরে নজর রাখার কথা বলেন। কারণ বর্মায় সব্যসাচী এসেছে। এ খবর নির্ভুল। এ কথায় জগদীশবাবু বলেন, তবে গিরীশ মহাপাত্রকে রাখার কোনো প্রয়োজন নেই।

প্রশ্নঃ গিরীশ মহাপাত্রের চেহারা ও পোশাক–আশাকের বিস্তারিত বিবরণ দাও। 

উত্তরঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশের কেন্দ্রীয় চরিত্র সব্যসাচী মল্লিকের ছদ্মবেশী রূপই হল গিরীশ মহাপাত্র। ছদ্মবেশী সব্যসাচী এই উপন্যাসে যেন সম্পূর্ণ একটি আলাদা চরিত্ররূপে আমাদের কাছে ধরা দেয়। পুলিশস্টেশনের মধ্যে কাশতে কাশতে তার আবির্ভাব। রোদে পুড়ে তার গায়ের অত্যন্ত ফরসা রং প্রায় তামাটে হয়ে গেছে। বয়স ত্রিশ–বত্রিশের মধ্যে হলেও, অত্যধিক বুগণতার জন্য তাকে দেখে মনে হয় যেন আয়ুর শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। তবে এমন শারীরিক গড়ন ও চেহারার মধ্যেও উল্লেখযোগ্য তার রোগা মুখের অদ্ভুত দুটি চোখের দৃষ্টি। 

      আসলে মহাপাত্ররূপী সব্যসাচী সব কিছু লুকোলেও, অতলস্পর্শী চোখ দুটিকে তার পক্ষে লুকোনো সম্ভব ছিল না। পোশাক–আশাক তার মাথার সামনের চুল লম্বা। যদিও ঘাড় ও কানের কাছে প্রায় নেই। তার চেরা সিঁথি করা তেল জবজবে মাথা থেকে উগ্র নেবুর তেলের গন্ধ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। গিরীশের পরনে ছিল জাপানি সিল্কের রামধনু রঙের চুড়িদার পাঞ্জাবি, যার বুকপকেট থেকে বাঘ–আঁকা একটা রুমালের কিছুটা দেখা যাচ্ছিল। যদিও তার কাঁধে উত্তরীয়ের কোনো বালাই ছিল না। সে পরনে বিলাতি মিলের কালো মকমলের সূক্ষ্ম শাড়ি পরেছিল। তার পায়ে ছিল লাল ফিতে বাঁধা সবুজ ফুল মোজা ও তলায় আগাগোড়া নাল বাঁধানো বার্নিশ করা পাম্প শু। আর তার হাতে ধরা একগাছি হরিণের শিং দিয়ে হাতল বাঁধানো বেতের ছড়ি। তবে এত শখশৌখিনতা–পরিপাট্য এসবই জাহাজযাত্রার ধকলে নোংরা ও মলিন এবং তার শরীরে গাঁজা খাওয়ার লক্ষণ আর ক্লান্তির ছাপ বেশ স্পষ্টভাবে প্রতিভাত হচ্ছিল।

প্রশ্নঃ ‘অপূর্ব তাহার পরিচ্ছদের প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া মুখ ফিরাইয়া হাসি গোপন করিল’ – ‘তাহার’ বলতে কার কথা বোঝানো হয়েছে? তার পরিচ্ছদের প্রতি দৃষ্টিপাত করে হাসি গোপন করার কারণ কী?

উত্তরঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশ অনুসারে, প্রশ্নোধৃত অংশে ‘তাহার’ বলতে গিরীশ মহাপাত্রের কথা বোঝানো হয়েছে। 

     রেঙ্গুন পুলিশস্টেশনে বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে গিরীশ মহাপাত্রকে আটক করা হয়। সে কাশতে কাশতে থানার দারাগো নিমাইবাবুর সামনে এসে হাজির হয়। সেখানে অপূর্বও হাজির ছিল। লোকটির রোদে পোড়া তামাটে রং— অকাল বার্ধক্যের হাঁপানি অতিক্রম করে তার দৃষ্টি নিবন্ধ পরিচ্ছদের প্রতি হয় অতলশায়ী চোখ–দুটিতে। আচমকা নিমাইবাবুর দৃষ্টিপাত করে হাসি কথায় অপূর্বর সম্বিৎ ফেরে। সে গিরীশের বেশভূ গোপনের কারণ যা ও পরিচ্ছদের প্রতি দৃষ্টিপাত করে। তার মাথার সামনের চুল লম্বা । যদিও ঘাড় ও কানের কাছে প্রায় নেই। তার চেরা সিঁথি করা তেল জবজবে মাথা থেকে উগ্র নেবুর তেলের গন্ধ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। গিরীশের পরনে ছিল জাপানি সিল্কের রামধনু রঙের চুড়িদার পাঞ্জাবি, যার বুকপকেট থেকে বাঘ–আঁকা একটা রুমালের কিছুটা দেখা যাচ্ছিল। যদিও তার কাঁধে উত্তরীয়ের কোনো বালাই ছিল না। সে পরনে বিলাতি মিলের কালো মখমলের সূক্ষ্ম শাড়ি পরেছিল। তবে পায়ে ছিল লাল ফিতে বাঁধা সবুজ ফুল মোজা ও তলায় আগাগোড়া নাল বাঁধানো বার্নিশ করা পাম্প শু। আর তার হাতে ধরা একগাছি হরিণের শিং দিয়ে হাতল বাঁধানো বেতের ছড়ি। এই কিম্ভুৎ আর বিচিত্র সাজসজ্জার কারণেই গিরীশ মহাপাত্রকে দেখে অপূর্ব হাসি গোপন করেছিল।

প্রশ্নঃ রামদাস তলওয়ারকর চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পথের দাবী’ উপন্যাসের একটি পার্শ্বচরিত্র হল রামদাস তলওয়ারকর। অপূর্বর সহকর্মী তলওয়ারকর খুব গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র না হয়েও যথেষ্ট গুরুদায়িত্ব পালন করেছে। তাকে অবলম্বন করেই পাঠ্য অংশে অপূর্ব নিজের ভাবনাচিন্তা ব্যক্ত করেছে। রামদাস তলওয়ারকর সহকর্মীর চেয়েও অনেক বেশি সহমর্মী ও বন্ধু। ছদ্মবেশী সব্যসাচীকে দেখে আনমনা অপূর্বের বাড়ির পরিস্থিতি কুশল কিনা, তা সে জানার চেষ্টা করেছে। তার স্ত্রী প্রতিদিন অপুর্বর জলযোগ সরবরাহ করেছে। তলওয়ারকর অপূর্বর সমস্ত কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছে তা সে অপূর্বর ঘরে চুরি ও উপরতলার ক্রিশ্চান মেয়ের দ্বারা সম্পদ রক্ষার গল্পই হোক বা ইংরেজ কর্তৃক অপূর্বর অপমানের কাহিনিই হোক। রেঙ্গুন পুলিশস্টেশনে দেখা অদ্ভূত দর্শন গিরীশ মহাপাত্রের বর্ণনা দিতে গিয়ে তার সঙ্গে প্রচণ্ড হাসিতে ফেটে পড়েছে অপূর্ব। কিন্তু সঙ্গ দিতে গিয়ে তলওয়ারকর কখনোই অপূর্বর ছায়াতে পরিণত হয়নি। অপূর্বকে ট্রেনে তুলতে গিয়ে গিরীশ মহাপাত্রকে দেখে তার মনে সন্দেহ জেগেছে। প্রখর বুদ্ধিমান ছদ্মবেশী বিপ্লবী সব্যসাচীও তার মন থেকে সন্দেহ দূর করতে পারেনি। রামদাস মনে মনে গিরীশের প্রকৃত পরিচয় হাতড়ে বেড়িয়েছে। এভাবেই বুদ্ধিতে, বন্ধুত্বে, সাহচর্যে এবং সমবেদনায় রামদাস স্বল্প পরিসরেও তার স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করে।

প্রশ্নঃ ‘পথের দাবী’ উপন্যাস থেকে গৃহীত পাঠ্য অংশে অপূর্বর রেলযাত্রার যে বিবরণ দেওয়া হয়েছে, তা নিজের ভাষায় লেখো।

উত্তরঃ শরৎচন্দ্রের ‘পথের দাবী’ উপন্যাসের অন্যতম চরিত্র অপূর্ব বড়োসাহেবের নির্দেশে অফিসের কাজে ও রেঙ্গুনে ভালো না লাগার কারণে এক বিকেলে আর্দালি ও হিন্দুস্থানি ব্রাহ্মণ পেয়াদা নিয়ে ভামোগামী ট্রেনে চড়ে বসে। তাকে স্টেশনে ছাড়তে আসে তার সহকর্মী রামদাস। গাড়ি ছাড়ার পাঁচ মিনিট আগে হঠাৎ সেখানে উদয় হয় পুলিশস্টেশনে দেখা গিরীশ মহাপাত্র। মহাপাত্রের সঙ্গে আলাপচারিতা শেষ না হতে হতেই অপূর্বর ট্রেন ছেড়ে দেয়। প্রথম শ্রেণির যাত্রী বলে তার কামরায় কেউ ছিল না। অপূর্ব সন্ধ্যাহিক সম্পন্ন করে স্পর্শদোষহীন খাবার খেয়ে শোবার উদ্যোগ নেয়। সে ব্যাঘাতহীন ঘুমের কথা ভাবলেও কয়েকটা স্টেশনের পরই তার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে। সারারাত্রিতে অন্তত তিনবার পুলিশের লোক এসে তার নামঠিকানা লিখে নিয়ে যায়। অবশেষে অপূর্ব বিরক্ত হয়ে প্রতিবাদ করায় বর্মার সাব–ইনস্পেক্টর রুঢ়ভাবে বলেন, যেহেতু সে ইউরোপীয় নয় তাই তারা ইচ্ছে করলেই তাকে ট্রেন থেকে টেনে নামিয়ে দিতে পারে। প্রথম শ্রেণির যাত্রীর পরিচয় দিয়ে নিজের অধিকার রক্ষার কথা বলেও কোনো লাভ হয়নি। পরাধীন দেশের মানুষের দুর্দশা ও লাঞ্ছনার ছবি এভাবেই অপূর্বর ট্রেন যাত্রার ঘটনা থেকে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

 

 

©kamaleshforeducation.in(2023)

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!