প্রলয়োল্লাস

প্রলয়োল্লাস (কবিতা) কাজী নজরুল ইসলাম – মাধ্যমিক দশম শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | West Bengal Madhyamik Class 10th Bengali Proloyullash Question and Answer 

MCQ | প্রলয়োল্লাস (কবিতা) কাজী নজরুল ইসলাম – মাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Bengali Proloyullash Question and Answer :

  1. ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতাটি যে – কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত , তা হল – 

(A) অগ্নিবীণা 

(B) সর্বহারা 

(C) ঝড় 

(D) ফণীমনসা 

Ans: (A) অগ্নিবীণা

  1. ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতাটির প্রকাশকাল হল –

(A) ১৯২২ খ্রিস্টাব্দ

(B) ১৯২০ খ্রিস্টাব্দ 

(C) ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দ 

(D) ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দ 

Ans: (A) ১৯২২ খ্রিস্টাব্দ

  1. ‘ তোরা সব ____ কর

(A) বিদ্রোহ 

(B) প্রলয় নাচন 

(C) জয়ধ্বনি 

(D) সৃজন – বেদন 

Ans: (C) জয়ধ্বনি

  1. কবি ‘ নূতনের কেতন ‘ বলেছেন –

(A) দ্বাদশ রবির বহ্নিজ্বালা – কে 

(B) অট্টরোলের হট্টগোল – কে 

(C) বিশ্বমায়ের আসন – কে 

(D) কালবোশেখির ঝড় – কে

Ans: (D) কালবোশেখির ঝড় – কে

  1. ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ শব্দের অর্থ হল –

(A) ধ্বংসের আনন্দ 

(B) ভয়ংকরের চণ্ডরূপ

(C) রথঘর

(D) দিগন্তের কাদন

Ans: (A) ধ্বংসের আনন্দ

  1. ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতাটির মুখ্য উপজীব্য হল— 

(A) প্রলয় 

(B) বিপ্লববাদ

(C) যুদ্ধ 

(D) সহমমিতা

Ans: (B) বিপ্লববাদ

  1. কবি ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় আসন্ন প্রলয় সম্পর্কে যে – বিশেষণটি । ব্যবহার করেননি , সেটি হল –

(A) অসহায়

(B) অনাগত 

(C) ভয়ংকর 

(D) চিরসুন্দর  

Ans: (A) অসহায় 

  1. অনাগত প্রলয় যেখানে ধমক হেনে আগল ভাঙল , তা হল – 

(A) বিশ্বমায়ের আসন 

(B) সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে 

(C) নীল খিলানে

(D) সপ্ত মহাসিন্ধু

Ans: (B) সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে

  1. ভয়ংকর আসছে –

(A) কেশের দোলায় ঝাপটা মেরে

(B) বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে 

(C) অরুণ হেসে করুণ বেশে

(D) আসছে হেসে মধুর হেসে

Ans: (B) বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে

  1. ‘ ঝামর ‘ শব্দের অর্থ হল –

(A) ঝটকা

(B) আলুথালু

(C) কৃষ্ণবর্ণ

(D) গভীর

Ans: (C) কৃষ্ণবর্ণ

[ আরোও দেখুন: Madhyamik Bengali Suggestion 2023 Click here ]

  1. ধূমকেতুকে ‘ জ্বালামুখী ‘ বলার কারণ হল – 

(A) ধূমকেতুর পুচ্ছটি ধূম্রনির্মিত

(B) ধূমকেতু আগুন উদ্‌গিরণ করে

(C) ধূমকেতু সবকিছু পুড়িয়ে দেয়

(D) ধূমকেতু নিজে পুড়ে যায়

Ans: (A) ধূমকেতুর পুচ্ছটি ধূম্রনির্মিত

  1. ‘ কৃপাণ ‘ শব্দটির অর্থ হল –

(A) কিপটে

(B) তরবারি

(C) ঢাল

(D) ছোরা

Ans: (D) ছোরা

  1. চরাচর স্তব্ধ হওয়ার কারণ –

(A) দিগন্তরের কাঁদন

(B) জগৎজুড়ে প্রলয় এবার ঘনিয়ে আসে 

(C) দেবতা বাঁধা যজ্ঞ – যুপে

(D) অট্টরোলের হট্টগোলে

Ans: (D) অট্টরোলের হট্টগোলে

  1. ‘ সপ্ত মহাসিন্ধু দোলে / কপোলতলে ।’— ‘ কপোল ‘ শব্দের অর্থ হল –

(A) কপাল 

(B) গাল

(C) পায়রা 

(D) কর্পূর

Ans: (B) গাল

  1. ‘ মাভৈঃ মাভৈঃ ‘ ধ্বনির তাৎপর্য হল – 

(A) ভয় না পেয়ে এগিয়ে চল

(B) ভয়ের কথা ভেব না 

(C) যুদ্ধে জয়ী হও

(D) মা – কে সর্বদা ভক্তি করো

Ans: (A) ভয় না পেয়ে এগিয়ে চল

  1. ‘ মুমূর্ষু ‘ শব্দের একটি প্রতিশব্দ হল –

(A) অসুস্থ 

(B) উপবাসী

(C) অর্ধমৃত

(D) ভয়ংকর

Ans: (D) ভয়ংকর

  1. ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় ‘ শিশু – চাঁদ ‘ বলতে বোঝানো হয়েছে – 

(A) ছোটো চাঁদ

(B) সদ্য – উদিত চাঁদ 

(C) চাঁদের সন্তান 

(D) চাদের মতো সুন্দর শিশু

Ans: (B) সদ্য – উদিত চাঁদ

  1. ‘ উল্কা ছুটায় নীল খিলানে ।’— ‘ নীল খিলান ‘ বলতে এখানে বোঝানো হয়েছে –

(A) গাছপালাকে

(B) আকাশকে

(C) প্রাসাদকে

(D) মন্দিরকে

Ans: (B) আকাশকে

  1. ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় ‘ রথঘর্ষর ‘ বলতে বোঝানো হয়েছে –

(A) রথ ভেঙে পড়ার শব্দ

(B) বজ্রপাতের শব্দ

(C) রথের চাকায় ঘর্ষণের শব্দ

(D) রথে চড়ে যুদ্ধের শব্দ

Ans: (C) রথের চাকায় ঘর্ষণের শব্দ

  1. ‘ জীবনহারা অ – সুন্দরে করতে ছেদন । কে আসছে ? 

(A) নবীন

(B) চিরসুন্দর

(C) মহাকাল সারথি

(D) মুমূর্ষু

Ans: (A) নবীন

  1. যে ‘ ভেঙে আবার গড়তে জানে তার নাম হল –

(A) প্রলয় – নেশার নৃত্যপাগল

(B) জ্বালামুখী ধূমকেতু

(C) বিশ্বমাতা 

(D) চিরসুন্দর

Ans: (D) চিরসুন্দর

  1. বধূদের যা তুলে ধরতে বলা হয়েছে , তা হল— 

(A) চাবুক

(B) মশাল

(C) প্রদীপ

(D) কৃপাণ

Ans: (C) প্রদীপ

  1. সুন্দর যার বেশে আসছে , সে হল –

(A) কালবোশেখির ঝড়

(B) দ্বাদশ রবি

(C) জ্বালামুখী ধূমকেতু

(D) কাল – ভয়ংকর

Ans: (D) কাল – ভয়ংকর

  1. ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় ‘ তোরা সব জয়ধ্বনি কর ’ বাক্যটি মোট কতবার ব্যবহৃত হয়েছে ? 

(A) পনেরো বার 

(B) উনিশ বার 

(C) সতেরো বার

(D) একুশ বার

Ans: (B) উনিশ বার 

  1. ‘ দ্বাদশ রবির বহ্নিজ্বালা ভয়াল তাহার নয়নকটায় , — ‘ দ্বাদশ রবি ‘ বলতে বোঝানো হয়েছে –

(A) বারোটি রবি

(B) সকালের রবি 

(C) মধ্যাহ্নের রবি 

(D) অস্তগামী রবি

Ans: (A) বারোটি রবি

  1. ‘ অন্ধ কারার বন্ধ কূপে / দেবতা বাঁধা যজ্ঞ – যূপে ‘ — এক্ষেত্রে কবি ‘ দেবতা ’ বলতে বুঝিয়েছেন

(A) মহাদেবকে

(B) ভারতীয় বিপ্লবীকে

(C) দেশমাতাকে

(D) দেশনায়ককে

Ans: (B) ভারতীয় বিপ্লবীকে

  1. এবার মহানিশার শেষে বুঝিয়েছেন ক দীর্ঘ রাত্রি শেষে – 

(A) দীর্ঘ কারাবাসের শেষে

(B) দীর্ঘ রাত্রি শেষে

(C) দীর্ঘ প্রত্যাশার শেষে

(D) দীর্ঘ পরাধীনতার শেষে

Ans: (D) দীর্ঘ পরাধীনতার শেষে

  1. নীচের কোনটি নজরুলের লেখা কাব্যগ্রন্থ নয় –

(A) মানসী

(B) ফণীমনসা

(C) চক্রবাল

(D) বিশের বাঁশি

Ans: (A) মানসী

  1. বিশ্বপিতার বক্ষ – কোলে ‘ — কী ঝোলে ? 

(A) মুণ্ডু 

(B) কৃপাণ

(C) ফল

(D) ফুল

Ans: (B) কৃপাণ

  1. ‘ তোরা সব জয়ধ্বনি কর ।’— যাঁর জয়ধ্বনি করতে হবে , তিনি হলেন –

(A) দেশনেতা

(B) মহাকাল

(C) দেশমাতা

(D) প্রলয়ংকর শিব

Ans: (D) প্রলয়ংকর শিব

  1. ‘ মৃত্যু – গহন অন্ধকূপে ‘ বলতে কবি বুঝিয়েছেন—

(A) কুসংস্কারগ্রস্ত সমাজ 

(B) রাত্রির অন্ধকার 

(C) ভীতিজনক স্থান 

(D) পরাধীন ভারত

Ans: (A) কুসংস্কারগ্রস্ত সমাজ

  1. মহাকালের চণ্ড – রূপে ‘ আসছেন— 

(A) মহানিশা 

(B) সৃষ্টির দেবতা

(C) মহাকালী 

(D) কালবৈশাখীর ঝড়

Ans: (B) সৃষ্টির দেবতা

  1. “ বিশ্বমায়ের আসন –

(A) দুলে উঠেছে 

(B) ছিন্ন হয়েছে

(C) পাতা হয়েছে

(D) মহাকাল ধারণ করে রেখেছেন

Ans: (D) মহাকাল ধারণ করে রেখেছেন

অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | প্রলয়োল্লাস (কবিতা) কাজী নজরুল ইসলাম – মাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Bengali Proloyullash Question and Answer :

  1. ‘ তোরা সব জয়ধ্বনি কর।— কবি কাদের জয়ধ্বনি করতে বলেছেন ?

Ans: কাজী নজরুল ইসলামের ‘ অগ্নিবীণা ‘ কাব্যগ্রন্থের ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় কবি পরাধীন ভারতের মুক্তিকামী ও স্বাধীনতা – প্রত্যাশী জনগণকে মহাপ্রলয়ের জয়ধ্বনি করতে বলেছেন ।

  1. কবি নজরুল ‘ জয়ধ্বনি ‘ করার কথা বলেছেন কেন ? 

Ans: নজরুল ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় ভারতের পরাধীনতার মহানিশার শেষে স্বাধীনতা সূর্যের উদিত হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন মহাপ্রলয়ের হাত ধরে । তাই তিনি মানুষকে আশাপূর্ণকারী প্রলয়ের জয়ধ্বনি করতে বলেছেন । ‘ 

  1. কালবোশেখির ঝড় ‘ – কে নূতনের কেতন বলার কারণ কী ? 

Ans: কালবৈশাখী ঝড় পুরাতনকে মুছে ফেলে নূতনের সংকেত আনে বলে কবি কালবোশেখিকে ‘ নূতনের কেতন ‘ বলেছেন ।

  1. ‘ অনাগত ’ বলতে কীসের ইঙ্গিত করেছেন কবি ?

Ans: ‘ প্রলয়োল্লাস ’ কবিতায় নজরুল ‘ অনাগত ’ বলতে পরাধীন ভারতের বন্দিদশা মোচনকারী , আসন্ন মুক্তি বা স্বাধীনতার কথা বলেছেন ।

  1. ‘ সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে ’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ? 

Ans: কাজী নজরুল সিন্ধুপারের সিংহদ্বার বলতে সাগর তীরে অবস্থিত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির দ্বারা শাসিত ভারতকে বুঝিয়েছেন ।

  1. ‘ মহাকাল ’ কী ?

Ans: ‘ মহাকাল ’ শব্দটির একটি অর্থ হল অনবচ্ছিন্ন কাল বা সময়প্রবাহ । কিন্তু পাঠ্য কবিতায় ‘ মহাকাল ’ হল প্রলয় সৃষ্টিকারী মহাদেবের ধ্বংসাত্মক রূপের প্রতীক । রুদ্ররূপী শিবের আরেক নাম হল মহাকাল ।

  1. ‘ ওরে ওই হাসছে ভয়ংকর।— ভয়ংকর হাসছে কেন ? 

Ans: নজরুলের ‘ প্রলয়োল্লাসে ’ ‘ ভয়ংকর ’ শব্দটি রূপকার্থে ব্যবহৃত , যার অর্থ ধ্বংসকারী বিপ্লবীসত্তা । মহাকালের ‘ চণ্ডরূপী ‘ ভয়ংকর সকল অন্যায় – অত্যাচারকে বিনাশ করে নতুন যুগের সূচনা করার তৃপ্তিতে হাসছেন ।

  1. ‘ ধূমকেতু ’ কী ? 

Ans: প্রাসঙ্গিক টীকা অংশ দ্যাখো । 

  1. ‘ অট্টরোলের হট্টগোলে স্তব্ধ চরাচর- চরাচর স্তব্ধ কেন ? 

Ans: ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় ভয়ংকরের আগমনে চারদিকে কলরোল ধ্বনিত হয়েছে । এই অট্টরোল মুক্তিকামী মানুষের মনে কোনো এক আসন্ন ঝড়ের ইঙ্গিত বহন করে আনে , তাই চরাচর স্তব্ধ ।

  1. ” ওরে ওই স্তব্ধ চরাচর- ‘ – ‘ চরাচর ‘ স্তব্ধ কেন ?

Ans: বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম রচিত ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় ধ্বংসের দেবতা প্রলংকর শিবের অট্টহাসির ভয়ংকর শব্দে বিশ্বচরাচর স্তব্ধ হয়ে পড়েছে । এই স্তব্ধতা মুক্তিকামী মানুষের মনে কোনো এক আসন্ন ঝড়ের ইঙ্গিত বহন করে আনে ।

  1. ‘ দ্বাদশ রবির বহ্নিজ্বালা ‘ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?

Ans: ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় নবযুগের বার্তাবাহী ভয়ংকর প্রলয় , একটি সূর্যের তেজ নয় , বারোটি সূর্যের ন্যায় দীপ্ত ও তীব্র । এই তীব্রতা বোঝাতেই উক্ত শব্দবন্ধটি ব্যবহৃত হয়েছে ।

  1. ‘ বিশ্বমায়ের আসন তারই বিপুল বাহুর পর— —অর্থ কী ?

Ans: কবির আহূত ‘ ভংয়কর ‘ এই বিশ্বের রক্ষাকর্তা । অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে সে শুভ শক্তির প্রতিষ্ঠা করবে , দেশমাতার আসন সুনিশ্চিত হবে । তাই কবি উক্ত উদ্ধৃতিটি করেছেন ।

  1. ‘ জগৎ জুড়ে প্রলয় ‘ কেন ঘনিয়ে আসছে ?

Ans: যা – কিছু জীর্ণ , পুরাতন , জরাগ্রস্ত ও মুমূর্ষু তাদের বিনাশ ঘটিয়ে , দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নতুন ঊষা নতুন সূর্যের কিরণে উদ্ভাসিত হবে বলেই জগৎজুড়ে প্রলয় ঘনিয়ে আসছে ।

  1. ‘ মহানিশার শেষে , ঊষার হাসি – র তাৎপর্য কী ?

Ans: দীর্ঘ প্রলয়ের শেষে যা – কিছু জীর্ণ , পুরাতন তার অবসান ঘটে স্বাধীনতার নতুন সূর্য ভারতের আকাশকে আলোকিত করে তুলবে । আলোচ্য উদ্ধৃতিটি এই তাৎপর্যই বহন করে ।

  1. ‘ রণিয়ে ওঠে হ্রেষার কাঁদন – এর মধ্যে কীসের ইঙ্গিত পাওয়া যায় ?

Ans: ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতা থেকে উদ্ধৃত অংশে মহাকাশের রথের ঘোড়ার হেষাধ্বনি অর্থাৎ মুক্তিকামী মানুষের বৈপ্লবিক উত্থান বিশ্বময় । ছড়িয়ে পড়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায় ।

  1. ‘ এই তো রে তার আসার সময়’- ‘ তার ‘ বলতে কার আসার সময়ের কথা বলা হয়েছে ?

Ans: নজরুলের ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় ‘ তার ‘ বলতে প্রলয়ংকারের আসার কথা বলা হয়েছে । পৃথিবীতে যখনই অস্তিত্বের সংকট ঘটেছে তখনই এই ‘ প্রলয় ‘ রুদ্ররূপে তা নিরসন করেছে ।

  1. ‘ প্রলয় নূতন সৃজন – বেদন ! ‘ — তাৎপর্য কী ?

Ans: সৃষ্টির আগে শিল্পী , অথবা শিশুর জন্মের আগে মা যে – বেদনা অনুভব করেন , কবিও তেমনি যুগান্তরের ইঙ্গিতবাহী এই আসন্ন প্রলয়ের মধ্যে সৃষ্টির যন্ত্রণাকে অনুভব করেছেন ।

  1. ‘ আসছে নবীন — নবীন কে ?

Ans: ‘ প্রলয়োল্লাস ’ কবি নজরুল ‘ নবীন ’ বলতে নবযুগের বার্তাবাহক মহাকাল , ভয়ংকর বা নবীন বিপ্লবী শক্তিকে বুঝিয়েছেন , যাদের হাত ধরে পৃথিবীতে আসবে নতুন যুগ ।

  1. ‘ ওই ভাঙা – গড়া খেলা যে তার— ভাঙা – গড়া খেলা বলতে কী বোঝ ?

Ans: ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় ‘ ভাঙা – গড়ার খেলা ’ বলতে কবি নজরুল ধ্বংস ও সৃষ্টির চক্রাকার আবর্তনকে বুঝিয়েছেন ।

  1. বধুরা কেন প্রদীপ তুলে ধরবে ?

Ans: ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতা অনুসারে , যুগান্তরের অন্ধকারের বুক চিরে কাল – ভয়ংকর এগিয়ে আসে মানুষের আকাঙ্ক্ষিত মুক্তিবার্তা নিয়ে । কবি বধুদের প্রদীপ তুলে নিয়ে এই শক্তিকে বরণ করে নিতে বলেছেন ।

  1. ‘ আসছে এবার অনাগত প্রলয় – নেশার নৃত্য পাগল – ‘ নৃত্য পাগল ‘ কে ?

Ans: নজরুলের ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় ‘ নৃত্য পাগল ‘ বলতে , মুক্তিগামী মানুষের বৈপ্লবিক সত্তাকে কবি প্রলয়রূপী নটরাজের নৃত্যপরায়ণ রুপের সঙ্গে তুলনা করেছেন ।

  1. ‘ ওই নূতনের কেতন ওড়ে — ‘ নূতনের কেতন ওড়া বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ? 

Ans: ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতা অনুসারে , কালবৈশাখী ঝড় যেমন রুক্ষ – শুষ্ক ও জীর্ণ প্রকৃতির বুকে নতুন প্রাণের উদ্দামতা বহন করে আনে , কবি সেভাবেই পরাধীন দেশের প্রাচীন অচলায়তনকে ভেঙে ‘ নূতন ‘ জীবন ও মূল্যবোধের সূচনাবার্তা ঘোষণা করতে চেয়েছেন ।

  1. ‘ কালবোশেখির ঝঝড়- কীসের প্রতীক ?

Ans: কবি কাজী নজরুল ইসলাম ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় ‘ কালবোশেখির ঝড় ‘ – কে নতুন জীবন ও মূল্যবোধের প্রতীক বলে মনে করেছেন ।

  1. প্রলয়নেশার নৃত্য পাগল কীসের জন্য আসছেন ?

Ans: প্রলয় – নেশার নৃত্য পাগল সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে অর্থাৎ সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ শাসকের অন্যায় – অত্যাচারের অবসান ঘটাতে আসছেন ।

  1. ওই আসে সুন্দর সু ‘ ওই আসে সুন্দর ’ – ‘ সুন্দর কীভাবে আসে ?

Ans: ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতা অনুসারে ‘ সুন্দর ’ , ‘ কাল ভয়ংকরের বেশে ‘ অর্থাৎ রুদ্ররূপী প্রলয়ের রূপ ধরে আসে ।

  1. ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে কে আগল ভাঙল ?

Ans: কবি নজরুলের ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতা অনুসারে সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে ‘ প্রলয় – নেশার নৃত্য পাগল ‘ অর্থাৎ মুক্তিকামী ভারতীয়ের বিপ্লবী সত্তা আগল বা শৃঙ্খল ভেঙেছে ।

  1. ‘ দিগম্বরের জটায় হাসে শিশু – চাদের কর— ‘ দিগম্বর কে ?

Ans: কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতা থেকে গৃহীত উদ্ধৃতিটিতে ‘ দিগম্বর ’ বলতে মহাদেবকে বোঝানো হয়েছে ।

  1. ‘ এবার মহানিশার শেষে’— কী ঘটবে ?

Ans: ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতা অনুসারে ‘ মহানিশার শেষে ‘ অর্থাৎ পরাধীন দেশের অত্যাচার – অপমানের শেষে , ঊষার হাসি তথা মুক্তি সূর্যের প্রথম আলোয় জাতির জীবন নতুন করে উদ্ভাসিত হবে ।

  1. “ তোরা সব জয়ধ্বনি কর । কার জয়ধ্বনি করতে বলা হয়েছে ?

Ans: কবি কাজী নজরুল ইসলাম ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় পরাধীন ভারতের মুক্তিকামী জনগণকে স্বপ্ন বা আশাপূর্ণকারী প্রলয়ের জয়ধ্বনি করতে বলেছেন ।

  1. ‘ প্রলয় বয়েও আসছে— কেন এই আগমন ?

Ans: ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতা অনুসারে নতুন ও নবীন প্রাণ জীবনহারা অসুন্দরের অবসান ঘটাতে প্রলয়রূপ ধারণ করে আসছে ।

  1. ‘ দিগম্বরের জটায় ‘ কে হাসে ?

Ans: ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতা অনুসারে শিশু চাঁদের স্নিগ্ধ ও মাধুর্যময় হাত যেন দিগম্বর – মহাদেবের জটায় হাসে । এই হাসির মধ্যে ফুটে ওঠে সময়রূপী মহাকালের অভয়মন্ত্র ।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | প্রলয়োল্লাস (কবিতা) কাজী নজরুল ইসলাম – মাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Bengali Proloyullash Question and Answer :

  1. ‘ তোরা সব জয়ধ্বনি কর।- ‘ তোরা ‘ কারা ? তাদের জয়ধ্বনি করতে বলা হচ্ছে কেন ?

Ans: নজরুল ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় কবি ‘ তোরা ’ বলতে , পরাধীন দেশের স্বাধীনতার প্রত্যাশী আপামর জনসাধারণকে বুঝিয়েছেন । 

  ভারতবর্ষের পরাধীনতা কবি নজরুলের কাছে ভীষণ পীড়াদায়ক ছিল । তিনি সর্বদাই এই অবস্থার অবসান চাইতেন । তিনি বুঝেছিলেন কালবৈশাখীর মতো ভয়ংকর শক্তি কিংবা প্রলয় – নেশায় মত্ত মহাদেবের মতোই কেউ এসে এই অবস্থার অবসান ঘটাবে । তাই কবি ভারতীয়দের এই ধ্বংস ও সৃষ্টির দেবতার আগমনের উদ্দেশ্যে জয়ধ্বনি করার আহ্বান জানিয়েছেন ।

  1. ‘ আসছে এবার অনাগত প্রলয় – নেশার নৃত্য পাগল , -‘অনাগত ’ কে ? সে ‘ প্রলয় – নেশার নৃত্য পাগল ’ কেন ? অনাগত কে ? 

Ans: ‘ অনাগত ’ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ যা আসেনি । এক্ষেত্রে পরাধীনতার নাগপাশ থেকে আমাদের মুক্ত করতে পারে এমন শক্তির আগমন যে আসন্ন তা আশাবাদী কবি মনশ্চক্ষে প্রত্যক্ষ করেছেন । শিব বা রুদ্ররূপী এই শক্তিকেই কবি ‘ অনাগত ’ বলেছেন । 

  ‘ প্রলয় ’ ও ‘ নৃত্য পাগল ‘ শব্দ দুটির দ্বারা কবি শিবের বিধ্বংসী ও নটরাজরূপের কথা বলতে চেয়েছেন । কবির কাঙ্ক্ষিত অনাগত শক্তি অত্যাচারী ব্রিটিশ শক্তিকে ধ্বংসের ও মন্থনের দ্বারা আমাদের স্বাধীনতার নতুন সকাল উপহার দেওয়ার স্বপ্নে বিভোর । 

  1. বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে আসছে ভয়ংকর ! -‘ভয়ংকর বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন ? তার আসার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো ।

Ans: নজরুল তাঁর ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতাতে ‘ ভয়ংকর ‘ বলতে ‘ ভয়ংকর ‘ — অর্থ নবযুগের বার্তাবহ প্রলয়রূপী বিপ্লব বা বিদ্রোহকে বুঝিয়েছেন । ‘ রুদ্ররূপী ‘ শিবকে তিনি এর প্রতীক রূপে কল্পনা করেছেন । 

  ‘ ভয়ংকর ‘ — অর্থ → অত্যাচারী ব্রিটিশের শাসনে ভারতবাসী স্থবির হয়ে গিয়েছিল । আর ভারতবর্ষ হয়ে গিয়েছিল অচলায়তন । কালের নিয়মে অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটবেই । সেই অচলায়তন ভাঙবে মানুষের সম্মিলিত বিপ্লবের দ্বারা । আশাবাদী কবি আসন্ন বিপ্লবের এই আছড়ে পড়া ঢেউকে ভয়ংকর প্রলয়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন ।

  1. ‘ মাভৈঃ মাভৈঃ ! জগৎ জুড়ে প্রলয় এবার ঘনিয়ে আসে— কবি ‘ মাভৈঃ ’ বলে কী জানাতে চেয়েছেন ? প্রলয় এসে কোন্ কাজ করবে বলে কবির মনে হয়েছে ? 

Ans: ‘ মাভৈঃ ’ শব্দে কবির উত্তর বিদ্রোহী সত্তার অধিকারী কবি নজরুল তাঁর ‘ প্রলয়োল্লাস কবিতায় ‘ মাভৈঃ মাভৈঃ ‘ শব্দযুগলের ব্যবহার করেছেন , যার অর্থ ভয় কোরো না , অর্থাৎ নির্ভয়ে এগিয়ে চলো । পরাধীনতার অন্ধকার থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য প্রহর গণনারত ভারতবাসীকে কবি পুরাতনকে ধ্বংস করে নূতনের বিজয় পতাকা ওড়ানোর জন্য হৃদয়ে সাহস সঞ্চার করার কথা জানতে চাওয়া বলেছেন । মহাপ্রলয়ের ফলে পৃথিবীতে বারে বারে অশুভ শক্তি ধ্বংস হয়ে সৃষ্টির বীজ বপিত হয়েছে । প্রলয়ের ফলে দীর্ঘ পরাধীনতার শেষে স্বাধীনতার সূর্যালোকে ভারতবর্ষ উদ্ভাসিত প্রলয় যা কাজ করবে হয়ে উঠবে — এটাই কবির আশা ।

  1. ‘ জরায় মরা মুমূর্ষুদের প্রাণ – লুকানো ওই বিনাশে ? —পঙ্ক্তিটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও । 

Ans: বিপ্লব আসছে যোদ্ধার বেশে , নতুন সূর্যের সন্ধানে তার অগ্রগমন । কিন্তু এই অগ্রগতির পথে অনেক বাধা । বহু সংস্কার , বহু জরাগ্রস্ত , অন্ধ ও মুমূর্ষু মতবাদ এসে পথের গতি পঙক্তিটির তাৎপর্য শ্লথ করতে চায় । কিন্তু এসবকে , বিনাশ করে নতুন দিনের সন্ধানী আলোয় , প্রলয়রূপী বৈপ্লবিক সৃজন তার নিজের পথ করে নেবে । কবি নজরুলের ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতার প্রশ্নোধৃত অংশে কবি – কণ্ঠে এই ভাবনাই ব্যস্ত হয়েছে ।

  1. ‘ দিগম্বরের জটায় হাসে শিশু – চাদের কর —’দিগম্বরের জটা ’ ও ‘ শিশু – চাদের কর ’ – এই দুই চিত্রকল্পের মেলবন্ধনের স্বরূপ বুঝিয়ে দাও ।

Ans: নজরুল তাঁর কল্পনাশক্তির শিখরে পৌঁছেছেন ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতার প্রশ্নোস্তৃত অংশে । দিগম্বর অর্থাৎ দেবাদিদেব শিবের অন্য এক রূপ হল রুদ্র চণ্ডের সংহারক মূর্তি । অথচ তাঁরই জটায় শোভা বৃদ্ধি করে চাঁদের ছোট্ট একটি ফালি । ঠিক যেন প্রলয়ের ভয়ংকরতার পাশাপাশি প্রতীক্ষায় আছে এক নতুন দিনের স্নিগ্ধ শাস্তির হাতছানি । রাতের শেষে যেমন দিন আসে , অঝোর বর্ষণের শেষে দেখা দেয় সোনাঝরা রোদ , তেমনই প্রলয় শেষে আবির্ভূত হবে মানবমুক্তির স্নিগ্ধ সৌন্দর্য , এই হল কবির বিশ্বাস ।

  1. ‘ এই তো রে তার আসার সময় তার আসার চিহ্নগুলি কী ছিল ? 

Ans: কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় কবি ‘ তার ’ বলতে ‘ মহাকাল ’ – কে বুঝিয়েছেন । এই মহাকালই পারে তার মহাপ্রলয়ের দ্বারা অত্যাচারী ব্রিটিশ শক্তির বিনাশ করে স্বাধীনতা আনতে । আশাবাদী কবি মহাকালের আগমন যে আসন্ন তা যেন অন্তর দিয়ে প্রত্যক্ষ করেছেন । মহাকালের হাতের চাবুক বিদ্যুতের মতো চমকিত হচ্ছে বারবার । বজ্রের শব্দ হ্রেষাধ্বনির মতো অনুরণিত হচ্ছে । আর ঘোড়ার খুরের আঘাতে নীল আকাশ থেকে উল্কা খসে পড়ছে । মহাকালে আগমনবার্তা তার রথের চাকার ঘর্ষণই সূচিত করছে । 

  1. ‘ ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর ? – ধ্বংসকে ভয় না – পাওয়ার কারণটি বুঝিয়ে দাও ।

Ans: উদ্ধৃতিটি নজরুলের ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতার অংশ বিশেষ । কালের রথে চড়ে মহাপ্রলয়ের মধ্যে দিয়ে মহাকালের বা ভয়ংকরের আগমন দেখে কবি অগ্রদূতকে ভয় না – পেতে বলেছেন । প্রলয় ধ্বংসকারী , কিন্তু এটাও সত্য যে , প্রলয়ই সৃষ্টির হাতছানি । ধ্বংসের ভয় না পাওয়ার কারণ প্রলয় আমাদের মধ্যে বেদনাবোধ জাগালেও নতুন কিছু সৃষ্টি করে । প্রলয়ই পারে নবচেতনার আলোকে প্রাণহীন অসুন্দরের মধ্যে নতুন প্রাণের সঞ্চার করতে । কবি তাই তার অগ্রদূতকে অভয় দিয়ে বলেছেন প্রলয় চিরসুন্দর । সে ভেঙে আবার গড়তেও পারে । তাই প্ররকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই ।

  1. ভেঙে আবার গড়তে জানে সে চিরসুন্দর ।’- ‘ সে ‘ কে ? ভেঙে আবার গড়ার বিষয়টি বুঝিয়ে দাও । 

Ans: নজরুলের ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতার উদ্ধৃত অংশটিতে ‘ সে ’ বলতে কবি ‘ অসীম শক্তির ’ অধিকারী মহাদেব বা প্রলয়রূপী ‘ সে ’ – এর পরিচয় প্রাকৃতিক শক্তিকে বুঝিয়েছেন । ভেঙে আবার গড়া ধ্বংসের মধ্যেই সৃষ্টির বীজ নিহিত । এই চিরন্তন সত্যই জগতে প্রতিষ্ঠিত । কবি তার ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় ধ্বংসের জয়গান করেছেন । আপাতদৃষ্টিতে তাতে বিরোধ থাকলেও এটাই সত্য । পরাধীন ভারতে পরাধীনতার শৃঙ্খল মোচনের জন্য কবি মহাদেবকে আহ্বান জানিয়েছেন । সেই চিরসুন্দর অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে শুভ শক্তির সূচনা করবেন ।

  1. ‘ আসছে নবীন— জীবনহারা অ – সুন্দরে করতে ছেদন ! — উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য লেখো ।

Ans: প্রশ্নোদ্ভূত অংশটি কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘ প্রলয়োল্লাস ’ কবিতা থেকে নেওয়া । পরাধীন ভারতের জীর্ণতা , দাসত্ব , জড়তা , বৈষম্য ও শোষণের অবসান ঘটাতে কবি বৈপ্লবিক সত্তার আগমন ধ্বনি শুনতে পেয়েছেন । প্রলয়রূপী এই যুগান্তরের শক্তির পদসঞ্চার দেখে তিনি হয়েছেন আত্মহারা । কবি নিশ্চিত জীবনহারা – অশুভের বিনাশকারী নবীনের মধ্যেই আছে , নতুন সৃষ্টির সম্ভাবনা । সেই পারে নিষ্প্রাণ – গতিহীন সমস্ত কুশ্রীতার জন্মালকে ধুয়ে – মুছে সাফ করে দিতে । উপরের উদ্ধৃতিটিতে কবি এ কথাই বলতে চেয়েছেন । 

  1. অট্টরোলের হট্টগোলে স্তব্ধ চরাচর ‘ — ‘ চরাচর ‘ শব্দের অর্থ কী ? চরাচর স্তব্ধ কেন লেখো ।

Ans: উপরের উদ্ধৃতিটি কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘ প্রলয়োল্লাস ’ কবিতার অন্তর্গত । ‘ চরাচর ‘ শব্দের অর্থ হল সমগ্র পৃথিবী বা জগৎ । 

  কবি প্রলয় বা ধ্বংসকে ফুটিয়ে তুলতে কখনও শিব , আবার কখনও সর্বনাশী জ্বালামুখী স্বরূপ চণ্ডীমূর্তির রুদ্রতাণ্ডবের চরাচর স্তব্ধ কেন উপমা টেনে এনেছেন । বিনাশের অট্টহাসির গভীর ব্যঞ্জনা যেন সমগ্র জগতে সৃষ্টি করেছে এক রুদ্ধশ্বাস পরিবেশ । প্রলয়ের ভয়াবহ বিস্ফোরণের অজানা আশঙ্কায় এ পৃথিবী নিষ্কম্প – নিস্তব্ধ । প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে কবির এ ভাবনাই প্রকাশ পেয়েছে ।

  1. ‘ কাল – ভয়ংকরের বেশে এবার ওই আসে … ! – এমন উক্তি কার সম্পর্কে করা হয়েছে ? এমন উক্তির কারণ কী ?

Ans: ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় কবি নজরুল চিরসুন্দর বা চিরনবীন সম্পর্কে আলোচ্য উক্তিটি করেছেন ।

  কবি নজরুল চিরবিদ্রোহী । তাই পরাধীন ভারতের মুক্তিকামী মানুষের অন্তরের বৈপ্লবিক শক্তিকে তিনি উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছেন । তাঁর বিশ্বাস জীর্ণ লোকাচার – প্রচলিত জড়তা – নিশ্চল প্রাণহীনতা উত্তির কারণ এবং দাসত্বের অবসান ঘটলেই গড়ে উঠবে নতুন জীবন । সুতরাং , বিনাশের ভয়াবহতার মধ্যেই লুকিয়ে আছে সত্য ও সুন্দরের বীজ । কবি ধ্বংসের মধ্যেই খুঁজে পেয়েছেন সৃষ্টির ব্যানা এবং যন্ত্রণা । সেজন্যেই তিনি সেই ভয়ংকর সুন্দরেরই বন্দনা গান গেয়েছেন ।

রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর | প্রলয়োল্লাস (কবিতা) কাজী নজরুল ইসলাম – মাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Bengali Proloyullash Question and Answer

1. ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় কবি প্রলয়কে কোন্ বিশেষণে ভূষিত করেছেন । কবিতার বিষয়বস্তু অনুসারে এই বিশেষণগুলির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও ।

Ans: বিদ্রোহীসত্তার অধিকারী কবি নজরুলের বিশ্বাস চারপাশের সমাজে যে – বৈষম্য , জড়ত্ব ও পরাধীনতার যন্ত্রণা বর্তমান বিপ্লবই পারে তা প্রলয়ের নানা বিশেষণ থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে । ধ্বংসকারী সে প্রলয়ের আগমন সংকেতে কবি আত্মহারা । আনন্দিত কবি তাই সেই পরিবর্তনকামী শক্তিকে ‘ কালবোশেখির ঝড় ’ , ‘ প্রলয় – নেশার নৃত্য পাগল ‘ , ‘ ভয়ংকর ‘ , ‘ মহাকাল সারথি ‘ , ‘ নবীন ‘ , ‘ কাল – ভয়ংকর ‘ প্রভৃতি বিশেষণে ভূষিত করেন । 

   নজরুল তার বহু কবিতায় অশুভ শক্তির ধ্বংসের প্রয়োজনে প্রলয়কে । আহ্বান জানিয়েছেন । এই প্রলয়ের উপর কখনো কখনো চেতনা আরোপ করে কবি তাকে চারিত্রিক মর্যাদা দিয়েছেন , যেমন : ‘ অগ্রদূত ’ , ‘ সারথি , ‘ কালাপাহাড় ’ , ‘ ঘোড়সওয়ারী ‘ ইত্যাদি । আমাদের পাঠ্য ‘ প্রলয়োল্লাস কবিতাতেও তিনি প্রলয়কে নানান বিশেষণে বিশেষিত করেছেন , ‘ কালবোশেখির ঝড় ’ বলে তুলনা করে কবিতায় বিভীষিকাময় রূপের শেষে নতুনের পদধ্বনি শুনেছেন । কবি ‘ প্রলয় – নেশার নৃত্য পাগল ’ বলতে ধ্বংসের নেশায় তাণ্ডবকারী বিপ্লবের আগমনকে বুঝিয়েছেন , যে অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে শুভ শক্তির সূচনা করতে পারে । প্রলয়ের রূপকে কবি ‘ ভয়ংকর ’ বা ‘ কাল – ভয়ংকর রূপেও আহ্বান জানিয়েছেন । প্রলয় প্রাকৃতিক নিয়মেই ঘটে থাকে । তাই তার রথের সারথি মহাকাল বা সময় । তাই ভাঙা – গড়ার এই কারিগরকে মহাকাল সারথি বলে কবি উল্লেখ করেছেন । সর্বোপরি প্রলয়কে ‘ নবীন ’ আখ্যা দেওয়ার অর্থ হল পৃথিবীতে পুরোনোকে ধ্বংস করে প্রলয়ই জন্ম দেয় নবীনের । 

2. ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় প্রলয়ের যে – চিত্র অঙ্কিত হয়েছে তার বর্ণনা দাও । 

Ans: নজরুলের ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় প্রলয়ের এক কাল্পনিক চিত্র অঙ্কিত হয়েছে । এই ভয়ংকর ধ্বসংকারী প্রলয় কালবৈশাখীর মতোই পুরাতন জীর্ণতা দূর করে নতুনের আগমন সূচিত করে । কবি জয়ধ্বনির দ্বারাই তাকে গ্রহণ করেছেন । প্রলয়ের নেশায় পাগল সেই মহাকাল ঔপনিবেশিক শক্তির সিংহদ্বারে আঘাত হেনে , রুদ্ররূপী মহাদেবের মতো বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে পরাধীনতার অন্ধকার থেকে ভারতবাসীকে মুক্ত করতে এগিয়ে আসছে । তার কেশের দোলায় আকাশ কেঁপে ওঠে । জ্বালামুখী ধূমকেতু তার দাস । কৃপাণ হাতে সে এগিয়ে আসছে । তার অট্টরোলে বিশ্ব স্তব্ধ । এই মহাপ্রলয়ের চোখে দ্বাদশ রবির অগ্নিতেজ । সেই রুদ্রের পিঙ্গলবর্ণের জটার দোলায় ত্রস্ত দিগন্ত । তার এক বিন্দু চোখের জলে মহাসিন্ধুর বিশালতা ও তেজ । এই রুদ্ররূপী নটরাজের বাহুর ওপরেই বিশ্বমায়ের আসন পাতা । এই মহাপ্রলয় জরাগ্রস্ত ও মুমূর্ষুদের বিনাশ করে নতুন দিশা দেখায় । মহাকালের সারথির তীব্র চাবুকে ধ্বনিত হয় ঘোড়ার কাঁদন । সেই ঘোড়ার খুরের দাপটে নীল আকাশে উল্কা ছুটছে । অন্ধকার কারাগারের আড়ালে যে – দেবতারূপ বিপ্লবীরা আটকে আছে এবার তাদের মুক্তি আসন্ন । কবির মতে , এই ধ্বংসলীলায় ভীত হওয়ার কিছু নেই । কারণ সে নবীনের বার্তাবহ । প্রাণহীন অসুন্দরকে ধ্বংস করতে ছুটে আসছে । এই প্রলয়ের কাজই হল ভাঙা – গড়া । 

3. ‘ প্রলয়োল্লাস ’ কবিতায় একদিকে ধ্বংসের চিত্র আঁকা হয়েছে আবার অন্যদিকে নতুন আশার বাণী ধ্বনিত হয়েছে । প্রসঙ্গটি কবিতা অবলম্বনে আলোচনা করো । 

অথবা , ‘ ওই নূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখির ঝড় ।— ‘ প্রলয়োল্লাস কবিতার বিষয়বস্তুর পরিপ্রেক্ষিতে মন্তব্যটির তাৎপর্য আলোচনা করো ।

Ans: কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘ প্রলয়োল্লাস ’ কবিতায় যেমন একদিকে ধ্বংস বা প্রলয়ের চিত্র আঁকা হয়েছে , অন্যদিকে আবার এক গভীর আশার বাণী ধ্বনিত হয়েছে । একদিকে কালবৈশাখী ঝড়ের দাপটের চিত্র , অন্যদিকে আসন্ন প্রলয়ের পরেই নতুন দিনের প্রতীক্ষার অবসান— সবমিলিয়ে বিনাশ ও সৃষ্টির অন্যদিকে গড়ার চিত্র চমৎকার মেলবন্ধনে প্রাণিত নজরুলের ‘ প্রলয়োল্লাস ’ কবিতা । প্রথম কয়েকটি স্তবকে অনাগত প্রলয়ের ‘ প্রলয়োল্লাস’ একদিকে ধ্বংস তাণ্ডবের বর্ণনা পাঠককে ভয়ে বিবশ করে তোলে । সেখানে ওরে ওই হাসছে ভয়ংকর ‘ , অথবা ‘ জয় প্রলয়ংকর ‘ ইত্যাদি বাক্যাংশ ব্যবহার করে , কবি খুব সচেতনভাবে প্রলয়ের ধ্বংসকারী রূপকে পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন । একদিকে দ্বাদশ রবির বহ্নিজ্বালা ভয়াল তাহার নয়নকটায় ‘ , অন্যদিকে ‘ বিন্দু তাহার নয়নজলে সপ্তমহাসিন্ধু দোলে – আগুন ও জলের সহাবস্থান একই নয়নে দেখিয়ে কবি এই বার্তাই দিতে চেয়েছেন যে , অন্ধকারের সঙ্গেই আলো , কালোর সঙ্গেই সাদা ওতপ্রোত ও একাকার । ঠিক এই বার্তাই রূপ পায় , যখন কবি উল্লসিত আবেগে বলে ওঠেন , ‘ এবার মহানিশার শেষে / আসবে ঊষা অরুণ হেসে ‘ অথবা ‘ ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর ? – প্রলয় নূতন সৃজন – বেদন । ‘ কবি জানেন সৃষ্টির বেদনা । তাই মহাপ্রলয়ের শেষে যে নতুন দিনের উদয় অবশ্যই হবে সে – সম্পর্কে তিনি নিশ্চিত । আশা ও ভীতির দোলাচলে ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতাটি একটি ছন্দোময় আবেগগীতি ।

4. ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতাটিতে কবি নজরুল ইসলামের বিদ্রোহীসত্তার প্রতিফলন কীভাবে ঘটেছে , তা কবিতা অনুসারে আলোচনা করো ।

Ans: কবি নজরুল সম্পর্কে আলোচনার শুরুতেই যে – বিশেষণগুলি অতিসহজেই তাঁর সম্বন্ধে প্রযুক্ত হতে পারে , সেগুলি হল— আপসহীন , ফরিয়াদি , সর্বোপরি বিদ্রোহী কবি । চিরকাল অন্যায় , শোষণ , অসাম্যের বিরুদ্ধে নজরুল যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন । তাঁর চরিত্রের এই ঋজুতা প্রতিফলিত হয়েছে তাঁর কবিতাতেও । অনিবার্য যন্ত্রণাকে মাথা নীচু করে মেনে নেননি তিনি । এ প্রসঙ্গে লর্ড বায়রনের একটি স্মরণীয় উক্তি— ‘ For I will teach , If possible the stones to rise against Earth’s tyrants . ” 

  এরই অনুরণন যেন শুনতে পাই নজরুলের ‘ আসছে এবার অনাগত প্রলয় – নেশার নৃত্য পাগল , সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে ধমক হেনে ভাঙল আগল’— পঙ্ক্তিগুলিতে । নজরুলের ধমনিতে প্রবাহিত বহ্নি তাঁর অন্তরের সুপ্ত আগ্নেয়গিরিকে জাগ্রত করে , উদ্‌বেলিত বিদ্রোহীসত্তার প্রতিফলন লাভাস্রোতের মতো শব্দেরা এসে প্রজ্বলিত করে স্ফুলিঙ্গ । এই স্ফুলিঙ্গেরই নিদর্শন — ‘ মাভৈঃ মাভৈঃ ! জগৎ জুড়ে প্রলয় এবার ঘনিয়ে আসে / জরায় – মরা মুমুর্ষুদের প্রাণ – লুকানো ওই বিনাশে ! ‘ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে স্পষ্ট সতর্কবার্তা দিয়েছেন কৰি এই কবিতায় । কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ সবুজের অভিযান ‘ কবিতায়— “ ওরে নবীন , ওরে আমার কাঁচা … ‘ পঙ্ক্তিগুলির সঙ্গে পূর্বোক্ত পক্তির সাদৃশ্য অতিস্পষ্ট । বিপ্লবপন্থায় বিশ্বাসী মাতৃভূমির প্রতি উৎসর্গীকৃতপ্রাণ নজরুল উদার , উন্মুক্ত বিশ্বমানবতাকেই তাঁর কাব্যরচনার অবলম্বন হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন ।

5. প্রতিবাদী কবিতা হিসেবে ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কতখানি সার্থকতা লাভ করেছে , তা কবিতা অবলম্বনে আলোচনা করো ।

Ans: কবি নজরুল তাঁর সমগ্র জীবন , কর্ম ও কাব্যকীর্তি দিয়ে সমস্ত শোষণ , পীড়ন , বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন । তাঁর প্রায় অধিকাংশ কবিতাই প্রতিবাদী কবিতা । তবে আলোচ্য প্রতিবাদী কবিতা ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতাটির প্রতিবাদী কবিতা হিসেবে একটি বিশেষ স্থান রয়েছে । কারণ কাব্যজীবনের শুরুতে যে – দুটি কবিতা নজরুলকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছিল , তার একটি হল ‘ প্রলয়োল্লাস ’ ও অপরটি ‘ বিদ্রোহী ‘ । বিদ্রোহী কবি একদিকে ‘ বিদ্রোহী ‘ কবিতায় নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন এই বলে 

‘ মহা – বিদ্রোহী রণক্লান্ত 

আমি সেই দিন হব শান্ত , 

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন রোল

 আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না । 

অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ 

ভীম রণভূমে রণিবে না 

বিদ্রোহী রণ – ক্লান্ত 

আমি সেই দিন হব শান্ত । 

‘ অন্যদিকে ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ – এ বিবরণ দিচ্ছেন ‘্যামর তাহার কেশের দোলায় ঝাপটা মেরে গগন দুলায় , / সর্বনাশী জ্বালামুখী ধূমকেতু তার চামর ঢুলায় । 

  ” কবির অসাম্প্রদায়িকতা , ভারতীয়ত্ব , দেশাত্মবোধ , স্বাধীনতাপ্রিয়তা তাঁর অন্যান্য কবিতার মতো ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ – কেও জারিত করেছে । প্রলয় তথা বিপ্লবের আগমনি তাঁর লেখনীকে করেছে জ্বালাময়ী ; প্রতিবাদের সুর শব্দচয়নে , ছন্দের বিভঙ্গে কবিতাটি প্রতিবাদী কবিতা প্রলয়োল্লাসেও তো বটেই , বিদ্রোহের বাণীরূপ হয়ে উঠেছে । বিশ্বমানবতার মূর্ত প্রতীক নজরুল আহ্বান জানিয়েছেন ‘ তোরা সব জয়ধ্বনি কর । ‘ এ জয়ধ্বনি বিনাশের নয় । এ জয়ধ্বনি বিনাশ – পরবর্তী নতুন আশার , যা রূপকথার ফিনিক্স পাখির মতো অগ্নিময় ধ্বংসস্তূপ থেকে প্রাণের বার্তাকে সঞ্চারিত করে । 

6. তোরা সব জয়ধ্বনি কর ! কাদের উদ্দেশ্যে কবির এই আহ্বান ? কবিতার ভাববস্তু বিশ্লেষণ করে এই আহ্বানধ্বনির পুনরাবৃত্তির যৌক্তিকতা প্রতিপন্ন করো । 

অথবা , ‘ তোরা সব জয়ধ্বনি কর ! ‘ — এখানে ‘ তোরা বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে ? তারা কেন , কাদের জয়ধ্বনি করবে ?

Ans: উদ্ধৃত অংশটি নজরুলের ‘ প্রলয়োল্লাস ’ কবিতার অংশ – বিশেষ । ‘ তোরা ’ বলতে কবি পরাধীন ভারতের সেইসব মানুষদের বুঝিয়েছেন , যারা কবির আহ্বানের ইংরেজদের হাতে অত্যাচারিত , অশিক্ষা , কুংস্কারের উদ্দেশ্য অন্ধকারে নিমজ্জিত এবং চেতনাহীন । তাই তাদের চেতনা জাগ্রত করতে এবং পরাধীনতার শৃঙ্খলমোচনের জন্য ও বিপ্লবীসত্তাকে উজ্জীবিত করার উদ্দ্যেশ্যে কবির এই আহ্বান । 

  অনুনয় – বিনয় নয় , পরাধীন ভারতকে স্বাধীন করতে চাই তীব্র আন্দোলন । তাই তো তাঁর বিদ্রোহীসত্তা বারবার উদাত্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেন কারাগারের লৌহকপাট ভেঙে ফেলতে । কখনও – বা কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা যে দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত সে – কথা জানিয়ে তিনি জয়োল্লাস করতে বলেছেন । আশাবাদী কবি তাই বারে বারে প্রলয়কে আহ্বান জানিয়েছেন । এই প্রলয়ই পারে কালবৈশাখীর ঝড় বা মহাকালে চণ্ডরূপে সিন্ধুপারের সিংহদ্বারের আগল ভেঙে বিপ্লবীদের মুক্তি দিতে , জরাগ্রস্ত মুমূর্ষু জাতির মধ্যে প্রাণের সঞ্চার করতে । কবি মহাপ্রলয়ের এই ধ্বংসলীলা দেখে ভয় না – পেতে বলেছেন । কেননা রুদ্ররূপ মহাপ্রলয় কবিতার ভাববস্তুর নিরিখে আহ্বানধ্বনির পুনরাবৃত্তির যৌক্তিকতা একইসঙ্গে ধ্বংস ও সৃষ্টিরও । সেই – ই পারে ধ্বংসের উপর নতুন সমাজ স্থাপন করতে । তাই কবি তাকে | বরণ করে নিয়ে জয়োল্লাস করতে বলেছেন । কবিতায় ‘ তোরা সব জয়ধ্বনি কর ! ’ চরণটি আঠারো বার উচ্চারণের কারণ , এর গীতিময়তা এবং পরাধীন ও প্রায় স্থবিরত্বপ্রাপ্ত অসহায় ভারতবাসীর হৃদয়ে উজ্জীবনের অনুরণন জাগানো ।

7. কাল – ভয়ঙ্কর বেশে এবার ওই সুন্দর ।’— ‘ কাল ভয়ংকর কে ? তার ভয়ংকর রূপের বর্ণনা দাও ও তাকে সুন্দর বলা হয়েছে কেন তা ব্যাখ্যা করো ।

Ans: ” কাল – ভয়ংকর ‘ – এর বর্ণনা উত্তর উদ্ধৃতিটি নজরুলের ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতার অংশ বিশেষ । বিদ্রোহী কবি বিপ্লবের পথেই যে ভারতবাসীর মুক্তি সে – কথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন এবং তাঁর লেখনীতে তা বেশ স্পষ্ট । কিন্তু প্রায় জীবনহারা অচল – অসাড় একটা জাতিকে উজ্জীবিত করতে চাই একটা মহাপ্রলয় । সেই প্রলয় ঘটাতে পারে একমাত্র রুদ্ররূপী কাল – ভয়ংকর । যদিও এক্ষেত্রে কবি দেশের যুবশক্তিকে কাল – ভয়ংকররূপে আখ্যা দিয়েছেন । 

  কবি রুদ্ররূপী কাল ভয়ংকর অর্থাৎ যুবশক্তির বিভিন্ন রূপ বর্ণনা করেছেন । কালবৈশাখীর ঝড়ের মতো প্রলয় – নেশার নৃত্য পাগল মহাকালের চত্তরূপে সামাজিক অসংগতিকে দুর করতে তার আগমন ঘটে । কখনও তার ঝামর কেশের দোলায় গগন দুলে যায় এবং তাঁর অট্টহাস্যে চরাচর স্তব্ধ হয়ে যায় । দু – চোখে দ্বাদশ রবির বহ্নিজ্বালা নিয়ে বিশ্বমায়ের ভয়ংকর রূপের বর্ণনা আসনকে সে আগলে রাখে । মাভৈঃ মন্ত্রে দীক্ষিত এবং তা সুন্দর কেন হয়ে এই কাল – ভয়ংকর মুমূর্ষুদের প্রাণ ফিরিয়ে দেয় । মহাকালের রথের সারথি হয়ে সে দেবতারূপ বিপ্লবীদের বন্দিদশা থেকে উদ্ধারের জন্য এগিয়ে আসে । কবি এই কাল – ভয়ংকরকে ভয় পেতে বারণ করেছেন । কেন – না এই ধ্বংসের শেষেই সৃষ্টির নতুন দিগন্ত আমাদের সামনে খুলে যাবে । তাই কবি এই ভয়ংকরকে সুন্দর বলেছেন ।

8. ‘ দিগন্তরের কাঁদন লুটায় পিঙ্গল তার ত্রস্ত জটায় ! – পঙ্ক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো । কবিতায় একদিকে ‘ দ্বাদশ রবির বহিজ্বালা ভয়াল তাহার নয়নকটায় ’ , অন্যদিকে ‘ বিন্দু তাহার নয়নজলে / সপ্ত মহাসিন্ধু দোলে ’ বলার মধ্য দিয়ে কবির কোন ভাবনা ব্যক্ত হয়েছে আলোচনা করো । 

Ans: নজরুল চিরকালই বৈপরীত্যের সমন্বয়সাধন করেছেন । একদিকে তাঁর কঠিন বিদ্রোহীসত্তা আর অন্যদিকে শিশুসুলভ সরল কবিমন , পাঠ্য কবিতায় যা লক্ষণীয় । একদিকে তিনি অন্যায় – অবিচারের বিনাশে উদ্যত , অন্যদিকে মাতৃভূমির অপমান , অসম্মানে তাঁর চোখে অব্যক্ত অশ্রু । পরাধীন দেশের পীড়িত মানুষের দুর্দশাই এই কান্নার উৎস , যেমনভাবে সতীর মৃত্যুযন্ত্রণায় বিরহকাতর মহাদেবের এক চোখে বেদনার অশ্রু এবং অন্য চোখে বিনাশের বহ্নিজ্বালা ফুটে উঠেছিল । কবির কল্পনায় রুদ্ররূপী সেই মূর্তিই ফুটে উঠেছে । 

  প্রকৃতিতে বিরোধ চিরসত্য , তাই তো দিনের শেষে রাত্রি আসে । নজরুল ‘ প্রলয়োল্লাস ’ কবিতায় চিরকালীন এই বৈপরীত্য খুঁজেছেন । একদিকে ধ্বংসকারী মহাকাল তার ভয়াল নয়নকটাক্ষে দ্বাদশ রবির অগ্নি প্রজ্বলিত করেন , অন্যদিকে বিশ্বমানবের আর্তনাদ তাঁর কপোল তলে অশ্রুবিন্দুর ধারা হয়ে প্রবাহিত হয় । শিবের এই সর্বত্যাগী রিক্তরূপ যেন ঝড়ের পূর্বের স্থিতাবস্থার প্রতীক । রুদ্রের ক্রোধ ও কোমলতা এই উভয় মূর্তির পরিপুরক সম্পর্ককে ফুটিয়ে তোলাই কবির উদ্দেশ্য । তাই তো অসম্মানিত ও মৃতা সতীকে ‘ বিপুল বাহুতে ধারণ করে মহাদেব রুদ্রতাণ্ডব করেন । তার হৃদয়ের জ্বালায় ধ্বংসকামী নতুনের কেতন ওড়ান । আমাদের বিপ্লবীরা – সহ ভারতমাতার আপামর সন্তানেরা পরাধীনতা ও অপমানের যন্ত্রণার প্রতিবিধানের উদ্দেশ্যে নতুন প্রাণের বার্তাবহের কথা স্মরণ করেন , কবির ভাবনায় সে কথাই ফুটে উঠেছে ।

9. ” অন্য কারার বন্ধ কূপে বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ? সেইসঙ্গে ‘ দেবতা বাঁধা যজ্ঞ – যূপে / পাষাণ স্তূপে । বলার কারণ বিশ্লেষণ করো ।

Ans: বাংলা সাহিত্যে ধূমকেতুর মতো আবির্ভাব নজরুলের । তাঁর লেখনীতে ফুটে উঠেছে দেশপ্রেম ও বিপ্লবীসত্তা । দেশমাতাকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করাই ছিল তাঁর ব্রত । লেখনীকেই তিনি তাঁর লড়াইয়ের অস্ত্ররূপে বেছে নিয়েছিলেন । শত চেষ্টাতেও শাসক তাঁর কন্ঠ রোধ করতে পারেনি । বার বার তিনি তাঁর দেশপ্রেমের জন্য কারাগারে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন । ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় উদ্ধৃত পক্তি ‘ অন্ধকারার বন্ধ কুপে ‘ শব্দবন্ধ ব্যবহার করে একদিকে কবি বিদেশি শাসকের হাতে শৃঙ্খলিত দেশমাতার প্রতীকরূপে কল্পনা করেছেন , আবার অন্যদিকে দেশমাতার এই শৃঙ্খলমোচন করার জন্য স্বাধীনতাকামী দেশপ্রেমিকদের কারাগারের অন্ধকূপে নিমজ্জিত হয়ে মৃত্যুবরণ করার ঘটনাকে চিহ্নিত করেছেন । এক্ষেত্রে প্রতিবাদী কণ্ঠকে প্রতিহত করার ক্ষেত্রে শাসনের যে – ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র সে – কথা বোঝাতেই শব্দবন্ধটি ব্যবহৃত হয়েছে । 

  কূপে ” —কবির বক্তব্য ” দেবতা বাঁধা যজ্ঞ – যূপে / পাষাণ স্তূপে স্বাধীনতার পূজারি বিপ্লবী কবি নজরুলের কাছে পরাধীন দেশের বিপ্লবীরাই হল প্রকৃত দেবতা । কবি এ কথা তাঁর বহু কবিতায় উল্লেখ করেছেন । যজ্ঞের যূপকাষ্ঠে বলি প্রদান করে । দেবতাকে সন্তুষ্ট করা হয় কিন্তু এখানে স্বয়ং সেই দেবতাই যূপকাষ্ঠে বলিপ্রদত্ত হওয়ার জন্য বাধা পড়েছেন । এক্ষেত্রে দেবতারূপ বিপ্লবীদের পরাধীন যুগে কারাগারের অন্ধকারে নিমজ্জিত করে ফাঁসি দেওয়ার প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে । তবে কবির বিশ্বাস মহাকালের সারথি তা হতে দেবে না ।

10. ‘ আসছে নবীন — জীবনহারা অ – সুন্দরে করতে ছেদন ! —‘জীবনহারা অসুন্দর – কে ছেদন করতে নবীনের আসার তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও । ‘ ভেঙে আবার গড়তে জানে সে চিরসুন্দর ! —ভেঙে আবার গড়া বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?

Ans: চলাই জীবন , থেমে থাকা মরণ । কালের অগ্রগমন ঘটে নতুনের হাত ধরে , এমত শাশ্বত । নজরুল তার ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় নবীনকে বলেছেন ‘ জরায় মরা মুমুর্ষুদের প্রাণ – লুকানো ওই বিনাশে । ‘ কবি এই কবিতায় যা – কিছু প্রাচীন , জরাগ্রস্ত , অগ্রগমনের পথে বাধাস্বরূপ সেসব কিছুকে বিনাশ করতে ধ্বংসকারী মহাকালকে আহ্বান জানিয়েছেন । রুদ্রের কাজ বিশ্বচরাচরে যা – কিছু অন্যায় , যা কিছু কদর্য সব কিছুকে ধ্বংস করে নতুনের আগমনকে সূচিত করা । আশাবাদী কবি পরাধীন ভারতীয়দের জীবনহারা অসুন্দর জীবনের ছেদন অর্থাৎ ইতি চেয়ে নবীনকে আহ্বান জানিয়েছেন । কবির বিশ্বাস জীবনহারা অসুন্দরকে ছেদন করতে নবীন আসছে । 

  প্রকৃতিতে সৃষ্টি ও ধ্বংস পাশাপাশি চলে । ধ্বংসের মধ্যেই সৃষ্টির বীজ লুকিয়ে থাকে । পুরাতনের ওপরই সঞ্চারিত হয় নতুন প্রাণের । হিন্দু পুরাণ অনুসারে এসব কিছুই ঘটে চলেছে সৃষ্টি – লয়ের ভেঙে আবার গড়া দেবতা শিবের ইচ্ছানুসারে । এই চিরসুন্দরের ভাঙা – গড়ার খেলা যুগযুগ ধরে চলে আসছে । কবি মহাকালের এই খেলাকেই ‘ ভেঙে আবার গড়তে জানে বলে মনে করেছেন ।

11. ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতাটির নামকরণের সার্থকতা বিচার করো ।

Ans: ‘ নামকরণের সার্থকতা ‘ অংশটি দ্যাখো ।

12. ‘ ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর ? —প্রলয় নূতন সৃজন – বেদন ! — কোন্ ধ্বংসের কথা বলা হয়েছে । প্রলয়কে ‘ নূতন সৃজন – বেদন ‘ বলার তাৎপর্য কী ?

Ans: বিদ্রোহীসত্তার অধিকারী কবি নজরুল তাঁর ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় শিবের বিধ্বংসী সংহার মূর্তির কল্পনা করেছেন । জগতের সমস্ত অসুন্দরকে ধ্বংস করে নবরূপে সুন্দরের প্রতিষ্ঠাতেই যেন কবির এই কল্পনা । এখানে উদ্ধৃত অংশে মহাকালের সেই সংহারলীলার কথাই ধ্বংসের ইঙ্গিত বলা হয়েছে ।

  ধ্বংসের পিছনে লুকিয়ে থাকে নতুন সূচনার আলো , নতুন সৃষ্টির ইঙ্গিত । এইজন্যই কবি চেতনায় জাগ্রত হয়েছে প্রলয়রূপী রুদ্র চণ্ডের আগমন । সামাজিক জীনতা ধ্বংসের পাশাপাশি নতুন সৃষ্টির আবাহন । পরাধীন ভারতের মুক্তিকামী মানুষের অন্তরের বৈপ্লবিক শক্তিকে তাই তিনি উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছেন । সাম্রাজ্যবাদী শাসন মানুষের প্রাণের মুক্তিকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল । মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কালো ছায়া নেমে এসেছিল সমাজে । মনুষ্যত্বের পদদলন , শোষণ , বঞ্চনা হয়ে উঠেছিল সাধারণ মানুষের নিয়তি । কবি একান্তভাবে চেয়েছিলেন এই সমাজের অবলুপ্তি । তাই তিনি কামনা করেছেন প্রলয়কারী নটরাজকে । তিনিই পারেন সমস্ত অসুন্দরকে বিনাশ করে সৃষ্টির তথা নতুন প্রাণের সঞ্চার করতে । তাঁর আবির্ভাবে প্রলয় অনিবার্য । প্রলয় একদিকে যেমন বেদনা বহন করে আনে তেমনি সেই প্রলয়ের মধ্যে নতুন সৃজনের সুচনাও লক্ষিত হয় ; তাই কবি প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে প্রলয়কে ‘ নতুন সৃজন – বেদন ‘ বলেছেন ।

———————

প্রলয়োল্লাস (কবিতা) কাজী নজরুল ইসলাম 

অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | প্রলয়োল্লাস (কবিতা) কাজী নজরুল ইসলাম – মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন | Madhyamik Bengali Suggestion :

  1. ‘ এই তো রে তার আসার সময়’- ‘ তার ‘ বলতে কার আসার সময়ের কথা বলা হয়েছে ?

Ans: নজরুলের ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় ‘ তার ‘ বলতে প্রলয়ংকারের আসার কথা বলা হয়েছে । পৃথিবীতে যখনই অস্তিত্বের সংকট ঘটেছে তখনই এই ‘ প্রলয় ‘ রুদ্ররূপে তা নিরসন করেছে ।

  1. ‘ প্রলয় নূতন সৃজন – বেদন ! ‘ — তাৎপর্য কী ?

Ans: সৃষ্টির আগে শিল্পী , অথবা শিশুর জন্মের আগে মা যে – বেদনা অনুভব করেন , কবিও তেমনি যুগান্তরের ইঙ্গিতবাহী এই আসন্ন প্রলয়ের মধ্যে সৃষ্টির যন্ত্রণাকে অনুভব করেছেন ।

  1. ‘ আসছে নবীন — নবীন কে ?

Ans: ‘ প্রলয়োল্লাস ’ কবি নজরুল ‘ নবীন ’ বলতে নবযুগের বার্তাবাহক মহাকাল , ভয়ংকর বা নবীন বিপ্লবী শক্তিকে বুঝিয়েছেন , যাদের হাত ধরে পৃথিবীতে আসবে নতুন যুগ ।

  1. ‘ ওই ভাঙা – গড়া খেলা যে তার— ভাঙা – গড়া খেলা বলতে কী বোঝ ?

Ans: ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় ‘ ভাঙা – গড়ার খেলা ’ বলতে কবি নজরুল ধ্বংস ও সৃষ্টির চক্রাকার আবর্তনকে বুঝিয়েছেন ।

  1. বধুরা কেন প্রদীপ তুলে ধরবে ?

Ans: ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতা অনুসারে , যুগান্তরের অন্ধকারের বুক চিরে কাল – ভয়ংকর এগিয়ে আসে মানুষের আকাঙ্ক্ষিত মুক্তিবার্তা নিয়ে । কবি বধুদের প্রদীপ তুলে নিয়ে এই শক্তিকে বরণ করে নিতে বলেছেন ।

  1. ‘ আসছে এবার অনাগত প্রলয় – নেশার নৃত্য পাগল – ‘ নৃত্য পাগল ‘ কে ?

Ans: নজরুলের ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় ‘ নৃত্য পাগল ‘ বলতে , মুক্তিগামী মানুষের বৈপ্লবিক সত্তাকে কবি প্রলয়রূপী নটরাজের নৃত্যপরায়ণ রুপের সঙ্গে তুলনা করেছেন ।

  1. ‘ ওই নূতনের কেতন ওড়ে — ‘ নূতনের কেতন ওড়া বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ? 

Ans: ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতা অনুসারে , কালবৈশাখী ঝড় যেমন রুক্ষ – শুষ্ক ও জীর্ণ প্রকৃতির বুকে নতুন প্রাণের উদ্দামতা বহন করে আনে , কবি সেভাবেই পরাধীন দেশের প্রাচীন অচলায়তনকে ভেঙে ‘ নূতন ‘ জীবন ও মূল্যবোধের সূচনাবার্তা ঘোষণা করতে চেয়েছেন ।

  1. ‘ কালবোশেখির ঝঝড়- কীসের প্রতীক ?

Ans: কবি কাজী নজরুল ইসলাম ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় ‘ কালবোশেখির ঝড় ‘ – কে নতুন জীবন ও মূল্যবোধের প্রতীক বলে মনে করেছেন ।

  1. প্রলয়নেশার নৃত্য পাগল কীসের জন্য আসছেন ?

Ans: প্রলয় – নেশার নৃত্য পাগল সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে অর্থাৎ সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ শাসকের অন্যায় – অত্যাচারের অবসান ঘটাতে আসছেন ।

  1. ওই আসে সুন্দর সু ‘ ওই আসে সুন্দর ’ – ‘ সুন্দর কীভাবে আসে ?

Ans: ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতা অনুসারে ‘ সুন্দর ’ , ‘ কাল ভয়ংকরের বেশে ‘ অর্থাৎ রুদ্ররূপী প্রলয়ের রূপ ধরে আসে ।

  1. ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে কে আগল ভাঙল ?

Ans: কবি নজরুলের ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতা অনুসারে সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে ‘ প্রলয় – নেশার নৃত্য পাগল ‘ অর্থাৎ মুক্তিকামী ভারতীয়ের বিপ্লবী সত্তা আগল বা শৃঙ্খল ভেঙেছে ।

  1. ‘ দিগম্বরের জটায় হাসে শিশু – চাদের কর— ‘ দিগম্বর কে ?

Ans: কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতা থেকে গৃহীত উদ্ধৃতিটিতে ‘ দিগম্বর ’ বলতে মহাদেবকে বোঝানো হয়েছে ।

  1. ‘ এবার মহানিশার শেষে’— কী ঘটবে ?

Ans: ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতা অনুসারে ‘ মহানিশার শেষে ‘ অর্থাৎ পরাধীন দেশের অত্যাচার – অপমানের শেষে , ঊষার হাসি তথা মুক্তি সূর্যের প্রথম আলোয় জাতির জীবন নতুন করে উদ্ভাসিত হবে ।

  1. “ তোরা সব জয়ধ্বনি কর । কার জয়ধ্বনি করতে বলা হয়েছে ?

Ans: কবি কাজী নজরুল ইসলাম ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় পরাধীন ভারতের মুক্তিকামী জনগণকে স্বপ্ন বা আশাপূর্ণকারী প্রলয়ের জয়ধ্বনি করতে বলেছেন ।

  1. ‘ প্রলয় বয়েও আসছে— কেন এই আগমন ?

Ans: ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতা অনুসারে নতুন ও নবীন প্রাণ জীবনহারা অসুন্দরের অবসান ঘটাতে প্রলয়রূপ ধারণ করে আসছে ।

  1. ‘ দিগম্বরের জটায় ‘ কে হাসে ?

Ans: ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতা অনুসারে শিশু চাঁদের স্নিগ্ধ ও মাধুর্যময় হাত যেন দিগম্বর – মহাদেবের জটায় হাসে । এই হাসির মধ্যে ফুটে ওঠে সময়রূপী মহাকালের অভয়মন্ত্র ।

  1. ‘ তোরা সব জয়ধ্বনি কর।— কবি কাদের জয়ধ্বনি করতে বলেছেন ?

Ans: কাজী নজরুল ইসলামের ‘ অগ্নিবীণা ‘ কাব্যগ্রন্থের ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় কবি পরাধীন ভারতের মুক্তিকামী ও স্বাধীনতা – প্রত্যাশী জনগণকে মহাপ্রলয়ের জয়ধ্বনি করতে বলেছেন ।

  1. কবি নজরুল ‘ জয়ধ্বনি ‘ করার কথা বলেছেন কেন ? 

Ans: নজরুল ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় ভারতের পরাধীনতার মহানিশার শেষে স্বাধীনতা সূর্যের উদিত হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন মহাপ্রলয়ের হাত ধরে । তাই তিনি মানুষকে আশাপূর্ণকারী প্রলয়ের জয়ধ্বনি করতে বলেছেন । ‘ 

  1. কালবোশেখির ঝড় ‘ – কে নূতনের কেতন বলার কারণ কী ? 

Ans: কালবৈশাখী ঝড় পুরাতনকে মুছে ফেলে নূতনের সংকেত আনে বলে কবি কালবোশেখিকে ‘ নূতনের কেতন ‘ বলেছেন ।

  1. ‘ অনাগত ’ বলতে কীসের ইঙ্গিত করেছেন কবি ?

Ans: ‘ প্রলয়োল্লাস ’ কবিতায় নজরুল ‘ অনাগত ’ বলতে পরাধীন ভারতের বন্দিদশা মোচনকারী , আসন্ন মুক্তি বা স্বাধীনতার কথা বলেছেন ।

  1. ‘ সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে ’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ? 

Ans: কাজী নজরুল সিন্ধুপারের সিংহদ্বার বলতে সাগর তীরে অবস্থিত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির দ্বারা শাসিত ভারতকে বুঝিয়েছেন ।

  1. ‘ মহাকাল ’ কী ?

Ans: ‘ মহাকাল ’ শব্দটির একটি অর্থ হল অনবচ্ছিন্ন কাল বা সময়প্রবাহ । কিন্তু পাঠ্য কবিতায় ‘ মহাকাল ’ হল প্রলয় সৃষ্টিকারী মহাদেবের ধ্বংসাত্মক রূপের প্রতীক । রুদ্ররূপী শিবের আরেক নাম হল মহাকাল ।

  1. ‘ ওরে ওই হাসছে ভয়ংকর।— ভয়ংকর হাসছে কেন ? 

Ans: নজরুলের ‘ প্রলয়োল্লাসে ’ ‘ ভয়ংকর ’ শব্দটি রূপকার্থে ব্যবহৃত , যার অর্থ ধ্বংসকারী বিপ্লবীসত্তা । মহাকালের ‘ চণ্ডরূপী ‘ ভয়ংকর সকল অন্যায় – অত্যাচারকে বিনাশ করে নতুন যুগের সূচনা করার তৃপ্তিতে হাসছেন ।

  1. ‘ ধূমকেতু ’ কী ? 

Ans: প্রাসঙ্গিক টীকা অংশ দ্যাখো । 

  1. ‘ অট্টরোলের হট্টগোলে স্তব্ধ চরাচর- চরাচর স্তব্ধ কেন ? 

Ans: ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় ভয়ংকরের আগমনে চারদিকে কলরোল ধ্বনিত হয়েছে । এই অট্টরোল মুক্তিকামী মানুষের মনে কোনো এক আসন্ন ঝড়ের ইঙ্গিত বহন করে আনে , তাই চরাচর স্তব্ধ ।

  1. ” ওরে ওই স্তব্ধ চরাচর- ‘ – ‘ চরাচর ‘ স্তব্ধ কেন ?

Ans: বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম রচিত ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় ধ্বংসের দেবতা প্রলংকর শিবের অট্টহাসির ভয়ংকর শব্দে বিশ্বচরাচর স্তব্ধ হয়ে পড়েছে । এই স্তব্ধতা মুক্তিকামী মানুষের মনে কোনো এক আসন্ন ঝড়ের ইঙ্গিত বহন করে আনে ।

  1. ‘ দ্বাদশ রবির বহ্নিজ্বালা ‘ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?

Ans: ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় নবযুগের বার্তাবাহী ভয়ংকর প্রলয় , একটি সূর্যের তেজ নয় , বারোটি সূর্যের ন্যায় দীপ্ত ও তীব্র । এই তীব্রতা বোঝাতেই উক্ত শব্দবন্ধটি ব্যবহৃত হয়েছে ।

  1. ‘ বিশ্বমায়ের আসন তারই বিপুল বাহুর পর— —অর্থ কী ?

Ans: কবির আহূত ‘ ভংয়কর ‘ এই বিশ্বের রক্ষাকর্তা । অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে সে শুভ শক্তির প্রতিষ্ঠা করবে , দেশমাতার আসন সুনিশ্চিত হবে । তাই কবি উক্ত উদ্ধৃতিটি করেছেন ।

  1. ‘ জগৎ জুড়ে প্রলয় ‘ কেন ঘনিয়ে আসছে ?

Ans: যা – কিছু জীর্ণ , পুরাতন , জরাগ্রস্ত ও মুমূর্ষু তাদের বিনাশ ঘটিয়ে , দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নতুন ঊষা নতুন সূর্যের কিরণে উদ্ভাসিত হবে বলেই জগৎজুড়ে প্রলয় ঘনিয়ে আসছে ।

  1. ‘ মহানিশার শেষে , ঊষার হাসি – র তাৎপর্য কী ?

Ans: দীর্ঘ প্রলয়ের শেষে যা – কিছু জীর্ণ , পুরাতন তার অবসান ঘটে স্বাধীনতার নতুন সূর্য ভারতের আকাশকে আলোকিত করে তুলবে । আলোচ্য উদ্ধৃতিটি এই তাৎপর্যই বহন করে ।

  1. ‘ রণিয়ে ওঠে হ্রেষার কাঁদন – এর মধ্যে কীসের ইঙ্গিত পাওয়া যায় ?

Ans: ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতা থেকে উদ্ধৃত অংশে মহাকাশের রথের ঘোড়ার হেষাধ্বনি অর্থাৎ মুক্তিকামী মানুষের বৈপ্লবিক উত্থান বিশ্বময় । ছড়িয়ে পড়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায় ।

MCQ | প্রলয়োল্লাস (কবিতা) কাজী নজরুল ইসলাম – মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন | Madhyamik Bengali Suggestion :

  1. ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় ‘ শিশু – চাঁদ ‘ বলতে বোঝানো হয়েছে – (A) ছোটো চাঁদ(B) সদ্য – উদিত চাঁদ (C) চাঁদের সন্তান (D) চাদের মতো সুন্দর শিশু

Ans: (B) সদ্য – উদিত চাঁদ

  1. ‘ উল্কা ছুটায় নীল খিলানে ।’— ‘ নীল খিলান ‘ বলতে এখানে বোঝানো হয়েছে -(A) গাছপালাকে(B) আকাশকে(C) প্রাসাদকে(D) মন্দিরকে

Ans: (B) আকাশকে

  1. ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় ‘ রথঘর্ষর ‘ বলতে বোঝানো হয়েছে -(A) রথ ভেঙে পড়ার শব্দ(B) বজ্রপাতের শব্দ(C) রথের চাকায় ঘর্ষণের শব্দ(D) রথে চড়ে যুদ্ধের শব্দ

Ans: (C) রথের চাকায় ঘর্ষণের শব্দ

  1. ‘ জীবনহারা অ – সুন্দরে করতে ছেদন । কে আসছে ? (A) নবীন(B) চিরসুন্দর(C) মহাকাল সারথি(D) মুমূর্ষু

Ans: (A) নবীন

  1. যে ‘ ভেঙে আবার গড়তে জানে তার নাম হল -(A) প্রলয় – নেশার নৃত্যপাগল(B) জ্বালামুখী ধূমকেতু(C) বিশ্বমাতা (D) চিরসুন্দর

Ans: (D) চিরসুন্দর

  1. বধূদের যা তুলে ধরতে বলা হয়েছে , তা হল— (A) চাবুক(B) মশাল(C) প্রদীপ(D) কৃপাণ

Ans: (C) প্রদীপ

  1. সুন্দর যার বেশে আসছে , সে হল -(A) কালবোশেখির ঝড়(B) দ্বাদশ রবি(C) জ্বালামুখী ধূমকেতু(D) কাল – ভয়ংকর

Ans: (D) কাল – ভয়ংকর

  1. ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় ‘ তোরা সব জয়ধ্বনি কর ’ বাক্যটি মোট কতবার ব্যবহৃত হয়েছে ? (A) পনেরো বার (B) উনিশ বার (C) সতেরো বার(D) একুশ বার

Ans: (B) উনিশ বার 

  1. ‘ দ্বাদশ রবির বহ্নিজ্বালা ভয়াল তাহার নয়নকটায় , — ‘ দ্বাদশ রবি ‘ বলতে বোঝানো হয়েছে -(A) বারোটি রবি(B) সকালের রবি (C) মধ্যাহ্নের রবি (D) অস্তগামী রবি

Ans: (A) বারোটি রবি

  1. ‘ অন্ধ কারার বন্ধ কূপে / দেবতা বাঁধা যজ্ঞ – যূপে ‘ — এক্ষেত্রে কবি ‘ দেবতা ’ বলতে বুঝিয়েছেন(A) মহাদেবকে(B) ভারতীয় বিপ্লবীকে(C) দেশমাতাকে(D) দেশনায়ককে

Ans: (B) ভারতীয় বিপ্লবীকে

  1. এবার মহানিশার শেষে বুঝিয়েছেন ক দীর্ঘ রাত্রি শেষে – (A) দীর্ঘ কারাবাসের শেষে(B) দীর্ঘ রাত্রি শেষে(C) দীর্ঘ প্রত্যাশার শেষে(D) দীর্ঘ পরাধীনতার শেষে

Ans: (D) দীর্ঘ পরাধীনতার শেষে

  1. নীচের কোনটি নজরুলের লেখা কাব্যগ্রন্থ নয় -(A) মানসী(B) ফণীমনসা(C) চক্রবাল(D) বিশের বাঁশি

Ans: (A) মানসী

  1. বিশ্বপিতার বক্ষ – কোলে ‘ — কী ঝোলে ? (A) মুণ্ডু (B) কৃপাণ(C) ফল(D) ফুল

Ans: (B) কৃপাণ

  1. ‘ তোরা সব জয়ধ্বনি কর ।’— যাঁর জয়ধ্বনি করতে হবে , তিনি হলেন -(A) দেশনেতা(B) মহাকাল(C) দেশমাতা(D) প্রলয়ংকর শিব

Ans: (D) প্রলয়ংকর শিব

  1. ‘ মৃত্যু – গহন অন্ধকূপে ‘ বলতে কবি বুঝিয়েছেন—(A) কুসংস্কারগ্রস্ত সমাজ (B) রাত্রির অন্ধকার (C) ভীতিজনক স্থান (D) পরাধীন ভারত

Ans: (A) কুসংস্কারগ্রস্ত সমাজ

  1. মহাকালের চণ্ড – রূপে ‘ আসছেন— (A) মহানিশা (B) সৃষ্টির দেবতা(C) মহাকালী (D) কালবৈশাখীর ঝড়

Ans: (B) সৃষ্টির দেবতা

  1. “ বিশ্বমায়ের আসন -(A) দুলে উঠেছে (B) ছিন্ন হয়েছে(C) পাতা হয়েছে(D) মহাকাল ধারণ করে রেখেছেন

Ans: (D) মহাকাল ধারণ করে রেখেছেন

  1. ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতাটি যে – কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত , তা হল – (A) অগ্নিবীণা (B) সর্বহারা (C) ঝড় (D) ফণীমনসা 

Ans: (A) অগ্নিবীণা

  1. ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতাটির প্রকাশকাল হল -(A) ১৯২২ খ্রিস্টাব্দ(B) ১৯২০ খ্রিস্টাব্দ (C) ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দ (D) ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দ 

Ans: (A) ১৯২২ খ্রিস্টাব্দ

  1. ‘ তোরা সব ____ কর(A) বিদ্রোহ (B) প্রলয় নাচন (C) জয়ধ্বনি (D) সৃজন – বেদন 

Ans: (C) জয়ধ্বনি

  1. কবি ‘ নূতনের কেতন ‘ বলেছেন -(A) দ্বাদশ রবির বহ্নিজ্বালা – কে (B) অট্টরোলের হট্টগোল – কে (C) বিশ্বমায়ের আসন – কে (D) কালবোশেখির ঝড় – কে

Ans: (D) কালবোশেখির ঝড় – কে

  1. ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ শব্দের অর্থ হল -(A) ধ্বংসের আনন্দ (B) ভয়ংকরের চণ্ডরূপ(C) রথঘর(D) দিগন্তের কাদন

Ans: (A) ধ্বংসের আনন্দ

  1. ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতাটির মুখ্য উপজীব্য হল— (A) প্রলয় (B) বিপ্লববাদ(C) যুদ্ধ (D) সহমমিতা

Ans: (B) বিপ্লববাদ

  1. কবি ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় আসন্ন প্রলয় সম্পর্কে যে – বিশেষণটি । ব্যবহার করেননি , সেটি হল -(A) অসহায়(B) অনাগত (C) ভয়ংকর (D) চিরসুন্দর  

Ans: (A) অসহায় 

  1. অনাগত প্রলয় যেখানে ধমক হেনে আগল ভাঙল , তা হল – (A) বিশ্বমায়ের আসন (B) সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে (C) নীল খিলানে(D) সপ্ত মহাসিন্ধু

Ans: (B) সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে

  1. ভয়ংকর আসছে -(A) কেশের দোলায় ঝাপটা মেরে(B) বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে (C) অরুণ হেসে করুণ বেশে(D) আসছে হেসে মধুর হেসে

Ans: (B) বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে

  1. ‘ ঝামর ‘ শব্দের অর্থ হল -(A) ঝটকা(B) আলুথালু(C) কৃষ্ণবর্ণ(D) গভীর

Ans: (C) কৃষ্ণবর্ণ

  1. ধূমকেতুকে ‘ জ্বালামুখী ‘ বলার কারণ হল – (A) ধূমকেতুর পুচ্ছটি ধূম্রনির্মিত(B) ধূমকেতু আগুন উদ্‌গিরণ করে(C) ধূমকেতু সবকিছু পুড়িয়ে দেয়(D) ধূমকেতু নিজে পুড়ে যায়

Ans: (A) ধূমকেতুর পুচ্ছটি ধূম্রনির্মিত

  1. ‘ কৃপাণ ‘ শব্দটির অর্থ হল -(A) কিপটে(B) তরবারি(C) ঢাল(D) ছোরা

Ans: (D) ছোরা

  1. চরাচর স্তব্ধ হওয়ার কারণ -(A) দিগন্তরের কাঁদন(B) জগৎজুড়ে প্রলয় এবার ঘনিয়ে আসে (C) দেবতা বাঁধা যজ্ঞ – যুপে(D) অট্টরোলের হট্টগোলে

Ans: (D) অট্টরোলের হট্টগোলে

  1. ‘ সপ্ত মহাসিন্ধু দোলে / কপোলতলে ।’— ‘ কপোল ‘ শব্দের অর্থ হল -(A) কপাল (B) গাল(C) পায়রা (D) কর্পূর

Ans: (B) গাল

  1. ‘ মাভৈঃ মাভৈঃ ‘ ধ্বনির তাৎপর্য হল – (A) ভয় না পেয়ে এগিয়ে চল(B) ভয়ের কথা ভেব না (C) যুদ্ধে জয়ী হও(D) মা – কে সর্বদা ভক্তি করো

Ans: (A) ভয় না পেয়ে এগিয়ে চল

  1. ‘ মুমূর্ষু ‘ শব্দের একটি প্রতিশব্দ হল -(A) অসুস্থ (B) উপবাসী(C) অর্ধমৃত(D) ভয়ংকর

Ans: (D) ভয়ংকর

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | প্রলয়োল্লাস (কবিতা) কাজী নজরুল ইসলাম – মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন | Madhyamik Bengali Suggestion :

  1. ‘ এই তো রে তার আসার সময় তার আসার চিহ্নগুলি কী ছিল ? 

Ans: কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় কবি ‘ তার ’ বলতে ‘ মহাকাল ’ – কে বুঝিয়েছেন । এই মহাকালই পারে তার মহাপ্রলয়ের দ্বারা অত্যাচারী ব্রিটিশ শক্তির বিনাশ করে স্বাধীনতা আনতে । আশাবাদী কবি মহাকালের আগমন যে আসন্ন তা যেন অন্তর দিয়ে প্রত্যক্ষ করেছেন । মহাকালের হাতের চাবুক বিদ্যুতের মতো চমকিত হচ্ছে বারবার । বজ্রের শব্দ হ্রেষাধ্বনির মতো অনুরণিত হচ্ছে । আর ঘোড়ার খুরের আঘাতে নীল আকাশ থেকে উল্কা খসে পড়ছে । মহাকালে আগমনবার্তা তার রথের চাকার ঘর্ষণই সূচিত করছে । 

  1. ‘ ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর ? – ধ্বংসকে ভয় না – পাওয়ার কারণটি বুঝিয়ে দাও ।

Ans: উদ্ধৃতিটি নজরুলের ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতার অংশ বিশেষ । কালের রথে চড়ে মহাপ্রলয়ের মধ্যে দিয়ে মহাকালের বা ভয়ংকরের আগমন দেখে কবি অগ্রদূতকে ভয় না – পেতে বলেছেন । প্রলয় ধ্বংসকারী , কিন্তু এটাও সত্য যে , প্রলয়ই সৃষ্টির হাতছানি । ধ্বংসের ভয় না পাওয়ার কারণ প্রলয় আমাদের মধ্যে বেদনাবোধ জাগালেও নতুন কিছু সৃষ্টি করে । প্রলয়ই পারে নবচেতনার আলোকে প্রাণহীন অসুন্দরের মধ্যে নতুন প্রাণের সঞ্চার করতে । কবি তাই তার অগ্রদূতকে অভয় দিয়ে বলেছেন প্রলয় চিরসুন্দর । সে ভেঙে আবার গড়তেও পারে । তাই প্ররকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই ।

  1. ভেঙে আবার গড়তে জানে সে চিরসুন্দর ।’- ‘ সে ‘ কে ? ভেঙে আবার গড়ার বিষয়টি বুঝিয়ে দাও । 

Ans: নজরুলের ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতার উদ্ধৃত অংশটিতে ‘ সে ’ বলতে কবি ‘ অসীম শক্তির ’ অধিকারী মহাদেব বা প্রলয়রূপী ‘ সে ’ – এর পরিচয় প্রাকৃতিক শক্তিকে বুঝিয়েছেন । ভেঙে আবার গড়া ধ্বংসের মধ্যেই সৃষ্টির বীজ নিহিত । এই চিরন্তন সত্যই জগতে প্রতিষ্ঠিত । কবি তার ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় ধ্বংসের জয়গান করেছেন । আপাতদৃষ্টিতে তাতে বিরোধ থাকলেও এটাই সত্য । পরাধীন ভারতে পরাধীনতার শৃঙ্খল মোচনের জন্য কবি মহাদেবকে আহ্বান জানিয়েছেন । সেই চিরসুন্দর অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে শুভ শক্তির সূচনা করবেন ।

  1. ‘ আসছে নবীন— জীবনহারা অ – সুন্দরে করতে ছেদন ! — উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য লেখো ।

Ans: প্রশ্নোদ্ভূত অংশটি কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘ প্রলয়োল্লাস ’ কবিতা থেকে নেওয়া । পরাধীন ভারতের জীর্ণতা , দাসত্ব , জড়তা , বৈষম্য ও শোষণের অবসান ঘটাতে কবি বৈপ্লবিক সত্তার আগমন ধ্বনি শুনতে পেয়েছেন । প্রলয়রূপী এই যুগান্তরের শক্তির পদসঞ্চার দেখে তিনি হয়েছেন আত্মহারা । কবি নিশ্চিত জীবনহারা – অশুভের বিনাশকারী নবীনের মধ্যেই আছে , নতুন সৃষ্টির সম্ভাবনা । সেই পারে নিষ্প্রাণ – গতিহীন সমস্ত কুশ্রীতার জন্মালকে ধুয়ে – মুছে সাফ করে দিতে । উপরের উদ্ধৃতিটিতে কবি এ কথাই বলতে চেয়েছেন । 

  1. অট্টরোলের হট্টগোলে স্তব্ধ চরাচর ‘ — ‘ চরাচর ‘ শব্দের অর্থ কী ? চরাচর স্তব্ধ কেন লেখো ।

Ans: উপরের উদ্ধৃতিটি কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘ প্রলয়োল্লাস ’ কবিতার অন্তর্গত । ‘ চরাচর ‘ শব্দের অর্থ হল সমগ্র পৃথিবী বা জগৎ । 

  কবি প্রলয় বা ধ্বংসকে ফুটিয়ে তুলতে কখনও শিব , আবার কখনও সর্বনাশী জ্বালামুখী স্বরূপ চণ্ডীমূর্তির রুদ্রতাণ্ডবের চরাচর স্তব্ধ কেন উপমা টেনে এনেছেন । বিনাশের অট্টহাসির গভীর ব্যঞ্জনা যেন সমগ্র জগতে সৃষ্টি করেছে এক রুদ্ধশ্বাস পরিবেশ । প্রলয়ের ভয়াবহ বিস্ফোরণের অজানা আশঙ্কায় এ পৃথিবী নিষ্কম্প – নিস্তব্ধ । প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে কবির এ ভাবনাই প্রকাশ পেয়েছে ।

  1. ‘ কাল – ভয়ংকরের বেশে এবার ওই আসে … ! – এমন উক্তি কার সম্পর্কে করা হয়েছে ? এমন উক্তির কারণ কী ?

Ans: ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় কবি নজরুল চিরসুন্দর বা চিরনবীন সম্পর্কে আলোচ্য উক্তিটি করেছেন ।

  কবি নজরুল চিরবিদ্রোহী । তাই পরাধীন ভারতের মুক্তিকামী মানুষের অন্তরের বৈপ্লবিক শক্তিকে তিনি উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছেন । তাঁর বিশ্বাস জীর্ণ লোকাচার – প্রচলিত জড়তা – নিশ্চল প্রাণহীনতা উত্তির কারণ এবং দাসত্বের অবসান ঘটলেই গড়ে উঠবে নতুন জীবন । সুতরাং , বিনাশের ভয়াবহতার মধ্যেই লুকিয়ে আছে সত্য ও সুন্দরের বীজ । কবি ধ্বংসের মধ্যেই খুঁজে পেয়েছেন সৃষ্টির ব্যানা এবং যন্ত্রণা । সেজন্যেই তিনি সেই ভয়ংকর সুন্দরেরই বন্দনা গান গেয়েছেন ।

  1. ‘ তোরা সব জয়ধ্বনি কর।- ‘ তোরা ‘ কারা ? তাদের জয়ধ্বনি করতে বলা হচ্ছে কেন ?

Ans: নজরুল ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় কবি ‘ তোরা ’ বলতে , পরাধীন দেশের স্বাধীনতার প্রত্যাশী আপামর জনসাধারণকে বুঝিয়েছেন । 

  ভারতবর্ষের পরাধীনতা কবি নজরুলের কাছে ভীষণ পীড়াদায়ক ছিল । তিনি সর্বদাই এই অবস্থার অবসান চাইতেন । তিনি বুঝেছিলেন কালবৈশাখীর মতো ভয়ংকর শক্তি কিংবা প্রলয় – নেশায় মত্ত মহাদেবের মতোই কেউ এসে এই অবস্থার অবসান ঘটাবে । তাই কবি ভারতীয়দের এই ধ্বংস ও সৃষ্টির দেবতার আগমনের উদ্দেশ্যে জয়ধ্বনি করার আহ্বান জানিয়েছেন ।

  1. ‘ আসছে এবার অনাগত প্রলয় – নেশার নৃত্য পাগল , -‘অনাগত ’ কে ? সে ‘ প্রলয় – নেশার নৃত্য পাগল ’ কেন ? অনাগত কে ? 

Ans: ‘ অনাগত ’ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ যা আসেনি । এক্ষেত্রে পরাধীনতার নাগপাশ থেকে আমাদের মুক্ত করতে পারে এমন শক্তির আগমন যে আসন্ন তা আশাবাদী কবি মনশ্চক্ষে প্রত্যক্ষ করেছেন । শিব বা রুদ্ররূপী এই শক্তিকেই কবি ‘ অনাগত ’ বলেছেন । 

  ‘ প্রলয় ’ ও ‘ নৃত্য পাগল ‘ শব্দ দুটির দ্বারা কবি শিবের বিধ্বংসী ও নটরাজরূপের কথা বলতে চেয়েছেন । কবির কাঙ্ক্ষিত অনাগত শক্তি অত্যাচারী ব্রিটিশ শক্তিকে ধ্বংসের ও মন্থনের দ্বারা আমাদের স্বাধীনতার নতুন সকাল উপহার দেওয়ার স্বপ্নে বিভোর । 

  1. বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে আসছে ভয়ংকর ! -‘ভয়ংকর বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন ? তার আসার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো ।

Ans: নজরুল তাঁর ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতাতে ‘ ভয়ংকর ‘ বলতে ‘ ভয়ংকর ‘ — অর্থ নবযুগের বার্তাবহ প্রলয়রূপী বিপ্লব বা বিদ্রোহকে বুঝিয়েছেন । ‘ রুদ্ররূপী ‘ শিবকে তিনি এর প্রতীক রূপে কল্পনা করেছেন । 

  ‘ ভয়ংকর ‘ — অর্থ → অত্যাচারী ব্রিটিশের শাসনে ভারতবাসী স্থবির হয়ে গিয়েছিল । আর ভারতবর্ষ হয়ে গিয়েছিল অচলায়তন । কালের নিয়মে অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটবেই । সেই অচলায়তন ভাঙবে মানুষের সম্মিলিত বিপ্লবের দ্বারা । আশাবাদী কবি আসন্ন বিপ্লবের এই আছড়ে পড়া ঢেউকে ভয়ংকর প্রলয়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন ।

  1. ‘ মাভৈঃ মাভৈঃ ! জগৎ জুড়ে প্রলয় এবার ঘনিয়ে আসে— কবি ‘ মাভৈঃ ’ বলে কী জানাতে চেয়েছেন ? প্রলয় এসে কোন্ কাজ করবে বলে কবির মনে হয়েছে ? 

Ans: ‘ মাভৈঃ ’ শব্দে কবির উত্তর বিদ্রোহী সত্তার অধিকারী কবি নজরুল তাঁর ‘ প্রলয়োল্লাস কবিতায় ‘ মাভৈঃ মাভৈঃ ‘ শব্দযুগলের ব্যবহার করেছেন , যার অর্থ ভয় কোরো না , অর্থাৎ নির্ভয়ে এগিয়ে চলো । পরাধীনতার অন্ধকার থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য প্রহর গণনারত ভারতবাসীকে কবি পুরাতনকে ধ্বংস করে নূতনের বিজয় পতাকা ওড়ানোর জন্য হৃদয়ে সাহস সঞ্চার করার কথা জানতে চাওয়া বলেছেন । মহাপ্রলয়ের ফলে পৃথিবীতে বারে বারে অশুভ শক্তি ধ্বংস হয়ে সৃষ্টির বীজ বপিত হয়েছে । প্রলয়ের ফলে দীর্ঘ পরাধীনতার শেষে স্বাধীনতার সূর্যালোকে ভারতবর্ষ উদ্ভাসিত প্রলয় যা কাজ করবে হয়ে উঠবে — এটাই কবির আশা ।

  1. ‘ জরায় মরা মুমূর্ষুদের প্রাণ – লুকানো ওই বিনাশে ? —পঙ্ক্তিটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও । 

Ans: বিপ্লব আসছে যোদ্ধার বেশে , নতুন সূর্যের সন্ধানে তার অগ্রগমন । কিন্তু এই অগ্রগতির পথে অনেক বাধা । বহু সংস্কার , বহু জরাগ্রস্ত , অন্ধ ও মুমূর্ষু মতবাদ এসে পথের গতি পঙক্তিটির তাৎপর্য শ্লথ করতে চায় । কিন্তু এসবকে , বিনাশ করে নতুন দিনের সন্ধানী আলোয় , প্রলয়রূপী বৈপ্লবিক সৃজন তার নিজের পথ করে নেবে । কবি নজরুলের ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতার প্রশ্নোধৃত অংশে কবি – কণ্ঠে এই ভাবনাই ব্যস্ত হয়েছে ।

  1. ‘ দিগম্বরের জটায় হাসে শিশু – চাদের কর —’দিগম্বরের জটা ’ ও ‘ শিশু – চাদের কর ’ – এই দুই চিত্রকল্পের মেলবন্ধনের স্বরূপ বুঝিয়ে দাও ।

Ans: নজরুল তাঁর কল্পনাশক্তির শিখরে পৌঁছেছেন ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতার প্রশ্নোস্তৃত অংশে । দিগম্বর অর্থাৎ দেবাদিদেব শিবের অন্য এক রূপ হল রুদ্র চণ্ডের সংহারক মূর্তি । অথচ তাঁরই জটায় শোভা বৃদ্ধি করে চাঁদের ছোট্ট একটি ফালি । ঠিক যেন প্রলয়ের ভয়ংকরতার পাশাপাশি প্রতীক্ষায় আছে এক নতুন দিনের স্নিগ্ধ শাস্তির হাতছানি । রাতের শেষে যেমন দিন আসে , অঝোর বর্ষণের শেষে দেখা দেয় সোনাঝরা রোদ , তেমনই প্রলয় শেষে আবির্ভূত হবে মানবমুক্তির স্নিগ্ধ সৌন্দর্য , এই হল কবির বিশ্বাস ।

রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর | প্রলয়োল্লাস (কবিতা) কাজী নজরুল ইসলাম – মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন | Madhyamik Bengali Suggestion : 

1. কাল – ভয়ঙ্কর বেশে এবার ওই সুন্দর ।’— ‘ কাল ভয়ংকর কে ? তার ভয়ংকর রূপের বর্ণনা দাও ও তাকে সুন্দর বলা হয়েছে কেন তা ব্যাখ্যা করো ।

Ans: ” কাল – ভয়ংকর ‘ – এর বর্ণনা উত্তর উদ্ধৃতিটি নজরুলের ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতার অংশ বিশেষ । বিদ্রোহী কবি বিপ্লবের পথেই যে ভারতবাসীর মুক্তি সে – কথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন এবং তাঁর লেখনীতে তা বেশ স্পষ্ট । কিন্তু প্রায় জীবনহারা অচল – অসাড় একটা জাতিকে উজ্জীবিত করতে চাই একটা মহাপ্রলয় । সেই প্রলয় ঘটাতে পারে একমাত্র রুদ্ররূপী কাল – ভয়ংকর । যদিও এক্ষেত্রে কবি দেশের যুবশক্তিকে কাল – ভয়ংকররূপে আখ্যা দিয়েছেন । 

  কবি রুদ্ররূপী কাল ভয়ংকর অর্থাৎ যুবশক্তির বিভিন্ন রূপ বর্ণনা করেছেন । কালবৈশাখীর ঝড়ের মতো প্রলয় – নেশার নৃত্য পাগল মহাকালের চত্তরূপে সামাজিক অসংগতিকে দুর করতে তার আগমন ঘটে । কখনও তার ঝামর কেশের দোলায় গগন দুলে যায় এবং তাঁর অট্টহাস্যে চরাচর স্তব্ধ হয়ে যায় । দু – চোখে দ্বাদশ রবির বহ্নিজ্বালা নিয়ে বিশ্বমায়ের ভয়ংকর রূপের বর্ণনা আসনকে সে আগলে রাখে । মাভৈঃ মন্ত্রে দীক্ষিত এবং তা সুন্দর কেন হয়ে এই কাল – ভয়ংকর মুমূর্ষুদের প্রাণ ফিরিয়ে দেয় । মহাকালের রথের সারথি হয়ে সে দেবতারূপ বিপ্লবীদের বন্দিদশা থেকে উদ্ধারের জন্য এগিয়ে আসে । কবি এই কাল – ভয়ংকরকে ভয় পেতে বারণ করেছেন । কেন – না এই ধ্বংসের শেষেই সৃষ্টির নতুন দিগন্ত আমাদের সামনে খুলে যাবে । তাই কবি এই ভয়ংকরকে সুন্দর বলেছেন ।

2. ‘ দিগন্তরের কাঁদন লুটায় পিঙ্গল তার ত্রস্ত জটায় ! – পঙ্ক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো । কবিতায় একদিকে ‘ দ্বাদশ রবির বহিজ্বালা ভয়াল তাহার নয়নকটায় ’ , অন্যদিকে ‘ বিন্দু তাহার নয়নজলে / সপ্ত মহাসিন্ধু দোলে ’ বলার মধ্য দিয়ে কবির কোন ভাবনা ব্যক্ত হয়েছে আলোচনা করো । 

Ans: নজরুল চিরকালই বৈপরীত্যের সমন্বয়সাধন করেছেন । একদিকে তাঁর কঠিন বিদ্রোহীসত্তা আর অন্যদিকে শিশুসুলভ সরল কবিমন , পাঠ্য কবিতায় যা লক্ষণীয় । একদিকে তিনি অন্যায় – অবিচারের বিনাশে উদ্যত , অন্যদিকে মাতৃভূমির অপমান , অসম্মানে তাঁর চোখে অব্যক্ত অশ্রু । পরাধীন দেশের পীড়িত মানুষের দুর্দশাই এই কান্নার উৎস , যেমনভাবে সতীর মৃত্যুযন্ত্রণায় বিরহকাতর মহাদেবের এক চোখে বেদনার অশ্রু এবং অন্য চোখে বিনাশের বহ্নিজ্বালা ফুটে উঠেছিল । কবির কল্পনায় রুদ্ররূপী সেই মূর্তিই ফুটে উঠেছে । 

  প্রকৃতিতে বিরোধ চিরসত্য , তাই তো দিনের শেষে রাত্রি আসে । নজরুল ‘ প্রলয়োল্লাস ’ কবিতায় চিরকালীন এই বৈপরীত্য খুঁজেছেন । একদিকে ধ্বংসকারী মহাকাল তার ভয়াল নয়নকটাক্ষে দ্বাদশ রবির অগ্নি প্রজ্বলিত করেন , অন্যদিকে বিশ্বমানবের আর্তনাদ তাঁর কপোল তলে অশ্রুবিন্দুর ধারা হয়ে প্রবাহিত হয় । শিবের এই সর্বত্যাগী রিক্তরূপ যেন ঝড়ের পূর্বের স্থিতাবস্থার প্রতীক । রুদ্রের ক্রোধ ও কোমলতা এই উভয় মূর্তির পরিপুরক সম্পর্ককে ফুটিয়ে তোলাই কবির উদ্দেশ্য । তাই তো অসম্মানিত ও মৃতা সতীকে ‘ বিপুল বাহুতে ধারণ করে মহাদেব রুদ্রতাণ্ডব করেন । তার হৃদয়ের জ্বালায় ধ্বংসকামী নতুনের কেতন ওড়ান । আমাদের বিপ্লবীরা – সহ ভারতমাতার আপামর সন্তানেরা পরাধীনতা ও অপমানের যন্ত্রণার প্রতিবিধানের উদ্দেশ্যে নতুন প্রাণের বার্তাবহের কথা স্মরণ করেন , কবির ভাবনায় সে কথাই ফুটে উঠেছে ।

3. ” অন্য কারার বন্ধ কূপে বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ? সেইসঙ্গে ‘ দেবতা বাঁধা যজ্ঞ – যূপে / পাষাণ স্তূপে । বলার কারণ বিশ্লেষণ করো ।

Ans: বাংলা সাহিত্যে ধূমকেতুর মতো আবির্ভাব নজরুলের । তাঁর লেখনীতে ফুটে উঠেছে দেশপ্রেম ও বিপ্লবীসত্তা । দেশমাতাকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করাই ছিল তাঁর ব্রত । লেখনীকেই তিনি তাঁর লড়াইয়ের অস্ত্ররূপে বেছে নিয়েছিলেন । শত চেষ্টাতেও শাসক তাঁর কন্ঠ রোধ করতে পারেনি । বার বার তিনি তাঁর দেশপ্রেমের জন্য কারাগারে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন । ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় উদ্ধৃত পক্তি ‘ অন্ধকারার বন্ধ কুপে ‘ শব্দবন্ধ ব্যবহার করে একদিকে কবি বিদেশি শাসকের হাতে শৃঙ্খলিত দেশমাতার প্রতীকরূপে কল্পনা করেছেন , আবার অন্যদিকে দেশমাতার এই শৃঙ্খলমোচন করার জন্য স্বাধীনতাকামী দেশপ্রেমিকদের কারাগারের অন্ধকূপে নিমজ্জিত হয়ে মৃত্যুবরণ করার ঘটনাকে চিহ্নিত করেছেন । এক্ষেত্রে প্রতিবাদী কণ্ঠকে প্রতিহত করার ক্ষেত্রে শাসনের যে – ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র সে – কথা বোঝাতেই শব্দবন্ধটি ব্যবহৃত হয়েছে । 

  কূপে ” —কবির বক্তব্য ” দেবতা বাঁধা যজ্ঞ – যূপে / পাষাণ স্তূপে স্বাধীনতার পূজারি বিপ্লবী কবি নজরুলের কাছে পরাধীন দেশের বিপ্লবীরাই হল প্রকৃত দেবতা । কবি এ কথা তাঁর বহু কবিতায় উল্লেখ করেছেন । যজ্ঞের যূপকাষ্ঠে বলি প্রদান করে । দেবতাকে সন্তুষ্ট করা হয় কিন্তু এখানে স্বয়ং সেই দেবতাই যূপকাষ্ঠে বলিপ্রদত্ত হওয়ার জন্য বাধা পড়েছেন । এক্ষেত্রে দেবতারূপ বিপ্লবীদের পরাধীন যুগে কারাগারের অন্ধকারে নিমজ্জিত করে ফাঁসি দেওয়ার প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে । তবে কবির বিশ্বাস মহাকালের সারথি তা হতে দেবে না ।

4. ‘ আসছে নবীন — জীবনহারা অ – সুন্দরে করতে ছেদন ! —‘জীবনহারা অসুন্দর – কে ছেদন করতে নবীনের আসার তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও । ‘ ভেঙে আবার গড়তে জানে সে চিরসুন্দর ! —ভেঙে আবার গড়া বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?

Ans: চলাই জীবন , থেমে থাকা মরণ । কালের অগ্রগমন ঘটে নতুনের হাত ধরে , এমত শাশ্বত । নজরুল তার ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় নবীনকে বলেছেন ‘ জরায় মরা মুমুর্ষুদের প্রাণ – লুকানো ওই বিনাশে । ‘ কবি এই কবিতায় যা – কিছু প্রাচীন , জরাগ্রস্ত , অগ্রগমনের পথে বাধাস্বরূপ সেসব কিছুকে বিনাশ করতে ধ্বংসকারী মহাকালকে আহ্বান জানিয়েছেন । রুদ্রের কাজ বিশ্বচরাচরে যা – কিছু অন্যায় , যা কিছু কদর্য সব কিছুকে ধ্বংস করে নতুনের আগমনকে সূচিত করা । আশাবাদী কবি পরাধীন ভারতীয়দের জীবনহারা অসুন্দর জীবনের ছেদন অর্থাৎ ইতি চেয়ে নবীনকে আহ্বান জানিয়েছেন । কবির বিশ্বাস জীবনহারা অসুন্দরকে ছেদন করতে নবীন আসছে । 

  প্রকৃতিতে সৃষ্টি ও ধ্বংস পাশাপাশি চলে । ধ্বংসের মধ্যেই সৃষ্টির বীজ লুকিয়ে থাকে । পুরাতনের ওপরই সঞ্চারিত হয় নতুন প্রাণের । হিন্দু পুরাণ অনুসারে এসব কিছুই ঘটে চলেছে সৃষ্টি – লয়ের ভেঙে আবার গড়া দেবতা শিবের ইচ্ছানুসারে । এই চিরসুন্দরের ভাঙা – গড়ার খেলা যুগযুগ ধরে চলে আসছে । কবি মহাকালের এই খেলাকেই ‘ ভেঙে আবার গড়তে জানে বলে মনে করেছেন ।

5. ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতাটির নামকরণের সার্থকতা বিচার করো ।

Ans: ‘ নামকরণের সার্থকতা ‘ অংশটি দ্যাখো ।

6. ‘ ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর ? —প্রলয় নূতন সৃজন – বেদন ! — কোন্ ধ্বংসের কথা বলা হয়েছে । প্রলয়কে ‘ নূতন সৃজন – বেদন ‘ বলার তাৎপর্য কী ?

Ans: বিদ্রোহীসত্তার অধিকারী কবি নজরুল তাঁর ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় শিবের বিধ্বংসী সংহার মূর্তির কল্পনা করেছেন । জগতের সমস্ত অসুন্দরকে ধ্বংস করে নবরূপে সুন্দরের প্রতিষ্ঠাতেই যেন কবির এই কল্পনা । এখানে উদ্ধৃত অংশে মহাকালের সেই সংহারলীলার কথাই ধ্বংসের ইঙ্গিত বলা হয়েছে ।

  ধ্বংসের পিছনে লুকিয়ে থাকে নতুন সূচনার আলো , নতুন সৃষ্টির ইঙ্গিত । এইজন্যই কবি চেতনায় জাগ্রত হয়েছে প্রলয়রূপী রুদ্র চণ্ডের আগমন । সামাজিক জীনতা ধ্বংসের পাশাপাশি নতুন সৃষ্টির আবাহন । পরাধীন ভারতের মুক্তিকামী মানুষের অন্তরের বৈপ্লবিক শক্তিকে তাই তিনি উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছেন । সাম্রাজ্যবাদী শাসন মানুষের প্রাণের মুক্তিকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল । মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কালো ছায়া নেমে এসেছিল সমাজে । মনুষ্যত্বের পদদলন , শোষণ , বঞ্চনা হয়ে উঠেছিল সাধারণ মানুষের নিয়তি । কবি একান্তভাবে চেয়েছিলেন এই সমাজের অবলুপ্তি । তাই তিনি কামনা করেছেন প্রলয়কারী নটরাজকে । তিনিই পারেন সমস্ত অসুন্দরকে বিনাশ করে সৃষ্টির তথা নতুন প্রাণের সঞ্চার করতে । তাঁর আবির্ভাবে প্রলয় অনিবার্য । প্রলয় একদিকে যেমন বেদনা বহন করে আনে তেমনি সেই প্রলয়ের মধ্যে নতুন সৃজনের সুচনাও লক্ষিত হয় ; তাই কবি প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে প্রলয়কে ‘ নতুন সৃজন – বেদন ‘ বলেছেন ।

7. ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় কবি প্রলয়কে কোন্ বিশেষণে ভূষিত করেছেন । কবিতার বিষয়বস্তু অনুসারে এই বিশেষণগুলির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও ।

Ans: বিদ্রোহীসত্তার অধিকারী কবি নজরুলের বিশ্বাস চারপাশের সমাজে যে – বৈষম্য , জড়ত্ব ও পরাধীনতার যন্ত্রণা বর্তমান বিপ্লবই পারে তা প্রলয়ের নানা বিশেষণ থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে । ধ্বংসকারী সে প্রলয়ের আগমন সংকেতে কবি আত্মহারা । আনন্দিত কবি তাই সেই পরিবর্তনকামী শক্তিকে ‘ কালবোশেখির ঝড় ’ , ‘ প্রলয় – নেশার নৃত্য পাগল ‘ , ‘ ভয়ংকর ‘ , ‘ মহাকাল সারথি ‘ , ‘ নবীন ‘ , ‘ কাল – ভয়ংকর ‘ প্রভৃতি বিশেষণে ভূষিত করেন । 

   নজরুল তার বহু কবিতায় অশুভ শক্তির ধ্বংসের প্রয়োজনে প্রলয়কে । আহ্বান জানিয়েছেন । এই প্রলয়ের উপর কখনো কখনো চেতনা আরোপ করে কবি তাকে চারিত্রিক মর্যাদা দিয়েছেন , যেমন : ‘ অগ্রদূত ’ , ‘ সারথি , ‘ কালাপাহাড় ’ , ‘ ঘোড়সওয়ারী ‘ ইত্যাদি । আমাদের পাঠ্য ‘ প্রলয়োল্লাস কবিতাতেও তিনি প্রলয়কে নানান বিশেষণে বিশেষিত করেছেন , ‘ কালবোশেখির ঝড় ’ বলে তুলনা করে কবিতায় বিভীষিকাময় রূপের শেষে নতুনের পদধ্বনি শুনেছেন । কবি ‘ প্রলয় – নেশার নৃত্য পাগল ’ বলতে ধ্বংসের নেশায় তাণ্ডবকারী বিপ্লবের আগমনকে বুঝিয়েছেন , যে অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে শুভ শক্তির সূচনা করতে পারে । প্রলয়ের রূপকে কবি ‘ ভয়ংকর ’ বা ‘ কাল – ভয়ংকর রূপেও আহ্বান জানিয়েছেন । প্রলয় প্রাকৃতিক নিয়মেই ঘটে থাকে । তাই তার রথের সারথি মহাকাল বা সময় । তাই ভাঙা – গড়ার এই কারিগরকে মহাকাল সারথি বলে কবি উল্লেখ করেছেন । সর্বোপরি প্রলয়কে ‘ নবীন ’ আখ্যা দেওয়ার অর্থ হল পৃথিবীতে পুরোনোকে ধ্বংস করে প্রলয়ই জন্ম দেয় নবীনের । 

8. ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় প্রলয়ের যে – চিত্র অঙ্কিত হয়েছে তার বর্ণনা দাও । 

Ans: নজরুলের ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় প্রলয়ের এক কাল্পনিক চিত্র অঙ্কিত হয়েছে । এই ভয়ংকর ধ্বসংকারী প্রলয় কালবৈশাখীর মতোই পুরাতন জীর্ণতা দূর করে নতুনের আগমন সূচিত করে । কবি জয়ধ্বনির দ্বারাই তাকে গ্রহণ করেছেন । প্রলয়ের নেশায় পাগল সেই মহাকাল ঔপনিবেশিক শক্তির সিংহদ্বারে আঘাত হেনে , রুদ্ররূপী মহাদেবের মতো বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে পরাধীনতার অন্ধকার থেকে ভারতবাসীকে মুক্ত করতে এগিয়ে আসছে । তার কেশের দোলায় আকাশ কেঁপে ওঠে । জ্বালামুখী ধূমকেতু তার দাস । কৃপাণ হাতে সে এগিয়ে আসছে । তার অট্টরোলে বিশ্ব স্তব্ধ । এই মহাপ্রলয়ের চোখে দ্বাদশ রবির অগ্নিতেজ । সেই রুদ্রের পিঙ্গলবর্ণের জটার দোলায় ত্রস্ত দিগন্ত । তার এক বিন্দু চোখের জলে মহাসিন্ধুর বিশালতা ও তেজ । এই রুদ্ররূপী নটরাজের বাহুর ওপরেই বিশ্বমায়ের আসন পাতা । এই মহাপ্রলয় জরাগ্রস্ত ও মুমূর্ষুদের বিনাশ করে নতুন দিশা দেখায় । মহাকালের সারথির তীব্র চাবুকে ধ্বনিত হয় ঘোড়ার কাঁদন । সেই ঘোড়ার খুরের দাপটে নীল আকাশে উল্কা ছুটছে । অন্ধকার কারাগারের আড়ালে যে – দেবতারূপ বিপ্লবীরা আটকে আছে এবার তাদের মুক্তি আসন্ন । কবির মতে , এই ধ্বংসলীলায় ভীত হওয়ার কিছু নেই । কারণ সে নবীনের বার্তাবহ । প্রাণহীন অসুন্দরকে ধ্বংস করতে ছুটে আসছে । এই প্রলয়ের কাজই হল ভাঙা – গড়া । 

9. ‘ প্রলয়োল্লাস ’ কবিতায় একদিকে ধ্বংসের চিত্র আঁকা হয়েছে আবার অন্যদিকে নতুন আশার বাণী ধ্বনিত হয়েছে । প্রসঙ্গটি কবিতা অবলম্বনে আলোচনা করো । 

অথবা , ‘ ওই নূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখির ঝড় ।— ‘ প্রলয়োল্লাস কবিতার বিষয়বস্তুর পরিপ্রেক্ষিতে মন্তব্যটির তাৎপর্য আলোচনা করো ।

Ans: কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘ প্রলয়োল্লাস ’ কবিতায় যেমন একদিকে ধ্বংস বা প্রলয়ের চিত্র আঁকা হয়েছে , অন্যদিকে আবার এক গভীর আশার বাণী ধ্বনিত হয়েছে । একদিকে কালবৈশাখী ঝড়ের দাপটের চিত্র , অন্যদিকে আসন্ন প্রলয়ের পরেই নতুন দিনের প্রতীক্ষার অবসান— সবমিলিয়ে বিনাশ ও সৃষ্টির অন্যদিকে গড়ার চিত্র চমৎকার মেলবন্ধনে প্রাণিত নজরুলের ‘ প্রলয়োল্লাস ’ কবিতা । প্রথম কয়েকটি স্তবকে অনাগত প্রলয়ের ‘ প্রলয়োল্লাস’ একদিকে ধ্বংস তাণ্ডবের বর্ণনা পাঠককে ভয়ে বিবশ করে তোলে । সেখানে ওরে ওই হাসছে ভয়ংকর ‘ , অথবা ‘ জয় প্রলয়ংকর ‘ ইত্যাদি বাক্যাংশ ব্যবহার করে , কবি খুব সচেতনভাবে প্রলয়ের ধ্বংসকারী রূপকে পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন । একদিকে দ্বাদশ রবির বহ্নিজ্বালা ভয়াল তাহার নয়নকটায় ‘ , অন্যদিকে ‘ বিন্দু তাহার নয়নজলে সপ্তমহাসিন্ধু দোলে – আগুন ও জলের সহাবস্থান একই নয়নে দেখিয়ে কবি এই বার্তাই দিতে চেয়েছেন যে , অন্ধকারের সঙ্গেই আলো , কালোর সঙ্গেই সাদা ওতপ্রোত ও একাকার । ঠিক এই বার্তাই রূপ পায় , যখন কবি উল্লসিত আবেগে বলে ওঠেন , ‘ এবার মহানিশার শেষে / আসবে ঊষা অরুণ হেসে ‘ অথবা ‘ ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর ? – প্রলয় নূতন সৃজন – বেদন । ‘ কবি জানেন সৃষ্টির বেদনা । তাই মহাপ্রলয়ের শেষে যে নতুন দিনের উদয় অবশ্যই হবে সে – সম্পর্কে তিনি নিশ্চিত । আশা ও ভীতির দোলাচলে ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতাটি একটি ছন্দোময় আবেগগীতি ।

10. ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতাটিতে কবি নজরুল ইসলামের বিদ্রোহীসত্তার প্রতিফলন কীভাবে ঘটেছে , তা কবিতা অনুসারে আলোচনা করো ।

Ans: কবি নজরুল সম্পর্কে আলোচনার শুরুতেই যে – বিশেষণগুলি অতিসহজেই তাঁর সম্বন্ধে প্রযুক্ত হতে পারে , সেগুলি হল— আপসহীন , ফরিয়াদি , সর্বোপরি বিদ্রোহী কবি । চিরকাল অন্যায় , শোষণ , অসাম্যের বিরুদ্ধে নজরুল যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন । তাঁর চরিত্রের এই ঋজুতা প্রতিফলিত হয়েছে তাঁর কবিতাতেও । অনিবার্য যন্ত্রণাকে মাথা নীচু করে মেনে নেননি তিনি । এ প্রসঙ্গে লর্ড বায়রনের একটি স্মরণীয় উক্তি— ‘ For I will teach , If possible the stones to rise against Earth’s tyrants . ” 

  এরই অনুরণন যেন শুনতে পাই নজরুলের ‘ আসছে এবার অনাগত প্রলয় – নেশার নৃত্য পাগল , সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে ধমক হেনে ভাঙল আগল’— পঙ্ক্তিগুলিতে । নজরুলের ধমনিতে প্রবাহিত বহ্নি তাঁর অন্তরের সুপ্ত আগ্নেয়গিরিকে জাগ্রত করে , উদ্‌বেলিত বিদ্রোহীসত্তার প্রতিফলন লাভাস্রোতের মতো শব্দেরা এসে প্রজ্বলিত করে স্ফুলিঙ্গ । এই স্ফুলিঙ্গেরই নিদর্শন — ‘ মাভৈঃ মাভৈঃ ! জগৎ জুড়ে প্রলয় এবার ঘনিয়ে আসে / জরায় – মরা মুমুর্ষুদের প্রাণ – লুকানো ওই বিনাশে ! ‘ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে স্পষ্ট সতর্কবার্তা দিয়েছেন কৰি এই কবিতায় । কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ সবুজের অভিযান ‘ কবিতায়— “ ওরে নবীন , ওরে আমার কাঁচা … ‘ পঙ্ক্তিগুলির সঙ্গে পূর্বোক্ত পক্তির সাদৃশ্য অতিস্পষ্ট । বিপ্লবপন্থায় বিশ্বাসী মাতৃভূমির প্রতি উৎসর্গীকৃতপ্রাণ নজরুল উদার , উন্মুক্ত বিশ্বমানবতাকেই তাঁর কাব্যরচনার অবলম্বন হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন ।

11. প্রতিবাদী কবিতা হিসেবে ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কতখানি সার্থকতা লাভ করেছে , তা কবিতা অবলম্বনে আলোচনা করো ।

Ans: কবি নজরুল তাঁর সমগ্র জীবন , কর্ম ও কাব্যকীর্তি দিয়ে সমস্ত শোষণ , পীড়ন , বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন । তাঁর প্রায় অধিকাংশ কবিতাই প্রতিবাদী কবিতা । তবে আলোচ্য প্রতিবাদী কবিতা ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতাটির প্রতিবাদী কবিতা হিসেবে একটি বিশেষ স্থান রয়েছে । কারণ কাব্যজীবনের শুরুতে যে – দুটি কবিতা নজরুলকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছিল , তার একটি হল ‘ প্রলয়োল্লাস ’ ও অপরটি ‘ বিদ্রোহী ‘ । বিদ্রোহী কবি একদিকে ‘ বিদ্রোহী ‘ কবিতায় নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন এই বলে 

‘ মহা – বিদ্রোহী রণক্লান্ত 

আমি সেই দিন হব শান্ত , 

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন রোল

 আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না । 

অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ 

ভীম রণভূমে রণিবে না 

বিদ্রোহী রণ – ক্লান্ত 

আমি সেই দিন হব শান্ত । 

‘ অন্যদিকে ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ – এ বিবরণ দিচ্ছেন ‘্যামর তাহার কেশের দোলায় ঝাপটা মেরে গগন দুলায় , / সর্বনাশী জ্বালামুখী ধূমকেতু তার চামর ঢুলায় । 

  ” কবির অসাম্প্রদায়িকতা , ভারতীয়ত্ব , দেশাত্মবোধ , স্বাধীনতাপ্রিয়তা তাঁর অন্যান্য কবিতার মতো ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ – কেও জারিত করেছে । প্রলয় তথা বিপ্লবের আগমনি তাঁর লেখনীকে করেছে জ্বালাময়ী ; প্রতিবাদের সুর শব্দচয়নে , ছন্দের বিভঙ্গে কবিতাটি প্রতিবাদী কবিতা প্রলয়োল্লাসেও তো বটেই , বিদ্রোহের বাণীরূপ হয়ে উঠেছে । বিশ্বমানবতার মূর্ত প্রতীক নজরুল আহ্বান জানিয়েছেন ‘ তোরা সব জয়ধ্বনি কর । ‘ এ জয়ধ্বনি বিনাশের নয় । এ জয়ধ্বনি বিনাশ – পরবর্তী নতুন আশার , যা রূপকথার ফিনিক্স পাখির মতো অগ্নিময় ধ্বংসস্তূপ থেকে প্রাণের বার্তাকে সঞ্চারিত করে । 

12. তোরা সব জয়ধ্বনি কর ! কাদের উদ্দেশ্যে কবির এই আহ্বান ? কবিতার ভাববস্তু বিশ্লেষণ করে এই আহ্বানধ্বনির পুনরাবৃত্তির যৌক্তিকতা প্রতিপন্ন করো । 

অথবা , ‘ তোরা সব জয়ধ্বনি কর ! ‘ — এখানে ‘ তোরা বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে ? তারা কেন , কাদের জয়ধ্বনি করবে ?

Ans: উদ্ধৃত অংশটি নজরুলের ‘ প্রলয়োল্লাস ’ কবিতার অংশ – বিশেষ । ‘ তোরা ’ বলতে কবি পরাধীন ভারতের সেইসব মানুষদের বুঝিয়েছেন , যারা কবির আহ্বানের ইংরেজদের হাতে অত্যাচারিত , অশিক্ষা , কুংস্কারের উদ্দেশ্য অন্ধকারে নিমজ্জিত এবং চেতনাহীন । তাই তাদের চেতনা জাগ্রত করতে এবং পরাধীনতার শৃঙ্খলমোচনের জন্য ও বিপ্লবীসত্তাকে উজ্জীবিত করার উদ্দ্যেশ্যে কবির এই আহ্বান । 

  অনুনয় – বিনয় নয় , পরাধীন ভারতকে স্বাধীন করতে চাই তীব্র আন্দোলন । তাই তো তাঁর বিদ্রোহীসত্তা বারবার উদাত্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেন কারাগারের লৌহকপাট ভেঙে ফেলতে । কখনও – বা কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা যে দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত সে – কথা জানিয়ে তিনি জয়োল্লাস করতে বলেছেন । আশাবাদী কবি তাই বারে বারে প্রলয়কে আহ্বান জানিয়েছেন । এই প্রলয়ই পারে কালবৈশাখীর ঝড় বা মহাকালে চণ্ডরূপে সিন্ধুপারের সিংহদ্বারের আগল ভেঙে বিপ্লবীদের মুক্তি দিতে , জরাগ্রস্ত মুমূর্ষু জাতির মধ্যে প্রাণের সঞ্চার করতে । কবি মহাপ্রলয়ের এই ধ্বংসলীলা দেখে ভয় না – পেতে বলেছেন । কেননা রুদ্ররূপ মহাপ্রলয় কবিতার ভাববস্তুর নিরিখে আহ্বানধ্বনির পুনরাবৃত্তির যৌক্তিকতা একইসঙ্গে ধ্বংস ও সৃষ্টিরও । সেই – ই পারে ধ্বংসের উপর নতুন সমাজ স্থাপন করতে । তাই কবি তাকে | বরণ করে নিয়ে জয়োল্লাস করতে বলেছেন । কবিতায় ‘ তোরা সব জয়ধ্বনি কর ! ’ চরণটি আঠারো বার উচ্চারণের কারণ , এর গীতিময়তা এবং পরাধীন ও প্রায় স্থবিরত্বপ্রাপ্ত অসহায় ভারতবাসীর হৃদয়ে উজ্জীবনের অনুরণন জাগানো ।

——————–

(১) বহু বিকল্প উত্তর ভিত্তিক প্রশ্নোত্তরঃ

১.১ ‘প্রলয়োল্লাস’কবিতাটি কোন্ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত?

(ক) ছায়া নট

(খ) অগ্নিবীণা

(গ) সিন্ধু হিন্দোল

(ঘ) বিষে বাঁশি

উত্তর: (খ) অগ্নিবীণা

১.২ “ওই নূতনের কেতন ওড়ে…” -‘নূতনের কেতন’ কেমন ভাবে ওড়ে –

(ক) ঝড়-তুফানে বজ্রের মতো

(খ) আশ্বিনের ঝড়ের মতো

(গ) বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে

(ঘ) কালবৈশাখী ঝড়ের মত

উত্তর: (ঘ) কালবৈশাখী ঝড়ের মত

১.৩ “আসছে এবার…” – কার আসার কথা বলা হয়েছে?

(ক) প্রলয়ংকর শিবের

(খ) বর্গিদের

(গ) পাঠান-মোগলদের

(ঘ) অত্যাচারী শাসক ইংরেজদের

উত্তর: (ক) প্রলয়ংকর শিবের

১.৪ ভয়ংকর কিসের মশাল জ্বেলে আসে?

(ক) ক্রোধের

(খ) বিদ্যুতের

(গ) বজ্রশিখার

(ঘ) কেরোসিনের

উত্তর : (গ) বজ্রশিখার

১.৫ “রক্ত তাহার কৃপান ঝোলে” – ‘কৃপান’ শব্দটির অর্থ হলো –

(ক) ভাল হয়

(খ) বর্ষা

(গ) বন্দুকের গুলি

(ঘ) তরোয়াল

উত্তর: (ঘ) তরোয়াল

১.৬ “দিগন্তরের কাঁদন লুটায় পিঙ্গল তার ত্রস্ত জটায়!” – ‘পিঙ্গল’ শব্দটির অর্থ হলো –

(ক) আগুনের মতন রং

(খ) সাদা

(গ) গাঢ় নীল

(ঘ) হলুদ

উত্তর: (ক) আগুনের মতন রং

১.৮ “মভৈঃ মাভৈঃ” – ‘মাভৈঃ’ শব্দের অর্থ হলো –

(ক) ভয়ঙ্কর

(খ) ভয় করো না

(গ) আর কোন ভয় নেই

(ঘ) ধ্বংস আসছে

উত্তর: (খ) ভয় করোনা

১.৯ “এবার মহানিশার শেষে” – এখানে ‘মহানিশা’ বলতে বোঝানো হয়েছে –

(ক) দীর্ঘ পরাধীনতা

(খ) দীর্ঘ রাত্রি যাপন

(গ) দীর্ঘ দুঃখ-কষ্ট

(ঘ) দীর্ঘ অপেক্ষা

উত্তর: (ক) দীর্ঘ পরাধীনতা

১.১০ “দিগম্বরের জটায় হাসে” – ‘দিগম্বর’ কে?

(ক) বিষ্ণু

(খ) ব্রহ্মা

(গ) মহেশ্বর

(ঘ) পবনদেব

উত্তর: (গ) মহেশ্বর

১.১১ “ভেঙে আবার গড়তে জানে” – কে?

(ক) চির সুন্দর

(খ) মহাকাল

(গ) ভয়ংকর

(ঘ) প্রলয়ংকর

উত্তর: (ক) চির সুন্দর

১.১২ “বধূরা প্রদীপ তুলে ধর।” – বধূদের প্রদীপ তুলে ধরতে বলা হয়েছে কেন?

(ক) নতুনকে স্বাগত জানাতে

(খ) অশুভ শক্তিকে দূর করতে

(গ) ধ্বং ও সৃষ্টির দেবতা কে বরণ করে নিতে

(ঘ) প্রদীপের আলো অন্ধকার দূর করতে

উত্তর: (গ) ধ্বংস ও সৃষ্টির দেবতা কে বরণ করে নিতে

১.১৩ “ওই আসে সুন্দর!” – সুন্দর কিভাবে আসছে?

(ক) কাল-ভয়ংকরের বেশে

(খ) ধূমকেতুর বেশে

(গ) প্রলয়-নেশার নৃত্য করতে করতে

(ঘ) কালবৈশাখীর বেশে

উত্তর: (ক) কাল-ভয়ংকরের বেশে

(২) ব্যাখ্যাভিত্তিক অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ

২.১ ‘নতুনের কেতন’ বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?

উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম ‘প্রলয়োল্লাস’নামক কবিতায়’নতুনের কেতন’ বলতে নবসৃষ্টির আগমনকে বুঝিয়েছেন।

২.২ কালবৈশাখীর ঝড় কি রূপে আসে?

উত্তর: ‘বিদ্রোহী কবি’কাজী নজরুল ইসলামের ‘প্রলয়োল্লাস’কবিতা অনুসারে কালবৈশাখীর ঝড় মহাকালের চন্ডরূপে এবং ধোঁয়াময় ধূপের রূপেও আসে।

২.৩ “ওরে ও হাসছে ভয়ঙ্কর” – ভয়ংকর হাসছে কেন?

উত্তর: ‘প্রলয়োল্লাস’কবিতা থেকে উদ্ধত এই অংশে ‘ভয়ংকর’শব্দটি নোট রাজ শিবের ধ্বংসসাধনে মত্ত রূদ্র রুপকে বিশোষত করেছে। পুনোরো, জরাজাণ যা-কিছু, তাকে ধ্বংস করে নতুন সৃষ্টি মত্ততায় ভয়ঙ্কর হাসছে।

২.৪ অট্টরোলের হট্টগোলে স্তব্ধ চরাচর” – এই কথার অর্থ কি?

উত্তর: শোষণ-বঞ্চনাময়, জরাজীর্ণ সমাজকে ধ্বংস করতে মহাকালের অট্টরোলে ভয়ংকর সৃষ্টি করেছে। সেই অট্টরোলের হট্টগোল যে আতঙ্কময় পরিবেশ রচনা করেছে, তাতে চরাচর ভীত ও স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে।

২.৫ “আসবে ঊষা অরুণ হেসে” – ঊষা কখন কিভাবে আসবে?

উত্তর: কাজী নজরুল ইসলামের ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় ঊষা আসবে মহানিশা শেষে করুন বেশে সূর্যোদয়ের হাসি নিয়ে।

২.৬ “দিগম্বরের জটায় হাসে শিশু চাঁদের কর” – সপ্রসঙ্গ তাৎপর্য উল্লেখ করো।

উত্তর: ‘দিগম্বরের জটা’ বলতে মহাদেবের যথার কথা বলা হয়েছে। নবযুগের আগমনি বার্তা পেয়ে, সেই জটায় আশ্রিম শিশু চাঁদ তার স্নিগ্ধ হাসিতে অর্থাৎ, স্নিগ্ধ আলোই সকলের ঘর ভরিয়ে তোলে।

২.৭ “ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর?” – কবির মতে ধ্বংস দেখে ভয় পাওয়া উচিত নয় কেন?

উত্তর : কবি মনে করেন যে ধ্বংসের মধ্যেই নতুন সৃষ্টির রহস্য লুকিয়ে থাকে তাই তিনি ধ্বংসকে ভয় পেতে বারন করেছেন।

২.৮ “প্রলয় বয়েও আসছে হেসে” – প্রলয়ের মাঝেও তার কেন হাসি মুখ?

উত্তর : তিনি জানেন ধ্বংসের মধ্যেই নিহিত রয়েছে নতুন সৃষ্টির বীজ তাই মহাকালকে দেখেও তিনি হাসছেন।

২.৯ “তোরা সব জয়ধ্বনি কর” – কবি কাদেরকে জয়ধ্বনি করতে বলছেন?

উত্তর : পরাধীন ভারতবর্ষের স্বাধীনতাকামী মানুষদের কবি মহাপ্রলয়ের জয়ধ্বনি করতে বলেছেন।

২.১০ “প্রলয়োল্লাস” কবিতাটি কোন্ ধরনের কবিতা?

উত্তর : এটি বিদ্রোহ ভাবপ্রকাশের কবিতা।

(৩) ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :

প্রশ্নঃ ‘মাভৈঃ মাভৈঃ! জগৎ জুড়ে প্রলয় এবার ঘনিয়ে আসে’ – কবি ‘মাভৈঃ’ বলে কী জানাতে চেয়েছেন? প্রলয় এসে কোন্ কাজ করবে বলে কবির মনে হয়েছে?

উত্তরঃ ‘মাভৈঃ’ শব্দে কবির উত্তর বিদ্রোহী সত্তার অধিকারী কবি নজরুল তাঁর ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় ‘মাভৈঃ মাভৈঃ’ শব্দযুগলের ব্যবহার করেছেন, যার অর্থ ভয় কোরো না, অর্থাৎ নির্ভয়ে এগিয়ে চলো। পরাধীনতার অন্ধকার থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য প্রহর গণনারত ভারতবাসীকে কবি পুরাতনকে ধ্বংস করে নূতনের বিজয় পতাকা ওড়ানোর জন্য হৃদয়ে সাহস সঞ্চার করার কথা জানতে চাওয়া বলেছেন। মহাপ্রলয়ের ফলে পৃথিবীতে বারে বারে অশুভ শক্তি ধ্বংস হয়ে সৃষ্টির বীজ বপিত হয়েছে। প্রলয়ের ফলে দীর্ঘ পরাধীনতার শেষে স্বাধীনতার সূর্যালোকে ভারতবর্ষ উদ্ভাসিত প্রলয় যা কাজ করবে হয়ে উঠবে-এটাই কবির আশা।

প্রশ্নঃ ‘বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে আসছে ভয়ংকর!’ – ‘ভয়ংকর’ বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন? তার আসার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ নজরুল তাঁর ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতাতে ‘ভয়ংকর’ বলতে নবযুগের বার্তাবহ প্রলয়রূপী বিপ্লব বা বিদ্রোহকে বুঝিয়েছেন। ‘রুদ্ররূপী’ শিবকে তিনি এর প্রতীক রূপে কল্পনা করেছেন।

      অত্যাচারী ব্রিটিশের শাসনে ভারতবাসী স্থবির হয়ে গিয়েছিল। আর ভারতবর্ষ হয়ে গিয়েছিল অচলায়তন। কালের নিয়মে অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটবেই। সেই অচলায়তন ভাঙবে মানুষের সম্মিলিত বিপ্লবের দ্বারা। আশাবাদী কবি আসন্ন বিপ্লবের এই আছড়ে পড়া ঢেউকে ভয়ংকর প্রলয়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

প্রশ্নঃ ‘ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর?’ – ধ্বংসকে ভয় না পাওয়ার কারণটি বুঝিয়ে দাও।

উত্তরঃ উদ্ধৃতিটি নজরুলের ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতার অংশ বিশেষ। কালের রথে চড়ে মহাপ্রলয়ের মধ্যে দিয়ে মহাকালের বা ভয়ংকরের আগমন দেখে কবি অগ্রদূতকে ভয় না পেতে বলেছেন। প্রলয় ধ্বংসকারী, কিন্তু এটাও সত্য যে, প্রলয়ই সৃষ্টির হাতছানি। ধ্বংসের ভয় না পাওয়ার কারণ প্রলয় আমাদের মধ্যে বেদনাবোধ জাগালেও নতুন কিছু সৃষ্টি করে। প্রলয়ই পারে নবচেতনার আলোকে প্রাণহীন অসুন্দরের মধ্যে নতুন প্রাণের সঞ্চার করতে। কবি তাই তার অগ্রদূতকে অভয় দিয়ে বলেছেন প্রলয় চিরসুন্দর। সে ভেঙে আবার গড়তেও পারে। তাই প্ররকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

প্রশ্নঃ ‘কাল ভয়ংকরের বেশে এবার ওই আসে!’ – এমন উক্তি কার সম্পর্কে করা হয়েছে? এমন উক্তির কারণ কী?

উত্তরঃ ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় কবি নজরুল চিরসুন্দর বা চিরনবীন সম্পর্কে আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।

     কবি নজরুল চিরবিদ্রোহী। তাই পরাধীন ভারতের মুক্তিকামী মানুষের অন্তরের বৈপ্লবিক শক্তিকে তিনি উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছেন। তাঁর বিশ্বাস জীর্ণ লোকাচার প্রচলিত জড়তা নিশ্চল প্রাণহীনতা উত্তির কারণ এবং দাসত্বের অবসান ঘটলেই গড়ে উঠবে নতুন জীবন। সুতরাং বিনাশের ভয়াবহতার মধ্যেই লুকিয়ে আছে সত্য ও সুন্দরের বীজ। কবি ধ্বংসের মধ্যেই খুঁজে পেয়েছেন সৃষ্টির ব্যানা এবং যন্ত্রণা। সেজন্যেই তিনি সেই ভয়ংকর সুন্দরেরই বন্দনা গান গেয়েছেন।

প্রশ্নঃ ‘দিগম্বরের জটায় হাসে শিশু চাদের কর’ – ‘দিগম্বরের জটা’ ও ‘শিশু চাদের কর’ – এই দুই চিত্রকল্পের মেলবন্ধনের স্বরূপ বুঝিয়ে দাও।

উত্তরঃ নজরুল তাঁর কল্পনাশক্তির শিখরে পৌঁছেছেন ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতার প্রশ্নোস্তৃত অংশে। দিগম্বর অর্থাৎ দেবাদিদেব শিবের অন্য এক রূপ হল রুদ্র চণ্ডের সংহারক মূর্তি। অথচ তাঁরই জটায় শোভা বৃদ্ধি করে চাঁদের ছোট্ট একটি ফালি। ঠিক যেন প্রলয়ের ভয়ংকরতার পাশাপাশি প্রতীক্ষায় আছে এক নতুন দিনের স্নিগ্ধ শাস্তির হাতছানি। রাতের শেষে যেমন দিন আসে, অঝোর বর্ষণের শেষে দেখা দেয় সোনাঝরা রোদ, তেমনই প্রলয় শেষে আবির্ভূত হবে মানবমুক্তির স্নিগ্ধ সৌন্দর্য, এই হল কবির বিশ্বাস।

প্রশ্নঃ ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর।’ – ‘তোরা’ কারা? তাদের জয়ধ্বনি করতে বলা হচ্ছে কেন?

উত্তরঃ নজরুল ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় কবি ‘তোরা’ বলতে, পরাধীন দেশের স্বাধীনতার প্রত্যাশী আপামর জনসাধারণকে বুঝিয়েছেন।

     ভারতবর্ষের পরাধীনতা কবি নজরুলের কাছে ভীষণ পীড়াদায়ক ছিল। তিনি সর্বদাই এই অবস্থার অবসান চাইতেন। তিনি বুঝেছিলেন কালবৈশাখীর মতো ভয়ংকর শক্তি কিংবা প্রলয় নেশায় মত্ত মহাদেবের মতোই কেউ এসে এই অবস্থার অবসান ঘটাবে। তাই কবি ভারতীয়দের এই ধ্বংস ও সৃষ্টির দেবতার আগমনের উদ্দেশ্যে জয়ধ্বনি করার আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রশ্নঃ ‘আসছে নবীন-জীবনহারা অ–সুন্দরে করতে ছেদন!’ – উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য লেখো।

উত্তরঃ প্রশ্নোদ্ভূত অংশটি কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতা থেকে নেওয়া। পরাধীন ভারতের জীর্ণতা, দাসত্ব, জড়তা, বৈষম্য ও শোষণের অবসান ঘটাতে কবি বৈপ্লবিক সত্তার আগমন ধ্বনি শুনতে পেয়েছেন। প্রলয়রূপী এই যুগান্তরের শক্তির পদসঞ্চার দেখে তিনি হয়েছেন আত্মহারা। কবি নিশ্চিত জীবনহারা–অশুভের বিনাশকারী নবীনের মধ্যেই আছে, নতুন সৃষ্টির সম্ভাবনা। সেই পারে নিষ্প্রাণ–গতিহীন সমস্ত কুশ্রীতার জন্মালকে ধুয়ে–মুছে সাফ করে দিতে। উপরের উদ্ধৃতিটিতে কবি এ কথাই বলতে চেয়েছেন।

প্রশ্নঃ ‘ভেঙে আবার গড়তে জানে সে চিরসুন্দর।’ – ‘সে’ কে? ভেঙে আবার গড়ার বিষয়টি বুঝিয়ে দাও।

উত্তরঃ নজরুলের ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতার উদ্ধৃত অংশটিতে ‘সে’ বলতে কবি ‘অসীম শক্তির’ অধিকারী মহাদেব বা প্রলয়রূপী ‘সে’–এর পরিচয় প্রাকৃতিক শক্তিকে বুঝিয়েছেন। ভেঙে আবার গড়া ধ্বংসের মধ্যেই সৃষ্টির বীজ নিহিত। এই চিরন্তন সত্যই জগতে প্রতিষ্ঠিত। কবি তার ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় ধ্বংসের জয়গান করেছেন। আপাতদৃষ্টিতে তাতে বিরোধ থাকলেও এটাই সত্য। পরাধীন ভারতে পরাধীনতার শৃঙ্খল মোচনের জন্য কবি মহাদেবকে আহ্বান জানিয়েছেন। সেই চিরসুন্দর অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে শুভ শক্তির সূচনা করবেন।

প্রশ্নঃ ‘অট্টরোলের হট্টগোলে স্তব্ধ চরাচর’ – ‘চরাচর’ শব্দের অর্থ কী? চরাচর স্তব্ধ কেন লেখো।

উত্তরঃ উপরের উদ্ধৃতিটি কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতার অন্তর্গত। ‘’চরাচর শব্দের অর্থ হল সমগ্র পৃথিবী বা জগৎ।

    কবি প্রলয় বা ধ্বংসকে ফুটিয়ে তুলতে কখনও শিব, আবার কখনও সর্বনাশী জ্বালামুখী স্বরূপ চণ্ডীমূর্তির রুদ্রতাণ্ডবের চরাচর স্তব্ধ কেন উপমা টেনে এনেছেন। বিনাশের অট্টহাসির গভীর ব্যঞ্জনা যেন সমগ্র জগতে সৃষ্টি করেছে এক রুদ্ধশ্বাস পরিবেশ। প্রলয়ের ভয়াবহ বিস্ফোরণের অজানা আশঙ্কায় এ পৃথিবী নিষ্কম্প–নিস্তব্ধ। প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে কবির এ ভাবনাই প্রকাশ পেয়েছে।

(৪) রচনাধর্মী প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :

প্রশ্নঃ ‘অন্য কারার বন্ধ কূপে’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? সেইসঙ্গে ‘দেবতা বাঁধা যজ্ঞ–যূপে/পাষাণ স্তূপে।’ – বলার কারণ বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ বাংলা সাহিত্যে ধূমকেতুর মতো আবির্ভাব নজরুলের। তাঁর লেখনীতে ফুটে উঠেছে দেশপ্রেম ও বিপ্লবীসত্তা। দেশমাতাকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করাই ছিল তাঁর ব্রত। লেখনীকেই তিনি তাঁর লড়াইয়ের অস্ত্ররূপে বেছে নিয়েছিলেন। শত চেষ্টাতেও শাসক তাঁর কন্ঠ রোধ করতে পারেনি। বার বার তিনি তাঁর দেশপ্রেমের জন্য কারাগারে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন। ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় উদ্ধৃত পক্তি ‘অন্ধকারার বন্ধ কুপে’ শব্দবন্ধ ব্যবহার করে একদিকে কবি বিদেশি শাসকের হাতে শৃঙ্খলিত দেশমাতার প্রতীকরূপে কল্পনা করেছেন, আবার অন্যদিকে দেশমাতার এই শৃঙ্খলমোচন করার জন্য স্বাধীনতাকামী দেশপ্রেমিকদের কারাগারের অন্ধকূপে নিমজ্জিত হয়ে মৃত্যুবরণ করার ঘটনাকে চিহ্নিত করেছেন। এক্ষেত্রে প্রতিবাদী কণ্ঠকে প্রতিহত করার ক্ষেত্রে শাসনের যে–ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র সে কথা বোঝাতেই শব্দবন্ধটি ব্যবহৃত হয়েছে। কবির বক্তব্য – “দেবতা বাঁধা যজ্ঞ–যূপে/পাষাণ স্তূপে স্বাধীনতার পূজারি”।

        বিপ্লবী কবি নজরুলের কাছে পরাধীন দেশের বিপ্লবীরাই হল প্রকৃত দেবতা। কবি একথা তাঁর বহু কবিতায় উল্লেখ করেছেন। যজ্ঞের যূপকাষ্ঠে বলি প্রদান করে। দেবতাকে সন্তুষ্ট করা হয় কিন্তু এখানে স্বয়ং সেই দেবতাই যূপকাষ্ঠে বলিপ্রদত্ত হওয়ার জন্য বাধা পড়েছেন। এক্ষেত্রে দেবতারূপ বিপ্লবীদের পরাধীন যুগে কারাগারের অন্ধকারে নিমজ্জিত করে ফাঁসি দেওয়ার প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে। তবে কবির বিশ্বাস মহাকালের সারথি তা হতে দেবে না।

প্রশ্নঃ ‘কাল ভয়ঙ্কর বেশে এবার ওই সুন্দর।’ – ‘কাল ভয়ংকর কে? তার ভয়ংকর রূপের বর্ণনা দাও ও তাকে সুন্দর বলা হয়েছে কেন তা ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ ‘কাল–ভয়ংকর’–এর বর্ণনা উত্তর উদ্ধৃতিটি নজরুলের ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতার অংশ বিশেষ। বিদ্রোহী কবি বিপ্লবের পথেই যে ভারতবাসীর মুক্তি সে কথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন এবং তাঁর লেখনীতে তা বেশ স্পষ্ট। কিন্তু প্রায় জীবনহারা অচল–অসাড় একটা জাতিকে উজ্জীবিত করতে চাই একটা মহাপ্রলয়। সেই প্রলয় ঘটাতে পারে একমাত্র রুদ্ররূপী কাল ভয়ংকর। যদিও এক্ষেত্রে কবি দেশের যুবশক্তিকে কাল ভয়ংকররূপে আখ্যা দিয়েছেন। 

    কবি রুদ্ররূপী কাল ভয়ংকর অর্থাৎ যুবশক্তির বিভিন্ন রূপ বর্ণনা করেছেন। কালবৈশাখীর ঝড়ের মতো প্রলয় নেশার নৃত্য পাগল মহাকালের চত্তরূপে সামাজিক অসংগতিকে দুর করতে তার আগমন ঘটে। কখনও তার ঝামর কেশের দোলায় গগন দুলে যায় এবং তাঁর অট্টহাস্যে চরাচর স্তব্ধ হয়ে যায়। দু–চোখে দ্বাদশ রবির বহ্নিজ্বালা নিয়ে বিশ্বমায়ের ভয়ংকর রূপের বর্ণনা আসনকে সে আগলে রাখে। মাভৈঃ মন্ত্রে দীক্ষিত এবং তা সুন্দর কেন হয়ে এই কাল–ভয়ংকর মুমূর্ষুদের প্রাণ ফিরিয়ে দেয়। মহাকালের রথের সারথি হয়ে সে দেবতারূপ বিপ্লবীদের বন্দিদশা থেকে উদ্ধারের জন্য এগিয়ে আসে। কবি এই কাল–ভয়ংকরকে ভয় পেতে বারণ করেছেন। কেন না এই ধ্বংসের শেষেই সৃষ্টির নতুন দিগন্ত আমাদের সামনে খুলে যাবে। তাই কবি এই ভয়ংকরকে সুন্দর বলেছেন।

প্রশ্নঃ ‘দিগন্তরের কাঁদন লুটায় পিঙ্গল তার ত্রস্ত জটায়!’ – পঙ্ক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ নজরুল চিরকালই বৈপরীত্যের সমন্বয়সাধন করেছেন। একদিকে তাঁর কঠিন বিদ্রোহীসত্তা আর অন্যদিকে শিশুসুলভ সরল কবিমন, পাঠ্য কবিতায় যা লক্ষণীয়। একদিকে তিনি অন্যায় অবিচারের বিনাশে উদ্যত, অন্যদিকে মাতৃভূমির অপমান, অসম্মানে তাঁর চোখে অব্যক্ত অশ্রু। পরাধীন দেশের পীড়িত মানুষের দুর্দশাই এই কান্নার উৎস, যেমনভাবে সতীর মৃত্যুযন্ত্রণায় বিরহকাতর মহাদেবের এক চোখে বেদনার অশ্রু এবং অন্য চোখে বিনাশের বহ্নিজ্বালা ফুটে উঠেছিল। কবির কল্পনায় রুদ্ররূপী সেই মূর্তিই ফুটে উঠেছে। 

    প্রকৃতিতে বিরোধ চিরসত্য, তাই তো দিনের শেষে রাত্রি আসে। নজরুল ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় চিরকালীন এই বৈপরীত্য খুঁজেছেন। একদিকে ধ্বংসকারী মহাকাল তার ভয়াল নয়নকটাক্ষে দ্বাদশ রবির অগ্নি প্রজ্বলিত করেন, অন্যদিকে বিশ্বমানবের আর্তনাদ তাঁর কপোল তলে অশ্রুবিন্দুর ধারা হয়ে প্রবাহিত হয়। শিবের এই সর্বত্যাগী রিক্তরূপ যেন ঝড়ের পূর্বের স্থিতাবস্থার প্রতীক। রুদ্রের ক্রোধ ও কোমলতা এই উভয় মূর্তির পরিপুরক সম্পর্ককে ফুটিয়ে তোলাই কবির উদ্দেশ্য। তাই তো অসম্মানিত ও মৃতা সতীকে বিপুল বাহুতে ধারণ করে মহাদেব রুদ্রতাণ্ডব করেন। তার হৃদয়ের জ্বালায় ধ্বংসকামী নতুনের কেতন ওড়ান। আমাদের বিপ্লবীরাসহ ভারতমাতার আপামর সন্তানেরা পরাধীনতা ও অপমানের যন্ত্রণার প্রতিবিধানের উদ্দেশ্যে নতুন প্রাণের বার্তাবহের কথা স্মরণ করেন, কবির ভাবনায় সে কথাই ফুটে উঠেছে।

প্রশ্নঃ ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় কবি প্রলয়কে কোন্ বিশেষণে ভূষিত করেছেন। কবিতার বিষয়বস্তু অনুসারে এই বিশেষণগুলির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।

উত্তরঃ বিদ্রোহীসত্তার অধিকারী কবি নজরুলের বিশ্বাস চারপাশের সমাজে যে বৈষম্য, জড়ত্ব ও পরাধীনতার যন্ত্রণা বর্তমান বিপ্লবই পারে তা প্রলয়ের নানা বিশেষণ থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে। ধ্বংসকারী সে প্রলয়ের আগমন সংকেতে কবি আত্মহারা। আনন্দিত কবি তাই সেই পরিবর্তনকামী শক্তিকে ‘কালবোশেখির ঝড়’, ‘প্রলয়–নেশার নৃত্য পাগল’, ‘ভয়ংকর’, ‘মহাকাল সারথি’, ‘নবীন’, ‘কাল–ভয়ংকর’ প্রভৃতি বিশেষণে ভূষিত করেন। 

    নজরুল তার বহু কবিতায় অশুভ শক্তির ধ্বংসের প্রয়োজনে প্রলয়কে আহ্বান জানিয়েছেন। এই প্রলয়ের উপর কখনো কখনো চেতনা আরোপ করে কবি তাকে চারিত্রিক মর্যাদা দিয়েছেন, যেমন- ‘অগ্রদূত’, ‘সারথি’, ‘কালাপাহাড়’, ‘ঘোড়সওয়ারী’ ইত্যাদি। আমাদের পাঠ্য ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতাতেও তিনি প্রলয়কে নানান বিশেষণে বিশেষিত করেছেন, ‘কালবোশেখির ঝড়’ বলে তুলনা করে কবিতায় বিভীষিকাময় রূপের শেষে নতুনের পদধ্বনি শুনেছেন। কবি ‘প্রলয়–নেশার নৃত্য পাগল’ বলতে ধ্বংসের নেশায় তাণ্ডবকারী বিপ্লবের আগমনকে বুঝিয়েছে, যে অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে শুভ শক্তির সূচনা করতে পারে। প্রলয়ের রূপকে কবি ‘ভয়ংকর ‘ বা ‘কাল–ভয়ংকর রূপেও আহ্বান জানিয়েছেন। প্রলয় প্রাকৃতিক নিয়মেই ঘটে থাকে। তাই তার রথের সারথি মহাকাল বা সময়। তাই ভাঙা–গড়ার এই কারিগরকে মহাকাল সারথি বলে কবি উল্লেখ করেছেন। সর্বোপরি প্রলয়কে ‘নবীন’ আখ্যা দেওয়ার অর্থ হল পৃথিবীতে পুরোনোকে ধ্বংস করে প্রলয়ই জন্ম দেয় নবীনের।

 

 ©kamaleshforeducation.in(2023)

 

 

 

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!