বহুরূপী গল্প থেকে সম্পূর্ণ প্রশ্ন উত্তর আলোচনা-PART-3

 

Madhyamik Bengali Suggestion 2025 PDF ...

শ্রেণি – দশম |

বিভাগ – বাংলা |

অধ্যায় – বহুরূপী (Bohurupi)

এই পর্বে রইল দশম শ্রেণির বাংলা বিভাগের বহুরূপী গল্প থেকে সম্পূর্ণ প্রশ্ন উত্তর আলোচনা।

সঠিক উত্তর নির্বাচন করো (MCQ)

[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান ১]

১। ‘খুব হয়েছে হরি, এইবার সরে পড়ো। অন্যদিকে যাও।’ – একথা বলেছে –
ক) ভবতোষ খ) অনাদি গ) কাশীনাথ ঘ) জনৈক বাসযাত্রী

উত্তর – বাসের ড্রাইভার গ) কাশীনাথ বলেন ‘খুব হয়েছে হরি, এইবার সরে পড়ো। অন্যদিকে যাও।

২। বাইজির ছদ্মবেশে হরিদার রোজগার –
ক) আট টাকা দশ আনা খ) আট টাকা আট আনা গ) দশ টাকা চার আনা ঘ) দশ টাকা দশ আনা [মাধ্যমিক’ ১৭]

উত্তর – বাইজির ছদ্মবেশে হরিদার রোজগার – ক) আট টাকা দশ আনা।

৩। সপ্তাহে হরিদা বহুরূপী সেজে বাইরে যান –
ক) একদিন খ) দু-দিন গ) চারদিন ঘ) পাঁচদিন [মাধ্যমিক’১৮]

উত্তর – সপ্তাহে হরিদা বহুরূপী সেজে বাইরে যান – ক) একদিন।

৪। “বাসের যাত্রীরা কেউ হাসে, কেউ বা বিরক্ত হয়, কেউ আবার বেশ বিস্মিত।”- বাস যাত্রীদের এমন প্রতিক্রিয়ার কারণ –
ক) বাসের ড্রাইভার কাশীনাথ, বহুরূপী হরিদাকে ধমক দিয়েছে খ) বহুরূপী হরিদার পাগলের সাজটা হয়েছে চমৎকার গ) হরিদা আজ একজন ‘বাউল’ সেজে এসেছেন      ঘ) ‘কাপালিক’ সেজে এলেও হরিদা আজ কোনো পয়সা নিলেন না।

উত্তর – “বাসের যাত্রীরা কেউ হাসে, কেউ বা বিরক্ত হয়, কেউ আবার বেশ বিস্মিত।”- বাস যাত্রীদের এমন প্রতিক্রিয়ার কারণ – ক) বাসের ড্রাইভার কাশীনাথ, বহুরূপী হরিদাকে ধমক দিয়েছে।

৫। ‘পাগলটা ______ হাতে নিয়ে বাসের যাত্রীদের দিকে তেড়ে যাচ্ছিল।’ – শূন্যস্থান পূরণ করো।
ক) লাঠি খ) পাথর গ) বাক্স ঘ) থান ইট

উত্তর – ‘পাগলটা ঘ) থান ইট হাতে নিয়ে বাসের যাত্রীদের দিকে তেড়ে যাচ্ছিল।’

 ৬। হরিদার কাছে যা অসম্ভব, তা হল –
ক) রোজই ভাত রান্না করা খ) রোজ বহুরূপী সাজা গ) একঘেয়ে চাকরী করা ঘ) এগুলির একটাও নয়

উত্তর – হরিদার কাছে যা অসম্ভব, তা হল – গ) একঘেয়ে চাকরী করা।

৭। হরিদা পুলিশ সেজে কোথায় দাঁড়িয়েছিলেন?
ক) লিচু বাগানে খ) মোড়ের মাথায় গ) বিদ্যালয়ের সামনে ঘ) বাসস্ট্যান্ডে

উত্তর – হরিদা পুলিশ সেজে ক) লিচু বাগানে দাঁড়িয়েছিলেন।

৮। জগদীশবাবুর স্বভাব কেমন ছিল?
ক) উদার খ) হাসি-খুশি গ) কৃপণ ঘ) কপট

উত্তর – জগদীশবাবু গ) কৃপণ স্বভাবের মানুষ ছিলেন।

৯। জগদীশবাবু বিরাগীকে কত টাকা প্রণামী দিয়েছিলেন?
ক) পঞ্চাশ টাকা খ) পাচিস টাকা গ) একশো টাকা ঘ) দেড়শ টাকা

উত্তর – জগদীশবাবু বিরাগীকে গ) একশো টাকা প্রণামী দিয়েছিলেন।

 অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (VSAQ)

[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান ১]

১। ‘অদৃষ্ট কখনও হরিদার এই ভুল ক্ষমা করবে না’ – হরিদার কোন ভুলের কথা এখানে বলা হয়েছে?
উত্তর – বিরাগী সাজে সজ্জিত হরিদা, ধনীমানুষ জগদীশ বাবুর থেকে প্রণামী নিতে অস্বীকার করেন; এখানে এই ভুলের কথা বলা হয়েছে।

২। জগদীশবাবু তীর্থ ভ্রমণের জন্য কত টাকা বিরাগীকে দিতে চেয়েছিলেন? [মাধ্যমিক’১৭]
উত্তর – জগদীশবাবু তীর্থ ভ্রমণের জন্য একশত এক টাকা বিরাগীকে দিতে চেয়েছিলেন।

৩। হরিদার জীবন এইরকম বহু রুপের খেলা দেখিয়েই একরকম চলে যাচ্ছে’ – কিরকম খেলা দেখিয়ে হরিদার জীবন চলে যাচ্ছে? [মাধ্যমিক’১৮]
উত্তর – হরিদা একজন বহুরূপী, পেশার জন্য হরিদা নানান রকম রূপধারণ করেন, এখানে রূপের খেলা বলতে হরিদার বহুরূপী সাজাকে বলা হয়েছে।

৪। ‘সপ্তাহে বড়জোর একটি দিন বহুরূপী সেজে পথে বের হন হরিদা’ – ‘বহুরূপী’ কাকে বলে? [মাধ্যমিক’১৯]
উত্তর – যে সকল মানুষরা পেশার খাতিরে নানারকম সাজ – সজ্জা ধারণ করেন এবং তা দেখিয়ে পথচলতি মানুষদের আনন্দ দান করেন তাদের বহুরূপী বলা হয়।

৫। ‘আপনি কি ভগবানের চেয়েও বড়ো?’ বক্তা এ কথা কাকে বলেছিলেন? [মাধ্যমিক’২০]
উত্তর – একথা হরিদা জগদীশবাবুকে বলেছিলেন।

 ৬। একটা আতঙ্কের হল্লা বেজে উঠেছিল? – কোথায় আতঙ্কের হল্লা বেজে উঠেছিল?
উত্তর – একদিন চকের বাস স্ট্যান্ডের কাছে ঠিক দুপুরবেলায় আতঙ্কের হল্লা বেজে উঠেছিল।

৭। “আজ তোমাদের একটা জবর খেলা দেখাবো।” – কি খেলা দেখানো হয়েছিল?
উত্তর – হরিদা ‘বিরাগী’ সন্ন্যাসীর রূপ ধরে জগদীশবাবুর বাড়ি গিয়েছিলেন, এখানে ‘জবর খেলা’ বলতে এই ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে।

৮। ‘এবারের মতো মাপ করে দিন ওদের’- এ কথা কে, কাকে বলেছিল?
উত্তর – এই কথা স্কুলের মাস্টারমশাই ‘পুলিশ’ রূপী হরিদাকে বলেছিলেন।

৯। ‘না, না হরিদা নয়। হতেই পারে না।’ বক্তা ও তার সঙ্গীদের এই বিশ্বাসের কারণ কি ছিল?
উত্তর – বিরাগীরূপী হরিদার গলার স্বর এবং বাচনভঙ্গীর সাথে আসল হরিদার কোন মিল না থাকার কারণে, বক্তা ভবতোষ এই কথা তার সঙ্গীদের বলে।

১০। ‘আমার অপরাধ হয়েছে।’ – কোন অপরাধের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর – জগদীশবাবু বিরাগীরূপী হরিদার সাথে কথা বলার সময় সিঁড়ির উপর থেকে দাঁড়িয়ে কথা বলেছিলেন, এখানে সেই অপরাধের কথা বলা হয়েছে।

১১। ‘বাইজীর বেশে সেদিন হরিদার রোজগার মন্দ হয়নি’ – রোজগারের পরিমাণ কত ছিল?
উত্তর -বাইজীর ছদ্মবেশ ধরে হরিদার মোট আট টাকা দশ আনা রোজগার হয়েছিল।

১২। ‘ঠাণ্ডা জল চাই, আর কিছু চাই না’ – কার কোন কথার উত্তরে বিরাগী একথা বলেছিল?
উত্তর -বিরাগীর বেশধারী হরিদাকে দেখে মোহিত জগদীশবাবু তাঁর সেবা করার আবেদন করেছিলেন, যার উত্তরে হরিদা আলচ্য উক্তিটি করেছিলেন।

১৩। ‘সে ভয়নক দুর্লভ জিনিষ’ – দুর্লভ জিনিসটি কি?
উত্তর -জগদীশবাবুর বাড়িতে যে সন্ন্যাসীর আগমন হয়েছিল তাঁর পায়ের ধুলোকে ‘দুর্লভ জিনিস’ বলা হয়েছে।

১৪। হরিদা কোথায় থাকতেন?
উত্তর – শহরের সবচেয়ে সরু গলির মধ্যে ছোট্ট একটি ঘরে হরিদা বাস করতেন।

১৫। ‘চমকে উঠলেন জগদীশবাবু’ – চমকে ওঠার কারণ কি?
উত্তর – বিরাগীর বেশধারী হরিদাকে দেখে জগদীশবাবু চমকে উঠেছিলেন।

 ব্যাখ্যা ভিত্তিক প্রশ্ন (SAQ)

[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান ৩]

১। ‘হরিদার জীবনে সত্যিই একটা নাটকীয় বৈচিত্র্য আছে’ – জীবনে নাটকীয় বৈচিত্র্য বলতে কি বোঝানো হয়েছে? হরিদার জীবনের নাটকীয় বৈচিত্র্য কি?
উত্তর – বৈচিত্র্য কথার আক্ষরিক অর্থ ‘বিভিন্নতা’। সাধারণ মানুষের জীবন একটি গতে বাঁধা; তার মধ্যে কোন বিভিন্নতা থাকে না। নাটক হল জীবনের প্রতিচ্ছবি, জীবনের ঘটনাস্রোত কয়েকটি ঘণ্টার মধ্যে নাটকে ফুটিয়ে তোলা হয়, তার ফলে নাটকের পদে পদে থাকে চমক – বৈচিত্র্য। যাকে নাটকীয় বৈচিত্র্য বলা যায়। যখন জীবনে এই রকম কোন ঘটনা ঘটে তখন তাকে জীবনের নাটকীয় বিচিত্র্য বলা হয়।

হরিদা আর পাঁচটা মানুষের থেকে আলাদা। তার যোগ্যতা থাকলেও সে সাধারণ ১০টা ৫টার কাজ করে না। তার জীবনে অভাবের নিত্য আনাগোনা, তা সত্বেও নিশ্চিত জীবনের হাতছানি উপেক্ষা করে হরিদা বহুরুপীর অনিশ্চিত কিন্তু বৈচিত্র্যময় পেশাকে বেছে নেয়। তাই হরিদার জীবন আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতো গতে বাঁধা নয়, তার জীবনে নাটকীয় বৈচিত্র্য আছে।

২। ‘আপনি কি ভগবানের চেয়েও বড়ো’’ – কাকে এ কথা বলা হয়েছে? তাঁকে এ কথা বলা হয়েছে কেন? [পর্ষদ নমুনা প্রশ্ন]
উত্তর – এই কথাটি বিরগী রূপী হরিদা জগদীশবাবুকে বলেছিলেন।

ছদ্মবেশি হরিদা যখন জগদীশ বাবুর বাড়ি যান সেই সময় জগদীশবাবু তার বারান্দায় চেয়ারের উপর বসে ছিলেন। বিরাগীরূপী হরিদাকে দেখে তিনি দাঁড়িয়ে পড়েন বটে; কিন্তু বারান্দা থেকে নেমে আসেন না। সাধারণত বাড়িতে কোন অথিতির আগমন হলে, তার কাছে গিয়ে আপ্যায়ন করাই সামাজিক রীতি, এমন কি বলা হয় প্রকৃত ভক্তের ডাকে ভগবানও সাড়া দিয়ে ভক্তের কাছে পৃথিবীতে নেমে আসেন। কিন্তু জগদীশ বাবু একজন ধনী এবং গণ্য-মান্য ব্যাক্তি ছিলেন, তাই সম্ভবত একজন গরীব – সন্ন্যাসীকে দেখে নিজ অহংকারের কারণে সঠিক ভাবে আপ্যায়ন করেননি। বিরাগীরূপী হরিদা জগদীশবাবুর অহংকার ভাঙার জন্য “আপনি কি ভগবানের থেকে বড় এই কথা বলেছেন।”

 

৩। হরিদা পুলিশ সেজে কোথায় দাঁড়িয়েছিলেন? তিনি কিভাবে মাস্টারমশাইকে বোকা বানিয়েছিলেন?
উত্তর – হরিদা একজন বহুরূপী। কোন একটি দিন হরিদা দয়ালবাবুর লিচু বাগানের ভিতরে দাঁড়িয়েছিলেন।

স্কুলের চারটি ছেলে লিচু পাড়তে এলে হরিদা তাদের ধরে ফেলেন; তারা ভয়ে কেঁদে ফেলে। এরপর স্কুলের মাস্টারমশাই এসে পুলিশ রূপী হরিদার কাছে ক্ষমা চান এবং বাধ্য হয়ে হরিদাকে আটআনা ঘুষ দিয়ে ছেলেদের ছাড়িয়ে আনেন। যদিও পরদিন মাস্টারমশাই হরিদার এই কান্ড বুঝতে পেরে ভীষণ অবাক হয়ে যান কিন্তু হরিদার সাজের তারিফ করতে ভোলেন না।

৪। ‘আমি বলছি তোমরা সেখানে থেকো।’ ‘আমি’ ও ‘তোমরা’ বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে, শ্রোতাদের সেখানে থাকার কথা কেন বলা হয়েছে?
উত্তর – এখানে ‘আমি’ বলতে হরিদার কথা বলা হয়েছে, তোমরা বলতে চারবন্ধুর কথা বলা হয়েছে, যারা হরিদার কাছে সকাল ও সন্ধ্যাবেলা আড্ডা দিতে আসতো।

কোন একদিন হরিদার ছোট্ট ঘরে ঐ চারজন আড্ডা দিতে এসে একটি ঘটনার কথা বলে – জগদীশবাবুর বাড়িতে এসে উপস্থিত হয়েছেন একজন তথাকথিত সন্ন্যাসী। যাকে জগদীশবাবু সোনার বোল দেওয়া জুতো এবং একশো টাকা উপহার দিয়েছেন। সন্ন্যাসীর প্রাপ্তির কথা শুনে, হরিদা জগদীশবাবুর বাড়ি কোন একটি বিশেষ খেলা দেখাবার কথা বলেন, সেই কথা প্রসঙ্গেই হরিদা ছেলেদের এই কথা বলেছেন।

৫। ‘বড় চমৎকার আজকে এই সন্ধ্যার চেহারা।’ – সন্ধ্যার চেহারার বর্ণনা দাও।
উত্তর – ‘আজকে এই সন্ধ্যা’ বলতে ছেলেরা যেদিন জগদীশবাবুর বাড়ি ‘স্পোর্টের চাঁদা’ নিতে গিয়েছিলেন, সেই সন্ধ্যার কথা বলা হয়েছে। ঐ দিন সন্ধ্যা ছিল স্নিগ্ধ – শান্ত এবং চারিপাশে ছিল চন্দ্রালোকের উজ্জ্বলতা। ফুরফুরে বাতাস বইছিল এবং তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জগদীশবাবুর বাড়ির বাগানের সব গাছের পাতাও ঝিরি-ঝিরি শব্দ করছিল। বাড়ির বারান্দায় জগদীশবাবু বসেছিলেন, সেই বারান্দায় মস্ত বড় একটি আলো জ্বলছিল। সেই আলোর কাছে একটি চেয়ারে বসেছিলেন জগদীশবাবু।

 

রচনাধর্মী প্রশ্ন (LA)

[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান ৫]

১। জগদীশবাবুর বাড়ি হরিদা বিরাগী সেজে যাওয়ার পর যে-ঘটনা ঘটেছিল তা বর্ণনা করো। [মাধ্যমিক’১৭]
উত্তর – সুবোধ ঘোষ রচিত ‘বহুরূপী’ গল্প অনুযায়ী পাড়ার ছেলেরা ‘স্পোর্টের’ চাঁদা নেবার অছিলায় জগদীশবাবুর বাড়ি উপস্থিত হয়েছিল তখন জগদীশ বাবু তার বাড়ির বারান্দায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, এই সময় সেখানে আবির্ভাব হয় ছদ্মবেশী বিরাগী অর্থাৎ হরিদার। জগদীশবাবু ছিলেন একজন ধনী এবং সমাজের মান্য – গণ্য ব্যাক্তি। গল্পের প্রধান চরিত্র হরিদা ছিলেন একজন বহুরূপী, পাড়ার ছেলেদের কথায় হরিদা ঐদিন জগদীশবাবুর বাড়িতে খেলা দেখাবার কথা আগে থেকে জানিয়েছিলেন। হরিদা তথাকথিত সন্যাসীর সাজ ধারণ না করে একজন সর্বত্যাগী বিরাগীর রূপ ধারণ করেছিলেন, তার আদুড় গা, ধবধবে সাদা উত্তরীয়, পরণের সাদা থান, ধুলো – মাখা হাত – পা, শুকনো চুল, উজ্জ্বল দীপ্ত দৃষ্টি ‘কৃপণ’ জগদীশবাবুর মনে ভক্তির সঞ্চার করে। কিন্তু অর্থের প্রাচুর্যে অহংকারী জগদীশবাবু খোলা মনে বিরাগীকে আপ্যায়ন করতে পারেন না, বিরাগীর কথায় জগদীশবাবুর অহংকার ভঙ্গ হয়। তিনি বিরাগীকে তার গৃহে কিছুদিন আতিথ্যগ্রহণ করতে আহ্বান করেন কিন্তু সর্বত্যাগী বিরাগী সেই আহ্বানে অসম্মত হন। এরপর জগদীশবাবু তীর্থভ্রমণের জন্য একশোএক টাকা দান করতে চাইলে বিরাগী সেই দানগ্রহণেও অসম্মত হয়। অবশেষে প্রকৃত সন্যাসীর মতো জাগতিক দান অগ্রাহ্য করে বিরাগীরূপী হরিদা জগদীশবাবুর গৃহ ত্যাগ করেন।

২। ‘অদৃষ্ট কখনও হরিদার এই ভুল ক্ষমা করবে না’’ হরিদা কি ভুল করেছিলেন? অদৃষ্ট ক্ষমা না-করার পরিনাম কি? [মাধ্যমিক’১৯]
উত্তর – ‘বহুরূপী’ গল্পে বিরাগীর ছদ্মবেশী হরিদাকে জগদীশবাবু একশো এক টাকা দিতে চেয়েছিলেন; কিন্তু হরিদা সেই দান নিতে অস্বীকার করেন। গল্পে লেখক এই ঘটনাকেই ভুল বলে চিহ্নিত করেছেন।

‘অদৃষ্ট’ কথার কথার অর্থ ভাগ্য; প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী মনে করা হয় ‘ভাগ্য’ দ্বারাই জীবনের রূপরেখা রচিত হয়। হরিদা একজন গরীব ‘বহুরূপী’, দারিদ্র তার নিত্য সঙ্গী। সেই হরিদা যখন জগদীশবাবুর কাছ থেকে বিপুল অর্থের দান নেবার সুযোগ পায়, তখন হরিদা তা নিতে অস্বীকার করে। জগদীশবাবুর কাছে হরিদা একজন সর্বত্যাগী বিরাগীর ছদ্মবেশ ধারণ করে উপস্থিত হয়েছেন। একজন বিরাগী – সন্ন্যাসীর কোনরকম জাগতিক চাহিদা থাকতে পারেনা, তাই দরিদ্র হরির জাগতিক চাহিদা থাকলেও, বিরাগীর ভুমিকায় অভিনয়কারী ‘শিল্পী’ হরির কোন জাগতিক চাহিদা থাকতে পারে না, তাই সে টাকা গ্রহণ করতে পারেনা। সমাজের চোখে হরিদার এই পদক্ষেপ একটি ‘ভুল’ কারণ জগদীশবাবুর অর্থে হরিদার ভাগ্য ফিরে যেতে পারতো, তার দারিদ্র কিছুদিনের জন্য লাঘব হতে পারতো কিন্তু হরিদার ভুলের জন্য সেই সুযোগ নষ্ট হয়। তাই লেখক বলেছেন যে ‘অদৃষ্ট কখনও হরিদার এই ভুল ক্ষমা করবে না’।

 

৩। ‘আমার বুকের ভিতরেই যে সব তীর্থ’ – কে, কাকে এই কথা বলেছেন? গল্পের আলোকে কথাটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তর – সুবোধ ঘোষ রচিত ‘বহুরূপী’ গল্পের প্রধান চরিত্র বিরাগীর রূপধারী ছদ্মবেশী হরিদা ‘আমার বুকের ভিতরেই যে সব তীর্থ’ – এই কথাটি জগদীশবাবুকে বলেছিলেন।

বহুরূপী গল্পে হরিদা একজন বিরাগী – সন্ন্যাসীর ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন। গল্প অনুযায়ী জগদীশবাবু বিরাগীর সাজ এবং কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁকে তার বাড়িতে কিছুদিন থাকার জন্য অনুরোধ করেন; বিরাগী তাতে অসম্মত হন। অবশেষে জগদীশবাবু তাঁকে তীর্থভ্রমণের জন্য কিছু টাকা দিতে চাইলে, বিরাগী তাতেও অসস্মত হন এবং বলেন ‘আমার বুকের ভিতরেই যে সব তীর্থ’। এই কথার মাধ্যমে বিরাগী বোঝাতে চেয়েছিলেন যে তার মধ্যেই পরমেশ্বর আছেন তাঁকে খুঁজতে তীর্থে যাবার কোন প্রয়োজন নেই।

বেদের একটি মহাবাক্য হল ‘অহম ব্রহ্মাস্মি’ অর্থাৎ আমিই ব্রহ্ম বা আমাদের মধ্যেই ঈশ্বর আছেন। একজন সন্ন্যাসী ঈশ্বরকে পাবার উদ্দেশ্যে সংসার ত্যাগ করেন, একজন প্রকৃত সন্ন্যাসীর কাছে ঈশ্বর প্রাপ্তিই পরম প্রাপ্তি, কোনপ্রকার জাগতিক সুখ বা ইচ্ছে তার ঊর্ধে নয়। বিরাগীর রূপধারী হরিদা, অর্থের অহংকারে পূর্ণ সংসারী জগদীশবাবুকে এই কথার মাধ্যমে ভক্তির প্রকৃত রূপ বোঝাতে চেয়েছিলেন।

 

 ©kamaleshforeducation.in(2023)

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!