ভারতের কৃষি (ভারত – পঞ্চম অধ্যায়)
মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Geography Question and Answer :
MCQ | ভারতের কৃষি (ভারত – পঞ্চম অধ্যায়) মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Geography Bharater Krishi Question and Answer :
- ভারতের মোট আয়তনের প্রায় কত শতাংশ জমিতে কৃষিকাজ করা হয় ?
(A) ৪০ %
(B) ৫০ %
(C) ৪৫ %
(D) ৫৫ %
Ans: (C) ৪৫ %
- ভারতে সারাবছর বৃষ্টিপাত হয় না বলে কৃষিকাজ কীসের ওপর নির্ভর করে ?
(A) মৌসুমি বৃষ্টি
(B) শীতকালীন বৃষ্টি
(C) জলসেচ
(D) রাসায়নিক সার ও উচ্চফলনশীল বীজ
Ans: (C) জলসেচ
- দেশের প্রায় কত শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো ভাবে কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত ?
(A) ৬৫ %
(B) ৭০ %
(C) ৫৫ %
(D) ৩৫ %
Ans: (A) ৬৫ %
- যেসব ফসল থেকে আঁশ বা তন্তু পাওয়া যায় , তাদের কী বলা হয় ?
(A) বাগিচা ফসল
(B) খাদ্যফসল পান
(C) আঁশযুক্ত ফসল
(D) তন্তু ফসল
Ans: (D) তন্তু ফসল
- ভারতের প্রধান খরিফ শস্য কী ?
(A) পাট
(B) গম
(C) আলু
(D) ধান
Ans: (D) ধান
- ভারতের প্রধান ‘ শীতকালীন ফসল ‘ কী ?
(A) গম
(B) তৈলবীজ
(C) তুলো
(D) আলু
Ans: (A) গম
- কোন্ ধান চাষ করতে সবচেয়ে বেশি জলের প্রয়োজন হয় –
(A) আউশ ধান
(B) আমন ধান
(C) বোরো ধান
(D) কোনোটাই নয়
Ans: (B) আমন ধান
- হেক্টর প্রতি ধান উৎপাদনে প্রথম রাজ্য হল—
(A) পশ্চিমবঙ্গ
(B) পাঞ্জাব
(C) বিহার
(D) উত্তরপ্রদেশ
Ans: (B) পাঞ্জাব
- ভারতে ধান গবেষণার প্রধান কেন্দ্রটি কোথায় অবস্থিত ?
(A) দিল্লি
(B) কটক
(C) গুরগাঁও
(D) কলকাতা
Ans: (A) দিল্লি
- উত্তর ভারতে কোন্ ফসলের চাষ বেশি হয় ?
(A) ধান
(B) গম
(C) কার্পাস
(D) চা
Ans: (B) গম
[ আরোও দেখুন: Madhyamik Geography Suggestion 2023 Click here ]
- হেক্টরপ্রতি গম উৎপাদনে ভারতে কোন রাজ্য প্রথম ?
(A) পাঞ্জাব
(B) উত্তরপ্রদেশ
(C) হরিয়ানা
(D) মধ্যপ্রদেশ
Ans: (A) পাঞ্জাব
- কোনটি মিলেট জাতীয় শস্য –
(A) ইক্ষু
(B) কফি
(C) বাদাম
(D) জোয়ার
Ans: (D) জোয়ার
- ভারতে জোয়ার উৎপাদনে যে রাজ্য প্রথম –
(A) মহারাষ্ট্র
(B) কর্নাটক
(C) অন্ধ্রপ্রদেশ
(D) মধ্যপ্রদেশ
Ans: (A) মহারাষ্ট্র
- চা উৎপাদনে ভারতে কোন রাজ্য প্রথম ?
(A) আসাম
(B) পশ্চিমবঙ্গ
(C) তামিলনাড়ু
(D) কেরল
Ans: (A) আসাম
- চা রপ্তানিতে ভারত পৃথিবীতে কততম স্থান অধিকার করে ?
(A) প্রথম
(B) দ্বিতীয়
(C) তৃতীয়
(D) চতুর্থ
Ans: (D) চতুর্থ
- কফি উৎপাদনে পৃথিবীতে ভারতের স্থান কত ?
(A) পঞ্চম
(B) চতুর্থ
(C) ষষ্ঠ
(D) সপ্তম
Ans: (C) ষষ্ঠ
- আর্দ্র সমুদ্রবায়ু কোন ফসল চাষের পক্ষে উপযুক্ত ?
(A) পাট
(B) বাজরা
(C) তৈলবীজ
(D) কার্পাস
Ans: (D) কার্পাস
- কোন্ মৃত্তিকায় কার্পাস চাষ সবচেয়ে ভালো হয় ।
(A) পলি
(B) পড়সল
(C) কৃষ্ণ
(D) দোআঁশ
Ans: (C) কৃষ্ণ
- ভারতের অর্থকরী ফসল কোন্টি—
(A) ধান
(B) কার্পাস
(C) গম
(D) মিলেট
Ans: (C) গম
- কোন রাজ্য ভারতে আখ উৎপাদনে প্রথম স্থান অধিকার করে ?
(A) বিহার
(B) উত্তরপ্রদেশ
(C) পশ্চিমবঙ্গ
(D) পাঞ্জাব
- যে শস্যের বীজ থেকে তেল পাওয়া যায় , তাদের বলে –
(A) মিলেট
(B) তৈলবীজ
(C) অর্থকরী ফসল
(D) বাগিচা ফসল
- ভারতে সর্বাধিক চা রপ্তানি হয় কোন্ বন্দর থেকে ?
(A) মুম্বাই
(B) বিশাখাপত্তনম
(C) কলকাতা
(D) চেন্নাই
Ans: (C) কলকাতা
- রবিশস্য চাষ হয় –
(A) বর্ষাকালে
(B) শীতকালে
(C) যে কোনো সময়ে
(D) উদ্বু ও শুষ্ক
Ans: (B) শীতকালে
- কফি চাষের জন্য প্রয়োজনীয় জলবায়ু হওয়া উচিত—
(A) উষ্ণ ও আর্দ্র
(B) আর্দ্র এ শুষ্ক
(C) শীতল
(D) শুষ্ক
Ans: (C) শীতল
- কোন জেলাকে ‘ পশ্চিমবঙ্গের ধানের ভাণ্ডার ’ বলে ?
(A) মুরশিদাবাদ
(B) উত্তর ২৪ পরগনা
(C) বর্ধমান
(D) পূর্ব মেদিনীপুর
Ans: (C) বর্ধমান
- ধান কাটার সময় কী ধরনের জলবায়ু প্রয়োজন ?
(A) শীতল
(B) আদ্র
(C) শুষ্ক
(D) উষ্ণ
Ans: (C) শুষ্ক
- কোন গাছের বাগানের মাঝে মাঝে ছায়া প্রদানকারী বৃদ্ধ লাগাতে হয় ?
(A) রবার
(B) বাদাম
(C) সূর্যমুখী
(D) চা
Ans: (D) চা
- কুয়াশা ও সামুদ্রিক আর্দ্রতা কোন্ গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে ?
(A) চা
(B) কফি
(C) তৈলবীজ
(D) আখ
Ans: (A) চা
- ভারতের কোন্ রাজ্যে মিলেট শস্যের গবেষণাগার অবস্থিত ?
(A) রাজস্থান
(B) গুজরাট
(C) ভূপাল
(D) কেরল
Ans: (A) রাজস্থান
- আঘায়নি বলা হয় কোন্ ধানকে ?
(A) আমন
(B) বোরো
(C) আউশ
(D) কোনোটাই নয়
Ans: (A) আমন
- কোন জেলায় বোরো ধানের চাষ সবচেয়ে বেশি হয় ?
(A) বর্ধমান
(B) পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর
(C) মুরশিদাবাদ
(D) বীরভূম
Ans: (A) বর্ধমান
- সবুজ বিপ্লবের ফলে ভারতের কী চাষে প্রভূত উন্নতি হয় ?
(A) গম
(B) চা
(C) তুলো
(D) ধান
Ans: (A) গম
- ভারতের কোন্ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় সবুজ বিপ্লব অনুষ্ঠিত হয়েছিল ?
(A) দ্বিতীয়
(B) চতুর্থ
(C) পঞ্চম
(D) তৃতীয়
Ans: (D) তৃতীয়
- অন্ধ্রপ্রদেশের কোন্ নদী উপত্যকায় ধান চাষ ভালো হয় ?
(A) কৃষ্ণা
(B) তুঙ্গভদ্রা
(C) গোদাবরী
(D) কাবেরী
Ans: (C) গোদাবরী
- ‘ বল উইভিল ’ পোকার আক্রমণ ঘটে কোন্ গাছে ?
(A) ইক্ষু
(B) কফি
(C) কার্পাস
(D) চা
Ans: (C) কার্পাস
- কোন্ রাজ্যকে ‘ ভারতের চিনির বাটি ‘ বলা হয় ?
(A) হিমাচল প্রদেশ
(B) উত্তরপ্রদেশ
(C) হরিয়ানা
(D) পাঞ্জাব
Ans: (B) উত্তরপ্রদেশ
- ভারতীয় কৃষির ধরন কীরূপ –
(A) জীবিকাসত্তাভিত্তিক
(B) বাণিজ্যিক
(C) প্রগাঢ়
(D) কোনোটিই নয়
Ans: (A) জীবিকাসত্তাভিত্তিক
- হেক্টর প্রতি চা উৎপাদনে ভারতে কোন রাজ্য প্রথম ?
(A) কর্ণাটক
(B) পশ্চিমবঙ্গ
(C) আসাম
(D) পাঞ্জাব
Ans: (A) কর্ণাটক
- কোন মৃত্তিকা গম চাষের পক্ষে উপমুক্ত ?
(A) এঁটেল
(B) দোআশ
(C) কৃষ্ণ
(D) পডসল
Ans: (A) এঁটেল
- কোনটি বাগিচা ফসল নয় ?
(A) চা
(B) কফি
(C) রাবার
(D) গম
Ans: (D) গম
- রেটুন শব্দটির সাথে কোন ফসল জড়িত –
(A) কফি
(B) আখ
(C) চা
(D) পাট
Ans: (B) আখ
- কোনটি অপ্রধান মিলেট জাতীয় শস্য –
(A) জোয়ার
(B) বাজরা
(C) রাগি
(D) রাজগিরা
Ans: (D) রাজগিরা
- কোন ফসল উৎপাদনে পাহাড় – পর্বতের ঢালু জমি আদর্শ –
(A) পাট
(B) কার্পাস
(C) চা
(D) আঁখ
Ans: (C) চা
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | ভারতের কৃষি (ভারত – পঞ্চম অধ্যায়) মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Geography Bharater Krishi Question and Answer :
- ভারতের প্রধান দুটি অর্থকরী পানীয় ফসলের নাম লেখো ।
Ans: চা , কফি ।
- খরিফ শস্যের অর্থ কী ?
Ans: বর্ষাকালীন ফসল ।
- রবি শস্যের অর্থ কী ?
Ans: শীতকালীন ফসল ।
- দুটি খরিফ শস্যের উদাহরণ দাও ।
Ans: ধান / পাট / তুলো / জোয়ার / বাজরা ।
- দুটি রবি শস্যের উদাহরণ দাও ।
Ans: গম / যব / আলু ।
- দুটি জায়িদ শস্যের নাম লেখো ।
Ans: আউশ ধান / পাট / বাদাম / শাক ।
- ভারতে সাধারণত কোন্ দুই পদ্ধতিতে ধান চাষ হয় ?
Ans: রোপণ পদ্ধতি ও বপন পদ্ধতি ।
- ICAR- এর পুরো নাম কী ?
Ans: Indian Council of Agricultural Research .
- ভারতের কোন প্রকার চাল বিদেশে রপ্তানি করা হয় ?
Ans: সুগন্ধি বাসমতী ও গোবিন্দভোগ চাল ।
- ধানের পর ভারতের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্যশস্য কী ?
Ans: গম ।
- ভারতে প্রধানত কোন প্রকার গম চাষ হয় ?
Ans: শীতকালীন গম চাষ ।
- ভারতের শস্যভাণ্ডার কাকে বলা হয় ?
Ans: করমন্ডল উপকূল ( তামিলনাড়ু ) ।
- ভারতের যে কোনো ২ টি রাজ্যের নাম যেখানে জোয়ার চাষ করা হয় ।
Ans: মহারাষ্ট্র মধ্যপ্রদেশ / কর্ণাটক / অস্ত্রপ্রদেশ ।
- ভারতের যে – কোনো দুটি বাজরা উৎপাদক রাজ্যের নাম লেখো ।
Ans: খুজরাট / রাজস্থান / মহারাষ্ট্র / উত্তরপ্রদেশ ।
- ভারতের যে কোনো দুটি রাগি উৎপাদক রাজ্যের নাম লেখো ।
Ans: কর্ণাটক / অস্ত্রপ্রদেশ / তামিলনাড়ু / বিহার ।
- মৃত্তিকায় কোন প্রকার খনিজের উপস্থিতিতে চা পাতার সুগন্ধ বৃদ্ধি পায় ?
Ans: ফসফরাস ও পটাশ ।
- পশ্চিমবঙ্গের কোন জেলার চা স্বাদে – গন্ধে পৃথিবীবিখ্যাত ?
Ans: দার্জিলিং ।
- ভারতের চা গবেষণাগারটি কোথায় অবস্থিত ?
Ans: অসমের জোড়হাটে ।
- ভারতের কোন রাজ্য কফি উৎপাদনে প্রথম ?
Ans: কর্ণাটক ।
- ভারতের কোন অঞ্চলে অধিকাংশ কার্পাস উৎপন্ন হয় ?
Ans: দাক্ষিণাত্যের কৃয়মৃত্তিকা অঞ্চল ।
- কোন প্রকার জলবায়ুতে আখ চাষ ভালো হয় ?
Ans: আর্দ্র ক্রান্তীয় জলবায়ু ।
- ভারতের কোন অঞ্চল হেক্টরপ্রতি কার্পাস উৎপাদনে ভারতে প্রথম ?
Ans: সিন্ধু সমভূমির দক্ষিণ – পশ্চিম অংশ তথা পাঞ্জাব ও হরিয়ানা ।
- পেশাগত দিক থেকে ভারত কী ধরনের দেশ ?
Ans: কৃষিভিত্তিক দেশ ।
- ভারতের কৃষিতে জলসেচের মূল কারণ কী ?
Ans: অনিয়মিত মৌসুমি বৃষ্টিপাত ।
- পাহাড়ি অঞ্চলে মাটি ক্ষয় রোধে ঢালু জমিতে ধাপ কেটে যে – চাষ করা হয় তাকে কী বলে ?
Ans: ধাপ চাষ ।
- ভারতের কোন অঞ্চলে ঝুম চাষ দেখা যায় ।
Ans: উত্তর – পূর্বাঞ্চলে ।
- ভারতে সবুজ বিপ্লবের সময়কাল কী ?
Ans: ১৯৬১–১৯৬৬ ( ষাটের দশকের শেষে ) ।
- ভারতে সবুজ বিপ্লবের ফলে কোন্ ফসলের উৎপাদন বেড়ে গিয়েছিল ?
Ans: গম ।
- কোনো নির্দিষ্ট জমিতে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন শস্যের পর্যায়ক্রমিক চাষকে কী বলে ?
Ans: শস্যাবর্তন ।
- কৃষি থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জাতীয় আয় কত হয় ?
Ans: ১৬.৬ % ।
- যেসকল ফসল থেকে চিনি , গুড় , মিছরি বা সুরাসার উৎপন্ন হয় , তাকে কী ধরনের ফসল বলে ?
Ans: শর্করা জাতীয় ফসল ।
- কোন্ ধানের অপর নাম ভাদুই ?
Ans: আউশ ধান ।
- পৃথিবীতে কোন প্রকার গমের চাষ সবচেয়ে বেশি ?
Ans: শীতকালীন গম ।
- কোন্ ধানের অপর নাম যেটে ধান ?
Ans: বোরো ধান ।
- হেক্টরপ্রতি চা উৎপাদনে কোন রাজ্য প্রথম ?
Ans: তামিলনাড়ু রাজ্য ।
- ভারত কোন্ কোন্ দেশে তুলা রপ্তানি করে ?
Ans: শ্রীলঙ্কা , বাংলাদেশ , জাপান , জার্মানি ইত্যাদি ।
- পশ্চিমবঙ্গের কোথায় ধানের গবেষণা কেন্দ্র আছে ?
Ans: চুঁচুড়াতে ।
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর | ভারতের কৃষি (ভারত – পঞ্চম অধ্যায়) মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Geography Bharater Krishi Question and Answer :
- কৃষিকাজ ( Agriculture ) কাকে বলে ?
Ans: যখন স্থায়ীভাবে বসবাসকারী মানুষ নিজেদের চাহিদা মেটানোর জন্য উদ্ভিদ ও প্রাণীজ দ্রব্য উৎপাদন করে , তাকে কৃষিকাজ বলে ।
- ফসল রোপণের সময় অনুসারে ভারতে উৎপন্ন ফসলগুলির শ্রেণিবিভাগ করো ।
Ans: ফসল রোপণের সময় অনুসারে বিভিন্ন ঋতু হিসেবে ভারতের উৎপন্ন ফসলগুলিকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয় , যেমন ( ১ ) রবি ফসল এবং ( ২ ) খরিফ ফসল ।
- রবি শস্য ও খরিফ শস্য বলতে কী বোঝায় ?
Ans: রবি শস্য : এককথায় রবিশস্যের অর্থ হল । ‘ শীতকালীন ফসল ‘ । প্রধানত জলসেচের ওপর নির্ভর করে শীতকালে যেসব ফসলের চাষ করা হয় সেইসব ফসলকে রবি ফসল বলে । গম , যব , আলু , বিভিন্ন রকমের তৈলবীজ ও ডাল রবি ফসলের উদাহরণ ।
খরিফ শস্য : এককথায় খরিফ ফসলের অর্থ হল । ‘ বর্ষাকালীন ফসল ‘ । বর্ষাকালে বৃষ্টির জলের ওপর নির্ভর করে । যেসব ফসলের চাষ করা হয় , সেইসব ফসলকে খরিফ শস্য বলে । ধান , পাট , ভুট্টা , আখ , জোয়ার , বাজরা , কার্পাস প্রভৃতি খারিফ ফসলের উদাহরণ ।
- খাদ্যফসল বলতে কী বোঝ ?
Ans: খাদ্যের চাহিদা মেটানোর জন্য যেসকল ফসলের চাষ করা হয় , সেই ধরনের ফসলকে খাদ্যফসল বলে । যেমন- ধান , গম , মিলেট ।
- তন্তুজাতীয় ফসল ( Fibre Crop ) কাকে বলে ?
Ans: যে ফসল থেকে তত্ত্ব বা সুতো তৈরি হয় তাকে তন্তুজাতীয় ( Fibre Crop ) বলে । এইপ্রকার গাছ থেকে একবারই মাত্র ফসল পাওয়া যায় ।
উদাহরণ তুলো , পাট , শন ( Hemp ) ও মেস্তা ( Mesta ) ।
জেনে রাখো : কার্পাস গাছের গুটিফল ফেটে তুলো উৎপন্ন হয় বলে একে বীজ তন্তু ফসল ( Seed or Bool Fibre ) বলে । অন্য দিকে পাট , শন , মেস্তা গাছের বাকল বা ছাল থেকে তন্তু পাওয়া যায় বলে একে বাকল জাতীয় তন্তু ফসল ( Bast Fibre ( Crops ) বলে ।
- উদাহরণসহ অর্থকরী ফসলের ( Cash Crops ) সংজ্ঞা দাও ।
অথবা , ‘ অর্থকরী ফসল ‘ বলতে কী বোঝ ?
Ans: প্রধানত অর্থ উপার্জনের জন্য বা বাজারে বিক্রির জন্য যেসব ফসল চাষ বা উৎপাদন করা হয় সেইসব ফসলকে অর্থকরী ফসল বলে ।
উদাহরণ : ভারতে আখ , পাট , কার্পাস তুলা , ডাল , তামাক প্রভৃতি । অবশ্য খাদ্যশস্য বা বাগিচা ফসল বিক্রি করেও অর্থাগম হয় ।
- বাগিচা ফসল ( Plantation Crop ) কাকে বলে ?
Ans: অনুকুল ভৌগোলিক সুবিধাযুক্ত কোনো বৃহদায়তন খামারে সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বিদেশি মূলধনের সহায়তায় যেসব ফসলের চাষ শুরু হয় , তাদের বাগিচা ফসল বলে ।
যেমন :- চা , কফি । ভারতে প্রধান বাগিচা ফসল কী কী ? উত্তর : ভারতের প্রধান বাগিচা ফসল- ( i ) চা , ( ii ) কফি , ( iii ) তামাক , ( iv ) রবার , ( v ) বিভিন্ন মশলা , ( vi ) সিঙ্কোনা ।
- বাণিজ্যিক ফসল ( Commercial Crops ) কাকে বলে ?
Ans: প্রধানত কৃষিভিত্তিক বাণিজ্য বা রপ্তানির জন্য যেসব ফসল উৎপাদন করা হয় , সেইসব ফসলকে বাণিজ্য ফসল বলে । অবশ্য দেশের মধ্যেও এইসব ফসল ব্যবহৃত হতে পারে । উদাহরণ : ভারতে চা , কফি , কাজুবাদাম প্রভৃতি হল বাণিজ্যিক ফসল ।
- তৈলবীজ ( Oil Seed ) কী ?
Ans: তৈলবীজ হল এক বিশেষ ধরনের শস্যের বীজ যা থেকে তেল পাওয়া যায় । যেমন – সরিষা , সয়াবিন , নারকেল , তিসি ইত্যাদি ।
- তৈলবীজ কত প্রকার ও কী কী ?
Ans: তৈলবীজ প্রধানত দুই প্রকারের হয় । যথা— ( ১ ) সরিষা , সূর্যমুখী , সয়াবিন , নারকেল , তিল , মহুয়া ইত্যাদি থেকে যে তেল পাওয়া যায় , তা হল খাওয়ার যোগ্য তৈলবীজ ( Edible Oilseeds ) । তাই তাকে বলে খাওয়ার ভোজ্য তৈলবীজ । এবং ( ২ ) অন্যদিকে রেড়ি , তিসি , নিম , করা ইত্যাদি থেকে যে – তেল পাওয়া যায় , তা সাধারণত খাওয়ার অযোগ্য , তাই তাকে বলে । খাওয়ার অভোজ্য তৈলবীজ ( Non Edible Oilseeds ) ।
- ভারতে প্রধানত কোন্ কোন্ ধান উৎপন্ন হয় ?
Ans: ভারতে সাধারণত তিন শ্রেণির ধান উৎপন্ন হয় । ( i ) আমন ধান প্রচুর জলের প্রযোজন হয় বলে বর্ষাকালে বপন করে শীতকালে ফসল কাটা হয় । ( ii ) আউশ ধান — প্রাক্ মৌসুমি বৃষ্টিতে বপন করে মে – জুন মাসে কাটা হয় । ( iii ) বোরো ধান— বসন্তকালের শেষে লাগিয়ে গ্রীষ্মকালে কাটা হয় ।
- ভারতের ধান উৎপাদক প্রথম ৩ টি রাজ্যের নাম লেখো ।
Ans: ভারতের ধান উৎপাদনে প্রথম রাজ্য হল পশ্চিমবঙ্গ , দ্বিতীয় রাজ্য হল অন্ধ্রপ্রদেশ ও তৃতীয় রাজ্য হল উত্তরপ্রদেশ ।
- ভারতে শীতকালে গম চাষ করা হয় কেন ?
Ans: শীতকালে গম চাষ করার কারণ হল : ( i ) গম চাষের প্রথমাবস্থায় গম বীজের অঙ্কুরোদগম ও গমের চারা বৃদ্ধির সময় ১৫-১৬ সেলসিয়াস উত্তাপ এবং গম চাষের দ্বিতীয়াবস্থায় গম পাকার সময় ১৮০–২০ ° সেলসিয়াস উত্তাপ প্রয়োজন । ভারতে এই উত্তাপ কেবলমাত্র শীতকালেই সম্ভবপর হয় বলে ভারতে শীতকালে । গম চাষ করা হয় । ( ii ) এ ছাড়া গম চাষের পক্ষে তুষারপাত ক্ষতিকারক । শীতকালে ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে হিমশীতল আবহাওয়া দেখা গেলেও তুষারপাত হয় না । এইসব অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য ভারতে শীতকালে গম চাষ করা হয় ।
- গমের শ্রেণিবিভাগ করো ।
Ans: গমের শ্রেণিবিভাগ— ( i ) শীতকালীন গম : এই গম শীতকালে চাষ করা হয় । শীতকালে এই গমের চাষ বেশি । ( ii ) বসন্তকালীন গম : যেসব অঞ্চল শীতকালে প্রবল তুষারপাত হয় এবং মাটি বরফাকৃত থাকে , সেইসব অঞ্চলে শীতের শেষে বসন্তকালে এইপ্রকার গচাষ করা হয় ।
- ভারতের প্রধান দুটি গম উৎপাদক রাজ্যের নাম লেখো ।
Ans: ভারতের প্রধান দুটি গম উৎপাদক রাজ্যের নাম হল : ( ১ ) উত্তরপ্রদেশ এবং ( ২ ) পাঞ্জাব ।
- ভারতের প্রধান তিনটি চা উৎপাদনকারী রাজ্যের নাম লেখো ।
Ans: ভারতের তিনটি প্রধান চা উৎপাদনকারী রাজা হল ( i ) অসম ( ii ) পশ্চিমবঙ্গ এবং ( iii ) তামিলনাড়ু ।
- ভারতের চা ও কফি উৎপাদনে প্রথম স্থানাধিকারী রাজ্য দুটির নাম লেখো ।
Ans: ভারতে চা উৎপাদনে প্রথম স্থানাধিকারী রাজ্য : অসম । ভারতে কফি উৎপাদনে প্রথম স্থানাধিকারী রাজ্য : কর্ণটিক ।
- ভারতের চা কোন কোন দেশে রপ্তানি করা হয় ?
Ans: ভারত যেসব দেশে চা রপ্তানি করে সেগুলি হল — ব্রিটেন , রাশিয়া , সুদান , আফগানিস্তান , মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহ , আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ইত্যাদি । ভারত চা রপ্তানিতে পৃথিবীতে চতুর্থ ।
- পাহাড়ের ঢালু জমিতে চা চাষ ভালো হয় কেন ?
Ans: চা গাছের জন্য বেশি বৃষ্টিপাত – এর প্রয়োজন হলেও চা গাছের গোড়ায় জল দাঁড়ানো চা চাষের পক্ষে ক্ষতিকর । তাই অধিক ঢালযুক্ত পাহাড় ও পর্বতের ঢালু জমিতে যেখানে গাছের গোড়ায় জল দাঁড়ায় না , সেখানেই চা চাষ করা হয় ।
- কার্পাস বা তুলোর শ্রেণিবিভাগ করো ।
Ans: আঁশের দৈর্ঘ্য অনুসারে কার্পাসকে দু – ভাগে ভাগ করা যায় । যেমন- ( ১ ) দীর্ঘ আঁশযুক্ত কার্পাস ( ৩ সেমি বা তার চেয়ে বেশি দীর্ঘ ) ( ২ ) মাঝারি আঁশযুক্ত কার্পাস ( ২.৫ সেমি- ২.৯ সেমি ) এবং ( ৩ ) ক্ষুদ্র আঁশযুক্ত কার্পাস ( ২.৫ সেমি এর কম ) । ভারতে প্রধানত ছোটো ও মাঝারি আঁশযুক্ত তুলো উৎপন্ন হয় ।
- সবুজ বিপ্লবের প্রভাব গম ছাড়া আর কোন্ কোন্ ফসলে দেখা গেছে ?
Ans: সবুজ বিপ্লবের প্রভাব গম ( উত্তর – পশ্চিম ভারত ) ছাড়াও , পূর্ব ভারতের ধান উৎপাদনে , দক্ষিণ ভারতের ডাল ও তৈলবীজ উৎপাদনে এবং মধ্য ভারতে জোয়ার , বাজরা ও ভুট্টা উৎপাদনে দেখা গেছে ।
- উচ্চফলনশীল বীজ চাষের বিশেষত্ব কী ?
Ans: উচ্চফলনশীল বীজ হল এমন একপ্রকার বীজ যা থেকে অনেক কম সময়ে অনেক বেশি ফসল উৎপাদিত হয় । এই প্রকার বীজ চাষের জন্য বেশি পরিমাণে জল , বিভিন্ন প্রকার সার ও কাটনাশকের প্রয়োজন হয় ।
- ধাপ চাষ ( Step Cultivation ) কী ?
Ans: পাহাড়ি অঞ্চলে মাটির ক্ষয় রোধে ঢালু জমিতে ধাপ কেটে , বৃষ্টির জলকে জমিতে ব্যবহার করে যে কৃষিকাজ করা হয় , তাকে ধাপ চাষ বলে । যেমন — ভারতের পাহাড়ি অঞ্চলে ধাপকেটে ধানচাষ করা হয় ।
- ঝুম চাষ ( Shifting Cultivation ) কাকে বলে ?
Ans: ভারতের উত্তর – পূর্ব পার্বত্য অঞ্চলের অধিবাসী । সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ বন কেটে ও পুড়িয়ে জমি তৈরি করে চাষ করে । কিছু বছর বাদে মাটির উর্বরতা কমে গেলে ওই জমি পরিত্যাগ করে অন্য একটি জমি তৈরি করে চাষ করে । একে ঝুম চাষ বলে । এটি একপ্রকার স্থানান্তর কৃষির উদাহরণ ।
- চা , বাগিচা কৃষির অন্তর্ভুক্ত কেন ?
Ans: ভারতে চা চাষ ইংরেজদের মাধ্যমে শুরু হয় । এই চা বিদেশে রপ্তানি করে বাণিজ্যিকভাবে বাগিচা নির্মাণ করে উন্নতমানের ও বেশি পরিমাণে চা চাষ শুরু হয় । তাই চাকে বাগিচা ফসল বলে ।
- জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি ( Subsistence farming ) কাকে বলে ?
Ans: কেবলমাত্র জীবনধারণের জন্য কৃষিজ ফসল উৎপাদন করাকে জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি বলে । যেমন — ভারতে ধান চাষ হলে জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি ।
ব্যাখ্যামূলক উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর | ভারতের কৃষি (ভারত – পঞ্চম অধ্যায়) মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Geography Bharater Krishi Question and Answer :
- বাগিচা ফসল ( Garden Crops ) কী ?
Ans: অনুকূল ভৌগোলিক সুবিধাযুক্ত কোনো বৃহদায়তন খামারে সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে যেসব ফসলের চাষ বা উৎপাদন করা হয় , তাদের বাগিচা ফসল বলে । ( ১ ) প্রাথমিক পর্যায়ে ঔপনিবেশিকদের মাধ্যমে মূলধন বিনিয়োগ , ( ২ ) দেশীয় শ্রমিকের ব্যবহার , ( ৩ ) বাণিজ্যিকভাবে রপ্তানির জন্য ফসল উৎপাদন , ( ৪ ) বৃহদায়তন খামার , ( ৫ ) বিপণনের সুব্যবস্থা , ( ৬ ) আধুনিক প্রযুক্তি ও কৃষিযন্ত্রের ব্যবহার । উদাহরণ : ভারতের উল্লেখযোগ্য বাগিচা ফসলগুলি হল : ( ১ ) চা , ( ২ ) কফি , ( ৩ ) রবার , বিভিন্ন ধরনের মশলা প্রভৃতি ।
- শস্যাবর্তন কৃষি ( Crop Rotation ) কী ?
Ans: যে বহুফসলি কষিব্যবস্থায় বিশেষ কোনো অঞ্চলে জলবায়ুর পরিবর্তন , বৃষ্টিপাত , তাপমাত্রা , জমির উর্বরতা , জলসেচ , সার দেওয়া , ফসলের চাহিদা প্রভৃতি বিষয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একই জমিতে বছরের এক এক সময়ে এক এক রকম ফসল উৎপাদন করা হয় তাকে শস্যাবর্তন কৃষি বলে । শস্যাবর্তন কৃষি উৎপাদন পদ্ধতিতে জমি চাষ করা হলে , বাজারের চাহিদা অনুসারে ফসল উৎপাদন করা হয় বলে ন্যায্য দাম পেয়ে একদিকে কৃষকরা উপকৃত হয় , অন্যদিকে জমির উর্বরতাও বজায় থাকে ।
ভারতীয় কৃষিকাজে শস্যাবর্তন করার উদ্দেশ্য : ( i ) সঠিকভাবে জমির উর্বরতার মান বজায় রাখা । ( ii ) শস্য উৎপাদনে বৈচিত্র্য আনা । ( iii ) জমিতে বিভিন্ন ধরনের শস্যের চাষ পর্যায়ক্রমিকভাবে হয় বলে রোগ ও পোকার আক্রমণ অনেকটাই কম । ( iv ) শস্যাবর্তন পদ্ধতিতে বছরে একের বেশি শস্যের চাষ হয় । বলে চাষিদের লাভের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ।
- ভারতীয় কৃষির সমস্যা ও তার সমাধান সম্পর্কে লেখো ।
Ans: ভারতীয় কৃষির সমস্যা : যদিও ভারত কয়েকটি ফসল উৎপাদনে অন্যতম শীর্ষস্থানের অধিকারী এবং খাদ্য উৎপাদনে মোটামুটি স্বয়ম্ভর তবু এদেশে কৃষি বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন । ( i ) মাথাপিছু জমি কম এবং জোতের আয়তন ক্ষুদ্র : চাষিদের মাথা পিছু জমি উন্নত দেশগুলির তুলনায় খুবই কম । আবার জমিগুলি আয়তনে এতো ছোটো এবং ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে । যে তাতে উন্নত কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহার সম্ভব নয় । ( ii ) ভূমিসংস্কার : কয়েকটি রাজ্য বাদ দিলে এখনও পুরোপুরি জমিদারি প্রথা বিলোপ হয়নি । ( iii ) কৃষি মৌসুমি নির্ভর এখানে ২/৩ ভাগ কৃষিজমি খামখেয়ালি মৌসুমি বায়ু নির্ভর । ওই জমিগুলিতে বছরে একবার ফসল ফলে এবং তাও অনিশ্চিত । ( iv ) জলসেচ সমস্যা মাত্র ১/৩ ভাগ জমি সেচের আওতাভুক্ত বলে বহুফসলি জমি কম । ( v ) আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহার : উন্নত বীজ , সার , কীটনাশক , কৃষিজ যন্ত্রপাতির ব্যবহার সীমিত । সব ফসলে উন্নত বীজ ব্যবহার হয় না । সবুজ বিপ্লবের প্রভাব ভারতের সকল স্থানে পড়েনি , ফলে উৎপাদনশীলতা কম । ( vi ) খাদ্যশস্যের প্রাধান্য বেশিরভাগ কৃষিজমি খাদ্যফসল উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় । অধিক লাভজনক হর্টিকালচার ( ফল , ফুল , শাকসবজি ) চাষ এখানে কম ।
সমাধান : স্বাধীনতার পর থেকে কৃষির উন্নতির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে । ( i ) উৎপাদনশীল বীজ : স্বাধীনতার পর থেকে উচ্চফলনশীল বীজের ব্যবহার বেড়েছে প্রায় ২০ গুণ । ( ii ) জলসেচ দ্রুতহারে জলসেচ ব্যবস্থার প্রসার ঘটিয়ে জমিকে বহুফসলি জমিতে ব্যবহার করা হয়েছে । ( iii ) সার , কীটনাশক , যন্ত্রপাতির ব্যবহার বৃদ্ধি : সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে এগুলির ব্যবহার বাড়ালে একদিকে যেমন ফসল উৎপাদন বাড়বে তেমনি পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে কম । ( iv ) কৃষকদের ঋণদান : কৃষির উন্নতির জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণদান প্রয়োজন । এই কারণে ভারত সরকার কৃষিতে ঋণদানের জন্য অসংখ্য গ্রামীণ ব্যাংক ও কৃষিব্যাংক স্থাপন করেছে । প্রায় ১০ কোটির ওপর মানুষকে দেওয়া হয়েছে কিষান ক্রেডিট কার্ড । ( v ) সবুজ বিপ্লবের প্রসার উত্তর – পশ্চিম ভারতে শুধু গম উৎপাদনে নয় সারাভারত জুড়ে সব ফসলেই সবুজ বিপ্লবের প্রসার ঘটানো হচ্ছে । ( vi ) ১০০ দিনের প্রকল্প এই প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ পরিকাঠামোর উন্নতি ঘটিয়ে পরোক্ষভাবে কৃষির উন্নতি ঘটানো হচ্ছে ।
- মিলেট জাতীয় শস্য বলতে কী বোঝ ?
Ans: মিলেট : ভূমিকা— শুষ্ক ও অনুর্বর অঞ্চলের ফসল হল মিলেট । কার্বোহাইড্রেট , প্রোটিন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ হলেও স্বাদে নিম্নমানের বলে এর জনপ্রিয়তা কম । তবে আদিবাসী অঞ্চলের প্রধান খাদ্য হল মিলেট । মিলেট কী : জোয়ার , বাজরা , রাগি কোরা কোডন , কোটকি , হারাকা , রাজগিরা প্রভৃতি নিম্নশ্রেণির ফসলকে একসাথে মিলেট বলে । এদের মধ্যে জোয়ার , বাজরা ও রাগি হল প্রধান । মিলেট উৎপাদনের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ : ভারতে শুষ্ক পরিবেশে খরিফ ও রবিফসল — উভয় হিসেবেই মিলেট চাষ হয় ।
( ক ) প্রাকৃতিক পরিবেশ ( 1 ) জলবায়ু : ( i ) উষ্ণতা : মোটা মুটি ২০০-৩০ ° সে . উন্নতায় মিলেট চাষ হয় । উন্নতা ১৫ ° সে . -এর নীচে নামলে উৎপাদন ভালো হয় না । ( ii ) বৃষ্টিপাত : বিভিন্ন মিলেট উৎপাদনে ২০-৭৫ সেমি বৃষ্টির প্রয়োজন হয় । খুব বেশি বৃষ্টি এবং দীর্ঘ দিন অনাবৃষ্টি উভয়ই মিলেট চাষের পক্ষে ক্ষতিকর ।
( 2 ) মাটি : ভারী ও হালকা পলিমাটি , লোহিত মাটি , রেগুর , বেলেমাটি — প্রায় সব মাটিতেই মিলেট চাষ হয়ে থাকে ।
( 3 ) ভূমি : সমভূমি , মালভূমি , পাহড়ের মৃদুঢালু জমিতে মিলেট চাষ করা হয় ।
( খ ) অর্থনৈতিক পরিকাঠামো : ভালো সেচ ব্যবস্থা মিলেট – এর ফলন বাড়ায় । উন্নত বীজ , সার , কীটনাশকের ব্যবহারের কারণে মিলিটের উৎপাদনশীলতা বাড়ছে ।
- ভারতকে কৃষিভিত্তিক দেশ বলা হয় কেন ?
Ans: ভারতকে কৃষিভিত্তিক দেশ বলা হয় । কারণ— ( ১ ) দেশের প্রায় ৬৫ % মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত । ( ২ ) জাতীয় আয়ের প্রায় ১৬.৬ % কৃষি ও কৃষি সংক্রান্ত সহযোগী ক্রিয়াকলাপ থেকে আসে । ( ৩ ) কৃষিকাজ ভারতের অর্থনীতিকে নানাভাবে প্রভাবিত করে । ( ৪ ) কৃষিজ দ্রব্য উৎপাদনের পরিমাণ ও প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে ভারতের অর্থনৈতিক পরিকল্পনার রূপরেখা নির্ধারণ করা হয় ।
- ভারতের কৃষিকাজে জলসেচ কেন করা হয় ?
Ans: ভারতের কৃষিকাজের অনেকাংশেই মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভরশীল । তবুও কৃষিকাজে জলসেচের সাহায্য নেওয়া হয় । কারণ— PIN ) EPU অনিয়মিত মৌসুমি বৃষ্টিপাতের জন্য জলসেচের সাহায্য নেওয়া হয় । ( ২ ) শীতকালে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ থাকায় , শীতকালীন রবিশস্য চাষের জন্য ভারতে জলসেচের প্রয়োজন হয় । ( ৩ ) মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ফলে ভারতে প্রায় ৮০ % বৃষ্টিপাত হলেও ভারতের সব জায়গায় সমান বৃষ্টিপাত হয় না । ফলে যেখানে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম সেখানে জলসেচের প্রয়োজন হয় । ( ৪ ) উচ্চফলনশীল শস্য চাষে প্রচুর জলের প্রয়োজন হয় , এই জলসেচের সাহায্য নেওয়া হয় ।
- দক্ষিণ ভারতে কফি উৎপাদন বেশি হয় কেন ?
Ans: কফি উষ্ণ – আৰ্দ্ৰ ক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলের বাগিচা ও ফসল । দক্ষিণ ভারতে কফি বাগিচাগুলি গড়ে ওঠার কারণগুলি হল— ( ১ ) এই অঞ্চলে সারাবছরই উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু দেখা যায় , ( ২ ) এই অঞ্চলে উন্নতা ( গড়ে ২০০–৩০ ° সে . ) ও বৃষ্টিপাত ( গড়ে ১৫০–২৫০ সেমি ) কফি চাষের পক্ষে অনুকূল অবস্থার সৃষ্টি করে । ( ৩ ) এই অঞ্চলের লৌহমিশ্রিত উর্বর দোআঁশ মাটি এবং ( ৪ ) অনুচ্চ পাহাড়ের ঢালু জমিতে সহজেই কফি বাগিচা তৈরি করা যায় । এইসকল কারণেই দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক , কেরল , তামিলনাড়ু , অন্ধ্রপ্রদেশ ইত্যাদি রাজ্যের পার্বত্য অঞ্চলে যথেষ্ট পরিমাণ কফি উৎপন্ন হয় ।
- চা কত প্রকারের ও কী কী ?
Ans: চা – এর প্রক্রিয়াকরণের পদ্ধতি অনুসারে চা – কে প্রধানত চার ভাগে ভাগ করা যায় । যথা- ( ১ ) কালো চা : কালো চা প্রস্তুত করার সময় , চা – এর পাতাগুলি গাছ থেকে তুলে প্রথমে রোদে শুকিয়ে নিয়ে পরে আবার যন্ত্রের সাহায্যে শুকিয়ে কালো করা হয় । ( ২ ) সবুজ চা চা গাছের কচি পাতা ও কুঁড়ি রোদে শুকিয়ে এইপ্রকার সবুজ চা তৈরি করা হয় । ভারতে সবুজ চায়ের প্রচলন কম । ( ৩ ) ওলং চা : এক্ষেত্রে চা গাছের পাতা রোদে শুকিয়ে ও মিশিয়ে বাঁকিয়ে এই চা প্রস্তুত করা হয় । ( ৪ ) ইস্টক চা চা গাছের নিকৃষ্ট পাতা , চা পাতার ডাঁটি , গুঁড়ো চা , ভাতের মাড় , মশলা , মাখন ইত্যাদি একসঙ্গে মিশিয়ে চাপ দিয়ে ছোটো ছোটো আয়তাকার খণ্ডে পরিণত করে এইপ্রকার চা প্রস্তুত করা হয় ।
- কফির শ্রেণিবিভাগ করো ।
Ans: কফি প্রধানত ৪ প্রকারের হয় । যথা ( ১ ) আরবীয় কফি : এটি সর্বোৎকৃষ্ট কফি , এর আদি বাসভূমি হল আরব উপদ্বীপের ইয়েমেন । একে ‘ মোকা ‘ কফিও বলে । ( ২ ) রোবাস্টা কফি : নিকৃষ্ট মানের এই কফির আদি বাসভূমি হল পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকা । ভারতে এই কফির উৎপাদন বেশি হয় । ( ৩ ) লাইব্রেরীয় কফি : এটি ইনস্ট্যান্ট কফি যা লাইবেরিয়ায় চাষ করা হয় । ভারতে এই কফি চাষ করা হয় না । এবং ( 8 ) ব্লু মাউন্টেন কফি : এই ধরনের কফি প্রধানত জামাইকায় চাষ হয় । ভারতে এই কফি চাষ হয় না ।
- ব্যবহারের প্রকৃতি অনুসারে ভারতে উৎপন্ন ফসলের শ্রেণিবিভাগ করো ।
Ans: ভারত একটি কৃষিপ্রধান দেশ । বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশে এখানে নানারকম ফসল উৎপন্ন হয় । ব্যবহারের প্রকৃতি অনুসারে ভারতে উৎপন্ন ফসলের শ্রেণিবিভাগগুলি হল— ( ১ ) খাদ্যশস্য : ধান , গম , যব , ভুট্টা , জোয়ার , বাজরা , রাগি প্রভৃতি খাদ্যশস্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় । ( ২ ) অন্যান্য খাদ্য ফসল : বিভিন্ন রকমের ডাল , মশলা , আখ , ফল প্রভৃতিও খাদ্যফসলের মধ্যে পড়ে । ( ৩ ) পানীয় ও ভেষজ শস্য : চা , কফি , তামাক , সিঙ্কোনা প্রভৃতি এই শ্রেণির পর্যায়ভুক্ত । ( ৪ ) তৈলবীজ : সরষে , তিসি , তিল , রেড়ি , সূর্যমুখী , চিনেবাদাম প্রভৃতি তৈলবীজ থেকে তেল উৎপন্ন হয় । ( ৫ ) তন্তুজ শস্য : পাট , মেস্তা , শণ , কার্পাস থেকে আঁশ বা তন্তু পাওয়া যায় বলে এদের তন্তুজাতীয় শস্য বলে । মনে রাখতে হবে যে , বিভিন্ন ফসলের মধ্যে পাট , কার্পাস ও আথকে অর্থকরী ফসল চা , কফি , রবার , তামাক প্রভৃতি বাগিচা ভিত্তিক ফসলকে বাগিচা ফসল এবং সমস্ত অর্থকরী ও বাগিচা ফসলকে বাণিজ্যিক ফসল বলা হয় ।
- ঋতু অনুসারে ভারতে উৎপাদিত ফসলের শ্রেণিবিভাগ করো ।
Ans: ঋতু অনুসারে ফসলের শ্রেণিবিভাগ : ( ক ) খরিফ শস্য ( Kharif Crops ) : এককথায় খরিফ শস্যের অর্থ হল ‘ বর্ষাকালীন ফসল ‘ । বর্ষাকালে বৃষ্টির জলের ওপর নির্ভর করে যেসব ফসলের চাষ হয় , তাদেরকে খরিফ শস্য বলে । | যেমন — আমন ধান , পাট , তুলো , ভুট্টা , জোয়ার , বাজরা ইত্যাদি ।
( খ ) রবি শস্য ( Rabi Crops ) : এককথায় রবিশস্য হল ‘ শীতকালীন ফসল ‘ । প্রধানত জলসেচের ওপর নির্ভর করে শীতকালে যেসব ফসলের চাষ হয় , সেইসব ফসলকে রবি শস্য বলে । যেমন — গম , যব , আলু , বিভিন্ন প্রকার তৈলবীজ ও ডাল ইত্যাদি ।
( গ ) জায়িদ শস্য ( Zayid Crops ) : শীতের শেষে গ্রীষ্মকালে যেসব ফসলের চাষ করা হয় , এবং বর্ষার আগে যেসব ফসল তোলা হয় , তাদের জায়িদ শস্য বলে । যেমন — আউশ ধান , বাদাম , পাট , শাকসবজি ইত্যাদি ।
- দার্জিলিং চা চাষে উন্নত কেন ?
Ans: দার্জিলিং চা উৎপাদনে ভারতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে । দার্জিলিং – এর পার্বত্য অঞ্চল ও তার সংলগ্ন তরাই ও ডুয়ার্স অঞ্চলে চা চাষ হয় । দার্জিলিং – এর চা স্বাদে – গন্ধে ও গুণমানে পৃথিবীতে সর্বশ্রেষ্ঠ । এখানে চা উৎপাদনের কারণগুলি হল –
( ১ ) পার্বত্যময় ভূপ্রকৃতি : দার্জিলিং এর ভূপ্রকৃতি পার্বত্যময় । অসমতল ভূপ্রকৃতি , খাড়া ঢাল চা চাষের বিশেষ উপযোগী । দার্জিলিং এ অধিকাংশ চা বাগিচাগুলি ১০০০ – ২০০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত ।
( ২ ) জলবায়ু অঞ্চলের গড় উন্নতা ১০ ° – ২০ ° সেঃ । বার্ষিক গড় বৃষ্টি ১৫০-২০০ সেমি । এই অঞ্চলে তুষারপাত ও তুহিন খুব www একটা ঘটে না । মাঝারি থেকে অধিক আর্দ্রতা , মৃদু কুয়াশা ও স্বল্প উন্নতা এখানে উন্নতমানের চা চাষে সহায়তা করেছে ।
( ৩ ) মৃত্তিকা : দার্জিলিং – এ মৃত্তিকা অম্লধর্মী পডসল শ্রেণির । এই মাটি লৌহ ও ম্যাঙ্গানিজ সমৃদ্ধ যা চাষের অত্যন্ত উপযোগী ।
( ৪ ) প্রাথমিক অবস্থায় ইংরেজদের মাধ্যমে মূলধন বিনিয়োগ ; ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি এখানে চা চাষের উন্নতির জন্য প্রাথমিক অবস্থায় ইংরেজ বণিক সম্প্রদায় প্রচুর মূলধন বিনিয়োগ করে । এ ছাড়া ,
( ৫ ) উন্নত পরিকাঠামো ,
( ৬ ) নিকটে কলকাতা বন্দর দিয়ে । চা রপ্তানির সুবিধা — এই অঞ্চলে চা চাষের উন্নতিতে সহায়তা করেছে ।
পার্থক্য নিরূপণ করো | ভারতের কৃষি (ভারত – পঞ্চম অধ্যায়) মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Geography Bharater Krishi Question and Answer :
- তন্তু ও বাগিচা শস্য এর পার্থক্য লেখো ।
বিষয় | বাগিচা ফসল | তন্তু ফসল |
ভিত্তি | বিদেশি মূলধন ও দেশীয় শ্রমিকের সহায়তায় গড়ে ওঠা এটি রপ্তানি নির্ভর বাণিজ্যিক কৃষি । | একপ্রকার অর্থকরী ফসল যা – থেকে তন্তু সংগ্রহ হয় এবং চাষি বাজারে বিক্রি করে । |
উদাহরণ | চা, কফি, রাবার । | একপ্রকার অর্থকরী ফসল যা – থেকে তন্তু সংগ্রহ হয় এবং চাষি বাজারে বিক্রি করে । |
পদ্ধতি | একবার বীজ বপনের বেশ কিছুদিন ফসল সংগ্রহ হয় এবং ওই গাছ থেকে বহু বছর ফসল সংগ্রহ করা যায় । | পাট, কার্পাস, শন, মেস্তা । |
বৈশিষ্ট্য | বিভিন্ন কোম্পানি বিশাল বাগানে বাণিজ্যিক ফসল চাষ করে । | চাষি নিজেই নিজের ফসল উৎপাদন করে । |
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর | ভারতের কৃষি (ভারত – পঞ্চম অধ্যায়) মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Geography Bharater Krishi Question and Answer :
1. ভারতের কৃষির প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি সম্পর্কে লেখো ।
Ans: ভারতের কৃষির প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য :
( ১ ) জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি ( Subsistence Agriculture ) ভারতের কৃষির অধিকাংশই কৃষক তার নিজের ও পরিবারের খাদ্যের প্রয়োজন মেটানোর জন্য ব্যবহার করে । তাই এই কৃষিকে জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি বলা হয় ।
( ২ ) জনসংখ্যার চাপ ( Pressure of Population ) : ভারতের জনসংখ্যা ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে । ফলে মানুষের খাদ্যের চাহিদাও ক্রমশ বেড়ে চলেছে । এই চাহিদার অনুপাতে সঠিক জোগান দেওয়ার জন্য ভারতে কৃষিকাজের পরিমাণও বেড়ে চলেছে ।
( ৩ ) কৃষিতে পশুশক্তির প্রাধান্য ( Predominance of animal force ) : ভারতের অধিকাংশ দরিদ্র কৃষকই চাষের জন্য দামি যন্ত্রপাতি ব্যবহার না – করে আদিম পদ্ধতিতে পশুশক্তির দ্বারাই চাষবাস করে থাকে । তাই চাষাবাদের সাথে ক্ষুদ্রাকারে পশুপালনও করা হয়ে থাকে ।
( ৪ ) মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভরতা ( Dependence on Monsoon Rainfall ) : ভারত মৌসুমি জলবায়ুর দেশ । তাই ভারতের অধিকাংশ কৃষিকাজই প্রধানত মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভর করে থাকে । বেশি বৃষ্টি বা কম বৃষ্টি হলে বন্যা বা খরার জন্য চাষবাস ভালো হয় না । তাই পরিমিত পরিমাণে বৃষ্টিপাত একান্তই প্রয়োজন ।
( ৫ ) ক্ষুদ্রাকৃতি জমিজোত ( Small size of land Holding ) : ভারতের কৃষিজমিগুলি পরিসরে ছোটো ছোটো হয়ে থাকে । এখানে ক্ষুদ্র , প্রান্তিক ও ভূমিহীন বা ভাগচাষির প্রাধান্য বেশি ।
( ৬ ) কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার ( Un controlled uses of pesticides and Chemical fertilizers ) : ভারতে কৃষিজ দ্রব্যসামগ্রীর চাহিদা এতই বেশি যে , সেই পরিমাণ খাদ্যের জোগান দেওয়ার জন্য চাষিরা বিভিন্ন পদ্ধতিতে নানান কীটনাশক ও রাসায়নিক সার অনিয়ন্ত্রিতভাবে জমিতে প্রয়োগ করে ।
( ৭ ) খাদ্যশস্যের প্রাধান্য ( Predominance of Food Crops ) : ভারতের কৃষিতে অন্যান্য শস্যের তুলনায় খাদ্যশস্যের প্রাধান্য বেশি । যেমন — ধান , গম , মিলটে , ইত্যাদি ।
( ৮ ) পশুখাদ্যের অভাব ( Insignificant place to given fodder crops ) : ভারতের কৃষির ক্ষেত্রে পশুখাদ্যের অভাব এক উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ।
( ৯ ) বহু শস্যের উৎপাদন ( Variety of food Crops ) : ভারতের কৃষি ব্যবস্থায় বহু শস্যের উৎপাদন লক্ষ করা যায় ।
2. ধান উৎপাদনের ( Paddy Cultivation ) অনুকূল পরিবেশ কী কী ?
অথবা , ধান চাষের উপযোগী জলবায়ু , ভূপ্রকৃতি ও মৃত্তিকা সম্বন্ধে আলোচনা করো ।
অথবা , গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলে ধানচাষের অনুকূল প্রাকৃতিক অবস্থাগুলি আলোচনা করো ।
Ans: ধান উৎপাদনের অনুকূল পরিবেশগুলি হল :
[ ক ] প্রাকৃতিক পরিবেশ : ( ১ ) জলবায়ু ভারতের ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু ধান চাষের পক্ষে উপযুক্ত । ( i ) প্রচুর বৃষ্টিপাত ধান চাষের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত প্রয়োজন । ১০০ থেকে ২০০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত ধান চাষের পক্ষে আদর্শ । ধান গাছের গোড়ায় জমে থাকা জল ধান । গাছের বৃদ্ধি ঘটাতে সহায়তা করে । কিন্তু ধান কাটার সময় বৃষ্টি হলে ধানের অত্যন্ত ক্ষতি হয় । এই সময় শুকনো জলবায়ুর প্রয়োজন । ( ii ) উন্নতা ধান চাষের জন্য পর্যাপ্ত সূর্যের উত্তাপ ( ১৬০–৩০ ° সেলসিয়াস ) প্রয়োজন । ( iii ) আর্দ্রতা : অধিক আর্দ্রতা ( ১৮ % ) ধান চাষের পক্ষে সহায়ক । ( ২ ) ভূপ্রকৃতি : গাছের গোড়ায় জমে থাকা জল ধান গাছের বৃদ্ধি ঘটাতে সাহায্য করে বলে নদী অববাহিকা বা বদ্বীপ অঞ্চলের নীচু সমতলজমি ( যাতে জল দাঁড়িয়ে থাকতে পারে ) ধান চাষের পক্ষে একেবারে আদর্শ । এ ছাড়া পাহাড়ের গায়ে ধাপ কেটে সমতল ভূমি তৈরি করেও ধান চাষ করা হয় । ( ৩ ) মুক্তিকা : নদী উপত্যকা , বদ্বীপ এবং উপকূল অঞ্চলের নিম্ন সমভূমির পলিময় উর্বর দোআঁশ ও এঁটেল মাটি ধান চাষের পক্ষে আদর্শ । মাটিতে কাদার পরিমাণ কিছু বেশি থাকলে মাটির জলধারণ ক্ষমতা বাড়ে , যা ধান গাছের গোড়ায় জল জমিয়ে রাখতে সাহায্য করে ।
[ খ ] অপ্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ ( ১ ) জলসেচ প্রয়োজনীয় জলের অভাব ঘটলে ধানের জমিতে জলসেচ দিতে হয় । ( ২ ) সার প্রয়োগ : উচ্চ ফলনশীল ধান চাষে গোবর , কম্পোস্ট , ইউরিয়া , সুপার ফসফেট , পটাশ প্রভৃতি সারের প্রয়োজন হয় । ( ৩ ) কীটনাশক প্রয়োগ পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে ধানকে রক্ষা করার জন্য কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় । ( ৪ ) আগাছা দমন : ধানের জমিতে আগাছা জন্মালে তা তুলে ফেলতে হয় । ( ৫ ) সুলভ শ্রমিক : ধানখেতে লাঙল দেওয়া , বীজ ছড়ানো , রোপণ এবং ফসল কাটার বিভিন্ন পর্যায়ে প্রচুর পরিশ্রমী ও দক্ষ সুলভ শ্রমিক লাগে । ( ৬ ) মূলধন ও আধুনিক কৃষিযন্ত্রের ব্যবহার : বর্তমানে একই জমিতে একাধিকবার ও বেশি পরিমাণে ধান উৎপাদন করার জন্য বেশি মূলধন বিনিয়োগ করে আধুনিক কৃষিযন্ত্রপাতি ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় ।
3. ভারতে ধান উৎপাদনে বিভিন্ন রাজ্যের ভূমিকা চিত্রসহ আলোচনা করো ।
Ans: ভারতে উত্তরের সমভূমি ও উপকূল সমভূমিতেই সবচেয়ে বেশি ধান চাষ হয় । ভারতের ধান উৎপাদক রাজ্যসমূহ :
( ১ ) পশ্চিমবঙ্গ : ধান উৎপাদনে পশ্চিমবঙ্গ ভারতে প্রথম স্থান অধিকার করে ( মোট উৎপাদনের ১৭ % ) । বর্ধমান জেলায় সবচেয়ে বেশি ধান চাষ হয় বলে একে ‘ পশ্চিমবঙ্গের ধানের ভাণ্ডার বলে । এ ছাড়াও হাওড়া , হুগলি , উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা , মুরশিদাবাদ , মালদা , মেদিনীপুর , বাঁকুড়া , বীরভূম , পশ্চিম দিনাজপুর ও কোচবিহার জেলার অধিকাংশ জায়গায় ধান উৎপন্ন হয় । ( ১৪.৯৬ মিলিয়ন টন , ২০১২-২০১৩ খ্রিস্টাব্দে ) ।
( ২ ) উত্তরপ্রদেশ : ধান উৎপাদনে দ্বিতীয় স্থান অধিকারী এই রাজ্যের বারাণসী , গোরক্ষপুর , ফৈজাবাদ , কানপুর , এলাহাবাদ , সিতাপুর , খেরি প্রভৃতি জেলাতে ধান উৎপন্ন হয় ( ১৪.৪১ মিলিয়ন টন , ২০১২-২০১৩ খ্রিস্টাব্দে ) ।
( ৩ ) পাঞ্জাব : ধান উৎপাদনে পাঞ্জাবের স্থান ভারতে তৃতীয় । এই রাজ্যের ধান উৎপাদক অঞ্চলগুলি হল— জলন্ধর , অমৃতসর , গুরুদাসপুর , পাতিয়ালা , ভাতিন্ডা , লুধিয়ানা , ফিরোজপুর ইত্যাদি । ( ১১.৩৭ মিলিয়ন টন , ২০১২-২০১৩ খ্রিস্টাব্দে ) । ভারতের অন্যান্য ধান উৎপাদক অঞ্চলগুলি হল
( ৪ ) অন্ধ্রপ্রদেশের : গোদাবরী – কৃষ্ণা বদ্বীপ অঞ্চল , ( ৫ ) উত্তর প্রদেশের দক্ষিণাংশ , ( ৬ ) উত্তরাখণ্ড রাজ্যের দেরাদুন অঞ্চল , ( ৭ ) বিহারের উত্তরাংশের বিস্তীর্ণ সমভূমি অঞ্চল , এ ছাড়া ( ৮ ) ঝাড়খণ্ড , ( ৯ ) সমগ্র অসম রাজ্য , ( ১০ ) তামিলনাড়ু , ( ১১ ) কর্ণাটক , ( ১২ ) হরিয়ানা , ( ১৩ ) পাঞ্জাব ইত্যাদি রাজ্যে কম বেশি ধান চাষ হয়ে থাকে । ধান উৎপাদন : বর্তমানে ধান উৎপাদনে ভারত পৃথিবীতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে ( চিনের পরে ) । ২০১৩-২০১৪ খ্রিস্টাব্দে ভারতে ধান উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১০৪.৯২ মিলিয়ন টন তবে হেক্টরপ্রতি ধান উৎপাদন ভারতে বেশ কম , ( ২৩৭২ কিগ্রা / হেক্টর ) । হেক্টর প্রতি ধান উৎপাদনে ভারতে পাঞ্জাব প্রথম ।
4. গম চাষের ( Wheat Cultivation ) অনুকুল পরিবেশগুলি আলোচনা করো ।
Ans: গম উৎপাদনের অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশগুলি হল : ক প্রাকৃতিক পরিবেশ –
( ১ ) জলবায়ু : ( ক ) আর্দ্রতা : ( i ) পরিমাণ মতো আর্দ্রতার ওপর গম বীজের অঙ্কুরোদগমের সংখ্যা নির্ভর করে এই জন্য গম চাষের প্রথম অবস্থায় আর্দ্র জলবায়ুর প্রয়োজন হয় । কারণ যত বেশিসংখ্যক বীজ থেকে অঙ্কুর বের হবে , হেক্টরপ্রতি গম উৎপাদনও ততই বেশি হবে । ( ii ) গম চাষের দ্বিতীয় অবস্থায় ( যখন গাছ থেকে শিষ বের হয় ) উষ্ণ ও শুকনো জলবায়ুর প্রয়োজন , কারণ এই সময় বৃষ্টি হলে গমের শীর্ষ পচে যেতে পারে বা শিষে পোকা লাগতে পারে । ( iii ) গম কেটে নেওয়ার কিছু দিন আগে অর্থাৎ গম চাষের তৃতীয় অবস্থায় , হালকা বৃষ্টিপাত হলে ভালো হয় , কারণ এই বৃষ্টিপাতের ফলে গমের শিষ পুষ্টিলাভ করে । ( iv ) গম উৎপাদনের চতুর্থ পর্যায়ে গম পাকার জন্য যথেষ্ট পরিমাণে সূর্য তাপের প্রয়োজন হয় ।
( খ ) উত্তাপ : গম চাষের প্রথম অবস্থায় ( গম বীজের অঙ্কুরোদগম এবং গম চারার বৃদ্ধির সময় ) ১৫ ° – ১৬ ° সেলসিয়াস উত্তাপ এবং গম চাষের দ্বিতীয়াবস্থায় ( গম পাকার সময় ) ১৮ ° – ২০ ° সেলসিয়াস উত্তাপ প্রয়োজন । অধিক উষ্ণতায় গমচাষের ক্ষতি হয় ।
( গ ) বৃষ্টিপাত : গম চাষের জন্য মাঝারি বৃষ্টিপাত ( ৫০–১০০ সেন্টিমিটার ) প্রয়োজন হয় , এর বেশি বৃষ্টিপাতে গম চারার ক্ষতি হয় । ৫০ সেমির কম বৃষ্টি হলে জলসেচের মাধ্যমে চাষ করা হয় ।
( ঘ ) তুষারপাত : তুষারপাত গমচাষের ক্ষতি করে ফলে তুহিনমুক্ত প্রায় ১১০ দিন প্রয়োজন হয় । ( ২ ) ভূপ্রকৃতি : গাছের গোড়ায় জল জমে থাকলে তা গমচাষের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর হয় বলে অতিরিক্ত জল জমি থেকে বের করে দেওয়ার জন্য ভালো জলনিকাশি ব্যবস্থাযুক্ত প্রায় সমতল বা অল্প ঢালু জমি গমচাষের পক্ষে আদর্শ । ( ৩ ) মৃত্তিকা : নাইট্রোজেন , ফসফেট ও পটাশযুক্ত উর্বর ভারী দোআঁশ মাটি বা হালকা কাদা মাটি গম চাষের পক্ষে আদর্শ । পলিমাটি ও কৃষ্ট্ব মৃত্তিকাতেও গম চাষ ভালো হয় ।
(খ) অপ্রাকৃতিক পরিবেশ : ( ১ ) জলসেচ : বৃষ্টিপাতের অভাব হলে গম খেতে জলসেচ দিতে হয় ।
( ২ ) সারপ্রয়োগ : গম চাষের ফলে জমির উর্বরতা দ্রুত কমে যায় বলে গমচাষের জমিতে বিশেষত নাইট্রোজেন , ফসফেট এবং পটাশ জাতীয় রাসায়নিক সার দেওয়া প্রয়োজন ।
( ৩ ) কীটনাশক প্রয়োগ : পোকামাকড়ের উপদ্রব হলে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় ।
( ৪ ) সুলভ শ্রমিক ধান চাষের মতো গম চাষেও প্রচুর দক্ষ ও পরিশ্রমী শ্রমিকের প্রয়োজন হয় । অবশ্য যান্ত্রিক উপায়ে গম চাষে অনেক কম শ্রমিক লাগে ।
( ৫ ) যথেষ্ট মূলধন বিনিয়োগ ও আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার : বর্তমানে একই জমিতে একাধিকবার ও বেশি পরিমাণে গম উৎপাদন করার জন্য বেশি মূলধন বিনিয়োগ করে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় ।
5. ভারতে চা বাগিচা ( Tea Garden ) গড়ে ওঠার অনুকূল পরিবেশ সম্বন্ধে আলোচনা করো বা বর্ণনা দাও । অথবা , চা চাষের জন্য অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ সম্পর্কে আলোচনা করো ।
Ans: পরিবেশগুলি হল : উত্তর : ভারতে চা উৎপাদনের অনুকূল ভৌগোলিক ক প্রাকৃতিক পরিবেশ : ( ১ ) জলবায়ু চা উপক্রান্তীয় মৌসুমি অঞ্চলের উচ্চভূমির ফসল । ( i ) উত্তাপ : চা চাষের জন্য আদর্শ তাপমাত্রা ২১ ° –২৯ ° সেলসিয়াস হলেও , ১৬ ° সেলসিয়াস তাপমাত্রাতেও চা চাষ করা যেতে পারে ; ( ii ) বৃষ্টিপাত বছরে ২০০-২৫০ সেন্টিমিটার গড় বৃষ্টিপাত চা চাষের পক্ষে আদর্শ । তবে প্রতি মাসে নিয়মিত বৃষ্টিপাত চা গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে । ( iii ) তুষারপাত : চা গাছ একভাবে ১০/২০ দিন তুষারপাত সহ্য করতে পারলেও বেশি তুষারপাত চা গাছের ক্ষতি করে ।
( ২ ) ভূপ্রকৃতি : পাহাড়ের জলনিকাশের সুবিধাযুক্ত ঢালু অংশ চা চাষের পক্ষে আদর্শ । তবে জলনিকাশি ব্যবস্থাযুক্ত ঈষৎ ঢালু সমভূমিতেও আজকাল চা বাগান করা হচ্ছে ।
( ৩ ) মৃত্তিকা : লৌহ মিশ্রিত উর্বর দোআঁশ মাটি চা চাষের পক্ষে বিশেষ উপযোগী । তবে মাটিতে ফসফরাস ও পটাশের উপস্থিতি চাষের সুগন্ধ বাড়ায় ( যেমন — দার্জিলিং – এর চা ) ।
( 8 ) ছায়াপ্রদানকারী বৃক্ষ : প্রখর সূর্যতাপ থেকে চা গাছকে রক্ষা করার জন্য চা বাগানে মাঝে মাঝে ছায়াপ্রদানকারী গাছ লাগাতে হয় ।
অপ্রাকৃতিক পরিবেশ : ( ১ ) সার প্রয়োগ : চা চাষের জমির উর্বরতা নষ্ট হয় বলে চা বাগানে পরিমিত মাত্রায় জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয় ।
( ২ ) সুলভ শ্রমিক : চা গাছের পরিচর্যা , আগাছা পরিষ্কার , নিড়ানো , নিয়মিত গাছ ছাঁটাই , গাছ থেকে পাতা তোলা , সায় , শুদ্ধকরণ প্রভৃতি কাজের জন্য প্রচুর দক্ষ ও অভিজ্ঞ শ্রমিকের প্রয়োজন হয় । চা গাছ থেকে চা পাতা তোলার জন্য সাধারণত নারী শ্রমিকদের কাজে লাগানো হয় ।
( ৩ ) প্রচুর মূলধন : চা বাগানের জমি কেনা , চা গাছ লাগানো এবং রক্ষণাবেক্ষণের প্রতিটি পর্যায়ে প্রচুর মূলধনের প্রয়োজন হয় ।
6. কফি উৎপাদনের ( Coffee Cultivation ) অনুকুল পরিবেশ সম্পর্কে লেখো ।
Ans: কফি চাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ :
( ক ) প্রাকৃতিক পরিবেশ :
( ১ ) জলবায়ু : উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু কফি চাষের পক্ষে বিশেষ উপযোগী । ( ১ ) কফি চাষের জন্য সারাবছর ধরে উচ্চ উত্তাপ ( ২০০-৩০ ° সে . ) এবং প্রচুর বৃষ্টিপাত ( ১৫০-২৫০ সেমি . ) প্রয়োজন । ( ২ ) কুয়াশা ও সামুদ্রিক আর্দ্রতা : কফি গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে , তেমনি তুষারপাতও ঝড়ো কফি গাছের ক্ষতি করে । ( ৩ ) মৃত্তিকা : লোহা , পটাশ ও নাইট্রোজেনযুক্ত উর্বর লাল দোআঁশ মৃত্তিকা কফি চাষের পক্ষে বিশেষ উপযোগী । ( ৪ ) জমির প্রকৃতি : জলনিকাশের সুবিধাযুক্ত পাহাড়ের ঢালু জমি কফি চাষের পক্ষে আদর্শ । ( ৫ ) ছায়াপ্রদানকারী গাছ : সরাসরি সূর্যকিরণ কফি গাছের ক্ষতি করে বলে কফি খেতে কলা , ও ভুট্টা প্রভৃতি ছায়াপ্রদানকারী গাছ লাগানো হয় ।
( খ ) অপ্রাকৃতিক পরিবেশ : ( ১ ) জলসেচ প্রয়োজনে কফি গাছে জলসেচ দিতে হয় । ( ২ ) সার প্রয়োগ : জমিতে সারের অভাব হলে সার প্রয়োগ করতে হয় । ( ৩ ) কীটনাশক প্রয়োগ : পোকামাকড়ের আক্রমণ হলে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় । ( ৪ ) সুলভ শ্রমিক : কফি খেত তৈরি , চারা লাগানো , রক্ষণাবেক্ষণ , কফি ফল সংগ্রহ এবং গুঁড়ো কফি প্রস্তুতির বিভিন্ন পর্যায়ে 1 , প্রচুর দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হয় । ( ৫ ) মূলধন : কফি বাগান কেনা , কফি খেত তৈরি , চারা লাগানো , কফি গাছের রক্ষণাবেক্ষণ ও তৈরি কফি বিপণনের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রচুর মূলধনের প্রয়োজন হয় ।
7. কার্পাস উৎপাদনের ( Cotton Cultivation ) অনুকূল অবস্থা কী কী ?
Ans: কার্পাস উৎপাদনের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ : ক প্রাকৃতিক অবস্থা : ( ১ ) জলবায়ু : ( i ) উত্তাপ : কার্পাস চাষের জন্য মাঝারি উত্তাপ ( ২০০ ২৬ ° সে . ) প্রয়োজন । কার্পাস চাষের প্রাথমিক অবস্থায় গাছে ফুল না ফোটা পর্যন্ত ২১০ । ° সেলসিয়াস উষ্ণতা থাকা প্রয়োজন । ( ii ) বৃষ্টিপাত : ৬০–১০০ সেমি বার্ষিক বৃষ্টিপাত কার্পাস চাষের উপযোগী , তবে জলসেচের ব্যবস্থা থাকলে ৫০ সেন্টিমিটারের কম বৃষ্টিপাতেও উৎকৃষ্ট তুলা উৎপন্ন হতে পারে ( যেমন — মিশরের নীলনদের উপত্যকা ) । কার্পাস চাষের প্রাথমিক অবস্থায় আর্দ্র জলবায়ু এবং গুটি ফাটার সময় শুকনো বৃষ্টিহীন রৌদ্রকরোজ্জ্বল আবহাওয়ার প্রয়োজন । ( iii ) তুহিনমুক্ত অবস্থা : কার্পাস চাষে জলবায়ুর গুরুত্ব বেশি । কার্পাস চাষ করতে হলে বছরে অন্তত ২০০ দিন তুহিনমুক্ত থাকা প্রয়োজন , তা না হলে গাছ ও কার্পাস তুলোর গুটি দুই – ই নষ্ট হয়ে যায় । ( iv ) আর্দ্রতা আর্দ্র সমুদ্র বায়ু কার্পাস চাষের পক্ষে বিশেষ উপযোগী ।
( ২ ) জমির প্রকৃতি : গাছের গোড়ায় জল জমলে কার্পাস গাছের ক্ষতি হয় বলে জল নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত একটু ঢালু ও তরঙ্গায়িত জমি কার্পাস চাষের পক্ষে আদর্শ ।
( ৩ ) মৃত্তিকা : কার্পাস উৎপাদনের জন্য চুন ও লবণ মেশানো হালকা দোআঁশ মাটি এবং জল ধরে রাখার ক্ষমতাসম্পন্ন কৃষ্ণমৃত্তিকা ( যা কৃষ্ণ কাপার্স মৃত্তিকা নামে পরিচিত ) অথবা চারনোজেম মৃত্তিকা বিশেষ উপযোগী । এইজন্য দাক্ষিণাত্যের কৃমৃত্তিকা অঞ্চলে ভারতের অধিকাংশ কার্পাস উৎপন্ন হয় । [ খ ] অপ্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা : ( ১ ) জলসেচ : বৃষ্টির অভাব হলে কার্পাস খেতে জলসেচ দিতে হয় ।
( ২ ) সার কার্পাস গাছ জমির উর্বরতা তাড়াতাড়ি নষ্ট করে দেয় , তাই কার্পাস চাষের জমিতে পরিমিত জৈব ও রাসায়নিক সার দিতে হয় । এ ছাড়া শস্যাবর্তন প্রথার দ্বারাও জমির উর্বরা শক্তি বাড়ানো হয় । কীটনাশক ওষুধ : কার্পাস গাছে রোগপোকার ( বিশেষত বল – উইভিল পোকার আক্রমণ খুব বেশি , এইজন্য কীটনাশক । ওষুধ ব্যবহার করা দরকার । ফেলতে হবে ।
( ৪ ) আগাছা দমন কার্পাস খেতে আগাছা জন্মালে , তা তুলে
( ৫ ) সুলত শ্রমিক কার্পাস গাছ থেকে গুটি তোলা এবং মুক্তি থেকে তুলা ছাড়ানোর জন্য প্রচুর দক্ষ ও পরিশ্রমী প্রয়োজন ।
( ৬ ) মূলধন : আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি , জলসেচ ব্যবস্থা , সার ও কীটনাশকের প্রয়োগের জন্য এবং উন্নত প্রথায় তুলা চাষের জন্য প্রচুর মূলধনের প্রয়োজন হয় ।
8. ভারতের কোন কোন অঞ্চলে কার্পাস উৎপন্ন হয় ।
Ans: ভারতে তুলো বা কার্পাস চাষের আদর্শ জলবায়ু ও মৃত্তিকা বিদ্যমান থাকায় , তামিলনাড়ু , মহারাষ্ট্র , গুজরাট , পাঞ্জাব , হরিয়ানা , কর্ণটিক ও মধ্যপ্রদেশ — ভারতের এই সাতটি রাজ্যে ভারতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কার্পাস উৎপন্ন হয় । ভারত তুলো উৎপাদনে পৃথিবীতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে ।
ভারতে ৪ টি প্রধান তুলা উৎপাদক অঞ্চল আছে । ভারতের মোট কার্পাস জমির প্রায় ৮৫ % এবং মোট কার্পাস উৎপাদনের * প্রায় ৮০ % এই চারটি অঞ্চলে উৎপন্ন হয় , যেমন—
( ১ ) দাক্ষিণাত্যের কৃষ্ণ মৃত্তিকা বা লাভা অঞ্চল : দাক্ষিণাত্যের বিশাল কৃষ্ণ মৃত্তিকা অঞ্চলটিকে দু – ভাগে ভাগ করা হয় , যেমন— ( ক ) শোলাপুর , নাগপুর , ওয়ার্ধা , নাসিক প্রভৃতি অঞ্চলকে নিয়ে মহারাষ্ট্র মালভূমির পূর্বাংশ এবং ( খ ) উজ্জয়িনী , মালব প্রভৃতি অঞ্চলকে নিয়ে গঠিত মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের দক্ষিণ – পশ্চিমাংশ । দাক্ষিণাত্যের কৃষ্ণ মৃত্তিকা অঞ্চল হল ভারতের অন্যতম প্রধান তুলো উৎপাদক অঞ্চল ।
( ২ ) গুজরাট সমভূমি অঞ্চল : সুরাট , ব্রোচ , ভদোদরা প্রভৃতি অঞ্চল নিয়ে এই অঞ্চল গঠিত ।
( ৩ ) উত্তর কর্ণটিক অঞ্চল : হুবলি , বেলগাঁও , ধারওয়ার , বেলারি প্রভৃতি স্থান নিয়ে এই অঞ্চলটি গঠিত হয়েছে ।
( ৪ ) সিন্ধু সমভূমির দক্ষিণ – পশ্চিম অংশ : ( ক ) পাঞ্জাবের লুধিয়ানা , ফিরোজপুর , জলন্ধর প্রভৃতি অঞ্চল এবং ( খ ) হরিয়ানার রোটক , আম্বালা , হিসার প্রভৃতি অঞ্চল । পরিমিত জলসেচ এবং কার্পাস উৎপাদনের আদর্শ জলবায়ুর জন্য এই অঞ্চলে হেক্টরপ্রতি কার্পাস উৎপাদন সারাভারতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ( হেক্টরপ্রতি প্রায় ২৮০ কিলোগ্রাম ) । ভাক্রা – নাঙ্গাল বাঁধের কল্যাণে বর্তমানে এই অঞ্চলে দীর্ঘ আঁশযুক্ত উৎকৃষ্ট শ্রেণির কার্পাস তুলা উৎপন্ন হচ্ছে । উপরোক্ত চারটি প্রধান অঞ্চল ছাড়াও
( ৫ ) তামিলনাড়ু রাজ্যের মাদুরাই , কোয়েম্বাটোর , তিরুনেলভেলি , তিরুচিরাপল্লী প্রভৃতি অঞ্চল ,
( ৬ ) অন্ধ্রপ্রদেশের অনন্তপুর , গুন্টুর , কুর্নল প্রভৃতি অঞ্চল এবং
( ৭ ) রাজস্থানের গঙ্গানগরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কার্পাস উৎপন্ন হয় ।
9. ‘ সবুজ বিপ্লব ‘ Green Revolution ) বলতে কী বোঝ ?
Ans: ‘ সবুজ বিপ্লব বা গ্রিন রেভোলিউশন ( Green Revolution ) বলতে উচ্চফলনশীল বীজ এবং অন্যান্য কৃষি পরিকাঠামোর সাহায্যে ফসল উৎপাদনে অভূতপূর্ব উন্নতিকে বোঝায় । এই সবুজ বিপ্লব শুরু হয়েছিল ১৯৬০ – এর দশকের শেষে ড . নরম্যান আরনেস্ট বোরলগ ( Dr. Norman Earrest Borlaug ) -এর উদ্যোগে । Green Revolution শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন মার্কিন প্রশাসনের অন্যতম আধিকারিক উইলিয়াম এস গড ( William S. Gand ) ।
সবুজ বিপ্লবের উপাদানসমূহ : প্রধানত ১২ টি উপাদানের মাধ্যমে বা বলা যায় সরকারীভাবে গৃহীত এই কর্মসূচির মাধ্যমে ভারতে সবুজ বিপ্লব ঘটেছে । এই উপাদানগুলি হল ( ১ ) উচ্চফলনশীল বীজের ব্যবহার , ( ২ ) জলসেচ , ( ৩ ) রাসায়নিক সার প্রয়োগ , ( ৪ ) কীট ও পতঙ্গনাশক ওষুধ প্রয়োগ , ( ৫ ) প্রকল্প এলাকার উন্নয়ন ( ৬ ) জোতের সংহতিসাধন , ( ৭ ) ভূমিসংস্কার , ( ৮ ) কৃষিঋণ , ( ৯ ) গ্রামীণ বিদ্যুতায়ন , ( ১০ ) গ্রামীণ সড়ক ও বাজারের উন্নতিসাধন , ( ১১ ) কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার ও ( ১২ ) কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ।
এইসব পরিকল্পনার সুফল হিসেবে বিশেষ করে উত্তর পশ্চিম ভারতের হরিয়ানা ও পাঞ্জাবের গম উৎপাদনে এবং দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যে চাল উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায় । এর ফলে ১৯৫০–৫১ খ্রিস্টাব্দে ভারতে যেখানে মাত্র ২০৬ লক্ষ টন চাল ও ৬৫ লক্ষ টন গম উৎপন্ন হয়েছিল । সেখানে ১৯৭০-৭১ খ্রিস্টাব্দে ভারতের চাল ও গম উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গিয়ে যথাক্রমে ৪২৩ লক্ষ টন ও ২৩৯ লক্ষ টনে পরিণত হয় । তবে বলা যায় যে , এই সবুজ বিপ্লবের সবচেয়ে বেশি সুফল ভোগ করেছিল পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্য । তবে , এই সবুজ বিপ্লবের ফলে ভারত খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বনির্ভর হয়ে ওঠে ।
=================================================================
ভারতের কৃষি (ভারত – পঞ্চম অধ্যায়)
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | ভারতের কৃষি (ভারত – পঞ্চম অধ্যায়) – মাধ্যমিক ভূগোল সাজেশন | Madhyamik Geography Suggestion :
- ভারতের যে – কোনো দুটি বাজরা উৎপাদক রাজ্যের নাম লেখো ।
Answer : খুজরাট / রাজস্থান / মহারাষ্ট্র / উত্তরপ্রদেশ ।
- ভারতের যে কোনো দুটি রাগি উৎপাদক রাজ্যের নাম লেখো ।
Answer : কর্ণাটক / অস্ত্রপ্রদেশ / তামিলনাড়ু / বিহার ।
- মৃত্তিকায় কোন প্রকার খনিজের উপস্থিতিতে চা পাতার সুগন্ধ বৃদ্ধি পায় ?
Answer : ফসফরাস ও পটাশ ।
- পশ্চিমবঙ্গের কোন জেলার চা স্বাদে – গন্ধে পৃথিবীবিখ্যাত ?
Answer : দার্জিলিং ।
- ভারতের চা গবেষণাগারটি কোথায় অবস্থিত ?
Answer : অসমের জোড়হাটে ।
- ভারতের কোন রাজ্য কফি উৎপাদনে প্রথম ?
Answer : কর্ণাটক ।
- ভারতের কোন অঞ্চলে অধিকাংশ কার্পাস উৎপন্ন হয় ?
Answer : দাক্ষিণাত্যের কৃয়মৃত্তিকা অঞ্চল ।
- কোন প্রকার জলবায়ুতে আখ চাষ ভালো হয় ?
Answer : আর্দ্র ক্রান্তীয় জলবায়ু ।
- ভারতের কোন অঞ্চল হেক্টরপ্রতি কার্পাস উৎপাদনে ভারতে প্রথম ?
Answer : সিন্ধু সমভূমির দক্ষিণ – পশ্চিম অংশ তথা পাঞ্জাব ও হরিয়ানা ।
- পেশাগত দিক থেকে ভারত কী ধরনের দেশ ?
Answer : কৃষিভিত্তিক দেশ ।
- ভারতের কৃষিতে জলসেচের মূল কারণ কী ?
Answer : অনিয়মিত মৌসুমি বৃষ্টিপাত ।
- পাহাড়ি অঞ্চলে মাটি ক্ষয় রোধে ঢালু জমিতে ধাপ কেটে যে – চাষ করা হয় তাকে কী বলে ?
Answer : ধাপ চাষ ।
- ভারতের কোন অঞ্চলে ঝুম চাষ দেখা যায় ।
Answer : উত্তর – পূর্বাঞ্চলে ।
- ভারতে সবুজ বিপ্লবের সময়কাল কী ?
Answer : ১৯৬১–১৯৬৬ ( ষাটের দশকের শেষে ) ।
- ভারতে সবুজ বিপ্লবের ফলে কোন্ ফসলের উৎপাদন বেড়ে গিয়েছিল ?
Answer : গম ।
- কোনো নির্দিষ্ট জমিতে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন শস্যের পর্যায়ক্রমিক চাষকে কী বলে ?
Answer : শস্যাবর্তন ।
- কৃষি থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জাতীয় আয় কত হয় ?
Answer : ১৬.৬ % ।
- যেসকল ফসল থেকে চিনি , গুড় , মিছরি বা সুরাসার উৎপন্ন হয় , তাকে কী ধরনের ফসল বলে ?
Answer : শর্করা জাতীয় ফসল ।
- কোন্ ধানের অপর নাম ভাদুই ?
Answer : আউশ ধান ।
- পৃথিবীতে কোন প্রকার গমের চাষ সবচেয়ে বেশি ?
Answer : শীতকালীন গম ।
- কোন্ ধানের অপর নাম যেটে ধান ?
Answer : বোরো ধান ।
- হেক্টরপ্রতি চা উৎপাদনে কোন রাজ্য প্রথম ?
Answer : তামিলনাড়ু রাজ্য ।
- ভারত কোন্ কোন্ দেশে তুলা রপ্তানি করে ?
Answer : শ্রীলঙ্কা , বাংলাদেশ , জাপান , জার্মানি ইত্যাদি ।
- পশ্চিমবঙ্গের কোথায় ধানের গবেষণা কেন্দ্র আছে ?
Answer : চুঁচুড়াতে ।
- ভারতের প্রধান দুটি অর্থকরী পানীয় ফসলের নাম লেখো ।
Answer : চা , কফি ।
- খরিফ শস্যের অর্থ কী ?
Answer : বর্ষাকালীন ফসল ।
- রবি শস্যের অর্থ কী ?
Answer : শীতকালীন ফসল ।
- দুটি খরিফ শস্যের উদাহরণ দাও ।
Answer : ধান / পাট / তুলো / জোয়ার / বাজরা ।
- দুটি রবি শস্যের উদাহরণ দাও ।
Answer : গম / যব / আলু ।
- দুটি জায়িদ শস্যের নাম লেখো ।
Answer : আউশ ধান / পাট / বাদাম / শাক ।
- ভারতে সাধারণত কোন্ দুই পদ্ধতিতে ধান চাষ হয় ?
Answer : রোপণ পদ্ধতি ও বপন পদ্ধতি ।
- ICAR- এর পুরো নাম কী ?
Answer : Indian Council of Agricultural Research .
- ভারতের কোন প্রকার চাল বিদেশে রপ্তানি করা হয় ?
Answer : সুগন্ধি বাসমতী ও গোবিন্দভোগ চাল ।
- ধানের পর ভারতের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্যশস্য কী ?
Answer : গম ।
- ভারতে প্রধানত কোন প্রকার গম চাষ হয় ?
Answer : শীতকালীন গম চাষ ।
- ভারতের শস্যভাণ্ডার কাকে বলা হয় ?
Answer : করমন্ডল উপকূল ( তামিলনাড়ু ) ।
- ভারতের যে কোনো ২ টি রাজ্যের নাম যেখানে জোয়ার চাষ করা হয় ।
Answer : মহারাষ্ট্র মধ্যপ্রদেশ / কর্ণাটক / অস্ত্রপ্রদেশ ।
MCQ | ভারতের কৃষি (ভারত – পঞ্চম অধ্যায়) – মাধ্যমিক ভূগোল সাজেশন | Madhyamik Geography Suggestion :
- রবিশস্য চাষ হয় – (A) বর্ষাকালে(B) শীতকালে(C) যে কোনো সময়ে(D) উদ্বু ও শুষ্ক
Answer : (B) শীতকালে
- কফি চাষের জন্য প্রয়োজনীয় জলবায়ু হওয়া উচিত— (A) উষ্ণ ও আর্দ্র(B) আর্দ্র এ শুষ্ক(C) শীতল (D) শুষ্ক
Answer : (C) শীতল
- কোন জেলাকে ‘ পশ্চিমবঙ্গের ধানের ভাণ্ডার ’ বলে ?(A) মুরশিদাবাদ(B) উত্তর ২৪ পরগনা(C) বর্ধমান(D) পূর্ব মেদিনীপুর
Answer : (C) বর্ধমান
- ধান কাটার সময় কী ধরনের জলবায়ু প্রয়োজন ? (A) শীতল(B) আদ্র(C) শুষ্ক(D) উষ্ণ
Answer : (C) শুষ্ক
- কোন গাছের বাগানের মাঝে মাঝে ছায়া প্রদানকারী বৃদ্ধ লাগাতে হয় ?(A) রবার (B) বাদাম(C) সূর্যমুখী(D) চা
Answer : (D) চা
- কুয়াশা ও সামুদ্রিক আর্দ্রতা কোন্ গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে ?(A) চা (B) কফি(C) তৈলবীজ(D) আখ
Answer : (A) চা
- ভারতের কোন্ রাজ্যে মিলেট শস্যের গবেষণাগার অবস্থিত ?(A) রাজস্থান (B) গুজরাট(C) ভূপাল(D) কেরল
Answer : (A) রাজস্থান
- আঘায়নি বলা হয় কোন্ ধানকে ?(A) আমন(B) বোরো(C) আউশ (D) কোনোটাই নয়
Answer : (A) আমন
- কোন জেলায় বোরো ধানের চাষ সবচেয়ে বেশি হয় ?(A) বর্ধমান(B) পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর(C) মুরশিদাবাদ(D) বীরভূম
Answer : (A) বর্ধমান
- সবুজ বিপ্লবের ফলে ভারতের কী চাষে প্রভূত উন্নতি হয় ? (A) গম(B) চা(C) তুলো(D) ধান
Answer : (A) গম
- ভারতের কোন্ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় সবুজ বিপ্লব অনুষ্ঠিত হয়েছিল ?(A) দ্বিতীয়(B) চতুর্থ(C) পঞ্চম(D) তৃতীয়
Answer : (D) তৃতীয়
- অন্ধ্রপ্রদেশের কোন্ নদী উপত্যকায় ধান চাষ ভালো হয় ?(A) কৃষ্ণা(B) তুঙ্গভদ্রা(C) গোদাবরী (D) কাবেরী
Answer : (C) গোদাবরী
- ‘ বল উইভিল ’ পোকার আক্রমণ ঘটে কোন্ গাছে ? (A) ইক্ষু(B) কফি(C) কার্পাস(D) চা
Answer : (C) কার্পাস
- কোন্ রাজ্যকে ‘ ভারতের চিনির বাটি ‘ বলা হয় ?(A) হিমাচল প্রদেশ(B) উত্তরপ্রদেশ(C) হরিয়ানা(D) পাঞ্জাব
Answer : (B) উত্তরপ্রদেশ
- ভারতীয় কৃষির ধরন কীরূপ – (A) জীবিকাসত্তাভিত্তিক(B) বাণিজ্যিক(C) প্রগাঢ়(D) কোনোটিই নয়
Answer : (A) জীবিকাসত্তাভিত্তিক
- হেক্টর প্রতি চা উৎপাদনে ভারতে কোন রাজ্য প্রথম ?(A) কর্ণাটক(B) পশ্চিমবঙ্গ(C) আসাম(D) পাঞ্জাব
Answer : (A) কর্ণাটক
- কোন মৃত্তিকা গম চাষের পক্ষে উপমুক্ত ?(A) এঁটেল (B) দোআশ (C) কৃষ্ণ(D) পডসল
Answer : (A) এঁটেল
- কোনটি বাগিচা ফসল নয় ?(A) চা(B) কফি(C) রাবার(D) গম
Answer : (D) গম
- রেটুন শব্দটির সাথে কোন ফসল জড়িত – (A) কফি(B) আখ(C) চা(D) পাট
Answer : (B) আখ
- কোনটি অপ্রধান মিলেট জাতীয় শস্য – (A) জোয়ার(B) বাজরা(C) রাগি(D) রাজগিরা
Answer : (D) রাজগিরা
- কোন ফসল উৎপাদনে পাহাড় – পর্বতের ঢালু জমি আদর্শ – (A) পাট(B) কার্পাস(C) চা(D) আঁখ
Answer : (C) চা
- ভারতের মোট আয়তনের প্রায় কত শতাংশ জমিতে কৃষিকাজ করা হয় ?(A) ৪০ % (B) ৫০ %(C) ৪৫ % (D) ৫৫ %
Answer : (C) ৪৫ %
- ভারতে সারাবছর বৃষ্টিপাত হয় না বলে কৃষিকাজ কীসের ওপর নির্ভর করে ?(A) মৌসুমি বৃষ্টি(B) শীতকালীন বৃষ্টি(C) জলসেচ(D) রাসায়নিক সার ও উচ্চফলনশীল বীজ
Answer : (C) জলসেচ
- দেশের প্রায় কত শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো ভাবে কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত ? (A) ৬৫ %(B) ৭০ %(C) ৫৫ %(D) ৩৫ %
Answer : (A) ৬৫ %
- যেসব ফসল থেকে আঁশ বা তন্তু পাওয়া যায় , তাদের কী বলা হয় ?(A) বাগিচা ফসল(B) খাদ্যফসল পান(C) আঁশযুক্ত ফসল(D) তন্তু ফসল
Answer : (D) তন্তু ফসল
- ভারতের প্রধান খরিফ শস্য কী ? (A) পাট(B) গম(C) আলু(D) ধান
Answer : (D) ধান
- ভারতের প্রধান ‘ শীতকালীন ফসল ‘ কী ?(A) গম(B) তৈলবীজ (C) তুলো(D) আলু
Answer : (A) গম
- কোন্ ধান চাষ করতে সবচেয়ে বেশি জলের প্রয়োজন হয় -(A) আউশ ধান (B) আমন ধান(C) বোরো ধান(D) কোনোটাই নয়
Answer : (B) আমন ধান
- হেক্টর প্রতি ধান উৎপাদনে প্রথম রাজ্য হল— (A) পশ্চিমবঙ্গ(B) পাঞ্জাব (C) বিহার (D) উত্তরপ্রদেশ
Answer : (B) পাঞ্জাব
- ভারতে ধান গবেষণার প্রধান কেন্দ্রটি কোথায় অবস্থিত ? (A) দিল্লি(B) কটক(C) গুরগাঁও(D) কলকাতা
Answer : (A) দিল্লি
- উত্তর ভারতে কোন্ ফসলের চাষ বেশি হয় ?(A) ধান(B) গম(C) কার্পাস(D) চা
Answer : (B) গম
- হেক্টরপ্রতি গম উৎপাদনে ভারতে কোন রাজ্য প্রথম ? (A) পাঞ্জাব(B) উত্তরপ্রদেশ(C) হরিয়ানা(D) মধ্যপ্রদেশ
Answer : (A) পাঞ্জাব
- কোনটি মিলেট জাতীয় শস্য -(A) ইক্ষু(B) কফি(C) বাদাম(D) জোয়ার
Answer : (D) জোয়ার
- ভারতে জোয়ার উৎপাদনে যে রাজ্য প্রথম -(A) মহারাষ্ট্র(B) কর্নাটক(C) অন্ধ্রপ্রদেশ(D) মধ্যপ্রদেশ
Answer : (A) মহারাষ্ট্র
- চা উৎপাদনে ভারতে কোন রাজ্য প্রথম ? (A) আসাম(B) পশ্চিমবঙ্গ(C) তামিলনাড়ু(D) কেরল
Answer : (A) আসাম
- চা রপ্তানিতে ভারত পৃথিবীতে কততম স্থান অধিকার করে ?(A) প্রথম(B) দ্বিতীয়(C) তৃতীয় (D) চতুর্থ
Answer : (D) চতুর্থ
- কফি উৎপাদনে পৃথিবীতে ভারতের স্থান কত ?(A) পঞ্চম(B) চতুর্থ(C) ষষ্ঠ(D) সপ্তম
Answer : (C) ষষ্ঠ
- আর্দ্র সমুদ্রবায়ু কোন ফসল চাষের পক্ষে উপযুক্ত ?(A) পাট (B) বাজরা (C) তৈলবীজ(D) কার্পাস
Answer : (D) কার্পাস
- কোন্ মৃত্তিকায় কার্পাস চাষ সবচেয়ে ভালো হয় ।(A) পলি(B) পড়সল(C) কৃষ্ণ(D) দোআঁশ
Answer : (C) কৃষ্ণ
- ভারতের অর্থকরী ফসল কোন্টি— (A) ধান (B) কার্পাস(C) গম(D) মিলেট
Answer : (C) গম
- কোন রাজ্য ভারতে আখ উৎপাদনে প্রথম স্থান অধিকার করে ? (A) বিহার(B) উত্তরপ্রদেশ(C) পশ্চিমবঙ্গ(D) পাঞ্জাব
- যে শস্যের বীজ থেকে তেল পাওয়া যায় , তাদের বলে -(A) মিলেট (B) তৈলবীজ(C) অর্থকরী ফসল(D) বাগিচা ফসল
- ভারতে সর্বাধিক চা রপ্তানি হয় কোন্ বন্দর থেকে ? (A) মুম্বাই(B) বিশাখাপত্তনম(C) কলকাতা(D) চেন্নাই
Answer : (C) কলকাতা
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর | ভারতের কৃষি (ভারত – পঞ্চম অধ্যায়) – মাধ্যমিক ভূগোল সাজেশন | Madhyamik Geography Suggestion :
- গমের শ্রেণিবিভাগ করো ।
Answer : গমের শ্রেণিবিভাগ— ( i ) শীতকালীন গম : এই গম শীতকালে চাষ করা হয় । শীতকালে এই গমের চাষ বেশি । ( ii ) বসন্তকালীন গম : যেসব অঞ্চল শীতকালে প্রবল তুষারপাত হয় এবং মাটি বরফাকৃত থাকে , সেইসব অঞ্চলে শীতের শেষে বসন্তকালে এইপ্রকার গচাষ করা হয় ।
- ভারতের প্রধান দুটি গম উৎপাদক রাজ্যের নাম লেখো ।
Answer : ভারতের প্রধান দুটি গম উৎপাদক রাজ্যের নাম হল : ( ১ ) উত্তরপ্রদেশ এবং ( ২ ) পাঞ্জাব ।
- ভারতের প্রধান তিনটি চা উৎপাদনকারী রাজ্যের নাম লেখো ।
Answer : ভারতের তিনটি প্রধান চা উৎপাদনকারী রাজা হল ( i ) অসম ( ii ) পশ্চিমবঙ্গ এবং ( iii ) তামিলনাড়ু ।
- ভারতের চা ও কফি উৎপাদনে প্রথম স্থানাধিকারী রাজ্য দুটির নাম লেখো ।
Answer : ভারতে চা উৎপাদনে প্রথম স্থানাধিকারী রাজ্য : অসম । ভারতে কফি উৎপাদনে প্রথম স্থানাধিকারী রাজ্য : কর্ণটিক ।
- ভারতের চা কোন কোন দেশে রপ্তানি করা হয় ?
Answer : ভারত যেসব দেশে চা রপ্তানি করে সেগুলি হল — ব্রিটেন , রাশিয়া , সুদান , আফগানিস্তান , মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহ , আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ইত্যাদি । ভারত চা রপ্তানিতে পৃথিবীতে চতুর্থ ।
- পাহাড়ের ঢালু জমিতে চা চাষ ভালো হয় কেন ?
Answer : চা গাছের জন্য বেশি বৃষ্টিপাত – এর প্রয়োজন হলেও চা গাছের গোড়ায় জল দাঁড়ানো চা চাষের পক্ষে ক্ষতিকর । তাই অধিক ঢালযুক্ত পাহাড় ও পর্বতের ঢালু জমিতে যেখানে গাছের গোড়ায় জল দাঁড়ায় না , সেখানেই চা চাষ করা হয় ।
- কার্পাস বা তুলোর শ্রেণিবিভাগ করো ।
Answer : আঁশের দৈর্ঘ্য অনুসারে কার্পাসকে দু – ভাগে ভাগ করা যায় । যেমন- ( ১ ) দীর্ঘ আঁশযুক্ত কার্পাস ( ৩ সেমি বা তার চেয়ে বেশি দীর্ঘ ) ( ২ ) মাঝারি আঁশযুক্ত কার্পাস ( ২.৫ সেমি- ২.৯ সেমি ) এবং ( ৩ ) ক্ষুদ্র আঁশযুক্ত কার্পাস ( ২.৫ সেমি এর কম ) । ভারতে প্রধানত ছোটো ও মাঝারি আঁশযুক্ত তুলো উৎপন্ন হয় ।
- সবুজ বিপ্লবের প্রভাব গম ছাড়া আর কোন্ কোন্ ফসলে দেখা গেছে ?
Answer : সবুজ বিপ্লবের প্রভাব গম ( উত্তর – পশ্চিম ভারত ) ছাড়াও , পূর্ব ভারতের ধান উৎপাদনে , দক্ষিণ ভারতের ডাল ও তৈলবীজ উৎপাদনে এবং মধ্য ভারতে জোয়ার , বাজরা ও ভুট্টা উৎপাদনে দেখা গেছে ।
- উচ্চফলনশীল বীজ চাষের বিশেষত্ব কী ?
Answer : উচ্চফলনশীল বীজ হল এমন একপ্রকার বীজ যা থেকে অনেক কম সময়ে অনেক বেশি ফসল উৎপাদিত হয় । এই প্রকার বীজ চাষের জন্য বেশি পরিমাণে জল , বিভিন্ন প্রকার সার ও কাটনাশকের প্রয়োজন হয় ।
- ধাপ চাষ ( Step Cultivation ) কী ?
Answer : পাহাড়ি অঞ্চলে মাটির ক্ষয় রোধে ঢালু জমিতে ধাপ কেটে , বৃষ্টির জলকে জমিতে ব্যবহার করে যে কৃষিকাজ করা হয় , তাকে ধাপ চাষ বলে । যেমন — ভারতের পাহাড়ি অঞ্চলে ধাপকেটে ধানচাষ করা হয় ।
- ঝুম চাষ ( Shifting Cultivation ) কাকে বলে ?
Answer : ভারতের উত্তর – পূর্ব পার্বত্য অঞ্চলের অধিবাসী । সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ বন কেটে ও পুড়িয়ে জমি তৈরি করে চাষ করে । কিছু বছর বাদে মাটির উর্বরতা কমে গেলে ওই জমি পরিত্যাগ করে অন্য একটি জমি তৈরি করে চাষ করে । একে ঝুম চাষ বলে । এটি একপ্রকার স্থানান্তর কৃষির উদাহরণ ।
- চা , বাগিচা কৃষির অন্তর্ভুক্ত কেন ?
Answer : ভারতে চা চাষ ইংরেজদের মাধ্যমে শুরু হয় । এই চা বিদেশে রপ্তানি করে বাণিজ্যিকভাবে বাগিচা নির্মাণ করে উন্নতমানের ও বেশি পরিমাণে চা চাষ শুরু হয় । তাই চাকে বাগিচা ফসল বলে ।
- জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি ( Subsistence farming ) কাকে বলে ?
Answer : কেবলমাত্র জীবনধারণের জন্য কৃষিজ ফসল উৎপাদন করাকে জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি বলে । যেমন — ভারতে ধান চাষ হলে জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি ।
- কৃষিকাজ ( Agriculture ) কাকে বলে ?
Answer : যখন স্থায়ীভাবে বসবাসকারী মানুষ নিজেদের চাহিদা মেটানোর জন্য উদ্ভিদ ও প্রাণীজ দ্রব্য উৎপাদন করে , তাকে কৃষিকাজ বলে ।
- ফসল রোপণের সময় অনুসারে ভারতে উৎপন্ন ফসলগুলির শ্রেণিবিভাগ করো ।
Answer : ফসল রোপণের সময় অনুসারে বিভিন্ন ঋতু হিসেবে ভারতের উৎপন্ন ফসলগুলিকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয় , যেমন ( ১ ) রবি ফসল এবং ( ২ ) খরিফ ফসল ।
- রবি শস্য ও খরিফ শস্য বলতে কী বোঝায় ?
Answer : রবি শস্য : এককথায় রবিশস্যের অর্থ হল । ‘ শীতকালীন ফসল ‘ । প্রধানত জলসেচের ওপর নির্ভর করে শীতকালে যেসব ফসলের চাষ করা হয় সেইসব ফসলকে রবি ফসল বলে । গম , যব , আলু , বিভিন্ন রকমের তৈলবীজ ও ডাল রবি ফসলের উদাহরণ ।
খরিফ শস্য : এককথায় খরিফ ফসলের অর্থ হল । ‘ বর্ষাকালীন ফসল ‘ । বর্ষাকালে বৃষ্টির জলের ওপর নির্ভর করে । যেসব ফসলের চাষ করা হয় , সেইসব ফসলকে খরিফ শস্য বলে । ধান , পাট , ভুট্টা , আখ , জোয়ার , বাজরা , কার্পাস প্রভৃতি খারিফ ফসলের উদাহরণ ।
- খাদ্যফসল বলতে কী বোঝ ?
Answer : খাদ্যের চাহিদা মেটানোর জন্য যেসকল ফসলের চাষ করা হয় , সেই ধরনের ফসলকে খাদ্যফসল বলে । যেমন- ধান , গম , মিলেট ।
- তন্তুজাতীয় ফসল ( Fibre Crop ) কাকে বলে ?
Answer : যে ফসল থেকে তত্ত্ব বা সুতো তৈরি হয় তাকে তন্তুজাতীয় ( Fibre Crop ) বলে । এইপ্রকার গাছ থেকে একবারই মাত্র ফসল পাওয়া যায় ।
উদাহরণ তুলো , পাট , শন ( Hemp ) ও মেস্তা ( Mesta ) ।
জেনে রাখো : কার্পাস গাছের গুটিফল ফেটে তুলো উৎপন্ন হয় বলে একে বীজ তন্তু ফসল ( Seed or Bool Fibre ) বলে । অন্য দিকে পাট , শন , মেস্তা গাছের বাকল বা ছাল থেকে তন্তু পাওয়া যায় বলে একে বাকল জাতীয় তন্তু ফসল ( Bast Fibre ( Crops ) বলে ।
- উদাহরণসহ অর্থকরী ফসলের ( Cash Crops ) সংজ্ঞা দাও ।
অথবা , ‘ অর্থকরী ফসল ‘ বলতে কী বোঝ ?
Answer : প্রধানত অর্থ উপার্জনের জন্য বা বাজারে বিক্রির জন্য যেসব ফসল চাষ বা উৎপাদন করা হয় সেইসব ফসলকে অর্থকরী ফসল বলে ।
উদাহরণ : ভারতে আখ , পাট , কার্পাস তুলা , ডাল , তামাক প্রভৃতি । অবশ্য খাদ্যশস্য বা বাগিচা ফসল বিক্রি করেও অর্থাগম হয় ।
- বাগিচা ফসল ( Plantation Crop ) কাকে বলে ?
Answer : অনুকুল ভৌগোলিক সুবিধাযুক্ত কোনো বৃহদায়তন খামারে সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বিদেশি মূলধনের সহায়তায় যেসব ফসলের চাষ শুরু হয় , তাদের বাগিচা ফসল বলে ।
যেমন :- চা , কফি । ভারতে প্রধান বাগিচা ফসল কী কী ? উত্তর : ভারতের প্রধান বাগিচা ফসল- ( i ) চা , ( ii ) কফি , ( iii ) তামাক , ( iv ) রবার , ( v ) বিভিন্ন মশলা , ( vi ) সিঙ্কোনা ।
- বাণিজ্যিক ফসল ( Commercial Crops ) কাকে বলে ?
Answer : প্রধানত কৃষিভিত্তিক বাণিজ্য বা রপ্তানির জন্য যেসব ফসল উৎপাদন করা হয় , সেইসব ফসলকে বাণিজ্য ফসল বলে । অবশ্য দেশের মধ্যেও এইসব ফসল ব্যবহৃত হতে পারে । উদাহরণ : ভারতে চা , কফি , কাজুবাদাম প্রভৃতি হল বাণিজ্যিক ফসল ।
- তৈলবীজ ( Oil Seed ) কী ?
Answer : তৈলবীজ হল এক বিশেষ ধরনের শস্যের বীজ যা থেকে তেল পাওয়া যায় । যেমন – সরিষা , সয়াবিন , নারকেল , তিসি ইত্যাদি ।
- তৈলবীজ কত প্রকার ও কী কী ?
Answer : তৈলবীজ প্রধানত দুই প্রকারের হয় । যথা— ( ১ ) সরিষা , সূর্যমুখী , সয়াবিন , নারকেল , তিল , মহুয়া ইত্যাদি থেকে যে তেল পাওয়া যায় , তা হল খাওয়ার যোগ্য তৈলবীজ ( Edible Oilseeds ) । তাই তাকে বলে খাওয়ার ভোজ্য তৈলবীজ । এবং ( ২ ) অন্যদিকে রেড়ি , তিসি , নিম , করা ইত্যাদি থেকে যে – তেল পাওয়া যায় , তা সাধারণত খাওয়ার অযোগ্য , তাই তাকে বলে । খাওয়ার অভোজ্য তৈলবীজ ( Non Edible Oilseeds ) ।
- ভারতে প্রধানত কোন্ কোন্ ধান উৎপন্ন হয় ?
Answer : ভারতে সাধারণত তিন শ্রেণির ধান উৎপন্ন হয় । ( i ) আমন ধান প্রচুর জলের প্রযোজন হয় বলে বর্ষাকালে বপন করে শীতকালে ফসল কাটা হয় । ( ii ) আউশ ধান — প্রাক্ মৌসুমি বৃষ্টিতে বপন করে মে – জুন মাসে কাটা হয় । ( iii ) বোরো ধান— বসন্তকালের শেষে লাগিয়ে গ্রীষ্মকালে কাটা হয় ।
- ভারতের ধান উৎপাদক প্রথম ৩ টি রাজ্যের নাম লেখো ।
Answer : ভারতের ধান উৎপাদনে প্রথম রাজ্য হল পশ্চিমবঙ্গ , দ্বিতীয় রাজ্য হল অন্ধ্রপ্রদেশ ও তৃতীয় রাজ্য হল উত্তরপ্রদেশ ।
- ভারতে শীতকালে গম চাষ করা হয় কেন ?
Answer : শীতকালে গম চাষ করার কারণ হল : ( i ) গম চাষের প্রথমাবস্থায় গম বীজের অঙ্কুরোদগম ও গমের চারা বৃদ্ধির সময় ১৫-১৬ সেলসিয়াস উত্তাপ এবং গম চাষের দ্বিতীয়াবস্থায় গম পাকার সময় ১৮০–২০ ° সেলসিয়াস উত্তাপ প্রয়োজন । ভারতে এই উত্তাপ কেবলমাত্র শীতকালেই সম্ভবপর হয় বলে ভারতে শীতকালে । গম চাষ করা হয় । ( ii ) এ ছাড়া গম চাষের পক্ষে তুষারপাত ক্ষতিকারক । শীতকালে ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে হিমশীতল আবহাওয়া দেখা গেলেও তুষারপাত হয় না । এইসব অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য ভারতে শীতকালে গম চাষ করা হয় ।
ব্যাখ্যামূলক উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর | ভারতের কৃষি (ভারত – পঞ্চম অধ্যায়) – মাধ্যমিক ভূগোল সাজেশন | Madhyamik Geography Suggestion :
- দক্ষিণ ভারতে কফি উৎপাদন বেশি হয় কেন ?
Answer : কফি উষ্ণ – আৰ্দ্ৰ ক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলের বাগিচা ও ফসল । দক্ষিণ ভারতে কফি বাগিচাগুলি গড়ে ওঠার কারণগুলি হল— ( ১ ) এই অঞ্চলে সারাবছরই উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু দেখা যায় , ( ২ ) এই অঞ্চলে উন্নতা ( গড়ে ২০০–৩০ ° সে . ) ও বৃষ্টিপাত ( গড়ে ১৫০–২৫০ সেমি ) কফি চাষের পক্ষে অনুকূল অবস্থার সৃষ্টি করে । ( ৩ ) এই অঞ্চলের লৌহমিশ্রিত উর্বর দোআঁশ মাটি এবং ( ৪ ) অনুচ্চ পাহাড়ের ঢালু জমিতে সহজেই কফি বাগিচা তৈরি করা যায় । এইসকল কারণেই দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক , কেরল , তামিলনাড়ু , অন্ধ্রপ্রদেশ ইত্যাদি রাজ্যের পার্বত্য অঞ্চলে যথেষ্ট পরিমাণ কফি উৎপন্ন হয় ।
- চা কত প্রকারের ও কী কী ?
Answer : চা – এর প্রক্রিয়াকরণের পদ্ধতি অনুসারে চা – কে প্রধানত চার ভাগে ভাগ করা যায় । যথা- ( ১ ) কালো চা : কালো চা প্রস্তুত করার সময় , চা – এর পাতাগুলি গাছ থেকে তুলে প্রথমে রোদে শুকিয়ে নিয়ে পরে আবার যন্ত্রের সাহায্যে শুকিয়ে কালো করা হয় । ( ২ ) সবুজ চা চা গাছের কচি পাতা ও কুঁড়ি রোদে শুকিয়ে এইপ্রকার সবুজ চা তৈরি করা হয় । ভারতে সবুজ চায়ের প্রচলন কম । ( ৩ ) ওলং চা : এক্ষেত্রে চা গাছের পাতা রোদে শুকিয়ে ও মিশিয়ে বাঁকিয়ে এই চা প্রস্তুত করা হয় । ( ৪ ) ইস্টক চা চা গাছের নিকৃষ্ট পাতা , চা পাতার ডাঁটি , গুঁড়ো চা , ভাতের মাড় , মশলা , মাখন ইত্যাদি একসঙ্গে মিশিয়ে চাপ দিয়ে ছোটো ছোটো আয়তাকার খণ্ডে পরিণত করে এইপ্রকার চা প্রস্তুত করা হয় ।
- কফির শ্রেণিবিভাগ করো ।
Answer : কফি প্রধানত ৪ প্রকারের হয় । যথা ( ১ ) আরবীয় কফি : এটি সর্বোৎকৃষ্ট কফি , এর আদি বাসভূমি হল আরব উপদ্বীপের ইয়েমেন । একে ‘ মোকা ‘ কফিও বলে । ( ২ ) রোবাস্টা কফি : নিকৃষ্ট মানের এই কফির আদি বাসভূমি হল পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকা । ভারতে এই কফির উৎপাদন বেশি হয় । ( ৩ ) লাইব্রেরীয় কফি : এটি ইনস্ট্যান্ট কফি যা লাইবেরিয়ায় চাষ করা হয় । ভারতে এই কফি চাষ করা হয় না । এবং ( 8 ) ব্লু মাউন্টেন কফি : এই ধরনের কফি প্রধানত জামাইকায় চাষ হয় । ভারতে এই কফি চাষ হয় না ।
- ব্যবহারের প্রকৃতি অনুসারে ভারতে উৎপন্ন ফসলের শ্রেণিবিভাগ করো ।
Answer : ভারত একটি কৃষিপ্রধান দেশ । বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশে এখানে নানারকম ফসল উৎপন্ন হয় । ব্যবহারের প্রকৃতি অনুসারে ভারতে উৎপন্ন ফসলের শ্রেণিবিভাগগুলি হল— ( ১ ) খাদ্যশস্য : ধান , গম , যব , ভুট্টা , জোয়ার , বাজরা , রাগি প্রভৃতি খাদ্যশস্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় । ( ২ ) অন্যান্য খাদ্য ফসল : বিভিন্ন রকমের ডাল , মশলা , আখ , ফল প্রভৃতিও খাদ্যফসলের মধ্যে পড়ে । ( ৩ ) পানীয় ও ভেষজ শস্য : চা , কফি , তামাক , সিঙ্কোনা প্রভৃতি এই শ্রেণির পর্যায়ভুক্ত । ( ৪ ) তৈলবীজ : সরষে , তিসি , তিল , রেড়ি , সূর্যমুখী , চিনেবাদাম প্রভৃতি তৈলবীজ থেকে তেল উৎপন্ন হয় । ( ৫ ) তন্তুজ শস্য : পাট , মেস্তা , শণ , কার্পাস থেকে আঁশ বা তন্তু পাওয়া যায় বলে এদের তন্তুজাতীয় শস্য বলে । মনে রাখতে হবে যে , বিভিন্ন ফসলের মধ্যে পাট , কার্পাস ও আথকে অর্থকরী ফসল চা , কফি , রবার , তামাক প্রভৃতি বাগিচা ভিত্তিক ফসলকে বাগিচা ফসল এবং সমস্ত অর্থকরী ও বাগিচা ফসলকে বাণিজ্যিক ফসল বলা হয় ।
- ঋতু অনুসারে ভারতে উৎপাদিত ফসলের শ্রেণিবিভাগ করো ।
Answer : ঋতু অনুসারে ফসলের শ্রেণিবিভাগ : ( ক ) খরিফ শস্য ( Kharif Crops ) : এককথায় খরিফ শস্যের অর্থ হল ‘ বর্ষাকালীন ফসল ‘ । বর্ষাকালে বৃষ্টির জলের ওপর নির্ভর করে যেসব ফসলের চাষ হয় , তাদেরকে খরিফ শস্য বলে । | যেমন — আমন ধান , পাট , তুলো , ভুট্টা , জোয়ার , বাজরা ইত্যাদি ।
( খ ) রবি শস্য ( Rabi Crops ) : এককথায় রবিশস্য হল ‘ শীতকালীন ফসল ‘ । প্রধানত জলসেচের ওপর নির্ভর করে শীতকালে যেসব ফসলের চাষ হয় , সেইসব ফসলকে রবি শস্য বলে । যেমন — গম , যব , আলু , বিভিন্ন প্রকার তৈলবীজ ও ডাল ইত্যাদি ।
( গ ) জায়িদ শস্য ( Zayid Crops ) : শীতের শেষে গ্রীষ্মকালে যেসব ফসলের চাষ করা হয় , এবং বর্ষার আগে যেসব ফসল তোলা হয় , তাদের জায়িদ শস্য বলে । যেমন — আউশ ধান , বাদাম , পাট , শাকসবজি ইত্যাদি ।
- দার্জিলিং চা চাষে উন্নত কেন ?
Answer : দার্জিলিং চা উৎপাদনে ভারতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে । দার্জিলিং – এর পার্বত্য অঞ্চল ও তার সংলগ্ন তরাই ও ডুয়ার্স অঞ্চলে চা চাষ হয় । দার্জিলিং – এর চা স্বাদে – গন্ধে ও গুণমানে পৃথিবীতে সর্বশ্রেষ্ঠ । এখানে চা উৎপাদনের কারণগুলি হল –
( ১ ) পার্বত্যময় ভূপ্রকৃতি : দার্জিলিং এর ভূপ্রকৃতি পার্বত্যময় । অসমতল ভূপ্রকৃতি , খাড়া ঢাল চা চাষের বিশেষ উপযোগী । দার্জিলিং এ অধিকাংশ চা বাগিচাগুলি ১০০০ – ২০০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত ।
( ২ ) জলবায়ু অঞ্চলের গড় উন্নতা ১০ ° – ২০ ° সেঃ । বার্ষিক গড় বৃষ্টি ১৫০-২০০ সেমি । এই অঞ্চলে তুষারপাত ও তুহিন খুব www একটা ঘটে না । মাঝারি থেকে অধিক আর্দ্রতা , মৃদু কুয়াশা ও স্বল্প উন্নতা এখানে উন্নতমানের চা চাষে সহায়তা করেছে ।
( ৩ ) মৃত্তিকা : দার্জিলিং – এ মৃত্তিকা অম্লধর্মী পডসল শ্রেণির । এই মাটি লৌহ ও ম্যাঙ্গানিজ সমৃদ্ধ যা চাষের অত্যন্ত উপযোগী ।
( ৪ ) প্রাথমিক অবস্থায় ইংরেজদের মাধ্যমে মূলধন বিনিয়োগ ; ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি এখানে চা চাষের উন্নতির জন্য প্রাথমিক অবস্থায় ইংরেজ বণিক সম্প্রদায় প্রচুর মূলধন বিনিয়োগ করে । এ ছাড়া ,
( ৫ ) উন্নত পরিকাঠামো ,
( ৬ ) নিকটে কলকাতা বন্দর দিয়ে । চা রপ্তানির সুবিধা — এই অঞ্চলে চা চাষের উন্নতিতে সহায়তা করেছে ।
- বাগিচা ফসল ( Garden Crops ) কী ?
Answer : অনুকূল ভৌগোলিক সুবিধাযুক্ত কোনো বৃহদায়তন খামারে সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে যেসব ফসলের চাষ বা উৎপাদন করা হয় , তাদের বাগিচা ফসল বলে । ( ১ ) প্রাথমিক পর্যায়ে ঔপনিবেশিকদের মাধ্যমে মূলধন বিনিয়োগ , ( ২ ) দেশীয় শ্রমিকের ব্যবহার , ( ৩ ) বাণিজ্যিকভাবে রপ্তানির জন্য ফসল উৎপাদন , ( ৪ ) বৃহদায়তন খামার , ( ৫ ) বিপণনের সুব্যবস্থা , ( ৬ ) আধুনিক প্রযুক্তি ও কৃষিযন্ত্রের ব্যবহার । উদাহরণ : ভারতের উল্লেখযোগ্য বাগিচা ফসলগুলি হল : ( ১ ) চা , ( ২ ) কফি , ( ৩ ) রবার , বিভিন্ন ধরনের মশলা প্রভৃতি ।
- শস্যাবর্তন কৃষি ( Crop Rotation ) কী ?
Answer : যে বহুফসলি কষিব্যবস্থায় বিশেষ কোনো অঞ্চলে জলবায়ুর পরিবর্তন , বৃষ্টিপাত , তাপমাত্রা , জমির উর্বরতা , জলসেচ , সার দেওয়া , ফসলের চাহিদা প্রভৃতি বিষয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একই জমিতে বছরের এক এক সময়ে এক এক রকম ফসল উৎপাদন করা হয় তাকে শস্যাবর্তন কৃষি বলে । শস্যাবর্তন কৃষি উৎপাদন পদ্ধতিতে জমি চাষ করা হলে , বাজারের চাহিদা অনুসারে ফসল উৎপাদন করা হয় বলে ন্যায্য দাম পেয়ে একদিকে কৃষকরা উপকৃত হয় , অন্যদিকে জমির উর্বরতাও বজায় থাকে ।
ভারতীয় কৃষিকাজে শস্যাবর্তন করার উদ্দেশ্য : ( i ) সঠিকভাবে জমির উর্বরতার মান বজায় রাখা । ( ii ) শস্য উৎপাদনে বৈচিত্র্য আনা । ( iii ) জমিতে বিভিন্ন ধরনের শস্যের চাষ পর্যায়ক্রমিকভাবে হয় বলে রোগ ও পোকার আক্রমণ অনেকটাই কম । ( iv ) শস্যাবর্তন পদ্ধতিতে বছরে একের বেশি শস্যের চাষ হয় । বলে চাষিদের লাভের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ।
- ভারতীয় কৃষির সমস্যা ও তার সমাধান সম্পর্কে লেখো ।
Answer : ভারতীয় কৃষির সমস্যা : যদিও ভারত কয়েকটি ফসল উৎপাদনে অন্যতম শীর্ষস্থানের অধিকারী এবং খাদ্য উৎপাদনে মোটামুটি স্বয়ম্ভর তবু এদেশে কৃষি বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন । ( i ) মাথাপিছু জমি কম এবং জোতের আয়তন ক্ষুদ্র : চাষিদের মাথা পিছু জমি উন্নত দেশগুলির তুলনায় খুবই কম । আবার জমিগুলি আয়তনে এতো ছোটো এবং ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে । যে তাতে উন্নত কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহার সম্ভব নয় । ( ii ) ভূমিসংস্কার : কয়েকটি রাজ্য বাদ দিলে এখনও পুরোপুরি জমিদারি প্রথা বিলোপ হয়নি । ( iii ) কৃষি মৌসুমি নির্ভর এখানে ২/৩ ভাগ কৃষিজমি খামখেয়ালি মৌসুমি বায়ু নির্ভর । ওই জমিগুলিতে বছরে একবার ফসল ফলে এবং তাও অনিশ্চিত । ( iv ) জলসেচ সমস্যা মাত্র ১/৩ ভাগ জমি সেচের আওতাভুক্ত বলে বহুফসলি জমি কম । ( v ) আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহার : উন্নত বীজ , সার , কীটনাশক , কৃষিজ যন্ত্রপাতির ব্যবহার সীমিত । সব ফসলে উন্নত বীজ ব্যবহার হয় না । সবুজ বিপ্লবের প্রভাব ভারতের সকল স্থানে পড়েনি , ফলে উৎপাদনশীলতা কম । ( vi ) খাদ্যশস্যের প্রাধান্য বেশিরভাগ কৃষিজমি খাদ্যফসল উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় । অধিক লাভজনক হর্টিকালচার ( ফল , ফুল , শাকসবজি ) চাষ এখানে কম ।
সমাধান : স্বাধীনতার পর থেকে কৃষির উন্নতির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে । ( i ) উৎপাদনশীল বীজ : স্বাধীনতার পর থেকে উচ্চফলনশীল বীজের ব্যবহার বেড়েছে প্রায় ২০ গুণ । ( ii ) জলসেচ দ্রুতহারে জলসেচ ব্যবস্থার প্রসার ঘটিয়ে জমিকে বহুফসলি জমিতে ব্যবহার করা হয়েছে । ( iii ) সার , কীটনাশক , যন্ত্রপাতির ব্যবহার বৃদ্ধি : সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে এগুলির ব্যবহার বাড়ালে একদিকে যেমন ফসল উৎপাদন বাড়বে তেমনি পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে কম । ( iv ) কৃষকদের ঋণদান : কৃষির উন্নতির জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণদান প্রয়োজন । এই কারণে ভারত সরকার কৃষিতে ঋণদানের জন্য অসংখ্য গ্রামীণ ব্যাংক ও কৃষিব্যাংক স্থাপন করেছে । প্রায় ১০ কোটির ওপর মানুষকে দেওয়া হয়েছে কিষান ক্রেডিট কার্ড । ( v ) সবুজ বিপ্লবের প্রসার উত্তর – পশ্চিম ভারতে শুধু গম উৎপাদনে নয় সারাভারত জুড়ে সব ফসলেই সবুজ বিপ্লবের প্রসার ঘটানো হচ্ছে । ( vi ) ১০০ দিনের প্রকল্প এই প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ পরিকাঠামোর উন্নতি ঘটিয়ে পরোক্ষভাবে কৃষির উন্নতি ঘটানো হচ্ছে ।
- মিলেট জাতীয় শস্য বলতে কী বোঝ ?
Answer : মিলেট : ভূমিকা— শুষ্ক ও অনুর্বর অঞ্চলের ফসল হল মিলেট । কার্বোহাইড্রেট , প্রোটিন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ হলেও স্বাদে নিম্নমানের বলে এর জনপ্রিয়তা কম । তবে আদিবাসী অঞ্চলের প্রধান খাদ্য হল মিলেট । মিলেট কী : জোয়ার , বাজরা , রাগি কোরা কোডন , কোটকি , হারাকা , রাজগিরা প্রভৃতি নিম্নশ্রেণির ফসলকে একসাথে মিলেট বলে । এদের মধ্যে জোয়ার , বাজরা ও রাগি হল প্রধান । মিলেট উৎপাদনের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ : ভারতে শুষ্ক পরিবেশে খরিফ ও রবিফসল — উভয় হিসেবেই মিলেট চাষ হয় ।
( ক ) প্রাকৃতিক পরিবেশ ( 1 ) জলবায়ু : ( i ) উষ্ণতা : মোটা মুটি ২০০-৩০ ° সে . উন্নতায় মিলেট চাষ হয় । উন্নতা ১৫ ° সে . -এর নীচে নামলে উৎপাদন ভালো হয় না । ( ii ) বৃষ্টিপাত : বিভিন্ন মিলেট উৎপাদনে ২০-৭৫ সেমি বৃষ্টির প্রয়োজন হয় । খুব বেশি বৃষ্টি এবং দীর্ঘ দিন অনাবৃষ্টি উভয়ই মিলেট চাষের পক্ষে ক্ষতিকর ।
( 2 ) মাটি : ভারী ও হালকা পলিমাটি , লোহিত মাটি , রেগুর , বেলেমাটি — প্রায় সব মাটিতেই মিলেট চাষ হয়ে থাকে ।
( 3 ) ভূমি : সমভূমি , মালভূমি , পাহড়ের মৃদুঢালু জমিতে মিলেট চাষ করা হয় ।
( খ ) অর্থনৈতিক পরিকাঠামো : ভালো সেচ ব্যবস্থা মিলেট – এর ফলন বাড়ায় । উন্নত বীজ , সার , কীটনাশকের ব্যবহারের কারণে মিলিটের উৎপাদনশীলতা বাড়ছে ।
- ভারতকে কৃষিভিত্তিক দেশ বলা হয় কেন ?
Answer : ভারতকে কৃষিভিত্তিক দেশ বলা হয় । কারণ— ( ১ ) দেশের প্রায় ৬৫ % মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত । ( ২ ) জাতীয় আয়ের প্রায় ১৬.৬ % কৃষি ও কৃষি সংক্রান্ত সহযোগী ক্রিয়াকলাপ থেকে আসে । ( ৩ ) কৃষিকাজ ভারতের অর্থনীতিকে নানাভাবে প্রভাবিত করে । ( ৪ ) কৃষিজ দ্রব্য উৎপাদনের পরিমাণ ও প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে ভারতের অর্থনৈতিক পরিকল্পনার রূপরেখা নির্ধারণ করা হয় ।
- ভারতের কৃষিকাজে জলসেচ কেন করা হয় ?
Answer : ভারতের কৃষিকাজের অনেকাংশেই মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভরশীল । তবুও কৃষিকাজে জলসেচের সাহায্য নেওয়া হয় । কারণ— PIN ) EPU অনিয়মিত মৌসুমি বৃষ্টিপাতের জন্য জলসেচের সাহায্য নেওয়া হয় । ( ২ ) শীতকালে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ থাকায় , শীতকালীন রবিশস্য চাষের জন্য ভারতে জলসেচের প্রয়োজন হয় । ( ৩ ) মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ফলে ভারতে প্রায় ৮০ % বৃষ্টিপাত হলেও ভারতের সব জায়গায় সমান বৃষ্টিপাত হয় না । ফলে যেখানে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম সেখানে জলসেচের প্রয়োজন হয় । ( ৪ ) উচ্চফলনশীল শস্য চাষে প্রচুর জলের প্রয়োজন হয় , এই জলসেচের সাহায্য নেওয়া হয় ।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর | ভারতের কৃষি (ভারত – পঞ্চম অধ্যায়) – মাধ্যমিক ভূগোল সাজেশন | Madhyamik Geography Suggestion :
1. ভারতে চা বাগিচা ( Tea Garden ) গড়ে ওঠার অনুকূল পরিবেশ সম্বন্ধে আলোচনা করো বা বর্ণনা দাও । অথবা , চা চাষের জন্য অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ সম্পর্কে আলোচনা করো ।
Answer : পরিবেশগুলি হল : উত্তর : ভারতে চা উৎপাদনের অনুকূল ভৌগোলিক ক প্রাকৃতিক পরিবেশ : ( ১ ) জলবায়ু চা উপক্রান্তীয় মৌসুমি অঞ্চলের উচ্চভূমির ফসল । ( i ) উত্তাপ : চা চাষের জন্য আদর্শ তাপমাত্রা ২১ ° –২৯ ° সেলসিয়াস হলেও , ১৬ ° সেলসিয়াস তাপমাত্রাতেও চা চাষ করা যেতে পারে ; ( ii ) বৃষ্টিপাত বছরে ২০০-২৫০ সেন্টিমিটার গড় বৃষ্টিপাত চা চাষের পক্ষে আদর্শ । তবে প্রতি মাসে নিয়মিত বৃষ্টিপাত চা গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে । ( iii ) তুষারপাত : চা গাছ একভাবে ১০/২০ দিন তুষারপাত সহ্য করতে পারলেও বেশি তুষারপাত চা গাছের ক্ষতি করে ।
( ২ ) ভূপ্রকৃতি : পাহাড়ের জলনিকাশের সুবিধাযুক্ত ঢালু অংশ চা চাষের পক্ষে আদর্শ । তবে জলনিকাশি ব্যবস্থাযুক্ত ঈষৎ ঢালু সমভূমিতেও আজকাল চা বাগান করা হচ্ছে ।
( ৩ ) মৃত্তিকা : লৌহ মিশ্রিত উর্বর দোআঁশ মাটি চা চাষের পক্ষে বিশেষ উপযোগী । তবে মাটিতে ফসফরাস ও পটাশের উপস্থিতি চাষের সুগন্ধ বাড়ায় ( যেমন — দার্জিলিং – এর চা ) ।
( 8 ) ছায়াপ্রদানকারী বৃক্ষ : প্রখর সূর্যতাপ থেকে চা গাছকে রক্ষা করার জন্য চা বাগানে মাঝে মাঝে ছায়াপ্রদানকারী গাছ লাগাতে হয় ।
অপ্রাকৃতিক পরিবেশ : ( ১ ) সার প্রয়োগ : চা চাষের জমির উর্বরতা নষ্ট হয় বলে চা বাগানে পরিমিত মাত্রায় জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয় ।
( ২ ) সুলভ শ্রমিক : চা গাছের পরিচর্যা , আগাছা পরিষ্কার , নিড়ানো , নিয়মিত গাছ ছাঁটাই , গাছ থেকে পাতা তোলা , সায় , শুদ্ধকরণ প্রভৃতি কাজের জন্য প্রচুর দক্ষ ও অভিজ্ঞ শ্রমিকের প্রয়োজন হয় । চা গাছ থেকে চা পাতা তোলার জন্য সাধারণত নারী শ্রমিকদের কাজে লাগানো হয় ।
( ৩ ) প্রচুর মূলধন : চা বাগানের জমি কেনা , চা গাছ লাগানো এবং রক্ষণাবেক্ষণের প্রতিটি পর্যায়ে প্রচুর মূলধনের প্রয়োজন হয় ।
2. কফি উৎপাদনের ( Coffee Cultivation ) অনুকুল পরিবেশ সম্পর্কে লেখো ।
Answer : কফি চাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ :
( ক ) প্রাকৃতিক পরিবেশ :
( ১ ) জলবায়ু : উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু কফি চাষের পক্ষে বিশেষ উপযোগী । ( ১ ) কফি চাষের জন্য সারাবছর ধরে উচ্চ উত্তাপ ( ২০০-৩০ ° সে . ) এবং প্রচুর বৃষ্টিপাত ( ১৫০-২৫০ সেমি . ) প্রয়োজন । ( ২ ) কুয়াশা ও সামুদ্রিক আর্দ্রতা : কফি গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে , তেমনি তুষারপাতও ঝড়ো কফি গাছের ক্ষতি করে । ( ৩ ) মৃত্তিকা : লোহা , পটাশ ও নাইট্রোজেনযুক্ত উর্বর লাল দোআঁশ মৃত্তিকা কফি চাষের পক্ষে বিশেষ উপযোগী । ( ৪ ) জমির প্রকৃতি : জলনিকাশের সুবিধাযুক্ত পাহাড়ের ঢালু জমি কফি চাষের পক্ষে আদর্শ । ( ৫ ) ছায়াপ্রদানকারী গাছ : সরাসরি সূর্যকিরণ কফি গাছের ক্ষতি করে বলে কফি খেতে কলা , ও ভুট্টা প্রভৃতি ছায়াপ্রদানকারী গাছ লাগানো হয় ।
( খ ) অপ্রাকৃতিক পরিবেশ : ( ১ ) জলসেচ প্রয়োজনে কফি গাছে জলসেচ দিতে হয় । ( ২ ) সার প্রয়োগ : জমিতে সারের অভাব হলে সার প্রয়োগ করতে হয় । ( ৩ ) কীটনাশক প্রয়োগ : পোকামাকড়ের আক্রমণ হলে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় । ( ৪ ) সুলভ শ্রমিক : কফি খেত তৈরি , চারা লাগানো , রক্ষণাবেক্ষণ , কফি ফল সংগ্রহ এবং গুঁড়ো কফি প্রস্তুতির বিভিন্ন পর্যায়ে 1 , প্রচুর দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হয় । ( ৫ ) মূলধন : কফি বাগান কেনা , কফি খেত তৈরি , চারা লাগানো , কফি গাছের রক্ষণাবেক্ষণ ও তৈরি কফি বিপণনের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রচুর মূলধনের প্রয়োজন হয় ।
3. কার্পাস উৎপাদনের ( Cotton Cultivation ) অনুকূল অবস্থা কী কী ?
Answer : কার্পাস উৎপাদনের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ : ক প্রাকৃতিক অবস্থা : ( ১ ) জলবায়ু : ( i ) উত্তাপ : কার্পাস চাষের জন্য মাঝারি উত্তাপ ( ২০০ ২৬ ° সে . ) প্রয়োজন । কার্পাস চাষের প্রাথমিক অবস্থায় গাছে ফুল না ফোটা পর্যন্ত ২১০ । ° সেলসিয়াস উষ্ণতা থাকা প্রয়োজন । ( ii ) বৃষ্টিপাত : ৬০–১০০ সেমি বার্ষিক বৃষ্টিপাত কার্পাস চাষের উপযোগী , তবে জলসেচের ব্যবস্থা থাকলে ৫০ সেন্টিমিটারের কম বৃষ্টিপাতেও উৎকৃষ্ট তুলা উৎপন্ন হতে পারে ( যেমন — মিশরের নীলনদের উপত্যকা ) । কার্পাস চাষের প্রাথমিক অবস্থায় আর্দ্র জলবায়ু এবং গুটি ফাটার সময় শুকনো বৃষ্টিহীন রৌদ্রকরোজ্জ্বল আবহাওয়ার প্রয়োজন । ( iii ) তুহিনমুক্ত অবস্থা : কার্পাস চাষে জলবায়ুর গুরুত্ব বেশি । কার্পাস চাষ করতে হলে বছরে অন্তত ২০০ দিন তুহিনমুক্ত থাকা প্রয়োজন , তা না হলে গাছ ও কার্পাস তুলোর গুটি দুই – ই নষ্ট হয়ে যায় । ( iv ) আর্দ্রতা আর্দ্র সমুদ্র বায়ু কার্পাস চাষের পক্ষে বিশেষ উপযোগী ।
( ২ ) জমির প্রকৃতি : গাছের গোড়ায় জল জমলে কার্পাস গাছের ক্ষতি হয় বলে জল নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত একটু ঢালু ও তরঙ্গায়িত জমি কার্পাস চাষের পক্ষে আদর্শ ।
( ৩ ) মৃত্তিকা : কার্পাস উৎপাদনের জন্য চুন ও লবণ মেশানো হালকা দোআঁশ মাটি এবং জল ধরে রাখার ক্ষমতাসম্পন্ন কৃষ্ণমৃত্তিকা ( যা কৃষ্ণ কাপার্স মৃত্তিকা নামে পরিচিত ) অথবা চারনোজেম মৃত্তিকা বিশেষ উপযোগী । এইজন্য দাক্ষিণাত্যের কৃমৃত্তিকা অঞ্চলে ভারতের অধিকাংশ কার্পাস উৎপন্ন হয় । [ খ ] অপ্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা : ( ১ ) জলসেচ : বৃষ্টির অভাব হলে কার্পাস খেতে জলসেচ দিতে হয় ।
( ২ ) সার কার্পাস গাছ জমির উর্বরতা তাড়াতাড়ি নষ্ট করে দেয় , তাই কার্পাস চাষের জমিতে পরিমিত জৈব ও রাসায়নিক সার দিতে হয় । এ ছাড়া শস্যাবর্তন প্রথার দ্বারাও জমির উর্বরা শক্তি বাড়ানো হয় । কীটনাশক ওষুধ : কার্পাস গাছে রোগপোকার ( বিশেষত বল – উইভিল পোকার আক্রমণ খুব বেশি , এইজন্য কীটনাশক । ওষুধ ব্যবহার করা দরকার । ফেলতে হবে ।
( ৪ ) আগাছা দমন কার্পাস খেতে আগাছা জন্মালে , তা তুলে
( ৫ ) সুলত শ্রমিক কার্পাস গাছ থেকে গুটি তোলা এবং মুক্তি থেকে তুলা ছাড়ানোর জন্য প্রচুর দক্ষ ও পরিশ্রমী প্রয়োজন ।
( ৬ ) মূলধন : আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি , জলসেচ ব্যবস্থা , সার ও কীটনাশকের প্রয়োগের জন্য এবং উন্নত প্রথায় তুলা চাষের জন্য প্রচুর মূলধনের প্রয়োজন হয় ।
4. ভারতের কোন কোন অঞ্চলে কার্পাস উৎপন্ন হয় ।
Answer : ভারতে তুলো বা কার্পাস চাষের আদর্শ জলবায়ু ও মৃত্তিকা বিদ্যমান থাকায় , তামিলনাড়ু , মহারাষ্ট্র , গুজরাট , পাঞ্জাব , হরিয়ানা , কর্ণটিক ও মধ্যপ্রদেশ — ভারতের এই সাতটি রাজ্যে ভারতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কার্পাস উৎপন্ন হয় । ভারত তুলো উৎপাদনে পৃথিবীতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে ।
ভারতে ৪ টি প্রধান তুলা উৎপাদক অঞ্চল আছে । ভারতের মোট কার্পাস জমির প্রায় ৮৫ % এবং মোট কার্পাস উৎপাদনের * প্রায় ৮০ % এই চারটি অঞ্চলে উৎপন্ন হয় , যেমন—
( ১ ) দাক্ষিণাত্যের কৃষ্ণ মৃত্তিকা বা লাভা অঞ্চল : দাক্ষিণাত্যের বিশাল কৃষ্ণ মৃত্তিকা অঞ্চলটিকে দু – ভাগে ভাগ করা হয় , যেমন— ( ক ) শোলাপুর , নাগপুর , ওয়ার্ধা , নাসিক প্রভৃতি অঞ্চলকে নিয়ে মহারাষ্ট্র মালভূমির পূর্বাংশ এবং ( খ ) উজ্জয়িনী , মালব প্রভৃতি অঞ্চলকে নিয়ে গঠিত মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের দক্ষিণ – পশ্চিমাংশ । দাক্ষিণাত্যের কৃষ্ণ মৃত্তিকা অঞ্চল হল ভারতের অন্যতম প্রধান তুলো উৎপাদক অঞ্চল ।
( ২ ) গুজরাট সমভূমি অঞ্চল : সুরাট , ব্রোচ , ভদোদরা প্রভৃতি অঞ্চল নিয়ে এই অঞ্চল গঠিত ।
( ৩ ) উত্তর কর্ণটিক অঞ্চল : হুবলি , বেলগাঁও , ধারওয়ার , বেলারি প্রভৃতি স্থান নিয়ে এই অঞ্চলটি গঠিত হয়েছে ।
( ৪ ) সিন্ধু সমভূমির দক্ষিণ – পশ্চিম অংশ : ( ক ) পাঞ্জাবের লুধিয়ানা , ফিরোজপুর , জলন্ধর প্রভৃতি অঞ্চল এবং ( খ ) হরিয়ানার রোটক , আম্বালা , হিসার প্রভৃতি অঞ্চল । পরিমিত জলসেচ এবং কার্পাস উৎপাদনের আদর্শ জলবায়ুর জন্য এই অঞ্চলে হেক্টরপ্রতি কার্পাস উৎপাদন সারাভারতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ( হেক্টরপ্রতি প্রায় ২৮০ কিলোগ্রাম ) । ভাক্রা – নাঙ্গাল বাঁধের কল্যাণে বর্তমানে এই অঞ্চলে দীর্ঘ আঁশযুক্ত উৎকৃষ্ট শ্রেণির কার্পাস তুলা উৎপন্ন হচ্ছে । উপরোক্ত চারটি প্রধান অঞ্চল ছাড়াও
( ৫ ) তামিলনাড়ু রাজ্যের মাদুরাই , কোয়েম্বাটোর , তিরুনেলভেলি , তিরুচিরাপল্লী প্রভৃতি অঞ্চল ,
( ৬ ) অন্ধ্রপ্রদেশের অনন্তপুর , গুন্টুর , কুর্নল প্রভৃতি অঞ্চল এবং
( ৭ ) রাজস্থানের গঙ্গানগরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কার্পাস উৎপন্ন হয় ।
5. ‘ সবুজ বিপ্লব ‘ Green Revolution ) বলতে কী বোঝ ?
Answer : ‘ সবুজ বিপ্লব বা গ্রিন রেভোলিউশন ( Green Revolution ) বলতে উচ্চফলনশীল বীজ এবং অন্যান্য কৃষি পরিকাঠামোর সাহায্যে ফসল উৎপাদনে অভূতপূর্ব উন্নতিকে বোঝায় । এই সবুজ বিপ্লব শুরু হয়েছিল ১৯৬০ – এর দশকের শেষে ড . নরম্যান আরনেস্ট বোরলগ ( Dr. Norman Earrest Borlaug ) -এর উদ্যোগে । Green Revolution শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন মার্কিন প্রশাসনের অন্যতম আধিকারিক উইলিয়াম এস গড ( William S. Gand ) ।
সবুজ বিপ্লবের উপাদানসমূহ : প্রধানত ১২ টি উপাদানের মাধ্যমে বা বলা যায় সরকারীভাবে গৃহীত এই কর্মসূচির মাধ্যমে ভারতে সবুজ বিপ্লব ঘটেছে । এই উপাদানগুলি হল ( ১ ) উচ্চফলনশীল বীজের ব্যবহার , ( ২ ) জলসেচ , ( ৩ ) রাসায়নিক সার প্রয়োগ , ( ৪ ) কীট ও পতঙ্গনাশক ওষুধ প্রয়োগ , ( ৫ ) প্রকল্প এলাকার উন্নয়ন ( ৬ ) জোতের সংহতিসাধন , ( ৭ ) ভূমিসংস্কার , ( ৮ ) কৃষিঋণ , ( ৯ ) গ্রামীণ বিদ্যুতায়ন , ( ১০ ) গ্রামীণ সড়ক ও বাজারের উন্নতিসাধন , ( ১১ ) কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার ও ( ১২ ) কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ।
এইসব পরিকল্পনার সুফল হিসেবে বিশেষ করে উত্তর পশ্চিম ভারতের হরিয়ানা ও পাঞ্জাবের গম উৎপাদনে এবং দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যে চাল উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায় । এর ফলে ১৯৫০–৫১ খ্রিস্টাব্দে ভারতে যেখানে মাত্র ২০৬ লক্ষ টন চাল ও ৬৫ লক্ষ টন গম উৎপন্ন হয়েছিল । সেখানে ১৯৭০-৭১ খ্রিস্টাব্দে ভারতের চাল ও গম উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গিয়ে যথাক্রমে ৪২৩ লক্ষ টন ও ২৩৯ লক্ষ টনে পরিণত হয় । তবে বলা যায় যে , এই সবুজ বিপ্লবের সবচেয়ে বেশি সুফল ভোগ করেছিল পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্য । তবে , এই সবুজ বিপ্লবের ফলে ভারত খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বনির্ভর হয়ে ওঠে ।
6. ভারতের কৃষির প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি সম্পর্কে লেখো ।
Answer : ভারতের কৃষির প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য :
( ১ ) জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি ( Subsistence Agriculture ) ভারতের কৃষির অধিকাংশই কৃষক তার নিজের ও পরিবারের খাদ্যের প্রয়োজন মেটানোর জন্য ব্যবহার করে । তাই এই কৃষিকে জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি বলা হয় ।
( ২ ) জনসংখ্যার চাপ ( Pressure of Population ) : ভারতের জনসংখ্যা ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে । ফলে মানুষের খাদ্যের চাহিদাও ক্রমশ বেড়ে চলেছে । এই চাহিদার অনুপাতে সঠিক জোগান দেওয়ার জন্য ভারতে কৃষিকাজের পরিমাণও বেড়ে চলেছে ।
( ৩ ) কৃষিতে পশুশক্তির প্রাধান্য ( Predominance of animal force ) : ভারতের অধিকাংশ দরিদ্র কৃষকই চাষের জন্য দামি যন্ত্রপাতি ব্যবহার না – করে আদিম পদ্ধতিতে পশুশক্তির দ্বারাই চাষবাস করে থাকে । তাই চাষাবাদের সাথে ক্ষুদ্রাকারে পশুপালনও করা হয়ে থাকে ।
( ৪ ) মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভরতা ( Dependence on Monsoon Rainfall ) : ভারত মৌসুমি জলবায়ুর দেশ । তাই ভারতের অধিকাংশ কৃষিকাজই প্রধানত মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভর করে থাকে । বেশি বৃষ্টি বা কম বৃষ্টি হলে বন্যা বা খরার জন্য চাষবাস ভালো হয় না । তাই পরিমিত পরিমাণে বৃষ্টিপাত একান্তই প্রয়োজন ।
( ৫ ) ক্ষুদ্রাকৃতি জমিজোত ( Small size of land Holding ) : ভারতের কৃষিজমিগুলি পরিসরে ছোটো ছোটো হয়ে থাকে । এখানে ক্ষুদ্র , প্রান্তিক ও ভূমিহীন বা ভাগচাষির প্রাধান্য বেশি ।
( ৬ ) কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার ( Un controlled uses of pesticides and Chemical fertilizers ) : ভারতে কৃষিজ দ্রব্যসামগ্রীর চাহিদা এতই বেশি যে , সেই পরিমাণ খাদ্যের জোগান দেওয়ার জন্য চাষিরা বিভিন্ন পদ্ধতিতে নানান কীটনাশক ও রাসায়নিক সার অনিয়ন্ত্রিতভাবে জমিতে প্রয়োগ করে ।
( ৭ ) খাদ্যশস্যের প্রাধান্য ( Predominance of Food Crops ) : ভারতের কৃষিতে অন্যান্য শস্যের তুলনায় খাদ্যশস্যের প্রাধান্য বেশি । যেমন — ধান , গম , মিলটে , ইত্যাদি ।
( ৮ ) পশুখাদ্যের অভাব ( Insignificant place to given fodder crops ) : ভারতের কৃষির ক্ষেত্রে পশুখাদ্যের অভাব এক উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ।
( ৯ ) বহু শস্যের উৎপাদন ( Variety of food Crops ) : ভারতের কৃষি ব্যবস্থায় বহু শস্যের উৎপাদন লক্ষ করা যায় ।
7. ধান উৎপাদনের ( Paddy Cultivation ) অনুকূল পরিবেশ কী কী ?
অথবা , ধান চাষের উপযোগী জলবায়ু , ভূপ্রকৃতি ও মৃত্তিকা সম্বন্ধে আলোচনা করো ।
অথবা , গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলে ধানচাষের অনুকূল প্রাকৃতিক অবস্থাগুলি আলোচনা করো ।
Answer : ধান উৎপাদনের অনুকূল পরিবেশগুলি হল :
[ ক ] প্রাকৃতিক পরিবেশ : ( ১ ) জলবায়ু ভারতের ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু ধান চাষের পক্ষে উপযুক্ত । ( i ) প্রচুর বৃষ্টিপাত ধান চাষের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত প্রয়োজন । ১০০ থেকে ২০০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত ধান চাষের পক্ষে আদর্শ । ধান গাছের গোড়ায় জমে থাকা জল ধান । গাছের বৃদ্ধি ঘটাতে সহায়তা করে । কিন্তু ধান কাটার সময় বৃষ্টি হলে ধানের অত্যন্ত ক্ষতি হয় । এই সময় শুকনো জলবায়ুর প্রয়োজন । ( ii ) উন্নতা ধান চাষের জন্য পর্যাপ্ত সূর্যের উত্তাপ ( ১৬০–৩০ ° সেলসিয়াস ) প্রয়োজন । ( iii ) আর্দ্রতা : অধিক আর্দ্রতা ( ১৮ % ) ধান চাষের পক্ষে সহায়ক । ( ২ ) ভূপ্রকৃতি : গাছের গোড়ায় জমে থাকা জল ধান গাছের বৃদ্ধি ঘটাতে সাহায্য করে বলে নদী অববাহিকা বা বদ্বীপ অঞ্চলের নীচু সমতলজমি ( যাতে জল দাঁড়িয়ে থাকতে পারে ) ধান চাষের পক্ষে একেবারে আদর্শ । এ ছাড়া পাহাড়ের গায়ে ধাপ কেটে সমতল ভূমি তৈরি করেও ধান চাষ করা হয় । ( ৩ ) মুক্তিকা : নদী উপত্যকা , বদ্বীপ এবং উপকূল অঞ্চলের নিম্ন সমভূমির পলিময় উর্বর দোআঁশ ও এঁটেল মাটি ধান চাষের পক্ষে আদর্শ । মাটিতে কাদার পরিমাণ কিছু বেশি থাকলে মাটির জলধারণ ক্ষমতা বাড়ে , যা ধান গাছের গোড়ায় জল জমিয়ে রাখতে সাহায্য করে ।
[ খ ] অপ্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ ( ১ ) জলসেচ প্রয়োজনীয় জলের অভাব ঘটলে ধানের জমিতে জলসেচ দিতে হয় । ( ২ ) সার প্রয়োগ : উচ্চ ফলনশীল ধান চাষে গোবর , কম্পোস্ট , ইউরিয়া , সুপার ফসফেট , পটাশ প্রভৃতি সারের প্রয়োজন হয় । ( ৩ ) কীটনাশক প্রয়োগ পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে ধানকে রক্ষা করার জন্য কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় । ( ৪ ) আগাছা দমন : ধানের জমিতে আগাছা জন্মালে তা তুলে ফেলতে হয় । ( ৫ ) সুলভ শ্রমিক : ধানখেতে লাঙল দেওয়া , বীজ ছড়ানো , রোপণ এবং ফসল কাটার বিভিন্ন পর্যায়ে প্রচুর পরিশ্রমী ও দক্ষ সুলভ শ্রমিক লাগে । ( ৬ ) মূলধন ও আধুনিক কৃষিযন্ত্রের ব্যবহার : বর্তমানে একই জমিতে একাধিকবার ও বেশি পরিমাণে ধান উৎপাদন করার জন্য বেশি মূলধন বিনিয়োগ করে আধুনিক কৃষিযন্ত্রপাতি ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় ।
8. ভারতে ধান উৎপাদনে বিভিন্ন রাজ্যের ভূমিকা চিত্রসহ আলোচনা করো ।
Answer : ভারতে উত্তরের সমভূমি ও উপকূল সমভূমিতেই সবচেয়ে বেশি ধান চাষ হয় । ভারতের ধান উৎপাদক রাজ্যসমূহ :
( ১ ) পশ্চিমবঙ্গ : ধান উৎপাদনে পশ্চিমবঙ্গ ভারতে প্রথম স্থান অধিকার করে ( মোট উৎপাদনের ১৭ % ) । বর্ধমান জেলায় সবচেয়ে বেশি ধান চাষ হয় বলে একে ‘ পশ্চিমবঙ্গের ধানের ভাণ্ডার বলে । এ ছাড়াও হাওড়া , হুগলি , উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা , মুরশিদাবাদ , মালদা , মেদিনীপুর , বাঁকুড়া , বীরভূম , পশ্চিম দিনাজপুর ও কোচবিহার জেলার অধিকাংশ জায়গায় ধান উৎপন্ন হয় । ( ১৪.৯৬ মিলিয়ন টন , ২০১২-২০১৩ খ্রিস্টাব্দে ) ।
( ২ ) উত্তরপ্রদেশ : ধান উৎপাদনে দ্বিতীয় স্থান অধিকারী এই রাজ্যের বারাণসী , গোরক্ষপুর , ফৈজাবাদ , কানপুর , এলাহাবাদ , সিতাপুর , খেরি প্রভৃতি জেলাতে ধান উৎপন্ন হয় ( ১৪.৪১ মিলিয়ন টন , ২০১২-২০১৩ খ্রিস্টাব্দে ) ।
( ৩ ) পাঞ্জাব : ধান উৎপাদনে পাঞ্জাবের স্থান ভারতে তৃতীয় । এই রাজ্যের ধান উৎপাদক অঞ্চলগুলি হল— জলন্ধর , অমৃতসর , গুরুদাসপুর , পাতিয়ালা , ভাতিন্ডা , লুধিয়ানা , ফিরোজপুর ইত্যাদি । ( ১১.৩৭ মিলিয়ন টন , ২০১২-২০১৩ খ্রিস্টাব্দে ) । ভারতের অন্যান্য ধান উৎপাদক অঞ্চলগুলি হল
( ৪ ) অন্ধ্রপ্রদেশের : গোদাবরী – কৃষ্ণা বদ্বীপ অঞ্চল , ( ৫ ) উত্তর প্রদেশের দক্ষিণাংশ , ( ৬ ) উত্তরাখণ্ড রাজ্যের দেরাদুন অঞ্চল , ( ৭ ) বিহারের উত্তরাংশের বিস্তীর্ণ সমভূমি অঞ্চল , এ ছাড়া ( ৮ ) ঝাড়খণ্ড , ( ৯ ) সমগ্র অসম রাজ্য , ( ১০ ) তামিলনাড়ু , ( ১১ ) কর্ণাটক , ( ১২ ) হরিয়ানা , ( ১৩ ) পাঞ্জাব ইত্যাদি রাজ্যে কম বেশি ধান চাষ হয়ে থাকে । ধান উৎপাদন : বর্তমানে ধান উৎপাদনে ভারত পৃথিবীতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে ( চিনের পরে ) । ২০১৩-২০১৪ খ্রিস্টাব্দে ভারতে ধান উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১০৪.৯২ মিলিয়ন টন তবে হেক্টরপ্রতি ধান উৎপাদন ভারতে বেশ কম , ( ২৩৭২ কিগ্রা / হেক্টর ) । হেক্টর প্রতি ধান উৎপাদনে ভারতে পাঞ্জাব প্রথম ।
9. গম চাষের ( Wheat Cultivation ) অনুকুল পরিবেশগুলি আলোচনা করো ।
Answer : গম উৎপাদনের অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশগুলি হল : ক প্রাকৃতিক পরিবেশ –
( ১ ) জলবায়ু : ( ক ) আর্দ্রতা : ( i ) পরিমাণ মতো আর্দ্রতার ওপর গম বীজের অঙ্কুরোদগমের সংখ্যা নির্ভর করে এই জন্য গম চাষের প্রথম অবস্থায় আর্দ্র জলবায়ুর প্রয়োজন হয় । কারণ যত বেশিসংখ্যক বীজ থেকে অঙ্কুর বের হবে , হেক্টরপ্রতি গম উৎপাদনও ততই বেশি হবে । ( ii ) গম চাষের দ্বিতীয় অবস্থায় ( যখন গাছ থেকে শিষ বের হয় ) উষ্ণ ও শুকনো জলবায়ুর প্রয়োজন , কারণ এই সময় বৃষ্টি হলে গমের শীর্ষ পচে যেতে পারে বা শিষে পোকা লাগতে পারে । ( iii ) গম কেটে নেওয়ার কিছু দিন আগে অর্থাৎ গম চাষের তৃতীয় অবস্থায় , হালকা বৃষ্টিপাত হলে ভালো হয় , কারণ এই বৃষ্টিপাতের ফলে গমের শিষ পুষ্টিলাভ করে । ( iv ) গম উৎপাদনের চতুর্থ পর্যায়ে গম পাকার জন্য যথেষ্ট পরিমাণে সূর্য তাপের প্রয়োজন হয় ।
( খ ) উত্তাপ : গম চাষের প্রথম অবস্থায় ( গম বীজের অঙ্কুরোদগম এবং গম চারার বৃদ্ধির সময় ) ১৫ ° – ১৬ ° সেলসিয়াস উত্তাপ এবং গম চাষের দ্বিতীয়াবস্থায় ( গম পাকার সময় ) ১৮ ° – ২০ ° সেলসিয়াস উত্তাপ প্রয়োজন । অধিক উষ্ণতায় গমচাষের ক্ষতি হয় ।
( গ ) বৃষ্টিপাত : গম চাষের জন্য মাঝারি বৃষ্টিপাত ( ৫০–১০০ সেন্টিমিটার ) প্রয়োজন হয় , এর বেশি বৃষ্টিপাতে গম চারার ক্ষতি হয় । ৫০ সেমির কম বৃষ্টি হলে জলসেচের মাধ্যমে চাষ করা হয় ।
( ঘ ) তুষারপাত : তুষারপাত গমচাষের ক্ষতি করে ফলে তুহিনমুক্ত প্রায় ১১০ দিন প্রয়োজন হয় । ( ২ ) ভূপ্রকৃতি : গাছের গোড়ায় জল জমে থাকলে তা গমচাষের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর হয় বলে অতিরিক্ত জল জমি থেকে বের করে দেওয়ার জন্য ভালো জলনিকাশি ব্যবস্থাযুক্ত প্রায় সমতল বা অল্প ঢালু জমি গমচাষের পক্ষে আদর্শ । ( ৩ ) মৃত্তিকা : নাইট্রোজেন , ফসফেট ও পটাশযুক্ত উর্বর ভারী দোআঁশ মাটি বা হালকা কাদা মাটি গম চাষের পক্ষে আদর্শ । পলিমাটি ও কৃষ্ট্ব মৃত্তিকাতেও গম চাষ ভালো হয় ।
(খ) অপ্রাকৃতিক পরিবেশ : ( ১ ) জলসেচ : বৃষ্টিপাতের অভাব হলে গম খেতে জলসেচ দিতে হয় ।
( ২ ) সারপ্রয়োগ : গম চাষের ফলে জমির উর্বরতা দ্রুত কমে যায় বলে গমচাষের জমিতে বিশেষত নাইট্রোজেন , ফসফেট এবং পটাশ জাতীয় রাসায়নিক সার দেওয়া প্রয়োজন ।
( ৩ ) কীটনাশক প্রয়োগ : পোকামাকড়ের উপদ্রব হলে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় ।
( ৪ ) সুলভ শ্রমিক ধান চাষের মতো গম চাষেও প্রচুর দক্ষ ও পরিশ্রমী শ্রমিকের প্রয়োজন হয় । অবশ্য যান্ত্রিক উপায়ে গম চাষে অনেক কম শ্রমিক লাগে ।
( ৫ ) যথেষ্ট মূলধন বিনিয়োগ ও আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার : বর্তমানে একই জমিতে একাধিকবার ও বেশি পরিমাণে গম উৎপাদন করার জন্য বেশি মূলধন বিনিয়োগ করে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় ।
===================================================
সঠিক উত্তর নির্বাচন কর (MCQ)
[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান ১]
1। একটি রবি শস্যের উদাহরণ হল –
ক) ধান খ) গম গ) পাট ঘ) তুলো
উত্তর- একটি রবি শস্যের উদাহরণ হল খ) গম।
2। ভারতে ইক্ষু গবেষণাগারটি অবস্থিত –
ক) কটকে খ) লখনউতে গ) পুসাতে ঘ) জোড়হাটে
উত্তর- ভারতে ইক্ষু গবেষণাগারটি অবস্থিত খ) লখনউতে।
3। বোরো ধান কাটা হয় –
ক) শীতকালে খ) ব র্ষাকালে গ) গ্রীষ্মকালে ঘ) বসন্তকালে
উত্তর- বোরো ধান কাটা হয় গ) গ্রীষ্মকালে।
4। ভারতের একটি প্রধান তৈলবীজ হল –
ক) আলু খ) গম গ) সরষে ঘ) কফি
উত্তর- ভারতের একটি প্রধান তৈলবীজ হল গ) সরষে।
5। কার্পাস যে নামে পরিচিত, তা হল –
ক) স্বর্ণ তন্তু খ) রৌপ্য তন্তু গ) বীজতন্তু ঘ) হীরক তন্তু
উত্তর- কার্পাস যে নামে পরিচিত, তা হল গ) বীজতন্তু।
6। সবুজবিপ্লব কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন –
ক) ড. নরম্যান বোরলগ খ) ড. সাহা গ) ড. হাসান ঘ) ড. মুখোপাধ্যায়
উত্তর- সবুজবিপ্লব কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন ক) ড. নরম্যান বোরলগ।
7। গম হল একটি –
ক) রবি শস্য খ) খরিফ শস্য গ) জায়িদ শস্য ঘ) পানীয় ফসল
উত্তর- গম হল একটি ক) রবি শস্য।
8। ভারতে কফি বোর্ডের সদর দপ্তর যে শহরে অবস্থিত সেটি হল –
ক) কলকাতা খ) বেঙ্গালুরু গ) চেন্নাই ঘ) আমেদাবাদ
উত্তর- ভারতে কফি বোর্ডের সদর দপ্তর যে শহরে অবস্থিত সেটি হল খ) বেঙ্গালুরু।
9। ভারতের প্রধান ধান গবেষণাগারটি অবস্থিত –
ক) পুসায় খ) কটকে গ) চন্দন নগরে ঘ) চুঁচুড়ায়
উত্তর- ভারতের প্রধান ধান গবেষণাগারটি অবস্থিত খ) কটকে।
10। বাগিচা ফসল হল –
ক) ধান খ) পাট গ) চা ঘ) আখ
উত্তর- বাগিচা ফসল হল গ) চা।
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন (SAQ)
[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান ২]
1। অর্থকরী ফসল কাকে বলে?
উত্তর- মৃত্তিকা ও জলবায়ুর উপর নির্ভর করে অর্থ উপার্জন বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে যে ফসল চাষ করা হয় তাকে অর্থকরী ফসল বলা হয়। যেমন- পাট ,তুলো, আখ প্রভৃতি।
অর্থকরী ফসলের বৈশিষ্ট্য-
ক) এই ফসল বানিজ্যিক ফসল নামেও পরিচিত।
খ) বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে এই ফসল চাষ করা হয়।
গ) এই ফসল উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা নির্ভর।
2। বাগিচা কৃষির সংজ্ঞা দাও। [মাধ্যমিক ১৫]
উত্তর- অর্থকরী রপ্তানি নির্ভর যে বানিজ্যিক কৃষি ব্যবস্থা ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলে গড়ে তোলা হয় এবং যে ফসল বড় অঞ্চল জুড়ে সারিবদ্ধভাবে ফলানো হয় তাকে বাগিচা কৃষি বলে। যেমন চা, কফি, রবার প্রভৃতি।
বাগিচা কৃষির বৈশিষ্ট্য-
ক) এটি মূলত রপ্তানি নির্ভর।
খ) বহুল শ্রমিকের প্রয়োজন হয়।
গ) এবং অতিরিক্ত মূলধন নির্ভর কৃষি ব্যবস্থা।
3। শীতকালীন ও বসন্তকালীন গম কী?
উত্তর- সারা শীত জুড়ে যে গম চাষ করা হয় তাকে শীতকালীন গম বলে। শীতকালীন গম চাষ ভারতে বেশী হয়।
শীতকালে তুষারপাতের জন্য যে সমস্ত অঞ্চলে মাটি বরফাচ্ছন্ন থাকে সেই অঞ্চলে বসন্তের শুরুতে যখন বরফ গলতে থাকে তখন ঐ বরফাবৃত জলে যে গম চাষ করা হয় তাকে বসন্তকালীন গম বলে।
4। খারিফ শস্য বলতে কি বোঝ?
উত্তর- যে ফসল গ্রীষ্মের শেষে রোপন করা হয় এবং শীতের শুরুতে তোলা হয় তাকে খারিফ শস্য বলে। যেমন- ধান, গম, ভুট্টা, জোয়ার, বাজরা প্রভৃতি।
খারিফ শস্যের বৈশিষ্ট্য-
ক) খারিফ শস্য মূলত বর্ষা নির্ভর ফসল।
খ) অধিক উষ্ণতার প্রয়োজন।
গ) এই ফসলে জলসেচের ব্যবহার খুবই কম।
5। অর্থকরী ফসল কাকে বলে?
উত্তর- মৃত্তিকা ও জলবায়ুর উপর নির্ভর করে, অর্থ উপার্জন বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে যে ফসল চাষ করা হয় তাকে অর্থকরী ফসল বলা হয়। যেমন- পাট, তুলো, আখ প্রভৃতি।
অর্থকরী ফসলের বৈশিষ্ট্য-
ক) এই ফসল বাণিজ্যিক ফসল নামেও পরিচিত।
খ) বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে এই ফসল চাষ করা হয়।
গ) এই ফসল উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা নির্ভর।
বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্ন উত্তর
[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান ৩]
1। গম নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুর ফসল হলেও উত্তর – পশ্চিম ভারতে কেন এত গমের উৎপাদন হয়?
উত্তর- গম নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুর ফসল হলেও উত্তর – পশ্চিম ভারতে গমের উৎপাদন বেশি হওয়ার যে সব কারণ রয়েছে সেগুলি হল,
(i) জলবায়ু- পশ্চিম ভারতের শুষ্ক উপক্রান্তীয় জলবায়ু গম চাষের জন্য আর্দশ। এখানকার গড় উষ্ণতা 15°C-40°C এবং গড় বৃষ্টিপাত 25-100cm।
(ii) জলসেচের ব্যবস্থা- ভাকরা নাঙ্গাল জলসেচের প্রসার ঘটিয়েছে যা পশ্চিমের অঞ্চলগুলিতে গম চাষে লাভজনক হয়েছে।
(iii) মাটি- এখানকার মাটি মূলত উর্বর যা গম চাষের জন্য অত্যন্ত সহায়ক।
(iv) সারের ব্যবহার- সবুজ বিপ্লবের পর থেকে সারের ব্যবহার পশ্চিম ভারতে বহুগুণ বেড়ে যাওয়ায় হেক্টর প্রতি গম চাষের পরিমাণ বেড়েছে।
2। ভারতীয় কৃষিতে সবুজবিপ্লব বলতে কী বোঝ
উত্তর- ভারতের কৃষিতে সবুজ বিপ্লব- ভারতের 1960 সালের পর থেকে কৃষিতে অগ্রগতি আনার জন্য উচ্চফলনশীল বীজ, রাসায়নিক সার, যন্ত্রপাতি, প্রভৃতি ব্যবহারের মাধ্যমে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে যা সবুজবিপ্লব নামে পরিচিত। সবুজবিপ্লবের জনক বলা হয় ড.এম এস স্বামীনাথনকে।
সবুজ বিপ্লবের প্রভাবে- ক) উৎপাদনে বৃদ্ধি, খ) শিল্পোন্নতি, গ) খাদ্য উৎপাদনে স্বনির্ভরতা, ঘ) শিল্পোন্নতি, ঙ) কর্ম সংস্থান বৃদ্ধি প্রভৃতি সম্ভব।
3। ঋতু অনুযায়ী ভারতের কৃষিজ ফসলের শ্রেণিবিভাগ করো।
উত্তর- ঋতু অনুযায়ী ভারতের কৃষিজ ফসলকে প্রধান তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
অ) খারিফ শস্য- এই ফসল বিশেষত গ্রীষ্মের শেষে এবং বর্ষার শুরুতে রোপন করা হয় এবং শীতের শুরুতে কাটা হয়। যেমন আমন ধান, পাট তুলো জোয়ার বাজরা প্রভৃতি। এই ফসলের জন্য উষ্ণ আর্দ্র জলবায়ুর প্রয়োজন হয়।
(আ) রবি শস্য- এই ফসল বিশেষত শীতের শুরুতে রোপন করা হয় এবং বসন্তকালের শেষে তোলা হয়।যেমন- গম যব আলু বোরোধান প্রভৃতি। এই ফসলের জন্য শীতল শুষ্ক জলবায়ুর প্রয়োজন হয়।
(ই) জায়িদ শস্য- এই ফসল বিশেষত বসন্তকালে চাষ করা হয় এবং গ্রীষ্মের শেষে তোলা হয়। যেমন- শশা, বাদাম, তরমুজ, আউশ ধান প্রভৃতি।
দীর্ঘ উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন (LA)
[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান ৫]
1। ধান উৎপাদনে কি ধরণের অনুকূল পরিবেশ প্রয়োজন হয়?
উত্তর- ধান চাষের অনুকূল পরিবেশ নীচে বর্ণনা করা হল,
• প্রাকৃতিক পরিবেশ
(a)জলবায়ু-
(i) উষ্ণতা- ধান চাষের জন্য 15°C-30°C উষ্ণতা লাগে যা ধান চাষের জন্য অনুকূল।তবে ধান পাকা বা তোলার সময় 25°C-35°C উষ্ণতা হওয়া প্রয়োজন।
(ii) বৃষ্টিপাত- ধান মূলত বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভর করে, 150-250cm বৃষ্টিপাত ধান চাষের জন্য আর্দশ।
(iii) আর্দ্রতা- ধান রোপনের সময় আর্দ্রতা বেশী থাকা প্রয়োজন এবং ধান তোলার সময় আর্দ্রহীন শুষ্ক আবহাওয়া জরুরী।
(b) মৃত্তিকা- উর্বর দোআঁশ পলি মৃত্তিকায় ধান চাষ ভালো হয়, পলিমাটির নীচে অপ্রবেশ্য কাদামাটির স্তর থাকলে ধান গাছ তার প্রয়োজনীয় জল ধারন করতে পারে।
( c) ভূমির ঢাল- সমতল ভূমি ধান চাষের পক্ষে আর্দশ। নদী উপত্যকা, ব-দ্বীপ ও উপকূলীয় এই সমস্ত অংশে জল দাঁড়াতে পারে বলে এখানে ধান চাষ ভালো হয়।
• অর্থনৈতিক পরিবেশ
(a) শ্রমিক- ধান হল শ্রমনিবিড় চাষ। তাই ধান জমি তৈরী করা, বীজ তোলা, ধান বাঁধা, ঝাড়া, আগাছা পরিষ্কার প্রভৃতি কাজের জন্য প্রচুর পরিমাণে দক্ষ সুলভ ও কর্মঠ শ্রমিক লাগে। জনবহুল ভারতে তাই ধান চাষের জন্য শ্রমিকের অভাব হয় না।
(b) মূলধন- ধান চাষের জন্য যে উচ্চফলনশীল বীজ, সার কীটনাশক ,যন্ত্রপাতি প্রভৃতির যোগান মূলধন দাড়াঁই মেটানো সম্ভব যার জন্য কৃষকদের ঋণ ক্রেডিট কার্ড প্রভৃতি সরকার কর্তৃক ব্যবস্থা করেছে।
(c ) জলসেচ- ধানের ফলন সুনিশ্চিত করতে জলসেচের উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকা দরকার। বোরো ধান জলসেচ উপর ভিত্তি করেই গড়ে ওঠে।
(d) পরিবহন- ধানচাষকে লাভজনক করার জন্য কৃষিক্ষেত্র থেকে বাজার অবধি উন্নত পরিবহন থাকা আবশ্যক। যা ধানকে আর ও বেশী লাভ জনক করবে।
(e) প্রযুক্তিকরণ- ধান চাষকে প্রযুক্তিকরণের মাধ্যমে আরও উন্নত করতে হবে। ভারতীয় বিভিন্ন কৃষক বিজ্ঞানী ধান চাষের উন্নতির জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা চালাচ্ছেন।
2। কফি চাষের উপযুক্ত পরিবেশ সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর- কফি চাষের উপযুক্ত ভৌগলিক পরিবেশ হল,
• প্রাকৃতিক পরিবেশ
(অ) জলবায়ু-
(i) উষ্ণতা- উষ্ণ আর্দ্র ক্রান্তীয় জলবায়ু কফি চাষের আর্দশ। 20°C-30°C উষ্ণতা কফি চাষের জন্য আর্দশ।
(ii) বৃষ্টিপাত- বার্ষিক 100-200cm বা তার বেশি বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে উন্নতমানের কফি চাষ হয়। আর্দ্রতা ও কুয়াশা- আর্দ্রতা ও কুয়াশা কফি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এইজন্যে আর্দ্রতাযুক্ত সামুদ্রিক এলাকায় কফি চাষ সবথেকে ভালো হয়।
(iii) সূর্যকিরণ- কফি পরিপক্ক হওয়ার জন্য প্রখর সূর্যকিরনের প্রয়োজন হয়ে থাকে।
(আ) মৃত্তিকা- লাল দোআঁশ মাটি ও লাভাসৃষ্ট উর্বর মাটিতে এবং অম্ল উর্বর হিউমাস সমৃদ্ধ মাটিতে কফি চাষ ভালো হয়।
(ই) ভূ- প্রকৃতি- উঁচু পাহাড়ি ঢালু জমিতে যেখানে জল দাড়াঁতে পারে না এইরকম জমি কফি চাষের জন্য অনুকূল।
(ঈ) ছায়াপ্রদানকারী গাছ- প্রবল বাতাস, তীব্র সূর্যলোক, তুহিন প্রভৃতির হাত থেকে কফি গাছ বাঁচানোর জন্য বড়ো বড়ো ছায়াপ্রদানকারী গাছের প্রয়োজন হয়।
• অর্থনৈতিক পরিবেশ
(অ) মূলধন- কফি চাষের প্রথম অবস্থায় কফি উৎপাদন হয় না তবে বাগান পরিচর্যা, শ্রমিকদের মজুরী প্রভৃতির জন্য প্রচুর মূলধনের প্রয়োজন আছে।
(আ) শ্রমিক- কফি বাগিচা পরিচর্যা, গাছের রক্ষণাবেক্ষণ, ফল সংগ্রহ, বীজ চূর্ণ প্রভৃতি কাজে প্রচুর পরিমাণে পরিশ্রমী শ্রমিকের প্রয়োজন হয়।
(ই) পরিবহন- কফি বাণিজ্যিক কৃষি হওয়ায় এবং তা চাহিদাসম্পন্ন স্থানে পৌঁছে দেবার জন্য উন্নত মানের পরিবহন যোগাযোগ ব্যবস্থার দরকার হয়।
3। ভারতে কার্পাস উৎপাদনের অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশের বর্ণনা দাও।
উত্তর- কার্পাস ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলের উষ্ণ পরিবেশের তন্তু জাতীয় ফসল। কার্পাস উৎপাদনে অনুকূল ভৌগলিক অবস্থা নিম্মলিখিত,
(অ) জলবায়ু –
(i) উষ্ণতা- 20°C-25°C উষ্ণতায় কার্পাস চাষ ভালো হয় তবে 35°C উষ্ণতাতেও কার্পাস চাষ হয়। (ii) বৃষ্টিপাত- হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চলে কার্পাস চাষ ভালো হয়ে থাকে। গড় 50-100 সেমি বৃষ্টিপাত প্রয়োজন হয়।
(iii)আর্দ্রতাও সূর্যকিরণ- কার্পাস গাছ বৃদ্ধির সময় বাতাসে আর্দ্রতা বেশী থাকা প্রয়োজন, কিন্তু কার্পাসের গুটি পাকার সময় আর্দ্রহীন, শুষ্ক রৌদ্রজ্জ্বল আবহাওয়া দরকার হয়।
(আ) মাটি- কার্পাস উর্বর চুন মিশ্রিত লবণাক্ত দো-আঁশ মাটিতে যার জলধারণ ক্ষমতা বেশী এইরকম রেগুর বা কৃষ্ন মৃত্তিকায় ভালো চাষ হয়। এই জন্য দক্ষিণ ভারতের লাভাগঠিত কৃষ্ণ
মৃত্তিকা কার্পাস চাষের আর্দশ জায়গা।
(ই) ভূ- প্রকৃতি- গাছের গোড়ায় জল জমা কার্পাস চাষের ক্ষেত্রে খুবই ক্ষতিকারক তাই জলনিকাশী ব্যবস্থা যুক্ত মৃদু ঢালু জমিতে কার্পাস চাষ করা হয়।
4। ভারতের চা চাষের অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশের বর্ণনা করো।
উত্তর- ক্যফিনযুক্ত মৃদু উত্তেজক পানীয় চা সারা পৃথিবীর জনপ্রিয়। এই বাগিচা ফসলের অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ গুলি হল,
(অ) জলবায়ু- চা আর্দ্র ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলের গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। চা চাষে প্রচুর উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন হয়।
(i) উষ্ণতা- 20°C- 30°C উষ্ণতায় চা চাষ হয়ে থাকে।
(ii) বৃষ্টিপাত- চা চাষের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত লাগে, গড়ে 150- 200 cm.
(আ) আবহাওয়ার অন্যান্য অবস্থা- নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া চা-এর পাতায় সুগন্ধ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
চা গাছ তীব্র সৌরকিরণ সহ্য করতে পারে না, সেইজন্য চা বাগানের মাঝখানে সারি দিয়ে ছায়া প্রদানকারী বৃক্ষ লাগানো হয়। চা গাছ তুষরপাত সহ্য করতে পারলেও অত্যধিক তুষার চা গাছের ক্ষতি করে।
(ই) মৃত্তিকা- লৌহ গঠিত দো-আঁশ মাটি তে চা চাষ ভালো হয়। মাটির ক্ষয় রোধ করার জন্য পাহাড়ের গায়ে ধাপ কেটে চায়ের বাগান তৈরি করা হয়। মৃত্তিকায় হালকা জৈব পদার্থ ও অল্প পরিমাণ অম্লতাও চা চাষের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর।
(ঈ) ভূ- প্রকৃতি- উঁচু পাহাড়ি ঢালু জমিতে যেখানে জল দাঁড়াতে পারে না সেইরকম জমি চা চাষের জন্য অনুকূল তবে জলনিকাশী ব্যবস্থাও খুব উন্নত হওয়া প্রয়োজন।
(উ) ছায়াপ্রদানকারী গাছ- প্রবল বাতাস, তীব্র সূর্যলোক, তুহিন প্রভৃতির হাত থেকে চা গাছকে বাঁচানোর জন্য বড় বড় ছায়াপ্রদানকারী গাছের প্রয়োজন হয়।
5। ভারতের ইক্ষু চাষের অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ বর্ণনা কর।
উত্তর- ভারতের ইক্ষু চাষের অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ গুলি হল,
(অ) জলবায়ু- ইক্ষু আর্দ্র ক্রান্তীয় অঞ্চলের ফসল উদ্ভিদ। ইক্ষু চাষে মাঝারি উষ্ণতা ও প্রচুর বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন হয়। বলা যেতে পারে মূলত বৃষ্টির উপর নির্ভর করেই ইক্ষু চাষ করা হয়।
(i) উষ্ণতা- 20°C- 30°C উষ্ণতায় ইক্ষু চাষ হয়ে থাকে। আখ পাকার সময় আখের মিষ্টি ভাব বাড়ানোর জন্য প্রচুর সূর্য কিরণ ও লাগে।
(ii) বৃষ্টিপাত- ইক্ষু চাষের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত দরকার প্রায় 100-150cm মত।
(iii) সামুদ্রিক বাতাস- সমুদ্রের নোনা বাতাস আখ উৎপাদনে সহায়ক। তবে কুয়াশা এবং তুষারপাত অত্যন্ত ক্ষতিকর।
(আ) আবহাওয়া বা অন্যান্য অবস্থা-
i) ইক্ষু চাষে দীর্ঘকালীন বর্ষা ও পরিমিত বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন হয়।
ii) আখ চাষের জন্য কমপক্ষে 200 দিন তুহিন মেঘমুক্ত আবহাওয়ার প্রয়োজন হয়।
iii) শুকনো শীতকালীন আবহাওয়া ইক্ষুর রসে চিনির পরিমাণ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
(ই) মৃত্তিকা- চুন ও লবণাক্ত দোআঁশ মৃত্তিকা এবং কৃষ্ণ মৃত্তিকা ইক্ষু চাষের পক্ষে উপযোগী । জমির উর্বরতা দ্রুত হ্রাস পায় বলে নিয়মিত নাইট্রোজেন ও রাসায়নিক সার দেওয়া প্রয়োজন।(ঈ) ভূমির প্রকৃতি- জলনিকাশী ব্যবস্থাযুক্ত সমতল জমি বা সামান্য ঢালু জমি ইক্ষু চাষের জন্য আদর্শ।
©kamaleshforeducation.in(2023)