সংলাপ রচনা
** প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহারিক ক্ষতি নিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে একটি কাল্পনিক সংলাপ।
** ইন্টারনেটের ব্যবহার ও অপব্যবহার এ নিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে একটি কাল্পনিক সংলাপ।
** বইমেলার সাম্প্রতিক অবস্থা নিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে একটি কাল্পনিক সংলাপ।
** মাধ্যমিক পরীক্ষার পর নতুন চিন্তাভাবনা নিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে একটি কাল্পনিক সংলাপ।
** ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া রোগের প্রকোপ ও নিরাময় নিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে একটি কাল্পনিক সংলাপ।
** নারী স্বাধীনতা বিষয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে একটি কাল্পনিক সংলাপ।
প্রতিবেদন রচনা
** “সেফ ড্রাইভ সেফ লাইফ” কর্মসূচি পালিত হল এলাকায়।
** ডাইনি সন্দেহে এক বৃদ্ধাকে নিপীড়িত করার বিরুদ্ধে গ্রামের একদল যুবকের প্রতিবাদ।
** বেআইনিভাবে গাছ কাটার বিরুদ্ধে এলাকার মানুষের সমবেত প্রতিরোধের ঘটনা।
** জলাভূমি ভরাট করার বিরুদ্ধে স্থানীয় মানুষের সংগঠিত প্রতিবাদ।
** তোমার স্কুলের অরণ্য সপ্তাহ পালন।
** জমা জল থেকে বাড়ছে মশাবাহিত মারণব্যাধি।
** স্বচ্ছ ভারত গঠনে পশ্চিমবঙ্গের ভূমিকা।
প্রবন্ধ রচনা
** চন্দ্রযানঃ ২ – সফল না ব্যর্থ
** কোভিড – ১৯ এক মহামারী
** দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান।
** মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চা।
** আধুনিক জীবনে ইন্টারনেট।
** তোমার জীবনের একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা।
** বিদ্যালয় জীবনে খেলাধুলার উপযোগিতা।
** পরিবেশের উপর প্ল্যাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব
** পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার।
** তোমার জীবনের লক্ষ্য।
** কন্যাশ্রী প্রকল্প।
প্রবন্ধ রচনা
দশম শ্রেণীর বাংলা সাজেশন – প্রবন্ধ রচনা : রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-5]
1.মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চা
অথবা,
আমাদের মাতৃভাষা বাংলায় বিজ্ঞানচর্চা
ভূমিকা : শিক্ষার ক্ষেত্রে মাতৃভাষার কোনাে বিকল্প নেই। শুধু শিক্ষা নয়, সৃজনধর্মী চিন্তায়, গবেষণায় মাতৃভাষার ব্যবহার যেভাবে অনুকূলতা সৃষ্টি করে তার তুলনা মেলা ভার। পৃথিবীর যে সমস্ত দেশ জ্ঞান-বিজ্ঞানে প্রভূত উন্নতিসাধন করেছে। লক্ষ করলে দেখা যাবে, তাদের অনুশীলনের মাধ্যমে মাতৃভাষা।
অতীতে মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চার সুযােগের অভাব : উচ্চশিক্ষার বাহন হিসেবে আমাদের মেনে নিতে হয়েছিল ইংরেজিতে। আমাদের বিজ্ঞানচর্চার মাধ্যম ছিল তাই ইংরেজি। নিজের ভাবনা নিজের ভাষায় ব্যক্ত করার মধ্যে যে স্বাচ্ছন্দ্য থাকে একটি বিজাতীয় ভাষায় তা সম্ভব নয়। ভাষা-শিক্ষার সংকটে পড়ে অনেক মেধাবী বাঙালি শিক্ষার্থীর প্রতিভার বিকাশ ঘটত না।
বাংলায় বিজ্ঞানচর্চা এখনও উপেক্ষিত : শিক্ষাক্ষেত্রে মাতৃভাষার মর্দাদা অনেক বেড়েছে। মাতৃভাষায় উচ্চশিক্ষাদানের ব্যাপারটিও অনেক ক্ষেত্রে মেনে নেওয়া হয়েছে। তবু কার্যক্ষেত্রে মাতৃভাষায় বিজ্ঞান-অনুশীলনের প্রসঙ্গটি এখনও উপেক্ষিত রয়ে গেছে। বলা হয়ে থাকে, বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলি চর্চা করার মতাে বই এবং পরিভাষা বাংলায় নেই। সেইসঙ্গে এও বলা হয়ে থাকে যে, বিজ্ঞানের মতাে একটি আন্তর্জাতিক বিষয়ের চর্চা বাংলাতে হলে তা জগৎবাসীর কাছ থেকে দূরেই থেকে যাবে। প্রয়ােজনের তাগিদে মানুষ অনেক কিছুই তৈরি করে নেয়। বই এবং পরিভাষার ক্ষেত্রেও সেই গবেষণা যে ভাষাতেই হােক না কেন, ভাষান্তরের মাধ্যমে খুব সহজেই পৃথিবীতে ছড়িয়ে যেতে পারে।
বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার নিদর্শন সত্ত্বেও অনীহার অবসান হয়নি : ফরাসি, জার্মান, জাপানি, রুশ প্রভৃতি ভাষায় বিজ্ঞানের চর্চা সম্ভব হয়েছ। বাংলাদেশে রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী, জগদীশচন্দ্র বসু, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, জগদানন্দ রায়, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাদ সাহা প্রমুখের কিছু কিছু রচনায় বৈজ্ঞানিক ভাবনা যেভাবে লিপিবদ্ধ হয়েছে, তাতে বুঝতে পারি বাংলা ভাষাও বিজ্ঞানের ভাবনা ও সূত্র প্রকাশ করতে সক্ষম। এটাও স্বীকার্য যে, বাংলা ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাবান পূর্বসূরিদের প্রয়াস সত্ত্বেও বাংলা ভাষায় বিজ্ঞাচর্চার আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি।
উপসংহার : এই যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা আমরা দূর করতে পারি। তার জন্য প্রয়ােজন সংকল্প আর উদ্যোগ।
2. বইমেলা
ভূমিকা : সভ্য মানুষের জীবনের অপরিহার্যরূপে জড়িয়ে গেছে, বই। লিপি আবিষ্কারের পর থেকে মানুষ তার অর্জিত জ্ঞান, অভিজ্ঞতা কিংবা অনুভূতিগুলিকে ধরে রাখতে চেয়েছে বইয়ের মধ্যে। ক্রমে ক্রমে বইয়ের মুদ্রণ এবং প্রকাশনার ক্ষেত্রে অনেক সমৃদ্ধি ঘটেছে। গড়ে উঠেছে ছােটোবড়াে অজস্র গ্রন্থাগার, বই নিয়ে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যেরও একটি ঐতিহ্য গড়ে উঠেছে। সংস্কৃতি, জ্ঞানচর্চা আর বাণিজ্যের সেই মেলবন্ধনেই সৃষ্টি হয়েছে বইমেলার।
বইমেলার উদ্দেশ্য ; বইমেলার প্রথম উদ্দেশ্য হল, প্রকাশক এবং পাঠকের মধ্যে প্রত্যক্ষ একটি সংযােগ গড়ে তােলা। প্রকাশকরা পাঠকসমাজের প্রবণতা ও চাহিদা উপলব্ধি করার সুযােগ পান বই মেলায়। অন্যদিকে পাঠকরাও প্রকাশকদের মুখােমুখি হওয়ার সুযােগ পান। দ্বিতীয়ত, পাঠকরা বিভিন্ন স্টলে ঘুরে ঘুরে নিজেদের রুচি ও পছন্দ অনুযায়ী বই বাছাই করতে পারেন। যে-বইয়ের কথা কোনােদিন হয়তাে জানা যেত না। সেইরকম। কোনাে প্রয়ােজনীয় বইও হয়তাে এখানে পেয়ে যেতে পারেন কোনাে পাঠক। তৃতীয়ত, বইমেলা মানুষকে বই পড়তে ও বই ভালােবাসতে শেখায়। পুস্তকপ্রেম সমাজকে সুস্থ। রাখার পক্ষে বিশেষ সহায়ক। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, একটা সভা উপলক্ষে যদি দেশের লােককে ডাক দাও, তবে তাহারা সংশয় লইয়া আসিবে, তাহাদের মন খুলিতে অনেক দেরি হইবে—কিন্তু মেলা উপলক্ষে যাহারা একত্র হয় তাহারা সহজেই হৃদয় খুলিয়াই আসে—সুতরাং এইখানেই দেশের মন পাইবার প্রকৃত অবকাশ ঘটে। বইমেলা সম্পর্কেও এই কথা প্রযােজ্য। বইমেলাতেই দেশের পাঠকসমাজের মন পাওয়ার প্রকৃত অবকাশ ঘটে।
পশ্চিমবঙ্গের বইমেলা : পশ্চিমবঙ্গের বইমেলা বলতেও প্রথমেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে কলকাতা বইমেলার ছবি। কলকাতায় বইমেলার সূচনা হয় ১৯৭৫ সালে। প্রকাশক এবং পুস্তক বিক্রেতাদের প্রচেষ্টায় শুরু হয় এই মেলা। ২০০০ সালে কলকাতা বইমেলার রজত জয়ন্তী বর্ষ উদ্যাপিত হয়। প্রতি বছর শীতকালে, মােটামুটিভাবে ২৫ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। ছােটো-বড়াে-মাঝারি সবরকম প্রকাশনা সংস্থা হাজির থাকে এই মেলায়। ভিন্ন দেশের প্রকাশকরাও আসেন। আর আসেন। দেশের নানান প্রান্ত থেকে পুস্তকপ্রেমিক মানুষ। তবে বইমেলা কেবল আর কলকাতাতে সীমাবদ্ধ নেই, বইমেলা ছড়িয়ে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গে প্রত্যেকটি জেলায়। এখন প্রতি বছর জেলায় জেলায় একটি বড়াে উৎসব হল বইমেলা।।
বইমেলার সাফল্য : জেলা বইমেলা এবং কলকাতার বইমেলার গ্রন্থপ্রেমী মানুষের ভিড় উপচে পড়ে। বইমেলায় এই স্বতঃস্ফূর্ত জনসমাগম বইমেলার সাফল্যের কথাই বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়। বইমেলাও মানুষের একটি মহামিলনের ক্ষেত্র। এখানে জাতি-ধর্ম-বিত্ত নির্বিশেষে মনুষ মিলিত হয়। এখানে একাকার হয়ে যায় গ্রাম-শহর।
উপসংহার : মন ও মননের চর্চার উপযুক্ত সঙ্গী বই। বই মানুষের পরম বন্ধু। মানুষের শিক্ষা ও সংস্কৃতির উৎকৃষ্ট নিদর্শন এই বইকে নিয়ে মেলার আয়ােজন নিঃসন্দেহে মানুষের প্রগতিশীলতার পরিচায়ক। দিকে দিকে এবং দিনে দিনে বইমেলার গ্রহণযােগ্যতা যত বাড়ছে ততই মনে হচ্ছে, মানুষ সত্যিই আলােকপথের যাত্রী। অজ্ঞানতার অন্ধকার ভেদ করে সে পেতে চায় জ্ঞানের আলাে। আমরা চাই বইমেলা আরও সমৃদ্ধ হােক, আরও আকর্ষণীয় হােক। মানুষ আরও বেশি করে বই পড়ুক আর বই কিনুক।
3. দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান
অথবা,
প্রতিদিনের জীবনে বিজ্ঞান
ভূমিকা : মানুষের কল্যাণের জন্য বিজ্ঞানের আবির্ভাব। মানুষ নিজের প্রয়ােজনে বিজ্ঞানের নিত্যনতুন আবিষ্কার ঘটিয়ে চলেছে। প্রতিদিনের জীবনে আজ বিজ্ঞানই মানুষের একমাত্র ভরসা। মহাকাশ থেকে পাতাল—সর্বত্র বিজ্ঞানের অভিযান চলছে।
দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের ব্যবহার : একশাে বছর আগেও মানুষের দৈনন্দিন জীবন এত সুখকর ছিল না। এখন সকালে আমাদের ঘুম ভাঙায় অ্যালার্ম ঘড়ি। তারপর দাঁত মেজে পাম্পে তােলা বা টিউবওয়েলের জলে মুখ ধুয়ে হাতে তুলে নিই এক কাপ গরম চা, যা অনেক বাড়িতেই গ্যাস-ওভেনের সাহায্যে প্রস্তুত হয়। এরপর খবরের কাগজ পড়ে অথবা দূরদর্শন বা বেতারের মাধ্যমে দেশ ও পৃথিবীর নানা সংবাদ পাই। মাথার ওপর চলে বৈদ্যুতিক পাখা। কোনাে ঘরে থাকে বাতানুকূল ব্যবস্থা। টেলিফেন কিংবা প্রয়ােজনে। মােবাইল ফোনের মাধ্যমে কথা হয় বহুদূরে থাকা মানুষের সঙ্গে। কম্পিউটারে খবর ও ছবি আসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। অসুখ করলে ডাক্তার দেখিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ওষুধের ব্যবস্থাও করা যায়। স্নানের জন্য যেমন ওয়াটার হিটার গরম জল সরবরাহ করে তেমনি ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা জল বা বরফ নিয়ে কোল্ড কফিও খেতে মজা লাগে। ফ্রিজে তাে কতদিনের তৈরি রান্না রেখে খাওয়া যায়। স্কুল, কলেজ, অফিসের জন্য বাস, ট্রাম, ট্যাক্সি, গাড়ি, অটো, টেন তাে রয়েইছে, জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য লরিও রয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের জন্য বই, খাতা, পেন, কম্পাস, ল্যাবরেটরির সরঞ্জাম, ব্ল্যাকবাের্ড ইত্যাদি বহু সুবিধা বর্তমান। বাসস্থানের জন্য বহুতল বাড়ি, লিফট বা এস্কেলেটর রয়েছে। অসুস্থ হলে যেমন অ্যাম্বুলেন্স আছে, তেমনি মৃত্যুর পর শবাহী গাড়িও আছে। প্রেক্ষাগৃহে বসে চলচ্চিত্র দেখে আমরা মুগ্ধ হতে পারি। চিকিৎসার জন্য যেমন হাসপাতালে যেতে পারি, তেমনি আগুন নেভাতে দমকলও চলে আসে দ্রত। শল্যচিকিৎসা আমাদের অনেক মানসিক উদবেগ কমিয়ে দিয়েছে। এইভাবে বিজ্ঞানের নিত্যনতুন আবিষ্কার সুখে ভরিয়ে তুলেছে আমাদের দৈনন্দিন জীবন। দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান হয়ে উঠেছে আমাদের পরম আত্মীয়।
উপসংহার : বিজ্ঞান মানুষকে সর্বস্ব দিতে চায়, কিন্তু বিজ্ঞানের অপব্যবহারে মানুষ বিপর্যস্ত। নানান মারণাস্ত্র, সাধারণ বােমা, পারমাণবিক বােমা, ডিনামাইট ব্যবহার, খাদ্যে। ভেজাল মিশ্রণ ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষের ক্ষতি করার নিত্য প্রচেষ্টা চলছে। দোষ বিজ্ঞানের নয়, তাকে কে কীভাবে প্রয়ােগ করছে সেটাই বিবেচ্য। কুসংস্কার দূর করে, বিভেদকামী মনােভাব ও সংকীর্ণ স্বার্থপরতা ত্যাগ করে মানুষের মনে শুভবুদ্ধির উদয় হলে দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের ব্যবহার ও ভাবনা সার্থকতা লাভ করবে। বিজ্ঞানাচার্য সত্যেন্দ্রনাথ বসু। লিখেছেন—“যে-কোনাে জাতির পক্ষে আজ বিজ্ঞানকে তুচ্ছ করা কিংবা, তার সম্ভাব্যতাকে অবহেলা করা একান্ত বিপজ্জনক। সাময়িক ইতিহাসের সঙ্গে যাঁর পরিচয় আছে তিনি একথা স্বীকার করবেন।
5. আমাদের জীবনে পরিবেশের ভূমিকা।
ভূমিকা : যে পারিপার্শ্বিক প্রেক্ষাপটে মানুষের তথা জীবজগতের বিকাশ সম্ভব হয় তা-ই হল তার পরিবেশ। পরিবেশ যদি শিশুর সুস্থ সবলভাবে বেঁচে ওঠার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, স্মরণীয় হয়ে থাকার মতাে কোনাে জীবন গঠন করা তার পক্ষে সম্ভবপর হবে তাই মানবজীবনে পরিবেশের প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষ প্রভাবকে কোনােমতেই অস্বীকার করা যায় না। আর পরিবেশকে বৃহত্তর অর্থে দু-ভাগে ভাগ করা যায়—১. সামাজিক পরিবেশ, ২. প্রাকৃতিক পরিবেশ।
মানুষের জীবনে সামাজিক পরিবেশের ভূমিকা : মানুষের বেড়ে ওঠায় সমাজজীবনের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। সুস্থ সমাজ, সুস্থ পারিবারিক ও শিক্ষানৈতিক পরিবেশ, সমাজ-আদর্শের স্বচ্ছ ধারণা ব্যক্তিমানুষকে যেমন সমৃদ্ধ করে তােলে, তেমনি তাকে সামাজিকতাবােধে দীক্ষা দেয়। বিকৃত সামাজিক পরিবেশের প্রভাব মানুষের মধ্যে বিশেষত শিশুদের মধ্যে সুদূরপ্রসারী। Education through experience’—যদি হয় শিক্ষার সর্বশ্রেষ্ঠ পদ্ধতি তাহলে সুস্থ সামাজিক পরিবেশের মধ্য দিয়েই তা সম্ভব হতে পারে। ভােগবাদী আগ্রাসনের সামনে দাঁড়িয়ে মুহ্যমান আজকের মানবসমাজ। অতি শৈশবে ব্যাগ কঁাধে নার্সারিতে ইদুর দৌড় শুরু করে যে শিশু—তার জন্য মনুষ্যত্ববিকাশের কোনাে সুযােগ রাখতে ব্যর্থ হয় তার প্রায় অভিভাবককুল। ক্রমশ স্বার্থপর হয়ে ওঠা এই শিশু একসময় মানসিক বিপন্নতার শিকার হয়। আর মনােবিকলনের পরিণতি ঘটে কখনও নেশাগ্রস্ততায়, কখনও আত্মহত্যায়, কখনও বা কোনাে অপরাধমূলক কাজকর্মে। চারপাশে বুদ্ধির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গেই সে দেখেছে অজস্র ভ্রষ্টাচার, আর ভােগবাদের চটুল হাতছানি। একদিন বিপ্লবের স্বপ্নমন্দ্রিত পথে চালিত হত যে যৌবন, তাকে দেখা গেছে। স্বার্থের চোরাবালিতে ডুবে থাকতে। ব্যক্তিমানুষের এই অধঃপতনে দিশাহীন হয়েছে সমাজ। ব্যক্তিমানুষের উন্নতির জন্য প্রয়ােজন এক আদর্শ সামাজিক পরিবেশ যেখানে শিক্ষার সঙ্গে জীবনের সহজ সংযােগ থাকবে, সমাজে থাকবে সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ ও মূল্যবােধ, থাকবে জীবন ও জীবিকার নিশ্চয়তা।
মানুষের জীবনে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভূমিকা : প্রাকৃতিক পরিবেশ মানুষকে দুভাবে সাহায্য করে। প্রথমত, তার জীবনযাপনের সহায়ক শক্তি হয়ে উঠতে পারে সে। দ্বিতীয়ত, পৃথিবীকে মানুষের বাসযােগ্য করে রাখতে সে সাহায্য করে। কিন্তু নগরসভ্যতার আগ্রাসনের সামনে এই প্রকৃতিও আজ বিপন্ন। সভ্যতার অসম বিকাশের ফলে আজ প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। অবলুপ্ত হচ্ছে অসংখ্য প্রজাতির পশু-পাখি। জীববৈচিত্র্যের এই বিনাশ প্রকৃতপক্ষে মানুষেরই সর্বনাশ ডেকে আনছে। নেমে যাচ্ছে জলস্তর, দূষণের ব্যাপক ক্যানসার, হার্ট অ্যাটাক ইত্যাদি অসুখকে মহামারির জায়গায় পৌঁছে দিতে। মেরুপ্রান্তে বরফ গলে যাচ্ছে ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর ফলে। এখান থেকে সভ্যতার গতিমুখকে ফেরাতে হবে। পরিবেশ এবং উন্নয়ন বিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশন (wCED) বলেছে মানবসভ্যতার বিকাশকে বিপর্যয়হীন করতে হবে। বিপর্যয়হীন বিকাশ হচ্ছে সেই ধরনের বিকাশ যা আমাদের বর্তমানের চাহিদা মেটাবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদা মেটাবার ক্ষমতাকে আঘাত করবে না।
উপসংহার : পরিবেশ সুস্থ না থাকার অর্থ ব্যক্তির অপমৃত্যু, জাতির অপমৃত্যু। প্রকৃতি ও সমাজের সাহায্যে গড়ে ওঠে পূর্ণ মানুষ, যে সভ্যতাকে পরিচালনার অধিকার। পায়। পরিবেশ তার ভারসাম্য হারালে যা ঘটবে, তাকে কবির ভাষায় বলা যায়- “যদিও পথ আছে—তবু কোলাহলে শূন্য আলিঙ্গনে। নায়ক সাধক রাষ্ট্র সমাজ ক্লান্ত হয়ে পড়ে। প্রতিটি প্রাণ অন্ধকারে নিজের আত্মবােধের দ্বীপের মতাে কী এক বিরাট অবক্ষয়ের মানবসাগরে।” —জীবনানন্দ দাশ।
©kamaleshforeducation.in(2023)